প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশের সূচনা হয়েছে, যা আইনের শাসন, ন্যায়বিচার ও সমৃদ্ধির পথে জাতিকে এগিয়ে নেবে এবং গত ১৬ বছরের নৃশংসতার অবসান ঘটাবে।
তিনি বলেন, ‘আজ আমাদের নতুন জন্মের দিন। এই স্বাক্ষরের মধ্য দিয়েই আমরা নতুন বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠা করছি।’১৭ আগস্ট ২০২৫ শুক্রবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে, জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপি ও জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ–সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজসহ কমিশনের সদস্যরাও জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেন।
প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে বলেন, জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে আমরা যে ঐক্যের সুর বাজালাম, সেই সুর নিয়েই নির্বাচনে যাব। যারা স্বাক্ষর করলেন, তারা প্রয়োজনে আবার বসেন। ঠিক করেন কীভাবে নির্বাচন সুন্দর করা যায়। যেনতেন নির্বাচন করে কোনও লাভ নেই।
রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, মানুষ যেন মনে রাখে এই সনদে যারা স্বাক্ষর করেছেন তারা সুষ্ঠু নির্বাচন করেছে। পুলিশ এসে কেন ধাক্কাধাক্কি করবে। নিজেদের নির্বাচন নিজেরা করবো। কারও এসে আমাদের সোজা করতে হবে না, দেখিয়ে দিতে হবে না, ধাক্কাধাক্কি করতে হবে না।
সনদে স্বাক্ষর নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আজকের দিনটি বিশেষ। আজ সমস্ত জাতি, রাজনৈতিক নেতা একত্রিত হয়ে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছেন। এরকম ঘটনা আমরা চিন্তাও করতে পারিনি। যখন ঐকমত্য কমিশন গঠন করলাম, তখন মনে হয়েছিল হয়তো দুই-একটি বিষয়ে একমত করতে পারব। তাই ভয়ে ভয়ে এটা শুরু হয়েছিল। আলী রীয়াজকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম, তিনি যদি বুঝিয়ে কিছু করতে পারেন। অবাক হয়ে দেখলাম, সব রাজনৈতিক দলগুলো একত্রিত হলো। সবাই আলোচনা করলেন। এটা না দেখলে বিশ্বাস হতো না।
ঐকমত্য কমিশন অসম্ভবকে সম্ভব করেছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই সনদের মধ্য দিয়ে আমরা বর্বরতা থেকে সভ্যতায় এলাম। আমরা এক বর্বর জগতে ছিলাম। যেখানে কোনও আইন-কানুন ছিল না। এখন আমরা সভ্যতায় এলাম। এমন সভ্যতা গড়ে তুলবো যে মানুষ ঈর্ষার চোখে দেখবে। আমাদের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত চমৎকার। শুধু মানুষ নিয়ে সমাজ গঠন করতে হবে।
জুলাই আন্দোলনে নিহত ও আহতদের স্মরণ করে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এই কমিশন ও সনদ করার সুযোগ যারা দিয়েছে আজ তাদের স্মরণ করতে হবে। গণঅভ্যুত্থানের নায়কদের কথা মনে রাখতে হবে। যারা জীবন দিয়েছেন, আহত হয়ে বেঁচে আছেন তাদের কাছে জাতি চির কৃতজ্ঞ।
ড. ইউনূস বলেন, ‘আজকে এই দিনটি যে পেলাম, এটা মহান দিন। এটার কথা চিন্তা করলে গা শিউরে ওঠে। এমন একটি দিন, সেটা শুধু জাতির জন্য না, সারা পৃথিবীর জন্য একটা বড় রকমের উদাহরণ হয়ে থাকবে। বহু জায়গায়, যেটা পাঠ্যপুস্তকে থাকবে, সেটার ক্লাসরুমে আলোচনা হবে। রাজনৈতিকদের মধ্যে এটা নিয়ে আলোচনা হবে বিভিন্ন দেশে। কোনটা ঠিক, কোনটা বেঠিক, তারা কী বলল, আমরা কী চাই। তারা সেটা পারে কি না, সেটা চেষ্টা করে দেখবে—তাদের দেশে এটা সম্ভব কি না। যেই উদাহরণ আমাদের দেশের রাজনৈতিকবৃন্দ সৃষ্টি করেছেন, সেটা দেশের জন্য তো বটেই, সারা পৃথিবীর জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে।’
অধ্যাপক ইউনূসের বক্তব্যে বৃহৎ জনগোষ্ঠী হিসেবে তরুণদের সম্ভাবনা, সমুদ্র বন্দরের উপযুক্ত ব্যবহারের প্রসঙ্গও উঠে আসে। তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগর বাংলাদেশের অংশ। একটি নিয়মের মধ্যে চললে এই সম্পদের ব্যবহার করতে পারব। যদি গভীর সমুদ্র বন্দর করে দেই তাহলে দুনিয়ার অনেক জাহাজ আমাদের বন্দরে ভিড়তে পারবে। আমাদের জাহাজ সিঙ্গাপুরে আটকে থাকবে না। এটি একটি বিরাট সুযোগ।
অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, অন্য দেশের জেলেরা এসে বঙ্গোপসাগরের মাছ নিয়ে যায়। আমরা হা করে তাকিয়ে থাকি। কক্সবাজার, মাতারবাড়ি ও মহেশখালী মিলিয়ে যদি একযোগে বন্দর উন্নত করি, তাহলে পুরো এলাকা নতুন সিঙ্গাপুরে পরিণত হবে। সকল দেশের মানুষ এখানে আসবে। আমরা নেপাল, ভূটান ও সেভেন-সিস্টার্সের সঙ্গে আত্মিক যোগাযোগ গড়ে তুলতে পারবো এসব বন্দরের কারণে।
এর আগে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেক স্রোত, কিন্তু মোহনা একটি। সেটি হলো গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ তৈরি করা। সেই স্বপ্ন, প্রত্যাশার স্মারক যতটুকু অর্জিত হয়েছে- জুলাই জাতীয় সনদ সেটির প্রথম পদক্ষেপ।’
অধ্যাপক আলী রীয়াজ আরও বলেন, এই অগ্রসরমানতায় বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকের ভূমিকা আছে। প্রত্যাশা থাকবে রাজনৈতিক দলগুলো মত ও পথের পার্থক্য থাকা স্বত্ত্বেও এগিয়ে নিয়ে যাবে।
রাজনৈতিক দল ও শহীদ পরিবারের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দল ও জোটের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত হয়েছেন। এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে বিএনপি, জামায়াত, খেলাফত মজলিস, গণসংহতি আন্দোলন, জেএসডি, গণঅধিকার পরিষদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ মোট ২৫টি দল ও জোটের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
অনুষ্ঠান মঞ্চে দলীয় প্রতিনিধিদের পাশাপাশি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া ছাত্র-জনতার পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান এবং শহীদ তাহির জামান প্রিয়র মা শামসী আরা বেগম মঞ্চে উপস্থিত হয়ে এই সনদের প্রতি সমর্থন জানান।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল—বাংলাদেশ জাসদ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) ও বাসদ (মার্কসবাদী) আগেই এই সনদে স্বাক্ষর করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দল ও জোটের পক্ষ থেকে যেসব প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন:
১। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি): মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।
২। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী: কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের এবং সেক্রেটারী জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।
৩। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ: প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন এবং সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান।
৪। গণসংহতি আন্দোলন: প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি এবং নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল।
৫। নাগরিক ঐক্য: সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না এবং সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার।
৬। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) : সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন এবং সিনিয়র সহ-সভাপতি মিসেস তানিয়া রব।
৭। গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি) : সভাপতি নুরুল হক নুর এবং সাধারণ সম্পাদক মোঃ রাশেদ খাঁন।
৮। খেলাফত মজলিস: আমীর মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ এবং মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের।
৯। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস: সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা ইউসুফ আশরাফ এবং মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ।
১০। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) : মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. নেয়ামূল বশির।
১১। রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন: প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম এবং মিডিয়া সমন্বয়ক সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন।
১২। আমার বাংলাদেশ পাটি (এবি পার্টি) : চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু এবং সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।
১৩। জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) : চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ এবং মহাসচিব মোমিনুল আমিন।
১৪। বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি: সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এবং রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য বহ্নিশিখা জামালী।
১৫। জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট: জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা’র সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার লুৎফর রহমান।
১৬। ১২ দলীয় জোট: জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপি’র চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম।
১৭। গণফোরাম: জ্যেষ্ঠ এডভোকেট ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. মিজানুর রহমান।
১৮। জাকের পাটি: ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শহীদুল ইসলাম ভুইয়া এবং গাজীপুর জেলা ছাত্রফ্রন্টের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হাসান শেখ।
১৯। জাতীয় গণফ্রন্ট: কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক আমিনুল হক টিপু বিশ্বাস এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মঞ্জুরুল আরেফিন লিটু বিশ্বাস।
২০। বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি: সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা আবদুল মাজেদ আতহারী এবং মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার।
২১। বাংলাদেশ লেবার পার্টি: চেয়্যারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান এবং ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব খন্দকার মিরাজুল ইসলাম।
২২। ভাসানী জনশক্তি পার্টি: চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম (বাবলু) এবং মহাসচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ (সেলিম)।
২৩। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ: সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী এবং মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী।
২৪। ইসলামী ঐক্যজোট: চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল কাদের এবং মহাসচিব মুফতী সাখাওয়াত হোসাইন রাজী।
২৫। আমজনতার দল: সভাপতি কর্নেল মিয়া মশিউজ্জামান (অব.) এবং সাধারণ সম্পাদক মো. তারেক রহমান।
সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় ব্যক্তিগত সুখ বিলাসের জন্য রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতির অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেছে সংস্থাটি। রোববার (৭ ডিসেম্বর) বিকেলে দুদক প্রধান কার্যালয়ে এক নিয়মিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন। গত ১৮ নভেম্বর এ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়।
দুদক জানায়, সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও অন্যান্যের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতি থাকাকালে ব্যক্তিগত সুখ বিলাসের জন্য ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে নিকুঞ্জ-১ আবাসিক এলাকায় সাজসজ্জা এবং সৌন্দর্য বর্ধন প্রকল্প বাবদ রাষ্ট্রের ২৪ কোটি টাকা ক্ষতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক।
এ বিষয়টি অনুসন্ধানের জন্য একটি সমন্বিত অনুসন্ধান টিম গঠন এবং পরিচালক (বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্তু-২)-কে তদারককারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে কমিশন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘দেশের মানুষ ১৯৭১ সালেই দেখেছে, নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষার্থে তারা শুধু লাখ লাখ মানুষকে হত্যাই করেনি, তাদের সহকর্মীরা মা-বোনদের ইজ্জত পর্যন্ত লুট করেছিল। এই কথাটি আমাদেরকে মনে রাখতে হবে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘কিছু কিছু মানুষ বা কোনো কোনো গোষ্ঠী ইদানীং বলতে শুনেছি বা বিভিন্ন জায়গায় কেউ কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায় বলে যে, অমুককে দেখলাম, তমুককে দেখলাম, এবার অমুককে দেখুন। যাদের কথা বলে অমুককে দেখুন, তাদের তো দেশের মানুষ ১৯৭১ সালেই দেখেছে। ১৯৭১ সালে তারা তাদের নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে কীভাবে লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে। ঠিক যেভাবে পতিত স্বৈরাচার পালিয়ে যাওয়ার আগে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছিল ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ফার্মগেটের খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে এক অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এ কথা বলেন। বিজয়ের মাস উপলক্ষে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিএনপি। এতে ছাত্রদলের সারাদেশের জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন ইউনিটের হাজারের বেশি নেতা-কমী অংশ নেয়।
তারেক রহমান বলেন, ‘বিএনপি বাংলাদেশকে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, কানাডা, আমেরিকা বানাতে চায় না, স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়তে চায়।’
সামনে বিএনপির জন্য অনেক কঠিন সময় অপেক্ষা করছে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার যেভাবে বিএনপির বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়িয়েছিল, এখন একইভাবে কিছু ব্যক্তি বা দল একই চেষ্টা করছে।’
বিএনপির জোট সরকারের সময় জামায়াতে ইসলামীর দুইজন নেতা মন্ত্রী ছিলেন। সেই সময়ের উদ্ধৃতি দিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘কিছু কিছু ব্যক্তি বা দল ঠিক একই সুরে গান গাইছে বা একই সুরে কতগুলো কথা বলার চেষ্টা করছে। প্রশ্ন হচ্ছে, তাদেরও তো দুইজন ব্যক্তি আমাদের সঙ্গে সেই সময় সরকারে ছিল। সেই দুইজন ব্যক্তি বিএনপি সরকারে শেষদিন পর্যন্ত থাকা প্রমাণ করে দেয় যে, তাদের পূর্ণ আস্থা ছিল খালেদা জিয়ার উপর। কারণ, তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন। সেজন্যই তারা শেষদিন পর্যন্ত ছিল। এখন তাদের দলের অন্য যে যত বড় বড় কথা বলুক না কেন, খালেদা জিয়া শেষ দিন পর্যন্ত দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন এবং দুর্নীতির অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে, এই আত্মবিশ্বাস তাদের মধ্যে ছিল।
তারেক রহমান বলেন, বিভিন্নভাবে বিভিন্ন রকম ষড়যন্ত্র বিভিন্ন জায়গায় হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্র রুখে দিতে পারে এ দেশের জনগণ এবং এই ষড়যন্ত্র জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রুখে দিতে পারে বিএনপি। এই ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে গণতন্ত্র। যেকোনো মূল্যে যদি জনগণের মতামতকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি, তাহলে অবশ্যই অনেক ষড়যন্ত্রকে আমরা রুখে দিতে পারব। কিন্তু ষড়যন্ত্রকে রুখে দিতে পারলেও সামনে অনেক কঠিন সময়।
তারেক রহমান আরো বলেন, একটি রাজনৈতিক দলের কিছু ব্যক্তি বিভিন্ন জিনিসের টিকিট বিক্রি করে বেড়াচ্ছে। বিভিন্ন জিনিসের নিশ্চয়তা দিয়ে বেড়াচ্ছে। এখন আমি যতটুকু বুঝি—অনেক মুরুব্বি ব্যক্তি আছেন, এটি ধর্মীয় বিষয়—যা আমার না, আমি যদি সেটা দেওয়ার কথা বলি, অর্থাৎ ওয়াদা যদি করি, তাহলে আমি তার (আল্লাহর) সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছি। অর্থাৎ দোজখ-বেহেশত, দুনিয়ার সবকিছুর মালিক আল্লাহ। যেটা একমাত্র আল্লাহ বলতে পারেন, সেখানে যদি আমি কিছু বলতে চাই, আমার নরমাল দৃষ্টিকোণ থেকে আমি বুঝি, সেটি হচ্ছে শিরিক।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছাত্রদলের নেতাদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষকে বোঝাতে হবে যারা এসব কথা বলে, তারা শিরক করছে। যারা শুনবেন, তারাও শিরকের পর্যায়ে পড়ে যাবেন।
এর আগে সকালে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সঞ্চালনা করেন আরেক যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান (সোহেল)।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, বিএনপি মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান প্রমুখ।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সৌন্দর্যবর্ধন ও আধুনিকায়নে ১৯৯ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। রোববার (৭ ডিসেম্বর) ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান।
উপদেষ্টা বলেন, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উন্নয়নে সবচেয়ে বড় যে উদ্যোগটি গ্রহণ করা হয়েছে, সেটি হলো বায়তুল মোকাররমের আধুনিকায়ন, সৌন্দর্যবর্ধন ও উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প। এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯৯ কোটি টাকা। এরইমধ্যে এ অর্থায়নের সম্মতি পাওয়া গেছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে মসজিদের মূল কাঠামো ঠিক রেখে অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্যবর্ধন ও আধুনিকায়ন করা হবে, আধুনিক স্যানিটেশন ব্যবস্থা এবং বহিরাঙ্গণে আচ্ছাদিত করা হবে, অফিস ভবন ও মিনার নির্মাণসহ অন্য উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়ন করা হবে।
উপদেষ্টা বলেন, আমরা যথা দ্রুত সম্ভব এ প্রকল্পের কাজ শুরু করতে পারব, ইনশাআল্লাহ। সরকার তথা ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় মসজিদটিতে ইবাদতের যথোপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য সচেষ্ট রয়েছে। আমরা সবার সহযোগিতা চাই, পরামর্শ চাই। বিশেষ করে মসজিদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে সবার দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করব।
উপদেষ্টা আরও বলেন, আমরা যত্রতত্র নোংরা-আবর্জনা ফেলব না, আমরা ডাস্টবিন ব্যবহার করব। মসজিদের ওযুখানা ও টয়লেট নিজে ব্যবহার করব এবং অন্যের ব্যবহার উপযোগী রাখতে যত্নশীল হব।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের প্রস্তুতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে অবহিত করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।
রোববার (০৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কমিশনারগণ রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নির্বাচন আয়োজনের অগ্রগতি সম্পর্কে জানান।
বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমান মাছউদ, তাহমিদা আহমদ, মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ এবং নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এবং প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়াও বৈঠকে যোগ দেন।
বৈঠকে সিইসি নাসির উদ্দিন জানান, নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে সব ধরনের প্রস্তুতি সঠিক ও সুন্দরভাবে এগোচ্ছে এবং ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন ও একই দিনে গণভোট আয়োজনের জন্য কমিশন সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
প্রস্তুতিকালে ইসিকে পূর্ণ সহযোগিতা প্রদানের জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান সিইসি ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনাররা।
নির্বাচনের প্রস্তুতিকালে সর্বাত্মক সহযোগিতা করায় তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও প্রধান উপদেষ্টার মাধ্যমে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে নাগরিকরা নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে নিজেদের সম্পৃক্ত করেছেন, যা দেশে নির্বাচনী আমেজ সৃষ্টি করেছে।
এ সময় নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে সরকার।’
তিনি বলেন, ‘জাতির জন্য প্রতীক্ষিত এই নির্বাচনে আপনারা (ইসি) চালকের আসনে আছেন। আমাদেরকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতেই হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জাতিকে একটি সুন্দর নির্বাচন দিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতিকে আমরা ইতিহাসের সেরা নির্বাচন উপহার দেওয়ার প্রত্যয়ে এগিয়ে চলছি।
সূত্র : বাসস
আজ ৭ ডিসেম্বর সাতক্ষীরাবাসীর জীবনে এক মহিমান্বিত দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে সাতক্ষীরা সম্পূর্ণ মুক্ত ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, অসংখ্য ত্যাগ, মুক্তিযোদ্ধার আত্মোৎসর্গ এবং সাহসিকতার ফলেই অর্জিত হয় এই গৌরবময় বিজয়।
১৯৭১ সালের এই দিনে সাতক্ষীরার দামাল ছেলেরা থ্রি নট থ্রি আর এসএলআরের ফাঁকা গুলি ছুড়তে ছুড়তে সাতক্ষীরা শহরে প্রবেশ করেন। ওড়ানো হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা।
৯নং সেক্টরের অধীনে মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই সাতক্ষীরা ছিল প্রতিরোধ সংগ্রামের প্রধান ক্ষেত্র। পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদররা এ অঞ্চলে ভয়াবহ নির্যাতন, লুটপাট ও হত্যাযজ্ঞ চালায়। তবে বীর মুক্তিযোদ্ধারা জীবনবাজি রেখে প্রতিটি আক্রমণের জবাব দেন। সংগঠিত প্রতিরোধের মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকা টাউনশ্রীপুর, ভোমরা, সাতক্ষীরা সদর শত্রুমুক্ত হতে থাকে।
১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা সমন্বিত আক্রমণে পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করে সাতক্ষীরা জেলার নিয়ন্ত্রণ নেন। এদিন সাতক্ষীরার আকাশে উড়েছিল স্বাধীন বাংলার পতাকা। মানুষের মুখে ফুটে ওঠে আনন্দের উচ্ছ্বাস-হানাদারমুক্ত স্বভূমিতে ফিরে আসার উষ্ণতার অনুভূতি।
সাতক্ষীরাকে মুক্ত করতে শহীদ নাজমুল, শহীদ কাজলদের মতো যারা আত্মোৎসর্গ করেছেন, তারা জাতির ইতিহাসে চিরস্মরণীয়। তাদের মহান ত্যাগের বিনিময়েই আজকের এই স্বাধীন মাটি, স্বাধীন দেশ।
মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান জানান, মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য সাতক্ষীরা ট্রেজারি থেকে অস্ত্র লুট আর ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে অলঙ্কার ও টাকা-পয়সা লুটের মধ্য দিয়ে শুরু মুক্তির সংগ্রাম। অষ্টম ও নবম সেক্টরের অধীনে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় ট্রেনিং শেষে ২৯ এপ্রিল সাতক্ষীরার ভোমরা সীমান্তে প্রথম সম্মুখযুদ্ধ শুরু হয়। এ সময় পাকসেনাদের ২ শতাধিক সৈন্য নিহত হয়। ১৭ ঘণ্টাব্যাপী এ যুদ্ধে শহীদ হন মাত্র ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা। আহত হন ২ জন। এরপর থেমে থেমে চলতে থাকে সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের গুপ্ত হামলা। এসব যুদ্ধের মধ্যে ভোমরার যুদ্ধ, টাউনশ্রীপুর যুদ্ধ, বৈকারী যুদ্ধ, খানজিয়া যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। এ সব যুদ্ধে শহীদ হন সাতক্ষীরার ৩৩ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। সন্তান হারানোর বেদনা ভুলে সেদিন মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে রাস্তায় নেমে আসেন সাতক্ষীরার মুক্তিপাগল আপামর জনতা।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সাতক্ষীরা ইউনিটের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা সম শহিদুল ইসলাম জানান, ১৯৭১ সালের ২ মার্চ সাতক্ষীরা শহরে পাকিস্তানবিরোধী মিছিলে রাজাকাররা চাপড়া লজের সামনে গুলি করে হত্যা করে শহীদ আব্দুর রাজ্জাককে। আর সেখান থেকে শুরু হয় সাতক্ষীরার দামাল ছেলেদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া। ২৯ এপ্রিল সাতক্ষীরার ভোমরা সীমান্তে প্রথম সম্মুখযুদ্ধ শুরু হয়।
মুক্তিযোদ্ধারা ওয়্যার হাউস উড়িয়ে দেন। এতে ব্যাপক ভীত-সন্ত্রস্ত হয় পাকসেনারা। রাতের আঁধারে বেড়ে যায় গুপ্ত হামলা। পিছু হটতে শুরু করে পাকসেনারা। ৬ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধাদের হামলায় টিকতে না পেরে বাঁকাল, কদমতলা ও বিনেরপোতা ব্রিজ উড়িয়ে দিয়ে পাকবাহিনী সাতক্ষীরা থেকে পালিয়ে যায়। ৭ ডিসেম্বর জয়ের উন্মাদনায় মেতে ওঠেন সাতক্ষীরার দামাল ছেলেরা।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শাহাদাত বরণকারী ১১৪ জনের পরিচয় শনাক্ত করতে, রায়েরবাজার কবরস্থান থেকে লাশ উত্তোলন করা শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। রবিবার (৭ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. ছিবগাত উল্লাহ এ তথ্য জানান।
রবিবার সকাল থেকে মরদেহ উত্তোলনের কাজ শুরু করেছে সংস্থাটি। মরদেহগুলো তোলার পর ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ নমুনা নিয়ে আবার যথাযথ প্রক্রিয়ায় দাফন করা হবে।
ছিবগাত উল্লাহ বলেন, ‘এই কবরস্থানে যারা নাম-পরিচয়হীন অবস্থায় শুয়ে আছেন, তাদের পরিচয় তখন যাচাই-বাছাই করা হয়নি। তাদের পরিচয় উদঘাটন করা জাতির প্রতি আমাদের একটি দায়িত্ব। আজ সেই মহান কাজের সূচনা হলো।’
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার (ওএইচসিএইচআর) মাধ্যমে আর্জেন্টিনা থেকে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ লুইস ফন্ডিব্রাইডার ঢাকায় এসে পুরো কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, ‘এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে একাধিক বৈঠক হয়েছে। এ ব্যাপারে অজ্ঞাত শহীদদের পরিবার আবেদন করেছে। বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে এসব কাজ পরিচালিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসরণ করে কবরস্থান থেকে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য লাশ উত্তোলন করা হচ্ছে।’
সিআইডি প্রধান বলেন, ‘লাশ শনাক্তের জন্য ইতিমধ্যে ১০ জন আবেদন করেছেন। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এখানে শহীদের সংখ্যা ১১৪ জনের বেশি। প্রকৃত সংখ্যা লাশ উত্তোলনের পর জানা যাবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘লাশগুলোর পোস্টমর্টেম করা হবে এবং ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হবে। পরে ডিএনএ প্রোফাইল তৈরি করে ধর্মীয় সম্মান বজায় রেখে পুনঃদাফন করা হবে।’
মো. ছিবগাত উল্লাহ বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিচয় শনাক্ত হলে, পরিবার চাইলে লাশ তাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। ডিএনএ সংগ্রহের পর, যে কেউ আবেদন করলে সহজেই শনাক্ত করা যাবে। সিআইডির হটলাইন নম্বরগুলো জানিয়ে দেওয়া হবে, যাতে যে কেউ যোগাযোগ করতে পারেন।’
গত ৪ আগস্ট মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহিদুল ইসলামের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান ১১৪টি মরদেহ উত্তোলনের নির্দেশ দেন। আদালতের আদেশ অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে নিহত অজ্ঞাত ব্যক্তিদের পরিচয় শনাক্তের জন্যই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গত বছর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় নিহত ১১৪ জন শহিদকে অজ্ঞাত পরিচয়ে মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফন করা হয়।
কক্সবাজারের টেকনাফ উপকূলঘেঁষা দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনকে প্লাস্টিক দূষণমুক্ত রাখতে দুই দিনব্যাপী ব্যাপক পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি পরিচালনা করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কেওক্রাডং বাংলাদেশ। দ্বীপের অলিগলি, সৈকত ও জনসমাগম এলাকা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৮৫০ কেজি অপচনশীল বর্জ্য। সংগৃহীত এসব বর্জ্য নৌপথে এনে পরে টেকনাফে পরিবেশবান্ধবভাবে অপসারণ করা হয়।
জানা যায়, শুক্রবার শুরু হয়ে শনিবার বিকেলে শেষ হওয়া এ অভিযানে স্থানীয় বাসিন্দা, বিভিন্ন পেশার মানুষ ও সেন্ট মার্টিনের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে মোট পাঁচ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক অংশ নেন। এই কর্মসূচির সহযোগিতায় ছিল ইউনিলিভার বাংলাদেশ।
কর্মসূচির সমন্বয়কারী মুনতাসির মামুন বলেন, দ্বীপের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা প্লাস্টিক বোতল, পলিথিন, প্যাকেটসহ নানা ধরনের বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। তার ভাষায়, “সেন্ট মার্টিন ছোট একটি দ্বীপ। এখানে প্রতিদিন জমতে থাকা প্লাস্টিক যদি মূল ভূখণ্ডে নিয়ে না যাওয়া হয়, তবে তা একসময় সমুদ্রের জন্য ভয়াবহ ঝুঁকি তৈরি করবে। আমাদের প্রচেষ্টা ছিল সেই ক্ষতির পরিমাণ যতটা সম্ভব কমানো।”
তিনি আরও বলেন, পর্যটনের সম্ভাবনাময় দ্বীপটিতে সারা বছর পর্যটক প্রবেশের সুযোগ রাখা যেতে পারে; তবে সেই সংখ্যা অবশ্যই নিয়ন্ত্রিত হওয়া উচিত। এতে পরিবেশের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়বে না।
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ছৈয়দ আলম কেওক্রাডং বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “প্রায় ১৫ বছর ধরে তারা দ্বীপে পরিচ্ছন্নতার কাজ করে যাচ্ছে। স্থানীয় জনগণ ও পর্যটক সবাই সচেতন হলে সেন্ট মার্টিনকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব।”
একই মত প্রকাশ করেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম। তিনি জানান, পর্যটন মৌসুমে হাজারো ভ্রমণপিপাসু এখানে আসেন। তাদের রেখে যাওয়া বর্জ্যই দ্বীপের পরিবেশগত ক্ষতির বড় কারণ। “এ ধরনের উদ্যোগ নিয়মিত হলে প্রবাল দ্বীপের সৌন্দর্য আগের মতোই অক্ষুণ্ণ থাকবে,” বলেন তিনি।
পরিচ্ছন্নতা অভিযানের আয়োজকরা জানান, এর আগেও তারা দ্বীপে একাধিকবার এমন কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। ভবিষ্যতেও পরিবেশ রক্ষায় এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।
দেশের বাজারে পেয়াজের দাম সহনীয় রাখতে আগামীকাল রোববার (৭ ডিসেম্বর) থেকে সীমিত পরিসরে পেঁয়াজ আমদানির জন্য অনুমোদন (আইপি) দিয়েছে সরকার।
এতে প্রতিদিন ৫০টি করে আইপি (আমদানি অনুমতি) ইস্যু করা হবে। প্রত্যেকটি আইপিতে সর্বোচ্চ ৩০ টন পেঁয়াজের অনুমোদন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
শনিবার (৬ ডিসেম্বর) কৃষি মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পেঁয়াজের বাজার সহনীয় রাখতে ৭ ডিসেম্বর থেকে সীমিত আকারে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি প্রদান করা হবে। প্রতিদিন ৫০টি করে আইপি (আমদানি অনুমতি) ইস্যু করা হবে। প্রত্যেকটি আইপিতে সর্বোচ্চ ৩০ টন পেঁয়াজের অনুমোদন দেওয়া হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয় জানায়, ১ আগস্ট থেকে অদ্যাবধি যেসব আমদানিকারক রপ্তানি অনুমতির জন্য আবেদন করেছেন, কেবল তারাই আবেদন পুনরায় দাখিল করতে পারবেন।
এ ছাড়া একজন আমদানিকারক একবারের জন্য আবেদনের সুযোগ পাবেন বলেও জানানো হয়।
তাতে আরো জানানো হয়, পেঁয়াজের বাজার সহনীয় রাখতে পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়ার জন্য নির্ধারিত এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ফ্লাইটকে ‘ভিভিআইপি’ হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষও ফ্লাইটের ল্যান্ডিং ক্লিয়ারেন্স দিয়েছে।
শনিবার (৬ ডিসেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক ক্যাপ্টেন এস এম রাগীব সামাদ।
তিনি জানান, বেগম খালেদা জিয়াকে নিতে ৯ ডিসেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় পৌঁছাবে এবং ১০ ডিসেম্বর ঢাকা ত্যাগ করবে। ভিভিআইপি মুভমেন্ট বিবেচনায় রেখে ল্যান্ডিং থেকে টেকঅফ পর্যন্ত সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও অপারেশনাল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
রাগীব সামাদ বলেন, “ফ্লাইটের প্রয়োজনীয় রুট ও অবতরণের সময় নিশ্চিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সব সংশ্লিষ্ট ইউনিটকে সক্রিয় করে দেওয়া হবে। যেন কোনো ধরনের বিঘ্ন ছাড়াই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের চলাচল সম্পন্ন করা যায়।”
এর আগে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত জানুয়ারিতে লন্ডনে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। সেখানে প্রথমে হাসপাতালে, পরে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় থেকে তিনি চিকিৎসা নেন। প্রায় চার মাস পর গত ৬ মে তিনি দেশে ফেরেন।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ অবস্থায় গত ২৩ নভেম্বর দিবাগত রাত থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফন করা অজ্ঞাত ১৮২ শহীদের মরদেহ উত্তোলনের প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে আগামী ৭ ডিসেম্বর (রবিবার)।
শহীদদের ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (ডিএনএ) নমুনা সংগ্রহে রবিবার থেকে কাজ শুরু করবে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার লুইস ফন্ডেব্রিডার এবং সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. ছিবগাত উল্লাহসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এই কাজ শুরু হবে।
এর আগে গত ২ ডিসেম্বর রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে অজ্ঞাত শহীদদের কবর পরিদর্শন করেন সিআইডির কর্মকর্তরা।
গত ৪ আগস্ট ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে মরদেহ উত্তোলনের নির্দেশ দেন। পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতে আবেদনটি করেন মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক মাহিদুল ইসলাম।
আবেদনে বলা হয়, কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু হয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ জীবন দেন।
সিআইডির ফরেনসিক ইউনিটের কর্মকর্তারা জানান, বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে জুলাই আন্দোলনে অজ্ঞাত শহীদদের মরদেহ উদ্ধারে কবরস্থান এলাকায় তাবু স্থাপন করা হয়েছে। সেখানেই মরদেহ উত্তোলন করার পর প্রক্রিয়াগত সব কাজ করা হবে।
এই অস্থায়ী তাবুতে ময়নাতদন্ত করা হবে। এরপর আবার মরদেহ যথাযথ প্রক্রিয়ায় দাফন করা হবে।
বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে মেডিক্যাল বোর্ডের সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আমরা আশাবাদী তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন বলে জানান বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, এর আগে এর চেয়েও প্রতিকূল অবস্থায় খালেদা জিয়া সুস্থ হয়েছেন। ডা. জাহিদ দেশবাসীকে আহবান জানিয়ে বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গুজবে কেউ বিভ্রান্ত হবেন না।
শনিবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেলে বেগম খালেদা জিয়ার বর্তমান স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে ব্রিফিংকালে তিনি একথা বলেন।
ডা. জাহিদ জানান, বোর্ডের পরামর্শক্রমে খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে নিতে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু কাতার সরকার এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর যে উদ্যোগ নিয়েছিল সেটা কারিগরি ত্রুটিতে আসতে পারেনি। পরবর্তীতে অন্য ব্যবস্থা নিলেও বোর্ডের সদস্যরা জরুরিভাবে সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ওই মুহূর্তে ফ্লাই করা সঠিক হবে না। সেজন্য বিদেশ নেওয়ার বিষয়টি বিলম্বিত হচ্ছে। ভবিষ্যতে হয়তো শারীরিক অবস্থা বলে দেবে উনাকে কখন ও কবে নেওয়া যাবে।
তিনি বলেন, আমাদের মেডিকেল অ্যাম্বুলেন্স তৈরি আছে। দেশনেত্রীর চিকিৎসা ও শারীরিক অবস্থা ইউকে, আমেরিকা, চীন থেকে তার ফিজিক্যাল কন্ডিশনের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। দেশের সব মানুষ তার সুস্থতা চায়। তার স্বাস্থ্যে আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।
তিনি আরও বলেন, বেগম জিয়ার চিকিৎসায় তারেক রহমানও সার্বক্ষণিক সম্পৃক্ত আছেন। তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান এখন ঢাকায় এসে সার্বক্ষণিক দেখভাল করছেন। তিনি নিজেও মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যদের পরামর্শ নিচ্ছেন। এ অবস্থার মধ্যে বোর্ডের সদস্যরা দৃঢতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছেন। খালেদা জিয়া ফ্লাই করার অবস্থায় পৌঁছালেই চিকিৎসার জন্য লন্ডন নেওয়া হবে।
মার্কিন শুল্ক চাপে পোশাক রপ্তানিতে ইউরোপের বাজারের দিকে ঝুঁকছে চীন, ভারতসহ বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলো। এতে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়ছে দেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা। সুযোগ বুঝে বিদেশি ক্রেতারা দিচ্ছেন দাম কমিয়ে। চলতি বছর ইউরোপের বড় ক্রেতা জার্মানিসহ ইউরোপের ১২টি দেশে কমেছে রপ্তানি। এতে বেশি বিপাকে পড়েছে ছোট ও মাঝারি পোশাক কারখানা।
ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে দরকষাকষির পর বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানিতে শুল্ক হার ২০ শতাংশে নামলে শীর্ষ রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পে কিছুটা স্বস্তি ফিরে। বাড়তি শুল্ক ও মজুরির কারণে চীনের অনেক ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে আসবে এমন প্রত্যাশাই ছিল পোশাক শিল্প মালিকদের। তবে মার্কিন অর্থনীতির মন্দাভাবের কারণে সে আশা পূরণ হয়নি।
অধিকাংশ আমদানিকারক ও ক্রেতা বাড়তি শুল্কের ভার নিতে রাজি না হওয়ায় সংকটে আছেন রপ্তানিকারককরা। ত্রিপক্ষীয় দরকষাকষি নিয়ে টানাপড়নে গত তিন মাসে ধারাবাহিকভাবে কমেছে ক্রয়াদেশ। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। নির্বাচনকে ঘিরে সম্ভাব্য রাজনৈতিক অস্থিরতার শঙ্কায় অর্ডার দিতে ভরসা পাচ্ছে না ক্রেতারা।
চট্টগ্রামের ক্লিফটন গ্রুপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘মনে করেছিলাম বাংলাদেশ একটি ভালো পর্যায়ে আছে ইন্ডিয়া এবং চায়নার তুলনায়। চাহিদা কম থাকায় আমাদের অর্ডার কম হচ্ছে। আমাদের খুব হার্ড টাইম যাচ্ছে।’
বিজিএমইএ পরিচালক সাইফুল্লাহ মনসুর বলেন, ‘রিটেইলাররা বলতেছে আমি কোনোভাবেই এটি ক্রেতাদের ওপর ইম্পজ করতে পারব না। ২০ শতাংশের অ্যাডজাস্টমেন্ট নিয়েই বড় শঙ্কা আমাদের। আর দ্বিতীয় বিষয়টি হলো বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা।’
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ৪৮ শতাংশ রপ্তানির হয় ইউরোপে। এ মহাদেশে এককভাবে সবচেয়ে বড় ক্রেতা জার্মানি। এছাড়া ফ্রান্স, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, সুইডেনসহ ১২টি দেশে রপ্তানি কমেছে তিন থেকে সবোর্চ্চ ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত। মার্কিন শুল্ক চাপের কারণে প্রতিযোগী অধিকাংশ দেশ ইউরোপে ঝুঁকে পড়ায় সেখানে মূল্য নিয়ে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হচ্ছে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের। এ অবস্থায় কোন কোন দেশ কম মূল্য ক্রয়াদেশ নিলেও বন্দরের ট্যারিফসহ বিভিন্ন খাতে খরচ বাড়ায় বিপাকে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা।
বিজিএমইএ সহ-সভাপতি রফিক চৌধুরী বলেন, ‘আগে যারা ইউরোপ মার্কেটে কাজ করত, ওদের সঙ্গে আমাদের এটি প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে। কার থেকে কে কম প্রাইজে অর্ডার নিবে। এতে আমরা বিপদে পড়ে যাচ্ছি।’
বিজিএমইএ পরিচালক রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘ইন্ডিয়া মার্কেট যখন ইউরোপে যাচ্ছে তখন আমরা ইউরোপের অর্ডার কম পাচ্ছি। সেই সঙ্গে আমাদের টেরিফ কমেনি, লোকাল প্রাইজ বেড়ে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে কস্টিং এর দিক দিয়ে অন্যান্য কান্ট্রির সঙ্গে আমরা পারছি না। কারণ আমাদের কম্পিটিটর হলো বাহিরের কান্ট্রি।’
অর্ডার না থাকায় আর্থিক সংকটে অনেক কারখানা বেতন দিতে না পারলেও ব্যাংক থেকে সহযোগিতা পাচ্ছে না। সংকট কাটিয়ে উঠতে সরকারের কাছ থেকে নীতি সহায়তা ও স্বল্প সুদে ঋণ চান উদ্যোক্তারা।
বিজিএমই সহ-সভাপতি রফিক চৌধুরী বলেন, ‘খারাপ সময় যাচ্ছে। বেতন দিতে পারছে না সঠিকভাবে। ব্যাংকগুলোও আর সেভাবে এগিয়ে আসছে না সাপোর্ট দিতে। ৫টি ব্যাংককে একসঙ্গে মার্জ করাতে কোনো ফান্ডই পাওয়া যাচ্ছে না।’
বিজিএমইএ পরিচালক সাইফুল্লাহ মনসুর বলেন, ‘ব্যাংকের যে সহযোগিতা এক্সপোর্টারদের দেয়া দরকার আমরা নতুন কিছুই চাচ্ছি না। পৃথিবীতে এক্সপোর্টদের যেভাবে নার্সিং করে বাংলাদেশে সেভাবে করে না। সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের যদি সহায়তা করা হয় তাহলে আমাদের আরও ভালো হবে।’
২০২৫-২৬ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৪৫ বিলিয়ন ডলার। অক্টোবর পর্যন্ত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রপ্তানি হয়েছে প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলার।
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ড সবুজ সংকেত দিলেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেবে কাতারের রয়েল এয়ার অ্যাম্বুলেন্স।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এনামুল হক চৌধুরী গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। দলের পক্ষ থেকে কাতারের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তিনিই এই বিষয়ে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রক্ষা করছেন।
এনামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘ম্যডামের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তক্রমে কাতারের রয়েল অ্যাম্বুলেন্স বাংলাদেশ আসবে। তারা এখন সেইভাবে প্রস্তুত আছেন। মেডিকেল বোর্ড যখনই সিদ্ধান্ত জানাবে তখনই এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবে এবং বেগম জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন নিয়ে যাবে। সবকিছুই কাতার কর্তৃপক্ষ অ্যারেজমন্ট করেছে।’
জার্মানি থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আনার বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা নই, কাতার কর্তৃপক্ষই জার্মানি থেকে একটি অত্যাধুনিক এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের অ্যারেজমেন্ট করে দিচ্ছে।
এনামুল হক জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন ও বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জন্য রয়েল কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়নে সবকিছু করা হচ্ছে। এখানে আমাদের কিছু নেই।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শারীরিক অবস্থা আগের মতই আছে। মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে বেগম খালেদা জিয়াকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছেন।
একাধিক চিকিৎসকের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসন এখনও ফ্লাই করার সক্ষমতা অর্জন করেননি। সেজন্য লন্ডন যাত্রা বিলম্ব হচ্ছে।
তারা আরও জানান, গত দু’দিনে মেডিকেল বোর্ড কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে। সেগুলোর প্রতিবেদনও তারা পর্যালোচনা করছেন। গতকাল (শুক্রবার) দু’দফা মেডিকেল বোর্ডের বৈঠক হয়। প্রতিদিনই বোর্ডের সভায় খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার নিয়মিত প্রতিবেদনগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
গত ২৩ নভেম্বর থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চকিৎসাধীন আছেন বেগম খালেদা জিয়া।
অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ড তাঁর চিকিৎসা দিচ্ছে। তারেক রহমানের সহধর্মিনী ডা. জুবাইদা রহমানও সেই বোর্ডের সদস্য।
বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন নিয়ে যেতে শুক্রবার ডা. জুবাইদা ঢাকায় এসে পৌঁছান।সূত্র : বাসস