প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়াকে নিজের মুখ্য সচিব হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তোফাজ্জলকে ওই পদে নিয়োগ দিয়ে বুধবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিনকে সচিব পদে পদোন্নতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের দায়িত্ব চালিয়ে আসা আহমদ কায়কাউসকে তিন বছরের চুক্তিতে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব পদমর্যাদায় বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার।
প্রথমে মিছিল দৈর্ঘ্য-প্রস্থে বড় ছিল, এখন প্রস্থে বড় হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সড়ক, পরিববহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ‘বিএনপির নীরব মিছিল দৈর্ঘ্যে কম, প্রস্থে বেশি। রাজনৈতিক কর্মী কমে যাচ্ছে, নেতায় নেতায় প্রস্থ বেড়ে যাচ্ছে।’
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী মোড়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশে বুধবার কাদের আরও বলেন, ‘ভয় আমরা পাই না, ভয় পেয়েছে বিএনপি। কর্মসূচি এখন কেবলই নরম হচ্ছে।’
সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘হাঁড়ি-পাতিল, লোটা-কম্বল নিয়ে সাত দিন আগে ঢাকায় আসছে, পাতিলে পাতিলে খাবার, পিকনিক পার্টি করে। লজ্জা করে না, ওই হাঁড়ি পাতিল এখন কোথায়, কোথায় সেই গণমিছিল। পত্রপত্রিকায় নিউজে আসছে, কোথায় সেই গণমিছিল, নির্বাচনের এই যুদ্ধে নেতা-কর্মী ছাড়া কোনো পাবলিক আপনার সঙ্গে পাবেন না।’
বিএনপি নেতাদের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘মির্জা আব্বাস বলেন সরকার নাকি ভয় পেয়ে গেছে। সরকার ভয় পেয়েছে না আপনারা ভয় পেয়েছেন? সরকার শান্তি সমাবেশ দিয়ে শুরু করেছে, এখনো শান্তি সমাবেশ করে যাচ্ছে। আপনারা সরকারের পতন, গণ-অভ্যুত্থান, লাল কার্ড দেখে এখন কেন অন্তিম পদযাত্রায় নামলেন? তাহলে ভয় পেল কে? বিক্ষোভ থেকে এখন নীরব পদযাত্রা।’
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘খেলা হবে আগামী নির্বাচনে। সেদিন নির্বাচনে জনপ্রিয়তা যাচাই হবে, জনগণ ভোট দিয়ে যাচাই করবে। কাজেই এখন আপনি দাবি করছেন সরকারের পায়ের তলায় মাটি নেই। আপনাদের পায়ের তলায় কি মাটি আছে?’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জে উপনির্বাচন হয়েছে, বগুড়া, ঠাকুরগাঁও, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মোট ছয়টি উপনির্বাচন। চাঁপাইনবাবগঞ্জে একটু হাতাহাতি হয়েছে, এ ছাড়া সব কয়টি নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। কে জিতল কে হারল এটা আমাদের মূল বিষয় নয়। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আবারও গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে। তারা অপপ্রচার করে এই সরকারের আমলে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না। বিদেশিদের কাছে নালিশ করে।’
আসন ছেড়ে দিয়ে বিএনপি ভুল করেছে দাবি করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ফখরুল সাহেব, ছয়টি সিট আপনাদের ছিল, পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করে কত বড় ভুল করেছেন তা যতই দিন যাবে ততই অনুধাবন করতে পারবেন। ইলেকশনে আসেন। ঘোমটা পরে নয়, প্রকাশ্যে আসেন।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক চৌধুরী সাইফুন্নবী সাগর ও দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্যে দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ও সুজিত রায় নন্দী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের উদ্যোগে শুরু হতে যাচ্ছে ‘আমার ভাষার চলচ্চিত্র’ উৎসব। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি প্রাঙ্গণে উৎসবের ২১তম আসর শুরু হবে। এই চলচ্চিত্র উৎসব চলবে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ উৎসর্গকারী মহান শহীদদের স্মরণ ও বাংলা সিনেমাকে চলচ্চিত্রপ্রেমীদের কাছে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে ২০০২ সাল থেকে এ উৎসবের ২০টি আসর সাফল্যের সঙ্গে আয়োজন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ।
এ বছর আয়োজনের ২১তম আসরে প্রদর্শিত হবে দুই বাংলার সমসাময়িক ও ধ্রুপদী ১৯টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হাওয়া, গোলাপী এখন ট্রেনে, দামাল, সীমানা পেরিয়ে, মানিকবাবুর মেঘ, আনন্দ অশ্রু ইত্যাদি। এ ছাড়া প্রদর্শিত হবে দুটি স্বল্পদৈর্ঘ্য ও একটি প্রামাণ্যচিত্র। দর্শকদের জন্য চলচ্চিত্র উপভোগের পাশাপাশি রয়েছে চলচ্চিত্র কুশলীদের সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময়ের সুযোগ।
উৎসবের শেষদিন প্রতিবারের মতো উপমহাদেশের প্রথম চলচ্চিত্রকার হীরালাল সেন স্মরণে গত বছরের মুক্তিপ্রাপ্ত সেরা চলচ্চিত্রটিকে ‘হীরালাল সেন পদক’ প্রদান করা হবে।
উৎসবের প্রচার সহযোগী হিসেবে রয়েছে চ্যানেল আই, দৈনিক বাংলা ও দ্য রিপোর্ট.লাইভ। প্রদর্শন সহযোগী হিসেবে রয়েছে জাজ মাল্টিমিডিয়া ও বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ। এই প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত।
এক মাস আগেই রাজধানীর যোগাযোগব্যবস্থায় নতুন সংযোজন হয়েছে উড়াল মেট্রোরেল বা এমআরটি লাইন-৬। যার পুরো সুবিধা না পাওয়া গেলেও কম সময়ে উত্তরা থেকে আগারগাঁও যাতায়াতে স্বস্তি এনেছে। উড়াল মেট্রোরেলের পাশাপাশি এবার পাতাল মেট্রোরেল বা এমআরটি লাইন-৬-এর কাজ শুরু হচ্ছে। দেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেলের নির্মাণকাজের আজ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে দিয়েই রূপগঞ্জের পিতলগঞ্জ ডিপো নির্মাণের প্রাথমিক কাজ শুরু হচ্ছে।
পূর্বাচল চার নম্বর সেক্টরে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পূর্বাচল শহর উন্নয়ন প্রকল্পের সাইট অফিসের কাছে জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে অবস্থিত বাণিজ্যিক প্লটের খোলা জায়গায় পাতাল রেলের নির্মাণকাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আজ বেলা ১১টায় যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। প্রথমে তিনি উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করবেন।
বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, নির্মাণকাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি শেষ। প্রস্তুত মঞ্চ, অপেক্ষা উদ্বোধনের। পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে সড়ক ব্যানার-ফেস্টুনে সাজিয়ে তোলা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে।
পাতাল ও উড়াল মিলে মেট্রোরেল লাইন-১-এর মোট দৈর্ঘ্য ৩১ দশমিক ২৪১ কিলোমিটার। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত পাতাল অংশের দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার। অন্যদিকে নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত নির্মাণ হবে উড়ালপথ, যার দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার। পাতাল পথে স্টেশন হবে ১২টি এবং উড়ালপথে থাকবে ৭টি। উভয় পথে মোট ১৯টি স্টেশন হবে।
পুরো প্রকল্পটির কাজ ১২টি প্যাকেজের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হবে। এর মধ্যে প্যাকেজে সিপি-১-এর আওতায় ডিপো এলাকায় ভূমি উন্নয়ন করার কাজটি শুরু হলো। যেখানে ডিপো নির্মাণ করা হবে সেখানে অনেক উঁচু-নিচু জায়গা আছে। সেগুলো ভরাট করার কাজটি শুরু হলো। তারপর সেখানেই ডিপো নির্মাণ করা হবে। জাপানের টোকিও কনস্ট্রাকশন এবং দেশীয় প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচারের যৌথ উদ্যোগে রাজধানীর এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পের ডিপো এলাকার ভূমি উন্নয়নের কাজ করবে।
পাতাল মেট্রোরেল নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪০ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) এবং বাকিটা বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে।
ডিএমটিসিএলের পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, প্রকল্পটি শেষ হলে এই রুটে প্রতিদিন ৮ লাখ যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন। বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর যেতে সময় লাগবে ২০ মিনিট। পাতাল রেলের জন্য কেনা হবে ২৫টি ট্রেন। প্রতিটি ট্রেনে কোচ থাকবে ৮টি করে। একেকটি ট্রেন সেটে একসঙ্গে ৩ হাজার ৮৮ জন যাত্রী পরিবহন করা যাবে।
এমআরটি লাইন-১-এর সঙ্গে অন্যান্য লাইনের সংযোগ হবে। নতুন বাজার মেট্রোরেল স্টেশনে এমআরটি লাইন-১ ও এমআরটি লাইন-৫: নর্দার্ন রুটের মধ্যে এবং আফতাবনগর মেট্রোরেল স্টেশনে এমআরটি লাইন-১ ও এমআরটি লাইন-৫: সাউদার্ন রুটের মধ্যে আন্তলাইন সংযোগ থাকবে। কমলাপুর মেট্রোরেল স্টেশনে এমআরটি লাইন-১, এমআরটি লাইন-২, এমআরটি লাইন-৪ এবং এমআরটি লাইন-৬-এর মধ্যে আন্তলাইন সংযোগ থাকবে।
গত ২৮ ডিসেম্বর দেশের প্রথম মেট্রোরেল লাইন-৬-এর একাংশ চালু হয়েছে। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ৬টি মেট্রোরেলের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। ৬টি লাইনের সমন্বয়ে ১৩০ কিলোমিটার মেট্রো নেটওয়ার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্বে আছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে অর্থনৈতিক সাফল্য ও কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী অুনষ্ঠান আয়োজন করেছে কোরিয়ান কমিউনিটি অ্যাসোসিয়েশন। আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত ‘স্টে স্ট্রং মার্চ টুগেদার’ স্লোগানে নানা আয়োজন নিয়ে চলবে কোরিয়া সপ্তাহ-২০২৩। এ উপলক্ষে ঢাকার ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) ও কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে থাকবে নানা ধরনের অনুষ্ঠান।
কোরিয়ান কমিউনিটি অ্যাসোসিয়েশনের পাশাপাশি কোরিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (কেবিসিসিআই) এবং কোরিয়া ট্রেড-ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন এজেন্সিও (কোট্রা) রয়েছে এই আয়োজনে।
বুধবার ঢাকায় দক্ষিণ কোরিয়া দূতাবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। অনুষ্ঠানে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং কিউন বলেন, ‘বাংলাদেশ-কোরিয়া সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই বছরটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বছর হবে। যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে দুদেশের সম্পর্ক আরও জোরদার করার প্রচেষ্টা চলছে। আমরা এই বছরকে একটি মাইলফলক বছর হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’
২০২২ সালে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ সর্বকালের সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে জানিয়ে রাষ্ট্রদূত লি জাং কুন বলেন, কোরিয়া দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং উভয় দেশের ব্যবসায়িক সমাজ আরও সহযোগিতা পেতে ‘শোকেস কোরিয়া-২০২৩’ একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশে কোরিয়ান কমিউনিটির চেয়ারম্যান ইয়ং ওহ ইউ বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং এবং হুন্ডাইয়ের মতো বড় কোরিয়ান কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে নির্মাণ, প্রকৌশল, ইলেকট্রনিক্স এবং অটোতে যুক্ত করার কথা বিবেচনা করছে। কারণ, বাংলাদেশে এখন বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত ও বাজার প্রসারিত করছে। মানুষে মানুষে যোগাযোগ বাড়াতে দুদেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা চলছে। তবে বাংলাদেশের ভিসা পেতে কোরিয়ার নাগরিকদের বেশ বেগ পোহাতে হয় বলেও উল্লেখ করেন তিন।
১ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগসহ দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশের ৫ম বৃহত্তম এফডিআই প্রদানকারী দেশ। প্রায় ২০০ কোরিয়ান কোম্পানি ইতোমধ্যে বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করেছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ জ্বালানি চাহিদা পূরণে সৌদি আরবের কাছে আবারও ধারে জ্বালানি তেল চেয়েছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশে সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত এসা ইউসুফ এসা আলদুহাইলান বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সৌদি রাষ্ট্রদূত তার দেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবর বাংলাদেশের প্রস্তাবটি পৌঁছে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি সৌদি আরামকো থেকে অপরিশোধিত বা পরিশোধিত তেল নেয়ার প্রস্তাবটি বিবেচনার জন্য অনুরোধ করেন। তবে এই তেলের দাম পরে পরিশোধ করার কথা বলেন তিনি।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে সৌদি বিনিয়োগের অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) থেকে ইস্টার্ন রিফাইনারি ইউনিট-২-এ সম্ভাব্য অর্থায়নের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতেও রাষ্ট্রদূতকে আহ্বান জানান। তিনি সৌদি আরবে সার শিল্প স্থাপনের জন্য বাংলাদেশের প্রস্তাবকে সহজতর করতে কেএসএর প্রস্তুতির কথাও জানান।
বৈঠকে সৌদি রাষ্ট্রদূত ও বাংলাদেশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সহযোগিতাসংক্রান্ত পারস্পরিক স্বার্থের বিষয়ে মতবিনিময় করেন। রাষ্ট্রদূত সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল-সৌদের একটি চিঠি মন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন। এ চিঠিতে চলমান পারস্পরিক সহযোগিতা পর্যালোচনা ও ত্বরান্বিত করতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সৌদি আরবে সরকারি সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ আমন্ত্রণ গ্রহণ করে রাষ্ট্রদূতকে ধন্যবাদ জানান এবং কূটনৈতিক মাধ্যমে সফরের সময়সূচি ঠিক করা হবে বলে জানান।
বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং সৌদি রাষ্ট্রদূত দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে আলোচনা ও পর্যালোচনা করে তারা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা, জনশক্তি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্রুত বিকাশমান সম্পর্কের অবস্থা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
সৌদি আরবে আরও বাংলাদেশি কর্মীদের কর্মসংস্থানের বিষয়ে কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বিভিন্ন পেশায় দক্ষ কর্মী ও প্রযুক্তিবিদ দিতে বাংলাদেশের প্রস্তুতির কথাও জানান তিনি। বিশেষায়িত পেশায় জনশক্তিকে প্রশিক্ষণের জন্য ডেডিকেটেড বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট করতে জন্য সরকারের প্রস্তুতির ইঙ্গিত দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বহুপক্ষীয় মঞ্চে সৌদি আরবের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদে এক্সপো-২০৩০ আয়োজনে সৌদি আরবের প্রতি বাংলাদেশের সমর্থনের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। সৌদি রাষ্ট্রদূত দ্বিপক্ষীয় সম্পৃক্ততাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য এবং বহুপক্ষীয় ফোরামে অব্যাহত সমর্থনের জন্য মন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
দীর্ঘ দুই বছর পর ফেব্রুয়ারির প্রথম দিনে উদ্বোধন হয়েছে বাঙালির প্রাণের মেলা অমর একুশে বইমেলার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশরীরে উপস্থিত থেকে বুধবার বিকেলে মেলার উদ্বোধন করেন। তবে মেলা উদ্বোধন হলেও ঘাটতি রয়েছে প্রস্তুতিতে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি হয়ে মেলায় প্রবেশপথের রাস্তায় বসানো হয়নি কোনো লাইট। সন্ধ্যা নামতেই অন্ধকারে ছেয়ে গেছে মেলার প্রবেশপথ। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে এই পথের মধ্যখানে বসানো ব্যারিকেডগুলোও সরানো হয়নি। ফলে অন্ধকারের মধ্যে যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থেকে যায়।
স্টল তৈরির সময় ফেলে দেয়া ককশিট, ফোম, গাছের শাখা, ইটের টুকরা, কাঠ, পলিথিনসহ বিভিন্ন আবর্জনায় সয়লাব সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মেলা চত্বর। কোনো কোনো স্টল তৈরির কাজ এখনো শেষ হয়নি। চলছে হাতুড়ি পেটানোর শব্দ। মেলাস্থলজুড়ে এক হযবরল অবস্থা।
স্টলের সামনে আবর্জনার স্তূপ থেকে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রকাশনীসংশ্লিষ্টরা।
গ্রন্থরাজ্য প্রকাশনীর প্রকাশক রাজিব দত্ত বলেন, ‘অন্যান্যবার মেলা শুরুর আগেই এসব আবর্জনা পরিষ্কার করে ফেলা হয়। কিন্তু এবার পরিষ্কার হয়নি। অনেক ময়লা-আবর্জনা সবদিকে ছড়িয়ে আছে। এটা দেখতে দৃষ্টিকটু মনে হচ্ছে। এটা আমাদের স্টলের সৌন্দর্য যেমন নষ্ট করছে, তেমনি মেলার সৌন্দর্যও নষ্ট করছে।’
চিরদিন প্রকাশনীর প্রকাশক বলেন, ‘আগের বছরগুলোতে একটা কাগজ পড়তে দেয়া হয়নি। অথচ এবার ফোম ছাড়াও আমার স্টলের সামনে গাছের ডালপালা জড়ো করে রাখা হয়েছে। এটা আমার স্টলের সৌন্দর্য নষ্ট করছে। এটা নিয়ে আমি কয়েক জায়গায় কথা বলেছি। বেশি বললে আবার আগামী বছর স্টলও পাব না। আর কথা বলতে চাই না।’
তবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে থাকা স্টলগুলোর সামনে এ রকম কোনো ময়লা-আবর্জনা চোখে পড়েনি। এখানকার সব স্টল তৈরির কাজ প্রায় শেষ। তবে অধিকাংশ স্টল সম্পূর্ণ খালি। তাদের বই সাজানোর কাজ এখনো বাকি।
স্টল সাজানোর কাজ বাকি কেন জানতে চাইলে আইসিটি ডিভিশন স্টলের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ আমাদেরই ব্যর্থতা। আমরা মূলত কাজ শুরু করেছি দেরিতে। আর ডিজাইনের কাজ সময়সাপেক্ষ হওয়ার কারণে একটু সময় লাগছে।’
সার্বিক বিষয়ে বাংলা একাডেমির পরিচালক এবং মেলা কমিটির সদস্য সচিব ডা. কে এম মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এবার নিরাপত্তা বাহিনীর এত বেশি নির্দেশনা ছিল যে আমি তিন দিন ধরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ঘিরে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। আমরা একটু আগে ঘোষণা দিয়েছি, যারা স্টল নির্মাণ করছে তারা নিজ দায়িত্বে তাদের অবশিষ্ট অংশগুলো যেন সরিয়ে ফেলে। আর কোনো স্টল যদি ভালোভাবে মেরামত না হয়, তাহলে কাল (আজ) ১২টার পর আমরা তাদের স্টল বাতিল করে দেব।’
লাইটিংয়ের বিষয়ে মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এটা সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব। কাল আমি তাদের সঙ্গে কথা বলবো আর নিরাপত্তার কারণে বিভিন্ন জায়গায় বাঁশ-কাঠ বসানো হয়েছে। সেগুলো তুলতে একটু সময় লাগছে। পরশু দিন থেকে আমরা ভালো একটা মেলা উপহার দিতে পারব ইনশাআল্লাহ।’
দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিএনপির সংসদ সদস্যদের ছেড়ে দেয়া ছয় সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন। ছয় আসনের মধ্যে তিনটিতে (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ ও বগুড়া-৬) প্রার্থী দিয়ে জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তাদের সমর্থন দেয়া ১৪-দলীয় জোটের প্রার্থীও জয় পেয়েছেন বগুড়া-৪ আসনে। তবে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে হেরে গেছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী। আর উন্মুক্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে জয় পেয়েছেন আসনটি ছেড়ে দিয়ে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া।
বুধবার রাতে আসনগুলোর রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এসব প্রার্থীকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। এর আগে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট চলে। তবে দিনভর সব আসনেই ভোটারদের উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পুরোটা সময়ই ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বরতদের অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে বিচ্ছিন্ন দু-একটি ঘটনা ছাড়া বাকি আসনগুলোয় তেমন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবরও পাওয়া যায়নি।
সারা দিনের ভোটের মাঠ
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ ও ৩ আসনে ভোটের মাঠে ছিলেন ৯ প্রার্থী। আওয়ামী লীগ ছাড়াও ছিলেন ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীরা। তবে ভোট নিয়ে ভোটারদের মধ্যে তেমন আগ্রহ ছিল না। তার প্রতিফলন দেখা গেল ভোটের দিনেও। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে ভোট পড়েছে মাত্র ৩৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে ভোট পড়েছে একটু বেশি, ২৯ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে সকালে ভোট গ্রহণ শুরুর কিছুক্ষণ পরই সেখানে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে সোয়া ১০টার দিকে ওই ভোটকেন্দ্রের মাঠ থেকে পাওয়া যায় একটি ককটেল। র্যাবের বোমা নিষ্ক্রিয় দল সেটি উদ্ধার করে নিয়ে যায়। পরে বেলা আড়াইটার দিকে আদর্শ স্কুল কেন্দ্রের অদূরে শান্তি মোড় এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও তিনটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় আওয়ামী লীগের দুই কর্মীর দুই মোটরসাইকেল ভাঙচুর হয়। কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোবিন্দসহ বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার কথা জানান ছাত্রলীগ নেতারা। পরে ওই এলাকায় অতিরিক্তি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এরপর আর অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনেও শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়েছে ভোট। সেখানেও ভোটারদের উপস্থিতি কম ছিল। ওই আসনের প্রার্থী মোহাম্মদ আলী সরকার বেশ কিছু কেন্দ্র তার নির্বাচনী এজেন্ট বের করে দেয়ার কথা বললেও সে অভিযোগের সত্যতা পাননি বলে জানিয়েছেন ওই আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন।
ভোট শেষে চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খান বলেন, ‘সবার সহযোগিতায় আমরা একটি নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন করেছি। দু-একটি ছোটখাটো বিচ্ছন্ন ঘটনা ছিল, তাৎক্ষণিকভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করেছি।’
ভোটারদের খরা ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনেও। এই আসনে ভোট পড়েছে মাত্র ১৫ শতাংশের কিছু বেশি। আশুগঞ্জ উপজেলা তারুয়া শালুকপাড়া বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল পৌনে ৯টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ভোট পড়ে মাত্র পাঁচটি। আশুগঞ্জের উপজেলার আরেক কেন্দ্র আড়াইসিধা কে বি উচ্চবিদ্যালয়ে ৪০ মিনিটে ভোট দেন মাত্র চারজন। একই চিত্র দেখা গেছে অন্য কেন্দ্রগুলোতেও।
নির্বাচনী প্রচারণার পুরো সময়ের মতো ভোটের দিনও আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়ার পক্ষেই মাঠে দেখা গেছে আওয়ামী লীগ নেতাদের। ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়েও যেতে দেখা গেছে তাদের। অন্যদিকে নিখোঁজ হয়ে আলোচনায় আসা আবু আসিফ আহমেদের দেখা এদিনও মেলেনি। অনেক কেন্দ্রেই তার এজেন্টও দেখা যায়নি। তবে আসিফের স্ত্রী মেহেরুন্নিছার অভিযোগ, কিছু কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। উপনির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরবিন্দ বিশ্বাস অবশ্য জানান, এজেন্ট বের করে দেয়ার কোনো অভিযোগ পাননি।
এদিকে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বগুড়া-৬ তথা সদর আসনের বগুড়া জিলা স্কুল কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রে ভোটার নেই বললেই চলে। সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত প্রথম ১ ঘণ্টায় সেখানে ভোট দেন মাত্র ৩১ জন। শহরের চকসূত্রাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সকাল সোয়া ১০টা পর্যন্ত ভোট পড়ে ৪৬টি। বাকি কেন্দ্রগুলোর অবস্থাও ছিল একই। এ আসনে দিন শেষে ভোট পড়েছে ২২ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
বগুড়া-৪ আসনেও দেখা যায়নি ভিন্ন চিত্র। কহুলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ভোট পড়ে মাত্র ৭০টি। আবার কাহালুর দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বেলা ২টা পর্যন্ত ভোট পড়ে ২৪০টি। সব মিলিয়ে এ আসনে ভোট পড়েছে ২৪ শতাংশেরও কম।
এদিকে বগুড়া-৬ আসনের এক কেন্দ্রে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ ছিল। পরে স্ট্রাইকিং ফোর্সসহ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঘণ্টাখানেক কেন্দ্রটিতে অবস্থান নেন। তবে অপ্রীতিকর কিছু ঘটেনি বলে জানান কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নুর উদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর।
এ ছাড়া কেন্দ্র দখলের অভিযোগ করেন বগুড়া-৬ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মান্নান। ভোটকেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেয়ার অভিযোগ করেন আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী মাসুদার রহমান।
ঠাকুরগাঁওয়ে ভোটারদের কম উপস্থিতির পাশাপাশি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন নিয়ে জটিলতার অভিযোগ পাওয়া যায়। এ অভিযোগে বেশ কিছু কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শুরু হয় দেরিতে। পরে এক ঘণ্টার মধ্যে সেসব সমস্যার সমাধান করা হয়। শুরুর দিকে কেন্দ্রগুলোতে পুরুষ ভোটারদের তুলনায় নারী ভোটারদের উপস্থিতি বেশি দেখা যায়।
এই আসনের দুই উপজেলার ১২৮টি কেন্দ্রের মধ্যে অধিকাংশ কেন্দ্রে সারা দিন ভোটারদের তেমন ভিড় দেখা যায়নি। বেলা ২টার পর রাণীশংকৈল-পীরগঞ্জ উপজেলার ২০টিরও বেশি কেন্দ্র ঘুরে কোনো ভোটারই দেখা যায়নি। তবে কিছু ভোটকেন্দ্রে শতবর্ষীসহ প্রবীণ ভোটারও দেখা গেছে। পাশাপাশি প্রার্থীদের পক্ষ থেকেও কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অন্য আসনগুলোর তুলনায় এ আসনে ভোট পড়েছে একটু বেশি, ৪৬ দশমিক ২৯ শতাংশ।
বিকেলে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের আঞ্চলিক রিটার্নিং কর্মকর্তা জি এম সাহাতাব উদ্দিন বলেন, যেসব ভোটার ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে এসেছেন, তারা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিয়েছেন। কোনো বিশৃঙ্খলা হয়নি।
সন্তুষ্ট নির্বাচন কমিশন
অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ না পাওয়া এবং তেমন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটায় ছয় সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন নিয়ে সন্তুষ্ট নির্বাচন কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ভোট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা টিভি চ্যানেলগুলোর ওপর সর্বক্ষণ দৃষ্টি রেখেছিলাম। অনিয়ম বা কারচুপির উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। অনলাইন পত্রিকা বিশেষভাবে পাঠ করেছি। ছয়টি জায়গায় ধাওয়া-পালটা ধাওয়া হয়েছে। একটি জায়গায় তাজা ককটেল পাওয়া গেছে। ভোটকেন্দ্রের বাইরে দু-একটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটেছে। এর বাইরে তেমন কিছু ঘটেনি।’
ওই সময় ছয় আসনে ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ ভোট পড়তে পারে বলে ধারণা দেন সিইসি।
ভোটে জিতলেন যারা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে ৪৪ হাজার ৯১৬ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন কলার ছড়ি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির আব্দুল হামিদ ভাসানী পেয়েছেন ৯ হাজার ৬৩৫ ভোট।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে ৯২ হাজার ৯২৮ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের মু. জিয়াউর রহমান। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আলী সরকার পেয়েছেন ২৫ হাজার ৩৯৯ ভোট। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগের আব্দুল ওদুদ ৫৯ হাজার ৬৩৮ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী সামিউল হক লিটন পেয়েছেন ৫৫ হাজার ৯৮০ ভোট।
বগুড়া-৪ আসনে ২০ হাজার ৪০৫ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) প্রার্থী এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম পেয়েছেন ১৯ হাজার ৫৭১ ভোট। মাত্র ৮৩৪ ভোটে তিনি পরাজিত হয়েছেন। বগুড়ার আরেক আসন সদরে ৪৯ হাজার ৩৩৬ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রাগেবুল আহসান রিপু। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী (‘বিদ্রোহী’) আব্দুল মান্নান পেয়েছেন ২১ হাজার ৮৬৪ ভোট। এই আসনে হিরো আলম পেয়েছেন ৫ হাজার ২৭৪ ভোট।
এদিকে ঠাকুরগাঁওয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী ইয়াসিন আলীকে হারিয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় পার্টির হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ। তিনি পেয়েছেন ৮৪ হাজার ৪৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী (আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’) গোপাল চন্দ্র রায় পেয়েছেন ৫০ হাজার ৩০৯ ভোট। তৃতীয় স্থানে থাকা ইয়াসিন পেয়েছেন ১১ হাজার ৩৫৬ ভোট।
[প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন দৈনিক বাংলার ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি এবং প্রতিবেদকরা]
সাগরের পানি থেকে হাইড্রোজেন বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়ে আলোচনা চলছে বলে সংসদে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ধরনের বিদ্যুৎ উৎপাদন নতুন ধারণা উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, এ বিষয়ে যেসব কোম্পানি প্রস্তাব দিয়েছে তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। যদি সম্ভব হয় তাহলে মাতারবাড়ী, মহেশখালী বা বাঁশখালীতে হাইড্রোজেন বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে।
জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে বুধবার সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খানের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়।
আনোয়ার হোসেন তার প্রশ্নে কক্সবাজারসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে সুবিধাজনক স্থানে সাগরের পানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জলবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে সরকারের পরিকল্পনা আছে কি না তা জানতে চান।
উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের কোনো কোনো দেশে সমুদ্রের জোয়ার-ভাটাকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়, যা ব্যয়সাপেক্ষ এবং তা বাণিজ্যিকভাবে ফলপ্রসূ হয়নি। ব্যয়সাপেক্ষ হওয়ায় এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কোনো পরিকল্পনা এই মুহূর্তে নেই।
সাগরের পানি থেকে হাইড্রোজেন বিদ্যুৎ উৎপাদনের ধারণার কথা জানান শেখ হাসিনা। এটা খুবই ব্যয়সাপেক্ষ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এই ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের খরচ কমে এলে বঙ্গোপসাগরের জোয়ার-ভাটাকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে।
কাজিম উদ্দিন আহম্মেদের প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের পদক্ষেপের ফলে ২০২২ সালে রেকর্ড পরিমাণ ১১ লাখ ১৩ হাজার ৩৭৪ কর্মীর বৈদেশিক কর্মসংস্থান হয়েছে। এর মধ্যে নারী কর্মীর সংখ্যা ১ লাখ ৫ হাজার ৪৬৬ জন।
সরকারপ্রধান বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে ১ হাজার ৫৫৮টি সেতু ও ৭ হাজার ৪৯৮টি কালভার্ট নির্মাণ বা পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। ৯০৮ দশমিক ৪৯ কিলোমিটার সড়ক চার লেন বা তদূর্ধ্ব লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ২৩৫ দশমিক শূন্য ৩ কিলোমিটার ইতিমধ্যে সড়ক চার লেন বা তদূর্ধ্ব লেনে উন্নীত হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য যারা একটি অনির্বাচিত সরকারের পক্ষে কথা বলছেন তাদের নিন্দা করে ২০০৭-০৮ সময়কালে এমন সরকারের কাছ থেকে কারা লাভবান হয়েছিল, তা ভাবতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘২০০৭-০৮ সালে একটি অনির্বাচিত সরকার (বাংলাদেশে) ছিল এবং এতে কার কী লাভ হয়েছিল? বরং অশুদ্ধ হয়েছিল দেশের সংবিধান। ক্ষতি হয়েছিল দেশের মানুষের জীবনমানের।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার বিকেলে রাজধানীর বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে মাসব্যাপী ‘অমর একুশে বইমেলা-২০২৩’ উদ্বোধনকালে দেয়া প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে (তথাকথিত) খুব জ্ঞানী বিজ্ঞানী আছেন। তাদের কাছে আবার এটাও শুনলাম- দুই-চার বছরের জন্য যদি অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসে, তাহলেও তো আর মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কাজেই আপনারা বুঝতে পারেন কারা বলতে পারে? ২০০৭-০৮ সালে তো অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় ছিল, কার কী লাভ হয়েছিল? কারণ কিছু এগাছের ছাল ওগাছের বাকল নিয়ে একটা দল করার চেষ্টা, এ দল-সে দল থেকে ভিড়িয়ে দল করার চেষ্টা, আমরা রাজনীতিবিদরা সব খারাপ, আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে জেলে ভরা হলো এবং কিছু সুযোগসন্ধানী তখন মাথা তুলে দাঁড়াল এবং কিংস পার্টি গঠনসহ বিভিন্ন রকম প্রচষ্টা চালাল।’
প্রধানমন্ত্রী এর উত্তরে বলেন, ‘মহাভারত অশুদ্ধ হবে না এটা ঠিক। কিন্তু অশুদ্ধ হবে আমাদের সংবিধান। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই স্বাধীনতা এবং এর আট মাসের মাথায় জাতির পিতা আমাদের দিয়েছিলেন এই সংবিধান। আর অশুদ্ধ হবে বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান। কারণ ওই দুই বছরের অভিজ্ঞতা যদি একটু স্মরণ করেন। তখন ব্যবসা-বাণিজ্য, সহিত্যচর্চা, অর্থনৈতিক অবস্থা সবই বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। একটা বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয় যখন, তখন সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়।’
সেই নির্বাচনে বিএনপি ৩০টি আসনে এবং বাকি আসনে আওয়ামী লীগ নেতৃতাধীন মহাজোট বিজয়ী হয়। এর পর থেকে জনগণের জন্য কাজ করে জনণের সমর্থন নিয়েই আওয়ামী লীগ এ পর্যন্ত ক্ষমতায় রয়েছে, বলেন তিনি। তার সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করেছিল বলেই দেশে এখন গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে এবং প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। সংস্কৃতি সচিব মো. আবুল মনসুরও বক্তব্য রাখেন। বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহাপরিচালক মোহাম্মদ নুরুল হুদা। আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন।
অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত সাতটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। যার মধ্যে রয়েছে- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পাদিত শেখ মুজিবুর রহমান রচনাবলি-১, কারাগারের রোজনামচা পাঠ বিশ্লেষণ, অসমাপ্ত আত্মজীবনী পাঠ বিশ্লেষণ ও আমার দেখা নয়াচীন পাঠ বিশ্লেষণ; রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ রচিত ‘আমার জীবন নীতি, আমার রাজনীতি’ এবং জেলা সাহিত্য মেলা ২০২২ (১ম খণ্ড)।
এ ছাড়া বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২২ প্রাপ্ত ১৫ জন কবি, লেখক ও গবেষকের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন ফারুক মাহমুদ ও তারিক সুজাত (যৌথভাবে কবিতায়), তাপস মজুমদার ও পারভেজ হোসেন (যৌথভাবে কথাসাহিত্যে), মাসুদুজ্জামান (প্রবন্ধ/গবেষণায়), আলম খোরশেদ (অনুবাদ), মিলন কান্তি দে এবং ফরিদ আহমদ দুলাল (যৌথভাবে নাটকে), ধ্রুব এষ (কিশোর সাহিত্য), মুহাম্মদ শামসুল হক (মুক্তিযুদ্ধের ওপর গবেষণা), সুভাষ সিংহ রায় (বঙ্গবন্ধুর ওপর গবেষণা), মোকারম হোসেন (বিজ্ঞান/বিজ্ঞান কথাসাহিত্য/পরিবেশ বিজ্ঞান), ইকতিয়ার চৌধুরী (জীবনী/স্মৃতিকার/ভ্রমণকাহিনি) এবং আব্দুল খালেক এবং মুহাম্মদ আব্দুল জলিল (যৌথভাবে লোককাহিনিতে)।
এর আগে জাতীয় সংগীত এবং অমর একুশের সংগীত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ সমবেত কণ্ঠে পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এর পরই সবাই অমর একুশের শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।
উদ্বোধনী স্মারকে স্বাক্ষর করে বইমেলা উদ্বোধনের পর বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদ ভবনে রাষ্ট্রপতির অফিস কক্ষে এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। বিষয়টি জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন।
সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে সরকারের গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ একুশে বইমেলায় ‘আমার জীবননীতি আমার রাজনীতি’ শীর্ষক তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
বাংলাদেশি নাগরিক ইমরান শরীফের কাছ থেকে দুই সন্তানকে নিজের জিম্মায় নিতে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়া জাপানি মাকে আবারও ফিরিয়ে দিল ইমিগ্রেশন পুলিশ।
গত মঙ্গলবার রাতে জাপানি মা নাকানো এরিকো বড় মেয়েকে নিয়ে দেশ ছাড়ার চেষ্টা করেন। তবে দ্বিতীয়বারের মতো আবারও তাকে ফিরিয়ে দেয় ইমিগ্রেশন পুলিশ। এর আগে আইন অমান্য করে গত ২৩ ডিসেম্বর দুই সন্তানকে নিয়ে জাপানে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন নাকানো এরিকো। তখনো ইমিগ্রেশন পুলিশ তাদের হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেয়।
এদিকে বুধবার ভোরে গুলশানের কালাচাঁদপুরের একটি বাসা থেকে ইমরান শরীফ ও তার ছোট মেয়েকে নিজেদের হেফাজতে নেয়ার কথা জানিয়েছে র্যাব। তবে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে র্যাবের কোনো কর্মকর্তা মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ জানুয়ারি আদালত দুই মেয়েকে মায়ের জিম্মায় রাখার আদেশ দেন। এরপর গত মঙ্গলবার রাতে বড় মেয়েকে নিয়ে দেশ ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন মা নাকানো। কিন্তু ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে আদালতের কোনো আদেশ না থাকায় তাদের দেশ ছাড়তে বাধা দেয়া হয়।
এদিকে র্যাবের একটি সূত্র জানিয়েছে, বুধবার ভোরে র্যাবের একটি দল গুলশানের কালাচাঁদপুর এলাকার একটি বাসা থেকে ছোট মেয়েসহ বাবা ইমরান শরীফকে নিজেদের হেফাজতে নেয়া হয়। পরে বুধবার তাদের গুলশান থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শিবলী জানান, বাবা ইমরান শরীফকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে তার কাছে থাকা ছোট মেয়েকে তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানো হয়েছে।
জাপানি দুই শিশুকে নিজের হেফাজতে রাখা নিয়ে এক বছর ধরে আইনি লড়াই চালিয়ে আসছিলেন জাপানি মা নাকানো এরিকো ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ইমরান শরীফ। ইমরান ও নাকানো ২০০৮ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেও ২০২০ সালে নাকানো বিচ্ছেদের আবেদন করেন। এরপর তিন সন্তানের মধ্যে বড় দুই সন্তানকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন ইমরান শরীফ।
২০২১ সালের আগস্টে দুই মেয়েকে নিজের হেফাজতে নেয়ার জন্য বাংলাদেশে এসে আইনি লড়াই শুরু করেন জাপানি চিকিৎসক মা নাকানো এরিকো। উচ্চ আদালতে এ নিয়ে রিট করা হলে আদালত প্রথমে বাবার কাছে দুই মেয়েকে রেখে মায়ের সঙ্গে নির্দিষ্ট সময়ে সাক্ষাতের সুযোগ দেয়ার আদেশ দেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলেও আপিল বিভাগ দুই সন্তানকে মায়ের কাছে রাখার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে এ-সংক্রান্ত বাবা ইমরান শরীফের দায়ের করা পারিবারিক আদালতের বিচার দ্রুত নিষ্পন্ন করারও নির্দেশনা দেন। গত ২৯ জানুয়ারি পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান দুই মেয়েকে মায়ের হেফাজতে দেয়ার নির্দেশ দেন। তবে এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা জানিয়েছেন ইমরান শরীফ।
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় সরকারি সড়কের পাশে লাগানো অর্ধশত তালগাছ মারতে অভিনব কায়দায় কীটনাশক প্রয়োগের অভিযোগ ওঠায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শাহরিয়ার আলমকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি তাকে হাজির হতে বলা হয়েছে। বুধবার বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন।
আদালতের আদেশের বিষয়টি দৈনিক বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহফুজা বেগম। তিনি বলেন, এ আদেশটি আদালত আজ বাংলায় দিয়েছেন।
আদালত বলেছেন, ‘খবরে উল্লেখিত ঘটনাটি আমাদের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। সবুজ বনায়ন ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রীর বৃক্ষরোপণের উদ্দেশ্য ও অঙ্গীকারকে বিবেচনায় নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত রুল দিচ্ছি।’
আদেশে আদালত আরও বলেছেন, বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও কৃষি কর্মকর্তা যৌথভাবে সরেজমিন তদন্ত করবেন। তারা উল্লেখিত গাছগুলোর ছবিসহ প্রতিবেদন সাত দিনের মধ্যে আদালতে দাখিল করবেন। প্রতিবেদন দাখিলের সময় বাগমারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে আদালতে উপস্থিত থাকতে হবে।
আদেশের কপি বিভাগীয় বন কর্মকর্তার বরাবর পাঠাতে বলেছেন আদালত। ওই আদেশের পাশাপাশি রুল জারি করেছেন আদালত। রুলে ৫০টি তালগাছ মেরে ফেলতে কীটনাশক প্রয়োগের জন্য কেন শাহরিয়ারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে না এবং পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
‘৫০ তালগাছে কীটনাশক; দোষীর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ কেন নয়’ শিরোনামে গত মঙ্গলবার একটি জাতীয় পত্রিকায় সম্পাদকীয় ছাপা হয়। সেই প্রতিবেদনের আলোকে আদালত আজকে এ রায় দেন।
উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) থেকে অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত জামিল আহমদ, মো. হুমায়ুন কবির, ওয়াই এম বেলালুর রহমান এবং মীর রেজাউল আলমকে র্যাঙ্ক-ব্যাজ পরিয়ে দিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
বুধবার বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তরের হল অব প্রাইডে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের র্যাঙ্ক ব্যাজ পরিয়ে দেন আইজিপি। এসময় পদোন্নতিপ্রাপ্তদের স্ত্রীরাও সঙ্গে ছিলেন। আইজিপি তাদের ফুল দিয়ে অভিনন্দিত করেন।
এ সময় দেশ ও জনগণের কল্যাণে পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত আইজিপিদের প্রতি আহ্বান জানান আইজিপি।
তাদের অভিনন্দন জানিয়ে আইজিপি বলেন, ‘আপনারা দক্ষতা, যোগ্যতা ও মেধার স্বাক্ষর রেখে আজ এ পর্যায়ে এসেছেন। আমি আশা করি, আগামী দিনেও আপনারা সেবার ব্রত নিয়ে আপনাদের মেধার সর্বোচ্চটুকু দিয়ে দেশের উন্নয়নের জন্য, স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার জন্য, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য কাজ করবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশ পুলিশের পদের সংখ্যা বৃদ্ধি করায় আমাদের পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি এজন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।’
অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মো. কামরুল আহসান ও স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. মনিরুল ইসলাম গ্রেড-১ পদে পদোন্নতি পাওয়ায় তাদেরও ফুলেল শুভেচ্ছা জানান আইজিপি।