স্বায়ত্তশাসিত এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন প্রতিষ্ঠানকে সরকারি চাকরি আইনের অধীনে আনতে যাচ্ছে সরকার।
এ জন্য সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে সংশোধিত সরকারি চাকরি আইনের খসড়ার অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
সভা শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সরকারি চাকরি আইন নিয়ে অর্থ বিভাগের একটি পর্যালোচনা ছিল। সেজন্য আইনটি সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বেতনভাতা অর্থ বিভাগ থেকে হয়। সরকারি চাকরি আইনে কিছু বিষয় অস্পষ্ট ছিল। এখন আইন সংশোধন করে বিষয়গুলো স্পষ্ট করা হচ্ছে।
সরকারি চাকরি আইন প্রজাতন্ত্রের কাজে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য হলেও সংবিধান দ্বারা সৃষ্ট কোনো চাকরি বা পদ, বিচার-কর্ম বিভাগ, প্রতিরক্ষা-কর্ম বিভাগ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় সংসদ সচিবালয়, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, স্বশাসিত সংস্থা ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প, কর্মসূচি বা অনুরূপ কোনো কার্যক্রমের আওতাধীন চাকরি এবং অ্যাপ্রেনটিস, চুক্তি বা এডহকভিত্তিক অথবা অন্য কোনো প্রকার অস্থায়ী, সাময়িক বা খণ্ডকালীন চাকরিকে এই আইনের আওতার বাইরে রাখা হয়েছিল।
একজন কর্মকর্তা বলেন, এখন আইন সংশোধন করে স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় সরকার বিভাগে নিয়োজিত কর্মচারীদের সরকারি চাকরি আইনের অধীনে আনা হচ্ছে।
আইন সংশোধনের কারণ হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারি চাকরি আইন কার্যকর হওয়ায় পাবলিক সারভেন্ট (রিটারমেন্ট) অ্যাক্ট-১৯৭৪, দ্য সার্ভিসেস (রিঅর্গানাইজেশন অ্যান্ড কন্ডিশনস) অ্যাক্ট-১৯৭৫, দ্য গভর্মেন্ট সার্ভিসেস (স্পেশাল প্রভিশনস) অর্ডিন্যান্স-১৯৭৯, দ্য পাবলিক এমপ্লয়ি ডিসিপ্লিন (পাংচুয়াল অ্যাটেনডেন্স) অর্ডিন্যান্স-১৯৮২, দ্য পাবলিক সারভেন্টস (ডিসমিসাল অন কনভিকেশন) অর্ডিন্যান্স-১৯৮৫ এবং উদ্ধৃত সরকারি কর্মচারী আত্তীকরণ আইন-২০১৬ বিলুপ্ত করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের একজন কর্মকর্তা বলেন, বিলুপ্ত করে দেয়া আইনগুলো দিয়ে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত ব্যক্তিদের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পাদন করা হতো। এসব বিভাগ ও সেখানে কর্মরতদের বর্তমানে সরকারি চাকরি আইনের আওতাবহির্ভূত রাখা হয়েছে। ফলে বাতিলকৃত আইনগুলো দিয়ে যেসব কার্যক্রম সম্পন্ন হতো সেসব কার্যক্রম সম্পাদনে যেন ব্যাঘাত সৃষ্টি নয়, সে জন্য সরকারি আইনে একটি নতুন উপধারা যোগ করা হচ্ছে।
সংশোধিত খসড়ার নতুন উপধারায় বলা হয়েছে, ‘এই আইনের ধারা ১৫, ৪১, ৪২, ৪৩, ৪৪ ও ৪৫-এর বিধান স্বশাসিত সংস্থা, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় সরকার বিভাগে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্যও প্রযোজ্য হবে।’ এসব ধারায় বেতন-ভাতা ও সুবিধা নির্ধারণ, ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত কর্মচারীর ক্ষেত্রে ব্যবস্থাদি, ফৌজদারি মামলায় দণ্ডিত কর্মচারীর ক্ষেত্রে ব্যবস্থা, সরকারি কর্মচারীর অবসর গ্রহণ, ঐচ্ছিক অবসর গ্রহণ এবং সরকার কর্তৃক অবসর দেয়ার বিষয়ে বলা আছে।
এর বাইরে সরকারি চাকরি আইনে করণিক কিছু ভুল সংশোধন করা হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটারপ্রতি একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ ১০ টাকা ব্যয় করতে পারবেন বিধানসহ একগুচ্ছ সংস্কার প্রস্তাব এনে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন আইন মন্ত্রণালয় পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
আজ বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সরকারের কাছে পাঠানো সংস্কারের প্রস্তাবের সার্বিক বিষয় সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী আইন সংস্কার নিয়ে মাসখানেক ধরে দফায় দফায় পর্যালোচনা করে নির্বাচন কমিশন। এরপর আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়, সেখানে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন এসব প্রস্তাব পাঠালেও কোনটা থাকবে, কোনটা থাকবে না, তা নির্ভর করবে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদনের ওপর।
আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষে সরকারের সায় পেলে রাষ্ট্রপতি সংশোধন অধ্যাদেশ জারি করবেন।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে প্রথমবারের মতো ফেরারি আসামিদের ভোটে অযোগ্য ঘোষণার বিধান আরপিওতে যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। কোনো আদালতে দুই বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত হলে অযোগ্যতার বিধান রয়েছে বিদ্যমান আইনে।
আরপিওতে নতুন বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে জানিয়ে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, যে কোনো ফৌজদারি মামলায় ফেরারি আসামি হলে অযোগ্য হবেন। অপব্যবহারের আশঙ্কা থেকে এটা করতে চাইনি। কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে এটা করা হয়েছে। সামনে যদি অপব্যবহার হয়, তবে আবার এটা পর্যালোচনা করতে হবে।
এই নির্বাচন কমিশনার জানান, এবার প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় জামানত ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেছে ইসি।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ থাকলেও অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিধান রাখা হয়নি।
ভোটারপ্রতি ১০ টাকা হারে আসনের ভোটার সংখ্যার সমান ব্যয় এর সুযোগ রাখা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে ২৫ লাখ টাকা নির্বাচনী ব্যয়ের সুযোগ ছিল প্রত্যেক প্রার্থীর। সে বিধান বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
আসনভিত্তিক ভোটার তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সব থেকে বেশি ভোটার রয়েছে গাজীপুর-২ আসনে। এই আসনের ভোটার ৭ লাখ ৭৯ হাজার ৭২৬ জন। অন্যদিকে, সবচেয়ে কম ভোটারের আসন হচ্ছে ঝালকাঠি-১ আসনে। এই আসনে ভোটার ২ লাখ ১২ হাজার ১২ জন।
এবার ভোটারপ্রতি ১০ টাকা হারে ব্যয়ের সুযোগ রেখে প্রস্তাব দেওয়ায় গাজীপুরের এই আসনটিতে ভোটারের জন্য সর্বোচ্চ প্রায় ৭৮ লাখ টাকা ব্যয়ের সুযোগ থাকছে। এ ছাড়া ঢাকা ১৯ আসনে সর্বোচ্চ সাড়ে ৭ লাখ ভোটারের জন্য ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন প্রার্থীরা।
এ নির্বাচন কমিশনার জানান, অনিয়ম হলে রিটার্নিং অফিসার একটি বা একাধিক কেন্দ্র বা পুরো আসনের নির্বাচন বাতিল করতে পারবেন।
১০ কোটি ৯৫ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সাবেক সহ-সভাপতি ও ব্যবসায়ী সফিউল্লাহ আল মুনিরের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ বুধবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের উপপরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, সম্পদ অর্জনে আসামির বৈধ উৎসের পরিমাণ ৪৯ লাখ ৭৮ হাজার ৪৭৬ টাকা। অনুসন্ধানকালে আসামির নামে ১১ কোটি ৪৪ লাখ ৯০ হাজার ১২৫ টাকার সম্পদ পাওয়া যায়। যার মধ্যে ১০ কোটি ৯৫ লাখ ১১ হাজার ৬৪৯ টাকার সম্পদের বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি।
দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান ইনডেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সফিউল্লাহ আল মুনির বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সহসভাপতি ও এশিয়া কাপ হকি ২০১৭-এর টুর্নামেন্ট কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া, তিনি ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেডের স্থায়ী সদস্য ও হকি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন।
আজ ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখ দুপুর ১২টায় বেবিচক সদরদপ্তরে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এর চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোঃ মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক, বিএসপি, জিইউপি, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, এসিএসসি, পিএসসি (Air Vice Marshal Md Mostafa Mahmood Siddiq, BSP, GUP, ndc, afwc, acsc, psc) এর সাথে পাকিস্তান সিভিল এভিয়েশন অথরিটির মহাপরিচালক জনাব নাদির শাফি দার (Mr. Nadir Shafi Dar) এক সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সরাসরি বিমান চলাচল পুনঃস্থাপন বিষয়ে ফলপ্রসূ মতবিনিময় হয় এবং উভয় পক্ষই এ বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। বৈঠকে ভবিষ্যতে বিমান চলাচল খাতে প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতা বিনিময়, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো আরও সুদৃঢ় করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
উভয় পক্ষ আশা প্রকাশ করেন যে, বিমান চলাচল পুনঃস্থাপন হলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, পর্যটন ও জনগণের পারস্পরিক যোগাযোগ আরও বৃদ্ধি পাবে।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বেবিচক এর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ এবং PIA এর CEO ।
একটা সময় গাছের শুকনো ডাল পাতা গাছের নিচেই পচে নষ্ট হতো , আবার গ্রামে মাটির চুলায় এগুলো জ্বালানি হিসেবে ও ব্যবহার করা হতো। কিন্তু বর্তমানে এগুলো দিয়ে বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করে বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে।
মানুষ নয় বিভিন্ন ধরনের পশু-পাখি যেমন কুকুর, বিড়াল, খরগোশ, ইঁদুর, গিরগিটি, সাপ ও পাখির জন্য গাছের শুকনো ডাল - পাতা এবং ঘাস রোদে শুকিয়ে তৈরি করা হচ্ছে পশু পাখির বাসা সহ খেলনা, পোশাক, খাবার ইত্যাদি। আর এসব তৈরি করে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছেন মাগুরার সফল উদ্যোক্তা রহমতুল ইসলাম বিদ্যুৎ ।
ছোটবেলা থেকেই পশু পাখির প্রতি ভালবাসা এবং নিজের মধ্যে শিল্পবোধ পুষে রেখেছিলেন এই উদ্যোক্তা। তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে দীর্ঘ ১৪ বছর যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানে লেখাপড়া ও ব্যবসা শেষ করে ২০১৮ সালে ফিরে আসেন নিজ জেলা মাগুরার কেশব মোড়ের বাসিন্দা রহমতুল ইসলাম বিদ্যুৎ। জাপানিজ স্ত্রী ও কন্যার অনুপ্রেরণায় তৈরি করেন সম্পূর্ণ পরিবেশ বান্ধব কারখানা । জাপান -বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে সম্পূর্ণ পরিবেশ বান্ধব কারখানাটির নামকরণ করা হয় "বোল্ড পার্টনারস লিমিটেড"।
মাগুরা- যশোর মহাসড়কের পাশে জাগলা এলাকায় ৪০ বিঘা জমির উপর গড়ে তোলেন ১০০% পরিবেশ বান্ধব এই কারখানা। নিজেদের উৎপাদিত ও সম্পূর্ণ দেশীয় পণ্য দিয়ে তৈরি পরিবেশবান্ধব এ কারখানায় কাজ করেন আড়াইশত নারী কর্মী । প্রায় ৩৫০ প্রকার প্রোডাক্ট তৈরি করা হয় এখানে। এছাড়াও আশেপাশের গ্রামের আরও তিন শতাধিক নারী ও পুরুষ কর্মী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করছেন এখানে। প্রায় পাঁচ শতধিক নারী পুরুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এখানে । অনেক প্রতিবন্ধীও কাজ করেন এখানে। তারা ঘরে বসেই বিভিন্ন ধরনের প্রোডাক্ট তৈরি করেন কারখানার কর্মীরা সেগুলো সংগ্রহ করে নিয়ে আসে। রহমতুল ইসলাম বিদ্যুৎ প্রথমে সবাইকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কাজ শেখান। বর্তমানে এখান থেকে প্রতিবছর ৫ থেকে ৬ লক্ষ ডলারের পণ্য রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে । এসব পণ্য ইউরোপ আমেরিকা কানাডা জাপান সহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়।
কয়েক বছর আগেও ফেলে দেয়া হতো পেঁপে গাছের নল ও পাতা। এখন সেগুলো দিয়ে তৈরি করা হয় প্রায় ৩০ প্রকার পশু ও পাখির বাসা। এইসব পণ্য তৈরি করতে লাগে বাঁশ ,পাটের দড়ি ,আম ও নিম গাছের শুকনো ডাল , পাতা,ঘাস ইত্যাদি।
এছাড়াও পেঁপে পাতা, আনারস ও আখ দিয়ে রোল বানিয়ে পশুর খাবার তৈরি করা হয়। এমনকি নীলকন্ঠ ফুল দিয়ে তৈরি করা হয় পশু পাখির পোশাক ও খাবার ।কারখানার পাশাপাশি প্রায় ২০ একর জমিতে এসব পণ্য তৈরি করার জন্য যে কাঁচামাল প্রয়োজন সেই গাছ গুলো রোপন করা হয় । পুরোপুরি চাহিদা পূরণ না হওয়ায় পাশের গ্রামগুলো থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করা হয় ।এসব পণ্য তৈরি করে স্বাবলম্বী হয়েছে মাগুরা সদর উপজেলার ফুলবাড়িয়া ,কেচুয়া ডুবি, জাগলা ,টিলা ,ভাবনহাটি ও বড়ষোলই গ্রামের মানুষজন।
সকাল ৭ঃ৩০ মিনিটে কারখানায় প্রবেশ করে কিছু নিয়ম মেনে কাজ শুরু করতে হয়। প্রথমে ব্যায়াম করে মিটিংএ যোগ দিতে হবে। তারপর মাস্ক পোশাক এবং ক্যাপ পরিধান করে হাতের ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে কারখানায় প্রবেশ করতে হয় । যার যার ধর্ম সুন্দরভাবে পালন করার ব্যবস্থা আছে। এখানে পর্যাপ্ত সিকিউরিটির ব্যবস্থা আছে। বিভিন্ন ধরনের দেশি-বিদেশি কুকুর , বিড়াল, পুকুর ভরা মাছ বিভিন্ন জাতের হাঁস ,মুরগি ,ছাগল ও গরু পালন করা হয় । এই কারখানার মালিক এবং শ্রমিকদের মধ্যে যথেষ্ট সুসম্পর্ক রয়েছে। সুবিধা বঞ্চিত নারীরা কারখানায় কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছে । বাইরে থেকে আসা শ্রমিকদের যাতায়াতের খরচ প্রতিদিন দিয়ে দেয়া হয় ।এছাড়া কেউ ওভারটাইম করলে তার অতিরিক্ত বিল পরিশোধ করে দেয়া হয়।
কারখানার নারী কর্মী মেরিনা জানান , এখানে কাজ করে আমাদের সংসার খুব ভালোভাবেই চলে যায় এতে আমরা অনেক খুশি।
টিলা গ্রামের সাপ্লাইয়ার সৈয়দ আলী ও বিল্লাল হোসেন মোল্লা বলেন, ৮ থেকে ১০ প্রকার প্রোডাক্ট এ কারখানায় সাপ্লাই দেই তা দিয়ে আমাদের আয় ভালোই হচ্ছে।
ষাট ঊর্ধ্ব নারী ঝরনা বেগম বলেন, যা আয় করি তা দিয়ে ভালোভাবেই সংসার চলে যাই ইনশাল্লাহ। এছাড়া ছেলেমেয়েদের লেখাপড়াও করাতে পারি। আমি ঘাস দিয়ে পাখির বাসা তৈরি করি এগুলো বিদেশে বিক্রি হয়।
গীতা রানী মল্লিক জানান, আমাদের কারখানায় সকালে এসে পোশাক পড়তে হয় ব্যায়াম করতে হয় এখানে ৮ ঘন্টা ডিউটি করি ওভারটাইম থাকলে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে দেয়া হয় ।আমাদের মালিক আমাদেরকে ভালো চোখেই দেখেন এছাড়া যাতায়াতের জন্য ভাড়া দিয়ে দেন।
পুরুষকর্মী তাওহিদ ইসলাম জানান , কম্পানির নিয়ম কানুন অনেক সুন্দর আমরা সকালে আসি ৮ ঘন্টা কাজ করি, আলাদা পোশাক পড়ে কারখানায় প্রবেশ করি।
সফল উদ্যোক্তা রহমতুল ইসলাম বিদ্যুৎ বলেন , কুকুর, বিড়াল ,খরগোশ ,ইঁদুর ,সাপ ,গিরগিটি ,সহ বিভিন্ন প্রাণীর খাবার পোশাক বাসা ও খেলনা প্রায় সাড়ে তিন শতাধিক প্রোডাক্ট তৈরি করা হয় যা ১০০% প্রকৃতি থেকে নেয়া। পণ্যের গুণগত মান ঠিক থাকায় বছরে প্রায় একশত কনটেইনার পণ্য রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে। বিশ্বে পোষা প্রাণীর খাবার পোশাক ও খেলনার বাজার প্রায় ১৪০ বিলিয়ন ডলারের। তৈরি পোশাকের বাইরে এই খাতে নজর দেওয়া গেলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আসবে দেশে দারিদ্রতা কমবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা আমাদের দারিদ্রকে বিক্রি করি না আমরা স্কিল বিক্রি করি ।
কারখানার শ্রমিকরা মালিকের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন ,এমন উদ্যোক্তা বাংলাদেশে বৃদ্ধি পেলে একদিকে যেমন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে তেমনি বৈদেশিক আই ও বৃদ্ধি পাবে ।
টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-১৪ (এসডিজি) অর্জনের জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সামুদ্রিক সম্পদ সংরক্ষণের একমাত্র উপায়।
আজ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এ আহ্বান জানান।
তিনি আজ জাপানের টোকিওতে সাসাকাওয়া পিস ফাউন্ডেশন ভবনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সভায় ঢাকায় তার বাসভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য প্রদানকালে একথা বলেন।
‘ওশেন ডিকেড ফিফথ ফাউন্ডেশনস ডায়ালগ হাই-লেভেল রাউন্ডটেবল উইথ অ্যাম্বাসেডরস, এক্সপার্টস অ্যান্ড প্র্যাকটিশনার্স’ সভার “ড্রাইভিং ওশেন লিডারশিপ অ্যান্ড ইনোভেশন: অ্যাডভান্সিং গভার্নেন্স, ব্লু ইকোনমি, অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স টু অ্যাচিভ থার্টি বাই থার্টি” শীর্ষক এক পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, বাংলাদেশ বৈশ্বিকভাবে প্লাস্টিক দূষণে নবম অবস্থানে রয়েছে, যার বড় অংশই আসে পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে। প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলায় চলমান বৈশ্বিক চুক্তিতে ভৌগোলিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য বিশেষ বিধান থাকা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, জাহাজভাঙা শিল্প বাংলাদেশের উপকূলের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ বিষয়ে হংকং কনভেনশনকে তিনি “অপর্যাপ্ত” বলে অভিহিত করেন।
উপদেষ্টা বলেন, সাগর ও মহাসাগর রক্ষায় বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব ও বহুমুখী সহযোগিতা জোরদার করতে হবে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-১৪ (এসডিজি) অর্জনের জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সামুদ্রিক সম্পদ সংরক্ষণের একমাত্র উপায়।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গোপসাগর বাংলাদেশের অর্থনীতি, আঞ্চলিক যোগাযোগ ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এ ছাড়া সরকার ইতোমধ্যে ‘অ্যাসেসমেন্ট অব কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন বায়োডাইভার্সিটি রিসোর্সেস অ্যান্ড ইকোসিস্টেম’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে, যার মাধ্যমে জাতীয় ডাটাবেজ, সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা ও পর্যবেক্ষণ প্রটোকল তৈরি হয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও এর প্রভাব বিষয়ে গবেষণাও সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি বাংলাদেশের সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের অনন্য সম্পদ তুলে ধরে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানান।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা একই সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রজাত মাছের বিপুল সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে বলেন, আমাদের সামুদ্রিক মাছের সম্পদ যথাযথভাবে মূল্যায়িত হয়নি।
আন্তর্জাতিক অংশীদাররা চাইলে বাংলাদেশে টেকসই সীফুড প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে বিনিয়োগ করতে পারেন।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সতর্ক করে বলেন, যদি বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যাবে। এতে লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে। একই বিপদে রয়েছে বিশ্বের ৫২টি ছোট দ্বীপরাষ্ট্র। তাই বৈশ্বিক সংহতি এখন সময়ের দাবি।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন- সাসাকাওয়া পিস ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট আতসুশি সুনামি, জাপানে নরওয়ে দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টিন ইগ্লুম ও ইউনেস্কো-আইওসি’র চেয়ার অধ্যাপক ইউতাকা মিচিদা, চেয়ার প্রমুখ।
জেনেভায় জাতিসংঘের দপ্তরগুলোতে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি তারেক মো. আরিফুল ইসলামকে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। রাষ্ট্রদূত আসাদ আলম সিয়ামের পররাষ্ট্র সচিব পদে নিয়োগের পর থেকে এই পদটি খালি ছিল।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ইউএনবিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। রাষ্ট্রদূত আরিফুল ইসলাম ইতোমধ্যে জেনেভা থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে যোগদান করেছেন।
গত বছরের জুনে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সুফিউর রহমানের স্থলাভিষিক্ত হয়ে জাতিসংঘের জেনেভা কার্যালয়ে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব নেন তিনি। এর আগে শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তারেক মো. আরিফুল।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিসিএস (পররাষ্ট্র ক্যাডার) ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তা তারেক মো. আরিফুল ইসলাম ১৯৯৮ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন।
তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে পুরকৌশলে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে তিনি অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটি থেকে কূটনীতি ও বাণিজ্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা, আঞ্চলিক সহযোগিতা, মানবাধিকার ও অভিবাসন বিষয়ে তার বিশেষ আগ্রহ রয়েছে।
পেশাগত জীবনে আরিফুল ইসলাম নিউইয়র্কে জাতিসংঘের স্থায়ী মিশনে বাংলাদেশের উপস্থায়ী প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া তিনি কলকাতায় বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনেও কাজ করেছেন। বাংলাদেশে সর্বশেষ ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মহাপরিচালকের (দক্ষিণ এশিয়া অনুবিভাগ) দায়িত্ব পালন করেছেন।
ঢাকা সিলেট মহাসড়কে দ্রুতগামী পরিবহন প্রতিনিয়তই কেড়ে নিচ্ছে মানুষের প্রাণ। পরিবারের একমাত্র উপাজ্জর্নক্ষম লোককে হারিযে পরিবার হারাচ্ছে বেঁচে থাকার পথ। কেউবা হারাচ্ছেন জীবনসঙ্গী, বেঁচে থাকার স্বপ্ন, আশা ভরসা। এমনি করেই কথাগুলো বলেন, ঢাকা সিলেট সহাসড়কে নিত্য যাতায়াতকারী হাসান মিয়া। কত মায়ের বুক যে চোখের সামনেই খালি হয়ে গেল এ সড়কে শুধু চেযে চেয়ে দেখা আর কিছু করার নাই আমাগো। স্থানীয় প্রশাসন শুধু লাশ গুনে গো স্যার।
একদিনে মাত্র কয়েক ঘন্টা ব্যবধানে দুই লাশ।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে দ্রুতগামী ট্রাকের চাপায় পৃষ্ঠ হয়ে শেখ ফরিদ (২০) নামে এক যুবক নিহতের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার ভোরে ( ২৩ সেপ্টেম্বর) উপজেলার আউখাব এলাকায় ঢাকা সিলেট মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শেখ ফরিদ নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ থানার পালগাও এলাকার সুরুজ মিয়ার ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার আউখাব এলাকায় রাস্তা পারাপারের সময় দ্রুতগতিতে থাকা সিলেটগামী অজ্ঞতনামা ট্রাকের চাপায় এ যুবক গুরুতর আহত হয়। এ সময় আশেপাশের লোকজন স্থানীয় ইউএস-বাংলা বাংলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষনা করেন।
ভুলতা হাইওয়ে পুলিশ জানায়, উপজেলার আউখাব এলাকায় রাস্তা পারাপারের সময় শেখ ফরিদ নামে এক যুবক নিহত হয়েছে।নিহত শেখ ফরিদ নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ থানার পালগাও এলাকার সুরুজ মিয়ার ছেলে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রীয়াধীন রয়েছে।
অপরদিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আউখাব এলাকায় ট্রাকের ধাক্কায় খাদে পড়ে কবির উদ্দিন (৫৫) নামে এক পোশাক কারখানার শ্রমিক নিহত হয়েছেন।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) সকালে রবিন টেক্সটাইলের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত কবির উদ্দিন সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর থানার ফতেহপুর এলাকার মৃত তোয়ার মোল্লার ছেলে। তিনি রবিন টেক্সটাইলে অল ওভার প্রিন্ট বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিহত কবির উদ্দিন রবিন টেক্সটাইল মিল থেকে ভোর ৬টার দিকে ডিউটি শেষ করে বাড়ি যাওয়ার পথে ঢাকা সিলেট মহাসড়কে অজ্ঞাতনামা ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কায় খাদে পড়ে গুরুতর আহত হন। আহত অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে ইউএস বাংলা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
হাইওয়ে পুলিশ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
রুপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি তরিকুল ইসলাম এ ব্যাপারে বলে ন, ঢাকা সিলেট মহাসড়কে ও হাইওয়ে সড়কে হাইওয়ে পুলিশ কর্তব্যরত। ওটা আমাদের বিষয় না। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি কিভাবে মানুষ হত্যা কমানো যায়, আমাদের লোক বল সংকট রয়েছে।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে খরিপ-২ মৌসুমে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় মাসকলাই উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও রাসায়নিক সার বিতরণ করেছে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আয়োজনে দৌলতপুর কৃষি অফিস চত্বরে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা কৃষি অফিসার নুরুল ইসলাম। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল হাই সিদ্দিকী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হোসেন আহমেদ। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন।
কর্মসূচির আওতায় উপজেলার মোট ১,৮০০ জন প্রান্তিক কৃষকের মাঝে ৫ কেজি মাসকলাই বীজ, ১০ কেজি ডিএপি সার এবং ৫ কেজি এমওপি সার বিতরণ করা হয়।
কৃষকদের স্বাবলম্বী করা ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এই প্রণোদনা কার্যক্রম হাতে নিয়েছে
বাংলাদেশের জন্য রাষ্ট্রদূত হিসেবে পেশাদার কূটনীতিক ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেনকে মনোনীত করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।
এতে বলা হয়েচছে, সিনিয়র ফরেন সার্ভিসের সদস্য ও ভার্জিনিয়ার বাসিন্দা ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেনকে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে।
একাধিক নিয়োগ ও মনোনয়নের অংশ হিসেবে এই পদে তার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগ। ক্রিস্টেনসেনের পাশাপাশি বর্তমান স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুসকে জাতিসংঘে রাষ্ট্রদূত এবং সের্গেই গরকে ভারতে রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। তিনটি নিয়োগই দেশটির সিনেটে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন বর্তমানে ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে আন্ডার সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এর আগে ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তিন বছর ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে রাজনৈতিক বিভাগে কাউন্সিলর হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। কর্মজীবনের শুরুতে পররাষ্ট্র দপ্তরের পাকিস্তান ও বাংলাদেশবিষয়ক অফিসে বাংলাদেশ কান্ট্রি অফিসার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। অবশ্য বর্তমানে এ নামে আর কোনো অফিস নেই।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রকাশিত প্রোফাইল অনুসারে, ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেনের পুরো নাম ব্রেন্ট টি ক্রিস্টেনসেন। তিনি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের পলিটিক্যাল-মিলিটারি অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোর আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও অস্ত্র হস্তান্তর অফিসের ডেপুটি ডিরেক্টর (২০১৬-২০১৯) এবং হাউস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির এশিয়া ও প্যাসিফিক সাব-কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের স্টাফে পারসন ফেলো (২০১৫-২০১৬) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
এ ছাড়াও উত্তর কোরিয়া নীতির জন্য বিশেষ প্রতিনিধির বিশেষ সহকারী, ইস্ট এশিয়া ও প্যাসিফিক অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোর সাইবার কো-অর্ডিনেটর, ম্যানিলায় মার্কিন দূতাবাসে অর্থনীতিবিষয়ক ডেপুটি কাউন্সেলর, সান সালভাদরে মার্কিন দূতাবাসে ডেপুটি ইকোনমিক কাউন্সেলর, রিয়াদে মার্কিন দূতাবাসে অর্থনৈতিক কর্মকর্তা এবং হো চি মিন সিটিতে মার্কিন কনস্যুলেট জেনারেলের ভাইস কনসাল হিসেবে কাজ করেছেন।
সিনেটে অনুমোদন পেলে রাষ্ট্রদূত হিসেবে পিটার হাসের স্থলাভিষিক্ত হবেন ক্রিস্টেনসেন। গত বছর বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে বিদায় নেওয়ার পর অবসরে যান হাস। তারপর থেকে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস রাষ্ট্রদূতশূন্য রয়েছে।
হাসের পর মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগ অবসরপ্রাপ্ত আরেক পেশাদার কূটনীতিক ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসনকে বাংলাদেশে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব দিয়ে পাঠায়। তিনি চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এই পদে দায়িত্বে রয়েছেন।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এজন্য ১০ লাখের বেশি প্রিজাইডিং-পোলিং অফিসারকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। বিভিন্ন গ্রুপে শুরু হওয়া এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ভোটগ্রহণের চার-পাঁচ দিন আগে শেষ হবে বলে জানিয়েছে কমিশন।
নির্বাচন কমিশনের ইলেক্টোরাল ট্রেইনিং ইনস্টিটিউট (ইটিআই) মহাপরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান জানান, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ২৩ ধরনের কাজে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
এই প্রশিক্ষণের জন্য প্রায় চার মাস সময় লাগবে। তবে নির্বাচন সংক্রান্ত মূল প্রশিক্ষণটা হবে প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারদের। এদের সংখ্যা ১০ লাখের বেশি হবে বলে ইসি সচিবালয় জানিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এবারের নির্বাচনের চ্যালেঞ্জটা একটু ভিন্ন।
বিগত তিনটি নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে এবার যতটুকু পারি ফ্রেশ লোক দিয়ে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনার চেষ্টা করা হবে। কমিশনের এমন চিন্তাভাবনা আছে। যেহেতু ফ্রেশ লোক আসবে। ওদের ইলেকশনের ধারণা কম হবে।
সুতরাং তাদের প্রশিক্ষিত করতে ট্রেনিংটা আমাদের আরো ইনডেপথ করতে হবে। অলরেডি আমরা ভোটার তালিকায় হালনাগাদের সময় চ্যালেঞ্জ ফেইস করেছি। কাজেই আমরা নতুন-নতুন লোক নেওয়ার জন্য চেষ্টা করব। যাতে একটি সুন্দর, গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন উপহার দেওয়া যায়।’
ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও অন্যান্য নির্বাচনী প্রশিক্ষণ কর্মসূচির বিষয়ে ইসি ঘোষিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
সে অনুযায়ী তফসিল ঘোষণার পূর্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের ‘ট্রেনিং অব কোর ট্রেনিং’ (টিওটি) সম্পন্ন করার জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন ও নির্দেশনা প্রদান কার্যক্রম চলমান থাকবে।
ইসির রোডম্যাপ অনুযায়ী আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে টিওটি ট্রেইনারদের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন ও নির্দেশনা প্রদান করা হবে।
টিওটি ট্রেইনারদের মধ্যে রয়েছে—নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগ ও নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সব কর্মকর্তারা, সিনিয়র জেলা/জেলা নির্বাচন অফিসার, উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসার, সহকারী উপজেলা/সহকারী থানা নির্বাচন কর্মকর্তা, প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ও অন্য বিভাগের কর্মকর্তা। পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণের লক্ষ্যে মাস্টার ট্রেইনারদের প্রশিক্ষণ (টিওটি) এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের প্রশিক্ষণ (টিওটি) প্রদান করা হবে। এ সময় ৩ হাজার ৬০০ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।
ইসি সূত্র জানান, কমিশন ইতোমধ্যে তাদের রোডম্যাপ অনুযায়ী আগামী ১ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে মাঠ প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তা (বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার কার্যালয়ের কর্মকর্তা) ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ/ব্রিফিংয়ে যোগদানের অনুমতি প্রদানের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়া বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারদেরও প্রশিক্ষণ/ব্রিফিং করা হবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর মাঠ পর্যায়ে আচরণবিধি প্রতিপালনের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে অনলাইনে প্রশিক্ষণ/ব্রিফিং করা হবে। আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটির সদস্যদের প্রশিক্ষণ বা ব্রিফিং দেয়ার বিষয়টিও প্রস্তাবনায় রয়েছে।
তিনি জানান, ভোট গ্রহণের পাঁচ থেকে সাতদিন পূর্বে জুডিশিয়াল ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রশিক্ষণ বা ব্রিফিং দেওয়া হবে। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা নির্বাচনের পূর্বের দুই দিন, নির্বাচনের দিন এবং নির্বাচনের পর দুই দিন মাঠ পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবেন।
এ বিষয়ে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক এসএম আসাদুজ্জামান জানান, নির্বাচনের প্রশিক্ষণ একটা লম্বা প্রক্রিয়া। হাতে যে কয়েকমাস সময় আছে এই সময়ের মধ্যেই নির্বাচন সংক্রান্ত ২৩ ধরনের প্রশিক্ষণ আমাদের শেষ করতে হবে। এখানে আমাদের কোর প্রশিক্ষণ আছে। কোর প্রশিক্ষণ হলো—নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের যারা সিনিয়র কর্মকর্তা তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া। ওইসব কর্মকর্তারা পরে একটি টিওটি প্রশিক্ষণ দিবে। টিওটি প্রশিক্ষণ হলো, প্রথম অংশ কোর প্রশিক্ষণ এবং দ্বিতীয় অংশ হলো টিওটি। এটা আমাদের উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের যারা কর্মকর্তা আছেন এবং যারা অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের যারা আছেন তাদের প্রয়োজনীয় ট্রেনিং দেওয়া হয়। ওদের নিয়ে আমরা টিওটি করি। এই সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩ হাজারের ওপরে।
তিনি বলেন, এরসঙ্গে আইন-শৃঙ্খলার প্রশিক্ষণের বিষয় আছে। এখানে ডিভিশনাল কমিশনার, ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার, তাদের ট্রেনিং করা হবে। তারপরে ডিসি-এসপিদের বিভিন্ন ধাপে-ধাপে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এরপর ইউএনও-দের ট্রেনিং দেওয়া হবে। আনসারের প্রশিক্ষণ হবে। আবার টেকনিক্যাল যে বিষয় আছে, সে বিষয়ে দেশের বিভিন্ন জেলাতে আমাদের যে প্রোগ্রামার ও অ্যাসিস্টেন্ট প্রোগ্রামার আছে—তাদেরকে অর্থাৎ প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারদের মূল প্রশিক্ষণটা দিতে হবে। এদের সংখ্যাটা ১০ লাখের ওপরে হবে।
তিনি আরো বলেন, গত ২৯ আগস্ট থেকে আমাদের ট্রেনিং কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আর এটা শেষ হবে নির্বাচনের চার বা পাঁচ দিন আগে। আমাদের ট্রেনিং করানোর জন্য প্রায় চার মাস সময় লাগবে।
এবার ট্রেনিংয়ে নতুনত্ব নিয়ে আসা হয়েছে উল্লেখ করে এস এম আসাদুজ্জামান বলেন, প্রশিক্ষণে তিনটা পার্ট থাকে। আমাদের মূলত একটা পার্ট হলো—আমরা ওদেরকে নির্বাচনী আইন-কানুন বিধি-বিধান সম্পর্কে ধারণা দেব। দ্বিতীয়টা হলো, তারা কিভাবে কাজ করবে। কাজের প্রসিডিউরটা কেমন হবে এবং ভোটকেন্দ্রে মালামাল সংগ্রহ, ভোটগ্রহণ থেকে শুরু করে ভোট গণনা পর্যন্ত যত কাজ আছে পুরো প্রক্রিয়াটা শেখানো হবে। আরেকটা হলো অতীতের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় তাদের মধ্যে কনফিডেন্স বিল্ডআপ করার জন্য একটা মোটিভেশনাল কাজ করা। তাদের আত্মবিশ্বাসটা যাতে ফিরে আসে সে জন্য একটা মোটিভেশনাল প্রোগ্রাম দেওয়া। তাদেরকে আমরা ওই পর্যায়ে নিয়ে আসব, যেন প্রিসাইডিং অফিসার মনে করেন, তিনি ওই কেন্দ্রের জন্য ‘চিফ ইলেকশন কমিশনার’। এই কনফিডেন্ট লেবেলটা বাড়ানোর জন্য আমরা কাজ করতেছি। আরেকটা বিষয় হলো একজন প্রিসাইডিং অফিসার কি ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে, তা আলোচনা করা। এক্ষেত্রে আমরা হাইপোথিটিক্যালি বিগত তিনটা নির্বাচনের যে সমস্যাগুলো হয়েছে সেগুলোর রেফারেন্স দিয়ে তাদের সতর্ক ও প্রশিক্ষিত করা।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ। এই কর্মযজ্ঞে যারা জড়িত তারা যদি প্রোপার ট্রেনিংপ্রাপ্ত না হয় তাহলে নির্বাচনে সমস্যা হতে পারে। আমরা চাচ্ছি ন্যূনতম বিচ্যুতি হবে না। সবাই তার কাজটা যথাযথভাবে করবে। আইন ও বিধি অনুযায়ী করবে এবং সততা ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে। এটা যাতে নিশ্চিত করা যায়, সে জন্যই এই প্রশিক্ষণ।
শেখ হাসিনার পতনের পর দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে দ্রুত বদল আনতে চাইছে পাকিস্তান। বাংলাদেশে ১৩ বছর পর শীর্ষ পর্যায়ের সফরে এসে সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের ঘোষণা দিয়ে গেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার।
মূলত হাসিনা-পরবর্তী বাংলাদেশে কূটনৈতিক সুযোগ দেখছে ইসলামাবাদ। এমন অবস্থায় বাণিজ্য ও কূটনীতিতে এগোচ্ছে ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্ক।
গতকাল মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটি তাদের প্রতিবেদনে বলছে, গত ২৩ আগস্ট ভোরে ঝোড়ো হাওয়া আর মেঘলা আকাশে ঢাকা বিমানবন্দরে নামেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। ১৩ বছর পর এবারই কোনো শীর্ষ পাকিস্তানি কর্মকর্তা বাংলাদেশে এলেন, যে দেশটি আজ থেকে ৫৪ বছর আগে পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়েছিল।
একইসঙ্গে উপপ্রধানমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করা ইসহাক দার এ সফরকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়ে বলেন, এটি হবে দুই দেশের ‘অংশীদারিত্বের নতুন অধ্যায়’। তিনি স্বীকার করেন, গত এক বছরে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে অগ্রগতি হয়েছে।
ইসহাক দার বলেন, ‘আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে এমন এক পরিবেশ গড়ে তুলতে, যেখানে করাচি থেকে চট্টগ্রাম, কোয়েটা থেকে রাজশাহী, পেশোয়ার থেকে সিলেট এবং লাহোর থেকে ঢাকা— দুই দেশের তরুণরা হাতে হাত মিলিয়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে, ভাগাভাগি করবে তাদের স্বপ্ন।’
তার এ সফর মূলত মাসের পর মাস ধরে চলা কূটনৈতিক ও সামরিক যোগাযোগের পর বড় ধরনের অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষত, ২০২৪ সালের আগস্টে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র নেতৃত্বাধীন গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর পাকিস্তান-বাংলাদেশ সম্পর্ক দ্রুত উষ্ণ হয়ে উঠেছে। শেখ হাসিনা ভারতের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং বর্তমানে ভারতে পালিয়ে আছেন।
তবে পাকিস্তানের সাবেক কূটনীতিক মাসুদ খালিদ সতর্ক করে বলেন, অতীত এখনো দুই দেশের আস্থা তৈরিতে বাধা হয়ে আছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের নতুন সরকার পাকিস্তানের উদ্যোগে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। সম্পর্কের পথে কৃত্রিম বাধাগুলো এখন দূর হয়েছে।’
কিন্তু সম্পর্ক গভীর করতে হলে ‘গঠনমূলক সংলাপের মাধ্যমে ভুল বোঝাবুঝি দূর করার একটি কাঠামো’ প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
সামরিক ও কূটনৈতিক যোগাযোগ বেড়েছে
শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন। বিশ্লেষকরা এত দ্রুত সম্পর্ক উষ্ণ হয়ে উঠবে, তা ধারণা করেননি।
এ বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান ইসলামাবাদে গিয়ে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর ফেব্রুয়ারিতে যান বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান। এরপর এপ্রিল মাসে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বেলুচ ঢাকায় আসেন।
এরপর মে মাসে ভারত-পাকিস্তানের চার দিনের সংঘাতের কারণে ইসহাক দারের সফর পিছিয়ে যায়। তবে জুলাইয়ে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নাকভি ঢাকা সফর করেন। অবশেষে আগস্টে দার ঢাকায় এলেন, একই সময়ে পাকিস্তানে যান বাংলাদেশের কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ ফয়জুর রহমান। সেখানে তিনি পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর জয়েন্ট চিফস কমিটির চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জার সঙ্গে বৈঠক করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দিলওয়ার হোসেন মনে করেন, পাকিস্তানের এই ‘তড়িঘড়ি’ কৌশলগত। তিনি বলেন, ‘হাসিনা সরকারের আমলেও পাকিস্তান সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালিয়েছে। এখন তারা ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ের মতো সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার সুযোগ দেখছে।’
তিনি মনে করিয়ে দেন, ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষমতায় আসা জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছিলেন। তবে বাংলাদেশে শাসন পরিবর্তন প্রায়ই ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েন তৈরি করেছে। পাকিস্তান হয়তো বর্তমান বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের টানাপড়েনকেও কাজে লাগাতে চাইছে।
মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকার
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস এখনো দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে গভীর ছায়া ফেলছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনা ও তাদের সহযোগী বাহিনীর হাতে লাখো বাঙালি নিহত হয়, প্রায় দুই লাখ নারী ধর্ষণের শিকার হন। ভারতীয় সেনা সহযোগিতায় শেখ মুজিবুর রহমান ও তার আওয়ামী লীগ দেশকে স্বাধীন করে।
পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব আইজাজ চৌধুরী মনে করেন, ভারতীয় ‘আঞ্চলিক আধিপত্য’ মোকাবিলায় পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে এক হতে হবে। গত মে মাসে কাশ্মিরে হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের চার দিনের আকাশযুদ্ধে এই বিরোধ আবার প্রকট হয়ে ওঠে।
অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শাহাব এনাম খান মনে করেন, ঢাকা-নয়াদিল্লি সম্পর্ক এখন কিছুটা শীতল হলেও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক বাস্তবতাকে প্রাধান্য দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্রনীতি সাধারণত অর্থনীতিনির্ভর। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক কেবল নিরাপত্তা বা সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, বরং আঞ্চলিক সহযোগিতা ও অর্থনীতির ভিত্তিতেই গড়ে উঠতে পারে।’
চীনের প্রভাব
চীন বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বাড়াচ্ছে। বেইজিং পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র হলেও হাসিনা সরকারের সঙ্গেও সম্পর্ক ভালো ছিল। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসার পরও চীন তার অবস্থান ধরে রেখেছে। মার্চে ইউনূস বেইজিং সফর করেন। আগস্টে বাংলাদেশ সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এক সপ্তাহের সফরে যান চীনে।
বাংলাদেশ ১২টি চীনা জে-১০সি যুদ্ধবিমান কেনার বিষয় বিবেচনা করছে। পাকিস্তান ইতোমধ্যে এসব যুদ্ধবিমান ব্যবহার করছে। পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের সামরিক ও অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বও গভীর। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এসব কারণে ঢাকা ও ইসলামাবাদের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হতে পারে।
বাণিজ্য ও রাজনীতি
দারের দুই দিনের সফরে তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এর মধ্যে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে শীর্ষ ভূমিকা রাখা ছাত্রনেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টিও (এনসিপি) ছিল।
পাকিস্তানের সাবেক কূটনীতিক আবদুল বাসিত বলেন, বাংলাদেশে ২০২৬ সালের শুরুতে নির্বাচন হবে, তার আগে এসব বৈঠক তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, ‘যে কোনো পরিস্থিতিতেই পাকিস্তান ও বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। অতীতের সমস্যাগুলো দক্ষতার সঙ্গে সামলাতে হবে।’
অর্থনীতিতেও উভয় দেশ উপকৃত হতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশ ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে, পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি মাত্র ২.৫ শতাংশ। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যও এখনো সীমিত। ২০২৪ সালে পাকিস্তান বাংলাদেশে ৬৬১ মিলিয়ন ডলার পণ্য রপ্তানি করেছে, বিপরীতে আমদানি মাত্র ৫৭ মিলিয়ন ডলার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিলওয়ার হোসেন বলেন, পাকিস্তান থেকে তুলা, টেক্সটাইল, চাল, সিমেন্ট, ফল ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য আমদানি করতে পারে বাংলাদেশ। অন্যদিকে, পাকিস্তান আমদানি করতে পারে বাংলাদেশের পাটজাত পণ্য, কেমিক্যাল, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ও তামাকজাত দ্রব্য।
তিনি উল্লেখ করেন, দুই দেশের সম্মিলিত জনসংখ্যা ৪৩০ মিলিয়ন—যা পশ্চিম ইউরোপের দ্বিগুণেরও বেশি।
অতীতের ক্ষত
তবে ১৯৭১-এর ক্ষত এখনো বড় বাধা। বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাছে এখনো আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা চায়। এছাড়া, বাংলাদেশে বসবাসরত দুই লাখেরও বেশি উর্দুভাষী মুসলমানের বিষয়টি অমীমাংসিত। তারা মূলত বিহার থেকে পূর্ব পাকিস্তানে এসেছিলেন, তবে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ তাদের পূর্ণ নাগরিক অধিকার দেয়নি এবং পাকিস্তানও তাদের নিতে অনিচ্ছুক।
এছাড়া, মুক্তিযুদ্ধের আগে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় সম্পদ ভাগাভাগি এবং ১৯৭০ সালের বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য ঘোষিত সাহায্যও এখনো বিতর্কের বিষয়।
তবুও পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব আইজাজ চৌধুরী বলেন, দুই দেশের জনগণ পুনর্মিলনের পক্ষে। ১৯৭১ সালের ঘটনার জন্য পাকিস্তানের মানুষও সমানভাবে দুঃখিত। এখন সবাই সামনে এগিয়ে যেতে চায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিলওয়ার হোসেন বলেন, হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হলেও মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে বাংলাদেশের জনমত অপরিবর্তিত। অতীত ভুলে থাকা সম্ভব নয়, তবে কূটনীতি সবসময়ই গতিশীল। দুই দেশ অর্থনীতি, কূটনীতি ও সংস্কৃতিতে সহযোগিতা বাড়াতে পারে, পাশাপাশি অতীতের ক্ষত নিরাময়ের প্রক্রিয়াও চালিয়ে যেতে পারে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত অপরাধের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। গণঅভ্যুত্থানের সময় শহীদ প্রত্যেকের পরিবার, আহত ব্যক্তি, দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ এই জবানবন্দি দেন আবদুল্লাহ আল-মামুন। গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে আসামি হিসেবে রয়েছেন তিনি। সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এ মামলায় দোষ স্বীকার করে নিয়ে ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এ মামলার ৩৬তম সাক্ষীর জবানবন্দি দিয়েছেন।
মামুন বলেন, ‘আমি সাড়ে ৩৬ বছর পুলিশে চাকরি করেছি। পুলিশের চাকরি খুবই ট্রিকি চাকরি। সব সময় পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে। আমার এই চাকরিজীবনে আমার বিরুদ্ধে কখনো কোনো অভিযোগ আসেনি। আমি সব সময় যথেষ্ট মানবিকতা ও সচেতনতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি। চাকরিজীবনের শেষ পর্যায়ে এসে এত বড় গণহত্য আমার দায়িত্বকালীন সময়ে সংঘটিত হয়েছে, তার দায় আমি স্বীকার করছি।’
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নির্দেশে এসব হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি বলেন, ‘আমি গণহত্যার শিকার প্রত্যেকের পরিবার, আহত ব্যক্তিবর্গ, দেশবাসী এবং ট্রাইব্যুনালের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমাকে দয়া করে ক্ষমা করে দেবেন।’
সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ‘আমার এই সত্য ও পূর্ণ বর্ণনার মাধ্যমে সত্য উদ্ঘাটিত হলে আল্লাহ যদি আমাকে আরও হায়াত দান করেন, বাকিটা জীবন কিছুটা হলেও অপরাধবোধ থেকে মুক্তি পাব।’
তিনি বলেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগের রাতে ৫০ শতাংশ ভোট ব্যালট বাক্সে ভরে রাখতে শেখ হাসিনাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন তৎকালীন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক জাবেদ পাটোয়ারী। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে।
২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশ পুলিশের ২৭তম মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন জাবেদ পাটোয়ারী। পরবর্তী সময়ে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে পুলিশ থেকে অবসর গ্রহণের পর তাকে সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।
জবানবন্দিতে সাবেক এই আইজিপি বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর পুলিশে রাজনৈতিক প্রভাব আরও বেড়ে যায়। প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন কিছু কিছু কর্মকর্তা। ঊর্ধ্বতন রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে তাদের সরাসরি যোগাযোগ ছিল।
তিনি বলেন, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান ও এসবির সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনীতে দুটি গ্রুপ গড়ে উঠেছিল। একটির নেতৃত্ব দিতেন হাবিব ও আরেকটির নেতৃত্বে ছিলেন মনির।
চৌধুরী মামুন আরো বলেন, ‘এসব কর্মকর্তা প্রায় রাতেই সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায় বৈঠকে করতেন। গোপন সেসব বৈঠক গভীর রাত পর্যন্ত চলত। বৈঠকে অংশ নেওয়া কর্মকর্তারা হলেন সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন-অর-রশীদ, এসবির মনিরুল ইসলাম, ঢাকার ডিআইজি নুরুল ইসলাম, অ্যাডিশনাল ডিআইজি বিপ্লব কুমার, এএসপি কাফী, ওসি মাজহার, ফোরকান অপূর্বসহ আরো অনেকে। এর মধ্যে কারো কারো সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি যোগাযোগ ছিল।’
মামুন বলেন, সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের ব্যক্তিদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ থাকায় চেইন অব কমান্ড মানতেন না এসব কর্মকর্তা। কিন্তু আমি চাইতাম তারা পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করুক। মূলত পুলিশ বাহিনীতে গড়ে তোলা দুটি গ্রুপই এসব কর্মকাণ্ড চালাত। এছাড়া দুই গ্রুপের নেতৃত্বদানকারীরা চাইতেন তাদের নিজস্ব বলয়ের লোকজন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পোস্টিং পাক এবং ঢাকায় থাকুক।
জবানবন্দিতে র্যাবে থাকাকালীন টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন বা টিএফআই সেলসহ বহু বন্দিশালার বর্ণনাও দেন তিনি।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের আটকের প্রস্তাব প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই) দিয়েছিল বলে জবানবন্দি দেন আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি বলেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) তৎকালীন প্রধান মোহাম্মদ হারুন রশীদকে সমন্বয়কদের আটকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
মামুন বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলন শুরু হওয়ার পর সারাদেশে সেনা মোতায়েন করা হয়। এরপর ১৯ জুলাই থেকে প্রায় প্রতি রাতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের ধানমন্ডির বাসায় কোর কমিটির বৈঠক হতো। বৈঠকে তাদের আন্দোলন দমনসহ সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হতো।
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, এই কোর কমিটির বৈঠকে তিনি, তৎকালীন স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাংগীর আলম, অতিরিক্ত সচিব টিপু সুলতান, অতিরিক্ত সচিব রেজা মোস্তফা, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান মনিরুল ইসলাম, ডিএমপির ডিবির প্রধান মোহাম্মদ হারুন রশীদ, র্যাবের মহাপরিচালক হারুন অর রশিদ, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম আমিনুল হক, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, ডিজিএফআই ও এনএসআইয়ের প্রধানেরা উপস্থিত থাকতেন।
কোর কমিটির একটি বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের আটক করার সিদ্ধান্ত হয় বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি বলেন, ডিজিএফআই এই প্রস্তাব দেয়। তিনি এর বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে তিনি রাজি হন। আটকের দায়িত্ব ডিবিপ্রধান হারুনকে দেওয়া হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত মোতাবেক ডিজিএফআই ও ডিবি তাদের আটক করে। ডিবি হেফাজতে নিয়ে আসে।
জবানবন্দিতে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, সমন্বয়কদের ডিবি হেফাজতে এনে আন্দোলনের বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আপস করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। তাদের আত্মীয়স্বজনকেও ডিবিতে নিয়ে এসে চাপ দেওয়া হয়। সমন্বয়কদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে টেলিভিশনে বিবৃতি প্রদানে বাধ্য করা হয়। এ ব্যাপারে ডিবিপ্রধান হারুন অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
ডিবির তৎকালীন প্রধান হারুনকে ‘জিন’ বলে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ডাকতেন উল্লেখ করেন সাবেক আইজিপি। তিনি বলেন, হারুন সরকারের যেকোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পারদর্শী ছিলেন।
সাবেক আইজিপি ট্রাইব্যুনালে আরও বলেন, আন্দোলন দমনে মারণাস্ত্র ব্যবহার, হেলিকপ্টার থেকে গুলি ও ব্লক রেইডের সিদ্ধান্ত হয় রাজনৈতিকভাবে।
তিনি জানান, লেথাল উইপেন ব্যবহারের নির্দেশনা এসেছিল শেখ হাসিনার কাছ থেকে। আর সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান হাবিব, ডিবির হারুন ছিলেন মারণাস্ত্র ব্যবহারে অতিউৎসাহী।
মামুন জবানবন্দিতে বলেন, র্যাব-১ এ টিআইএফ নামে গোপন বন্দিশালা ছিল। অন্যান্য র্যাবের ইউনিটে ছিল এমন বন্দিশালা। রাজনৈতিক ভিন্নমত ও সরকারের জন্য হুমকি হয় এমন মানুষদের ধরে আনা হতো এখানে।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে আসত এসব নির্দেশনা। কখনো নির্দেশনা দিতেন তারেক সিদ্দিকী। আর আয়নাঘরে আটক ও ক্রসফায়ারে হত্যার মতো কাজগুলো করতেন র্যাবের এডিসি অপারেশন ও গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক।
এ বছরের ২৪ মার্চ মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি জানান, স্বেচ্ছায় আসামি থেকে রাজসাক্ষী হয়ে সত্য উন্মোচন করতে চান তিনি।
এর আগে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনে আহত, শহীদ পরিবারের সদস্য, চিকিৎসকসহ ৩৫ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ মাসেই এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হওয়ার প্রত্যাশা করছে প্রসিকিউশন।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গ্রেপ্তার হন তৎকালীন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আজ বিকেল ৫টায় সাতটি রাজনৈতিক দল ও একটি সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, বৈঠকে অংশ নেন- এবি পার্টি, নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, এলডিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জাতীয় গণফ্রন্ট এবং হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
এরআগে গত রোববার প্রধান উপদেষ্টা বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি’র সঙ্গে বৈঠক করেন।
ধারাবাহিক এই বৈঠক আসন্ন নির্বাচনের প্রস্তুতিতে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।