কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয়েছে ২০০৮ সালে। এরপর গড়িয়েছে প্রায় দেড় দশক। এই দীর্ঘ সময়েও মেডিকেল কলেজটির নাক, কান ও গলা বিভাগ, চক্ষু বিভাগ, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ এবং কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগে কোনো শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়নি। গত ১৪ বছর ধরেই অন্য বিভাগের শিক্ষকরা এসব বিষয়ে পড়িয়ে আসছেন শিক্ষার্থীদের।
আবার এই মেডিকেল কলেজের নেই কোনো হাসপাতাল। এজন্য ১৪ কিলোমিটার দূরে জেলা সদর হাসপাতালে ইন্টার্নশিপ করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের, করতে হচ্ছে ক্লিনিক্যাল ক্লাস। এ নিয়ে ভীষণ অসন্তোষ কলেজটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে।
আরও পড়ুন: মেডিকেল শিক্ষা ব্যবসা না
এমন সংকট নিয়ে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. তাজমীর রহমান দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘এই মেডিকেল কলেজ যখন চালু হয়, তখন না ছিলেন শিক্ষক, না ছিল যন্ত্রপাতি, না ছিল কিছু। মাঝে মাঝেই হতাশা লাগত। ধীরে ধীরে কিছুটা উন্নতি হলেও এখনো অনেক বিভাগেই শিক্ষক নেই। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হাসপাতাল নেই। ১৪ কিলোমিটার দূরে জেলা সদর হাসপাতালে ইন্টার্নশিপ করতে হচ্ছে। বাসে করে সদরে আসতে হয় হাসপাতালে ক্লিনিক্যাল ক্লাসের জন্য, ফের কলেজে যেতে হয়। এতে সময় এবং এনার্জি- দুটোরই ক্ষতি হচ্ছে।’
হাসপাতাল না থাকার কারণে সবাই ভুগছে জানিয়ে ডা. তাজমীর রহমান বলেন, ‘আবার জেলা সদর হাসপাতালে ইন্টার্নদের জন্য হোস্টেলের ব্যবস্থা নেই, থাকতে হয় বাইরে। নিরাপত্তা এখানে অনেক বড় ইস্যু।’
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের মতোই অবস্থা দেশের একাধিক সরকারি মেডিকেল কলেজের।
সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজগুলোকে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর অন্তত দুই বছর আগে একটি পরিপূর্ণ হাসপাতাল চালু করতে হবে, অ্যাকাডেমিক ভবন এবং হাসপাতাল ভবন আলাদা হতে হবে। কোনো ভাড়া বাড়িতে হাসপাতাল এবং কলেজ স্থাপন করা যাবে না।
দেশে সরকারি এবং বেসরকারি মেডিকেল কলেজ রয়েছে ১১৫টি। এর মধ্যে সরকারি ৩৭টি, বেসরকারি ৭২টি এবং ছয়টি আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ। এগুলোর বেশির ভাগই ঢাকা বিভাগে। ঢাকায় বেসরকারি মেডিকেল কলেজ আসার কথা আরও তিনটি। অথচ দেশের বেশির ভাগ বেসরকারি মেডিকেল কলেজে নেই প্রয়োজনীয় শিক্ষক ও যন্ত্রপাতি, নেই শিক্ষার মানও। এরপরও একের পর এক বেসরকারি মেডিকেল কলেজ অনুমোদন পাচ্ছে। আর এসব অনুমোদনে অনেক ক্ষেত্রে সরকারি নীতিমালাও মানা হচ্ছে না। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব এবং সঠিক নজরদারির অভাবকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভয়াবহ শিক্ষক সংকট
দেশে মেডিকেল শিক্ষায় বেসিক বা মৌলিক হিসেবে ধরা হয় ৮টি বিষয়কে। এগুলো হচ্ছে- এনাটমি, বায়োকেমিস্ট্রি, কমিউনিটি মেডিসিন, ফরেনসিক মেডিসিন, মাইক্রোবায়োলজি ও ভাইরোলজি, প্যাথলজি, ফার্মাকোলজি, ফিজিওলজি । এই ৮ বিষয়েই মারাত্মক শিক্ষক সংকট রয়েছে দেশে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এই ৮টি বিষয়ে অধ্যাপকের মোট ২০৪ পদের বিপরীতে আছেন মাত্র ৭২ জন, পদ ফাঁকা রয়েছে ১৩২টি। সহযোগী অধ্যাপকের ২৫১টি পদের বিপরীতে আছেন ১৫৭ জন, সহকারী অধ্যাপকের ৩৫২টি পদের বিপরীতে শিক্ষক আছেন ১৯৬ জন, কিউরেটরের ৪৮ পদের বিপরীতে আছেন ৩২ জন, লেকচারার বা প্রভাষকের ১ হাজার ১৩৫ পদের বিপরীতে রয়েছেন ৮১১ জন। সব মিলিয়ে এই ৮ বিভাগের ১ হাজার ৯৯৭টি পদের বিপরীতে ৭২৩টি পদ ফাঁকা।
অন্যদিকে সব বিষয়ে অধ্যাপকের ৮৪৯টি পদের বিপরীতে আছেন ৩৪৮ জন, সহযোগী অধ্যাপকের ১ হাজার ৪৮০টি পদের বিপরীতে রয়েছেন ৭৩০ জন, সহকারী অধ্যাপকের ২ হাজার ৪৪৬ পদের বিপরীতে রয়েছেন ১ হাজার ৩৯২ জন, প্রভাষকের ১ হাজার ৫৩৮টি পদের বিপরীতে আছেন ১ হাজার ১৩৫ জন। সব মিলিয়ে ৬ হাজার ৩১৪টি পদের বিপরীতে আছেন ৩ হাজার ৬০৫ জন।
দেশে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থীর আসন ৪ হাজার ৩৫০টি। ৭২টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে এ আসন সংখ্যা ৬ হাজার ৩৫৪। ৬টি আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থীর আসন সংখ্যা ৪২৫।
নিয়ম অনুসারে, প্রতি ১০ শিক্ষার্থীর জন্য ১ জন প্রভাষক এবং ২৫ জন শিক্ষার্থীর জন্য ১ জন বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক (সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, অধ্যাপক) থাকতে হবে। প্রতি বছর ৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করে এবং পাঁচটি শিক্ষাবর্ষ চালু আছে এমন কলেজের জন্য কমপক্ষে ৭৭ জন শিক্ষক থাকা দরকার। প্রতি শিক্ষাবর্ষে ১০০ জন করে শিক্ষার্থী থাকলে ওই মেডিকেল কলেজে শিক্ষক থাকতে হবে ১৫৪ জন।
কিছু না থেকেও মেডিকেল কলেজ
২০১৯ সালে নওগাঁ, নীলফামারী, চাঁদপুর, নেত্রকোনা ও মাগুরায় মেডিকেল কলেজ করা হয়। কিন্তু এই পাঁচটির কোথাও কোনোটির অবকাঠামো নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের একজন কর্মকর্তা দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘এই পাঁচটির একদম কিচ্ছু নেই।’
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘২০১৯ সালের আগে ৩৭ সরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে ১৭টি মেডিকেল কলেজের জন্য জনবল ছিল। কিন্তু বাকি ২০টির জন্য জনবল ছিল না। গত দুই বছরে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর গঠন হওয়ার পর জনবলের জন্য পদ তৈরি করা হয়েছে। তাও যেখানে যেভাবে দরকার, সেভাবে নেই। একটা গড় ধরে জনবল তৈরি করা হয়েছে। যেমন-নেত্রকোনা মেডিকেল কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা এখন তৃতীয় বর্ষে উঠবেন, ক্লিনিক্যাল ক্লাস করবেন, রোগীদের দেখতে হবে। কিন্তু সেখানে প্রয়োজনীয় বিভাগ নেই, রোগীও নেই।’
সরকারি ৩৭ মেডিকেল কলেজের ২০টিতেই হাসপাতাল নেই
সূত্র জানিয়েছে, দেশের ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে কক্সবাজার, যশোর, টাঙ্গাইলসহ ২০টিতেই হাসপাতাল নেই। যশোর মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার পর পার হয়েছে ১১ বছর। এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি হাসপাতাল। ৫০০ বেডের হাসপাতালের জন্য গত বছরের অক্টোবর থেকে আন্দোলন চলছে সেখানে।
নীলফামারী মেডিকেল কলেজে ক্লাস শুরু হয় ২০১৯ সালে। কিন্তু নেই কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাস, নেই মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। সেখানে ফরেনসিক মেডিসিন ও মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে একজন করে প্রভাষক রয়েছেন। কিন্তু সহকারী, সহযোগী কিংবা অধ্যাপক পদে কেউ নেই।
এ বিষয়ে নীলফামারী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. রবিউল ইসলাম খাঁ দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষক সংকট প্রকট, কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাস নেই, মেডিকেল কলেজ নেই। নেই সাফিসিয়েন্ট একটা ল্যাবও। রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে ‘অন রিকোয়েস্টে’ ল্যাব টেকনিশিয়ান এনে কাজ করতে হয়।
সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জে মেডিকেল কলেজ করার কথা চলছে জানিয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘কলেজ না হয় ভাড়া ভবনে করা হলো, কিন্তু হাসপাতাল কোথায় করা হবে? অথচ নীতিমালায় রয়েছে ৫০ শিক্ষার্থীর জন্য একটি আড়াই শ বেডের হাসপাতাল লাগবে।’
যা বলছেন সংশ্লিষ্টরা
চিকিৎসক, শিক্ষক নিয়ে সংকটের কথা জানতে চাইলে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ কে এম আমিরুল মোরশেদ দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘সরকারি ও বেসরকারি দুই ক্ষেত্রেই মেডিকেল শিক্ষার মান নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে প্রশ্ন উঠেছে। আবার দীর্ঘদিন ধরে কোনো পদোন্নতি না থাকায় শিক্ষক সংকট তীব্র হয়েছে। কিন্তু মেডিকেল শিক্ষার মান নিশ্চিত করার অন্যতম উপায় প্রয়োজনীয় শিক্ষক এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নিশ্চিত করা।’
তিনি জানান, শিক্ষকদের মানোন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাসহ নতুন করে কিছু কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। হয়তো শিগগির এ সংকট কেটে যাবে।
প্রয়োজনীয় শিক্ষক, হাসপাতাল না থাকা নিয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মৌলিক বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাস্থ্যের ভবিষ্যতে আসলে রুগ্ণ দশা হবে। যেসব মেডিকেল কলেজে শিক্ষক নেই, রোগী দেখার মতো হাসপাতাল নেই, যন্ত্রপাতি নেই-সেসব কলেজের শিক্ষার্থীরা কী শিখবে, কোথা থেকে শিখবে? তারা কিছু না শিখে কীভাবে চিকিৎসক হবে?’
তিনি বলেন, ‘অপ্রশিক্ষিত, সঠিক শিক্ষাহীন চিকিৎসক যে দেশে তৈরি হবে সে দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থায় সংকট অবশ্যম্ভাবী এবং তার জন্য দেশকে, দেশের মানুষকে অনেক বড় মূল্য দিতে হবে। একটা দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা মাছের বাজারে গিয়ে মাছের দরদাম করা নয়- এটা মেডিকেল কলেজ স্থাপনের অনুমতি দেবার আগে সংশ্লিষ্টদের ভেবে দেখার জন্য অনুরোধ করি।’
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কেউ মারা যায়নি। আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ দিন প্রতি ১০০ নমুনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু ২৯ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এছাড়া ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে মোট শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫৮২ জন।
এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
জনদুভোর্গ এড়াতে চলমান এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা উপলক্ষে পরীক্ষার্থীদের সকাল সাড়ে ৮টা থেকে কেন্দ্র চত্বরে প্রবেশের জন্য জরুরি নির্দেশনা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। তবে পরীক্ষা কক্ষে প্রবেশ-সংক্রান্ত আগে সব নির্দেশনা বহাল থাকবে বলেও জানানো হয়।
গতকাল শনিবার ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দারের সই করা জরুরি স্মারকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলমান এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৫-এর পরীক্ষা কেন্দ্রসমূহের আশপাশের যানজট ও জনদুভোর্গ লাঘবের লক্ষ্যে কেবলমাত্র পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্র চত্বরে সকাল ৮.৩০ থেকে প্রবেশের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।
তবে পরীক্ষা কক্ষে প্রবেশ সংক্রান্ত পূর্বের নির্দেশনা বহাল থাকবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা বোর্ডের আওতাধীন এইচএসসি পরীক্ষার সব কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর সিলেট এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপরে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে করোনার আক্রমন শুরুর পর সিলেটে প্রথম এই কোন রোগী মারা গেলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত ৬৯ বছর বয়েসি পুরুষ ১৯ জুন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া সিলেটে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। তিনি করোনা ছাড়াও আরও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে চলতি জুন মাসেই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সাতজনে দাঁড়াল।
২৮ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি জুন মাসে মোট ১৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের দুই জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় গোটা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন আক্রান্ত রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন। মৃত্যুবরণ করা দুজন হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আ. করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকার মো. ইউসুফ খন্দকার (৭২)। এর মধ্যে আ. করিম বরিশাল শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ও বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খন্দকার কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন।
বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মৃত ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। শুধু মৃত্যুই নয় এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
দেশে গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত একদিনে আরও ১০ জনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। ১৯৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে এই রোগী শনাক্ত হয়। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ৭৩ জনে। এ সময়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন করে করোনা আক্রান্ত ১০ জনসহ চলতি বছর এখন পর্যন্ত মোট রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫২৮ জনে। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় একজনের মৃত্যু হওয়ায় ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৯ হাজার ৫১৯ জনে দাঁড়িয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশে করোনাভাইরাস মহামারির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ। আর গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ২ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম ৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ওই বছরের ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। ২০২১ সালের ৫ ও ১০ আগস্ট দুদিন করোনায় সর্বাধিক ২৬৪ জন করে মারা যান।
গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলায় দিন দিন বাড়ছে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতো ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। গত ৩ দিনে ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হয়েছে ১০ জন। গত ২২ থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত এই ৩ দিনে ১০ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়।
কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. হাবিবুর রহমান জানান, গত রোববার থেকে আমরা সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গুরোগীর তথ্য সংগ্রহ করে জেলা সিভিল সার্জন অফিসে প্রেরণ করেছি। তিনি জানান, আমাদের কাছে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী গত রোববার কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১ জন, হেলথ কেয়ার ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড ডায়াবেটিক সেন্টারে ২ জন, রেডিয়াম ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ২ জন, হেলথ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ২ জন ডেঙ্গুরোগী পাওয়া গেছে।
কাপাসিয়া উপজেলার সরকারি - বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অনেকেই রক্ত পরীক্ষা করেছেন। রক্ত পরীক্ষার পর এক দিনে ৫ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। ২৩ জুন, সোমবার কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১ জন, রেডিয়াম ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ১ জন, ইরাম ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ১জনসহ মোট ৩ জন ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হয়েছে। তাছাড়া গত মঙ্গলবার হেলথ কেয়ার ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড ডায়াবেটিক সেন্টারে ২ জন মহিলার রক্ত পরীক্ষার পর ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে নতুন করে কারো মৃত্যু হয়নি। বুধবার (২৫ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১৯ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৪১২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৪ দশমিক ৬১ শতাংশ।
দেশে এখন পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ৬৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১৯ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট ২৯ হাজার ৫১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এডিশ মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মুত্যৃর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। চলতি বছরে ডেঙ্গু যেনো ভয়বহ রূপ ধারণ করতে যাচ্ছে।
এদিকে গত মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত একদিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩২৬ জন। সবচেয়ে বেশি ১১৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন বরিশাল বিভাগে। এই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত ২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গতকাল বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বরিশাল বিভাগে ১১৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৪৩ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৩ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৪৫ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ২৬ জন, খুলনা বিভাগে ১৬ জন, রাজশাহী বিভাগে ২৯ জন, ময়মনসিংহে ৫ জন ও সিলেট বিভাগে একজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১৯ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৭ হাজার ৭৪৯ জন। চলতি বছরের ২৫ জুন পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৮ হাজার ৮৭০ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৩৬ জনের।
২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন মোট এক লাখ এক হাজার ২১৪ জন এবং মৃত্যুবরণ করেন ৫৭৫ জন। এর আগের বছর ২০২৩ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট এক হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয়। ওই বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন মোট তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন।
এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের হার বেড়েই চলেছে। সোমবার (২৩ জুন) সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় কারো মৃত্যু হয়নি। আর এই সময়ের মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৯৪ জন। আর চলতি সপ্তাহের এই কয়েকদিনে রোগটিতে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের।
সোমবার (২৩ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের ঘটনা ঘটে। এ সময়ের মধ্যে বিভাগটিতে আক্রান্ত হয় সর্বোচ্চ ১৫৭ জন।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ভর্তি হয়েছেন ৩৯৪ জন। নতুন আক্রান্তের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৯২ জন। আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩০২ জন।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, চলতি বছর আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৫০ শতাংশ পুরুষ এবং ৫০ শতাংশ নারী।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৮ হাজার ৫৪৪ জন। এর মধ্যে ৫৫ দশমিক ৬ শতাংশ পুরুষ এবং ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ নারী।
বরিশাল বিভাগের বরগুনায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বৃদ্ধা রাবেয়া (১০০) মারা গেছেন। গতকাল সোমবার ভোরে তিনি বরগুনা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। সরকারি হিসাব অনুযায়ী এ নিয়ে বিভাগে ডেঙ্গুতে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে বরগুনার বাসিন্দাই রয়েছে ৬ জন। এদিকে গত রোববার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ১২৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। একই সময়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ১২৯ জন।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, সোমবার ভোরে মৃত্যু হওয়া শতবর্ষী রাবেয়া বেগম বরগুনা সদরের বাসিন্দা। তাকে গত রোববার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
স্বাস্থ্য বিভাগে তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে ১৩ জন ভর্তি হয়েছে। এছাড়া বরিশাল জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে ৮ জন।
পটুয়াখালী জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ৭ জন, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪ জন, ভোলা সদর হাসপাতালে ৫ জন ভর্তি হয়েছে। পিরোজপুরে ১৬ জন ও বরগুনায় ৭৩। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় ঝালকাঠিতে কেউ আক্রান্ত হয়নি।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশংকাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরুতে হবে। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশে-পাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।