বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র ফারদিন নূর সুলতানা কামাল সেতু থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন- তদন্ত সংস্থার এমন ভাষ্যে নারাজ বাবা কাজী নূর উদ্দিন। তিনি বলেছেন, ‘আমার ছেলে আত্মহত্যা করতে পারে না। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে হত্যার পর এখন আত্মহত্যার নাটক সাজানো হচ্ছে।’
ফারদিনের সহপাঠীরাও তদন্তের কিছু জায়গায় ‘গ্যাপ’ ও ‘অস্পস্টতার’ কথা বলেছেন। তারা গ্যাপ ও অস্পষ্টতাগুলো পরিষ্কার করার জন্য তদন্ত সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে আহ্বান জানান। সহপাঠীরা এই বক্তব্য দেয়ার আগে প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে ডিবির প্রধান হারুন অর রশীদসহ তদন্ত-সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা ফারদিনের সহপাঠীদের পুরো তদন্তের নানা বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘ফারদিনের মানসিক অবস্থার কথা আমরা আপনাদের বলেছি। তিনি এটেম্পট নিয়েছিলেন বাবুবাজার ব্রিজের ওখানে, কিন্তু সেখানে অনেক লোক থাকায় ঝাঁপ দেননি। সেখান থেকে গেলেন জনসন রোড, সেখান থেকে গুলিস্তান, এরপর গেলেন যাত্রাবাড়ী, যাত্রাবাড়ী থেকে লেগুনায় করে সুলতানা কামাল ব্রিজের ওখানে গেছেন।’
হারুন অর রশীদ বলেন, ‘৩৮ দিন তদন্তের পর আমরা বলেছি এটা একটা সুইসাইডাল ঘটনা, কেউ তাকে মারেনি। আজকে বুয়েটের শিক্ষার্থীদের আমরা ৩ ঘণ্টা ধরে সব তথ্য-প্রমাণ দেখিয়েছি। আমরা সব যুক্তি পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে উপস্থাপন করেছি। তাদের বুঝিয়েছি, এই এই কারণে ফারদিন আত্মহত্যা করেছেন।’
গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, ‘ফারদিন মানুষের ৩০ বছরের বেশি বাঁচা উচিত নয় এমন মতাদর্শের দুই দার্শনিকের বই পড়তেন এবং তাদের মতাদর্শকে ধারণ করতেন। এসব বিষয় নিয়ে তিনি বন্ধুদের সঙ্গে নানা সময় আলোচনা করেছেন। তা ছাড়া ফারদিন তার কয়েকজন বন্ধুকে বলেছিলেন, যে কোনো এক শুক্রবারে কারও আত্মহত্যার খবর পাওয়া যাবে। ফারদিন নিজেও শুক্রবারেই আত্মহত্যা করেছেন।’
নিখোঁজের তিন দিন পর ফারদিন নূর পরশের লাশ উদ্ধার করা হয় শীতলক্ষ্যা নদী থেকে। প্রথমে ঘটনাটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ধরে নিয়েই তদন্ত শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সবগুলো ইউনিট। ময়নাতদন্তের পর নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকরাও তাকে হত্যার পর নদীতে লাশ ফেলে দেয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেন।
ঘটনা তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে র্যাব ও পুলিশের মধ্যেও প্রতিযোগিতা দেখা যায়। র্যাবের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ফারদিনকে মাদক কিনতে গিয়ে চনপাড়া বস্তির মাদক কারবারির হাতে নিহত হওয়ার খবরও প্রকাশ করে একাধিক গণমাধ্যম। চনপাড়ার রায়হান নামে এক মাদক ব্যবসায়ী এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত বলেও অনানুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। তবে ঘটনার ৩৭ দিনের মাথায় গত বুধবার একই সুরে ফারদিন আত্মহত্যা করেছে বলে দাবি করেছে ডিবি পুলিশ ও র্যাব।
ফারদিনের আত্মহত্যার বিষয়টি নিয়ে সমালোচনাও শুরু হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। আত্মহত্যার কথাটি বিশ্বাসও করতে পারছে না তার পরিবার। বাবা কাজী নূর উদ্দিন রানা তদন্তে অসন্তুষ্টি জানিয়ে বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমার ছেলেরা অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছে। সব ধরনের পরিস্থিতির সঙ্গে চলতে পারা আমার ছেলে আত্মহত্যা করতে পারে না। তাকে পরিকল্পিতিভাবে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্যই আত্মহত্যার কথা বলা হচ্ছে। এজন্য শুরু থেকেই মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হয়েছে। সবাইকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ঘটনার দিন বুয়েটের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার আগে সে চুল কাটিয়েছিল এবং শেভ করেছিল। আত্মহত্যার আগে কি কেউ চুল কাটায়, শেভ করে? আমি ফারদিনের লাশ দেখেছি, তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল।’ তিনি নিজেই সাংবাদিকদের সামনে সুলতানা কামাল ব্রিজ থেকে লাফ দিয়ে কোথায় আঘাত লাগে তা দেখানোর কথা জানান।
বুয়েট প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে ফারদিনের বাবা বলেন, ‘বুয়েটের ভিসি এবং প্রশাসন কি জানত, ফারদিন আত্মহত্যা করেছে, যে কারণে তারা আমার পরিবারকে সান্ত্বনা পর্যন্ত দেয়নি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেউ আমাদের সঙ্গে দেখাও করেননি। আমার ছেলে বুয়েটে ভর্তি না হলে এমন পরিণতি হতো না।’
এদিকে ডিবি কার্যালয়ে তদন্ত-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা শেষে বুয়েট শিক্ষার্থী তাহমিদ হোসেন বলেন, ‘তদন্তের যে আলামতগুলো ছিল, ডিবির তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আমাদের তা দেখিয়েছেন। আলামতগুলো আমাদের কাছে প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়েছে। এগুলোর পেছনে তারা বেশ এফোর্ট দিয়েছেন বলেই মনে হয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় হয়তো কিছু গ্যাপ আছে, কিছু অস্পস্টতা আছে। এগুলো নিয়ে আরও পরিষ্কার হওয়া দরকার আছে। এগুলো নিয়ে তারা সামনে আরও কাজ করবে বলে আশা করি। এ ব্যাপারে তারা আমাদের একটা আশ্বাস দিয়েছেন।’
তাহমিদ হোসেন আরও বলেন, ‘একটা গ্যাপ হলো, ব্রিজের যে পাড়ে নামিয়ে দেয়া হয়েছিল, সেখান থেকে যে মাঝখানে ব্যাক করেছে, ওই জায়গায় তার সঙ্গে কে ছিল বা সে একদম একা ছিল কি না—এ বিষয় পরিষ্কার নয়। লেগুনাচালক নাকি বলেছেন, দুজনকে নামানো হয়েছিল। তার সঙ্গে আরেকজন নেমেছিলেন। কে নেমেছিলেন, সেটা পরিষ্কার নয়। এর বাইরে অন্য জিনিসগুলোর কংক্রিট অ্যাভিডেন্স তারা টু অ্যান এক্সটেন্ট দেখিয়েছেন। তারা আমাদের কিছু সারকামস্ট্যানশিয়াল অ্যাভিডেন্স দেখিয়েছেন, যা দেখে ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে মনে হতে পারে। কিন্তু ওই রকম কংক্রিট, সলিড কোনো তথ্য, অতটা তারা দেখাননি। আত্মহত্যার মোটিভটা পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায় কি না, এ জায়গায় ভবিষ্যতে কাজ করা যেতে পারে। ডিবি বলেছে, তারা এটি নিয়ে কাজ করবে।’
বুয়েট ক্যাম্পাসে যাওয়ার কথা বলে গত ৪ নভেম্বর ডেমরার কোনাপাড়ার বাসা থেকে বের হন ফারদিন। ওই দিনই তিনি নিখোঁজ হন। নিখোঁজের তিন দিন পর ৭ নভেম্বর বিকেলে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে নৌ পুলিশ।
চার্জশিট থেকে বুশরাকে অব্যাহতি দেয়া হবে
আলোচিত এই ঘটনার পর ফারদিনের বাবার করা মামলায় আসামি করা হয়েছিল আমাতুল্লাহ বুশরা নামে তার এক বান্ধবীকে। নিখোঁজের দিন রাত পৌনে ১০টা পর্যন্ত ফারদিন তার এই বান্ধবীর সঙ্গেই ঘুরে বেড়িয়েছেন। যদিও প্রাথমিক তদন্তের পর থেকেই ঘটনার সঙ্গে বুশরার কোনো সম্পৃক্ততা না পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে মামলায় আসামি করার পর পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করে। পরে আদালতের মাধ্যমে বুশরাকে পাঠানো হয় কারাগারে।
ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘এই ঘটনায় বুশরার কোনো সম্পৃক্ততা আমরা পাইনি, এটা আমরা অভিযোগপত্রে উল্লেখ করব। এরপর বুশরাকে ছাড়া হবে কি না সেটা আদালত সিদ্ধান্ত জানাবেন।’
সরকারি বরাদ্দ পাওয়া সত্ত্বেও শুধু ব্যাংক হিসাবসংক্রান্ত ভুল, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) তথ্য বিভ্রাট এবং কে-ওয়াইসি আপডেট না থাকার কারণে ‘বিশেষ অনুদান’ পাননি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শতাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে পরিচালিত এই সহায়তা কার্যক্রমে তথ্যঘাটতির জেরে অনেক প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দকৃত টাকাও জমা হয়নি নির্ধারিত হিসাবে।
সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের বাজেট শাখা থেকে প্রকাশিত একটি স্মারকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের অনুদান বাবদ মনোনীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের তালিকা গত ১৭ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। চূড়ান্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল ১০১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক-কর্মচারী ক্যাটাগরিতে ২৫০ জন এবং ৭ হাজার ১০০ জন শিক্ষার্থী। তবে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’ এর মাধ্যমে অর্থ বিতরণের সময় দেখা যায়, ১০১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫০টির ব্যাংক হিসাবসংক্রান্ত তথ্য ভুল ছিল। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের হিসাবে টাকা পাঠানো যায়নি।
এছাড়া শিক্ষক-কর্মচারী ও ছাত্রছাত্রী ক্যাটাগরিতে ৬ হাজার ৯৯৯ জন উপকারভোগীর মধ্যে ৪৬২ জনের ‘নগদ’ অ্যাকাউন্টে কে-ওয়াইসি তথ্য হালনাগাদ না থাকায় তাদেরও অনুদানের টাকা প্রদান করা সম্ভব হয়নি।
এ অবস্থায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে- যেসব শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা তাদের আবেদনপত্রে দেওয়া নগদ মোবাইল নম্বরে এখনও অর্থ পাননি, তাদেরকে ওয়াইসি তথ্য আগামী ৭ আগস্টের মধ্যে হালনাগাদ করতে হবে। আর যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব তথ্য ভুল রয়েছে, তাদের সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাব নম্বর, শাখার নাম, রাউটিং নম্বর, হিসাবের নামসহ প্রয়োজনীয় তথ্য প্রতিষ্ঠান প্রধানের স্বাক্ষর এবং ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির প্রতিস্বাক্ষরসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাজেট শাখায় নির্ধারিত ই-মেইল ([email protected]) ঠিকানায় পাঠাতে বলা হয়েছে।
একই সঙ্গে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তথ্য না পাঠালে বা হালনাগাদ না করলে অনুদান বিতরণে বিলম্ব হতে পারে বলেও জানানো হয়েছে।
রাজধানীর নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি নেই মধ্যবিত্তের। কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে বাজারে সবজির সরবরাহ কমে যাওয়ায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দামে। এতে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। পাশাপাশি ডিম ও মুরগির দামেও স্বস্তি নেই। ব্রয়লার মুরগির দাম খুব বেশি না বাড়লেও সোনালি জাতের মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকা। এছাড়া সরবরাহ বাড়লেও দাম কমেনি ইলিশের। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সবজি বিক্রেতারা জানান, আলু ও পেঁপে ছাড়া বাকি সব সবজি ৬০ টাকার বেশি দরে কিনতে হচ্ছে। টানা কয়েকদিনের বৃষ্টি সবজির চড়া দামকে আরও উসকে দিয়েছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগির দামে খানিকটা স্থিতিশীলতা লক্ষ্য করা গেলেও বেড়েছে সোনালি জাতের মুরগির দাম। প্রতি কেজি সোনালি মুরগির ৩২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কয়েকদিন আগেও যা বিক্রি হয়েছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়।
গরুর মাংস কেজিপ্রতি ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা, গরুর কলিজা ৮০০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা ও খাসির মাংস কেজি প্রতি ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে সরবরাহ বাড়লেও ইলিশ এখনো মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরেই রয়ে গেছে। বাজারগুলোতে ১ কেজি ওজনের ইলিশ ২ হাজার ২০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা, ৭০০ গ্রামের ইলিশ ১ হাজার ৮০০ টাকা, ৫০০ গ্রামের ইলিশ ১ হাজার ২০০ টাকা, ৩০০ গ্রামের ইলিশ হাজার টাকা ও ১৫০ থেকে ২০০ গ্রামের ইলিশ ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
অন্যান্য মাছের ক্ষেত্রে এক কেজি শিং চাষের (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, দেশি শিং ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা, প্রতি কেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, দেশি মাগুর ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা, মৃগেল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, চাষের পাঙাশ ২০০ থেকে ২৩০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, বোয়াল ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বড় কাতল ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা, পোয়া ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কই ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, মলা ৫০০ টাকা, বাতাসি টেংরা ১ হাজার ৩০০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি ৫০০ টাকায় ও পাঁচ মিশালি মাছ ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে কয়েকদিন আগেও ফার্মের মুরগির ডিম প্রতি ডজন ১২০ থেকে ১২৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হলেও এখন দাম বেড়ে তা ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে।
এছাড়া প্রতি কেজি বেগুন, ঝিঙা, কচুর লতি, করলা কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। সপ্তাহখানেক আগে এসব সবজির দাম কিছুটা কম থাকলেও বৃষ্টির কারণে এখন সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। ঢেঁড়স, পটল বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়।
তবে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে পাওয়া যাচ্ছে পেঁপে। টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি। এছাড়া বরবটি কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ৮০ টাকা, পটল ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ধুন্দল ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
কাঁচামরিচ প্রকারভেদে ১৬০ থেকে ২৪০ টাকা।
প্রতি পিস লাউ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ইন্ডিয়ান গাজর ১৪০ টাকা, দেশি শসা ৮০ থেকে ১০০ টাকা ও হাইব্রিড শসা ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। লেবুর হালি ১০ থেকে ২০ টাকা, ধনেপাতা ৩০০ টাকা কেজি, কাঁচাকলা হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা, চাল কুমড়া ৫০ টাকা পিস, কাঁকরোল ৮০ টাকা ও মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এক আঁটি লালশাক কিনতে কমপক্ষে ২০ টাকা লাগছে। লাউশাক কিনতে খরচ হচ্ছে বাজারভেদে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কলমিশাক ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত প্রতিআঁটি বিক্রি হচ্ছে। কলমিশাক ২ আঁটি ২০ টাকা, পুঁইশাক ৩০ টাকা ও ডাটা শাক দুই আঁটি ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এসব বাজারে আলু ২৫ থেকে ৩০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বৃষ্টি হওয়ায় সরবরাহ কমেছে ফলে। বেশিরবভাগ সবজির দাম বেড়েছে।
চালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মোটা চালের দাম ৬০ টাকার বেশি। মাঝারি মানের এক ধরনের কিছু মিনিকেট ও নাজিরশাইল রয়েছে, যা শুধু ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। বাকি সব চালের কেজি ৭৫ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাংলাদেশে শিশুদের ডায়রিয়া চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এতে শিশুদের অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স ঝুঁকি বাড়ছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশের গ্রামীণ অঞ্চলের একটি তৃতীয় স্তরের হাসপাতালে ১ থেকে ৫৯ মাস বয়সি ৮ হাজার ২৯৪টি শিশুর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। এই গবেষণায় শিশুদের চিকিৎসা নেওয়ার ধরন ও অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, অধিকাংশ (৫৫ শতাংশ) ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুর ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়েছে। অথচ মাত্র ৬ শতাংশ শিশুর আমাশয় (রক্তযুক্ত পায়খানা) ছিল, যার জন্য অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশিকা অনুযায়ী, কলেরা ছাড়া সাধারণ পানিবাহিত ডায়রিয়ার চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন নেই।
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, ৭৭ শতাংশ অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন) ছাড়াই স্থানীয় ফার্মেসি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। আমাশয় আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে শুধু অ্যান্টিবায়োটিক (জিংক বা ওআরএস ছাড়া) ব্যবহারের প্রবণতা সাধারণ পানিবাহিত ডায়রিয়ার চেয়ে বেশি ছিল (১৫ শতাংশ বনাম ৯ শতাংশ)। যদিও ৮৫ শতাংশ শিশু ওআরএস (খাবার স্যালাইন) নিয়েছে। কিন্তু মাত্র ৭ শতাংশ শিশু অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়া জিংক ও ওআরএস দুটোই পেয়েছে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, যে শিশুরা হাসপাতালে আসার আগে অ্যান্টিবায়োটিক নিয়েছে, তাদের হাসপাতালে ভর্তির হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। যারা অ্যান্টিবায়োটিক নিয়েছে ও নেয়নি, সে তুলনায় এই হার যথাক্রমে ২০ শতাংশ ও ১৩ শতাংশ ছিল। এতে এমন ইঙ্গিত মেলে যে, অ্যান্টিবায়োটিকের অযৌক্তিক ব্যবহার কেবল অপ্রয়োজনীয়ই নয়, বরং শিশুদের অসুস্থতার তীব্রতা বাড়াতেও ভূমিকা রাখতে পারে।
অভিভাবকদের মধ্যে দ্রুত সুস্থ হওয়ার আকাঙ্ক্ষা, ঐতিহ্যগত অভ্যাস, ফার্মেসির প্রতি আস্থা ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র দূরে হওয়ার কারণে অনেকে ফার্মেসি থেকে চিকিৎসা নিতে আগ্রহী। গবেষণায় দেখা গেছে, টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে কুমুদিনী হাসপাতালে আগত শিশুদের মধ্যে যারা মির্জাপুর উপজেলা থেকে বেশি দূরত্বের এলাকা থেকে এসেছে, তাদের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের হার তুলনামূলক বেশি। এর অর্থ, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সহজলভ্যতা অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারকে প্রভাবিত করছে।
গবেষণায় বারবার অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের (এএমআর) ভয়াবহতার কথা ওঠে এসেছে। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স ২০১৯ সালে বিশ্বজুড়ে সরাসরি ১ দশমিক ২৭ মিলিয়ন মৃত্যুর জন্য দায়ী ছিল। আর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দশমিক ৪৯৫ মিলিয়ন মৃত্যুর কারণ ছিল। এছাড়া ২০৫০ সালের মধ্যে এএমআর এক ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিরিক্ত স্বাস্থ্যসেবা ব্যয় এবং ২০৩০ সালের মধ্যে জিডিপি থেকে প্রতি বছর এক ট্রিলিয়ন থেকে ৩ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতির কারণ হতে পারে। বাংলাদেশেও অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের উচ্চ প্রবণতা দেখা যায়, বিশেষ করে, শিগেলা ও ভিব্রিও কলেরার মতো ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে যথেচ্ছ ব্যবহার করা হয়।
গবেষকেরা অ্যান্টিবায়োটিকের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার কমাতে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রির বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করার পরামর্শ দিয়েছেন।
তারা বলেছেন, ফার্মেসিগুলোতে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রির ওপর নজরদারি বাড়ানো এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে সঠিক চিকিৎসাপদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান ও অনুশীলনের ব্যবধান কমানোর ওপর জোর দেওয়া দরকার। এছাড়া ওআরএস ও জিংকের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানো ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করাও অপরিহার্য।
গবেষণা প্রতিবেদনটি গত ২০ জুলাই বিজ্ঞান সাময়িকী ‘নেচার’-এ প্রকাশিত হয়েছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সূত্র মারফত জানা যায়, নাশকতার মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করতে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ তাদের বাছাইকৃত ‘ক্যাডারদের’ প্রশিক্ষণও দিয়েছে।
প্রশিক্ষণ নেওয়া গেরিলা বাহিনীর প্রধান উদ্দেশ্য দেশের মধ্যে বড় ধরনের অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা এবং হাইকমান্ডের সবুজ সংকেত পাওয়ার পর ঢাকা দখলে নেওয়া। এজন্য মাস্টারপ্ল্যানের অংশ হিসাবে তালিকাভুক্ত কয়েক হাজার নেতাকর্মী দেশে ও বিদেশে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে কোর গ্রুপের একটি বড় অংশ প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষ করেছে বলে জানা গেছে।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দেওয়া এসব প্রশিক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন সেনাবাহিনীতে কর্মরত মেজর পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা। সেনাবাহিনীর তরফ থেকে জানানো হয়েছে, সাদেকুল হক সাদেক নামের ওই মেজর বর্তমানে তাদের হেফাজতে রয়েছেন এবং এ বিষয়ে তদন্ত চলমান আছে। তদন্তে তিনি দোষী প্রমাণিত হলে সেনাবাহিনীর প্রচলিত নিয়মে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে উৎখাত করতে আগস্ট মাসে দেশজুড়ে নাশকতার ‘নীলনকশা’ সাজিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ জন্য নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের প্রায় আড়াই হাজার ক্যাডারকে এরই মধ্যে প্রশিক্ষণ দিয়েছে দলটি। রাজধানীর মিরপুর, ভাটারা, কাটাবন ও পূর্বাচল এলাকায় দেওয়া হয় এসব প্রশিক্ষণ।
সূত্র জানায়, প্রশিক্ষণের জন্য কর্মশালার নামে গত ৮ জুলাই রাজধানীর ভাটারা থানা এলাকার একটি কনভেনশন সেন্টার ভাড়া নেওয়া হয়। ওই কনভেনশন সেন্টারে ওইদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠন নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের প্রায় ৪০০ জন ক্যাডারকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই প্রশিক্ষণে অংশকারীদের আগে থেকেই একটি টোকেন দেওয়া হয়। যা দুই দিন আগে মিরপুর ডিওএইচএসে একটি মিটিংয়ে আবেদনের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়েছিল। পূর্বের দেওয়া সেই টোকেন দেখিয়ে প্রশিক্ষণস্থলে প্রবেশ করেন অংশগ্রহণকারীরা।
ডিবি ও ভাটারা থানা-পুলিশ জানায়, ৮ জুলাই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসুন্ধরা-সংলগ্ন কে বি কনভেনশন সেন্টারে ‘নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ’ একটি বৈঠক ডাকে, যেখানে ৩০০–৪০০ লোক অংশ নেন। অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা শেখ হাসিনার আহ্বানে সারাদেশ থেকে ঢাকায় লোক এনে শাহবাগ মোড় দখল করে দেশে ‘অস্থিরতা সৃষ্টি’ ও শেখ হাসিনার ‘পুনরায় ক্ষমতাসীন হওয়া’ নিশ্চিত করার পরিকল্পনা করেন। বৈঠকে সরকারবিরোধী স্লোগানও দেওয়া হয় বলে পুলিশের অভিযোগ।
এছাড়া রাজধানীর পূর্বাচলের সি-শেল রিসোর্টে, কাটাবনে ও মিরপুরে তিনটি প্রশিক্ষণের তথ্য পাওয়া গেছে। এসব প্রশিক্ষণে আওয়ামী লীগের ক্যাডারদের সশস্ত্র ও ভার্চ্যুয়াল লড়াইয়ের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। অন্তর্বর্তী সরকারকে উৎখাতে ঢাকায় তিন থেকে চার লাখ নেতাকর্মীর সমাগম ঘটিয়ে বিমানবন্দর ও শাহবাগ দখলের পরিকল্পনা ছিল ষড়যন্ত্রকারীদের।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ইতোমধ্যে ২২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর মধ্যে গত ১২ জুলাই উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকার ১১ নম্বর সেক্টরের ১৮ নম্বর রোডের ৮৩ নম্বর বাসা থেকে বরগুনার যুবলীগ নেতা সোহেল রানা ও একই সেক্টরের ১০/বি রোডের ১০ নম্বর বাসা থেকে গোপালগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেত্রী শামীমা নাসরিন শম্পাকে গ্রেপ্তার করে ভাটারা থানা পুলিশ। শম্পার স্বামী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। এ ছাড়া মেহেরপুরের যুবলীগ আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান রিটনকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের তিনজনের বিরুদ্ধে এসব প্রশিক্ষণে সার্বিক সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গ্রেপ্তার সোহেল রানা ও শামীমা নাসরিন শম্পাকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নিয়ে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরে বেরিয়ে আসে মেজর সাদেকুল হক সাদেকের নাম। যিনি এসব প্রশিক্ষণে মূল সমন্বয়ের কাজ করেন। তার সঙ্গে এই নীলনকশায় জড়িত তার স্ত্রী সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সুমাইয়া জাফরিন। বর্তমানে ওই মেজর সেনাবাহিনীর হেফাজতে আছেন।
সূত্র আরও জানায়, মেজর সাদেক কক্সবাজারের রামু ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত। গোয়েন্দা তথ্য বলছে, সাদেক ও সুমাইয়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার সময় শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে নেতাকর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। আর সরকার উৎখাতের এই পরিকল্পনার বিষয়টি কলকাতায় বসে সার্বিক তত্ত্বাবধান করছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তাকে সহযোগিতায় সেখানে রয়েছেন ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা ও পুলিশের সাবেক কর্মকর্তারা।
অন্যদিক ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর নির্দেশনায় সরকার উৎখাতের এই পরিকল্পনায় কৌশলগত সহযোগিতা করছেন দিল্লিতে অবস্থান করা পলাতক অতিরিক্ত আইজিপি ও পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলাম এবং ডিজিএফআইয়ের সাবেক প্রধান পলাতক লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুজিবুর রহমান।
সূত্র জানায়, ঢাকায় প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগের ক্যাডারদের সবাইকে ইতোমধ্যে শনাক্ত করেছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। পাশাপাশি এসব প্রশিক্ষণে অর্থের যোগান দেওয়া ব্যবসায়ীদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া মেজর সাদেক ও তা স্ত্রী ব্যতীত আর কেউ এই ষড়যন্ত্রে জড়িত কি না, তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, গ্রেপ্তার সোহেল রানা ও শামীমা নাসরিন শম্পা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, নেতাকর্মীদের দেওয়া প্রশিক্ষণে মেজর সাদেক ছাড়াও আরও একাধিক প্রশিক্ষক ছিলেন। ভাটারা থানা এলাকার ওই কনভেনশন সেন্টারটি ভাড়া করেন সাবেক মালিক বায়জিদ। তার বাড়ি গোপালগঞ্জে। এর সঙ্গে ওই কনভেনশন সেন্টারের ম্যানেজারও জড়িত। তার সহযোগিতায় প্রশিক্ষণ চলাকালে ওই কনভেনশন হলের সব সিসিটিভি ক্যামেরা ওইদিন বন্ধ রাখা হয়।
এদিকে মেজর সাদেককে হেফাজতে নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছে সেনাবাহিনী। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেস ‘এ’-তে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সেনাসদরের মিলিটারি অপারেশনস পরিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা বলেন, মেজর সাদেকের বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। যদিও বিষয়টি তদন্তাধীন আছে। তারপরেও আমি বলব, এরকম একটা ঘটনার কথা জানার পরে তিনি (মেজর সাদেক) সেনাবাহিনীর হেফাজতে আছেন এবং তদন্ত চলমান আছে। তদন্তে তার দোষ প্রমাণিত হলে নিঃসন্দেহে সেনাবাহিনীর প্রচলিত নিয়মে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেহেতু বিষয়টি তদন্তাধীন আছে এর বেশি এই মুহূর্তে বলা আমার মনে হয় সমীচীন হবে না।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর থেকে ১৫ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশ আরোপ করেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। যা অন্তর্বর্তী সরকারের আরেকটি সফলতা।
তিনি আজ শুক্রবার তার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেয়া এক পোস্টে এ কথা বলেন।
ওই পোস্টে তিনি লেখেন, ‘১৫ শতাংশ কমিয়ে বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ২০ শতাংশ। অ্যানাদার সাকসেস অফ ইন্টেরিম গভর্নমেন্ট’।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর থেকে ১৫ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশ আরোপ করেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। শুল্ক নিয়ে হোয়াইট হাউসের এক ঘোষণায় এই পরিমাণের কথা উল্লেখ করা হয়।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সার্বিক সহযোগিতায় আগারগাঁও থেকে কারওয়ান বাজার মেট্রোরেল পিলারের অঙ্কিত গ্রাফিতি “জুলাই আর্ট ওয়ার্কের” আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
আজ রাজধানীর আগারগাঁও মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বলেন, "এই গ্রাফিতিগুলো আমাদেরকে আওয়ামী স্বৈরশাসনের ভয়াল দিনগুলো এবং জনগণের সাহসী প্রতিরোধের ইতিহাস বারবার স্মরণ করিয়ে দেবে। ভবিষ্যতে এ দেশে যেন আর কোনো স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, সে লক্ষ্যে এসব গ্রাফিতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।"
সভাপতির বক্তব্যে ডিএনসিসি প্রশাসক বলেন,
"ফ্যাসিবাদ ইস্যুতে জাতীয় ঐক্য ধরে রাখার বিষয়টি মাথায় রেখেই এই গ্রাফিতি কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। গত ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের উত্থান এবং তার পতনের ইতিহাস তুলে ধরাই ছিল এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য। গত একবছরে অনেক রং ফিকে হয়ে গেলেও, জুলাইয়ের চেতনা আজও অমলিন।"
"দেয়ালের ভাষা: স্মৃতি, প্রতিরোধ ও জনতার ইতিহাস"—এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে অঙ্কিত জুলাই আর্ট ওয়ার্কে ২০২৪ সালের ঐতিহাসিক জুলাই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান এবং ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রতিরোধের এক শক্তিশালী চিত্রমালা উপস্থাপন করা হয়েছে।
দেয়ালচিত্রগুলোর মাধ্যমে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনৈতিক দমন-পীড়নের ভয়াবহ অধ্যায়, এবং ২০২৪ সালের ৩৬ দিনের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নানা দৃশ্য—মিছিল, সংঘর্ষ, গ্রেপ্তার, আত্মত্যাগ—উপস্থাপিত হয়েছে।
গুম, হত্যা, ভোট ডাকাতি, শিক্ষাব্যবস্থার ধ্বংস ও নাগরিক অধিকারের হরণ—এসব বাস্তবতার প্রতিবিম্ব যেন ফুটে উঠেছে রং ও রেখার প্রতিটি আঁচড়ে। শহিদ আবরার, ফেলানির মুখাবয়ব আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, স্মৃতি কেবল আবেগ নয়—এটি রাজনৈতিক সংগ্রামের অস্ত্র।
এই গ্রাফিতি কার্যক্রমকে বিশ্বব্যাপী জনগণের প্রতিরোধশিল্পের ধারাবাহিকতায় একটি আধুনিক সংযোজন হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।
দক্ষিণ আমেরিকার স্বৈরশাসন বিরোধী আন্দোলন, ফিলিস্তিনের দেওয়ালে প্রতিবাদচিত্র, যুক্তরাষ্ট্রে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার, কিংবা মায়ানমারে জান্তা-বিরোধী বিক্ষোভের মতো—এই দেয়ালচিত্রও হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের জনগণের প্রতিরোধের প্রতীক।
উল্লেখ্য, ঢাকার মেট্রোরেল পিলারগুলো এতদিন ছিল উন্নয়নের প্রতীক; আজ তা হয়ে উঠেছে বিকল্প ইতিহাসের ক্যানভাস।
ছাত্রজনতা ও নাগরিক সমাজ নিজেদের শিল্পী, লেখক ও ইতিহাস-নির্মাতা হিসেবে প্রকাশ করেছে এই দেয়ালে। এটি কেবল গ্রাফিতির প্রদর্শনী নয়—একটি সামাজিক, রাজনৈতিক এবং নান্দনিক আন্দোলনের প্রামাণ্য দলিল।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুগান্তকারী বাণিজ্য চুক্তি সই উপলক্ষে বাংলাদেশের শুল্ক আলোচক দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এই চুক্তিকে একটি ‘সুস্পষ্ট কূটনৈতিক বিজয়’ হিসেবে অভিহিত করেছেন তিনি।
শুল্ক নিয়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) সঙ্গে টানা তিন দিন আলোচনা করে। এরপর বাংলাদেশের ওপর আরোপিত শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করে যুক্তরাষ্ট্র।
এই নতুন শুল্ক ঘোষণার পর শুক্রবার (১ আগস্ট) প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে শুল্ক আলোচক দলকে অভিনন্দন অধ্যাপক ইউনূস।
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি যুগান্তকারী বাণিজ্য চুক্তি করায় বাংলাদেশের শুল্ক নিয়ে আলোচকদের আমরা গর্বের সঙ্গে অভিনন্দন জানাই। এটি একটি সুস্পষ্ট কূটনৈতিক বিজয়।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, প্রত্যাশিত হারের চেয়ে ১৭ শতাংশ কমিয়ে ২০ শতাংশ শুল্কহার নির্ধারণের মাধ্যমে আমাদের আলোচকরা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা ও অগ্রগতিতে অসাধারণ কৌশলগত দক্ষতা এবং অবিচল প্রতিশ্রুতি দেখিয়েছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিঃসন্দেহে উজ্জ্বল। আজকের সাফল্য আমাদের জাতির দৃঢ়তা ও শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের সাহসী দৃষ্টিভঙ্গির একটি শক্তিশালী প্রমাণ।
তিনি জানান, ফেব্রুয়ারি থেকে আলোচকরা নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন এবং শুল্ক, অশুল্ক ও জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক জটিল আলোচনার মধ্য দিয়ে সফলভাবে পথ অতিক্রম করেছেন।
প্রেস সচিব শফিকুল আলামের মাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, এই চুক্তির মাধ্যমে আমাদের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা অক্ষুণ্ন থাকল। সেই সঙ্গে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভোক্তা বাজারে প্রবেশাধিকার আরও বাড়ল এবং আমাদের জাতীয় স্বার্থও সুরক্ষিত হলো।
এই অর্জন শুধু বাংলাদেশের বৈশ্বিক অবস্থানকেই শক্তিশালী করেনি বরং আরও বেশি সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে যা ভবিষ্যতে দ্রুত প্রবৃদ্ধি ও স্থায়ী সমৃদ্ধির পথ তৈরি করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে। আজ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সংস্কার ও সমসাময়িক বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ভোট দিতে সবাই পারবেন। আমাদের হেন উদ্যোগ নেই, যা নেওয়া হচ্ছে না। ভোটাধিকারের কথা বলছেন? ক্লাসে যখন যেতাম। জিজ্ঞেস করতাম ছাত্রদের- তোমাদের মধ্যে কে কে ভোট দিয়েছো? তারা হাসাহাসি শুরু করত। কেউ কেউ বলত স্যার ভোট দিয়েছি, তবে দশ বারোটা। ৯০ শতাংশ বলতো তারা ভোট দেয়নি। যা হোক আমাদের সেই দুঃখ ঘুচবে। আমরা ১৮ বছর ধরে ভোট দিতে পারিনি।
কবে আগামী নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে— জানতে চাইলে আইন উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের সময় তো... জাস্ট ওয়েট করেন, কিছুদিনের মধ্যে ঘোষণা শুনবেন।
আরেক প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই- এর সঙ্গে আমি দ্বিমত পোষণ করি। ২০০৮-এর নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ আছে। আপনারা যারা সাংবাদিকরা আছেন, কাজ করেন, অনেক ভয়াবহ তথ্য পাবেন ২০০৮-এর নির্বাচন নিয়ে।
উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনী কার্যক্রম নির্বাচন কমিশন দেখবে। আমি শুধু আমাদের সরকারের নিয়তের কথা আপনাদেরকে বলতে পারি। আমাদের নিয়ত আছে বাংলাদেশের ইতিহাসে বেস্ট ইলেকশন দেওয়ার, এটা স্যার (প্রধান উপদেষ্টা) আমাদের সবসময় বলেন।
এদিকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গত এক বছরে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে তিনি উল্লেখ করেন।
আইন উপদেষ্টা বলেন, আইন সংস্কার হিসেবে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন-১৯৭৩ সংশোধন , সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ-২০২৫ প্রণয়ন, দেওয়ানি ও ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন, আইনগত সহায়তা প্রদান আইন সংশোধন এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করে যুগোপযোগী বিধান যুক্ত করা হয়েছে। সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ,২০২৫ প্রণয়ন করে পূর্বের সাইবার নিরাপত্তা আইনের নিপীড়নমূলক ধারাগুলো এবং এসবের অধীনে দায়ের হওয়া মামলাগুলো বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বিধিমালা ও বিবাহ নিবন্ধন বিধিমালা সংশোধন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে।
উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার হিসেবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসের পদ সৃজনের ক্ষমতা বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের উপর ন্যস্ত করে ‘বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস গঠন বিধিমালা, ২০২৫’ এবং জুডিসিয়াল সার্ভিসের সদস্যদের সরকারের আইন ও বিচার বিভাগে পদায়নের সুনির্দিষ্ট বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। দেশের সকল আদালত প্রাঙ্গণে তথ্য ও সেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। আদালতে দক্ষ কর্মচারী নিয়োগের লক্ষ্যে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়োগের কার্যক্রম চালু করার জন্য নীতিমালা প্রস্তুত হয়েছে।
দুর্নীতি প্রতিরোধে অধস্তন আদালতের বিচারকদের সম্পত্তির হিসাব গ্রহণ এবং সংগৃহীত হিসাবের নথিসমূহ পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, সাব-রেজিস্ট্রারদের জন্য ব্যক্তিগত তথ্য বিবরণী তৈরি করা হয়েছে। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার উপর সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধের প্রসিকিউশন কার্যক্রম মনিটরিং করার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে একটি বিশেষ সেল গঠন করা হয়েছে।
বিচার কার্যক্রম ডিজিটালাইজেশন করার অনেক উদাহরণ দিয়ে ড. আসিফ নজরুল বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের Attestation সেবাকে শতভাগ অনলাইন প্রক্রিয়ায় রূপান্তর করা হয়েছে। বিচারপ্রার্থী জনগণের জামিনপ্রাপ্তি সহজীকরণের লক্ষ্যে অনলাইনে বেইলবন্ড জমা দেওয়ার নিমিত্ত প্রথমবারের মতো সফটওয়্যার প্রস্তুত করা হয়েছে। শিগগিরই পরীক্ষামূলকভাবে সফটওয়্যারটির ব্যবহার শুরু হবে।
রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলার প্রত্যাহারের বিষয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, জেলা পর্যায়ে গঠিত কমিটি এবং আইন ও বিচার বিভাগ কর্তৃক এজাহার, চার্জশিটসহ বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনার পর ১৫ হাজারেরও বেশি মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া সাইবার আইনের অধীনে ৪০৮ টি স্পিচ অফেন্স সংক্রান্ত মামলা এবং জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে দায়ের করা ৭৫২টি হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এসব মামলা প্রত্যাহারের কারণে কয়েক লক্ষ্য রাজনৈতিক নেতা, কর্মী ও স্বাধীন মতের মানুষ হয়রানি থেকে রেহাই পেয়েছে।
আসিফ নজরুল বলেন, বর্তমান সরকারের কার্যকালে আইন মন্ত্রণালয়ের দৈনন্দিন কার্যক্রমে লক্ষণীয় গতিশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। যেমন- গত এক বছরে মন্ত্রী পর্যায়ে নিষ্পত্তিকৃত নথির সংখ্যা ১২৮৩টি, বিগত সরকারের একই সময়ে ৮৩৪ টি নথি নিষ্পত্তি হয়েছিলো। গত এক বছরে আইন মন্ত্রণালয় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগসহ অন্যান্য দপ্তরে ৩৯১টি বিষয়ে আইনি মতামত প্রদান করেছে (গত সরকারের আমলে ছিল ১৮০টি)। এ সময়ে সনদ, এফিডেভিট, দলিলসহ ৩৬ ধরনের মোট ১,৫৯,৫৪৪টি ডকুমেন্ট সত্যায়ন হয়েছে যা আগের তুলনায় দ্বিগুণ।
নতুন দায়িত্ব হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক গঠিত বিভিন্ন সংস্কার কমিশন, গুম সংক্রান্ত অপরাধ তদন্ত কমিশন ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে আইন মন্ত্রণালয় থেকে সাচিবিক সহায়তা দেওয়ার কথা উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা বলেন, দেশে প্রথমবারের মতো বিধিমালা ও প্রবিধানগুলোকে কোডিফাই করার কাজ শুরু হয়েছে।
সারাদেশের বিভিন্ন আদালত ও ট্রাইব্যুনালে ৪৮৮৯ জন সরকারি আইন কর্মকর্তা এবং অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে ২৭৪ জন এটর্নিকে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারক ও প্রসিকিউটর নিয়োগ করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগে পাঁচজন বিচারপতি, হাইকোর্ট বিভাগে ২৩ জন বিচারপতি নিয়োগে সাচিবিক সহায়তা দেয়া হয়েছে।
হাজার হাজার মানুষ গত বছর রাজপথে নেমে বাংলাদেশের কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করেছিল। এরপর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এক বছর ধরে ক্ষমতায় আছে অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার মানবাধিকার রক্ষার চ্যালেঞ্জিং কর্মসূচি বাস্তবায়নে ব্যর্থ হচ্ছে। গতকাল বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলেছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।
এইচআরডব্লিউর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে যে ভীতি, দমন-পীড়ন ও গুমের মতো ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটত, তার কিছুটা অবসান ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকার কথিত রাজনৈতিক বিরোধীদের দমনে নির্বিচার আটক করছে। মানবাধিকার সুরক্ষায় তারা এখনো কাঠামোগত সংস্কার আনতে পারেনি।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, মানবাধিকারভিত্তিক গণতন্ত্র গড়ার আশায় এক বছর আগে যারা শেখ হাসিনার নিপীড়নমূলক শাসনের বিরুদ্ধে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন, তাদের সেই আশা এখনো পূরণ হয়নি।
মীনাক্ষী গাঙ্গুলি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার যেন এক জায়গায় আটকে আছে। একদিকে সংস্কারবিহীন নিরাপত্তা বাহিনী, অন্যদিকে মাঝেমধ্যে সহিংস ধর্মীয় কট্টরপন্থি এবং এমন কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠীকে সামলাতে হচ্ছে, যারা বাংলাদেশিদের অধিকার রক্ষার চেয়ে শেখ হাসিনার সমর্থকদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে বেশি আগ্রহী।
২০২৪ সালে গঠিত ১১টি সংস্কার কমিশন, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় ও দেশি-বিদেশি মানবাধিকারকর্মীরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে যেসব বিস্তারিত সুপারিশ দিয়েছে, যা এখনো বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে।
এদিকে সরকার বিপুল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। যেমন উচ্ছৃঙ্খল জনতার সহিংসতা (মব ভায়োলেন্স), রাজনৈতিক সহিংসতা এবং রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য চরমপন্থি গোষ্ঠীর বিশেষ করে নারী অধিকার, সমকামী, উভকামী ও ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিবিরোধী ধর্মীয় কট্টরপন্থিদের হাতে সাংবাদিকদের হয়রানি উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে চলছে। ২৬ ও ২৭ জুলাই রংপুর জেলায় হিন্দু সংখ্যালঘুদের অন্তত ১৪টি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত করেছে একদল উচ্ছৃঙ্খল জনতা। আর পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে।
টানা পাঁচ সপ্তাহের বিক্ষোভের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। জাতিসংঘের তথ্যমতে, পাঁচ সপ্তাহের বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ১ হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হন। নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। কিন্তু এখনো হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে, যা নিরাপত্তা খাতে জরুরি সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরছে।
গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা বাহিনী ও বর্তমানে নিষিদ্ধ (কার্যক্রম) আওয়ামী লীগের সমর্থকদের সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হন। গত বছরের গণআন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে গঠিত হয় জাতীয় নাগরিক পার্টি।
অতীতের দলীয় পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের পুনরাবৃত্তির মতোই পুলিশ পরে নির্বিচার শত শত কথিত আওয়ামী লীগ সমর্থককে আটক করে। ৮ হাজার ৪০০ জনের বিরুদ্ধে ১০টি হত্যা মামলা করে। এই মামলার আসামিদের বেশির ভাগই অজ্ঞাত ব্যক্তি। তবে সরকার ‘গণগ্রেপ্তারের’ অভিযোগ নাকচ করেছে।
২০২৪ সালের ৬ আগস্ট থেকে ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পুলিশ ৯২ হাজার ৪৮৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে, অধিকাংশের বিরুদ্ধে অভিযোগ হত্যার। ১ হাজার ১৭০টির বেশি মামলায় প্রায় ৪০০ সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতা-কর্মীর নামোল্লেখ করা হয়েছে। এসব মামলায় আরও শত শত অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে সরবরাহ করা তথ্যে দেখা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম ২০২৪ সালের আন্দোলনকালের হত্যা বা হত্যাচেষ্টার অন্তত ৬৮টি মামলার আসামি হয়ে গত অক্টোবর থেকে কারাগারে আছেন। তবে এসব ঘটনার মধ্যে ৩৬টি ঘটেছিল এমন সময়ে, যখন তিনি দেশের বাইরে ছিলেন। অন্যান্য অনেক ঘটনার মতো এখানেও আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হয়নি। অন্যান্য বড় রাজনৈতিক মামলায় আটক ব্যক্তিরাও অভিযোগ করছেন, তাদের ভিত্তিহীন অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের চিকিৎসাসেবা ও জামিন থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
প্রথম মামলার বিচার ৩ আগস্ট শুরু হওয়ার কথা। যেখানে অভিযুক্ত তিনজনের একজন শেখ হাসিনা, যার অনুপস্থিতিতেই বিচার চলবে। তবে অনেক মামলার বিচার শুরুর কোনো দৃশ্যমান সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। আর যাদের আটক করা হয়েছে, তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি।
দমনমূলক বিশেষ ক্ষমতা আইনের অধীনে শত শত মানুষকে আটক করা হয়ে থাকতে পারে। এই আইনে অভিযোগ ছাড়াই যে কাউকে আটক করা যায়। আগের সরকার ভিন্নমত দমনে এই আইন ব্যবহার করেছিল। এ ছাড়া গত ফেব্রুয়ারিতে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামের অভিযানে ৮ হাজার ৬০০ জনের বেশি মানুষকে ধরপাকড় করা হয় বলে জানা গেছে, যাঁদের অনেকে আওয়ামী লীগের সমর্থক বলে অভিযোগ।
গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে অনেকেই নির্বিচার এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আটক করা হয়েছে। অন্যদিকে শেখ হাসিনার শাসনামলে নিরাপত্তা বাহিনীর যেসব সদস্য গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাদের খুব কমসংখ্যক ব্যক্তির বিরুদ্ধেই সরকার মামলা করেছে।
জুলাই মাসে বাংলাদেশ পুলিশের একজন মুখপাত্র বিবিসিকে বলেছেন, গত বছরের জুলাই ও আগস্টে সংঘটিত প্রাণঘাতী সহিংসতার ঘটনায় মাত্র ৬০ পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত বছরের ওই সহিংসতার ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য কুখ্যাত র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নসহ (র্যাব) পুলিশ ও সেনাবাহিনীর অনেকগুলো ইউনিট অংশ নিয়েছিল।
অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৪ সালের ২৭ আগস্ট শেখ হাসিনার আমলে সংঘটিত গুমের ঘটনা তদন্তে একটি কমিশন গঠন করে। একদিন পর ২৯ আগস্ট ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর দ্য প্রোটেকশন অব অল পারসন্স ফ্রম এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স বা গুম থেকে প্রত্যেক মানুষের সুরক্ষা সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক সনদ আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করে বাংলাদেশ। গুম কমিশন এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৮০০টির বেশি অভিযোগ পেয়েছে। তারা এরই মধ্যে দুটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। আরেকটি আগামী ডিসেম্বরে প্রকাশের কথা রয়েছে।
কমিশনের সদস্যরা হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলেছেন, তারা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অনেক প্রমাণ নষ্ট করেছে, সহযোগিতা কমিয়ে দিয়েছে এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনতে বাধা দিচ্ছে। অভিযুক্ত সদস্যদের অনেকেই এখনো বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থায় কর্মরত রয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন।
ইউনূস সরকার পুলিশ, বিচার বিভাগ, নারী অধিকারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আইন ও সংবিধান সংস্কারের জন্য ১১টি কমিশন গঠন করেছে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার সেগুলো গ্রহণ করেনি। রাজনৈতিক ঐকমত্যে পৌঁছার জন্য সংস্কার কর্মসূচি উল্লেখযোগ্যভাবে সংকুচিত করা হলেও সেই চেষ্টা বেশ ধীর হয়ে পড়েছে।
সব ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীদের সম্পূর্ণ, সমান, অর্থবহ এবং নিরাপদ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে। বিষয়টি নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারসহ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ১৩২৫ নম্বর প্রস্তাবের সঙ্গে সংগতি রেখে করার কথা বলা হয়েছে।
নিজেদের সময়কালের পরেও যাতে মানবাধিকার রক্ষায় সহায়ক হয়, সে জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বিচার আটক বন্ধ করা উচিত। বিশেষ করে, বিচার শুরু হওয়ার আগেই আটক রাখা যে নিয়ম নয়, বরং ব্যতিক্রম—এই বিষয়টি তাদের নিশ্চিত করা উচিত। নিরাপত্তা বাহিনীর যেসব সদস্য গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত, তাদের বিচারকে সমর্থন করার মধ্য দিয়ে দায়মুক্তি দেওয়া বন্ধ করা উচিত।
নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। নিরাপত্তা খাতের সংস্কার শুরু করা উচিত, যার মধ্যে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বিলুপ্ত করা অন্যতম। নারীর অধিকার ও নারীদের পূর্ণ প্রতিনিধিত্বকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, বিদেশি সরকার ও জাতিসংঘকে এই অন্তর্বর্তী সরকারকে সহায়তা করা উচিত। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে এটা করা যেতে পারে। সংশ্লিষ্ট সরকারগুলোর উচিত বাংলাদেশ ত্যাগ করা ব্যক্তিদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিচার করা। প্রয়োজনে এক্ষেত্রে সর্বজনীন বিচারব্যবস্থাকে (ইউনিভার্সাল জুরিসডিকশন) কাজে লাগানো যেতে পারে। তাদের (বিদেশি সরকার ও জাতিসংঘকে) স্পষ্ট করতে হবে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের গুরুতর লঙ্ঘনের জবাবদিহি নিশ্চিত করার ওপরই জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা অভিযানে বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণ নির্ভর করবে।
এইচআরডব্লিউর এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, ‘ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার যে বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে সে বিষয়ে কারও কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিতে সত্যিকারের ও টেকসই পরিবর্তন আনতে হলে এখন অনেক কাজ করা দরকার।’
মীনাক্ষী বলেন, যেসব রাজনৈতিক দলের সদস্য অতীতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছেন, তাদের উচিত এ ধরনের অপরাধ যেন আর কখনো না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে সংস্কারের পক্ষে দাঁড়ানো এবং সবার অধিকার রক্ষায় সমর্থন জানানো।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের ৩৬তম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় জানানো হয়, সভায় ‘স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
এছাড়া, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিং-সাপেক্ষে ‘স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয়েছে।
জুলাই সনদ প্রণয়নের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আজই রাষ্ট্রসংস্কারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে আলোচনা শেষ করতে চায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ আজ একথা জানিয়েছেন।
আজ সকাল সাড়ে এগারোটা থেকে শুরু হওয়া জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের ২৩তম দিনের আলোচনার শুরুতে সূচনা বক্তব্যে তিনি একথা জানান।
তিনি বলেন, আজকের মধ্যেই অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিষ্পত্তির মাধ্যমে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শেষ করা হবে। এরপর রাষ্ট্র সংস্কারের সনদের চূড়ান্ত খসড়া দলগুলোকে পাঠানো হবে। তাদের মতামতের ভিত্তিতেই চূড়ান্ত হবে বহুল আকাঙ্ক্ষিত জুলাই সনদ।
ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় ৬টি কমিশনের সুপারিশগুলোর সারাংশগুলোর মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে আলোচনায় ঐকমত্য হয়েছে। ১৩টি বিষয়ে নোট অব ডিসেন্টসহ ঐকমত্য হয়েছে এবং বাকি অমীমাংসিত আলোচনাগুলো নিষ্পত্তির মাধ্যমে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শেষ হবে আজ।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ আরো বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের কাছে ইতোমধ্যেই জুলাই সনদের পটভূমি খসড়া দেয়া হয়েছে। সেগুলোর ওপর দলগুলোর দেয়া সংশোধনী প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছে কমিশন।
তিনি জানান, দলগুলোর পারস্পারিক আলোচনার মধ্যদিয়ে অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধান হতে পারে বলেও আশা করা যাচ্ছে।
এরপর চূড়ান্ত খসড়া তৈরি করে রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষর নেওয়ার জন্য তাদের কাছে পাঠানো হবে। সেখানে দলগুলো স্বাক্ষর করবে।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আজকের আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে রয়েছে-উচ্চকক্ষ গঠন ও নির্বাচন পদ্ধতি, রাষ্ট্রের মূলনীতি, সরকারি কর্ম কমিশন, দুদক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান ও নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আজকের আলোচনায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি-সহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করছেন।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আজ এ আলোচনায় কমিশনের সদস্য হিসেবে বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন ও ড. মো. আইয়ুব মিয়া উপস্থিত রয়েছেন।
সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) ২০২৫ সালের জুন মাসে ৩২৪টি যাচাইকৃত মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্যের ঘটনা শনাক্ত করেছে, যেখানে দেখা গেছে বাংলাদেশে ভুয়া ও মিথ্যা তথ্যের ব্যবহার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।
গতকাল বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সিজিএস এ তথ্য জানায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলতি বছরের জুনে সিজিএস ৩২৪টি যাচাইকৃত মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্যের ঘটনা শনাক্ত করেছে। যার মধ্যে রাজনৈতিক ভুয়া তথ্যের সংখ্যা ২৫৩টি, যা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে জনমতকে প্রভাবিত করার একটি স্পষ্ট প্রচেষ্টার ইঙ্গিত দেয়।
এছাড়া বিনোদনসংক্রান্ত বিভ্রান্তিমূলক তথ্যের সংখ্যা ছিল ২৪টি। এরপর ধর্মীয় (১৯টি), অনলাইন হোক্স (১৮টি), কূটনৈতিক (৫টি), অর্থনৈতিক (৪টি) এবং পরিবেশসংক্রান্ত (একটি) ভুয়া তথ্য ছিল।
প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা তথ্যের মূল লক্ষ্য ছিল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা। যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছেন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নেতারাও, যে সংখ্যা মোট ১২৪টি। মিথ্যা তথ্যের আরও লক্ষ্য ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী (৪৮), সেলিব্রিটি (২৫), ধর্মীয়সংক্রান্ত (১৬), রাজনৈতিক দল (১৩), সরকারি প্রতিষ্ঠান (১৬), অন্তর্বর্তীকালীন সরকার (৬), বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (২) এবং ধর্মীয় ব্যক্তিকেন্দ্রিক (১)।
তবে, ৭৩টি ঘটনা অনির্দিষ্ট হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে, যেখানে ভুয়া তথ্য কোনো নির্দিষ্ট কাউকে লক্ষ্য করে করা হয়নি বরং সামগ্রিকভাবে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্য করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, সামাজিক মাধ্যম ভুল তথ্য ছড়ানোর প্রধান মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যেখানে ৩২৪টি ঘটনার মধ্যে ৩১৬টি ঘটেছে ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক, থ্রেডস এবং এক্স (টুইটার)-এর মতো প্ল্যাটফর্ম থেকে এবং ৮টি ভুয়া তথ্য অনলাইন নিউজ পোর্টালে ছড়ানো হয়েছে।
দেশের উত্তরাঞ্চলের ২ কোটি মানুষের দুঃখ তিস্তা। এই তিস্তাকে ঘিরেই এই অঞ্চলে লাখো মানুষের জীবন ও জীবিকা নির্বাহ হয়। কৃষি থেকে শুরু করে জেলে সবাই এই নদীর ওপর নির্ভরশীল। বছরের পর বছর এই নদীর ভাঙনে সর্বশান্ত হচ্ছে হাজারও মানুষ। হাজার হাজার মানুষ নদী ভাঙনের শিকার হয়ে বাস্তুহারা হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। উত্তরের অবহেলিত এসব মানুষের একটাই স্বপ্ন তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন হোক।
সব দ্বিধা কাটিয়ে অবশেষে আলোর মুখ দেখছে তিস্তা মহাপরিকল্পনা। ১০ বছর মেয়াদে ১২ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে। যেখানে বিনিয়োগ করবে বাংলাদেশ ও চীন সরকার। ইতোমধ্যে চীন দূতাবাসের একটি প্রতিনিধিদল তিস্তার মাঠ পর্যায়ের জরিপ করছে।
ডিরেক্টর অব দ্য পলিটিক্যাল সেকশন জং জিংয়ের নেতৃত্বে চীনা প্রতিনিধি দলটি মতবিনিময় করেছে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ ও তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনসহ নদী পাড়ের মানুষের সঙ্গে। মতবিনিময় শেষে তারা আশ্বস্ত করেছেন চীন সরকার দ্রুত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করতে চায়। সবকিছু ঠিক থাকলে জানুয়ারিতেই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন চীনের এই কর্মকর্তা।
‘তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও’ সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শাফিয়ার রহমান বলেন, ‘২০১৪ সাল থেকে শুষ্ক মৌসুমে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত তিস্তার সব পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। আর বর্ষাকালে তিস্তায় প্রবাহিত হয় তিন থেকে ৪ লাখ ঘনফুট পানি। গজলডোবার সব কপাট খুলে দেয় ভারত। দ্রুত বেগে নেমে আসা তিস্তার পানিতে উত্তরের পাঁচ জেলা নীলফামারী, রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে যায়। ভাঙনের পাশাপাশি ব্যাপক ফসলি জমি ক্ষতির মুখে পড়ে। ফলে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি তোলে তিস্তা অববাহিকার মানুষ।’
রিভারাইন পিপলের এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি বছর তিস্তার ভাঙন ও প্লাবনে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি ক্ষতির মুখে পড়েন উত্তরের ৫ জেলার বাসিন্দা। এছাড়া বাস্তুভিটা ও ফসলি জমি হারিয়ে বাস্তুহারা মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে।
তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানি বলেন, ‘১০ বছরের বেশি সময় ধরে আমরা তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে অববাহিকার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে আসছি। বিগত আওয়ামী সরকার তিস্তাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানিয়েছিল, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিলেও তারা ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তাতে তিস্তা পাড়ের মানুষের চাওয়া-পাওয়ার প্রতিফলন ঘটেছে।’
চলতি বছরের ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে টানা ৪৮ ঘণ্টার কর্মসূচি পালন করেছিল তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন।
তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী ও বিএনপির সংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, ‘মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে, তিস্তার দুই পারে পুনরুদ্ধারকৃত ১৭৪ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে গড়ে উঠবে ইকোপার্ক, ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন, আধুনিক কৃষি, মৎস্য খামার, কৃষিভিত্তিক কলকারখানা, জনবসতি ও স্যাটেলাইট টাউন।’
তিনি আরও বলেন, তিস্তা খননের ফলে ব্রহ্মপুত্র দিয়ে যমুনা সঙ্গে সারা বছর একটি নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল হবে। তিস্তার শাখা প্রশাখা ও উপনদী গুলো হবে এক একটি জলাধার। মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে এই অঞ্চল হবে একটি স্বপ্নের ঠিকানা। হাজারও মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অর্থনীতির ক্ষেত্রে ঘটবে এক নীরব বিপ্লব। অবহেলিত এসব মানুষের কথা চিন্তা করেই আমরা আন্দোলনে নেমেছি। আশা করছি আমাদের আন্দোলন সফল হবে।
নদী বিশেষজ্ঞ ড. তুহিন ওয়াদুদ মনে করেন, মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন এই অঞ্চলের মানুষের একটি ন্যায্য দাবি। অবশ্যই বাংলাদেশ সরকার চীন সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত তা বাস্তবায়ন করবে। এই কাজটি হলে উত্তরাঞ্চল বদলে যাবে।
গত ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ আবু সাঈদের প্রথম শাহাদাৎ দিবস ও জুলাই শহীদ দিবস অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘২০২৬ সালের জানুয়ারিতে শুরু হবে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ। যেখানে যৌথভাবে বিনিয়োগ করবে বাংলাদেশ ও চীন সরকার। ১০ বছর মেয়াদে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা। প্রথম ৫ বছরে সেচ, ভাঙন রোধ, স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ গুরুত্ব পাবে।’
তিনি বলেন, ইআরডি থেকে তিস্তা মহাপরিকল্পনার খসরা এখন চীন সরকারের কাছে। আমরা আশা করছি জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই কাজ শুরু হবে।