স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, ‘মীরজাফরের বংশধররা এখনো বেঁচে আছে, যারা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সহ্য করতে পারে না। মুক্তিযোদ্ধাদের কৃতিত্ব ও দেশ স্বাধীন করার অবদান স্বীকার করে না। সেজন্য তারা নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।’
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দিতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।
বীর মুক্তিযোদ্ধারা সম্মানিত হলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধারা যতদিন বেঁচে আছি সবাই একসঙ্গে থাকব, একসঙ্গে চলব। আমরা সব সময় দেশের বিজয়ের কথা বলব।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছি তখন আমাদের কাছে হাতিয়ার ছিল না। একটি জিনিস ছিল, একটি স্লোগান ছিল জয় বাংলা। আমাদের একটি দাবি ছিল, জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগানে পরিণত করা হোক। আজকে সেটা জাতীয় স্লোগানে পরিণত হয়েছে। সেজন্য প্রধানমন্ত্রীকে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমরা তার (প্রধানমন্ত্রী) কাছে সবকিছুতেই ঋণী।’
‘প্রতিটি ওয়ার্ডে মুক্তিযোদ্ধাদের নামে সড়ক হবে’
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘সেবা প্রদানে ডিএনসিসি সবসময় মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। আমরা ডিএনসিসি থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে নানা পদক্ষেপ নিয়ে চলেছি।’
মেয়র বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে কর ছাড়ের ব্যবস্থা রয়েছে। তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে প্রতিটি ওয়ার্ডে মুক্তিযোদ্ধাদের নামে সড়ক হবে। সিটি করপোরেশনের অফিসে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটি কক্ষ বরাদ্দ থাকবে এবং আপ্যায়নের ব্যবস্থা থাকবে। সেবা নিতে এলে তারা সেই কক্ষে বসবেন। এ ছাড়া ডিএনসিসির কবরস্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের লাশ দাফনে কোনো ফি লাগবে না।’
আতিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘জাতির পিতা যেমন করে দেশকে ভালোবেসেছেন, মুক্তিযোদ্ধারা যেমন করে দেশকে ভালোবেসেছেন, ঠিক তেমনি করে আমাদের দেশকে এবং এই শহরকে ভালোবাসতে হবে। আমরা দেখছি অনেকে খাল, মাঠ, রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে রেখেছে। দখল-দূষণ বন্ধ করতে হবে। যাদের মধ্যে দেশপ্রেম আছে তারা কখনো অবৈধ দখল করতে পারে না। সুন্দর শহর গড়ে তুলতে সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম মুক্তিযুদ্ধকালীন স্মৃতিচারণ করেন।
ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা। এ সময় ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং স্থানীয় কাউন্সিলররাও উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যসহ মোট ১২ শ’ জনকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। সংবর্ধনা শেষে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন।
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শেষ বিদায়ে শরিক হতে আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে শোকার্ত মানুষের ঢল নেমেছে। নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী দুপুর ২টায় জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও ভোর থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা সর্বস্তরের মানুষের উপস্থিতিতে পুরো এলাকা এক বিশাল জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। প্রিয় নেত্রীকে শেষবারের মতো একনজর দেখতে এবং জানাজায় অংশ নিতে আসা মানুষের ভিড় সংসদ ভবন এলাকা ছাড়িয়ে আশপাশের সকল সড়কে বিস্তৃত হয়েছে।
এর আগে আজ সকালে এক আবেগঘন পরিবেশে বেগম জিয়ার মরদেহ এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গুলশানে তাঁর ছেলে এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসভবনে নেওয়া হয়। যদিও শুরুতে মরদেহ তাঁর দীর্ঘদিনের স্মৃতিবিজড়িত বাসভবন ‘ফিরোজা’য় নেওয়ার কথা ছিল, তবে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে তা গুলশান-২ এর নর্থ অ্যাভিনিউয়ের ১৯৬ নম্বর বাড়িতে নেওয়া হয়। সকাল ৮টা ৫৩ মিনিটে হাসপাতাল থেকে বের হওয়া মরদেহবাহী গাড়িটি ৯টা ১৬ মিনিটে বাসভবনে পৌঁছালে সেখানে এক শোকাতুর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
বাসভবনে পৌঁছানোর পর তারেক রহমান অশ্রুসিক্ত নয়নে মায়ের কফিনের পাশে দীর্ঘক্ষণ অবস্থান করেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিনি কফিনের পাশে বসে অত্যন্ত একাগ্রচিত্তে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন। এ সময় পরিবারের সদস্য এবং উপস্থিত নেতাকর্মীদের মধ্যে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। সেখানে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের পর মরদেহ জানাজার জন্য মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ অভিমুখে নিয়ে আসা হয়েছে। প্রিয় নেত্রীর জানাজায় অংশ নিতে আসা লক্ষ লক্ষ মানুষ এখন পরম শ্রদ্ধায় শেষ মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করছেন। এক বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী এই মহীয়সী নেত্রীর বিদায়ে রাজধানী আজ শোকে স্তব্ধ ও লোকে লোকারণ্য।
বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মরদেহ এখন রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে অবস্থান করছে। আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার ঠিক পরেই জাতীয় পতাকায় মোড়ানো মরদেহবাহী গাড়িটি জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা সংলগ্ন এলাকায় প্রবেশ করে। নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, আজ দুপুর ২টায় তাঁর প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে ইমামতি করবেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আবদুল মালেক। বরেণ্য এই নেত্রীকে শেষ বিদায় জানাতে সকাল থেকেই মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও সংসদ ভবন এলাকায় লাখো মানুষের ঢল নেমেছে।
এর আগে বেলা ১১টার দিকে গুলশানে তাঁর ছেলে এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসভবন থেকে মরদেহবাহী ফ্রিজার ভ্যানটি জানাজাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। তারেক রহমান, তাঁর সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমান, কন্যা ব্যারিস্টার জাইমা রহমানসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্য এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতৃবৃন্দ একটি বিশেষ বাসে করে এই শোকাবহ যাত্রায় শামিল হন। আজ সকালেই এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে বেগম জিয়ার মরদেহ গুলশানের বাসভবনে নেওয়া হয়েছিল, যেখানে স্বজন ও কর্মীরা অশ্রুসিক্ত নয়নে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। মরদেহ জানাজাস্থলে আনার সময় পুরো গুলশান ও সংসদ ভবন এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয় এবং যান চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়।
খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে এবং তাঁর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ইতিমধ্যে ভারত, পাকিস্তান ও নেপালসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা ঢাকায় পৌঁছেছেন। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮০ বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন এই ‘আপসহীন’ নেত্রী। তাঁর প্রয়াণে দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সরকার আজ থেকে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে এবং আজ বুধবার সারাদেশে সাধারণ ছুটি পালন করা হচ্ছে। জানাজার আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাঁকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেরেবাংলা নগরে তাঁর স্বামী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশেই সমাহিত করা হবে। এক বর্ণাঢ্য ও সংগ্রামমুখর রাজনৈতিক জীবনের ইতি টেনে আজ চিরনিদ্রায় শায়িত হতে যাচ্ছেন এ দেশের ইতিহাসের অন্যতম প্রভাবশালী এই নারী ব্যক্তিত্ব।
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) সকালে ঢাকা পৌঁছেছেন পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের (পার্লামেন্ট) স্পিকার সরদার আইয়াজ সাদিক। সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।
ঢাকার পাকিস্তান হাইকমিশনের কাউন্সেলর (প্রেস) মো. ফসিহ উল্লাহ খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বরেণ্য এই নেত্রীর প্রয়াণে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে গভীর শ্রদ্ধা জানাতে এবং তাঁর শেষ বিদায়ে শরিক হতে স্পিকার সরদার আইয়াজ সাদিক এই সংক্ষিপ্ত সফরে বাংলাদেশে এসেছেন।
নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, আজ দুপুর ২টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় বেগম খালেদা জিয়ার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজায় ইমামতি করবেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব। এরপর শেরেবাংলা নগরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হবে।
উল্লেখ্য, বেগম খালেদা জিয়ার প্রয়াণে আন্তর্জাতিক মহলে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাঁর জানাজায় অংশ নিতে পাকিস্তানের স্পিকার ছাড়াও ইতিমধ্যে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকটি দেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা ঢাকায় পৌঁছেছেন। বরেণ্য এই নেত্রীর বিদায়ে প্রতিবেশী দেশগুলো বাংলাদেশের মানুষের শোকের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। মূলত এক বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক নেত্রীর চিরবিদায়বেলাকে মর্যাদাপূর্ণ করতে দেশি-বিদেশি বিশিষ্ট ব্যক্তিদের এই সমাগম ঘটছে।
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে এবং তাঁর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) ঢাকা পৌঁছেছেন। দুপুর ১১টা ৫৫ মিনিটে ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ ফ্লাইটে তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনের একজন কর্মকর্তা এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
ভারত সরকারের পক্ষ থেকে গতকালই জানানো হয়েছিল যে, সেদেশের সরকার ও জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে জয়শঙ্কর বাংলাদেশের এই প্রবীণ নেত্রীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দেবেন। তাঁর এই সফরটি রাজনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এটিই ভারত সরকারের কোনো মন্ত্রীর প্রথম বাংলাদেশ সফর।
বিমানবন্দরে অবতরণের পর এস জয়শঙ্কর সরাসরি জানাজাস্থল অভিমুখে রওনা হয়েছেন। নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, আজ জোহর নামাজের পর রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে অনুষ্ঠিতব্য বেগম খালেদা জিয়ার জানাজায় তিনি শরিক হবেন। তিনি ভারত সরকারের পক্ষ থেকে মরহুমার কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন এবং তাঁর বিদেহী আত্মার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। জয়শঙ্করের এই উপস্থিতিকে দুই দেশের ঐতিহাসিক সম্পর্কের প্রতি ভারতের সম্মান প্রদর্শনের একটি বড় নিদর্শ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। বরেণ্য এই নেত্রীর বিদায়ে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারত বাংলাদেশের জনগণের শোকের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মরদেহ রাষ্ট্রীয় প্রোটোকল ও কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় এসে পৌঁছেছে। আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা ৪৮ মিনিটের দিকে লাল-সবুজ রঙের জাতীয় পতাকায় মোড়ানো একটি ফ্রিজার ভ্যানে তাঁর মরদেহ সেখানে আনা হয়। এসময় সেনাবাহিনীর সদস্যরা হিউম্যান চেইন তৈরি করে মরদেহের সুরক্ষা নিশ্চিত করেন। এর আগে বেলা ১১টা ৫ মিনিটে তাঁর ছেলে এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের গুলশান বাসভবন থেকে মরদেহবাহী গাড়িটি যাত্রা শুরু করেছিল। সকালে এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে মরদেহ বের করার পর সেটি প্রথমে গুলশানে নেওয়া হয়, যেখানে পরিবারের স্বজন ও দলীয় নেতাকর্মীরা তাঁদের প্রিয় নেত্রীকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানান।
বর্তমানে সংসদ ভবন ও এর আশপাশের এলাকায় এক শোকাতুর ও নিস্তব্ধ পরিবেশ বিরাজ করছে। নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, আজ জোহরের নামাজের পর রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে বেগম খালেদা জিয়ার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এই জানাজায় ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল মালেক। জানাজা শেষে তাঁকে শেরেবাংলা নগরে তাঁর স্বামী ও স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশেই পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হবে। বরেণ্য এই নেত্রীর শেষ বিদায়ে শ্রদ্ধা জানাতে ভারত, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা ইতিমধ্যে ঢাকায় পৌঁছেছেন।
জানাজা ও দাফন প্রক্রিয়া সুশৃঙ্খল রাখতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ২৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। গত ৩০ ডিসেম্বর ভোরে ৭৯ বছর বয়সে এই মহীয়সী নেত্রীর প্রয়াণে আজ দেশজুড়ে সাধারণ ছুটি এবং তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক চলছে। সারা দেশ থেকে আসা লাখ লাখ মানুষ তাঁদের প্রিয় ‘আপসহীন’ নেত্রীকে শেষ বিদায় জানাতে সংসদ ভবন ও এর আশপাশের রাস্তায় ভিড় করছেন। এক বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের ইতি টেনে আজ প্রিয়তমা পতির পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন এ দেশের মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেওয়া বেগম খালেদা জিয়া।
অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা) অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান পদত্যাগ করেছেন। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাঁর পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাষ্ট্রপতি তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন।
অধ্যাপক সায়েদুর রহমান প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় সরকারের নির্বাহী ক্ষমতা অনুশীলনের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। তবে তাঁর এই আকস্মিক পদত্যাগের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ সরকারিভাবে জানানো হয়নি। তাঁর এই বিদায় প্রশাসনিক মহলে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের দুইজন উচ্চপদস্থ বিশেষ সহকারী পদত্যাগ করলেন। এর আগে গত ২৪ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী খোদা বকশ চৌধুরী তাঁর পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। বর্তমানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে তাঁর শূন্য হওয়া পদে নতুন কেউ নিয়োগ পাবেন কি না, সে বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত জানা যায়নি। সরকার এবং প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে এই রদবদলকে ঘিরে রাজনৈতিক মহলেও নানা বিশ্লেষণ চলছে। মূলত দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধির অংশ হিসেবেই এই পরিবর্তনগুলো হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এবং তাঁর জানাজায় অংশ নিতে গতকাল মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) রাতে ঢাকা পৌঁছেছেন নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বালা নন্দা শর্মা। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান বাংলাদেশে নিযুক্ত নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভাণ্ডারি এবং বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব এম ফরহাদুল ইসলাম।
নেপালের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এই সফর বাংলাদেশের এই প্রবীণ নেত্রীর প্রতি নেপাল সরকারের গভীর শ্রদ্ধা এবং তাঁর তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন নেপাল-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে রাখা অনন্য অবদানের প্রতি সম্মান জানানোরই একটি প্রতিফলন। নেপাল সরকার মনে করে, খালেদা জিয়ার শাসনকালে দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছিল।
নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে অনুষ্ঠিতব্য বেগম খালেদা জিয়ার জানাজায় তিনি শরিক হবেন। বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে আগত প্রতিনিধিদের পাশাপাশি তিনিও ভারত ও পাকিস্তানের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের সাথে থেকে মরহুমার বিদেহী আত্মার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। জানাজার আনুষ্ঠানিকতা শেষে এবং রাষ্ট্রীয় শোক কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করে আগামী ১ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) কাঠমান্ডু ফিরে যাওয়ার কথা রয়েছে নেপালি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর। বরেণ্য এই নেত্রীর প্রয়াণে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে নেপাল বাংলাদেশের জনগণের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে।
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে শোকার্ত মানুষের ঢল নেমেছে। দীর্ঘদিনের প্রিয় নেত্রীকে শেষ বিদায় জানাতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ সাতসকালেই সভাস্থলে এসে জড়ো হয়েছেন। জানাজা শুরু হতে কয়েক ঘণ্টা বাকি থাকলেও পুরো মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ এলাকা ইতিমধ্যে জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। আগত মানুষের চোখে-মুখে প্রিয় ‘আপসহীন’ নেত্রীকে হারানোর গভীর শোক ও বেদনা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।
দেশের নানা জেলা থেকে আসা সাধারণ মানুষ ও দলীয় নেতাকর্মীরা আবেগাপ্লুত কণ্ঠে তাঁদের অনুভূতি ব্যক্ত করছেন। নরসিংদী থেকে আসা আমির হোসেনের মতো অনেকেই নিজের টাকা খরচ করে প্রিয় নেত্রীর শেষ বিদায়ে শরিক হতে ছুটে এসেছেন। নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা সমর্থকদের মতে, খালেদা জিয়ার মতো সাহসী ও দেশপ্রেমিক নেত্রী বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ভিড় সংসদ ভবনের চারপাশের এলাকা ছাড়িয়ে সংলগ্ন সড়কগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ছে। প্রিয় নেত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষের এই স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা করেছে।
বিশাল এই জনসমাগমকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে গড়ে তোলা হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয়। জানাজা ও দাফন কার্যক্রম সুশৃঙ্খল রাখতে এবং যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সংসদ ভবন, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ এবং জিয়া উদ্যান এলাকায় মোট ২৭ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন যে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তারা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে শুরু করে দাফনস্থল পর্যন্ত পুরো রুটজুড়ে পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি বিজিবি সদস্যরা কড়া নজরদারি চালাচ্ছেন।
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আজ বুধবার দুপুর ২টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে বেগম খালেদা জিয়ার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেরেবাংলা নগরের জিয়া উদ্যানে তাঁর স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধির পাশেই সমাহিত করা হবে। গতকাল থেকেই জানাজার যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছিল। এক বর্ণাঢ্য ও আপসহীন রাজনৈতিক জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে আজ চিরবিদায় নিচ্ছেন এই মহীয়সী নেত্রী, যার সাক্ষী হতে রাজধানী আজ শোকে স্তব্ধ ও লোকে লোকারণ্য। আমজনতার এই বাঁধভাঙা ভিড় প্রমাণ করছে এ দেশের মানুষের হৃদয়ে বেগম খালেদা জিয়ার স্থান কতটা সুগভীর।
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শেষ বিদায়ের লক্ষ্যে আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় এক বিশাল জানাজার প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, বাদ জোহর এই জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। মানুষের বিপুল সমাগম বিবেচনায় নিয়ে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজার পরিবর্তে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের পশ্চিম প্রান্তে মরদেহবাহী কফিন রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংসদ ভবনের ভেতরের মাঠ এবং পুরো মানিক মিয়া অ্যাভিনিউজুড়ে এই জানাজা অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা লাখো মানুষের সমাগম ঘটবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং সাধারণ মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে জানাজায় অংশ নিতে পারেন, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় দপ্তরগুলো গত রাত থেকেই নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের চারপাশের সড়কগুলোতেও যেন সাধারণ মানুষ অবস্থান করতে পারেন, সে বিষয়ে বিশেষ ট্রাফিক ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জানাজা শেষে বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে শেরেবাংলা নগরের জিয়া উদ্যানে নিয়ে যাওয়া হবে বেগম জিয়ার মরদেহ। সেখানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধির পাশেই তাঁকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হবে।
দাফন প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ও মর্যাদাপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার জন্য জিয়া উদ্যান এলাকায় জনসাধারণের প্রবেশে কিছুটা কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। সমাহিত করার সময় সেখানে উপস্থিত থাকবেন মরহুমার পরিবারের সদস্যবৃন্দ, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ, বিদেশি সরকারের প্রতিনিধি, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত এবং বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দ। দাফন শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওই এলাকা এবং এর আশপাশে সাধারণ মানুষের চলাচল সীমিত রাখা হবে। মূলত এক বর্ণাঢ্য ও দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের সমাপ্তি ঘটিয়ে আজ তাঁর প্রিয়তমা পতির পাশেই চিরস্থায়ী ঠিকানা পেতে যাচ্ছেন এ দেশের মানুষের কাছে ‘আপসহীন নেত্রী’ হিসেবে পরিচিত বেগম খালেদা জিয়া। সারা দেশে আজ সাধারণ ছুটি এবং তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক চলছে। দাফন সম্পন্ন হওয়ার আগ পর্যন্ত রাজধানী জুড়ে কঠোর নিরাপত্তা ও শোকাতুর পরিবেশ বজায় থাকবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মরদেহ আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা ৫ মিনিটের দিকে রাজধানীর গুলশান থেকে এক বিশাল শোকবহ পরিবেশে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। লাল-সবুজ রঙের জাতীয় পতাকায় মোড়ানো একটি বিশেষ ফ্রিজার ভ্যানে করে তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এই যাত্রাপথ এবং সংসদ ভবন এলাকা জুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েক স্তরের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় নিশ্চিত করা হয়েছে।
মরদেহবাহী গাড়িটি গুলশান-২, কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ, মহাখালী ফ্লাইওভার এবং বিজয় সরণি হয়ে জাতীয় সংসদ ভবনের ৬ নম্বর গেট দিয়ে দক্ষিণ প্লাজায় প্রবেশ করবে। এর আগে আজ সকাল ৮টা ৫৪ মিনিটে এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে মরদেহ বের করে গুলশানে তাঁর ছেলে তারেক রহমানের বাসভবনে নেওয়া হয়। সেখানে পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন এবং দীর্ঘদিনের সহযোদ্ধা বিএনপি নেতাকর্মীরা অশ্রুসিক্ত নয়নে তাঁদের প্রিয় নেত্রীকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানান। কফিনের পাশে বসে তারেক রহমানের কোরআন তেলাওয়াতের দৃশ্য সেখানে উপস্থিত সবাইকে আবেগপ্লুত করে তোলে।
নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, আজ জোহরের নামাজের পর রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে বেগম খালেদা জিয়ার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজায় ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল মালেক। জানাজা শেষে তাঁকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেরেবাংলা নগরে তাঁর স্বামী ও স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত করা হবে। বরেণ্য এই নেত্রীর শেষ বিদায়ে অংশ নিতে এবং শ্রদ্ধা জানাতে ভারত ও পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা ইতিমধ্যে ঢাকায় পৌঁছেছেন।
জানাজা ও দাফন প্রক্রিয়া সুশৃঙ্খল রাখতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ এবং সংসদ ভবন সংলগ্ন এলাকায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ডিএমপি ও র্যাবের পাশাপাশি ২৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। মঙ্গলবার ভোরে ৭৯ বছর বয়সে এই মহীয়সী নেত্রীর প্রয়াণে আজ দেশজুড়ে সাধারণ ছুটি এবং তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক চলছে। সারা দেশ থেকে আসা লাখ লাখ মানুষ তাঁদের প্রিয় ‘আপসহীন’ নেত্রীকে শেষ বিদায় জানাতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ অভিমুখে ভিড় করছেন। এক বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে আজ প্রিয়তমা পতির পাশেই ঠাঁই নিতে যাচ্ছেন এ দেশের কোটি মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেওয়া বেগম খালেদা জিয়া।
বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মরদেহ এখন গুলশানে তাঁর ছেলে এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসভবনে রাখা হয়েছে। আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) সকালে এক আবেগঘন পরিবেশে প্রিয় নেত্রীকে শেষবারের মতো একনজর দেখতে এবং শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে ভিড় করছেন দলের শীর্ষ নেতা ও স্বজনরা। কফিনের পাশে বসে পরম মমতায় মায়ের আত্মার মাগফিরাত কামনায় কোরআন তেলাওয়াত করছেন শোকাতুর তারেক রহমান।
এর আগে আজ সকাল ৯টার কিছু আগে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে বেগম জিয়ার মরদেহ বের করা হয়। জাতীয় পতাকায় মোড়ানো কফিনে করে মরদেহবাহী গাড়িটি কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে গুলশানের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। দীর্ঘ ১ মাস ৭ দিন হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে গতকাল ভোরে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। আজ সকালে হাসপাতাল থেকে মরদেহ বের করার সময় সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
তারেক রহমানের গুলশানের বাসভবনে বর্তমানে তাঁর কন্যা ব্যারিস্টার জাইমা রহমানসহ পরিবারের অন্যান্য ঘনিষ্ঠ সদস্যরা উপস্থিত রয়েছেন। মায়ের কফিনের পাশে বসে তারেক রহমানের কোরআন তেলাওয়াতের দৃশ্যটি উপস্থিত নেতাকর্মীদের মাঝে গভীর আবেগের সৃষ্টি করেছে। দীর্ঘ ১৭ বছর পর প্রবাস থেকে ফিরে মায়ের সেবা করার সুযোগ পেলেও শেষ পর্যন্ত তাঁকে চিরতরে হারাতে হওয়ায় তারেক রহমানের চোখে-মুখে ছিল গভীর শোকের চিহ্ন।
পরিবারের সদস্য ও দলীয় নেতাকর্মীদের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বেগম খালেদা জিয়ার মরদেহ জানাজার জন্য নির্ধারিত স্থানে নিয়ে যাওয়া হবে। আজকের রাষ্ট্রীয় শোক ও সাধারণ ছুটির দিনে সারাদেশের মানুষ তাঁদের প্রিয় নেত্রীকে শেষ বিদায় জানাতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। বাসভবন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি বিএনপির নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক দল নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কাজ করে যাচ্ছে। মূলত এক কিংবদন্তি নেত্রীর বিদায়ে এখন পুরো গুলশান এলাকায় এক বিষাদময় নীরবতা বিরাজ করছে।
সোনালী সূর্যরাঙা ভোর প্রতিদিনই আসে; কিন্তু বছর শেষের আগের দিনের ভোরটা এসেছে শোককাতর হয়ে;সবকিছুই ছিল, তবু কী যেন নেই-নেই ভাব সবদিকে! পৌষের শীতের সঙ্গে এক গভীর শোকে জবুথবু হয়ে গেছে জাতীয় জীবন। ১৮ কোটি মানুষই অশ্রুসজল। হৃদয়ের গহীনে গভীর বেদনা! প্রতিটি হৃদয়ে বেজে উঠছে বিউগলের করুণ সুর। হৃদয় থেকে হৃদয়ে ব্যথা ছড়িয়ে দিয়েছে কোনো এক দূর আলোক থেকে ভেসে আসা বিরহের বাঁশি। করুণ সে বাঁশির সুরে বেদনাবিধুর হয়ে পড়েছে গোটা জাতি। কারণ, এই ভোরে দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে বাংলাদেশের অপরাজেয়, আপসহীন নেত্রী সাবেক ৩ বারের প্রধানমন্ত্রী, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেশবাসীকে শোক সাগরে ভাসিয়ে চলে গেছেন অসীম শূন্যে, অন্য আলোকে। তার শোকে কেঁদেছে আকাশটাও। এভারকেয়ার হাসপাতালে দীর্ঘ ৩৮ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াইয়ের পর গতকাল মঙ্গলবার ভোর ৬টায় ইন্তেকাল করেছেন তিনি। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
মঙ্গলবার সকাল সোয়া ৯টায় এভারকেয়ার হাসপাতালে এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, এই সংবাদটা নিয়ে সবার সামনে দাঁড়াতে হবে ভাবিনি। আমরা এবারও ভেবেছিলাম তিনি আগের মতো সুস্থ হয়ে উঠবেন। আমরা ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলছি আজ ভোর ৬ টায়, গণতন্ত্রের মা, আমাদের অভিভাবক, জাতির অভিভাবক আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন।
মৃত্যুর সময় খালেদা জিয়ার শয্যাপাশে ছিলেন তার জ্যেষ্ঠ পুত্র ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান, মেয়ে জাইমা রহমান এবং প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি।
স্বজনদের মধ্যে ছোট ভাই শামীম এসকান্দার ও তার স্ত্রী, বড় বোন সেলিনা ইসলামসহ পরিবারের অন্য সদস্যরাও শেষ সময়ে হাসপাতালে ছিলেন। এছাড়া বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা ছিলেন।
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস ও ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। পাশাপাশি কিডনি, ফুসফুস, হার্ট ও চোখের দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাও ছিল তার।
হার্ট ও ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ার পর মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে গত ২৩ নভেম্বর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও অস্ট্রেলিয়ার বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড তার চিকিৎসা তদারকি করেন।
এই মাসের শুরুতে চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলেও শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় পরবর্তীতে তা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে খালেদা জিয়া ‘আপসহীন নেত্রী’ উপাধি পেয়েছিলেন। চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে জীবনের পরম সত্যের কাছে আত্মসমর্পণ করলেন খালেদা জিয়া।
রাজনীতিকদের জীবনে উত্থান-পতন থাকে। মামলা-মোকদ্দমা, গ্রেপ্তার, কারাবাস, নির্যাতন, প্রতিপক্ষের আক্রমণ- এসবও তাদের জীবনে অভাবনীয় নয়। খালেদা জিয়াও চরম পর্যায়ের এমন নির্যাতন সহ্য করেছেন। সহ্য করেছেন স্বামী-সন্তান হারানোর গভীর শোক আর দীর্ঘ রোগযন্ত্রণা।
রাজনৈতিক জীবনে মতাদর্শিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত ছাড়াও প্রতিপক্ষের ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা, বিদ্বেষ, লাঞ্ছনা ও নিষ্ঠুরতার শিকার হয়েছেন খালেদা জিয়া।
বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯১ সাল থেকে তিনবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী এবং মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় নির্বাচিত নারী সরকারপ্রধান ছিলেন।
১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুর জেলায় ইস্কান্দার মজুমদার ও তৈয়বা মজুমদারের ঘরে তার জন্ম। তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয় ছিলেন তিনি। তার ডাকনাম ছিল ‘পুতুল’। তার বাবা ভারতের জলপাইগুড়ি থেকে দেশভাগের পর তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে চলে আসেন। তাদের আদি বাড়ি ফেনীতে। খালেদা জিয়া দিনাজপুর মিশনারি স্কুলে পড়াশোনা করেন। ১৯৬০ সালে দিনাজপুর গার্লস স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন।
একই বছর তিনি তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমানকে বিয়ে করেন এবং ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত দিনাজপুরের সুরেন্দ্রনাথ কলেজে পড়াশোনা করেন। এরপর তিনি স্বামীর সঙ্গে থাকার জন্য পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যান।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে জিয়াউর রহমান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহ করে যুদ্ধে অংশ নেন। সেসময় খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানি বাহিনী। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয়ের পর তিনি মুক্তি পান।
১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়াউর রহমানকে হত্যার পর তীব্র নেতৃত্ব সংকটে পড়ে বিএনপি। ঠিক সেই সময় কখনো রাজনীতিতে না আসা খালেদা জিয়া দলটিতে যোগ দেন এবং ১৯৮৪ সালের ১২ জানুয়ারি সহসভাপতি হন। একই বছরের ১০ মে তিনি দলের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে তিনি পুনরায় চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন।
খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ১৯৮৩ সালে সাতদলীয় জোট গঠন করে এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে বিএনপি।
এরশাদ সরকার তার চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয় এবং বহুবার আটক করে। তবুও খালেদা জিয়া নির্ভীকভাবে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে যান, হয়ে ওঠেন ‘আপসহীন নেত্রী’।
১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে বিজয়ী হয়। খালেদা জিয়া টানা তিনটি জাতীয় নির্বাচনে পাঁচটি আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সবগুলোতেই জয়ী হন।
১৯৯১ সালের ২০ মার্চ খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। একই বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর তিনি নতুন শাসনব্যবস্থার অধীনে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে খালেদা জিয়া দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন। তবে বড় সব বিরোধী দল এই নির্বাচন বর্জন করেছিল।
বিরোধী দলগুলোর দাবির মুখে তৎকালীন সরকার সংসদ নির্বাচন তদারকির জন্য নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের সাংবিধানিক সংশোধনী আনে।
তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা চালুর পর সংসদ ভেঙে দেওয়া হয় এবং ১৯৯৬ সালের ৩০ মার্চ খালেদা জিয়া ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। এরপর ১২ জুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি পরাজিত হয় আওয়ামী লীগের কাছে।
১৯৯৬-২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় খালেদা জিয়া জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রী ছিলেন।
২০০১ সালের ১ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসনে জয়ী হয়।
২০০১ সালের ১০ অক্টোবর খালেদা জিয়া তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।
২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এলে খালেদা জিয়াসহ বহু রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেপ্তার হন।
পরে কারামুক্ত হন খালেদা জিয়া। ২০০৯ সালের নির্বাচনে অংশ নিলেও তার দল জয়ী হতে পারেনি।
২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন বর্জন করায় ১৯৯১ সালের পর এই প্রথম দলটি সংসদের বাইরে থাকে।
জিয়া অর্ফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় উদ্যেশ্যপ্রণোদিতভাবে ঢাকার বিশেষ আদালত খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিলে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
ওই বছরের ৩০ অক্টোবর হাইকোর্ট তার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন। পরে তিনি জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাতেও দণ্ডিত হন।
করোনা মহামারির মধ্যে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে সাময়িক মুক্তি দেয়। শর্ত ছিল—তিনি গুলশানের বাসায় থাকবেন এবং দেশ ত্যাগ করবেন না।
চলতি বছরের ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে তাকে দণ্ডমুক্ত ঘোষণা করলে বিএনপি চেয়ারপারসন সম্পূর্ণ মুক্তি পান।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুর পেছনে শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের অবশ্যই দায় রয়েছে বলে মনে করেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘একটা প্রহসনমূলক রায়ে উনাকে জেলখানায় পাঠিয়ে অকথ্য নির্যাতন করা হয়েছে। খালেদা জিয়াকে যে মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, এটা যে প্রহসনের একটা রায় ছিল। এটা একটা সম্পূর্ণ সাজানো রায় ছিল। এটা আমাদের সর্বোচ্চ আদালতের আপিল এবং রিভিউ এর মধ্যে দিয়ে প্রমাণিত। সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিলের ডিভিশনের রায়ের মধ্যে বারবার বলা হয়েছে যে বেগম জিয়াকে যেই মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে সেটা সম্পূর্ণ রংলি (ভুলভাবে), উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে, জিঘাংসা-প্রসূতভাবে তাকে সাজা দেওয়া হয়েছিল। আসিফ নজরুল বলেন, খালেদা জিয়াকে জেলখানায় বিভিন্ন সময় যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছিল, না হলে হয়তো এত তাড়াতাড়ি তাকে আমরা হারাতাম না।
এসময় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে তার প্রয়াত স্বামী সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে দাফন করা হবে বলেও জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
আসিফ নজরুল জানান, আজ যে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি খালেদা জিয়ার পরিবার ও তার দলের পক্ষে উপদেষ্টা পরিষদকে জানিয়েছেন, আজ বুধবার জোহরের নামাজের পর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় মানিক মিয়া এভিনিউতে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
আইন উপদেষ্টা জানান, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ব্যক্তিগতভাবে সবসময় খোঁজখবর রেখেছেন, যা দরকার ছিল। তাকে যদি আবার বিদেশে পাঠানোর মত অবস্থা থাকতো, অবশ্যই আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হতো। প্রধান উপদেষ্টা ব্যক্তিগতভাবে এ জিনিসগুলা খোঁজখবর নিয়েছেন।
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য, বেগম খালেদা জিয়াকে বছরখানেক বা বছর দুয়েক আগে যদি আমরা পেতাম, হয়তো আমাদের পক্ষে কিছু একটা করা সম্ভব ছিল। আল্লাহর ইচ্ছা, উনি চলে গেছেন। তবে আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় আনন্দের ব্যাপার হচ্ছে উনিও সারাদেশের মানুষের সম্মান, শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা নিয়ে বিদায় নিয়েছেন।’