কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যাতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে না পারে সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
তিনি বলেছেন, ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বাঙালির চিরকালীন ঐতিহ্য এবং বিশ্বজন স্বীকৃত। এ ঐতিহ্যকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে নিতে হবে। সম্প্রীতির এই বন্ধন কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যেন ছিন্ন করতে না পারে, সেদিকে সকলকে সজাগ থাকতে হবে।’
রোববার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের উৎসব বড়দিন উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপ্রধান এসব কথা বলেন।
বঙ্গভবনের গ্যালারি হলে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন রাষ্ট্রপতি। আবদুল হামিদ বলেন, ‘শুভ বড়দিন সত্য ও সুন্দরের আলোয় চিরভাস্মর হয়ে উঠুক। সকলের মধ্যে বিদ্যমান সৌহার্দ্যের বন্ধন আরো গভীর হোক - এই কামনা করি। ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকলের মাঝে বড়দিনের আনন্দ ছড়িয়ে দিতে পারলেই এ দিনটি উদযাপন তাৎপর্যপূর্ণ হবে। শুভ বড়দিন খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীসহ সকলের জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল আনন্দ।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমাদের উন্নয়ন ও অগ্রগতির পেছনে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ইতিবাচক অবদান অনস্বীকার্য। জাতির পিতা একটি সুখী-সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণসহ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে বৈষম্যহীনভাবে সকলের সমান অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। তাই বাংলাদেশের সকল ধর্মের মানুষ তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান যথাযথ মর্যাদা ও আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপন করবে - এটাই সকলের প্রত্যাশা।
অনুষ্ঠানে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান, ঢাকার আর্চবিশপ বেজয় নাইসফরাস ডি’ক্রুজ, বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিওসহ সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তি ও ধর্মীয় নেতারা যোগ দেন।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভিডিওর মাধ্যমে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে শনাক্ত করেছে ফ্যাক্টওয়াচ।
বাংলাদেশে গুজব, ভুয়া খবর ও অপতথ্য প্রতিরোধ এবং জনসাধারণকে সঠিক তথ্য জানাতে কাজ করা স্বাধীন অনুসন্ধানী সংস্থা ফ্যাক্টওয়াচ এ তথ্য জানিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত এবং পরিচালিত হয় সেন্টার ফর ক্রিটিক্যাল অ্যান্ড কোয়ালিটেটিভ স্টাডিজ (সিকিউএস)’র মাধ্যমে।
ফ্যাক্টওয়াচ জানায়, সম্প্রতি ফেসবুক ও টিকটকে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি অনেক ভিডিও ছড়ানো হয়েছে, যেগুলোর লক্ষ্য আগামী নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে পক্ষে-বিপক্ষে উপস্থাপন করা। এসব ভিডিওর মাধ্যমে জনমত প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান দলের বরাতে বলা হয়, গত ২১ জুন ‘পলিটিক্যাল মিম’ নামের একটি ফেসবুক পেইজে ‘কেন টেম্পোস্ট্যান্ড ও চাঁদাবাজদের ভোট দেব না’ শিরোনামে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। ওই ভিডিওতে হিজাব পরা এক নারীকে বলতে শোনা যায়, ‘টেম্পোস্ট্যান্ড বা কোনো চাঁদাবাজকে ভোট দিলে তাদের অপকর্মের দায় আপনাকেও নিতে হবে।’
ফ্যাক্টওয়াচ নিশ্চিত করেছে, ভিডিওটি আসল নয়, এটি সম্পূর্ণভাবে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।
ইরান ও ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সংঘাতের প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা সন্দেহে ব্যাপক গ্রেপ্তার অভিযান চালিয়েছে তেহরান। এর পাশাপাশি একাধিক অভিযুক্তের মৃত্যুদণ্ডও কার্যকর করেছে ইরান সরকার।
ইরানের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ইসরায়েলি এজেন্টদের অনুপ্রবেশের পর এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা।
ইরান সরকারের অভিযোগ, ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) শীর্ষ কমান্ডার ও পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের টার্গেট করে হত্যাসহ যুদ্ধ চলাকালীন একাধিক গুরুত্বপূর্ণ হত্যাকাণ্ডে ইসরায়েলের কাছে সরবরাহ করা তথ্যই ভূমিকা রেখেছে।
এসব হত্যাকাণ্ডের জন্য ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদকে দায়ী করেছে তেহরান। তারা ইরানের ভেতর থেকেই এসব পরিচালনা করেছে বলে দাবি দেশটির।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই হত্যাকাণ্ডগুলোর ব্যাপকতা ও নিখুঁত বাস্তবায়নে হতবাক ইরানি কর্তৃপক্ষ। এ কারণে জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এখন যেকোনো বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে ইরান।
তবে এসব পদক্ষেপ প্রকৃতপক্ষে ভিন্নমত দমন ও জনগণের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার হয়ে উঠছে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।
এদিকে, ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনব্যাপী সংঘাতের সময় তাদের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে তিনজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে ইরান সরকার। যুদ্ধবিরতির পরদিন ২৫ জুন এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
এরপর থেকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ রয়েছে—এমন শত শত সন্দেহভাজনের গ্রেপ্তারের ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এমনকি আটক কয়েকজনের বক্তব্যও রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়েছে। সেখানে তাদের ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের সঙ্গে কাজ করার কথা স্বীকার করতে দেখা যায়।
এদিকে, চলমান এই অভিযানে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকার কর্মী ও সংগঠনগুলো।
তারা বলেন, ইরানের বিচারব্যবস্থায় জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি গ্রহণ ও অন্যায্য বিচারের ইতিহাস রয়েছে। তাছাড়া, আরও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
অন্যদিকে, ইরানের গোয়েন্দা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সিআইএ, মোসাদ ও এমআই৬-এর মতো পশ্চিমা ও ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে ‘নিরলস লড়াই’ চালিয়ে যাচ্ছে তারা।
আইআরজিসি সঙ্গে সম্পৃক্ত ফার্স নিউজ এজেন্সির তথ্য অনুসারে, ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানে হামলা শুরু করার পর থেকে ইসরায়েলি গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক ইরানেরর ভেতরে অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সংঘাতের ১২ দিনে এই নেটওয়ার্কের সঙ্গে জড়িত সাত শতাধিক ব্যক্তিকে ইরানি গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা বাহিনী গ্রেপ্তার করেছে বলেও দাবি করেছে তারা।
বিবিসি ফারসিকে ইরানের কয়েকজন নাগরিক জানিয়েছেন, তারা ইরানের গোয়েন্দা মন্ত্রণালয় থেকে হুঁশিয়ারিমূলক বার্তা পেয়েছেন। সেখানে তাদের ফোন নম্বর ইসরায়েল-সংশ্লিষ্ট সোশ্যাল মিডিয়া পেজে পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের এসব পেজ ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, না হলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।
বিবিসি ফারসি, লন্ডনভিত্তিক ইরান ইন্টারন্যাশনাল ও মানোতো টিভিসহ দেশের বাইরের ফারসি ভাষার গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের ওপরও ইরান সরকার চাপ বাড়িয়েছে বলে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
ইরান ইন্টারন্যাশনালের অভিযোগ, সম্প্রতি তাদের একজন নারী উপস্থাপিকার মা, বাবা ও ভাইকে তেহরানে আটক করেছে আইআরজিসি। চ্যানেল থেকে ওই উপস্থাপিকাকে পদত্যাগ করার জন্য তার বাবাকে দিয়ে ফোন করিয়ে আহ্বান জানানো হয়। এমনকি পদত্যাগ না করলে আরও কঠোর পরিণতির হুমকি দেওয়া হয়।
যুদ্ধ শুরুর পর বিবিসি ফারসির সাংবাদিক ও তাদের পরিবারের প্রতি হুমকি আরও বেড়ে গেছে বলে দাবি করেছে সংবাদ মাধ্যমটি।
ইরানি নিরাপত্তা কর্মকর্তারা তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে যুদ্ধাবস্থায় পরিবারের সদস্যদের জিম্মি করাও ন্যায্য—এমন হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন সাংবাদিক।
এসব সাংবাদিককে ‘মোহারেব’ বা ‘আল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে’ এমন ব্যক্তি হিসেবে আখ্যা দেওয়া হচ্ছে যা ইরানি আইনে মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ।
সাংবাদিকদের পরিবারের প্রতি হুমকি এবং চ্যানেলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে বাধ্য করার প্রচেষ্টার মতো ঘটনার কথা জানিয়েছে মানোতো টিভিও।
এসব পদক্ষেপ মূলত ভিন্নমত দমন ও নির্বাসিত সংবাদকর্মীদের ভয় দেখানোর একটি বৃহৎ কৌশলের অংশ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বহু অধিকারকর্মী, লেখক ও শিল্পীকেও আটক করেছে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী। অনেক ক্ষেত্রে কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ছাড়াই তাদের করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এমনকি ২০২২ সালের ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’ আন্দোলনের সময় নিহতদের পরিবারের সদস্যদেরও আটক করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, কেবল বর্তমান আন্দোলন নয়, আগের আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধেও অভিযান চালানো হচ্ছে বলে ইঙ্গিত দেয় এসব পদক্ষেপ।
যুদ্ধ চলাকালে সরকার ইন্টারনেটে প্রবেশাধিকারে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে। যুদ্ধবিরতির পরও পূর্ণ প্রবেশাধিকার এখনো ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি।
দেশজুড়ে সরকারবিরোধী বিক্ষোভের সময় ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ এখন ইরানের একটি সাধারণ কৌশলে পরিণত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইরানে ইনস্টাগ্রাম, টেলিগ্রাম, এক্স ও ইউটিউবসহ অধিকাংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম এবং বিবিসি ফারসিসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধ। সেগুলো কেবল ভিপিএন বা প্রক্সি সার্ভিস ব্যবহার করেই দেখা যায়।
এসব ঘটনায় আশির দশকে ইরান-ইরাক যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির সঙ্গে বর্তমানের এসব পদক্ষেপের মিল খুঁজে পাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন মানবাধিকার-কর্মী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সে সময় রাজনৈতিক বিরোধীদের নির্মমভাবে দমন করেছিল ইরান সরকার।
ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের পর আন্তর্জাতিক পরিসরে দুর্বল হয়ে পড়া ইরান হয়তো আবার দেশের অভ্যন্তরেই ব্যাপক গ্রেপ্তার, মৃত্যুদণ্ডের মাধ্যমে কঠোর দমন-পীড়নের পথে হাঁটছে—এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন অনেকে।
ইরানের এসব কর্মকাণ্ডের সমালোচকরা ১৯৮৮ সালের ঘটনা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, সে সময় সংক্ষিপ্ত ও গোপন বিচার শেষে হাজার হাজার রাজনৈতিক বন্দিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, যাদের অধিকাংশই ছিল আগেই সাজাপ্রাপ্ত। ওই সময়ে অধিকাংশকে পরিচয়হীন গণকবরে দাফন করা হয়েছিল। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে এসেছিল।
গলে প্রথম টেস্ট অবিশ্বাস্যভাবে ড্র হয়েছিল। তবে দ্বিতীয় টেস্টে অবিশ্বাস্য কিছু না হলে যে হারতে চলেছে বাংলাদেশ, তা একপ্রকার নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল গতকালই। ইনিংস ব্যবধানে হার এড়াতে পারে কি না—শুধু তা-ই দেখার অপেক্ষা ছিল। তবে সেই আশা পূরণেও ব্যর্থ হয়েছে টাইগাররা।
কলম্বো টেস্টের তৃতীয় দিন ১১৫ রান তুলতে গিয়ে ৬ উইকেট হারিয়ে দিন শেষ করে বাংলাদেশ। এরপর চতুর্থ দিন শুরুর পর মাত্র ৩৪ বলেই গুটিয়ে গিয়েছে টাইগারদের ইনিংস।
দ্বিতীয় ইনিংসে স্বীকৃত ব্যাটার হিসেবে কেবল লিটন দাসই আউট হতে বাকি ছিলেন। তবে চতুর্থ দিনের খেলা শুরুর পর পঞ্চম বলেই সাজঘরে ফেরেন তিনি।
লিটনের আউটে বাংলাদেশ ১১৭ রানে সাত উইকেট হারানোর পর স্কোরবোর্ডে আর ১৬ রান যোগ করতে পারেন লেজের দিকের ব্যাটাররা। ফলে ৭৮ রান ও এক ইনিংস ব্যবধানে হারের লজ্জায় ডুবতে হয় নাজমুল হোসেন শান্ত অ্যান্ড কোং-কে।
প্রথম ইনিংসে কেউ অর্ধশত ছুঁতে না পারলেও বেশ কয়েকটি ত্রিশোর্ধ্ব ইনিংসে ২৪৭ রান করেছিল বাংলাদেশ। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে প্রবাথ জয়সুরিয়ার বোলিং তাণ্ডবে ১৩৩ রানেই শেষ হয় টাইগারদের ইনিংস। এই ইনিংসে একাই পাঁচ উইকেট ঝুলিতে পুরেছেন জয়সুরিয়া।
দুই ইনিংস মিলিয়ে ৩৮০ রান করতে পেরেছে বাংলাদেশ, যা শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসের ৪৫৮ রান টপকে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল না। ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কার ১৫৮, দীনেশ চান্দিমালের ৯৩ ও কুশল মেন্ডিসের ৮৪ রানের ইনিংসে ভর করে ওই রান করে স্বাগতিকরা।
বল হাতে তাইজুল ইসলামও পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন, যা ছিল বিদেশের মাটিতে দ্বিতীয় বাংলাদেশি বোলার হিসেবে টেস্টে সর্বোচ্চ পাঁচবার পাঁচ উইকেট করে নেওয়ার রেকর্ড। তবে লজ্জাজনক হারে সেই রেকর্ড ম্লান হয়েছে।
টেস্ট ইতিসাসে এটি বাংলাদেশের ৪৭তম ইনিংস ব্যবধানে পরাজয়। আর সর্বোচ্চ ৯ বার টাইগারদের এই তেতো অভিজ্ঞতা দিল শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের বিপক্ষে একই সংখ্যক টেস্ট ম্যাচে ইনিংস ব্যবধানে জেতার রেকর্ড আছে দক্ষিণ আফ্রিকারও। এই রেকর্ডে শ্রীলঙ্কা আজ প্রোটিয়াদের পাশে বসল।
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের মুন্সীগঞ্জের হাসাড়ায় ট্রাকের পেছনে একটি বাসের ধাক্কায় চারজন প্রাণ হারিয়েছেন। এ ঘটনায় অন্তত ১৪ জন আহত হয়েছেন।
শনিবার (২৮ জুন) ভোরে এক্সপ্রেসওয়ের সিংপাড়া-নওয়াপাড়া ও হাসাড়া ব্রিজ-২-এর মধ্যবর্তী স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন— যশোরের মধুগ্রাম থানার বজলুর রহমানের ছেলে জিল্লুর রহমান (৬৫), পাগলাদাহ থানার ইনসান আলির ছেলে ডা. জালাল (৬৫), ডা. আব্দুল হালিম (৫৫) এবং হেলপার পাগলাদাহ থানার মো. বাপ্পির ছেলে হাসিব (৩২)। তারা সবাই যশোরের বাসিন্দা।
মুন্সীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম জানান, যশোর থেকে ঢাকাগামী একটি নাইট কোচ হামদান এক্সপ্রেস চলন্ত একটি ট্রাকের পেছনে সজোরে ধাক্কা দেয়। সংঘর্ষের পর উভয় যানবাহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এক্সপ্রেসওয়ের মাঝখানের সড়ক দ্বীপে রেলিংয়ের সঙ্গে আলাদাভাবে ধাক্কা খায়। এতে ঘটনাস্থলেই দুইজন মারা যান।
খবর পেয়ে শ্রীনগর ফায়ার সার্ভিসের একটি দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের উদ্ধার করে ঢাকায় পাঠায়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুইজন মারা যান। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় চারজনে।
আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলেও জানান তিনি।
মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম জানান, দুর্ঘটনার পর হাইওয়ে পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন ও উদ্ধারকারী বাহিনী যৌথভাবে কাজ করে দুর্ঘটনাকবলিত যান দুটি সরিয়ে নেয়। সাময়িক বিঘ্নের পর এক্সপ্রেসওয়েতে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
দুর্ঘটনার কারণ জানতে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
শনিবার দক্ষিণ ফিলিপাইনের উপকূলে ৬.১ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) এ তথ্য জানিয়েছে।
ম্যানিলা থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
ইউএসজিএস জানিয়েছে, ভূমিকম্পটি দাভাও অক্সিডেন্টাল প্রদেশের নিকটতম এলাকা থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে ১০১ কিলোমিটার (৬৩ মাইল) গভীরে আঘাত হানে। এতে তাৎক্ষণিকভাবে হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির কোনও খবর পাওয়া যায়নি।
সারাঙ্গানির দ্বীপের একজন প্রাদেশিক উদ্ধারকারী মারলাউইন ফুয়েন্তেস এএফপিকে বলেছেন, ‘ভূমিকম্পটি তেমন শক্তিশালী ছিল না, তবে কার্যালয়ের টেবিল এবং কম্পিউটারগুলো (প্রায় পাঁচ সেকেন্ড) কেঁপে উঠেছিল’।
কোনও সুনামির সতর্কতা জারি করা হয়নি।
ফিলিপাইনে ভূমিকম্প একটি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা, যা প্রশান্ত মহাসাগরীয় ’রিং অফ ফায়ার’ এর পাশে অবস্থিত। জাপান থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অববাহিকা জুড়ে বিস্তৃত তীব্র ভূমিকম্প এবং আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপের একটি বৃত্ত।
বেশিরভাগ ভূমিকম্পই এতটাই দুর্বল যে মানুষ তা অনুভব করতে পারে না, কিন্তু শক্তিশালী এবং ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্পগুলো এলোমেলোভাবে আসে এবং কখন ও কোথায় ঘটবে তা ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্য কোনও প্রযুক্তি নেই।
পুলিশের চলমান বিশেষ অভিযানে ঢাকাসহ সারাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ১ হাজার ৬১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এর মধ্যে বিভিন্ন মামলার এবং ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ১ হাজার ৬০ জন এবং অন্যান্য অপরাধে জড়িত ৫৫৬ জন রয়েছে।
পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর আজ এ তথ্য জানান।
এ সময় একটি বিদেশী পিস্তল ও চার রাউন্ড কার্তুজ জব্দ করা হয়েছে।
শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেছেন, কর্ণফুলী পেপার মিলের কাগজ উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করছে সরকার। কারখানাটি পুরোদমে উৎপাদনে থেকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
আজ রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার কর্ণফুলী পেপার মিলস লিমিটেডের (কেপিএমএল) অতিথি ভবনের সম্মেলনকক্ষে শিল্প মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কেপিএমএলের কর্মকর্তাদের মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। আজ এক তথ্য বিবরণীতে একথা জানানো হয়।
উপদেষ্টা বলেন, দেশে প্রচুর পরিমাণ কাগজ প্রয়োজন, বিদেশ থেকে কাগজ আমদানি না করে দেশে উৎপাদন বাড়াতে হবে। মিলের উন্নয়ন কার্যক্রম দ্রুত শুরু করা হবে। বিদেশি ক্যামিকেলের ওপর নির্ভর না করে দেশীয় কাঁচামাল দিয়ে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে হবে।
মতবিনিময় সভায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব ওবায়দুর রহমান, বিসিআইসির চেয়ারম্যান মো. ফজলুর রহমান, কেপিএমএলের এমডি শহীদ উল্লাহ, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ, পুলিশ সুপার ড. এস এম ফরহাদ হোসেন, কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন, কেপিএমএল সিবিএ সভাপতি আব্দুল রাজ্জাকসহ কেপিএমএলের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মতবিনিময় সভা শেষে তিনি কেপিএমএল কারখানা পরিদর্শন করেন এবং কারখানার বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখেন।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় আগামী ছয় মাসে কমপক্ষে ২০ হাজার মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত মামলা প্রত্যাহার করতে যাচ্ছে। এর ফলে এই সব মামলায় জড়িত ব্যক্তিরা চিরতরে সকল কলঙ্ক ও কষ্ট থেকে মুক্তি পাবেন।
বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমি মনে করি, মন্ত্রণালয় আগামী ছয় মাসে কমপক্ষে ২০ হাজার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার মিথ্যা বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত মামলা প্রত্যাহারের একটি সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে এবং ইতোমধ্যেই প্রায় ১২ হাজার মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে, যা কমপক্ষে ৩ লাখ মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে।’
আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি এ পর্যন্ত (২৮ মে পর্যন্ত) ১৬টি বৈঠকে ১১ হাজার ৪৪৮টি রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেছে এবং এ বিষয়ে আরও কাজ চলছে।
ফ্যাসিবাদী শাসনামলে বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের হয়রানির উদ্দেশ্যে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সহায়তাও চেয়েছিল তারা।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহারে সরকার কর্তৃক অবহেলার অভিযোগের প্রেক্ষাপটে মন্ত্রণালয় এই আহ্বান জানিয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জেলা পর্যায়ের কমিটি ও আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর শাখা প্রেরিত তালিকা ও সংশ্লিষ্ট নথি পর্যালোচনা করে কমিটি রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করছে।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাজনৈতিক দলগুলোও প্রক্রিয়াটি ত্বরান্বিত করার জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটিতে রাজনৈতিক মামলার তালিকা পাঠাতে পারে।
এর আগে ড. আসিফ নজরুল বলেছিলেন, ‘এই পরিপ্রেক্ষিতে, বিএনপি ১৪ জানুয়ারি, ২০২৫ সালের মধ্যে প্রায় ১৬ হাজার মামলার তালিকা পাঠিয়েছিল এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ২৭ এপ্রিল, ২০২৫ সালের মধ্যে ১ হাজার ২০০টি মামলার তালিকা পাঠিয়েছিল।’
তবে তিনি নিশ্চিত করেছেন যে, আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি, নিজস্ব উদ্যোগে কাজ করে, ইতোমধ্যেই প্রায় অর্ধেক মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে।
আইন উপদেষ্টা রাজনৈতিক দল দুটিকে তাদের মামলার তালিকার সঙ্গে প্রাথমিক তথ্য প্রতিবেদন (এফআইআর) ও চার্জশিট (যেখানে প্রযোজ্য) এর মতো প্রাসঙ্গিক নথি না পাঠানোর জন্যও দোষারোপ করে বলেছেন যে, এটি মামলা প্রত্যাহার বিলম্বিত হওয়ার প্রধান কারণ।
উপদেষ্টা সম্প্রতি তার যাচাইকৃত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্টে বলেছেন, ‘অন্যদিকে, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ, ২০ মে, ২০২৫ তারিখে ৪৪টি মামলার তালিকা দাখিল করেছে। মামলাগুলোর নথি পর্যালোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
ইতোমধ্যে এই মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য মামলার তালিকাসহ এফআইআর ও চার্জশিট জমা দিতে আইন মন্ত্রণালয় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছে।
অন্যায়ভাবে প্রভাব খাটিয়ে প্রহসনের নির্বাচন পরিচালনার অভিযোগে করা মামলায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার দ্বিতীয় দফায় চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
আজ চার দিনের রিমান্ড শেষে তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য দ্বিতীয় দফায় তাকে ফের দশ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার এসআই শামসুজ্জোহা সরকার।
শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসাইন মোহাম্মদ জুনায়েদ তার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে ২২ জুন রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরের দিন ২৩ জুন তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে দশ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শেরে বাংলা নগর থানার এসআই শামসুজ্জোহা সরকার। অপর দিকে তার আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মুস্তাফিজুর রহমান তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত ২২ জুন শেরেবাংলা নগর থানায় দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পরিচালনাকারী কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, কে এম নূরুল হুদা ও কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করে বিএনপি। দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন খান বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। মামলায় সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ২৪ জনকে আসামি করা হয়। পরবর্তীতে গত ২৫ জুন এ মামলায় নতুন করে রাষ্ট্রদ্রোহ, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের ধারা যুক্ত করা হয়।
বিগত তিনটি বিতর্কিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে ওঠা অভিযোগ তদন্ত এবং ভবিষ্যতে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে সরকার।
বৃহস্পতিবার রাতে এই বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
সেখানে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনগুলো নিয়ে দেশ-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। এসব নির্বাচনে নানা কৌশলে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে একটি নির্দিষ্ট দল আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনার অভিযোগ রয়েছে। সংবিধানে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার বাধ্যবাধকতা থাকলেও, এই নির্বাচনে তা লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগও রয়েছে। এতে দেশে আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও মৌলিক মানবাধিকার হুমকির মুখে পড়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।’
প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়, ‘এই প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভবিষ্যতে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা, দেশে গণতন্ত্রকে রক্ষা করা এবং ফ্যাসিবাদ ও কর্তৃত্ববাদী শাসনের আশঙ্কা প্রতিহত করার লক্ষ্যে এই তিন নির্বাচনে সংঘটিত অনিয়ম, দুর্নীতি ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই লক্ষ্যেই সরকার ‘বিগত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে উত্থাপিত অভিযোগের তদন্ত এবং ভবিষ্যতে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সুপারিশ প্রণয়ন কমিটি’ গঠন করেছে।’
পাঁচ সদস্যের এই কমিটির সভাপতি করা হয়েছে হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক বিচারপতি শামীম হাসনাইনকে।
কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, সাবেক অতিরিক্ত সচিব শামীম আল মামুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল হক, আইনজীবী ব্যারিস্টার তাজরিয়ান আকরাম হোসাইন ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ মো. আবদুল আলীম।
কমিটির কার্যপরিধিতে যা রয়েছে, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে দেশি-বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষক, তদারকি প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক সংগঠনের প্রতিবেদন এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত অভিযোগ বিশ্লেষণ; এসব নির্বাচনে সংঘটিত দুর্নীতি, অনিয়ম ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ ও বিশ্লেষণ; রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ সীমিত করা, ভোটাধিকার হরণ এবং তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের ভূমিকা পর্যালোচনা; তৎকালীন নির্বাচন কমিশন, সচিবালয়, প্রশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকা বিশ্লেষণ এবং নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ যাচাই ও অনুসন্ধান।
কমিটি এসব বিশ্লেষণের ভিত্তিতে দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ করবে এবং ভবিষ্যতের নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে প্রযোজ্য আইন, বিধি-বিধান, নির্বাচন কমিশনের কাঠামো ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের বিষয়ে সুপারিশ দেবে।
আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখের মধ্যে সরকারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে কমিটি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা এবং নির্বাচন কমিশন লজিস্টিক ও তথ্য সহায়তা দেবে।
কমিটি প্রয়োজনে যেকোনো সরকারি দপ্তরের দলিল-দস্তাবেজ তলব করতে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে। প্রয়োজনে কমিটি অতিরিক্ত সদস্য কো-অপ্টও করতে পারবে।
এই প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সামাজিক ব্যবসা (সোশ্যাল বিজনেস) শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং পুরো বিশ্বকে বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
তিনি আরও বলেন, পৃথিবীতে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার একমাত্র সঠিক পথ হল সামাজিক ব্যবসা। এর মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবার চ্যালেঞ্জগুলো সফলভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব।
শুক্রবার সাভারের জিরাবো সামাজিক কনভেনশন সেন্টারে দু’দিনের ‘সোশ্যাল বিজনেস ডে’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
‘সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সামাজিক ব্যবসা সর্বোত্তম পন্থা’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এবারের সোশ্যাল বিজনেস ডে উদযাপন করা হচ্ছে।
এবারের সম্মেলনে বিশ্বের ৩৮টি দেশ থেকে ১ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সরকারের সিনিয়র কর্মকর্তা, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক এবং বিদেশি অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
১৫তম সোশ্যাল বিজনেস ডে উপলক্ষে বিশ্বজুড়ে সামাজিক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত নেতা ও উদ্যোক্তাদের নিয়ে আয়োজিত কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত রয়েছেন তিনি। পাশাপাশি মূল প্রবন্ধও উপস্থাপন করবেন নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ।
শুক্রবার (২৭ জুন) সকালে সাভারের জিরাবোতে সামাজিক কনভেনশন সেন্টারে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। একটি সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে আজ প্রথম দিনের অনুষ্ঠান শুরু হয়।
ইউনূস সেন্টার ও গ্রামীণ গ্রুপ আয়োজিত এবারের সোশ্যাল বিজনেস ডে-র মূল প্রতিপাদ্য: ‘সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সোশ্যাল বিজনেসই সর্বোত্তম পথ।’
প্রথম দিনের উদ্বোধনী পর্বে আরও বক্তব্য দেন বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট (১৯৯২–২০০০) ড. ইসমাইল সেরাগেলদিন, গ্রামীণ গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. আশরাফুল হাসান ও ইউনূস সেন্টারের রিলেশনস ম্যানেজার জিনাত ইসলাম।
দুদিনব্যাপী এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের লক্ষ্য হলো, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে বৈষম্য ও সীমাবদ্ধতা মোকাবিলা করে একটি টেকসই, ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক বিশ্ব গড়ে তোলা।
এই আয়োজনে রয়েছে পাঁচটি প্লেনারি ও আটটি ব্রেকআউট সেশন, যেখানে বৈচিত্র্যময় মত ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ পাবেন অংশগ্রহণকারীরা। ৩৪টি দেশের ১৮০ জনের বেশি বিদেশি প্রতিনিধিসহ সহস্রাধিক অংশগ্রহণকারী এতে যোগ দিয়েছেন।
আলোচকদের মধ্যে রয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ সহকারী অধ্যাপক মো. সাইদুর রহমান, মেডট্রনিকের সাবেক সিইও ও চেয়ারম্যান এবং ইন্টেল করপোরেশনের সাবেক বোর্ড চেয়ারম্যান ওমর ইশরাক, জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও নরওয়ের সাবেক পরিবেশ ও জলবায়ুমন্ত্রী এরিক সোলহেইম। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টারাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের সম্প্রসারিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী ২৯ জুন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সঙ্গে যৌথভাবে অনুষ্ঠিত হবে বিশেষ অ্যাকাডেমিয়া ডায়লগ, যেখানে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও গবেষকেরা অংশ নিয়ে সমাজে অগ্রগতির চালিকাশক্তি হিসেবে সামাজিক ব্যবসায়ের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করবেন।
এ ছাড়া, সেদিন ৩-জিরো ক্লাব কনভেনশন অনুষ্ঠিত হবে। এই কনভেনশনের উদ্দেশ্য হলো ‘তিন শূন্য’ বা ‘থ্রি জিরো’ অর্জন: শূন্য নিট কার্বন নিঃসরণ, শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ ও শূন্য বেকারত্ব।
সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয় বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. শেখ মইনউদ্দিন আজ বলেছেন, দেশের জন্য একটি সামগ্রিক অবকাঠামো পরিকল্পনা প্রয়োজন যা আমাদের বিদ্যমান সম্পদ ও ভবিষ্যৎ চাহিদা পূরণ করবে।
তিনি বলেন, ‘চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন। একটি সুসংহত পরিকল্পনা সকল স্টেকহোল্ডারদেরকে একই কাঠামোর অধীনে একসাথে কাজ করতে সহায়তা করবে।’
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআরআই) এর সেন্টার ফর ম্যাক্রোইকোনমিক অ্যানালাইসিস (সিএমইএ) অস্ট্রেলিয়ার ডিপার্টমেন্ট অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ট্রেড (ডিএফএটি) এর সহযোগিতায় ‘মাসিক ম্যাক্রোইকোনমিক ইনসাইটস (এমএমআই) বাজেট পরবর্তী পর্যালোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
ড. মইনউদ্দিন সরকারের অবকাঠামো নির্ভর উন্নয়ন ও সামষ্টিক স্থিতিশীলতার কৌশলগত লক্ষ্যের ওপর জোর দেন। অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ, নীতিনির্ধারক, কূটনীতিক এবং বেসরকারি পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ অংশ নিয়ে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট পরবর্তী আর্থিক সম্ভাবনা আলোচনা করেন।
অনুষ্ঠানে পিআরআই’র নির্বাহী পরিচালক ড. খুরশিদ আলম কার্যকর অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়নে তথ্যভিত্তিক সংলাপের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পিআরআই চেয়ারম্যান ড. জাইদী সাত্তার।
ড. জাইদী সাত্তার বলেন, ‘বাজেটে কোনো বাণিজ্য নীতি সংস্কার করা হয়নি, যা বাংলাদেশের আগামী ২০২৬ সালের নভেম্বরে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন এবং ইউএসটিআর-এর পারস্পরিক শুল্কের দাবির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হারানোর সমতুল্য।’
তিনি উল্লেখ করেন, ক্রমবর্ধমান বাহ্যিক চাপের কারণে কৌশলগত ও জরুরি বাণিজ্য সংস্কার অপরিহার্য। ইউএসটিআর-এর প্রয়োজনীয়তার সাথে সামঞ্জস্য করা বাণিজ্য নীতির আধুনিকীকরণে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। একই সময়ে, বাংলাদেশকে বাণিজ্য ভিত্তিক করের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে রাজস্বের ভিত্তি প্রসারিত করতে হবে।
পিআরআই’র প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. আশিকুর রহমান বলেন, ‘রাজস্ব চাপ বাংলাদেশের সামষ্টিক ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে দুর্বল দিক। চলতি ব্যয় মেটাতেও এখন সরকারকে ঋণ নিতে হচ্ছে। এই রাজস্ব সংকট ব্যাংকিং খাতের পুনঃপূরণসহ জরুরি সংস্কারেও বাধা সৃষ্টি করছে, যা অর্থনীতির সামগ্রিক স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়ান ডেপুটি হেড অব মিশন ক্লিনটন পবকে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত বক্তব্য রাখেন এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অস্ট্রেলিয়ার চলমান সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘সুশীল নীতি সংলাপের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা অংশীদারিত্ব অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্থিতিস্থাপক উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু। পিআরআই’র এমএমআই-এর মতো উদ্যোগ তথ্যভিত্তিক আলোচনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক হিসেবে বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফেরদৌস আরা বেগম এবং ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রহমান উপস্থিত ছিলেন। উভয় প্যানেলিস্ট বাজেটকে বেসরকারি খাতের চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য করার এবং ব্যবসায়িক আস্থা বাড়াতে নিয়ন্ত্রণমূলক সংস্কারের ভূমিকার ওপর জোর দেন।