প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে কোটা বাতিলের দাবিসহ নিয়োগবিষয়ক ৫ দাবি জানিয়েছে ‘অধিকারবঞ্চিত বেকার সমাজ’ নামের একটি সংগঠন। তারা জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বুধবার আয়োজিত ‘কোটা বিষয়ে নাগরিক মত’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ দাবি জানায়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে পাবলিক সেক্টরে কোন ধরনের কোটা পদ্ধতি চালু নেই। আমাদের কেনো পাবলিক সেক্টরে কোটা পদ্ধতি চালু থাকবে। সেটা থাকলেও ৫ থেকে ১০ শতাংশ থাকতে পারে। সেটা কীভাবে ৬০ শতাংশ হয়। কোটা দিয়ে স্বার্থগোষ্ঠী তৈরির করার কারণে এক ধরনের বিচ্ছিন্ন সমাজ তৈরি হয়ে গেছে। বেড়ে যাচ্ছে বেকারত্বের হার। বেকারত্বের কারণে আজ সন্ত্রাস থেকে শুরু করে সকল ধরনের অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে ছাত্ররা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক নাছির উদ্দিন বলেন, আমরা যেখানে বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করছি, বৈষম্যহীন সমাজ তৈরি করার চেষ্টা করছি, সেখানে কোটা পদ্ধতি চালু রেখে বৈষম্য তৈরি করা হচ্ছে। আমাদের দিন দিন বেকারত্ব বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু বেকারত্ব দূরীকরণের জন্য সরকার কোন ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
অধিকার বঞ্চিত বেকার সমাজের আহবায়ক মো. তারেক রহমান বলেন, ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগে এই মুহূর্তে ৬০ শতাংশ নারী কোটা, ২০শতাংশ পারিবারিক বা পোষ্য কোটা, ২০শতাংশ পুরুষ কোটা প্রয়োগ করা হয়েছে।
আমাদের পাঁচ দফা দাবিগুলো হলো: বৈষম্যমূলক এই ফলাফল বাতিল করে এক ও অভিন্ন কাট মার্কে পুনরায় ফলাফল ঘোষণা করা হোক, কোটা বাতিলের সরকারি পরিপত্র মেনে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হোক, শিক্ষক নিয়োগে বিদ্যমান নিয়োগ মেধার ভিত্তিতে দ্রুত সম্পন্ন করে নতুন কোটামুক্ত পরবর্তী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দ্রুত প্রকাশ করা হোক, প্রতিবন্ধীদের কোটা সংরক্ষণ করে পোষ্য কোটাসহ সকল কোটার সম্পূর্ণ বিলোপ করা হোক, নিয়োগ পরীক্ষার মেধাতালিকার পাশাপাশি প্রাপ্ত নম্বার প্রকাশ করা হোক।
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অবিসংবাদিত প্রতীক এবং বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আজ মঙ্গলবার সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে পাঠানো এক শোকবার্তায় তিনি এই বর্ষীয়ান নেত্রীর প্রয়াণকে দেশ ও জাতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে অভিহিত করেন। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বেগম জিয়ার ইন্তেকালে জাতি আজ তার এক মহান অভিভাবককে হারাল এবং তাঁর মৃত্যুতে তিনি ব্যক্তিগতভাবে অত্যন্ত মর্মাহত।
শোকবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন যে, খালেদা জিয়া শুধু একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের নেত্রীই ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য ও গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রাম, দেশপ্রেম এবং জনগণের প্রতি তাঁর অকৃত্রিম ভালোবাসার প্রতি সম্মান জানিয়েই সরকার চলতি মাসে তাঁকে ‘রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ বা ভিভিআইপি হিসেবে ঘোষণা করেছিল। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং জনগণের ভোটাধিকার রক্ষার লড়াইয়ে তাঁর ভূমিকা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর আপসহীন নেতৃত্বের গুণেই জাতি বারবার গণতন্ত্রহীন অবস্থা থেকে মুক্তির দিশা পেয়েছে।
খালেদা জিয়ার বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের কথা স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ১৯৮২ সালে এক কঠিন সময়ে রাজনীতির মাঠে আসার পর তাঁর সাহসী নেতৃত্বেই দীর্ঘ ৯ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটেছিল। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি নারী শিক্ষার অগ্রগতির জন্য মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত মেয়েদের অবৈতনিক শিক্ষা ও উপবৃত্তি চালু করেছিলেন, যা বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের ইতিহাসে একটি মাইলফলক। এ ছাড়াও নব্বইয়ের দশকে তাঁর নেওয়া অর্থনৈতিক উদারীকরণের নীতিগুলো দেশের অর্থনীতির মজবুত ভিত্তি স্থাপন করেছিল।
রাজনৈতিক সাফল্যের অনন্য নজির হিসেবে অধ্যাপক ইউনূস উল্লেখ করেন যে, খালেদা জিয়া তাঁর দীর্ঘ ক্যারিয়ারে কখনো কোনো নির্বাচনে পরাজিত হননি, যা জনগণের কাছে তাঁর বিপুল জনপ্রিয়তারই প্রমাণ। তিনি বলেন, বিগত ফ্যাসিবাদী শাসনামলে বেগম জিয়া ছিলেন প্রতিরোধের এক সাহসী প্রতীক। মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় তাঁকে দীর্ঘ সময় কারাবরণ ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হতে হয়েছে, তবুও তিনি তাঁর নীতি ও আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি। তাঁর দৃঢ় মনোবল ও ত্যাগের উদাহরণ দেশবাসীকে আগামী দিনেও অনুপ্রাণিত করবে।
পরিশেষে, প্রধান উপদেষ্টা মরহুমার শোকসন্তপ্ত পরিবার এবং বিএনপির লাখ লাখ নেতাকর্মীর প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। জাতির এই শোকাবহ মুহূর্তে তিনি দেশের প্রতিটি নাগরিককে শান্ত থাকা এবং পরম ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি দেশবাসীকে যাঁর যাঁর অবস্থান থেকে এই কিংবদন্তি নেত্রীর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও প্রার্থনা করার জন্য সবিনয় অনুরোধ করেন। মূলত এক আদর্শিক ও আপসহীন নেতৃত্বের বিদায়বেলাকে বিনম্র শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
বিএনপি চেয়ারপারসন ও বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) বেলা ১০টা ৪০ মিনিটে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের অফিসিয়াল এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক বার্তার মাধ্যমে এই শোক জানানো হয়। শোকবার্তায় যুক্তরাষ্ট্র উল্লেখ করেছে যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের আধুনিক ইতিহাস গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব বাংলাদেশের উন্নয়নকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে এবং দেশ গঠনে বিশেষ সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র।
উল্লেখ্য, আজ মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন এই বর্ষীয়ান নেত্রী। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। দীর্ঘ চার দশকের রাজনৈতিক জীবনে তিনি এ দেশের মানুষের অধিকার রক্ষা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে অবিস্মরণীয় অবদান রেখে গেছেন। তাঁর প্রয়াণে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলসহ দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও কূটনীতিকরা বাংলাদেশের এই অভিভাবকতুল্য নেত্রীর বিদায়ে শোকবার্তা পাঠাচ্ছেন।
বাংলাদেশের আপসহীন নেত্রী ও জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আর নেই।
আজ মঙ্গলবার ভোর ছয়টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
সকাল সোয়া ৯টায় এভারকেয়ার হাসপাতালে এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, এই সংবাদটা নিয়ে সবার সামনে দাঁড়াতে হবে ভাবিনি। আমরা এবারও ভেবেছিলাম তিনি আগের মতো সুস্থ হয়ে উঠবেন। আমরা ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলছি আজ ভোর ৬ টায়, গণতন্ত্রের মা, আমাদের অভিভাবক, জাতির অভিভাবক আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন।
মৃত্যুর সময় খালেদা জিয়ার শয্যাপাশে ছিলেন তাঁর জ্যেষ্ঠ ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ সময় হাসপাতালে আরও উপস্থিত ছিলেন তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান, মেয়ে জাইমা রহমান এবং প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি।
স্বজনদের মধ্যে ছোট ভাই শামীম এসকান্দার ও তার স্ত্রী, বড় বোন সেলিনা ইসলামসহ পরিবারের অন্য সদস্যরাও শেষ সময়ে হাসপাতালে ছিলেন। এছাড়া বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকেরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস ও ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। পাশাপাশি কিডনি, ফুসফুস, হার্ট ও চোখের দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাও ছিল তাঁর।
হার্ট ও ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ার পর মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে গত ২৩ নভেম্বর তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও অস্ট্রেলিয়ার বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড তাঁর চিকিৎসা তদারকি করেন।
এই মাসের শুরুতে চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলেও শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় পরবর্তীতে তা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে খালেদা জিয়া ‘আপসহীন নেত্রী’ উপাধি পেয়েছিলেন। চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে জীবনের পরম সত্যের কাছে আত্মসমর্পণ করলেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
রাজনীতিকদের জীবনে উত্থান-পতন থাকে। মামলা-মোকদ্দমা, গ্রেপ্তার, কারাবাস, নির্যাতন, প্রতিপক্ষের আক্রমণ- এসবও তাঁদের জীবনে অভাবনীয় নয়। খালেদা জিয়াও চরম পর্যায়ের এমন নির্যাতন সহ্য করেছেন। সহ্য করেছেন স্বামী-সন্তান হারানোর গভীর শোক আর দীর্ঘ রোগযন্ত্রণা।
রাজনৈতিক জীবনে মতাদর্শিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত ছাড়াও প্রতিপক্ষের ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা, বিদ্বেষ, লাঞ্ছনা ও নিষ্ঠুরতার শিকার হয়েছেন খালেদা জিয়া।
বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির চেয়ারপারসন, যিনি ১৯৯১ সাল থেকে তিনবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী এবং মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় নির্বাচিত নারী সরকারপ্রধান ছিলেন।
১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুর জেলায় ইস্কান্দার মজুমদার ও তৈয়বা মজুমদারের ঘরে তাঁর জন্ম। তাঁর বাবা ভারতের জলপাইগুড়ি থেকে দেশভাগের পর তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে চলে আসেন। তাঁদের আদি বাড়ি ফেনীতে। তিনি দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এবং পরে সুরেন্দ্রনাথ কলেজে পড়াশোনা করেন। ১৯৬০ সালে তিনি জিয়াউর রহমানকে বিয়ে করেন।
জিয়াউর রহমান বীর উত্তম রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর বেগম জিয়া ফার্স্ট লেডি হিসেবে তাঁর সঙ্গে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সফরে অংশ নেন। এ সময় তিনি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার এবং নেদারল্যান্ডসের রানি জুলিয়ানাসহ বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
১৯৮১ সালের ব্যর্থ অভ্যুত্থানে রাষ্ট্রপতি জিয়ার মৃত্যুর পর ১৯৮২ সালের ২ জানুয়ারি তিনি বিএনপিতে সাধারণ সদস্য হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮৩ সালের মার্চে তিনি ভাইস-চেয়ারম্যান এবং ১৯৮৪ সালের আগস্টে দলের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন।
বেগম জিয়া দেশের রাজনীতিতে একটি অনন্য রেকর্ডের অধিকারী। তিনি কখনো কোনো আসনে পরাজিত হননি। ১৯৯১ থেকে ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি পাঁচটি পৃথক আসন থেকে নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনেও তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা তিনটি আসনেই বিজয়ী হন।সূত্র : বাসস
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সফলভাবে আয়োজনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত। নির্বাচনকে সামনে রেখে কেউ শান্তি বিঘ্নিত করার চেষ্টা করলে তা কঠোরভাবে মোকাবিলা করা হবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎকালে এ কথা বলেন ড. ইউনূস।
সাক্ষাতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট, বাণিজ্য, বেসামরিক বিমান চলাচল, অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া শ্রম সংস্কার এবং দুই দেশের সামগ্রিক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হয়।
বাংলাদেশে এক বছরের দায়িত্বপূর্ণ মেয়াদ শেষে দেশে ফেরার প্রাক্কালে ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন গত ১৭ মাসে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। তিনি ফেব্রুয়ারির নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।
এসময় প্রধান উপদেষ্টা অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে সরকারের অঙ্গীকারের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সফলভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত।
অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া সংস্কার উদ্যোগের প্রশংসা করে মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স বিশেষভাবে নতুন শ্রম আইনকে ‘অসাধারণ ও ব্যতিক্রমধর্মী’ বলে উল্লেখ করেন। তার মতে, এসব সংস্কার বাংলাদেশে আরও বেশি বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে সহায়ক হবে। তিনি আগের সরকারগুলোর আমলে শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে করা ৪৬টি মামলার মধ্যে ৪৫টি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তেরও প্রশংসা করেন।
জবাবে প্রধান উপদেষ্টা নতুন শ্রম অধ্যাদেশকে ‘একটি উৎকৃষ্ট আইন’ হিসেবে উল্লেখ করে জানান, দেশের শীর্ষ স্থানীয় শ্রমিক নেতারা এ সংস্কারকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কনভেনশন অনুসমর্থনের বিষয়টিও ইতিবাচকভাবে দেখছেন।
সাক্ষাতে রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তার অর্থায়ন নিয়েও আলোচনা হয়। প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানান।
ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্ব এলাকায় আশ্রয় শিবিরগুলোতে বসবাসরত এক মিলিয়নের বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গার জন্য জীবনরক্ষাকারী মানবিক সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে সবচেয়ে বড় দাতা। ভবিষ্যতেও এই সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বিদায়ী সাক্ষাতে এক বছরের দায়িত্বকালে ‘গুরুত্বপূর্ণ কাজ’ করার জন্য ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসনকে ধন্যবাদ জানান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি তাকে বাংলাদেশের ‘বন্ধু’ হিসেবে উল্লেখ করে ভবিষ্যতে আবার বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
সাক্ষাতে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এবং এসডিজিবিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।
দীর্ঘ দেড় যুগ পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপির) নয়াপল্টন কার্যালয়ে এলেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকাল ৩টা ৩৫মিনিটে তিনি রাজধানীর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এসে পৌঁছান। তারেক রহমানের আগমনকে কেন্দ্র করে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে দলীয় কার্যালয়। দলটির হাজার হাজার নেতাকর্মী সকাল থেকেই নয়াপল্টন এলাকায় জড়ো হন। তাদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও প্রাণচাঞ্চল্য দেখা যায়। তিনি দোতলায় বেলকনিতে দাঁড়িয়ে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে নেতা-কর্মী-সমর্থকদের উদেশে বলেন, বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ে তুলতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে উদ্যোগী হোন। আমাদের যার যতটুকু অবস্থান আছে, সেখান থেকে আসুন- আমরা আমাদের দেশটাকে নতুন গড়ে তোলার চেষ্টা করি। যার পক্ষে যতটুকু সম্ভব আমরা সচেষ্ট হই। কোথাও যদি রাস্তায় এমনি কাগজ পড়ে থাকে, ময়লা হয়ে থাকে তখনই সেটাকে আমরা সরিয়ে দেব। এভাবে ছোট ছোট কাজ করার মাধ্যমে দেশটাকে গড়ে তুলি।
নেতা-কর্মীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, এখন সবাইকে অনুরোধ করব, দ্রুত রাস্তাটাকে খালি করে দিন, যাতে সাধারণ মানুষ চলাফেরা করতে পারে। সকলে ভালো থাকবেন। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া করবেন।
তারেক রহমান বলেন, আজকে এখানে আমাদের কোনো অনুষ্ঠান নেই। আমরা যদি এই রাস্তটা বন্ধ করে রাখি তাহলে সাধারণ মানুষের চলাচলের অসুবিধা হবে। যেহেতু কোনো অনুষ্ঠান নেই। সেজন্য যত দ্রুত সম্ভব আমরা যেন এখান থেকে চলে যাই। ইনশাআল্লাহ কর্মসূচি যখন নেবো তখন আপনাদের সামনে বক্তব্য রাখবো। সকলে দোয়া করবেন।
বিকাল ৪টা ৫মিনিটি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন। ব্যাপক মানুষের ভিড় ডিঙিয়ে তারেক রহমান গাড়ি কার্যালয়ের সামনে আনতে নিরাপত্তা কর্মীদের বেগ পেতে হয়। বিকাল ৩টার দিকে গুলশানের বাসায় থেকে বের হয় তারেক রহমানের গাড়িবহন। নয়াপল্টন সড়কে হাজার হাজার নেতা-কর্মীর উপস্থিতি তার গাড়িবহর ধীর গতিতে এগুয়ে যায়।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে ফেরার পর গত রোববার প্রথম গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বসে দাপ্তরিক কাজ সেরেছিলেন তারেক রহমান। আর সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) তিনি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে সাংগঠনিক কাজে অংশ নেন। তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষে তাকে স্বাগত জানাতে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কয়েক হাজার নেতাকর্মী অবস্থান নেয়।
এসময় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ছিলেন বিএনপির উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, ফরহাদ হালিম ডোনার, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাত, আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন, নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহরিন ইসলাম তুহিন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব তানভীর আহমেদ রবিনসহ আরও নেতারা।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট উপলক্ষে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের নির্ধারিত সময় আর বাড়ছে না বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টায় মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আনুষ্ঠানিক সময়সীমা শেষ হওয়ার পর কমিশন এই অবস্থানের কথা স্পষ্ট করে। এর ফলে আগে ঘোষিত নির্বাচনী তফশিল অনুযায়ীই পরবর্তী সকল কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানান যে, নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী আজই ছিল মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন এবং এই সময়সীমা বাড়ানোর কোনো অবকাশ নেই। তফশিল অনুযায়ী আজ সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সারাদেশের আঞ্চলিক ও জেলা নির্বাচন কার্যালয়গুলোতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে প্রার্থীরা তাঁদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। শেষ দিনে দেশের বিভিন্ন আসনে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনীত প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ব্যাপক ভিড় এবং উৎসবমুখর পরিবেশ লক্ষ করা গেছে।
সারাদেশে আজ দিনভর মোট কতজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিলেন, সে সম্পর্কে জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন যে বর্তমানে সারাদেশ থেকে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। জেলা ও অঞ্চলভিত্তিক এই বিশাল তথ্যভাণ্ডার সংকলন করতে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে আজ রাত ১০টার মধ্যে দেশজুড়ে কতজন প্রার্থী চূড়ান্তভাবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন, তার একটি সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান কমিশন গণমাধ্যমকে জানাতে পারবে।
ঘোষিত নির্বাচনি সময়সূচি অনুযায়ী, আজ সংগৃহীত এসব মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের কাজ আগামীকাল ৩০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে এবং তা চলবে ২০২৬ সালের ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। এরপর পর্যায়ক্রমে রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের, আপিল নিষ্পত্তি এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে একযোগে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। মূলত একটি সুশৃঙ্খল নির্বাচনী পরিবেশ বজায় রাখতেই কমিশন তফশিলের ওপর অনড় থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরীফ ওসমান হাদির হত্যাকারীদের শনাক্ত ও গ্রেফতারে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য প্রদানের জন্য ৫৫ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক শিখ সংগঠন ‘শিখস ফর জাস্টিস’ (এসএফজে)। আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক বিবৃতিতে সংগঠনটি এই বড় অঙ্কের পুরস্কারের কথা জানায়। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে, যেখানে বলা হয়েছে যে হাদি হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্তরা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছে, এই পুরস্কার ঘোষণা করল সংগঠনটি।
এসএফজে-এর বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, হাদির খুনিদের বর্তমান অবস্থান জানানো, তাঁদের গ্রেপ্তার নিশ্চিত করা অথবা তাঁদেরকে প্রত্যর্পণের ক্ষেত্রে সহায়ক যেকোনো তথ্যের জন্য এই পুরস্কার দেওয়া হবে। সংগঠনটির জেনারেল কাউন্সেল গুরপতবন্ত সিং পান্নুন এই হত্যাকাণ্ডের জন্য সরাসরি ভারতের মোদী সরকারকে অভিযুক্ত করেছেন। তাঁর দাবি, এই হত্যাকাণ্ডটি ভারতীয় সীমান্ত পেরিয়ে পরিচালিত একটি সুপরিকল্পিত সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অংশ। তিনি এই ঘটনার সাথে কানাডায় শিখ নেতা হারদীপ সিং নিজ্জর হত্যাকাণ্ডের ধরনের মিল রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন।
সংগঠনটি জানিয়েছে, এই পুরস্কার ঘোষণার মূল উদ্দেশ্য হলো অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা নিশ্চিত করা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করা। তবে শিখ সংগঠনের এই গুরুতর অভিযোগ ও পুরস্কার ঘোষণার বিষয়ে এখন পর্যন্ত ভারত সরকার বা ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য বা প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর পল্টনে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ১৮ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক শরীফ ওসমান হাদি। এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। ওদিকে পুলিশি তদন্তে ফয়সালসহ মূল আসামিদের অবস্থান নিয়ে নানা তথ্য উঠে এলেও শেষ পর্যন্ত তাঁদের ভারতে পলায়নের বিষয়টিই এখন প্রধান আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বলিউডের বর্তমান সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় ও সফল জুটি রণবীর সিং এবং আলিয়া ভাট আবারও বড় পর্দায় এক হতে চলেছেন। ‘গল্লি বয়’ এবং ‘রকি অউর রানি কি প্রেম কাহানি’-র আকাশছোঁয়া সাফল্যের পর এই তারকা যুগল এবার সম্পূর্ণ ভিন্ন ও রোমাঞ্চকর এক ঘরানার সিনেমায় অভিনয় করতে যাচ্ছেন বলে বি-টাউনে জোর গুঞ্জন শুরু হয়েছে। জম্বি থ্রিলার ঘরানার এই সিনেমাটির নাম রাখা হয়েছে ‘প্রলয়’, যা পরিচালনা করবেন নির্মাতা জয় মেহতা। যদিও দুই তারকার পক্ষ থেকে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি, তবে ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর অনুযায়ী তাঁদের আবারও এক পর্দায় দেখার সম্ভাবনা এখন প্রবল।
সূত্র মারফত জানা গেছে, ‘প্রলয়’ সিনেমার গল্পটি একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত ও বিপর্যয়গ্রস্ত সমাজের প্রেক্ষাপটে তৈরি হবে, যেখানে জম্বিদের আক্রমণ এবং বেঁচে থাকার লড়াইকে ফুটিয়ে তোলা হবে। এই ছবিতে আলিয়া ভাটের চরিত্রটি হবে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। প্রথাগত প্রেমিকার চরিত্রের বাইরে বেরিয়ে এখানে তাঁকে এক বিধ্বংসী ও লড়াকু অবতারে আবিষ্কার করবেন দর্শকরা। সিনেমার মূল প্লটে হিংসা, সংঘাত আর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের এক বিভীষিকাময় রূপ চিত্রায়িত হওয়ার কথা রয়েছে।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ২০২৬ সালের আগস্ট মাস থেকে এই বড় বাজেটের সিনেমার শুটিং শুরু হবে। আসন্ন নতুন বছরের জানুয়ারি মাসেই ছবির প্রি-প্রোডাকশন এবং অন্যান্য কারিগরি দিক নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনায় বসবেন পরিচালক। রণবীর ও আলিয়ার মধ্যেকার অনস্ক্রিন রসায়ন বরাবরই দর্শকদের মুগ্ধ করেছে, তাই তৃতীয়বারের মতো তাঁদের এই জোটবদ্ধ হওয়া এবং বিশেষ করে জম্বি থ্রিলারের মতো নতুন ঘরানায় তাঁদের পদার্পণ বলিউড প্রেমীদের মাঝে এক নতুন উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছে। সিনেমাপ্রেমীরা এখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন এই ‘প্রলয়’ জুটির আনুষ্ঠানিক ঘোষণার জন্য।
আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি দেশে একটি উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সম্পূর্ণ বদ্ধপরিকর এবং এই লক্ষ্যে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে রংপুর জেলা প্রশাসনের হলরুমে আয়োজিত একটি কর্মশালার উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
নির্বাচন পরবর্তী ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, জাতি এখন পুরোপুরি নির্বাচনের আমেজে প্রবেশ করেছে। জনগণের সরাসরি ভোটে যারা ম্যান্ডেট বা জনসমর্থন পেয়ে বিজয়ী হবেন, তাঁদের হাতেই অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে। এটি সরকারের একটি দৃঢ় অঙ্গীকার। তিনি আরও বলেন, দায়িত্ব পালন শেষে তাঁরা পুনরায় তাঁদের পূর্বের ঠিকানায় ফিরে যাবেন এবং এই লক্ষ্যেই তাঁরা কাজ করে যাচ্ছেন। নির্বাচনকে কোনোভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ হতে দেওয়া হবে না এবং মাঠ প্রশাসনকে সর্বোচ্চ সতর্ক থেকে যেকোনো ধরনের পক্ষপাতিত্ব বা অনিয়ম কঠোর হাতে দমনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ময়মনসিংহে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া দীপু হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে গভীর দুঃখ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে ড. খালিদ হোসেন বলেন, এটি একটি অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। তিনি একে ‘মব জাস্টিস’ বা গণপিটুনির একটি জঘন্য উদাহরণ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, কোনো অবস্থাতেই কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারে না। ধর্ম অবমাননার মতো কোনো অভিযোগ থাকলে দেশে প্রচলিত আইনের মাধ্যমে তার বিচার হবে, কিন্তু পিটিয়ে হত্যা কিংবা পুড়িয়ে মারা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, যারা এই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত কিংবা ইন্ধন দিয়েছে, তাদের প্রত্যেককে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় আনা হবে। ধর্ম শান্তি ও মানবতার কথা বলে এবং ধর্মের দোহাই দিয়ে সহিংসতা চালানো প্রকৃত শিক্ষার পরিপন্থী বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
নৈতিক শিক্ষা ও মানবিক মূল্যবোধের গুরুত্ব তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম একটি সুশৃঙ্খল ও নৈতিকতাসম্পন্ন প্রজন্ম গড়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তরুণ প্রজন্মের মাঝে মানবিক গুণাবলি বিকশিত করা এখন সময়ের দাবি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদার উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিনিধিরা এই কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন। অংশগ্রহণকারীরা সামাজিক সহিংসতা রোধ এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার শপথ গ্রহণের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানেন। মূলত একটি সুষ্ঠু নির্বাচন এবং সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে সরকারের অবিচল অবস্থানের কথাই আজ উপদেষ্টার বক্তব্যে ফুটে উঠেছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন যে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের শঙ্কার অবকাশ নেই এবং সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে একটি সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর পিলখানায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদর দপ্তরে ‘বিজিবি দিবস-২০২৫’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
বিজিবি সদস্যদের প্রতি কঠোর নির্দেশনা দিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, দেশের কোনো অপরাধী বা সন্ত্রাসী যেন কোনোভাবেই সীমান্ত পেরিয়ে বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারে, সে বিষয়ে বিজিবিকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থাকতে হবে। তিনি সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র, মাদক ও সব ধরনের চোরাচালান বন্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণের নির্দেশ দেন এবং সতর্ক করে দেন যে, কোনো বিজিবি কর্মকর্তা যদি চোরাকারবারিদের সহায়তা করেন, তবে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্রের অনুপ্রবেশ রোধে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিজিবি ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।
সাম্প্রতিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, কেরানীগঞ্জের মাদ্রাসায় বোমা বিস্ফোরণের মূল হোতা এখনো পলাতক থাকলেও তাঁর স্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন সহযোগীকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন যে, জুলাই-আগস্টের পরাজিত ফ্যাসিস্ট শক্তিগুলো এখনো দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে, তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁদের দমনে সম্পূর্ণ সজাগ রয়েছে। নাশকতার মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির যেকোনো অপচেষ্টা কঠোর হস্তে দমন করা হবে বলে তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
এর আগে বিজিবি দিবসের মূল অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে উপদেষ্টা মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি বিজিবিকে একটি দক্ষ ‘ত্রিমাত্রিক বাহিনী’ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, সীমান্ত সুরক্ষা এবং দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এই বাহিনীর অবদান অতুলনীয়। সরকার বিজিবির সক্ষমতা বৃদ্ধি ও আধুনিকায়নে সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি এবং বিজিবির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। মূলত একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে প্রশাসনের সকল স্তরের প্রস্তুতি ও সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই ছিল আজকের বক্তব্যের মূল সুর।
দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে দেশে ফেরার পর আবারও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মা বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে গেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গত রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে পৌঁছান। সেখানে তিনি তাঁর গর্ভধারিণী মায়ের শয্যাপাশে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটান এবং তাঁর চিকিৎসার সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে চিকিৎসকদের কাছ থেকে বিস্তারিত খোঁজখবর নেন। প্রায় ৪০ মিনিট হাসপাতালে অবস্থানের পর রাত ১২টা ৮ মিনিটের দিকে তিনি পুনরায় গুলশানের বাসভবনের উদ্দেশ্যে রওনা হন। বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তারেক রহমানের পৌঁছানোর আগেই তাঁর সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমান এবং শাশুড়ি ইকবাল মান্দ বানু হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থার তদারকি করছিলেন। এ দিন খালেদা জিয়ার বড় বোন সেলিনা ইসলামও হাসপাতালে এসে তাঁর বোনের স্বাস্থ্যের খবর নেন। গত ২৩ নভেম্বর থেকে শারীরিক জটিলতা নিয়ে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তিনবারের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে সিসিইউতে (ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট) রেখে নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের মেডিকেল বোর্ড তাঁর চিকিৎসার দায়িত্ব পালন করছেন।
গত ২৫ ডিসেম্বর লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পর থেকেই তারেক রহমান তাঁর প্রতিটি ব্যস্ত কর্মসূচির শেষে নিয়মিতভাবে হাসপাতালে গিয়ে মাকে দেখে আসছেন। দীর্ঘ দেড় যুগ পর প্রিয় সন্তানের উপস্থিতি খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় মানসিক শক্তি যোগাবে বলে আশা করছেন তাঁর পরিবারের সদস্য ও দলীয় নেতাকর্মীরা। বর্তমানে রাজধানীর এই হাসপাতাল এলাকা এবং খালেদা জিয়ার শয্যাপাশে পরিবারের সদস্যদের এমন নিয়মিত উপস্থিতি এক আবেগঘন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। মায়ের দ্রুত আরোগ্য কামনায় তারেক রহমান দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করেছেন।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত নিয়ে নতুন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ভারতে দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তারের যে দাবি বাংলাদেশ পুলিশ করেছে, তা সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে ভারতের মেঘালয় রাজ্য পুলিশ। মেঘালয় পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ ধরনের কোনো গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেনি এবং বাংলাদেশ পুলিশের দাবিটি সঠিক নয়।
আজ রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, মেঘালয় পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে, ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডে জড়িত কোনো ব্যক্তি তাদের রাজ্যে প্রবেশ করেছে বলে কোনো প্রমাণ নেই এবং এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তারও করা হয়নি। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ করা হয়নি।
এর আগে আজ সকালেই ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার এস এন মো. নজরুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছিলেন যে, হাদি হত্যার প্রধান অভিযুক্ত ফয়সাল করিম ওরফে দাউদ খানের দুই সহযোগীকে মেঘালয় পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তিনি জানিয়েছিলেন, ‘ইনফরমাল চ্যানেল’ বা অনানুষ্ঠানিক সূত্রের মাধ্যমে তাঁরা এই গ্রেপ্তারের খবর পেয়েছেন। ডিএমপির ভাষ্য অনুযায়ী, আসামিরা ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে মেঘালয়ে প্রবেশ করেছিল।
তবে শুধু মেঘালয় পুলিশই নয়, ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ-ও বাংলাদেশ পুলিশের এই দাবিকে ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেছে। বিএসএফ-এর মেঘালয় ফ্রন্টিয়ারের প্রধান ওপি উপাধ্যায় জানিয়েছেন, হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে কোনো সন্দেহভাজন ব্যক্তি মেঘালয়ে প্রবেশের কোনো তথ্য বা প্রমাণ তাঁদের কাছে নেই। তাঁরা এ ধরনের কোনো ঘটনার বিষয়ে অবগত নন বলেও স্পষ্ট করেছেন।
মেঘালয় পুলিশ ও বিএসএফ আরও জানিয়েছে যে, তারা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যেকোনো আইনগত সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। তবে বর্তমানে তারা সীমান্তে নজরদারি আরও জোরদার করেছে যাতে কোনো অপরাধী সীমান্ত পার হতে না পারে।
উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় শরীফ ওসমান হাদিকে মাথায় গুলি করা হয়। দীর্ঘ ছয় দিন সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ১৮ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে দেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে এবং ইনকিলাব মঞ্চ খুনিদের দ্রুত বিচার ও গ্রেপ্তারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরস্পরবিরোধী এই বক্তব্যের ফলে হাদি হত্যার তদন্ত প্রক্রিয়া এখন এক নতুন মোড় নিল।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বিন হাদি হত্যাকাণ্ডের তদন্তে বড় ধরনের অগ্রগতির তথ্য জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। আজ রোববার (২৮ ডিসেম্বর) সকালে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম জানান, হাদির খুনিদের পালিয়ে যেতে সহায়তাকারী দুই সহযোগীকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। অনানুষ্ঠানিক সূত্রের মাধ্যমে মেঘালয় পুলিশের পক্ষ থেকে পুত্তি ও সামী নামে দুই ব্যক্তির গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
পুলিশের তদন্ত ও গ্রেফতারকৃতদের জবানবন্দি অনুযায়ী, হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ফয়সাল ও তাঁর সহযোগী আলমগীর অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে দেশ ত্যাগ করেছেন। গত ১২ ডিসেম্বর পল্টনে হাদিকে গুলি করার পরপরই তাঁরা সিএনজিযোগে আমিনবাজার ও সেখান থেকে মানিকগঞ্জের কালামপুর যান। পরে একটি প্রাইভেটকারে করে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত এলাকায় পৌঁছান। সেখানে আগে থেকেই ফিলিপ ও সঞ্জয় নামে দুই ব্যক্তি তাঁদের সীমান্ত পার করে দিতে অপেক্ষায় ছিলেন। সীমান্ত অতিক্রম করার পর তাঁদের ভারতীয় নাগরিক পুত্তির কাছে হস্তান্তর করা হয় এবং পরবর্তীতে ট্যাক্সি চালক সামী তাঁদের মেঘালয় রাজ্যের তুরা নামক নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেন। পুলিশ ধারণা করছে, আসামিরা অবৈধ পথেই সীমান্ত পাড়ি দিয়েছেন।
আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত বাংলাদেশে ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি বিদেশি পিস্তল, ৫২ রাউন্ড গুলি, ম্যাগাজিন, একটি মোটরসাইকেল এবং ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়াও ৫৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিপরীতে ২১৮ কোটি টাকার স্বাক্ষরিত চেক জব্দ করা হয়েছে, যা এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে বড় ধরনের অর্থায়নের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে মূল অপরাধীদের নাম এখনই প্রকাশ না করলেও পুলিশ জানিয়েছে, আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই এই মামলার পূর্ণাঙ্গ অভিযোগপত্র বা চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ইতোমধ্যে গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ৬ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন এবং ৪ জন সাক্ষী ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেছেন। হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য কারণ সম্পর্কে নজরুল ইসলাম বলেন, ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শরীফ ওসমান হাদি অত্যন্ত সরব ছিলেন এবং একটি নির্দিষ্ট আদর্শকে ধারণ করতেন। ধারণা করা হচ্ছে, তাঁর এই আদর্শিক অবস্থান অথবা ৫ আগস্টের প্রেক্ষাপটে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁরাই এই সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে থাকতে পারেন।
উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজ শেষে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পথে চলন্ত অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হন শরীফ ওসমান হাদি। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হলেও দীর্ঘ ছয় দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে গত ১৮ ডিসেম্বর তিনি শাহাদতবরণ করেন। প্রথমে এটি হত্যাচেষ্টা মামলা হিসেবে দায়ের হলেও হাদির মৃত্যুর পর আদালতের নির্দেশে এটি এখন ৩০২ ধারার নিয়মিত হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার জোর আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।