শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫
৫ পৌষ ১৪৩২

জঙ্গি ক্যাম্প থেকে পালানো যুবকের লোমহর্ষক বর্ণনা

ফাইল ছবি
নুরুজ্জামান লাবু
প্রকাশিত
নুরুজ্জামান লাবু
প্রকাশিত : ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২ ০৯:৪৮

সিলেটের ওসমানীনগর এলাকার একটি কওমি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করতেন সাইফুল ইসলাম তুহিন। স্থানীয় এক মসজিদের ইমাম মাওলানা সাঈদের সঙ্গে গত বছরের প্রথম দিকে তার পরিচয় হয়। ওই পরিচয়ের সূত্রেই জঙ্গিবাদের ফাঁদে পড়ে যান ২১ বছরের তুহিন। একপর্যায়ে কথিত জিহাদের নামে ঘরও ছাড়েন। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় বান্দরবানের গহিন পাহাড়ের এক জঙ্গি আস্তানায়। প্রায় এক বছর সেখানে থেকে গত মাসে দুই সহযোগীসহ পালিয়ে আসেন তুহিন।

চলতি মাসের ২১ ডিসেম্বর সিলেট থেকে তুহিনকে ও ঢাকা থেকে তার সঙ্গী নাইমকে গ্রেপ্তার করে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে গঠিত ঢাকার কাউন্টার টেররিজম ইউনিট (সিটিটিসি)। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তুহিন জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়া, কথিত হিজরত ও জিহাদ এবং পাহাড়ের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের বিস্তারিত তথ্য জানিয়েছেন।

সিটিটিসির কর্মকর্তারা জানান, তুহিন নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সদস্য। শামীন মাহফুজ নামে এক ব্যক্তি এই সংগঠনের অন্যতম প্রধান উপদেষ্টা। তার নির্দেশেই সংগঠনের শীর্ষনেতারা বিভিন্ন এলাকার তরুণদের কথিত জিহাদের নামে ভুল বুঝিয়ে পাহাড়ে নিয়ে গেছেন। পাহাড়ি এলাকার বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট-কেএনএফের আশ্রয়ে তারা গহিন পাহাড়ে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প তৈরি করেছিল।

ওই দুজনকে গ্রেপ্তারের পর সিটিটিসিপ্রধান মো. আসাদুজ্জামান জানান, নতুন জঙ্গি সংগঠনের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে অনেকেই স্বেচ্ছায় গেলেও আবার অনেককে মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ক্যাম্পে গিয়ে অনেকেই ফিরে আসতে চাইলেও সেখান থেকে বের হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। সাইফুলসহ কয়েকজন পালিয়ে আসার পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে সহযোগীদের বিষয়ে তথ্যানুসন্ধান করা হচ্ছে।

যেভাবে জঙ্গিবাদে জড়ানো হয় তুহিনকে

জিজ্ঞাসাবাদে সাইফুল ইসলাম তুহিন জানান, করোনাকালীন তিনি সিলেটের ওসমানীনগরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে চাকরি করতেন। এ সময় মাওলানা সাঈদ নামে একজনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সাঈদ তাকে বিভিন্ন ধরনের কথা ও দাওয়াতি কাজ করার জন্য বলতেন, জিহাদে যাওয়ার জন্য বলতেন। একসঙ্গে কোরআন-হাদিস নিয়েও আলোচনা করতেন। স্থানীয় সাদিক ও মামুন নামে দুই যুবকও তাদের আলোচনায় যোগ দিতেন।

তুহিন জানান, ২০২১ সালের নভেম্বরে তাকে হিজরতের জন্য ঘর ছাড়ার কথা বলেন মাওলানা সাঈদ। হিজরতের জন্য রাজি হলে তাকে প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র কেনার জন্যও বলা হয়। ওই বছরের ১৪ নভেম্বর তারা ঘর ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। তারা সিলেট থেকে একটি মাইক্রোবাসে করে প্রথমে ঢাকার ফকিরাপুল এলাকায় আসেন। এ সময় তাদের সঙ্গে মিন্টু ও পাভেল নামে আরও দুজন ‘হিজরতকারী’ ছিলেন। পথে জঙ্গি নেতারা নিরাপত্তাজনিত কারণে তাদের দাড়িও ছেঁটে দেন।

তুহিন জানান, ফকিরাপুলে আসার পর তাদের কাছে একটি করে ব্যাগে প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র দেয়া হয়। পরে তারা রাতে শ্যামলী পরিবহনের একটি গাড়িতে বান্দরবানের উদ্দেশে রওনা দেন। গাড়িতে তারা মোট ১০ জন হিজরতকারী ছিলেন। গাড়িতে তুলে দিয়ে জঙ্গি এজেন্টরা চলে যায়। নতুন দুজন দায়িত্ব নিয়ে তাদের সঙ্গে বান্দরবান যান।

পাহাড়ের জঙ্গি ক্যাম্পের উদ্দেশে যাত্রা

সাইফুল ইসলাম তুহিন জানান, বান্দরবানে নামার পর জঙ্গি এজেন্টরা তাদের প্রত্যেককে একটি করে ভুয়া আইডি কার্ড দেন। সেই কার্ডে তার নাম ছিল বকুল। পাহাড়ে যাওয়ার সময় সেনাবাহিনী ও বিজিবির চেকপোস্টে সেই আইডি কার্ড দেখাতে বলা হয়। এরপর দুটি চান্দের গাড়ির মাধ্যমে তারা রওনা দেন থানচির উদ্দেশে। গাড়িতে একজন করে কেএনএফ প্রতিনিধি ছিলেন বলেও জানান তুহিন।

তুহিনের ভাষ্য, থানচি থেকে চান্দের গাড়িতে আরও দুই ঘণ্টা যাওয়ার পর গাড়ি থামে। তখন দুই গাড়ির সবাইকে একটি বাঁশের ঘরে উঠানো হয়। সেখান থেকে দুজন গাইড তাদের ১৬ জনকে নিয়ে হেঁটে রওনা হন। বড় পাহাড়, জঙ্গল, ঝিরিপথ, গিরিখাদ দিয়ে হেঁটে ৫-৬ ঘণ্টা পর রাত ১২টার সময় সামরিক পোশাক পরা লোকজন তাদের গ্রহণ করেন। সেখানে বাঁশের তৈরি একটি ঘরে এক সপ্তাহ অবস্থান করেন তারা। তাদের প্রত্যেকের পৃথক পৃথক নাম দেয়া হয়।

তুহিন জানান, সেখানে তারা হিজরত করা মোট ৩০ জন ছিলেন। তাদের দিয়ে প্রথম দিকে বাঁশ কাটা, রান্না করা, লাকড়ি আনা, পাশের একটা পাহাড় থেকে চাল-ডাল আনানো হতো। যেখান থেকে চাল-ডাল আনা হতো সেটি ছিল কেএনএফের ক্যাম্প। সেখানে প্রায় ৩০০ জন কেএনএফ সদস্য ছিল। তাদের কেউ কেউ সামরিক পোশাকে আবার কেউ সাধারণ পোশাক পরা ছিল। প্রায় প্রত্যেকের কাছেই ছিল আগ্নেয়াস্ত্র।

‘আমরা যে ক্যাম্পে থাকতাম সেটির নাম ছিল কেটিসি ক্যাম্প। কেটিসি ক্যাম্পে আমরা প্রায় দুই মাস ছিলাম। সেখানে সকালে ক্যাম্পের সামরিক পোশাক পরিহিত লোকজন পিটি-প্যারেড করাতেন। আমাদের ক্যাম্প কমান্ডারের নাম ছিল কারসে। পরে ছবি দেখে জানতে পারি তার নাম শিব্বির আহমেদ, বাড়ি সিলেট জেলায়। আমাদের ক্যাম্পের আমিরের নাম ছিল আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ ওরফে আমির সাহেব। তবে সেখানে স্যার ওরফে শামীন মাহফুজই প্রধান। ক্যাম্পের আমির, কমান্ডার সবাই তার নির্দেশ মতো চলতেন। তিনি আলাদা ঘরে থাকতেন। তার ঘরটি অস্ত্রধারীরা পাহারা দিত।’- বলেন সাইফুল ইসলাম তুহিন।

মিজোরামেও গিয়েছিলেন তারা

তুহিন জানান, তারা একদিন দাওয়াতি কার্যক্রমের নামে পাহাড়ি প্রশিক্ষণ নিয়ে আমিরের সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক করেন। পরে ক্যাম্পের আমির আনিসুর রহমান তাদের স্যারের (শামীন মাহফুজ) কাছে নিয়ে যান। স্যার তাদের বলেন, এখন তোমরা থাক। ২০২৩ সাল পর্যন্ত কেএনএফের সঙ্গে আমাদের চুক্তি আছে। আমাদের বুঝিয়ে মিজোরাম যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে বলে। প্রতিদিনই সেখানে জিহাদের গুরুত্ব ও গাজওয়াতুল হিন্দ নিয়ে বয়ান হতো। একজন ডা. শাকের বিন ওয়ালীও ছিলেন কিছুদিন। তিনি কেটিসি ক্যাম্পের সদস্যদের কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসা দিতেন।

তুহিনের ভাষ্য, একদিন কেএনএফের দুই শতাধিক সদস্য তাদের এসে মিজোরামে যাওয়ার জন্য তৈরি হতে বলেন। এশার নামাজের পর সবাই মিজোরামের উদ্দেশে হেঁটে রওনা হন। একটানা ২৪ ঘণ্টা পাহাড়ি পথ, ঝিরিপথ, গিরিপথ দিয়ে হাঁটেন। ৪-৫ দিন হাঁটার পর মিজোরামে ঢোকেন তারা। মিজোরাম ঢুকে একটি জঙ্গলে সপ্তাহখানেক অবস্থান করেন। একদিন কেএনএফ কমান্ডার সাংরেম এসে বলেন, বিএসএফ তাদের ঢুকতে দিচ্ছে না। পরে একই পথে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। রেংতলাং নামে একটি পাহাড়ে তারা নতুন ক্যাম্প তৈরি করেন।

প্রতিবাদ করায় নির্যাতন

তুহিন জানিয়েছেন, তখন রমজান মাস ছিল। সে সময় আমির আনিসুর রহমানের সঙ্গে সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে আবারও ঝগড়া হয়। তারা চারজন পাহাড় থেকে চলে আসার সিদ্ধান্ত নিলে তাদের আটক করে হাত-পা, চোখ বেঁধে একটা ঘরে বেঁধে রাখা হয়। পাঁচ-ছয় দিন নির্যাতনের পর তাদের হাত-পা খুলে দেয়া হয়। এ সময় একদিন পাহাড়ি আরেকটি সংগঠন জেএসএস রেংতেলাং ক্যাম্পে আক্রমণ করে। সারা রাত গোলাগুলি চলে। এতে ডা. আহমাদ নামে একজন নিহত হন। পরদিন গোলাগুলি থামলে ক্যাম্পের পাশেই তাকে কবর দেয়া হয়।

রেংতলাং ক্যাম্প থেকে সিপ্পি পাহাড়ে, আবারও নির্যাতন

তুহিন জানান, গোলাগুলির একদিন পর ক্যাম্প কমান্ডার কারসে ওই পাহাড় ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তারা সবাই দুই দিন হাঁটার পর সিপ্পি পাহাড়ে যান। সেখানে গিয়ে নতুন করে ঘর তৈরি করে ক্যাম্প বানানো হয়। ওই ক্যাম্পের নাম দেয়া হয় সিপ্পি ক্যাম্প।

তুহিনের ভাষ্য, সিপ্পি ক্যাম্প থেকেই তারা পালানোর পরিকল্পনা করেন। কোরবানির ঈদের দুই-এক দিন আগে তারা চারজন ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে যান। মাগরিবের পর একটা পাহাড়ে ওঠেন। সারা রাত বৃষ্টিতে ভিজে পাহাড়ে অবস্থান করেন। ফজরের নামাজ শেষে হাঁটতে হাঁটতে রনিংপাড়ায় গিয়ে পৌঁছান। রনিংপাড়া কেএনএফ সদস্যদের গ্রাম এটা তারা জানতেন না। পাড়ার লোকজন তাদের আটক করে কেএনএফ ক্যাম্প কমান্ডারকে খবর দেয়। কেএনএফের ক্যাম্প কমান্ডার সাংরেমসহ কয়েকজন এসে তাদের হাত-পা বেঁধে ক্যাম্পে নিয়ে যান। পরে সিপ্পি পাহাড়ের আমির আনিসুর রহমানের হাতে তুলে দেয়। সেখানে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তাদের চারজনকে চারটি ইনজেকশন দিয়ে দেন। বেধড়ক মারধর করা হয় তাদের। পালিয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে তারা আত্মসমর্পণ করার কথা স্বীকার করেন। এ সময় কারসে ওরফে শিব্বির, পাভেলসহ আরও কয়েকজন রাতে মারধর করেন। পরদিন সকালবেলা ইসলামি নিয়মের অংশ হিসেবে ৪০টি করে বেত্রাঘাত করা হয়। পরে আমিরের সিদ্ধান্তে তাদের পরিমিত খাবার-পানি আর কাজের বাইরে বেঁধে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়।

‘আমিরের নির্দেশে ঈদের দিনও আমাদের বেঁধে রেখে পরিমিত খাবার দেয়া হয়। যতক্ষণ কাজ থাকত ততক্ষণ হাত-পা খুলে দিত। কাজ শেষে হাত-পা বেঁধে রাখত। এভাবে প্রায় তিন মাস ছিলাম। অক্টোবরের প্রথম দিকে সিপ্পি পাহাড়ের ওপর দিয়ে হেলিকপ্টার চক্কর দিতে দেখি। কেএনএফের কমান্ডার সাংরেম বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেকোনো মুহূর্তে ক্যাম্পে হামলা করতে পারে। এখান থেকে চলে যেতে হতে পারে।’ বলেন তুহিন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান

তুহিন জানান, একদিন ক্যাম্প কমান্ডার রাত ১টার সময় সবাইকে তাৎক্ষণিক রওনা দিতে বলেন। সারা রাত হেঁটে দিনের বেলা ১টা জঙ্গলের মধ্যে রেখে কেএনএফ সদস্যরা চলে যায়। তিন দিন পর আসার কথা বলেও তারা আসেনি। সেখানে তারা মোট ৫৩ জন ছিলেন। আমির ছিলেন কিএনএফ সদস্যদের সঙ্গে। এ সময় ক্যাম্প কমান্ডার কারসে আবার সিপ্পি পাহাড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সিপ্পি পাহাড়ে পৌঁছার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান শুরু হয়। ক্যাম্প কমান্ডার কারসে বলেন, ‘যাদের অস্ত্র আছে ও সাহস আছে তারা একদিকে হন। আর অস্ত্রহীন ও দুর্বলরা একদিকে থাকেন। তখন অস্ত্রধারী হয় ২১ জন। ক্যাম্প কমান্ডার বলে ৩২ জনকে অন্যদিকে যেতে বলে ২১ জনকে নিয়ে আরেক দিকে চলে যান।’

অবশেষে পালিয়ে আসতে সক্ষম

তুহিনের ভাষ্য, গোলাগুলি কমে এলে তারা ৩২ জন পাহাড় থেকে নেমে একটি জঙ্গলে অবস্থান করেন। তারা আরাকানের দিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তারপংখাল দিয়ে যাওয়ার সময় মাথার ওপর দিয়ে হেলিকপ্টার উড়তে দেখেন। সেখান থেকে হাঁটতে হাঁটতে কিছুদূর যাওয়ার পর কয়েকটা ঘরের দেখা পান। সেখানে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে শুরু করে। এ সময় তারা সবাই দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। তিনজন একটি পাহাড়ে যাওয়ার পর আবারও কেএনএফ সদস্যদের সঙ্গে দেখা হয়। কেএনএফ সদস্যরা তাদের ক্যাম্পে থাকতে বলে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়লে তাদেরও ক্ষতি হবে জানিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে যাওয়ার জন্য বলে। প্রায় দেড় মাস পর গত ২৫ নভেম্বর কেএনএফ সদস্যরা তাদের সমতলে পাঠিয়ে দেয়।

সাইফুল জানান, তিনি পাহাড় থেকে সমতলে এসে চট্টগ্রামের লালখান বাজারের এক হুজুরের কাছে যান। তার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে সিলেটে যান। কিন্তু পুলিশের ভয়ে গ্রামের বাড়ি না গিয়ে আত্মীয়স্বজনের বাসায় থাকা শুরু করেন। সেখান থেকেই ঢাকার পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।

বিষয়:

জাতীয় কবির সমাধির পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত ওসমান হাদি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই যদ্ধা শরিফ ওসমান হাদির দাফন সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তার দাফন কাজ সম্পন্ন হয়। দাফন শেষে বিকেল ৪টার দিকে কবরের পাশে সংক্ষিপ্ত স্মৃতিচারণ ও মোনাজাত পরিচালনা করেন মরহুমের বড় ভাই ড. মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক।

এর আগে বেলা ৩টার দিকে হাদির মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে পৌঁছায়। সেখানে এক শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

শনিবার দুপুর আড়াইটার পর জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় লাখো মানুষের অংশগ্রহণে ওসমান হাদির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন তার বড় ভাই। জানাজায় অংশ নিতে সকাল থেকেই মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও এর আশপাশের এলাকায় মানুষের ঢল নামে। ‘আমরা সবাই হাদি হবো, যুগে যুগে লড়ে যাবো’, ‘হাদি ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’—এমন স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। জানাজা উপলক্ষে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‍্যাব ও আনসার সদস্যদের সমন্বয়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল।

জানাজায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। জানাজার আগে ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব জাবের ও ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বক্তব্য রাখেন।

জানাজার আগে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার বক্তব্যে বলেন, প্রিয় ওসমান হাদি, তোমাকে আমরা বিদায় দিতে আসিনি। তুমি আমাদের বুকের ভেতরে আছো এবং বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, ততদিন তুমি সব বাংলাদেশির বুকে থাকবে। হাদির নির্বাচনী আকাঙ্ক্ষার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ওসমান হাদি নির্বাচনে অংশ নিতে চেয়েছিল এবং দেখিয়ে দিয়ে গেছে কীভাবে বিনয়ের সঙ্গে মানুষের কাছে গিয়ে প্রচারণা চালাতে হয়। তার সেই শিক্ষা আমরা গ্রহণ করলাম। তিনি আরও বলেন, হাদি কোথাও হারিয়ে যাবে না। তাকে আমরা আল্লাহর কাছে আমানত রাখলাম এবং তার আদর্শ ধারণ করে জাতির অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাব।


হাদি যুগ যুগ ধরে আমাদের সঙ্গে থাকবে: প্রধান উপদেষ্টা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদির জানাজায় অংশ নিয়ে আবেগঘন শ্রদ্ধা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, হাদি কখনো হারিয়ে যাবে না, তাকে কেউ ভুলতে পারবে না। সে যুগ যুগ ধরে আমাদের সঙ্গেই থাকবে। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত জানাজায় তিনি এসব কথা বলেন।

বিদায়ী এই বীর যোদ্ধার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, প্রিয় হাদি, তোমাকে আজ বিদায় দিতে আসিনি। তুমি আমাদের বুকের ভেতর আছো এবং বাংলাদেশ যতদিন আছে, ততদিন তুমি সকল বাংলাদেশির হৃদয়ে থাকবে। হাদির ‘বল বীর- চির উন্নত মম শির’ মন্ত্রকে ধারণ করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে ড. ইউনূস বলেন, হাদি আমাদের কানে এমন এক মন্ত্র দিয়ে গেছে যা কেউ কখনো ভুলতে পারবে না। আমরা দুনিয়ার সামনে মাথা উঁচু করে চলবো, কারও কাছে মাথা নত করবো না।

শরিফ ওসমান হাদির নির্বাচনী প্রচারণার ধরণ ও বিনয়ের প্রশংসা করে প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, হাদি নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেখিয়ে দিয়ে গেছে কীভাবে বিনীতভাবে মানুষের কাছে যেতে হয় এবং প্রচারণা চালাতে হয়। তার এই শিক্ষা ও আদর্শ জাতীয় রাজনীতিতে কাজে লাগানোর আহ্বান জানান তিনি। তিনি হাদির বিদেহী আত্মাকে আল্লাহর কাছে আমানত হিসেবে সঁপে দিয়ে বলেন, আমরা সবসময় তোমার কথা স্মরণ রেখে জাতির অগ্রগতির পথে চলতে থাকবো।

উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন ঢাকার পুরানা পল্টনে দুর্বৃত্তদের গুলিতে গুরুতর আহত হন শরিফ ওসমান হাদি। প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে ১৫ ডিসেম্বর তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়, সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার তিনি মৃত্যুবরণ করেন।


জাতীয় কবির সমাধির পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন শহীদ ওসমান হাদি, কবর প্রস্তুত

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধিসৌধের পাশেই শহীদ শরীফ ওসমান হাদির দাফনের জন্য কবর প্রস্তুত করা হয়েছে। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে কবর খোঁড়ার কাজ সম্পন্ন হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমেদ জানিয়েছেন, জাতীয় কবির কবরের দক্ষিণ দিকে ওসমান হাদিকে সমাহিত করা হবে। মসজিদের দেয়াল ঘেঁষে দ্বিতীয় স্লটের পূর্ব পাশে তার কবরের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে।

কবর প্রস্তুত কার্যক্রম পরিদর্শন ও তদারকির সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।


লাখো মানুষের অংশগ্রহণে ওসমান হাদির জানাজা অনুষ্ঠিত

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

লাখো মানুষের অংশগ্রহণে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরীফ ওসমান হাদির জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় এই জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন মরহুমের বড় ভাই ড. মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক।

এই জানাজায় অংশ নেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। এছাড়া বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা এবং সর্বস্তরের জনগণ জানাজায় শরিক হন। জানাজাকে কেন্দ্র করে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা ও মানিক মিয়া এভিনিউ এলাকায় মানুষের ঢল নামে। খামারবাড়ি থেকে আসাদ গেট পর্যন্ত পুরো এলাকাটি কার্যত জনসমুদ্রে পরিণত হয়।

উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে দুর্বৃত্তদের গুলিতে গুরুতর আহত হন ওসমান হাদি। প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার অস্ত্রোপচার হয় এবং পরে পরিবারের ইচ্ছায় তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় গত ১৫ ডিসেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

ওসমান হাদির মৃত্যুতে শনিবার দেশজুড়ে একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হচ্ছে। শোক পালনের অংশ হিসেবে দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে।


সুদানে নিহত ৬ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর মরদেহ দেশে পৌঁছেছে

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীদের ড্রোন হামলায় নিহত ছয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর মরদেহ দেশে পৌঁছেছে। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা ৫ মিনিটে নিহতদের মরদেহ বহনকারী ফ্লাইটটি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক এস এম রাগিব সামাদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে গত ১৩ ডিসেম্বর সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের আওতাধীন কাদুগলি লজিস্টিকস বেইসে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী বর্বরোচিত ড্রোন হামলা চালায়। এতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয় সদস্য নিহত হন এবং আহত হন আরও ৯ জন।

নিহত বীর শান্তিরক্ষীরা হলেন– নাটোরের করপোরাল মো. মাসুদ রানা, কুড়িগ্রামের সৈনিক মো. মমিনুল ইসলাম ও সৈনিক শান্ত মন্ডল, রাজবাড়ীর সৈনিক শামীম রেজা, কিশোরগঞ্জের মেস ওয়েটার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এবং গাইবান্ধার লন্ড্রি কর্মচারী মো. সবুজ মিয়া।

হামলায় আহত শান্তিরক্ষীদের বর্তমানে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবির আগা খান ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল ছেড়েছেন এবং বাকিরাও শঙ্কামুক্ত রয়েছেন বলে জানা গেছে। আহতদের মধ্যে তিনজন নারী সদস্যও রয়েছেন।

উল্লেখ্য, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অবদান বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত। সুদানের সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের পেশাদারিত্ব, সাহস ও এই সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হচ্ছে।


বীর উত্তম এ কে খন্দকারের মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার গভীর শোক

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ এবং স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার, বীর উত্তমের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শনিবার এক শোকবার্তায় তিনি এই বীর মুক্তিযোদ্ধার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।

শোকবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এ কে খন্দকার ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অবিস্মরণীয় সৈনিক। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতা, দূরদর্শিতা ও নেতৃত্বগুণ দিয়ে তিনি দেশের স্বাধীনতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ হিসেবে তার কৌশলগত সিদ্ধান্ত ও সাংগঠনিক দক্ষতা স্বাধীনতা সংগ্রামকে আরও সুসংহত করেছিল। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী গঠনেও তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন এবং দেশের প্রথম বিমান বাহিনী প্রধান হিসেবে এই বাহিনীকে একটি সুসংগঠিত ও কার্যকর প্রতিষ্ঠানে রূপ দিতে অসামান্য অবদান রাখেন।

এ কে খন্দকারের সততা ও সাহসিকতার প্রশংসা করে ড. ইউনূস উল্লেখ করেন, রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। তবে পতিত ফ‍্যাসিবাদী শাসনামলে সেই গ্রন্থের কারণে তিনি ব্যাপক রোষানলে পড়েন। প্রধান উপদেষ্টা মন্তব্য করেন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরাই ছিল সেই শাসনের দৃষ্টিতে তার অপরাধ।

প্রধান উপদেষ্টা এ কে খন্দকারকে একজন দৃঢ়চেতা মুক্তিযোদ্ধা ও আদর্শনিষ্ঠ দেশপ্রেমিক হিসেবে অভিহিত করে বলেন, তার কর্ম ও চিন্তা নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। এই বীর সন্তানের মৃত্যুতে দেশ তার এক শ্রেষ্ঠ সন্তানকে হারালো। শোকবার্তায় তিনি মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজন, আত্মীয়স্বজন ও সহযোদ্ধাদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।


ওসমান হাদির দাফন ঘিরে ঢাবি এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা, পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির দাফনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশের কবরস্থান এলাকায় নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জানাজা শেষে মরদেহ দাফনের জন্য এই স্থানে নিয়ে আসার কথা রয়েছে। এ উপলক্ষে কবরস্থানের ভেতরে ও বাইরের এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, দাফনের জন্য কবর খোঁড়াসহ আনুষঙ্গিক সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। যেকোনো ধরণের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে কবরস্থানের মূল ফটক এবং আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি সদস্যদেরও সারিবদ্ধভাবে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সশরীরে উপস্থিত থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকি করছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রে জানা গেছে, জানাজা ও দাফন ঘিরে প্রচুর জনসমাগমের সম্ভাবনা থাকায় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে এবং পরিস্থিতি বিবেচনায় অতিরিক্ত ফোর্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে। তার জানাজায় অংশ নিতে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সাধারণ মানুষের ঢল নেমেছে।

উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকা-৮ আসনে নির্বাচনী প্রচারণা শেষে ফেরার পথে দুর্বৃত্তদের গুলিতে গুরুতর আহত হন স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদি। প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে গত ১৫ ডিসেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুর জেনারেল হসপিটালে স্থানান্তর করা হয়, সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।


মুক্তিযুদ্ধের উপ-সর্বাধিনায়ক এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকার আর নেই

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

মহান মুক্তিযুদ্ধের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ (উপ-সর্বাধিনায়ক) এবং সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার, বীর উত্তম ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না-লিল্লাহ ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।

এ কে খন্দকারের জন্ম ১৯৩০ সালের ১ জানুয়ারি। বাবার তৎকালীন কর্মস্থলের সুবাদে রংপুরে তার জন্ম হলেও তার পৈত্রিক নিবাস পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার ভারেঙ্গা গ্রামে। তার বাবা খন্দকার আব্দুল লতিফ ব্রিটিশ আমলের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন এবং মা আরেফা খাতুন ছিলেন একজন আদর্শ গৃহিণী। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে এ কে খন্দকার ছিলেন তৃতীয়। বাবার চাকরির সুবাদে বগুড়া করোনেশন স্কুলে তার শিক্ষাজীবন শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় তিনি মালদা জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন।

বর্ণাঢ্য সামরিক জীবনের অধিকারী এ কে খন্দকার ১৯৫২ সালের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে (পিএএফ) পাইলট অফিসার হিসেবে কমিশন লাভ করেন। ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত তিনি ফাইটার পাইলট হিসেবে কাজ করেন এবং পরবর্তীতে ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন সময়ে তিনি ফ্লাইট কমান্ডার, জেট ফাইটার কনভারশন স্কোয়াড্রনের স্কোয়াড্রন কমান্ডার এবং পিএএফ একাডেমির ট্রেনিং উইং-এর অফিসার কমান্ডিং হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি ঢাকায় পাকিস্তান বিমান বাহিনী ঘাঁটির সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে দায়িত্ব পান।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন এবং ডেপুটি চিফ অফ স্টাফের গুরুদায়িত্ব গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর তৎকালীন অন্তর্বতীকালীন সরকার তাকে গ্রুপ ক্যাপ্টেন হিসেবে পদোন্নতি দেয়। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানীর ব্যক্তিগত ডেপুটি ইন চার্জ বা উপ-প্রধান সেনাপতি হিসেবে যুদ্ধের ময়দানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।


হাদির জানাজায় অংশ নিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জনস্রোত

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির জানাজায় অংশ নিতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন জড়ো হতে শুরু করেছে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে। ছোটবড় মিছিল নিয়ে শত শত মানুষ সংসদ ভবন এলাকায় আসছেন।

শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ‘হাদি মরল কেন’, ‘ইউনূস সরকার বিচার চাই’, ‘আমার ভাই, আমার ভাই-হাদি ভাই, হাদি ভাই’, ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর’, ‘হাদি ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই’, ‘বিচার চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দিতে সেখানে জড়ো হচ্ছে জনতা।

কুমিল্লা থেকে হাদির জানাজায় অংশ নিতে এসেছেন মশিউর রহমান নামের এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। তিনি বলেন, আমরা এমন একটি সমাজ চাই যেখানে কোনো অন্যায় বরদাশত করা হবে না। হাদির জানাজায় অংশ নেওয়া আমার জীবনের বেদনাদায়ক ঘটনাগুলোর একটি। তিনি মারা গেলেও বিপ্লবী কণ্ঠস্বরের মধ্য দিয়ে বিপ্লবী তরুণদের হৃদয়ে যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকবেন।

দুপুরে ২টায় ওসমান হাদির জানাজা পড়াবেন তার বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিক। এরপর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে তার দাফন হবে।

হাদির জানাজা ঘিরে জাতীয় সংসদ ভবনসহ রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে, নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব মোতায়েন করা হয়েছে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ এবং আশেপাশে এলাকাজুড়ে। সেনাবাহিনীর সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে।

এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার তালেবুর রহমান বলেন, সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে এক হাজার বডি-ওর্ন ক্যামেরাসহ পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করেছে ডিএমপি।

বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম জানান, সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাতীয় সংসদ ভবন ও রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বডি-ওর্ন ক্যামেরা ও রায়োট কন্ট্রোল গিয়ারসহ ২০ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে।

এ ছাড়া জানাজায় যারা অংশগ্রহণ করবেন, তাদের কোনো ধরনের ব্যাগ বা ভারি বস্তু বহন না করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর। পাশাপাশি জানাজা চলাকালে সংসদ ভবন এলাকায় ও আশপাশে ড্রোন ওড়ানো কঠোরভাবে নিষিদ্ধ থাকবে বলেও জানানো হয়েছে।

ইনকিলাব মঞ্চ এক ফেইসবুক পোস্টে লিখেছে, পরিবারের দাবির ভিত্তিতে তাদের সংগঠনের আহ্বায়ককে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের পাশে সমাহিত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

হাদির মৃত্যুর ঘটনায় আজ জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখাসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয় শোক পালিত হচ্ছে।

গত ১২ ডিসেম্বর দুপুর সোয়া ২টার দিকে রাজধানীর বিজয়নগর পানির ট্যাংকির সামনে রিকশায় করে যাওয়ার সময় ওসমান হাদির উপর আক্রমণ হয়। ওই সময় মোটরসাইকেলে করে এসে দুজন তাকে খুব কাছ থেকে গুলি করে পালিয়ে যায়।

পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। একপর্যায়ে পরিবারের ইচ্ছায় তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এরপর সেখানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তার চিকিৎসা চলে।

পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সোমবার এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে হাদিকে সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়া হয়েছিল; সেখানেই বৃহস্পতিবার তার মৃত্যু হয়।সূত্র : ইউএনবি


শহীদ ওসমান হাদির নামাজে জানাজা বেলা দুইটায়

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

আজ বেলা দুইটায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় শহীদ ওসমান হাদির নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, শহীদ ওসমান হাদির নামাজে জানাজায় অংশগ্রহণে আগ্রহীদের কোনো প্রকার ব্যাগ বা ভারী বস্তু বহন না করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে এসময় সংসদ ভবন ও এর আশপাশের এলাকায় ড্রোন ওড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।


হাদি হত্যার প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে শাহবাগে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি হত্যার প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে বিক্ষোভ সমাবেশ করে ছাত্র ও সর্বস্তরের জনতা।

শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) ভোর থেকেই শাহবাগ এলাকায় মানুষ জড়ো হতে শুরু করে। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। দুপুরের দিকে সেখানে ছাত্র-জনতার ঢল নামে।

বিক্ষোভের মধ্যেই মুসল্লিদের শাহবাগ মোড়ে জুমার নামাজ আদায় করতে দেখা যায়। নামাজ শেষে মোড়ের নাম পরিবর্তন করে ‘শহীদ ওসমান হাদি চত্বর’ ঘোষণা করা হয়। আন্দোলনের কারণে শাহবাগ মোড়ে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকে।

এদিন বিকেল ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সভাপতি (ভিপি) সাদিক কায়েমের ঘোষণায় শাহবাগে শুরু হয় আধিপত্যবাদবিরোধী সমাবেশ। মৎস্য ভবনমুখী সড়কে ডাকসু সদস্যরা একটি ট্রাকের ওপর অবস্থান নিয়ে নানা প্রতিবাদী স্লোগান দেন। পাশাপাশি জুলাই ভাস্কর্যের পাদদেশে জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের সদস্যদেরও বিশাল অবস্থান নিতে দেখা গেছে। এসময় আন্দোলনকারীদের ‘আর নয় প্রতিরোধ, এবার হবে প্রতিশোধ’, ‘এক হাদি লোকান্তরে, লক্ষ হাদি ঘরে ঘরে’, ‘এক হাদি লোকান্তরে, লক্ষ হাদি লড়াই করে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।

সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষ অংশ নিয়েছেন। তারা হাদি হত্যার বিচার এবং ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের আহ্বান জানান।

বিক্ষোভকারীদের দাবির মধ্যে রয়েছে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ। তারা ঘোষণা দিয়েছেন, ওসমান হাদির লাশ ঢাকায় পৌঁছানো পর্যন্ত তারা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।

এর আগে জুমার নামাজের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে শহীদ হাদির রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া শেষে শিক্ষার্থীরা মিছিল সহকারে শাহবাগে এসে সমাবেশে যোগ দেন।

গত ১২ ডিসেম্বর রিকশা আরোহী হাদি মোটরসাইকেলে থাকা দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত হন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে ওই দিন রাতেই তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ১৫ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার পর সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা শাহবাগে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে।


শহিদ ওসমান হাদির জানাজা নামাজের সময় পরিবর্তন, স্থান মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির জানাজা নামাজের যে সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল, তাতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটার পরিবর্তে আধাঘন্টা এগিয়ে এনে দুপুর দুইটায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে অনুষ্ঠিত হবে।

শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রেস উইং থেকে বলা হয়, ‘আগামীকাল (শনিবার, ২০ ডিসেম্বর) দুপুর দুইটায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় শহীদ ওসমান হাদির জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

ওসমান হাদির জানাজায় অংশগ্রহণের জন্য বেশ কিছু শর্তও জুড়ে দিয়েছে সরকার। যারা জানাজায় অংশগ্রহণ করবে তারা কোনো ধরনের ভারী ব্যাগ বা ভারী বস্তু বহন না করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এছাড়া, জানাজার সময় সংসদ ভবন ও এর আশপাশের এলাকায় ড্রোন ওড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করেছে সরকার।

উল্লেখ্য, শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা পৌঁনে ছয়টায় ঢাকায় পৌঁছে ওসমান হাদির মরদেহ। বিমানবন্দর থেকে মরদেহ হিমাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। শনিবার জানাজা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কবি কাজী নজরুল ইসলামের পাশে সমাহিত করা হবে বলে জানিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ।


খালেদা জিয়ার শরীরে ছোট একটি চিকিৎসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে : ডা. জাহিদ হোসেন

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন |ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একটি চিকিৎসা প্রক্রিয়া শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।

শুক্রবার বিকেলে এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছে জানিয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেনি।

জাহিদ হোসেন বলেন, ‘২৩ নভেম্বর থেকে টানা প্রায় এক মাস ধরে খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে এবং দেশবাসীর দোয়ায় তার শারীরিক অবস্থা বর্তমানে গত এক মাসের তুলনায় স্থিতিশীল রয়েছে। শুক্রবার খালেদা জিয়ার শরীরে একটি ছোট চিকিৎসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। এটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং তিনি তা ভালোভাবে সহ্য করতে পেরেছেন।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক বলেন, বর্তমানে খালেদা জিয়া ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন। এখানে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) সব ধরনের সুবিধা রয়েছে। সাধারণভাবে বুঝতে চাইলে বলা যায়, তিনি আইসিইউ ব্যবস্থাসম্পন্ন একটি কেবিনে চিকিৎসাধীন।

জাহিদ হোসেন জানান, দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের অধীনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে। এ চিকিৎসা প্রক্রিয়া যেন আল্লাহ অব্যাহত রাখেন, সে জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাওয়া হয়েছে।

এসময় খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটেনি। আজ যে চিকিৎসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে, সেটি সফলভাবে হওয়া প্রমাণ করে যে তার অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে।’


banner close