সিলেটের ওসমানীনগর এলাকার একটি কওমি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করতেন সাইফুল ইসলাম তুহিন। স্থানীয় এক মসজিদের ইমাম মাওলানা সাঈদের সঙ্গে গত বছরের প্রথম দিকে তার পরিচয় হয়। ওই পরিচয়ের সূত্রেই জঙ্গিবাদের ফাঁদে পড়ে যান ২১ বছরের তুহিন। একপর্যায়ে কথিত জিহাদের নামে ঘরও ছাড়েন। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় বান্দরবানের গহিন পাহাড়ের এক জঙ্গি আস্তানায়। প্রায় এক বছর সেখানে থেকে গত মাসে দুই সহযোগীসহ পালিয়ে আসেন তুহিন।
চলতি মাসের ২১ ডিসেম্বর সিলেট থেকে তুহিনকে ও ঢাকা থেকে তার সঙ্গী নাইমকে গ্রেপ্তার করে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে গঠিত ঢাকার কাউন্টার টেররিজম ইউনিট (সিটিটিসি)। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তুহিন জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়া, কথিত হিজরত ও জিহাদ এবং পাহাড়ের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের বিস্তারিত তথ্য জানিয়েছেন।
সিটিটিসির কর্মকর্তারা জানান, তুহিন নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সদস্য। শামীন মাহফুজ নামে এক ব্যক্তি এই সংগঠনের অন্যতম প্রধান উপদেষ্টা। তার নির্দেশেই সংগঠনের শীর্ষনেতারা বিভিন্ন এলাকার তরুণদের কথিত জিহাদের নামে ভুল বুঝিয়ে পাহাড়ে নিয়ে গেছেন। পাহাড়ি এলাকার বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট-কেএনএফের আশ্রয়ে তারা গহিন পাহাড়ে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প তৈরি করেছিল।
ওই দুজনকে গ্রেপ্তারের পর সিটিটিসিপ্রধান মো. আসাদুজ্জামান জানান, নতুন জঙ্গি সংগঠনের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে অনেকেই স্বেচ্ছায় গেলেও আবার অনেককে মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ক্যাম্পে গিয়ে অনেকেই ফিরে আসতে চাইলেও সেখান থেকে বের হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। সাইফুলসহ কয়েকজন পালিয়ে আসার পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে সহযোগীদের বিষয়ে তথ্যানুসন্ধান করা হচ্ছে।
যেভাবে জঙ্গিবাদে জড়ানো হয় তুহিনকে
জিজ্ঞাসাবাদে সাইফুল ইসলাম তুহিন জানান, করোনাকালীন তিনি সিলেটের ওসমানীনগরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে চাকরি করতেন। এ সময় মাওলানা সাঈদ নামে একজনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সাঈদ তাকে বিভিন্ন ধরনের কথা ও দাওয়াতি কাজ করার জন্য বলতেন, জিহাদে যাওয়ার জন্য বলতেন। একসঙ্গে কোরআন-হাদিস নিয়েও আলোচনা করতেন। স্থানীয় সাদিক ও মামুন নামে দুই যুবকও তাদের আলোচনায় যোগ দিতেন।
তুহিন জানান, ২০২১ সালের নভেম্বরে তাকে হিজরতের জন্য ঘর ছাড়ার কথা বলেন মাওলানা সাঈদ। হিজরতের জন্য রাজি হলে তাকে প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র কেনার জন্যও বলা হয়। ওই বছরের ১৪ নভেম্বর তারা ঘর ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। তারা সিলেট থেকে একটি মাইক্রোবাসে করে প্রথমে ঢাকার ফকিরাপুল এলাকায় আসেন। এ সময় তাদের সঙ্গে মিন্টু ও পাভেল নামে আরও দুজন ‘হিজরতকারী’ ছিলেন। পথে জঙ্গি নেতারা নিরাপত্তাজনিত কারণে তাদের দাড়িও ছেঁটে দেন।
তুহিন জানান, ফকিরাপুলে আসার পর তাদের কাছে একটি করে ব্যাগে প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র দেয়া হয়। পরে তারা রাতে শ্যামলী পরিবহনের একটি গাড়িতে বান্দরবানের উদ্দেশে রওনা দেন। গাড়িতে তারা মোট ১০ জন হিজরতকারী ছিলেন। গাড়িতে তুলে দিয়ে জঙ্গি এজেন্টরা চলে যায়। নতুন দুজন দায়িত্ব নিয়ে তাদের সঙ্গে বান্দরবান যান।
পাহাড়ের জঙ্গি ক্যাম্পের উদ্দেশে যাত্রা
সাইফুল ইসলাম তুহিন জানান, বান্দরবানে নামার পর জঙ্গি এজেন্টরা তাদের প্রত্যেককে একটি করে ভুয়া আইডি কার্ড দেন। সেই কার্ডে তার নাম ছিল বকুল। পাহাড়ে যাওয়ার সময় সেনাবাহিনী ও বিজিবির চেকপোস্টে সেই আইডি কার্ড দেখাতে বলা হয়। এরপর দুটি চান্দের গাড়ির মাধ্যমে তারা রওনা দেন থানচির উদ্দেশে। গাড়িতে একজন করে কেএনএফ প্রতিনিধি ছিলেন বলেও জানান তুহিন।
তুহিনের ভাষ্য, থানচি থেকে চান্দের গাড়িতে আরও দুই ঘণ্টা যাওয়ার পর গাড়ি থামে। তখন দুই গাড়ির সবাইকে একটি বাঁশের ঘরে উঠানো হয়। সেখান থেকে দুজন গাইড তাদের ১৬ জনকে নিয়ে হেঁটে রওনা হন। বড় পাহাড়, জঙ্গল, ঝিরিপথ, গিরিখাদ দিয়ে হেঁটে ৫-৬ ঘণ্টা পর রাত ১২টার সময় সামরিক পোশাক পরা লোকজন তাদের গ্রহণ করেন। সেখানে বাঁশের তৈরি একটি ঘরে এক সপ্তাহ অবস্থান করেন তারা। তাদের প্রত্যেকের পৃথক পৃথক নাম দেয়া হয়।
তুহিন জানান, সেখানে তারা হিজরত করা মোট ৩০ জন ছিলেন। তাদের দিয়ে প্রথম দিকে বাঁশ কাটা, রান্না করা, লাকড়ি আনা, পাশের একটা পাহাড় থেকে চাল-ডাল আনানো হতো। যেখান থেকে চাল-ডাল আনা হতো সেটি ছিল কেএনএফের ক্যাম্প। সেখানে প্রায় ৩০০ জন কেএনএফ সদস্য ছিল। তাদের কেউ কেউ সামরিক পোশাকে আবার কেউ সাধারণ পোশাক পরা ছিল। প্রায় প্রত্যেকের কাছেই ছিল আগ্নেয়াস্ত্র।
‘আমরা যে ক্যাম্পে থাকতাম সেটির নাম ছিল কেটিসি ক্যাম্প। কেটিসি ক্যাম্পে আমরা প্রায় দুই মাস ছিলাম। সেখানে সকালে ক্যাম্পের সামরিক পোশাক পরিহিত লোকজন পিটি-প্যারেড করাতেন। আমাদের ক্যাম্প কমান্ডারের নাম ছিল কারসে। পরে ছবি দেখে জানতে পারি তার নাম শিব্বির আহমেদ, বাড়ি সিলেট জেলায়। আমাদের ক্যাম্পের আমিরের নাম ছিল আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ ওরফে আমির সাহেব। তবে সেখানে স্যার ওরফে শামীন মাহফুজই প্রধান। ক্যাম্পের আমির, কমান্ডার সবাই তার নির্দেশ মতো চলতেন। তিনি আলাদা ঘরে থাকতেন। তার ঘরটি অস্ত্রধারীরা পাহারা দিত।’- বলেন সাইফুল ইসলাম তুহিন।
মিজোরামেও গিয়েছিলেন তারা
তুহিন জানান, তারা একদিন দাওয়াতি কার্যক্রমের নামে পাহাড়ি প্রশিক্ষণ নিয়ে আমিরের সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক করেন। পরে ক্যাম্পের আমির আনিসুর রহমান তাদের স্যারের (শামীন মাহফুজ) কাছে নিয়ে যান। স্যার তাদের বলেন, এখন তোমরা থাক। ২০২৩ সাল পর্যন্ত কেএনএফের সঙ্গে আমাদের চুক্তি আছে। আমাদের বুঝিয়ে মিজোরাম যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে বলে। প্রতিদিনই সেখানে জিহাদের গুরুত্ব ও গাজওয়াতুল হিন্দ নিয়ে বয়ান হতো। একজন ডা. শাকের বিন ওয়ালীও ছিলেন কিছুদিন। তিনি কেটিসি ক্যাম্পের সদস্যদের কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসা দিতেন।
তুহিনের ভাষ্য, একদিন কেএনএফের দুই শতাধিক সদস্য তাদের এসে মিজোরামে যাওয়ার জন্য তৈরি হতে বলেন। এশার নামাজের পর সবাই মিজোরামের উদ্দেশে হেঁটে রওনা হন। একটানা ২৪ ঘণ্টা পাহাড়ি পথ, ঝিরিপথ, গিরিপথ দিয়ে হাঁটেন। ৪-৫ দিন হাঁটার পর মিজোরামে ঢোকেন তারা। মিজোরাম ঢুকে একটি জঙ্গলে সপ্তাহখানেক অবস্থান করেন। একদিন কেএনএফ কমান্ডার সাংরেম এসে বলেন, বিএসএফ তাদের ঢুকতে দিচ্ছে না। পরে একই পথে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। রেংতলাং নামে একটি পাহাড়ে তারা নতুন ক্যাম্প তৈরি করেন।
প্রতিবাদ করায় নির্যাতন
তুহিন জানিয়েছেন, তখন রমজান মাস ছিল। সে সময় আমির আনিসুর রহমানের সঙ্গে সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে আবারও ঝগড়া হয়। তারা চারজন পাহাড় থেকে চলে আসার সিদ্ধান্ত নিলে তাদের আটক করে হাত-পা, চোখ বেঁধে একটা ঘরে বেঁধে রাখা হয়। পাঁচ-ছয় দিন নির্যাতনের পর তাদের হাত-পা খুলে দেয়া হয়। এ সময় একদিন পাহাড়ি আরেকটি সংগঠন জেএসএস রেংতেলাং ক্যাম্পে আক্রমণ করে। সারা রাত গোলাগুলি চলে। এতে ডা. আহমাদ নামে একজন নিহত হন। পরদিন গোলাগুলি থামলে ক্যাম্পের পাশেই তাকে কবর দেয়া হয়।
রেংতলাং ক্যাম্প থেকে সিপ্পি পাহাড়ে, আবারও নির্যাতন
তুহিন জানান, গোলাগুলির একদিন পর ক্যাম্প কমান্ডার কারসে ওই পাহাড় ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তারা সবাই দুই দিন হাঁটার পর সিপ্পি পাহাড়ে যান। সেখানে গিয়ে নতুন করে ঘর তৈরি করে ক্যাম্প বানানো হয়। ওই ক্যাম্পের নাম দেয়া হয় সিপ্পি ক্যাম্প।
তুহিনের ভাষ্য, সিপ্পি ক্যাম্প থেকেই তারা পালানোর পরিকল্পনা করেন। কোরবানির ঈদের দুই-এক দিন আগে তারা চারজন ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে যান। মাগরিবের পর একটা পাহাড়ে ওঠেন। সারা রাত বৃষ্টিতে ভিজে পাহাড়ে অবস্থান করেন। ফজরের নামাজ শেষে হাঁটতে হাঁটতে রনিংপাড়ায় গিয়ে পৌঁছান। রনিংপাড়া কেএনএফ সদস্যদের গ্রাম এটা তারা জানতেন না। পাড়ার লোকজন তাদের আটক করে কেএনএফ ক্যাম্প কমান্ডারকে খবর দেয়। কেএনএফের ক্যাম্প কমান্ডার সাংরেমসহ কয়েকজন এসে তাদের হাত-পা বেঁধে ক্যাম্পে নিয়ে যান। পরে সিপ্পি পাহাড়ের আমির আনিসুর রহমানের হাতে তুলে দেয়। সেখানে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তাদের চারজনকে চারটি ইনজেকশন দিয়ে দেন। বেধড়ক মারধর করা হয় তাদের। পালিয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে তারা আত্মসমর্পণ করার কথা স্বীকার করেন। এ সময় কারসে ওরফে শিব্বির, পাভেলসহ আরও কয়েকজন রাতে মারধর করেন। পরদিন সকালবেলা ইসলামি নিয়মের অংশ হিসেবে ৪০টি করে বেত্রাঘাত করা হয়। পরে আমিরের সিদ্ধান্তে তাদের পরিমিত খাবার-পানি আর কাজের বাইরে বেঁধে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়।
‘আমিরের নির্দেশে ঈদের দিনও আমাদের বেঁধে রেখে পরিমিত খাবার দেয়া হয়। যতক্ষণ কাজ থাকত ততক্ষণ হাত-পা খুলে দিত। কাজ শেষে হাত-পা বেঁধে রাখত। এভাবে প্রায় তিন মাস ছিলাম। অক্টোবরের প্রথম দিকে সিপ্পি পাহাড়ের ওপর দিয়ে হেলিকপ্টার চক্কর দিতে দেখি। কেএনএফের কমান্ডার সাংরেম বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেকোনো মুহূর্তে ক্যাম্পে হামলা করতে পারে। এখান থেকে চলে যেতে হতে পারে।’ বলেন তুহিন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান
তুহিন জানান, একদিন ক্যাম্প কমান্ডার রাত ১টার সময় সবাইকে তাৎক্ষণিক রওনা দিতে বলেন। সারা রাত হেঁটে দিনের বেলা ১টা জঙ্গলের মধ্যে রেখে কেএনএফ সদস্যরা চলে যায়। তিন দিন পর আসার কথা বলেও তারা আসেনি। সেখানে তারা মোট ৫৩ জন ছিলেন। আমির ছিলেন কিএনএফ সদস্যদের সঙ্গে। এ সময় ক্যাম্প কমান্ডার কারসে আবার সিপ্পি পাহাড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সিপ্পি পাহাড়ে পৌঁছার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান শুরু হয়। ক্যাম্প কমান্ডার কারসে বলেন, ‘যাদের অস্ত্র আছে ও সাহস আছে তারা একদিকে হন। আর অস্ত্রহীন ও দুর্বলরা একদিকে থাকেন। তখন অস্ত্রধারী হয় ২১ জন। ক্যাম্প কমান্ডার বলে ৩২ জনকে অন্যদিকে যেতে বলে ২১ জনকে নিয়ে আরেক দিকে চলে যান।’
অবশেষে পালিয়ে আসতে সক্ষম
তুহিনের ভাষ্য, গোলাগুলি কমে এলে তারা ৩২ জন পাহাড় থেকে নেমে একটি জঙ্গলে অবস্থান করেন। তারা আরাকানের দিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তারপংখাল দিয়ে যাওয়ার সময় মাথার ওপর দিয়ে হেলিকপ্টার উড়তে দেখেন। সেখান থেকে হাঁটতে হাঁটতে কিছুদূর যাওয়ার পর কয়েকটা ঘরের দেখা পান। সেখানে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে শুরু করে। এ সময় তারা সবাই দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। তিনজন একটি পাহাড়ে যাওয়ার পর আবারও কেএনএফ সদস্যদের সঙ্গে দেখা হয়। কেএনএফ সদস্যরা তাদের ক্যাম্পে থাকতে বলে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়লে তাদেরও ক্ষতি হবে জানিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে যাওয়ার জন্য বলে। প্রায় দেড় মাস পর গত ২৫ নভেম্বর কেএনএফ সদস্যরা তাদের সমতলে পাঠিয়ে দেয়।
সাইফুল জানান, তিনি পাহাড় থেকে সমতলে এসে চট্টগ্রামের লালখান বাজারের এক হুজুরের কাছে যান। তার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে সিলেটে যান। কিন্তু পুলিশের ভয়ে গ্রামের বাড়ি না গিয়ে আত্মীয়স্বজনের বাসায় থাকা শুরু করেন। সেখান থেকেই ঢাকার পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, সরকার দেশীয় শিল্পের বিকাশে কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি চলমান ব্র্যান্ড সংকট থেকে উত্তোরণের জন্য এটলাসের নিজস্ব ব্র্যান্ড ‘এটলাস ইভি’ ইলেকট্রিক বাইক উৎপাদন ও বিপণনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। বুধবার সকালে টঙ্গীর এটলাস বাংলাদেশ লিমিটেড কারখানায় নিজস্ব ব্র্যান্ড ‘এটলাস ইভি’ নামক ইলেকট্রনিক মোটরসাইকেল বাজারজাতকরণ কার্যক্রম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্তিত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
শিল্প উপদেষ্টা আরও বলেন, বর্তমান সরকার পরিবেশবান্ধব যানবাহন ব্যবস্থা প্রবর্তনে ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটলাস বাংলাদেশের মতো একটি বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানের এই উদ্যোগটি ইলেকট্রিক ভেহিকেল সংক্রান্ত জাতীয় নীতি বাস্তবায়নে একটি তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি কেবল আমাদের কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করবে না জীবাশ্ম জ্বালনির পেছনে ব্যয় হওয়া মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ওবায়দুর রহমান, বাংলাদেশ ইস্পাত প্রকৌশল করপোরেশনের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল আলমসহ এটলাস বাংলাদেশ লিমিটেডের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ডিলাররা। উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে উপদেষ্টা কারখানা সার্বিক কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।
মুক্তিযোদ্ধা কোটায় জালিয়াতি করে ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি পাওয়া চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. কামাল হোসেনের প্রকৃত বাবা-মা নিশ্চিতে ডিএনএ টেস্টের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গতকাল মঙ্গলবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক নিয়মিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেন সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন।
গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর তার বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করেন দুদকের সম্মিলিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এর উপসহকারী পরিচালক মো. মনজুরুল ইসলাম মিন্টু।
অভিযুক্ত কামাল হোসেন এর আগেও নওগাঁর আত্রাই উপজেলার ইউএনও এবং মাগুরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সিনিয়র সহকারী কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও চাকরি লাভসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগের উদ্দেশে মো. কামাল হোসেন তার জন্মদাতা পিতা-মাতা মো. আবুল কাশেম ও মোছা. হাবীয়া খাতুনের পরিবর্তে আপন চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আহসান হাবীব ও চাচী মোছা. সানোয়ারা খাতুনকে পিতা-মাতা হিসেবে চিত্রিত করে জালিয়াতি করেছেন। এই কৌশলের মাধ্যমে তিনি ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের কোটায় প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি লাভ করেন।
দুদক জানায়, মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামি মো. কামাল হোসেনসহ তার প্রকৃত পিতা মাতা ও তার চাচা-চাচীর ডিএনএ টেস্ট করার জন্য কমিশনের কাছে আবেদন দাখিল করেন। কমিশন তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের প্রেক্ষিতে আসামি মো. কামাল হোসেনসহ তার প্রকৃত পিতা মাতা ও তার চাচা-চাচীর ডিএনএ টেস্ট করার জন্য অনুমোদন দিয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে আসামি মো. কামাল হোসেনসহ তার প্রকৃত পিতা মাতা ও তার চাচা-চাচীর ডিএনএ টেস্ট করবেন।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটারদের ঠিকানা পরিবর্তনের শেষ সময়সীমা ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী, ভোটার তালিকায় ঠিকানা পরিবর্তন বা স্থানান্তরের আবেদন করতে হবে আগামী ১০ নভেম্বরের মধ্যে।
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জারি করা অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা চূড়ান্তকরণের আগে যেসব ভোটার তাদের আবাসস্থল পরিবর্তন করেছেন, তারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নতুন ঠিকানায় ভোটার স্থানান্তরের আবেদন করতে পারবেন।
ইসির আদেশ অনুযায়ী, রেজিস্ট্রেশন কর্মকর্তারা ১৭ নভেম্বরের মধ্যে দাখিলকৃত সব আবেদন যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন বা বাতিলের সিদ্ধান্ত দেবেন।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও স্থানান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই তফসিল ঘোষণা হতে পারে। নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ধরা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, “ভোটার তালিকার সঠিকতা বজায় রাখা নির্বাচনের অন্যতম পূর্বশর্ত। তাই স্থানান্তর ও সংশোধন প্রক্রিয়া শেষ না করে আমরা তফসিল ঘোষণা করব না।”
উল্লেখ্য, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ইতোমধ্যে প্রশাসনিক প্রস্তুতি শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। রাজনৈতিক দলগুলোকেও প্রার্থী বাছাই ও জোট গঠনের প্রাথমিক কাজ শুরু করতে দেখা যাচ্ছে।
হাটহাজারীতে জেলা প্রশাসনের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে প্রায় দশ কোটি টাকার সরকারী সম্পদ পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) সকালের দিকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (ট্রেজারী শাখা, ফ্রন্ট ডেস্ক ও ই-সেবা কেন্দ্র)মো.ইসরাফিল জাহান এর নেতৃত্বে হাটহাজারী পৌরসভার কাচারি সড়কে পৌরসভা কার্যালয়ের সামনে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
অভিযান সূত্রে জানা যায়,দীর্ঘ বছর ধরে একটি ভূমিদস্যু চক্র চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের (ছয় শতক) এসব সম্পদ অবৈধভাবে দখল করে দাপটের সাথে স্থাপনা নির্মাণ করে তাতে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলো। ঘটনারদিন সকালে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে জেলা পরিষদের লোকজন পর্যাপ্ত পরিমাণ জেলা ও হাটহাজারী মডেল থানা পুলিশ নিয়ে সংশ্লিষ্টরা ঘটনাস্থলে আসলে প্রথমে কয়েকজন দোকানদারের বাঁধার মুখে পড়েন। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসার পর উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। এসময় অভিযান পরিচালনা করে অবৈধভাবে নির্মিতব্য স্থাপনা ভেঁঙ্গে গুড়িয়ে দিয়ে টিনের ঘেরা তৈরী করে তাতে জেরা পরিষদের সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেয়া হয়। এ অভিযানের সরকারী প্রায় দশ কোটি টাকার সম্পদ পুনরুদ্ধার হয়েছে বলেও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। তবে কিছু ব্যবসায়ীরা প্রশাসন তাদের গায়ের জোরে আইন বর্হিভুতভাবে তাদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন।
অভিযান পরিচালনার সময় চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সহকারী ইঞ্জিনিয়ার, হাটহাজারী উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহেদ আরমান,মডেল থানার ওসি মনজুর কাদের ভুঁইয়া, সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যগণ এবং সরকারি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
জানতে চাইলে অভিযানে নেতৃত্বদানকারী চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (ট্রেজারী শাখা, ফ্রন্ট ডেস্ক ও ই-সেবা কেন্দ্র)মো.ইসরাফিল জাহান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে এ প্রতিবেদককে জানান, "সরকারি জায়গা কেউ দখল করে রাখতে পারবেনা, অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
আজ সন্ধ্যায় আকাশে দেখা যাবে বছরের অন্যতম আকর্ষণীয় পূর্ণচন্দ্র ‘বিভার মুন’ বা ‘বিভার সুপারমুন’। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টা ১৯ মিনিটে পূর্ণতা পাবে এ চাঁদ।
নভেম্বর মাসের এই পূর্ণিমা ‘বিভার মুন’ নামে পরিচিত। নাসা জানিয়েছে, এটি ২০২৫ সালের দ্বিতীয় সুপারমুন। এর আগে অক্টোবর মাসে দেখা গিয়েছিল ‘হারভেস্ট সুপারমুন’।
আজকের সুপারমুন সাধারণের তুলনায় বড় ও উজ্জ্বল দেখাবে। এর কারণ হলো চাঁদ পৃথিবীর তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে কাছাকাছি অবস্থানে থাকবে— প্রায় ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৯৮০ কিলোমিটার দূরত্বে।
নাসা জানিয়েছে, আজ চাঁদ বিকেল ৫টা ৩১ মিনিটে উঠবে এবং ঠিক সূর্যাস্তের পরই পূর্ব আকাশে এর সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে। দূরবীন বা টেলিস্কোপ ব্যবহার করলে চাঁদকে আরও স্পষ্টভাবে দেখা সম্ভব।
আজকের পূর্ণিমার সঙ্গে আকাশে আরও কিছু নাক্ষত্রিক সৌন্দর্যও দেখা যাবে। এর মধ্যে রয়েছে প্লাইয়েডস এবং হাইডস নক্ষত্র ক্লাস্টার, ওরিয়ন নক্ষত্রপুঞ্জ এবং বৃহস্পতি গ্রহ।
‘বিভার মুন’ নামের উৎপত্তি নেটিভ আমেরিকান ও ইউরোপীয় ঐতিহ্য থেকে। নভেম্বর মাসে বীবররা শীতের প্রস্তুতিতে বাঁধ মজবুত করত এবং খাবার মজুত করত। তাই এই সময়ের পূর্ণিমাকে তাদের নামে অভিহিত করা হয়। কিছু সংস্কৃতিতে এটি ‘ফ্রস্ট মুন’, ‘ফ্রিজিং মুন’ বা ‘ট্রেডিং মুন’ নামেও পরিচিত।
নাসা জানিয়েছে, যদি আজ আকাশ মেঘমুক্ত থাকে, তবে বাংলাদেশের যেকোনো স্থান থেকে এই উজ্জ্বল এবং পূর্ণ সৌন্দর্যের বিভার সুপারমুন দেখা সম্ভব হবে।
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফেরাতে আপিলের টানা ৮ম দিনের শুনানি শুরু হয়েছে।
আজ (বুধবার) সকাল ৯টা ৫০ মিনিট থেকে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ৭ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চে এ শুনানি শুরু হয়।
আদালতে বিএনপির পক্ষে শুনানি করছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করবেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
এর আগে গতকাল, ২ নভেম্বর ও ২৯, ২৮,২৩, ২২ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফেরাতে আপিলের শুনানি হয়েছে। ২১ অক্টোবর এই শুনানি শুরু হয়।
তার আগে গত ২৭ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে করা আবেদনের শুনানি শেষে আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়।
এরপর ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ ৫ জন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার আপিল করেন।
সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী জাতীয় সংসদে গৃহীত হয় ১৯৯৬ সালে। এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৯৯৮ সালে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ তিনজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন। ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগ এ রিট খারিজ করেন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করা হয়।
এই সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম সলিমউল্লাহসহ অন্যরা ১৯৯৮ সালে হাইকোর্টে রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট রায় দেন।
এ রায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালে আপিল করে রিট আবেদনকারীপক্ষ। এই আপিল মঞ্জুর করে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ২০১১ সালের ১০ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন।
ঘোষিত রায়ের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয়ে আনা পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হয়। ২০১১ সালের ৩ জুলাই এ–সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়।
৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি। অন্য চারজন হলেন, তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজউদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান।
আপিল বিভাগের ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ১৬ অক্টোবর একটি আবেদন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ছাড়া রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে গত বছরের ২৩ অক্টোবর আরেকটি আবেদন করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
পরবর্তীতে নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে গত বছর একটি আবেদন করেন।
সারা দেশে ৬টি অঞ্চলের ওপর দিয়ে সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এসব এলাকার নৌবন্দরকে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
বুধবার (৫ নভেম্বর) দুপুর ১টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য দেওয়া আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার অঞ্চলের উপর দিয়ে দক্ষিণ/দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০-৮০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ অস্থায়ীভাবে বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নৌবন্দরকে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে, পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন মিয়ানমার উপকূলে অবস্থানরত লঘুচাপটি আরো ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়ে উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের উপকূলে রয়েছে। যে কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকতে দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-সহ তিনটি দলকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অন্য দুটি দল হলো— বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) ও বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টি।
মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ের সামনে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চত করেন।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানান, কমিশন মনে করেছে— এই তিনটি দল রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পেতে পারে এবং তাদের ব্যাপারে বুধবার আমরা প্রত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেব। আগামী ১২ নভেম্বরের মধ্যে দাবি-আপত্তির সময়সীমা নির্ধারণ করে দিচ্ছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যে তথ্য পাওয়া যাবে, তা পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তি করে চূড়ান্তভাবে সনদ দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, ইসির শর্ত অনুযায়ী এই তিনটি দলই কোয়ালিফাই করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা ১৪৩টি আবেদন পেয়েছিলাম। এর মধ্যে প্রাথমিক বাছাইয়ের পর ২২টি দলের ব্যাপারে মাঠ পর্যায়ে তদন্তের জন্য পাঠিয়েছিলাম। তদন্ত থেকে যে তথ্য পাওয়া গেছে, সে তথ্যের ধারাবাহিকতায় আমরা সাতটা রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের কথা বলেছি যে, না তারা কোয়ালিফাই করে না। একটা রাজনৈতিক দলের বিষয়ে... বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি তাদের ব্যাপারে হাইকোর্টে দায়ের করা একটা অবেদনের রায় পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আর বাকি যেগুলো আছে, সাতটা দলের ক্ষেত্রে আমরা বলেছি যে, না তারা কোয়ালিফাই করেন না, মিনিমাম রিকোয়ারমেন্ট ফুলফিল করেন না। এর ধারাবাহিকতা পুনঃতদন্ত করে কমিশন যে সিদ্ধান্তে এসেছে, সেটা আমি বলছি যে, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতায় এবং অংশগ্রহণে অতীত নির্বাচন সংক্রান্ত ধারাবাহিকতায় তিনটা দল প্রাথমিকভাবে বিবেচিত হয়েছিল জাতীয় জনতা পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (শাহ জাহান সিরাজ) এবং বাংলাদেশ জাতীয় লীগ।’
তিনি বলেন, ‘কিন্তু পরবর্তী অধিকতর যাচাই বাছাইয়ে লক্ষ্য করা গেছে যে, তাদের কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা নাই। সেজন্য তিনটাকেও বাতিল করা হচ্ছে। আর যে দলগুলো ছিল তার মধ্যে থেকে আম জনতার দল, বাংলাদেশ জাস্টিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি, ভাষানী জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ, জনতার দল, মৌলিক বাংলা, জনতার পার্টি, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি এই আটটা দলের সঠিকতা না পাওয়ার জন্য নামঞ্জুর করা হয়েছে।’
আখতার আহমেদ বলেন, ‘আমরা তিনটা দলের সঠিকতা পেয়েছি এবং সে তিনটা দল হচ্ছে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টি এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এই তিনটা দলের ব্যাপারে নতুন প্রার্থিত নিবন্ধনের বিষয়ে কমিশন মনে করেছে যে এই তিনটা দল রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পেতে পারে। তাদের ব্যাপারে আগামীকাল পত্রিকায় আমরা বিজ্ঞপ্তি দেব অভিমতের জন্য। এবং ১২ তারিখের ভেতরে আমরা এই অভিমতের সময়সীমা নির্ধারণ করে দিচ্ছি। এই নির্ধারিত সময় সময়ের মধ্যে যে তথ্য পাওয়া যাবে সেটা পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর প্রাথমিকভাবে এনসিপি ও বাংলাদেশ জাতীয় লীগকে নিবন্ধনযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করেছিল ইসি, তবে জাতীয় লীগ নিবন্ধন পাচ্ছে না। জাতীয় লীগের ধারাবাহিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে ইসি দলটি নিয়ে আবার তদন্ত করে।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, পুনঃ তদন্ত করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের, ভোটে অংশগ্রহণ ও অতীত নির্বাচনসংক্রান্ত কার্যক্রমে জাতীয় লীগের ধারাবাহিকতা পাওয়া যায়নি।
কোনো রাজনৈতিক দলকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে অংশ নিতে হলে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হতে হয়। এখন ইসিতে নিবন্ধিত দল ৫৩টি। আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত আছে।
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দল নিবন্ধনের আবেদন আহ্বান করার পর ১৪৩টি দল ইসিতে আবেদন করেছিল। প্রাথমিক বাছাইয়ে বাদ পড়ে ১২১টি আবেদন। ২২টি দলের বিষয়ে সরেজমিন তদন্ত করে ইসি। শেষ পর্যন্ত তিনটি দল নিবন্ধন পেতে যাচ্ছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ নেজামে ইসলামী পার্টিকে আদালত নিবন্ধন দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়ায় আদেশের কপির অপেক্ষায় রয়েছে ইসি।
প্রতীক হিসেবে পেল শাপলা কলি, হ্যান্ডশেক ও কাঁচি
এদিকে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন পেতে যাওয়া নতুন তিনটি রাজনৈতিক দল ইসির প্রতীক পেয়েছে। দাবি-আপত্তি শেষে দলগুলো চূড়ান্ত নিবন্ধন পেলে এই প্রতীকগুলো দলীয় প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে।
মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টিকে হ্যান্ডশেক, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলকে (মার্কসবাদী) কাঁচি এবং জাতীয় নাগরিক পার্টিকে শাপলা কলি প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের বিষয়ে কারও কোনো আপত্তি থাকলে প্রয়োজনীয় দলিলসহ এর কারণ উল্লেখপূর্বক ১২ নভেম্বরের মধ্যে সচিবের নিকট লিখিতভাবে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৩৭টি আসনে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে বিএনপি। তালিকা ঘোষণা অনুযায়ী ঠাকুরগাঁও-১ আসন থেকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
দলীয় প্রার্থী মনোনীত হওয়ার পরে এবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার দুপুর ১টায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে বিএনপি মহাসচিব লিখেন, এই নির্বাচন হয়তো আমার শেষ নির্বাচন।
পোস্টে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও লিখেছেন, মহান আল্লাহর রহমতে বিএনপি আমাকে ঠাকুরগাঁও ১ আসনে মনোনীত করেছে! আমি বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ সকল নেতা ও নেত্রীকে আমার কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ জানাই। দলের সকল কর্মীকে জানাই আমার আন্তরিক ধন্যবাদ আজীবন আমার সঙ্গে থাকার জন্য!
তিনি লিখেন, আমরা যারা সারাজীবন রাজনীতি করেছি, জেলে গেছি, আমাদের নিজেদের একটা গল্প থাকে! অনেকেই তা জানে না! আমি যখন ১৯৮৭ তে সিদ্ধান্ত নেই, আবার রাজনীতিতে ফিরব, আমার মেয়ে দুটি একদমই ছোট ছিল! ঢাকায় পড়ত। আমার স্ত্রীর বয়স অনেক কম ছিল! সে প্রথমে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল! বুঝতে পারছিল কী ভয়াবহ অনিশ্চিত জীবনে পা দিতে যাচ্ছে!
পোস্টে মির্জা ফখরুল আরো লিখেন, আমার মেয়ে দুটির হাত ধরে সেই নিয়ে গেছে স্কুলে, ডাক্তারের কাছে! মনে পড়ে আমার বড় মেয়ের একটা অপারেশন হবে, আমি সারারাত গাড়িতে ছিলাম, ঢাকার পথে! যাতে মেয়ের পাশে থাকতে পারি! গল্পগুলো অন্য কোনও দিন বলব যদি আল্লাহ চান! এ রকম গল্প আমাদের হাজার-হাজার নেতাকর্মীর আছে!
পরিশেষে তিনি লিখেন, আপনারা সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন, আমাদের দলের প্রতিটি নেতাকর্মীর জন্য দোয়া করবেন! আমরা সবাই মিলে আপনাদের পাশে থাকব এবং কাজ করব ইনশাআল্লাহ! বিএনপির সেই যোগ্যতা আছে দেশকে মর্যাদার সঙ্গে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার! ইনশাআল্লাহ! আপনারা পাশে থাকেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ৫ আগস্টের পর থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে কাজ চলছে। সম্প্রতি চট্টগ্রামের রাউজানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে ১১টি অস্ত্র উদ্ধার করেছে এবং বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার হয়েছে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠক শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দেড় ঘণ্টাব্যাপী চলা বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র সচিবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিভিন্ন বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশ নেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজনের জন্য যা যা করা প্রয়োজন তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সব ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ কমিশন গঠন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, পুলিশ কমিশন হয়ে যাবে। এটি হওয়ার পর এর সুযোগ সুবিধা বিস্তারিত জানানো হবে।
বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি তদন্তে কাজ করছেন। তিনি (স্বরাষ্ট্র সচিব) ৪-৫টি দেশে চিঠি দিয়েছেন। অলরেডি দুয়েকটি দেশের বিশেষজ্ঞরা এসে তদন্ত করেছে এবং দেশের তদন্তকারী দলও তদন্ত করছে। তদন্ত শেষ হলে রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে।
তিনি বলেন, বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ থেকে হাতিয়ার বা অস্ত্র চুরি হয়েছে কিনা, এ বিষয়ে আমরা তদন্তের পর জানতে পারব। এখনই তো বলা যাচ্ছে না যে চুরি হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নিজেও এ ব্যাপারে তদন্ত করছেন।
আরেক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে পুলিশের প্রতি আমার নির্দেশনা হলো নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর। কেউ নির্বাচনে পক্ষপাতিত্ব করলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।
আসন্ন নির্বাচনে বিগত সরকারের আমলে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিগত ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে যারা দায়িত্ব পালন করেছে, তাদের বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আমরা চেঞ্জ করব।
আরেক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, যেসব ফ্যাসিস্ট পুলিশ অফিসাররা ৫ আগস্টের পর পালিয়ে গেছে, তারা এখন অপরাধী হিসেবে গণ্য হবে, তাদের ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে আপনাদের (মিডিয়া) সহযোগিতা দরকার।
অবশেষে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনের (আরপিও) অধ্যাদেশ জারি করল সরকার। এতে জোট করলেও নিজ দলের প্রতীকে ভোট, ফেরারি আসামি ভোটে অযোগ্য, মিথ্যা তথ্য দিলে এমপি পদ বাতিল এমন এক গুচ্ছ নতুন বিধান যুক্ত করা হয়েছে। থাকছে ‘না’ ভোটও।
নির্বাচন কমিশনের এক অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে এসব তথ্য জানানো হয়।
অনুচ্ছেদ-২ সংশোধন করে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সংজ্ঞায় সেনা বাহিনী, নৌ বাহিনী ও বিমান বাহিনী রাখা হয়েছে। এতে সেনা মোতায়েনে নির্বাচন কমিশনকে আর আগের মতো বেগ পেতে হবে না। ২০০১ ও ২০০৮ সালের ভোটে এমন বিধান ছিল।
অনুচ্ছেদ-৮ সংশোধন করে ভোটকেন্দ্র (পোলিং স্টেশন) প্রস্তুতের ক্ষেত্রে জেলা নির্বাচন অফিসারের হাতে রাখা হয়েছে। আগে এ ক্ষমতা ডিসির হাতে ছিল।
অনুচ্ছেদ ৯-এর সংশোধনীতে বলা হয়েছে, রিটার্নিং অফিসার কোনো ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা বরখাস্ত করতে পারবেন, তবে ইসিকে অবহিত করতে হবে।
অনুচ্ছেদ ১২-তে বলা হয়েছে, কোনো আদালত কর্তৃক ফেরারি বা পলাতক আসামি ঘোষিত হলে সংসদ সদস্য হওয়ার অযোগ্য হবে। তিনি আর প্রার্থী হতে পারবেন না।
এছাড়া কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বা অন্য কোনো পদে অধিষ্ঠিত থাকলে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য হবেন।
কোনো প্রতিষ্ঠানের কাযনির্বাহী পদকে ‘লাভজনক’ পদের সংজ্ঞাভুক্ত করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের কাযনির্বাহী পদে থেকে নির্বাচন করা যাবে না। হলফনামায় দেশে-বিদেশে আয়ের উৎস এবং সবশেষ বছরের রিটার্ন জমা দিতে হবে। এক্ষেত্রে কেউ মিথ্যা তথ্য দিয়ে নির্বাচিত হলে এবং তা প্রমাণিত হলে এমপি পদও বাতিল করতে পারবে ইসি।
অনুচ্ছেদ ১৩ সংশোধন করে জামানতের পরিমাণ ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে।
অনুচ্ছেদ-১৯-এর সংশোধনীতে ‘না’ ভোটের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। কোনো আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী যদি একজন থাকে, তাহলে ব্যালট পেপারে ‘না’ ভোটের বিধান থাকবে। না ভোট বেশি পড়লে পুনরায় নির্বাচন হবে। ফের একক প্রার্থী থাকলে তিনি নির্বাচিত হবেন।
অনুচ্ছেদ- ২০ এর সংশোধনীতে বলা হয়েছে, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের জোটগতভাবে নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিজ দলের প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে।
অনুচ্ছেদ ২৬ এর সংশোধনীতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের ব্যবহার সংক্রান্ত বিধান বিলুপ্ত করা হয়েছে।
অনুচ্ছেদ-২৭-এ আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিং যোগ করা হয়েছে। প্রবাসী, সরকারি চাকরিজীবী ও দেশের ভেতরে কয়েদিরা এ সুযোগ পাবেন।
অনুচ্ছেদ ৩৬ এ বলা হয়েছে, ভোট গণনার সময় গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত থাকতে পারবেন।
এছাড়াও সমভোট পেলে লটারির পরিবর্তে পুন:ভোট হবে। প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয় ভোটার প্রতি ১০ টাকা, দলের ব্যয় দেখানো, অনুদানের অর্থের হিসাব ওয়েবসাইটে প্রকাশ, উপপুলিশ মহাপরিদর্শক পর্যন্ত বদলিতে ইসির অনুমোদনের বিধান আনা হয়েছে। আবার মিথ্যা তথ্য, অপতথ্য, গুজব ও এআই অপব্যবহার রোধে প্রার্থী ও দলের বিষয়ে অপরাধ বিবেচনা শাস্তির বিধান আনা হয়েছে।
এদিকে নিবন্ধন স্থগিত হলে প্রতীক স্থগিত, অনিয়ম হলে পুরো আসনের ভোট বাতিলে ইসির হাতে ক্ষমতা, আচরণ বিধি প্রতিপালনে ইসি কর্মকর্তাদেরও ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
আচরণবিধি লঙ্ঘনে সর্বোচ্চ ছয় মাসের দণ্ডের পাশাপাশি সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। দলের ক্ষেত্রেও জরিমানার বিধান আনা হয়েছে।
গত ২৩ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশ খসড়ার নীতিগত অনুমোদন করা হয়। এরপর জোটের প্রতীকের সংশ্লিষ্ট ২০ অনুচ্ছেদে সংশোধন নিয়ে বিএনপি আপত্তি তুললেও জামায়াত ও এনসিপি সংশোধন বহাল রাখার দাবি তোলে।
শেষ পর্যন্ত ওই বিধান রেখেই অধ্যাদেশ জারি করা হলো। এর মাধ্যমে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে একাধিক নিবন্ধিত দল জোট করলেও জোট মনোনীত প্রার্থী বড় দলের বা অন্য দলের প্রতীকে ভোট দিতে পারবে না, নিজ দলের প্রতীকে ভোট দিতে হবে।
সংশোধিত আরপিও অধ্যাদেশে এ বিষয়ে বলা হয়েছে, যদি দুই বা ততোধিক নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল যৌথভাবে কোনো প্রার্থী মনোনয়ন দিতে সম্মত হয়, তবে কমিশন উক্ত প্রার্থীর দলীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে তার রাজনৈতিক দলের জন্য সংরক্ষিত প্রতীক বরাদ্দ দিতে পারবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-সহ তিনটি দলকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অন্য দুটি দল হলো— বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) ও বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টি।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ের সামনে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চত করেন।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানান, কমিশন মনে করেছে— এই তিনটি দল রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পেতে পারে এবং তাদের ব্যাপারে বুধবার আমরা প্রত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেব। আগামী ১২ নভেম্বরের মধ্যে দাবি-আপত্তির সময়সীমা নির্ধারণ করে দিচ্ছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যে তথ্য পাওয়া যাবে, তা পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তি করে চূড়ান্তভাবে সনদ দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, ইসির শর্ত অনুযায়ী এই তিনটি দলই কোয়ালিফাই করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা ১৪৩টি আবেদন পেয়েছিলাম। এর মধ্যে প্রাথমিক বাছাইয়ের পর ২২টি দলের ব্যাপারে মাঠ পর্যায়ে তদন্তের জন্য পাঠিয়েছিলাম। তদন্ত থেকে যে তথ্য পাওয়া গেছে, সে তথ্যের ধারাবাহিকতায় আমরা সাতটা রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের কথা বলেছি যে, না তারা কোয়ালিফাই করে না। একটা রাজনৈতিক দলের বিষয়ে... বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি তাদের ব্যাপারে হাইকোর্টে দায়ের করা একটা অবেদনের রায় পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আর বাকি যেগুলো আছে, সাতটা দলের ক্ষেত্রে আমরা বলেছি যে, না তারা কোয়ালিফাই করেন না, মিনিমাম রিকোয়ারমেন্ট ফুলফিল করেন না। এর ধারাবাহিকতা পুনঃতদন্ত করে কমিশন যে সিদ্ধান্তে এসেছে, সেটা আমি বলছি যে, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতায় এবং অংশগ্রহণে অতীত নির্বাচন সংক্রান্ত ধারাবাহিকতায় তিনটা দল প্রাথমিকভাবে বিবেচিত হয়েছিল জাতীয় জনতা পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (শাহ জাহান সিরাজ) এবং বাংলাদেশ জাতীয় লীগ।’
তিনি বলেন, ‘কিন্তু পরবর্তী অধিকতর যাচাই বাছাইয়ে লক্ষ্য করা গেছে যে, তাদের কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা নাই। সেজন্য তিনটাকেও বাতিল করা হচ্ছে। আর যে দলগুলো ছিল তার মধ্যে থেকে আম জনতার দল, বাংলাদেশ জাস্টিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি, ভাষানী জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ, জনতার দল, মৌলিক বাংলা, জনতার পার্টি, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি এই আটটা দলের সঠিকতা না পাওয়ার জন্য নামঞ্জুর করা হয়েছে।’
আখতার আহমেদ বলেন, ‘আমরা তিনটা দলের সঠিকতা পেয়েছি এবং সে তিনটা দল হচ্ছে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টি এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এই তিনটা দলের ব্যাপারে নতুন প্রার্থিত নিবন্ধনের বিষয়ে কমিশন মনে করেছে যে এই তিনটা দল রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পেতে পারে। তাদের ব্যাপারে আগামীকাল পত্রিকায় আমরা বিজ্ঞপ্তি দেব অভিমতের জন্য। এবং ১২ তারিখের ভেতরে আমরা এই অভিমতের সময়সীমা নির্ধারণ করে দিচ্ছি। এই নির্ধারিত সময় সময়ের মধ্যে যে তথ্য পাওয়া যাবে সেটা পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর প্রাথমিকভাবে এনসিপি ও বাংলাদেশ জাতীয় লীগকে নিবন্ধনযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করেছিল ইসি, তবে জাতীয় লীগ নিবন্ধন পাচ্ছে না। জাতীয় লীগের ধারাবাহিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে ইসি দলটি নিয়ে আবার তদন্ত করে।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, পুনঃ তদন্ত করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের, ভোটে অংশগ্রহণ ও অতীত নির্বাচনসংক্রান্ত কার্যক্রমে জাতীয় লীগের ধারাবাহিকতা পাওয়া যায়নি।
কোনো রাজনৈতিক দলকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে অংশ নিতে হলে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হতে হয়। এখন ইসিতে নিবন্ধিত দল ৫৩টি। আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত আছে।
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দল নিবন্ধনের আবেদন আহ্বান করার পর ১৪৩টি দল ইসিতে আবেদন করেছিল। প্রাথমিক বাছাইয়ে বাদ পড়ে ১২১টি আবেদন। ২২টি দলের বিষয়ে সরেজমিন তদন্ত করে ইসি। শেষ পর্যন্ত তিনটি দল নিবন্ধন পেতে যাচ্ছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ নেজামে ইসলামী পার্টিকে আদালত নিবন্ধন দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়ায় আদেশের কপির অপেক্ষায় রয়েছে ইসি।
প্রতীক হিসেবে পেল শাপলা কলি, হ্যান্ডশেক ও কাঁচি
এদিকে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন পেতে যাওয়া নতুন তিনটি রাজনৈতিক দল ইসির প্রতীক পেয়েছে। দাবি-আপত্তি শেষে দলগুলো চূড়ান্ত নিবন্ধন পেলে এই প্রতীকগুলো দলীয় প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে।
মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টিকে হ্যান্ডশেক, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলকে (মার্কসবাদী) কাঁচি এবং জাতীয় নাগরিক পার্টিকে শাপলা কলি প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের বিষয়ে কারও কোনো আপত্তি থাকলে প্রয়োজনীয় দলিলসহ এর কারণ উল্লেখপূর্বক ১২ নভেম্বরের মধ্যে সচিবের নিকট লিখিতভাবে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, জাতিসংঘের বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলন (কনফারেন্স অব পার্টিজ-কপ)-এ বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব শুধু পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সীমাবদ্ধ না রেখে মহিলা ও শিশু, কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাসহ সংশ্লিষ্টদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে হবে।
মঙ্গলবার সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন (কপ-৩০) অংশীজনের অংশগ্রহণ’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কর্মশালার আয়োজন করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা প্রায়শই শুধু পরিবেশের ক্ষতির দিকেই সীমাবদ্ধ থাকে। অথচ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতও এই পরিবর্তনের কারণে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন। কার্বন নিঃসরণে ধনী দেশগুলোর দায় রয়েছে প্রায় ৮০ শতাংশ। অথচ ভুক্তভোগীর তালিকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর।
উপদেষ্টা বলেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে শুধু মানুষ নয়, প্রাণিকুলও বিপদে পড়ে। কৃষিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের কারণে মাছের উৎপাদন কমে যাচ্ছে, যা খাদ্যনিরাপত্তার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।
তিনি বলেন, ইতঃপূর্বে ধনী দেশগুলো কার্বন নিঃসরণ কমানোর দেওয়া কথা রাখেনি। তারা নেট জিরো- এর কথা বলছে। তারা নেট জিরো নাম আনছে অথচ জিরোর আগে কীভাবে হয় নেট হয়? ধনী রাষ্ট্রগুলো কার্বন নিঃসরণ না কমিয়ে অথবা যেমন আছে সেভাবে রেখে গাছ লাগিয়ে বা টেকনোলজি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যে দেশীয়ভাবে বা অঞ্চলভিত্তিক এবং আন্তর্জাতিকভাবে কাজ করে যেতে হবে।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ইমাম উদ্দীন কবীর। ‘বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন (কপ-৩০)’ এর ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ।
কর্মশালায় দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, গবেষক, সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি এবং ক্লাইমেট অ্যাক্টিভিস্টরা উপস্থিত ছিলেন।