বরেণ্য শিল্পোদ্যোক্তা ও স্কয়ার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান স্যামসন এইচ চৌধুরীর একাদশ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার জীবনাবসান হয়।
১৯২৬ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার কাশিয়ানী উপজেলার আড়ুয়াকান্দি গ্রামে স্যামসন এইচ চৌধুরীর জন্ম। প্রথমে ওষুধ কারখানা গড়ে তোলেন তিনি। পরে ফার্মেসি ব্যবসাও শুরু করেন। চার বন্ধু মিলে গড়ে তোলেন স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস ওয়ার্কস নামে ওষুধ কারখানা। মাত্র ২০ হাজার টাকা পুঁজি দিয়ে ব্যবসা শুরু করে সততা, নিষ্ঠা, শ্রম, মেধা ও শৃঙ্খলার মাধ্যমে একজন মানুষ কত উপরে যেতে পারেন, তার উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত তিনি।
স্যামসন এইচ চৌধুরী মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআইর সাবেক পরিচালক ছিলেন। ২০১৬ সালে তিনি একুশে পদকে ভূষিত হন।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এজন্য ১০ লাখের বেশি প্রিজাইডিং-পোলিং অফিসারকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। বিভিন্ন গ্রুপে শুরু হওয়া এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ভোটগ্রহণের চার-পাঁচ দিন আগে শেষ হবে বলে জানিয়েছে কমিশন।
নির্বাচন কমিশনের ইলেক্টোরাল ট্রেইনিং ইনস্টিটিউট (ইটিআই) মহাপরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান জানান, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ২৩ ধরনের কাজে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
এই প্রশিক্ষণের জন্য প্রায় চার মাস সময় লাগবে। তবে নির্বাচন সংক্রান্ত মূল প্রশিক্ষণটা হবে প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারদের। এদের সংখ্যা ১০ লাখের বেশি হবে বলে ইসি সচিবালয় জানিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এবারের নির্বাচনের চ্যালেঞ্জটা একটু ভিন্ন।
বিগত তিনটি নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে এবার যতটুকু পারি ফ্রেশ লোক দিয়ে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনার চেষ্টা করা হবে। কমিশনের এমন চিন্তাভাবনা আছে। যেহেতু ফ্রেশ লোক আসবে। ওদের ইলেকশনের ধারণা কম হবে।
সুতরাং তাদের প্রশিক্ষিত করতে ট্রেনিংটা আমাদের আরো ইনডেপথ করতে হবে। অলরেডি আমরা ভোটার তালিকায় হালনাগাদের সময় চ্যালেঞ্জ ফেইস করেছি। কাজেই আমরা নতুন-নতুন লোক নেওয়ার জন্য চেষ্টা করব। যাতে একটি সুন্দর, গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন উপহার দেওয়া যায়।’
ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও অন্যান্য নির্বাচনী প্রশিক্ষণ কর্মসূচির বিষয়ে ইসি ঘোষিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
সে অনুযায়ী তফসিল ঘোষণার পূর্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের ‘ট্রেনিং অব কোর ট্রেনিং’ (টিওটি) সম্পন্ন করার জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন ও নির্দেশনা প্রদান কার্যক্রম চলমান থাকবে।
ইসির রোডম্যাপ অনুযায়ী আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে টিওটি ট্রেইনারদের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন ও নির্দেশনা প্রদান করা হবে।
টিওটি ট্রেইনারদের মধ্যে রয়েছে—নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগ ও নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সব কর্মকর্তারা, সিনিয়র জেলা/জেলা নির্বাচন অফিসার, উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসার, সহকারী উপজেলা/সহকারী থানা নির্বাচন কর্মকর্তা, প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ও অন্য বিভাগের কর্মকর্তা। পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণের লক্ষ্যে মাস্টার ট্রেইনারদের প্রশিক্ষণ (টিওটি) এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের প্রশিক্ষণ (টিওটি) প্রদান করা হবে। এ সময় ৩ হাজার ৬০০ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।
ইসি সূত্র জানান, কমিশন ইতোমধ্যে তাদের রোডম্যাপ অনুযায়ী আগামী ১ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে মাঠ প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তা (বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার কার্যালয়ের কর্মকর্তা) ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ/ব্রিফিংয়ে যোগদানের অনুমতি প্রদানের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়া বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারদেরও প্রশিক্ষণ/ব্রিফিং করা হবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর মাঠ পর্যায়ে আচরণবিধি প্রতিপালনের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে অনলাইনে প্রশিক্ষণ/ব্রিফিং করা হবে। আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটির সদস্যদের প্রশিক্ষণ বা ব্রিফিং দেয়ার বিষয়টিও প্রস্তাবনায় রয়েছে।
তিনি জানান, ভোট গ্রহণের পাঁচ থেকে সাতদিন পূর্বে জুডিশিয়াল ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রশিক্ষণ বা ব্রিফিং দেওয়া হবে। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা নির্বাচনের পূর্বের দুই দিন, নির্বাচনের দিন এবং নির্বাচনের পর দুই দিন মাঠ পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবেন।
এ বিষয়ে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক এসএম আসাদুজ্জামান জানান, নির্বাচনের প্রশিক্ষণ একটা লম্বা প্রক্রিয়া। হাতে যে কয়েকমাস সময় আছে এই সময়ের মধ্যেই নির্বাচন সংক্রান্ত ২৩ ধরনের প্রশিক্ষণ আমাদের শেষ করতে হবে। এখানে আমাদের কোর প্রশিক্ষণ আছে। কোর প্রশিক্ষণ হলো—নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের যারা সিনিয়র কর্মকর্তা তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া। ওইসব কর্মকর্তারা পরে একটি টিওটি প্রশিক্ষণ দিবে। টিওটি প্রশিক্ষণ হলো, প্রথম অংশ কোর প্রশিক্ষণ এবং দ্বিতীয় অংশ হলো টিওটি। এটা আমাদের উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের যারা কর্মকর্তা আছেন এবং যারা অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের যারা আছেন তাদের প্রয়োজনীয় ট্রেনিং দেওয়া হয়। ওদের নিয়ে আমরা টিওটি করি। এই সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩ হাজারের ওপরে।
তিনি বলেন, এরসঙ্গে আইন-শৃঙ্খলার প্রশিক্ষণের বিষয় আছে। এখানে ডিভিশনাল কমিশনার, ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার, তাদের ট্রেনিং করা হবে। তারপরে ডিসি-এসপিদের বিভিন্ন ধাপে-ধাপে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এরপর ইউএনও-দের ট্রেনিং দেওয়া হবে। আনসারের প্রশিক্ষণ হবে। আবার টেকনিক্যাল যে বিষয় আছে, সে বিষয়ে দেশের বিভিন্ন জেলাতে আমাদের যে প্রোগ্রামার ও অ্যাসিস্টেন্ট প্রোগ্রামার আছে—তাদেরকে অর্থাৎ প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারদের মূল প্রশিক্ষণটা দিতে হবে। এদের সংখ্যাটা ১০ লাখের ওপরে হবে।
তিনি আরো বলেন, গত ২৯ আগস্ট থেকে আমাদের ট্রেনিং কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আর এটা শেষ হবে নির্বাচনের চার বা পাঁচ দিন আগে। আমাদের ট্রেনিং করানোর জন্য প্রায় চার মাস সময় লাগবে।
এবার ট্রেনিংয়ে নতুনত্ব নিয়ে আসা হয়েছে উল্লেখ করে এস এম আসাদুজ্জামান বলেন, প্রশিক্ষণে তিনটা পার্ট থাকে। আমাদের মূলত একটা পার্ট হলো—আমরা ওদেরকে নির্বাচনী আইন-কানুন বিধি-বিধান সম্পর্কে ধারণা দেব। দ্বিতীয়টা হলো, তারা কিভাবে কাজ করবে। কাজের প্রসিডিউরটা কেমন হবে এবং ভোটকেন্দ্রে মালামাল সংগ্রহ, ভোটগ্রহণ থেকে শুরু করে ভোট গণনা পর্যন্ত যত কাজ আছে পুরো প্রক্রিয়াটা শেখানো হবে। আরেকটা হলো অতীতের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় তাদের মধ্যে কনফিডেন্স বিল্ডআপ করার জন্য একটা মোটিভেশনাল কাজ করা। তাদের আত্মবিশ্বাসটা যাতে ফিরে আসে সে জন্য একটা মোটিভেশনাল প্রোগ্রাম দেওয়া। তাদেরকে আমরা ওই পর্যায়ে নিয়ে আসব, যেন প্রিসাইডিং অফিসার মনে করেন, তিনি ওই কেন্দ্রের জন্য ‘চিফ ইলেকশন কমিশনার’। এই কনফিডেন্ট লেবেলটা বাড়ানোর জন্য আমরা কাজ করতেছি। আরেকটা বিষয় হলো একজন প্রিসাইডিং অফিসার কি ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে, তা আলোচনা করা। এক্ষেত্রে আমরা হাইপোথিটিক্যালি বিগত তিনটা নির্বাচনের যে সমস্যাগুলো হয়েছে সেগুলোর রেফারেন্স দিয়ে তাদের সতর্ক ও প্রশিক্ষিত করা।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ। এই কর্মযজ্ঞে যারা জড়িত তারা যদি প্রোপার ট্রেনিংপ্রাপ্ত না হয় তাহলে নির্বাচনে সমস্যা হতে পারে। আমরা চাচ্ছি ন্যূনতম বিচ্যুতি হবে না। সবাই তার কাজটা যথাযথভাবে করবে। আইন ও বিধি অনুযায়ী করবে এবং সততা ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে। এটা যাতে নিশ্চিত করা যায়, সে জন্যই এই প্রশিক্ষণ।
শেখ হাসিনার পতনের পর দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে দ্রুত বদল আনতে চাইছে পাকিস্তান। বাংলাদেশে ১৩ বছর পর শীর্ষ পর্যায়ের সফরে এসে সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের ঘোষণা দিয়ে গেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার।
মূলত হাসিনা-পরবর্তী বাংলাদেশে কূটনৈতিক সুযোগ দেখছে ইসলামাবাদ। এমন অবস্থায় বাণিজ্য ও কূটনীতিতে এগোচ্ছে ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্ক।
গতকাল মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটি তাদের প্রতিবেদনে বলছে, গত ২৩ আগস্ট ভোরে ঝোড়ো হাওয়া আর মেঘলা আকাশে ঢাকা বিমানবন্দরে নামেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। ১৩ বছর পর এবারই কোনো শীর্ষ পাকিস্তানি কর্মকর্তা বাংলাদেশে এলেন, যে দেশটি আজ থেকে ৫৪ বছর আগে পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়েছিল।
একইসঙ্গে উপপ্রধানমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করা ইসহাক দার এ সফরকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়ে বলেন, এটি হবে দুই দেশের ‘অংশীদারিত্বের নতুন অধ্যায়’। তিনি স্বীকার করেন, গত এক বছরে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে অগ্রগতি হয়েছে।
ইসহাক দার বলেন, ‘আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে এমন এক পরিবেশ গড়ে তুলতে, যেখানে করাচি থেকে চট্টগ্রাম, কোয়েটা থেকে রাজশাহী, পেশোয়ার থেকে সিলেট এবং লাহোর থেকে ঢাকা— দুই দেশের তরুণরা হাতে হাত মিলিয়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে, ভাগাভাগি করবে তাদের স্বপ্ন।’
তার এ সফর মূলত মাসের পর মাস ধরে চলা কূটনৈতিক ও সামরিক যোগাযোগের পর বড় ধরনের অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষত, ২০২৪ সালের আগস্টে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র নেতৃত্বাধীন গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর পাকিস্তান-বাংলাদেশ সম্পর্ক দ্রুত উষ্ণ হয়ে উঠেছে। শেখ হাসিনা ভারতের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং বর্তমানে ভারতে পালিয়ে আছেন।
তবে পাকিস্তানের সাবেক কূটনীতিক মাসুদ খালিদ সতর্ক করে বলেন, অতীত এখনো দুই দেশের আস্থা তৈরিতে বাধা হয়ে আছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের নতুন সরকার পাকিস্তানের উদ্যোগে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। সম্পর্কের পথে কৃত্রিম বাধাগুলো এখন দূর হয়েছে।’
কিন্তু সম্পর্ক গভীর করতে হলে ‘গঠনমূলক সংলাপের মাধ্যমে ভুল বোঝাবুঝি দূর করার একটি কাঠামো’ প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
সামরিক ও কূটনৈতিক যোগাযোগ বেড়েছে
শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন। বিশ্লেষকরা এত দ্রুত সম্পর্ক উষ্ণ হয়ে উঠবে, তা ধারণা করেননি।
এ বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান ইসলামাবাদে গিয়ে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর ফেব্রুয়ারিতে যান বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান। এরপর এপ্রিল মাসে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বেলুচ ঢাকায় আসেন।
এরপর মে মাসে ভারত-পাকিস্তানের চার দিনের সংঘাতের কারণে ইসহাক দারের সফর পিছিয়ে যায়। তবে জুলাইয়ে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নাকভি ঢাকা সফর করেন। অবশেষে আগস্টে দার ঢাকায় এলেন, একই সময়ে পাকিস্তানে যান বাংলাদেশের কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ ফয়জুর রহমান। সেখানে তিনি পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর জয়েন্ট চিফস কমিটির চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জার সঙ্গে বৈঠক করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দিলওয়ার হোসেন মনে করেন, পাকিস্তানের এই ‘তড়িঘড়ি’ কৌশলগত। তিনি বলেন, ‘হাসিনা সরকারের আমলেও পাকিস্তান সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালিয়েছে। এখন তারা ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ের মতো সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার সুযোগ দেখছে।’
তিনি মনে করিয়ে দেন, ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষমতায় আসা জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছিলেন। তবে বাংলাদেশে শাসন পরিবর্তন প্রায়ই ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েন তৈরি করেছে। পাকিস্তান হয়তো বর্তমান বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের টানাপড়েনকেও কাজে লাগাতে চাইছে।
মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকার
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস এখনো দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে গভীর ছায়া ফেলছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনা ও তাদের সহযোগী বাহিনীর হাতে লাখো বাঙালি নিহত হয়, প্রায় দুই লাখ নারী ধর্ষণের শিকার হন। ভারতীয় সেনা সহযোগিতায় শেখ মুজিবুর রহমান ও তার আওয়ামী লীগ দেশকে স্বাধীন করে।
পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব আইজাজ চৌধুরী মনে করেন, ভারতীয় ‘আঞ্চলিক আধিপত্য’ মোকাবিলায় পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে এক হতে হবে। গত মে মাসে কাশ্মিরে হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের চার দিনের আকাশযুদ্ধে এই বিরোধ আবার প্রকট হয়ে ওঠে।
অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শাহাব এনাম খান মনে করেন, ঢাকা-নয়াদিল্লি সম্পর্ক এখন কিছুটা শীতল হলেও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক বাস্তবতাকে প্রাধান্য দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্রনীতি সাধারণত অর্থনীতিনির্ভর। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক কেবল নিরাপত্তা বা সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, বরং আঞ্চলিক সহযোগিতা ও অর্থনীতির ভিত্তিতেই গড়ে উঠতে পারে।’
চীনের প্রভাব
চীন বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বাড়াচ্ছে। বেইজিং পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র হলেও হাসিনা সরকারের সঙ্গেও সম্পর্ক ভালো ছিল। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসার পরও চীন তার অবস্থান ধরে রেখেছে। মার্চে ইউনূস বেইজিং সফর করেন। আগস্টে বাংলাদেশ সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এক সপ্তাহের সফরে যান চীনে।
বাংলাদেশ ১২টি চীনা জে-১০সি যুদ্ধবিমান কেনার বিষয় বিবেচনা করছে। পাকিস্তান ইতোমধ্যে এসব যুদ্ধবিমান ব্যবহার করছে। পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের সামরিক ও অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বও গভীর। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এসব কারণে ঢাকা ও ইসলামাবাদের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হতে পারে।
বাণিজ্য ও রাজনীতি
দারের দুই দিনের সফরে তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এর মধ্যে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে শীর্ষ ভূমিকা রাখা ছাত্রনেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টিও (এনসিপি) ছিল।
পাকিস্তানের সাবেক কূটনীতিক আবদুল বাসিত বলেন, বাংলাদেশে ২০২৬ সালের শুরুতে নির্বাচন হবে, তার আগে এসব বৈঠক তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, ‘যে কোনো পরিস্থিতিতেই পাকিস্তান ও বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। অতীতের সমস্যাগুলো দক্ষতার সঙ্গে সামলাতে হবে।’
অর্থনীতিতেও উভয় দেশ উপকৃত হতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশ ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে, পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি মাত্র ২.৫ শতাংশ। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যও এখনো সীমিত। ২০২৪ সালে পাকিস্তান বাংলাদেশে ৬৬১ মিলিয়ন ডলার পণ্য রপ্তানি করেছে, বিপরীতে আমদানি মাত্র ৫৭ মিলিয়ন ডলার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিলওয়ার হোসেন বলেন, পাকিস্তান থেকে তুলা, টেক্সটাইল, চাল, সিমেন্ট, ফল ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য আমদানি করতে পারে বাংলাদেশ। অন্যদিকে, পাকিস্তান আমদানি করতে পারে বাংলাদেশের পাটজাত পণ্য, কেমিক্যাল, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ও তামাকজাত দ্রব্য।
তিনি উল্লেখ করেন, দুই দেশের সম্মিলিত জনসংখ্যা ৪৩০ মিলিয়ন—যা পশ্চিম ইউরোপের দ্বিগুণেরও বেশি।
অতীতের ক্ষত
তবে ১৯৭১-এর ক্ষত এখনো বড় বাধা। বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাছে এখনো আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা চায়। এছাড়া, বাংলাদেশে বসবাসরত দুই লাখেরও বেশি উর্দুভাষী মুসলমানের বিষয়টি অমীমাংসিত। তারা মূলত বিহার থেকে পূর্ব পাকিস্তানে এসেছিলেন, তবে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ তাদের পূর্ণ নাগরিক অধিকার দেয়নি এবং পাকিস্তানও তাদের নিতে অনিচ্ছুক।
এছাড়া, মুক্তিযুদ্ধের আগে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় সম্পদ ভাগাভাগি এবং ১৯৭০ সালের বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য ঘোষিত সাহায্যও এখনো বিতর্কের বিষয়।
তবুও পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব আইজাজ চৌধুরী বলেন, দুই দেশের জনগণ পুনর্মিলনের পক্ষে। ১৯৭১ সালের ঘটনার জন্য পাকিস্তানের মানুষও সমানভাবে দুঃখিত। এখন সবাই সামনে এগিয়ে যেতে চায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিলওয়ার হোসেন বলেন, হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হলেও মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে বাংলাদেশের জনমত অপরিবর্তিত। অতীত ভুলে থাকা সম্ভব নয়, তবে কূটনীতি সবসময়ই গতিশীল। দুই দেশ অর্থনীতি, কূটনীতি ও সংস্কৃতিতে সহযোগিতা বাড়াতে পারে, পাশাপাশি অতীতের ক্ষত নিরাময়ের প্রক্রিয়াও চালিয়ে যেতে পারে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত অপরাধের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। গণঅভ্যুত্থানের সময় শহীদ প্রত্যেকের পরিবার, আহত ব্যক্তি, দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ এই জবানবন্দি দেন আবদুল্লাহ আল-মামুন। গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে আসামি হিসেবে রয়েছেন তিনি। সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এ মামলায় দোষ স্বীকার করে নিয়ে ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এ মামলার ৩৬তম সাক্ষীর জবানবন্দি দিয়েছেন।
মামুন বলেন, ‘আমি সাড়ে ৩৬ বছর পুলিশে চাকরি করেছি। পুলিশের চাকরি খুবই ট্রিকি চাকরি। সব সময় পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে। আমার এই চাকরিজীবনে আমার বিরুদ্ধে কখনো কোনো অভিযোগ আসেনি। আমি সব সময় যথেষ্ট মানবিকতা ও সচেতনতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি। চাকরিজীবনের শেষ পর্যায়ে এসে এত বড় গণহত্য আমার দায়িত্বকালীন সময়ে সংঘটিত হয়েছে, তার দায় আমি স্বীকার করছি।’
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নির্দেশে এসব হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি বলেন, ‘আমি গণহত্যার শিকার প্রত্যেকের পরিবার, আহত ব্যক্তিবর্গ, দেশবাসী এবং ট্রাইব্যুনালের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমাকে দয়া করে ক্ষমা করে দেবেন।’
সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ‘আমার এই সত্য ও পূর্ণ বর্ণনার মাধ্যমে সত্য উদ্ঘাটিত হলে আল্লাহ যদি আমাকে আরও হায়াত দান করেন, বাকিটা জীবন কিছুটা হলেও অপরাধবোধ থেকে মুক্তি পাব।’
তিনি বলেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগের রাতে ৫০ শতাংশ ভোট ব্যালট বাক্সে ভরে রাখতে শেখ হাসিনাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন তৎকালীন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক জাবেদ পাটোয়ারী। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে।
২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশ পুলিশের ২৭তম মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন জাবেদ পাটোয়ারী। পরবর্তী সময়ে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে পুলিশ থেকে অবসর গ্রহণের পর তাকে সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।
জবানবন্দিতে সাবেক এই আইজিপি বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর পুলিশে রাজনৈতিক প্রভাব আরও বেড়ে যায়। প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন কিছু কিছু কর্মকর্তা। ঊর্ধ্বতন রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে তাদের সরাসরি যোগাযোগ ছিল।
তিনি বলেন, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান ও এসবির সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনীতে দুটি গ্রুপ গড়ে উঠেছিল। একটির নেতৃত্ব দিতেন হাবিব ও আরেকটির নেতৃত্বে ছিলেন মনির।
চৌধুরী মামুন আরো বলেন, ‘এসব কর্মকর্তা প্রায় রাতেই সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায় বৈঠকে করতেন। গোপন সেসব বৈঠক গভীর রাত পর্যন্ত চলত। বৈঠকে অংশ নেওয়া কর্মকর্তারা হলেন সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন-অর-রশীদ, এসবির মনিরুল ইসলাম, ঢাকার ডিআইজি নুরুল ইসলাম, অ্যাডিশনাল ডিআইজি বিপ্লব কুমার, এএসপি কাফী, ওসি মাজহার, ফোরকান অপূর্বসহ আরো অনেকে। এর মধ্যে কারো কারো সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি যোগাযোগ ছিল।’
মামুন বলেন, সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের ব্যক্তিদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ থাকায় চেইন অব কমান্ড মানতেন না এসব কর্মকর্তা। কিন্তু আমি চাইতাম তারা পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করুক। মূলত পুলিশ বাহিনীতে গড়ে তোলা দুটি গ্রুপই এসব কর্মকাণ্ড চালাত। এছাড়া দুই গ্রুপের নেতৃত্বদানকারীরা চাইতেন তাদের নিজস্ব বলয়ের লোকজন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পোস্টিং পাক এবং ঢাকায় থাকুক।
জবানবন্দিতে র্যাবে থাকাকালীন টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন বা টিএফআই সেলসহ বহু বন্দিশালার বর্ণনাও দেন তিনি।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের আটকের প্রস্তাব প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই) দিয়েছিল বলে জবানবন্দি দেন আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি বলেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) তৎকালীন প্রধান মোহাম্মদ হারুন রশীদকে সমন্বয়কদের আটকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
মামুন বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলন শুরু হওয়ার পর সারাদেশে সেনা মোতায়েন করা হয়। এরপর ১৯ জুলাই থেকে প্রায় প্রতি রাতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের ধানমন্ডির বাসায় কোর কমিটির বৈঠক হতো। বৈঠকে তাদের আন্দোলন দমনসহ সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হতো।
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, এই কোর কমিটির বৈঠকে তিনি, তৎকালীন স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাংগীর আলম, অতিরিক্ত সচিব টিপু সুলতান, অতিরিক্ত সচিব রেজা মোস্তফা, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান মনিরুল ইসলাম, ডিএমপির ডিবির প্রধান মোহাম্মদ হারুন রশীদ, র্যাবের মহাপরিচালক হারুন অর রশিদ, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম আমিনুল হক, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, ডিজিএফআই ও এনএসআইয়ের প্রধানেরা উপস্থিত থাকতেন।
কোর কমিটির একটি বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের আটক করার সিদ্ধান্ত হয় বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি বলেন, ডিজিএফআই এই প্রস্তাব দেয়। তিনি এর বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে তিনি রাজি হন। আটকের দায়িত্ব ডিবিপ্রধান হারুনকে দেওয়া হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত মোতাবেক ডিজিএফআই ও ডিবি তাদের আটক করে। ডিবি হেফাজতে নিয়ে আসে।
জবানবন্দিতে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, সমন্বয়কদের ডিবি হেফাজতে এনে আন্দোলনের বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আপস করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। তাদের আত্মীয়স্বজনকেও ডিবিতে নিয়ে এসে চাপ দেওয়া হয়। সমন্বয়কদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে টেলিভিশনে বিবৃতি প্রদানে বাধ্য করা হয়। এ ব্যাপারে ডিবিপ্রধান হারুন অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
ডিবির তৎকালীন প্রধান হারুনকে ‘জিন’ বলে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ডাকতেন উল্লেখ করেন সাবেক আইজিপি। তিনি বলেন, হারুন সরকারের যেকোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পারদর্শী ছিলেন।
সাবেক আইজিপি ট্রাইব্যুনালে আরও বলেন, আন্দোলন দমনে মারণাস্ত্র ব্যবহার, হেলিকপ্টার থেকে গুলি ও ব্লক রেইডের সিদ্ধান্ত হয় রাজনৈতিকভাবে।
তিনি জানান, লেথাল উইপেন ব্যবহারের নির্দেশনা এসেছিল শেখ হাসিনার কাছ থেকে। আর সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান হাবিব, ডিবির হারুন ছিলেন মারণাস্ত্র ব্যবহারে অতিউৎসাহী।
মামুন জবানবন্দিতে বলেন, র্যাব-১ এ টিআইএফ নামে গোপন বন্দিশালা ছিল। অন্যান্য র্যাবের ইউনিটে ছিল এমন বন্দিশালা। রাজনৈতিক ভিন্নমত ও সরকারের জন্য হুমকি হয় এমন মানুষদের ধরে আনা হতো এখানে।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে আসত এসব নির্দেশনা। কখনো নির্দেশনা দিতেন তারেক সিদ্দিকী। আর আয়নাঘরে আটক ও ক্রসফায়ারে হত্যার মতো কাজগুলো করতেন র্যাবের এডিসি অপারেশন ও গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক।
এ বছরের ২৪ মার্চ মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি জানান, স্বেচ্ছায় আসামি থেকে রাজসাক্ষী হয়ে সত্য উন্মোচন করতে চান তিনি।
এর আগে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনে আহত, শহীদ পরিবারের সদস্য, চিকিৎসকসহ ৩৫ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ মাসেই এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হওয়ার প্রত্যাশা করছে প্রসিকিউশন।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গ্রেপ্তার হন তৎকালীন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আজ বিকেল ৫টায় সাতটি রাজনৈতিক দল ও একটি সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, বৈঠকে অংশ নেন- এবি পার্টি, নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, এলডিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জাতীয় গণফ্রন্ট এবং হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
এরআগে গত রোববার প্রধান উপদেষ্টা বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি’র সঙ্গে বৈঠক করেন।
ধারাবাহিক এই বৈঠক আসন্ন নির্বাচনের প্রস্তুতিতে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-৩ গঠন করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
আজ সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ভবন ও সংলগ্ন এলাকা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
এ সময় আইন উপদেষ্টা বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি আমরা। বিগত সরকারের হত্যা, গুম, নির্যাতনসহ সব ধরনের অপরাধের বিচারের বিষয়ে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আইন উপদেষ্টা বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ভবন সংলগ্ন টিনশেড ভবন খালি হয়ে গেলে আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-৩ গঠন করতে পারি। এটি করা গেলে গুমসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার কাজ দ্রুত করা যাবে।
তিনি আরো বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা নিয়ে বেশ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন আমাদের বিচারকসহ প্রসিকিউশন ও তদন্ত টিম।
আইন উপদেষ্টা বলেন, দেশের ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের স্বার্থে আমাদের যে ন্যায়বিচার আছে, আইনের শাসন আছে ও মানবাধিকার আছে এটাকে প্রতিষ্ঠিত করার স্বার্থে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে এক হাজারেরও বেশি ছাত্র-জনতাকে হত্যা এবং হাজারও মানুষকে পঙ্গু করার ভয়াবহ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার অপরিহার্য-অনিবার্য। সেই বিচারকার্যের প্রথম থেকেই আমরা অবিচল আছি। বিচারের যে গতি আছে সেটা নিয়েও আমরা সন্তুষ্ট আছি।
অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ভবন আজ পরিদর্শন করেন। এসময় তাদের সঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামসহ অপর প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, এর দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব অপরাধের বিচার কাজ চলছে।
এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক এবং গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আমরা সবাই যে সহানুভূতি, ভালোবাসা ও ভক্তি নিয়ে ছিলাম, সেখানে কোথায় যেন একটা মোহভঙ্গ হয়েছে। এই মোহভঙ্গ সংস্কার প্রক্রিয়াকে অনুধাবন করার জন্য বড় ধরণের শিক্ষা দিয়েছে। সাধারণভাবে সব জায়গায় এমন ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর হোটেল লেকশোরে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ওয়াচ’ নামে নতুন উদ্যোগের আনুষ্ঠানিক সূচনা অনুষ্ঠানে আলোচনার এক পর্যায়ে তিনি এমন মন্তব্য করেন। দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগের বিষয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, কোনটা হয়, কোনটা হয় না এবং এ রকম একটি সরকার পেলেও কেন হয় না– সেগুলো আগামী দিনে বড় আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারকে আমি ভুলে অনেক সময় ‘অন্তরীণ’ সরকার বলি। মাঝে মাঝে মনে হয়, কে যেন সরকারকে ‘দখল’ করে নিয়েছে।’
স্বাগত বক্তব্যে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের ওপর দিয়ে এখন একটি ঝড় বয়ে যাচ্ছে। ঝড়ের আঘাত সর্বক্ষেত্রে অনুভূত হচ্ছে। ঝড়ের সময় মানুষ সব সময় তার বড় সম্পদ রক্ষার চেষ্টা করে। জুলাই অভ্যুত্থানের ভিতর দিয়ে বৈষম্যবিরোধী চেতনা মানুষের সবচেয়ে বড় সম্পদ। পরিবর্তনের চেতনা ধরে রাখা এখন বড় কাজ।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের জন্য ডজন খানেক কমিশন ও টাস্কফোর্স গঠন করে। তিনি নিজেও অর্থনীতির শ্বেতপত্র প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু যে উচ্ছ্বাস প্রথম দিকে ছিল, তা এখন স্তিমিত হয়ে গেছে। দু’একটি ব্যতিক্রম বাদে কমিটি ও কমিশনে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব রাখা হয়নি। রাজনীতিবিদদের সঙ্গে সরকার সংস্কার নিয়ে আলোচনা করছে। কিন্তু সংস্কার প্রক্রিয়া কোথায় গিয়ে যেন আর এগোতে পারছে না। এটি কি আকাঙ্খার অভাব না–কি সক্ষমতার অভাব, না–কি কোথাও স্বার্থের সংঘাত লুকিয়ে ছিল। এখন এসে প্রশ্ন জাগছে, অন্তর্বর্তী সরকার কি পথ হারিয়েছে?
‘বাংলাদেশ রিফর্ম ওয়াচ’ উদ্যোগ সম্পর্কে তিনি জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অবশিষ্ট সময়কালে গৃহীত কর্মসূচি, নির্বাচনকালীন সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহার ও নির্বাচনী আলোচনা-বিতর্ক এবং নির্বাচিত সরকারের প্রাধিকার ও কর্মসূচি–এই তিনটি পর্যায়ে এ উদ্যোগের কার্যক্রম পরিচালিত হবে। রূপান্তরকালীন এ নাগরিক প্রয়াস বাস্তবায়ন করবে প্ল্যাটফর্মের জাতীয় ও তৃণমূল পর্যায়ের ১৫০টিরও বেশি সহযোগী সংগঠনসহ ব্যক্তিখাতের নেতারা, বিশেষজ্ঞ, পেশাজীবী প্রতিষ্ঠান ও গোষ্ঠী। এ উদ্যোগ বিভিন্ন নেটওয়ার্কের নেটওয়ার্ক হিসেবে কাজ করবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান। বক্তব্য রাখেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক রওনক জাহান, পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, স্থানীয় সরকার বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান তোফায়েল আহমেদ, নির্বাচন কমিশনবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সুলতান আহমেদ, নাগরিক প্ল্যাটফর্মের কোরগ্রপ সদস্য শাহীন আনাম, রাশেদা কে চৌধুরী, আসিফ ইব্রাহীম ও অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক, অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ, এম.এম. আকাশ ও সেলিম রায়হান প্রমুখ।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আজ মঙ্গলবার আরও সাতটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং গতকাল সোমবার জানিয়েছে, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা অংশ নেবেন।
গত রোববার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। আলাদা আলাদা বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা দলগুলোকে আশ্বস্ত করে বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তবে সংস্কার ও জাতীয় নির্বাচন প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভিন্নতা কাটেনি। এসব নিয়ে নিজেদের আগের অবস্থানই তুলে ধরেছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি। তবে প্রধান উপদেষ্টা স্পষ্ট করে বলেছেন, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। কেউ যদি নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নিয়ে ভাবে, সেটা হবে জাতির জন্য গভীর বিপজ্জনক।
গত শুক্রবার রাতে জাতীয় পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষকে ঘিরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের লাঠিপেটায় নুরুল হকের আহত হওয়ার ঘটনায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়। অন্তর্বর্তী সরকারসহ দেশের প্রায় সব দল এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে গত শনিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের এক সভায় গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হকের ওপর হামলার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের সিদ্ধান্ত হয়।
৩৮ লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে আয়কর নথির কাগজপত্র হস্তান্তর করায় আয়কর বিভাগের সহকারী কর কমিশনার জান্নাতুল ফেরদৌসকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গতকাল সোমবার অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) এক আদেশে তাকে বরখাস্ত করা হয়। আইআরডি সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান এতে সই করেন।
বরখাস্তের আদেশে বলা হয়, ঢাকার কর অঞ্চল-৫–এর সহকারী কর কমিশনার জান্নাতুল ফেরদৌস ৩৮ লাখ টাকা গ্রহণের বিনিময়ে একই কর অঞ্চলের ৯৩ নম্বর সার্কেলের করদাতা সালাহ উদ্দিন আহমেদের মনোনীত প্রতিনিধিকে (আয়কর আইনজীবী) আয়কর নথির অধিকাংশ পূর্ববর্তী রেকর্ড হস্তান্তর করেন। এগুলো হলো পুরোনো আয়কর রিটার্ন, অর্ডার শিট, কর নির্ধারণী আদেশ, আপিল-ট্রাইব্যুনাল আদেশসমূহ এবং অন্যান্য দলিল। এ জন্য জান্নাতুল ফেরদৌসের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কার্যধারা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
আদেশে আরও বলা হয়, সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮–এর বিধি-১২ অনুযায়ী জান্নাতুল ফেরদৌসকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। তিনি সাময়িক বরখাস্তকালীন বিধি মোতাবেক খোরপোষ ভাতা প্রাপ্য হবেন। এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) বাইরে অন্য কোনো লেখক ও প্রকাশকের বই পাঠ্যভুক্ত করলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সচিব অধ্যাপক সাহতাব উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানানো যাচ্ছে যে, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্তৃক প্রণীত ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির সাহিত্যপাঠ (গদ্য ও কবিতা), বাংলা সহপাঠ (উপন্যাস ও নাটক), তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন) এবং English For Today পাঠ্যপুস্তকগুলো প্রচ্ছদ পরিবর্তন, বিষয়বস্তু সংযোজন, বিয়োজনসহ পরিমার্জনপূর্বক নতুন আঙ্গিকে এনসিটিবির জলছাপযুক্ত নিরাপত্তা কাগজসমেত মুদ্রণ ও বাঁধাই করে ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে বাজারজাত করা হবে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে অভিভাবকরা এবং শিক্ষার্থীদের এনসিটিবি কর্তৃক প্রদত্ত জলছাপসহ সিকিউরিটি পেপারযুক্ত নতুন সংস্করণের পাঠ্যপুস্তকগুলো ক্রয় করার অনুরোধ করা হলো।
উল্লেখ্য, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডগুলোর অধীনে পরিচালিত মূল্যায়ন (পরীক্ষা) প্রক্রিয়ায় কেবল এনসিটিবির পাঠ্যপুস্তকের বিষয়বস্তু বিবেচনায় নেওয়া হবে। পাঠ্যপুস্তকগুলো সারাদেশের লাইব্রেরিগুলো থেকে এনসিটিবি কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যে বিক্রয় করা হবে।
এতে আরও বলা হয়, যদি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এনসিটিবি কর্তৃক প্রকাশিত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি পাঠ্যপুস্তক ব্যতীত অন্য কোনো লেখক ও প্রকাশকের পুস্তক পাঠ্যভুক্ত করে, তাহলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এনসিটিবি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
নকলমুক্ত পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও বাজারজাতকরণ এবং শিক্ষার্থীদের হাতে নির্ধারিত সময়ে পাঠ্যপুস্তক পৌঁছে দেওয়ার সরকারি উদ্যোগকে সহযোগিতা করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করা হয় ওই গণবিজ্ঞপ্তিতে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান আজ সোমবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বর্তমান পরিস্থিতিতে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তাদের অবদান অব্যাহত রাখার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সেনাবাহিনীর এই ভূমিকা আরও সুসংগঠিত করা জরুরি। এর মধ্যে স্পষ্ট কমান্ড কাঠামো ও সকল বাহিনীর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় নিশ্চিত করার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি জাতির প্রতি অঙ্গীকার করেছি— এমন একটি নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য যা ভোটার উপস্থিতি, নতুন ও নারী ভোটারের অংশগ্রহণ, নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়ে বৈশ্বিক আস্থা এবং গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের উৎসবমুখর পরিবেশের দিক থেকে আলাদা করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।’
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান প্রধান উপদেষ্টাকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেন। একই সঙ্গে তিনি গুজবের প্রতি মনোযোগ না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘পুরো সেনাবাহিনী সরকারের সব উদ্যোগ ও কর্মসূচি সফল করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
সকলের সহযোগিতায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠান সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
জাহাঙ্গীর চৌধুরী আজ সিলেট জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে জনগণই মুখ্য ভূমিকা রাখবে।
মতবিনিময় সভায় সিলেট বিভাগের সকল জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), আনসার-ভিডিপি, কারা অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সিলেট জেলার বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে মাঠ প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য শুধু নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতিই যথেষ্ট নয়, মাঠ প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে যথাযথ প্রস্তুতি নিতে হবে। জনগণ যেন নির্ভয়ে নির্বাচন কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ভোট প্রদান করতে পারে সেরকম পরিবেশ তৈরি করতে প্রশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে একযোগে কাজ করতে হবে। সকলের সহযোগিতায় সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভবপর হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে জনগণের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান লক্ষ্য।
পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়োগ ও পদায়ন সম্পর্কে উপদেষ্টা বলেন, এবার বিভিন্ন বাহিনীর নিয়োগ প্রক্রিয়া ও পদায়ন অনেক স্বচ্ছ হয়েছে।
মাদককে দেশের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য অন্যতম হুমকি উল্লেখ করে তিনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে মাদক ব্যবসায়ীদের প্রতি ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি দেখানোর নির্দেশনা দেন। এছাড়া পরিবেশ রক্ষায় সিলেটের পাথর খেকোদের বিরুদ্ধে সবসময় সজাগ থাকার কথা বলেন।
দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব তুলে ধরে জাহাঙ্গীর চৌধুরী বলেন, কৃষকরাই এদেশের খাদ্য নিরাপত্তার মূল কারিগর। তাই উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি কৃষক যেন তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। উপদেষ্টা এ সময় পতিত কৃষিজমিগুলো আবাদের আওতায় আনার জন্য সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানান।
সভায় উপস্থিত কর্মকর্তারা সিলেটের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও এর চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে বিভিন্ন মতামত বিনিময় করেন।
উপদেষ্টা সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যৌক্তিক পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন।
এরআগে উপদেষ্টা বিজিবি’র সিলেট সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স এবং সিলেট পুলিশ লাইন পরিদর্শন করেন।
অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে জনগণই মুখ্য ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)।
উপদেষ্টা আজ সিলেট জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন।
মতবিনিময় সভায় সিলেট বিভাগের সকল জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি), আনসার-ভিডিপি, কারা অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সিলেট জেলার বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
উপদেষ্টা বলেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে জনগণের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান লক্ষ্য। তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে মাঠ প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য শুধু নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি যথেষ্ট নয়, মাঠ প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে যথাযথ প্রস্তুতি নিতে হবে। জনগণ যেন নির্ভয়ে নির্বাচন কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ভোট প্রদান করতে পারে সেরকম পরিবেশ তৈরি করতে প্রশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে একযোগে কাজ করতে হবে। সকলের সহযোগিতায় সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভবপর হবে।
পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়োগ ও পদায়ন সম্পর্কে উপদেষ্টা বলেন, এবার বিভিন্ন বাহিনীর নিয়োগ প্রক্রিয়া ও পদায়ন অনেক স্বচ্ছ হয়েছে। তাই সবাইকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। মাদককে দেশের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য অন্যতম হুমকি উল্লেখ করে তিনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে মাদক ব্যবসায়ীদের প্রতি জিরো টলারেন্স দেখানোর নির্দেশনা দেন। এছাড়া পরিবেশ রক্ষায় সিলেটের পাথরখেকোদের বিরুদ্ধে সবসময় সজাগ থাকার কথা বলেন।
দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব তুলে ধরে লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেন, কৃষকরাই এদেশের খাদ্য নিরাপত্তার মূল কারিগর। তাই উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি কৃষকেরা যেন তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। উপদেষ্টা এসময় পতিত কৃষিজমিগুলো আবাদের আওতায় আনার জন্য সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানান।
সভায় উপস্থিত কর্মকর্তাবৃন্দ সিলেটের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও এর চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে বিভিন্ন মতামত প্রদান করেন। উপদেষ্টা সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যৌক্তিক পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন। মতবিনিময় সভা শেষে উপদেষ্টা উপস্থিত সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন।
উপদেষ্টা এর আগে বিজিবি'র সিলেট সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স এবং সিলেট পুলিশ লাইন পরিদর্শন করেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন,বাণিজ্য সম্পর্কিত অপ্রয়োজনীয় প্রবিধানগুলোকে খুঁজে বের করে এবং বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণকারী নিয়ম কানুন পর্যালোচনার মাধ্যমে বাণিজ্য সহজীকরণ নিশ্চিত করা হবে।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকার বিয়াম ফাউন্ডেশন মাল্টিপারপাস হলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত ন্যাশনাল ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন কমিটির (এনটিএফসি) নবম সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা জানান।
তিনি বলেন, বাণিজ্য সহজীকরণের মাধ্যমে আমরা ন্যায় প্রতিষ্ঠা করবো এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করবো যার মাধ্যমে আমাদের বাণিজ্যের পরিমান এবং অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
উপদেষ্টা বলেন,আমরা একটি দক্ষ ট্রেড রেজিম চাই, যার মাধ্যমে আমাদের জাতীয় অর্থনীতির ব্যাপক উন্নতি ঘটবে এবং যা সম্পদের সুষম বন্টনের ক্ষেত্রেও বড় প্লাটফরম হিসেবে কাজ করবে।
আমরা অবশ্যই ট্যাক্স ফাঁকি কমাতে চাই একই সাথে আমরা দক্ষতার বিকাশ চাই। কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম অটোমেশন হচ্ছে এতে আমদানি রপ্তানি সহজতর হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সভায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান , বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান ,বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মইনুল খান, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. নাজনীন কাওসার,এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক মো: হাফিজুর রহমান, ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মো: আবদুর রহিম খান , বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) আয়েশা আক্তারসহ কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।