বাংলাদেশ একটি স্বপ্নের নাম। বাংলাদেশ আমাদের স্বপ্নের নির্মাণ। এই বাংলাদেশ নির্মাণের জন্য, বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য আমরা ধাপে ধাপে সংগ্রাম করেছি, আন্দোলন চালিয়েছি এবং মুক্তিযুদ্ধ করেছি।
বায়ান্নতে ভাষার জন্য আমরা লড়াই করেছি। চুয়ান্নতে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করেছি। বাষট্টিতে আমরা গণতান্ত্রিক শিক্ষার জন্য আন্দোলন করেছি। ছেষট্টিতে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে সংগ্রাম করেছি। আটষট্টিতে সাংস্কৃতিক স্বাধিকারের জন্য আমরা লড়েছি। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে জনগণ অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সত্তরের নির্বাচনে দাবি আদায়ে আমরা জনগণের ঐতিহাসিক রায় পেয়েছি। একাত্তরের অসহযোগ ও মুক্তিযুদ্ধের ধারাবাহিকতায় আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি।
১৯৪৭ সাল থেকে দীর্ঘ ২৪ বছরের বন্ধুর পথপরিক্রমায় ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ আমরা স্বাধীনতা লাভ করি। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হয়। এই দীর্ঘ পথযাত্রায় অনেক মানুষ রাস্তায় নেমেছে। অনেক মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়েছে। অনেক মানুষ কারাবরণ করেছে। অনেক মানুষ নির্যাতিত হয়েছে। অনেক মানুষ অকাতরে প্রাণ দিয়েছে। অনেক মানুষ শহীদ হয়েছে। অনেক মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছে। বাংলাদেশ অজুত প্রাণের দান। বলা হয়, অসংখ্য মানুষের এক স্বপ্নময় নির্মাণ- এই বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশ নির্মাণের নানা আন্দোলনে এবং স্বাধীনতা অর্জনে নেতৃত্ব দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু আমাদের জাতির জনক।
স্বাধীনতাযুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা। অথচ দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্ব অপরিসীম। তাই দেশের পুনর্গঠন ও সামগ্রিক উন্নয়নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত এই যোগাযোগ ব্যবস্থা। যোগাযোগ ব্যবস্থা দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। পল এইচ ল্যান্ডিসের ভাষায়- ‘উন্নয়ন হঠাৎ ঘটে যায় না। লক্ষ্য স্থির করে নিজেদের মধ্যে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন সাধন দ্বারা উন্নয়ন সম্ভব হয়’। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফিরেই উন্নয়নের লক্ষ্য স্থির করেন। এবং প্রথমেই দেশের ক্ষতিগ্রস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এবং সফল রাষ্ট্রনির্মাণের অভিজ্ঞতাকে তিনি এ ক্ষেত্রে কাজে লাগান।
মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে পাকিস্তানিবাহিনী পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেয়। এর ফলে মুক্তিযুদ্ধ-উত্তর দেশের অর্থনীতি প্রায় অচল হয়ে পড়ে। খাদ্যশস্য, শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল, কৃষিজাত দ্রব্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আমদানি ও রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে সামগ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনর্গঠনের পদক্ষেপ নেন। নৌপরিবহনের উন্নয়ন করেন। যোগাযোগের অন্যান্য ক্ষেত্রসহ বেসামরিক বিমান চলাচলের ওপর গুরুত্ব দেন।
বঙ্গবন্ধুর সরকার দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারে দেশের বড় বড় সেতু, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, টেলিফোন ভবন পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু করেন। পরে তিনি হার্ডিঞ্জ ব্রিজ, তিস্তা ও ভৈরব রেলওয়ে ব্রিজ পুনর্নির্মাণ করেন এবং তা যানবাহনের জন্য খুলে দেন। বঙ্গবন্ধু একই সঙ্গে যমুনা নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় ধ্বংসপ্রাপ্ত সব ব্রিজ পুনর্নির্মাণ করেন। তিনি চলমান সড়কগুলো মেরামতের পাশাপাশি দেশব্যাপী অতিরিক্ত ৯৭টি নতুন সড়ক নির্মাণ করেন। ঢাকা-আরিচা রুটের বড় বড় সড়ক সেতুগুলো বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে নির্মিত হয়। যমুনা নদীর উপর সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ ছিল বঙ্গবন্ধুর এক বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত। তাঁর গঠিত কমিশন ১৯৭৪ সালে ৪ নভেম্বর যমুনা সেতুর প্রাথমিক সম্ভাব্যতা রিপোর্ট প্রণয়ন করে।
বঙ্গবন্ধুর সময় ১৯৭২ সালের ৭ মার্চের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-যশোর এবং ঢাকা-কুমিল্লা রুটে বিমান চালুর ব্যবস্থা করা হয়। এ সময় আন্তর্জাতিক রুটে একটি বোয়িং সংযোজিত হয়। ১৯৭৩ সালের ১৮ জুন ঢাকা-লন্ডন রুটে বিমানের প্রথম ফ্লাইট চালু হয়। কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর নির্মাণের কাজ শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন গঠিত হয়।
বঙ্গবন্ধুর শাহাদতবরণের পর বাঙালি জাতি এক বিভীষিকাময় দৃশ্য অবলোকন করে। এরপর নানাভাবে ষড়যন্ত্র করে যারা ক্ষমতাসীন হয়েছিল- তারা গদি রক্ষায়ই বেশি মনোযোগী ছিল। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে তারা মনোযোগী ছিল না। দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো নির্মাণে তারা গুরুত্ব দেয়নি। সর্বত্র ছিটেফোঁটা কাজসহ ‘আইওয়াশ’ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে। ফলে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা পরিকল্পিতভাবে এগোয়নি। বঙ্গবন্ধুর পরিকল্পিত যোগাযোগ ব্যবস্থাকে তারা এড়িয়ে গেছে।
বর্তমান সরকার জনগণের সরকার। আওয়ামী লীগ সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে। জাতির মূল উদ্দেশ্য ‘ফোকাস’ করে পরিকল্পিত প্ল্যান নিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজ শুরু করেন। সমগ্র দেশব্যাপী সড়ক, রেল, নৌপথ ও বিমান খাতের উন্নয়নে নানা উদ্যোগ নেয়। নতুন নতুন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে। যমুনা সেতু নির্মাণ সমাপ্ত করে দেশের উত্তরাঞ্চলকে সড়ক নেটওয়ার্কে যুক্ত করে। এই যমুনা সেতু বর্তমানে ‘বঙ্গবন্ধু সেতু’ নামকরণ করা হয়েছে। ২০০১ সালে ৪ জুলাই মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তিনি সারা দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে মেগাপ্রকল্পসহ নানা পদক্ষেপ নেন। কিন্তু ২০০১-এ বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসে সব উন্নয়ন কর্মসূচিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে। ফলে বাংলাদেশ পরিকল্পিত যোগাযোগ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের পথ থেকে ছিটকে পড়ে।
২০০৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে। এরপর টানা ১৪ বছর আওয়ামী লীগ জনগণের ম্যান্ডেন্ট নিয়ে দেশ পরিচালনায় নিয়োজিত। এ সময় দেশে বেশ কয়েকটি মেগাপ্রকল্পসহ অসংখ্য সড়ক, সেতু, নৌপথ ও রেললাইনসহ সর্বত্র ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে, জনগণের জীবনমান উন্নয়নে আমূল পরিবর্তন এসেছে। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদদের ভাষায়- বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের অগ্রযাত্রায়।
২০০৯ সালে সরকার গঠিত হলে আমি যোগাযোগমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় আমি যোগাযোগ খাতের উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করি। নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করি। এবং বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিই। আমি প্রায় তিন বছর যোগাযোগমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছি। এ সময় আমি দিনরাত পরিশ্রম করেছি। সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি। যোগাযোগ খাতের উন্নয়নে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের দেশের কাজে উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছি।
এ তিন বছরে আমি সেতু বিভাগের মাধ্যমে মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টে ‘পদ্মা সেতু’ নির্মাণের যাবতীয় প্রস্তুতি কার্যক্রম শুরু করি। অল্প সময়ে দ্রুততার সঙ্গে সেতুর প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ করি। দাতাদের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করি। ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়াও শেষ করি। যেখানে বঙ্গবন্ধু সেতুর প্রস্তুতিকাজ ১০ বছর লেগেছিল, সেখানে মাত্র দুই বছরে পদ্মা সেতুর প্রস্তুতিকাজ শেষ করি। পরের ইতিহাস, সবার জানা আছে। বিশ্বব্যাংকের ষড়যন্ত্র ও মিথ্যা অভিযোগে নির্দিষ্ট সময়ে টার্গেট মোতাবেক ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতু চালু করা সম্ভব হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবিচল সিদ্ধান্তে শেষ পর্যন্ত নিজস্ব অর্থায়নে ২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা সেতু চালু করা হয়।
দেশের অর্থনীতিতে ‘পদ্মা সেতু’ একটি জাদুকরি সংযোজন। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের সক্ষমতার প্রতীক। গৌরবের প্রতীক। পদ্মা সেতু দেশের জনগণের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শ্রেষ্ঠ উপহার। পদ্মা সেতু দেশের জিডিপিতে শতকরা ১.২৬ ভাগ এবং দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে শতকরা ২.৩ ভাগ অবদান রাখবে।
এ সময় আমি ঢাকা-এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ পয়েন্টে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী নদীর নিচ দিয়ে কর্ণফুলী টানেল, ঢাকার জাহাঙ্গীর গেট, রোকেয়া সরণি টানেল, বেকুটিয়া ব্রিজ নির্মাণ ও বঙ্গবন্ধু সেতুর দুপাড়ে ‘বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি স্থাপন’ প্রকল্প গ্রহণ করি। ঢাকা মহানগরীর যানজাট নিরসন ও যাত্রী পরিবহনে ‘মেট্রো রেল’ চালুর সিদ্ধান্ত নিই। এগুলো এখন দৃশ্যমান।
আমি যোগাযোগমন্ত্রী থাকাকালে তিন বছরে অনেক ব্রিজ নির্মাণ করে চালু করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে মোহাম্মদপুর বসিলায় শহীদ বুদ্ধিজীবী সেতু। গাজীপুরে আহসানউল্লাহ মাস্টার উড়াল সেতু। ডেমরায় সুলতানা কামাল সেতু। চট্টগ্রামের ৩য় কর্ণফুলী নদীর ওপর শাহ আমানত সেতু। বরিশালে দপদপিয়া নদীর ওপর শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতু। ভোগাই নদীর ওপর ভোগাই সেতু প্রভৃতি।
এ ছাড়া দেশব্যাপী আরো কয়েকটি ব্রিজ নির্মাণের প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করি। ব্রিজগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো: কাজিরটেক ৭ম চীন-বাংলাদেশ সেতু। লেবুখালি ব্রিজ। কুয়াকাটা সড়কে- খেপুপাড়ায় আন্ধামানিক নদীতে শেখ কামাল সেতু। হাজিপুর সোনাতলা নদীর ওপর শেখ জামাল সেতু এবং মহিপুরে শিববাড়িয়া নদীর ওপর শহীদ শেখ রাসেল সেতু। কালনা ব্রিজ। দ্বিতীয় যমুনা ব্রিজ। তৃতীয় শীতলক্ষ্যা ব্রিজ। রুমা সেতু। মেঘনা-গোমতি ব্রিজ। কাচদহ সেতু। গোপালগঞ্জে শেখ লুৎফর রহমান সেতু। দ্বিতীয় কাঁচপুর ব্রিজ নির্মাণ। চট্টগ্রাম-কালুঘাট রেলওয়ে-কাম রোড ব্রিজ। বরিশালে বিভিন্ন উপজেলা কানেকটিং-এর জন্য ৪টি ব্রিজ নির্মাণে উদ্যোগ নিই। এগুলো নির্মাণের পর বর্তমানে চালু হয়েছে। প্রতিটি ব্রিজ দেশব্যাপী এক অভিন্ন সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে নির্মাণ করা হয়েছে।
আমার মন্ত্রিত্বকালে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় দেশব্যাপী এক অভিন্ন ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনা গৃহীত হয়। এরমধ্যে রয়েছে: ঢাকা-চট্টগ্রাম ৪-লেন সড়ক। জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ হাইওয়ে নির্মাণ। মিরপুর-এয়ারপোর্ট ফ্লাইওভার নির্মাণ। রংপুরে ৪-লেন সড়ক। ডেমরা-আশুলিয়া ৪-লেন সড়ক নির্মাণ। সায়দাবাদ থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত ৮-লেন সড়ক। যাত্রাবাড়ী-ডেমরা ৪-লেন সড়ক। মোংলায় ১২টি সড়ক নির্মাণ। মাস র্যাপিড ট্রানজিট সিস্টেম। জয়দেবপুর-ঢাকা-হাটিকামরুল ৪-লেন সড়ক। ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা ৪-লেন সড়ক। বগুড়া-নাটোর সড়ক প্রশস্তকরণ। রংপুর বাইপাস। সাউথ-ওয়েস্ট রোড নেটওয়ার্ক প্রজেক্ট। ঢাকা বাইপাস সড়ক। ও ঢাকা রিং রোড নির্মাণ। এ ছাড়া এ সময় যাতায়াতের সুবিধার জন্য ঢাকা শহরে ৩২৫টি চায়নিজ অরিজিন বাস চালু করা হয়।
যোগাযোগমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে আমি রেলকে পরিবেশবান্ধব, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী পরিবহন মাধ্যমে গড়ে তোলারও উদ্যোগ নিই। রেলওয়ের উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ বাস্তবায়ন শুরু করি। উল্লেখ্য, পদক্ষেপ হলো: দেশের রেলবিহীন প্রতিটি জেলায় ধাপে ধাপে রেলপথ সম্প্রসারণ করা। ঢাকা-চট্টগ্রাম সেকশনে লাইন ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি করা ও ডাবল-লাইনে উন্নীত করা। নতুন কোচ, ইঞ্জিন সংগ্রহপূর্বক আরও নতুন ট্রেন চালুর মাধ্যমে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ যাত্রী চাহিদা মেটানোর উদ্যোগ নেয়া। রেলওয়েতে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ প্রদান। রেলকে ধীরে ধীরে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের চেষ্টা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে স্বল্প দূরত্বে যাতায়াত সহজ ও যানজট কমিয়ে আনার জন্য কমিউটার ট্রেন সার্ভিস চালু করেছি।
এ সময়, ঢাকা মহানগীর যানজট নিরসন ও যাত্রী পরিবহনে মেট্রোরেল চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করি। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের মাধ্যমে রেলওয়েকে আরও গতিশীল ও দক্ষ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রেল পরিবহন নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হওয়া। পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগসহ যমুনা নদীর ওপর পৃথক রেল ব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা। দ্বিতীয় ভৈরব ও তৃতীয় তিস্তা রেল সেতু নির্মাণ। যাত্রীসেবা নিশ্চিত করা ও মালামাল পরিবহনে সক্ষমতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক লোকোমোটিভ, যাত্রীবাহী কোচ, ফ্লাটওয়াগন, ব্রেকভ্যানসহ অন্যান্য সরঞ্জাম সংগ্রহ করা।
আমার তিন বছর দায়িত্ব পালনের সময়ে দেশে অভিন্ন সড়ক নেটওয়ার্কের লক্ষ্যে এ সব প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কোনো সরকারের তিন বছরে এত মেগাপ্রকল্প এবং জনগণের সুবিধাবৃদ্ধির কর্মসূচি নেয়া হয়নি। এ সব কর্মসূচির অধিকাংশ এখন চালু হয়েছে। ফলে এখন জনগণ এ সব সড়ক ও ব্রিজের সুবিধা ভোগ করছে।
২০১২ থেকে ২০২৩ সাল। এ সময় দেশে সড়ক, রেল, নৌপথ ও বিমান পথের উন্নয়নে নানা কর্মসূচি গৃহীত হয়েছে। এবং আমার সময় গৃহীত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এখন সারা বাংলাদেশ সড়ক নেটওয়ার্কে যুক্ত। বঙ্গবন্ধু ব্রিজ সমগ্র উত্তরাঞ্চলকে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যুক্ত করেছে। ‘পদ্মা সেতু’ সমগ্র দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যুক্ত করেছে। দেশব্যাপী সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন হয়েছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ২২ হাজার কিলোমিটার মহাসড়ক নেটওয়ার্ক রয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৪৫৩ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক ৪-লেন বা ৬-লেনে উন্নীত হয়েছে।
এ ছাড়া, বাংলাদেশে প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা চালু হয়েছে। ৮-লেন বিশিষ্ট যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর, ৪-লেন বিশিষ্ট ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিহ, নবীনগর-ডিইপিজেড-চন্দ্রা, গাজীপুর-টাঙ্গাইলসহ বেশকিছু মহাসড়কের কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে ৪৪১ কিলোমিটার মহাসড়ক উভয়পাশে পৃথক সার্ভিস লেনসহ এবং ১৭৬ কিলোমিটার মহাসড়ক সার্ভিস লেন ছাড়া ৪-লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলমান রয়েছে। অধিকন্তু সারা দেশের ১৭৫২ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক উভয় পাশে সার্ভিস লেনসহ ৪-লেনে উন্নীতকরণে নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে। আরো ৫৯০ কিলোমিটার জাতীয় সড়ক সার্ভিস লেনসহ ৪-লেনে উন্নীতকরণের সম্ভাব্যতা যাচাইসহ বিস্তারিত নকশা প্রণয়নের কাজ চলছে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর জাতীয় ও মহাসড়ক নির্মাণে অবদান অব্যাহত রেখেছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তর গ্রাম থেকে গ্রাম, গ্রাম থেকে উপজেলা এবং জেলা শহরের সঙ্গে উপজেলার যাতায়াত সহজিকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাজার হাজার কিলোমিটার কাঁচা ও পাকা সড়ক নির্মিত হয়েছে। ফলে এখন জনগণের দোরগোড়ায় সড়ক নেটওয়ার্ক পৌঁছে গেছে।
দুর্গম পাহাড়ি তিন জেলার মানুষের সহজ যাতায়াতের জন্য সড়ক নির্মিত হয়েছে। উন্নত দেশগুলোর মতো বাংলাদেশের মানুষ, ঢাকার জনগণ মেট্রোরেলে যাতায়াত করছে। মাটির তলদেশ দিয়ে ঢাকা মেট্রোরেলের কাজও শুরু হয়েছে। ঢাকার যানজট নিরসনে বিভিন্ন ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে। চাহিদার ভিত্তিতে আরো ফ্লাইওভার ও সড়ক নির্মাণে প্রস্তুতিকরণ কাজ প্রণয়ন করা হয়েছে। বিশ্বমানের যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য আরো বেশ কিছু মেগা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল-ভুটানকে নিয়ে সাউথ এশিয়া সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) আঞ্চলিক সহযোগিতার আওতায় একটি সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজ এগিয়ে চলেছে।
পরিপ্রেক্ষিতে পরিকল্পনা ২০৪১ অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের সব মহাসড়ক ৬-লেন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে দেশের সব মহাসড়ক ৮-লেনে উন্নীত করা হবে। দেশের প্রতিটি জেলার সঙ্গে রেল পরিসেবা চালু করা হবে। বাংলাদেশে নৌপথের দৈর্ঘ্য ২৪ হাজার কিলোমিটার। পরিবহনযোগ্য নৌপথ প্রায় ৬ হাজার। এই নৌপথের উন্নয়নে সরকার নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে সড়ক, রেল, আকাশ ও নৌপথকে সমান গুরুত্ব দিয়ে একটি আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজও চলছে। টোকিওতে অনুষ্ঠিত এক বিজনেস সেমিনারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশকে আমরা এ অঞ্চলের সব দেশের সঙ্গে সড়ক, রেল, জল ও আকাশ পথে যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে গড়ে তুলতে চাই’।
বর্তমান বিশ্ব ‘গ্লোবাল ভিলেজ’-এ রূপান্তরিত হয়েছে। তাই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে আকাশ পথের এখনো কোনো বিকল্প নেই। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আকাশপথের যোগাযোগ গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, আকাশপথের উন্নয়নের মাধমে দেশের উন্নয়ন দ্রুত করা সম্ভব। তাই তিনি বাংলাদেশ বিমানের বহরে নতুন নতুন বিমান সংযোজন করেছেন। ঢাকার বিমান বন্দরের উন্নয়ন করেছেন। থার্ড টার্মিনাল যুক্ত করে বিমান-ওঠানামা ও যাত্রীসেবা বাড়িয়েছেন। তিনি সিলেট, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার বিমান বন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করেছেন। দেশের অন্যান্য বিমান বন্দরের সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়েছেন। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী আরেকটি নতুন বিমান বন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন। বিভিন্ন সম্ভাব্য জায়গা খোঁজা হচ্ছে। আশা করি, এটা সার্বিক বিবেচনায় মাদারীপুরের শিবচরে হবে। যেহেতু মুন্সীগঞ্জে প্রস্তাবটি নিয়ে অগ্রসর হওয়া যায়নি।
টেলিযোগ ব্যবস্থা বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারই ‘অপটিক্যাল ফাইভার কেবলস’ সংযোজনের মাধ্যমে বিশ্বের সঙ্গে, দেশের সঙ্গে সরাসরি নেটওয়ার্ক যোগাযোগ স্থাপন করেছে। দেশে বর্তমানে ৪টি ভূ-উপকেন্দ্র রয়েছে। বিদেশি নির্ভরশীলতা কমাতে ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ স্থাপন করা হয়েছে। টেলিভিশন ও বেতারকে কার্যকর মাধ্যম হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। আজ ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বকে বাংলাদেশের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। এ জন্য পৃথক আইসিটি মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বর্তমান সরকার টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাকে আধুনিকীকরণ করে বাংলাদেশকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে’ রূপান্তরের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
যে কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর আবর্তিত হয় দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। বাংলাদেশের জন্য এ কথাটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলে কৃষিজাত দ্রব্যাদি, শিল্পের কাঁচামাল, শিল্পজাত পণ্যসামগ্রী সহজ ও স্বল্প ব্যয়ে স্থানান্তরের সুবিধা হয়। এর ফলে দেশের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। শিল্প ও ব্যবসার প্রসার ঘটে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত হয়। এ জন্যই যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ‘অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি’র বাহন বলা হয়।
অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্পর্কে পণ্ডিত কার্ল সিডম্যান বলেন, ‘অর্থনৈতিক উন্নয়ন একটি সম্প্রদায় বা অঞ্চলের জন্য উন্নত ও বিস্তৃতভাবে ভাগ করা অর্থনৈতিক কল্যাণ ও জীবনযাত্রার মান তৈরি করতে ভৌত, মানবিক, আর্থিক ও সামাজিক সম্পদ তৈরি এবং ব্যবহার করার একটি প্রক্রিয়া’। আর সম্পদ তৈরি ও তা মানুষের কল্যাণে ব্যবহারে দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রয়োজন হয়। এ প্রসঙ্গে হেনরি এস ফায়ারস্টোন বলেন, ‘নেতৃত্বের সবচেয়ে বড় সাফল্য হলো মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ও তাদের সন্তুষ্টি অর্জন’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসাধারণ নেতৃত্বগুণ এবং দেশের মানবিক, সামাজিক ও আর্থিক খাতের পরিকল্পতি উন্নয়নে, উন্নয়নের সঠিক ধারা অনুসরণ করায় আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের ঈর্ষণীয় অগ্রযাত্রায়। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিটি কর্মসূচি, উন্নয়ন কর্মসূচি দেশের মানুষের কল্যাণে বাস্তবায়িত হচ্ছে। শেখ হাসিনা উন্নয়নবান্ধব নেত্রী। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নবান্ধব নেত্রী। শিক্ষাবান্ধব নেত্রী। বিদ্যুৎবান্ধব নেত্রী। ডিজিটাল বাংলাদেশের নেত্রী। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার একচ্ছত্র নেত্রী। আজ বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। গত দেড় দশকে দেশে যে উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়েছে, সে উন্নয়নের ঊর্ধ্বগতি দেখে সারা বিশ্বের নেতারা বিস্মিত, অভিভূত। বাংলাদেশ ভাগ্যবান- আমরা ভাগ্যবান যে শেখ হাসিনার মতো উদ্যোগী ও সাহসী এবং দেশপ্রেমিক নেতা আমরা পেয়েছি। আল্লাহর কাছে আমরা শোকরিয়া আদায় করছি। মহান আল্লাহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দীর্ঘজীবী করুন।
বঙ্গবন্ধু বাঙালির অধিকার আদায় ও স্বাধীনতার জন্য জীবনের অধিকাংশ সময় জেল খেটেছেন। তিনি সারাটা জীবন, নিজের মানুষের, বাঙালিকে ভালোবেসেছিলেন। বাঙালির অধিকার আদায়ের জন্য আমৃত্যু সংগ্রাম করেছেন। এ প্রসঙ্গে সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্টকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু নিজেই বলেছিলেন- ‘My strength is I love my people. My weakness is I love them too much.’
আজ বঙ্গবন্ধু আমাদের মাঝে নেই। তাঁর সততা, দেশপ্রেম, আদর্শ ও কর্মপ্রয়াস নিবিড়ভাবে গ্রথিত হয়ে আছে বাঙালির অস্তিত্বে, বাঙালির অস্তিমজ্জায়। বঙ্গবন্ধু’র আদর্শ যা আমাদের চিন্তা-চেতনায় একাকার তা বাস্তবায়নের মাধ্যমেই আমরা গড়ে তুলব আগামীর বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা, বঙ্গবন্ধুর সেই ‘উন্নয়ন পতাকা’ নিয়ে এগিয়ে চলেছেন। উন্নয়ন পতাকা নিয়ে এগিয়ে চলার উদ্দেশ্য হলো- বাংলাদেশকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলা। জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন করা। বঙ্গবন্ধুর আজন্ম স্বপ্ন- সোনার বাংলা গড়ে তোলা। প্রসঙ্গত প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিককালের দুটি উক্তি প্রণিধান্যযোগ্য। উক্তি দুটো হলো: ‘আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে দেশের উন্নয়ন করে’। ‘আমার কাছে ক্ষমতা মানেই হচ্ছে জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন করা। জনগণের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করা’। আসুন, আমরা সবাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করি। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নসহ দেশের অর্থনৈতিক খাতগুলোকে শক্তিশালী করে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলি।
লেখক: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিককর্মী, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, সমাজসেবক, শিক্ষা-উদ্যোক্তা ও সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী
ময়মনসিংহের গৌরীপুরে র্যাবের অভিযানে মাদকারবারিদের হামলায় আটক ব্যক্তি হাতকড়াসহ পালিয়ে গেছে। এ সময় র্যাবের দুই সদস্য আহত হয়েছেন। গত শুক্রবার রাতে সহনাটি ইউনিয়নের দৌলতাবাদ গ্রাম এ ঘটনা ঘটে।
পালিয়ে যাওয়া মাদক কারবারির নাম মিজানুর রহমান মিঠু (২৮)। এ ঘটনায় র্যাবের উপপরিদর্শক (এসআই) আনিছুর রহমান বাদী হয়ে গৌরীপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, র্যাব-১৪ কিশোরগঞ্জ কোম্পানি-২ একটি দল ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার দৌলতাবাদ গ্রামের জিকু মিয়ার বাড়িতে অভিযান চালায়। মাদক ব্যবসায়ীরা র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে দুইটি পলিথিনের ব্যাগ ইয়াবা নিয়ে পালানোর সময় মিজানুর রহমান মিঠুকে আটক করে। এ সময় মিঠুর চিৎকারে তার সহযোগী দৌলতাবাদ গ্রামের স্বপন মিয়ার ছেলে জিকু মিয়া (৩০), মো. রফিকুল ইসলাম ওরফে টুকু (২৫), স্বপন মিয়ার স্ত্রী ফরিদা বেগম (৪৫), মৃত গোলাম মোস্তফার স্ত্রী জুলেখা বেগমসহ (৫০) ৪/৫ জন লাঠি সোটা, বল্লম ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে র্যাব সদস্যদের ওপর হামলা চালায়।
এই সুযোগে আটক মিঠু হাতকড়াসহ পালিয়ে যায়। তাদের হামলায় র্যাব সদস্য কনস্টেবল সীমান্ত দে ও সৈনিক ওয়ালীদ হাসান আহত হয়। পরে তাদের গৌরীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।
বৈরী আবহাওয়ার কারণে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে জাহাজ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন। ফলে শনিবার সকালে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে কোনো জাহাজ ছেড়ে না যাওয়ায় প্রায় দেড় শতাধিক পর্যটক দ্বীপে আটকা পড়েছেন।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, ‘সাগর উত্তাল রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নৌপথে যাতায়াতে ঝুঁকি রয়েছে। তাই টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে সব ধরনের জলযান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নির্দেশনা অনুযায়ী পুনরায় এই রুটে জাহাজ চলাচল শুরু হবে।’
সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমানের বরাতে তিনি বলেন, ‘জাহাজ চলাচল বন্ধ ঘোষণার আগে সেন্টমার্টিনে অবস্থান করা পর্যটকদের উদ্দেশ্যে দ্বীপ ছাড়ার জন্য মাইকিং করা হয়েছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কোনো ধরনের জলযান চলাচল করবে না, তাও বলা হয়েছে। এরপরও দেড় শতাধিক পর্যটক দ্বীপে থেকে গেছেন।’
তাদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও বলেন, ‘যেহেতু তারা নির্দেশনা না মেনে দ্বীপে থেকে গেছেন। তাই পরিস্থিতি ভালো না হওয়া পর্যন্ত সেখানেই থাকতে হবে। তাদের আনতে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি এখন নেই।’
সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ‘মাইকিং করার পরেও পর্যটকরা তাদের ইচ্ছায় থেকে গেছেন। তবে এখানে ভয় নেই। স্থানীয়রা যেভাবে থাকছি, পর্যটকদেরও সেভাবে নিরাপদে রাখা হবে।’
ফেনীর ছাগলনাইয়া পৌর এলাকায় সেপটিক ট্যাংক থেকে দুই নির্মাণ শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার সকালে পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের থানাপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন, খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় থানার রামগড় করইয়া বাগান এলাকার ছেরাজুল হকের ছেলে মাইন উদ্দিন ও বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানার সাংদিয়া গ্রামের রবীন্দ্র দাসের ছেলে বিকাশ চন্দ্র দাস।
স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার বিকেল থেকে তাদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। আজ সকালে নির্মাণাধীন ভবনের আশপাশে খোঁজ করতে এলে দেখতে পাওয়া যায় তাদের মরদেহ সেপটিক ট্যাংকের ভেতরে পড়ে আছে। পরে পুলিশকে খবর দিলে তারা ঘটনাস্থলে এসে ট্যাংক ভেঙে মরদেহ দুটি উদ্ধার করে।
ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী, পরশুরামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) মো. ওয়ালী উল্লাহ বলেন, ‘সেপটিক ট্যাংক ভেঙে মরদেহ দুটি উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি। একজন শ্রমিক সেন্টারিং খোলার জন্য নিচে নামলে সেখানে গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরে আরেকজন শ্রমিক তাকে উদ্ধার করার জন্য নেমে তিনিও গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে অজ্ঞান হয়ে সেখানে থাকা পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করে। তারপরেও আমরা পুরো বিষয়টিকে তদন্ত করছি। পাশাপাশি ময়নাতদন্তের মাধ্যমে আসল ঘটনাটি উদঘাটন করা হবে।’
কুমিল্লার দৌলতপুরে ছায়া বিতান এলাকা থেকে একটি বিদেশি পিস্তল দুই রাউন্ড গুলি এবং একটি ম্যাগজিনসহ এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার নারীর নাম সেতারা আক্তার (২৪)। তিনি দৌলতপুর ছায়াবিতান এলাকার বাসিন্দা। এ সময় মো. দাউদ (৩০) নামে একজন পালিয়ে যায়। সম্পর্কে তিনি সেতারা আক্তারের ভাই।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান।
তিনি বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার দিবাগত গভীর রাতে কোতয়ালী মডেল থানার একটি টিম অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় ছায়া বিতান এলাকার একটি ভাড়া ঘরের ভেতর তল্লাশি চালিয়ে পিস্তল, গুলি ও ম্যাগজিন উদ্ধার করা হয়। এসময় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে আরেকজন পালিয়ে যায়।’
এ বিষয়ে কোতয়ালী মডেল থানায় অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বিয়ের গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে বাঁশ দিয়ে ডেকোরেশনের কাজ শুরু করে জনপ্রিয় হয়েছে সিরাজ কুঠিরশিল্প। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে কাঠ ও বেতের ফার্নিচারের পাশাপাশি বাঁশের ফার্নিচার এগিয়ে যাচ্ছে।
বাজারে বিভিন্ন নকশা ও কারুকার্যসম্পন্ন কাঠের ফার্নিচার বহু আগে থেকেই পাওয়া গেলেও এখন বাঁশের ফার্নিচারগুলো পাওয়া যায়। স্থানীয় পাহাড় টিলা থেকে সংগৃহীত বাঁশ দিয়ে তৈরি এসব ফার্নিচারের চাহিদা বাড়ছে দেশি-বিদেশি পর্যটক ও স্থানীয়দের কাছে।
কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগরের আমির হোসেন সিরাজ নামে এক যুবক ২০০৩ সালে ২০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে মাত্র একজন শ্রমিক দিয়ে বাঁশের ফার্নিচারের কারখানা শুরু করেন। এখন সেখানে কাজ করেন ১০ থেকে ১৫ জন শ্রমিক।
সরেজমিন উপজেলার শমশেরনগর ইউনিয়নের শমশেরনগর-কমলগঞ্জ সড়কের পাশে বড়চেগ গ্রামের আমির হোসেন সিরাজের বাঁশের ফার্নিচারের কারখানায় দেখা যায়, তিনি নিজ গ্রামে গড়ে তুলেছেন বাঁশ ও বেতের আধুনিক ফার্নিচারের কারখানা। বড় বড় স্থানীয় ফার্নিচারের দোকানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাঁশের ব্র্যান্ডের ফার্নিচার তৈরি করছেন। গ্রাম থেকেই তিনি সারা দেশসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বিক্রি করছেন বাঁশের ফার্নিচার। নিজ বাড়িতে বাঁশ দিয়ে দুতলা একটি বাড়িও বানিয়েছেন।
বিশেষ করে এখানে আধুনিক ডিজাইনের সোফাসেট, খাট, ডাইনিং টেবিল, চেয়ার, আলনা, ড্রেসিং টেবিল, দরজা, জানালা, ফুলের টব, রিডিং টেবিল, টেবিল ল্যাম্প, পেনস্ট্যান্ড বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয়। এ ছাড়া রিসোর্ট ও কটেজের ফার্নিচার, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ও অফিসের ফার্নিচারসহ বিভিন্ন ধরনের চাহিদাসম্পন্ন আসবাবপত্র তৈরি করে দেয়া হয়।
স্থানীয়রা জানান, সিরাজ তার একান্ত প্রচেষ্টায় এই শিল্প গড়ে তুলেছেন। তুলনামূলক বাঁশের ফার্নিচারের দাম কম। বিশেষ করে পর্যটন এলাকা হওয়ায় অনেক মানুষ এখানে ঘুরতে আসেন এবং এ পথ দিয়ে শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ হয়ে পর্যটকরা বড়লেখায় মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত দেখতে যান। পর্যটকদের কাছে চাহিদা বাড়ায় এ কুঠিরশিল্প ভালোই চলছে। এখানে স্থানীয় এলাকার অনেক যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে।
সিরাজ কুটিরশিল্পে যারা কাজ করেন তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফার্নিচার তৈরির জন্য প্রথমে বাঁশ ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হয়। এরপর বাঁশের আকার অনুযায়ী আলাদা আলাদা রাখতে হয়। শুকনোর পর পোকায় না ধরার জন্য ওষুধ দিয়ে আবার শুকাতে হয়। একটি বড় ফার্নিচার তৈরি করতে ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ লেগে যায়। ছোট আইটেমগুলো সবচেয়ে বেশি চলে। বেশির ভাগ মানুষ শখের বসে এগুলো কিনে নিয়ে যায়। যতদিন যাচ্ছে মানুষ বাঁশের ফার্নিচারের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন।
সিরাজ কুটিরশিল্পের স্বত্বাধিকারী আমির হোসেন সিরাজ বলেন, ‘এখন থেকে ২০ বছর আগে শুরু করেছিলাম বাঁশের ফার্নিচারের কারখানা। শুরুতে প্রতিবেশীদের বিয়ের গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে বাঁশের ডেকোরেশন দিয়ে শুরু হয় কাজ। এরপর বাণিজ্যিক ভাবনায় বাঁশের ফার্নিচার তৈরি শুরু করি। প্রথম দিকে সাড়া কম পেলেও গত এক দশক ধরে খুব ভালোই চলছে। শৌখিন মানুষজনের কাছে বাঁশের ফার্নিচারের কদর বেড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘পর্যটন এলাকা থাকায় এখানে দেশি ক্রেতার পাশাপাশি অনেক বিদেশি ক্রেতা আসেন। অনলাইনে অর্ডার নিয়ে বিক্রি করে কুরিয়ার সার্ভিসে ফার্নিচার পাঠান। কেউ কেউ আবার বিদেশেও পাঠান। বিদেশে এর প্রচুর চাহিদাও আছে। সবকিছু মিলে বছরে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকার ফার্নিচার বিক্রি হয়।’
মৌলভীবাজার বিসিকের উপব্যবস্থাপক বিল্লাল হোসেন ভূঁইয়া সিরাজ কুঠিরের বাঁশের ফার্নিচারের বিষয়ে বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ শিল্পের জন্য ব্যাংক ছাড়া আমরা বড় ঋণ দিতে পারি না। তবে ছোট ছোট ঋণের জন্য আমাদের কাছে এলে তাদের সহযোগিতা করতে পারি। এ ক্ষেত্রে সিরাজ কুঠিরশিল্প সহযোগিতা চাইলে তাকে সহযোগিতা দেয়া হবে।
বাগেরহাটের রামপালে ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে রাকিব হোসেন সজল (২৫) ও রাসেল শেখ (২৬) নামে দুই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে উপজেলার বড় দূর্গাপুর পুটিমারি গ্রামে একটি ঘেরের টংঘরে ওই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। পুলিশ রাতেই অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত তিনজনের মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
গ্রেপ্তার রাসেল উপজেলার পাড়গোবিন্দপুর গ্রামের ফরহাদ শেখের ছেলে এবং সজল কালেখার গ্রামের আজমল হোসেনের ছেলে।
এ ঘটনায় আরেক অভিযুক্ত রহমত (২৬) পলাতক রয়েছেন। বিস্তারিত পরিচয় জানাতে পারেনি পুলিশ।
বাগেরহাট জেলা পুলিশের মিডিয়া সেলের প্রধান সমন্বয়ক ইন্সপেক্টর বাবুল আক্তার শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, ওই কিশোরী তার মামা বাড়িতে যাওয়ার পথে খুলনা-মোংলা মহাসড়কের রনসেন মোড়ে পৌঁছালে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রহমত ও রাসেল নামে দুজন তাকে একটি মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে বড় দুর্গাপুর পুটিমারি গ্রামের পলাশ নামে একজনের ঘেরের টংঘরে নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকে অবস্থান করছিল রাকিব হোসেন সজল। পরে ৩ যুবক সংঘবদ্ধভাবে ওই কিশোরীর ওপর নির্যাতন চালায় করে। পরে রাত ৭টার দিকে মাহেন্দ্রযোগে ভুক্তভোগীকে তার নিজ বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।
এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য, সাবেক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম শাহজাহান কামাল মারা গেছেন।
শনিবার ভোর ৩টা ১৯ মিনিটে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।
মৃত্যুর বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন শাহজাহান কামালের ছোট ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল।
তিনি বলেন, ‘বার্ধক্যজনিত রোগে আমার বড় ভাই শাহজাহান কামাল মারা গেছেন। বেলা ১১টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় প্রথম ও লক্ষ্মীপুর আদর্শ সামাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।’
শাহজাহান কামাল লক্ষ্মীপুর পৌরসভার আটিয়াতলি এলাকার ফরিদ আহমেদ ও মাছুমা খাতুন দম্পতির বড় ছেলে। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও ৩ মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
তিনি ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালী-১১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ ও ১৮ সালের তিনি লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরমধ্যে ২০১৮ সালে প্রায় এক বছর তিনি বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
শাহজাহান কামাল ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে লক্ষ্মীপুর জেলায় গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। পরবর্তী সময়ে তিনি নবগঠিত লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ১৯৮৫ সালে লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১১ সালে তিনি লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
নাটোরের নলডাঙ্গায় হালতি বিলে ঘুরতে এসে নৌকা ডুবে দুই ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় বিলের খোলাবাড়িয়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
মৃতরা হলো জেলার লালপুর উপজেলার আড়বাব এলাকার আরিফুল ইসামের ছেলে সাদমান আব্দুল্লাহ (১১) এবং আব্দুর রহমান (৯)।
পুলিশ জানায়, হালতি বিলে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসেন আরিফুল ইসলাম। নৌকায় চড়ে বিলের মধ্যে বেড়ানোর সময় খোলা বাড়িয়া এলাকায় পল্লী বিদ্যুতের তারে বেধে ১৭ যাত্রী নিয়ে নৌকাটি উল্টে যায়। এসময় নৌকার অন্য যাত্রীরা সাঁতার কেটে পাড়ে উঠতে পারলেও দুই ভাই সাদমান আব্দুল্লাহ ও আব্দুর রহমান নিখোঁজ ছিল।
নলডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম জানান, এ ঘটনায় স্থানীয়রা পুলিশে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে নাটোর ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয়। পরে ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা তাদের দুই ভাইকে উদ্ধার করলে সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসক ওই দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঞা মারা গেছেন।
শনিবার ভোর ৩টার দিকে রাজধানীর একটি বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান (ইন্না লিল্লাহি... রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে আব্দুস সাত্তারের একমাত্র ছেলে মাইনুল হাসান তুষার বলেন, ‘শনিবার ভোর ৩টায় ঢাকায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি ৭ মাসেরও বেশি সময় ধরে কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। শারিরীক অবস্থা খারাপ হলে এক সপ্তাহ আগে এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসা চলছিল।’
আব্দুল সাত্তার ভূঞা ১৯৩৯ সালের ১৬ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার অরুয়াইল ইউনিয়নের পরমানন্দপুর গ্রামের আব্দুল হামিদ ভূঞা ও রহিমা খাতুনের সংসারে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে আইনজীবী পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সভাপতি পদে ছিলেন দীর্ঘদিন।
গত ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে জয় পান আব্দুস সাত্তার ভূঞা।
এর আগে আব্দুস সাত্তার ভূঞা ১৯৭৯ সালে তৎকালীন কুমিল্লা-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ও জুনের নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে তৎকালীন ৪ দলীয় জোট সরকার থেকে টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী হিসেবে আবদুস সাত্তার আইন, মৎস্য ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য হিসেবে জয়লাভ করেন। ২০২৩ সালের ২ জানুয়ারি তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়।
মেহেরপুর সদর উপজেলার চকশ্যামনগর গ্রামের কপিচাষি রফিকুল। তিনি নিজের ও বর্গা নেয়া ১১ বিঘা জমিতে আগাম জাতের বাঁধাকপি চাষ করেছেন। প্রতি বিঘা জমিতে কপি চাষাবাদে গড়ে অন্তত ৩৫ হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে। স্বপ্ন ছিল আগাম জাতের কপি চাষ করে ভালো দাম পেয়ে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি মুক্ত হবেন ঋণের বোঝা থেকে। কিন্তু কপিখেতে চারা গজিয়ে গাছ বাড়লেও অদ্যাবদি কোনো পাতা বাঁধেনি। ফলে তিনি অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছেন যে, এ কপিতে আর পাতা বাঁধবে না এবং বাজারজাতও করা যাবে না।
জেবিটি সিডসের রাজাসান কপির বীজ কিনে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তিনি এবং তার মতো আরও ৩ শতাধিক কপিচাষি। আজ সেই কপি চাষ করে অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে সড়কে এসে মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন তিনিসহ তার মতো শতাধিক কপিচাষি। উদ্দেশ্য একটাই যদি প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ক্ষতিপূরণ হিসেবে মূলধনটি ফেরত পান।
সবজি চাষে দেশব্যাপী বেশ খ্যাতি রয়েছে কৃষিনির্ভর মেহেরপুর। অনেক চাষির কপিখেতে কপি বড় হলেও পাতা বাঁধেনি। অথচ এ সময় কপি বাজারজাত করে লাভবান হওয়ার কথা চাষিদের। অথচ গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে সদর উপজেলার বন্দরনগরের সড়কে শতাধিক কৃষক অসাধু বীজ ব্যবসায়ীর লাইসেন্স বাতিলসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও তাদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন।
কৃষকদের অভিযোগ মানহীন নিম্নমানের বীজ চাষিদের কাছে প্রতারণা করে বিক্রয় করায় তাদের এমন ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। তাদের দাবি জেলার গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার প্রায় সাড়ে তিন শ চাষি এই ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তাই বাধ্য হয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছেন তারা।
আর অভিযোগ ওঠা বীজ ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা কোনো নিম্নমানের বীজ কৃষকদের কাছে সরবরাহ করেননি। তবে কৃষি অফিস বলছে, ঘটনাটি তদন্ত করে দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা কৃষি অফিসের তথ্যানুযায়ী, মেহেরপুরের গাংনী ও মুজিবনগর মাঠে সব ধরনের সবজি চাষ করা হয়। শীতের আগাম সবজি হিসেবে এ অঞ্চলে সাড়ে ৭৫০ হেক্টর জমিতে ফুলকপি ও বাঁধাকপির চাষ করা হয়েছে। এখন মাঠে রয়েছে আগাম বাঁধাকপি। তবে এখন বাঁধাকপির ফলন বিপর্যয় ঘটেছে।
বীজ কোম্পানির লোকজন নিম্নমানের বীজ সরবরাহ করায় কপির পাতা বাঁধেনি। নিয়ম অনুযায়ী ৬০ থেকে ৬৫ দিনের মধ্যে পাতা বাঁধার কথা। অথচ চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে জেবিটি সিডসের রাজাসান কপির বীজ কিনে চাষিরা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
জানা গেছে, আগাম বাঁধাকপি চাষে প্রতিবছর কৃষকরা লাভবান হলেও এবার ফলন বিপর্যয় ঘটেছে বাঁধাকপিতে। বীজ ব্যবসায়ীরা নিম্নমানের বীজ সরবরাহ করায় গাংনী ও মুজিবনগর এলাকায় অন্তত ৩০০ হেক্টর জমির কপির পাতা বাঁধেনি। এতে অন্তত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন কৃষকরা।
চাষিরা জানান, স্থানীয় বাজার থেকে জেবিটি সিডসের সরবরাহ করা রাজাসান বীজ ব্যবহার করা হয়। বীজ থেকে গাছ জন্মালেও এখন পাতা বাঁধছে না। অন্যান্য কোম্পানির দেয়া বীজ রোপণ করে তারা বাঁধাকপি বাজারে তুলেছেন অথচ জেবিটি কোম্পানির রাজাসান কপি আজও পাতা বাঁধেনি। একেকটি গাছের ৩-৪টি ডগা গজিয়েছে। আবার অনেকটা পাতা কোঁকড়ানো। সার দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। বিঘাপ্রতি ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে এ কপি চাষে। অন্তত সাড়ে তিন শ চাষি এ প্রতারণার শিকার।
সরেজমিনে দেখা যায়, গাংনীর সাহারবাটি নওপাড়া ও মুজিবনগরে রাজাসান বীজ ব্যবহারকারীদের কপিখেতে কপির পাতা বাঁধেনি। কপির পাতা পচে যাচ্ছে।
অন্যরা জেবিটি ছাড়া বিভিন্ন কোম্পানির দেয়া বীজ রোপণ করে তারা বাঁধাকপি বাজারে তুলেছেন অথচ জেবিটি কোম্পানির রাজাসান কপি আজও পাতা বাঁধেনি।
তারা জানান, একেকটি গাছের ৩-৪টি ডগা গজিয়েছে। আবার অনেকটা পাতা কোঁকড়ানো। পাতা পচে যাচ্ছে। সার ও বিষ দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। বিঘাপ্রতি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে এ কপি চাষে। অনেকেই বাধ্য হয়ে জমিতে চাষ দিয়ে অন্য ফসল আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক বন্দরনগরের সোহেল ও মজিদ বলেন, ‘সদর উপজেলার বীজ ডিলার আনারুলের কাছে রাজাসান জাতের বীজ কিনে এক বিঘা জমিতে কপি রোপণ করি। এতে আমার ১২ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। অন্যরা কপি বিক্রি করলেও আমার কপির এখনো পাতা বাড়ছে না। তা ছাড়া আর ফসল বাড়ার সময় না থাকায় উপায় না পেয়ে সব চারা ভেঙে জমি চাষ দিয়েছি।’
বীজ সরবরাহকারী আনারুল ইসলাম জানান, তিনি মূলত সার ও বিষের ব্যবসা করেন। মেহেরপুর বড় বাজারের সুমনা বীজ ভাণ্ডার থেকে বীজ এনে চাষিদের দেয়া হয়েছে। কপির পাতা বাঁধেনি বিষয়টি আমার মহাজন সুমনকে বলেছি, তার দাবি তিনি কোনো নিম্নমানের বীজ তার কাছে সরবরাহ করেননি।
সুমনা বীজ ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ সুমনের কাছে বীজ বিক্রির বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের বীজ আমি কোনো ব্যবসায়ী কিংবা চাষিদের কাছে সরবরাহ করিনি।’
গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এমরান হোসেন ও মুজিবনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, চাষিদের কাছ থেকে বিষয়টি শুনেছি। চাষিদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পশ্চিম বাঁশখালীর মানুষের প্রাণের দাবি একটি টেকসই বেড়িবাঁধের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হচ্ছে না কোনোভাবেই। ২৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বেড়িবাঁধটি সাগরের বুকে হারিয়ে যাচ্ছে খড়কুটোর মতোই। চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার খানখানাবাদ ইউনিয়নের কদমরসুল ও প্রেমাশিয়া এলাকায় সাগরবক্ষে মিলিয়ে যাচ্ছে বেড়িবাঁধটি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে ব্লক তৈরি এবং লুটপাট ও ব্যাপক দুর্নীতির কারণে বাজেট যা ছিল, তা কেবল ছোট থেকে ছোট হয়ে এসেছে। এসব ঢাকতে অপরিকল্পিত নকশা প্রণয়ন ও যেনতেনভাবে বেড়িবাঁধ নির্মাণের কারণেই মাত্র এক বছরের মাথায় হারিয়ে যাচ্ছে সাগরবক্ষে। অনেকের মতে, সম্প্রতি সাঙ্গু নদীর মোহনায় জেগে ওঠা চর স্রোতের গতিপথ পরিবর্তন করে দেয়ায় তা সরাসরি আঘাত হানছে বেড়িবাঁধের ওপর। ফলে বাঁধের কিনারেই তৈরি হচ্ছে ৬০ ফুট গভীর খাড়ি (কূপ), যা ক্রমশ বেড়িবাঁধের ভিতকে নড়বড়ে করে দিয়ে ভাঙন ত্বরান্বিত করছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বাঁশখালী উপকূলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে সাড়ে ৭ বছর আগে ২৫১ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছিল বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ২০১৫ সালের ১৯ মে প্রকল্পটি একনেকে পাস হওয়ার পর বঙ্গোপসাগর ও সাঙ্গু নদীর পাড়ে ১৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই বাঁধ নির্মাণে কয়েক দফা সময় ও ব্যয় বেড়ে হয়েছিল ২৯৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পের আওতায় এতে ৬ দশমিক ২ কিলোমিটার বাঁধের ঢাল সংরক্ষণ, ভাঙন রোধ ও পুনরাকৃতিকরণ, ৩ দশমিক ৮ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ এবং ৫ দশমিক ৬ কিলোমিটার বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ করার কথা রয়েছে। ২০২২ সালে প্রকল্পের প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, খানখানাবাদ ইউনিয়নের কদমরসুল ও প্রেমাশিয়া এলাকার মধ্যবর্তী দুটি স্থানে ধসে গিয়ে বেড়িবাঁধের বেশিরভাগ অংশ সাগরে মিলিয়ে যায়। সিসি ব্লকবেষ্টিত বাঁধের যেটুকু ঠিকে আছে, তাতে বিশালাকার ফাটল সৃষ্টি হয়ে নিচের দিকে ক্রমশ দেবে যাচ্ছে। ভারী কোনো জোয়ার এলেই পুরোপুরি মিশে যাবে বেড়িবাঁধের এই অংশটুকু। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি হলে তড়িঘড়ি করে জিও ব্যাগ দিয়ে সামাল দেয়ার চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। অধিকন্তু জিও ব্যাগ ভর্তি করা হচ্ছে বাঁধের খুব কাছ থেকে বালি সংগ্রহ করে। আবার কোথাও ২০০ মিটার দূরত্বে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে জিও ব্যাগ পূর্ণ করার জন্য। সম্প্রতি সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় যে বন্যা হয়েছে, সে পানি সাঙ্গু হয়ে নেমে এসেছে বঙ্গোপসাগরে। বলতে গেলে এর পর থেকে এই বাঁধের ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই জিও ব্যাগ ভাঙনকে কতটা ঠেকাতে পারে, তা নিয়ে সন্দিহান এলাকার সচেতন মহল।
পশ্চিম বাঁশখালী উপকূলীয় কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কফিল উদ্দিন কফিল দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘ভেবেছিলাম বেড়িবাঁধ হলে আমাদের দুঃখ ঘুচবে। কিন্তু বছর না যেতেই বেড়িবাঁধের এই হাল কেন? আমি কারও দিকে অভিযোগের আঙুল তুলতে চাই না। যেটা চাই তা হলো এটির যথাযথ সংস্কারের মাধ্যমে স্থায়ী একটা সমাধান।’
স্থানীয় বাসিন্দা অ্যাডভোকেট মাইনুল হোসেন সোহেল বলেন, খানখানাবাদ ইউনিয়নের কদমরসুল ও প্রেমাশিয়া এলাকার বেড়িবাঁধের অবস্থা ভয়াবহ। বড় জোয়ার এলেই প্লাবিত হবে গোটা ইউনিয়ন। এলাকার মানুষের মধ্যে প্রচণ্ড ভীতি কাজ করছে।
খানখানাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম হায়দার বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ড আপৎকালীন বাঁধের অবশিষ্ট অংশ ঠেকাতে কাজ করছে। সাঙ্গু নদীর মোহনায় যে চর জেগে উঠেছে তা অপসারণ করা না হলে এই বাঁধের ভাঙন রোধ করা যাবে না।’
চট্টগ্রাম ১৬ (বাঁশখালী) আসনের সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘সাঙ্গু নদীর মোহনায় জেগে ওঠা চর ড্রেজিংয়ের ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ ও নৌ পরিবহনমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ পরিদর্শক দল খুব তাড়াতাড়ি পরিদর্শনে আসবেন বলে আশ্বাস পাওয়া গেছে। এরপর ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে স্রোতের গতিপথ পরিবর্তন হয়ে গেলে বেড়িবাঁধের ভাঙন রোধ হবে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (চট্টগ্রাম) নির্বাহী প্রকৌশলীর বক্তব্য জানার জন্য বারবার মুঠোফোনে কল ও খুদে বার্তা পাঠানো হয়েছে। তবে কোনো প্রতিউত্তর পাওয়া যায়নি। তবে ওই দপ্তরের একজন কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) দৈনিক বাংলাকে বলেন, বেড়িবাঁধ তলিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ সাঙ্গু নদীর মোহনায় জেগে ওঠা চর। এটা ড্রজিং না করা হলে এই ভাঙন রোধ করা সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীলরাই ভালো বলতে পারবেন।
হবিগঞ্জের মাধবপুরে বজ্রপাতে একই পরিবারের কিশোরীসহ দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এসময় আরও একজন আহত হয়েছেন। শুক্রবার বিকেল ৪ টার দিকে উপজেলার ছাতিয়াইন ইউনিয়নের শিমুলঘর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন, শিমুলঘর এলাকার রুবেল মিয়া মেয়ে সাদিয়া আক্তার (১২), একই পরিবারের সুহেল মিয়ার স্ত্রী শান্তা আক্তার (২২) রহমত মিয়ার স্ত্রী শারমিন আক্তার (৩০)।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মাধবপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মানিক কুমার সাহা।
হতাহতের স্বজন ধনু মিয়া জানান, শুক্রবার কিশোরী সাদিয়াসহ ওই তিনজন শিমুলঘর তাদের আত্মীয়র বাড়িতে বেড়াতে যান। বিকেলে বাড়ি ফেরার সময় ঝড়ের কবলে পড়েন তারা। এ সময় শিমুলঘর সড়কে বজ্রপাতে ওই তিনজন গুরুতর আহত হন। পরে তাদের উদ্ধার করে মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গিয়ে চিকিৎসক সাদিয়া ও শান্তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আর আহত শারমিনকে (৩০) উন্নত চিকিৎসার জন্য হবিগঞ্জে পাঠানো হয়।
নাটোরের সিংড়ায় নদীর পানিতে ডুবে ফাতেমা খাতুন (৫) ও আব্দুস সবুর হোসেন (৯) নামে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে উপজেলার উলুপুর গ্রামের বারনই নদী থেকে ওই শিশুদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহত ফাতেমা একই এলাকার সাইফুল ইসলামের মেয়ে এবং সবুর সাহাদ ইসলামের ছেলে। সম্পর্কে তারা দুজন চাচাতো ভাই-বোন।
সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম জানান, ফাতেমা ও সবুর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাড়ির পাশের বারনই নদীতে গোসল করতে নামে। এসময় নদীর স্রোতে ফাতেমাকে ডুবে যেতে দেখে সবুর তাকে বাঁচাতে যায়। এসময় সেও পানির স্রোতে ভেসে যায়। তখন স্থানীয়রা নদীতে নেমে তাদের উদ্ধার চেষ্টায় ব্যর্থ হন। পরে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হলে রাজশাহীর ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলকে খবর দেয়া হয়। খবর পেয়ে ডুবুরি দল দীর্ঘক্ষণ চেষ্টায় বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ঘটনাস্থলের কিছু দূর থেকে দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে।