বিএনপির রাষ্ট্র মেরামত কর্মসূচির কঠোর সমালোচনা করেছেন গণফোরাম থেকে নির্বাচিত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ।
সোমবার সংসদের বৈঠকে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপি নেতৃত্বেরও সমালোচনা করেন।
গণফোরাম থেকে নির্বাচিত হলেও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার প্রতীক ছিল ধানের শীষ। গত ১১ ডিসেম্বর সংসদ থেকে বিএনপির সাত এমপির পদত্যাগের পরে বর্তমান সংসদে আর তাদের প্রতিনিধিত্ব নেই। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আরেক এমপি গণফোরামের মোকাব্বির খান দলীয় প্রতীক উদীয়মান সূর্য নিয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করেন।
সুলতান মোহাম্মদ মনসুর বলেন, ‘বাংলাদেশকে মেরামত করতে হবে। কাদের কাছ থেকে শুনছি? ৭৫ সালের খুনিদের কাছ থেকে শুনছি। মেরামত শব্দটি সাধারণত পরিবারের সাথে ঘর মেতামত বোঝায়। তারা কী সেই মেরামত করতে চায়? ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের মত ঘটনা ঘটিয়ে। তারা কি সেই মেরামত করতে চান খুনী জিয়া যেমনি ভাবে পাকিস্তানের দালাল জাতিসংঘে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে সেরকম পরিবর্তন ব্যবস্থা করতে চান?
ছাত্রলীগের সাবেক এই সভাপতি বলেন, জিয়ার দুঃশাসনে যে কারফিউর গণতন্ত্র, তারা কি সেই স্বৈরতন্ত্র করতে চান? তাদের কথা শুনলে মনে হয় ওই দিকেই যাচ্ছেন।
সাবেক ডাকসু ভিপি সুলতান মনসুর বলেন, এক দল, দুই দল, ৫৪ দল বিভিন্ন দল করছে, আজকের সংসদে দাঁড়িয়ে একথা বলতে পারি পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী দাউদ ইব্রাহীমের সঙ্গে বৈঠক করে যারা বাংলাদেশের রাজনীতির পরিবর্তন চান, সেই পাকিস্তানি ধারার রাজনীতি আর এ দেশে আসার সুযোগ নাই। যারা এই ধারার রাজনীতি করেন তাদের শুধু বলব জীবনে কোনোদিন বিএনপির নেতৃত্বে বাংলাদেশ কোনো আন্দোলনে কোনো বিজয় তারা ছিনিয়ে আনতে পারে নাই।ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তারা খুনী জিয়ার মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছিল। কিন্তু আন্দোলন সংগ্রাম করে মানুষের মন নিয়ে মানুষের মাধ্যমে এদেশে আন্দোলনের সফলতা তারা কোনোদিন আনতে পারে নাই আগামীতেও আনার কোনো সুযোগ থাকবে না।
সুলতান মনসুর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক থাকাবস্থায় ওয়ান ইলেভেনের সময় সংস্কারবাদী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। পরে তিনি আওয়মা লীগ থেকে বাদ পড়েন।
স্বাধীন ইসি তৈরি করেছে আওয়ামী লীগ
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার সম্পূর্ণ স্বাধীন নির্বাচন কমিশন তৈরি করেছে। আওয়ামী লীগ স্বচ্ছ নির্বাচনে বিশ্বাস করে। রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি বলেন, ভোট ও ভাতের অধিকারের জন্য বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী লীগ সব সময় সংগ্রাম করেছে। স্বচ্ছ ও সুন্দর নির্বাচন যাতে হয় সেই জন্য আওয়ামী লীগ ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা তৈরি করেছে, স্বচ্ছ ব্যালেট বক্স উপহার দিয়েছে। বিশেষ করে সম্পূর্ণ স্বাধীন নির্বাচন কমিশন তৈরি করেছে। এখন বিএনপির আমলের এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটারের আমল চলে গেছে। ১০ টা হোন্ডা, ২০ টা গুন্ডার দিন চলে গেছে। আর আজিজ মার্কা নির্বাচন কমিশনও নেই। এ জন্য বোধহয় তাদের (বিএনপি) অন্তরে এত জ্বালা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ স্বচ্ছ নির্বাচনে বিশ্বাস করে। আওয়ামী লীগের শক্তি হচ্ছে জনগণ। আমাদের স্লোগান হচ্ছে আমার ভোট আমি দিবো, যাকে ইচ্ছা তাকে দিব। তাই আমাদের এ নিয়ে দুশ্চিন্তার প্রয়োজন নেই।’
সরকারের উন্নয়ন দেখে দেশবিরোধী, উন্নয়ন বিরোধী এবং সরকার বিরোধী কিছু স্বার্থন্বেষী লোক মিথ্যা, বানোয়াট প্রচারণায় উঠে পড়ে লেগেছে মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা গুজব ছড়িয়ে সরকার অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়। মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায়। গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অর্থনীতির সব সূচক স্থিতিশীল ও বলিষ্ঠ। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ এসব আশঙ্কা অমূলক বলে দাবি করেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কিছু সংখ্যক গোষ্ঠি বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত করার চেষ্টা করছে। দেশ ও জনগণের মঙ্গলের জন্য স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য যা যা করার দরকার ও প্রয়োজন তা সরকার করে যাবে।
সরকারি দলের সংসদ সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলছে। এটি অসাংবিধানিক। তারা ২৭ দফা দিয়েছে। তারা রাষ্ট্র মেরামতের কথা বলছে। যারা রাষ্ট্র ধ্বংস করেছে, লুটপাট করেছে তারাই এখন রাষ্ট্র মেরামতের কথা বলছে। এটি তাদের মানায় না।
অন্যদের মধ্যে সরকারি দলের সংসদ সদস্য মোসলেম উদ্দীন, জাফর আলম, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য খাদিজাতুল আনোয়ার, রত্না আহমেদ, বিকল্প ধারার আব্দুল মান্নান বক্তব্য দেন।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের প্রার্থী শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি মন্তব্য করেছেন যে, স্বাধীনতাবিরোধীরা সাধারণ ক্ষমার মর্যাদা রাখতে পারেনি। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) লক্ষ্মীপুর জেলা শহরের ঝুমুর এলাকার বিজয় স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে তিনি এই মন্তব্য করেন। এ্যানি বলেন, যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল এবং দেশের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত ছিল, স্বাধীনতার পর সাধারণ ক্ষমার আওতায় তারা রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা পেয়েছিল। কিন্তু তারা সেই ক্ষমার সম্মান না দিয়ে বরং তা অবমূল্যায়ন করেছে এবং সুবিধামতো কখনো ‘আওয়ামী ফ্যাসিস্ট’দের সঙ্গে আবার কখনো তাদের বিরোধীদের সঙ্গে জোট বেধেছে।
সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অবদানের কথা স্মরণ করে এ্যানি বলেন, কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে জিয়াউর রহমানের ঐতিহাসিক ঘোষণা, মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্বদান এবং রণাঙ্গনে সরাসরি অংশগ্রহণ ছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা হয়তো প্রশ্নবিদ্ধই থেকে যেত। তিনি জিয়াউর রহমানকে দেশে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপদাতা হিসেবে উল্লেখ করেন। পাশাপাশি, খালেদা জিয়ার আপোষহীন ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, জিয়ার মৃত্যুর পর তিনি দলের হাল ধরেছেন এবং পরপর তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে জনপ্রিয়তার প্রমাণ দিয়েছেন। শ্রদ্ধা নিবেদনকালে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাহাবুদ্দিন সাবু, বাফুফের সহ-সভাপতি ওয়াহিদ উদ্দিন চৌধুরী হ্যাপীসহ স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে রাজধানীর গুলশানে নতুন একটি কার্যালয় উদ্বোধন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টায় আনুষ্ঠানিকভাবে এই কার্যালয়টির উদ্বোধন করা হবে।
বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গুলশান-২ এর ১০/সি রোডের ৯০ নম্বর বাড়িটি এখন থেকে দলটির নির্বাচনি কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হবে। উদ্বোধন উপলক্ষে আজ বিকেলে সেখানে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। তবে এই সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্টভাবে কারা উপস্থিত থাকবেন, তা এখনো নিশ্চিত করা হয়নি।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, আজ যে অফিসটিতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে, সেটি মূলত আসন্ন নির্বাচনের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনার কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে একাত্তরের বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে দলের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা জেলার নেতাকর্মীরা জাতীয় স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করেন।
দিনের শুরুতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ ত্যাগ করার পর এটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এরপরই বিএনপির নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে বেদিতে গিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান ও সালাহউদ্দিন আহমেদ। এছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম এবং নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরীসহ দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান মন্তব্য করেছেন যে, একটি নির্দিষ্ট দল মুক্তিযুদ্ধকে নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি মনে করত এবং দেশের বাকি জনগণকে দাসে পরিণত করার অপচেষ্টা করেছিল। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুব ম্যারাথনের উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর বৈষম্যমূলক নীতির কারণেই এ দেশের মানুষ তাদের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছিল। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে এবং তখন দেশের আপামর জনতা স্বাধীনতার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তবে স্বাধীনতার পর তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী জনগণের সঙ্গে করা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়। তিনি অভিযোগ করেন, বহুদলীয় গণতন্ত্র ধ্বংস করে মানুষের মৌলিক মানবাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল এবং রক্ষী বাহিনীর নামে একটি দমনমূলক বাহিনী গড়ে তোলা হয়েছিল।
১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, বিদেশ থেকে আসা ত্রাণ আগেই বিক্রি করে দেওয়ার ফলে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়। সে সময় ঢাকায় বিপুল সংখ্যক মানুষের লাশ দাফন করতে হয়েছিল। মূলত সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখিয়ে দেশটিকে শ্মশানে পরিণত করা হয়েছিল।
আওয়ামী লীগের বিগত শাসনামলের কঠোর সমালোচনা করে জামায়াত আমির বলেন, দলটি তিন দফায় ক্ষমতায় এসে জাতিকে কেবল রক্তপাত ও সহিংসতার রাজনীতি উপহার দিয়েছে। ১৯৯৬ সালে ক্ষমা চাওয়ার পর জনগণ তাদের সুযোগ দিলেও ক্ষমতায় গিয়ে তারা পুরনো চরিত্রে ফিরে যায়। ২০০৯ সালের পর থেকে খুন, গুম, ধর্ষণ ও দমন-পীড়নের রাজনীতির কারণেই সংশ্লিষ্টদের আজ দেশ ছাড়তে হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলার ঘটনাগুলোকেও তিনি সেই একই অপরাজনীতির ধারাবাহিকতা বলে অভিহিত করেন।
একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও স্বাধীনতার শত্রুরা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেছেন, বাংলাদেশের মুক্তিকামী ও গণতন্ত্রকামী জনতা সব ধরনের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অটুট রাখবে এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়েছিল আজকের এই দিনে। তাই এই দিনটি বিএনপির কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর তারা শপথ নিয়েছেন যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তাদের সংগ্রাম সর্বদা অব্যাহত থাকবে। একইসঙ্গে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াই চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় অঙ্গীকারও ব্যক্ত করেন তিনি।
মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনা করেন। তিনি বেগম জিয়াকে দেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা এবং গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে অভিহিত করেন।
এ সময় মির্জা ফখরুল দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি জানান, নির্বাসিত জীবন শেষে আগামী ২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমান দেশে ফিরবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তার এই প্রত্যাবর্তন দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াই ও সংগ্রামকে আরও বেগবান করবে বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনাটি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বিঘ্ন সৃষ্টির গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে গতকাল সোমবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ভার্চুয়ালি বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ করেন। তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, স্বাধীনতাপ্রিয় ও গণতন্ত্রকামী মানুষকে ভয় দেখিয়ে যারা নির্বাচন বানচাল করতে চায়, তারা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হবে এবং নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তারেক রহমান বলেন, দীর্ঘ দেড় যুগ পর নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের কাঙ্ক্ষিত তারিখ ঘোষণা করলেও একটি স্বার্থান্বেষী মহল অজুহাত ও শর্ত দিয়ে বাধা সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে। হাদির ওপর হামলার ঘটনাকে তিনি সেই ষড়যন্ত্রেরই বহিঃপ্রকাশ হিসেবে উল্লেখ করেন। প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করতে তিনি প্রশ্ন তোলেন—বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করলে বা নির্বাচন ছাড়া তাদের ক্ষমতায় রাখলে কারা লাভবান হবে? তিনি মনে করেন, এসব প্রশ্নের উত্তরের মধ্যেই ঘাতক ও গণতন্ত্রের শত্রুরা লুকিয়ে আছে। তবে তিনি আশ্বস্ত করেন যে, একাত্তর, পঁচাত্তর, নব্বই এবং চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান প্রমাণ করেছে জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকলে বিজয় সুনিশ্চিত।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ছাড়া স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র টেকসই হতে পারে না। তাই বিএনপির মূল লক্ষ্য হলো একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ সরকার প্রতিষ্ঠা করা। তিনি প্রতিহিংসার রাজনীতি পরিহার করে প্রতিটি ঘরে বিজয়ের সুফল পৌঁছে দিয়ে একটি সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানান। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং দলের সিনিয়র নেতারা বক্তব্য রাখেন।
এদিকে, দীর্ঘ ১৭ বছর প্রবাস জীবন শেষে আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন তারেক রহমান। দেশে ফেরার আগে আজ মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) লন্ডনের সিটি প্যাভিলিয়নে বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন, যা সম্ভবত প্রবাসে তার শেষ জনসভা হতে যাচ্ছে।
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমকে ‘জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান’ হিসেবে আখ্যায়িত করার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি মন্তব্য করেছেন, গোলাম আযম ও তার সহযোগীরা যদি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হন, তবে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান কোথায় থাকে? গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এমন বক্তব্য মূলত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করার শামিল।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের তুলনা প্রসঙ্গে মির্জা আব্বাস বলেন, একাত্তরের সঙ্গে চব্বিশের কোনো তুলনা চলে না এবং তা হওয়ার কোনো সম্ভাবনাও নেই। তিনি উল্লেখ করেন, মানুষের মনে অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা ও ভাবনা নিয়ে এবারের বিজয় দিবস পালিত হচ্ছে, যা নির্বাচনের ঠিক আগমুহূর্তে ভিন্ন এক মাত্রা যোগ করেছে। তিনি অভিযোগ করেন, স্বাধীনতার পর দেশ গড়ার যে উদ্দীপনা ছিল, আওয়ামী লীগ সরকার তা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছে। তবে আসন্ন নির্বাচনে জনগণ এমন একটি দলকে নির্বাচিত করবে যারা তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার সঠিক প্রতিফলন ঘটাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সাক্ষাৎকারে মির্জা আব্বাস বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চান। পাশাপাশি তিনি জানান, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন। তিনি তারেক রহমানের সুস্থতা ও নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের জন্য সকলের কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দল-মত ও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সর্বস্তরের মানুষকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) এক ভিডিও বার্তার মাধ্যমে তিনি এই শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।
ভিডিও বার্তায় তিনি দেশের কৃষিজীবী, শ্রমজীবী, পেশাজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, শিক্ষক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী এবং ওলামা-মাশায়েখসহ প্রতিটি নাগরিককে বিজয় দিবসের আন্তরিক অভিনন্দন জানান। তিনি সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রতি তার এই শুভেচ্ছা বার্তা পৌঁছে দেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী প্রথম বিজয় দিবস আমরা গত বছর পালন করেছি। সেই বিজয় দিবসের আনন্দ উৎসব বিজয় উল্লাস ছিল অন্যরকম। মুক্ত স্বাধীন পরিবেশে মানুষ মন ভরে বিজয়ের স্বাদ গ্রহণ করেছে। এরপরে এক বছর পার হয়ে গেলেও নানা পরিক্রমার মধ্যে দিয়ে নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক বিতর্কের কারণে কিছু বিভক্তি দৃশ্যমান হয়েছে। এসব বিভক্তির ফলে অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী শক্তি আবারও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে, সেটা এখন দৃশ্যমান। এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হওয়ার পরে একটি ঘটনায় (হাদির ওপর হামলা) বেদনা বিধুঁর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
জাতীয় বার্তা সংস্থা বাসস―এর সঙ্গে একান্ত আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি, গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রক্রিয়াকে রুদ্ধ করতে পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তি এবং তার দোসররা সকল চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এই সময়ে আমাদের প্রকৃতপক্ষে সার্বভৌমত্ব এবং গণতন্ত্র সুসংহত করার জন্য বাংলাদেশের পক্ষের গণতান্ত্রিক শক্তি ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী সকল রাজনৈতিক দলের ঐক্য এখন সবচাইতে বেশি জরুরি। কারণ, এর মাধ্যমেই আমরা কেবল মাত্র সন্ত্রাসবাদী, গণতন্ত্র বিরোধী তৎপরতা বা ফ্যাসিবাদী শক্তির মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার যে অপচেষ্টা, সেটা রুখে দিতে পারব।
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধে এদেশের সব মানুষেরই সংগ্রাম ছিল। ৭১ কে যারা দলীয়করণ করতে চেয়েছে তারা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। এখন চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের রক্তের আকাঙ্ক্ষা, বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির প্রত্যাশা। বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, বৈষম্যমূলক সমাজ ব্যবস্থা থেকে মুক্তি, গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং হারানো মানবাধিকার ফিরে পেতে চেয়েছে। এগুলোর সমষ্টিগত অভিপ্রায়ের চূড়ান্ত রূপ হচ্ছে গণঅভ্যুত্থান।
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের প্রধান কাজ হলো-ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্যকে জাতীয় শক্তিতে পরিণত করা। একইসঙ্গে আগামী দিনের সকল কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এই ধারাবাহিকতায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা প্রকৃতপক্ষে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ করতে পারব। এটাই আমাদের বিজয়ের উচ্ছ্বাস, জাতীয় প্রত্যাশা এবং শহীদদের রক্তের ঋণ শোধের উপায়।
সূত্র: বাসস
ময়মনসিংহের ভালুকায় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে হবিরবাড়ী ইউনিয়নের জামিরদিয়া মাস্টারবাড়ী এলাকার সর্বস্তরের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা হয়েছে। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে জামিরদিয়া মাস্টারবাড়ীর ব্যবসায়ীদের আয়োজনে আব্দুল গণি মাস্টার স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে এ সভা হয়।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন ভালুকা উপজেলা বিএনপির সদস্য ও হবিরবাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি হাজী আব্দুস সাত্তার মাস্টার। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য, ভালুকা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এবং ময়মনসিংহ-১১ (ভালুকা) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ফখর উদ্দিন আহমেদ বাচ্চু। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা যুবদলের সদস্য ও হবিরবাড়ী ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান জিয়া।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রুহুল আমীন মাসুদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম. এ. হামিদ কারী, সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি আনোয়ার উদ্দিন আহমেদ, কেন্দ্রীয় কৃষকদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন, হবিরবাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম খান বাসানসহ বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ীরা তাদের বিভিন্ন সমস্যা ও প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফখর উদ্দিন আহমেদ বাচ্চু বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের সমর্থনে নির্বাচিত হলে ভালুকা উপজেলার সার্বিক উন্নয়নে অগ্রাধিকারভিত্তিতে কাজ করা হবে। তিনি স্কয়ার মাস্টারবাড়ী ও সিডস্টোর বাজার এলাকায় পথচারীদের নিরাপত্তায় ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ, জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, লাউতির খাল পুনঃখনন এবং পরিকল্পিত সড়ক নির্মাণের কথা জানান। এছাড়া বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ডাম্পিং স্টেশন স্থাপন, পরিবেশবান্ধব জৈব সার উৎপাদন, স্থায়ী পুলিশ স্টেশন স্থাপন, যানজট নিরসনে আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা এবং একটি আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। এ সময় তিনি ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষায় বিএনপির অবস্থান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথাও জানান।
মতবিনিময় সভা শেষে বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত রোগমুক্তি ও সুস্থতা কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন বলেছেন, গণসংযোগকালে একটি প্রশ্ন আপনাদের মনে সবসময়ই ঘোরে- নমিনেশনের কী খবর। আপনারা আমার কাছে প্রায়ই এ বিষয়ে জানতে চান। আমি আবারও পরিষ্কার করে বলতে চাই, কিছুদিন আগে যে নমিনেশন দেওয়া হয়েছে, সেটি ছিল প্রাথমিক সিলেকশন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতারা বারবার স্পষ্ট করে বলেছেন- ফাইনাল সিলেকশন তারা দেবেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা কি চান না আমি আপনাদের পাশে থাকি? আপনারা যেহেতু আমাকে চান, আমি বিশ্বাস করি দলও আমাকে চাইবে। যখন ফাইনাল তালিকা প্রকাশ হবে, তখনই সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে।’
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে নগরীর মোঘলটুলি ও রাজগঞ্জ বাজার এলাকায় দেশনায়ক তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা এবং কুমিল্লা নিয়ে হাজী ইয়াছিনের স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা সংবলিত লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগকালে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল। এই দল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তিনি জনগণের মনের কথা শুনতেন এবং জনগণ যা চাইত, তাই বাস্তবায়ন করতেন বলেই তার শাসনামলে দেশ এগিয়ে গিয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায় বেগম খালেদা জিয়া ও আমাদের প্রিয় নেতা রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমানও জনগণের প্রত্যাশাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে রাজনীতি করছেন। জনগণ যা চাইবে, দলও তাই চাইবে- এটাই বিএনপির রাজনীতির মূল দর্শন।’
গণসংযোগকালে ভোটারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘গত ১৭-১৮ বছর আমি নেতা-কর্মীদের পাশে ছিলাম। আদালতের বারান্দায় থেকেছি, নিম্ন আদালতে জামিন না হলে হাইকোর্টে গিয়ে জামিনের ব্যবস্থা করেছি। নেতা-কর্মীদের পরিবারের খোঁজখবর নিয়েছি এবং সাধ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করেছি। অতীতে যেভাবে আপনাদের পাশে ছিলাম, এখনো আছি এবং ইনশাআল্লাহ আগামীতেও থাকব।’
গণসংযোগকালে উপস্থিত ছিলেন, সদর দক্ষিণ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এস এ বারী সেলিম, কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক শহীদুল্লাহ রতন, আতাউর রহমান ছুটি, মাহাবুবর রহমান দুলাল, মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য মুজিবুর রহমান কামাল, মনির হোসেন পারভেজ, কুমিল্লা মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব রোমান হাসান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সৈয়দ মেরাজ, কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আমিরুল পাসা সিদ্দিকী রাকিব, জেলা যুবদলের সদস্য সচিব ফরিদ উদ্দিন শিবলু, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক খলিলুর রহমান বিপ্লব, জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সালমান সাঈদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আনোয়ার হোসেন, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব এ কে এম শাহেদ পান্না, কুমিল্লা মহানগর কৃষকদলের আহ্বায়ক কাজী শাহিনুর, সদস্য সচিব ইকরাম হোসেন তাজ, মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরী নোমান, কুমিল্লা মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি নাহিদ রানা, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি কাজী জোবায়ের আলম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক ধীমান, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন রবিন, মহানগর ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসমাইল হোসেনসহ অন্যরা।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ডাকে শুরু হওয়া স্বাধীনতাযুদ্ধ ওই বছর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জিত হয়, পাক হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করার মাধ্যমে। দেশের অদম্য বীর মুক্তিযোদ্ধারা জীবনবাজি রেখে এ বিজয় ছিনিয়ে আনে। তাই ১৬ ডিসেম্বর জাতির অহংকার, আনন্দ আর বেদনার এক মহাকাব্যিক দিন।
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধের পরে জাতি ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করে। আমি এদিনে দেশবাসীসহ প্রবাসী বাংলাদেশিদের জানাই শুভেচ্ছা। সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণে ভরে উঠুক তাদের জীবন। এই দিনে ৯ মাসব্যাপী স্বাধীনতাযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে এবং বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন সেই সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের জানাই গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি। আমি স্বাধীনতাযুদ্ধের বীর শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। বিদেশি শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে যেসব মা-বোন সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন- আমি জানাই তাদের সশ্রদ্ধ সালাম।
তিনি বলেন, শোষণমুক্ত ও সামাজিক ন্যায়বিচার ভিত্তিক গণতান্ত্রিক নীতিমালার ওপর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় ছিল নতুন রাষ্ট্রের মর্মমূলে। কিন্তু অমানবিক ফ্যাসিস্ট গোষ্ঠী বারবার সেই প্রত্যয়কে মাটিচাপা দিয়ে সর্বনাশা দুঃশাসন জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়। থামিয়ে দেয় বহুদলীয় গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা। আগ্রাসী শক্তি আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অবজ্ঞা করার ঔদ্ধত্য দেখায়। ওই অপশক্তির এদেশীয় এজেন্টরা আমাদের অর্জিত স্বাধীনতা বিপন্ন করার চক্রান্তজাল বুনে চলেছে। এরা ১৬ গত বছর ধরে একের পর এক প্রহসনের একতরফা নির্বাচন করে জনমতকে তাচ্ছিল্য করেছে। এ দেশের মানুষের সকল গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেয়। নাগরিক স্বাধীনতা অদৃশ্য করে মানুষকে করে অধিকারহারা। এ দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র নিরুদ্দেশ করা হয়। নিরুদ্দেশ করা হয় সংবাদপত্রসহ বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা।
তিনি আরও বলেন, গণতন্ত্রহীন দেশে নিরঙ্কুশ ক্ষমতার দাপটে সর্বত্র হতাশা, ভয় আর নৈরাজ্যের অন্ধকার নেমে আসে। ক্ষমতা জবরদখলকারীরা জনগণের ওপর নৃশংস আক্রমণ চালিয়ে অসংখ্য মানুষকে অদৃশ্য ও হত্যা করে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষকে মিথ্যা মামলায় কারারুদ্ধ করে। পরিস্থিতি ভয়ংকর নৈরাজ্যময় হয়ে ওঠে। যিনি জীবনের দীর্ঘ সময় গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন সেই অবিসংবাদিত নেত্রীকে অন্যায়ভাবে বন্দী করে অন্ধকার কারাগারে রাখা হয়েছিল। অমানবিক নিপীড়ক শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা চিরস্থায়ীভাবে ধরে রাখার জন্য একের পর এক গণবিরোধী পদক্ষেপ নিতে থাকে।
জুলাই অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ তুলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ফ্যাসিস্টদের হাত থেকে প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং গণতন্ত্রকে বিপদমুক্ত করতে মহান বিজয় দিবসের প্রেরণায় বলীয়ান হয়ে আমাদের জাতীয় ঐক্য গড়ে ওঠে এবং ‘২৪ এর জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার দুনিয়া-কাঁপানো আন্দোলনে তারা পরাজিত হয়। পতন হয় ইতিহাসের এক নিষ্ঠুরতম একনায়কের। দেশে আবার স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের সুরক্ষা ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনরুজ্জীবনের প্রত্যাশা জেগে ওঠে।
তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে নির্বিঘ্নে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনকল্যাণমুখী জবাবদিহিমূলক সরকার গঠনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশের জন্য এই বিজয়ের দিনে আমাদের অঙ্গীকার হোক-আমরা বিভাজন ভুলে, হিংসা ভুলে মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে থাকব। মহান বিজয় দিবসে আমি দেশবাসী সকলের প্রতি সেই আহ্বান জানাই। বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে আমি সকল কর্মসূচির সাফল্য কামনা করছি। আল্লাহ হাফেজ, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম দেশে মৌলবাদী চক্রের সব ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, একাত্তরের পরাজিত শক্তি এবং মানবতাবিরোধী মৌলবাদী চক্রের চক্রান্ত রুখে দিতে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে এক হতে হবে। রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি নামযজ্ঞ অনুষ্ঠান পরিদর্শনকালে তিনি এসব কথা বলেন।
সেলিমুজ্জামান সেলিম তার বক্তব্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ওপর জোর দিয়ে বলেন, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে অপশক্তিকে মোকাবিলা করতে হবে। এ দেশের মানুষ অতীতেও বারবার ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করেছে এবং এবারও কোনো ষড়যন্ত্র সফল হতে দেওয়া হবে না। গোপালগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির এই মনোনীত প্রার্থী আরও বলেন, ধর্ম ভিন্ন হলেও আমাদের জাতিসত্তা এক। হিন্দু, মুসলমান বা খ্রিষ্টান পরিচয়ের চেয়ে বড় পরিচয় হলো আমরা সবাই বাংলাদেশি। ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে সবাই একসঙ্গে কাজ করছে বলেই সব চক্রান্ত নস্যাৎ করা সম্ভব হচ্ছে এবং এটাই বাংলাদেশের প্রকৃত সৌন্দর্য।
অনুষ্ঠান পরিদর্শনকালে তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন মুকসুদপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. আব্দুস ছালাম খান, সাধারণ সম্পাদক তারেকুল ইসলাম রাজু, পৌর বিএনপির সভাপতি আবুল বাশার টুলটু বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মিন্টু এবং যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক মাহমুদুল হাসান বাপ্পীসহ স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।