জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের দলীয় কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞার আদেশ বহাল রেখেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া এ আদেশ দেন।
সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী আমিরুল ইসলাম সরকার দৈনিক বাংলাকে বিষয়টি জানিয়েছেন।
গত বছরের ৪ অক্টোবর জাপা থেকে বহিষ্কৃত নেতা সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা মামলা করেন। বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৩১ অক্টোবর ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালত জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম কাদেরের দলীয় যাবতীয় কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞার অস্থায়ী আদেশ দেন।
জিয়াউল হক মৃধা জি এম কাদেরকে জাপার চেয়ারম্যান হিসেবে অবৈধ ঘোষণার ডিক্রি চেয়ে আদালতে মামলা করেন।
সাম্প্রতিক সময়ে দলের ভেতরে বিভেদ নিয়ে সংকট চলছিল প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতিষ্ঠিত জাপায়। এরশাদের স্ত্রী ও দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের সঙ্গে জিএম কাদেরের বিরোধ অনেকটাই প্রকাশ্য হয়ে পড়ে। ব্যাংককে চিকিৎসাধীন রওশন এরশাদ দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলন আহ্বান করলে উভয়পক্ষের তরফ থেকে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য আসে। সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে রওশনকে সরাতে সচেষ্ট হন কাদেরপন্থিরা। যদিও পরে রওশন সম্মেলন স্থগিত করলে বিষয়টি নিয়ে সমঝোতার পথ খোলে। এমনকি মঙ্গলবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একসঙ্গে সাক্ষাৎও করতে যান দুজন। পরে দুজন এক সঙ্গে বিবৃতি দিয়ে বলেন তারা ঐক্যবদ্ধ।
ওই বিরোধ চলাকালে গত ১৭ সেপ্টেম্বর জাতীয় পার্টি থেকে জিয়াউল হক মৃধাকে জি এম কাদেরের সিদ্ধান্তে বহিষ্কার করা হয়। তার তিন দিন আগে বহিষ্কার করা হয় রওশনপন্থি আরেক নেতা মসিউর রহমান রাঙ্গাকে।
মৃধা এই বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ না করে চ্যালেঞ্জ করেন জি এম কাদেরের চেয়ারম্যান হওয়ার সিদ্ধান্তকেই। তিনি চেয়ারম্যান পদে জি এম কাদেরের দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞা চেয়েই মামলা করেন।
মামলায় বলা হয়, জাপার প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর মারা যান। পরে জি এম কাদের জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ওই বছরের ২৮ ডিসেম্বর কাউন্সিল করে নিজেকে চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করেন।
মৃধার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৩১ অক্টোবর জি এম কাদেরের দলীয় কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে অস্থায়ী আদেশ দেন।
এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেন জি এম কাদের। তার আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি শেখ আবদুল আউয়ালের একক বেঞ্চ বিচারিক আদালতের আদেশ স্থগিত করেন।
হাইকোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন জিয়াউল হক মৃধা। আর এই আবেদনের শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ বিচারিক আদালতের আদেশই বহাল রাখেন। পাশাপাশি বিষয়টি নিষ্পত্তির ভার দেন নিম্ন আদালতকেই।
নির্বাচন ও গণতন্ত্রের স্বার্থে আওয়ামী লীগের প্রতিশ্রুতির কথা জানিয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু বলেছেন, ‘আমরা বিএনপির সঙ্গে মুখোমুখি বসে আলোচনা করে দেখতে চাই।’
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ১৪ দলীয় জোটের সমাবেশে মঙ্গলবার আমু আরও বলেন, সু্ষ্ঠু নির্বাচন করার বাধা কোথায়? কীভাবে সেটা নিরসন করা যায়? এটা আলোচনার মধ্য দিয়েই সুরাহা হতে পারে। অন্য কোনো পথে নয়। অন্য কোনো পথে চেষ্টা করে যারা নির্বাচন বানচাল করে অসাংবিধানিক অবস্থা সৃষ্টি করতে চায়, অসাংবিধানিক জিনিস আনতে চায়, তাদের প্রতিহত করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি আসুক। বগল বাজাবার কোনো সুযোগ নেই, বাহবা দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করার ফন্দিফিকির গত দিনেও (অতীতে) আপনারা করেছেন। আজকেও করার অপচেষ্টা করছেন। বিগত সময় যেমন জাতিসংঘ তারানকো সাহেবকে পাঠিয়েছিল, আমাদের দুই দলকে একসঙ্গে নিয়ে মিটিং করে বুঝেছিলেন। আজকেও প্রয়োজনে এই ধরনের গড়াগড়ি না করে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিদল আসুক।’
গণতন্ত্র রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যয়ের কথা উল্লেখ করে আমু বলেন, ‘আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, সংবিধানের ভিত্তিতে দেশ পরিচালিত হচ্ছে। সংবিধানকে সামনে রেখে যেকোনো সমাধান, যেকোনো কিছু করতে আমরা প্রস্তুত। আপনারা আসুন। এগিয়ে আসুন। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখবার স্বার্থে, গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে আপনাদের সঙ্গে বসতে রাজি আছি। আলোচনার দ্বার খোলা। শেখ হাসিনা প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন, যেকোনো অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে তিনি প্রস্তুত।’
বিগত নির্বাচনগুলোতে বিএনপির অংশ না নেয়ার প্রসঙ্গ তুলে আওয়ামী লীগের এ জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘২০১৪ সালে নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করলেন কিন্তু সফল হলেন না। এবার নানা রকম অজুহাত তুলছেন। বিদেশিদের কাছে নানা রকম সাহায্য-সহযোগিতা চাচ্ছেন। ভিসা নীতিকে আশ্রয় করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। ভিসা নীতি কী, বৃক্ষ তোমার নাম কী, ফলেই পরিচয়। আজকে এটা বলার প্রয়োজন নেই। যখন এ বৃক্ষের ফল পড়বে, তখন দেখা যাবে এ বৃক্ষ কী, তখন আপনারা সবাই উপলব্ধি করবেন।’
আবারও ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগের প্রসঙ্গ টেনে আমির হোসেন আমু বলেন, ‘২০১৩ সালে প্রথম যখন জিকির তুললেন নির্বাচনের ব্যাপারে, জাতিসংঘের পক্ষ থেকে তারানকো সাহেবকে পাঠানো হলো। তিনি এসে আলাদা আলাদা বৈঠক করলেন, বিএনপির সঙ্গে, আমাদের সঙ্গে। পরবর্তী সময়ে যখন দুই দলকে নিয়ে যৌথ মিটিং করলেন, তখন প্রমাণিত হলো তাদের কথা কতটা অযৌক্তিক। আমরা কতটা যৌক্তিক ছিলাম।’
সমাবেশে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি দুরভিসন্ধিমূলক। এর মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে বিএনপি বা সুশীল সমাজের কাছে ক্ষমতা তুলে দেয়া যায়। মার্কিন ভিসা নীতির কারণে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, তবে বিএনপিকে বলব-সাহস থাকলে সেই নির্বাচনে আপনারা আসেন।
সমাবেশে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, আওয়ামী লীগ সংবিধানের বাইরে যাবে না। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করবে। শেখ হাসিনার অধীনে যথাসময়ে নির্বাচন হবে।
এলিট ফোর্স র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং নতুন ভিসানীতি ঘোষণাসহ নানা বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেছেন, ‘আপনাদের হিপোক্রেসি আমাদের আহত করে, এতে আমাদের রক্তক্ষরণ হয়।’
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) অডিটোরিয়ামে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আব্দুর রাজ্জাক এ কথা বলেন। ছয় দফা দিবস স্মরণে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান আলোচক ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান।
আমেরিকাকে উদ্দেশ্য করে ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘লিবিয়ায় একটি দেশ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে! সবচেয়ে বেশি অর্থনৈতিক সাহায্য আপনারা মিশরে দেন। মিশরে কি গণতন্ত্র আছে? সিরিয়াসহ পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে আপনারা ধ্বংস করেছেন। ইরাকের মত এক সময়ের জ্ঞান-বিজ্ঞানের রাজধানী আজ বিলীন হয়ে যাচ্ছে। কোথায় আপনাদের গণতন্ত্র? প্রেসিডেন্ট পরিবর্তন হয়েছে; কই? মধ্যপ্রাচ্যে গণতন্ত্র তো দেখি না! আপনাদের হিপোক্রেসি আমাদের আহত করে, এতে আমাদের রক্তক্ষরণ হয়।’
আওয়ামী লীগের এ নেতা আক্ষেপ করে বলেন, ‘কী কারণ থাকতে পারে র্যাবের বিরুদ্ধে স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) দেয়ার? আফগানিস্তানে এতদিন যুদ্ধ করে আবার বাধ্য হয়েছেন তালেবানদের হাতে দেশ ছেড়ে দিতে। আমরা আওয়ামী লীগ ওই সন্ত্রাসীদের কাছে আত্মসমর্পণ করিনি। আফগানিস্তান থেকে আপনারা পালিয়ে গেছেন। আমরা পালিয়ে যাইনি। আমরা তাদের মোকাবেলা করেছি। যারা সামনের সারিতে থেকে মোকাবিলা করেছে তাদের বিরুদ্ধে আপনারা স্যাংশন দেন!’
লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট মুয়াম্মার গাদ্দাফির হত্যার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘লিবিয়ায় একটি বিচ্ছিন্ন রাষ্ট্রকে একটি জাতিরাষ্ট্র করেছিলেন মুয়াম্মার গাদ্দাফি। কী বিচার আপনারা করেছেন? দৌঁড়িয়ে তাকে হত্যা করেছেন! সাদ্দাম হোসেনের বিচারের নামে প্রহসন করেছেন। আপনারা ইরাকে আক্রমণ করেছেন। সেই যুদ্ধে (আমেরিকার) যে চিফ অব স্টাফ ছিলেন, তিনি মৃত্যুর আগে বলেছিলেন, আমি জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল করেছি। কোনো অস্ত্র আমরা ইরাকে পাইনি। অথচ একটি দেশকে আমরা ধ্বংস করলাম। তিনি সারা পৃথিবীর মানবজাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।’
এই মধ্যপ্রাচ্যকে যারা ধ্বংস করেছে তাদেরও যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচার করা উচিত বলে মন্তব্য করেন কৃষিমন্ত্রী।
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে আবারও বৈঠক করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে মার্কিন দূতাবাসে গিয়ে রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে একঘণ্টার বেশি সময় ধরে বৈঠক করেন তিনি।
সূত্র বলছে, পিটার হাসের আমন্ত্রণে মার্কিন দূতাবাসে যান ফখরুল। বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে মহাসচিব একাই ছিলেন।
পরে এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের টুইটার অ্যাকাউন্টে এক বার্তায় বলা হয়, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন রাষ্ট্রদূত হাস। বৈঠকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং প্রচারণা প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও আলাপ হয়েছে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘এখনো এই বিষয়ে কিছু জানি না। খোঁজ নিয়ে বলতে পারব।’
এর আগে গত ১৬ এপ্রিল বিএনপির মহাসচিব যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সেই বৈঠকে বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে দলের আরও দুইজন নেতা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘রাষ্ট্র পরিচালনায় সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচিতে জনগণের অভাবনীয় সমর্থন দেখে ভয়ে বিরোধী দল ও মতের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালাচ্ছে।’
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে ফখরুল এ মন্তব্য করেন।
বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গত সোমবার বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা স্থলবন্দরে শান্তিপূর্ণভাবে রোডমার্চ কর্মসূচিতে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না এবং গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকিসহ গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতাদের গাড়িবহর ও যেসব আবাসিক হোটেলে নেতারা অবস্থান করছিলেন সেখানে হামলা সরকারের অপরাজনীতি থেকে কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।’
ফখরুল বলেন, ‘মানুষের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতি নেতিবাচক প্রভাব খাটিয়ে অতীতে কোনো স্বৈরাচারী সরকার নিজেদের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে পারেনি। বরং তাদের করুণ পরিণতি ভোগ করতে হয়েছে।’
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আপনারাও যদি বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতি যত্নবান না হয়ে হরণ করার কুমতলবে বিভোর থাকেন তাহলে আপনাদের পরিণতিও হবে ভয়াবহ।’
বিএনপি মহাসচিব অবিলম্বে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। বিবৃতিতে ওই ঘটনায় আহত নেতা-কর্মীদের সুস্থতাও কামনা করেছে বিএনপি মহাসচিব।
‘মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করে বিএনপি প্রতিনিয়ত সরকারবিরোধী কুৎসা ও বদনাম রটাচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘কাঙ্ক্ষিত স্যাংশন না পেয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম চিরাচরিত ভঙ্গিতে প্রলাপ বকছেন। মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করে তারা প্রতিনিয়ত সরকারবিরোধী কুৎসা ও বদনাম রটাচ্ছেন। বিশ্বদরবারে বাংলাদেশ ও এ দেশের জনগণের মান ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ত্রিশ লাখ শহীদের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে ম্লান করে হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলে বিদেশি প্রভুদের নিকট ধরনা দিচ্ছেন এবং দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র চালাচ্ছেন। দেশের মানুষের প্রতি তাদের কোনো আস্থা ও বিশ্বাস নেই এবং দেশের সংবিধান, গণতন্ত্র, নির্বাচন ও গণরায়কে অবজ্ঞা করে তারা কেবল বিদেশি প্রভুদের কাছে করুণা প্রার্থনা করছেন।’
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নিয়ে আওয়ামী লীগ ও সরকার ভীত নয়। কারণ আমরা সর্বদা সংবিধান, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যদি এই ভিসানীতি যথাযথভাবে প্রয়োগ হয় তাহলে বিএনপি নেতা-কর্মীদের এর আওতায় আসার আশঙ্কা রয়েছে। কেননা তারা বরাবরই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করছে এবং নির্বাচনী ব্যবস্থাকে বাধাগ্রস্ত করতে এবং নির্বাচন প্রতিরোধের নামে সন্ত্রাসের মাধ্যমে সাংবিধানিক রাজনীতির অচলাবস্থা সৃষ্টির পাঁয়তারা করে আসছে।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘মিথ্যাচার-অপপ্রচারের মধ্য দিয়ে বিএনপি নেতারা খুনি-স্বৈরশাসক, সংবিধান ও গণতন্ত্র হত্যাকারী স্বৈরাচার জিয়াউর রহমানকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা হিসেবে ভ্রান্ত মিথ তৈরি করার অপচেষ্টা করে আসছে। মূলত এই জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও সংবিধান ধ্বংস করেছে।’
তিনি বলেন, “প্যাডসর্বস্ব ভুঁইফোড়, বিবৃতিজীবী, পাকিস্তানপন্থি রাজনীতিক ও যুদ্ধাপরাধীদের ধরে এনে সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে রাজনৈতিক দল গঠন করে পাকিস্তানপন্থিদের ক্ষমতায়ন করেছিল জিয়াউর রহমান। রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম ও গণমাধ্যম থেকে মুক্তিযুদ্ধের জয়ধ্বনি ‘জয় বাংলা’ ও ‘জয় বঙ্গবন্ধু’কে নির্বাসনে পাঠিয়েছিল। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতে পাকিস্তানি দর্শনের রাজনীতির প্রচলন করেছিল। দিনের পর দিন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে তালাবদ্ধ করে কার্যত অঘোষিতভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে রাখা হয়েছিল।”
কাদের বলেন, ‘অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, আজকে বিএনপির কোনো কোনো নেতার বক্তব্যে তাদের এতটাই দেউলিয়াত্বের বহির্প্রকাশ ঘটেছে যে, তাদেরকে আর কোনো রাজনৈতিক সংগঠন বলা চলে না। জনগণের প্রতি আস্থা না রেখে বিএনপি নেতৃবৃন্দ বিদেশি প্রভুদের পদলেহনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার এ ধরনের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী খুনিগোষ্ঠী ও ষড়যন্ত্রকারীদের কাছে আত্মসমর্পণ করবে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দেশবিরোধী এই অপশক্তিকে উৎখাত করা হবে।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার স্পষ্টতই বুঝে গেছে যে তারা এখন চরম সংকটের মধ্যে পড়েছে। প্রায়শই তাদের অসংলগ্ন কথাবার্তা দেখে তাই মনে হয়।’
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন রুহুল কবির রিজভী।
রিজভী বলেন, ‘নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনসহ মানবাধিকার, ন্যায়বিচার, সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ ও হারানো গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেয়ার পক্ষে কথা বলায় বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা। তাদের একজন মন্ত্রী বললেন, ভিসা নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা নাকি বিএনপির বিরুদ্ধে। তাহলে আমেরিকার বিরুদ্ধে হঠাৎ সরকারপ্রধানসহ মন্ত্রীরা ক্ষোভে ফেটে পড়লেন কেন?’
বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘সরকারপ্রধানসহ ক্ষমতাসীনদের নিজেদের সন্তান-সন্ততিকে আমেরিকা ও ইউরোপে পুনর্বাসন করে। কিন্তু এখন তাদের স্বার্থে আঘাত লাগায় এখন ওই সব দেশ সম্পর্কে আক্রমণাত্মক ভাষায় কথা বলছেন তারা।’
সারা দেশে লোডশেডিংয়ে মানুষের এখন ‘ত্রাহি অবস্থা’ উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘গ্রামেগঞ্জে ২৪ ঘণ্টায় এখন থেকে দুই থেকে এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ আসে। মফস্বল শহরগুলোতে রাতে ২ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ থাকে না। রাজধানীতে ভয়াবহ খরতাপের ধূমায়িত বহ্নিতে মানুষ মনে হয় গ্যাস চেম্বারের মধ্যে বসবাস করছে। এখানেও দিনে-রাতে ৩-৪ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ থাকে না।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, সোমবার বগুড়া শিবগঞ্জ উপজেলা গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতাদের গাড়িবহরে সশস্ত্র ‘আওয়ামী সন্ত্রাসীরা’ পৈশাচিক হামলা চালিয়ে ছয় জনের বেশি নেতা-কর্মীকে গুরুতর আহত করেছে।
গণতন্ত্র মঞ্চের রোডমার্চে এ হামলার তীব্র ধিক্কার ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপির এই নেতা।
দেশজুড়ে চলমান লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে একদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। দেশের সব জেলা শহরের বিদ্যুৎ অফিসের সামনে এক ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে দলটি।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, অসহনীয় লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক দুর্নীতির প্রতিবাদে আগামী ৮ জুন (বৃহস্পতিবার) জেলা শহরে বিদ্যুৎ অফিসের সামনে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি।
রিজভী জানান, অবস্থান কর্মসূচি শেষে স্মারকলিপি দেয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, বিএনপির চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস প্রমুখ।
দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় ৪৩ নেতা-কর্মীকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে বিএনপি। তাদের মধ্যে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মো. ছালাহ উদ্দিন রিমনও রয়েছেন। বাকিদের মধ্যে ৩৮ জন পুরুষ কাউন্সিলর ও চারজন নারী কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন।
সোমবার রাতে কেন্দ্র থেকে সিলেট মহানগর বিএনপির কাছে বহিষ্কারের আদেশ পাঠানো হয়।
সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, সিলেট সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া ৪৩ জনকে বিএনপি থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় ৪১ নেতা-কর্মীকে প্রথমে শোকজ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা শোকজের কোনো জবাব দেননি। এরপর কেন্দ্রে আরও দুইজনের নাম পাঠানো হয়। সব মিলিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়া সিলেটের ৪৩ নেতা-কর্মীকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে।
সোমবার বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বহিষ্কারাদেশে বলা হয়েছে, ‘সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আপনি প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করার কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব সন্তোষজনক নয়। আপনার নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত গত ১৫ বছর ধরে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে করা গুম, খুন ও সরকারি পৈশাচিক নিপীড়নের শিকার হয়েছে এমন পরিবারসহ গণতন্ত্রকামী জনগোষ্ঠীর আকাঙ্ক্ষার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা। দলীয় গঠনতন্ত্রের বিধান অনুযায়ী প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হলো এবং গণতন্ত্র উদ্ধারের ইতিহাসে আপনার নাম একজন বেইমান, বিশ্বাসঘাতক ও মীরজাফর হিসেবে উচ্চারিত হবে।’
এর আগে গত শনিবার বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী পৃথকভাবে এসব শোকজ নোটিশ ইস্যু করেন। শোকজ নোটিশে বলা হয়, ‘১৫ বছর ধরে অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপিসহ জনগণ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে খালেদা জিয়া দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর ধরে কারাভোগ করছেন। বিএনপি এই অবৈধ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অথচ দলের সদস্য হয়ে ব্যক্তিস্বার্থ চিন্তা করে দলীয় বড় সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করেছেন। সুতরাং কেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে না, তার কারণ দেখিয়ে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লিখিত জবাব দলের কেন্দ্রীয় দপ্তারে জমা দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হলো।’
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, বিএনপি বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাচ্ছে না। কিন্তু সিলেটে যারা দলের সিদ্ধান্ত আমান্য করে প্রার্থী হয়েছিলেন, তাদের দল আজীবন বহিষ্কার করেছে।
২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত চারবার নির্বাচন হয়েছে। ২০০৩ সালে প্রথম নির্বাচনে বিজয়ী হন বদর উদ্দিন কামরান। ২০০৮ সালের দ্বিতীয় নির্বাচনেও তিনি মেয়র নির্বাচিত হন কারাগার থেকে। ২০১৩ সাল থেকে মেয়র পদে আছেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী। তবে এবার তিনি দলের সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচনে প্রার্থী হননি।
আগামী ২১ জুন পঞ্চমবারের মতো সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে।
বিএনপি-জামায়াতের দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক থাকার আহবান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি বলেছেন, ‘আপনারা যদি সন্ত্রাসের পথ পরিহার করে নির্বাচনের পথে না আসেন, তাহলে রাজনৈতিকভাবে আপনাদের কবর রচনা হবে।
সোমবার বিকালে রাজধানীর শ্যামলি ক্লাব মাঠে ঢাকা-১৩ আসনের আটটি ওয়ার্ডে যুবলীগের ১০৪ ইউনিটের সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের বক্তব্যের কটূক্তি করে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় আসার আগে তাদের প্রতিষ্ঠান খুনি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর ছয়শোর বেশি সামরিক সদস্যকে ফাঁসির কাষ্টে ঝুলিয়ে হত্যা করেছিলেন তারা নাকি রাষ্ট্রকাঠামোকে মেরামত করবে। তাদের কথা শুনে ঘোড়াও হাসে।’
নানক বলেন, ‘যারা রাষ্ট্রের মধ্যে আরেকটি হাওয়া ভবন রাষ্ট্র গঠন করেছিল। ওই বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে এবং তাদের ষড়যন্ত্রের ‘বিষদাত’ ভেঙে দিতে হবে।’
বিএনপির নানক বলেন, ‘লজ্জা করে না আপনাদের? বিএনপি নেতারা বলেছিলেন আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনা কোনো দিন পদ্মাসেতু করতে পারবে না। শুধু তাই নয়, বিএনপি পদ্মাসেতু নির্মাণ বন্ধে নানা ষড়যন্ত্র করেছে। আর এই ষড়যন্ত্রের পেছনে ড. ইউনূসের হাত রয়েছে।’
সরকার বিরোধীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। ষড়যন্ত্র চলছে চলবে কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের উন্নয়ন থেমে থাকবে না। শেখ হাসিনা নেতৃত্বে সরকার কোনো অপশক্তিকে ভয় পায় না।’
দলের বার্তা পাওয়া মাত্রই আগামী নির্বাচনে ঝাঁপিয়ে পড়তে যুবলীগকে নির্দেশনা দিয়ে নানক বলেন, ‘আপনাদের ফোনে যদি কোনো মেসেজ পান। সে মেসেজ পেয়ে আপনারা ঝাঁপিয়ে পড়তে পারবেন না? আমাদের মাঝে কোনো বিবেধ নেই। শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দেবেন, তার পক্ষে আমরা সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ব।’
সম্মেলনে যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে আপনারা দেশপ্রেমিক ও ত্যাগী নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। সামনের সকল নির্বাচন অবাদ- সুষ্ঠু ও প্রতিযোগীতামূলক হবে। সকল নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগকে আবারও নির্বাচিত করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে দলীয় নেতা-কর্মীর উদ্দেশে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, ‘আমাদের মাঠে ময়দানে থাকতে হবে। যে কোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে তৈরি থাকতে হবে। এটা সম্ভব হবে যখন আমরা নিজেদের মধ্যে গ্রুপিং বন্ধ করতে পারব।’
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন বাবুল, সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন। এ সময় বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, ঢাকা-১৩ আসনের সংসদ সদস্য সাদেক খান, যুবলীগের প্রচার সম্পাদক জয়দেব নন্দি, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক কামরুজ্জামান কামরুল, উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজ মাহমুদ।
আসন্ন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে কাজী মো. মামুনুর রশিদকে লাঙল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ঘোষণা করেছেন দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ।
সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে মামুনুর রশিদের দলীয় মনোনয়ন ফরমে স্বাক্ষর করেন তিনি। বিরোধী দলীয় নেতার রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ্ এক বার্তায় এ তথ্য জানান।
মামুনুর রশিদ জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য, বিরোধী দলীয় নেতার মুখপাত্র ও এরশাদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান।
তার প্রার্থিতা ঘোষণার সংবাদ বিবরণীতে জানানো হয়, আগামী ১৭ জুলাই অনুষ্ঠেয় ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে কাজী মো. মামুনুর রশিদের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন বিরোধী দলীয় নেতা। যা অবিলম্বে দলীয় সিদ্ধান্ত হিসেবে কার্যকরের নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।
বিএনপি দেশে গুম, খুন ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু করেছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশকে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে আওয়ামী লীগ সরকার।
সোমবার গণভবনে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত কমিটির সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এসব কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, বিএনপি দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে তারা দেশে গুম, খুন ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু করে। জাতির পিতা হত্যাকাণ্ডের পর আমার বিচার চাওয়ার, বিচার পাওয়ার অধিকার ছিল না। এটা চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন। সেই বিচার না পাওয়ার অবস্থা থেকে আজ দেশকে মুক্ত করতে পেরেছি। আওয়ামী লীগ সরকার সব সময় ন্যায়বিচারে বিশ্বাস করে।
শেখ হাসিনা বলেন, মানুষ যেন ন্যায়বিচার পায়, সে ব্যবস্থা আওয়ামী লীগ সরকার করে দিয়েছে। স্বল্প সময়ে বিনা ভোগান্তিতে মানুষ যেন বিচার পায়, সেজন্য আমাদের সরকার বিচারব্যবস্থাকে ডিজিটাল করে দিয়েছে। করোনা মহামারির সময়ে ভার্চুয়াল করে দিয়েছি, যাতে মানুষ ঘরে বসেই স্বল্প সময়ে বিচার পায়।
সরকারপ্রধান আরও বলেন, দেশে ধারাবাহিক গণতন্ত্র আছে বলেই গত সাড়ে ১৪ বছরে অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে। বর্তমান তাপদাহ পরিস্থিতিতে বিদ্যুতের কারণে মানুষের কিছুটা কষ্ট হচ্ছে, আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করছি, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের ১৪ বছরের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। আমরা বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে কাজ করে যাচ্ছি।
এ সময় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত কমিটিকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী।
জাতীয় পার্টি (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, বাকশালের আদলে দেশ চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ প্লাস। আওয়ামী লীগের প্রধান যারা তারা এখন আওয়ামী লীগ প্লাস পরিচালনা করছেন।
রোববার দুপুরে রাজধানীর বনানীতে জাপা চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
সরকারের সমালোচনা করে সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ প্লাসের মধ্যে আওয়ামী লীগ, প্রশাসন, পুলিশ, প্রতিরক্ষা বাহিনীসহ সবাই। কয়েক দিন আগে আওয়ামী লীগের এক শিক্ষিত ও মার্জিত নেতা যেভাবে প্রধান বিচারপতিকে সরিয়ে দেয়ার কথা বলেছেন, তাতে মনে হচ্ছে, বিচার বিভাগও আওয়ামী লীগ প্লাসের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা চলছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, তারা এতটাই শক্তিশালী যে, আওয়ামী লীগ প্লাসের নির্দেশনা মেনে চলা সবার জন্য বাধ্যতামূলক। কেউ না মানলে তাকে শাস্তি পেতে হবে। মনে হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং পাবলিক সার্ভিস কমিশনও আওয়ামী লীগ প্লাসের সদস্য হয়েছে। এতে দেশের মানুষের জন্য স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা কারোই নেই।’
জি এম কাদের আরও বলেন, ‘এমন বাস্তবতায় মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা, মেধার ভিত্তিতে চাকরি পাওয়া বা মানবাধিকার রক্ষার জন্য কাজ করা আওয়ামী লীগ প্লাসের বাইরে চিন্তা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগ প্লাসের বাইরে বের হতে না পারলে দেশে সঠিক রাজনীতি সম্ভব হবে না।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘যে কাঠামোতে বাকশাল তৈরি করা হয়েছিল ঠিক তেমন করেই আওয়ামী লীগ প্লাস সৃষ্টি করা হয়েছে। সংবিধান সংশোধন করে বাকশাল করা হয়েছিল কিন্তু আওয়ামী লীগ প্লাস আইনগতভাবে করা হয়নি। যেমন বাকশালের জন্য কিছু আইন করা হয়েছিল যা আওয়ামী লীগ প্লাসের জন্য নেই। তাছাড়া সব সংস্থাই ওই দলের সদস্যের মত কাজ করছেন। তারা যাকে যেখানে কাজ করতে বলবেন, সে সেখানেই কাজ করবেন। অথবা যাকে নির্বাচন করতে বলবেন তিনি নির্বাচিত হবেন। এভাবেই আওয়ামী লীগ প্লাস একটি দল দাঁড়িয়ে গেছে।’
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘সদস্য হোক বা না হোক, ইচ্ছায় হোক আর না হোক, সবাই সেই দলের নিয়ন্ত্রণে যেতে বাধ্য হচ্ছে। প্রধান বিচারপতিকে সরিয়ে দেয়ার কথা যিনি বলেছেন তিনি উচ্চ শিক্ষিত এবং ঠান্ডা মাথায় বলেছেন। এখন সবাই নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছেন, এর বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা কারো নেই। এই ধরনের শাসন ব্যবস্থা কখনোই কল্যাণকর হতে পারে না। এমন বাস্তবতায় গণতন্ত্র আশা করা অসম্ভব।’
বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব কি না এমন এক প্রশ্নের জবাবে জি এম কাদের বলেন, ‘যখন সমস্ত কিছুই আওয়ামী লীগ প্লাস বা সেই দলের নেতাদের নিয়ন্ত্রণে সেখানে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে নির্বাচনে ফলাফল অসম্ভব এবং তারা কখনোই পরাজিত হতে চাইবে না। আমেরিকার ভিসানীতি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহায়ক হবে। যারা এই নীতি ঘোষণা করেছেন তারা কতটা কার্যকর করেন তার ওপর নির্ভর করবে সব কিছু।’
বাংলাদেশ ও জাপানের অংশীদারিত্ব অনেক পুরোনো উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘তারা (জাপান) দেখতে চায়, সরকার বদল হলেও এটা যেন অব্যাহত থাকে। স্বাভাবিকভাবেই তারা এটা দেখতে চাইবে। বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থা, মানবাধিকার এসব নিয়ে আজ সবার উদ্বেগ। স্বাভাবিকভাবে তাদেরও উদ্বেগ আছে। তারা জানতে চায়, কী হচ্ছে, আগামীতে কী হতে যাচ্ছে। এটাই তারা বোঝার চেষ্টা করছেন।’
রোববার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন আমির খসরু। এর আগে সেখানে জাপানি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয়।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের আমীর খসরু বলেন, ‘জাপান বাংলাদেশের মানুষের কাছে খুবই গ্রহণযোগ্য একটি দেশ। জাপানের অনেক বিনিয়োগ বাংলাদেশে আছে। তাদের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশ সরকারের অবকাঠামোগত প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগ করছে। সুতরাং জাপান বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেক লম্বা।’
জাপানের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আলাপ হয়েছে কি না, জানতে চাইলে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘জাপানের রাষ্ট্রদূত কিছুদিন আগে এখানে নতুন এসেছেন। তিনি সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এসেছেন। স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশ জাপানের বন্ধুত্ব ও পার্টনারশিপ অনেক পুরোনো। বাংলাদেশের সঙ্গে যাদের পার্টনারশিপ, তার মধ্যে জাপান অন্যতম।’
জাপান বাংলাদেশের সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, ‘আমরা যখন ক্ষমতায় ছিলাম, তখন প্রচুর বিনিয়োগ জাপান থেকে এসেছে। প্রচুর অবকাঠামোগত বিনিয়োগ হয়েছে বিএনপির সময়। একদলীয় শাসনের পরে মুক্তবাজার অর্থনীতি, যেটা বিএনপি বাংলাদেশে শুরু করেছে, তারপর থেকে জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেক বেশি হয়েছে।’
জাপানের রাষ্ট্রদূতকে বিএনপির পক্ষ থেকে কী বলা হয়েছে— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে আমীর খসরু বলেন, ‘বাংলাদেশে যা হচ্ছে, তাই বলেছি। সেগুলো বলা যাবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে আইনের শাসন, নির্বাচন, মানবাধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মানুষের জীবনের নিরাপত্তা, স্বাভাবিকভাবে এসব নিয়ে উদ্বেগ সারা বিশ্ববাসীর আছে, দেশের মানুষের আছে, জাপানেরও থাকার কথা। তারা এসব জানতে চাচ্ছে। আগামী দিনের বাংলাদেশ কোথায় যাচ্ছে, এটা তারা জানতে চায়।’
রোববার সকাল ১০টায় বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরির সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয়। বৈঠকে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ছিলেন জাপান দূতাবাসের প্রথম রাজনৈতিক সচিব মিস ইগাই। এ ছাড়া বিএনপির পক্ষ থেকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ও দলের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ উপস্থিত ছিলেন।