পাঠ্যপুস্তকে ঐহিত্যগত সংস্কৃতি, জীবনমান, মূল্যেবোধবিরোধী বিষয় সংযোজনের অভিযোগ তুলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এ ধরনের কার্যক্রম মেনে নেয়া যায় না। শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন- আপনারা কেউ ইস্যু তৈরি করবেন না। আমরা সংশোধনের ব্যবস্থা নিচ্ছি। ইস্যু তো আমরা তৈরি করছি না, বরং আপনারা (শিক্ষামন্ত্রী) ইস্যু তৈরি করে দিয়েছেন।’
সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ এই সভার আয়োজন করে।
ফখরুল বলেন, ‘এই অনির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলতে বলতে অজ্ঞান হয়ে যায়। অথচ ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালে গণতন্ত্র হরণ করে কেন বাকশাল করতে হয়েছে, জিজ্ঞাসা করলেই তাদের গায়ে আগুন লেগে যায়।’
বর্তমান জাতীয় সংসদকে এক দলীয় ক্লাব অব আওয়ামী লীগ অভিহিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ কারণে স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও আমাদের গণতন্ত্র ভোটাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য রাজপথে রক্ত দিতে হচ্ছে, প্রাণ দিতে হচ্ছে। আমরা স্বাধীনভাবে কথা বলা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র ফিরে পেতে চাই। এই সরকার নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এখন কেউ ভোট দিতে যেতে চায় না।’
জনগণের উত্তাল তরঙ্গের ঢেউয়ে আওয়ামী লীগ সরকার ভেসে যাবে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দেশে চলছে এক ব্যক্তির শাসন। কথায় কথায় বলে গণতন্ত্র হবে আমাদের মতো করে। আর তাদের গণতন্ত্র হচ্ছে বহুদলীয় গণতন্ত্র থেকে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করা।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন , ‘মানুষ গণতান্ত্রিক দেশে কথা বলতে চায়, মৌলিক অধিকার আদায়ে তারা কোনো ছাড় দেবে না। সেই লক্ষ্যে বিএনপির ঘোষিত ১০ দফার প্রথমটি হচ্ছে- এই সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্তি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে একটি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে তাদের অধীনে নির্বাচন করা। জনগণের মধ্যে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে সেই নির্বাচনে অংশ নিয়ে জনগণের নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করবে বিএনপি।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরী।
২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলীয় ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে রূপকল্প-২০২১ ঘোষণা করেছিল আওয়ামী লীগ। তখন রাজনৈতিক বিরোধীদের পাশাপাশি সুশীল সমাজের একটি অংশও এর কঠোর সমালোচনা করে। ডিজিটাল বাংলাদেশকে ‘কাল্পনিক’, ‘অবাস্তব’ এবং ‘উচ্চাভিলাষী’ বলে মন্তব্য করেন তারা। কিন্তু সেসব কিছু পাশ কাটিয়ে ২০২১ সালের মধ্যেই ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবে রূপান্তর করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শিগগিরই নতুন ইশতেহার ঘোষণা করা হবে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের ইশতেহারেও থাকছে তারুণ্যবান্ধব দেশ গড়ার অঙ্গীকার। ইতোমধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলটি। আর এ কারণে নতুন প্রজন্মকে ধারণ করে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা থাকছে এবারের ইশতেহারে।
প্রতিটি নির্বাচনী ইশতেহারেই জাতির সামনে একটা আশাজাগানিয়া ও অনুপ্রেরণামূলক স্লোগান তুলে ধরে আওয়ামী লীগ। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ইশতেহারের স্লোগান ছিল ‘দিনবদলের সনদ’। ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে স্লোগান ছিল ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’। ২০১৮ সালে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ স্লোগান ছিল ইশতেহারে। এবারের নির্বাচনে দলটির ইশতেহারে কী স্লোগান থাকছে, তা নিয়ে মানুষের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক আগ্রহ।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে জানা যায়, এবারের ইশতেহারে দেশকে এগিয়ে নিতে তরুণ প্রজন্মকে কাজে লাগানোর নানা পরিকল্পনার কথা থাকছে। সেই সঙ্গে এবার সমৃদ্ধ বাংলাদেশকে টেকসই উন্নয়নের পথে নিয়ে যেতে প্রদান করা হবে ইশতেহার।
বিগত দুই বছর ধরেই স্মার্ট বাংলাদেশের বিষয়টি বারবার উঠে এসেছে দলের বিভিন্নস্তরের নেতাদের বক্তব্যে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০৪১ সাল নাগাদ আমাদের দেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশের পর স্মার্ট বাংলাদেশের পরিকল্পনা এ শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কেননা বিশ্বের উন্নত দেশগুলো এর মধ্যেই স্মার্ট দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। এমনকি অনেক উন্নয়নশীল দেশও স্মার্ট দেশে রূপান্তরের পথে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। তাই দেশের উন্নতি ও অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে হলে বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের কাতারে নিয়ে যেতে হবে। আগামীতে যেসব দেশ প্রযুক্তি ব্যবহারে এগিয়ে থাকবে, তারাই ব্যবসা-বাণিজ্য, আন্তর্জাতিক লেনদেন এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় নিজেদের নিয়ে যেতে পারবে।
আওয়ামী লীগের গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) চেয়ারপারসন সজীব ওয়াজেদ জানান, ডিজিটাল বাংলাদেশের পর এখন বাংলাদেশকে আরও ‘আপগ্রেডের’ সময় চলে এসেছে। এত দিন দেশের সব কাজকে ডিজিটালাইজড করার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলেও এবার তার থেকেও বড় পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। অর্থাৎ ডিজিটালাইজড এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এবার প্রয়োজন সমন্বিত সেবা ও তার মানোন্নয়ন। আর এ কারণেই এখন আমাদের আইসিটি ক্ষেত্রে দক্ষ অর্থাৎ বিশেষজ্ঞ তৈরি করতে হবে, যারা স্মার্ট বাংলাদেশের হাল ধরবে এবং এগিয়ে নিয়ে যাবে।
‘দিন বদলের সনদ’ ২০০৮ সালে ঘোষণার পর ডিজিটাল বাংলাদেশ ব্যবস্থা বাস্তবে পরিণত করার মাধ্যমে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি, কৃষি থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসা হয়েছে। বিগত ১৫ বছরে তার বাস্তবিক প্রয়োগ ঘটাতে সক্ষম হয়েছে বর্তমান সরকার। করোনা মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে বিশ্ব অর্থনীতি টালমাটাল হওয়ার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশে চাকরির বাজার তৈরি, উদ্যোক্তা তৈরি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা কার্যক্রম- সব ক্ষেত্রে উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ এই স্লোগান ধারণ করে বিগত ৪ বছরে অধিকাংশ মেগা প্রকল্প উদ্বোধন করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। শুধু এক পদ্মা সেতু উদ্বোধন দেশের জিডিপিতে ১.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আনতে সক্ষম হচ্ছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।
একসময় বাংলাদেশজুড়ে ইন্টারনেট সরবরাহ করা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু এখন বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নিজস্ব ইন্টারেক্টিভ একটি নেটওয়ার্ক কাঠামো গড়ে তোলা। যেখানে গ্যাস বিল, পানির বিল, বিদ্যুৎ বিল সবকিছু পেপারলেসভাবে গ্রাহকের কাছে পৌঁছে যাবে এবং তারা পেপারলেসভাবেই সব বিল পরিশোধ করতে পারবেন।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, স্মার্ট বাংলাদেশের সব কার্যক্রম হবে অনলাইনে। নাগরিকদের ডেটাবেস থাকবে। সে অনুযায়ী জন্মসনদ থেকে শুরু করে স্থানীয় উন্নয়ন সবই হবে অনলাইনে। সমন্বিত তথ্য ভাণ্ডারের মাধ্যমে রাষ্ট্রের সব কর্মকাণ্ডের সুবিধা পৌঁছে যাবে সকল নাগরিকের কাছে। এর ফলে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা হবে।
এ ছাড়া দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণের কথাও থাকবে এ ইশতেহারে। এরই মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তাদের দলের কার্যক্রম থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মনোনয়নেও সে অবস্থানের প্রতিফলন ঘটেছে। এ বিষয়ে জোরালো ভূমিকা রাখার প্রতিশ্রুতি থাকবে আসন্ন ইশতেহারে। মূলত ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট তৈরির পর স্মার্ট বাংলাদেশে হ্যান্ড ক্যশ নিয়ে কোনো সরকারি সেবার ব্যবস্থা না রাখার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। যার মাধ্যমে দুর্নীতি হ্রাস করাও সম্ভব হবে।
নদী ভাঙন, নদী ব্যবস্থাপনা, নগর ও গ্রামে পানি সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশনে ডেল্টা পরিকল্পনার বিষয়টিও তুলে ধরা হবে ইশতেহারে। আগামী ১৬ বছরে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য উন্নয়ন পরিকল্পনা ও এই বিষয়ক নানা দিক তুলে ধরা হবে, যা ২০৪১ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তরুণদের কর্মসংস্থান, তরুণ ব্যবসায়ীদের জন্য নানা সুবিধা, উদ্যোক্তাদের জন্য নানা প্রকল্পের বিষয়ও থাকবে আওয়ামী লীগের এবারের ইশতেহারে।
সরকার ও আওয়ামী লীগের কাছে প্রান্তিক জনগণের চাওয়া জানতে এ বছরের অক্টোবরে উপজেলা পর্যায়ে দলের কমিটিকে দায়িত্ব দিয়েছিল কেন্দ্রীয় কমিটি। সেই মতামতের বিষয়ও থাকবে ইশতেহারে। যেখানে কৃষক, স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, শ্রমজীবী মানুষসহ সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষের চাওয়া-পাওয়া বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি থাকবে।
দ্রব্যমূল্য ও মূল্যস্ফীতি নিয়ে বিগত ২ বছর সবচেয়ে বেশি সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে বর্তমান সরকারকে। তাই দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, প্রান্তিক পর্যায়ে ভর্তুকি এবং মূল্যস্ফীতি হ্রাসে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের খুঁটিনাটি বিষয়ও থাকতে পারে এবারের ইশতেহারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এবারের ইশতেহারে আগামী ৫ বছর নয়, বরং ২০৪১ সাল পর্যন্ত একটি রূপরেখা প্রদান করা হচ্ছে। যেমনটি ২০০৮ সালে প্রদান করা হয়েছিল ‘দিন বদলের সনদ’ ঘোষণার সময়।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা জানান, ইশতেহার ঘোষণার আগে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে জনগণের জন্য আমাদের রাজনীতি। তাই জনগণের অনেকগুলো চাওয়া-পাওয়াকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে এবারের ইশতেহারে। বেশ কিছু চমকও রয়েছে। আশা করি হাতে পেলে আপনারাই বুঝতে পারবেন।
স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি দুই ধরনের পরিকল্পনার কথাই থাকছে এই ইশতেহারে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, দেশীয় সক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে যে বিষয়গুলোতে অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার, সে বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে। কিছু স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার কথা, যা ২০২৪ থেকে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে করা হবে, বাকি কাজগুলো ভিশন ২০৪১-এর মধ্যে বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হবে। এ ছাড়া ডেল্টা প্ল্যানের কথা থাকবে। ২০৭১ সালে রাষ্ট্রের জন্মশতবার্ষিকীর মধ্যে কিছু লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা হবে। অর্থাৎ শর্ট টার্ম গোল (লক্ষ্য) ও লং টার্ম গোল (লক্ষ্য) দেওয়া হবে।
এবার ইশতেহারের স্লোগানে টেকসই উন্নয়ন নিয়ে কোনো বার্তা থাকবে কি না জানতে চাইলে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, অনেকগুলো স্লোগান এসেছে। অনেক পরামর্শ এসেছে। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের পাশাপাশি আমাদের সমর্থক এমনকি সুশীল সমাজ এবং আন্তর্জাতিক বেশ কিছু সংস্থার প্রস্তাবের কথা মাথায় রেখে ইশতেহার তৈরি করা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কোন বিষয়গুলো থাকবে এবং কোন বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। এটি কেবল দলীয় ফোরামের সভা শেষেই নিশ্চিত হওয়া যাবে। তখন সবাই দেখতে পাবেন।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জাতীয় পার্টির (জাপা) সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় মহাজোটের শরিকদের আসন বণ্টনের বিষয়টি নির্ধারিত হবে বলে জানিয়েছেন জোটের মুখপাত্র এববং সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু। তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচন জোটগতভাবে হবে। এ বিষয়ে আগামীকাল (বুধবার) জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলোচনা করবে আওয়ামী লীগ।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘অন্যান্য দলের মতো ১৪ দল আসন ভাগাভাগির জোট নয়। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধেও আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী আছে। ১৭ তারিখের আগে জোট শরিকদের আসন ছাড়ের বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। জোটের আসন বিন্যাস ও প্রার্থী চূড়ান্ত করতে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইস্কাটনের বাসায় জোটের দুই শরীক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
আমু বলেন, ‘গতকাল (সোমবার) আমাদের ১৪ দলের নেত্রী একটি সভা করেছেন। সেখানে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপট ও রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তখন আসনের বিষয়ে কথা উঠে এসেছে।’
বৈঠক শেষে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘জোটের প্রার্থীরা নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করবেন। শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক এবং রাতের খাবারের মধ্য দিয়ে এই বার্তা পরিষ্কারভাবে দিয়েছেন যে, জোট আছে, জোট একসঙ্গে নির্বাচন করবে। আসন ভাগাভাগির বিষয়টা আমরা নিষ্পত্তি করতে সক্ষম হব।’
ইনু বলেন, ‘যেকোনো লেনদেনে দর কষাকষি হবে, মন কষাকষি হবে। বন্ধুদের মধ্যে দরকষাকষি হয়, মন কষাকষি হয়। দিনের শেষে হাসিমুখে হাত ধরাধরি করে বেরিয়ে যাব। যেখানে জোটের প্রার্থী আসবে, সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী উঠে যাবে।’
মঙ্গলবার আমির হোসেন আমুর বাসায় তার সঙ্গে বৈঠকে বসেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার।
এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন ১৪ দলীয় জোটের শরিক নেতারা। সেই বৈঠকে নির্বাচনে ১৪ দলের শরিক দলগুলোর আসন বণ্টনের জন্য চার সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়। আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এ কমিটির সদস্য।
উল্লেখ্য, ১৭ ডিসেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অনুমতি না পাওয়ায় আগামী ১০ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ ঘোষিত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
মঙ্গলবার হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ৬০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানো শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আগামী ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবস। এই মানবাধিকার দিবসে আমরা বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে একটি বড় সমাবেশ করব এ রকম একটা কর্মসূচি আমাদের ছিল। আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করেছিলাম। সে আবেদন তারা গ্রহণ করেননি।’
তিনি বলেন, ‘বাইরে সমাবেশের নামে শোডাউন হবে সে আশঙ্কা করছে ইসি। যে কারণে বাইরে যে সমাবেশ করার কথা সেটি করছি না। ১০ ডিসেম্বর আমাদের মানবাধিকার দিবসের আনুষ্ঠানিকতা ভেতরেই পালন করব। নির্বাচনী বিধির বাইরে আমরা যেতে চাই না।’
শিগগিরই কেন্দ্রীয় ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর সঙ্গে আসন ভাগাভাগির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘১৪ দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের একটা সমঝোতা অবশ্যই হবে। আজ-কালের মধ্যেই আসন বণ্টনের বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।’
ওবায়দুল কাদের আজ মঙ্গলবার দুপুরে ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা’র রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘১৪ দলের প্রত্যাশা ও বাস্তবতার সঙ্গে মিল রেখে আজকালের মধ্যেই আসন ভাগাভাগির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। জোটসঙ্গীদের চাওয়া এবং তাদের সেই চাওয়া পূরণের বাস্তবতা বুঝেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। জোটসঙ্গীরা দাবি করতেই পারেন, চাইতেই পারেন। তবে অ্যাডজাস্টমেন্টটা তো করতে হবে। ১৪ দলীয় নেতাদের সঙ্গে যে সিট শেয়ারিং করবো, সেখানে মূল স্পিরিট হলো নির্বাচনে জিততে হবে।’
তিনি বলেন, ‘১৪ দলের সঙ্গে আমাদের বৈঠকটা আসন ভাগাভাগির চেয়ে রাজনৈতিকভাবে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক বিষয়টাকেই আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। মাঝেমধ্যে ১৪ দলের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়, গতকালও রাতে (সোমবার) হয়েছে। রাজনৈতিক আলোচনাই বেশি হয়েছে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেশ-বিদেশে যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, তা মোকাবিলায় ১৪ দল ঐক্যবদ্ধভাবে লড়বে। ১৪ দলীয় জোটের যে ঐক্য, সেই ঐক্যকে সুদৃঢ় করে লড়াই করে যাবো আমরা।’
‘১৪ দলের সঙ্গে রাজনৈতিক ঐক্যের কোনো ঘাটতি নেই, হবেও না’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টির সঙ্গে সমঝোতার বিষয়ে আলোচনা চলছে। সময় বলে দেবে কী করতে হবে। যা কিছু করা হবে তা হবে দেশের স্বার্থে।’
এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম ও সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘গণতন্ত্র ত্রুটিমুক্ত করতে আওয়ামী লীগ কাজ করছে। যারা নির্বাচন বানচাল করতে হরতাল-অবরোধ করছে তারা গণতান্ত্রিক শক্তি নয়।’
তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র একেবারেই ত্রুটিমুক্ত, পারফেক্ট ডেমোক্রেসি পৃথিবীর কোথাও রয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। বাংলাদেশের গণতন্ত্র ত্রুটিমুক্ত করতে কাজ করছে আওয়ামী লীগ।’
সেতুমন্ত্রী আজ মঙ্গলবার সকালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ৬০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানো শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘একেবারেই ত্রুটিমুক্ত বা পারফেক্ট ডেমোক্রেসি পৃথিবীর কোথাও রয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। আমরা মনে করি গণতন্ত্রের জন্য এমন একটা স্বাধীন অবস্থা আমরা তৈরি করতে পেরেছি, শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায়।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আগামী ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবস। এই মানবাধিকার দিবসে আমরা বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে একটি বড় সমাবেশ করব, এরকম একটা কর্মসূচি আমাদের ছিল। আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করেছিলাম। সে আবেদন তারা গ্রহণ করেননি। বাইরে সমাবেশের নামের শোডাউন হবে সে আশঙ্কা করছে। যে কারণে দশ তারিখে আমাদের মানবাধিকার দিবসের আনুষ্ঠানিকতা ভেতরেই পালন করব। বাইরে যে সমাবেশ করার কথা সেটি করছি না। নির্বাচনী বিধির বাইরে আমরা যেতে চাই না।’
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী আমাদের গণতন্ত্রের রাজপথের এক অকুতোভয় বীর। গণতন্ত্রই ছিল তার সারা জীবনের ব্রত। গণতন্ত্রের জন্য তিনি লড়াই করেছেন। আন্দোলন করেছেন। পাকিস্তানিদের দ্বারা বারবার নির্বাচিত হয়েছেন, জেলে গেছেন, নিগৃহীত হয়েছেন।’
এসময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার চাপা, কৃষি ও শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সৈয়দ আব্দুল আউয়াল শামীম, উপ-দপ্তর সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ১৪ দলের শরিক নেতাদের বৈঠক শেষ হয়েছে, তবে বৈঠকের ফলাফল নিয়ে মূল শরিক আওয়ামী লীগ বা অন্য কোনো দলের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে কিছু জানানো হয়নি।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ধানমন্ডিতে দলের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে মঙ্গলবার দুপুরে এ বিষয়ে বিফ্রিং করবেন বলে দলটির সূত্র জানিয়েছে।
গণভবনে সোমবার সন্ধ্যায় শেখ হাসিনার সঙ্গে ১৪ দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে জোটপ্রধান শেখ হাসিনাকে এশিয়া ক্লাইমেট মোবিলিটি চ্যাম্পিয়ন লিডার অ্যাওয়ার্ড পাওয়ায় অভিনন্দন জানান শরিক দলের শীর্ষ নেতারা।
বৈঠকের শুরুতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য দেন। সভার শুরুতে এশিয়া ক্লাইমেট মোবিলিটি চ্যাম্পিয়ন লিডার অ্যাওয়ার্ড পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান ১৪ দলের নেতারা।
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় নেতৃত্ব এবং সোচ্চার কণ্ঠস্বরের স্বীকৃতি হিসেবে এ পুরস্কার পান প্রধানমন্ত্রী। তাকে এ পুরস্কারে ভূষিত করেছে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) এবং জাতিসংঘ সমর্থিত গ্লোবাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট মোবিলিটি সংস্থা। রোববার সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর হাতে এ পুরস্কার তুলে দেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
এর আগে গত শুক্রবার দুপুরে দুবাইতে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন-কপ ২৮-এর সাইড-লাইনে একটি উচ্চস্তরের প্যানেল অধিবেশনে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি রাষ্ট্রদূত ডেনিস ফ্রান্সিস এবং আইওএমের মহাপরিচালক অ্যামি পোপের কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পুরস্কারটি গ্রহণ করেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
১৪ দলের সোমবারের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এর মুখপাত্র এবং সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, জাতীয় পার্টি তথা জেপির সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদৎ হোসেন, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম, তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি, জাতীয় পার্টি জেপির মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম প্রমুখ।
বাংলায় একটা বাক্য প্রচলিত আছে- প্রেমের পরিণাম ভেবে কেউ প্রেম করে না; যে পরিণামের কথা ভাবে, সে প্রেম করতে পারে না। প্রেমের ক্ষেত্রে আবেগ প্রাধান্য পেলেও রাজনীতির বেলায় ব্যাপারটা ঠিক উল্টো। রাজনীতিতে আবেগের স্থান নেই- বাস্তবতার নিরিখে পরিণাম ভেবেই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। একজন রাজনৈতিক নেতার একটা ভুল সিদ্ধান্ত বা কর্মসূচি তার নিজের, তার দলের এমনকি দেশের জন্যও অনেক সময় বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে।
তফসিল অনুযায়ী আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আছে আর মাত্র ৩২ দিন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নির্বাচনে এলে তফসিল পুনর্নির্ধারণ করা যেতে পারে- নির্বাচন কমিশন থেকে একাধিকবার এমন কথা বলা হলেও তা কোনো কাজে আসেনি। নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে রাজপথে আন্দোলনরত দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন বর্জনই করল।
এদিকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ইতোমধ্যেই সারা দেশে একটা নির্বাচনী আবহ তৈরি হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে ভোটের মাঠে নেমে পড়েছে। নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং অংশগ্রহণমূলক করতে দলীয় প্রার্থীর পাশাপাশি দলের অন্য নেতাদের নির্বাচনে অংশ নেয়ার পথ উন্মুক্ত রেখেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ফলে অধিকাংশ আসনেই দলটির নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এ ছাড়া, বর্তমান সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ৩২টি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। দুই হাজার সাতশরও বেশি প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এর মধ্যে বাছাইয়ে ৭৩১ জনের প্রার্থিতা বাতিল হলেও এখনো প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার জন্য তাদের আপিল করার সুযোগ রয়েছে।
বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে রাজপথে থাকা মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির নেতৃত্বে গঠিত নতুন জোট ‘যুক্তফ্রন্ট’ ও বিএনপির বেশকিছু সাবেক নেতার সমন্বয়ে গঠিত তৃণমূল বিএনপি এবং বিএনএম (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন) নামে দুটি আলাদা রাজনৈতিক দল নির্বাচনী লড়াইয়ে মাঠে নেমেছে।
পাশাপাশি বিএনপির বেশকিছু নেতা আসন্ন নির্বাচনে স্বতন্ত্র কিংবা অন্যান্য দলে যোগ দিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর ঝালকাঠি-১ আসনে আওয়ামী লীগের হয়ে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। স্পষ্টভাষী বলে পরিচিত ও বহুল আলোচিত বিএনপি নেতা মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান এবং বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
এমন পরিস্থিতিতে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে নির্বাচন বর্জন করে আন্দোলনে সাফল্য অর্জন করা বিএনপির জন্য শুধু কঠিনই নয় বরং অনেকটা অসম্ভব বলা চলে।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ১০ মে সুপ্রিম কোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় দেন। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের দেয়া রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ৩০ জুন সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাসের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। তৎকালীন সংসদের প্রধান বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি সংসদের ভেতরে এবং রাজপথে এই সংশোধনীর তীব্র প্রতিবাদ জানায়।
এর ধারাবাহিকতায় নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। একপর্যায়ে আন্দোলন ব্যাপক জ্বালাও-পোড়াও ও সহিংসতায় রূপ নেয় এবং এতে বহু নিরীহ মানুষ হতাহত হয়। ফলে দলটি দেশে-বিদেশে তীব্রভাবে সমালোচিত হয় এবং কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা হত্যা ও নাশকতার মামলায় আসামি হলে দলটি ভীষণ চাপে পড়ে।
বিএনপি ভেবেছিল নির্বাচন বর্জন করে একতরফা নির্বাচনের অভিযোগে আন্দোলনের মাধ্যমে খুব দ্রুতই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করবে। যেমনটি ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কট করে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ আন্দোলনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আদায় করে ৩০ মার্চ খালেদা জিয়ার সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করেছিল। ১৯৯৬ সালের ২৭ মার্চ ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নিরপেক্ষ-নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়।
কিন্তু বিএনপি আন্দোলন করে সফল হতে পারেনি। ফলে সেই নির্বাচন বর্জন করে কিছুই অর্জন করতে পারেনি দলটি বরং সহিংস কর্মকাণ্ডের জন্য অনেকটা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই।
পরবর্তী সময়ে তারা দলের নিবন্ধন টিকিয়ে রাখতে ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলেও ভোটের দিন বেলা ১১টায় অনিয়মের অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জন করে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী কোনো রাজনৈতিক দল পরপর দুটি নির্বাচনে অংশ না নিলে সেই দলের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যায়। আর নিবন্ধন বাতিল হয়ে গেলে নির্ধারিত দলীয় প্রতীকও (মার্কা) বাতিল হয়ে যায়।
সে হিসেবে দলীয় নিবন্ধন টিকিয়ে রাখতে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে (ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন) অংশ নেয়া-না নেয়া নিয়ে বিএনপি আবারও সংকটে পড়তে পারে।
বিএনপির দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফলাফল পর্যালোচনা করলে অনুধাবন করা যায় যে, এবারও নির্বাচন বর্জন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান ফিরিয়ে আনার দাবিতে তাদের চলমান আন্দোলনের সফলতা অনেকটাই অনিশ্চিত।
তবে সাম্প্রতিককালে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বক্তব্য শুনে ও বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে মনে হচ্ছিল, একটা বিশেষ দেশের সহায়তায় তারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে কোনো বিদেশি রাষ্ট্র চাইলেই বাংলাদেশের মতো একটি দেশের সরকার উৎখাত করে আরেকটি দলকে ক্ষমতায় বসাতে পারে না।
এতে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, নেতৃত্বের দুর্বলতা ও অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে বিএনপির মতো একটা বৃহৎ রাজনৈতিক দল বারবার ভুলের ঘূর্ণিপাকে আবর্তিত হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে আওয়ামী লীগ উদ্বিগ্ন নয়। যারা এই নির্বাচনে বাধা দিতে আসবে ভোটাররাই তাদের প্রতিহত করবে।’
আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নাশকতা করে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসা থেকে বিরত করা যাবে না। বিদেশি বন্ধুরাও বুঝতে পেরেছে বাংলাদেশে নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন নই।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকে সমানে রেখে দেশের কোথাও সংঘাত-সংঘর্ষ বা সহিংসতা প্রার্থীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কোনো ঘটনা ঘটেছে? ঘটে নাই। যেটুকু হচ্ছে সেটুকু নাশকতা এবং বিএনপি ও তার দোসররাই করে যাচ্ছে। নাশকতা পরাজিত হবে, জনগণের শক্তির বিজয় হবে। যুগে যুগে, দেশে-দেশে এটাই প্রমাণিত হয়েছে আর বাংলাদেশেও এটার ব্যতিক্রম হবে না।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপি সিদ্ধান্ত নিয়েই এ নির্বাচন বয়কট করছে। তারা স্বেচ্ছায় নির্বাচনে আসছে না। তাদের নির্বাচনে অংশ নিতে জোর করব কেন? আর আওয়ামী লীগ সংবিধান মেনেই নির্বাচনে এসেছে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগের যেসব প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে, তারা আপিলেও না টিকলে পক্ষপাত করবে না আওয়ামী লীগ। এক নির্বাচিত সরকারের কাছে আরেক নির্বাচিত সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর করবে- এটাতে আওয়ামী লীগ প্রতিজ্ঞ।’
১৪ দলের সঙ্গে আসন বন্টন নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘যেগুলো যুক্তিযুক্ত, নির্বাচনে জেতার যোগ্য জোটের শরীক হলেও মনোনয়ন দিতে আওয়ামী লীগের আপত্তি নেই। জোটের খাতিরে শুধু শুধু মনোনয়ন দিলে গণতন্তের প্রতি সুবিচার তো হলো না।’
আগামী ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ ঘিরে কোনো সংঘাতের আশঙ্কা করছেন কি না প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কয়েক মাস ধরে এই ঢাকাতেই বিএনপি সমাবেশ করেছে, আমরাও করেছি। আপনারা তো (সাংবাদিক) পাল্টাপাল্টি বলে খবর করেছেন। কিন্তু পাল্টাপাল্টি মারামারি কোথাও হয়নি। এখানে এক দলের সঙ্গে অন্য দলের কোনো সংঘাত হয়নি। তারা পদযাত্রা করেছে আর আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশ করেছে। কিন্তু কোনো বিশৃঙ্খলা তো হয়নি। আর ১০ তারিখ হলো বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। এদিনে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করেছি। এখানে পাল্টাপাল্টির কী আছে? বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালন করা হবে, এটা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। এখানে কোনো পাল্টাপাল্টির বিষয় নেই।’
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম ও সুজিত রায় নন্দী উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ওবায়দুল কাদের রাজধানীর গুলিস্তানে বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রমের জ্যেষ্ঠ্যপুত্র ও মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সদস্য সাজেদুল হোসেন চৌধুরী দিপুর জানাযায় অংশ নেন। এ সময়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ দলের সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
পরে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে মরহুম দীপু চৌধুরীর কফিনে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে নাশকতার অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় দায়ের করা আট মামলায় ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরীকে আগাম জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।
সোমবার বিচারপতি হাবিবুল গণি ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ জামিন দেন। আগামী ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত তার জামিন মঞ্জুর করেছেন।
আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন তার বাবা অ্যাডভোকেট নিতাই চৌধুরী।
আদেশের পরে অ্যাডভোকেট নিতাই চৌধুরী বলেন, ‘রাজধানীর রমনা ও পল্টন থানায় সাতটি এবং দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় দায়ের করা এক মামলায় তাকে আগাম জামিন দিয়েছেন আদালত।’
তিনি বলেন, ‘২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা হয়। তার বিরুদ্ধে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা ও নাশকতার অভিযোগে রমনা ও পল্টন থানায় সাতটি এবং দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলা থেকে আদালতে আগাম জামিন আবেদন করলে আদালত জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।’
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। অনেকেই এবারের নির্বাচন থেকে বাদ পড়া ও জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে নিয়ন্ত্রণ হারানোকে রওশনের রাজনৈতিক অধ্যায়ের সমাপ্তি হিসেবে দেখছেন। জাতীয় পার্টির চলমান সংকটে এবার রওশন এরশাদকে নিয়ে মুখ খুলেছেন বিদিশা এরশাদ। গতকাল রোববার তিনি বলেন, আমরা সময় থাকতে থামতে জানি না। আমাদের সবারই একটা পরিকল্পনা থাকা উচিত, কখন কী করব এবং একটা নির্দিষ্ট সময় পর কখন কোথায় থেমে যাব। তা না হলে আফসোস করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।
এবারের নির্বাচনে মনোনয়ন নেননি কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে বিদিশা এরশাদ বলেন, আমি অপরাজনীতির শিকার, তাই মনোনয়ন নিইনি কিংবা চাইনি। আমার তো রাজনীতি করার সময় ফুরিয়ে যায়নি। সম্মান দেয়া-নেয়ার মালিক আল্লাহর। তিনি ভালো জানেন।
তিনি বলেন, আমি সবকিছুই পর্যবেক্ষণ করছি। আপাতত ছেলে শাহাতা জারাব এরিককে নিয়ে প্রেসিডেন্ট পার্কে বসে সবকিছুর ওপর নজর রাখছি। সময় এলে কথা বলব। এরশাদ সাহেবের রেখে যাওয়া তুমুল জনপ্রিয় একটা দলকে এরা মাটিতে মিশিয়ে দিচ্ছে। যারা জাতীয় পার্টি এবং হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ভালোবাসেন তারা প্রচণ্ড হতাশ।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে নানা নাটকীয়তার পর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও তার অনুসারীদের সঙ্গে কৌশলের লড়াইয়ে হেরে গিয়ে আপাতত নির্বাচন ও রাজনীতির বাইরে রওশন এরশাদ ও তার অনুসারীরা। রাজনৈতিক বাস্তবতায় ৮৭ বছরের রওশনের পক্ষে রাজনীতিতে ফিরে আসা ও জাতীয় পার্টির নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়া সহজ হবে না।
পাবনা-২ (সুজানগর-বেড়ার একাংশ) আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম)-এর প্রার্থী সংগীতশিল্পী ডলি সায়ন্তনীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পাবনা জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মু. আসাদুজ্জামান তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন।
তিনি বলেন, ‘ক্রেডিট কার্ড সংক্রান্ত খেলাপি ঋণের কারণে ডলি সায়ন্তনীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে ডলি সায়ন্তনী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কার্ডের বিষয়টি আমার নলেজে ছিল না। বিষয়টি আমি দ্রুত সমাধান করে আপিল করবে। আপিলে আমার মনোনয়নপত্র ফিরে পাব বলে আশা প্রকাশ করছি।’
এর আগে গত ২৯ নভেম্বর বিকেল ৪টার দিকে পাবনা জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে নিজেই উপস্থিত হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন ডলি সায়ন্তনী।
সেদিন তিনি বলেন, ‘আমার জন্ম পাবনা শহরের সোনাপট্টি এলাকায়। দাদার বাড়ি সুজানগর উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের ভায়না গ্রামে। সেখানে আমার চাচারা থাকেন। এজন্য আমি সেখানে প্রার্থী হয়েছি। আশা করি পাবনা-২ আসনের মানুষ আমার পাশে থাকবেন।’
‘জীবন্ত দগ্ধ মানুষদের আর্তনাদ কি বিএনপি-জামাতের কানে পৌঁছায় না’ প্রশ্ন রেখে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘অগ্নিসন্ত্রাসী ও তাদের হুকুমদাতা, অর্থদাতাদের বিচার হলেই কেবল অগ্নিসন্ত্রাস বন্ধ হবে।’
আজ রোববার রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ‘অগ্নিসন্ত্রাসের আর্তনাদ’ সংগঠন আয়োজিত ‘মানবাধিকার লংঘনকারী বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসী ও হুকুমদাতাদের বিচার চাই’ শীর্ষক মানববন্ধন ও সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ সব কথা বলেন।
‘অগ্নিসন্ত্রাসের আর্তনাদ’ আহ্বায়ক শাহাদত হোসেন বাবুলের সভাপতিত্বে সমাবেশে অ্যাডভোকেট খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন এমপি, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আখতারুজ্জামান, আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আনোয়ার হোসেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল বোমা হামলায় নিহত নাহিদের মা রুনি বেগম, আগুনে ঝলসে যাওয়া সালাউদ্দিন ভূঁইয়াসহ অনেক আহত ও নিহতদের পরিবারের সদস্যরা অগ্নিসন্ত্রাসী ও মদদদাতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
তাদের দাবির সঙ্গ সংহতি প্রকাশ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বা দ্রুততম সময়ে বিচারের মাধ্যমে ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে যারা আগুনসন্ত্রাস চালিয়েছিলো তাদের এবং হুমুকদাতা ও অর্থদাতাদের যদি আমরা বিচার করতে পারতাম, তাহলে আজকে ২০২৩ সালে এই আগুনসন্ত্রাস হতো না। সেই সময় তারা আগুনসন্ত্রাস চালিয়েছিল খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে, আর এখন চালানো হচ্ছে তারেক জিয়ার নেতৃত্বে।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘একটি রাজনৈতিক দল অবরোধ ডেকে ঘরের মধ্যে ঘুমিয়ে থাকে আর তাদের কিছু কর্মী, সন্ত্রাসী আর কিছু মানুষকে ভাড়া করে হাতে পেট্রোলবোমা তুলে দিয়ে চোরাগোপ্তা হামলা করাচ্ছে, গাড়িতে আগুন দেওয়াচ্ছে। এটি কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি হতে পারে না। পৃথিবীর কোথাও গত দুই দশকে রাজনীতির জন্য এভাবে আগুনসন্ত্রাস করে মানুষকে পুড়িয়ে মারার ঘটনা ঘটেনি, যেটি বাংলাদেশে বিএনপি-জামাত করছে।’
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আজকে সকালে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন থেকে এসেছি। সেখানে দুবাইয়ে কমনওয়েলথ সেক্রেটারির সঙ্গে বৈঠকে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় প্রশ্ন রেখেছিলাম, পৃথিবীর কোথাও রাজনীতির কারণে এভাবে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করা, নিরীহ মানুষকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হত্যা করা হচ্ছে কি না, যেটি বাংলাদেশে বিএনপি জামাত ঘটাচ্ছে। তার পুরো দল স্বীকার করেছে পৃথিবীর অন্য কোথাও এটি ঘটছে না, গত ২০ বছরে কোথাও ঘটেনি।’
আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি-জামাতের খাসলত বদলাবে আশা করেছিলাম, কিন্তু না, তারা আবার সেই পুরনো আগুনসন্ত্রাস শুরু করেছে। আসলে কয়লা ধুলে ময়লা যায় না, বিএনপি-জামায়াতও কখনো ভালো হবে না। সুতরাং এদেরকে প্রতিহত করতে হবে। গত এক মাসে তারা ৫৮০টি গাড়িতে আগুন দিয়েছে। অনেক ড্রাইভার-হেলপারকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করেছে। আর এই সমস্ত কিছু পরিচালিত হচ্ছে তারেক রহমান আর বিএনপি নেতাদের নির্দেশে। সুতরাং তারাও দোষী এবং এই অগ্নিসন্ত্রাসের যারা শিকার তাদের আর্তনাদ ও দাবী অনুযায়ী নেতাদেরকেও বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে নূরুল আলা নূর ইসলামী কিন্ডারগার্টেন মাদরাসার বিপ্লব নামে এক শিক্ষককে মারধরসহ লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে ফরহাদ হোসেন নামে এক ছাত্রীর অভিভাবকের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ওই মাদরাসা শিক্ষক। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে অন্যান্য অভিভাবকরা।
জানা গেছে, গত ২৩ নভেম্বর সকালে ক্লাস চলাকালীন সময়ে এক ছাত্রী বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করায় শাসন করে। পরে সে তার বাবা ফরহাদকে বিষয়টি জানালে কিছুক্ষণ পরেই মাদরাসা ছুটি শেষে বাড়ি ফিরছিলেন বিপ্লব। পথিমধ্যে ওই ছাত্রীর বাবা ফরহাদ হোসেন তাকে রাস্তায় গতিরোধ করে গলা টিপে ধরে মারধর ও কিল-ঘুষি মেরে লাঞ্ছিত করে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষক বিপ্লব বলেন, ‘মাদরাসা প্রতিষ্ঠাকাল থেকে সুনামের সাথে শিক্ষকতা করে আসছি। গত সপ্তাসে ক্লাসে এক ছাত্রী ক্লাসের মধ্যেই বিভিন্ন সময়ে বিশৃঙ্খলা করে আসছিল। তার সহপাঠিরা অভিযোগ করায় আমি তাকে শাসন করি। পরে বিষয়টি তার বাবাকে বলায় আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গলা টিপে মারধর করে।’
তিনি আরও জানান, বিষয়টি প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও পরিচালক মহোদয়কে জানানো হলে তারা মিমাংসা করে দেয়ার আশ্বাস দেয়। যার কারণে থানায় অভিযোগ করেনি। কিন্তু সপ্তাহ পার হলেও কোনো সুষ্ঠু বিচার পাচ্ছি না। উল্টো ফরহাদ হোসেন হুমকি দিচ্ছেন। এমন অবস্থায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি এবং ফরহাদ হোসেনের কঠোর শাস্তি দাবি করছি।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার ৩০ নভেম্বর সকালে নূরুল আলা নূর ইসলামী কিন্ডারগার্টেন মাদরাসার প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ ইসরাফিলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। অভিযোগের বিষয়ে জানতে ফরহাদ হোসেনকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
এ ঘটনায় মাদরাসার পরিচালক প্রফেসর আশরাফকে একাধিবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেনি। এ ব্যাপারে ভূঞাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আহসান উল্লাহ্ বলেন, কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।