বিএনপির সংসদ সদস্যদের ছেড়ে দেয়া ছয় সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন আজ বুধবার। আসনগুলো হলো- ঠাকুরগাঁও-৩, বগুড়া-৪, বগুড়া-৬, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২। আসনগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪০ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে ১০টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী আছেন ২৩ জন, বাকি ১৭ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়েও ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হয়েছেন ছয়জন। বিএনপি ভোট বর্জনের আহ্বান জানালেও দলটির চার নেতা ভোট করছেন এই নির্বাচনে।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) জানিয়েছে, ছয়টি আসনে একযোগে আজ সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট নেয়া হবে। ছয় আসনের ৮৬৭ কেন্দ্রের সবগুলোতে ভোট নেয়া হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করে। গতকাল মঙ্গলবার আসনগুলোতে পৌঁছে দেয়া হয়েছে ইভিএম মেশিনসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের নির্বাচনী সরঞ্জাম। নিজেদের প্রথম সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে ব্যবহার করলেও এবার ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা ব্যবহার করছে না ইসি।
সংসদীয় আসনগুলোতে সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্ন ভোট আয়োজনের সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে ভোট হবে আশাবাদ জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেন, ‘সুষ্ঠু ভোটের জন্য সব প্রস্তুতি আছে। কেবল সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা করিনি। বাকি সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সুষ্ঠু-সুন্দর নির্বাচন করার জন্য যা যা দরকার, আমরা সব করেছি। ভোটকেন্দ্রে নিরবচ্ছিন্নভাবে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ভোট চলবে। ইভিএমে ভোট দেয়ার জন্য ভোটার এডুকেশন যথেষ্ট করা হচ্ছে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২
ছয় আসনের উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই নানা ধরনের চমক দেখাচ্ছে এই আসনটি। বিএনপির যে সংসদ সদস্যের পদত্যাগে আসনটি শূন্য হয়েছে, সেই উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়াই আবার দল থেকে পদত্যাগ করে এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে চমকে দেন সবাইকে। পরে দল তাকে বহিষ্কার করে। এদিকে এই আসনে আওয়ামী লীগ কোনো প্রার্থী দেয়নি, শরিক দলগুলোর কোনো প্রার্থীকে সমর্থনও দেয়নি। বরং প্রতীক বরাদ্দের পর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাই আব্দুস সাত্তারের নির্বাচনী প্রচারণা এগিয়ে নিয়ে গেছেন। দলটির কেন্দ্রীয় নেতারাও তার পক্ষে জনসভা করেছেন।
এদিকে নির্বাচনের পাঁচ দিন আগে গত শুক্রবার এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা আবু আসিফ আহমেদ নিখোঁজ হয়েছেন বলে অভিযোগ তোলে তার পরিবার। এখন পর্যন্ত তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ফোনালাপে তার নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি সাজানো কি না, সে প্রশ্ন উঠেছে। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না করায় সে সন্দেহ আরও জোরালো হয়। শেষ পর্যন্ত ভোটের আগের দিন গতকাল দুপুরে আবু আসিফের স্ত্রী মেহেরুন্নিছা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তার স্বামীর নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। এ ঘটনায় নির্বাচন কমিশন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তবে সার্বিক ঘটনা বিশ্লেষণে আবু আসিফ আত্মগোপনে থাকতে পারেন বলেও নির্বাচন কমিশন মনে করছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান।
এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৩১৩ জন। মোট ভোটকেন্দ্র ১৩২টি। আসনটিতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী পাঁচজন। আব্দুস সাত্তার ও আবু আসিফ ছাড়া বাকি প্রার্থীরা হলেন জাতীয় পার্টির আব্দুল হামিদ ভাসানী (লাঙ্গল) ও জাকের পার্টির প্রার্থী জহিরুল হক (গোলাপ ফুল) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জাতীয় পার্টির সাবেক দুই মেয়াদের সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা (আপেল)। জিয়াউল হক অবশ্য প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময়সীমা শেষ হওয়ার পর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
এই আসনে পুলিশ, আনসার সদস্য ও গ্রাম পুলিশের পাশাপাশি চার প্লাটুন বিজিবি ও র্যাবের ১০টি টিম আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবে। এ ছাড়া ১৭টি ইউনিয়নের প্রতিটিতে একজন করে মোট ১৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও দুজন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ও সংক্ষিপ্ত বিচারকাজ করবেন। এই আসনের উপনির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম বলেন, ‘আবু আসিফকে খুঁজে বের করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ করতে সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।’
ঠাকুরগাঁও-৩
এই আসনে মোট ৩ লাখ ২৪ হাজার ৭৪১ জন ভোটার। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৫৯ হাজার ৫৩১ জন, পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৬৫ হাজার ২১০ জন। মোট ভোটকেন্দ্র ১৩৮টি। এর মধ্যে ৭২টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ, যদিও নির্বাচন কমিশন এই কেন্দ্রগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ না বলে গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিহিত করছে।
এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ছয় প্রার্থী। দলীয় প্রার্থীরা হলেন ওয়ার্কার্স পার্টির ইয়াসিন আলী (হাতুড়ি), জাতীয় পার্টির হাফিজ উদ্দীন আহমেদ (লাঙ্গল), জাকের পার্টির এমদাদুল হক (গোলাপ ফুল), বাংলাদেশ ন্যাশনাল পিপলস পার্টির সাফি আল আসাদ (আম), বাংলাদেশ ন্যাশনাল ফ্রন্টের (বিএনএফ) সিরাজুল ইসলাম (টেলিভিশন)। এই আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কোনো প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়নি। একতারা প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোপালচন্দ্র রায় দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ‘বিদ্রোহী’ হিসেবে ভোট করছেন এই আসনে।
এ আসনে প্রতিটি কেন্দ্রে চারজন অস্ত্রধারী পুলিশ, দুজন নারী পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েন থাকবেন। এ ছাড়া সাত প্লাটুন বিজিবি সদস্য, ১৮ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচনী এলাকা নজরদারিতে রাখবেন। আঞ্চলিক রিটার্নিং কর্মকর্তা জি এম সাহাতাব উদ্দীন বলেন, ‘নির্বাচনী পরিবেশ ঠিক রাখতে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সাদা পোশাকেও পর্যাপ্তসংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন থাকবে।
বগুড়া-৪ ও বগুড়া-৬
বগুড়া-৪ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ২৮ হাজার ৪৬৯ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৬৫ হাজার ৪৩৪ জন, পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৬৩ হাজার ৩৫ জন। এই আসনের ১১২টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ৭৯টি। কেবল কাহালুতেই ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ৫৬টি।
এই আসনে ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৯ জন। এ আসনে আওয়ামী লীগ নিজে প্রার্থী না দিয়ে সমর্থন দিয়েছে ১৪ দলীয় জোট থেকে জাসদ প্রার্থী রেজাউল করিম তানসেনকে (মশাল)। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির শাহীন মোস্তফা কামাল (লাঙ্গল), বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. তাজ উদ্দীন মণ্ডল (ডাব) ও জাকের পার্টির মো. আব্দুর রশিদ সরদার (গোলাপ ফুল) রয়েছেন দলীয় প্রার্থী। পাঁচ স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে কুড়াল প্রতীকে নির্বাচন করছেন সাবেক বিএনপি নেতা কামরুল হাসান সিদ্দিকী জুয়েল, ট্রাক প্রতীকে নির্বাচন করছেন সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা মো. মোশফিকুর রহমান কাজল। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আরও আছেন মো. ইলিয়াস আলী, (কলার ছড়ি), মো. গোলাম মোস্তফা, (দালান) ও আলোচিত আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম, (একতারা)।
এদিকে বগুড়া-৬ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ১০ হাজার ৭৪৩ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ২ লাখ ৮ হাজার ২৫৯ জন, পুরুষ ভোটার ২ লাখ ২ হাজার ৪৮৪ জন। এই আসনের ১৪৩টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৭৯টিই ঝুঁকিপূর্ণ।
এই আসনে দলীয় প্রার্থী ছয়জন হলেন- আওয়ামী লীগের রাগেবুল আহসান রিপু (নৌকা), জাসদের মো. ইমদাদুল হক ইমদাদ (মশাল), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মো. নজরুল ইসলাম (বটগাছ), জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম ওমর (লাঙ্গল), জাকের পার্টির মোহাম্মদ ফয়লাস বিন শফিক (গোলাপ ফুল) ও গণফ্রন্টের মো. আফজাল হোসেন (মাছ)। পাঁচ স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ আব্দুল মান্নান (ট্রাক) ও বিএনপির ‘বিদ্রোহী’ সরকার বাদল (কুড়াল)। এ আসনেও প্রার্থী হয়েছেন হিরো আলম। এ ছাড়া মাছুদার রহমান হেলাল (আপেল) ও রাকিব হাসান (কুমির) স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন।
বগুড়া জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, ‘দুই আসনের উপনির্বাচনে তিনজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ৩৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবেন। পাশাপাশি মোতায়েন থাকবে ১৬ প্লাটুন বিজিবি। এ ছাড়া ভোটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সাড়ে ৪ হাজার নিরাপত্তাকর্মী কাজ করবেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৫ হাজার ৪৫০ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ২ লাখ ৪ হাজার ২৮০ জন, পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১ হাজার ১৭০ জন। আসনটির ১৮০টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের সংখ্যা ১২২।
নাচোল, গোমস্তাপুর ও ভোলাহাট উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনে দলীয় প্রার্থী চারজন, স্বতন্ত্র দুজন। দলীয় প্রার্থীরা হলেন- আওয়ামী লীগের মু. জিয়াউর রহমান (নৌকা), জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক (লাঙ্গল), জাকের পার্টির গোলাম মোস্তফা (গোলাপ ফুল) ও বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) নবীউল ইসলাম (টেলিভিশন)। এ আসনে স্বতন্ত্র দুজনই আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী। তারা হলেন- মোহাম্মদ আলী সরকার (আপেল) ও খুরশিদ আলম বাচ্চু (মাথাল)।
অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ১১ হাজা ৪৯৫ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ২ লাখ ৫ হাজার ৬১২ জন, পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৫ হাজার ৮৮৩ জন। আসনটির ১৭২টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৯৭টি।
এই আসনে প্রার্থী মাত্র তিনজন। তাদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের আব্দুল ওদুদ (নৌকা), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) কামরুজ্জামান খান (টেলিভিশন) এবং আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী সামিউল হক লিটন (আপেল)।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খান জানান, ৩৩ জন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন।
[প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন দৈনিক বাংলার ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঠাকুরগাঁও, বগুড়া ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি]
দীর্ঘ ১৭ বছরের প্রবাস জীবনের অবসান ঘটিয়ে আগামী ২৫ ডিসেম্বর ঢাকার মাটিতে পা রাখবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার এই প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনীতিতে নতুন গতি ও আলোচনার সূচনা হয়েছে; যা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে। তার প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে ইতোমধ্যে আনন্দ র্যালি হয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলায়।
দলের একাধিক সূত্র জানায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাম্প্রতিক অসুস্থতা এবং ফেব্রুয়ারি ২০২৬-এ অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতেই তারেক রহমানের দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। ঘোষণার পরপরই দেশের গণমানুষের মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস দেখা যায়।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী মনে করেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরা গণতান্ত্রিক রাজনীতিকে আরও সক্রিয় করবে এবং দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করবে। যুবদল, ছাত্রদলসহ বিএনপির বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন ইতোমধ্যে তাকে স্বাগত জানাতে বড় পরিসরের প্রস্তুতি শুরু করেছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে ফিরে তারেক রহমান গুলশানের ফিরোজা ও পার্শ্ববর্তী একটি বাসভবনে অবস্থান করবেন। এ উপলক্ষে রাজধানীতে নেতাকর্মীদের জমায়েত এবং রাজনৈতিক তৎপরতা বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সরকারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, তারেক রহমানের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তারেক রহমানের এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তন আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির জন্য নতুন উদ্দীপনা ও কৌশলগত শক্তি যোগাবে। দীর্ঘদিন পর তার সরাসরি উপস্থিতি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। জাতি এখন অপেক্ষায় রয়েছে এই বহুল আলোচিত ও ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনের।
এদিকে, তার এই ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে রাজধানীজুড়ে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমানের নিরাপত্তায় পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রায় দুই হাজার সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৩০০ ফিট হয়ে এভারকেয়ার হাসপাতাল এবং গুলশান অ্যাভিনিউয়ের বাসভবন পর্যন্ত পুরো পথটি নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হবে। পুলিশের স্পেশাল এস্কর্ট ছাড়াও সাদা পোশাকে ও পোশাকি পুলিশের পাশাপাশি বিএনপির নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী ‘চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্স’ (সিএসএফ) সমন্বিতভাবে এই নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে।
নিরাপত্তা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২৩ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকেই পুলিশের বিশেষ পাহারা শুরু হতে পারে। বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত প্রতিটি থানা এলাকায় পুলিশ মোতায়েন থাকবে এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে নতুন করে চেকপোস্ট বসানো হবে। বর্তমানে গুলশান ও বারিধারা এলাকায় যে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে, তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষে তা আরও জোরদার করা হচ্ছে। বিশেষ করে তার বাসভবন ও আশপাশের এলাকায় প্রতিদিন দেড় শতাধিক পুলিশ ও গোয়েন্দা সদস্য মোতায়েন রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।
তারেক রহমানের আবাসন নিয়েও চলছে বিশেষ প্রস্তুতি। গুলশান অ্যাভিনিউয়ের বাড়িটি মেরামতের কাজ চলছে। যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেই বাড়িটি পুরোপুরি প্রস্তুত না হয়, তবে তিনি তার মা খালেদা জিয়ার ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’তে উঠতে পারেন। খালেদা জিয়া বর্তমানে ভিভিআইপি নিরাপত্তা ও এসএসএফ সুবিধা পাচ্ছেন, ফলে তারেক রহমান সেখানে অবস্থান করলে এসএসএফ, সিএসএফ এবং পুলিশের একটি শক্তিশালী সমন্বিত নিরাপত্তা বলয় তৈরি হবে। তার কার্যালয় এবং চলাচলের পথ ঘিরে গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।
এদিকে, নিরাপত্তা ও ভিআইপি ব্যবস্থাপনার বিষয়টি বিবেচনায় তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত লন্ডন-ঢাকা রুটের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইট থেকে দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এরা হলেন জুনিয়র পার্সার মো. সওগাতুল আলম সওগাত এবং ফ্লাইট স্টুয়ার্ডেস জিনিয়া ইসলাম। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, গোয়েন্দা প্রতিবেদনে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার তথ্যের ভিত্তিতেই তাদের ফ্লাইট দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে ওই দুই কেবিন ক্রুর ছবি ছড়িয়ে পড়ে, যা নতুন করে আলোচনার জন্ম দেয়। অভিযোগ রয়েছে, তারা নিয়মিত সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সেলিমের ফ্লাইট পরিচালনার দায়িত্বে যুক্ত ছিলেন। এসব বিষয় গোয়েন্দা প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত থাকায় ভিআইপি যাত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে সম্ভাব্য ঝুঁকির কথা উল্লেখ করা হয়।
এর আগে চলতি বছরের ২ মে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একটি ফ্লাইট থেকেও গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দুই কেবিন ক্রুকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সে সময়ও ভিআইপি যাত্রীর নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, পত্রিকা অফিসে হামলা জাতির জন্য লজ্জার। প্রথম আলো, ডেইলি স্টার জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ দৃশ্য সারাবিশ্ব দেখেছে। সেটা আমাদের জন্য লজ্জার। রোববার (২১ ডিসেম্বর) রাজধানীর হোটেল রেডিসন ব্লুতে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইন নিউজ পোর্টালের সম্পাদক রেডিও, টেলিভিশনের বার্তা প্রধান এবং গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে এ মতবিনিময় সভা করে বিএনপি।
তিনি বলেন, এটা কোনোভাবে আমরা শুধুমাত্র দুঃখ প্রকাশ করে, ক্ষমা প্রার্থনা করে সমাপ্ত করতে পারব না। এখানে সরকারের দায়িত্ব ছিল সবচাইতে বেশি। আমরা জেনেছি হামলার বিষয়ে ইন্টেলিজেন্স রিপোর্ট ছিল। কিন্তু সেটা আমলে নেয়া হলো না কেন- এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি।
সালাহউদ্দিন বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলার পরেও শুনেছি এক দুই ঘন্টা পরে তারা সাড়া দিয়েছে। সেটা কেন? কাদের হাতে আমরা এই রাষ্ট্রব্যবস্থা দেব? নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যারা দায়িত্ব নিয়েছেন তাদের ভূমিকাটা প্রশ্নবিদ্ধ।
তিনি বলেন, কয়েকদিন ধরে গণমাধ্যমকে চিহ্নিত করে, টার্গেট করে হামলা করতে দেখেছি। নতুন নয়। কিছু স্থাপনায়, ঠিকানায় মমোক্র্যাসিকে এলাও করা হয়েছে। আমরা চেয়েছিলাম ডেমোক্র্যাসি কিন্তু কেন হয়ে যাবে মমক্র্যাসি। তাকে কেন লালন করতে দেওয়া হবে। এগুলো আমি সরকারের দুর্বলতাকেই ইঙ্গিত করছি এগুলো আরো কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।
বিএনপির সিনিয়র এ নেতা বলেন, দেশ নিয়ে গণপ্রত্যাশা, গণআকাঙ্ক্ষা অনেক বেশি। পূর্ণগণতন্ত্রণ চায় বাংলাদেশের সব মানুষ। গণতন্ত্রকে সর্বক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানিকীকরণ করতে চায়। গণতন্ত্র বিনির্মাণের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমনভাবে দাঁড় করাতে হবে- যাতে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো গণতন্ত্রের রক্ষাকবজ হিসেবে কাজ করে।
গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, অনেকে গণমাধ্যমকে চতুর্থ স্তম্ভ বলে। সাংবাদিকদের মধ্যে অনেকেরই রাজনৈতিক সংশ্লিষ্ট থাকবে, আছে কিন্তু বাংলাদেশের স্বার্থের বিবেচনায় সবসময় আমরা যেন দেশের পক্ষেই থাকি। নিরপেক্ষ না থাকি। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব যদি জনগণ দেয় তাহলে আমাদের সহযোগিতা থাকবে সর্বোচ্চ। আমরা অতীত ভুলে যেতে চাই তবে ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী কি করেছে সেটা স্মরণে রাখতে চাই।
তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের প্রসঙ্গ টেনে সালাহউদ্দিন বলেন, জনগণ আশা করছে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের খুটি শক্তিশালী হয়। তিনি বাধ্য হয়ে দীর্ঘ ১৮ বছর কষ্টকর নির্বাসিত জীবনযাপন করেছেন। তার এই প্রত্যাবর্তনকে আমরা গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য কাজে লাগাতে চাই। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
একই অনুষ্ঠানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, শফিক রেহমানের মতো বর্ষীয়ান সাংবাদিকদের যেভাবে জেলে নিয়ে যে আচরণ করা হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে ফ্যাসিবাদের আমলে একটা ঘন কালো অন্ধকারের সময় পার করেছি। প্রত্যেকেই কমবেশি আক্রান্ত হয়েছি। এখনো যে সমস্ত বিষয়গুলো আমাদের সামনে আসছে তা আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। একজন তরুণ নেতার এমন মৃত্যুর আমরা প্রতিবাদ জানাই। তার কথার কারণে জীবন দিতে হবে, এটা মেনে নেয়ার মতো না।
মতবিনিময় সভায় মানবজমিন প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, অস্থির সময়ে আমরা সবাই অস্থির। মিডিয়া পলিসি যেটা বলা হয়েছে সেটা বাস্তবায়ন হলেই মিডিয়া এগিয়ে যাবে। তারেক রহমান এমন এক সময়ে দেশে আসছেন যখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে নিরাপত্তা। দিল্লিতে আমাদের হাইকমিশনারের বাসভবনে হামলা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ডেইলি স্টার প্রথম আলোর উওরে হামলা হয়েছে। এরপরে কি হবে আমরা জানি না। আমরা সবাই নিরাপদ থাকতে চাই, লিখতে চাই। আপনারা আমাদের কথা বলতে দিলে সাধুবাদ জানাব, নয়তো সমালোচনা করব। তবে আগামী দিনে যে চ্যালেঞ্জ আসছে তা মোকাবিলা করতে হলে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন- নয়া দিগন্তের সম্পাদক সালাহউদ্দিন মুহাম্মদ বাবর, মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান, আমার দেশ নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, দৈনিক খবরের কাগজ সম্পাদক মোস্তফা কামাল, কালের কণ্ঠ সম্পাদক হাসান হাফিজ, যুগান্তর সম্পাদক আব্দুল হাই শিকদার, নির্বাহী সম্পাদক এনাম আবেদীন, আজকের পত্রিকা সম্পাদক কামরুল হাসান, ইনকিলাব পত্রিকার সম্পাদক আ ক ম বাহাউদ্দীন, বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ প্রমুখ।
মতবিনিময় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ আহমেদ পাভেল প্রমুখ।
ধর্মান্ধ গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে মবের কালচার তৈরি করছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। এছাড়া ছাত্রদল প্রতিহত করা শুরু করলে মবকারীরা কেউ-ই কোন ক্যাম্পাসে টিকতে পারবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি। রোববার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ময়মনসিংহের দিপু চন্দ্র দাস আর লক্ষ্মীপুরের শিশু আয়শা আক্তারকে পুড়িয়ে হত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত প্রতিবাদ মিছিল শেষে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।
রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘একটি ধর্মান্ধ গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে দেশে মবের কালচার তৈরি করছে। ছাত্রদল প্রতিহত করা শুরু করলে এরা কেউ-ই কোনো ক্যাম্পাসেই টিকতে পারবে না।’
ছাত্রদল সভাপতি বলেন, ‘স্বীকার করতে সমস্যা নেই তেঁজগাও কলেজে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় এক সাধারণ ছাত্র মারা গেছে, আমরা কোন হত্যাকারীকে আশ্রয় দেবো না, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলেছি হত্যাকারীকে দ্রুত গ্রেপ্তার করতে।’এর আগে, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রতিবাদ মিছিল বের করে সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। মিছিলটি টিএসসি থেকে শুরু করে ভিসি চত্বর হয়ে প্রশাসনিক কার্যালয় ঘুরে মধুর ক্যান্টিন হয়ে আবার টিএসসিতে এসে শেষ হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস।
ধর্মকে ব্যবহার করে যারা দেশে মবসন্ত্রাস উসকে দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আয়োজনে দেশব্যাপী মবসন্ত্রাসের বিচারের দাবিতে আয়োজিত এক বিক্ষোভ মিছিল ও পরবর্তী সমাবেশে এ কথা জানান সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। দুপুর পৌনে ১টার দিকে টিএসসি এলাকা থেকে শুরু হওয়া মিছিলটি পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
সমাবেশে ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতিতে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে এবং অনলাইনে ‘বট বাহিনী’ তৈরি করে ঘৃণা ছড়ানোর মাধ্যমে মবসন্ত্রাসে ইন্ধন দিচ্ছে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, দেশের সার্বভৌমত্ব ও সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট করার এই ষড়যন্ত্র ছাত্রদল রাজপথে থেকে প্রতিহত করবে। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, ছাত্রদল একটি গণতান্ত্রিক মানসিকতার সংগঠন বলেই চরম উসকানি সত্ত্বেও কখনো আইন নিজের হাতে তুলে নেয়নি; বরং ধৈর্য ও সহনশীলতার পরিচয় দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে।
ধর্মভিত্তিক রাজনীতির নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে সমালোচনা করে ছাত্রদল সভাপতি বলেন, ধর্মকে কেন্দ্র করে বিভাজন সৃষ্টি করে দেশ অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে। একইসঙ্গে শহীদ শরীফ ওসমান হাদির কবর নিয়ে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে ছড়ানো অপপ্রচার ও গুজবের তীব্র নিন্দা জানান তিনি। তিনি দাবি করেন, এই অপপ্রচারের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে এবং হাদি হত্যাকাণ্ডসহ সাম্প্রতিক সব মবসন্ত্রাসের ঘটনার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস সমাবেশে বলেন, মব সংস্কৃতির নামে চলা অরাজকতা রুখে দাঁড়ানো এখন সময়ের দাবি। মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা ময়মনসিংহের ভালুকায় পোশাক শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাস এবং লক্ষ্মীপুরে বিএনপি নেতার সাত বছরের কন্যা আয়েশা সানজুকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার বিচার দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। মবসন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে এই কর্মসূচি পালন করে ছাত্রদল।
দীর্ঘ ১৭ বছরের বেশি সময় প্রবাসে কাটিয়ে আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাঁর এই ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে রাজধানীজুড়ে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমানের নিরাপত্তায় পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রায় দুই হাজার সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৩০০ ফিট হয়ে এভারকেয়ার হাসপাতাল এবং গুলশান অ্যাভিনিউয়ের বাসভবন পর্যন্ত পুরো পথটি নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হবে। পুলিশের স্পেশাল এস্কর্ট ছাড়াও সাদা পোশাকে ও পোশাকি পুলিশের পাশাপাশি বিএনপির নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী ‘চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্স’ (সিএসএফ) সমন্বিতভাবে এই নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে।
নিরাপত্তা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২৩ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকেই পুলিশের বিশেষ পাহারা শুরু হতে পারে। বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত প্রতিটি থানা এলাকায় পুলিশ মোতায়েন থাকবে এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে নতুন করে চেকপোস্ট বসানো হবে। বর্তমানে গুলশান ও বারিধারা এলাকায় যে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে, তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষে তা আরও জোরদার করা হচ্ছে। বিশেষ করে তাঁর বাসভবন ও আশপাশের এলাকায় প্রতিদিন দেড় শতাধিক পুলিশ ও গোয়েন্দা সদস্য মোতায়েন রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে এই বিষয়ে বৈঠক হয়েছে এবং সোমবার চূড়ান্ত নিরাপত্তা নির্দেশনা আসার কথা রয়েছে।
তারেক রহমানের আবাসন নিয়েও চলছে বিশেষ প্রস্তুতি। গুলশান অ্যাভিনিউয়ের তাঁর নিজস্ব বাড়িটি বর্তমানে মেরামতের কাজ চলছে। যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেই বাড়িটি পুরোপুরি প্রস্তুত না হয়, তবে তিনি তাঁর মা খালেদা জিয়ার ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’তে উঠতে পারেন। খালেদা জিয়া বর্তমানে ভিভিআইপি নিরাপত্তা ও এসএসএফ সুবিধা পাচ্ছেন, ফলে তারেক রহমান সেখানে অবস্থান করলে এসএসএফ, সিএসএফ এবং পুলিশের একটি শক্তিশালী সমন্বিত নিরাপত্তা বলয় তৈরি হবে। তাঁর কার্যালয় এবং চলাচলের পথ ঘিরে গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।
বিএনপি ও কূটনৈতিক সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, তারেক রহমান ট্রাভেল পাস পেয়েছেন এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-২০২ ফ্লাইটে তাঁর টিকিট বুক করা হয়েছে। ২৫ ডিসেম্বর বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে তাঁর বহনকারী বিমানটি ঢাকায় অবতরণের কথা রয়েছে। বিএনপির শীর্ষ নেতারা বিমানবন্দর থেকে গুলশানের বাসভবন পর্যন্ত শৃঙ্খলা রক্ষা ও অভ্যর্থনার বিষয়টি সমন্বয় করছেন। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের আগমনকে ঘিরে যেমন রাজনৈতিক উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে, তেমনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা ঝুঁকি এড়াতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলা এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা সারা বিশ্বের কাছে আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে, যা জাতির জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক। আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) রাজধানীর হোটেল রেডিসন ব্লুতে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আসন্ন স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন সংবাদপত্রের সম্পাদক, অনলাইনের প্রধান ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বার্তা প্রধানদের সঙ্গে এই সভার আয়োজন করা হয়।
সালাহউদ্দিন আহমেদ হামলার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকার কড়া সমালোচনা করে বলেন, এসব হামলার বিষয়ে আগে থেকে গোয়েন্দা তথ্য থাকা সত্ত্বেও সরকার কেন তা প্রতিরোধ করতে পারল না, সেটি একটি বড় প্রশ্ন। তিনি অভিযোগ করেন, হামলার সময় সাহায্য চাওয়া হলেও পুলিশ বা অন্যান্য বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে কয়েক ঘণ্টা দেরি করেছে। সরকারের এই ধরনের দুর্বলতা এবং ‘মব’ বা জনতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার প্রবণতা দেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলে তিনি মনে করেন। তিনি স্পষ্টভাবে জানান, এসব ঘটনার জন্য শুধুমাত্র দুঃখ প্রকাশ বা ক্ষমা প্রার্থনা যথেষ্ট নয়, বরং ভবিষ্যতে যেন এমনটি না ঘটে তা নিশ্চিত করতে সরকারকে কঠোর হতে হবে।
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের মানুষ এখন পূর্ণ গণতন্ত্র চায় এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমনভাবে শক্তিশালী দেখতে চায় যাতে সেগুলো গণতন্ত্রের রক্ষাকবজ হিসেবে কাজ করে। গণমাধ্যমকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকতে পারে, তবে দেশের স্বার্থে তাদের সবসময় আপসহীন থাকতে হবে। বিএনপি ভবিষ্যতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে গণমাধ্যমের সর্বোচ্চ স্বাধীনতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন প্রসঙ্গে এই বিএনপি নেতা বলেন, দীর্ঘ ১৮ বছরের কষ্টকর নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে তারেক রহমানের দেশে ফেরা হবে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভিত্তি শক্তিশালী করার একটি নতুন সুযোগ। দেশের মানুষ বিপুল প্রত্যাশা নিয়ে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে। বিএনপি অতীতের ফ্যাসিবাদী শাসনের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনের দিনে একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন দেশ গড়তে চায় বলেও তিনি মতবিনিময় সভায় উল্লেখ করেন।
দীর্ঘ ১৮ বছরের প্রবাস জীবন কাটিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার খবরকে কেন্দ্র করে তার পৈতৃক এলাকা বগুড়ায় বইছে উৎসবের আমেজ। তার এই ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনকে স্মরণীয় করে রাখতে শহরের সুত্রাপুর রিয়াজ কাজী লেনে অবস্থিত তার নিজস্ব বাসভবন ‘গ্রীন এস্টেট’-এ শুরু হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে অব্যবহৃত পড়ে থাকা এই তিনতলা ভবনটিকে আবারও বাসযোগ্য ও চকচকে করে তুলতে বর্তমানে দিনরাত চলছে সংস্কার ও ধোয়ামোছার কাজ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভবনটির ভেতর ও বাইরে নতুন করে রঙের প্রলেপ দেওয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে নষ্ট হয়ে যাওয়া আসবাবপত্র মেরামতের পাশাপাশি বৈদ্যুতিক ও স্যানিটারি লাইনের সংস্কার কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এই পুরো প্রক্রিয়াটি সরাসরি তত্ত্বাবধান করছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু। তিনি জানান, তারেক রহমান দেশে ফিরে বগুড়ায় এলে যাতে নিজের বাড়িতেই সপরিবারে অবস্থান করতে পারেন, সেই লক্ষ্যেই বাড়িটি প্রস্তুত করা হচ্ছে। এছাড়া বগুড়া-৬ আসন থেকে তার নির্বাচনের গুঞ্জন থাকায় এই বাড়িটিই হবে তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূল কেন্দ্রবিন্দু।
দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকার পর বাড়িটি আবারও প্রাণ ফিরে পাওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝেও ব্যাপক কৌতূহল ও উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। বাড়ির দীর্ঘদিনের পুরোনো কর্মীরা জানান, ২০০৪ সাল থেকে এই ভবনের দেখভালের দায়িত্বে থাকলেও গত ১৮ বছর এখানে তেমন কোনো কোলাহল ছিল না। এখন সংস্কার কাজ শুরু হওয়ায় এলাকাটি আবারও রাজনৈতিকভাবে মুখর হয়ে ওঠার অপেক্ষায় রয়েছে। মূলত প্রিয় নেতাকে বরণ করে নিতে এবং তার দীর্ঘ প্রতীক্ষিত অবস্থানের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে বগুড়া জেলা বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা এখন চূড়ান্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন।
আগামী ২৫ ডিসেম্বর দীর্ঘ প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রস্তুতি ও উদ্দীপনা বিরাজ করলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নতুন এক আলোচনার জন্ম দিয়েছে তার আদরের পোষা বিড়াল ‘জেবু’। নেটিজেনদের কৌতূহল ছিল তারেক রহমান দেশে ফেরার সময় তার প্রিয় বিড়ালটিকে সঙ্গে আনবেন কি না। সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে ঘনিষ্ঠ সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, সাত বছর বয়সী সাইবেরিয়ান ব্রিডের এই বিড়ালটি তারেক রহমানের সঙ্গেই বাংলাদেশে আসছে। জেবুর ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় পাসপোর্ট ও অন্যান্য আইনি আনুষ্ঠানিকতা ইতিমধ্যেই সম্পন্ন করা হয়েছে।
তারেক রহমানের ব্যস্ত জীবনের অবসরে জেবুর সঙ্গে কাটানো বিভিন্ন মুহূর্ত ও ছবি এর আগেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ কয়েকবার ভাইরাল হয়েছে। প্রাণীর প্রতি তার এই মমত্ববোধ অনেক আগেই সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সম্প্রতি বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তারেক রহমান জানান, বিড়ালটি মূলত তার মেয়ের প্রিয় পোষ্য হলেও এখন সে পরিবারের প্রত্যেকের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিড়ালটির নাম যে ‘জেবু’, সেটিও তিনি সেই সাক্ষাৎকারে প্রথমবার প্রকাশ করেন।
তারেক রহমান মনে করেন, প্রাণীর প্রতি মমতা প্রদর্শন করা কেবল মানবিক দায়িত্বই নয়, বরং ধর্মীয় দিক থেকেও এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার মতে, মহান আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে তৈরি করেছেন যাতে তারা প্রকৃতির অন্যান্য সৃষ্টির প্রতি যত্নশীল হয়। প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রেও প্রতিটি প্রাণীর গুরুত্ব অপরিসীম বলে তিনি বিশ্বাস করেন। ফলে দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশে ফেরার এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে তার সফরসঙ্গী হিসেবে আদরের জেবুর উপস্থিতি বিএনপি নেতাকর্মী ও নেটিজেনদের মাঝে এক অন্যরকম আগ্রহের সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সব ধর্মের মানুষের সমান অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করার রাজনীতিতে বিশ্বাসী বলে মন্তব্য করেছেন দলটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. খন্দকার মারুফ হোসেন। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেলে কুমিল্লার দাউদকান্দি পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর সতানন্দী গ্রামে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সিদ্ধেশ্বরী শ্মশানে আয়োজিত কালীপূজা পরিদর্শনকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
পূজা মণ্ডপে উপস্থিত ভক্ত ও স্থানীয়দের উদ্দেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. খন্দকার মারুফ হোসেন বলেন, বিএনপির রাজনীতির মূল ভিত্তি হলো ধর্মীয় সম্প্রীতি, সহাবস্থান ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করা। এই দেশ হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান—সবার। ধর্মের ভিত্তিতে বিভেদ সৃষ্টি করে কোনো রাজনৈতিক ফায়দা লোটার সুযোগ নেই। বিএনপি কখনোই ধর্মের নামে রাজনীতি করেনি, বরং সর্বদা সব ধর্মের মানুষের নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষায় আপসহীন ভূমিকা পালন করেছে।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অবদানের কথা স্মরণ করে তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার পর শহীদ জিয়া বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের সব শ্রেণি-পেশা ও ধর্মের মানুষকে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করার সুযোগ সৃষ্টি করেছিলেন। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বিএনপি আজও ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রশ্নে দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে।
বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে তিনি বলেন, একটি বিশেষ মহল রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে ধর্মকে ব্যবহার করে সমাজে বিভাজন সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তবে জনগণ এখন যথেষ্ট সচেতন; তারা জানে কারা প্রকৃত অর্থে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও মানুষের অধিকার রক্ষা করে। এ সময় তিনি আগামী দিনে দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও একটি ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনে সব ধর্মের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
পৌরসভার উত্তর সতানন্দী শ্রীশ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালীপূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমর চন্দ সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পৌর বিএনপির আহ্বায়ক নূর মোহাম্মদ সেলিম সরকার, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এম এ লতিফ ভূঁইয়া, পৌর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সওগাত চৌধুরী পিটার, সদস্য সচিব কাউছার আলম সরকার, পৌর কৃষকদলের সভাপতি মো. ফিরোজ মিয়া, পৌর জাসাসের আহ্বায়ক মোল্লা সোহেল, সদস্য সচিব মধু সরকার এবং পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক রাসেল মিয়াসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল কর্তৃক জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট (আংশিকভাবে ঘোষিত ১০১ সদস্য) কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটির ১ নম্বর সদস্য হিসেবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং ২ নম্বর সদস্য হিসেবে মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর নাম রয়েছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইশতিয়াক আজিজ উলফাত স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অনুমতিক্রমে এই আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে পূর্বে ঘোষিত সকল জেলা ও মহানগর কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের সকল নেতাকর্মীকে মুক্তিযোদ্ধা দলের জেলা ও মহানগর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে সমন্বয় করে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনী কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, গত ২৪ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে বিএনপি নেতা ও ঢাকা-৬ আসনে দলের সংসদ সদস্য প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে আহ্বায়ক এবং অ্যাডভোকেট কে এম কামরুজ্জামান নান্নুকে সদস্য সচিব করে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
আহ্বায়ক ইশরাক হোসেন বলেন, ‘দেশের এই সংকটময় সময়ে একটি মহল রাজনৈতিক সুবিধা পাবার আশায় মহান মুক্তিযুদ্ধকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছে। জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম এই জাতির জন্মের প্রকৃত ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে দৃঢ়ভাবে কাজ করবে এবং ইতিহাস বিকৃতির সকল অপচেষ্টা রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রতিহত করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জনাব তারেক রহমান ও আরাফাত রহমানের পিতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তম নিজে এবং তার পরিবারের সদস্যদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মহান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং রণাঙ্গনে নেতৃত্ব প্রদান করেন। অন্যদিকে, আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকার মতো কয়েক লাখ মুক্তিযোদ্ধা জীবনের মায়া ত্যাগ করে শক্তিশালী পাকিস্তানি বাহিনীকে বিতাড়িত করে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে স্বাধীন করেছিলেন।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শহীদ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডের পেছনে বড় ধরনের ষড়যন্ত্র রয়েছে।’
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘একটি মহল দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে গণতন্ত্র এবং নির্বাচনের পথকে বাধাগ্রস্ত করতে চাইছে। নির্বাচন প্রক্রিয়া বিলম্বিত করার হীন উদ্দেশে পতিত স্বৈরাচারী শক্তির সঙ্গে দেশি-বিদেশি দোসররা এর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা হাদির এই বর্বর হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। তবে, যারা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়, তারা যেন এই ঘটনাকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে না পারে। এ বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। নির্বাচন পেছানো বা বানচালের কোনো ষড়যন্ত্র যাতে সফল না হয়, এজন্য দেশের জনগণকে সজাগ থাকতে হবে।’
আগামী দিনের বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আগামী ২৫ ডিসেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সমাবেশের মাধ্যমে দেশ ও জাতিকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হবে। সেই সমাবেশের মধ্য দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে যে, দেশে আর কোনো ষড়যন্ত্র দানা বাঁধতে পারবে না।’
এসময় আসন্ন নির্বাচনে দলের বাকি প্রার্থীদের মনোনয়নের বিষয়ে খুব দ্রুতই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে জানান সালাহউদ্দিন আহমদ।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল জরুরি সভা আহ্বান করেছে। আগামীকাল রবিবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটায় রাজধানীর নয়াপল্টনে অবস্থিত ভাসানী ভবনের তৃতীয় তলায় এই সভা অনুষ্ঠিত হবে। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক (সহসভাপতি পদমর্যাদা) মো. জাহাঙ্গীর আলম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির কেন্দ্রীয় সংসদের সব পর্যায়ের নেতাদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সভায় উপস্থিত থাকার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
এছাড়া একই স্থানে বিকেল সাড়ে ৪টায় আরও একটি জরুরি সাংগঠনিক সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা এবং ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ কলেজগুলোর (ঢাকা কলেজ, তেজগাঁও কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ) নেতারা অংশ নেবেন। পাশাপাশি ঢাকা মহানগর (উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম), ঢাকা জেলা (উত্তর ও দক্ষিণ), গাজীপুর জেলা ও মহানগর, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মুন্সীগঞ্জ এবং নরসিংদী জেলা শাখার ‘সুপার ফাইভ’ নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সংসদের এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকা-৬ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন বলেছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে তাকে স্মরণীয় সংবর্ধনা দিতে দল ও জনগণ সম্পূর্ণ প্রস্তুত। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাজধানীর গোপীবাগে সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টারে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত এক প্রস্তুতি সভায় তিনি এ কথা বলেন।
ইশরাক হোসেন বলেন, ‘তারেক রহমানের আগমনকে ঘিরে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকবে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নেতা-কর্মীদের আমরা সুশৃঙ্খল ও সংগঠিতভাবে বরণ করে নেব। এটি হবে ইতিহাসের একটি স্মরণীয় সংবর্ধনা।’
দেশের বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে আওয়ামী লীগের ‘চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের’ জামিনে বের হওয়ার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তিনি অভিযোগ করেন, বিরোধী মত দমনে সহিংসতার রাজনীতি থেকে আওয়ামী লীগ এখনও সরে আসেনি।
আসন্ন নির্বাচন প্রসঙ্গে ইশরাক হোসেন বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে জয়লাভের লক্ষ্য নিয়েই। জয়ের জন্য কেন্দ্রভিত্তিক শক্তিশালী ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা এবং ভোট গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কড়া নজরদারি বজায় রাখার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া চান এবং তারেক রহমানের নেতৃত্বে দল ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন ঢাকা-৫ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী নবীউল্লাহ নবী, ঢাকা-১০ আসনের শেখ রবিউল আলম, ঢাকা-৭ আসনের হামিদুর রহমান হামিদ এবং ঢাকা-৯ আসনের হাবিবুর রশিদ হাবিব প্রমুখ।