বিএনপির সংসদ সদস্যদের ছেড়ে দেয়া ছয় সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন আজ বুধবার। আসনগুলো হলো- ঠাকুরগাঁও-৩, বগুড়া-৪, বগুড়া-৬, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২। আসনগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪০ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে ১০টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী আছেন ২৩ জন, বাকি ১৭ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়েও ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হয়েছেন ছয়জন। বিএনপি ভোট বর্জনের আহ্বান জানালেও দলটির চার নেতা ভোট করছেন এই নির্বাচনে।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) জানিয়েছে, ছয়টি আসনে একযোগে আজ সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট নেয়া হবে। ছয় আসনের ৮৬৭ কেন্দ্রের সবগুলোতে ভোট নেয়া হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করে। গতকাল মঙ্গলবার আসনগুলোতে পৌঁছে দেয়া হয়েছে ইভিএম মেশিনসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের নির্বাচনী সরঞ্জাম। নিজেদের প্রথম সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে ব্যবহার করলেও এবার ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা ব্যবহার করছে না ইসি।
সংসদীয় আসনগুলোতে সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্ন ভোট আয়োজনের সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে ভোট হবে আশাবাদ জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেন, ‘সুষ্ঠু ভোটের জন্য সব প্রস্তুতি আছে। কেবল সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা করিনি। বাকি সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সুষ্ঠু-সুন্দর নির্বাচন করার জন্য যা যা দরকার, আমরা সব করেছি। ভোটকেন্দ্রে নিরবচ্ছিন্নভাবে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ভোট চলবে। ইভিএমে ভোট দেয়ার জন্য ভোটার এডুকেশন যথেষ্ট করা হচ্ছে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২
ছয় আসনের উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই নানা ধরনের চমক দেখাচ্ছে এই আসনটি। বিএনপির যে সংসদ সদস্যের পদত্যাগে আসনটি শূন্য হয়েছে, সেই উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়াই আবার দল থেকে পদত্যাগ করে এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে চমকে দেন সবাইকে। পরে দল তাকে বহিষ্কার করে। এদিকে এই আসনে আওয়ামী লীগ কোনো প্রার্থী দেয়নি, শরিক দলগুলোর কোনো প্রার্থীকে সমর্থনও দেয়নি। বরং প্রতীক বরাদ্দের পর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাই আব্দুস সাত্তারের নির্বাচনী প্রচারণা এগিয়ে নিয়ে গেছেন। দলটির কেন্দ্রীয় নেতারাও তার পক্ষে জনসভা করেছেন।
এদিকে নির্বাচনের পাঁচ দিন আগে গত শুক্রবার এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা আবু আসিফ আহমেদ নিখোঁজ হয়েছেন বলে অভিযোগ তোলে তার পরিবার। এখন পর্যন্ত তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ফোনালাপে তার নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি সাজানো কি না, সে প্রশ্ন উঠেছে। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না করায় সে সন্দেহ আরও জোরালো হয়। শেষ পর্যন্ত ভোটের আগের দিন গতকাল দুপুরে আবু আসিফের স্ত্রী মেহেরুন্নিছা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তার স্বামীর নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। এ ঘটনায় নির্বাচন কমিশন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তবে সার্বিক ঘটনা বিশ্লেষণে আবু আসিফ আত্মগোপনে থাকতে পারেন বলেও নির্বাচন কমিশন মনে করছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান।
এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৩১৩ জন। মোট ভোটকেন্দ্র ১৩২টি। আসনটিতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী পাঁচজন। আব্দুস সাত্তার ও আবু আসিফ ছাড়া বাকি প্রার্থীরা হলেন জাতীয় পার্টির আব্দুল হামিদ ভাসানী (লাঙ্গল) ও জাকের পার্টির প্রার্থী জহিরুল হক (গোলাপ ফুল) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জাতীয় পার্টির সাবেক দুই মেয়াদের সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা (আপেল)। জিয়াউল হক অবশ্য প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময়সীমা শেষ হওয়ার পর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
এই আসনে পুলিশ, আনসার সদস্য ও গ্রাম পুলিশের পাশাপাশি চার প্লাটুন বিজিবি ও র্যাবের ১০টি টিম আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবে। এ ছাড়া ১৭টি ইউনিয়নের প্রতিটিতে একজন করে মোট ১৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও দুজন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ও সংক্ষিপ্ত বিচারকাজ করবেন। এই আসনের উপনির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম বলেন, ‘আবু আসিফকে খুঁজে বের করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ করতে সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।’
ঠাকুরগাঁও-৩
এই আসনে মোট ৩ লাখ ২৪ হাজার ৭৪১ জন ভোটার। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৫৯ হাজার ৫৩১ জন, পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৬৫ হাজার ২১০ জন। মোট ভোটকেন্দ্র ১৩৮টি। এর মধ্যে ৭২টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ, যদিও নির্বাচন কমিশন এই কেন্দ্রগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ না বলে গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিহিত করছে।
এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ছয় প্রার্থী। দলীয় প্রার্থীরা হলেন ওয়ার্কার্স পার্টির ইয়াসিন আলী (হাতুড়ি), জাতীয় পার্টির হাফিজ উদ্দীন আহমেদ (লাঙ্গল), জাকের পার্টির এমদাদুল হক (গোলাপ ফুল), বাংলাদেশ ন্যাশনাল পিপলস পার্টির সাফি আল আসাদ (আম), বাংলাদেশ ন্যাশনাল ফ্রন্টের (বিএনএফ) সিরাজুল ইসলাম (টেলিভিশন)। এই আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কোনো প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়নি। একতারা প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোপালচন্দ্র রায় দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ‘বিদ্রোহী’ হিসেবে ভোট করছেন এই আসনে।
এ আসনে প্রতিটি কেন্দ্রে চারজন অস্ত্রধারী পুলিশ, দুজন নারী পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েন থাকবেন। এ ছাড়া সাত প্লাটুন বিজিবি সদস্য, ১৮ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচনী এলাকা নজরদারিতে রাখবেন। আঞ্চলিক রিটার্নিং কর্মকর্তা জি এম সাহাতাব উদ্দীন বলেন, ‘নির্বাচনী পরিবেশ ঠিক রাখতে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সাদা পোশাকেও পর্যাপ্তসংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন থাকবে।
বগুড়া-৪ ও বগুড়া-৬
বগুড়া-৪ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ২৮ হাজার ৪৬৯ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৬৫ হাজার ৪৩৪ জন, পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৬৩ হাজার ৩৫ জন। এই আসনের ১১২টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ৭৯টি। কেবল কাহালুতেই ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ৫৬টি।
এই আসনে ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৯ জন। এ আসনে আওয়ামী লীগ নিজে প্রার্থী না দিয়ে সমর্থন দিয়েছে ১৪ দলীয় জোট থেকে জাসদ প্রার্থী রেজাউল করিম তানসেনকে (মশাল)। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির শাহীন মোস্তফা কামাল (লাঙ্গল), বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. তাজ উদ্দীন মণ্ডল (ডাব) ও জাকের পার্টির মো. আব্দুর রশিদ সরদার (গোলাপ ফুল) রয়েছেন দলীয় প্রার্থী। পাঁচ স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে কুড়াল প্রতীকে নির্বাচন করছেন সাবেক বিএনপি নেতা কামরুল হাসান সিদ্দিকী জুয়েল, ট্রাক প্রতীকে নির্বাচন করছেন সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা মো. মোশফিকুর রহমান কাজল। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আরও আছেন মো. ইলিয়াস আলী, (কলার ছড়ি), মো. গোলাম মোস্তফা, (দালান) ও আলোচিত আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম, (একতারা)।
এদিকে বগুড়া-৬ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ১০ হাজার ৭৪৩ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ২ লাখ ৮ হাজার ২৫৯ জন, পুরুষ ভোটার ২ লাখ ২ হাজার ৪৮৪ জন। এই আসনের ১৪৩টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৭৯টিই ঝুঁকিপূর্ণ।
এই আসনে দলীয় প্রার্থী ছয়জন হলেন- আওয়ামী লীগের রাগেবুল আহসান রিপু (নৌকা), জাসদের মো. ইমদাদুল হক ইমদাদ (মশাল), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মো. নজরুল ইসলাম (বটগাছ), জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম ওমর (লাঙ্গল), জাকের পার্টির মোহাম্মদ ফয়লাস বিন শফিক (গোলাপ ফুল) ও গণফ্রন্টের মো. আফজাল হোসেন (মাছ)। পাঁচ স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ আব্দুল মান্নান (ট্রাক) ও বিএনপির ‘বিদ্রোহী’ সরকার বাদল (কুড়াল)। এ আসনেও প্রার্থী হয়েছেন হিরো আলম। এ ছাড়া মাছুদার রহমান হেলাল (আপেল) ও রাকিব হাসান (কুমির) স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন।
বগুড়া জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, ‘দুই আসনের উপনির্বাচনে তিনজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ৩৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবেন। পাশাপাশি মোতায়েন থাকবে ১৬ প্লাটুন বিজিবি। এ ছাড়া ভোটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সাড়ে ৪ হাজার নিরাপত্তাকর্মী কাজ করবেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৫ হাজার ৪৫০ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ২ লাখ ৪ হাজার ২৮০ জন, পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১ হাজার ১৭০ জন। আসনটির ১৮০টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের সংখ্যা ১২২।
নাচোল, গোমস্তাপুর ও ভোলাহাট উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনে দলীয় প্রার্থী চারজন, স্বতন্ত্র দুজন। দলীয় প্রার্থীরা হলেন- আওয়ামী লীগের মু. জিয়াউর রহমান (নৌকা), জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক (লাঙ্গল), জাকের পার্টির গোলাম মোস্তফা (গোলাপ ফুল) ও বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) নবীউল ইসলাম (টেলিভিশন)। এ আসনে স্বতন্ত্র দুজনই আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী। তারা হলেন- মোহাম্মদ আলী সরকার (আপেল) ও খুরশিদ আলম বাচ্চু (মাথাল)।
অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ১১ হাজা ৪৯৫ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ২ লাখ ৫ হাজার ৬১২ জন, পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৫ হাজার ৮৮৩ জন। আসনটির ১৭২টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৯৭টি।
এই আসনে প্রার্থী মাত্র তিনজন। তাদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের আব্দুল ওদুদ (নৌকা), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) কামরুজ্জামান খান (টেলিভিশন) এবং আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী সামিউল হক লিটন (আপেল)।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খান জানান, ৩৩ জন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন।
[প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন দৈনিক বাংলার ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঠাকুরগাঁও, বগুড়া ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি]
বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিরবিদায়ের পর দলের পরবর্তী করণীয় এবং জানাজা-দাফনের কর্মসূচি চূড়ান্ত করতে জরুরি বৈঠকে বসেছে বিএনপির স্থায়ী কমিটি। আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এই গুরুত্বপূর্ণ সভায় অংশ নিতে রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে পৌঁছেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
এর আগে আজ ভোর ৬টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে মায়ের অন্তিম সময়ে তাঁর শয্যাপাশেই ছিলেন তারেক রহমান। হাসপাতাল থেকে তিনি প্রথমে গুলশান অ্যাভিনিউয়ের বাসভবনে যান এবং সেখান থেকে প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সেরে দলীয় কার্যালয়ে পৌঁছান। তাঁর আগমনের আগেই স্থায়ী কমিটির অন্যান্য জ্যেষ্ঠ সদস্যবৃন্দ সভাস্থলে উপস্থিত হন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এই জরুরি সভায় বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা, দাফন এবং রাষ্ট্রীয় ও দলীয় শোক পালনের বিস্তারিত কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে বিএনপি দেশজুড়ে সাত দিনের শোক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আজকের এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠক থেকে দলের পরবর্তী সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে প্রিয় নেত্রীর মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পর থেকেই গুলশান কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়েছেন হাজার হাজার শোকাতুর নেতাকর্মী ও সমর্থক। কার্যালয় ও এর আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। দীর্ঘ চার দশকের রাজনৈতিক অভিভাবকের বিদায়ে পুরো এলাকায় এক বিষাদময় পরিবেশ বিরাজ করছে। স্থায়ী কমিটির সভা শেষে আজ বিকেলেই বেগম জিয়ার জানাজা ও দাফন সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার কথা রয়েছে। মূলত শোককে শক্তিতে পরিণত করে সুশৃঙ্খলভাবে এই বিদায় অনুষ্ঠান সম্পন্ন করাই এখন দলটির প্রধান লক্ষ্য।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দীর্ঘদিন পর আমরা বাংলাদেশের মানুষ ভোটাধিকার ফিরে পেয়েছি। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচন বিএনপির পক্ষ থেকে আমাকে ঠাকুরগাঁও-১ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, এ জন্য বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। কারণ তারা আবারও আমাকে এ আসন থেকে নির্বাচন করার সুযোগ করে দিয়েছেন।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে তিনি ঠাকুরগাঁও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে উপস্থিত রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানার হাতে তার মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে সংবাদকর্মীদের এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, পরম করুণাময় আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করতে চাই- এখানে আমি মনোনীত হয়ে জনগণের কাজ করার একটা সুযোগ পেয়েছি। যদি আমরা সুযোগ পাই, জনগণের ভালোবাসায় যদি নির্বাচিত হতে পারি তবে নিশ্চয়ই এই ঠাকুরগাঁও অঞ্চলের উন্নয়ন, সামাজিক, পরিবেশকে উন্নত করা, এখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে উন্নত করা, আমাদের আর্থ সামাজিক ব্যবস্থাকে উন্নত করা এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে বৃদ্ধি করার চেষ্টা করব। এছাড়াও মানুষের কর্মসংস্থানকে সৃষ্টি করা- এই বিষয়গুলোকে সবচেয়ে গুরুত্ব আরোপ করব। এর পাশাপাশি কৃষকদের যেসব সমস্যা সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করব।
মনোনয়নপত্র জমা শেষে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ধানের শীর্ষে ভোট দেবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই এলাকার জনগণের কাছে আমার আবেদন ও অনুরোধ থাকবে- আপনারা দয়া করে এই অঞ্চলে পূর্বে আমাকে যেভাবে সমর্থন দিয়েছেন, এখনো সেইভাবে সমর্থন দিয়ে আমাকে ধানের শীষে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করার জন্য সাহায্য করবেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না। আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আসিফ মাহমুদ নিজেও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্তের কথা জানান।
সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ ইসলাম বলেন, আসিফ মাহমুদ সরাসরি প্রার্থী না হলেও এনসিপির মনোনীত প্রার্থীদের জিতিয়ে আনার লক্ষে কাজ করবেন। এ লক্ষে তাঁকে দলটির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তিনি দলটির মুখপাত্র হিসেবেও দায়িত্ব পালন করবেন। মূলত মাঠ পর্যায়ের প্রচার ও কৌশল নির্ধারণে তিনি বিশেষ ভূমিকা রাখবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
আসিফ মাহমুদের এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক মহলে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে, কারণ গত কয়েক দিন ধরে গুঞ্জন ছিল যে তিনি ঢাকা-১০ বা অন্য কোনো আসন থেকে নির্বাচনে লড়তে পারেন। এমনকি তাঁর পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের খবরও এসেছিল। তবে আজ সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে তিনি জানালেন, ব্যক্তি হিসেবে সংসদ সদস্য হওয়ার চেয়ে দলকে সংগঠিত করা এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত নিশ্চিত করাকেই তিনি এই মুহূর্তে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী আসিফ মাহমুদ গত ৫ আগস্ট পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকারে উপদেষ্টার দায়িত্ব সফলভাবে পালন করেন। গত ১০ ডিসেম্বর তিনি উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং পরদিন নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার সাথে সাথে তাঁর পদত্যাগ কার্যকর হয়। সম্প্রতি তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে এনসিপিতে যোগ দিয়ে সক্রিয় রাজনীতিতে পদার্পণ করেছেন। নির্বাচনে না দাঁড়িয়ে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে আসার মাধ্যমে তিনি জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে এক ভিন্নধর্মী কৌশল বেছে নিলেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। মূলত একটি শক্তিশালী তারুণ্যের প্রতিনিধিত্ব গড়ে তোলাই এখন তাঁর প্রধান লক্ষ্য।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া নতুন রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’ বা এনসিপিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়েছেন।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি নিজেই এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, “আমরা যে লক্ষ্য নিয়ে রাজপথে লড়াই করেছি, সেই বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতির সংস্কার প্রয়োজন। এনসিপি সেই পরিবর্তনের লক্ষ্যেই কাজ করবে।”
এ সময় তিনি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সংস্কার কার্যক্রম এবং ভবিষ্যতে তার দলের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন।
এদিকে আসিফ মাহমুদ গতকাল পর্যন্তও সিদ্ধান্তহীন ছিলেন। এরই মধ্যে তিনি ঢাকা-১০ আসনে (ধানমন্ডি-নিউমার্কেট-কলাবাগান-হাজারীবাগ) মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। আজ বিকেল ৫টায় ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময়।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। গত বছরের ৫ আগস্ট তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে তিনি উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। এ বছরের ১০ ডিসেম্বর তিনি পদত্যাগ করেন এবং ১১ ডিসেম্বর তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে পদত্যাগ কার্যকর হয়।
দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে মাতৃভূমিতে ফেরার পর আজ প্রথমবারের মতো রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেলে তিনি সেখানে পৌঁছালে নেতাকর্মীদের মাঝে এক অভাবনীয় আবেগ ও উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। দীর্ঘ দেড় যুগ পর প্রিয় নেতার এই সশরীরে আগমন উপলক্ষে সকাল থেকেই নয়াপল্টন এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল।
নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে পৌঁছালে তারেক রহমানকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এবং কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত। এ সময় তাঁর সাথে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম, যুগ্ম-মহাসচিব হাবিবুননবী খান সোহেলসহ দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দেওয়া এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তারেক রহমান সাধারণ মানুষের সুবিধা ও শৃঙ্খলার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, “আজ এখানে কোনো আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি নেই। রাস্তা বন্ধ রাখলে সাধারণ মানুষের চলাফেরায় অনেক অসুবিধা হবে। তাই আমাদের উচিত হবে রাস্তাটি যত দ্রুত সম্ভব খুলে দেওয়া, যাতে মানুষ নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারে।” তাঁর এই সময়োপযোগী নির্দেশনার পর নেতাকর্মীরা রাস্তা ছেড়ে দিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে অবস্থান নেন।
দেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তারেক রহমান বলেন, “সবাই দোয়া করবেন। আমাদের যার যতটুকু অবস্থান আছে, সেখান থেকে আসুন আমরা দেশটাকে নতুন করে গড়ে তোলার চেষ্টা করি।” তিনি আরও জানান, ভবিষ্যতে যখন আনুষ্ঠানিক রাজনৈতিক কর্মসূচি দেওয়া হবে, তখন তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে বিস্তারিত বক্তব্য রাখবেন। প্রিয় নেতার এমন সাবলীল ও দায়িত্বশীল আচরণ নেতাকর্মীদের মাঝে নতুন প্রাণের সঞ্চার করেছে।
উল্লেখ্য, গত ২৫ ডিসেম্বর লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পর তারেক রহমান নিয়মিতভাবে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন। গতকাল তিনি গুলশান কার্যালয়ে দাপ্তরিক কাজ শুরু করেছিলেন এবং আজ নয়াপল্টনে দলের প্রধান সাংগঠনিক কেন্দ্রে উপস্থিত হওয়ার মাধ্যমে দলীয় কর্মকাণ্ডে পূর্ণাঙ্গভাবে সক্রিয় হলেন। তাঁর এই প্রত্যাবর্তনের ফলে বিএনপির তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সব পর্যায়ে নতুন রাজনৈতিক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। মূলত একটি সমৃদ্ধ ও নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়েই দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর নয়াপল্টনের এই ঐতিহাসিক কার্যালয়ে সশরীরে ফিরলেন তারেক রহমান।
চট্টগ্রামের প্রভাবশালী ও আলোচিত হেফাজত নেতা মাওলানা নাছির উদ্দীন মুনির জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ছেড়ে মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসে (প্রতীক: রিকশা) যোগ দিয়েছেন। আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে তিনি নিজেই বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। নাছির উদ্দীন মুনির আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী ও বায়েজিদ আংশিক) আসন থেকে সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আজ দুপুরে তিনি চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তাঁর মনোনয়নপত্র জমা দেন।
মাওলানা নাছির উদ্দীন মুনির হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব এবং ইতিপূর্বে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশেরও কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়াও তিনি হাটহাজারী উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। চট্টগ্রামের হাটহাজারীকে কেন্দ্র করে তাঁর ব্যাপক রাজনৈতিক ও ধর্মীয় প্রভাব রয়েছে। নির্বাচনে তিনি নবগঠিত ১০ দলীয় নির্বাচনী জোটের প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করবেন বলে জানা গেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপির সাথে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নির্বাচনি সমঝোতা এই দলবদলের প্রধান কারণ। সমঝোতা অনুযায়ী, সারাদেশে মাত্র চারটি আসনে জমিয়ত ‘খেজুর গাছ’ প্রতীকে প্রার্থী দিয়েছে এবং অন্য কোনো আসনে তাদের প্রার্থী না রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম-৫ আসনটি ওই চারটি আসনের অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় নাছির উদ্দীন মুনির জমিয়তের হয়ে নির্বাচনে লড়ার সুযোগ হারিয়েছিলেন। ফলে নিজের প্রার্থিতা নিশ্চিত করতে এবং বৃহত্তর পরিসরে কাজ করার লক্ষ্যে তিনি দল পরিবর্তনের এই সিদ্ধান্ত নেন।
এর আগে গত রবিবার এক ফেসবুক পোস্টে মাওলানা নাছির উদ্দীন মুনির জমিয়ত ছাড়ার আবেগঘন বার্তা দেন। তিনি লেখেন, দীর্ঘ সময় জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের হয়ে কাজ করা তাঁর জীবনের এক অমূল্য অর্জন। তবে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দেশ ও জাতির কল্যাণে আরও বৃহত্তর পরিসরে কাজ করার ইচ্ছায় তিনি শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক (রহ.) প্রতিষ্ঠিত এবং মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সাথে পথচলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি তাঁর এই নতুন যাত্রায় সহযোদ্ধা ও শুভানুধ্যায়ীদের দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেন।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম-৫ আসনে নাছির উদ্দীন মুনিরের বিপরীতে গত রবিবারই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন। একই আসনে এই দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর উপস্থিতি হাটহাজারী এলাকার নির্বাচনী লড়াইকে অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ও জমজমাট করে তুলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বর্তমানে প্রার্থীরা তাঁদের প্রচারণা এবং মাঠ পর্যায়ের কৌশল সাজাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)-র সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বীর বিক্রম জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন জোটে যোগদান করায় তাঁর তীব্র সমালোচনা করেছেন দলটির সদ্য সাবেক মহাসচিব ও বর্তমান বিএনপি নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. রেদোয়ান আহমেদ। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার এতবারপুরে নির্বাচনী গণসংযোগকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ক্ষমতার মোহে পড়ে খেতাবপ্রাপ্ত এই বীর মুক্তিযোদ্ধা তাঁর আজীবনের বীরত্ব ও রাজনৈতিক আদর্শ জলাঞ্জলি দিয়েছেন। ড. রেদওয়ানের মতে, সারা জীবন যিনি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী শক্তির তীব্র সমালোচনা করে এসেছেন, আজ সেই শক্তির সঙ্গেই নির্বাচনী জোট গঠন করা তাঁর সমস্ত রাজনৈতিক জীবনের নীতি ও আদর্শের পরিপন্থী।
সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, কর্নেল অলি জামায়াতের সাথে জোটবদ্ধ হতে পারেন—এমন খবর পেয়ে তিনি শুরু থেকেই এর কড়া বিরোধিতা করে আসছিলেন। তিনি অলি আহমেদকে এককভাবে নির্বাচনে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন, কিন্তু কর্নেল অলি তাঁর সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় তিনি দলের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেন। পরবর্তীতে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সম্মতিতে গত ২৪ ডিসেম্বর তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগদান করেন। ড. রেদোয়ান আক্ষেপ করে বলেন, দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করা এবং রাষ্ট্রীয় খেতাব পাওয়া একজন মানুষের পক্ষে দেশবিরোধী শক্তির সাথে জোট করা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং এটি তাঁর জাতীয়তাবাদী বিশ্বাসের সাথে এক ধরনের প্রতারণা।
গণসংযোগকালে ড. রেদোয়ানের সাথে জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী কাজী শাখাওয়াত হোসেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক নেতা মোফাজ্জল হোসেন বশিরসহ চান্দিনা উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা সবাই কর্নেল অলির এই রাজনৈতিক পরিবর্তনের নিন্দা জানান এবং আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। উল্লেখ্য, গত ২৮ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কর্নেল অলির নেতৃত্বাধীন এলডিপি জামায়াত-নেতৃত্বাধীন ১০ দলীয় জোটে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দেয়, যা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে দেশে ফেরার পর আজ প্রথমবারের মতো নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যাচ্ছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরের পর তিনি সেখানে পৌঁছাবেন বলে দলীয় সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাঁর এই আগমনকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টন এলাকা ও দলীয় কার্যালয়ে এক উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানিয়েছেন, আজ বিকেলের দিকে তারেক রহমানের নয়াপল্টন কার্যালয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। তাঁর আগমণ উপলক্ষে কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় একটি বিশেষ চেম্বার বা অফিস কক্ষ সুসজ্জিত করে প্রস্তুত করা হয়েছে, যেখান থেকে তিনি নিয়মিত দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। এর আগে গতকাল রবিবার তিনি গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সশরীরে উপস্থিত হয়ে দাপ্তরিক কাজ শুরু করেছিলেন এবং ঢাকা-১৭ ও বগুড়া-৬ আসনের মনোনয়নপত্রে স্বাক্ষর করেছিলেন। আজ নয়াপল্টনে যাওয়ার মাধ্যমে তিনি দীর্ঘ দেড় যুগ পর দলের মূল সাংগঠনিক কেন্দ্রে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিরছেন।
এদিকে, প্রিয় নেতাকে বরণ করে নিতে সকাল থেকেই নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক সমবেত হতে শুরু করেছেন। ব্যানার, ফেস্টুন আর মুহুর্মুহু স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা। তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ওই এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে কড়া নজরদারি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর নয়াপল্টনের কার্যালয়ে তারেক রহমানের এই সশরীরে উপস্থিতি বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের রাজনীতিতে এক নতুন উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছে। মূলত দলীয় কর্মকাণ্ডকে আরও গতিশীল করতেই তিনি আজ কেন্দ্রীয় কার্যালয় পরিদর্শনে যাচ্ছেন।
দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে গত ২৫ ডিসেম্বর পরিবারের সঙ্গে দেশে ফিরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তবে এই প্রত্যাবর্তনে রাজনীতির পাশাপাশি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে তাঁদের পরিবারের আদরের সাইবেরিয়ান বিড়াল ‘জেবু’। লন্ডন থেকে ঢাকায় পা রাখার পর থেকেই এই লোমশ বিড়ালটিকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক কৌতূহল তৈরি হয়েছে। সেই কৌতূহলের প্রেক্ষিতে আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে জেবুকে নিয়ে একটি বিস্তারিত ও আবেগঘন পোস্ট দিয়েছেন তারেক রহমানের কন্যা ব্যারিস্টার জাইমা রহমান।
জাইমা তাঁর পোস্টে উল্লেখ করেছেন যে, জেবুকে নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে এত আগ্রহ দেখে তিনি একইসাথে অবাক ও আনন্দিত। তিনি মনে করেন, যে কোনো প্রাণীকে লালন-পালন করা একটি বড় দায়িত্বের বিষয়, কারণ প্রাণীও মহান আল্লাহর সৃষ্টি। জেবুকে যখন ছোট ছানা হিসেবে তাঁদের লন্ডনের বাসায় আনা হয়েছিল, তখন তাঁরা কল্পনাও করতে পারেননি যে সে পরিবারের এত অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠবে। জাইমা কৌতুক করে জানান, অনেক সময় এমনও হয়েছে যে তাঁর বাবা-মা বাড়ি ফিরে আগে জেবুর খোঁজ নিয়েছেন, তারপর মেয়ের খবর নিয়েছেন। তাঁর মা ডা. জুবাইদা রহমান যখন বাগানে কাজ করতেন বা হাঁটতে বের হতেন, জেবু সারাক্ষণ তাঁর আশেপাশে ঘুরঘুর করত। এমনকি তারেক রহমানের দীর্ঘ অনলাইন মিটিংগুলোর সময়ও জেবু শান্ত হয়ে তাঁর কোলে বসে থাকত এবং আদর উপভোগ করত।
জাইমা রহমান তাঁর লেখায় একটি প্রাণীর জীবন পরিবর্তনের কষ্টের দিকটিও তুলে ধরেছেন। তিনি জানান, পোষা প্রাণী নিয়ে মহাদেশ পাড়ি দিয়ে নতুন পরিবেশে আসা অনেক কঠিন একটি কাজ। জেবুর মতো ছোট্ট একটি প্রাণের জন্য এই পরিবর্তনটি বেশ বড় এবং মানিয়ে নেওয়াটাও কষ্টকর, যা মানুষ সব সময় অনুভব করতে পারে না। তবে এই বিড়ালটির মাধ্যমেই তাঁদের পরিবারের সদস্যরা ধৈর্য এবং বড়-ছোট সব প্রাণীর প্রতি মমতা শিখতে পেরেছেন। জাইমার মতে, ভাষা এক না হলেও ভালোবাসা যে কোনো প্রজাতির সীমানা মানে না, জেবু তাঁদের সেটিই শিখিয়েছে।
পোস্টের শেষ অংশে জেবু সম্পর্কে বেশ কিছু মজার তথ্য দিয়েছেন জাইমা। তিনি জানান, জেবু আর দশটা সাধারণ বিড়ালের মতো কখনোই ‘মিউ মিউ’ করে ডাকে না। এমনকি ভুল করে আলমারিতে আটকে গেলেও সে শব্দ করে না। বরং জেবু যখন খুব খুশি হয় বা অবাক হয়, তখন সে পাখির মতো এক ধরনের নরম শব্দ করে ডাক দেয়। আবার যদি তার অনিচ্ছায় কেউ তাকে কোলে তুলে নেয়, তবে সে হালকা শব্দ করে বিরক্তি প্রকাশ করে। এ ছাড়াও যেসব বিড়ালকে সে পছন্দ করে না, তাদের দেখলে আবার বেশ জোরেই চিৎকার করে ওঠে। জাইমা রহমানের এই সহজ ও সাবলীল পোস্টটি মুহূর্তেই নেটিজেনদের নজর কেড়েছে এবং প্রিয় নেতার পরিবারের মানবিক এই দিকটি প্রশংসিত হচ্ছে। মূলত জেবুর মাধ্যমেই তারেক রহমানের পরিবারের ঘরোয়া ও সংবেদনশীল এক প্রতিচ্ছবি দেশবাসীর সামনে ফুটে উঠল।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সিলেট থেকেই তাঁর নির্বাচনী কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক শুভসূচনা করতে যাচ্ছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এই লক্ষে আগামী বৃহস্পতিবার তিনি তিন দিনের এক সাংগঠনিক সফরে সিলেট ও বগুড়া যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশে ফিরে ঢাকার বাইরে এটিই হবে তাঁর প্রথম রাজনৈতিক সফর।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সফরের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার তারেক রহমান সিলেটে পৌঁছাবেন। সেখানে তিনি আধ্যাত্মিক রাজধানী হিসেবে খ্যাত সিলেটের দুই পুণ্যভূমি হজরত শাহজালাল (রহ.) ও হজরত শাহপরাণ (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করবেন। সিলেটের সাথে তাঁর পারিবারিক সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়; কারণ এটি তাঁর শ্বশুরবাড়ির এলাকা। মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে বরকত নিয়ে তিনি মূলত তাঁর নির্বাচনী প্রচারণার প্রাথমিক ধাপ শুরু করবেন।
সফরের পরবর্তী অংশে তারেক রহমান তাঁর পৈতৃক নিবাস ও নিজের নির্বাচনী এলাকা বগুড়ায় যাবেন। এবার তিনি বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, ফলে সেখানে তাঁকে ঘিরে সাধারণ মানুষ ও নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। তিন দিনের এই ঝটিকা সফরে তিনি স্থানীয় নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় করবেন এবং নির্বাচনী কৌশল নিয়ে দিকনির্দেশনা দেবেন বলে জানা গেছে।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, তারেক রহমানের এই সরাসরি নির্বাচনী তৎপরতা সারা দেশের দলীয় কর্মীদের মাঝে নতুন প্রাণের সঞ্চার করবে। ইতোমধ্যে তাঁর এই সফরকে কেন্দ্র করে সিলেট ও বগুড়ায় সাজ সাজ রব পড়ে গেছে। নেতার আগমণকে স্মরণীয় করে রাখতে স্থানীয়ভাবে ব্যাপক প্রস্তুতির খবর পাওয়া যাচ্ছে। মূলত এই সফরের মাধ্যমেই ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের ডামাডোল পুরোদমে শুরু হতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অভ্যন্তরে চলমান পদত্যাগের মিছিলে যুক্ত হলেন মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নাতি এবং দলটির কৃষক উইংয়ের প্রধান সমন্বয়কারী আজাদ খান ভাসানী। জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন ১০ দলীয় জোটে এনসিপির অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গত রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক বার্তার মাধ্যমে তিনি দল থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
আজাদ খান ভাসানী তাঁর ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেন যে, অনেক আশা ও স্বপ্ন নিয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিট এবং নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষা থেকে তিনি এনসিপিতে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন মওলানা ভাসানীর দেখানো গণমানুষনির্ভর ও আধিপত্যবাদবিরোধী রাজনীতির চর্চা করতে। তবে বাস্তব অভিজ্ঞতায় তিনি দলটির মধ্যে নতুন বাংলাদেশ গড়ার ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতা এবং ত্যাগের গভীরতার স্পষ্ট ঘাটতি অনুভব করেছেন। তাঁর মতে, দলটি একটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক পরিচয় গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত সাফল্য দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে।
পদত্যাগের কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি আরও বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক মর্যাদা এবং মওলানা ভাসানীর রাজনৈতিক আদর্শ রক্ষা করাই তাঁর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই আদর্শের প্রতি অবিচল থাকতেই তিনি এনসিপির সঙ্গে সকল আনুষ্ঠানিক সম্পর্কচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি দলটির ভবিষ্যৎ পথচলার জন্য শুভকামনা জানিয়ে বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরেই দলের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত আদর্শিক জায়গা থেকেই এই প্রস্থান।
উল্লেখ্য, গত ৬ সেপ্টেম্বর আজাদ খান ভাসানীকে এনসিপির কৃষক উইংয়ের প্রস্তুতি কমিটির প্রধান সমন্বয়কারীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। জামায়াতের সঙ্গে জোট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকে এনসিপিতে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তাতে ডা. তাসনিম জারা, ডা. তাজনূভা জাবীন, নুসরাত তাবাসসুম এবং মীর আরশাদুল হকের মতো শীর্ষস্থানীয় নেতাদের পর আজাদ খান ভাসানীর পদত্যাগ দলটির জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। নির্বাচনের ঠিক আগমুহূর্তে এমন ধারাবাহিক পদত্যাগ দলটির ভেতরের আদর্শিক সংকটকে আরও প্রকট করে তুলল। মূলত জুলাইয়ের স্পিরিট নিয়ে কাজ করা একঝাঁক নেতা এখন দলটির নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছেন।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক মনজিলা ঝুমা। খাগড়াছড়ি-২৯৮ আসনে দলটির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ‘শাপলা কলি’ প্রতীকে তাঁর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ছিল। গত রবিবার দিবাগত রাত ২টা ১৭ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে এক বার্তার মাধ্যমে তিনি এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। ঝুমা উল্লেখ করেন যে, তিনি ইতিমধ্যে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে তাঁর এই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা বিস্তারিত অবহিত করেছেন।
ফেসবুক পোস্টে মনজিলা ঝুমা জানান, গত ২৪ ডিসেম্বর তাঁর পক্ষে খাগড়াছড়ি জেলার আহ্বায়ক সংশ্লিষ্ট মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন এবং আজ সোমবার ছিল তা জমা দেওয়ার শেষ দিন। তবে সব দিক বিবেচনা করে তিনি শেষ মুহূর্তে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নির্বাচনে না লড়লেও তরুণ প্রজন্মের ওপর আস্থা প্রকাশ করে তিনি লিখেছেন যে, দেশের তরুণরা আজ না হয় কাল অবশ্যই সংসদে গিয়ে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করবে।
উল্লেখ্য, জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন ১০ দলীয় জোটে এনসিপির অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে দলটির অভ্যন্তরে বর্তমানে চরম অস্থিরতা ও আদর্শিক বিভক্তি দেখা দিয়েছে। এই জোট গঠনের প্রতিবাদে গত কয়েক দিনে এনসিপি থেকে পদত্যাগের এক নজিরবিহীন হিড়িক পড়েছে। ইতিমধ্যে দলটির প্রভাবশালী নেতা ডা. তাসনিম জারা, ডা. তাজনূভা জাবীন, খালেদ সাইফুল্লাহ এবং ফেনী-৩ আসনের মনোনীত প্রার্থী আবুল কাশেম দল ছেড়েছেন। সর্বশেষ এনসিপির কৃষক উইংয়ের প্রধান সমন্বয়কারী ও মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নাতি আজাদ খান ভাসানীও ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে দলত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। মনজিলা ঝুমার এই সরে দাঁড়ানোর ফলে এনসিপির নির্বাচনী প্রস্তুতি ও সাংগঠনিক কাঠামো আরও বড় ধরনের সংকটের মুখে পড়ল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। মূলত নতুন রাজনৈতিক ধারার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাত্রা শুরু করা দলটিতে এখন শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অভ্যন্তরে চলমান অস্থিরতা ও অসন্তোষের মিছিলে যুক্ত হলেন দলটির অন্যতম প্রভাবশালী নেত্রী ও যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম। জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন ১০ দলীয় জোটে এনসিপির অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে তিনি নির্বাচনকালীন সময়ে দলের সকল কার্যক্রম থেকে নিজেকে ‘নিষ্ক্রিয়’ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। গত রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) রাত ১১টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এক দীর্ঘ বার্তার মাধ্যমে তিনি তাঁর এই কঠিন সিদ্ধান্তের কথা জানান।
নুসরাত তাবাসসুম তাঁর পোস্টে এনসিপির জন্মলগ্নের প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, দলটি শুরুতে গণতন্ত্রের সুষম চর্চা, নয়া বন্দোবস্ত, মধ্যপন্থা এবং ‘বাংলাদেশপন্থা’র মতো যে স্বপ্নের কথা বলেছিল, তা তিনি মনে-প্রাণে ধারণ করেন। এনসিপির ঘোষণাপত্র ও লিটারেচার তাঁকে এক নতুন রাজনীতির স্বপ্ন দেখিয়েছিল। কিন্তু প্রতিষ্ঠার মাত্র ১০ মাসের মাথায় জামায়াতে ইসলামীসহ ১০ দলীয় জোটে যোগ দিয়ে এনসিপির শীর্ষ নেতৃত্ব ও নীতিনির্ধারকেরা দলের মূল আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়েছেন বলে তিনি মনে করেন।
তিনি অভিযোগ করেন, এনসিপির আহ্বায়কসহ শীর্ষ দায়িত্বশীলরা বিভিন্ন সময়ে এককভাবে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে জোটের সিদ্ধান্তে গিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মী এবং যারা বুকভরা আশা নিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন, তাঁদের সাথে ‘প্রবঞ্চনা’ করা হয়েছে। এ ধরনের নীতিহীন সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয় বলেই তিনি প্রাথমিকভাবে নির্বাচনকালীন সময়ে পার্টির সকল দায়িত্ব থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। নুসরাত আরও জানান, বর্তমান পরিস্থিতি পুনর্বিবেচনা করে খুব শীঘ্রই তিনি তাঁর চূড়ান্ত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবেন।
উল্লেখ্য, নুসরাত তাবাসসুম আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার লক্ষে গত ১৩ নভেম্বর দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। তবে গত ১০ ডিসেম্বর এনসিপির পক্ষ থেকে যে ১২৫ জন প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করা হয়, তাতে তাঁর নাম ছিল না। মনোনয়নপত্র না পাওয়া এবং পরবর্তীতে জামায়াতের সাথে জোট গঠনের প্রক্রিয়া—সব মিলিয়ে দলটির নেতৃত্বের প্রতি গভীর অনাস্থা প্রকাশ করলেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এই সম্মুখসারির নেত্রী। এর আগে ডা. তাসনিম জারা, ডা. তাজনূভা জাবীন এবং মীর আরশাদুল হকের মতো শীর্ষ নেতাদের পদত্যাগের পর নুসরাতের এই ‘নিষ্ক্রিয়তা’ ঘোষণা এনসিপিকে এক বড় ধরনের সাংগঠনিক সংকটের মুখে ঠেলে দিল। মূলত নতুন ধারার রাজনীতির প্রতিশ্রুতি দেওয়া দলটিতে এখন আদর্শিক মেরুকরণ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।