বিএনপির সংসদ সদস্যদের ছেড়ে দেয়া ছয় সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন আজ বুধবার। আসনগুলো হলো- ঠাকুরগাঁও-৩, বগুড়া-৪, বগুড়া-৬, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২। আসনগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪০ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে ১০টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী আছেন ২৩ জন, বাকি ১৭ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়েও ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হয়েছেন ছয়জন। বিএনপি ভোট বর্জনের আহ্বান জানালেও দলটির চার নেতা ভোট করছেন এই নির্বাচনে।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) জানিয়েছে, ছয়টি আসনে একযোগে আজ সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট নেয়া হবে। ছয় আসনের ৮৬৭ কেন্দ্রের সবগুলোতে ভোট নেয়া হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করে। গতকাল মঙ্গলবার আসনগুলোতে পৌঁছে দেয়া হয়েছে ইভিএম মেশিনসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের নির্বাচনী সরঞ্জাম। নিজেদের প্রথম সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে ব্যবহার করলেও এবার ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা ব্যবহার করছে না ইসি।
সংসদীয় আসনগুলোতে সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্ন ভোট আয়োজনের সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে ভোট হবে আশাবাদ জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেন, ‘সুষ্ঠু ভোটের জন্য সব প্রস্তুতি আছে। কেবল সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা করিনি। বাকি সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সুষ্ঠু-সুন্দর নির্বাচন করার জন্য যা যা দরকার, আমরা সব করেছি। ভোটকেন্দ্রে নিরবচ্ছিন্নভাবে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ভোট চলবে। ইভিএমে ভোট দেয়ার জন্য ভোটার এডুকেশন যথেষ্ট করা হচ্ছে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২
ছয় আসনের উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই নানা ধরনের চমক দেখাচ্ছে এই আসনটি। বিএনপির যে সংসদ সদস্যের পদত্যাগে আসনটি শূন্য হয়েছে, সেই উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়াই আবার দল থেকে পদত্যাগ করে এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে চমকে দেন সবাইকে। পরে দল তাকে বহিষ্কার করে। এদিকে এই আসনে আওয়ামী লীগ কোনো প্রার্থী দেয়নি, শরিক দলগুলোর কোনো প্রার্থীকে সমর্থনও দেয়নি। বরং প্রতীক বরাদ্দের পর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাই আব্দুস সাত্তারের নির্বাচনী প্রচারণা এগিয়ে নিয়ে গেছেন। দলটির কেন্দ্রীয় নেতারাও তার পক্ষে জনসভা করেছেন।
এদিকে নির্বাচনের পাঁচ দিন আগে গত শুক্রবার এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা আবু আসিফ আহমেদ নিখোঁজ হয়েছেন বলে অভিযোগ তোলে তার পরিবার। এখন পর্যন্ত তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ফোনালাপে তার নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি সাজানো কি না, সে প্রশ্ন উঠেছে। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না করায় সে সন্দেহ আরও জোরালো হয়। শেষ পর্যন্ত ভোটের আগের দিন গতকাল দুপুরে আবু আসিফের স্ত্রী মেহেরুন্নিছা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তার স্বামীর নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। এ ঘটনায় নির্বাচন কমিশন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তবে সার্বিক ঘটনা বিশ্লেষণে আবু আসিফ আত্মগোপনে থাকতে পারেন বলেও নির্বাচন কমিশন মনে করছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান।
এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৩১৩ জন। মোট ভোটকেন্দ্র ১৩২টি। আসনটিতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী পাঁচজন। আব্দুস সাত্তার ও আবু আসিফ ছাড়া বাকি প্রার্থীরা হলেন জাতীয় পার্টির আব্দুল হামিদ ভাসানী (লাঙ্গল) ও জাকের পার্টির প্রার্থী জহিরুল হক (গোলাপ ফুল) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জাতীয় পার্টির সাবেক দুই মেয়াদের সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা (আপেল)। জিয়াউল হক অবশ্য প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময়সীমা শেষ হওয়ার পর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
এই আসনে পুলিশ, আনসার সদস্য ও গ্রাম পুলিশের পাশাপাশি চার প্লাটুন বিজিবি ও র্যাবের ১০টি টিম আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবে। এ ছাড়া ১৭টি ইউনিয়নের প্রতিটিতে একজন করে মোট ১৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও দুজন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ও সংক্ষিপ্ত বিচারকাজ করবেন। এই আসনের উপনির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম বলেন, ‘আবু আসিফকে খুঁজে বের করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ করতে সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।’
ঠাকুরগাঁও-৩
এই আসনে মোট ৩ লাখ ২৪ হাজার ৭৪১ জন ভোটার। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৫৯ হাজার ৫৩১ জন, পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৬৫ হাজার ২১০ জন। মোট ভোটকেন্দ্র ১৩৮টি। এর মধ্যে ৭২টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ, যদিও নির্বাচন কমিশন এই কেন্দ্রগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ না বলে গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিহিত করছে।
এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ছয় প্রার্থী। দলীয় প্রার্থীরা হলেন ওয়ার্কার্স পার্টির ইয়াসিন আলী (হাতুড়ি), জাতীয় পার্টির হাফিজ উদ্দীন আহমেদ (লাঙ্গল), জাকের পার্টির এমদাদুল হক (গোলাপ ফুল), বাংলাদেশ ন্যাশনাল পিপলস পার্টির সাফি আল আসাদ (আম), বাংলাদেশ ন্যাশনাল ফ্রন্টের (বিএনএফ) সিরাজুল ইসলাম (টেলিভিশন)। এই আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কোনো প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়নি। একতারা প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোপালচন্দ্র রায় দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ‘বিদ্রোহী’ হিসেবে ভোট করছেন এই আসনে।
এ আসনে প্রতিটি কেন্দ্রে চারজন অস্ত্রধারী পুলিশ, দুজন নারী পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েন থাকবেন। এ ছাড়া সাত প্লাটুন বিজিবি সদস্য, ১৮ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচনী এলাকা নজরদারিতে রাখবেন। আঞ্চলিক রিটার্নিং কর্মকর্তা জি এম সাহাতাব উদ্দীন বলেন, ‘নির্বাচনী পরিবেশ ঠিক রাখতে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সাদা পোশাকেও পর্যাপ্তসংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন থাকবে।
বগুড়া-৪ ও বগুড়া-৬
বগুড়া-৪ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ২৮ হাজার ৪৬৯ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৬৫ হাজার ৪৩৪ জন, পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৬৩ হাজার ৩৫ জন। এই আসনের ১১২টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ৭৯টি। কেবল কাহালুতেই ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ৫৬টি।
এই আসনে ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৯ জন। এ আসনে আওয়ামী লীগ নিজে প্রার্থী না দিয়ে সমর্থন দিয়েছে ১৪ দলীয় জোট থেকে জাসদ প্রার্থী রেজাউল করিম তানসেনকে (মশাল)। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির শাহীন মোস্তফা কামাল (লাঙ্গল), বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. তাজ উদ্দীন মণ্ডল (ডাব) ও জাকের পার্টির মো. আব্দুর রশিদ সরদার (গোলাপ ফুল) রয়েছেন দলীয় প্রার্থী। পাঁচ স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে কুড়াল প্রতীকে নির্বাচন করছেন সাবেক বিএনপি নেতা কামরুল হাসান সিদ্দিকী জুয়েল, ট্রাক প্রতীকে নির্বাচন করছেন সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা মো. মোশফিকুর রহমান কাজল। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আরও আছেন মো. ইলিয়াস আলী, (কলার ছড়ি), মো. গোলাম মোস্তফা, (দালান) ও আলোচিত আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম, (একতারা)।
এদিকে বগুড়া-৬ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ১০ হাজার ৭৪৩ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ২ লাখ ৮ হাজার ২৫৯ জন, পুরুষ ভোটার ২ লাখ ২ হাজার ৪৮৪ জন। এই আসনের ১৪৩টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৭৯টিই ঝুঁকিপূর্ণ।
এই আসনে দলীয় প্রার্থী ছয়জন হলেন- আওয়ামী লীগের রাগেবুল আহসান রিপু (নৌকা), জাসদের মো. ইমদাদুল হক ইমদাদ (মশাল), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মো. নজরুল ইসলাম (বটগাছ), জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম ওমর (লাঙ্গল), জাকের পার্টির মোহাম্মদ ফয়লাস বিন শফিক (গোলাপ ফুল) ও গণফ্রন্টের মো. আফজাল হোসেন (মাছ)। পাঁচ স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ আব্দুল মান্নান (ট্রাক) ও বিএনপির ‘বিদ্রোহী’ সরকার বাদল (কুড়াল)। এ আসনেও প্রার্থী হয়েছেন হিরো আলম। এ ছাড়া মাছুদার রহমান হেলাল (আপেল) ও রাকিব হাসান (কুমির) স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন।
বগুড়া জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, ‘দুই আসনের উপনির্বাচনে তিনজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ৩৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবেন। পাশাপাশি মোতায়েন থাকবে ১৬ প্লাটুন বিজিবি। এ ছাড়া ভোটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সাড়ে ৪ হাজার নিরাপত্তাকর্মী কাজ করবেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৫ হাজার ৪৫০ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ২ লাখ ৪ হাজার ২৮০ জন, পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১ হাজার ১৭০ জন। আসনটির ১৮০টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের সংখ্যা ১২২।
নাচোল, গোমস্তাপুর ও ভোলাহাট উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনে দলীয় প্রার্থী চারজন, স্বতন্ত্র দুজন। দলীয় প্রার্থীরা হলেন- আওয়ামী লীগের মু. জিয়াউর রহমান (নৌকা), জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক (লাঙ্গল), জাকের পার্টির গোলাম মোস্তফা (গোলাপ ফুল) ও বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) নবীউল ইসলাম (টেলিভিশন)। এ আসনে স্বতন্ত্র দুজনই আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী। তারা হলেন- মোহাম্মদ আলী সরকার (আপেল) ও খুরশিদ আলম বাচ্চু (মাথাল)।
অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ১১ হাজা ৪৯৫ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ২ লাখ ৫ হাজার ৬১২ জন, পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৫ হাজার ৮৮৩ জন। আসনটির ১৭২টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৯৭টি।
এই আসনে প্রার্থী মাত্র তিনজন। তাদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের আব্দুল ওদুদ (নৌকা), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) কামরুজ্জামান খান (টেলিভিশন) এবং আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী সামিউল হক লিটন (আপেল)।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খান জানান, ৩৩ জন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন।
[প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন দৈনিক বাংলার ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঠাকুরগাঁও, বগুড়া ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি]
বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামীকাল শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবেন। এদিন সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মাজার প্রাঙ্গণে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদির কবর জিয়ারত করবেন তিনি।
শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) বিএনপির মিডিয়া সেল দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের এই কর্মসূচির কথা নিশ্চিত করেছে।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, শনিবার সকাল ১১টায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সকল সদস্যসহ সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে নিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শহীদ ওসমান হাদির কবর জিয়ারত করতে যাবেন।
এরপর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে ভোটার হবেন এবং নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) রেজিস্ট্রেশন করবেন। তারপর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের দেখতে শ্যামলীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) যাবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে আয়োজিত গণসংবর্ধনা পরবর্তী বর্জ্য পরিষ্কারে এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি। রাজধানীর কুড়িল থেকে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত বিস্তৃত জুলাই ৩৬ এক্সপ্রেসওয়ে (৩০০ ফিট সড়ক) এবং এর আশপাশের এলাকায় পড়ে থাকা বিপুল পরিমাণ ময়লা-আবর্জনা আজ শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) সকালে দলটির নেতাকর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অপসারণ করেন। সকাল থেকেই স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল ও যুবদলের সদস্যদের হাতে ঝাড়ু ও বর্জ্য সংগ্রহের নানা সরঞ্জাম নিয়ে রাজপথ পরিষ্কার করতে দেখা যায়, যেখানে স্থানীয় অনেক বাসিন্দাও সংহতি জানিয়ে অংশ নেন।
পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে সরাসরি নেতৃত্ব দেওয়া ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক জানান যে, রাজনৈতিক কর্মসূচির পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা পালন করা দলটির প্রধান আদর্শ। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী, জনস্বার্থ ও পরিবেশ রক্ষা নিশ্চিত করতেই এই পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। গতকালের বিশাল গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতির কারণে সড়কে প্লাস্টিক বোতল, কাগজের টুকরো, ব্যানার ও ফেস্টুন জমে গিয়েছিল, যা দ্রুত পরিষ্কার করার মাধ্যমে জনভোগান্তি লাঘব ও স্বাভাবিক যান চলাচল নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে।
বিএনপি নেতাদের এই পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝেও ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে। পথচারী ও স্থানীয়রা জানান যে, বড় কোনো রাজনৈতিক সমাবেশের পর সাধারণত সড়কগুলো নোংরা অবস্থায় পড়ে থাকে, তবে এবার দ্রুত বর্জ্য অপসারণের ফলে পরিবেশ যেমন সুরক্ষিত হয়েছে তেমনি যানবাহন চলাচলেও সুবিধা হয়েছে। দলীয় সূত্র থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, আগামী দিনেও বড় ধরনের কোনো কর্মসূচির পর এ ধরনের সামাজিক ও জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। আজ শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেল পৌনে ৫টার দিকে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে তিনি জিয়া উদ্যানে প্রবেশ করেন। এরপর তিনি মরহুম পিতার কবর জিয়ারত করেন। বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে তিনি সমাধিস্থলে পৌঁছালে চন্দ্রিমা উদ্যান ও এর আশপাশের এলাকায় উপস্থিত হাজারো দলীয় নেতাকর্মী রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে তাকে উষ্ণ অভিবাদন জানান। এ সময় নেতাকর্মীদের মুহুর্মুহু স্লোগানে পুরো এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে।
এসময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় জিয়া উদ্যান ও এর সংলগ্ন এলাকায় সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও এপিবিএন সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা যায়।
এর আগে দুপুর ২টা ৫৪ মিনিটে তারেক রহমান গুলশান অ্যাভিনিউয়ের নিজ বাসভবন থেকে জিয়া উদ্যানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। বনানী, মহাখালী ফ্লাইওভার এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এলাকা হয়ে তিনি সরাসরি সমাধিস্থলে পৌঁছান। শ্রদ্ধা নিবেদনকালে তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। এছাড়াও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা ড. এ কে এম শামসুল রহমান শামস, উপদেষ্টা ড. মাহদী আমিন, বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস ছাত্তারসহ দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ জিয়ারত অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
শহীদ রাষ্ট্রপতির কবর জিয়ারত ও মোনাজাত শেষে তারেক রহমানের সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে। উল্লেখ্য, সাধারণ মানুষের যাতায়াতে যেন কোনো প্রকার ভোগান্তি না হয়, সেই বিষয়টি বিবেচনা করে তিনি এদিন জুমার নামাজ বাসায়ই আদায় করেন। তার যাতায়াতের পুরো পথে এবং সমাবেশস্থলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা বলয় লক্ষ্য করা গেছে।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশে ফিরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। একজন বাংলাদেশি নাগরিক ও রাজনৈতিক নেতার নিজ ভূমিতে ফেরার এই অধিকারটি পুনরুদ্ধার হওয়া আমাদের গণতান্ত্রিক লড়াইয়েরই একটি ইতিবাচক প্রতিফলন।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে তিনি এ কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম লিখেছেন, তারেক রহমান এবং তার পরিবার রাজনৈতিক ভিন্নমতের কারণে রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। তাকে দীর্ঘ সময় নির্বাসিত থাকতে হয়েছে। হাজারো শহীদের রক্তদানের মধ্য দিয়ে গণঅভ্যুত্থানের ফলে এমন প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে; যেখানে তিনি ও তার পরিবার দেশে ফিরে আসতে পেরেছেন।
তার ভাষ্য, আমরা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী বাংলাদেশ রাষ্ট্র চাই; যেখানে ভবিষ্যতে ভিন্নমতের কারণে কোনও রাজনৈতিক নেতাকে রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের মধ্য দিয়ে যেতে হবে না।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, বিগত দেড় দশকের অবরুদ্ধ রাজনৈতিক পরিবেশ ভেঙে আমরা আজ যে মুক্ত বাংলাদেশের পথে হাঁটছি, সেখানে প্রতিটি নাগরিকের আইনের শাসন ও রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।
তারেক রহমানকে স্বদেশে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, তারেক রহমানের এই প্রত্যাবর্তন দেশের বহুদলীয় গণতন্ত্রের চর্চাকে আরও সুসংহত করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় সহাবস্থান এবং সুস্থ প্রতিযোগিতার সংস্কৃতি গড়ে তোলাই এখন আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ। তারেক রহমানকে স্বদেশে স্বাগত জানাই। দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে তার এই অংশগ্রহণ ফলপ্রসূ হোক।
আাগামী নির্বাচনে তারেক রহমানের নেতৃত্বে গণতন্ত্র ফিরে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর পূর্বাচলের তিনশ ফিট এক্সপ্রেসওয়েতে বিএনপি আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজ আমাদের একদিকে আনন্দের দিন। বাংলাদেশের মানুষের পক্ষ থেকে শহীদ জিয়ার পুত্র ও গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমান দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থেকে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। অন্যদিকে গণতন্ত্রের নেত্রী খালেদা জিয়া অসুস্থ-এটি আমাদের জন্য বেদনাদায়ক।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন তারেক রহমান দেশে এসেছেন। আমরা তাকে বাংলাদেশের মানুষের পক্ষ থেকে স্বাগত জানাই। আশা করি, আগামী নির্বাচনে তারেক রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে।’
মির্জা ফখরুল বিগত আন্দোলনের স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘২০২৪ সালের ৫ আগস্ট তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা ফ্যাসিস্ট বিদায় করেছি। তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা একটি কঠিন পথ পাড়ি দিয়েছি। ইনশাআল্লাহ, ২০২৬ সালে তারই নেতৃত্বে আমরা আবারও জয়ী হবো।’
এর আগে দুপুরে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তারেক রহমান। ইমিগ্রেশন আনুষ্ঠানিকতা শেষে তিনি দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। পরে সেখানে উপস্থিত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কিছু সময় কথা বলেন এবং লবিতে কিছুক্ষণ অবস্থান করেন। এ সময় তিনি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন বলে দলটির মিডিয়া সেল নিশ্চিত করেছে।
পরে লাল-সবুজ রঙের একটি বাসে করে নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে করতে তিনি কুড়িল বিশ্বরোডের তিনশ ফিট এলাকায় আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এ সময় তারেক রহমানের গাড়িবহরের সঙ্গে বিপুলসংখ্যক মানুষ অনুষ্ঠানস্থলে যান। সেখানে সারাদেশ থেকে আসা নেতাকর্মীরা আগে থেকেই অবস্থান করছিলেন।
শেষ মুহূর্তে এসে আসন সমঝোতা নিয়ে জটিলতায় পড়েছে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনসহ আট দল। সংশ্লিষ্ট লিয়াজোঁ কমিটি দফায় দফায় বৈঠক করেও একক প্রার্থী নির্বাচনে কোনো সমাধানে আসতে পারেনি। বিশেষ করে চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন ও মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আসন চাহিদা অনেক বেশি হওয়ায় এই জটিলতা দেখা দিয়েছে। এমনকি চাহিদা মতো আসন না পেলে এই সমঝোতা প্রক্রিয়া থেকে বের হয়ে আলাদা প্লাটফর্ম করার আভাস দিয়েছে এই দুটি দল।
এদিকে আসন সমঝোতা নিয়ে আট দলের জটিলতার মধ্যে নতুন করে আলোচনায় এসেছে এনসিপি। জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নিতে তাদেরও অন্তত অর্ধশত আসনের প্রত্যাশা রয়েছে। সমঝোতা হলে তাদের জন্য সবাইকে আরো ছাড় দিতে হবে। এছাড়া আরো কয়েকটি দল আসন সমঝোতার জন্য যোগাযোগ করছে। সব মিলিয়ে জামায়াত সংশ্লিষ্ট এই নির্বাচনী সমঝোতা নিয়ে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্রমতে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন সমঝোতার ভিত্তিতে অংশগ্রহণের জন্য দীর্ঘদিন ধরে প্রক্রিয়া চালাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, নেজামে ইসলাম পার্টি, জাগপা ও বাংলাদেশ ডেভলেপমেন্ট পার্টি। ইসলামী দলগুলোর ভোট একবক্সে নিয়ে সরকার গঠনেরও টার্গেটে এগোতে চায় তারা। তবে শেষ মুহূর্তে এসে আসন সমঝোতা নিয়ে জটিলতায় সেই উদ্যোগ প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
জানা গেছে, ইসলামী আন্দোলন ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের চাহিদা মতো আসন সমঝোতা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের বেশ চাপের মধ্যে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী। অন্যদের চাহিদা পূরণ করলে জামায়াতের আসন অনেক কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে প্রত্যাশা অনুযায়ী আসন না পেলে এই প্রক্রিয়া থেকে বের হয়ে বিকল্প সিদ্ধান্ত এবং আলাদা প্লাটফর্ম করারও চিন্তা রয়েছে কয়েকটি দলের।
তবে জামায়াতসহ সব দলই এখনো চায় সমঝোতার ভিত্তিতেই নির্বাচন হোক। এক্ষেত্রে জামায়াতকেই বেশি ছাড় দেওয়ার কথা বলছেন অন্যরা। কাল শনিবারের মধ্যে এ বিষয়ে শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে সমাধানের আশা করছেন কেউ কেউ। আর এদিন সমাধান না হলে মনোনয়ন ফরম প্রত্যাহার পর্যন্তও অপেক্ষা করতে হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
তবে আট দলের আসন সমঝোতার বিষয়টি ভালোভাবে এগোচ্ছে বলে জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও আট দলের সমন্বয়ক ড. হামিদুর রহমান আযাদ। তিনি বলেন, জামায়াতের কাছে কোনো আসন নেই, আসন সবার। আট দলের সবাই ছাড় দিবে, সবাই মিলেই ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে যাব।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন শতাধিক আসন দাবি করছে। আর মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের চাওয়া কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ আসন। খেলাফত মজলিসের অপরাংশও বেশ সংখ্যক আসন চাইছে। এসব দলের চাহিদা পূরণ করে জামায়াতের আসন সংখ্যা অনেক কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে জামায়াত অন্তত দুইশ আসনে নির্বাচন করতে চায়। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মাঝে বেশ জটিলতা বিরাজ করছে।
ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমদ বলেন, আসন সমঝোতার বিষয় নিয়ে আলোচনা এখনো চলছে। এনসিপিকে নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। আরো কয়েকটি দল আসতে চাচ্ছে। এসব বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য একটু সময় লাগছে।
সমঝোতা নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তার কথা জানিয়ে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের এক শীর্ষ নেতা বলেন-আমরা আট দলের আসন সমঝোতা ও ঐক্য অটুট রাখতে চাই, তবে তা অবশ্যই আমাদের দলের সম্মান-মর্যাদা বজায় রেখে। এজন্য জামায়াতকেই বেশি ছাড় দিতে হবে। সম্মানজনক আসন না পেলে বিকল্প চিন্তা করা হবে।
বাংলাদেশে চলমান গণতান্ত্রিক উত্তরণকে বাধাগ্রস্ত করতে পরাজিত শক্তি এখনো ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেছেন, যেকোনো মূল্যে এই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে জনগণের সহযোগিতায় একটি বৈষম্যহীন ও সুশাসিত রাষ্ট্র গড়ে তুলব। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দীর্ঘ ১৭ বছর পর স্বদেশে প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সামনে তিনি এ কথা বলেন।
মগবাজার ফ্লাইওভারে সাম্প্রতিক বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী শক্তি এবং তাদের দেশি-বিদেশি দোসররা এখনো সক্রিয়। তারা বর্তমানের এই গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও আগামী নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য নাশকতার পথ বেছে নিয়েছে। মগবাজারের হামলায় প্রাণহানি তারই প্রমাণ। কিন্তু আমরা সতর্ক আছি; তাদের এই অশুভ পরিকল্পনা কখনোই সফল হতে দেওয়া হবে না।’
তিনি আরও বলেন, যারা সহিংসতা ও অগণতান্ত্রিক উপায়ে দেশের অগ্রযাত্রা রুখতে চাইবে, তাদের সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করা হবে।
তারেক রহমানের ফিরে আসাকে বাংলাদেশের ৫৫ বছরের ইতিহাসে একটি ‘ঐতিহাসিক ও অবিস্মরণীয় মুহূর্ত’ হিসেবে বর্ণনা করেন সালাহউদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে দেশ আজ ফ্যাসিবাদের হাত থেকে মুক্ত। মানুষ এখন একটি নতুন মুক্তির আবহে দাঁড়িয়ে আছে। এই প্রেক্ষাপটে তারেক রহমানের মাতৃভূমিতে ফিরে আসা মানুষের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে।’
ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রূপরেখা তুলে ধরে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা কেবল ক্ষমতার পরিবর্তন চাই না, বরং দীর্ঘ ১৭ বছরের লড়াইয়ের পর আমরা এমন একটি রাষ্ট্র গড়ে তুলতে চাই যেখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না। জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা, সুশাসন নিশ্চিত এবং একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ করাই আমাদের লক্ষ্য।’
সালাহউদ্দিন আহমদ আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, জনগণের বিপুল জনসমর্থন নিয়েই বিএনপি আগামী দিনে দেশের মানুষের সকল প্রত্যাশা পূরণ করবে।
দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে দেশে ফেরার পর প্রথম জনসভায় এক অনন্য ও দূরদর্শী রূপরেখা তুলে ধরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর পূর্বাচলে আয়োজিত বিশাল গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গ অধিকারকর্মী মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের সেই ঐতিহাসিক ভাষণের প্রসঙ্গ টেনে নতুন এক রাজনৈতিক দর্শনের কথা বলেন। উপস্থিত লাখো জনতার উদ্দেশ্যে তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ‘‘মার্টিন লুথার কিংয়ের একটি বিখ্যাত উক্তি ছিল, ‘আই হ্যাভ আ ড্রিম’ (আমার একটি স্বপ্ন আছে)। আজ তাঁর সেই কথাটি স্মরণ করে আমি আপনাদের বলতে চাই— ‘আই হ্যাভ আ প্ল্যান’ (আমার একটি পরিকল্পনা আছে)। আমার এই পরিকল্পনা দেশের মানুষের জন্য, আমার প্রিয় মাতৃভূমির জন্য।’’
তারেক রহমান তাঁর ভাষণে ১৯৬৩ সালে ওয়াশিংটনের সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের কথা মনে করিয়ে দেন, যেখানে মার্টিন লুথার কিং কঠিন পরিস্থিতির মাঝেও জাতি হিসেবে উঠে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দেশের প্রতিটি নাগরিকের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এবং মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের স্বার্থে তাঁর কাছে একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এই পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়ন তখনই সম্ভব হবে, যখন দেশের প্রতিটি সাধারণ মানুষ তাঁর পাশে দাঁড়াবে এবং সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। তিনি বিশ্বাস করেন, জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণই পারে একটি আধুনিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে।
বক্তব্যের এক পর্যায়ে তারেক রহমান সামাজিক শৃঙ্খলা এবং জননিরাপত্তার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। তিনি সাফ জানিয়ে দেন যে, কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বরদাশত করা হবে না। তাঁর মতে, একটি নিরাপদ রাষ্ট্র গড়তে হলে ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি বা পেশা নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। এ সময় তিনি উপস্থিত নেতাকর্মীদের যে কোনো মূল্যে শান্তি বজায় রাখার এবং মানুষের জানমালের সুরক্ষা দেওয়ার শপথ নেওয়ার আহ্বান জানান। দীর্ঘ দেড় যুগ পর প্রিয় নেতার এমন সুচিন্তিত ও সংকল্পবদ্ধ ভাষণ উপস্থিত জনতাকে যেমন আশান্বিত করেছে, তেমনি দেশের আগামীর রাজনীতির জন্য এক নতুন পথনির্দেশক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে তিনি সরাসরি তাঁর অসুস্থ মা বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যাওয়ার কথা রয়েছে।
দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে প্রিয় মাতৃভূমিতে ফিরে এক নতুন ও নিরাপদ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখালেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ৩০০ ফিট এলাকায় আয়োজিত বিশাল গণসংবর্ধনা সভায় সমবেত লাখো জনতার উদ্দেশ্যে তিনি তাঁর আগামীর রাজনৈতিক দর্শন ও দেশ গড়ার রূপরেখা তুলে ধরেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ধর্ম-বর্ণ কিংবা রাজনৈতিক মতাদর্শ নির্বিশেষে দেশের প্রতিটি মানুষকে নিয়ে তিনি একটি প্রত্যাশিত ও নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চান। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য মহান আল্লাহর রহমত কামনা করে তিনি জানান, আগামীতে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে মহানবী (সা.)-এর প্রদর্শিত ন্যায়পরায়ণতার আদর্শকেই মূল ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করবে তাঁর দল।
বক্তব্যের এক পর্যায়ে তারেক রহমান তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে বলেন, "দেশের মানুষের জন্য আমার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা আছে। তবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হলে দেশের প্রতিটি গণতন্ত্রকামী মানুষের সক্রিয় সহযোগিতা ও সমর্থন প্রয়োজন।" তিনি দেশের বর্তমান অস্থিরতার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, বিভিন্ন আধিপত্যবাদী শক্তি এখনও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সাহসী সৈনিক শরীফ ওসমান হাদির নির্মম হত্যাকাণ্ডকে সেই ষড়যন্ত্রেরই অংশ হিসেবে অভিহিত করেন তিনি। এমন পরিস্থিতিতে দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে ধৈর্য ধারণ করার এবং বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে ঐক্যবদ্ধ থেকে দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানান তিনি।
তারেক রহমান তাঁর বক্তব্যে একটি মানবিক ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্রের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, পাহাড় কিংবা সমতল—যেখানের মানুষই হোক না কেন, সবার নাগরিক অধিকার সমান। তিনি এমন একটি বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি দেন যেখানে নারী ও শিশুরা দিন-রাত যেকোনো সময় নিরাপদে চলাফেরা করতে পারবে। বিগত দেড় দশকের দুঃশাসনের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, এই দীর্ঘ সময়ে অসংখ্য মানুষ গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিয়েছেন ও শহীদ হয়েছেন। তাঁদের আত্মত্যাগ বৃথা যেতে দেওয়া হবে না। এ সময় তিনি গুরুতর অসুস্থ তাঁর মা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত আরোগ্য কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে এবং দলের কেন্দ্রীয় নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকুর যৌথ সঞ্চালনায় এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি এক বিশাল জনসমুদ্রে পরিণত হয়। স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদসহ দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ মঞ্চে উপস্থিত থেকে তাঁদের প্রিয় নেতাকে বরণ করে নেন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর তারেক রহমানের এই সরাসরি দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ উপস্থিত জনতাকে যেমন আবেগপ্লুত করেছে, তেমনি আগামীর রাজনৈতিক লড়াইয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে এক নতুন উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছে। সংবর্ধনা শেষে তারেক রহমান সরাসরি এভারকেয়ার হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসাধীন মাকে দেখতে যাওয়ার কথা রয়েছে।
দীর্ঘ ১৭ বছরের প্রবাস জীবনের অবসান ঘটিয়ে দেশে ফেরার পর প্রথম জনসভায় এক নতুন ও নিরাপদ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখালেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ৩০০ ফিট এলাকায় আয়োজিত বিশাল গণসংবর্ধনা মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, "আমরা সবাই মিলে এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলব, যা একজন মমতাময়ী মা তাঁর সন্তানের জন্য দেখেন।" তাঁর মতে, একটি প্রকৃত নিরাপদ দেশ হলো সেটিই, যেখানে প্রতিটি নাগরিক সম্পূর্ণ নিশ্চিন্তে ঘর থেকে বের হতে পারবেন এবং নিরাপদে পুনরায় নিজ ঘরে ফিরে আসতে পারবেন।
বক্তব্যের শুরুতে তারেক রহমান দেশের মানুষের বীরত্বের প্রশংসা করে বলেন, ১৯৭১ সালে এ দেশের মানুষ যেভাবে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল, ঠিক তেমনি ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সর্বস্তরের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে পুনরায় রক্ষা করেছে। তিনি উল্লেখ করেন যে, বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের প্রধান আকাঙ্ক্ষা হলো তাঁদের কথা বলার অধিকার এবং হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাওয়া। একটি শোষণমুক্ত ও মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠাই এখন তাঁদের আন্দোলনের মূল লক্ষ্য।
জাতীয় ঐক্যের ওপর বিশেষ জোর দিয়ে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, এখন সময় এসেছে সকলে মিলে দেশ গড়ার। তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন যে, তাঁর স্বপ্নের বাংলাদেশে ধর্ম-বর্ণ কিংবা ভৌগোলিক অবস্থান নির্বিশেষে পাহাড় ও সমতলের মানুষ এবং মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সকলের সমান অধিকার নিশ্চিত করা হবে। তিনি এমন এক রাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি দেন যেখানে নারী, পুরুষ কিংবা শিশু—যেই হোক না কেন, তাঁদের প্রত্যেকের জানমালের পূর্ণ নিরাপত্তা দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য যে, আজ বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে তারেক রহমান ৩০০ ফিটের বিশাল সংবর্ধনা মঞ্চে আরোহণ করেন। প্রিয় নেতাকে বরণ করে নিতে সেখানে সকাল থেকেই লক্ষ লক্ষ মানুষের ঢল নামে। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের শুরুতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সারাদেশের নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে তাঁকে উষ্ণ অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান। দীর্ঘ দেড় যুগ পর তারেক রহমানের এই প্রত্যাবর্তন এবং তাঁর প্রথম দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ উপস্থিত জনতার মাঝে নতুন রাজনৈতিক উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছে। সংবর্ধনা শেষে তিনি সরাসরি এভারকেয়ার হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসাধীন মা বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে যাওয়ার কথা রয়েছে।
দীর্ঘ ১৭ বছর ৩ মাসের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে অবশেষে রাজধানী ঢাকার ৩০০ ফিট সংলগ্ন বিশাল সংবর্ধনা মঞ্চে উপস্থিত হয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টা ৫১ মিনিটে তিনি মঞ্চে আরোহণ করেন। প্রিয় নেতাকে চোখের সামনে পেয়ে সেখানে সমবেত লাখো জনতার বাঁধভাঙা উল্লাস আর মুহুর্মুহু স্লোগানে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। তারেক রহমান মঞ্চে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে উপস্থিত নেতাকর্মীদের এই নজিরবিহীন ভালোবাসার অভিবাদন গ্রহণ করেন।
মঞ্চে তারেক রহমানকে স্বাগত জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্যবৃন্দ। সেখানে সালাহ উদ্দিন আহমেদ, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান এবং হাফিজ উদ্দিন আহমেদসহ কেন্দ্রীয় পর্যায়ের জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে একটি বিশেষভাবে প্রস্তুত লাল-সবুজ রঙের বুলেটপ্রুফ বাসে চড়ে তিনি ৩০০ ফিটের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। বিমানবন্দর থেকে সভাস্থল পর্যন্ত সড়কের দু’পাশে দাঁড়িয়ে থাকা হাজার হাজার নেতাকর্মী হাত নেড়ে তাঁদের প্রিয় নেতাকে বরণ করে নেন। ব্যাপক জনস্রোতের কারণে মাত্র কয়েক কিলোমিটারের এই পথ পাড়ি দিতে তারেক রহমানের বহরের সময় লাগে প্রায় সোয়া তিন ঘণ্টা।
তারেক রহমানের এই ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু হয় বুধবার লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে। আজ সকাল ৯টা ৫৬ মিনিটে তাঁকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটি প্রথমে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখানে সংক্ষিপ্ত বিরতি শেষে দুপুর ১১টা ৪৫ মিনিটে ফ্লাইটটি ঢাকায় পৌঁছায়। ইমিগ্রেশন শেষে ভিআইপি লাউঞ্জে তাঁকে ফুল দিয়ে বরণ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরপর নিজের শাশুড়ি ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে কুশল বিনিময় করেন তিনি। তারেক রহমানের সাথে তাঁর সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমান এবং কন্যা ব্যারিস্টার জাইমা রহমানও দেশে ফিরেছেন। তবে তাঁরা বিমানবন্দর থেকে সরাসরি গুলশানের বাসভবনে চলে যান।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে তারেক রহমানের পরবর্তী গন্তব্য রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতাল। সেখানে তিনি সিসিইউতে চিকিৎসাধীন তাঁর মা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতে যাবেন। দীর্ঘ দেড় যুগ পর পরিবারের বড় ছেলের এমন ফিরে আসা এবং সাধারণ মানুষের অভূতপূর্ব স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। পুরো ৩০০ ফিট এলাকা বর্তমানে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই তারেক রহমান সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে তাঁর বহু প্রতীক্ষিত দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ দেবেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশে ফেরা বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক অত্যন্ত ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে বড়দিন উপলক্ষে খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানাতে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পবিত্র জপমালা রাণী গির্জায় গিয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। শফিকুল আলম বলেন, “বাংলাদেশে বর্তমানে একটি দৃশ্যমান রাজনৈতিক শূন্যতা বিরাজ করছে এবং তারেক রহমানের ফেরার মাধ্যমে সেই শূন্যতা পূরণ হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।”
প্রেস সচিব আরও উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশ বর্তমানে একটি ঐতিহাসিক ‘গণতান্ত্রিক উত্তরণ’ বা ডেমোক্রেটিক ট্রানজিশনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তারেক রহমান দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা হওয়ায় তাঁর এই প্রত্যাবর্তন সেই উত্তরণ প্রক্রিয়াকে আরও মসৃণ ও সুসংহত করবে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তাঁর ফিরে আসা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে প্রেস সচিব আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তারেক রহমানের নিরাপত্তার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম জানান, মূলত বিএনপিই তাদের নেতার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়টি তদারকি করছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সকল সহযোগিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। বিএনপি প্রশাসনের কাছে যে ধরনের নিরাপত্তা প্রটোকল বা সহায়তা চেয়েছে, তার প্রতিটি অনুরোধ সরকার অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পূরণ করছে। উল্লেখ্য, লন্ডন থেকে সিলেট হয়ে আজ দুপুর ১২টার ঠিক আগে তারেক রহমান ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন, যা তাঁর দীর্ঘ নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়েছে।
বিফ্রিংকালে শফিকুল আলম প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) খোদা বকশ চৌধুরীর পদত্যাগের বিষয়টিও উল্লেখ করেন। তিনি জানান, গতকাল দিবাগত রাত ১২টার দিকে এই পদত্যাগের ঘটনাটি ঘটেছে, তবে কেন তিনি হঠাৎ দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ালেন সে সম্পর্কে তাঁর কাছে এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই।
পরিশেষে বড়দিনের সম্প্রীতির বার্তা তুলে ধরে প্রেস সচিব বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য উদাহরণ। অন্তর্বর্তী সরকার চায় প্রতিটি ধর্মের মানুষ যেন তাঁদের ধর্মীয় আচার ও অনুষ্ঠান নির্ভয়ে এবং আনন্দের সাথে পালন করতে পারেন। সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে উৎসবমুখর পরিবেশ বজায় রাখাই প্রকৃত গণতন্ত্রের মূল লক্ষ্য বলে তিনি মন্তব্য করেন। মূলত তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন এবং ধর্মীয় উৎসবের আবহে দেশে একটি ইতিবাচক রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশ তৈরি হবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে দেশে ফেরার ঐতিহাসিক দিনেই তাঁকে অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে পদত্যাগ করেছেন দলটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব মীর আরশাদুল হক। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিশেষ বার্তার মাধ্যমে তিনি এই ঘোষণা দেন। পদত্যাগের পাশাপাশি তিনি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসন থেকে এনসিপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার সিদ্ধান্তও জানিয়েছেন। মীর আরশাদুল হক এনসিপিতে কেন্দ্রীয় নীতি নির্ধারণী পদের পাশাপাশি চট্টগ্রাম মহানগরের প্রধান সমন্বয়কারী ও পরিবেশ সেলের প্রধানসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।
পদত্যাগের কারণ হিসেবে আরশাদুল হক এনসিপির বর্তমান রাজনৈতিক গতিপথ নিয়ে গভীর হতাশা প্রকাশ করেছেন। তিনি তাঁর বিবৃতিতে উল্লেখ করেন যে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের প্রতিশ্রুতি নিয়ে এনসিপির যাত্রা শুরু হলেও গত ১০ মাসের অভিজ্ঞতায় তিনি দেখেছেন দলটির নেতারা সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষায় পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। যে স্বপ্ন ও সম্ভাবনা দেখে তিনি দলটিতে যোগ দিয়েছিলেন, তার কিছুই আর অবশিষ্ট নেই বলে মনে করেন তিনি। তাঁর মতে, দলের বর্তমান নেতৃত্ব এখন ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছে, যা তাঁর রাজনৈতিক আদর্শের পরিপন্থী। এ কারণেই তিনি এনসিপির সঙ্গে সকল রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তারেক রহমানের নেতৃত্বের প্রশংসা করে এই তরুণ নেতা বলেন, দেশের বর্তমান ক্রান্তিলগ্নে সবাইকে ধারণ করে রাষ্ট্র পরিচালনার সক্ষমতা একমাত্র তারেক রহমানেরই রয়েছে। তিনি লক্ষ্য করেছেন যে, যেখানে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো ধর্ম বা সাময়িক জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চাচ্ছে, সেখানে তারেক রহমান স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশ এবং কর্মসংস্থানের মতো মানুষের মৌলিক সমস্যার সমাধানে একটি স্বচ্ছ ও আধুনিক রূপরেখা (ক্লিয়ার ভিশন) জাতির সামনে উপস্থাপন করছেন। তারেক রহমানের এই দূরদর্শী ও বাস্তবসম্মত সমাধানমূলক দৃষ্টিভঙ্গিই তাঁকে বিএনপির প্রতি আকৃষ্ট করেছে বলে তিনি জানান।
আরশাদুল হক দেশের তরুণ প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, কোনো ধরনের হুজুগ বা পপুলিজমে প্রভাবিত না হয়ে দেশের সামগ্রিক স্বার্থ ও আগামীর মঙ্গলের কথা বিবেচনা করে তারেক রহমানের জনকল্যাণমূলক ভিশন বাস্তবায়নে সমর্থন জানানো উচিত। তারেক রহমানের ফিরে আসার এই দিনটিকে তিনি বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য এক আশীর্বাদ হিসেবে অভিহিত করেন। এনসিপি নেতাদের প্রতি তাঁর ব্যক্তিগত শুভকামনা থাকলেও রাজনৈতিকভাবে তিনি এখন থেকে তারেক রহমানের ভিশন বাস্তবায়নেই নিজের সমর্থন বজায় রাখবেন বলে নিশ্চিত করেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচনের ঠিক আগে এনসিপির মতো একটি উদীয়মান দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতার এই পদত্যাগ ও বিএনপির প্রতি প্রকাশ্য সমর্থন রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।