বিএনপির সংসদ সদস্যদের ছেড়ে দেয়া ছয় সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন আজ বুধবার। আসনগুলো হলো- ঠাকুরগাঁও-৩, বগুড়া-৪, বগুড়া-৬, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২। আসনগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪০ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে ১০টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী আছেন ২৩ জন, বাকি ১৭ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়েও ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হয়েছেন ছয়জন। বিএনপি ভোট বর্জনের আহ্বান জানালেও দলটির চার নেতা ভোট করছেন এই নির্বাচনে।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) জানিয়েছে, ছয়টি আসনে একযোগে আজ সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট নেয়া হবে। ছয় আসনের ৮৬৭ কেন্দ্রের সবগুলোতে ভোট নেয়া হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করে। গতকাল মঙ্গলবার আসনগুলোতে পৌঁছে দেয়া হয়েছে ইভিএম মেশিনসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের নির্বাচনী সরঞ্জাম। নিজেদের প্রথম সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে ব্যবহার করলেও এবার ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা ব্যবহার করছে না ইসি।
সংসদীয় আসনগুলোতে সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্ন ভোট আয়োজনের সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে ভোট হবে আশাবাদ জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেন, ‘সুষ্ঠু ভোটের জন্য সব প্রস্তুতি আছে। কেবল সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা করিনি। বাকি সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সুষ্ঠু-সুন্দর নির্বাচন করার জন্য যা যা দরকার, আমরা সব করেছি। ভোটকেন্দ্রে নিরবচ্ছিন্নভাবে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ভোট চলবে। ইভিএমে ভোট দেয়ার জন্য ভোটার এডুকেশন যথেষ্ট করা হচ্ছে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২
ছয় আসনের উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই নানা ধরনের চমক দেখাচ্ছে এই আসনটি। বিএনপির যে সংসদ সদস্যের পদত্যাগে আসনটি শূন্য হয়েছে, সেই উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়াই আবার দল থেকে পদত্যাগ করে এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে চমকে দেন সবাইকে। পরে দল তাকে বহিষ্কার করে। এদিকে এই আসনে আওয়ামী লীগ কোনো প্রার্থী দেয়নি, শরিক দলগুলোর কোনো প্রার্থীকে সমর্থনও দেয়নি। বরং প্রতীক বরাদ্দের পর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাই আব্দুস সাত্তারের নির্বাচনী প্রচারণা এগিয়ে নিয়ে গেছেন। দলটির কেন্দ্রীয় নেতারাও তার পক্ষে জনসভা করেছেন।
এদিকে নির্বাচনের পাঁচ দিন আগে গত শুক্রবার এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা আবু আসিফ আহমেদ নিখোঁজ হয়েছেন বলে অভিযোগ তোলে তার পরিবার। এখন পর্যন্ত তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ফোনালাপে তার নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি সাজানো কি না, সে প্রশ্ন উঠেছে। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না করায় সে সন্দেহ আরও জোরালো হয়। শেষ পর্যন্ত ভোটের আগের দিন গতকাল দুপুরে আবু আসিফের স্ত্রী মেহেরুন্নিছা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তার স্বামীর নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। এ ঘটনায় নির্বাচন কমিশন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তবে সার্বিক ঘটনা বিশ্লেষণে আবু আসিফ আত্মগোপনে থাকতে পারেন বলেও নির্বাচন কমিশন মনে করছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান।
এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৩১৩ জন। মোট ভোটকেন্দ্র ১৩২টি। আসনটিতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী পাঁচজন। আব্দুস সাত্তার ও আবু আসিফ ছাড়া বাকি প্রার্থীরা হলেন জাতীয় পার্টির আব্দুল হামিদ ভাসানী (লাঙ্গল) ও জাকের পার্টির প্রার্থী জহিরুল হক (গোলাপ ফুল) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জাতীয় পার্টির সাবেক দুই মেয়াদের সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা (আপেল)। জিয়াউল হক অবশ্য প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময়সীমা শেষ হওয়ার পর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
এই আসনে পুলিশ, আনসার সদস্য ও গ্রাম পুলিশের পাশাপাশি চার প্লাটুন বিজিবি ও র্যাবের ১০টি টিম আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবে। এ ছাড়া ১৭টি ইউনিয়নের প্রতিটিতে একজন করে মোট ১৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও দুজন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ও সংক্ষিপ্ত বিচারকাজ করবেন। এই আসনের উপনির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম বলেন, ‘আবু আসিফকে খুঁজে বের করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ করতে সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।’
ঠাকুরগাঁও-৩
এই আসনে মোট ৩ লাখ ২৪ হাজার ৭৪১ জন ভোটার। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৫৯ হাজার ৫৩১ জন, পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৬৫ হাজার ২১০ জন। মোট ভোটকেন্দ্র ১৩৮টি। এর মধ্যে ৭২টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ, যদিও নির্বাচন কমিশন এই কেন্দ্রগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ না বলে গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিহিত করছে।
এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ছয় প্রার্থী। দলীয় প্রার্থীরা হলেন ওয়ার্কার্স পার্টির ইয়াসিন আলী (হাতুড়ি), জাতীয় পার্টির হাফিজ উদ্দীন আহমেদ (লাঙ্গল), জাকের পার্টির এমদাদুল হক (গোলাপ ফুল), বাংলাদেশ ন্যাশনাল পিপলস পার্টির সাফি আল আসাদ (আম), বাংলাদেশ ন্যাশনাল ফ্রন্টের (বিএনএফ) সিরাজুল ইসলাম (টেলিভিশন)। এই আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কোনো প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়নি। একতারা প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোপালচন্দ্র রায় দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ‘বিদ্রোহী’ হিসেবে ভোট করছেন এই আসনে।
এ আসনে প্রতিটি কেন্দ্রে চারজন অস্ত্রধারী পুলিশ, দুজন নারী পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েন থাকবেন। এ ছাড়া সাত প্লাটুন বিজিবি সদস্য, ১৮ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচনী এলাকা নজরদারিতে রাখবেন। আঞ্চলিক রিটার্নিং কর্মকর্তা জি এম সাহাতাব উদ্দীন বলেন, ‘নির্বাচনী পরিবেশ ঠিক রাখতে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সাদা পোশাকেও পর্যাপ্তসংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন থাকবে।
বগুড়া-৪ ও বগুড়া-৬
বগুড়া-৪ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ২৮ হাজার ৪৬৯ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৬৫ হাজার ৪৩৪ জন, পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৬৩ হাজার ৩৫ জন। এই আসনের ১১২টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ৭৯টি। কেবল কাহালুতেই ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ৫৬টি।
এই আসনে ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৯ জন। এ আসনে আওয়ামী লীগ নিজে প্রার্থী না দিয়ে সমর্থন দিয়েছে ১৪ দলীয় জোট থেকে জাসদ প্রার্থী রেজাউল করিম তানসেনকে (মশাল)। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির শাহীন মোস্তফা কামাল (লাঙ্গল), বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. তাজ উদ্দীন মণ্ডল (ডাব) ও জাকের পার্টির মো. আব্দুর রশিদ সরদার (গোলাপ ফুল) রয়েছেন দলীয় প্রার্থী। পাঁচ স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে কুড়াল প্রতীকে নির্বাচন করছেন সাবেক বিএনপি নেতা কামরুল হাসান সিদ্দিকী জুয়েল, ট্রাক প্রতীকে নির্বাচন করছেন সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা মো. মোশফিকুর রহমান কাজল। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আরও আছেন মো. ইলিয়াস আলী, (কলার ছড়ি), মো. গোলাম মোস্তফা, (দালান) ও আলোচিত আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম, (একতারা)।
এদিকে বগুড়া-৬ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ১০ হাজার ৭৪৩ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ২ লাখ ৮ হাজার ২৫৯ জন, পুরুষ ভোটার ২ লাখ ২ হাজার ৪৮৪ জন। এই আসনের ১৪৩টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৭৯টিই ঝুঁকিপূর্ণ।
এই আসনে দলীয় প্রার্থী ছয়জন হলেন- আওয়ামী লীগের রাগেবুল আহসান রিপু (নৌকা), জাসদের মো. ইমদাদুল হক ইমদাদ (মশাল), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মো. নজরুল ইসলাম (বটগাছ), জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম ওমর (লাঙ্গল), জাকের পার্টির মোহাম্মদ ফয়লাস বিন শফিক (গোলাপ ফুল) ও গণফ্রন্টের মো. আফজাল হোসেন (মাছ)। পাঁচ স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ আব্দুল মান্নান (ট্রাক) ও বিএনপির ‘বিদ্রোহী’ সরকার বাদল (কুড়াল)। এ আসনেও প্রার্থী হয়েছেন হিরো আলম। এ ছাড়া মাছুদার রহমান হেলাল (আপেল) ও রাকিব হাসান (কুমির) স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন।
বগুড়া জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, ‘দুই আসনের উপনির্বাচনে তিনজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ৩৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবেন। পাশাপাশি মোতায়েন থাকবে ১৬ প্লাটুন বিজিবি। এ ছাড়া ভোটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সাড়ে ৪ হাজার নিরাপত্তাকর্মী কাজ করবেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৫ হাজার ৪৫০ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ২ লাখ ৪ হাজার ২৮০ জন, পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১ হাজার ১৭০ জন। আসনটির ১৮০টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের সংখ্যা ১২২।
নাচোল, গোমস্তাপুর ও ভোলাহাট উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনে দলীয় প্রার্থী চারজন, স্বতন্ত্র দুজন। দলীয় প্রার্থীরা হলেন- আওয়ামী লীগের মু. জিয়াউর রহমান (নৌকা), জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক (লাঙ্গল), জাকের পার্টির গোলাম মোস্তফা (গোলাপ ফুল) ও বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) নবীউল ইসলাম (টেলিভিশন)। এ আসনে স্বতন্ত্র দুজনই আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী। তারা হলেন- মোহাম্মদ আলী সরকার (আপেল) ও খুরশিদ আলম বাচ্চু (মাথাল)।
অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ১১ হাজা ৪৯৫ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ২ লাখ ৫ হাজার ৬১২ জন, পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৫ হাজার ৮৮৩ জন। আসনটির ১৭২টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৯৭টি।
এই আসনে প্রার্থী মাত্র তিনজন। তাদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের আব্দুল ওদুদ (নৌকা), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) কামরুজ্জামান খান (টেলিভিশন) এবং আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী সামিউল হক লিটন (আপেল)।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খান জানান, ৩৩ জন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন।
[প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন দৈনিক বাংলার ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঠাকুরগাঁও, বগুড়া ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি]
রাজধানীর মিরপুরে পল্লবী কমিউনিটি সেন্টারে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে সাংবাদিকদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে।
শুক্রবার এ ঘটনায় বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভির বিশেষ প্রতিনিধি ইমরুল আহসান জনিসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। এসময় কয়েকটি ক্যামেরাও ভাঙচুর করা হয়েছে।
প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানায়, ইফতার অনুষ্ঠানে নেতা-কর্মীদের সমাগমে সাংবাদিকদের দাঁড়ানোর জায়গা ছিল না। সাংবাদিকরা একপাশে দাঁড়িয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করার চেষ্টার মধ্যে কয়েকজন কর্মীর সঙ্গে বাক বিতণ্ডাঢ জড়িয়ে পড়ে। পরে বিএনপিকর্মীরা আক্রমণ করে। এতে কয়েকজন সাংবাদিক আহত হয়। পরে মঞ্চ থেকে নেতারা এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সবাইকে শৃঙ্খলার মধ্যে আসতে হবে। আওয়ামী লীগের দালালরা অনুষ্ঠানে ঢুকে বিশৃঙ্খলা করেছে। সরকারের দালালরা গণমাধ্যমের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছে, বিশৃঙ্খলা করছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিতি সাংবাদিকরা বলছেন, বিএনপি নেতা-কর্মীদের হামলায় কয়েকজন ক্যামেরাপারসন আহত হয়েছেন। দুটি টেলিভিশনের ক্যামেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইফতার আয়োজকদের একজন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক বলেন, একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে এর সমাধান করা হয়েছে। সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমাও চাওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলী, সম্পাদকমণ্ডলী, সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর–দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যৌথসভা আগামী শনিবার অনুষ্ঠিত হবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলীয় কার্যালয়ে বেলা ১১টায় এ সভা অনুষ্ঠিত হবে।
শুক্রবার আওয়ামী দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।
বিজ্ঞপ্তিতে সাংগঠনিক নির্দেশক্রমে সকল নেতাদের যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।
দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কূটনীতিকদের নাক গলানো সমীচিন নয় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, ‘প্রয়োজনে কূটনীতিকদের আচরণ সম্পর্কিত ভিয়েনা কনভেনশন তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হবে। আমাদের বাজেটের জন্য ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে কারো দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াই না। বরং আমাদের সাহায্য দেয়ার জন্য তারা অর্থের ঝুলি নিয়ে আমাদের কাছে আসে এখন। আমাদের খাটো করার সময় চলে গেছে।’
শুক্রবার চট্টগ্রাম নগরীর দেওয়ানজী পুকুর পাড়ের বাসায় সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এসব কথা বলেন তিনি।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অব্যাহতভাবে দেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে, দারিদ্রতা কমছে, দেশের সমৃদ্ধির সঙ্গে প্রতিটি মানুষের সমৃদ্ধি এবং স্বচ্ছলতা এসেছে। বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশের এ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অনেকের পছন্দ হয় না। সেজন্য দেখা যায়, কিছু কিছু পত্রিকায় উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে নেগেটিভ রিপোর্ট করা হয়। বিদেশ থেকে চিহ্নিত ব্যক্তি বিশেষ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু এতে বাংলাদেশকে দমিয়ে রাখা যায়নি।’
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও বাংলাদেশের দারিদ্রের হার কমেছে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বমন্দা পরিস্থিতির মধ্যে যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দারিদ্রতা হচ্ছে ১৭ শতাংশ, সেখানে বাংলাদেশের হার ১৬ শতাংশে নেমে এসেছে।’
হাছান মাহমুদ আরও বলেন, ‘গত পরশুদিন আমাদের পরিকল্পনা মন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন, ২০০৯ সালে আমরা যখন সরকার গঠন করি, তখন আমাদের দারিদ্রসীমার নিচে বাস করা মানুষের সংখ্যা ছিল ৪১ শতাংশ, কিছুদিন আগে সেটা কমে ২০ শতাংশে নেমেছিল। এই করোনা মহামারি এবং বিশ্বমন্দা পরিস্থিতির মধ্যে এখন সেটি কমে ১৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দারিদ্রতা হচ্ছে ১৭ শতাংশ।’
তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আইএমএফ-এর রিপোর্ট অনুযায়ী এই করোনা মহামারির মধ্যে আমাদের মাথাপিছু আয় ভারতকে ছাড়িয়েছে। ২০০৯ সালে যখন আমরা সরকার গঠন করি, তখন আমাদের অর্থনীতির আকার ছিল পৃথিবীর ৬০তম অর্থনীতির দেশ, এখন আমরা জিডিপিতে পৃথিবীর ৩৫তম অর্থনীতির দেশ। গত ১৪ বছরে আমরা ২৫টি দেশকে অতিক্রম করেছি। সেই ২৫টি দেশের মধ্যে মালয়েশিয়ার অর্থনীতিও আছে। পিপিপিতে আমরা পৃথিবীর ৩১তম অর্থনীতির দেশ।’
মন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজকে করোনা মহামারি এবং বিশ্ব মন্দা পরিস্থিতির মধ্যেও দেশ যেভাবে এগিয়ে চলেছে, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি যেভাবে অব্যাহত আছে, এটি পৃথিবীর বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা প্রশংসা করছে। সম্প্রতি ব্লুমবার্গ একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, সেখানে তারা বলেছে, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং করোনার মধ্যেও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখায় আগামী নির্বাচনেও জননেত্রী শেখ হাসিনা জয়লাভের সম্ভাবনা এবং তিনি চতুর্থ মেয়াদের মতো নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ব্লুমবার্গ এটির কারণ উল্লেখ করেছেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যেভাবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এসেছে এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা যেভাবে তিনি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন, সেই কারণেই তিনি চতুর্থ বারের মতো নির্বাচিত হবার উজ্জ্বল সম্ভাবনা।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আজকে বিশ্ব মন্দা পরিস্থিতির মধ্যে যেখানে ইউকে এবং কন্টিনেন্টাল ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পণ্যের সংকট হয়েছে। আমাদের দেশে কোনো পণ্যেও সংকট হয়নি। ইউরোপের সুপার মার্কেটে এক লিটারের বেশি ভোজ্যতেল ছয়টার বেশি ডিম কিনতে দেয়া হয় না একসঙ্গে, কারণ সেখানে পণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্বমন্দা পরিস্থিতির মধ্যে আমাদের দেশে পণ্যের মূল্য বেড়েছে, কিন্তু পণ্যের সংকট তৈরি হয়নি। এখানেই হচ্ছে তাদের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমাদের সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে এবং তা অব্যাহত রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর। আমরা মনে করি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সঙ্গে রাষ্ট্রের বিকাশ, গণতন্ত্রের বিকাশ জড়িত, গণতান্ত্রিক রীতিনীতি চর্চার আমাদের যে সংস্কৃতি সেটিকে আরও গভীরে প্রোতিত করা নির্ভর করে। কিন্তু একই সঙ্গে আমাদের সম্মিলিত দায়িত্বশীলতাও আছে। স্বাধীনতার নামে যদি আমরা কেউ অপসাংবাদিকতা করি, তাহলে দেশের আপামর জনগণ এবং সাংবাদিক সমাজ নিশ্চয় সেটিকে সমর্থন করে না। সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে সাংবাদিকতার নামে রাজনীতি করা সেটি যে সমীচিন নয়, সেটিও নিশ্চয়ই আপনারা আমার সঙ্গে একমত হবেন।’
প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানের গ্রেপ্তার বিষয়ে আমেরিকাসহ ১২টি দেশ বিবৃতির বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘১২টি দেশের দূতাবাসের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি তাদের ওয়েবসাইটে দেয়া হয়েছে। ভারতের দিকে তাকান, সেখানে কয়েকদিন ধরে বিবিসির কার্যালয়ে তল্লাশি করা হয়েছে, সেখানে কী এ ধরনের বিভিন্ন দেশ উদ্বেগ প্রকাশ, বিবৃতি সেখানে দিয়েছে? দেয়া হয়নি। কারণ ভারত বড় দেশ, ভারতের শক্তি সামর্থ বেশি, সেজন্য সেখানে সেই সাহস দেখাতে পারেনি।’
কূটনীতিকদের সঙ্গে ইফতারে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে কূটনীতিকদের সহায়তা কামনা করেছেন। এই বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমরাতো প্রথম থেকেই বলে আসছি তারা জনগণের কাছে যায় না, তারা বিদেশি কূটনীতিকদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে পদলেহন করে। আমি আশা করেছিলাম তারা দুঃস্থ মানুষের সঙ্গে ইফতার করবে, সেটি না করে ফাইভ স্টার হোটেলে বসে কূটনীতিকদের সঙ্গে ইফতার করেছে। সেখানে গিয়ে আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের জন্য অনুনয় বিনয় করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আসলে দোষটা কূটনীতিকদের চেয়েও আমাদের অনেকের অনেক বেশি। কারণ আমরা গিয়ে তাদের হাতে পায়ে ধরি একটু কিছু বলার জন্য। আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য। এটি আসলে দেশবিরোধী এবং দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের শামিল।’
এ সময় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহাতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম, দক্ষিণ জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সফর আলী উপস্থিত ছিলেন।
গণতন্ত্রের জন্য ‘স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের’ বিরুদ্ধে দেশের মানুষ লড়াই করছে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘এই আন্দোলন করতে গিয়ে দলের অসংখ্য নেতা কারাগারে রয়েছেন, গুম হয়েছেন।’
রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইফতার অনুষ্ঠানে কূটনীতিকদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব। কূটনীতিকদের সম্মানে দলের পক্ষ থেকে এ ইফতারের আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দলের ৩৫ লাখ নেতাকর্মী মিথ্যা ও ভুয়া মামলায় হয়রানিতে আছেন। এই স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের আমলে বিএনপি নেতা-কর্মীরা গুম হয়ে যাচ্ছেন। হাজারো বিএনপি নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে অংশ নিয়ে স্বৈরাচার সরকারের দমন-পীড়নে সম্প্রতি দলের ১৭ নেতা-কর্মী মারা গেছেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের এই আন্দোলন’।
দুঃখভরা হৃদয়ে রোজা পালন করছেন জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সারা বিশ্বের মুসলিমরা এ মাসে রোজা পালন করে থাকেন। এ বছর আমরা রোজা করছি দুঃখভরা হৃদয় নিয়ে। কারণ, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদের সঙ্গে নেই।’
বিএনপির ইফতারে অংশ নেয়ায় কূটনীতিকদের ধন্যবাদ জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘ইফতারের আগে আমরা সারা বিশ্বের মানুষের শান্তি, সমৃদ্ধি কামনা করে এবং বিশেষ করে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী সাধারণ মানুষের জন্য আমরা দোয়া করব।’
বিএনপির ইফতারে অংশ নেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস, যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন, রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের আলেক্সান্ডার মানতায়েস্কি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ডেপুটি রাষ্ট্রদূত ব্রেন স্পিনার, ইরানের রাষ্ট্রদূত ম্যানসোল শ্যাভোসি, পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইফরান আহমেদ সিদ্দিক, জার্মান রাষ্ট্রদূত আশিম টরস্টার, ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসূফ এস রামাদান, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মার্গারিট বার্নার্ড, স্পেনের রাষ্ট্রদূত ফ্রান্সিসকো দে আসিস বেনিতেজ সালাস, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ড্রা বার্গ ভন লিন্ডে, ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত হিরু হার্টানটো সুবলো, ভুটান রাষ্ট্রদূত রিনচেন কুয়েনসিল, কসভোর রাষ্ট্রদূত গুনার উরেয়া, নরওয়ে দূতাবাসের উপপ্রধান সিলিয়ে ফিনস ওয়ানবো, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কাউন্সিলর ফর পলিটিকাল অ্যান্ড ইকোনোমিক অ্যাফেয়ার্স স্কট এ ব্র্যান্ডন।
এদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে ইফতারে অংশ নেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডক্টর খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, সেলিমা রহমান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপি ভাইস-চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রমসহ অন্যরা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অভিযোগ করেছেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একটি পত্রিকার সুরে সুর মিলিয়ে ‘চাইল্ড এক্সপ্লয়টেশনের’ মতো ঘৃণ্য কাজকে নির্লজ্জ সমর্থন দিয়েছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে যা আওয়ামী লীগের প্রতি অন্ধবিদ্বেষ ও আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ।
বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের এ কথা বলেন।
বিবৃতিতে কাদের আরও বলেন, ‘বিএনপি কখনো এদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। যারা স্বাধীনতার ৫২ বছর পরেও দেশের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে, প্রকৃতপক্ষে তাদের মানসিকতা এখনো পরাধীনতার শৃঙ্খলে বন্দি! যখনই তারা ক্ষমতায় এসেছে জনগণ ও দেশের উন্নয়নের জন্য তারা কোনো কাজ করেনি।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে অর্জিত স্বাধীনতাকে অর্থবহ করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা নিরবচ্ছিন্নভাবে এ দেশের জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। একসময়ের ক্ষুধা-দারিদ্র্য মঙ্গা ও দুর্ভিক্ষপীড়িত বাংলাদেশ আজ সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নীত হয়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্যের ফলে বাংলাদেশ আজ বিশ্বসভায় এক বিশেষ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বে অর্জিত সক্ষমতার কারণেই দেশে কেউ আর না খেয়ে দিনাতিপাত করে না।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপির সময় দেশের অবস্থা কী ছিল মির্জা ফখরুল কী ভুলে গেছেন? তাদের শাসনামলে উত্তরবঙ্গে মঙ্গাপীড়িত মানুষ না খেতে পেরে কীভাবে ধুঁকে ধুঁকে মারা গেছে! বঙ্গবন্ধুকন্যার বহুমাত্রিক পদক্ষেপের ফলে দুর্বিষহ ক্ষুধার সেই অভিশপ্ত অন্ধকার থেকে মুক্তি পেয়েছে বাংলাদেশ। মির্জা ফখরুলরা তাদের সময়ের দুঃসহ ইতিহাস আড়াল করার জন্যই সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘করোনা মহামারির অভিঘাতের মধ্যে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতি একটি গভীর সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যার প্রকোপে সারা পৃথিবীতে আশঙ্কাজনক হারে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। মূল্যস্ফীতির চাপে বাংলাদেশের জনগণও কিছুটা কষ্টে আছে। মানুষের এই কষ্ট লাঘবের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের জনবান্ধব ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির পাশাপাশি সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সরকার যখন বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলা করে জনগণের ভাগ্যোন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে, তখনই সংকটকে পুঁজি করে কতিপয় চিহ্নিত মহল সরকারের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধভাবে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে।’
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু বলেছেন, ‘আমাদের সংবিধানের বিরুদ্ধে যারা কথা বলে, তারা জাতীয় শত্রু। এ নিয়ে (সংবিধানের বিরুদ্ধে কথা বললে) যে আইন রয়েছে, সেই আইনে তাদের কেন গ্রেপ্তার করা হয় না? যারা দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব দেশের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলে, সেই আইনে কেন তাদের গ্রেপ্তার করা হয় না? কেন তাদের সেই আইনে শাস্তি দেয়া হয় না? এটাই আজ আমাদের জিজ্ঞাসা। সেই আইন যথাযথ প্রয়োগ করে জনগণের সামনে স্বাধীনতাবিরোধীদের শাস্তি দেয়া হোক।’
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে আমু এসব কথা বলেন।
আমির হোসেন আমু বলেন, ‘আমরা ১৪ দল স্বাধীনতার পক্ষে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে এবং বঙ্গবন্ধু রচিত সংবিধান পক্ষে কাজ করে আসছি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অবিচলভাবে জাতীয় চার মূলনীতির ভিত্তিতে আমরা এগিয়ে যাবো।’
আমির হোসেন আমু আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার পর কে ক্ষমতায় এল? খন্দকার মোস্তাক। আওয়ামী লীগ নেতা, অর্থাৎ একটা ধারণা দেয়া হলো আওয়ামী লীগপন্থিরাই ক্ষমতায় আছে। তার আড়াই মাস পর ক্ষমতায় এল জিয়াউর রহমান। পরিচয় কী? মুক্তিযোদ্ধা। কর্মকাণ্ড কী? কর্মকাণ্ড হচ্ছে অমুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূল্যবোধকে হত্যা করে এই দেশে পাকিস্তানী রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা। সেই লক্ষ্যে সেদিন ১৫ আগস্ট সংঘটিত করে এদের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।’
আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন— ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, জাতীয় পার্টি জেপির মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাৎ হোসেন, গণআজাদী লীগের সভাপতি এস কে সিকদার, বাসদের আহ্বায়ক রেজাউর রশিদ খান, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সভাপতি জাকির হোসেন ও ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন।
প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা ও সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তারসহ গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপের সমালোচনা করে বিবৃতি দিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি। বৃহস্পতিবার জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন এক বিবৃতিতে উদ্বেগ জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘জনগণকে সহিংসতা থেকে বা বেআইনি আচরণ থেকে রক্ষা করতে না পারাটা একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। আরও একটা বৈশিষ্ট্য যা ব্যর্থ রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তা হলো- সরকার কর্তৃক সংবিধান, আইন-কানুন, বিধি-বিধান অহরহ লঙ্ঘন করা; মিথ্যা তথ্য, দুর্নীতি এবং অর্থপাচারের কারণে সরকারি দলের ওপর সে আইন প্রয়োগ না করে, ভিন্ন মতের ওপর অব্যাহতভাবে আইনের অপপ্রয়োগ করা। এসবই গণতন্ত্র ও মত প্রকাশের ওপর আক্রমণের শামিল।’
সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তারের ৩০ ঘণ্টা পর আদালতে হাজির করা সংবিধানের সরাসরি লঙ্ঘন। সরকার ক্ষমতার দম্ভে সংবিধান মেনে চলাকে একেবারেই অপ্রয়োজনীয় করে তুলেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তার অজুহাতে গ্রেপ্তারের মাত্রা ও ব্যপ্তি আরও দৃশ্যমান হওয়ায়, আভ্যন্তরীণ ও ভূ-রাজনীতিতে সরকার বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বলেন বিবৃতি দাতারা।
বিবৃতিতে নেতারা অবিলম্বে প্রথম আলোর সম্পাদকসহ অন্যান্যদের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেপ্তার সাংবাদিকদের মুক্তির দাবি জানান।
প্রতিবারের মতো এবারও পবিত্র রমজান মাসে ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সম্মানে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে এ ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান দৈনিক বাংলাকে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে কূটনীতিকদের সম্মানে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেছে বিএনপি। ইফতার মাহফিলে রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের সঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, দলের জ্যেষ্ঠ নেতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অংশ নেবেন।
এক-এগারোর কুশীলবরা দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, ‘এক-এগারোর কুশীলবরা এবং বিএনপি একজোট হয়ে ষড়যন্ত্রের পাঁয়তারা করছে। কিন্তু এতে কোনো লাভ হবে না, বারবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয় না। বাংলাদেশে সেটি কখনো হবে না।’
বুধবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। জিল্লুর রহমান পরিষদ আয়োজিত এই সভায় সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এবং প্রয়াত জিল্লুর রহমানের মেয়ে তানিয়া রহমান বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন।
হাছান মাহমুদ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘এক-এগারোর পর দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার ক্ষেত্রে প্রয়াত জিল্লুর রহমান অসাধারণ ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হয়েছিলেন বলেই অনেক চাপ, রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে শেখ হাসিনাকে মুক্ত করার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, সর্বোপরি দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন। সংকটকালে ধৈর্য্যশীল ও অবিচল থেকে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছার শিক্ষা জিল্লুর রহমানের কাছ থেকে আমরা পেয়েছি। দেশের ইতিহাসে, দেশের রাজনীতির ইতিহাসে একজন ভালো মানুষ এবং অজাতশত্রু রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকবেন।’
বিএনপির উদ্দেশ্যে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এক-এগারোর কুশীলবরা আবার দেশে-বিদেশে সক্রিয় হয়েছে। তারা আবার বিশেষ ধরনের সরকারের স্বপ্ন দেখছে। বিএনপিও তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। কারণ বিএনপি বুঝতে পেরেছে, নির্বাচনে তাদের কোনো আশা নাই। ২০০৮ সালের নির্বাচনে সর্বশক্তি নিয়ে তারা সিট পেয়েছিল ২৯টা। ২০১৪ সালে নির্বাচন থেকে পালিয়ে গিয়েছিল, ২০১৮ সালের নির্বাচনে ডান-বাম, অতিডান-অতিবাম-তালেবান সবাইকে নিয়ে, ড. কামাল হোসেনের মতো মানুষকে হায়ার করেও মহিলা আসনসহ সিট পেয়েছিল মাত্র ৭টি। গত ১৪ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে উন্নয়ন অগ্রগতি হয়েছে এতে জনগণ তাকে যে আবার নির্বাচিত করবে। বিএনপির জ্বালাও-পোড়াও, মানুষ পোড়ানোর অপরাজনীতির কারণে মানুষ যে তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে সেটিও তারা অনুধাবন করতে পেরেছে।’
বিএনপি দেশে গণ্ডগোল লাগাতে চায় উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এক-এগারোর কুশীলবরা, বিএনপি আর বিশেষ পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিসহ সবাই এক জোট হয়ে দেশে একটি গণ্ডগোল লাগানোর জন্য আন্তর্জাতিকভাবে সক্রিয় হয়েছে, কিন্তু সেটি বাংলাদেশের মানুষ আর কখনো হতে দেবে না। আগামী নির্বাচন যথাসময়ে এবং সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের অধিনে অনুষ্ঠিত হবে। সমস্ত সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশের মতো আমাদের দেশেও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন, তার সরকার নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করবে।’
অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্মৃতিচারণ করেন এবং তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন। তানিয়া রহমান তার বাবার আত্মার শান্তির জন্য সবার কাছে দোয়া চান। জিল্লুর রহমান পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. আক্তারুজ্জামান খোকার সভাপতিত্বে এবং রোকন উদ্দীন পাঠানের সঞ্চালনায় আওয়ামী লীগ নেতা এম এ করিম, অ্যাডভোকেট এ বি এম বায়েজিদ, মুক্তিযোদ্ধা হারুন-অর-রশিদ বীরপ্রতীক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহসভাপতি মানিক লাল ঘোষ সভায় বক্তব্য দেন।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে কোনো আলোচনায় যাবে না বিএনপি। দলের নেতারা মনে করেন, নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পযন্ত ইসির সঙ্গে আলোচনায় যাওয়া অর্থহীন। এ কারণে ইসির সংলাপের আহবানে সাড়া দেয়নি দলটি।
রাজধানীর গুলশানে বুধবার দুপুরে বিএনপি চেয়ারপারসনের কাযালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন হয়। সেখানে দলের পক্ষ থেকে এই অবস্থানের কথা জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গত মঙ্গলবার দুপুরে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সভা হয়। সে সভায় চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ইসির সঙ্গে কোনো আলোচনায় যাবে না বিএনপি- এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ভার্চুয়ালি হওয়া এ সভায় দলের পক্ষ থেকে সাতটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিএনপি মনে করে, বর্তমানের মূল রাজনৈতিক সংকট নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কোন আলোচনা অথবা সংলাপ ফলপ্রসূ হবে না এবং তা হবে অর্থহীন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের পক্ষে বিএনপি মহাসচিবকে পাঠানো চিঠির বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় আলোচনা হয়। সে চিঠিতে বিএনপিকে আনুষ্ঠানিক না হলেও অনানুষ্ঠানিক আলোচনা ও মতবিনিময়ের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়।
এ নিয়ে দলের পক্ষ থেকে সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ‘যেহেতু মূল রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানের কোন সম্ভাবনা নির্বাচন কমিশন প্রস্তাবিত আলোচনা ও মতবিনিময়ে সম্ভব নয় সে কারনে বিএনপি এই প্রস্তাব গ্রহণ করতে পারছে না। পত্র পাঠানোর জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানানো হয়।’
বিএনপি মনে করে, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে যে নির্বাচন কমিশন স্বাধীন নয়। ইচ্ছা থাকলেও নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভাবে অনুষ্ঠানের ইসির ক্ষমতা নেই।
বিএনপির সভায় নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আলোচনা হয়। বিএনপি মনে করে, এই জনবিচ্ছিন্ন সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। সরকারি দলের ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ও এক শ্রেণির কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণেই নিত্যপণ্যের দাম কমানোর কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। অথচ সরকারের মন্ত্রী এবং শাসক দলের নেতারা জিনিসপত্রের দাম জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যেই আছে বলে জনগণের সঙ্গে মসকরা ছাড়া আর কিছু নয়। সরকার এ ব্যাপারে উদাসীন।
বিএনপি ইতিমধ্যে অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে দেশব্যাপী কর্মসূচি নিয়েছে। সভায় আগামী ১ এপ্রিল থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত মহানগর, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে গৃহীত মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি যথাযথভাবে পালনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল শাখাকে অনুরোধ জানানো হয়।
গত ১৭ মার্চ রাষ্ট্রীয় উড়োজাহাজ সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ই-মেইল সার্ভার দখলে নেয় হ্যাকাররা। বিষয়টি নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় আলোচনা হয়। এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বিএনপি নেতারা মনে করেন, ডিজিটাল সিকিউটিরি মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর সাইবার নিরাপত্তা রক্ষা করতে ব্যর্থ হচ্ছে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান গুলোর আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করণে চূড়ান্তভাবে এ সরকার ব্যর্থ হয়েছে। এর আগে ২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি সাইবার আক্রমণের কবলে পড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরির ঘটনা এখনও পর্যন্ত কোন সুরাহা করতে না পারা সরকারের ব্যর্থতা। এতে কোন প্রভাবশালী মহলের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় নওগাঁয় র্যাবের হেফাজতে ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের অফিস সহকারী সুলতানা জেসমিনের (৪৫) মৃত্যুর ঘটনায় নিন্দা জানানো হয়। বিএনপি মনে করে, সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে একজন নারীকে কোন সুনির্দিষ্ট মামলা ছাড়াই তুলে নেয়া এবং ফলশ্রুতিতে মৃত্যু আবারও প্রমাণ করে, এই সরকারের অধীনে কর্মরত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেই চলেছে। এ ঘটনা অবিলম্বে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত তথ্য জনসম্মুখে উপস্থাপনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি নেতারা।
যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিকদের দেশে বসবাসকারী নিকট আত্মীয়দের ওপর হামলা ক্রমাগতভাবে বেড়ে চলায় ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আল জাজিরার সাংবাদিক জুলকার নাইনসায়ের খান সামির ভাই মাহিনুর আহমেদ খানকে গত ১৭ মার্চ সাদা পোশাকধারী লোকেরা মারাত্মকভাবে কুপিয়ে আহত করে। এ ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান বিএনপি মহাসচিব।
স্থায়ী কমিটির সভা সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সভায় উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন আগেও বিফলে গেছে, আবারও বিফলে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ।
মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি অডিটোরিয়ামে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে সরকারি অনুদানে নির্মিত পূর্ণদৈর্ঘ্য শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘মাইক'র বিশেষ প্রদর্শনী অনুষ্ঠান শেষে তিনি এ মন্তব্য করেন।
গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হবে- বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেনের এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে হানিফ বলেন, ‘ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এখন অনেক সচেতন। তারা ইতিহাস জানে। তারা জানে এই বিএনপি একাত্তরের পরাজিত শক্তি পাকিস্তানের দোসর হিসেবে কাজ করছে। তারা স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাস করে না, দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান। আন্দোলন, গণ-অভ্যুত্থান করে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটানো যাবে না। কারণ তারা সরকারের পতন ঘটানোর ক্ষমতা রাখে না।’
মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘জাতির পিতার ৭ মার্চের ভাষণই মূলত স্বাধীনতার ডাক বা ঘোষণা। কারণ ভাষণের পরই গোটা বাঙালি জাতি যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছিল।’
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে কেন্দ্র করে নির্মিত 'মাইক' সিনেমার প্রশংসা করে হানিফ বলেন, ‘সিনেমাটি অসাধারণ হয়েছে। পঁচাত্তরের পরে ইতিহাসকে উল্টা পথে চলানোর চেষ্টা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর নাম-নিশানা মুছে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। যার কারণে প্রজন্ম ভুল ইতিহাস জানত সঠিক ইতিহাস জানত না। মাইক সিনেমায় সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। সিনেমাটি ইতিহাসের মাইলফলক, ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।’
এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর, শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক শামসুন্নাহার চাপা, কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, কবি অসীম সাহা, 'মাইক' চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী তানভিন সুইটি, অভিনেতা নাদের চৌধুরী, শিশুশিল্পী সানজিদ রহমান খান, আলী আবদুল্লাহ দাইয়ান ভূঁইয়াসহ চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট কলাকুশলীরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশে খুব শিগগিরই গণ-অভ্যুত্থান হবে বলে দাবি করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেছেন, ‘সরকারকে হঠাতে হলে একটি গণ-অভ্যুত্থান প্রয়োজন আছে। গণ-অভ্যুত্থান তখনই সফল হয় যখন সব পেশাজীবী সংগঠন এবং জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়। এই গণ-অভ্যুত্থান অতিদ্রুত বাংলাদেশে হবে। এই গণ-অভ্যুত্থানে সবাই যার যার অবস্থান থেকে অবদান রাখবেন।’
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) আয়োজিত ‘স্বাধীনতার ৫২ বছর ও বিপর্যস্ত স্বাস্থ্যব্যবস্থা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় খন্দকার মোশাররফ এসব কথা বলেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এই সরকার দেশের কোনো কিছুই মেরামত করতে পারবে না। গণতন্ত্র যারা হত্যা করেছে, তারা গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে পারে না। অর্থনীতিকে যারা হত্যা করেছে, তারা কখনো অর্থনীতি মেরামত করতে পারবে না। যারা স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করেছে, তারা কখনোই নতুনভাবে স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে সাজাতে পারবে না। অতএব তাদের যত দ্রুত বিদায় করা যায় তত দ্রুত জাতি এবং দেশের কল্যাণ হবে।’
বিগত ১৪ বছরে স্বাস্থ্যব্যবস্থার ব্যাপক বিপর্যয় হয়েছে উল্লেখ করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, স্বাস্থ্য খাতের এ দুরবস্থা হয়েছে মূলত দলীয়করণের ফলে। এখানে সাধারণ মানুষ সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কেউ কেউ আবার দলীয় পরিচয় দিয়ে যা ইচ্ছা তাই করে। এতে সাধারণ মানুষ তাদের কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন না। সরকারের জনগণের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা নেই।
সরকারি হাসপাতালে ডাক্তারদের প্রাইভেট চেম্বারের বিষয়ে নিন্দা জানিয়ে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘একটা সার্কুলার বেরিয়েছে যে, আগামী ৩০ মার্চ থেকে সরকারি হাসপাতালে বিকেল ৩টার পর থেকে ডাক্তাররা প্রাইভেট চেম্বার করতে পারবে। সরকারের দলীয় লোকদের পকেট ভারী করার জন্য সরকার এ ব্যবস্থা নিয়েছে। এতে জনগণের কোনো কাজে আসবে না।’
ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী ও ড্যাবের মহাসচিব ডা. মো আব্দুস সালাম।
বিএনপি জন্মলগ্ন থেকে আদর্শগতভাবে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্মের মূল চেতনা-বিরোধী রাজনীতি করে আসছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের এ মন্তব্য করেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাম্প্রতিক বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাতে এই বিবৃতি দেন তিনি।
‘আওয়ামী লীগ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর প্রেতাত্মা’- মির্জা ফখরুলের এমন মন্তব্যের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এটি শতাব্দীর সেরা কৌতুকই শুধু নয়, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তাদের (বিএনপি) চরম বিদ্বেষ ও আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ। আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি নেতারা এমন অসংলগ্ন প্রলাপ বকছে। মনে হয় রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তাদের বিবেক-বুদ্ধিই শুধু হারায়নি, চক্ষুলজ্জাও হারিয়ে গেছে।’
কাদের বলেন, ‘বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের ইতিহাসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ইতিহাস অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত ও আড়াই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে এ দেশের স্বাধীনতা অর্জন করে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘মির্জা ফখরুলের এই ধরনের অশালীন ও ধৃষ্টতাপূর্ণ মন্তব্য শুধু আওয়ামী লীগের সুমহান ঐতিহ্যকে অসম্মানিত করেনি বরং ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মত্যাগকেও অপমানিত করেছে। একই সঙ্গে তিনি সমগ্র জাতি ও জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তার রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। মির্জা ফখরুলের ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্য সমগ্র জাতির অনুভূতিতে চরমভাবে আঘাত হেনেছে। আমরা এ বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এ দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ঐতিহাসিক সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে প্রণীত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান।’
কাদের আরও বলেন, ‘পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামে যে নীতি-আদর্শ শক্তি ও প্রেরণা জুগিয়েছে, তা এ রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে সংবিধানে প্রতিফলিত হয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা।’
“মির্জা ফখরুল কিছুদিন আগে মন্তব্য করেছিলেন- ‘পাকিস্তান আমলে ভালো ছিলাম’। তাদের পাকিস্তান-প্রীতি নতুন কোনো বিষয় নয়। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান এ দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূ-লুণ্ঠিত করে গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠিয়ে পাকিস্তানি ভাবাদর্শে বাংলাদেশকে পরিচালিত করেছিল”, যোগ করেন কাদের।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ও যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ধারাকে পরিপুষ্ট করেছিল। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে খালেদা জিয়া একইভাবে পাকিস্তানি ভাবাদর্শে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে। ক্ষমতা দখলের নীলনকশা বাস্তবায়নে ১৯৯১ সালে জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের কাছ থেকে অর্থ সহায়তা নিয়েছিল বলে কয়েক বছর আগে সে দেশের আদালতে সংস্থাটির তৎকালীন প্রধান জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছিল।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এক জেনারেল আসিফ নাওয়াজ জানজুয়ার মৃত্যুতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়া শোকবার্তা পাঠিয়ে জাতির ঐতিহাসিক সংগ্রামের চেতনার মূলভিত্তিতে আঘাত করেছিলেন। বিএনপি চেতনা ও মননে একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও তার প্রতিভূ পাকিস্তানকে ধারণ করে।’
সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত পাকিস্তানের গণমাধ্যমেও বাংলাদেশ ও এদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় মিলিটারি ডিক্টেটর জিয়াউর রহমানের পকেট থেকে পাকিস্তানি দর্শনের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত বিএনপি, বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে এখনো মানসিকভাবে মেনে নিতে পারে নাই। এটা তাদের মানসিক দৈন্য।’
কাদের আরও বলেন, ‘আজকে যখন দেশের মানুষ স্বাধীনতার সুফল ভোগ করছে, তখনো বিএনপি নেতারা স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণকারী সমগ্র দেশবাসী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ ঐক্যবদ্ধ এবং তারা আগামীতে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবে, ইনশাআল্লাহ।’