বহুল আলোচিত নাইকো দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় করা মামলার অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। এর মধ্যে দিয়ে মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়েছে।
রোববার কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থিত ঢাকার ৯ নম্বর (অস্থায়ী) বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান আসামিদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ গঠন করেন। একই সঙ্গে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ২৩ মে দিন ধার্য করেন আদালত। এ দিন খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনজীবী মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার হাজিরা দেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মোশাররফ হোসেন কাজল ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী জিয়া উদ্দিন জিয়া দৈনিক বাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘মামলার আসামি খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সি এম ইউছুফ হোসাইন ও ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সেলিম ভূঁইয়া আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।’
বিএনপির আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার জানান, এ মামলায় আট জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়েছে।
কানাডার কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিপুল আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে দুদক এ মামলা করে।
তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক। দুদকের অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে সরকারে থাকাকালে খালেদা জিয়াসহ বেশ কয়েকজন ক্ষমতার অপব্যবহার করে কানাডার কোম্পানিটিকে অবৈধভাবে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের সুবিধা পাইয়ে দেন। অভিযোগপত্রে আসামিদের বিরুদ্ধে প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়।
মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন—বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, তৎকালীন মুখ্যসচিব কামাল উদ্দীন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সিএম ইউসুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান সেলিম ভূঁইয়া এবং নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।
এর মধ্যে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন ও বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান মারা যাওয়ায় তাদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
আসামিদের মধ্যে গিয়াসউদ্দিন আল মামুন বর্তমানে কারাগারে আছেন। নাইকো রিসোর্সেস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের সাবেক প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ পলাতক রয়েছেন। বাকিদের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত।
দুদকের করা অন্য দুই মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রাখা হয়।
ওই কারাগার থেকে পরে চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়াারপারসনকে হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায়ই সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়ে তিনি গুলশানের বাসায় যান।
রাজধানীর মিরপুরে পল্লবী কমিউনিটি সেন্টারে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে সাংবাদিকদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে।
শুক্রবার এ ঘটনায় বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভির বিশেষ প্রতিনিধি ইমরুল আহসান জনিসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। এসময় কয়েকটি ক্যামেরাও ভাঙচুর করা হয়েছে।
প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানায়, ইফতার অনুষ্ঠানে নেতা-কর্মীদের সমাগমে সাংবাদিকদের দাঁড়ানোর জায়গা ছিল না। সাংবাদিকরা একপাশে দাঁড়িয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করার চেষ্টার মধ্যে কয়েকজন কর্মীর সঙ্গে বাক বিতণ্ডাঢ জড়িয়ে পড়ে। পরে বিএনপিকর্মীরা আক্রমণ করে। এতে কয়েকজন সাংবাদিক আহত হয়। পরে মঞ্চ থেকে নেতারা এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সবাইকে শৃঙ্খলার মধ্যে আসতে হবে। আওয়ামী লীগের দালালরা অনুষ্ঠানে ঢুকে বিশৃঙ্খলা করেছে। সরকারের দালালরা গণমাধ্যমের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছে, বিশৃঙ্খলা করছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিতি সাংবাদিকরা বলছেন, বিএনপি নেতা-কর্মীদের হামলায় কয়েকজন ক্যামেরাপারসন আহত হয়েছেন। দুটি টেলিভিশনের ক্যামেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইফতার আয়োজকদের একজন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক বলেন, একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে এর সমাধান করা হয়েছে। সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমাও চাওয়া হয়েছে।
নাটোরে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি ও ইফতার মাহফিলের মঞ্চ ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে উপশহর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চু জানান, শনিবার বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি ও ইফতার মাহফিল উপলক্ষে উপশহর মাঠে মঞ্চ এবং প্যান্ডেল নির্মাণ করা হয়। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে বেশ কয়েকজন সরকারদলীয় লোকজন মোটরসাইকেলে করে এসে মঞ্চ ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান বলেন, বিএনপির তাদের অনুষ্ঠানে লোকজন জমায়েত করতে ব্যর্থ হবে এ আশঙ্কা থেকে নিজেরাই মঞ্চ ভাঙচুর করেছে এবং এর দায় আওয়ামী লীগের ওপর চাপাচ্ছে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)) নাছিম আহম্মেদ বলেন, ঘটনাটি শোনার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। কে বা কারা এটি করেছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গণতন্ত্রের জন্য ‘স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের’ বিরুদ্ধে দেশের মানুষ লড়াই করছে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘এই আন্দোলন করতে গিয়ে দলের অসংখ্য নেতা কারাগারে রয়েছেন, গুম হয়েছেন।’
রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইফতার অনুষ্ঠানে কূটনীতিকদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব। কূটনীতিকদের সম্মানে দলের পক্ষ থেকে এ ইফতারের আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দলের ৩৫ লাখ নেতাকর্মী মিথ্যা ও ভুয়া মামলায় হয়রানিতে আছেন। এই স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের আমলে বিএনপি নেতা-কর্মীরা গুম হয়ে যাচ্ছেন। হাজারো বিএনপি নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে অংশ নিয়ে স্বৈরাচার সরকারের দমন-পীড়নে সম্প্রতি দলের ১৭ নেতা-কর্মী মারা গেছেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের এই আন্দোলন’।
দুঃখভরা হৃদয়ে রোজা পালন করছেন জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সারা বিশ্বের মুসলিমরা এ মাসে রোজা পালন করে থাকেন। এ বছর আমরা রোজা করছি দুঃখভরা হৃদয় নিয়ে। কারণ, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদের সঙ্গে নেই।’
বিএনপির ইফতারে অংশ নেয়ায় কূটনীতিকদের ধন্যবাদ জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘ইফতারের আগে আমরা সারা বিশ্বের মানুষের শান্তি, সমৃদ্ধি কামনা করে এবং বিশেষ করে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী সাধারণ মানুষের জন্য আমরা দোয়া করব।’
বিএনপির ইফতারে অংশ নেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস, যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন, রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের আলেক্সান্ডার মানতায়েস্কি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ডেপুটি রাষ্ট্রদূত ব্রেন স্পিনার, ইরানের রাষ্ট্রদূত ম্যানসোল শ্যাভোসি, পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইফরান আহমেদ সিদ্দিক, জার্মান রাষ্ট্রদূত আশিম টরস্টার, ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসূফ এস রামাদান, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মার্গারিট বার্নার্ড, স্পেনের রাষ্ট্রদূত ফ্রান্সিসকো দে আসিস বেনিতেজ সালাস, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ড্রা বার্গ ভন লিন্ডে, ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত হিরু হার্টানটো সুবলো, ভুটান রাষ্ট্রদূত রিনচেন কুয়েনসিল, কসভোর রাষ্ট্রদূত গুনার উরেয়া, নরওয়ে দূতাবাসের উপপ্রধান সিলিয়ে ফিনস ওয়ানবো, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কাউন্সিলর ফর পলিটিকাল অ্যান্ড ইকোনোমিক অ্যাফেয়ার্স স্কট এ ব্র্যান্ডন।
এদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে ইফতারে অংশ নেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডক্টর খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, সেলিমা রহমান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপি ভাইস-চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রমসহ অন্যরা।
বাংলাদেশে খুব শিগগিরই গণ-অভ্যুত্থান হবে বলে দাবি করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেছেন, ‘সরকারকে হঠাতে হলে একটি গণ-অভ্যুত্থান প্রয়োজন আছে। গণ-অভ্যুত্থান তখনই সফল হয় যখন সব পেশাজীবী সংগঠন এবং জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়। এই গণ-অভ্যুত্থান অতিদ্রুত বাংলাদেশে হবে। এই গণ-অভ্যুত্থানে সবাই যার যার অবস্থান থেকে অবদান রাখবেন।’
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) আয়োজিত ‘স্বাধীনতার ৫২ বছর ও বিপর্যস্ত স্বাস্থ্যব্যবস্থা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় খন্দকার মোশাররফ এসব কথা বলেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এই সরকার দেশের কোনো কিছুই মেরামত করতে পারবে না। গণতন্ত্র যারা হত্যা করেছে, তারা গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে পারে না। অর্থনীতিকে যারা হত্যা করেছে, তারা কখনো অর্থনীতি মেরামত করতে পারবে না। যারা স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করেছে, তারা কখনোই নতুনভাবে স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে সাজাতে পারবে না। অতএব তাদের যত দ্রুত বিদায় করা যায় তত দ্রুত জাতি এবং দেশের কল্যাণ হবে।’
বিগত ১৪ বছরে স্বাস্থ্যব্যবস্থার ব্যাপক বিপর্যয় হয়েছে উল্লেখ করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, স্বাস্থ্য খাতের এ দুরবস্থা হয়েছে মূলত দলীয়করণের ফলে। এখানে সাধারণ মানুষ সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কেউ কেউ আবার দলীয় পরিচয় দিয়ে যা ইচ্ছা তাই করে। এতে সাধারণ মানুষ তাদের কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন না। সরকারের জনগণের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা নেই।
সরকারি হাসপাতালে ডাক্তারদের প্রাইভেট চেম্বারের বিষয়ে নিন্দা জানিয়ে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘একটা সার্কুলার বেরিয়েছে যে, আগামী ৩০ মার্চ থেকে সরকারি হাসপাতালে বিকেল ৩টার পর থেকে ডাক্তাররা প্রাইভেট চেম্বার করতে পারবে। সরকারের দলীয় লোকদের পকেট ভারী করার জন্য সরকার এ ব্যবস্থা নিয়েছে। এতে জনগণের কোনো কাজে আসবে না।’
ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী ও ড্যাবের মহাসচিব ডা. মো আব্দুস সালাম।
সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলায় গোপন বৈঠক থেকে বিএনপির আট নেতাকে আটক করেছে পুলিশ। গত সোমবার দিবাগত রাতে উপজেলার গোয়ালাডাঙ্গা ফুলবাড়ী মাঠ থেকে তাদের আটক করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
আটকরা হলেন শ্রীউলা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি সদস্য আব্দুল মালেক মল্লিক, আশাশুনি উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক শেখ শরিফুল আহছান টোকন, শ্রীউলা ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আক্তার হোসেন, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আক্তার হোসেন, সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি আল-আমিন হোসেন, বড়দল ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক মো. শরিফুল ইসলাম, বড়দল ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মো. লতিফ ও উপজেলা যুগ্ম সম্পাদক রবিউল আওয়াল ছোট।
আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) কর্মকর্তা মোমিনুল ইসলাম জানান, সোমবার দিবাগত রাতে গোয়ালাডাঙ্গা ফুলবাড়ী মাঠে জামায়াত-বিএনপির ২০-২৫ জন নেতা-কর্মী গোপন বৈঠক করছিল। এমন খবরে সেখানে পুলিশ অভিযান চালিয়ে আটজনকে আটক করতে সক্ষম হয়। বাকিরা বোমা ফাটিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে তিনটি অবিস্ফোরিত ককটেল, লাঠি এবং দা উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় আশাশুনি থানার এসআই মহিদুর রহমান বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন।
তবে আটক আব্দুল মল্লিকের ছোট ভাই অহিদ মল্লিক বলেন, ‘আমার বড় ভাই রাতে বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত আনুমানিক ২টার দিকে পুলিশ বাড়ি থেকে আমার ভাইকে আটক করে নিয়ে যায়। এ ছাড়া একই সময়ে ছাত্রদল নেতা আল-আমিন এবং আক্তার মেম্বারকে আটক করে নিয়ে যায়।’
উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মশিউল হুদা তুহিন বলেন, ‘তারা কোথাও মিটিং করছিল না। প্রত্যেকের বাড়ি থেকে তুলে এনে আটক দেখিয়েছে পুলিশ।’
যারা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের শাস্তি দেয়া হয়নি, তাই দেশে আবারও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার বিকেলে রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘মুক্তিযোদ্ধা গণ সমাবেশে’ বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন। জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল এ সমাবেশের আয়োজন করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নওগাঁয় র্যাব এক নারীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর তার মৃত্যু হয়েছে। ডাক্তার বলছে, নিহত ওই নারীর মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। যে র্যাবের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল, সেই র্যাবের বিরুদ্ধে আবারও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ উঠছে। নিষেধাজ্ঞার পর নাটকীয়ভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কমে গিয়েছিল, এখন তা আবার ঘটতে শুরু করছে। কারণ যাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে তাদের পুরস্কৃত করা হয়েছে। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।’
পাক হানাদার সরকারের সঙ্গে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের কোনো পার্থক্য নেই মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে যে সরকার অধিষ্ঠিত তা একাত্তরের পাক বাহিনীর প্রেতাত্মা। তারা সাধারণ মানুষের কথা ভাবে না। স্বাধীনতার পর বাহাত্তর সালেই এই আওয়ামী লীগের আসল মুখোশ খুলে গিয়েছিল।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মনে করে তারা একাই যুদ্ধ করেছে। এ কারণে তারা শেরেবাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানীদের নাম স্মরণ করে না। স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের নাম তো উচ্চারণই করতে চায় না, বরং তাকে আরও দোষ দেয়।’
সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আওয়ামী লীগ স্বাধীনতাকে চিবিয়ে খাচ্ছে। স্বাধীনতা বাংলার মানুষের কাজে লাগছে না। লেবুর হালি ১০০ টাকা, কাঁচা মরিচের কেজি ৩০০ টাকা। ধনী বাংলাদেশকে গরিব বানিয়ে কিছু মানুষ বিদেশে নতুন করে ধনী হওয়ার চেষ্টা করছে। যেদিন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থাকবে না সেদিন বাংলাদেশের চেহারা পাল্টে যাবে।’
মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ নোমান, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালামসহ অনেকে।
কাউন্সিলের প্রায় একবছর পর অনুমোদন পেয়েছে সিলেট জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি। দীর্ঘ সময় নিয়ে গঠিত হলেও সিলেটে এ কমিটিতে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। নেতা-কর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিভক্তি। নেতা-কর্মীদের একাংশের অভিযোগ- আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে, যেখানে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পদে রাখা হয়েছে প্রবাসীদেরও। আছেন ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা এবং ‘বিতর্কিত’ ও ‘বিদ্রোহীরা’।
পদবঞ্চিত ও অবমূল্যায়িত নেতাদের অভিযোগ, জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজেদের নির্বাচনী এলাকার আস্থাভাজনদের নিয়ে এই কমিটি গঠন করেছেন। এমন কমিটি নির্বাচনী বছরে সিলেটে দলের অবস্থানকে আরও দুর্বল করবে।
গত বছরের ২৯ মার্চ সিলেট জেলা বিএনপির সম্মেলন ও কাউন্সিল হয়। এতে আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী সভাপতি, এমরান আহমদ চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক ও শামীম আহমদ সাংগঠনিক সম্পাদক হন। প্রায় একবছর পর গত রোববার সিলেট জেলা বিএনপির ১৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কমিটি ঘোষণার পর থেকেই এ নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়।
বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, নতুন কমিটিতে বেশ কয়েকজন প্রবাসীকে স্থান দেয়া হয়েছে। যুক্তরাজ্য বিএনপির সহসভাপতি গোলাম রব্বানী ও যুক্তরাজ্যপ্রবাসী আছকির আলীকে জেলা কমিটির সহসভাপতি, ফ্রান্সপ্রবাসী জালাল খানকে মৎস্যবিষয়ক সম্পাদক, যুক্তরাজ্যপ্রবাসী তামিম ইয়াহইয়াকে সহশিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক, আরব আমিরাতপ্রবাসী ও দুবাই বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাহেদ আহমদ রাসেলকে সহ-অর্থনীতিবিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে।
গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে ফেঞ্চুগঞ্জে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হয়েছিলেন ওয়াহিদুজ্জামান সুফি। নতুন কমিটিতে তিনি যুগ্ম সম্পাদক। অন্যদিকে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে গত নির্বাচনে প্রার্থী হননি তৎকালীন কানাইঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী ও গোয়াইনঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম চৌধুরী। গত কমিটিতে তারা সহসভাপতি পদে থাকলেও নতুন কমিটিতে জায়গা পাননি তারা।
জেলা বিএনপির এক নেতা জানান, ওয়াহিদুজ্জামান সুফি সভাপতির আত্মীয় হওয়ায় ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হয়েও তিনি দলে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন। অন্যরা দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিজেদের বলি দিলেও সভাপতি-সম্পাদকের আস্থাভাজন না হওয়ায় পদ পাননি।
বিএনপি নেতা-কর্মীরা বলছেন, প্রায় চার দশক ধরে যারা সিলেটে বিএনপিকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, এগিয়ে নিয়েছেন এবং সাংগঠনিক শক্তি বাড়িয়েছেন তাদের কাউকেই কমিটিতে রাখা হয়নি। অথচ ‘নিখোঁজ’ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর পরিবার থেকে চারজন নির্বাহী কমিটিতে পদ পেয়েছেন।
গত বুধবার দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সিলেট গেলে তার কাছেও এসব অভিযোগ তুলে ধরেন নেতা-কর্মীরা। এ ছাড়া দলের মহাসচিবের কাছে লিখিতভাবেও কমিটি নিয়ে অসন্তোষের কথা জানানো হয়েছে।
নতুন কমিটি নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে মহানগর মহিলা দলের সভাপতি রোকসানা বেগম শাহনাজ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আমাদের নেতা-কর্মীদের একেবারে গুম করে দেয়। এখন দেখছি আমাদের দলও রাজনীতি থেকে নেতাদের গুম করে দিচ্ছে!’
জেলা বিএনপির সর্বশেষ কমিটিতে সহসভাপতি পদে থাকা এক নেতাকে নতুন কমিটিতে উপদেষ্টা করা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ইলিয়াস আলী আমাদের আবেগের জায়গা। তাকে কমিটিতে রাখা নিয়ে সবাই একমত। তার স্ত্রীও রাজনীতিতে কিছুটা সক্রিয়, তাকেও রাখা যায়। কিন্তু ইলিয়াসের ছেলে বেশির ভাগ সময় যুক্তরাজ্যে থাকেন, রাজনীতিতে সক্রিয় নন। তাকে কেন কমিটিতে রাখতে হবে? ইলিয়াস আলীর ভাইও যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে থাকেন। তাকেও কেন গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়া হলো?
এদিকে আগে থেকেই একাধিক পদে থাকা কোনো কোনো নেতাকে এবার জেলা বিএনপির কমিটিতে রাখা হয়েছে। একই নেতার একাধিক পদ পাওয়ার দিকে ইঙ্গিত করে যুবদল নেতা লিটন আহমেদ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমাদের কোনো কোনো সহকর্মী আজ পদভারে পিষ্ট। সব জায়গাতেই তাদের পদ-বিচরণ। যারা পদহীন, অত্যাচারিত, নির্যাতিত, নিপীড়িত ও মামলা-হামলায় জর্জরিত তাদের আহাজারি আপনাদের কানে পৌঁছায় না। অনেক ধন্যবাদ আপনাদের।’
সিলেট জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দিনার ও মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি আহসানকে জেলা বিএনপির কমিটিতে সহ-ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে। নতুন কমিটিকে ‘পকেট কমিটি’ অভিহিত করে তারা দুজনেই কমিটি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘রাজনীতিতে কমিটি নিয়ে ছোটখাটো মতপার্থক্য, বিতর্ক থাকেই। এগুলো রাজনীতিরই অংশ। আমরা পরিচ্ছন্ন কমিটি দেয়ার শতভাগ চেষ্টা করেছি। সক্রিয়, ত্যাগী, নিবেদিতপ্রাণ নেতাদের সমন্বয়ে কমিটি করা হয়েছে।’
ইলিয়াস পরিবারের চারজন কমিটিতে থাকা প্রসঙ্গে কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘ইলিয়াস আলী আমাদের জনপ্রিয় নেতা। সরকার তাকে গুম করে রেখেছে। আমরা বিশ্বাস করি, একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এই সরকারের পতন ঘটবে এবং ইলিয়াস আলীকে ফিরে পাব। সার্বিক বিবেচনায় তাকে ১ নম্বর সদস্য করা হয়েছে। তার স্ত্রী লুনা দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা। স্বাভাবিকভাবেই তিনি জেলার সদস্যপদ পেয়েছেন। ইলিয়াস আলীর ভাই আছকির আলী সাবেক ছাত্রনেতা ও জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। নিজের যোগ্যতায় তিনি এবার সহসভাপতি হয়েছেন। আর ছেলে আবরার ইলিয়াস মানবাধিকারবিষয়ক বিএনপির একটি কমিটির সদস্য। সে পরিপ্রেক্ষিতে তাকে জেলা শাখায় সদস্য করা হয়েছে। আমরা মূলত যোগ্যতা ও দক্ষতা দেখেছি। কে, কোন পরিবারের, তা দেখা হয়নি।’
ছোটখাটো বিতর্ক কাটিয়ে নতুন কমিটির অধীনে জেলা বিএনপি আরও শক্তিশালী হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে সঠিক তথ্য তুলে ধরেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার নিয়ে যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তাতে লজ্জিত। দেশে এখন গণতন্ত্র, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা নেই। এটি প্রকাশের পরে আওয়ামী লীগের নেতারা নিজেদের মত বানিয়ে কথা বলছে।’
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বুধবার বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব কে এম ওবায়দুর রহমানের ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় ফখরুল এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে দেশের সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে ফেলেছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পর থেকেই আওয়ামী লীগের একক ক্ষমতা একক নেতৃত্বে বিশ্বাস করে। আওয়ামী লীগ সচেতনভাবে দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে। আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার পুরোনো স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছে।’
গোটা দেশ আজ কারাগারে পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সচেতনভাবে বাংলাদেশকে গণতন্ত্র থেকে সরিয়ে ফ্যাসিবাদ, কর্তৃত্ববাদ, একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করছে। গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এ সরকারের পতন ঘটাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সবাইকে ছোট করে দেখাতে পছন্দ করে। আওয়ামী লীগ কাউকে সম্মান দিতে জানে না। তাজউদ্দীন আহমদ, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নামও নেয় না মুখে।’
সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশারফ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ নির্মাণে যেসব মানুষ অবদান রাখছে, তাদের স্মরণ করা হয় না। তাদের নামগুলো পরিকল্পিতভাবে ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ সরকার।’
বিএনপির সাবেক মহাসচিব কে এম ওবায়দুর রহমানের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘আজ আমরা যেসব কথা বলছি, বাংলাদেশ স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব, দেশের গণতন্ত্র, ন্যায়-নীতি, অর্থনীতির বৈষম্য দূর করে যথাসাধ্য সাম্য প্রতিষ্ঠা করা, স্বাধীন বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা ছিল কে এম ওবায়দুর রহমানের স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন আজ ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। যে দেশে গণতন্ত্র নেই, সে দেশে মানবাধিকার থাকতে পারে না। দেশের মানবাধিকার নেই সেটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জনগণকে বাদ দিয়ে অব্যাহতভাবে ক্ষমতা দখলের রাজনীতি সৃষ্টি করছে। সংবিধানকে ব্যবহার করে ক্ষমতা দখল করে রেখেছে তারা। সংবিধানের কথা বলা আওয়ামী লীগের মুখে শোভা পায় না। নির্বাচনব্যবস্থাকে ধ্বংস করে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা ভোগ করছে আওয়ামী লীগ।’
দেশে দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা চলছে মন্তব্য করে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকারের কাছে জনগণ বলে কোনো শব্দ নেই। আর এ জন্য সংবিধানের দোহাই দিয়ে জনগণকে বাইরে রেখে ক্ষমতা দখল করেছে। কোনো আলাপ-আলোচনার সুযোগ নেই, রাস্তা দখল করে ফয়সালা হবে। সরকারের বিদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ জনগণ ছাড়বে না।’
আওয়ামী লীগ ভোটে বিশ্বাস করে না মন্তব্য করে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেন, ‘যুবকদের এখন লড়াই করার সময়। ছাত্রলীগের নেত্রীরা এখন গরু চোরের সরদার। ক্ষমতা মাটিতে পড়ে থাকবে, তবু আওয়ামী লীগকে থাকতে দেয়া হবে না। এ লড়াই বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের লড়াই। গণ-অভ্যুত্থান, গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারের বিদায় হবে।’
বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর সঞ্চালনায় সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বক্তব্য দেন।
মাদারীপুরের শিবচরে পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়েতে ১৯ মার্চের বাস দুর্ঘটনায় সরকারের সড়ক বিভাগকে দায়ী করে সেতুমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভা থেকে এ দাবি জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সভা মনে করে, এই দুর্ঘটনার জন্য সরকারের সড়ক বিভাগ সম্পূর্ণ দায়ী। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার সব দায় নিয়ে সেতুমন্ত্রীর অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয় সোমবার। একই সভায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সরকারদলীয় আইনজীবী ও পুলিশের হামলা, গ্রেপ্তার, মামলা এবং ভোট ডাকাতির উল্লেখ করে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে দলটি।
হজ প্যাকেজের সর্বনিম্ন টাকার পরিমাণ হজ পালনেচ্ছুদের নাগালের বাইরে জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিএনপি। সেই সঙ্গে ১৯ মার্চ ঢাকার বনানী ক্লাব থেকে সিরাজদিখান উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোমেন আলীসহ প্রায় ৫১ জনকে গ্রেপ্তার ও পরে আদালতে দুই দিন রিমান্ড মঞ্জুরের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয় সভায়।
সভায় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যরিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান এবং ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তাকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
মঙ্গলবার বিএনপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক মো. তাইফুল ইসলাম টিপুর স্বাক্ষর করা ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজে লিপ্ত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে জাতীয় স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’
বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, দলের শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগে এর আগেও শওকত মাহমুদকে একবার কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছিল। তখন তাকে প্রাথমিকভাবে সতর্ক করা হয়েছিল। গত ১৬ মার্চ কলামিস্ট ফরহাদ মজহারের সঙ্গে জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটি নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে রাজধানীর একটি হোটেলে কিছু রাজনীতিবিদ ও আমলাদের নিয়ে নৈশভোজের আয়োজন করেন তিনি, যা দলের কাউকে তিনি জানাননি। এ কারণে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মার নৈশভোজের আমন্ত্রণে গেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ পাঁচ নেতা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রাজধানীর বারিধারায় ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মার আমন্ত্রণে তার বাসভবনে যান বিএনপির পাঁচ নেতা।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান দৈনিক বাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে আছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস-চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ।
এর আগে ১২ মার্চ সকাল ১০টার দিকে গুলশান-২ নম্বরে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত আটটি দেশের প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল।
আগামী ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত যৌথ সভায় এসব কর্মসূচি নেয়া হয়। পরে সংবাদ সম্মেলনে এসব কর্মসূচির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২৬ মার্চ সকাল ৬টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশব্যাপী সব দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। ওইদিন সকাল ৭টায় বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে দলের কেন্দ্রীয় নেতাসহ নেতাকর্মীরা জাতীয় স্মৃতিসৌধের উদ্দেশে যাত্রা এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।’
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে ঢাকায় ফিরে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করা হবে। ওই দিন মাজার প্রাঙ্গণে জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের উদ্যোগে দোয়া অনুষ্ঠিত হবে।’
এছাড়া ২৫ মার্চ বেলা ১১টায় মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে মহানগর নাট্যমঞ্চে অথবা নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
বিএনপি মহাসচিব আরও জানান, ২৭ মার্চ বেলা ১১টায় মুক্তিযোদ্ধা দলের উদ্যোগে নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘মুক্তিযোদ্ধা গণসমাবেশ’ অনুষ্ঠিত হবে। সারাদেশে জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌরসহ সব ইউনিট মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও অন্যান্য কর্মসূচির আয়োজন করবে। এর বাইরে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসমূহ নিজ উদ্যোগে কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করবে।
যৌথ সভায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সম্পাদকরা অংশ নেন।