প্রতিবারের মতো এবারও পবিত্র রমজান মাসে ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সম্মানে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে এ ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান দৈনিক বাংলাকে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে কূটনীতিকদের সম্মানে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেছে বিএনপি। ইফতার মাহফিলে রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের সঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, দলের জ্যেষ্ঠ নেতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অংশ নেবেন।
সিলেট-৫ আসনে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির সিলেট মহানগর শাখার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ। নৌকার টিকিট পেলেও স্বস্তিতে নেই মাসুক। তার দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন ধর্মভিত্তিক সংগঠন আনজুমানে আল ইসলাহর সভাপতি মাওলানা হুছামউদ্দীন চৌধুরী। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তিনি। মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণার পর মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করে এসেছেন।
হুছামউদ্দীন চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আসার পর এ আসনে ভোটের হিসাব-নিকাশ নিয়ে নানামুখী আলোচনা চলছে। শেষ মুহূর্তে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাকে ছাড় দেওয়া হতে পারে বলেও আলোচনা চলছে। যদিও মাসুক উদ্দিন কিংবা হুছামউদ্দীন ছাড়ের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
এদিকে সিলেট-৫ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সীমান্তিকের প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. আহমদ আল কবির। এলাকায় তারও নিজস্ব ভোট ব্যাংক রয়েছে। ফলে মাসুক উদ্দিনের ভোটে ভাগ বসাতে পারেন আহমদ আল কবিরও।
সিলেট-৫ আসনে এ তিনজন ছাড়া আরও প্রার্থী হয়েছেন জাতীয় পার্টির শাব্বীর আহমদ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) মো. খায়রুল ইসলাম, তৃণমূল বিএনপির কুতুব উদ্দিন শিকদার ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. বদরুল আলম।
জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন না হলে এ আসনে ত্রিমুখী লড়াই হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে মূল লড়াই হতে পারে মাসুক উদ্দিন, আহমদ আল কবির এবং হুছামউদ্দীনের মধ্যে। তবে আওয়ামী লীগ থেকে হুছামউদ্দীনকে ছাড় দেয়া হলে পাল্টে যাবে এ হিসাব।
মাওলানা হুছামউদ্দীন চৌধুরীর বাবা ফুলতলী হুজুর হিসেবে পরিচিত আল্লামা আব্দুল লতিফ চৌধুরী। সিলেটজুড়ে রয়েছে তার অসংখ্য ভক্ত ও মুরিদ। আব্দুল লতিফ চৌধুরী গড়ে তোলেন ধর্মভিত্তিক সংগঠন আনজুমানে আল ইসলাহ। তার মৃত্যুর পর ছেলে হুছামউদ্দীনই এ সংগঠনটি পরিচালনা করছেন। তিনি ইসলামপন্থি নেতাদের মধ্যে আওয়ামী ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। সিলেট-৫ আসনের অন্তর্ভুক্ত জকিগঞ্জে তার বাড়ি। ফলে হুছামউদ্দীনকে শুরু থেকেই এখানে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে ধরা হচ্ছে।
মঙ্গলবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার সাক্ষাতের পর এখানে আওয়ামী লীগের ছাড়ের বিষয়টিও আলোচিত হচ্ছে। সাক্ষাতের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই তাকে ডেকে পাঠান বলে জানান মাওলানা হুছামউদ্দীন চৌধুরী।
সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে হুছামউদ্দীন চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গত বছর ১২ জানুয়ারি নতুন কারিকুলাম ও পাঠ্যপুস্তক থেকে ইসলামি বিশ্বাসবিরোধী বিষয়গুলো বাদ দিয়ে তা সংশোধন, মাদ্রাসার জন্য স্বতন্ত্র কারিকুলাম প্রণয়নসহ ১০ দফা দাবি তুলে ধরেছিলাম। এবারও সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী সিলেট-৫ থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় আমাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে সিলেট বিভাগের অন্যান্য আসনে আওয়ামী লীগকে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।
সিলেট-৫ আসন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে আশ্বস্ত করেছেন নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হবে। এ ছাড়া আমাকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছেন। দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। সবকিছু এ মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। তবে ছাড়ের বিষয়ে কোনো আলাপ হয়নি।’
সিলেট-৫ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য পূবালী ব্যাংক এবং রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাবেক চেয়ারম্যান হাফিজ আহমদ মজুমদার। বয়সজনিত কারণে এবার প্রার্থী হননি এ আওয়ামী লীগ নেতা। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগে তার নিজস্ব বলয় রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৫ আসনে আওয়ামী লীগ ত্রিধারায় বিভক্ত। এসব বলয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন হাফিজ আহমদ মজুমদার, মাসুক উদ্দিন আহমদ এবং আহমদ আল কবির। এ কারণে এবার আওয়ামী লীগের ভোট ভাগ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর সুবিধা পেতে পারেন হুছামউদ্দীন। তবে এ সূত্র জানিয়েছে, জকিগঞ্জে হুছামউদ্দীনের শক্ত অবস্থান থাকলেও কানাঘাট উপজেলায় তার তেমন ভোট নেই।
তবে ছাড় বা দলে বিভক্তির কথা অস্বীকার করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাসুক উদ্দিন বলেন, ‘নেত্রী আমাকে নৌকা দিয়ে এলাকায় পাঠিয়েছেন। জোট বা ছাড়ের বিষয়ে আমাকে কিছু বলেননি। এ ছাড়া জকিগঞ্জ-কানাইঘাটে আওয়ামী লীগও ঐক্যবদ্ধ। নৌকা মার্কাকে বিজয়ী করে আমরা প্রধানমন্ত্রীকে এ আসনটি উপহার দিতে চাই।’
আগামী রোববার কোনো হরতাল-অবরোধ দিচ্ছে না বিএনপি।
সরকার পতনের একদফা দাবিতে গত ২৯ অক্টোবর থেকে হরতাল ও অবরোধ দিয়ে আসছিল বিএনপি ও এর সমমনা দলগুলো। তবে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আগামী রোববার অবরোধ বা হরতালের মতো কর্মসূচি থেকে বিরত থাকবে দলটি।
হরতাল বা অবরোধ না করে দলটি 'সরকারি দমন-পীড়ন'র প্রতিবাদে সারা দেশে মানববন্ধন করবে।
আজ বৃহস্পতিবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
বিএনপি সূত্র জানায়, গুম, মিথ্যা মামলা ও গ্রেপ্তারসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ধরতে ওইদিন ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করবে দলটির নেতাকর্মীরা। সেখানে ভুক্তভোগী বিএনপি নেতাকর্মীদের পরিবার উপস্থিত থাকবে।
অন্যান্য বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরেও একই ধরনের মানববন্ধনের আয়োজন হবে বলে জানিয়েছে বিএনপি’র সূত্রটি।
উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে বিএনপির ডাকা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ আগামীকাল সকাল ৬টায় শেষ হবে। দশম দফায় অবরোধের কর্মসূচি পালন করছে দলটি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বৈঠক প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা আলাদাভাবে অংশগ্রহণ করবে।’
তিনি বলেন, ‘বৈঠকে আসন বন্টনের প্রসঙ্গ আসেনি, নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে নির্বাচনমুখী দলগুলোর সমন্বয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে নাশকতা, গুপ্ত হামলার মতো নির্বাচন বিরোধী অপকর্ম প্রতিহত করা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রাজনৈতিক আলোচনাই ছিল মুখ্য।’
ওবায়দুল কাদের আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এ বৈঠকের মূল বিষয়টি ছিল, নির্বাচনটাকে অবাধ শান্তিপূর্ণ এবং সুষ্ঠু করার জন্য যা করা দরকার তাই করা হবে। যারা নির্বাচনমুখী দল, তাদের নিয়ে সমন্বিতভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে গুপ্তহত্যা, নাশকতা ও গুপ্তহামলা প্রতিরোধ করা হবে। নির্বাচন বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে মোকাবিলা করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সম্পর্ক আরও জোরদার করা হচ্ছে। এজন্য ১৪ দল ও জাতীয় পার্টির সাথে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু করা নিয়ে মূল আলোচনা হয়েছে। জাতীয় পার্টির সাথে আলোচনা নিয়ে এ নিয়ে ঢাকঢোল পেটানোর কিছু নাই।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচনমুখী যত রাজনৈতিক দল আছে, যাদের সঙ্গে আমাদের জোট ছিল, মানে মহাজোটে ছিল তাদের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেছি। তাদের সঙ্গে আমাদের সহযোগিতা, আমরা আমাদের সম্পর্কটা আরও জোরদার করার তাগিদ অনুভব করছি। যে কারণে ১৪ দলের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, বিএনপি ততই নির্বাচন বানচালে মরিয়া হয়ে উঠছে। তাদের নাশাকতার মাত্রা আরও বিস্তৃত হতে পারে। মুরগির বাচ্চাও তাদের টার্গেট। নাশকতা, গুপ্ত হামলার ভয়াবহ যে চিত্র তা রেকর্ড স্থাপন করছে। গতকাল পর্যন্ত ছয়শ গাড়ি ভাংচুর করেছে, ১০টি রেলে আগুন দিয়েছে।’
পোশাকখাতে মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের নতুন শর্ত প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র চাইলেও একতরফা কিছু করতে পারবে না। যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপ এবং এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার বন্ধু দেশগুলো বাংলাদেশের বিষয়ে চরম কোনো সিদ্ধান্ত নিতে এখন আর পক্ষপাতি নয়।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা বিদেশে বন্ধুহীন নেই। তারা জানে বাংলাদেশে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় শেখ হাসিনা কিভাবে নির্বাচন করছেন। দেশে যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় সেজন্য নির্বাচন করছেন। জনগণের ভোটের মাধ্যমেই সরকারি ও বিরোধী দল আসবে।’
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ও আফম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান বিচারপতির বাস ভবনে হামলা মামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে কেন জামিন দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
বৃহস্পতিবার জামিন আবেদনের শুনানি নিয়ে তাকে জামিন না দিয়ে রুল জারি করেন বিচারপতি মো. সেলিম ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, তার সঙ্গে আরও ছিলেন অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান খান, ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ বিএনপির আইনজীবীরা। রাষ্ট্র পক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম রাফেল।
আদেশের পরে আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘এই মামলায় মির্জা ফখরুল ইসলামের কোনো সম্পৃক্ততাই ছিল না। তিনি নির্দেশ দিবেন সেই পরিস্থিতিও সেখানে ছিল না। এ মামলায় তার কোনো সম্পৃক্ততা নাই। তিনি বয়স্ক মানুষ। তিনি জামিন পাওয়ারযোগ্য।’
‘আমি আদালতে আরও বলেছি, এ মামলায় ব্যারিস্টার শাজাহান ওমরও ছিলেন। তিনি জামিন পেয়েছেন। তাহলে মির্জা ফখরুল ইসলাম কেন পাবেন না। সব শুনে আদালত সাত দিনের একটা রুল জারি করেছেন। আদালত। আশা করি রুল শুনে আদালত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে জামিন দেবেন।’
গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের দিন প্রধান বিচারপতির বাসভবনের হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মির্জা ফখরুলসহ ৫৯ বিএনপির নেতার বিরুদ্ধে রমনা থানায় একটি মামলা করা হয়। এরপর ২৯ অক্টোবর গুলশান-২ এর ৭১ নম্বর সড়কের ১৮ নম্বর বাড়ি থেকে মির্জা ফখরুলকে আটক করে ডিবি পুলিশ। পরবর্তীতে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ভাঙচুরের মামলায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জামিন আবেদন নিম্ন আদালতে কয়েক দফায় নামঞ্জুর হলে গত ৩ ডিসেম্বর তিনি হাইকোর্টে এই জামিন আবেদন করেন।
সেই আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত আজ রুল জারি করেন।
মাত্র কয়েক দিন আগেও যাদের ক্ষমতার দাপট ছিল প্রবল। সংসদীয় আসনের সব সিদ্ধান্ত হতো তাদের ইশারায়। এলাকায় চলতেন পুলিশ প্রহরায়। দলের নেতা-কর্মীরা প্রতিনিয়ত ভিড় জমাতেন তাদের কার্যালয়ে। খুলনা বিভাগের এমন ৯ জন সংসদ সদস্য এবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান সরকারের মন্ত্রিপরিষদের সদস্য শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান ও জাতীয় সংসদের সরকার দলীয় হুইপ পঞ্চানন বিশ্বাস। নিজ দল থেকে বঞ্চিত হওয়ার পরে তারা কমিয়ে দেন জনসম্পৃক্ততা। ফলে তাদের এখন দিন কাটছে নিজ বাড়ির চার দেয়ালের মধ্যে ঘোর অন্ধকারে।
দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত ৯ জনের মধ্যে ৭ জন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেননি। বাকি দুজন মনোনয়ন জমা দিলেও একজন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিতে চেয়েছেন।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের খুলনা জেলায় এবার তিনজন দলীয় এমপিকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।
খুলনা-১ আসনে পঞ্চানন বিশ্বাসের বদলে মনোনয়ন পেয়েছে ননী গোপাল মণ্ডল। পঞ্চানন বিশ্বাস ১৯৯৬ সালে উপনির্বাচনে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ২০০১, ২০১৪ ও ২০১৮ সালেও তিনি জয় লাভ করেন। তিনি বর্তমানে জাতীয় সংসদের হুইপ হিসেবে দায়িত্বরত রয়েছেন। দল থেকে মনোনয়ন না পাওয়ায়, তাকে আর মাঠের রাজনীতিতে দেখা যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘অসুস্থ বলে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। যদিও আমি বাস্তবে অসুস্থ না। এখন দল যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাই মেনে নিয়েছি।’
এ ছাড়া খুলনা-৩ আসনে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ানের বদলে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেনকে। মুন্নুজান সুফিয়ান ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে খুলনা-৩ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য। একই সঙ্গে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে দুই মেয়াদে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। দাপুটে এ নেতা এবার মনোনয়ন না পাওয়ার পর লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে গেছেন। বাদ পড়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দল যা ভালো মনে করে, আমার জন্য তাই ভালো।’
খুলনা-৬ আসনে মো. আক্তারুজ্জামানের বদলে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে মো. রশীদুজ্জামানকে। মো. আক্তারুজ্জামান ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পূর্বে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত। মনোনয়ন না পাওয়ার পর থেকে তাকে আর নিজ সংসদীয় এলাকায় দেখা যায়নি। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে একবার সংসদ সদস্য হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। এটা আমার ভাগ্যের ব্যাপার। আমি দলের জন্য কাজ করব।’
অন্যদিকে যশোর-২ আসনে নাসির উদ্দিনের বদলে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তৌহিদ উজ জামানকে। মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে তিনিও নেতা-কর্মীদের লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে গেছেন। তিনি ক্ষোভ নিয়ে বলেন, ‘আমার আসনে এক অরাজনৈতিক নেতাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তবে দলের সিদ্ধান্ত মেনে আমি নির্বাচনে অংশ নিব না।’
মাগুরা-১ আসনে মো সাইফুজ্জামান শিখরের বদলে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে। এ প্রসঙ্গে শিখর বলেন, ‘আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান হয়ে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়া সুযোগ নেই। এখন দলের জন্যই কাজ করতে হবে।’
বাগেরহাট-৪ আসনে আমিরুল ইসলাম মিলনের বদলে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনের জন্য দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আমিরুল ইসলাম মিলন ২০১৬ ও ২০১৯ সালে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য মনোনীত হন। ২০২০ সালের উপনির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন না পেয়ে তিনিও নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা কমিয়ে দিয়েছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্তের বাইরে আমার কোনো সিদ্ধান্ত নেই। যাকে মনোনয়ন দিয়েছে, তার পক্ষেই কাজ করব।’
এ ছাড়া, সাতক্ষীরা-৪ আসনে জগলুল হায়দারের পরিবর্তে এস এম আতাউল হককে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। জগলুল হায়দার ২০১৮ ও ২০১৪ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ব্যাপকভাবে এলাকার মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করতেন। তবে এবার মনোনয়ন না পেয়ে অনেকটা নিজেকে লুকিয়ে রেখেছেন। তিনি বলেন, ‘নেত্রী আমার ওপর আগের দুই বার আস্থা রেখেছেন। এবার আমি নেত্রীর ওপর আস্থা রাখলাম। দলের জন্য কাজ করতে মাঠে নামব।’
দুই এমপির মনোনয়ন সংগ্রহ
যশোর-৪ আসনে সংসদ সদস্য রণজিত কুমার রায়ের বদলে এনামুল হক বাবুলকে ও সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবির জায়গায় আসাদুজ্জামান বাবুকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে দলীয় মনোনয়ন না পেলেও রণজিত কুমার রায় ও মীর মোস্তাক আহমেদ রবি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন।
যশোর-৪ আসনে ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন রণজিত কুমার রায়। তিনি বলেন, ‘মনোনয়নপত্র উইথড্র করার সুযোগ রয়েছে। আমি নৌকার বিপক্ষে ভোট করব না।’
অন্যদিকে সাতক্ষীরা-২ আসনে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নৌকমান্ড মীর মোস্তাক আহমেদ রবি। তিনি মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে চান বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া মাঠ না ছাড়ার জন্য দলীয় নেতা-কর্মীদের আহ্বান জানিয়েছেন।
চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনের এমপি তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের আয় কমেছে এবং ঋণ বেড়েছে । মনোনয়নপত্রের সঙ্গে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে দেওয়া হলফনামা ঘেঁটে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী।
হলফনামা সূত্রে জানা গেছে, গত পাঁচ বছরে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ এই মন্ত্রীর আয় বাড়েনি, বরং কমেছে। অন্যদিকে তাঁর ঋণ বেড়েছে। একইভাবে তাঁর স্ত্রী নুরান ফাতেমার সম্পদও কমেছে।
হলফনামা বিশ্লেষণে দেখা যায়, তথ্যমন্ত্রীর এবার সব ধরনের ঋণের পরিমাণ গতবারের চেয়ে বেড়েছে। গত নির্বাচনের সময় হলফনামায় সর্বমোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ২১ লাখ টাকা। অথচ এবার তাঁর সর্বমোট ঋণ ২ কোটি ২৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ১ কোটি ৭ লাখ টাকা।
হলফনামায় দেখা গেছে, গত ৫ বছরে হাছান মাহমুদের আয় ও ব্যয় দুটোই উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। গতবারের হলফনামায় বাৎসরিক আয় ছিল ২৬ লাখ ৬২ হাজার টাকা। এবার সেখানে আয় ১৭ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। আয়ের উৎস হিসেবে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া কৃষিজমি, বাড়িভাড়া, মন্ত্রী হিসেবে প্রাপ্ত বেতন-ভাতাদি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন/ভিজিটিং শিক্ষক হিসেবে প্রাপ্ত বেতন দেখিয়েছেন সরকারের এই মন্ত্রী।
একইভাবে তাঁর স্ত্রী নুরান ফাতেমার নামে হলফনামায় ঘোষিত স্থাবর সম্পত্তি ২০১৮ সালের তুলনায় চলতি বছর ২০২৩ সালে অনেক কমেছে। ২০১৮ সালের হলফনামায় স্ত্রীর নামে রাঙ্গুনিয়ার যে ৩ একর জায়গা ছিল, সেটি এখন আর নেই। কিছু জমি এতিমখানার জন্য দান করা হয়েছে বলে তথ্যে প্রকাশ।
উল্লেখ্য, প্রতি বছর নির্বাচনে যারা প্রার্থী হতে চান, তাদের আয়-ব্যয় ও সম্পদের তথ্য হলফনামায় উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনে জমা দিতে হয়।
আওয়ামী লীগকে নিজের পুরোনা দল দাবি করে ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বলেছেন, ‘মাঝখানে অন্য জায়গায় ছিলাম। এখন ফিরে এসেছি।’
সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রির করিডরে বুধবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ব্যারিস্টার মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর এসব কথা করেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হওয়ায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরকে দলের সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কারের কথা ৩০ নভেম্বর জানিয়েছিল দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
এর আগে গত ৪ নভেম্বর রাজধানীর একটি বাসা থেকে সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী শাহজাহান ওমরকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরদিন তাকে চার দিনের রিমান্ডে পাঠান আদালত। এরপর ৯ নভেম্বর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়।
এরপর ২৯ নভেম্বর দুপুরে জামিন পান শাহজাহান ওমর। জামিনে কারাগার থেকে বেরোনোর পরদিন আওয়ামী লীগে যোগ দেন শাহজাহান ওমর। পরে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নও পান তিনি।
৩০ নভেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ইউটিসি ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে আওয়ামী লীগে যোগদানের ওই ঘোষণা দেন শাহজাহান ওমর।
বুধবার তিনি সুপ্রিম কোর্টে রেজিস্ট্রিতে আসার পর সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করেন- কেন আসছিলেন? জবাবে শাহজাহান ওমর বলেন, ‘কেন আসছিলাম? একটু রেজিস্ট্রারের কাছে কাজ ছিল।’
সাংবাদিকরা ফের প্রশ্ন করেন, প্রধান বিচারপতির কাছে দেখা করতে আসছিলেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘না। না। রেজিস্ট্রারের সঙ্গে।’
আপনি তো নতুন দলে জয়েন করেছেন, কেমন লাগছে- এমন প্রশ্নের জবাবে সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী বলেন, ‘এটা আমার পুরোনো দল। মাঝখানে অন্য জায়গায় ছিলাম। ব্যাক টু বেঞ্চ।’
জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলোচনা হওয়ার আগে আসন ভাগাভাগি নিয়ে কিছু বলতে চান না আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টি একসময় আমাদের মহাজোটে ছিল। তারা নির্বাচন করছে। সুতরাং আলোচনা হওয়ার আগে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
ধানমন্ডিতে বুধবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘রাজনীতিতে ভিন্নমত থাকাটাই হচ্ছে গণতন্ত্র। একমত হতে না পারা, সেটাই গণতন্ত্র। ১৪ দলের সঙ্গে এরই মধ্যে আলোচনা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যেই আসনের বিষয়টি ঠিক হবে। আর জাতীয় পার্টি একসময় আমাদের মহাজোটে ছিল। তারা নির্বাচন করছে। সুতরাং আলোচনা হওয়ার আগে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
জাতীয় পার্টি ও ১৪ দল, সবাই সরকারের সঙ্গে মিশে যেতে চাইছে এবং নির্বাচনের নিশ্চয়তা চায়। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, এখানে মিশে যাওয়ার কোনো ব্যাপার নেই। জাতীয় পার্টি প্রায় ৩০০ আসনে প্রার্থী করেছে। আর আসন ভাগাভাগির ব্যাপারে বাস্তবতা রয়েছে। সেটা আলোচনার বিষয়।
তাহলে কি জাতীয় পার্টি ও ১৪ দল আসন ভাগাভাগি করে বিরোধী দল হবে? জবাবে তিনি বলেন, সময় হলে বিরোধী দল দাঁড়িয়ে যাবে। তাছাড়া এখানে আরও অনেক দল আছে। তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম, সুপ্রিম পার্টিসহ বিভিন্ন দল রয়েছে।
জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি হলে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ কারা হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব প্রতিদ্বন্দ্বী আমাদের প্রতিপক্ষ। যারা নির্বাচন করছে, তারা সবাই পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী। আমাদের দলের সভাপতির আসনে চারজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রতিযোগিতা তো হচ্ছে।’
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতার বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, এখন নির্বাচন কমিশনের অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যাপারে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই। এখন সরকার শুধু একটি রুটিন দায়িত্ব পালন করছে। সরকারের কাজ হচ্ছে একটি সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করা।
১০ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সমাবেশ করছে না জানিয়ে দলটির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, নির্বাচন কমিশন মানবাধিকার দিবসে সমাবেশ করার অনুমতি দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে। আওয়ামী লীগ সমাবেশ করবে না। তবে দিবসটি ঘিরে আওয়ামী লীগের ঘরোয়া কর্মসূচি থাকবে।
মানবাধিকারের কথা বলে জনসম্পৃক্ততার অভাবে নির্বাচনবিরোধী দলগুলোর আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতা করে আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়। মানবাধিকার দিবসে সারা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পরিকল্পনা নিয়ে তারা এগোচ্ছে। জামায়াতকে বিএনপি একান্তভাবে তাদের পাশে চায়।
মানবাধিকার দিবসে বিএনপি নাশকতা করতে পারে, এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা খোঁজখবর নিয়েই কথা বলছি। সরকারি দল হিসেবে আমাদের খোঁজ-খবর নেয়ার সুযোগটা বেশি। তা ছাড়া বিভিন্ন সূত্র থেকে আমরা এর আগে যেসব খবর পেয়েছি, বাস্তবেও সেগুলোর মিল পেয়েছি।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রমুখ।
২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলীয় ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে রূপকল্প-২০২১ ঘোষণা করেছিল আওয়ামী লীগ। তখন রাজনৈতিক বিরোধীদের পাশাপাশি সুশীল সমাজের একটি অংশও এর কঠোর সমালোচনা করে। ডিজিটাল বাংলাদেশকে ‘কাল্পনিক’, ‘অবাস্তব’ এবং ‘উচ্চাভিলাষী’ বলে মন্তব্য করেন তারা। কিন্তু সেসব কিছু পাশ কাটিয়ে ২০২১ সালের মধ্যেই ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবে রূপান্তর করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শিগগিরই নতুন ইশতেহার ঘোষণা করা হবে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের ইশতেহারেও থাকছে তারুণ্যবান্ধব দেশ গড়ার অঙ্গীকার। ইতোমধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলটি। আর এ কারণে নতুন প্রজন্মকে ধারণ করে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা থাকছে এবারের ইশতেহারে।
প্রতিটি নির্বাচনী ইশতেহারেই জাতির সামনে একটা আশাজাগানিয়া ও অনুপ্রেরণামূলক স্লোগান তুলে ধরে আওয়ামী লীগ। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ইশতেহারের স্লোগান ছিল ‘দিনবদলের সনদ’। ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে স্লোগান ছিল ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’। ২০১৮ সালে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ স্লোগান ছিল ইশতেহারে। এবারের নির্বাচনে দলটির ইশতেহারে কী স্লোগান থাকছে, তা নিয়ে মানুষের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক আগ্রহ।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে জানা যায়, এবারের ইশতেহারে দেশকে এগিয়ে নিতে তরুণ প্রজন্মকে কাজে লাগানোর নানা পরিকল্পনার কথা থাকছে। সেই সঙ্গে এবার সমৃদ্ধ বাংলাদেশকে টেকসই উন্নয়নের পথে নিয়ে যেতে প্রদান করা হবে ইশতেহার।
বিগত দুই বছর ধরেই স্মার্ট বাংলাদেশের বিষয়টি বারবার উঠে এসেছে দলের বিভিন্নস্তরের নেতাদের বক্তব্যে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০৪১ সাল নাগাদ আমাদের দেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশের পর স্মার্ট বাংলাদেশের পরিকল্পনা এ শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কেননা বিশ্বের উন্নত দেশগুলো এর মধ্যেই স্মার্ট দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। এমনকি অনেক উন্নয়নশীল দেশও স্মার্ট দেশে রূপান্তরের পথে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। তাই দেশের উন্নতি ও অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে হলে বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের কাতারে নিয়ে যেতে হবে। আগামীতে যেসব দেশ প্রযুক্তি ব্যবহারে এগিয়ে থাকবে, তারাই ব্যবসা-বাণিজ্য, আন্তর্জাতিক লেনদেন এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় নিজেদের নিয়ে যেতে পারবে।
আওয়ামী লীগের গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) চেয়ারপারসন সজীব ওয়াজেদ জানান, ডিজিটাল বাংলাদেশের পর এখন বাংলাদেশকে আরও ‘আপগ্রেডের’ সময় চলে এসেছে। এত দিন দেশের সব কাজকে ডিজিটালাইজড করার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলেও এবার তার থেকেও বড় পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। অর্থাৎ ডিজিটালাইজড এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এবার প্রয়োজন সমন্বিত সেবা ও তার মানোন্নয়ন। আর এ কারণেই এখন আমাদের আইসিটি ক্ষেত্রে দক্ষ অর্থাৎ বিশেষজ্ঞ তৈরি করতে হবে, যারা স্মার্ট বাংলাদেশের হাল ধরবে এবং এগিয়ে নিয়ে যাবে।
‘দিন বদলের সনদ’ ২০০৮ সালে ঘোষণার পর ডিজিটাল বাংলাদেশ ব্যবস্থা বাস্তবে পরিণত করার মাধ্যমে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি, কৃষি থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসা হয়েছে। বিগত ১৫ বছরে তার বাস্তবিক প্রয়োগ ঘটাতে সক্ষম হয়েছে বর্তমান সরকার। করোনা মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে বিশ্ব অর্থনীতি টালমাটাল হওয়ার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশে চাকরির বাজার তৈরি, উদ্যোক্তা তৈরি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা কার্যক্রম- সব ক্ষেত্রে উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ এই স্লোগান ধারণ করে বিগত ৪ বছরে অধিকাংশ মেগা প্রকল্প উদ্বোধন করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। শুধু এক পদ্মা সেতু উদ্বোধন দেশের জিডিপিতে ১.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আনতে সক্ষম হচ্ছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।
একসময় বাংলাদেশজুড়ে ইন্টারনেট সরবরাহ করা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু এখন বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নিজস্ব ইন্টারেক্টিভ একটি নেটওয়ার্ক কাঠামো গড়ে তোলা। যেখানে গ্যাস বিল, পানির বিল, বিদ্যুৎ বিল সবকিছু পেপারলেসভাবে গ্রাহকের কাছে পৌঁছে যাবে এবং তারা পেপারলেসভাবেই সব বিল পরিশোধ করতে পারবেন।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, স্মার্ট বাংলাদেশের সব কার্যক্রম হবে অনলাইনে। নাগরিকদের ডেটাবেস থাকবে। সে অনুযায়ী জন্মসনদ থেকে শুরু করে স্থানীয় উন্নয়ন সবই হবে অনলাইনে। সমন্বিত তথ্য ভাণ্ডারের মাধ্যমে রাষ্ট্রের সব কর্মকাণ্ডের সুবিধা পৌঁছে যাবে সকল নাগরিকের কাছে। এর ফলে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা হবে।
এ ছাড়া দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণের কথাও থাকবে এ ইশতেহারে। এরই মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তাদের দলের কার্যক্রম থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মনোনয়নেও সে অবস্থানের প্রতিফলন ঘটেছে। এ বিষয়ে জোরালো ভূমিকা রাখার প্রতিশ্রুতি থাকবে আসন্ন ইশতেহারে। মূলত ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট তৈরির পর স্মার্ট বাংলাদেশে হ্যান্ড ক্যশ নিয়ে কোনো সরকারি সেবার ব্যবস্থা না রাখার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। যার মাধ্যমে দুর্নীতি হ্রাস করাও সম্ভব হবে।
নদী ভাঙন, নদী ব্যবস্থাপনা, নগর ও গ্রামে পানি সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশনে ডেল্টা পরিকল্পনার বিষয়টিও তুলে ধরা হবে ইশতেহারে। আগামী ১৬ বছরে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য উন্নয়ন পরিকল্পনা ও এই বিষয়ক নানা দিক তুলে ধরা হবে, যা ২০৪১ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তরুণদের কর্মসংস্থান, তরুণ ব্যবসায়ীদের জন্য নানা সুবিধা, উদ্যোক্তাদের জন্য নানা প্রকল্পের বিষয়ও থাকবে আওয়ামী লীগের এবারের ইশতেহারে।
সরকার ও আওয়ামী লীগের কাছে প্রান্তিক জনগণের চাওয়া জানতে এ বছরের অক্টোবরে উপজেলা পর্যায়ে দলের কমিটিকে দায়িত্ব দিয়েছিল কেন্দ্রীয় কমিটি। সেই মতামতের বিষয়ও থাকবে ইশতেহারে। যেখানে কৃষক, স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, শ্রমজীবী মানুষসহ সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষের চাওয়া-পাওয়া বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি থাকবে।
দ্রব্যমূল্য ও মূল্যস্ফীতি নিয়ে বিগত ২ বছর সবচেয়ে বেশি সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে বর্তমান সরকারকে। তাই দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, প্রান্তিক পর্যায়ে ভর্তুকি এবং মূল্যস্ফীতি হ্রাসে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের খুঁটিনাটি বিষয়ও থাকতে পারে এবারের ইশতেহারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এবারের ইশতেহারে আগামী ৫ বছর নয়, বরং ২০৪১ সাল পর্যন্ত একটি রূপরেখা প্রদান করা হচ্ছে। যেমনটি ২০০৮ সালে প্রদান করা হয়েছিল ‘দিন বদলের সনদ’ ঘোষণার সময়।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা জানান, ইশতেহার ঘোষণার আগে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে জনগণের জন্য আমাদের রাজনীতি। তাই জনগণের অনেকগুলো চাওয়া-পাওয়াকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে এবারের ইশতেহারে। বেশ কিছু চমকও রয়েছে। আশা করি হাতে পেলে আপনারাই বুঝতে পারবেন।
স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি দুই ধরনের পরিকল্পনার কথাই থাকছে এই ইশতেহারে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, দেশীয় সক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে যে বিষয়গুলোতে অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার, সে বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে। কিছু স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার কথা, যা ২০২৪ থেকে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে করা হবে, বাকি কাজগুলো ভিশন ২০৪১-এর মধ্যে বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হবে। এ ছাড়া ডেল্টা প্ল্যানের কথা থাকবে। ২০৭১ সালে রাষ্ট্রের জন্মশতবার্ষিকীর মধ্যে কিছু লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা হবে। অর্থাৎ শর্ট টার্ম গোল (লক্ষ্য) ও লং টার্ম গোল (লক্ষ্য) দেওয়া হবে।
এবার ইশতেহারের স্লোগানে টেকসই উন্নয়ন নিয়ে কোনো বার্তা থাকবে কি না জানতে চাইলে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, অনেকগুলো স্লোগান এসেছে। অনেক পরামর্শ এসেছে। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের পাশাপাশি আমাদের সমর্থক এমনকি সুশীল সমাজ এবং আন্তর্জাতিক বেশ কিছু সংস্থার প্রস্তাবের কথা মাথায় রেখে ইশতেহার তৈরি করা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কোন বিষয়গুলো থাকবে এবং কোন বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। এটি কেবল দলীয় ফোরামের সভা শেষেই নিশ্চিত হওয়া যাবে। তখন সবাই দেখতে পাবেন।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জাতীয় পার্টির (জাপা) সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় মহাজোটের শরিকদের আসন বণ্টনের বিষয়টি নির্ধারিত হবে বলে জানিয়েছেন জোটের মুখপাত্র এববং সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু। তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচন জোটগতভাবে হবে। এ বিষয়ে আগামীকাল (বুধবার) জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলোচনা করবে আওয়ামী লীগ।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘অন্যান্য দলের মতো ১৪ দল আসন ভাগাভাগির জোট নয়। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধেও আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী আছে। ১৭ তারিখের আগে জোট শরিকদের আসন ছাড়ের বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। জোটের আসন বিন্যাস ও প্রার্থী চূড়ান্ত করতে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইস্কাটনের বাসায় জোটের দুই শরীক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
আমু বলেন, ‘গতকাল (সোমবার) আমাদের ১৪ দলের নেত্রী একটি সভা করেছেন। সেখানে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপট ও রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তখন আসনের বিষয়ে কথা উঠে এসেছে।’
বৈঠক শেষে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘জোটের প্রার্থীরা নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করবেন। শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক এবং রাতের খাবারের মধ্য দিয়ে এই বার্তা পরিষ্কারভাবে দিয়েছেন যে, জোট আছে, জোট একসঙ্গে নির্বাচন করবে। আসন ভাগাভাগির বিষয়টা আমরা নিষ্পত্তি করতে সক্ষম হব।’
ইনু বলেন, ‘যেকোনো লেনদেনে দর কষাকষি হবে, মন কষাকষি হবে। বন্ধুদের মধ্যে দরকষাকষি হয়, মন কষাকষি হয়। দিনের শেষে হাসিমুখে হাত ধরাধরি করে বেরিয়ে যাব। যেখানে জোটের প্রার্থী আসবে, সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী উঠে যাবে।’
মঙ্গলবার আমির হোসেন আমুর বাসায় তার সঙ্গে বৈঠকে বসেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার।
এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন ১৪ দলীয় জোটের শরিক নেতারা। সেই বৈঠকে নির্বাচনে ১৪ দলের শরিক দলগুলোর আসন বণ্টনের জন্য চার সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়। আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এ কমিটির সদস্য।
উল্লেখ্য, ১৭ ডিসেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অনুমতি না পাওয়ায় আগামী ১০ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ ঘোষিত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
মঙ্গলবার হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ৬০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানো শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আগামী ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবস। এই মানবাধিকার দিবসে আমরা বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে একটি বড় সমাবেশ করব এ রকম একটা কর্মসূচি আমাদের ছিল। আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করেছিলাম। সে আবেদন তারা গ্রহণ করেননি।’
তিনি বলেন, ‘বাইরে সমাবেশের নামে শোডাউন হবে সে আশঙ্কা করছে ইসি। যে কারণে বাইরে যে সমাবেশ করার কথা সেটি করছি না। ১০ ডিসেম্বর আমাদের মানবাধিকার দিবসের আনুষ্ঠানিকতা ভেতরেই পালন করব। নির্বাচনী বিধির বাইরে আমরা যেতে চাই না।’
শিগগিরই কেন্দ্রীয় ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর সঙ্গে আসন ভাগাভাগির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘১৪ দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের একটা সমঝোতা অবশ্যই হবে। আজ-কালের মধ্যেই আসন বণ্টনের বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।’
ওবায়দুল কাদের আজ মঙ্গলবার দুপুরে ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা’র রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘১৪ দলের প্রত্যাশা ও বাস্তবতার সঙ্গে মিল রেখে আজকালের মধ্যেই আসন ভাগাভাগির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। জোটসঙ্গীদের চাওয়া এবং তাদের সেই চাওয়া পূরণের বাস্তবতা বুঝেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। জোটসঙ্গীরা দাবি করতেই পারেন, চাইতেই পারেন। তবে অ্যাডজাস্টমেন্টটা তো করতে হবে। ১৪ দলীয় নেতাদের সঙ্গে যে সিট শেয়ারিং করবো, সেখানে মূল স্পিরিট হলো নির্বাচনে জিততে হবে।’
তিনি বলেন, ‘১৪ দলের সঙ্গে আমাদের বৈঠকটা আসন ভাগাভাগির চেয়ে রাজনৈতিকভাবে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক বিষয়টাকেই আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। মাঝেমধ্যে ১৪ দলের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়, গতকালও রাতে (সোমবার) হয়েছে। রাজনৈতিক আলোচনাই বেশি হয়েছে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেশ-বিদেশে যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, তা মোকাবিলায় ১৪ দল ঐক্যবদ্ধভাবে লড়বে। ১৪ দলীয় জোটের যে ঐক্য, সেই ঐক্যকে সুদৃঢ় করে লড়াই করে যাবো আমরা।’
‘১৪ দলের সঙ্গে রাজনৈতিক ঐক্যের কোনো ঘাটতি নেই, হবেও না’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টির সঙ্গে সমঝোতার বিষয়ে আলোচনা চলছে। সময় বলে দেবে কী করতে হবে। যা কিছু করা হবে তা হবে দেশের স্বার্থে।’
এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম ও সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘গণতন্ত্র ত্রুটিমুক্ত করতে আওয়ামী লীগ কাজ করছে। যারা নির্বাচন বানচাল করতে হরতাল-অবরোধ করছে তারা গণতান্ত্রিক শক্তি নয়।’
তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র একেবারেই ত্রুটিমুক্ত, পারফেক্ট ডেমোক্রেসি পৃথিবীর কোথাও রয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। বাংলাদেশের গণতন্ত্র ত্রুটিমুক্ত করতে কাজ করছে আওয়ামী লীগ।’
সেতুমন্ত্রী আজ মঙ্গলবার সকালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ৬০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানো শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘একেবারেই ত্রুটিমুক্ত বা পারফেক্ট ডেমোক্রেসি পৃথিবীর কোথাও রয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। আমরা মনে করি গণতন্ত্রের জন্য এমন একটা স্বাধীন অবস্থা আমরা তৈরি করতে পেরেছি, শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায়।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আগামী ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবস। এই মানবাধিকার দিবসে আমরা বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে একটি বড় সমাবেশ করব, এরকম একটা কর্মসূচি আমাদের ছিল। আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করেছিলাম। সে আবেদন তারা গ্রহণ করেননি। বাইরে সমাবেশের নামের শোডাউন হবে সে আশঙ্কা করছে। যে কারণে দশ তারিখে আমাদের মানবাধিকার দিবসের আনুষ্ঠানিকতা ভেতরেই পালন করব। বাইরে যে সমাবেশ করার কথা সেটি করছি না। নির্বাচনী বিধির বাইরে আমরা যেতে চাই না।’
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী আমাদের গণতন্ত্রের রাজপথের এক অকুতোভয় বীর। গণতন্ত্রই ছিল তার সারা জীবনের ব্রত। গণতন্ত্রের জন্য তিনি লড়াই করেছেন। আন্দোলন করেছেন। পাকিস্তানিদের দ্বারা বারবার নির্বাচিত হয়েছেন, জেলে গেছেন, নিগৃহীত হয়েছেন।’
এসময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার চাপা, কৃষি ও শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সৈয়দ আব্দুল আউয়াল শামীম, উপ-দপ্তর সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।