বল প্রয়োগের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখার অপরাজনীতিতে সরকার অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন।
বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘ক্ষমতায় কে আসবে বা কে আসবে না তা নির্ধারণ করবে দেশের জনগণ।’
বিবৃতিতে নেতারা উল্লেখ করেন, ‘ক্ষমতায় কে আসবে বা কে আসবে না তা নির্ধারণ করবে প্রজাতন্ত্রের জনগণ- সরকার নয়। সংবিধানে গণতন্ত্রের যে প্রতিশ্রুতি দেয়া আছে তা লঙঘন করে, নির্বাচনী পদ্ধতিকে ধ্বংস করে, বল প্রয়োগের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখার অপরাজনীতিতে সরকার অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে আবারও জনগণকে অপসারিত করার পাঁয়তারা এবং হুমকি দেশের জনগণকে আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলছে।’
বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘জনগণের সার্বভৌমত্ব, সম্মতি এবং গণতন্ত্রকে ক্রমান্বয়ে উপেক্ষা করার ভয়ংকর রাজনীতি দেশকে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের সংঘাত পরিস্থিতি দেশের আভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতাকে চরম ঝুঁকিতে ফেলে দেবে। জনগণের সম্মতির ভিত্তিতে সরকার গঠনের সাংবিধানের নির্দেশনার প্রতি সরকারকে অবশ্যই আনুগত্য পোষণ করতে হবে।’
জাতীয় স্বার্থ, নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতার প্রয়োজনে অবিলম্বে ‘জাতীয় সরকার’ এর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান নেতারা।
দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র চলছে উল্লেখ করে সংস্কার প্রক্রিয়া বিলম্ব না করে দ্রুত সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক।
তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে, যা সংস্কার প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করছে। আমি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এ বিষয়ে সজাগ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’
অবস্থান কর্মসূচিতে তিনি আরও বলেন, নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করতে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে জরুরি ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশনের সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ঢাকার সেনবাগ ফোরাম এ মানববন্ধনের আয়োজন করে। এসময় ভারতে পালিয়ে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবিলম্বে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানান ফারুক।
ফারুক দাবি করেন, বাংলাদেশে ইলিয়াস আলী ও চৌধুরী আলমের গুম এবং বহু বিরোধী নেতাকর্মীকে হত্যার সঙ্গে জড়িত শেখ হাসিনাকে বিশেষ নিরাপত্তার মধ্যে দিল্লির একটি পার্কে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে।
বিএনপি নেতা বলেন, একসময় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের কাছে গর্ব করা দেশটির রাজধানী দিল্লির একটি পার্কে হেঁটে বেড়াচ্ছেন শেখ হাসিনার মতো একজন স্বৈরশাসক। অথচ ভারত গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বিশ্বের কাছে গর্ব করে।
তিনি বলেন, 'আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে দাবি জানাচ্ছি, সেই শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনুন, যার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। তাকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে।’
ফারুক বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়া সিন্ডিকেটের সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেত্মারা জড়িত।
তিনি বলেন, ‘আলু সিন্ডিকেট, পেঁয়াজ সিন্ডিকেট ও চিনি সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িতরা আবারও সতর্ক হয়ে ষড়যন্ত্র করছে।’
আওয়ামী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে বলেও জানান বিএনপি নেতা। ‘আমরা যত বেশি অপেক্ষা করব, তত বেশি তারা নিজেদের জাহির করবে... তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে এবং তাদের থাবা ভাঙতে হবে।’
২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেনের সময় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা চাঁদাবাজির চারটি মামলার কার্যক্রম বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার এ আদেশ দেন। আদালতে তারেক রহমানের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার সানজিদ সিদ্দিকী।
ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন জানান, ২০০৩ ও ২০০৪ সালে চাঁদাবাজি করেছেন- এমন অভিযোগ এনে দুই জন ব্যবসায়ী ২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেনের সময় কাফরুল থানায় চারটি চাঁদাবাজির মামলা করেন। এসব মামলা জরুরি ক্ষমতা বিধিমালার আওতায় আনার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করা হয়। ২০০৮ সালেই মামলাগুলোর কার্যকারিতা স্থগিত করে এসব মামলার কার্যক্রম কেন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। এই রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি করে হাইকোর্ট মামলাগুলো বাতিল করেছেন।
মাহবুব উদ্দিন খোকন আরও বলেন, এ মামলায় খায়রুল কবির খোকনও আসামি ছিলেন। এখন মামলাগুলো আর কারও বিরুদ্ধে চলবে না।
জানা গেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৭ মার্চ তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করে যৌথ বাহিনী। এরপর তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, আয়কর ফাঁকি, অবৈধ সম্পদ অর্জন, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৫টি মামলা করা হয়। পরে ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্ত হয়েই উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যান তিনি। বর্তমানে সেখানেই অবস্থান করছেন তিনি।
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসররা তাদের কালো টাকা ও বেআইনি অস্ত্র নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান ও মহড়া দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
গতকাল সোমবার ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী শহীদ শাইখ আসহাবুল ইয়ামিনের কবর জিয়ারত শেষে তিনি এসব কথা বলেন। পরে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, মানুষ দু-মুঠো যাতে খেতে পারে এজন্য বাজার সিন্ডিকেট, মার্কেট সিন্ডিকেট যারা এতদিন ধরে করে রেখেছে, তাদের গ্রেপ্তার করুন। আমরা অল্প কিছু ড্রাইভ দেখতে পাচ্ছি, ব্যাপক ড্রাইভ আমরা দেখতে পাচ্ছি না। গণতন্ত্র তো হলো শান্তির পথে মানুষ যাতে বসবাস করতে পারে এবং খোলা গলায় যাতে মানুষ সমালোচনা করতে পারে, কথা বলতে পারে এটাই তো গণতন্ত্র। আইনের শাসন থাকবে, কে কোন দল করে সেটা বড় কথা নয়। যে অন্যায় করবে তাকেই পুলিশ ধরবে- এটাই গণতন্ত্র।
তিনি বলেন, গণতন্ত্র মানে শুধু নির্বাচন না, নির্বাচন গণতন্ত্রের একটি উপাদান। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন একটি উপাদান। সেখানেও একটি জটিলতা দেখছি। আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে আসছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশ তৈরি করুন। যাতে মানুষ ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তার পছন্দমতো ব্যক্তিকে ভোট দিতে পারে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, গতকাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগের লোকজন গোলাগুলি করেছে। আওয়ামী লীগের লোকজন জন-অরণ্যের মধ্যে লুকিয়ে থেকে প্রয়োজন মতো বের হয়ে তারা দেশকে অস্থিতিশীল করবে। যে কারণে অন্তর্বর্তী সরকারকে বিএনপি বারবার চাপ দিয়ে আসছে। যদি ফ্যাসিবাদের পুনর্জীবন ঘটে, তাহলে এর দায় তাদের নিতে হবে।
তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের এত দিন পার হলেও বেআইনি কোনো অস্ত্র উদ্ধার করতে পারছেন না।
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলটির ডাকা আজ শনিবারের সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ কথা জানায় দলটি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স ২৯ ধারার ক্ষমতাবলে (সভাস্থল) পাইওনিয়ার রোডের ৬৬ নম্বর ভবন, কাকরাইলসহ আশপাশের এলাকায় যেকোনো সভা, সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ প্রদর্শন নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।
জাতীয় পার্টি আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি সাময়িক স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরবর্তী কর্মসূচি জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেওয়া হবে।
এর আগে শনিবার দুপুর ২টায় রাজধানীর কাকরাইলে মিছিল ও সমাবেশের ঘোষণা দেয় দলটি। চেয়ারম্যান ও মহাসচিবসহ দলের নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ছাড়াও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের দাবিতে এ সমাবেশ ডেকেছিল জাতীয় পার্টি। একইদিন জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে গণপ্রতিরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতা। এ অবস্থায় অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে রাজধানীর কাকরাইল ও আশপাশের এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।
ডিএমপি কমিশনার মাইনুল হাসান স্বাক্ষরিত গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সর্বসাধারণের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে সম্প্রতি উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় জনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স (অর্ডিন্যান্স নম্বর ১১১-৭৬)–এর ২৯ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে আগামীকাল শনিবার পাইওনিয়ার রোডের ৬৬ নম্বর ভবন, পাইওনিয়ার রোড, কাকরাইলসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় যেকোনো ধরনের সভা, সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা, বিক্ষোভ প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হলো।
জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘আমাদের দেশের আকাশে সাড়ে ১৫ বছর কালো মেঘের ছায়া ছিল। মেঘ কেটে যায়নি। আমরা সবাই সচেতন নাগরিক হিসেবে এটা টের পাচ্ছি। এই সময়ে জাতীয় ঐক্যের বড়ই প্রয়োজন। এই সময়টা বিভক্তির নয়। এই সময়টা ব্যক্তি স্বার্থ দেখার নয়। এই সময়টা দলীয় স্বার্থও দেখার নয়। এই কথাটা আমরা যেন বুঝি, আমরা যেন মেনে চলি।’
শুক্রবার রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নবনির্বাচিত আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় তিনি গণ-আন্দোলনে আওয়ামী লীগ বিদায় নিলেও ‘জুলুম’ শেষ হয়নি বলেও মনে করেন। তাই এমন সময়ে জাতীয় স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াত আমির।
জামায়াত আমির বলেন, ‘আমাদের জাতি বড়ই মজলুম। সাড়ে ১৫ বছরের জুলুমের সবকিছু শেষ হয়ে যায়নি। এখনো তার অনেক রেশ রয়ে গেছে। আবার নতুন-নতুন অনেক সমস্যাও দেখা দিচ্ছে।’
ঐক্যের প্রসঙ্গে নিজেদের দৃঢ় প্রত্যয়ের ঘোষণা দিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে কথা দিচ্ছি, এই আওয়াজে আমরা সবার আগে দৌড়ে যাব ইনশা আল্লাহ। দুনিয়ার বিভিন্ন জায়গায় জাতিসত্তার অনেক উত্থান-পতন হয়েছে। আমাদের এই জাতি স্বাধীনতার ৫৩ বছরে অনেক উত্থান-পতন দেখেছে।’
জুলাই বিপ্লবের’ অর্জন জামায়াতের নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা অকপটে স্বীকার করি, এটি আমাদের অর্জন নয়। আমাদের চেষ্টার ফসল নয়। বরং এটি আল্লাহতায়ালার একান্ত মেহেরবানি।’
অন্যান্য ইস্যু থেকে সরে এসে যত দ্রুত সম্ভব অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের দিকে নজর দিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
'জাতি হিসেবে টিকে থাকতে হলে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই' এ কথা উল্লেখ করে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আমাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করা। কারণ, আমরা সবাই রাজনৈতিক কর্মী। আমরা রাজনীতি করি দেশ ও দেশের মানুষের জন্য। তাই, অল্প সময়ের মধ্যে আপনারা (অন্তর্বর্তী সরকার) একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন-এটা আমাদের প্রত্যাশা।’
বুধবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে সার্চ কমিটির ঘোষণার প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন,‘আমাদের প্রত্যাশা ছিল সার্চ কমিটি ঘোষণার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ব্যবস্থা করে দলগুলোর পরামর্শ নেওয়া হবে। কিন্তু তা করা হয়নি। তবে এটাকে বড় ধরনের সমস্যা মনে করছি না। আমরা মনে করি- দ্রুত ইলেকশন কমিশন হোক এবং ইলেকশন কমিশন অতি দ্রুততার সঙ্গে তাদের কাজটা করবে।'
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, অন্তর্বর্তী সরকারের ভিন্ন কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা নেই। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে দেশের মানুষ ভালবাসে। এজন্য তাঁর অবশ্যই খেয়াল রাখা উচিত, যাতে মানুষের কাছে তাঁর এ অবস্থান নষ্ট না হয়। আমরা প্রত্যাশা করবো, সংস্কার কমিটির সদস্যরা দ্রুতই সকল রিপোর্ট জনগণের সামনে উন্মুক্ত করবেন। তবে, এমন কিছু করা যাবে না, যা দেশ ও সংস্কৃতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়।’
রাষ্ট্র মেরামত কিংবা পরিবর্তন অথবা সংস্কার - যেটাই বলা হোক না কেন তা অবশ্যই করতে হবে যুগোপযোগী- এ কথা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা কঠিন এক সময় পার করছি। এই সময়ে আবেগের বশবর্তী হয়ে কোনো কাজ করলে রাষ্ট্র বিপদে পড়ে যেতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারে পলিটিক্যাল কোনো লোক নেই। আর রাজনীতিবিদ ছাড়া কোনো সংস্কারই সফল হতে পারে না। তাছাড়া, বাংলাদেশের রাজনীতিও সহজ নয়। তবে, আমরা ধৈর্য্যের সঙ্গে কাজ করছি।
বিগত আওয়ামী লীগের বিগত ১৫ বছরে ১ লাখ ২৫ হাজার মামলায় সারা দেশের ৬০ লাখ মানুষকে আসামি করার কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখানে এমন লোক খুব আছে, যারা কারাগারে যায়নি, এমন লোক কম আছে, যারা মামলা খায়নি। ফাঁসি থেকে শুরু করে হত্যা, গুম, খুন—সবকিছু এই দেশে আওয়ামী লীগ করেছে। সেখানে রাতারাতি আমরা সব পরিবর্তন করে ফেলতে পারব না...একটা সময় দিতে হবে, ধৈর্য ধরতে হবে,...টলারেন্স। আমরা আশা করব, অতি দ্রুত এবং তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) অবশ্যই চেষ্টা করছে।’
এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক পার্টি- ‘জাগপা’র চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার লুৎফর রহমান প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ‘আমরা বলতাম হাসিনাবিহীন বাংলাদেশ চাই- আজকে হাসিনাবিহীন বাংলাদেশ পেয়েছি, এখন আওয়ামীবিহীন বাংলাদেশ করতে হবে।
সোমবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত এক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আওয়ামী লীগ, ভদ্রলোক আর আওয়ামী লীগের গণতন্ত্র পাশাপাশি চলতে পারে না।’
তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগ চলে গেছে, আমরা ভেবে ভেবে খুশি হই। কিন্তু খুশি হওয়ার কোনো কারণ নেই। এদের চর-অনুচর এখনো বাংলাদেশের রাজনীতি, সংস্কৃতি, সচিবালয়, পুলিশ, মিলিটারি- যেখানে বলেন, এদের চর রয়ে গেছে। এদের রেখে কোনো পরিস্থিতিতেই আপনি পরিপূর্ণ গণতন্ত্র বাংলাদেশে কায়েম করতে পারবেন না।’
আব্বাস বলেন, 'জামায়াতে ইসলামী, বিএনপি ও অন্যান্য দল বিভিন্ন কথা না বলে, যদি একটি কথায় আসতে পারি, যদি ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে পারি, তাহলে দেশটা পুনর্গঠিত হবে। না হলে এই দেশটা নিয়ে সারা জীবন আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত কিন্তু খেলতেই থাকবে। এটা কখনোই হতে দেওয়া যাবে না।'
জামায়াত নেতাকর্মীদের বিএনপি চেয়ারপাসন বেগম খালেদা জিয়ার সালাম ও শুভেচ্ছা জানান মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, গত রাতে তিনি দলের চেয়ারপারসনকে জামায়াতের আলোচনা সভায় অংশ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, 'বিগত দিনে কোনো এক সময় হয়তো আমরা একসঙ্গে হতে পারিনি। কোনো এক সময় হয়তো একসঙ্গে হয়ে আওয়ামী লীগকে তাড়িয়েছিলাম। আমরা আগামী দিনে সব সময়ের জন্য, দেখি চেষ্টা করে পারি কি না, একসঙ্গে হয়ে এই দেশটাকে আবারও সুন্দর করে পুনর্গঠিত করতে পারি কি না।'
সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, নানা ধরনের সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টির জন্য চেষ্টা চলছে, পাঁয়তারা চলছে।
বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে রোববার এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের উদ্যোগে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু করে ৫ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত রাজধানীতে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে শাহাদাতবরণকারী শহিদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এ মতবিনিময় সভা, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সংবিধানের সংকট যদি হয়, রাষ্ট্রীয় সংকট যদি হয়, রাজনৈতিক সংকট যদি হয়, সেই সংকটের পিছে কী শক্তি আছে সেইটা আমাদের আগেই অ্যানালাইসিস করতে হবে। বিপ্লবের পরে বিপ্লবের ফসল ছিনতাই হয়ে যায় নাকি সেটা চিন্তা করতে হবে। সুতরাং রাষ্ট্রীয় সংকট যাতে সৃষ্টি না হয়, সাংবিধানিক সংকট যাতে সৃষ্টি না হয়, সেই সংকট সামনে রেখে পতিত ফ্যাসিবাদ যাতে সুযোগ নিতে না পারে সেই বিষয়ে আমাদের সজাগ থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে। আমাদের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নেই। ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ জনতার দাবি। সিদ্ধান্ত সারা দেশে প্রশংসিত হয়েছে, সবাই গ্রহণ করেছে।’ আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ করা জনতার দাবি উল্লেখ করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, ‘গুলি করে ছাত্র মারার পর আওয়ামী লীগ আবার এই দেশে রাজনীতি করার সুযোগ পাবে কিনা তা জনতার আদালতে সিদ্ধান্ত হবে। ট্রাইবুনালে একটা সংশোধনী আনার কথা শুনছি। সংগঠন হিসেবে, রাজনৈতিক দল হিসাবে যদি গণহত্যার সঙ্গে জড়িত হয় তাহলে রাজনৈতিক দলের প্রধান হিসাবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও দলের বিচার হবে। সেই সংশোধনী যদি আইনে আনে এবং ট্রাইবুনালে যদি বিচার হয় সেই বিচারের ফলাফল কী হয় তখন দেখা যাবে। আমরা এখন কোনো ফয়সালা দিতে চাই না। গণহত্যাকারী কোন দল বাংলাদেশের রাজনীতি করতে পারবে কি না তা আদালত ও দেশের জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে।’
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘প্রশাসনিক আদেশে বা আমি-আপনি চাইলে কেউ নিষিদ্ধ হোক সেই দায়িত্ব আমরা নিতে চাই না। দেশের জনগণ যদি চায় তাহলে জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দল হিসেবে সিদ্ধান্ত নেবে।’ এদিকে গতকাল সকালে সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ এলডিপির প্রতিনিধি সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, ‘এখন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ঘোলাটে করার জন্য একটা প্রগতিশীল চক্র চেষ্টা করে যাচ্ছে। তার ইঙ্গিত বহন করে বঙ্গভবনের সামনে হওয়া মিছিল। নতুন করে আরেকটা রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করার চক্রান্ত আমরা দেখতে পাচ্ছি। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অস্থিতিশীল করার জন্য ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ১২ দলীয় জোটসহ সবাইকে প্রস্তুতি নিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকার আমাদের ওপর অনেক নির্যাতন ও নিপীড়ন করেছে। চৌধুরী আলম-ইলিয়াস আলীসহ হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে গুম-খুন করেছে। নির্যাতনের জন্য আয়নাঘর তৈরি করেছে। হারুন- বিপ্লবদের মতো লোক তৈরি করে বহু মায়ের বুক খালি করেছে।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বলেন, রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করেছে শেখ হাসিনা। ষড়যন্ত্র করে সংবিধান পরিবর্তন যদি না হতো, তাহলে সংসদীয় রাজনীতির মাধ্যমে এই দেশ পরিচালিত হতো। কিন্তু সেই সংসদীয় রাজনীতিকে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আড়াই মাস অতিক্রান্ত হয়েছে। এখনো বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের রাজনৈতিক মামলা প্রতাহ্যার হলো না। মন্ত্রণালয়ের যারা দায়িত্বে আছেন তারা এখনো শ্বেতপত্র প্রকাশ করেনি। কোন মন্ত্রণালয় কত হাজার কোটি টাকা লুট করেছে, তাও প্রকাশ করা হচ্ছে না।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘আপনার প্রতি আমাদের বিশ্বাস আছে, এটা টিকিয়ে রাখতে হলে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশে নির্বাচনের তারিখ অবিলম্বে আপনি ঘোষণা করেন। তাহলে আমরা বুঝতে পারব, দেশ কোনো দিকে যাচ্ছে। যারা রাজনীতি করে তারাই দেশ পরিচালনা করবে। আমরা আশা করব, অবিলম্বে শেখ হাসিনার জঞ্জাল মুক্ত করবেন।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। সময় এসেছে জনগণের ভোটের মধ্য দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার। বিএনপি আগেই ৩১ দফা দিয়েছে। এখান থেকে সংযোজন বিয়োজন করে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই নির্বাচনী সংস্কার সম্ভব।
শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির ষষ্ঠ কাউন্সিল অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
যে জাতীয় ঐক্যের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার পতন হয়েছে তা ধরে রাখতে সব রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার পরে বাংলাদেশের মানুষের মনোজগতের পরিবর্তন এসেছে। মানুষের আকাঙ্ক্ষা জেগেছে। মানুষের নতুন ভাবনা জেগেছে। আগামীর বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হলে আমাদের এই জাতীয় ঐক্য অটুট রাখতে হবে। এই জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে আমাদের গন্তব্য সুন্দর করতে হবে। সেই গন্তব্যস্থলটা কোথায়? সেই গন্তব্যস্থল হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের মালিকানা তাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া।
আমীর খসরু বলেন, গত ১৫-১৬ বছর ধরে দেশে জনগণের কোনো ক্ষমতা ছিল না। আওয়ামী সরকার মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে তাদের বঞ্চিত করেছে। এখন সময় এসেছে জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনের নজরদারিতে থাকতাম। জেলে যাওয়ার আশঙ্কা সব সময় থাকত। এখন একটু রাতে ঘুমাতে পারছি।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক আব্দুল হালিম, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা চায় বিএনপি। এ সময়ের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার রোডম্যাপ স্পষ্ট না করলে রাজপথে নামবে বলেও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলটির শীর্ষ নেতারা।
সভা সূত্রে জানা যায়, নির্বাচন ও সংস্কার ইস্যুতে বিএনপির অবস্থান হচ্ছে তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করবে, যাতে করে সরকার একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে পারে। দলটি মনে করে, সরকারের রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কার ও নির্বাচনী প্রস্তুতি একসঙ্গে চলতে পারে। এতে তাদের কোনো আপত্তি নেই। কারণ, বিএনপিও প্রয়োজনীয় সংস্কার চায়। এজন্য দলটি সরকারের সংস্কার প্রস্তাবের সঙ্গে সহমতও পোষণ করেছে।
তবে নির্বাচন কবে হবে সে বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট সময় ঘোষণার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে তাগিদ দিয়েছে বিএনপি।
বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গত সোমবার রাতের ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি বৈঠকে সংযুক্ত ছিলেন।
মেয়াদের তিন মাস অতিক্রান্ত হলেও অন্তর্বর্তী সরকার এখনো রোডম্যাপের বিষয়টি স্পষ্ট না করায় নির্বাচন নিয়ে আসলে তাদের চিন্তা কী, অথবা নির্বাচন ছাড়া তারা কত দিন ক্ষমতায় থাকতে চায় কিংবা তারা ক্ষমতা ও নির্বাচনকে দীর্ঘায়িত করতে চায় কি না, এটা নিয়ে বিএনপি নেতাদের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। নেতারা বৈঠকে এমন অভিমত ব্যক্ত করে বলেছেন, সরকার সংস্কারের কথা বললেও নির্বাচন নিয়ে তাদের স্পষ্ট কোনো বক্তব্য নেই। তাই তারা সরকারকে অবিলম্বে নির্বাচনী রোডম্যাপ ইস্যুতে অবস্থান স্পষ্ট করার দাবি জানান।
এ সময় বলা হয়, সরকার ঘোষিত দশটি সংস্কার কমিশনের পাশাপাশি বিএনপির পক্ষ থেকেও ছয়টি ছায়া কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব কমিটির সুপারিশমালা তারা সরকারকে দেবে। তবে বিএনপি নেতারা বলছেন, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটা অব্যাহত থাকবে। তাদের রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা রূপরেখায়ও সংস্কারের কথা বলা আছে। তবে দেশের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। তারা এখন ভোট দিতে উদগ্রীব। জনগণ দ্রুত নির্বাচন চায়। তাই সরকারের উচিত, নির্বাচনমুখী প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। এজন্য বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারকে নির্বাচন কমিশন (ইসি), প্রশাসন এবং বিচার বিভাগকে প্রাধান্য দিয়ে সংস্কার কার্যক্রম চালানোর জন্য বলা হয়েছিল।
এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচন নিয়ে সরকারের দুয়েকজন উপদেষ্টা যে ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন, সেটাকে ভালোভাবে নেয়নি বিএনপি। সোমবারের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
‘রাজনীতিবিদরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য উশখুশ করছেন’-অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক উপদেষ্টার এমন বক্তব্যে গত রোববার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ওই দিন রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ইঙ্গিত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আবারও চক্রান্ত করে বিএনপিকে বাদ দিয়ে কিছু করার চেষ্টা করতে যাবেন না। এটা বাংলাদেশের মানুষ কখনোই মেনে নেবে না। একবার বিরাজনীতিকরণের ‘মাইনাস টু’ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। আবারও ওই রাস্তায় যাওয়ার কথা কেউ চিন্তা করবেন না।
এ ছাড়া গত মঙ্গলবার জ্বালানি উপদেষ্টার দেওয়া এক বক্তব্যকে পাল্টা কটাক্ষ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘বর্তমানে সংস্কারের কোনো লক্ষণ আমরা দেখতে পাচ্ছি না। নির্বাচন নিয়ে আপনারা কোনো কথা বলছেন না। আমরা নির্বাচনের কথা বললেই আপনারা বলেন, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আমরা উদ্গ্রীব হয়ে পড়েছি। এখন আমরা যদি বলি, আপনারা নির্বাচনের কথা না বলে ক্ষমতায় থাকার জন্য পাগল হয়ে গেছেন। সুতরাং কোনো রকম ছলচাতুরি করবেন না। জাতিকে ধোঁয়াশায় রাখবেন, তারা তামাশা দেখবে, এমনটা হবে না।’
তবে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এখনো নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ বা সময় নির্ধারণ নেই। বরং গত সোমবার নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হাকোন অ্যারাল্ড গুলব্রান্ডসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম আগের মতোই বলেন, প্রয়োজনীয় সব সংস্কার শেষে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলটির নেতারা উপদেষ্টার এই বক্তব্যের ঘোরতর আপত্তি জানান। তারা বলেন, অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তো ইতোমধ্যে ঐকমত্য হয়েই আছে। এখানে নতুন কোনো ঐকমত্য হওয়ার কিছু নেই। ফলে সরকার নির্বাচন ছাড়াই দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকতে চায় কি না, উপদেষ্টা নাহিদের এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সে বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন নেতারা।
এদিকে সরকার এখনো নির্বাচনী রোডম্যাপ স্পষ্ট না করায় দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে মনে করেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। বৈঠকে তারা অভিমত দেন, রোডম্যাপ স্পষ্ট করলেই বর্তমান অস্থির অবস্থা কেটে যাবে। এর মধ্য দিয়ে দেশও নির্বাচনের পথে যাত্রা শুরু করবে। ফলে তখন সবাই নির্বাচনমুখী হয়ে পড়বেন। নইলে নতুন নতুন ইস্যু আসতেই থাকবে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারকে নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। দলটি অবিলম্বে তার পদত্যাগ চায়। কারণ, আলী ইমাম মজুমদারকে বিতর্কিত কর্মকর্তা মনে করেন তারা। সে কারণে তাকে সরকারে রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে অভিমত নেতাদের।
বৈঠকে ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের কর্মসূচি জোরালোভাবে পালনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এই কর্মসূচি শেষে নতুন কর্মসূচি দেওয়া নিয়েও আলোচনা হয়। এ ক্ষেত্রে দেশব্যাপী সাংগঠনিক জেলাগুলোতে সমাবেশের কর্মসূচি আসতে পারে। তবে পরবর্তী কর্মসূচি চূড়ান্ত হয়নি। এ ছাড়া পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা রূপরেখাকে সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাপক আকারে তুলে ধরারও সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে।
দেশের ১০ ইউনিটে কমিটি দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। সোমবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর উত্তরসহ চারটি মহানগর কমিটি দিয়েছে বিএনপি। এ ছাড়া ছয় জেলায় কমিটি দেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে কোথাও পূর্ণাঙ্গ, কোথাও আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
মহানগর কমিটিগুলো হলো ঢাকা মহানগর উত্তর আংশিক আহ্বায়ক কমিটি, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি, বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি, সিলেট মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি।
জেলা কমিটিগুলো হলো মৌলভীবাজার জেলা আহ্বায়ক কমিটি, সুনামগঞ্জ জেলা আহ্বায়ক কমিটি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আহ্বায়ক কমিটি, কুষ্টিয়া জেলা আহ্বায়ক কমিটি, ময়ময়নসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির আংশিক আহ্বায়ক কমিটি এবং শেরপুর জেলা বিএনপির আংশিক আহ্বায়ক কমিটি।
আমিনুল হককে আহ্বায়ক করা হয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির।
কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে রাখা হয়েছে মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, এস এম জাহাঙ্গীর, ফেরদৌসী আহমেদ মিষ্টিকে। এদিকে আব্দুর রাজ্জাককে যুগ্ম আহ্বায়ক (দপ্তর) ও মোস্তফা জামানকে সদস্য সচিব করা হয়েছে।
আগামী দিনে যাতে ফ্যাসিস্টরা আর ফিরে আসতে না পারে সেদিকে ছাত্র-জনতাকে খেয়াল রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ফ্যাসিবাদকে চিরতরে নির্মূলের জন্য দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে রোববার দুপুরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের দায়িত্ব গ্রহণ উপলক্ষে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের জনপ্রিয় নেতা ডা. শাহাদাত হোসেন ভোটে প্রতিযোগিতা করে জয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্টরা জোরপূর্বকভাবে সেই ফলাফল কেড়ে নিয়েছিল।
বিচার বিভাগকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, বিচার বিভাগ ন্যায় বিচারের মাধ্যমে ডা. শাহাদাতকে নির্বাচিত ঘোষণা করেছে। আদালতের রায় মেনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে ডা. শাহাদাতকে শপথগ্রহণের ব্যবস্থা করায় অন্তর্বর্তী সরকারকেও ধন্যবাদ জানান বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্টদের বিদায় জানানো হয়েছে। আগামী দিনগুলোতে যাতে ফ্যাসিস্টরা আর ফিরে আসতে না পারে, সে ব্যবস্থা করতে হবে। জনগণের দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে, যাতে ফ্যাসিবাদ চিরতরে নির্মূল হয়। আগামী জাতীয় নির্বাচন যেন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়, সেই প্রত্যাশা সবার বলে দাবি করেন মির্জা ফখরুল।
চট্টগ্রাম সিটির মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের যে ইশতেহার ছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন হবে গ্রিন ও ক্লিন সিটি করপোরেশন; সেলক্ষ্যে আমি কাজ করে যাব। চট্টগ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শ্রদ্ধা নিবেদনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেলসহ চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি ও বিভাগীয় নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘দেশ পরিচালনার দায়িত্ব কখনো জামায়াতে ইসলামী পেলে মালিক হিসেবে নয়, সেবক হিসেবে কাজ করবে। বাংলাদেশকে একটি মানবিক বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলা হবে।’ নওগাঁর নওজোয়ান মাঠে আজ শনিবার দলটির নওগাঁ জেলার সদস্য (রুকন) সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াতের আমির বলেন, জনগণের সহযোগিতা ও সমর্থনের জন্য তাদের দুয়ারে দুয়ারে যাব এবং কৃতজ্ঞতা আদায় করার সুযোগ নেব। যারা অতীতে মালিক হয়েছেন তাদের পরিণতি চোখের সামনে আমরা দেখতে পেয়েছি। দূর অতীতেও দেখেছি, নিকট অতীতেও দেখেছি। এর থেকে সকল রাজনৈতিক দলের শিক্ষা নেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, ‘মানুষের সঙ্গে গাদ্দারি করলে কী হয়, ধোঁকা দিলে কী হয়, মালিক বনলে কী হয়, জুলুম করলে কী হয়, লুট করলে কী হয়, অপরাধ করলে কী হয়, ব্যাংকিং সেক্টর থেকে অর্থ লুট করলে কী হয়- এর থেকে আমাদের সকলের শিক্ষা নেওয়া উচিত।’
‘আমরা আশা করব, আমরা সবাই শিক্ষা নেবে। তাহলে আগামীতে আমাদের সন্তানেরা যেজন্য জীবন দিয়েছে ও পুঙ্গত বরণ করেছে, তাদের আশা পূরণ হব। এই যাত্রায় আমরা আমাদের সাংবাদিক বন্ধুদের বিশেষ সহযোগিতা চাই। তারা যেন আমাদের সোজা-সাপটা কথাগুলো তুলে ধরে।’
ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে শফিকুর রহমান বলেন, ‘একটা কথা স্পষ্ট করতে চাই। যারা একটা জাতিকে বিভিন্ন ধোয়া তুলে টুকরা টুকরা করে তারা কোনো দিন জাতির মঙ্গল চায় না। এই বিভক্তি আর চলতে দেওয়া যায় না। দেশ ও জাতিকে সামানের দিকে এগিয়ে নিতে হবে, দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার পক্ষে জামায়াতে ইসলামী। আমরা মানুষকে মানুষের মর্যাদা দিতে চাই। আমরা দল ও ধর্মের ব্যবধান না করে মানুষকে দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’
জামায়াতে ইসলামীকে বাংলাদেশের সবচাইতে মজলুম দল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে খুন, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অপরাধের একটা স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছিল আওয়ামী লীগ। আমাদের কলিজার টুকরা নেতৃত্বকে বিচারের নামে প্রহসন করে তারা হত্যা করেছে। আমরা শত শত কর্মীকে হত্যা করেছে। অসংখ্য নেতাকর্মীকে গুম করেছে। ঘরবাড়ি ধ্বংস করেছে।’
‘বাংলাদেশের সবগুলো জামায়াতের ইসলামীর কার্যালয় সিলগালা করেছে। আমাদের দলের নিবন্ধন অন্যায়ভাবে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। দিশেহারা এ বছরের পহেলা আগস্ট আমাদের দলকে তারা নিষিদ্ধ করেছে। এই বিবেচনায় বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সবচেয়ে মজলুম দল। এর চেয়ে মজলুম দল আর বাংলাদেশে নাই।’
শফিকুর রহমান বলেন, ‘সাড়ে ১৫ বছর আগে এই আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। সর্বশেষ জুলাই আন্দোলনে আমাদের সন্তানেরা বুকের তাজা রক্ত রাজপথে ঢেলে দিয়েছে। রাজপথে আমরা আমাদের সন্তানদের নামাজ আদায় করতে দেখেছি। এই আন্দোলন কোনো নির্দিষ্ট আদর্শের ছিল না। এই আন্দোলন মানুষের মুক্তির সংগ্রামের আন্দোলন ছিল।’
‘এই আন্দোলনের মূল কৃতিত্ব আল্লাহর। এই আন্দোলনকে বাস্তবায়ন করেছে আমাদের সন্তানেরা। দেশের ১৮ কোটি মানুষ এই আন্দোলনের সাথে ছিল। নির্দিষ্ট কোনো দলের ভিত্তিতে এই আন্দোলনকে বিভক্ত করতে চাই না। এখন আমাদের অ্যাসিড টেস্ট শুরু করেছে। দেশের প্রত্যাশা পূরণ করতে তরুণেরা যেই দেশপ্রেম বুকে নিয়ে শহীদ হয়েছে, পুঙ্গত বরণ করেছে তা পূরণ করার দায়িত্ব নিয়েছে বর্তমান সরকার। আমরা যারা রাজনীতিবিদ রয়েছি তাদেরও দায়িত্ব রয়েছে।’
নওগাঁ রুকন সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জামায়াতে ইসলাম নওগাঁ জেলা শাখার আমির ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য খ ম আব্দুল রাকিব। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও রাজশাহী অঞ্চল পরিচালক অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দীন, রাজশাহী অঞ্চল সহকারী পরিচালক রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।