দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি ও শরিক দলগুলো নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে। দাবি আদায়ে চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়ার কথাও বলছেন দলের নেতারা। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও ভোটে জয়ী হয়ে ফের ক্ষমতায় থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ যেন হয় সে জন্য পরিবেশ তৈরি করছে সরকার। একদিকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে সরকারপ্রধানের সফর, ইউরোপীয় ইউনিয়নকে নির্বাচনী পর্যবেক্ষক পাঠানোর আহ্বান, অন্যদিকে স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ভূমিকার মাধ্যমে বিএনপিকে নির্বাচনমুখী করার পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে ক্ষমতাসীনরা।
দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোতে বিএনপি অংশ নিচ্ছে না। তবে গাইবান্ধার নির্বাচন স্থগিত করা, গাজীপুরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের আচরণবিধি নিয়ে তলব করা, সিটি করপোরেশনের ভোটে সিসি ক্যামেরা বসানোসহ নির্বাচন কমিশন তার কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ তৈরি হয় এমন ইঙ্গিত দিচ্ছে। তা ছাড়া বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর দাবি ছিল ভোটে ইভিএম ব্যবহার না করা। নির্বাচন কমিশন সেই সিদ্ধান্ত থেকেও সরে এসেছে। সরকারি দলও এ নিয়ে কোনো আপত্তি করেনি।
বর্তমান কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে স্থানীয় সরকারের সহস্রাধিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে এসব নির্বাচনের কোনোটিতেই বিএনপি দলগতভাবে অংশ নেয়নি। অবশ্য এর আগে কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশনের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়। তবে সেসব নির্বাচনে ইসির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিএনপি নেতারা।
একদিকে বিএনপিকে নির্বাচনে আনার ব্যাপারে পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে সংবিধানের ভেতরে থেকে আওয়ামী লীগ চেষ্টা চালাচ্ছে, অন্যদিকে বিএনপি বলছে, নির্দলীয় সরকার না হলে তারা নির্বাচনে আসবে না। বিএনপি কঠোর কর্মসূচির দিকে যাবে কি না, সে আভাসও মিলছে না। এমন পরিস্থিতিতে এই দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের সমঝোতা হবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকে যাচ্ছে।
আন্দোলনের বিকল্প কি নির্বাচন, জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘আমরা এর আগেও আওয়ামী লীগের প্রতিশ্রুতিতে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। তবে আওয়ামী লীগ তার কথা রাখে নাই। তাই কোনো অবস্থাতেই আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। বরং নির্বাচনকালীন সরকারের প্রস্তাব আওয়ামী লীগের পুরোনো কৌশল।’
অবশ্য আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব ও কর্তব্য। কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ করা না-করার ওপর নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নির্ভর করে না।’
সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যাবে কি না, জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কমিশনের অধীনে। সেই কমিশনের অধীনে সব দল নির্বাচনে আসবে। সেই নির্বাচনে যারা অংশগ্রহণ নেবে সেই অংশগ্রহণের মধ্য দিয়েই নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যেই নির্বাচনটি হবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য।’
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিরোধী দলের অব্যাহত আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের ভেতরে বিভিন্ন সময় কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়েছে, হচ্ছে। নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপিকে রাখার বিষয়ে দলের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যকে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে দেখছে।
তবে বিএনপি নেতারা বারবার বলে আসছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি যাবে না। আসন্ন পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অবশ্য বিএনপি প্রার্থীদের প্রচারণা ও অংশ নেয়ার উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। তবে দলীয়ভাবে বিএনপির সিদ্ধান্ত হলো, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনেই তারা অংশ নেবে না।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনও হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে। এখন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের পুরোনো দাবিতেই আন্দোলনে রয়েছে। দাবি আদায়ে এবার দলটি চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়ার কথা বলছে।
এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ তাদের অধীনে নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপিকে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় দেয়ার সেই পুরোনো প্রস্তাব সামনে নিয়ে এসেছে। এর সঙ্গে আওয়ামী লীগ বিএনপিকে পুরোনো শর্তের কথা বলছে- ‘বিএনপিকে আগে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিতে হবে’।
গত ৭ মে বনানীর সেতু ভবনে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ সময় তিনি বলেন, কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত যদি নিতে হয়, তাহলে সংবিধানের মধ্যেই থাকতে হবে। সংবিধানে ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ থাকলে আপনি যেটা বললেন, এটাতে কোনো অসুবিধা নেই।’
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, “বিএনপি যদি বলে, ‘আমরা নির্বাচনে আসব’। নির্বাচনে এলে তখন এক কথা। তারা নির্বাচন করবেই না তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া। তারা এই সংসদকে চায় না। মন্ত্রিসভা, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চায়। এসব শর্তারোপের মধ্যে আমরা কীভাবে বলব যে, আপনারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিতে আসুন বা অন্য কোনো মন্ত্রণালয় আপনাদের দিচ্ছি? তাদের তো সম্পূর্ণ উত্তর আর দক্ষিণ মেরুর অবস্থান।’
ওবায়দুল কাদেরের এ বক্তব্য নিয়ে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর প্রতিক্রিয়া অবশ্য নেতিবাচক। এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। বর্তমান সরকার পদত্যাগ করার পর নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের ব্যাপারে আলোচনা হতে পারে, এটিই বিএনপির বর্তমান অবস্থান।’
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, সরকারবিরোধী আন্দোলনে নতুন কর্মসূচিগুলোর বিষয়ে তারা শরিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে। নতুন কর্মসূচিগুলো হবে শরিকদের সঙ্গে যুগপৎভাবে। তবে এই যুগপৎ আন্দোলন কতদিন চলবে বা চূড়ান্ত আন্দোলনের সময় কখন আসবে- এগুলো এখনো নির্ধারণ করতে পারেনি দলটি।
এদিকে সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। আগামী শনিবার (১৩ মে) রাজধানী ঢাকায় মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি যৌথভাবে এই বিক্ষোভ সমাবেশ করবে।
বিএনপির এই কর্মসূচি ঘোষণার এক দিন পর পাল্টা কর্মসূচি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও আগামী ১৩ মে রাজধানীর মিরপুর-১০ এলাকায় সমাবেশ করার ডাক দেয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এই সমাবেশ হবে। এতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, সঙ্গীদের সঙ্গে লিয়াজোঁ বৈঠকে বিএনপি আন্দোলনের গতিপথ কোন দিকে নেয়া যেতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করছে। এ নিয়ে শরিক দলগুলোর মত হলো, একটি অভিন্ন ও কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচির মাধ্যমের যুগপৎ আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে হবে। কঠোর কর্মসূচি ছাড়া এ সরকারের পতনসহ বাকি দাবিগুলো আদায় করা সম্ভব নয়। অন্যদিকে বিএনপি নেতাদের মত হলো, ঈদুল আজহার আগেই এই যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচিকে কঠোর কীভাবে করা যায় সে বিষয়ে জোর দিতে হবে।
আগামী দু-এক মাসের মধ্যে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি আসছে কি না, জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আন্দোলন একটা ঢেউয়ের মতো। এটার গতি কখনো ওঠে, আবার কখনো নামে। সেটা জনগণের পরিপ্রেক্ষিত বুঝে নিয়েই আন্দোলনটা করতে হয়। শরিকদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। সে আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে এসেছে।’
একই প্রশ্ন ছিল দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমানের কাছে। জবাবে তিনি দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘কোনো কিছুতেই এই আন্দোলন আর দমে যাবে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি চেষ্টা করছে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের পদত্যাগ করানো।’
আন্দোলন সহিংস নাকি অহিংস হবে, জানতে চাইলে সেলিমা রহমান বলেন, ‘আন্দোলন কঠোর হবে কি না বা কোন দিকে যাবে, তা আগামীতে সময় ও পরিস্থিতিই বলে দেবে।’
বিএনপি নেতারা বলছেন, ‘১০ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের পদযাত্রা, বিক্ষোভ সমাবেশসহ রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলোতে বিএনপি নেতাদের বক্ত্যবের সুর একটাই- আগে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। তারপর তাদের ১০ দফা মেনে নিতে হবে। এর আগে এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না।
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, গত বছরের ১০ ডিসেম্বরের পর থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মামলা-হামলাসহ নানা রকম নিপীড়ন চালানো হচ্ছে সরকার ও সরকারি দলের পক্ষ থেকে। দলের অনেক নেতা-কর্মী যেমন বিভিন্ন মামলায় আদালতে হাজির হচ্ছেন, কারাগারে যাচ্ছেন। আবার অনেকেই বাড়িতে থাকতে পারছেন না। পাশাপাশি বিএনপির কর্মসূচির দিনে পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা। এমন পরিস্থিতি আন্দোলনের গতি ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। মূলত সরকার আন্দোলনের শক্তিকে দুর্বল করতেই এমন ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। তার পরও বিএনপি ও যুগপৎ সঙ্গীরা আন্দোলনকে জোরদার করতে দফায় দফায় বৈঠক করে কৌশল নির্ধারণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
যুগপৎ আন্দোলনে কোনো কঠোর কর্মসূচি আগামীতে আসছে কি না, জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বিএনপি এখনো মনে করছে, শরিকদের নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচির বিষয়ে ঘোষণা দেয়ার মতো সময় এখনো হয়নি। কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার এখনো সময় আসেনি। সময় এলেই তা গণমাধ্যমে দেশবাসীকে জানানো হবে।’
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নরসিংদীর ৫টি আসনের মধ্যে ৪টিতে নৌকার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াই হবে ৪ আওয়ামী লীগ নেতার। তাদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান মন্ত্রী, সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্যও। ইতোমধ্যে এসব আসনে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস মিলেছে। আওয়ামী লীগের ৪ নেতার মধ্যে নরসিংদী-৩ শিবপুর আসনে সাবেক সংসদ সদস্য মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লা এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। অন্যদিকে স্বতন্ত্রের লড়াইয়ে ভোটযুদ্ধে নামা দুজন সদ্য উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে সংসদ নির্বাচনের লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন। তারা হলেন- নরসিংদী-৪ (মনোহরদী-বেলাব) আসনে মনোহরদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম খান বীরু (প্রতীক ঈগল) এবং নরসিংদী-৫ (রায়পুরা) আসনে উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরী। এ ছাড়া নরসিংদী-২ (পলাশ) আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপ। এখানে তার সঙ্গে ভোটযুদ্ধে লড়াই করার মতো কোনো শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই।
নরসিংদী-১ সদর এ আসনে এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হিরু (বীর প্রতীক)। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক নরসিংদী পৌরসভার মেয়র মো. কামরুজ্জামান কামরুল। তিনি একজন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী বলে মনে করা হচ্ছে। এ আসনে ভোটের মাঠে থাকছেন আরও দুজন। তারা হলেন মো. জাকারিয়া, স্বতন্ত্র, প্রতীক ট্রাক এবং জাতীয় পার্টি মো. ওমর ফারুক ভূইয়া (লাঙ্গল)। এ আসনে নৌকা ও ঈগলের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
নরসিংদী-২ (পলাশ) আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপ। এ আসনে ভোটের মাঠে থাকছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আফরোজা সুলতানা (দোলনা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মাসুম বিল্লাহ (ঈগল)। নরসিংদী-৩ (শিবপুর) আসনে অনেক নাটকীয়তার পর অবশেষে নৌকা পেলেন না বর্তমান সংসদ সদস্য মো. জহিরুল হক ভূইয়া মোহন। তিনি দুইবার এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মনোনয়ন পাননি সাবেক সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লা। এবার মনোনয়ন পেয়েছেন সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত সাবেক সংসদ সদস্য রবিউল আউয়াল খান কিরনের ছেলে ফজলে রাব্বি খান। রাজনৈতিক পরিবারে এবার নৌকার মনোনয়ন পেলেও সাবেক সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। এতে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন নৌকার তরুণ মাঝি ফজলে রাব্বি খান। এমনই ধারণা করছেন সাধারণ ভোটাররা। এ আসনে ভোটের মাঠে আর কোনো প্রার্থী নেই।
নরসিংদী-৪ (মনোহরদী-বেলাব) আসনে এবারও মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য শিল্পমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। মনোহরদী-বেলাব উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনটিতে শিল্পমন্ত্রীর সফলতা-ব্যর্থতা নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। পাশাপাশি রয়েছে দলীয় কোন্দল। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন বঞ্চিত মনোহরদী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সাইফুল ইসলাম খান বীরু। সাইফুল ইসলাম খান বীরুর স্বতন্ত্র প্রার্থিতা ঘোষণায় কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন নৌকার মাঝি শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। এখানে মন্ত্রীর সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফুল ইসলাম খান বীরুর। এ ছাড়া এ আসনে ভোটের মাঠে রয়েছেন এমদাদুল হক ভুলন, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, প্রতীক ঘুড়ি। মো. কামাল উদ্দিন জাতীয় পার্টি (লাঙ্গল)।
একই দশা হতে পারে নরসিংদী-৫ রায়পুরা আসনেও। এখানে এবারও মনোনয়ন পেয়েছেন ৫ বারের সংসদ সদস্য সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী বর্তমান এমপি রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু। রায়পুরার উন্নয়নে রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর অবদান অনস্বীকার্য হলেও দলীয় কোন্দল, চরাঞ্চলের সংঘাতসহ নানা কারণে তিনি কিছুটা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারেন। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনযুদ্ধে নেমেছেন রায়পুরা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান চৌধুরী। এখানে নৌকার সঙ্গে ঈগলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ আসনে ভোটের মাঠে আছেন মো. সোলেমান খন্দকার (স্বতন্ত্র, কাচি)।
শিগগিরই কেন্দ্রীয় ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর সঙ্গে আসন ভাগাভাগির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘১৪ দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের একটা সমঝোতা অবশ্যই হবে। আজ-কালের মধ্যেই আসন বণ্টনের বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।’
ওবায়দুল কাদের আজ মঙ্গলবার দুপুরে ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা’র রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘১৪ দলের প্রত্যাশা ও বাস্তবতার সঙ্গে মিল রেখে আজকালের মধ্যেই আসন ভাগাভাগির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। জোটসঙ্গীদের চাওয়া এবং তাদের সেই চাওয়া পূরণের বাস্তবতা বুঝেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। জোটসঙ্গীরা দাবি করতেই পারেন, চাইতেই পারেন। তবে অ্যাডজাস্টমেন্টটা তো করতে হবে। ১৪ দলীয় নেতাদের সঙ্গে যে সিট শেয়ারিং করবো, সেখানে মূল স্পিরিট হলো নির্বাচনে জিততে হবে।’
তিনি বলেন, ‘১৪ দলের সঙ্গে আমাদের বৈঠকটা আসন ভাগাভাগির চেয়ে রাজনৈতিকভাবে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক বিষয়টাকেই আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। মাঝেমধ্যে ১৪ দলের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়, গতকালও রাতে (সোমবার) হয়েছে। রাজনৈতিক আলোচনাই বেশি হয়েছে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেশ-বিদেশে যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, তা মোকাবিলায় ১৪ দল ঐক্যবদ্ধভাবে লড়বে। ১৪ দলীয় জোটের যে ঐক্য, সেই ঐক্যকে সুদৃঢ় করে লড়াই করে যাবো আমরা।’
‘১৪ দলের সঙ্গে রাজনৈতিক ঐক্যের কোনো ঘাটতি নেই, হবেও না’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টির সঙ্গে সমঝোতার বিষয়ে আলোচনা চলছে। সময় বলে দেবে কী করতে হবে। যা কিছু করা হবে তা হবে দেশের স্বার্থে।’
এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম ও সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্ত মনোনীত প্রার্থীদের কাছে চিঠি হস্তান্তর শুরু করছে আওয়ামী লীগ।
আজ দুপুরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডিস্থ রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এসব চিঠি বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মনোনয়নপত্র হস্তান্তরের মাধ্যমে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়।
এরআগে নানা যাচাই-বাছাইয়ের পর গতকাল রোববার বিকেলে দুই আসন বাকি রেখে ২৯৮টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ।
গত ২৩, ২৪ ও ২৫ নভেম্বর আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়। দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় অনুষ্ঠিত মনোনয়ন প্রাপ্তদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়।
গত ১৮ নভেম্বর থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু হয়। ২১ নভেম্বর সন্ধ্যায় শেষ হয়। ৩ হাজার ৩৬২টি মনোনয়নপত্র বিক্রি করে আওয়ামী লীগ। এতে আয় হয়েছে ১৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা।
চলতি মাসের ১৫ তারিখে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। তফসিল অনুযায়ী, নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়ন ফরম দাখিলের শেষ দিন ৩০ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, মনোনয়নের আপিল ও নিষ্পত্তি ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর, প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর, নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত এবং ভোটগ্রহণ ৭ জানুয়ারি।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দলীয় নেতারা চাইলে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়াতেই পারেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার অনুমতি দলের প্রয়োজনেই কৌশলগত সিদ্ধান্ত।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা থাকতে পারে কারো কারো। কৌশলগত কারণে দলের প্রয়োজনেই স্বতন্ত্র প্রার্থীর অনুমতি।’
সেতুমন্ত্রী আজ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডিস্থ রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্ত প্রার্থীদের চিঠি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে এ কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘আমাদের মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা রোববার গণভবনে প্রার্থীদের উদ্দেশে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেখানে কোনো কিছু অপরিষ্কার, অস্পষ্ট নেই। সবকিছু খোলামেলা বলে দিয়েছেন। সবকিছু স্পষ্ট করেছেন। তাঁর যে গাইডলাইন সেই গাইডলাইন অনুযায়ী যারা প্রার্থী হতে চান, তিনিই ডামি প্রার্থীর কথা বলেছেন। কাজেই এই গাইডলাইন অনুসরন করে প্রার্থী হতে বাধা আছে বলে আমার জানা নেই। স্বয়ং সভাপতি গাইডলাইন দিয়েছেন।’
মনোনয়ন প্রাপ্তদের বিষয়ে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেন, বিজয়ী হতে পারবেন, ‘এমন ব্যাক্তিদেরই প্রার্থী করা হয়েছে। শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের চেষ্টা করছে সরকার। পরিবেশ বিঘিœত করছে বিরোধী দল। সরকারি দল কোনো সহিংসতা করছে না। একটা বিশেষ দল অংশ নিলেই কি নির্বাচন বৈধ হয়ে যায়? তারা এলেই কি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়ে যায়? ২৫-৩০টি দল এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। বিএনপি অংশ না নিলেও তাদের দলের কিছু নেতা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
বিএনপি নির্বাচনে জিততে পারবে না বলেই ভোট এড়াতে চাচ্ছে উল্লেখ করে কাদের বলেন, ‘৩০ নভেম্বরের মধ্যেই পরিষ্কার হবে বিএনপি থেকে কারা কারা নির্বাচনে আসবে।’
দুই আসনে প্রার্থী ঘোষণা না করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দলীয় কৌশলগত কারণেই দু’টি আসনে প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। নির্বাচনী জোটের সুবিধা দেখে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এখানে অ্যাডজাস্টমেন্ট-অ্যাকোমডেশনের বিষয় আছে। সেগুলো চূড়ান্ত করবে দল।’
এর আগে সোমবার সকালে ওবায়দুল কাদের স্বৈরাচার বিরোধী গণআন্দোলনে শহীদ ডা.শামসুল আলম খান মিলনের মৃত্যুবার্ষিকীতে উপলক্ষে তার সমাধিতে আওয়ামী লীগের পক্ষ্য থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এ সময়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড.হাছান মাহমুদ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মহামদু স্বপন, মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, আফজাল হোসেন, ও শফিউল আলম চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, সাংস্কৃতি সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া, উপ-প্রচার সম্পাদক সৈয়দ আব্দুল আউয়াল শামীম, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আসছে নির্বাচনে নতুন কৌশল নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের পাশাপাশি দলের নেতাদেরই স্বতন্ত্র প্রার্থী (ডামি) হওয়ার অনুমতি দলের প্রয়োজনে কৌশলগত সিদ্ধান্ত।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর এক বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেশে নির্বাচনের পক্ষে গণজোয়ার তৈরি হয়েছে। বিক্ষিপ্ত বোমাবাজি করে এটা বন্ধ করা যাবে না। আওয়ামী লীগ নয় অপকর্মের জন্য বিএনপিই সঙ্গী খুঁজে বেড়াচ্ছে।’
এরপর দলের বিভিন্ন অঙ্গ-সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা টানা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের প্রতিবাদে ছাত্রলীগের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে অংশ নিয়েছেন বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বাংলা চলচ্চিত্রের অলোচিত অভিনেত্রী মাহিয়া মাহি সরকার।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় থেকে সোমবার দুপুর ১২টার দিকে ছাত্রলীগের বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে বিভিন্ন সড়ক ঘুরে বঙ্গবন্ধু মঞ্চে গিয়ে শেষ হয়।
এ সময় মাহিয়া মাহি বলেন, ‘হরতাল-অবরোধের নামে পুলিশ সদস্যকে নির্মমভাবে পিটিয়ে মারার দৃশ্য সবাই দেখেছে। এমন নির্মমতা আর কেউ দেখতে চায় না, এমন নির্মমতার জন্য বিএনপি-জামায়াত কেও আর দেখতে চায় না জনগণ। আমার যে ছোট বোনটি বছরের শুরুতেই নতুন বই পাচ্ছে, সেও বিএনপি-জামায়াতকে কখনো দেখতে চায় না।
‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়ন কাজ করে যাচ্ছেন। দেশের উন্নয়নে তার কোন বিকল্প নেয়। আগামীতেও আমাদের নৌকায় ভোট দিয়ে দেশের এ উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে।’
এ সময় মাহী নৌকা মার্কায় ভোট চান।
বিক্ষোভ সমাবেশে ছাত্রলীগের জেলা ও উপজেলার নেতারা বক্তব্য দেন।
বিএনপির লক্ষ্য নির্বাচনকে বানচাল করা, অংশ নেয়া নয় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচন চাইলে তারা এমন সন্ত্রাস করত না।’
সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে মহানগর, সহযোগী সংগঠন ও নির্বাচিত দলীয় জনপ্রতিনিধিদের মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। এ সময় তিনি বিএনপির অবরোধ থেকে দেশের উন্নয়ন স্থাপনা রক্ষায় দলীয় নেতা-কর্মীদের সতর্ক পাহরায় থাকার নির্দেশ দেন।
কাদের আশা প্রকাশ করেন, দেশের বর্তমান অবস্থার নিরিখে আগামী জাতীয় নির্বাচনেও টানা চতুর্থবারের মতো আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ২৮ অক্টোবর শত উসকানি সত্ত্বেও শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ সফলভাবে সম্পন্ন করায় দলীয় নেতা-কর্মীদের ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, ‘গত ২৮ অক্টোবর দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে ভিক্টরি মনোভাব দেখেছি, এটাই আমাদের বিজয়। এটাই বিরোধীদের ব্যর্থ আন্দোলনের বিরুদ্ধে নির্বাচনমুখী আমাদের বিজয়ের অভিযাত্রা। এ সময় দলে শৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বরোপ করেন কাদের।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপিকর্মীরা এখন বলছে- তারেক রহমান ভুয়া, মির্জা ফখরুলও ভুয়া। এক দফা ও আন্দোলন ভুয়া। কান টানলাম জীবনেও আর আসব না। এই দল করব না, কান ধরে বলেছে। বিএনপির আন্দোলনের পতন গোলাপবাগে শুরু হয়েছে।’
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডক্টর হাছান মাহমুদ, মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিমসহ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলী, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকরা।
বিএনপির ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে জুড়াইন রেলগেট চত্বরে রোববার শান্তি সমাবেশ ও মিছিল করেছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
মিছিলে নেতৃত্ব দেন ড. মো. আওলাদ হোসেন। মিছিল শেষে তিনি বলেন, জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সদাপ্রস্তুত রয়েছে। ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশ সংবিধান অনুযায়ী পরিচালিত হবে।
আওলাদ বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর কোনো ব্যত্যয় মেনে নেয়া হবে না। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনবিরোধী সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার জন্য ঢাকা-৪ এর জনগণকে আহ্বান জানান তিনি।
তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ-১ আসন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির অংশগ্রহণ নিয়ে ধোঁয়াশা থাকলেও আওয়ামী লীগ নিজেদের মধ্যেই উত্তাপ ছড়াচ্ছে। প্রায় ডজন খানেক মনোনয়নপ্রত্যাশীকে নিয়ে প্রতিটি উপজেলায় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়েছে।
জেলার পাঁচটি সংসদীয় আসনের মধ্যে সুনামগঞ্জ-১ আসনটি আয়তন ও জনসংখ্যার দিক থেকেও সবচেয়ে বড় আসন। এ জন্য জেলার সবচেয়ে বেশি মনোনয়নপ্রত্যাশীও এ আসনে।
দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, একে অন্যকে নিয়ে বিষোদগার- সব মিলে বছরজুড়েই আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় এ আসনটি। আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য শামীমা আক্তার খানম নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ ছাড়া তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুনা সিন্দু চৌধুরী বাবুল, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রঞ্জিত সরকার, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হায়দার চৌধুরী লিটন, আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির টিম সদস্য ও সাবেক যুগ্ম সচিব বিনয় ভূষণ তালুকদার ভানু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আক্তারুজ্জামান সেলিম, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সুনামগঞ্জ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সেলিম আহমেদ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের জেলা আহ্বায়ক ড. রফিকুল ইসলাম চৌধুরী, ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব খান ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গোলাম কিবরিয়া এ আসনে নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী।
তারা নির্বাচনী এলাকায় ব্যানার ও ফেস্টুন লাগিয়েছেন। অনেকেই এলাকায় গণসংযোগ করছেন। কেউ সভা-সমাবেশের মাধ্যমে নিজ দলের স্থানীয় প্রতিপক্ষের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ছেন আবার কেউবা অস্তিত্বের জানান দিচ্ছেন। মোট কথা নিজেরাই নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছেন যেন।
তবে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী এই ১১ জন প্রার্থী নতুন কৌশল হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে ব্যবহার করছেন। এই প্রচারেও দলীয় কোন্দল সামনে চলে আসছে। নতুন হিসেবে বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ার কাজে লাগিয়ে এবং তরুণ রাজনীতিবিদ সেলিম আহমদ মানবিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ভোটারদের নজর কাড়ছেন।
দোষারোপের রাজনীতি
গেল জুলাই মাসের শেষের দিকে তাহিরপুরে ঘাগটিয়া এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভায় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতনকে দোষারোপ করে বক্তব্য দেন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য শামীমা আক্তার খানম। তিনি বর্তমান এমপির নানান অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয় জনসমক্ষে তুলে ধরেন। পরে একই মাসে উপজেলার বাদাঘাট পাবলিক উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট উপলক্ষে সভায় বক্তব্য দেন এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনসহ তার অনুসারিরা। এ সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি রেজাউল করিম শামীম ও ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ বিলকিস- এমপি শামীমা আক্তার খানমের কড়া সমালোচনা করে পাল্টা বক্তব্য দেন। তা ছাড়া সভা-সমাবেশে মনোনয়নপ্রত্যাশী অন্য নেতারাও বর্তমান এমপির সমালোচনা করে বক্তব্য দেন।
এ রকম পাল্টাপাল্টি বিষোদগার নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে সুনামগঞ্জের-১ আসনে। অবশ্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতারা বলছেন, দলে কোন্দল নেই বরং নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা রয়েছে।
ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ বিলকিস বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে অনেক মনোনয়নপ্রত্যাশী মাঠে কাজ করছেন। তবে তৃণমূলের ৮০ ভাগ নেতা-কর্মী বর্তমান সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতনকে চায়।
আবার উল্টো কথা শোনা গেল তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি অধ্যাপক মো. আলী মুর্তুজার কণ্ঠে। তিনি বলেন, ‘গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এমপি রতন নিজের বলয় তৈরি করে নৌকার প্রার্থীর ভরাডুবি নিশ্চিত করেছেন। এ জন্য উপজেলায় হাতে গোনা কয়েকজন নেতা-কর্মী ছাড়া তার সঙ্গে কেউ নেই। কোনো সহযোগী সংগঠনও তার সঙ্গে নেই। তার পছন্দের লোক দিয়ে উপজেলার কয়েকটি নৌঘাটে খাস কালেকশনের নামে চাঁদাবাজি হচ্ছে। তিনবারের এমপি হওয়ায় দম্ভ বেড়েছে তার, তৃণমূল নেতা-কর্মীদের তিনি মূল্যায়নই করেন না।’
মনোনয়নপ্রত্যাশী সেলিম আহমেদ বলেন, ‘সারা দেশে এই সরকারের আমলে যুগান্তকারী উন্নয়ন হলেও আমাদের আসনে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি। বর্তমান সংসদ সদস্যের নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও দলের প্রকৃত ত্যাগী নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে নিজের বলয় তৈরি করার ফলে এখানে বিভক্তি বেড়েছে।’
মনোনয়নপ্রত্যাশী রঞ্জিত সরকার বলেন, ‘সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা বর্তমান সংসদ সদস্য পূরণ করতে পারেননি। মানুষের চাওয়া নেত্রীর কাছে পৌঁছাতে পারেননি তিনি। সেজন্য পরিবর্তনের প্রত্যাশায় উন্মুখ এ আসনের ভোটাররা।’
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান, মনোনয়নপ্রত্যাশী করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বললেন, ‘আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, দুর্নীতিমুক্ত হাওরাঞ্চল গড়তে আওয়ামী লীগের ত্যাগী ক্লিন ইমেজের একজন প্রার্থী চাই আমরা।’
তবে এসব সমালোচনায় পাত্তা দিলেন না মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। বর্তমান এ সংসদ সদস্য বলেন, ‘যে কাজ করে তারই সমালোচনা হবে। কাজ না করলে এত সমালোচনা হতো না। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।’
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল হুদা মুকুট বলেন, ‘আওয়ামী লীগে কোনো কোন্দল নেই। তবে নেতৃত্ব নিয়ে প্রতিযোগিতা রয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগ খুবই শক্তিশালী। আগামী নির্বাচনে ৫টি আসনেই নৌকা বিপুল ভোটে জয়ী হবে। সেজন্য দলীয় সভানেত্রী যাকে নৌকার মনোনয়ন দেবেন তাকে নিয়েই আমরা কাজ করব।’
দুর্গাপূজা চলাকালে সারা দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজামণ্ডপ ও বাড়িঘরে পাহারা দিতে দলের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
শুক্রবার সকালে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে দলীয় এ নির্দেশনার কথা জানান তিনি।
কাদের বলেন, কুমিল্লার সহিংসতার ঘটনাটি দলের গোচরে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে নিজেই খোঁজ-খবর নিয়েছেন। দল থেকে গোটা ব্যাপারটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কেউ অপকর্ম করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিএনপির ২৮ অক্টোবরের সমাবেশ ঘিরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ১০ ডিসেম্বরের একই পরিণতি হবে ২৮ অক্টোবরে।
এবার ১২ দিনের লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করবে দলটি।
মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডি রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক যৌথসভা শেষে এ কর্মসূচির ঘোষণা করা হয়। এসব কর্মসূচিতে নেতা-কর্মীদের সজাগ থাকার নির্দেশ দিয়েছে দলের শীর্ষ নেতারা।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা এবং সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের এই সভা শেষে ব্রিফ করেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ।
তিনি জানান, ২৩ সেপ্টেম্বর বাইতুল মোকাররম দক্ষিণ গেটে মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের উদ্যোগে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ২৮ সেপ্টেম্বর ইদ-ই-মিলাদুন্নবী ও শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে দোয়া মাহফিল। ২৯ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে আলোচনা সভা। ২৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর উত্তরায় সমাবেশ করবে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ এবং যাত্রাবাড়ীতে সমাবেশ করবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। ২৬ সেপ্টেম্বর কেরানীগঞ্জে সমাবেশ করবে ঢাকা জেলা, ২৭ সেপ্টেম্বর টঙ্গীতে সমাবেশ করবে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ, একই দিন কাফরুলে সমাবেশ করবে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ। ৩০ সেপ্টেম্বর বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে কৃষক সমাবেশ করা হবে। ৪ অক্টোবর চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তারা জানিয়েছেন, রিয়াজের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ উঠেছে। তার ভিত্তিতে কেন্দ্রের নির্দেশে তাকে পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। সাংগঠনিকভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। এরপর তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রে সুপারিশ করা হবে।
হোক জাতীয় কিংবা স্থানীয়। খাগড়াছড়িতে নির্বাচন এলেই জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের দ্বন্দ্বে উত্তাপ ছড়ায় জেলার রাজনীতিতে। আর এ দ্বন্দ্বের বলী হন সাধারণ নেতা-কর্মীরা। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আবার প্রকাশ্যে এসেছে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব।
জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিনের এ দ্বন্দ্বটা মূলত আলম পরিবার বনাম জেলা আওয়ামী লীগের মধ্যে। শুরুটা ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে। ২৯৮ নম্বর খাগড়াছড়ি আসনে মনোনয়ন দেয়া হয় তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরাকে; কিন্তু সেই নির্বাচনে দলের বিপক্ষে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হন তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল আলম। পরে অবশ্য তাকে বহিষ্কার করা হয়। তবে ২০১০ সালের দিকে ‘বাঙালি নেতৃত্ব’-এর অজুহাতে আবার তাকে দলে ফিরিয়ে সাধারণ সম্পাদকের পদ দেয়া হয়।
২০১১ ও ২০১৫ সালে পৌরসভা নির্বাচনে জাহেদুল আলমের ছোট ভাই রফিকুল আলম আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থীর বিপক্ষে নির্বাচন করে জয়ী হন। এ সময় ভাইকে সমর্থন দিয়ে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় আবারও জাহেদুল আলমকে বহিষ্কারের প্রস্তাব যায় কেন্দ্রে। দীর্ঘ প্রায় এক বছরের মতো তার বহিষ্কারাদেশ নিয়ে দোদুল্যমান অবস্থায় ছিল দল। এতে করে আওয়ামী লীগে দুটি পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। মূল অংশের পাশাপাশি জাহেদুল আলমের নেতৃত্বেও আলাদা ব্যানারে কর্মসূচি পালিত হয়ে আসছিল প্রায় তিন বছর ধরে। জেলা কার্যালয়ও ছিল দুটি৷
ফলে কোন্দল তৃণমূলে বিস্তৃত হতে শুরু করে। একাধিক বার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষও হয়েছে এ নিয়ে। জনগণ বলতে শুরু করে- ‘এ আসনে আওয়ামী লীগের শত্রু আওয়ামী লীগই।’
২০১৪ ও ২০১৮ সালে খাগড়াছড়ি আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে বিজয়ী হন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। তিনি সবসময় আলম পরিবার ও জেলা আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব নিরসন করার চেষ্টা করে আসছিলেন। তবে এ দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে বরাবরের মতোই সুবিধা নিতে চাচ্ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী কয়েকজন নেতা।
সবশেষ ২০২১ সালের খাগড়াছড়ি পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী। এ নির্বাচনেও বরাবরের মতোই স্বতন্ত্র প্রার্থী হন রফিকুল আলম। তবে রফিকুল আলমের ছোট ভাই জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দিদারুল আলম নৌকার প্রার্থীর পক্ষেই কাজ করেন। লড়াইটা হাড্ডাহাড্ডি হলেও বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। নির্বাচনে হেরে গিয়ে রফিকুল আলম আবার জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের বিপক্ষে শুরু করেন নতুন ষড়যন্ত্র।
স্থানীয় সাংসদ কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপুর বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিভিন্ন মিডিয়ায় বক্তব্য দিতে থাকেন। একইভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় এমপি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বিপক্ষে বিভিন্ন মিডিয়ায় বক্তব্য দিচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রণ বিক্রম ত্রিপুরা, সহ-সভাপতি সমীর দত্ত, সহ-সভাপতি তপন কান্তি দে, মাটিরাঙ্গা পৌর মেয়র শামসুল হকসহ দলের কয়েকজন নেতা।
আবার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপির পক্ষে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতারা ৷ পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলে লেখালেখি হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাগড়াছড়ি পৌরসভার সাবেক মেয়র রফিকুল আলম বলেন, স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের পছন্দ না হওয়ায় বারবার তিনি নাগরিক ব্যানারে নির্বাচন করেছেন। তবে জাতীয় নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করেছেন। এ সময় তিনি নিজেকে আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে পরিচয় দেন।
‘আওয়ামী লীগের কর্মী হয়ে কীভাবে বারবার নৌকার বিপক্ষে গিয়ে নির্বাচন করেন’- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি দুঃসময়ে, দুর্দিনে, রক্ত দেয়ার সময় ও দলের জন্য অর্থ খরচে ছিলাম। নীতি-নৈতিকতাহীন প্রার্থীদের বিপক্ষে নির্বাচন করেছি।’
খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও মাটিরাঙ্গা পৌরসভার মেয়র শামসুল হক বলেন, ‘জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি একটি পরিচিতি সভা ছাড়া কোনো প্রোগ্রাম করতে পারেননি। তিনি একক ক্ষমতা চালাতে চান। আমরা খাগড়াছড়িতে পরিবর্তন চাই।’
খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু জানান, নির্বাচন এলেই এরা দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। ১৯৯১ সাল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনে তারা নৌকার বিরোধিতা করে আসছে।
এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি বলেন, সমীর দত্ত চাকমা কখনো আওয়ামী লীগে ভোট দেয়নি। রণ বিক্রম ত্রিপুরা ১৯৯১ সালে নিজেই নির্বাচন করেছে ও ১৯৯৬ সালে নিজেই বিরোধিতা করেছে। আর আলম পরিবার সবসময় নৌকার বিরোধিতা করেছে। নির্বাচন এলেই তারা নানা ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের চূড়ান্ত প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে বিরোধী শিবির। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেয়া ও নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবি বিএনপি ও তার যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গীদের।
অন্য দিকে সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। নিজেদের দাবির পক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে পদযাত্রা ও গণমিছিল কর্মসূচি পালন করছিল বিএনপি ও তার আন্দোলন সঙ্গীরা। বিরোধীদের ওই কর্মসূচির দিনে শান্তি সমাবেশ ডেকে রাজপথেই ছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
এরই মধ্যে বিরোধীদের হুমকিকে পাত্তা না দিয়ে কঠোর বার্তা দিতে চায় ক্ষমতাসীনরা। তারা মনে করছে, সম্প্রতি দলীয় সভাপতির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিশাল জমায়েতের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচার শুরু হয়ে গেছে। বিরোধীদের আন্দোলনের মূল দাবি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি সরকারের কাছে গুরুত্ব পাচ্ছে না। বিদেশি কূটনীতিকদের কাছ থেকে এ বিষয়ে কোনো ধরনর চাপও নেই সরকারের ওপর। ফলে ক্ষমতাসীনরা চায়, যথাসময়ে নির্বাচন এবং সেই নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তত্ত্বাবধায়কের দাবি যদি সরকার মেনে না নেয় তাহলে বিএনপি হয়তো নির্বাচনের অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এক্ষেত্রে সরকারই লাভবান হবে। বিএনপি হয়তো নির্বাচন প্রতিরোধের চেষ্টা করতে পারে। ক্ষমতাসীনরা এ বিষয়েও সচেতন। তারা এখনই বিরোধীদের সতর্ক করতে চায়, তারা যেন নির্বাচন ভণ্ডুলের চেষ্টা না করে।
গত ২৮ জুলাই রাজধানীতে মহাসমাবেশ করে বিএনপি। ওইদিন রাজধানীতের তারুণ্যের সমাবেশ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তিন সংগঠন। মহাসমাবেশ থেকে ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করে আওয়ামী লীগও। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘অনুমতি না পাওয়ায়’ পাল্টা কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয় ক্ষমতাসীন দলটি। বিএনপির ডাকা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় সরকারবিরোধী আন্দোলনে ছন্দপতন হয়েছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা।
আগস্টজুড়ে শোকের কর্মসূচি পালন করেছে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। বিএনপি আগস্টে কর্মসূচি দিলেও তেমন একটা সাড়া পায়নি বলে মত আওয়ামী লীগ নেতাদের। এরই মধ্যে গত ১ ও ২ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে বড় জমায়েত করে ক্ষমতাসীন দল। যদিও ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীতে শোভাযাত্রা করে দলটি।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, শান্তি সমাবেশ থেকে উন্নয়ন ও শান্তি সমাবেশের কর্মসূচি রূপ নিয়েছিল। এখন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে বড় বড় শোডাউন দিয়ে জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক সক্ষমতা দেখানোই তাদের কর্মসূচির বড় উদ্দেশ্য। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে দলীয় নেতা-কর্মীদের সতর্ক রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে স্বল্প সময়ে জমায়েত করার জন্য।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, রাজধানীর জমায়েত থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। মাসের শুরুতে শোডাউনের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে ক্ষমতাসীন দলের সমালোচকদের কাছে আওয়ামী লীগের জনসমর্থন তুলে ধরা হয়েছে। বিরোধীদের নির্বাচন ঠেকানোর ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় আওয়ামী লীগ প্রস্তুত রয়েছে। ওয়ার্ম আপ হিসেবে গত ১ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের মাধ্যমে তরুণদের কাছ থেকে জনসমর্থন ও দ্বিতীয়টা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধনে আওয়ামী লীগের মাধ্যমে প্রায় ১০ লাখের মতো মানুষের উপস্থিতির মাধ্যমে দেখানো হয়েছে। সবাইকে বার্তা দেয়া হয়েছে, দেশের সাধারণ জনগণ আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সক্ষমতাও দেখানো হয়েছে বলে দলটির নেতাদের মতো।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান দৈনিক বাংলাকে বলেন, এই দুই সমাবেশের মাধ্যমে আমাদের প্রধান বার্তা যে আমরা নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করলাম। সেই প্রচারণার যে শোডাউন সেটা সারাদেশ, জাতি এবং বিদেশে যারা আমাদের সমালোচনা করে তাদেরও দেখালাম যে, এই জনসমর্থন আমাদের আছে, আমাদের জনগণের কাছ থেকে।
তিনি বলেন, বিএনপির জন্য বার্তা যে নির্বাচনে আসো, নির্বাচন ভণ্ডুল করার কোনো প্রচেষ্টা করো না। নির্বাচনে এসে নিজেদের জনসমর্থন প্রমাণ কর।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা বলেন, চলতি মাসের শুরুতে আমরা যে শোডাউন দিয়েছি তাতে বিএনপির আন্দোলনে মনোবলে ধাক্কা লেগেছে। এই ধাক্কা এক মাসেই কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে মনে হয় না। এই মাসে খুচরা কর্মসূচি দিয়ে সাংগঠনিক শক্তি সঞ্চয়ের চেষ্টা করবে তারা। অক্টোবরের দিকে টানা কর্মসূচি দিতে পারে বিএনপি। তাদের কর্মসূচির ধরন দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৮ সেপ্টেম্বর ভারত সফরে যাচ্ছেন। সেখান থেকে ফেরার পর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ বাংলাদেশ সফর করবেন। ১৬ সেপ্টেম্বর সাভারের হেমায়েতপুর থেকে গাবতলী, মিরপুর ও গুলশান হয়ে ভাটারা পর্যন্ত মেট্রোরেল পথের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। ওইদিন সাভারে সমাবেশে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। সাভারেও ঢাকার সমাবেশের মতো বড় জমায়েত করার পরিকল্পনা নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
১৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্যেই ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন। প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে এই দিনটি পালন করবে আওয়ামী লীগ।