গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন ‘সুষ্ঠু দেখানোর চেষ্টাতেই’ ভোটের আসল চিত্র উঠে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে আমীর খসরু এ মন্তব্য করেন।
বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে পরাজিত করে স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন বিজয়ী হন।
এই ফলাফলের প্রসঙ্গ টেনে আমীর খসরু বলেন, ‘এই যে একটা নির্বাচন হয়ে গেল গাজীপুরে, আপনারা দেখেছেন…আমি কিছু বলতে চাই না এই নির্বাচন নিয়ে, কিন্তু এই নির্বাচন নিয়ে আজকে অনেক কথা বলা যাবে।’
তিনি বলেন, ‘(সরকার) একটা সুষ্ঠু নির্বাচন দেখানোর চেষ্টা করেছে। ওই চেষ্টার ফলাফলটা আমরা দেখে ফেলেছি। ...কী উঠে এসেছে আমরা দেখেছি সবাই। এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের আসল চিত্র, এটাই হচ্ছে ভোটের আসল চিত্র।’
এক দশকেরও বেশি সময় আগে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার বিচার না হওয়া এবং গণমাধ্যমের ওপর সরকারের নানা চাপ প্রয়োগের অভিযোগ তুলে এর কঠোর সমালোচনা করেন আমীর খসরু।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য আজকে আমরা রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, পেশাজীবীসহ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করছি। এই ভোটাধিকার নিশ্চিত না করতে পারলে সাংবাদিকদের যে সাংবাদিকতার পরিবেশ, তাদের যে সাংবাদিকতা করার মানদণ্ডে পৌঁছানোর ইচ্ছা আছে, যদি দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা না যায়, মানবাধিকার ফিরিয়ে আনা না যায় তাহলে গণতন্ত্র এবং সেসব পরিবেশ ফিরে আসবে না।’
আমীর খসরু বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পরে এখন আরেকটা আসছে ‘অত্যাবশ্যকীয় পরিসেবা আইন’। এটা কিন্তু সরকার যেকোনো সংস্থায় ইনভ্লব করতে পারে। আরও আইন আসবে, আরও নিপীড়ন-নির্যাতনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশে যদি আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে না পারি, ভোটাধিকারের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার ও সংসদ যদি আমরা প্রতিষ্ঠা করতে না পারি, তাহলে আগামী দিনে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক কোনো সরকার আপনারা পাবেন না। সেজন্য নিশ্চিতভাবে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’
নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি তুলে আমীর খসরু বলেন, ‘আগামী নির্বাচন অবশ্যই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। বর্তমান অবস্থা থেকে পরিবর্তন করে এখানে গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাওয়া, নির্বাচনী পরিবেশ, সাংবিধানিক অধিকার ফিরে পাওয়া এবং নির্বাচনের আগে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আমরা যদি নিশ্চিত করতে না পারি, তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না।'
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘নির্বাচনের আলোচনা আসছে পরে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ও গণতান্ত্রিক অর্ডার ফিরিয়ে আনার আগে নির্বাচনের আলোচনা একটি ব্যর্থ আলোচনা। যারা নির্বাচনের কথা বলছেন, তারা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ও গণতান্ত্রিক অর্ডার ছাড়া নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন, তারা এই সরকারের পক্ষে কাজ করছেন।’
অনুষ্ঠানে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আমি কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বেরিয়ে এসেছি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ড্রাকোনিয়ান যে আইন, এতে অনেক সাংবাদিক কারাগারের মধ্যে অন্তরীণ অবস্থায় রয়েছেন। যারা ফেসবুকে মতামত দেন তারা এখন কারাগারে। এটাই হচ্ছে ফ্যাসিবাদী শাসন, এটাই হচ্ছে একনায়কতান্ত্রিক শাসন, এটাই হচ্ছে স্বৈরাচারী শাসন।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘সারা দেশে মতপ্রকাশে বিশ্বাসী মানুষরাই কারান্তরীণ হন। যেসব গণমাধ্যমে কিছুটা সত্যের পক্ষে কথা বলার চেষ্টা করেছে তাদের বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।’
ডিআরইউর ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সকালে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও রুহুল কবির রিজভী। পরে সাংবাদিকদের নিয়ে বর্ণাঢ্য র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনটির এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর স্লোগান- ‘ঐক্যের সমৃদ্ধি’।
বিকেলে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন জাতীয় সংসদ উপনেতা ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী।
ডিআরইউর সভাপতি মুরসালিন নোমানীর সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলামের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইউনিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মঈনুল আহসান, সহসভাপতি দীপু সারোয়ার এবং প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন কমিটির সদস্যসচিব কামাল উদ্দিন সুমন বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে ইউনিটির সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, ইলিয়াস হোসেন, রফিকুল ইসলাম আজাদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু, সাবেক সহসভাপতি আবু দাদরা জোবায়ের, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশের সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, প্রবীণ সদস্য মুফতি আহমেদ, খোরশেদ আলম, গাজী আবু বকরসহ ডিআরইউর কার্যনির্বাহী কমিটির বর্তমান ও সাবেক সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এলিট ফোর্স র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং নতুন ভিসানীতি ঘোষণাসহ নানা বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেছেন, ‘আপনাদের হিপোক্রেসি আমাদের আহত করে, এতে আমাদের রক্তক্ষরণ হয়।’
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) অডিটোরিয়ামে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আব্দুর রাজ্জাক এ কথা বলেন। ছয় দফা দিবস স্মরণে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান আলোচক ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান।
আমেরিকাকে উদ্দেশ্য করে ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘লিবিয়ায় একটি দেশ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে! সবচেয়ে বেশি অর্থনৈতিক সাহায্য আপনারা মিশরে দেন। মিশরে কি গণতন্ত্র আছে? সিরিয়াসহ পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে আপনারা ধ্বংস করেছেন। ইরাকের মত এক সময়ের জ্ঞান-বিজ্ঞানের রাজধানী আজ বিলীন হয়ে যাচ্ছে। কোথায় আপনাদের গণতন্ত্র? প্রেসিডেন্ট পরিবর্তন হয়েছে; কই? মধ্যপ্রাচ্যে গণতন্ত্র তো দেখি না! আপনাদের হিপোক্রেসি আমাদের আহত করে, এতে আমাদের রক্তক্ষরণ হয়।’
আওয়ামী লীগের এ নেতা আক্ষেপ করে বলেন, ‘কী কারণ থাকতে পারে র্যাবের বিরুদ্ধে স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) দেয়ার? আফগানিস্তানে এতদিন যুদ্ধ করে আবার বাধ্য হয়েছেন তালেবানদের হাতে দেশ ছেড়ে দিতে। আমরা আওয়ামী লীগ ওই সন্ত্রাসীদের কাছে আত্মসমর্পণ করিনি। আফগানিস্তান থেকে আপনারা পালিয়ে গেছেন। আমরা পালিয়ে যাইনি। আমরা তাদের মোকাবেলা করেছি। যারা সামনের সারিতে থেকে মোকাবিলা করেছে তাদের বিরুদ্ধে আপনারা স্যাংশন দেন!’
লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট মুয়াম্মার গাদ্দাফির হত্যার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘লিবিয়ায় একটি বিচ্ছিন্ন রাষ্ট্রকে একটি জাতিরাষ্ট্র করেছিলেন মুয়াম্মার গাদ্দাফি। কী বিচার আপনারা করেছেন? দৌঁড়িয়ে তাকে হত্যা করেছেন! সাদ্দাম হোসেনের বিচারের নামে প্রহসন করেছেন। আপনারা ইরাকে আক্রমণ করেছেন। সেই যুদ্ধে (আমেরিকার) যে চিফ অব স্টাফ ছিলেন, তিনি মৃত্যুর আগে বলেছিলেন, আমি জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল করেছি। কোনো অস্ত্র আমরা ইরাকে পাইনি। অথচ একটি দেশকে আমরা ধ্বংস করলাম। তিনি সারা পৃথিবীর মানবজাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।’
এই মধ্যপ্রাচ্যকে যারা ধ্বংস করেছে তাদেরও যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচার করা উচিত বলে মন্তব্য করেন কৃষিমন্ত্রী।
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে আবারও বৈঠক করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে মার্কিন দূতাবাসে গিয়ে রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে একঘণ্টার বেশি সময় ধরে বৈঠক করেন তিনি।
সূত্র বলছে, পিটার হাসের আমন্ত্রণে মার্কিন দূতাবাসে যান ফখরুল। বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে মহাসচিব একাই ছিলেন।
পরে এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের টুইটার অ্যাকাউন্টে এক বার্তায় বলা হয়, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন রাষ্ট্রদূত হাস। বৈঠকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং প্রচারণা প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও আলাপ হয়েছে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘এখনো এই বিষয়ে কিছু জানি না। খোঁজ নিয়ে বলতে পারব।’
এর আগে গত ১৬ এপ্রিল বিএনপির মহাসচিব যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সেই বৈঠকে বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে দলের আরও দুইজন নেতা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘রাষ্ট্র পরিচালনায় সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচিতে জনগণের অভাবনীয় সমর্থন দেখে ভয়ে বিরোধী দল ও মতের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালাচ্ছে।’
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে ফখরুল এ মন্তব্য করেন।
বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গত সোমবার বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা স্থলবন্দরে শান্তিপূর্ণভাবে রোডমার্চ কর্মসূচিতে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না এবং গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকিসহ গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতাদের গাড়িবহর ও যেসব আবাসিক হোটেলে নেতারা অবস্থান করছিলেন সেখানে হামলা সরকারের অপরাজনীতি থেকে কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।’
ফখরুল বলেন, ‘মানুষের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতি নেতিবাচক প্রভাব খাটিয়ে অতীতে কোনো স্বৈরাচারী সরকার নিজেদের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে পারেনি। বরং তাদের করুণ পরিণতি ভোগ করতে হয়েছে।’
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আপনারাও যদি বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতি যত্নবান না হয়ে হরণ করার কুমতলবে বিভোর থাকেন তাহলে আপনাদের পরিণতিও হবে ভয়াবহ।’
বিএনপি মহাসচিব অবিলম্বে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। বিবৃতিতে ওই ঘটনায় আহত নেতা-কর্মীদের সুস্থতাও কামনা করেছে বিএনপি মহাসচিব।
‘মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করে বিএনপি প্রতিনিয়ত সরকারবিরোধী কুৎসা ও বদনাম রটাচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘কাঙ্ক্ষিত স্যাংশন না পেয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম চিরাচরিত ভঙ্গিতে প্রলাপ বকছেন। মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করে তারা প্রতিনিয়ত সরকারবিরোধী কুৎসা ও বদনাম রটাচ্ছেন। বিশ্বদরবারে বাংলাদেশ ও এ দেশের জনগণের মান ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ত্রিশ লাখ শহীদের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে ম্লান করে হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলে বিদেশি প্রভুদের নিকট ধরনা দিচ্ছেন এবং দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র চালাচ্ছেন। দেশের মানুষের প্রতি তাদের কোনো আস্থা ও বিশ্বাস নেই এবং দেশের সংবিধান, গণতন্ত্র, নির্বাচন ও গণরায়কে অবজ্ঞা করে তারা কেবল বিদেশি প্রভুদের কাছে করুণা প্রার্থনা করছেন।’
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নিয়ে আওয়ামী লীগ ও সরকার ভীত নয়। কারণ আমরা সর্বদা সংবিধান, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যদি এই ভিসানীতি যথাযথভাবে প্রয়োগ হয় তাহলে বিএনপি নেতা-কর্মীদের এর আওতায় আসার আশঙ্কা রয়েছে। কেননা তারা বরাবরই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করছে এবং নির্বাচনী ব্যবস্থাকে বাধাগ্রস্ত করতে এবং নির্বাচন প্রতিরোধের নামে সন্ত্রাসের মাধ্যমে সাংবিধানিক রাজনীতির অচলাবস্থা সৃষ্টির পাঁয়তারা করে আসছে।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘মিথ্যাচার-অপপ্রচারের মধ্য দিয়ে বিএনপি নেতারা খুনি-স্বৈরশাসক, সংবিধান ও গণতন্ত্র হত্যাকারী স্বৈরাচার জিয়াউর রহমানকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা হিসেবে ভ্রান্ত মিথ তৈরি করার অপচেষ্টা করে আসছে। মূলত এই জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও সংবিধান ধ্বংস করেছে।’
তিনি বলেন, “প্যাডসর্বস্ব ভুঁইফোড়, বিবৃতিজীবী, পাকিস্তানপন্থি রাজনীতিক ও যুদ্ধাপরাধীদের ধরে এনে সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে রাজনৈতিক দল গঠন করে পাকিস্তানপন্থিদের ক্ষমতায়ন করেছিল জিয়াউর রহমান। রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম ও গণমাধ্যম থেকে মুক্তিযুদ্ধের জয়ধ্বনি ‘জয় বাংলা’ ও ‘জয় বঙ্গবন্ধু’কে নির্বাসনে পাঠিয়েছিল। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতে পাকিস্তানি দর্শনের রাজনীতির প্রচলন করেছিল। দিনের পর দিন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে তালাবদ্ধ করে কার্যত অঘোষিতভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে রাখা হয়েছিল।”
কাদের বলেন, ‘অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, আজকে বিএনপির কোনো কোনো নেতার বক্তব্যে তাদের এতটাই দেউলিয়াত্বের বহির্প্রকাশ ঘটেছে যে, তাদেরকে আর কোনো রাজনৈতিক সংগঠন বলা চলে না। জনগণের প্রতি আস্থা না রেখে বিএনপি নেতৃবৃন্দ বিদেশি প্রভুদের পদলেহনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার এ ধরনের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী খুনিগোষ্ঠী ও ষড়যন্ত্রকারীদের কাছে আত্মসমর্পণ করবে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দেশবিরোধী এই অপশক্তিকে উৎখাত করা হবে।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার স্পষ্টতই বুঝে গেছে যে তারা এখন চরম সংকটের মধ্যে পড়েছে। প্রায়শই তাদের অসংলগ্ন কথাবার্তা দেখে তাই মনে হয়।’
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন রুহুল কবির রিজভী।
রিজভী বলেন, ‘নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনসহ মানবাধিকার, ন্যায়বিচার, সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ ও হারানো গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেয়ার পক্ষে কথা বলায় বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা। তাদের একজন মন্ত্রী বললেন, ভিসা নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা নাকি বিএনপির বিরুদ্ধে। তাহলে আমেরিকার বিরুদ্ধে হঠাৎ সরকারপ্রধানসহ মন্ত্রীরা ক্ষোভে ফেটে পড়লেন কেন?’
বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘সরকারপ্রধানসহ ক্ষমতাসীনদের নিজেদের সন্তান-সন্ততিকে আমেরিকা ও ইউরোপে পুনর্বাসন করে। কিন্তু এখন তাদের স্বার্থে আঘাত লাগায় এখন ওই সব দেশ সম্পর্কে আক্রমণাত্মক ভাষায় কথা বলছেন তারা।’
সারা দেশে লোডশেডিংয়ে মানুষের এখন ‘ত্রাহি অবস্থা’ উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘গ্রামেগঞ্জে ২৪ ঘণ্টায় এখন থেকে দুই থেকে এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ আসে। মফস্বল শহরগুলোতে রাতে ২ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ থাকে না। রাজধানীতে ভয়াবহ খরতাপের ধূমায়িত বহ্নিতে মানুষ মনে হয় গ্যাস চেম্বারের মধ্যে বসবাস করছে। এখানেও দিনে-রাতে ৩-৪ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ থাকে না।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, সোমবার বগুড়া শিবগঞ্জ উপজেলা গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতাদের গাড়িবহরে সশস্ত্র ‘আওয়ামী সন্ত্রাসীরা’ পৈশাচিক হামলা চালিয়ে ছয় জনের বেশি নেতা-কর্মীকে গুরুতর আহত করেছে।
গণতন্ত্র মঞ্চের রোডমার্চে এ হামলার তীব্র ধিক্কার ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপির এই নেতা।
দেশজুড়ে চলমান লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে একদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। দেশের সব জেলা শহরের বিদ্যুৎ অফিসের সামনে এক ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে দলটি।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, অসহনীয় লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক দুর্নীতির প্রতিবাদে আগামী ৮ জুন (বৃহস্পতিবার) জেলা শহরে বিদ্যুৎ অফিসের সামনে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি।
রিজভী জানান, অবস্থান কর্মসূচি শেষে স্মারকলিপি দেয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, বিএনপির চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস প্রমুখ।
দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় ৪৩ নেতা-কর্মীকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে বিএনপি। তাদের মধ্যে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মো. ছালাহ উদ্দিন রিমনও রয়েছেন। বাকিদের মধ্যে ৩৮ জন পুরুষ কাউন্সিলর ও চারজন নারী কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন।
সোমবার রাতে কেন্দ্র থেকে সিলেট মহানগর বিএনপির কাছে বহিষ্কারের আদেশ পাঠানো হয়।
সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, সিলেট সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া ৪৩ জনকে বিএনপি থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় ৪১ নেতা-কর্মীকে প্রথমে শোকজ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা শোকজের কোনো জবাব দেননি। এরপর কেন্দ্রে আরও দুইজনের নাম পাঠানো হয়। সব মিলিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়া সিলেটের ৪৩ নেতা-কর্মীকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে।
সোমবার বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বহিষ্কারাদেশে বলা হয়েছে, ‘সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আপনি প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করার কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব সন্তোষজনক নয়। আপনার নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত গত ১৫ বছর ধরে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে করা গুম, খুন ও সরকারি পৈশাচিক নিপীড়নের শিকার হয়েছে এমন পরিবারসহ গণতন্ত্রকামী জনগোষ্ঠীর আকাঙ্ক্ষার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা। দলীয় গঠনতন্ত্রের বিধান অনুযায়ী প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হলো এবং গণতন্ত্র উদ্ধারের ইতিহাসে আপনার নাম একজন বেইমান, বিশ্বাসঘাতক ও মীরজাফর হিসেবে উচ্চারিত হবে।’
এর আগে গত শনিবার বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী পৃথকভাবে এসব শোকজ নোটিশ ইস্যু করেন। শোকজ নোটিশে বলা হয়, ‘১৫ বছর ধরে অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপিসহ জনগণ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে খালেদা জিয়া দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর ধরে কারাভোগ করছেন। বিএনপি এই অবৈধ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অথচ দলের সদস্য হয়ে ব্যক্তিস্বার্থ চিন্তা করে দলীয় বড় সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করেছেন। সুতরাং কেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে না, তার কারণ দেখিয়ে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লিখিত জবাব দলের কেন্দ্রীয় দপ্তারে জমা দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হলো।’
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, বিএনপি বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাচ্ছে না। কিন্তু সিলেটে যারা দলের সিদ্ধান্ত আমান্য করে প্রার্থী হয়েছিলেন, তাদের দল আজীবন বহিষ্কার করেছে।
২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত চারবার নির্বাচন হয়েছে। ২০০৩ সালে প্রথম নির্বাচনে বিজয়ী হন বদর উদ্দিন কামরান। ২০০৮ সালের দ্বিতীয় নির্বাচনেও তিনি মেয়র নির্বাচিত হন কারাগার থেকে। ২০১৩ সাল থেকে মেয়র পদে আছেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী। তবে এবার তিনি দলের সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচনে প্রার্থী হননি।
আগামী ২১ জুন পঞ্চমবারের মতো সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে।
বিএনপি-জামায়াতের দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক থাকার আহবান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি বলেছেন, ‘আপনারা যদি সন্ত্রাসের পথ পরিহার করে নির্বাচনের পথে না আসেন, তাহলে রাজনৈতিকভাবে আপনাদের কবর রচনা হবে।
সোমবার বিকালে রাজধানীর শ্যামলি ক্লাব মাঠে ঢাকা-১৩ আসনের আটটি ওয়ার্ডে যুবলীগের ১০৪ ইউনিটের সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের বক্তব্যের কটূক্তি করে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় আসার আগে তাদের প্রতিষ্ঠান খুনি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর ছয়শোর বেশি সামরিক সদস্যকে ফাঁসির কাষ্টে ঝুলিয়ে হত্যা করেছিলেন তারা নাকি রাষ্ট্রকাঠামোকে মেরামত করবে। তাদের কথা শুনে ঘোড়াও হাসে।’
নানক বলেন, ‘যারা রাষ্ট্রের মধ্যে আরেকটি হাওয়া ভবন রাষ্ট্র গঠন করেছিল। ওই বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে এবং তাদের ষড়যন্ত্রের ‘বিষদাত’ ভেঙে দিতে হবে।’
বিএনপির নানক বলেন, ‘লজ্জা করে না আপনাদের? বিএনপি নেতারা বলেছিলেন আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনা কোনো দিন পদ্মাসেতু করতে পারবে না। শুধু তাই নয়, বিএনপি পদ্মাসেতু নির্মাণ বন্ধে নানা ষড়যন্ত্র করেছে। আর এই ষড়যন্ত্রের পেছনে ড. ইউনূসের হাত রয়েছে।’
সরকার বিরোধীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। ষড়যন্ত্র চলছে চলবে কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের উন্নয়ন থেমে থাকবে না। শেখ হাসিনা নেতৃত্বে সরকার কোনো অপশক্তিকে ভয় পায় না।’
দলের বার্তা পাওয়া মাত্রই আগামী নির্বাচনে ঝাঁপিয়ে পড়তে যুবলীগকে নির্দেশনা দিয়ে নানক বলেন, ‘আপনাদের ফোনে যদি কোনো মেসেজ পান। সে মেসেজ পেয়ে আপনারা ঝাঁপিয়ে পড়তে পারবেন না? আমাদের মাঝে কোনো বিবেধ নেই। শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দেবেন, তার পক্ষে আমরা সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ব।’
সম্মেলনে যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে আপনারা দেশপ্রেমিক ও ত্যাগী নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। সামনের সকল নির্বাচন অবাদ- সুষ্ঠু ও প্রতিযোগীতামূলক হবে। সকল নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগকে আবারও নির্বাচিত করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে দলীয় নেতা-কর্মীর উদ্দেশে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, ‘আমাদের মাঠে ময়দানে থাকতে হবে। যে কোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে তৈরি থাকতে হবে। এটা সম্ভব হবে যখন আমরা নিজেদের মধ্যে গ্রুপিং বন্ধ করতে পারব।’
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন বাবুল, সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন। এ সময় বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, ঢাকা-১৩ আসনের সংসদ সদস্য সাদেক খান, যুবলীগের প্রচার সম্পাদক জয়দেব নন্দি, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক কামরুজ্জামান কামরুল, উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজ মাহমুদ।
আসন্ন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে কাজী মো. মামুনুর রশিদকে লাঙল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ঘোষণা করেছেন দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ।
সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে মামুনুর রশিদের দলীয় মনোনয়ন ফরমে স্বাক্ষর করেন তিনি। বিরোধী দলীয় নেতার রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ্ এক বার্তায় এ তথ্য জানান।
মামুনুর রশিদ জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য, বিরোধী দলীয় নেতার মুখপাত্র ও এরশাদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান।
তার প্রার্থিতা ঘোষণার সংবাদ বিবরণীতে জানানো হয়, আগামী ১৭ জুলাই অনুষ্ঠেয় ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে কাজী মো. মামুনুর রশিদের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন বিরোধী দলীয় নেতা। যা অবিলম্বে দলীয় সিদ্ধান্ত হিসেবে কার্যকরের নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।
বিএনপি দেশে গুম, খুন ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু করেছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশকে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে আওয়ামী লীগ সরকার।
সোমবার গণভবনে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত কমিটির সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এসব কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, বিএনপি দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে তারা দেশে গুম, খুন ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু করে। জাতির পিতা হত্যাকাণ্ডের পর আমার বিচার চাওয়ার, বিচার পাওয়ার অধিকার ছিল না। এটা চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন। সেই বিচার না পাওয়ার অবস্থা থেকে আজ দেশকে মুক্ত করতে পেরেছি। আওয়ামী লীগ সরকার সব সময় ন্যায়বিচারে বিশ্বাস করে।
শেখ হাসিনা বলেন, মানুষ যেন ন্যায়বিচার পায়, সে ব্যবস্থা আওয়ামী লীগ সরকার করে দিয়েছে। স্বল্প সময়ে বিনা ভোগান্তিতে মানুষ যেন বিচার পায়, সেজন্য আমাদের সরকার বিচারব্যবস্থাকে ডিজিটাল করে দিয়েছে। করোনা মহামারির সময়ে ভার্চুয়াল করে দিয়েছি, যাতে মানুষ ঘরে বসেই স্বল্প সময়ে বিচার পায়।
সরকারপ্রধান আরও বলেন, দেশে ধারাবাহিক গণতন্ত্র আছে বলেই গত সাড়ে ১৪ বছরে অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে। বর্তমান তাপদাহ পরিস্থিতিতে বিদ্যুতের কারণে মানুষের কিছুটা কষ্ট হচ্ছে, আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করছি, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের ১৪ বছরের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। আমরা বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে কাজ করে যাচ্ছি।
এ সময় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত কমিটিকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী।
জাতীয় পার্টি (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, বাকশালের আদলে দেশ চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ প্লাস। আওয়ামী লীগের প্রধান যারা তারা এখন আওয়ামী লীগ প্লাস পরিচালনা করছেন।
রোববার দুপুরে রাজধানীর বনানীতে জাপা চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
সরকারের সমালোচনা করে সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ প্লাসের মধ্যে আওয়ামী লীগ, প্রশাসন, পুলিশ, প্রতিরক্ষা বাহিনীসহ সবাই। কয়েক দিন আগে আওয়ামী লীগের এক শিক্ষিত ও মার্জিত নেতা যেভাবে প্রধান বিচারপতিকে সরিয়ে দেয়ার কথা বলেছেন, তাতে মনে হচ্ছে, বিচার বিভাগও আওয়ামী লীগ প্লাসের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা চলছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, তারা এতটাই শক্তিশালী যে, আওয়ামী লীগ প্লাসের নির্দেশনা মেনে চলা সবার জন্য বাধ্যতামূলক। কেউ না মানলে তাকে শাস্তি পেতে হবে। মনে হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং পাবলিক সার্ভিস কমিশনও আওয়ামী লীগ প্লাসের সদস্য হয়েছে। এতে দেশের মানুষের জন্য স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা কারোই নেই।’
জি এম কাদের আরও বলেন, ‘এমন বাস্তবতায় মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা, মেধার ভিত্তিতে চাকরি পাওয়া বা মানবাধিকার রক্ষার জন্য কাজ করা আওয়ামী লীগ প্লাসের বাইরে চিন্তা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগ প্লাসের বাইরে বের হতে না পারলে দেশে সঠিক রাজনীতি সম্ভব হবে না।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘যে কাঠামোতে বাকশাল তৈরি করা হয়েছিল ঠিক তেমন করেই আওয়ামী লীগ প্লাস সৃষ্টি করা হয়েছে। সংবিধান সংশোধন করে বাকশাল করা হয়েছিল কিন্তু আওয়ামী লীগ প্লাস আইনগতভাবে করা হয়নি। যেমন বাকশালের জন্য কিছু আইন করা হয়েছিল যা আওয়ামী লীগ প্লাসের জন্য নেই। তাছাড়া সব সংস্থাই ওই দলের সদস্যের মত কাজ করছেন। তারা যাকে যেখানে কাজ করতে বলবেন, সে সেখানেই কাজ করবেন। অথবা যাকে নির্বাচন করতে বলবেন তিনি নির্বাচিত হবেন। এভাবেই আওয়ামী লীগ প্লাস একটি দল দাঁড়িয়ে গেছে।’
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘সদস্য হোক বা না হোক, ইচ্ছায় হোক আর না হোক, সবাই সেই দলের নিয়ন্ত্রণে যেতে বাধ্য হচ্ছে। প্রধান বিচারপতিকে সরিয়ে দেয়ার কথা যিনি বলেছেন তিনি উচ্চ শিক্ষিত এবং ঠান্ডা মাথায় বলেছেন। এখন সবাই নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছেন, এর বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা কারো নেই। এই ধরনের শাসন ব্যবস্থা কখনোই কল্যাণকর হতে পারে না। এমন বাস্তবতায় গণতন্ত্র আশা করা অসম্ভব।’
বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব কি না এমন এক প্রশ্নের জবাবে জি এম কাদের বলেন, ‘যখন সমস্ত কিছুই আওয়ামী লীগ প্লাস বা সেই দলের নেতাদের নিয়ন্ত্রণে সেখানে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে নির্বাচনে ফলাফল অসম্ভব এবং তারা কখনোই পরাজিত হতে চাইবে না। আমেরিকার ভিসানীতি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহায়ক হবে। যারা এই নীতি ঘোষণা করেছেন তারা কতটা কার্যকর করেন তার ওপর নির্ভর করবে সব কিছু।’
বাংলাদেশ ও জাপানের অংশীদারিত্ব অনেক পুরোনো উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘তারা (জাপান) দেখতে চায়, সরকার বদল হলেও এটা যেন অব্যাহত থাকে। স্বাভাবিকভাবেই তারা এটা দেখতে চাইবে। বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থা, মানবাধিকার এসব নিয়ে আজ সবার উদ্বেগ। স্বাভাবিকভাবে তাদেরও উদ্বেগ আছে। তারা জানতে চায়, কী হচ্ছে, আগামীতে কী হতে যাচ্ছে। এটাই তারা বোঝার চেষ্টা করছেন।’
রোববার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন আমির খসরু। এর আগে সেখানে জাপানি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয়।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের আমীর খসরু বলেন, ‘জাপান বাংলাদেশের মানুষের কাছে খুবই গ্রহণযোগ্য একটি দেশ। জাপানের অনেক বিনিয়োগ বাংলাদেশে আছে। তাদের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশ সরকারের অবকাঠামোগত প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগ করছে। সুতরাং জাপান বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেক লম্বা।’
জাপানের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আলাপ হয়েছে কি না, জানতে চাইলে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘জাপানের রাষ্ট্রদূত কিছুদিন আগে এখানে নতুন এসেছেন। তিনি সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এসেছেন। স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশ জাপানের বন্ধুত্ব ও পার্টনারশিপ অনেক পুরোনো। বাংলাদেশের সঙ্গে যাদের পার্টনারশিপ, তার মধ্যে জাপান অন্যতম।’
জাপান বাংলাদেশের সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, ‘আমরা যখন ক্ষমতায় ছিলাম, তখন প্রচুর বিনিয়োগ জাপান থেকে এসেছে। প্রচুর অবকাঠামোগত বিনিয়োগ হয়েছে বিএনপির সময়। একদলীয় শাসনের পরে মুক্তবাজার অর্থনীতি, যেটা বিএনপি বাংলাদেশে শুরু করেছে, তারপর থেকে জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেক বেশি হয়েছে।’
জাপানের রাষ্ট্রদূতকে বিএনপির পক্ষ থেকে কী বলা হয়েছে— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে আমীর খসরু বলেন, ‘বাংলাদেশে যা হচ্ছে, তাই বলেছি। সেগুলো বলা যাবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে আইনের শাসন, নির্বাচন, মানবাধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মানুষের জীবনের নিরাপত্তা, স্বাভাবিকভাবে এসব নিয়ে উদ্বেগ সারা বিশ্ববাসীর আছে, দেশের মানুষের আছে, জাপানেরও থাকার কথা। তারা এসব জানতে চাচ্ছে। আগামী দিনের বাংলাদেশ কোথায় যাচ্ছে, এটা তারা জানতে চায়।’
রোববার সকাল ১০টায় বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরির সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয়। বৈঠকে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ছিলেন জাপান দূতাবাসের প্রথম রাজনৈতিক সচিব মিস ইগাই। এ ছাড়া বিএনপির পক্ষ থেকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ও দলের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ উপস্থিত ছিলেন।
কারও মুখাপেক্ষী হয়ে নয়, বাংলাদেশ নিজের পায়ে চলবে বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা নিজের পায়ে চলব। নিজের দেশকে গড়ে তুলবো। কে আমাদের ভিসা দেবে না, নিষেধাজ্ঞা দেবে- ও নিয়ে মাথা ব্যথা করে লাভ নাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০ ঘণ্টা প্লেনে জার্নি করে, আটলান্টিক পার হয়ে ওই আমেরিকায় না গেলে কিচ্ছু আসে যায় না। পৃথিবীতে আরও অনেক মহাসাগর আছে, অনেক মহাদেশ আছে। সেখানেই আমরা যাতায়াত করব। তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করব। আমাদের অর্থনীতি আরও উন্নত হবে, মজবুত হবে, আরও চাঙা হবে।’
শনিবার বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকায় ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবন (ঢাকা জেলা ও ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যালয়) উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইঙ্গিত করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘ভোট যারা চুরি করে, ভোট নিয়ে যারা চিরদিন খেলছে, জনগণের ভাগ্য নিয়ে যারা খেলছে, আমি তাদের (আমেরিকা) বলবো— ওই সন্ত্রাসী দলের দিকে নজর দিন। কানাডার হাইকোর্ট বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। সন্ত্রাসী ও দুর্নীতির দায়ে আমেরিকা তারেক জিয়াকে ভিসা দেয় নাই। তারা (বিএনপি) আবার তাদের (আমেরিকা) কাছে ধরনা দেয়। এতকিছু বলতে চাই না। শুধু এটাই বলব— যারা অর্থনীতিবিদ, জ্ঞানী-গুণী আছেন… আমরা তো লেখাপড়া এত বেশি জানি না। শুধু দেশের মাটি মানুষকে চিনি। বাংলাদেশ, নদী-নালা, খাল-বিল চিনি। বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণ কোথায়, কী করলে ভালো হবে সেটা জানি। সেটাই মাথায় রেখে দেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় নিয়েছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ওপর বারবার আঘাত, হামলা হয়েছে। আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করা হয়েছে। ইয়াহিয়া খান চেষ্টা করেছে, জিয়াউর রহমান চেষ্টা করেছে, এরশাদ-খালেদা জিয়াও চেষ্টা করেছে আওয়ামী লীগকে কীভাবে ধ্বংস করা যায়? আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষের সংগঠন হিসেবে গড়ে উঠেছে। তাই এই সংগঠনকে কেউ ধ্বংস করতে পারেনি, পারবেও না।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ শুধু একটি দল নয়, আওয়ামী লীগ ইনস্টিটিউটের মতো। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে এদেশের উন্নতি হয়, এটাই বাস্তব। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়েই বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলে স্বল্প সময়ের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলেন। আওয়ামী লীগ নামক সংগঠন এদেশের মানুষের জন্য আন্দোলন সংগ্রামে সবসময় ভূমিকা পালন করেছে।
সরকারপ্রধান বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের কল্যাণ হয়। মানুষের কল্যাণে সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। আমরা যেসব কাজ করি, আওয়ামী লীগ যেসব পরিকল্পনা নেয়, প্রকল্প নেয়, তা সুপরিকল্পিতভাবেই করা হয়। আমাদের মাটি, মানুষ, পরিবেশ, আমাদের দেশের ভৌগলিক অবস্থান, প্রাকৃতিক অবস্থা, সবকিছু বিবেচনা করেই আমরা প্রকল্প গ্রহণ করি। তার ফলে আমাদের প্রতিটি প্রকল্পই সাফল্য অর্জন করে। মানুষ তার সুফল পায়।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ এর বাংলাদেশ কী ছিল, এখন বাংলাদেশ কী অবস্থায় আছে, কেউ তুলনাটা বিবেচনা করলেই পরিবর্তনটা দেখতে পারবেন। একই দিনে ১০০ সড়ক উদ্বোধন করা, এটা কী কোনো সরকার আগে করেছে, পারেনি। কে পেরেছে? আওয়ামী লীগ। আজকে আমরা বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি, এখন আমাদের বেকারত্ব মাত্র ৩ শতাংশ। সেটাও থাকবে না। যদি কেউ উদ্যোগ নেয় সেও কাজ করতে পারবে। আমরা সেই ব্যবস্থাটাও করে দিয়েছি। আমাদের গ্রামের অর্থনীতি অনেক মজবুত। গ্রামের দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়েছে।
তিনি বলেন, কৃষকদের আমরা সব ধরনের প্রণোদনা দিচ্ছি, দুই কোটি ১০ লাখ কৃষককে কার্ড দিয়েছি। ভর্তুকির টাকাটা তার ব্যাংকে চলে যায়। ১০ টাকা দিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ আমরা করে দিয়েছি। এক কোটি ২ লাখ ৭০ হাজার ১৪৩ জন কৃষক পুরো বাংলাদেশে অ্যাকাউন্ট খুলেছে। এখন তারা সেখানে বসে টাকা পেয়ে যায়। ধান কাটার মৌসুমে মানুষ পাওয়া যায় না, মজুরের দাম বেড়ে গেছে। আমি আহ্বান করেছি আমার ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী মাঠে চলে গেছে, কৃষকের ধান কেটে ঘরে পৌঁছে দিয়েছে।
সরকারপ্রধান বলেন, আমরা বিদ্যুৎ শতভাগ দিতে পেরেছি, এখন যেহেতু তেলের দাম বেড়ে গেছে, গ্যাসের দাম বেড়ে গেছে, কয়লার দাম বেড়ে গেছে, কয়লাও পাওয়া যাচ্ছে না। আগে এক সময় যারা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা করেছিল, তারাই এখন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করছে। তার কারণে কয়লা কিনে আনতে সমস্যা হচ্ছে। আমি জানি মানুষের অনেক কষ্ট হচ্ছে, আমরা তো লোডশেডিং একেবারে দূর করে দিয়েছিলাম, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ যদি না হতো আর করোনাভাইরাস যদি না দেখা দিতো, আজকে যদি বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা না দেখা দিতো, মুদ্রাস্ফীতি না দেখা দিতো, তাহলে মানুষের কষ্ট হতো না। আজকে আমরা ভেতরে যতই চেষ্টা করি, যে জিনিসটা বাইরে থেকে আনতে হচ্ছে, সেটা কষ্ট করে আমাদেরকে জোগাড় করতে হচ্ছে।
জ্বালানির সুখবর জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কাতার ও ওমানের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়ে গেছে। আমরা আরো কয়েকটা দেশের সঙ্গে করছি যাতে গ্যাস কিনতে পারি। এই কষ্ট দূর করতে পারি। একবার অভ্যাস হয়ে গেলে মানুষের কষ্ট বাড়ে, বিএনপি-জামায়াতের আমলে তো বিদ্যুৎ ছিলই না। তখন মানুষ হাহাকার করত। বিদ্যুৎ চাওয়ার কারণে কানসার্টে খালেদা জিয়া গুলি করে মানুষ হত্যা করেছিল। সারের দাবি করেছিল বলে ১৮জন কৃষক হত্যা করছিল। শ্রমিকের মজুরি দাবি করেছিল বলে ২৭ জন শ্রমিককে রোজার সময় তাদের হত্যা করেছিল।
বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা নিয়ে শঙ্কা দূরে সরিয়ে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এগিয়ে যাওয়ার জন্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট যথোপপযুক্ত হয়েছে বলে বর্ণনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘(বাজেট সম্পর্কে) কে কী বলছে তা নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানোর দরকার নেই। আমরা একটি উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করার জন্য আমরা একটি উপযুক্ত বাজেট ঘোষণা করেছি।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের মানুষ আমাদের পক্ষে আছে। তাই, আমরা বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারব, ইনশাআল্লাহ। প্রায় ৭.৬২ লাখ কোটি টাকার এত বিশাল বাজেটের বাস্তবায়নে যারা শঙ্কিত, তাদের কড়া সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর বাজেট পাশের আগে কেউ কেউ বলেন, আমরা বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারব না। কিন্তু, আমরা প্রতিটি মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন অনুযায়ী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কামরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজীর আহমেদের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম।