‘বিএনপির শাসনামলে পাকিস্তানি দর্শনের রাজনীতি বাংলাদেশে জোরদার হয় এবং জামায়াত ইসলামের ক্ষমতায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়’ বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ‘বিএনপির পৃষ্ঠপোষকতায় জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশে ফুলেফেঁপে বিষবৃক্ষে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের সচেতন মানুষ মাত্রই জানে জামায়াতে ইসলামী হলো বিএনপির বি টিম।’
শনিবার এক বিবৃতিতে বিএনপি নেতাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘বিএনপি জন্মলগ্ন থেকে জামায়াত ইসলামের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছে।’
কাদের বলেন, ‘ঐতিহ্যগতভাবেই গোলাম আযমের দল জামায়াতে ইসলামী বিএনপির ঘনিষ্ঠ মিত্র। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান পাকিস্তানি নাগরিক গোলাম আযমকে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে নিয়ে এসেছিল এবং তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া গোলাম আযমকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে একাকার হয়ে সরকার গঠন করে এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধুলিস্যাৎ করে। যুদ্ধাপরাধের বিচারের সময় বেগম খালেদা জিয়া জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করার জন্য আন্দোলন করেছে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপিকে ভোট না দেয়ার অপরাধে সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘরে ভাংচুর ও আগুন দেয়া, হরতালের নামে আগুনসন্ত্রাস ও পেট্রোল বোমা মেরে নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে মারা, গাছ কাটা, ভূমি অফিস পুড়িয়ে দেয়ার যে ইতিহাস বিএনপি সৃষ্টি করেছিল সেটা বেশি দিন আগে নয়। বিএনপি নেতারা ভুলে গেলেও দেশের মানুষ বিএনপির সেই সহিংসতার কথা ভুলে যায়নি। আসলে নিজেদের এসব অপকর্ম আড়াল করতেই বিএনপি নেতারা সবসময় অপপ্রচার চালায় এবং সরকারি দলের লোকেদের ওপর দোষ চাপিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভোগার উপলক্ষ খোঁজে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ব্রিকসের যোগদান নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের বক্তব্য অজ্ঞতা এছাড়া কিছু নয়। পাশ্চাত্যের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেও ভারত ও আফ্রিকা ব্রিকস ব্যাংক প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির কাছ থেকে দেশের জন্য আর্থিক সহায়তা পেয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘অনুরূপভাবে বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণের জন্য শেখ হাসিনা সরকার ব্রিকস-এ যোগদান করছে। বিএনপির মতো বিদেশী প্রভুদের তুষ্ট করার জন্য আওয়ামী লীগ বা শেখ হাসিনা রাজনীতি করেন না। দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য আওয়ামী লীগ রাজনীতি করে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী প্রথম বিজয় দিবস আমরা গত বছর পালন করেছি। সেই বিজয় দিবসের আনন্দ উৎসব বিজয় উল্লাস ছিল অন্যরকম। মুক্ত স্বাধীন পরিবেশে মানুষ মন ভরে বিজয়ের স্বাদ গ্রহণ করেছে। এরপরে এক বছর পার হয়ে গেলেও নানা পরিক্রমার মধ্যে দিয়ে নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক বিতর্কের কারণে কিছু বিভক্তি দৃশ্যমান হয়েছে। এসব বিভক্তির ফলে অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী শক্তি আবারও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে, সেটা এখন দৃশ্যমান। এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হওয়ার পরে একটি ঘটনায় (হাদির ওপর হামলা) বেদনা বিধুঁর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
জাতীয় বার্তা সংস্থা বাসস―এর সঙ্গে একান্ত আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি, গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রক্রিয়াকে রুদ্ধ করতে পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তি এবং তার দোসররা সকল চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এই সময়ে আমাদের প্রকৃতপক্ষে সার্বভৌমত্ব এবং গণতন্ত্র সুসংহত করার জন্য বাংলাদেশের পক্ষের গণতান্ত্রিক শক্তি ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী সকল রাজনৈতিক দলের ঐক্য এখন সবচাইতে বেশি জরুরি। কারণ, এর মাধ্যমেই আমরা কেবল মাত্র সন্ত্রাসবাদী, গণতন্ত্র বিরোধী তৎপরতা বা ফ্যাসিবাদী শক্তির মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার যে অপচেষ্টা, সেটা রুখে দিতে পারব।
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধে এদেশের সব মানুষেরই সংগ্রাম ছিল। ৭১ কে যারা দলীয়করণ করতে চেয়েছে তারা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। এখন চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের রক্তের আকাঙ্ক্ষা, বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির প্রত্যাশা। বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, বৈষম্যমূলক সমাজ ব্যবস্থা থেকে মুক্তি, গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং হারানো মানবাধিকার ফিরে পেতে চেয়েছে। এগুলোর সমষ্টিগত অভিপ্রায়ের চূড়ান্ত রূপ হচ্ছে গণঅভ্যুত্থান।
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের প্রধান কাজ হলো-ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্যকে জাতীয় শক্তিতে পরিণত করা। একইসঙ্গে আগামী দিনের সকল কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এই ধারাবাহিকতায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা প্রকৃতপক্ষে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ করতে পারব। এটাই আমাদের বিজয়ের উচ্ছ্বাস, জাতীয় প্রত্যাশা এবং শহীদদের রক্তের ঋণ শোধের উপায়।
সূত্র: বাসস
ময়মনসিংহের ভালুকায় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে হবিরবাড়ী ইউনিয়নের জামিরদিয়া মাস্টারবাড়ী এলাকার সর্বস্তরের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা হয়েছে। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে জামিরদিয়া মাস্টারবাড়ীর ব্যবসায়ীদের আয়োজনে আব্দুল গণি মাস্টার স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে এ সভা হয়।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন ভালুকা উপজেলা বিএনপির সদস্য ও হবিরবাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি হাজী আব্দুস সাত্তার মাস্টার। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য, ভালুকা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এবং ময়মনসিংহ-১১ (ভালুকা) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ফখর উদ্দিন আহমেদ বাচ্চু। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা যুবদলের সদস্য ও হবিরবাড়ী ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান জিয়া।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রুহুল আমীন মাসুদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম. এ. হামিদ কারী, সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি আনোয়ার উদ্দিন আহমেদ, কেন্দ্রীয় কৃষকদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন, হবিরবাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম খান বাসানসহ বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ীরা তাদের বিভিন্ন সমস্যা ও প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফখর উদ্দিন আহমেদ বাচ্চু বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের সমর্থনে নির্বাচিত হলে ভালুকা উপজেলার সার্বিক উন্নয়নে অগ্রাধিকারভিত্তিতে কাজ করা হবে। তিনি স্কয়ার মাস্টারবাড়ী ও সিডস্টোর বাজার এলাকায় পথচারীদের নিরাপত্তায় ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ, জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, লাউতির খাল পুনঃখনন এবং পরিকল্পিত সড়ক নির্মাণের কথা জানান। এছাড়া বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ডাম্পিং স্টেশন স্থাপন, পরিবেশবান্ধব জৈব সার উৎপাদন, স্থায়ী পুলিশ স্টেশন স্থাপন, যানজট নিরসনে আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা এবং একটি আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। এ সময় তিনি ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষায় বিএনপির অবস্থান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথাও জানান।
মতবিনিময় সভা শেষে বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত রোগমুক্তি ও সুস্থতা কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন বলেছেন, গণসংযোগকালে একটি প্রশ্ন আপনাদের মনে সবসময়ই ঘোরে- নমিনেশনের কী খবর। আপনারা আমার কাছে প্রায়ই এ বিষয়ে জানতে চান। আমি আবারও পরিষ্কার করে বলতে চাই, কিছুদিন আগে যে নমিনেশন দেওয়া হয়েছে, সেটি ছিল প্রাথমিক সিলেকশন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতারা বারবার স্পষ্ট করে বলেছেন- ফাইনাল সিলেকশন তারা দেবেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা কি চান না আমি আপনাদের পাশে থাকি? আপনারা যেহেতু আমাকে চান, আমি বিশ্বাস করি দলও আমাকে চাইবে। যখন ফাইনাল তালিকা প্রকাশ হবে, তখনই সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে।’
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে নগরীর মোঘলটুলি ও রাজগঞ্জ বাজার এলাকায় দেশনায়ক তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা এবং কুমিল্লা নিয়ে হাজী ইয়াছিনের স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা সংবলিত লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগকালে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল। এই দল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তিনি জনগণের মনের কথা শুনতেন এবং জনগণ যা চাইত, তাই বাস্তবায়ন করতেন বলেই তার শাসনামলে দেশ এগিয়ে গিয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায় বেগম খালেদা জিয়া ও আমাদের প্রিয় নেতা রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমানও জনগণের প্রত্যাশাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে রাজনীতি করছেন। জনগণ যা চাইবে, দলও তাই চাইবে- এটাই বিএনপির রাজনীতির মূল দর্শন।’
গণসংযোগকালে ভোটারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘গত ১৭-১৮ বছর আমি নেতা-কর্মীদের পাশে ছিলাম। আদালতের বারান্দায় থেকেছি, নিম্ন আদালতে জামিন না হলে হাইকোর্টে গিয়ে জামিনের ব্যবস্থা করেছি। নেতা-কর্মীদের পরিবারের খোঁজখবর নিয়েছি এবং সাধ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করেছি। অতীতে যেভাবে আপনাদের পাশে ছিলাম, এখনো আছি এবং ইনশাআল্লাহ আগামীতেও থাকব।’
গণসংযোগকালে উপস্থিত ছিলেন, সদর দক্ষিণ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এস এ বারী সেলিম, কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক শহীদুল্লাহ রতন, আতাউর রহমান ছুটি, মাহাবুবর রহমান দুলাল, মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য মুজিবুর রহমান কামাল, মনির হোসেন পারভেজ, কুমিল্লা মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব রোমান হাসান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সৈয়দ মেরাজ, কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আমিরুল পাসা সিদ্দিকী রাকিব, জেলা যুবদলের সদস্য সচিব ফরিদ উদ্দিন শিবলু, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক খলিলুর রহমান বিপ্লব, জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সালমান সাঈদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আনোয়ার হোসেন, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব এ কে এম শাহেদ পান্না, কুমিল্লা মহানগর কৃষকদলের আহ্বায়ক কাজী শাহিনুর, সদস্য সচিব ইকরাম হোসেন তাজ, মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরী নোমান, কুমিল্লা মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি নাহিদ রানা, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি কাজী জোবায়ের আলম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক ধীমান, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন রবিন, মহানগর ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসমাইল হোসেনসহ অন্যরা।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ডাকে শুরু হওয়া স্বাধীনতাযুদ্ধ ওই বছর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জিত হয়, পাক হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করার মাধ্যমে। দেশের অদম্য বীর মুক্তিযোদ্ধারা জীবনবাজি রেখে এ বিজয় ছিনিয়ে আনে। তাই ১৬ ডিসেম্বর জাতির অহংকার, আনন্দ আর বেদনার এক মহাকাব্যিক দিন।
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধের পরে জাতি ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করে। আমি এদিনে দেশবাসীসহ প্রবাসী বাংলাদেশিদের জানাই শুভেচ্ছা। সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণে ভরে উঠুক তাদের জীবন। এই দিনে ৯ মাসব্যাপী স্বাধীনতাযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে এবং বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন সেই সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের জানাই গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি। আমি স্বাধীনতাযুদ্ধের বীর শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। বিদেশি শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে যেসব মা-বোন সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন- আমি জানাই তাদের সশ্রদ্ধ সালাম।
তিনি বলেন, শোষণমুক্ত ও সামাজিক ন্যায়বিচার ভিত্তিক গণতান্ত্রিক নীতিমালার ওপর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় ছিল নতুন রাষ্ট্রের মর্মমূলে। কিন্তু অমানবিক ফ্যাসিস্ট গোষ্ঠী বারবার সেই প্রত্যয়কে মাটিচাপা দিয়ে সর্বনাশা দুঃশাসন জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়। থামিয়ে দেয় বহুদলীয় গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা। আগ্রাসী শক্তি আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অবজ্ঞা করার ঔদ্ধত্য দেখায়। ওই অপশক্তির এদেশীয় এজেন্টরা আমাদের অর্জিত স্বাধীনতা বিপন্ন করার চক্রান্তজাল বুনে চলেছে। এরা ১৬ গত বছর ধরে একের পর এক প্রহসনের একতরফা নির্বাচন করে জনমতকে তাচ্ছিল্য করেছে। এ দেশের মানুষের সকল গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেয়। নাগরিক স্বাধীনতা অদৃশ্য করে মানুষকে করে অধিকারহারা। এ দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র নিরুদ্দেশ করা হয়। নিরুদ্দেশ করা হয় সংবাদপত্রসহ বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা।
তিনি আরও বলেন, গণতন্ত্রহীন দেশে নিরঙ্কুশ ক্ষমতার দাপটে সর্বত্র হতাশা, ভয় আর নৈরাজ্যের অন্ধকার নেমে আসে। ক্ষমতা জবরদখলকারীরা জনগণের ওপর নৃশংস আক্রমণ চালিয়ে অসংখ্য মানুষকে অদৃশ্য ও হত্যা করে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষকে মিথ্যা মামলায় কারারুদ্ধ করে। পরিস্থিতি ভয়ংকর নৈরাজ্যময় হয়ে ওঠে। যিনি জীবনের দীর্ঘ সময় গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন সেই অবিসংবাদিত নেত্রীকে অন্যায়ভাবে বন্দী করে অন্ধকার কারাগারে রাখা হয়েছিল। অমানবিক নিপীড়ক শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা চিরস্থায়ীভাবে ধরে রাখার জন্য একের পর এক গণবিরোধী পদক্ষেপ নিতে থাকে।
জুলাই অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ তুলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ফ্যাসিস্টদের হাত থেকে প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং গণতন্ত্রকে বিপদমুক্ত করতে মহান বিজয় দিবসের প্রেরণায় বলীয়ান হয়ে আমাদের জাতীয় ঐক্য গড়ে ওঠে এবং ‘২৪ এর জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার দুনিয়া-কাঁপানো আন্দোলনে তারা পরাজিত হয়। পতন হয় ইতিহাসের এক নিষ্ঠুরতম একনায়কের। দেশে আবার স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের সুরক্ষা ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনরুজ্জীবনের প্রত্যাশা জেগে ওঠে।
তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে নির্বিঘ্নে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনকল্যাণমুখী জবাবদিহিমূলক সরকার গঠনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশের জন্য এই বিজয়ের দিনে আমাদের অঙ্গীকার হোক-আমরা বিভাজন ভুলে, হিংসা ভুলে মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে থাকব। মহান বিজয় দিবসে আমি দেশবাসী সকলের প্রতি সেই আহ্বান জানাই। বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে আমি সকল কর্মসূচির সাফল্য কামনা করছি। আল্লাহ হাফেজ, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম দেশে মৌলবাদী চক্রের সব ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, একাত্তরের পরাজিত শক্তি এবং মানবতাবিরোধী মৌলবাদী চক্রের চক্রান্ত রুখে দিতে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে এক হতে হবে। রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি নামযজ্ঞ অনুষ্ঠান পরিদর্শনকালে তিনি এসব কথা বলেন।
সেলিমুজ্জামান সেলিম তার বক্তব্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ওপর জোর দিয়ে বলেন, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে অপশক্তিকে মোকাবিলা করতে হবে। এ দেশের মানুষ অতীতেও বারবার ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করেছে এবং এবারও কোনো ষড়যন্ত্র সফল হতে দেওয়া হবে না। গোপালগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির এই মনোনীত প্রার্থী আরও বলেন, ধর্ম ভিন্ন হলেও আমাদের জাতিসত্তা এক। হিন্দু, মুসলমান বা খ্রিষ্টান পরিচয়ের চেয়ে বড় পরিচয় হলো আমরা সবাই বাংলাদেশি। ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে সবাই একসঙ্গে কাজ করছে বলেই সব চক্রান্ত নস্যাৎ করা সম্ভব হচ্ছে এবং এটাই বাংলাদেশের প্রকৃত সৌন্দর্য।
অনুষ্ঠান পরিদর্শনকালে তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন মুকসুদপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. আব্দুস ছালাম খান, সাধারণ সম্পাদক তারেকুল ইসলাম রাজু, পৌর বিএনপির সভাপতি আবুল বাশার টুলটু বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মিন্টু এবং যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক মাহমুদুল হাসান বাপ্পীসহ স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফেরার আগে লন্ডনে শেষবারের মতো দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে যাচ্ছেন। আগামী ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। লন্ডনের সিটি প্যাভিলিয়নে মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় আয়োজিত এই মঞ্চ থেকেই তিনি দেশে ফেরার আগে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে সর্বশেষ দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখবেন। যুক্তরাজ্য বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত এই সভার মাধ্যমে মূলত তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নেবেন।
অনুষ্ঠানটি সফল করতে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম. এ. মালিক ও সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম. আহমেদ রবিবারই বাংলাদেশ থেকে লন্ডনের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। সময় স্বল্পতার কারণে কমিউনিটি ও সুধীজনদের সঙ্গে আলাদা কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। দলীয় সূত্রমতে, আগামী ২৪ ডিসেম্বর লন্ডনের কিংসস্টনের বাসা থেকে হিথ্রো বিমানবন্দরে যাওয়ার পথে নেতাকর্মীরা তাকে বিদায় জানাবেন।
তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান এবং কন্যা ডা. জাইমা রহমান তার সঙ্গে ফিরবেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এছাড়া সফরসঙ্গী হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মাহিদুর রহমান, তারেক রহমানের একান্ত সচিব আব্দুর রহমান সানি, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন ইউরোপের সমন্বয়ক কামাল উদ্দীন এবং মিডিয়া টিমের সদস্য সালেহ শিবলীসহ যুক্তরাজ্য বিএনপির শীর্ষ নেতারা তার সঙ্গে দেশে ফিরছেন। এমনকি তাকে নিয়ে আসতে দলের সিনিয়র নেতারাও লন্ডনে যেতে পারেন বলে জানা গেছে।
বিএনপি মনোনিত নওগাঁ-৩ (মহাদেবপুর-বদলগাছী) আসনের প্রার্থী ফজলে হুদা বাবুল বলেছেন, গত ১৭ বছর যাবত আন্দোলন সংগ্রামের ফলে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেছে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সাথে পাঞ্চা লড়ে মৃত্যুর মুখে এখন বেগম খালেদা জিয়া। দেশের এ সংকটময় পরিস্থিতিতে আপোষহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ভীষণ প্রয়োজন। দেশের মানুষ তার পাশে আছে। মানুষের দোয়া আর ভালোবাসায় তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন। বিএনপি এবং দেশের হাল ধরবেন। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ডাক-বাংলো মাঠে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও সুস্থতা কামনায় অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মহাদেবপুর উপজেলা ধানের শীষ সমর্থক গোষ্ঠি দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে। এ সময় ধানের শীষ সমর্থক গোষ্ঠীর আহ্বায়ক শহীদুল ইসলাম শহীদ এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন- জেলা বিএনপির সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দীক নান্নু। এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন- জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব বায়েজিদ হোসেন পলাশ, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল আলম গোল্ডনসহ অন্যরা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন- মহাদেবপুর ধানের শীষ সমর্থক গোষ্ঠি সেকেন্দার আলী ও যুগ্ম সদস্য সচিব মতিউর রহমান মতি।
এ আসনের উন্নয়নে ফজলে হুদা বলেন, বিজয়ী হতে পারলে এ আসন ২-৩ মাসের মধ্যে মাদকমুক্ত করা হবে। শিক্ষাঙ্গনে কোন রাজনীতি থাকবে না। শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হবে। ন্যায্যমূল্যে কৃষকদের থেকে কৃষিপণ্য কেনা হবে। এ দুই উপজেলায় দুইটি ইন্ডাস্ট্রি করা হবে যেখানে বেকারদের কর্মসংস্থান করা হবে, নারীদের ফ্যামিলি কার্ড প্রদান করা হবে এবং স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়ানো হবে।
আলোচনা শেষে বেগম খালেদার জিয়ার রোগমুক্তি ও সুস্থতা কামনা করে মোনাজাত পরিচালনা করেন প্রধান বক্তা ফজলে হুদা বাবুল। দোয়া মাহফিলে জেলা, উপজেলা বিএনপির অঙ্গসহযোগী সংগঠনের কয়েক হাজার নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
পিরোজপুরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির চেয়ারপার্সন, তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) আছর নামাজ বাদ দি গোপালকৃষ্ণ টাউন ক্লাব টেনিস গ্রাউন্ডে পিরোজপুর জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারন সম্পাদক,জেলা যুবদলের সাবেক ১ নং যুগ্ম আহবায়ক বদিউজ্জামান শেখ রুবেল এর আয়োজনে এ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত হয়ে খালেদা জিয়ার দ্রুত আরোগ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে দোয়া করেন।
দোয়া মাহফিলে সদর উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ন আহবায়ক আমিরুল ইসলাম এর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন পৌর বিএনপি'র সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ তৌহিদুল ইসলাম,জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য এম এ জলিল,জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি মোঃ আলাউদ্দিন হাওলাদার,জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ও শহীদ জিয়া পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি শহিদুল ইসলাম রানা,জেলা ওলামাদলের সিঃযুগ্ম-আহবায়ক মাওঃমিরাজ মোল্লা প্রমুখ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা ছাত্রদলের সাবেক দপ্তর সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা,পৌর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নাফিস আহমেদ সিয়াম সহ ছাত্রদল,যুবদল সহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে প্রতীক। গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বেগম জিয়া আজও অটল। দেশবাসীর দোয়া ও ভালবাসায় তিনি খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা। তাঁকে সুস্থ দেখতে পুরো দেশবাসী অপেক্ষা করছে। একই সঙ্গে তাঁরা দেশবাসীর কাছে দোয়া ও শুভকামনা কামনা করেন।
শেষে বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত সুস্থতা ও কল্যাণ কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় কড়া মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ১৯৭১ সালে যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, সেই শক্তিগুলোই এখন রূপ বদলে এমন ভাব দেখাচ্ছে যেন তারাই নতুন বাংলাদেশ গড়তে পারবে। বিএনপি মহাসচিব দৃঢ়ভাবে বলেন যে, যারা দেশের জন্ম এবং স্বাধীনতাকে অস্বীকার করেছে, তাদের বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই।
রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই সভায় তিনি আসন্ন নির্বাচনকে দুটি শক্তির লড়াই হিসেবে অভিহিত করেন—একটি বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি পশ্চাৎপদ শক্তি, যারা অতীতে স্বাধীনতা ও অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে চেয়েছিল। তিনি প্রশ্ন তোলেন, বাংলাদেশের মানুষ কি স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র বেছে নেবে, নাকি সেই পশ্চাৎপদ শক্তিকে বেছে নেবে?
মির্জা ফখরুল স্মরণ করেন যে, ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের, অর্থাৎ বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছিল, যা ছিল মূলত দেশের ভবিষ্যৎ হত্যা করার শামিল। তিনি সতর্কতা উচ্চারণ করে বলেন যে, ছাত্রদের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্টদের বিতাড়িত করার অর্থ এই নয় যে নতুন কোনো ফ্যাসিস্ট শক্তিকে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হবে, যারা দেশকে পেছনে নিয়ে যেতে চায়।
তিনি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকার কথা উল্লেখ করেন এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ২৫ ডিসেম্বর দেশে প্রত্যাবর্তনকে 'আশার আলো' হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি সকল নেতাকর্মীকে ২৫ তারিখে এমন এক সংবর্ধনা জানানোর আহ্বান জানান, যা বাংলাদেশে অতীতে কখনো দেখা যায়নি।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বেড়ে যাওয়ার গভীর আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই মন্তব্য করেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশ যখন নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার নতুন অধ্যায়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে বাংলাদেশের শত্রুরা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। গত কয়েকদিনের হত্যাকাণ্ডের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি সতর্ক করেন যে, নির্বাচন সামনে রেখে এ ধরনের সহিংসতা ও ষড়যন্ত্রমূলক ঘটনা আরও ঘটতে পারে।
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বরের নির্মমতার কথা স্মরণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, বিজয়ের ঠিক আগমুহূর্তে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা জাতিকে মেধাশূন্য করতেই পরিকল্পিতভাবে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করেছিল। একইভাবে ২০২৪ সালেও ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সন্তানদের হত্যা করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় তার সঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান ও মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকসহ দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসন জীবন শেষে আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার আগমনকে কেন্দ্র করে রাজধানীর গুলশানে তার বাসভবন ও রাজনৈতিক কার্যালয়ে চলছে শেষ মুহূর্তের ব্যাপক প্রস্তুতি ও সংস্কারকাজ। বাবার সঙ্গে তার একমাত্র কন্যা ব্যারিস্টার জাইমা রহমানেরও দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, তারেক রহমান দেশে ফিরে যে বাড়িতে উঠবেন, সেই গুলশান এভিনিউয়ের ১৯৬ নম্বর বাসভবনটি নতুন করে সাজানো হচ্ছে। দেয়ালে শুভ্র রঙ, চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া এবং কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। বাড়ির প্রবেশদ্বারে ছোট গেট বদলে বড় গেট লাগানো হয়েছে এবং পুলিশ বক্স বসানোর কাজও প্রায় শেষ। বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমন জানান, ১৯৬ নম্বর বাড়িটি কোনো কারণে পুরোপুরি প্রস্তুত না হলে পাশেই তার মায়ের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’য় উঠবেন তিনি। এছাড়া, দেশে ফিরে তারেক রহমান গুলশানের ৮৬ নম্বর রোডে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অফিস করবেন। সেখানেও নিরাপত্তা বৃদ্ধিসহ সংস্কার কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
সূত্রমতে, লন্ডন সময় ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন তারেক রহমান। বাংলাদেশ সময় ২৫ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৯টায় তার ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান ইতোমধ্যে ঢাকায় অবস্থান করছেন। বিএনপির এই শীর্ষ নেতার প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে বিপুল জনসমাগমের প্রত্যাশা করছেন দলীয় নেতারা।
এদিকে তারেক রহমানের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সচিবালয়ে জানিয়েছেন, তার নিরাপত্তা নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই এবং সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন তারেক রহমান, এরপর দীর্ঘ সময় তাকে দেশের বাইরেই অবস্থান করতে হয়েছে।
আসন্ন নির্বাচন মোটেও সহজ হবে না এবং ষড়যন্ত্র এখনো থেমে নেই বলে নেতাকর্মীদের সতর্ক করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, সব বাধা উপেক্ষা করে যেকোনো মূল্যে দেশে নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে এবং সেই লক্ষ্যে অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করার দায়িত্ব নেতাকর্মীদের নিতে হবে। শনিবার বিকেলে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক সপ্তাহব্যাপী কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
সারা দেশ থেকে আসা ছাত্রদল ও মাঠ পর্যায়ের নেতাদের উদ্দেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় তারেক রহমান সাম্প্রতিক সহিংসতার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, গত কয়েক দিনের ঘটনা এবং চট্টগ্রামে দলীয় প্রার্থীর ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনা প্রমাণ করে যে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, ষড়যন্ত্রকারীরা পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করার চেষ্টা করতে পারে। তবে আতঙ্কিত না হয়ে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সাহসের সঙ্গে এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, দলের মধ্যকার মতপার্থক্য ভুলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, কারণ একমাত্র বিএনপিরই ষড়যন্ত্রকারীদের পিছু হটানোর শক্তি ও সামর্থ্য রয়েছে।
নেতাকর্মীদের মানসিকতা পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এখন ‘আমি কী পেলাম’ তা ভাবার সময় নয়, বরং দেশ ও জাতিকে কী দিতে পারলাম—সেটিই মুখ্য হওয়া উচিত। তিনি উল্লেখ করেন, অতীতেও যখনই দেশ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে গিয়েছে, তখনই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি দেশকে রক্ষা করেছে। এবারও জনগণকে প্রধান সহযোগী হিসেবে সঙ্গে নিয়ে এই ‘যুদ্ধে’ জয়ী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
তরুণ নেতাদের উদ্দেশে তারেক রহমান বিএনপির উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো, বিশেষ করে ফ্যামিলি কার্ড, কৃষক কার্ড, হেলথ কার্ড, শিক্ষা ও বেকার সমস্যা সমাধানসহ ৮টি বিষয় সাধারণ মানুষের কাছে সহজ ভাষায় তুলে ধরার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, এখন আর ঘরে বসে থাকার সময় নেই; ভোটের মাঠে ও সংগ্রামের ময়দানে জনগণের সমর্থন আদায়ে সবাইকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক কর্মসূচির বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের সঞ্চালনায় এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সারা দেশ থেকে আসা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতারা অংশ নেন।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলাকারীদের শেকড় যতই শক্তিশালী হোক না কেন, তা উপড়ে ফেলা হবে বলে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। শনিবার বিকেলে ঝিনাইদহের শৈলকুপায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল শরিফ ওসমান হাদিকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মহানায়ক’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, পতিত স্বৈরাচারের দোসররা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বকে ধ্বংস করতে এবং আগামী নির্বাচন বানচাল করতে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। হাদির ওপর হামলা সেই ষড়যন্ত্রেরই অংশ। তবে তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, সন্ত্রাসীদের এই উদ্দেশ্য সফল হবে না এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে। বর্তমানে চিকিৎসাধীন হাদির দ্রুত সুস্থতার জন্য তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা করেন।
আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে রাষ্ট্রের প্রধান এই আইন কর্মকর্তা বলেন, একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দিতে বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশন বদ্ধপরিকর। আগামী নির্বাচনে জনগণ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে এবং ফলাফলে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার সঠিক প্রতিফলন ঘটবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এর আগে, শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার মালিথিয়া গ্রামে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আয়োজনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় একটি বিশেষ প্রার্থনা সভায় অংশ নেন অ্যাটর্নি জেনারেল। সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন এবং বেগম খালেদা জিয়ার জন্যও সবার দোয়া প্রার্থনা করেন।