সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে ৩১ দফা ঘোষণা করেছে বিএনপি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দফাগুলো ঘোষণা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এ সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাংলাদেশের জনগণ গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে রাষ্ট্র গড়ে তুলেছিল, সেই রাষ্ট্রের মালিকানা আজ তাদের হাতে নেই। বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকার বাংলাদেশ রাষ্ট্র কাঠামোকে ভেঙে চুরমার করে ফেলেছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই রাষ্ট্রকে মেরামত ও পুনর্গঠন করতে হবে। জনগণের হাতে রাষ্ট্রের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে জয়লাভের পর বর্তমান ‘ফ্যাসিস্ট সরকার’ হটানোর আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলসমূহের সমন্বয়ে একটি ‘জনকল্যাণমূলক জাতীয় ঐকমত্যের সরকার’ প্রতিষ্ঠা করা হবে।
বিএনপির ঘোষিত ৩১ দফা
# বিগত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার হীন উদ্দেশে অনেক অযৌক্তিক মৌলিক সাংবিধানিক সংশোধনী এনেছে। একটি ‘সংবিধান সংস্কার কমিশন’ গঠন করে সব বিতর্কিত ও অগণতান্ত্রিক সাংবিধানিক সংশোধনী ও পরিবর্তনসমূহ পর্যালোচনা করে এসব রহিত/সংশোধন করা হবে এবং অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় সাংবিধানিক সংস্কার করা হবে। সংবিধানে গণভোট ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে।
# প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে সব মত ও পথের সমন্বয়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষম্যহীন ও সম্প্রীতিমূলক ‘রেইনবো নেশন’ প্রতিষ্ঠা করা হবে। এজন্য অব্যাহত আলোচনা, মতবিনিময় ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে ভবিষ্যৎমুখী এক নতুন ধারার সামাজিক চুক্তিতে পৌঁছাতে হবে। এজন্য একটি ‘ন্যাশনাল রিকনসিলিয়েশন কমিশন’ গঠন করা হবে।
# বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় এবং স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে স্থায়ী সাংবিধানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার লক্ষ্যে একটি ‘নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে।
# সরকারের প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিসভার নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা হবে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের ক্ষমতা, দায়িত্ব ও কর্তব্যের সুসমন্বয় করা হবে।
# পরপর দুই টার্মের অতিরিক্ত কেউ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।
# বিদ্যমান সংসদীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের সমন্বয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার লক্ষ্যে দেশের বিশিষ্ট নাগরিক, প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, পেশাজীবী, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে সংসদে ‘উচ্চ-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা’ প্রবর্তন করা হবে।
# আস্থাভোট, অর্থবিল, সংবিধান সংশোধনী বিল এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত এমন সব বিষয় ব্যতীত অন্যসব বিষয়ে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনভাবে মতামত দেয়ার সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করার বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিবেচনা করা হবে।
# রাজনৈতিক দলসমূহের মতামত এবং বিশিষ্টজনের অভিমতের ভিত্তিতে স্বাধীন, দক্ষ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও দৃঢ়চিত্ত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি কার্যকর নির্বাচন কমিশন গঠন করার লক্ষ্যে বর্তমান ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ সংশোধন করা হবে। ইভিএম নয়, সব কেন্দ্রে পেপার-ব্যালটের মাধ্যমে ভোট নিশ্চিত করা হবে। রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন সংস্কার করা হবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল করা হবে।
# সংকীর্ণ রাজনৈতিক দলীয়করণের ঊর্ধ্বে উঠে সব রাষ্ট্রীয়, সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও বিশ্বাসযোগ্যতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে এসব প্রতিষ্ঠান আইনি সংস্কারের মাধ্যমে পুনর্গঠন করা হবে। শুনানির মাধ্যমে সংসদীয় কমিটির ভেটিং সাপেক্ষে এসব প্রতিষ্ঠানের সাংবিধানিক ও গুরুত্বপূর্ণ পদসমূহে নিয়োগ দেয়া হবে।
# বাংলাদেশের সংবিধান ও মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে বিচার বিভাগের কার্যকর স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে। বর্তমান বিচারব্যবস্থার সংস্কারের জন্য একটি ‘জুডিসিয়াল কমিশন’ গঠন করা হবে। অধস্তন আদালতসমূহের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা বিধানের কর্তৃত্ব সুপ্রিম কোর্টের কাছে ন্যস্ত হবে (সংবিধানের ভাষা)। বিচার বিভাগের জন্য সুপ্রিম কোর্টের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি পৃথক সচিবালয় থাকবে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অভিশংসন প্রশ্নে সংবিধানে বর্ণিত ইতোপূর্বেকার ‘সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল’ ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করা হবে। এজন্য সংবিধানে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে। দলীয় বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠে শুধু জ্ঞান, প্রজ্ঞা, নীতিবোধ, বিচারবোধ ও সুনামের কঠোর মানদণ্ডে যাচাই করে বিচারক নিয়োগ দেয়া হবে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগের লক্ষ্যে সংবিধানের ৯৫(গ) অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট যোগ্যতা ও মানদণ্ড সম্বলিত ‘বিচারপতি নিয়োগ আইন’ প্রণয়ন করা হবে।
# দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ পরিষেবা, জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন গড়ে তোলার লক্ষ্যে যোগ্য, অভিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি ‘প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন’ গঠন করে প্রশাসন সংস্কার ও পুনর্গঠন করা হবে। মেধা, সততা, সৃজনশীলতা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণ বেসামরিক ও সামরিক প্রশাসনে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিতে যোগ্যতার একমাত্র মাপকাঠি হিসেবে বিবেচিত হবে।
# গণমাধ্যমের পূর্ণ স্বাধীনতার নিশ্চয়তা বিধান ও সার্বিক সংস্কারের লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি, মিডিয়া সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী এবং বিজ্ঞ, অভিজ্ঞ ও গ্রহণযোগ্য মিডিয়া ব্যক্তিদের সমন্বয়ের লক্ষ্যে একটি ‘মিডিয়া কমিশন’ গঠন করা হবে। সৎ ও স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশ পুনরুদ্ধার করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। এ লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬, সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ এর প্রয়োজনীয় সংশোধন, বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সব কালাকানুন বাতিল করা হইবে। চাঞ্চল্যকর সাগর-রুনি হত্যাসহ সব সাংবাদিক নির্যাতন ও হত্যার বিচার নিশ্চিত করা হবে।
# দুর্নীতির ক্ষেত্রে কোনো আপস করা হবে না। গত দেড় দশকব্যাপী সংগঠিত অর্থপাচার ও দুর্নীতির অনুসন্ধান করে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ এবং শ্বেতপত্রে চিহ্নিত দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। দেশের বাইরে পাচার করা অর্থ দেশে ফেরত আনার প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। দুর্নীতি দমন কমিশন ও দুর্নীতি দমন আইন সংস্কারের পাশাপাশি পদ্ধতিগত সংস্কারের মাধ্যমে ‘দুদকের’ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা হবে। সংবিধান অনুযায়ী ন্যায়পাল নিয়োগ করা হবে।
# সর্বস্তরে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে। মানবিক মূল্যবোধ ও মানুষের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং অমানবিক নিষ্ঠুর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অবসান ঘটানো হবে। মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র অনুযায়ী মানবাধিকার বাস্তবায়ন করা হবে। সুনির্দিষ্ট মানদণ্ডের ভিত্তিতে মানবাধিকার কমিশনে নিয়োগ দেয়া হবে। গত দেড় দশক ধরে সংগঠিত সব বিচারবহির্ভূত হত্যা, ক্রসফায়ারের নামে নির্বিচারে হত্যা, গুম, খুন, অপহরণ, ধর্ষণ, নির্মম শারীরিক নির্যাতন এবং নিষ্ঠুর ও অমানবিক অপরাধের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সব ব্যক্তিকে প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিচারের আওতায় আনা হবে।
# অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদ ও গবেষক, অভিজ্ঞ ব্যাংকার, করপোরেট নেতা, প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তি সমন্বয়ে একটি ‘অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশন’ গঠন করা হবে। মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের নিরিখে প্রবৃদ্ধির সুফল সুষম বণ্টনের মাধ্যমে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দূরীকরণ করা হবে। উপরোক্ত সাংবিধানিক সংস্কার কমিশন, প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন, জুডিসিয়াল কমিশন, মিডিয়া কমিশন এবং অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশনগুলো সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে স্ব স্ব প্রতিবেদন দাখিল করবে, যেন সংশ্লিষ্ট সুপারিসসমূহ দ্রুত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়।
# ‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’- এ মূলনীতির ভিত্তিতে প্রত্যেক ধর্মাবলম্বী নিজ নিজ ধর্ম পালনের পূর্ণ অধিকার ভোগ করবেন। দলমত ও জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে পাহাড়ি ও সমতলের ক্ষুদ্র-বৃহৎ সব জাতিগোষ্ঠীর সংবিধান প্রদত্ত সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্ম-কর্মের অধিকার, নাগরিক অধিকার এবং জীবন, সম্ভ্রম ও সম্পদের পূর্ণ নিরাপত্তা বিধান করা হবে। ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, উপাসনালয় ভাঙচুর এবং তাদের সম্পত্তি দখলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
# মুদ্রাস্ফীতির আলোকে শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা হবে। শিশুশ্রম বন্ধ করে তাদের জীবন বিকাশের উপযোগী পরিবেশ ও ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও গণতান্ত্রিক ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করা হবে। পাটকল, বস্ত্রকল, চিনিকলসহ সব বন্ধ শিল্প পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেয়া হবে। প্রবাসী শ্রমিকদের জীবন, মর্যাদা ও কর্মের নিরাপত্তা এবং দেশে বিমানবন্দরসহ সব ক্ষেত্রে হয়রানিমুক্ত সেবাপ্রাপ্তি ও ভোটাধিকার নিশ্চিতের ব্যবস্থা করা হবে। চা-বাগান, বস্তি, চরাঞ্চল, হাওর-বাঁওড়, মঙ্গাপীড়িত ও উপকূলীয় অঞ্চলের বৈষম্য দূরীকরণ ও সুষম উন্নয়নে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে।
# বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ খাতে দায়মুক্তি আইনসহ সব কালাকানুন বাতিল করা হবে এবং রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিতে রক্তক্ষরণ রোধ করার লক্ষ্যে জনস্বার্থবিরোধী কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ে চলমান সীমাহীন দুর্নীতি বন্ধ করা হবে। আমদানিনির্ভরতা পরিহার করে নবায়নযোগ্য ও মিশ্র এনার্জি-নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং উপেক্ষিত গ্যাস ও খনিজ সম্পদ আবিষ্কার ও আহরণে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে। শিল্পখাতের বিকাশে বিনিয়োগবান্ধব নীতি গ্রহণ করে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা হবে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিনিয়োগে উৎসাহ, সুযোগ ও প্রণোদনা দেয়া হবে। পরিকল্পিতভাবে দেশব্যাপী সমন্বিত শিল্প অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে।
# বৈদেশিক সম্পর্কের সর্বক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ, জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়া হবে। সমতা, ন্যায্যতা, পারপরিক স্বার্থের স্বীকৃতি ও স্বীকৃত আন্তর্জাতিক বিধিবিধান অনুযায়ী দ্বি-পাক্ষিক ও বহু-পাক্ষিক সমস্যাদির সমাধান করা হবে। বাংলাদেশ ভূখণ্ডের মধ্যে কোনো প্রকার সন্ত্রাসী তৎপরতা বরদাশত করা হবে না এবং কোনো সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা আশ্রয়-প্রশ্রয় পাবে না। সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অপব্যবহারের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদকে রাজনৈতিক ঢাল বা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে এবং সন্ত্রাসবাদের তকমা লাগিয়ে ভিন্নমতের বিরোধী শক্তি এবং রাজনৈতিক বিরোধীদল দমনের অপতৎপরতা বন্ধ করা হলে প্রকৃত সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করা এবং আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেয়া সম্ভব হবে।
# দেশের সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সুসংগঠিত, যুগোপযোগী এবং সর্বোচ্চ দেশপ্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত করে গড়ে তোলা হবে। স্বকীয় মর্যাদা বহাল রেখে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখা হবে।
# ক্ষমতার ব্যাপক বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে অধিকতর স্বাধীন, শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান করা হবে। এসব প্রতিষ্ঠানকে এমনভাবে জবাবদিহির আওতায় আনা হবে যেন তারা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন পরিষেবা প্রদান ও উন্নয়ন কার্যক্রমে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। স্থানীয় প্রশাসন ও অন্য কোনো জনপ্রতিনিধির খবরদারিমুক্ত স্বাধীন স্থানীয় সরকার নিশ্চিত করা হবে। মৃত্যুজনিত কারণ কিংবা আদালতের আদেশে পদশূন্য না হলে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে সরকারি প্রশাসক নিয়োগ করা হবে না। আদালত কর্তৃক দণ্ডপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নির্বাহী আদেশ বলে সাসপেন্ড/বরখাস্ত/অপসারণ করা হবে না।
# ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধে যার যার অবদানের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে নিবিড় জরিপের ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের একটি তালিকা প্রণয়ন করা হবে এবং তাদের যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও স্বীকৃতি দেয়া হবে। এ তালিকার ভিত্তিতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কল্যাণার্থে নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা যাচাই-বাছাই করে একটি সঠিক তালিকা প্রস্তুত করা হবে।
# যুবসমাজের ভিশন, চিন্তা ও আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে আধুনিক ও যুগোপযোগী যুব-উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। এক বছরব্যাপী অথবা কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত, যেটাই আগে হবে, শিক্ষিত বেকারদের বেকার ভাতা দেয়া হবে। বেকারত্ব দূরীকরণের লক্ষ্যে নানামুখী বাস্তবসম্মত কর্মসূচি নেয়া হবে। যুব সমাজের দক্ষতা বৃদ্ধি করে ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’ আদায়ের লক্ষ্যে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়া হবে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পুষ্টির ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে মানবসম্পদ উন্নয়নে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করা হবে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
# জাতীয় উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় নারীর কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নারীর ক্ষমতায়নে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। নারী ও শিশুদের জীবনমান বিকাশের নিমিত্তে যুগোপযোগী উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হবে। জাতীয় সংসদে মনোনয়নের ক্ষেত্রে নীতিগতভাবে নারীদের প্রাধান্য দেয়া হবে। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় নারীর প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হবে।
# বর্তমানে শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাজমান নৈরাজ্য দূর করে নিম্ন ও মধ্য পর্যায়ে চাহিদাভিত্তিক শিক্ষা এবং উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাকে প্রাধান্য দেয়া হবে। গবেষণায় বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে। একই মানের শিক্ষা ও মাতৃভাষায় শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেয়া হইবে। ভবিষ্যতের নেতৃত্ব গড়ে তুলতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ছাত্র সংসদে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে। যোগ্য, দক্ষ ও মানবিক জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাতীয় বাজেটে শিক্ষাখাতে জিডিপির ৫ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ করা হবে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণভাবে ক্রমান্বয়ে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো হবে। দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টির লক্ষ্যে শিক্ষা প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণসহ সংশ্লিষ্ট সব খাতকে ঢেলে সাজানো হবে। শিক্ষা, শিল্প, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং উৎপাদান খাতে গবেষণা ও উন্নয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হবে। ক্রীড়া উন্নয়ন ও জাতীয় সংস্কৃতির বিকাশে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। অনৈতিক আকাশ সংস্কৃতি ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন রোধ করা হবে।
# স্বাস্থ্যকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করে ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ ও ‘বিনা চিকিৎসায় কোনো মৃত্যু নয়’- এ নীতির ভিত্তিতে যুক্তরাজ্যের ‘ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের’ আদলে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা প্রবর্তন করে সবার জন্য সার্বজনীন স্বাস্থ্যকার্ড চালু করা হবে। স্বাস্থ্যসেবা প্রবর্তন করে সবার জন্য স্বাস্থ্যকার্ড চালু করা হবে। জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির ৫ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ করা হবে। দারিদ্র্য বিমোচন না হওয়া পর্যন্ত সুবিধাবঞ্চিত ও হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী আরও সম্প্রসারিত করা হবে।
# কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা হবে। পর্যায়ক্রমে সব ইউনিয়নে কৃষিপণ্যের জন্য সরকারি ক্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। প্রয়োজনে ভর্তুকি দিয়ে হলেও শস্য বিমা, পশু বিমা, মৎস্য বিমা এবং পোল্ট্রি বিমা চালু করা হবে। কৃষিজমির অকৃষি ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা হবে। কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়ন এবং গবেষণার জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কর্মকৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে। এ সংশ্লিষ্ট রপ্তানিমুখী কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প খাতকে প্রণোদনা দেয়া হবে।
# দেশের যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নে সড়ক, রেল ও নৌপথের প্রয়োজনীয় সংস্কার করে সারাদেশে সমন্বিত বহুমাত্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। দেশের সমুদ্রবন্দর ও নৌবন্দরসমূহের আধুনিকায়ন, উন্নয়ন ও দক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হবে।
# জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট ও ক্ষতি মোকাবিলায় টেকসই ও কার্যকর কর্মকৌশল নেয়া হবে। বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড় ও ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সর্বাধুনিক ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ করে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানো হবে। নদী ও জলাশয় দূষণ প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং বন্যা ও খরা প্রতিরোধে খাল-নদী খনন পুনর্খনন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। সামুদ্রিক সম্পদের বিজ্ঞানসম্মত জরিপ ও মজুদের ভিত্তিতে তা আহরণ এবং অর্থনৈতিক ব্যবহারের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
# তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিখাতকে বৈশ্বিক মানে উন্নীত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সর্বক্ষেত্রে এর প্রয়োগকে প্রাধান্য দেয়া হবে। মহাকাশ গবেষণা এবং আনবিক শক্তি কমিশনের কার্যক্রমের প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রায়োগিক সুযোগ সমৃদ্ধ করা হবে।
# এক জাতীয় মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে শহরে ও গ্রামে কৃষিজমি নষ্ট না করে এবং নগরে জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান চাপ হ্রাস করে পরিকল্পিত আবাসন ও নগরায়নের নীতিমালা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আবাসন নিশ্চিত করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, সেলিমা রহমান এবং আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
আমজনতার দলের সদস্যসচিব মো. তারেক রহমান যখন অন্য দল থেকে আসা নেতাদের জন্য তাঁর দলের দরজা খোলা রাখার ঘোষণা দিয়েছিলেন, ঠিক তখনই সেই পথ ধরে দল ছাড়লেন তাঁরই নিজ দলের সহসভাপতি সাধনা মহল। গত রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) রাতে আলোচিত সামাজিক মাধ্যম ব্যক্তিত্ব আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম আমজনতার দলে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেওয়ার পরপরই পদত্যাগের এই ঘোষণা দেন তিনি। নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে এক বার্তার মাধ্যমে তিনি দল ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
ফেসবুক পোস্টে সাধনা মহল সরাসরি কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ না করলেও মন্তব্যের ঘরে ভক্ত ও অনুসারীদের প্রশ্নের জবাবে তাঁর সিদ্ধান্তের পেছনের কারণগুলো স্পষ্ট করেছেন। তিনি জানান, হিরো আলমের অর্জন, কর্মজীবন কিংবা তাঁর সস্তা জনপ্রিয়তার সাথে সাধনা মহলের রাজনৈতিক আদর্শের কোনো মিল নেই। তিনি মনে করেন না যে, হিরো আলমের মতো কেউ মজলুম বা সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক অধিকার আদায়ে কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবেন। এই সিদ্ধান্তকে তিনি দলের একটি ‘রাজনৈতিক ভুল’ হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং আশা প্রকাশ করেছেন যে, বড় ধরনের ক্ষতির আগেই দলটি তাদের এই সিদ্ধান্ত সংশোধনের সুযোগ পাবে।
আলোচনার এক পর্যায়ে হিরো আলমকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য উঠলে সাধনা মহল স্পষ্ট করে বলেন, এই ধরণের সিদ্ধান্ত তাঁর কাছে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিশেষ করে হিরো আলমের মতো ব্যক্তিদের সংসদে পাঠানোর প্রচেষ্টাকে তিনি অবাস্তব ও নীতিবিবর্জিত বলে মনে করেন। তাঁর মতে, রাজনীতির মাঠ ও সামাজিক মাধ্যমের জনপ্রিয়তা এক নয়, এবং জনপ্রতিনিধিত্বের জন্য যে পরিপক্কতা প্রয়োজন তা হিরো আলমের মাঝে অনুপস্থিত।
উল্লেখ্য, হিরো আলম গত রবিবার সন্ধ্যায় তারেক রহমানের হাতে ফুল দিয়ে আমজনতার দলে যোগ দেন এবং আসন্ন সংসদ নির্বাচনে এই দল থেকেই প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন। এর মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দলের শীর্ষ পর্যায়ের এই নারী নেত্রীর পদত্যাগ রাজনৈতিক মহলে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সাধনা মহলের প্রস্থান আমজনতার দলের অভ্যন্তরীণ সমন্বয় ও আদর্শিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বর্তমানে দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এই নিয়ে এক ধরণের অস্বস্তি বিরাজ করছে। মূলত নতুন রাজনৈতিক ধারার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাত্রা শুরু করা দলটিতে শুরুতেই এমন বিভক্তি এক বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রয়াণে তাঁর বর্ণাঢ্য জীবনের মানবিক ও ব্যক্তিগত দিকগুলো তুলে ধরে আবেগঘন স্মৃতিচারণ করেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও তাঁর দীর্ঘদিনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া কেবল একজন রাজনৈতিক অভিভাবকই ছিলেন না, বরং তিনি তাঁর সহযোদ্ধা ও নেতাকর্মীদের গভীর মাতৃস্নেহে আগলে রাখতেন। ডা. জাহিদ স্মরণ করেন যে, বেগম জিয়ার আতিথেয়তা ছিল কিংবদন্তিতুল্য; তাঁর বাসভবনে গিয়ে কোনো কিছু না খেয়ে কেউ ফিরে এসেছেন—এমন ঘটনা কখনোই ঘটত না।
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ডা. জাহিদ আরও বলেন, বেগম জিয়া সবসময় দেশ, দেশের মানুষ এবং স্বাধীনতার সুরক্ষা নিয়ে চিন্তা করতেন। তিনি অত্যন্ত জনবান্ধব নেত্রী ছিলেন এবং সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হয় এমন কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে তিনি কখনোই প্রশ্রয় দিতেন না। একজন সচেতন রোগী হিসেবে চিকিৎসকদের প্রতি তাঁর অগাধ আস্থার কথা উল্লেখ করে ডা. জাহিদ জানান, শারীরিক অবস্থা যতোই জটিল হোক না কেন, তিনি সবসময় চিকিৎসকদের পরামর্শ অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করতেন এবং তাঁদের দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী চলার চেষ্টা করতেন। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাঁর এই ধৈর্য ও সহযোগিতা চিকিৎসকদের মুগ্ধ করেছে।
উল্লেখ্য, বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন সমস্যাসহ লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও কিডনি জটিলতায় দীর্ঘ সংগ্রামের পর আজ মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ৮০ বছর বয়সী এই বর্ষীয়ান নেত্রী। গত ২৩ নভেম্বর শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে তিনি দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত একটি উচ্চপর্যায়ের মেডিকেল বোর্ডের নিবিড় পর্যবেক্ষণে ছিলেন। তাঁর এই চিরবিদায়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যেমন একটি যুগের অবসান ঘটল, তেমনি শোকাতুর হয়ে পড়েছে পুরো বাংলাদেশ। বর্তমানে তাঁর মরদেহ এভারকেয়ার হাসপাতালেই রাখা হয়েছে এবং আগামীর দাফন ও জানাজার প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে তাঁর পরিবার ও দল।
বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিরবিদায়ের পর দলের পরবর্তী করণীয় এবং জানাজা-দাফনের কর্মসূচি চূড়ান্ত করতে জরুরি বৈঠকে বসেছে বিএনপির স্থায়ী কমিটি। আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এই গুরুত্বপূর্ণ সভায় অংশ নিতে রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে পৌঁছেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
এর আগে আজ ভোর ৬টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে মায়ের অন্তিম সময়ে তাঁর শয্যাপাশেই ছিলেন তারেক রহমান। হাসপাতাল থেকে তিনি প্রথমে গুলশান অ্যাভিনিউয়ের বাসভবনে যান এবং সেখান থেকে প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সেরে দলীয় কার্যালয়ে পৌঁছান। তাঁর আগমনের আগেই স্থায়ী কমিটির অন্যান্য জ্যেষ্ঠ সদস্যবৃন্দ সভাস্থলে উপস্থিত হন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এই জরুরি সভায় বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা, দাফন এবং রাষ্ট্রীয় ও দলীয় শোক পালনের বিস্তারিত কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে বিএনপি দেশজুড়ে সাত দিনের শোক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আজকের এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠক থেকে দলের পরবর্তী সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে প্রিয় নেত্রীর মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পর থেকেই গুলশান কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়েছেন হাজার হাজার শোকাতুর নেতাকর্মী ও সমর্থক। কার্যালয় ও এর আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। দীর্ঘ চার দশকের রাজনৈতিক অভিভাবকের বিদায়ে পুরো এলাকায় এক বিষাদময় পরিবেশ বিরাজ করছে। স্থায়ী কমিটির সভা শেষে আজ বিকেলেই বেগম জিয়ার জানাজা ও দাফন সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার কথা রয়েছে। মূলত শোককে শক্তিতে পরিণত করে সুশৃঙ্খলভাবে এই বিদায় অনুষ্ঠান সম্পন্ন করাই এখন দলটির প্রধান লক্ষ্য।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দীর্ঘদিন পর আমরা বাংলাদেশের মানুষ ভোটাধিকার ফিরে পেয়েছি। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচন বিএনপির পক্ষ থেকে আমাকে ঠাকুরগাঁও-১ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, এ জন্য বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। কারণ তারা আবারও আমাকে এ আসন থেকে নির্বাচন করার সুযোগ করে দিয়েছেন।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে তিনি ঠাকুরগাঁও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে উপস্থিত রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানার হাতে তার মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে সংবাদকর্মীদের এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, পরম করুণাময় আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করতে চাই- এখানে আমি মনোনীত হয়ে জনগণের কাজ করার একটা সুযোগ পেয়েছি। যদি আমরা সুযোগ পাই, জনগণের ভালোবাসায় যদি নির্বাচিত হতে পারি তবে নিশ্চয়ই এই ঠাকুরগাঁও অঞ্চলের উন্নয়ন, সামাজিক, পরিবেশকে উন্নত করা, এখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে উন্নত করা, আমাদের আর্থ সামাজিক ব্যবস্থাকে উন্নত করা এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে বৃদ্ধি করার চেষ্টা করব। এছাড়াও মানুষের কর্মসংস্থানকে সৃষ্টি করা- এই বিষয়গুলোকে সবচেয়ে গুরুত্ব আরোপ করব। এর পাশাপাশি কৃষকদের যেসব সমস্যা সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করব।
মনোনয়নপত্র জমা শেষে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ধানের শীর্ষে ভোট দেবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই এলাকার জনগণের কাছে আমার আবেদন ও অনুরোধ থাকবে- আপনারা দয়া করে এই অঞ্চলে পূর্বে আমাকে যেভাবে সমর্থন দিয়েছেন, এখনো সেইভাবে সমর্থন দিয়ে আমাকে ধানের শীষে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করার জন্য সাহায্য করবেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না। আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আসিফ মাহমুদ নিজেও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্তের কথা জানান।
সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ ইসলাম বলেন, আসিফ মাহমুদ সরাসরি প্রার্থী না হলেও এনসিপির মনোনীত প্রার্থীদের জিতিয়ে আনার লক্ষে কাজ করবেন। এ লক্ষে তাঁকে দলটির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তিনি দলটির মুখপাত্র হিসেবেও দায়িত্ব পালন করবেন। মূলত মাঠ পর্যায়ের প্রচার ও কৌশল নির্ধারণে তিনি বিশেষ ভূমিকা রাখবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
আসিফ মাহমুদের এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক মহলে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে, কারণ গত কয়েক দিন ধরে গুঞ্জন ছিল যে তিনি ঢাকা-১০ বা অন্য কোনো আসন থেকে নির্বাচনে লড়তে পারেন। এমনকি তাঁর পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের খবরও এসেছিল। তবে আজ সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে তিনি জানালেন, ব্যক্তি হিসেবে সংসদ সদস্য হওয়ার চেয়ে দলকে সংগঠিত করা এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত নিশ্চিত করাকেই তিনি এই মুহূর্তে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী আসিফ মাহমুদ গত ৫ আগস্ট পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকারে উপদেষ্টার দায়িত্ব সফলভাবে পালন করেন। গত ১০ ডিসেম্বর তিনি উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং পরদিন নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার সাথে সাথে তাঁর পদত্যাগ কার্যকর হয়। সম্প্রতি তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে এনসিপিতে যোগ দিয়ে সক্রিয় রাজনীতিতে পদার্পণ করেছেন। নির্বাচনে না দাঁড়িয়ে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে আসার মাধ্যমে তিনি জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে এক ভিন্নধর্মী কৌশল বেছে নিলেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। মূলত একটি শক্তিশালী তারুণ্যের প্রতিনিধিত্ব গড়ে তোলাই এখন তাঁর প্রধান লক্ষ্য।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া নতুন রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’ বা এনসিপিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়েছেন।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি নিজেই এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, “আমরা যে লক্ষ্য নিয়ে রাজপথে লড়াই করেছি, সেই বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতির সংস্কার প্রয়োজন। এনসিপি সেই পরিবর্তনের লক্ষ্যেই কাজ করবে।”
এ সময় তিনি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সংস্কার কার্যক্রম এবং ভবিষ্যতে তার দলের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন।
এদিকে আসিফ মাহমুদ গতকাল পর্যন্তও সিদ্ধান্তহীন ছিলেন। এরই মধ্যে তিনি ঢাকা-১০ আসনে (ধানমন্ডি-নিউমার্কেট-কলাবাগান-হাজারীবাগ) মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। আজ বিকেল ৫টায় ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময়।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। গত বছরের ৫ আগস্ট তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে তিনি উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। এ বছরের ১০ ডিসেম্বর তিনি পদত্যাগ করেন এবং ১১ ডিসেম্বর তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে পদত্যাগ কার্যকর হয়।
দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে মাতৃভূমিতে ফেরার পর আজ প্রথমবারের মতো রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেলে তিনি সেখানে পৌঁছালে নেতাকর্মীদের মাঝে এক অভাবনীয় আবেগ ও উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। দীর্ঘ দেড় যুগ পর প্রিয় নেতার এই সশরীরে আগমন উপলক্ষে সকাল থেকেই নয়াপল্টন এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল।
নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে পৌঁছালে তারেক রহমানকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এবং কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত। এ সময় তাঁর সাথে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম, যুগ্ম-মহাসচিব হাবিবুননবী খান সোহেলসহ দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দেওয়া এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তারেক রহমান সাধারণ মানুষের সুবিধা ও শৃঙ্খলার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, “আজ এখানে কোনো আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি নেই। রাস্তা বন্ধ রাখলে সাধারণ মানুষের চলাফেরায় অনেক অসুবিধা হবে। তাই আমাদের উচিত হবে রাস্তাটি যত দ্রুত সম্ভব খুলে দেওয়া, যাতে মানুষ নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারে।” তাঁর এই সময়োপযোগী নির্দেশনার পর নেতাকর্মীরা রাস্তা ছেড়ে দিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে অবস্থান নেন।
দেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তারেক রহমান বলেন, “সবাই দোয়া করবেন। আমাদের যার যতটুকু অবস্থান আছে, সেখান থেকে আসুন আমরা দেশটাকে নতুন করে গড়ে তোলার চেষ্টা করি।” তিনি আরও জানান, ভবিষ্যতে যখন আনুষ্ঠানিক রাজনৈতিক কর্মসূচি দেওয়া হবে, তখন তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে বিস্তারিত বক্তব্য রাখবেন। প্রিয় নেতার এমন সাবলীল ও দায়িত্বশীল আচরণ নেতাকর্মীদের মাঝে নতুন প্রাণের সঞ্চার করেছে।
উল্লেখ্য, গত ২৫ ডিসেম্বর লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পর তারেক রহমান নিয়মিতভাবে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন। গতকাল তিনি গুলশান কার্যালয়ে দাপ্তরিক কাজ শুরু করেছিলেন এবং আজ নয়াপল্টনে দলের প্রধান সাংগঠনিক কেন্দ্রে উপস্থিত হওয়ার মাধ্যমে দলীয় কর্মকাণ্ডে পূর্ণাঙ্গভাবে সক্রিয় হলেন। তাঁর এই প্রত্যাবর্তনের ফলে বিএনপির তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সব পর্যায়ে নতুন রাজনৈতিক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। মূলত একটি সমৃদ্ধ ও নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়েই দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর নয়াপল্টনের এই ঐতিহাসিক কার্যালয়ে সশরীরে ফিরলেন তারেক রহমান।
চট্টগ্রামের প্রভাবশালী ও আলোচিত হেফাজত নেতা মাওলানা নাছির উদ্দীন মুনির জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ছেড়ে মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসে (প্রতীক: রিকশা) যোগ দিয়েছেন। আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে তিনি নিজেই বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। নাছির উদ্দীন মুনির আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী ও বায়েজিদ আংশিক) আসন থেকে সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আজ দুপুরে তিনি চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তাঁর মনোনয়নপত্র জমা দেন।
মাওলানা নাছির উদ্দীন মুনির হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব এবং ইতিপূর্বে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশেরও কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়াও তিনি হাটহাজারী উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। চট্টগ্রামের হাটহাজারীকে কেন্দ্র করে তাঁর ব্যাপক রাজনৈতিক ও ধর্মীয় প্রভাব রয়েছে। নির্বাচনে তিনি নবগঠিত ১০ দলীয় নির্বাচনী জোটের প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করবেন বলে জানা গেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপির সাথে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নির্বাচনি সমঝোতা এই দলবদলের প্রধান কারণ। সমঝোতা অনুযায়ী, সারাদেশে মাত্র চারটি আসনে জমিয়ত ‘খেজুর গাছ’ প্রতীকে প্রার্থী দিয়েছে এবং অন্য কোনো আসনে তাদের প্রার্থী না রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম-৫ আসনটি ওই চারটি আসনের অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় নাছির উদ্দীন মুনির জমিয়তের হয়ে নির্বাচনে লড়ার সুযোগ হারিয়েছিলেন। ফলে নিজের প্রার্থিতা নিশ্চিত করতে এবং বৃহত্তর পরিসরে কাজ করার লক্ষ্যে তিনি দল পরিবর্তনের এই সিদ্ধান্ত নেন।
এর আগে গত রবিবার এক ফেসবুক পোস্টে মাওলানা নাছির উদ্দীন মুনির জমিয়ত ছাড়ার আবেগঘন বার্তা দেন। তিনি লেখেন, দীর্ঘ সময় জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের হয়ে কাজ করা তাঁর জীবনের এক অমূল্য অর্জন। তবে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দেশ ও জাতির কল্যাণে আরও বৃহত্তর পরিসরে কাজ করার ইচ্ছায় তিনি শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক (রহ.) প্রতিষ্ঠিত এবং মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সাথে পথচলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি তাঁর এই নতুন যাত্রায় সহযোদ্ধা ও শুভানুধ্যায়ীদের দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেন।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম-৫ আসনে নাছির উদ্দীন মুনিরের বিপরীতে গত রবিবারই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন। একই আসনে এই দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর উপস্থিতি হাটহাজারী এলাকার নির্বাচনী লড়াইকে অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ও জমজমাট করে তুলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বর্তমানে প্রার্থীরা তাঁদের প্রচারণা এবং মাঠ পর্যায়ের কৌশল সাজাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)-র সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বীর বিক্রম জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন জোটে যোগদান করায় তাঁর তীব্র সমালোচনা করেছেন দলটির সদ্য সাবেক মহাসচিব ও বর্তমান বিএনপি নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. রেদোয়ান আহমেদ। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার এতবারপুরে নির্বাচনী গণসংযোগকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ক্ষমতার মোহে পড়ে খেতাবপ্রাপ্ত এই বীর মুক্তিযোদ্ধা তাঁর আজীবনের বীরত্ব ও রাজনৈতিক আদর্শ জলাঞ্জলি দিয়েছেন। ড. রেদওয়ানের মতে, সারা জীবন যিনি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী শক্তির তীব্র সমালোচনা করে এসেছেন, আজ সেই শক্তির সঙ্গেই নির্বাচনী জোট গঠন করা তাঁর সমস্ত রাজনৈতিক জীবনের নীতি ও আদর্শের পরিপন্থী।
সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, কর্নেল অলি জামায়াতের সাথে জোটবদ্ধ হতে পারেন—এমন খবর পেয়ে তিনি শুরু থেকেই এর কড়া বিরোধিতা করে আসছিলেন। তিনি অলি আহমেদকে এককভাবে নির্বাচনে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন, কিন্তু কর্নেল অলি তাঁর সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় তিনি দলের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেন। পরবর্তীতে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সম্মতিতে গত ২৪ ডিসেম্বর তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগদান করেন। ড. রেদোয়ান আক্ষেপ করে বলেন, দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করা এবং রাষ্ট্রীয় খেতাব পাওয়া একজন মানুষের পক্ষে দেশবিরোধী শক্তির সাথে জোট করা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং এটি তাঁর জাতীয়তাবাদী বিশ্বাসের সাথে এক ধরনের প্রতারণা।
গণসংযোগকালে ড. রেদোয়ানের সাথে জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী কাজী শাখাওয়াত হোসেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক নেতা মোফাজ্জল হোসেন বশিরসহ চান্দিনা উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা সবাই কর্নেল অলির এই রাজনৈতিক পরিবর্তনের নিন্দা জানান এবং আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। উল্লেখ্য, গত ২৮ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কর্নেল অলির নেতৃত্বাধীন এলডিপি জামায়াত-নেতৃত্বাধীন ১০ দলীয় জোটে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দেয়, যা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে দেশে ফেরার পর আজ প্রথমবারের মতো নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যাচ্ছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরের পর তিনি সেখানে পৌঁছাবেন বলে দলীয় সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাঁর এই আগমনকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টন এলাকা ও দলীয় কার্যালয়ে এক উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানিয়েছেন, আজ বিকেলের দিকে তারেক রহমানের নয়াপল্টন কার্যালয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। তাঁর আগমণ উপলক্ষে কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় একটি বিশেষ চেম্বার বা অফিস কক্ষ সুসজ্জিত করে প্রস্তুত করা হয়েছে, যেখান থেকে তিনি নিয়মিত দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। এর আগে গতকাল রবিবার তিনি গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সশরীরে উপস্থিত হয়ে দাপ্তরিক কাজ শুরু করেছিলেন এবং ঢাকা-১৭ ও বগুড়া-৬ আসনের মনোনয়নপত্রে স্বাক্ষর করেছিলেন। আজ নয়াপল্টনে যাওয়ার মাধ্যমে তিনি দীর্ঘ দেড় যুগ পর দলের মূল সাংগঠনিক কেন্দ্রে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিরছেন।
এদিকে, প্রিয় নেতাকে বরণ করে নিতে সকাল থেকেই নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক সমবেত হতে শুরু করেছেন। ব্যানার, ফেস্টুন আর মুহুর্মুহু স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা। তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ওই এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে কড়া নজরদারি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর নয়াপল্টনের কার্যালয়ে তারেক রহমানের এই সশরীরে উপস্থিতি বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের রাজনীতিতে এক নতুন উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছে। মূলত দলীয় কর্মকাণ্ডকে আরও গতিশীল করতেই তিনি আজ কেন্দ্রীয় কার্যালয় পরিদর্শনে যাচ্ছেন।
দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে গত ২৫ ডিসেম্বর পরিবারের সঙ্গে দেশে ফিরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তবে এই প্রত্যাবর্তনে রাজনীতির পাশাপাশি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে তাঁদের পরিবারের আদরের সাইবেরিয়ান বিড়াল ‘জেবু’। লন্ডন থেকে ঢাকায় পা রাখার পর থেকেই এই লোমশ বিড়ালটিকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক কৌতূহল তৈরি হয়েছে। সেই কৌতূহলের প্রেক্ষিতে আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে জেবুকে নিয়ে একটি বিস্তারিত ও আবেগঘন পোস্ট দিয়েছেন তারেক রহমানের কন্যা ব্যারিস্টার জাইমা রহমান।
জাইমা তাঁর পোস্টে উল্লেখ করেছেন যে, জেবুকে নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে এত আগ্রহ দেখে তিনি একইসাথে অবাক ও আনন্দিত। তিনি মনে করেন, যে কোনো প্রাণীকে লালন-পালন করা একটি বড় দায়িত্বের বিষয়, কারণ প্রাণীও মহান আল্লাহর সৃষ্টি। জেবুকে যখন ছোট ছানা হিসেবে তাঁদের লন্ডনের বাসায় আনা হয়েছিল, তখন তাঁরা কল্পনাও করতে পারেননি যে সে পরিবারের এত অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠবে। জাইমা কৌতুক করে জানান, অনেক সময় এমনও হয়েছে যে তাঁর বাবা-মা বাড়ি ফিরে আগে জেবুর খোঁজ নিয়েছেন, তারপর মেয়ের খবর নিয়েছেন। তাঁর মা ডা. জুবাইদা রহমান যখন বাগানে কাজ করতেন বা হাঁটতে বের হতেন, জেবু সারাক্ষণ তাঁর আশেপাশে ঘুরঘুর করত। এমনকি তারেক রহমানের দীর্ঘ অনলাইন মিটিংগুলোর সময়ও জেবু শান্ত হয়ে তাঁর কোলে বসে থাকত এবং আদর উপভোগ করত।
জাইমা রহমান তাঁর লেখায় একটি প্রাণীর জীবন পরিবর্তনের কষ্টের দিকটিও তুলে ধরেছেন। তিনি জানান, পোষা প্রাণী নিয়ে মহাদেশ পাড়ি দিয়ে নতুন পরিবেশে আসা অনেক কঠিন একটি কাজ। জেবুর মতো ছোট্ট একটি প্রাণের জন্য এই পরিবর্তনটি বেশ বড় এবং মানিয়ে নেওয়াটাও কষ্টকর, যা মানুষ সব সময় অনুভব করতে পারে না। তবে এই বিড়ালটির মাধ্যমেই তাঁদের পরিবারের সদস্যরা ধৈর্য এবং বড়-ছোট সব প্রাণীর প্রতি মমতা শিখতে পেরেছেন। জাইমার মতে, ভাষা এক না হলেও ভালোবাসা যে কোনো প্রজাতির সীমানা মানে না, জেবু তাঁদের সেটিই শিখিয়েছে।
পোস্টের শেষ অংশে জেবু সম্পর্কে বেশ কিছু মজার তথ্য দিয়েছেন জাইমা। তিনি জানান, জেবু আর দশটা সাধারণ বিড়ালের মতো কখনোই ‘মিউ মিউ’ করে ডাকে না। এমনকি ভুল করে আলমারিতে আটকে গেলেও সে শব্দ করে না। বরং জেবু যখন খুব খুশি হয় বা অবাক হয়, তখন সে পাখির মতো এক ধরনের নরম শব্দ করে ডাক দেয়। আবার যদি তার অনিচ্ছায় কেউ তাকে কোলে তুলে নেয়, তবে সে হালকা শব্দ করে বিরক্তি প্রকাশ করে। এ ছাড়াও যেসব বিড়ালকে সে পছন্দ করে না, তাদের দেখলে আবার বেশ জোরেই চিৎকার করে ওঠে। জাইমা রহমানের এই সহজ ও সাবলীল পোস্টটি মুহূর্তেই নেটিজেনদের নজর কেড়েছে এবং প্রিয় নেতার পরিবারের মানবিক এই দিকটি প্রশংসিত হচ্ছে। মূলত জেবুর মাধ্যমেই তারেক রহমানের পরিবারের ঘরোয়া ও সংবেদনশীল এক প্রতিচ্ছবি দেশবাসীর সামনে ফুটে উঠল।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সিলেট থেকেই তাঁর নির্বাচনী কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক শুভসূচনা করতে যাচ্ছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এই লক্ষে আগামী বৃহস্পতিবার তিনি তিন দিনের এক সাংগঠনিক সফরে সিলেট ও বগুড়া যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশে ফিরে ঢাকার বাইরে এটিই হবে তাঁর প্রথম রাজনৈতিক সফর।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সফরের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার তারেক রহমান সিলেটে পৌঁছাবেন। সেখানে তিনি আধ্যাত্মিক রাজধানী হিসেবে খ্যাত সিলেটের দুই পুণ্যভূমি হজরত শাহজালাল (রহ.) ও হজরত শাহপরাণ (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করবেন। সিলেটের সাথে তাঁর পারিবারিক সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়; কারণ এটি তাঁর শ্বশুরবাড়ির এলাকা। মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে বরকত নিয়ে তিনি মূলত তাঁর নির্বাচনী প্রচারণার প্রাথমিক ধাপ শুরু করবেন।
সফরের পরবর্তী অংশে তারেক রহমান তাঁর পৈতৃক নিবাস ও নিজের নির্বাচনী এলাকা বগুড়ায় যাবেন। এবার তিনি বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, ফলে সেখানে তাঁকে ঘিরে সাধারণ মানুষ ও নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। তিন দিনের এই ঝটিকা সফরে তিনি স্থানীয় নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় করবেন এবং নির্বাচনী কৌশল নিয়ে দিকনির্দেশনা দেবেন বলে জানা গেছে।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, তারেক রহমানের এই সরাসরি নির্বাচনী তৎপরতা সারা দেশের দলীয় কর্মীদের মাঝে নতুন প্রাণের সঞ্চার করবে। ইতোমধ্যে তাঁর এই সফরকে কেন্দ্র করে সিলেট ও বগুড়ায় সাজ সাজ রব পড়ে গেছে। নেতার আগমণকে স্মরণীয় করে রাখতে স্থানীয়ভাবে ব্যাপক প্রস্তুতির খবর পাওয়া যাচ্ছে। মূলত এই সফরের মাধ্যমেই ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের ডামাডোল পুরোদমে শুরু হতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অভ্যন্তরে চলমান পদত্যাগের মিছিলে যুক্ত হলেন মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নাতি এবং দলটির কৃষক উইংয়ের প্রধান সমন্বয়কারী আজাদ খান ভাসানী। জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন ১০ দলীয় জোটে এনসিপির অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গত রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক বার্তার মাধ্যমে তিনি দল থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
আজাদ খান ভাসানী তাঁর ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেন যে, অনেক আশা ও স্বপ্ন নিয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিট এবং নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষা থেকে তিনি এনসিপিতে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন মওলানা ভাসানীর দেখানো গণমানুষনির্ভর ও আধিপত্যবাদবিরোধী রাজনীতির চর্চা করতে। তবে বাস্তব অভিজ্ঞতায় তিনি দলটির মধ্যে নতুন বাংলাদেশ গড়ার ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতা এবং ত্যাগের গভীরতার স্পষ্ট ঘাটতি অনুভব করেছেন। তাঁর মতে, দলটি একটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক পরিচয় গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত সাফল্য দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে।
পদত্যাগের কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি আরও বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক মর্যাদা এবং মওলানা ভাসানীর রাজনৈতিক আদর্শ রক্ষা করাই তাঁর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই আদর্শের প্রতি অবিচল থাকতেই তিনি এনসিপির সঙ্গে সকল আনুষ্ঠানিক সম্পর্কচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি দলটির ভবিষ্যৎ পথচলার জন্য শুভকামনা জানিয়ে বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরেই দলের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত আদর্শিক জায়গা থেকেই এই প্রস্থান।
উল্লেখ্য, গত ৬ সেপ্টেম্বর আজাদ খান ভাসানীকে এনসিপির কৃষক উইংয়ের প্রস্তুতি কমিটির প্রধান সমন্বয়কারীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। জামায়াতের সঙ্গে জোট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকে এনসিপিতে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তাতে ডা. তাসনিম জারা, ডা. তাজনূভা জাবীন, নুসরাত তাবাসসুম এবং মীর আরশাদুল হকের মতো শীর্ষস্থানীয় নেতাদের পর আজাদ খান ভাসানীর পদত্যাগ দলটির জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। নির্বাচনের ঠিক আগমুহূর্তে এমন ধারাবাহিক পদত্যাগ দলটির ভেতরের আদর্শিক সংকটকে আরও প্রকট করে তুলল। মূলত জুলাইয়ের স্পিরিট নিয়ে কাজ করা একঝাঁক নেতা এখন দলটির নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছেন।