বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আমরা যখন মিছিল করি বা স্লোগান দেই, তখন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের প্রেরণা জোগায়। এমনকি আমরা যখন কারাগারে যাই, তখনো প্রেরণা জোগায় কাজী নজরুল ইসলাম।
রোববার জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ তার মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
রিজভী বলেন, শুধুমাত্র ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য, আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে, হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছে। শুধুমাত্র গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলার জন্য গণতন্ত্রের পক্ষে স্লোগান ধরার আমাদের নেতা-কর্মীদের নামে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দেয়া হচ্ছে। দেশনায়ক তারেক রহমান দেশে আসতে পারছেন না। একটি স্বাধীন দেশ তো এমন হওয়ার কথা ছিল না।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই যুগ্ম মহাসচিব বলেন, এই দুঃসময়, ঘোর দুর্দিন অতিক্রম করার জন্য কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ও গান আমাদের প্রেরণা জোগায়, আমাদের উদ্দীপ্ত করে, আমাদের উজ্জীবিত করে। তিনি আজীবন এ দেশের মানুষের কাছে সাম্যের কবি, দ্রোহের কবি একই সঙ্গে প্রেমের কবি হয়েই থাকবেন।
রিজভী বলেন, এই মহান জাতীয় কবির কবিতা এবং গান আজও এত প্রাসঙ্গিক যে, ভয় ও আতঙ্কের পরিবেশের মধ্যে যখন আমাদের প্রতিদিন অতিবাহিত হচ্ছে, তখন এই অধিকারহারা, গণতন্ত্রহারা, মতপ্রকাশ ও কথা বলার স্বাধীনতাহারা মানুষদের কাছে এখনো উদ্দীপনার এবং প্রেরণার স্থল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের এক দুঃসময় এবং দুঃশাসনের মধ্যে আমরা বাস করছি। আমাদের বিজয় অর্জন করতে হবে। এই দুঃশাসন থেকে পরিত্রাণের জন্য আমাদের অন্যতম প্রেরণা কাজী নজরুল ইসলাম।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আটকের নিন্দা জানিয়ে তার মুক্তির দাবি করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। রোববার সকালে রাজধানীর গুলশান-২-এর বাসা থেকে মির্জা ফখরুলকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে দুপুরে এ নিয়ে বিবৃতি দেন রুহুল কবির রিজভী।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সরকার। নিশিরাতের সরকারের বিরুদ্ধে গোটা জাতি যখন ফুঁসে উঠেছে। বিএনপির মহাসমাবেশে লাখ লাখ জনগণের উপস্থিতি দেখে সুপরিকল্পিতভাবে বিএনপির মহাসমাবেশে আক্রমণ করে, গুলি করে নেতা-কমীদের হত্যা করেও নিজেদের নিরাপদ মনে করছে না অবৈধ সরকার। তাই বিএনপির অন্যতম শীর্ষ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে সকালে তার বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে আইনশৃঙ্খলারক্ষা বাহিনী।’
রিজভী বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম ৭৫ বছর বয়স্ক এবং গুরুতর অসুস্থ। তার মতো একজন নেতাকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। জনগণকে ভয় পাইয়ে দিতেই বিএনপি নেতাদের আটক করা হচ্ছে। কিন্তু বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে দেশের মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। গ্রেপ্তার নিপীড়ন করে, নেতা-কর্মীদের হত্যা করে এবার আর ক্ষমতা ধরে রাখা যাবে না।’
বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই বিএনপির মহাসমাবেশে হামলা, গুলি, গুলি করে হত্যা এমনকি যত নাশকতা করেছে সব করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। এর দায় দায়িত্বও তাদের।’
ফখরুলের মুক্তির দাবি জানিয়ে রিজভী বলেন, ‘আমি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তার মুক্তির জোর দাবি করছি।’
রাজধানীর গুলশানের বাসভবন থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আটক করে নিয়ে গেছে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।রোববার সকাল ৯টা ২০ মিনিটে তাকে আটক করে বলে জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির খান।
মহাসচিবের স্ত্রী রাহাত আরা বেগম জানান, গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল বাসায় গিয়ে সিসি ক্যামেরার ডিভাইস নিয়ে যায়। এর ১০ মিনিট পর তারা আবারও বাসা গিয়ে মির্জা ফখরুলকে আটক করে গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, ‘অসুস্থ একজন মানুষকে এভাবে তুলে নিয়ে যাওয়া মেনে নেয়া যায় না।’
গতকাল শনিবার বিএনপির সমাবেশ ঘিরে পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে এক পুলিশ কনস্টেবল ও যুবদল নেতা নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন পুলিশের অন্তত ৪১ সদস্য। পুলিশ বিএনপির সমাবেশে হামলা করেছে অভিযোগ তুলে সমাবেশ থেকে আজ রোববার সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এক দফা দাবি আদায়ে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ শুরু করেছে বিএনপি। শনিবার দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় সমাবেশের কার্যক্রম। দুপুরে ২টায় এ সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও পরে সমাবেশ শুরুর সময় এগিয়ে আনা হয়।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গতকাল শুক্রবার বিকেল থেকেই সমাবেশস্থলে দলের নেতা-কর্মীরা আসতে শুরু করেন। বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশমুখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তল্লাশি করছেন। দুপুরের পর বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগও সমাবেশ ডেকেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশে আসতে দেখা যায়।
২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনেই মহাসমাবেশ করবে বলে জানিয়েছে বিএনপি। সমাবেশের জন্য বিএনপির কাছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সাতটি তথ্য জানতে চেয়ে গতকাল বুধবার রাতে চিঠি দিয়েছিল, তার জবাবে এমন অনড় অবস্থানের কথা জানায় দলটি।
পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন মিয়ার পাঠানো চিঠিতে সমাবেশের জন্য নির্ধারিত স্থান নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছাড়াও বিকল্প দুটি ভেন্যুর নাম প্রস্তাবের অনুরোধসহ আরও কিছু তথ্য জানতে চাওয়া হয়।
চিঠির উত্তরে বৃহস্পতিবার দুপুরে রুহুল কবির রিজভী পল্টন থানার ওসির কাছে একটি চিঠি পাঠান। তাতে বলা হয়েছে, ২৮ অক্টোবরের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ নয়াপল্টনে বিএনপির প্রধান কার্যালয়ের সামনেই আয়োজনের সব প্রস্তুতি এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। অন্য কোনো ভেন্যুতে যাওয়া সম্ভব হবে না।
পুলিশকে বিএনপি জানিয়েছে, সমাবেশে এক থেকে সোয়া লাখ লোক সমাগম হবে, দুপুর ২টায় শুরু হয়ে মাগরিবের আজানের সময় শেষ হবে, অন্য কোনো দলের নেতা থাকবে না-সহ সাতটি বিষয় জানিয়েছে।
নাশকতা ও বিস্ফোরক আইনের মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ আদেশের ফলে বিচারিক আদালতে মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে এ মামলা চলতে বাধা নেই বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
মঙ্গলবার বিচারপতি মো. সেলিম ও বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন খানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে ফখরুলের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) তুষার কান্তি রায়।
আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করে ডিএজি তুষার কান্তি রায় দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আদালত শুনানি নিয়ে আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছেন। ফলে বিচারিক আদালতে এ মামলা চলতে কোনো বাধা নেই।’
রাজধানীর পল্টন মডেল থানার নাশকতা ও বিস্ফোরক আইনের মামলায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ আট জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে গত ৩ সেপ্টেম্বর আদেশ দেন বিচারিক আদালত।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন, সাইফুল আলম নিরব, মোয়াজ্জেম হোসেন বাবু, আজিজুল বারী হেলাল, কাজী রেজাউল হক বাবু, খন্দকার এনামুল হক এনাম ও জামায়াত নেতা ড. মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম মাসুদ।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর রাজধানীর পল্টন মডেল থানাধীন মিন্টু রোডে মির্জা ফখরুল ও রিজভীর নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াতের ২০০/২৫০ নেতা-কর্মী লাঠিসোঁটা নিয়ে রাস্তা অবরোধ করে। এ সময় তারা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ময়লার গাড়ি ভাঙচুর করে এবং বিস্ফোরণ ঘটায়। এ ঘটনায় ঢাকা ডিএসসিসির গাড়িচালক মো. আয়নাল বাদি হয়ে মামলা করেন।
তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ২৩ অক্টোবর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন খান আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
এরপরই আদালত তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদেশ দেন। সেই আদেশ বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন ফখরুল, যা আজ হাইকোর্ট খারিজ করে দিয়েছেন।
বিএনপির রাজনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে মা ও ছেলের লড়াই বেড়েই চলেছে। থামার কোনো লক্ষণ নেই। এদিকে শীর্ষ দুই নেতৃত্বে এমন বিপরীতমুখী অবস্থানে দিশেহারা বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এমনিতেই প্রায় দু-দশক তারা ক্ষমতার বাইরে। ক্ষমতায় ফেরার তেমন কোনো লক্ষণও নেই ক্যান্টনমেন্টে জিয়াউর রহমানের হাতে প্রতিষ্ঠিত দলটির।
নেতা-কর্মীদের হতাশার মধ্যেই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিবাদ তাদের আরও সংকটে ফেলেছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানের মধ্যকার লড়াই এখন প্রকাশ্যে চলে এসেছে। এ লড়াইয়ে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান। বিএনপির অন্দরমহলে কান পাতলে তাকে নিয়েও গুঞ্জন শোনা যায়। সম্প্রতি ঢাকায় খালেদা জিয়াকে দেখতে এসে তিনিও নাকি তারেকের বিরুদ্ধে খালেদার ক্ষোভ বাড়াতে সাহায্য করেন। ঘটনা যাই হোক মা ও ছেলের দ্বন্দ্বে বিএনপির এখন ছন্নছাড়া অবস্থা।
খালেদা জিয়া আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তার ছেলে তারেক রহমানও আদালতের দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি। কিন্তু অসুস্থ মাকে দাবিয়ে রেখে লন্ডন থেকে তারেক জিয়া দলের লাগাম পুরোটাই নিজের হাতে নিতে চান। তাই তিনি সেখান থেকেই একতরফা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করে দলে নিজের কর্তৃত্ব জাহির করে চলেছেন। তবে খালেদা জিয়ার সেই কর্মসূচিতে সায় নেই। চেয়ারপারসনের নিষেধাজ্ঞার কারণে সেই কর্মসূচিতে অংশ নিতেও পারছে না বিএনপির নেতা-কর্মীদের একটা বড় অংশ। বিদেশে বসে তারেক দলকে সহিংস আন্দোলনের দিকে ঠেলে দিতে চাইলেও খালেদার তাতেও আপত্তি রয়েছে বলে বিএনপির কয়েকটি সূত্র জানায়। শোনা যাচ্ছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাকি এখন সরকারের সঙ্গে সমঝোতাতেও রাজি আছেন!
নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে খালেদা জিয়া গত এক মাসে অন্তত তিনবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে হাসপাতালে তলব করেন। প্রতিবারই তাকে আন্দোলনের লাগাম টেনে ধরতে বলেছেন খালেদা, এমনটাই জানায় বিএনপির সূত্রগুলো। তারেকের সঙ্গে তার বিবাদের কথাও দলের মহাসচিবের সঙ্গে চেয়ারপারসনের বৈঠকে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার সায় নেই বলেও শোনা যাচ্ছে। এমনকি জামায়াতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার বিষয়েও খালেদা ও তারেকের মধ্যে মতবিরোধ চরমে। সবমিলিয়ে জিয়াউর রহমানের স্ত্রী ও বড় ছেলের দ্বন্দ্বে বিএনপি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে।
চলতি বছরের ২৮ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশ ঘিরে মা ও ছেলের বিপরীত অবস্থান প্রকাশ্যে চলে আসে। ওই দিন ঢাকায় মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছিলেন তারেক জিয়া। এই কর্মসূচির পরদিনই ২৯ জুলাই ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশমুখে অবস্থান গ্রহণ করে বিএনপি। তবে এই কর্মসূচিতে নাকি সায় ছিল না খালেদা জিয়ার। দলটির বড় অংশ এই কর্মসূচি পালনে আগ্রহী না হলেও তারেক জিয়ার ধমক খেয়ে তারা কর্মসূচি পালনে বাধ্য হয়। সহিংস অবস্থান নিলেও পুলিশের কড়াকড়ি অবস্থান ও সিনিয়র অনেক নেতা থেকে শতভাগ সমর্থন না মেলায় দিন শেষে বড় ধরনের সহিংসতা ঘটাতে পারেনি বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
তারেকের নির্দেশে সংগঠিত আন্দোলন থেকে বিএনপির বিরুদ্ধে সন্ত্রাস এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিপন্ন করার অভিযোগ ওঠে। বিদেশি কূটনীতিকরাও বুঝতে পারেন, বিএনপি সহিংসতা ছড়ানোর ষড়যন্ত্রে শামিল হয়েছে। দেশে অস্থির পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে চাইছে তারেক। বিএনপির একটি মহল মনে করে, খালেদা জিয়ার এ কর্মসূচিতে আগ্রহ নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির প্রতিও তেমন উৎসাহ নেই খালেদার। আসলে খালেদা এখন মোটেই হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজের বিপদ ডেকে আনতে চান না।
এদিকে, ৩ আগস্ট বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার নির্দেশ ঘিরেও দলীয় কোন্দল প্রকাশ্যে চলে আসে। সেই দিন তারেক জিয়াকে ৯ বছরের এবং তার স্ত্রীকে ৩ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। তারেক জিয়া এই কারাদণ্ডের আদেশের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জন্য নির্দেশনা দেন। তিনি চেয়েছিলেন, ব্যাপক সহিংসতার মাধ্যমে অস্থির পরিবেশ তৈরি করে আওয়ামী লীগের সরকারকে বিপর্যস্ত করতে। কিন্তু তার এই হঠকারী সিদ্ধান্ত এবং খেয়ালখুশিমতো দল পরিচালনার বিষয়টি বিএনপির অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না। বিএনপির বেশ কিছু নেতার কাছ থেকে এমনটাও শোনা গেছে, ‘সন্ধ্যায় এসএমএস দিয়ে পরদিন আন্দোলন হয় নাকি?’
বিএনপি সূত্রের খবর, সরকারের সঙ্গে বেগম জিয়ার সমঝোতা এখন চূড়ান্তপ্রায়। আর এই সমঝোতার অংশ হিসেবেই বেগম জিয়া তারেকের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারেন। খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, অস্টিও আর্থ্রাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। সম্প্রতি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুরুতর অসুস্থ সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে যান গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা। তাদের মধ্যে ছিলেন জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম। তাদের কাছেও শোনা যাচ্ছে, খালেদা জিয়া ছেলের ধ্বংসাত্মক রাজনীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন।
এদিকে, বিএনপি থেকে তারেক জিয়া ও জামায়াতকে বাদ দেয়ার কথা শোনা যাচ্ছে কূটনৈতিক মহলেও। সম্প্রতি ভারতের একজন সাংবাদিক দেশটির উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিএনপির সিনিয়র তিন নেতার সিঙ্গাপুরে বৈঠক নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেন। বেশ স্পষ্ট করে তিনি বলেন, ভারত চায় না বিএনপি জামায়াতে ইসলাম ও তারেক জিয়াকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাক। ভারতের বক্তব্য বেশ স্পষ্ট, তারেক রহমান ও সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলোকে বাদ দিলে বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা বিবেচনা করা হবে।
এদিকে নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে তারেক রহমানের গেল নির্বাচনের মনোনয়নবাণিজ্যের বিষয়টি ততই সরব হয়ে উঠছে দলীয় ফোরামে। সমালোচকদের অনেকেই বলছেন, আগামী ৫ বছর নিজের আয়েশি জীবন নিশ্চিতের জন্য আরও একবার মনোনয়নবাণিজ্যের পথ বেছে নেবেন তারেক রহমান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনেও আলোচনা হয় তারেক রহমানের মনোনয়নবাণিজ্য নিয়ে। প্রধানমন্ত্রী সেখানে বলেন, ‘গতবার ৭০০ প্রার্থীর মনোনয়নবাণিজ্য করেছে তারেক।’ ২০১৮ সালের নির্বাচনে তারেক রহমানের মনোনয়নবাণিজ্যের কারণে বিরক্ত হয়ে দল ত্যাগ করেছেন অনেক সিনিয়র নেতা-কর্মী।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এমন অনেকেই রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে বর্তমানে নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্যে মন দিয়েছেন। অন্যদিকে যারা রাজনীতি করে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা গঠন করেছেন তৃণমূল বিএনপি।
বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন অনুসারে, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয় দেয়া, ভারতের বেশ কিছু স্থানে জঙ্গি হামলা চালানোর পরিকল্পনা এবং আইএসআই ও দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে বৈঠক করেন তারেক রহমান। সেটি ক্ষমতায় থাকাকালে। কিন্তু ক্ষমতার বাইরে থাকাকালেও বিগত বছরগুলোতে আইএসআই ও দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে গেছেন তারেক। লন্ডনে বৈঠকও করেছেন আইএসআইয়ের সঙ্গে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশকে আফগানিস্তানের মতো ‘আদর্শ ইসলামিক রাষ্ট্র’ তথা জঙ্গি রাষ্ট্র বানানোর সংকল্প প্রদান করে মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কিছু দেশ থেকেও অর্থ সংগ্রহের তথ্য মেলে তার বিরুদ্ধে। দক্ষিণ এশিয়ায় এক ধরনের সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদকে সমর্থনের মনমানসিকতা নিয়েই সামনে এগিয়ে যাচ্ছেন তারেক রহমান। কিন্তু এ বিষয়েও তারেক রহমানের সঙ্গে বিস্তর মতবিরোধ খালেদা জিয়ার।
রাজনীতির ময়দানে বিএনপির অভ্যন্তরে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা নিয়েও একটা কথা বেশ প্রচলিত। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামালা চালানোর পক্ষে ছিলেন না বেগম খালেদা জিয়া। কিন্তু তারেক রহমান একক সিদ্ধান্তে এই হামলার পরিকল্পনা করেন, যা বাংলাদেশের রাজনীতির চিত্রপট চিরতর পাল্টে দেয়।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যকার সংলাপ, আলোচনাসহ রাজনীতির অবস্থানকে একেবারেই সংকুচিত করে দেয় এই গ্রেনেড হামলা।
সর্বশেষ চারদলীয় জোট সরকারের আমলে জামায়াত ইসলামীর সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে ওঠে বিএনপির তথা তারেক রহমানের। কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে কেন্দ্র করে দূরত্ব বাড়ে এই দুই দলের মধ্যে। দুই দল নিজেদের ভিন্ন পথ বেছে নিতে চাইছে- এমনটাই শোনা যায় বিএনপির বিগত বছরজুড়ে একক কর্মসূচি ঘোষণার মাধ্যমে।
খালেদা জিয়ার দুর্বলতা হিসেবে কাজ করে তারেক রহমান। তারেক রহমানকে যেন দেশের কারাগারে থেকে মৃত্যুদণ্ড রায় পেতে না হয় অর্থাৎ বিচার প্রক্রিয়া থেকে রক্ষা করা যায়, সে কারণেই ২০০৮ সালের নির্বাচনে শক্ত কোনো অবস্থানই তৈরি করেননি বেগম খালেদা জিয়া। ভবিষ্যতে তারেক আর রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হবে না এমন মুচলেকা দিয়ে ছেলেকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন বেগম জিয়া। আর এ কারণেই নির্বাচন থেকে বিএনপিকে গুটিয়ে রাখেন তিনি। ফল হিসেবে নির্বাচনে ভরাডুবি হয় বিএনপির। কিন্তু তারপরও তারেক রহমানের নির্দেশে একের পর এক সহিংসতা দেখে বাংলাদেশ ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালে।
এদিকে বারবার সংবিধানবিরোধী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপিকে আন্দোলন ও সহিংসতার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন তারেক রহমান। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো বিদেশি কূটনীতিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুটিও সামনে নিয়ে আসেননি। এ বিষয়ে কেউই কোনো আলোচনা করছেন না বিএনপি ও তার সমর্থকরা ছাড়া। এমন অবস্থায় বিষয়টি নিয়ে সংঘর্ষ বিএনপিকে মূল ধারার রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে বলেও ভয় পাচ্ছেন অনেকে। খুব সম্ভবত একই কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আন্দোলনেও খালেদা জিয়ার সায় নেই।
২০০৮ সাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে নানা নাটকীয়তা চলছে বিএনপিতে। বিএনপির কেউ কেউ বলছেন, তারেক জিয়া তার মাকে জিম্মি করে রেখেছেন। বিএনপির এক দফা আন্দোলন বেগবান করতে বেগম জিয়াকে নানাভাবে কোণঠাসা করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসুক সেটি বেগম জিয়া চান না। কারণ অনির্বাচিত সরকারের তিক্ত অভিজ্ঞতা তার রয়েছে। তাই তিনি নির্বাচিত সরকারের অধীনেই আগামী জাতীয় নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। তাতেই ক্ষুব্ধ তারেক জিয়া। সেই বিরোধের কারণেই মাকে ঘন ঘন অসুস্থ বলে হাসপাতালে জিম্মি করে রাখছেন তিনি। অনেকেই বলছেন,‘তারেকের কারাগারে বেগম জিয়া বন্দি’। এমনকি, তারেকের ষড়যন্ত্রে খালেদা জিয়ার জীবন বিপন্ন হতে পারে বলেও বিএনপির একটি মহল আশঙ্কা করছে। প্রয়োজনে নিজের মায়ের প্রাণহানির কারণ হতে পারেন তারেক, এমন আশঙ্কাও ঘনীভূত হচ্ছে বিএনপিতে। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের লড়াইয়ের জেরে চূড়ান্ত হতাশা বাড়ছে বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে।
আজকে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ। এ দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না, তাই মার্কিন প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল এসেছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ‘তাদের কাজ হচ্ছে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে কথাবার্তা বলে সিদ্ধান্ত নেয়া। ফিরে গিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। তারা বলেছে, বাংলাদেশের নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। তারা (মার্কিন প্রাক নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল) এখানে পর্যবেক্ষণ করতে এসেছেন।’
রাজধানীর গুলশানের বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যালয়ের সামনে সোমবার দুপুরে মার্কিন প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধি দলের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন আমীর খসরু।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘তাদের কোনো মতামত এখানে নেই। তারা শুধু এ দেশ থেকে মতামত নিয়ে যাবে। কে, কি বলছে, এটা বড় বিষয় না। বাংলাদেশের সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না বলে তারা এখানে এসেছেন।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচন শুধু দেশের মধ্যে নয়, আজকে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ। দেশের মানুষ একটা গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ এবং আন্তর্জাতিক মানের, বিশ্বাসযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়। বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোও বাংলাদেশে গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক একটা নির্বাচন দেখতে চায়। সেই প্রেক্ষাপটে এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এসেছিল এবং সকলের সঙ্গে কথা বলে গেছে। সেখানে ফিরে গিয়ে তারা জানিয়েছে, বাংলাদেশে তারা এখনো পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। কারণ বাংলাদেশের নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘এখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ডেলিগেশন আসছে। একটি উদ্দেশ্য নিয়ে তারা বাংলাদেশের নির্বাচনের যে পরিবেশ সেটা পর্যবেক্ষণ করতে আসছে আগামী দিনের সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কি না। ঘুরেফিরে তাদের কথা একটিই, নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য আন্তর্জাতিক মানের বিশ্বাসযোগ্য বাংলাদেশে হবে কি না। হতে হলে সেটিতে কী প্রয়োজন এবং সেটি কীভাবে করা যায়। আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে বলেছি, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। তারা গত কয়েকটি নির্বাচনে বাংলাদেশের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি বরং আরও অবনতি হয়েছে।’
আমীর খসরু বলেন, ‘এখন নিপীড়ন নির্যাতনসহ ভোট চুরির প্রকল্প আরো অধিকতর শক্তিশালী হয়েছে। ভোট চুরি প্রকল্পকে তারা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। এই শেখ হাসিনার রেজিমেন্ট সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি নির্বাচন হতে হবে। সংসদ বাতিল করতে হবে। এই নির্বাচন কমিশন বাতিল করে সকলের মতামতের প্রেক্ষিতে আরেকটি নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘নিরপেক্ষ সরকার বিএনপির একার দাবি না, এটা বাংলাদেশের মানুষের দাবি। নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া তারা যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে না, এ বিষয়ে বাংলাদেশের জনগণের মনে কোনো সন্দেহ নেই। এমন প্রেক্ষাপটে আমরা নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলছি। আপনার যদি তাদের কথাগুলো শুনেন তাহলে দেখবেন, তারা বলছে গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ, আন্তর্জাতিক মানের, বিশ্বাসযোগ্য, অংশীদারিত্বমূলক নির্বাচনের কথা। বর্তমান শেখ হাসিনা সরকারের অধীনের নির্বাচন হলে তারা যেগুলো বলছে, এগুলো হবে না। সুতরাং তারা তো স্বাভাবিকভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলতে পারে না। এই দাবি উঠেছে বাংলাদেশের মানুষের কাছ থেকে।’
বাংলাদেশ সফররত মার্কিন প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে বিএনপির পক্ষ থেকে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় স্থায়ী কমিটি সদস্য আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপার্সন উপদেষ্টা কাউন্সিল সদস্য মোহাম্মদ ইসমাইল জবিউল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ এবং বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান।
আর মার্কিন প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলে এনডিআই প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন রিক ইন্ডারফোর্থ, মারিয়া চিন আবদুল্লাহ ও মনপ্রীত সিং আনন্দ এবং আইআরআই প্রতিনিধি বনি গ্লিক, জামিল জাফর এবং জো কাও।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘হাসিনা আমেরিকা থেকে উইড়া আসছে খালি হাতে। তারা আবারো আগের রাতে ভোট করার পাঁয়তারা করেছে। তারা (আমেরিকা) কি সাড়া দিছে? দেয়নি। আজ সকল গণতান্ত্রিক শক্তি এক জোট হয়েছে। কথা পরিষ্কার, নির্বাচন হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। আজকে তারা ভয় দেখায়। ভয়ে কোনো কাজ হবে না।
বৃহস্পতিবার এক দফা দাবিতে কুমিল্লা-চট্টগ্রাম রোডমার্চের উদ্বোধনী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে ডিমের ডজন ১৫০ টাকা। বাচ্চাদের খাওয়াতে পারি না। আজকে লুটপাটের সরকার আমাদের বুকের ওপর বসে আছে। খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে দিচ্ছে না। তারা জানে খালেদা জিয়া সুস্থ হয়ে ফিরলেই তারা শেষ। বাংলাদেশের গণতন্ত্র থাকবে কি থাকবে না, এবার নির্ধারণ হবে। তারা নাকি উন্নয়ন করছে। তারা আজ রূপপুরে ইউরেনিয়াম নিয়ে আসছে। ইউরেনিয়ামের কারণে মাইলের পর মাইল ধ্বংস হয়ে যাবে। কোনো নিরাপত্তা বিধান না করে আজ দুর্নীতির কারণেই এমন প্রকল্প নিয়ে আসছে সরকার। তারা আমাদের কথা বলতে দেয় না, কথা বললেই মামলা। তারা আন্দোলনে ২২ জনকে গুলি করে মেরেছে, সাতশ মানুষকে গুম করেছে, সহস্র মানুষকে হত্যা করেছে। আমাদের দাবি একটাই, আমরা ভোট দিতে চাই। শেখ হাসিনার অপর নাম কি? ভোট চোর। এই রোডমার্চের মাধ্যমে সরকারকে জানিয়ে দিচ্ছি, আপনি পদত্যাগ করতে হবে। নাহলে জনগণ জানে আপনাদের কীভাবে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে।
তিনি নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, লাফিয়ে লাফিয়ে স্লোগান দিলে হবে না, রাজপথ দখলে রাখতে হবে। বন্ধুরা, বাবারা, ছোট ছোট ভাইয়েরা আমাদের জেগে উঠতে হবে। রাজপথ দখল করে সরকার হটাতে হবে।
প্রধান বক্তা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এরা বিদায় হয়ে গেছে, মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। এরা বুঝতে পারছে ক্ষমতা শেষ। এদের শুধু শরীর দেখা যায়। দেশ থেকে বিদায় হয়ে বিদেশে গিয়ে অনেক চেষ্টা করছে, দ্বারে দ্বারে ঘুরছে, হাতেপায়ে ধরছে, কোনো লাভ হয় নাই। আজ বাংলাদেশের মানুষ এক পক্ষে, হাসিনার রেজিম এক পক্ষে। এদের শক্তি কিছু দুর্বৃত্ত, পুলিশ, আমলা রাজনীতিবিদ। আগামী কিছুদিন কঠিন সময় পার করতে হবে। রাস্তা ছাড়া যাবে না। আজ সকল পক্ষ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শামিল হয়েছে।
আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, শান্তি সমাবেশ করে জনস্রোতের সামনে দাঁড়াতে পারবেন? তাদের কথা শুনলে মনে হয় তারা কোনো রাজনৈতিক দল? এদের পাগলা গারদে পাঠানোর সময় হয়ে গেছে। ঝড়বৃষ্টি, বাদলবন্যা আমাদের কেউ থামাতে পারবে না। এই নির্বাচন কমিশনকে পদত্যাগ করতে হবে। দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিজয়ী হতে হবে।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিন-উর-রশিদ ইয়াছিনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ফজলে নূর তাপস যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে জমিদারি ও সন্ত্রাসী ভাব রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, এটাই হচ্ছে তাদের কথা বলার চরিত্র ও মানসিকতা। তাদের সব কিছুর মধ্যে একটা সন্ত্রাসী ব্যাপার থাকে। এটা হচ্ছে তাদের জমিদারি। তারা এই ধরনের কথা বলে। কে কী বলে সেটা আমাদের দেখার বিষয় না।
রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।
গতকাল বুধবার রাজধানীর বনশ্রীতে এক অনুষ্ঠানে ডিএসসিসি মেয়র ফজলে নূর তাপস বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে রাজধানী ঢাকায় আর ঢুকতে দেয়া হবে না।
এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা এই ধরনের কথাকে গুরুত্ব দেই না। কারণ অতীতে আমরা এগুলো বহু (অনেক) ফেস করেছি। এগুলো নিয়ে আমরা চিন্তাও করি না। কে কী বলল এতে বাংলাদেশের জনগণের কিছু যায় আসে না। জনগণের লক্ষ্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন।
জাতীয় সংসদে সাইবার নিরাপত্তা আইন পাশের নিন্দা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিচার ব্যবস্থা যেটা আছে, সেই বিচার ব্যবস্থা পুরোপুরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে।
রাজধানীর গুলশানে বৃহস্পতিবার দুপুরে এক হোটেলে ‘কারেন্ট স্ট্যাইট অব জুডিশিয়ারি: এ টুল টু অপরেস দ্য অপজিশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। ইউনাইটেড ল‘ইয়ার্স ফ্রন্টের এই সেমিনারের আয়োজন করে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ইউনাইটেড ল‘ইয়ার্স ফ্রন্টের কো-কনভেনর সুব্রত চৌধুরী।
ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। আমরা যে গণতন্ত্রের কথা বলছি, যে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কথা বলছি, সেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তো আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে না, শেখ হাসিনা বিশ্বাস করেন না। এজন্য করেন না কারণ, ১৯৭৫ সালে তারাই কিন্তু একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল।
দেশে বর্তমানে একদলীয় শাসন চলছে দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কেউ কথা বলতে পারে না। আজকে যখন পুলিশ কর্মকর্তারা রাজনীতিবিদদের মতো কথা বলেন, যখন জজরা শপথবদ্ধ রাজনীতির কথা বলেন, তখন আমরা সাধারণ মানুষেরা কোথায় যাব, কার কাছে যাব? আজকে বিচার ব্যবস্থা যদি পুরোপুরিভাবে দলীয়করণ হয়ে যায়, মানুষ কোথায় যাবে? এর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, শুধু বিচার ব্যবস্থা নয়, আজ যে রাষ্ট্র কাঠামো তৈরি করা হয়েছে, সেই রাষ্ট্র কাঠামোটা ভেঙে দিতে হবে। ভেঙে দিয়ে সত্যিকার অর্থেই একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কাঠামো নির্মাণ করতে হবে। এজন্য বিচার ব্যবস্থার সমস্যার সমাধানে জুডিশিয়াল কমিশন গঠনসহ ৩১ দফা রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাবনা দিয়েছি আমরা।
আইনজীবীদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে সবাইকে জোটবদ্ধ হতে হবে। সবাইকে সোচ্চার হয়ে বলতে হবে যে, ইটস এনাফ, যথেষ্ট হয়েছে, যথেষ্ট ক্ষতি করেছো। এখন তুমি দয়া করে পত্রপাঠ বিদায় হও, জনগণের ভোটের মাধ্যমে জনগণের একটা পার্লামেন্ট, জনগণের একটা সরকার তৈরি করো।
মির্জা ফখরুল বলেন, গতকাল (বুধবার) সংসদে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট পাস হয়েছে। যা আগে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নামে ছিল। যেটার ওপরে আমাদের সিভিল সোসাইটির মানুষেরা, সাংবাদিকরা, রাজনীতিবিদরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক সংস্থা এমনকি ইউনাইটেড নেশনসের যে মানবাধিকার কমিশন আছে তারাও বলেছেন যে, এ আইনের ধারা পরিবর্তন করতে হবে। কোনো পরিবর্তন না করে, শুধু নাম পরিবর্তন করে গতকাল তারা সংসদে এ আইন পাস করেছে। আমি এর নিন্দা জানাচ্ছি, প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ইউনাইটেড ল ইয়ার্স ফ্রন্টের কনভেনর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি জয়নাল আবেদীন। সঞ্চালনা করেন কায়সার কামাল।
আওয়ামী লীগ সরকার ডেঙ্গুর চেয়েও ভয়াবহ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, দেশের মানুষ খেতে পারে না, জনগণকে ভোটের অধিকার দিতে পারে না। অথচ দুর্নীতি নিয়ে ব্যস্ত সরকার। এডিস মশা নিধনের নামে বিদেশ থেকে ওষুধ কিনে আনে, সেখানেও তারা চুরি করে। এদের প্রধান লক্ষ্য চুরি করা। সব কাজের ওপর চুরি।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বুধবার সকালে ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি লক্ষ্যে লিফলেট বিতরণের আগে এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে এসব কথা বলেন ফখরুল। জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন ও ড্যাবের যৌথ উদ্যোগে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আবার স্যাটেলাইট-২ তৈরি পাঁয়তারা করা হচ্ছে। দেশের মানুষকে খেতে দিতে পারে না। হাসপাতাল তৈরি করতে পারে না, স্বাস্থ্য সেবা দিতে পারে না। তারা মানুষের ভোটের অধিকার দিতে পারে না। যে বিমান ভেঙে পড়ছে, তাদের এখন ১০টা এয়ার বাস কিনে দেবে। মূল্য লক্ষ্য সেটা হচ্ছে দুর্নীতির জন্য।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের সর্বক্ষেত্রে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। একদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, অন্যদিকে ডেঙ্গুতে মৃত্যু বেড়েই চলেছে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টে এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ঢাকা সফরের মূল লক্ষ্য এয়ারবাস ক্রয়ের কমিশন পাওয়া বলে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ম্যাক্রোঁ আমাদের অনেক বড় মেহমান। তাকে নাচ-গান দিয়ে স্বাগত জানিয়েছেন। দেশের মানুষের এই করুণ অবস্থার মধ্যেও আরও ১০টা এয়ারবাস কেনা হবে। আসল লক্ষ্য এয়ার বাসে ফিডব্যাক (কমিশন) পাওয়া যায়। এয়ারলাইন্স কিনলে কমিশন পাওয়া যায় না। তাই এয়ার বাস কিনছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এই সরকার ডেঙ্গুর চেয়েও ভয়াবহ। এই দানব সরকারকে সরাতে সবাই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ হালিম ডোনার, ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ, মহাসচিব ডা. মো. আব্দুস সালাম, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, ঢাকা সিটি করপোরেশনের দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন ও উত্তরের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে বিএনপি মহাসচিব নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয় থেকে জনসাধারণের মাঝে লিফলেট বিতরণ করেন। পরে নেতারা বিএনপি কার্যালয় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত সড়কে লিফলেট বিতরণ করেন।
বিএনপিসহ বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের ‘মিথ্যা মামলায় অন্যায়ভাবে সাজা দেয়ার’ প্রতিবাদে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর রাজধানী ঢাকায় সমাবেশ করবে বিএনপি। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির যৌথ উদ্যোগে ওই দিন বিকেল ৩টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এই সমাবেশ হবে।
১৫ সেপ্টেম্বরের সমাবেশের অনুমতি চেয়ে গতকাল রোববার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার কার্যালয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি নেতা সাইদুর রহমান মিন্টু সাংবাদিকদের বলেন, ১৫ সেপ্টেম্বরের সমাবেশের অনুমতি চেয়ে ডিএমপি কমিশনারের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। সমাবেশ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার জনস্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। করোনার সময় একইভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ব্যর্থতার দায় নিয়ে দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রের পদত্যাগ করা উচিত। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকার শুরু থেকে গুরুত্ব দেয়নি। স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ মেয়ররা বিদেশ ভ্রমণ করেছেন, কিট নিয়ে দুর্নীতির কথা প্রকাশ পেয়েছে।
বুধবার সকালে রাজধানীর পান্থপথে হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতাল এবং শমরিতা হাসপাতালে রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থীর উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
ড. ইউনূসের প্রসঙ্গ টেনে ফখরুল বলেন, বিএনপির নির্দলীয় সরকারের দাবি থেকে জনগণের দৃষ্টি সরাতে ড. ইউনূসের বিষয়টি পরিকল্পিতভাবে সামনে এনেছে সরকার, এতে সফলও হয়েছে। আজ কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকেও শাস্তির মুখে পড়তে হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, রাষ্ট্রব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। এই মুহূর্তে সরকারকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নতুন নির্বাচন দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশে ডেঙ্গু সংক্রামক হারে ছড়িয়ে পড়েছে। শিশুরা অকাতরে মারা যাচ্ছে, কারও কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। কলকাতায় এত ঘনবসতি হওয়ার পরও তারা নিয়ন্ত্রণ করেছে। অথচ আমাদের এখানে ব্যর্থ। দুই মেয়রের সেদিকে নজর নেই, তারা শুধু নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে পড়ে আছে।
আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্য দুর্নীতি মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, অর্থনীতি চরমভাবে ধ্বংসের দিকে চলে গেছে। শুধু মেগা প্রজেক্ট দেখাচ্ছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে সমস্যার সৃষ্টি করছে, যানজটের সৃষ্টি করছে। কোনো পরিকল্পনা নেই।
এ সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী ইশরাক হোসেন ও উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়ালসহ বিএনপি নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।