নয়াদিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সেলফি প্রসঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, একটি সেলফি তুলে বলছে সব ঠিক আছে। এই ধরনের কথাবার্তায় বোঝা যায় সরকার কতটা রাজনৈতিক দেউলিয়া হয়ে পড়েছে।
রোববার সকালে রাজধানীর তোপখানা রোডের স্বাধীনতা হলে জিয়া প্রজন্ম দল আয়োজিত ‘নিরপেক্ষ নির্বাচনের এক দফা দাবি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় দুদু এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘একটা সেলফির জন্য পেছনে পেছনে ঘোরা। মানে ছেলেপেলেরা যা করে, যুবক-যুবতীরা যা করে। একটা দেশের প্রধানমন্ত্রী ছবি নেওয়া ও প্রকাশ করাকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে। এটা নিয়ে তার সাধারণ সম্পাদক (ওবায়দুল কাদের) বলেছেন, বিএনপি নাকি কষ্ট পাচ্ছে। এগুলো নিয়ে কেউ কেউ তার (ওবায়দুল কাদের) সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন। যে দেশের জন্য লাখ লাখ দামাল ছেলে তাদের বুকের তাজা রক্ত দিয়েছে, সেই দেশের একজন রাষ্ট্রপ্রধান একটি সেলফি তুলে বলছে সব ঠিক আছে। বিএনপি পশ্চাৎযাত্রা করেছে। এই ধরনের কথাবার্তায় বোঝা যায় সরকার কতটা রাজনৈতিক দেউলিয়া হয়ে পড়েছে।’
বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘আমাদের সরকারপ্রধান আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে পাশাপাশি বসবেন দুই দেশের পতাকা থাকবে, তাহলেই না বোঝা যাবে; যেভাবে (ভারতের প্রধানমন্ত্রী) নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বসেছেন। কিন্তু মোদির সঙ্গে বসে কোনো লাভ হয়নি। তবু বসেছেন তো; ওই ধরনের একটা ছবি দিতেন। সেলফি তুলবেন কেন? এরকম ইয়ার্কিমারা সরকারপ্রধানের ছবি এর আগে দেশবাসী দেখেনি। এটার মাধ্যমে দেশকে, দেশের মানুষকে ছোট করা হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘আমরা বুঝি আপনি আর ক্ষমতায় থাকতে পারছেন না। এজন্য এত উতলা হয়েছেন। কারণ যেসব অপকর্ম করেছেন তার জবাবদিহিতা তো করতে হবে।’
‘খালেদা জিয়া কিছুই করেননি, তাতেই আপনি তাকে পাঁচ বছর ধরে জেলে ঢুকিয়ে রেখেছেন। আমাদের ইলিয়াস নাই, চৌধুরী আলম নাই, প্রায় ৬শ থেকে ৭শ জন গুম হয়েছে, এর জবাব তো দিতে হবে।’
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে এই আলোচনা সভা। কিন্তু তারা দুজন এখনো কারামুক্ত নন। খালেদা জিয়া পাঁচ বছর ধরে কারাবন্দি, তারেক রহমান ১৭ বছর ধরে নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন।’
তিনি বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশের গণতন্ত্র নয়, সারা বিশ্বের গণতন্ত্রের কথা বললে জিয়ার কথা চলে আসে। এরকম একজন মানুষ পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া বিরল। যিনি এই বয়সে এসে সবকিছু বাদ দিয়ে গণতন্ত্রের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। খালেদা জিয়ার ওপর এত অত্যাচার এত মামলা-নির্যাতন যে ভারতের মহাত্মা গান্ধীর ওপরও এরকম হয়নি।'
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘সরকার পুলিশসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পারলে প্রতিদিন করে একটা করে প্রমোশন দেয়। এর জবাব তো দিতে হবে। সুপ্রিম কোর্টে নির্বাচনের নামে যা করলেন, গুন্ডামির একটা সীমা থাকে। আইন-আদালতকে দলীয়করণ করেছেন।’
পতিত স্বৈরাচারের কীটপতঙ্গ প্রশাসনের মধ্যে থাকলে তারা দেশকে বিপজ্জনক পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির উদ্যোগে ডেঙ্গু প্রতিরোধে গণসচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণের সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে রিজভী বলেন, ‘মানবতা অবশ্যই রাখবেন, কিন্তু যারা নিজেরা মানবতা দেখায়নি, যারা শেখ হাসিনাকে উদ্বুদ্ধ করেছে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে গুলি করতে, সেই স্বৈরাচারের কীটপতঙ্গ যদি প্রশাসনের মধ্যে থাকে, আপনাদের প্রতি পদে পদে বাধা দেবে। তাদের অতি দ্রুত চিহ্নিত করে গণতন্ত্রকামী মানুষের পক্ষে যারা ছিল অথবা যারা নিরপেক্ষ ছিল তারা যে দলেরই সমর্থক হোক না কেন এসব মেধাবী লোকদের প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় বসান।’
রিজভী বলেন, শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন, পুনরুত্থান মানে দেশ হবে এক ভয়ংকর বধ্যভূমি। এই বধ্যভূমি যাতে তৈরি না হয় তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে যেতে হবে।
তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে যে রাজনৈতিক দলই রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসবে তাদেরও অন্তরে সততার আলো নিয়ে খুব দ্রুতগতিতে কাজ করতে হবে। সেই পথ, সেই মত তৈরি করতে হবে ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে। অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যে মাঠ দরকার, সেটি তাদের তৈরি করতে হবে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী তাবাসসুম উর্মি প্রসঙ্গে বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, ‘তিনি আবু সাঈদের মতো একজন মহিমান্বিত আত্মদানকারী, নিজের জীবন দিয়েছে বুক চিতিয়ে হাসিনার পুলিশের গুলি বরণ করেছে তাকে বলছে সন্ত্রাসী। তাকে বলছে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী। এদের মতো লোকজন প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় আছে।’
‘নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তো প্রশাসনের একটি অংশ, তাহলে আজকে সচিবালয় থেকে শুরু করে বিচারালয় থেকে শুরু করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কীভাবে এই স্বৈরাচারের দোসররা একটি বিপ্লবের সরকারকে ব্যর্থ করতে চাইবে, সেটা তো আমরা প্রত্যেকেই জানি।’
প্রশাসনে যাদের নতুন প্রমোশন হচ্ছে তাদের উদ্দেশে রিজভী বলেন, ‘প্রশাসনে যাদের নতুন প্রমোশন হচ্ছে, তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই আওয়ামী প্রশাসন জনগণের টাকা লুট করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। আপনারা বঞ্চিত ছিলেন আপনাদের চিহ্নিত করা হয়েছিল বিরোধী দলের লোক হিসেবে। এখন আপনারা যদি মনে করেন এতদিন বঞ্চিত ছিলাম এখন ভাগ-বাঁটোয়ারা করে সেটি পূরণ করব। তাহলে কিন্তু এই জাতি চিরদিনের জন্য অন্ধকারে চলে যাবে।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দীন আলম, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা ডা. জাহিদুল কবির প্রমুখ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে কঠোর প্রতিরোধের মুখে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার চলে গেছে কিন্তু তাদের দোসররা এখনো ষড়যন্ত্র করছে বলে মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি।
রংপুর জেলা শিল্পকলা অ্যাকাডেমি মিলনায়তনে গতকাল সোমবার জুলাই-আগস্ট ২০২৪ ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের শহিদদের স্মরণে আয়োজিত স্মরণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সাকি বলেন, পতিত স্বৈরাচার পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখনো বলছেন যে, তিনি শীঘ্রই দেশে ঢুকে পড়বেন এবং ক্ষমতায় আসার পর তিনি সবাইকে দেখে নেবেন। অভ্যুত্থানের সময় ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল এবং সব ভয়ভীতি উপেক্ষা করে সাহসিকতার সাথে বুলেটের সামনে দাঁড়িয়েছিল। এ অবস্থা দেখে ফ্যাসিস্টের এক সঙ্গী বললো- স্যার, একটা গুলি লাগলে একজন মারা যায়। কিন্তু অন্যরা যায় না, তাদের সংখ্যা বাড়ে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একটি রাজনৈতিক দল ছিল। কিন্তু তিনি (শেখ হাসিনা) দলটিকে কোথায় নামালেন? এত হত্যা করার পরও তাদের কোনো অনুশোচনা নেই। তারা এখনো প্রতিশোধের কথা বলে আর সে উদ্দেশ্যে দেশে নানা ঘটনা ঘটছে। এ লক্ষ্যে পুরানো ফ্যাসিবাদী শক্তিগুলো দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছে। তাদের অসৎ উদ্দেশ্যকে চরিতার্থ করতে পাহাড়, মন্দির ও মাজারগুলোতে হামলা চালানে হচ্ছে। যারাই এটা করছে তারা ফ্যাসিস্ট বা তাদের পরামর্শদাতা।
তিনি আরও বলেন, আমাদের বাংলাদেশি হিসেবে চিহ্নিত করা উচিত। এই মর্যাদা রক্ষায় যুবসমাজকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সেই ঐক্য রক্ষা করে সকল প্রকার বিভেদ দূর করতে হবে এবং ফ্যাসিবাদকে চিরতরে দূর করতে ঐক্যবদ্ধভাবে গণতান্ত্রিক শক্তি গড়ে তুলতে হবে। যে রাষ্ট্রের জন্য আবু সাঈদ, মুগ্ধ ও মিলনের মত শহিদরা রক্ত বিসর্জন দিয়েছেন, সেই রাষ্ট্রকে রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনে আমরা সর্বদা মাঠে রয়েছি ও থাকব।
গণসংহতি আন্দোলন রংপুর জেলা আহ্বায়ক তৌহিদুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন নগর বিএনপির আহ্বায়ক শামসুজ্জামান সামু, শিক্ষক সিরাজুম মুনিরা, প্রকৌশলী লতিফুর রহমান মিলন ও শিক্ষার্থী শাহরিয়ার সোহাগ।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে করা মামলা ও রায় সবই রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং মিথ্যা ও বানোয়াট বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। তিনি বলেন, তারেক রহমান দেশের আইন-আদালত ও সংবিধানের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাশীল। যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই মামলাগুলো মোকাবেলা করা হবে।
আজ রোববার সুপ্রিমকোর্টর আইনজীবী সমিতি ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নামে করা মামলাগুলো বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের একটি টোটাল প্রজেক্টই ছিল বিএনপি চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে। তাদের বিরুদ্ধে আদালতকে ব্যবহার করা হয়েছে। শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট শাসনের সময় আদালতকে কীভাবে ব্যবহার করা হয়েছে তা তখনকার গণমাধ্যমকর্মীরা উপলব্ধি করলেও তা প্রকাশ ও প্রচারের পরিবেশ এবং সাহস ছিল না। তখন দেশের গণমাধ্যমকেও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। তবে বেশকিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনে কীভাবে বাংলাদেশে আদালতকে ব্যবহার করা হয়েছে, বিচারের নামে কীভাবে অবিচার হয়েছে সে প্রতিবেদন এসেছে।
তিনি বলেন, এ অবিচারের জন্য যারা দায়ী তাদেরকে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় বিচারের আওতায় আনতে হবে। তিনি বলেন, দেশের বিচারাঙ্গনকে কলুষিত করার প্রথম এবং প্রধান কুশীলব হচ্ছেন বিচারপতি এ.বি.এম খায়রুল হক। প্রধান বিচারপতি থাকাবস্থায় দেশে গণতন্ত্র হত্যার ক্ষেত্র প্রস্তুতে খায়রুল হক এককভাবে দায়ী। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলে বিতর্কিত রায় তার দেওয়া। গত ১৫ বছর বিচারের নামে যারা অবিচার করেছে, বিচার বিভাগকে কলুষিত করেছে, বিচার বিভাগের প্রতি আস্থাহীনতা সৃষ্টি করেছে সে সব বিচারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে পদক্ষেপ নিতে হবে। বিষয়টি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সাথে বিএনপির সংলাপে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
কায়সার কামাল আরও বলেন, বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় পরিকল্পিতভাবে তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করে প্রহসনের বিচার করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি প্রার্থী ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা আবদুল কাহহার আকন্দকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় পুনঃতদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি পুনঃতদন্তের নামে বিতর্কিত উপায়ে সম্পূরক চার্জশিটে তারেক রহমানের নাম জড়িত করেন। বিচারের নামে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অবিচার হয়েছে।
‘ওয়ান ইলেভেনের’ মতো বিএনপি আবার ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ দেখতে চায় না বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘আমরা কোনো বিরাজনীতিকরণের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। আবার মাইনাস টু দেখতে চাই না। আমরা আবার মৌলবাদ বা জঙ্গিবাদকে দেখতে চাই না। আমরা আবার সন্ত্রাসকে দেখতে চাই না। আমরা সত্যিকার অর্থে দেশে একটা সুস্থ উদার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দেখতে চাই।’
শনিবার রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে এক শিক্ষক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ উপলক্ষে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের উদ্যোগে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বর্তমান প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যে সরকার এসেছে, এটা তো আন্দোলন যারা করছে… আমরা সবাই মিলে দায়িত্ব দিয়েছি দেশকে সঠিক দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমরা তাদের অবশ্যই সময় দিচ্ছি, সময় দেব।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বারবার প্রশ্ন আসে যে, কত দিন সময় দেবেন? আমরা সেই পর্যন্ত সময় দেব যে পর্যন্ত একটা যৌক্তিক সময়ে তারা (অন্তবর্তীকালীন সরকার) একটা নির্বাচনের ব্যবস্থা তৈরি করতে পারেন। আমরা বিশ্বাস করি, রাজনীতি করি, আন্দোলন করেছি, জান দিয়েছি-প্রাণ দিয়েছি; একটাই লক্ষ্যে- আমরা জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই, আমরা গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে চাই।’
প্রশাসনে ‘স্বৈরাচারের ভূত’ বসে আছে অভিযোগ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে বলতে চাই- এই যে ভূতগুলোকে নিয়ে যারা এত দিন জনগণের ওপর অত্যাচার-নিপীড়ন চালিয়েছে, যারা দুর্নীতি করেছে, লুটপাট করেছে সেই ভূতেরা কিন্তু এখনো প্রশাসনের মধ্যে আছে। এই ভূতগুলোকে দূর করতে হবে। তা না হলে কোনোকিছুই করতে আপনারা সক্ষম হবেন না।’
শিক্ষক জাতীয়করণ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘জাতীয়করণ হলেই আপনাদের সব সমস্যার সমাধান আসবে না। শিক্ষার মান বাড়াতে হবে, যোগ্য মানুষকে নিয়ে আসতে হবে।’
শিক্ষক দিবসের প্রসঙ্গে টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শিক্ষকদের দলকানা হলে চলবে না। শিক্ষকদের দলীয় রাজনীতি থেকে একটু দূরে থাকতে হবে। তা না হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকবে না।’
পরিবর্তনে দেশে নতুন সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এখন পরিবর্তন আনতে হবে। এর জন্য কাজ করতে হবে। দরকার হলে আবার রাজপথে নামতে হবে, দরকার হলে আবার বুকে রক্ত দিতে হবে। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে এ দেশের সত্যিকার অর্থে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা করব, ম্যাডামের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করব, তারেক রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করব।’
শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে সমাবেশে গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক নুরুল হক নুরসহ শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চৌধুরী মুগিস উদ্দিন মাহমুদ, জাকির হোসেনসহ নেতারা বক্তব্য রাখেন।
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতন হলেও তার বিদেশি মুরুব্বি যারা আছে, তারা এ দেশের গার্মেন্টস শিল্প নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন বলে জানিয়েছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তারা দেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করতে চায় বলেও এ সময় তিনি উল্লেখ করেন।
আজ শুক্রবার গাজীপুর শহরের জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে গণসংহতি আন্দোলন আয়োজিত ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হোন’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘ষড়যন্ত্রকারীরা আন্দোলনের নামে শ্রমিকদের উসকে দিয়ে শিল্পক্ষেত্রে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। তবে আমাদের শ্রমিক ভাইদের ন্যায্য দাবি-দাওয়া মালিকদের মানতে হবে। তাদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গার্মেন্টস যেন বন্ধ হয়ে না যায়, সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ কারখানা বন্ধ হলে শ্রমিকরাই তাদের চাকরি হারাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যারা শহীদ ও আহত হয়েছেন, তাদের প্রত্যেকের পরিবারকে সম্মানজনক স্থানে রাখতে হবে। তারা আমাদের অহংকার, মর্যাদার এবং সম্মানের পাত্র। তাদের পরিবারের দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। তাদের প্রতিটি পরিবার থেকে অন্তত একজনকে সরকারি চাকরি দিতে হবে, যাতে কারও কাছে তাদের মাথা নত হয়ে থাকতে না হয়।’
জেলা গণসংহতি আন্দোলনের আহ্বায়ক আমজাদ হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য মনির উদ্দীন পাপ্পু, কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দীপক রায় প্রমুখ। সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের মধ্যে ১২ জন শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহতদের বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত আগস্টের প্রথম সপ্তাহে পতন হয়েছে শেখ হাসিনার সরকারের। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে গেছেন শেখ হাসিনা। এখন সেদেশেই আশ্রয়ে আছেন। তার সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের রাজনীতি, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটসহ বিভিন্ন ইস্যুতে গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময় কথা বলেছেন শেখ হাসিনার ছেলে ও সাবেক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
এবার তিনি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন প্রভাবশালী মার্কিন সাময়িকী টাইমকে। যেখানে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা হতাশ। এমনকি তিনি সামনে সংসদ নির্বাচন হলে সেখানে অংশ নিতে ফিরবেন কি না, সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়নি।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এ সরকার নির্বাচন ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা জয় বলেন, তার মা (শেখ হাসিনা) দেশের পরিস্থিতিতে খুবই হতাশ। কারণ, তার গত ১৫ বছরের সব পরিশ্রম প্রায় বিফলে যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের নেতাদের বিরুদ্ধে আছে ‘গণহত্যা’ ও ‘মানবতাবিরোধী অপরাধে’র অভিযোগ। এসব অভিযোগ প্রমাণিত হলে দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছেন অনেকে।
এমন দাবি জয়ের কাছে ‘উপহাস’ মনে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরোনো ও সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলকে আপনি কীভাবে নিষিদ্ধ করবেন? এটি আইনিভাবে সম্ভব নয়।’
রাষ্ট্রীয় অর্থ লুটপাটের দায়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অসন্তোষ বাড়ছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বিশ্লেষণ অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির তথ্য বলছে, হাসিনার গত ১৫ বছরের শাসনামলে প্রভাবশালী ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীরা প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করেছেন।
গত সোমবার বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট জয়ের স্থানীয় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্থগিত করে। তবে তিনি সব দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘কোথায় টাকা, আমাদের দেখান। অভিযোগ তোলা সহজ।’
শেখ হাসিনা পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নিতে (দেশে) ফিরবেন কি না, এ প্রসঙ্গে জয় বলছেন, সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
জয় বলেন, যদি পরিস্থিতির ‘দৃশ্যমান উন্নতি না দেখা যায়’ তবে লোকজন ধৈর্য হারাবে। তিনি সেই অপেক্ষায় রয়েছেন। চলমান পরিস্থিতিকে ‘অস্থিতিশীল’ উল্লেখ করে হাসিনাপুত্র বলেন, তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) যদি এক বছর বা ১৮ মাস দেশ চালায়, তাহলে ঠিক আছে।
নিজের রাজনীতিতে আসার প্রশ্নে জয় বলেন, ‘আমার কখনো রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল না। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায়, কে জানে? আমি এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি।’
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, জাতির সঙ্গে গাদ্দারি করলে, তাদের সেবক হয়ে মালিক বনে গেলে কী পরিণতি হয় তা থেকে আমি-আমরা এবং জাতিকে শিক্ষাগ্রহণ করতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি আর কোনো স্বৈরাচার সরকার আসবেনা যারা ক্ষমতায় থাকাবস্থায় জনগণকে তাদের কেনা টাকায় বুলেট ছোড়ার দুঃসাহস করবে। এমন কোনো নতুন সন্ত্রাসী সরকারকে আর দেখতে চাইনা।
আজ শুক্রবার সকালে গাজীপুরে ছাত্র আন্দোলনে নিহত শহিদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে জামায়াত আমির শহিদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন এবং তাদের খোঁজ খবর নেন।
‘যত বিভাজন, তা আমরা পায়ের নিচে ফেলে দিয়েছি’ উল্লেখ করে জামায়াতের আমির বলেন, দল ও ধর্মের ভিত্তিতে আর কোনো বিভাজন জামায়াতে ইসলামী মানবে না। রাজনীতিতে কোনো ব্রাহ্মণ নীতি চলবেনা। দেশের স্বার্থে আমাদের কোনো বিভাজন নেই। আর কাউকে জাতিকে ভাগ করার সুযোগ দেব না। জাতিকে তারাই ভাগ করে যারা দেশের দুশমন। দলের ভিত্তিতে, ধর্মের ভিত্তিতে আর ভাগ করার সুযোগ দেওয়া হবে না। এক্ষেত্রে আমরা আপোষহীন।
শফিকুর রহমান বলেন, কোনো দুর্বৃত্তকে আদালতের চেয়ারে আর দেখতে চাই না। যারা বিচারের আমানত রক্ষা করতে পারবে তাদের বিচারক হিসেবে চাই। যারা মুখের দিকে তাকিয়ে কোনো বিচার করবে না। নীতি-নৈতিকতা ও সাক্ষীর ওপর ভিত্তি করে রায় দেবেন। বিচার বিভাগ স্বাধীন থাকতে হবে। সাক্ষী প্রমাণের ভিত্তিতে বিচার হতে হবে সঠিক।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের স্বীকৃতি দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা দলীয় ভিত্তিতে শহিদদের বিভক্তি চাইনা। তারা আমাদের মর্যাদার পাত্র। পাঠ্যপুস্তক কারিকুলামে আগামী দিনের নাগরিকরা যেন জানে তাদের মুগ্ধ, সাঈদ, রিয়ারা ছিল।’ এসময় তিনি প্রত্যেক শহিদ পরিবারের একজন সদস্যকে সরকারি চাকরি দেওয়ার দাবি জানান।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন মহানগর জামায়াতের আমির অধ্যাপক মুহা. জামাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ ইজ্জত উল্লাহ, মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমীর খায়রুল হাসান, সহকারী সেক্রেটারি হোসেন আলী, মজলিসের শূরা সদস্য আফজাল হোসেন, প্রচার সম্পাদক সালাউদ্দিন আইয়ুবী প্রমুখ।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেও তার ষড়যন্ত্র রয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি।
আজ শুক্রবার লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বাংগাখাঁ ইউনিয়নের আমান উল্যাহপুর আয়েশা দাখিল মাদ্রাসায় বন্যার্ত মানুষের ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এ্যানি বলেন, পালিয়ে গেলেও তার (শেখ হাসিনা) ষড়যন্ত্র রয়ে গেছে। ভারতে বসে সে দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। ষড়যন্ত্রের পেছনে রয়েছে দেশ থেকে পাচার করা কোটি কোটি টাকা। ওইসব টাকা দিয়ে ষড়যন্ত্র করছে স্বৈরাচার হাসিনা ও তার দোসররা। সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। কোনো ষড়যন্ত্রেই কাজে আসবেনা। এদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ রয়েছে।
এ্যানি আরও বলেন, স্বৈরাচারদের বিচার না হলে এদেশের গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়বে। গত ১৭ বছর ধরে গণতন্ত্র ও দেশের মানুষের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করছে বিএনপি। এসময় বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী হামলা-মামলা, গুম ও খুনের শিকার হয়েছেন। যারা এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত, তাদের গ্রেপ্তার ও বিচার করতে হবে। স্বৈরাচারদের বিচার না হলে এই দেশে গণতন্ত্র থাকবেনা। গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়বে। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি, দেশের মানুষের পক্ষে যেমন কাজ করতে হবে, তেমনি হায়েনা ও খুনি স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আরও বলেন, বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। ত্রাণ থেকে শুরু করে এখন ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা ও ঔষধ বিতরণ করা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে, যাতে দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। যে লড়াইয়ে আমরা অবতীর্ণ হয়েছিলাম সেই গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার আদায়ের লড়াই এখনো শেষ হয়নি।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাহাবুদ্দিন সাবু, বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট হাসিবুর রহমান, অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমান, মাইন উদ্দিন চৌধুরী রিয়াজ, আনোয়ার হোসেন বাচ্চু ও ড্যাবের স্থানীয় চিকিৎসকরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
লেবাননে দখলদার ইসরায়েলের হামলার ঘটনায় নিন্দা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘লেবাননের রাজধানী বৈরুতে বিমান হামলা চালিয়ে বহু মানুষকে হতাহত করেছে ইসরায়েল। এসব হামলায় অসংখ্য শিশু, নারী ও পুরুষ হতাহত হয়েছে। ধ্বংস হয়েছে বহু স্থাপনা। অথচ বিশ্ব নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
ফখরুল আরও বলেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা কাউন্সিল আলোচনার পর আলোচনা করেই চলেছে। অথচ এখনও পর্যন্ত এই ভয়ংকর ও প্রাণঘাতী যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটাতে পারছে না। জাতিসংঘের কার্যকারিতা নিয়ে জনগণের মধ্যে প্রশ্নের উদ্রেক হচ্ছে। এ প্রাণঘাতী, বিবেকহীন ও অর্থহীন যুদ্ধ এখনই বন্ধ করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা মনে করি- এই যুদ্ধ বন্ধ করতে না পারলে বিশ্ব আরও বেশি সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে।
বিবৃতিতে কালবিলম্ব না করে এ বিষয়ে জাতিসংঘের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
এদিকে, গত ২৭ সেপ্টেম্বর ইসরায়েলের বিমনা হামলায় লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহর মৃত্যু হয়। এরপরেই লেবাননে স্থল অভিযান শুরুর ঘোষণা দেয় ইসরায়েল।
আগামী শনিবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসতে চলেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এদিন দুপুর আড়াইটায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানের সঙ্গে আলোচনায় বসবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।
আজ বৃহস্পতিবার বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘শনিবার দুপুর আড়াইটায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল বৈঠক করবে।’
এর আগে গতকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, শনিবার থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয় দফায় সংলাপ শুরু করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন দলের সঙ্গে সংলাপ হবে। এতে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। সংলাপে উপদেষ্টামণ্ডলী গঠিত ছয়টি কমিশনের কার্যক্রমের অগ্রগতি এবং দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কথা হবে। এসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ও পরামর্শ নেওয়া হবে।
গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর দুই দফায় উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের সভা হয়েছে। তারই চলমান প্রক্রিয়ায় শনিবার থেকে আবারও নতুন দফায় আলোচনা শুরু হবে। দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এই আলোচনা হবে। এ আলোচনার মুখ্য বিষয় হবে ছয় সংস্কার কমিশনের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে দলগুলোকে অবহিত করা। এ ছাড়া দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও কথা হবে এবং তাদের পরামর্শ নেওয়া হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত জরুরি সংস্কার কাজ শেষ করে নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
আজ বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) সকালে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর উদ্যোগে কোটা সংস্কার আন্দোলনের শহীদ তাহমিদ ও মাসুদ রানার পরিবারের খোঁজ-খবর নিতে এসে এ মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা। এ সময় নিহত দুই পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে রিজভী বলেন, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে দ্রুত সংস্কার কাজ শেষ করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে গণতন্ত্র। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে বলে জানান তিনি।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে স্বজনহারা পরিবারের কাছে নেতারা অঙ্গীকার করেন, যারা গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনে প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের আত্মত্যাগ সবসময় মনে রাখবে বিএনপি।
অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করতে সিস্টেমের ভেতর বিগত সরকারের লোকেরা ঘাপটি মেরে বসে আছেন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক।
আজ বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর প্রেসক্লাবের সামনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিয়োগপ্রাপ্ত বিতর্কিত আমলাদের অপসারণের দাবিতে অয়োজিত এক অবস্থান কর্মসূচিতে তিনি এ মন্তব্য করেন। এ সময় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে শেখ হাসিনার দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত বিতর্কিত আমলাদের অপসারণের দাবি তোলা হয়।
ফারুক বলেন, এক-এগারো সরকারের ওপর ভর করে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে গুম-খুন চালিয়েছে। অবৈধ এমপিদের এখনও কেন আইনের আওতায় আনা হয়নি। কালক্ষেপণ করলেই সরকারের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা ফ্যাসিবাদের দোসররা আবারও ষড়যন্ত্র করবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অভিযোগ করেন, এরই মধ্যে গার্মেন্টস শিল্প ধ্বংসের পাঁয়তারা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনকে (বিজিএমইএ) ব্যবহার করে শেখ হাসিনা কোটি কোটি টাকা পাচার করেছে। এর জন্য তাকে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান তিনি।
রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চেয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করা হয়েছে। আজ বুধবার জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ এ অভিযোগ করেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯ জুলাই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় কারফিউ জারি করার। এমনকি আন্দোলনকারীদের দেখামাত্র গুলি করার সিদ্ধান্ত হয় ১৪ দলের বৈঠকে। তাদের বৈঠকের সিদ্ধান্তের পরই গুলি চালিয়ে গণহত্যা চালানো হয়। এ সিদ্ধান্ত নিয়ে দল হিসেবে আওয়ামী লীগ, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদসহ ১৪ দল মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে।
অভিযোগে গণহত্যার সরাসরি হুকুমদাতা হিসেবে আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দলের শরিক রাজনৈতিক দল- সাম্যবাদী দল, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, জাসদ (ইনু), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (মেনন), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল, তরিকত ফেডারেশন, গণতন্ত্রী পার্টি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), গণ-আজাদী লীগ, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, বাসদ এবং জাতীয় পার্টি-জেপির বিরুদ্ধে দল হিসেবে গণহত্যার অভিযোগ গঠন করে তদন্তপূর্বক আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের নিমিত্তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার আবেদন জানানো হয়েছে।
অভিযোগ দায়ের করার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ। তিনি বলেন, আশা করছি, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আমরা ন্যায় বিচার পাব।
এ সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম, এনডিএম নেতা সাহেদুল আজম, প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম, বি এম সুলতান মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।