গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে বিএনপি শুধু একা নয়, গণতান্ত্রিক বিশ্ব সঙ্গে আছে বলে মন্তব্য করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র লাইফ সাপোর্টে আছে। এই আন্দোলনে সবাইকে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিতে হবে।
আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে শুক্রবার বিকেলে রাজধানীতে এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আসুন আমরা সবাই একযোগে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ি- এই হোক আজকে গণতন্ত্র দিবসে আমাদের শপথ।’
নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে সরকার পদত্যাগের ‘এক দফা’ এবং মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানসহ নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে এই সমাবেশ হয়। কাকরাইল থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত নয়াপল্টনের দীর্ঘ সড়কে হাজার হাজার নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে সমাবেশস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।
মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, হাবিবুর রহমান হাবিব, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, আবদুস সালাম আজাদ, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, যুবদলের শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজীব আহসান, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, ওলামা দলের শাহ নেছারুল হক, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, শ্রমিক দলের মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) জাকির হোসেন রোকন, ছাত্রদলের রাকিবুল ইসলাম রাকিব প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গণতান্ত্রিক দিবসে আমাদের শপথ হচ্ছে- যেকোনো মূল্যে এই সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচনে যাব না। কোনো নির্বাচন হবে না নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া। এখনো বলছি- পদত্যাগ করুন, সংসদ ভেঙে দিন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন। কেন দিতে চান না। যদি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়, যদি জনগণ ভোট দিতে যেতে পারে তাহলে তারা ১০টি আসনও পাবে না। সে জন্য তারা প্রশাসনকে নিজেদের মতো করে সাজাচ্ছে।’
মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’-এর প্রধান আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিনকে কারাদণ্ড দেয়া প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও বিচারবহির্ভূত হত্যার বিরুদ্ধে যিনি কথা বলেছেন, নির্বিচারে মানুষ হত্যা তথা হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হামলা-আক্রমণের বিরুদ্ধে তারা কথা বলেছিলেন। আজকে এই সরকার এত ভীতসন্ত্রস্ত যে তাদের দুই বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছে। সারা বিশ্ব এই সরকারকে নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তাদের মুক্ত করতে বলেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) রেজল্যুশন করেছে যে, অবিলম্বে এই মামলা বাতিল করে তাদের মুক্ত করা হোক এবং বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করা হোক।
‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বছরের শ্রেষ্ঠ কৌতুক’ মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপের সুরে বলেছেন যে, আমি এত ভালো ভালো নির্বাচন করি আর দেশে-বিদেশে প্রশ্ন করে নির্বাচন ভালো হয় না। এটাই হচ্ছে এই বছরের শ্রেষ্ঠ কৌতুক। শেখ হাসিনা ভালো নির্বাচন করে, আওয়ামী লীগ ভালো নির্বাচন করে- এ কথা ঘোড়াও বিশ্বাস করে না। ওরা শুনলে হাসে।
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, সাতক্ষীরার সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ নেতাদের মিথ্যা মামলায় কারাদণ্ড প্রদানের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন তিনি।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় বিভিন্ন অজুহাতে সারা দেশে যত গণতান্ত্রিক কর্মী, বিএনপির নেতা-কর্মী আছে তাদের বিরুদ্ধে গায়েবি ও মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করে রাখছে। কারণ একটাই সামনে নির্বাচন। এই নির্বাচনে সব বিরোধী দলকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে আর নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের আন্দোলনে যেন বিরোধী দলের নেতারা অংশ নিতে না পারে। এই যে ঢাকা মহানগর বিএনপি ও যুবদলের নেতাদের আটক করে রেখেছেন তাতে কি আজকে মহানগরের এই সমাবেশে লোক কম হয়েছে? হয়নি। মামলা দিয়ে আটক করে এই সরকার তার পতন ঠেকাতে পারবে না।
সমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, কাদের গণি চৌধুরী, প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন বকুল, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, পেশাজীবী নেতা প্রকৌশলী আলমগীর হাছিন আহমেদ, প্রকৌশলী মো. মোস্তাফা-ই জামান সেলিম, কে এম আসাদুজ্জামান চুন্নুসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের হাজারও নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
১৮ সেপ্টেম্বর থেকে লাগাতার কর্মসূচি
এদিকে গতকাল সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার পতনের ‘এক দফা’ দাবি আদায়ে যুগপৎ আন্দোলনের পরবর্তী লাগাতার কর্মসূচি আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর ঘোষণা করা হবে।
ঢাকা, জামালপুরসহ বিভিন্ন স্থানে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের নামে ঢালাওভাবে মামলা দেয়া এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিপীড়নের চিত্রও তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব। সরকারের পক্ষে ভোট চাওয়া জামালপুরের ডিসিকে প্রত্যাহারের ঘটনা ‘আইওয়াশ’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভারতকে দরকার আছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘কোথায় স্যাংশন, কোথায় ভিসানীতি, তলে তলে আপস হয়ে গেছে।’
রাজধানীর সাভারের আমিন বাজারে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মঙ্গলবার কাদের আরও বলেন, ‘দিল্লি আছে, আমেরিকারও দিল্লিকে দরকার। আমরা আছি, দিল্লিও আছে। শত্রুতা কারও সঙ্গে নেই। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব। শেখ হাসিনা এমন ভারসাম্য সবার সঙ্গে করে ফেলেছেন। আর কোনো চিন্তা নেই। ইলেকশন হবে, যথাসময়ে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অক্টোবরে সোজা হয়ে দাঁড়ান, কৌশল ভালো করে শিখে নেন। করতে হবে যুদ্ধ। বিএনপির লোকেরা এখন পথ হারিয়ে দিশেহারা। দুই সেলফিতেই বাজিমাত। এক সেলফি দিল্লিতে আরেক সেলফি নিউইয়র্কে। প্রথমে দিল্লিতে গিয়ে, পরে নিউইয়র্কে বাজিমাত।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘খেলা হবে ভোট চুরির বিরুদ্ধে, খেলা হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে, খেলা হবে লুটপাটের বিরুদ্ধে, খেলা হবে অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে, খেলা হবে চোরদের বিরুদ্ধে। সব চোর একত্র হয়েছে ক্ষমতার জন্য। ক্ষমতায় বসে দেশ ধ্বংস করবে। ওই দিন শেষ। ডিসেম্বরে বলেছিল না খালেদা জিয়া দেশ চালাবে, মনে আছে? নয় মাস চলে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য শেখ হাসিনার কাছে আবেদন করেছে। ৪টা ৫টা বছর আদালতে হাজিরা পর্যন্ত দেয়নি। এত দিন খালেদা জিয়ার মামলার ফয়সালা হয়ে যেত। কিন্তু এ মামলা ফয়সালা হয়নি বিএনপির জন্য। বিএনপির মামলা রয়ে গেছে। আদালতে ঝুলে আছে। খালেদা জিয়াকে দেখিয়ে যদি কিছু করা যায়। অক্টোবরে নাকি পতন, কোন অক্টোবর, এই অক্টোবর নাকি আগামী অক্টোবর। নাকি তার পরের বছরের অক্টোবর। অক্টোবরে নভেম্বরে ডিসেম্বরে কিছুই হবে না।’
কাদের বলেন, ‘অক্টোবর থেকে শুরু, মার্চ থেকে শুরু, খেলা হবে আগামী মাসে সেমিফাইনাল। জানুয়ারিতে ফাইনাল। বিএনপি এখন ফাউল করছে। ফাউল করলে হলুদ কার্ড। ফাউল হলে লাল কার্ড। খেলা নিয়ে ফাউল করা চলবে না। খালেদা জিয়া ছাড়া বিএনপি ইলেকশন করবে না। এত দিন কই ছিল? খালেদা জিয়া বছরের পর বছর জেলে। তার জন্য একটা আন্দোলন হোক, করতে পারল না ফখরুল। আর এখন খালেদা জিয়া ছাড়া নির্বাচন করবে না।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা নাকি নিষ্ঠুরতা দেখাচ্ছে, কেমন নিষ্ঠুরতা, ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারকে তারা হত্যা করেছে। শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা সেদিন বিদেশে ছিলেন বলে বেঁচে গিয়েছিলেন। সেদিন নিষ্ঠুরতা কোথায় ছিল। এই হত্যাকাণ্ডের নায়ক জেনারেল জিয়াউর রহমান। নিষ্ঠুর কারা? জাতির পিতাকে হত্যা করেছে, জেলখানায় চার নেতাকে হত্যা করেছে। শেখ হাসিনাকে হত্যা করার জন্য গ্রেনেড হামলা চালিয়েছে। কে করেছে এগুলো, হাওয়া ভবন কে করেছে, তারেক জিয়া শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। বেগম জিয়াকে একবারও কি কেউ হত্যা করতে গিয়েছিল। তারেক রহমানের জীবনের ওপর একবারও কি হামলা হয়েছে? আওয়ামী লীগ করবে না, আওয়ামী লীগ হত্যা-সন্ত্রাসের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্র করে না। আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্রের শিকার। এখনো আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘অক্টোবর মাস তো চলে যাচ্ছে। আর কত হুমকি, ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম বুড়িগঙ্গায় ভেসে গেছে। গত ডিসেম্বরের আন্দোলন গরুর হাটের খাদে পড়েছে। আর আন্দোলন আছে? কোথায় যাবেন? এখন এই জায়গায়, ওই জেলায়, ওই নগরীতে, আজকে দিশেহারা পথিকেরা আন্দোলনের নামে ঘুরে বেড়ায়। এতে কোনো কাজ হবে না। নির্বাচন ছাড়া বাংলাদেশের জনগণ আর কিছুই চায় না।’ আমেরিকার ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট এক সমীক্ষায় মন্তব্য করেছে, এই মুহূর্তে ভোট হলে বাংলাদেশের শতকরা ৭০ জন লোক শেখ হাসিনাকে ভোট দেবে।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগাঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম প্রমুখ।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘যে খালেদা জিয়া ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের দিনে নিজের মিথ্যা জন্মদিন পালন করে কেক কেটেছেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় মদদ দিয়ে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছেন, ক্ষমতায় থেকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ১২টি মামলা দায়ের করেছেন, সেই চরম প্রতিহিংসা ও জিঘাংসাপরায়ণ খালেদা জিয়ার প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে মহানুভবতা দেখিয়ে চলেছেন, তা নজিরবিহীন।’
মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে ক্যাবল অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। কোয়াব প্রেসিডেন্ট এ বি এম সাইফুল ইসলাম, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নিজামুদ্দীন মাসুদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কামরুল আলম শামীম ও লুৎফর রহমান, ভাইস প্রেসিডেন্ট হাবিব আলী ও সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ মামুন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আইনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে সরকার খালেদা জিয়াকে বিদেশ যেতে বাধা দিচ্ছে বলে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার কোনোভাবেই ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে না। আর তারা যদি তা মনে করে তাহলে তো আদালতে যেতে পারে। আর খালেদা জিয়ার প্রতি যথাযথ সম্মান রেখেই বলতে চাই, তার কী পরিমাণ দম্ভ-অহমিকা যে—তার পুত্রবিয়োগে সমবেদনা জানাতে তার বাড়ির দুয়ারে দেশের প্রধানমন্ত্রী গিয়ে ২০ মিনিটের বেশি দাঁড়িয়ে ছিলেন, তিনি দরজা খোলেননি। তার আমলে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ১২টা মামলা দায়ের হয়েছিল, আমাদের সরকার তো খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে একটি মামলাও দায়ের করেনি। তার বিরুদ্ধে সব মামলা সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের। সেসব মামলার বিচার হচ্ছে, তাতেই তিনি সাজা খাটছেন।’
হাছান মাহমুদ বলেন, “শুধু তাই নয়, খালেদা জিয়ার নির্দেশে এফবিআইয়ের এজেন্ট লাগিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে আমেরিকায় অপহরণ করার পরিকল্পনা হয়েছিল। পরে চক্রান্ত ফাঁস হয়ে যায়, সেই এজেন্টের এখন বিচার হচ্ছে। খালেদা জিয়ার আমলে নেদারল্যান্ডের একটি কোম্পানির কাছ থেকে কিছু কম্পিউটার কেনার চুক্তি হয়েছিল, সেই কোম্পানির নাম কেন বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানার কন্যা ‘টিউলিপ’ নামের সঙ্গে মিল, সেজন্য সেই চুক্তি তারা বাতিল করেছিল। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে যারা হত্যা করেছে, জিয়াউর রহমানের পথ ধরে খালেদা জিয়াও তাদের আবার পুনর্বাসিত করেছেন।’
‘খালেদা জিয়া এতো প্রতিহিংসা দেখিয়েছেন, এতো জিঘাংসা দেখিয়েছেন। কিন্তু তার প্রতি প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা যে নজিরবিহীন মহানুভবতা দেখিয়ে যাচ্ছেন, সেটি কি তারা কখনো করতো?’
বিএনপি কেন নির্বাচনে আসতে চায় না, সে প্রশ্নে সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়া বা তারেক রহমান নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না বলেই বিএনপি নির্বাচন চায় না এবং এই দুই শীর্ষ নেতা আর কাউকে নেতা বানানোর জন্য বিএনপিকে নির্বাচনে যেতে দিতেও চায় না’।
সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবাহিত ছাত্রীদের হল ত্যাগের নির্দেশ ও ছাত্র-ছাত্রীদের বাসে পৃথকভাবে বসার নির্দেশ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি কাগজে খবরটা দেখেছি, এ ধরনের একটি সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয় নিয়েছে জেনে খুব আশ্চর্য হয়েছি। ছাত্রীরা বিয়ে করলে হলে থাকতে পারবে না, এমন সিদ্ধান্ত আমার দৃষ্টিতে একেবারেই অযৌক্তিক। পাশাপাশি এ যুগে বিশ্ববিদ্যালয় বাসে ছাত্রীরা এক জায়গায় বসবে, ছাত্ররা আরেক জায়গা বসবে—সেটিও তো অবাস্তব একটি সিদ্ধান্ত। এ ধরনের সিদ্ধান্ত কর্তৃপক্ষ কীভাবে নেয় এটা আমার বোধগম্য নয়। আমি এটা শিক্ষামন্ত্রীর নজরে আনবো। কারণ এর উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ শিক্ষামন্ত্রী।’
‘বিএনপি কখনো জনকল্যাণ, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও ভাগ্যোন্নয়নের রাজনীতি করেনি’ বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ‘সেজন্য বিএনপির রাজনীতি বিদেশি প্রভুদের কৃপা নির্ভর! জনগণ, গণতন্ত্র ও কল্যাণকর রাজনীতির প্রতি বিএনপির ন্যূনতম বিশ্বাস থাকলে এদেশের গণতন্ত্রে কোনো সংকট সৃষ্টি হতো না।’
সোমবার এক বিবৃতিতে তিনি এ সব কথা বলেন। এতে বিএনপি নেতাদের দুরভিসন্ধি ও উসকানিমূলক বক্তব্যের নিন্দা এবং প্রতিবাদও জানান তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল ও নির্বাচনী পরিবেশ বিনষ্টের গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তারা আগের ধারাবাহিকতায় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান করে নির্বাচন ও নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়। একই সঙ্গে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের চলমান অভিযাত্রাকে ব্যাহত করতে চায়। বিগত দিনে দেশের সাংবিধানিক বিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভবিষ্যতেও সেই ধারাবাহিকতায় পবিত্র সংবিধানের বিধান অনুযায়ীই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচন বানচালের লক্ষ্যে সারাদেশে আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে শত শত নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছিল। নির্বাচন প্রতিরোধের নামে বিএনপি তিন হাজারের বেশি মানুষ পুড়িয়েছিল, পাঁচ শতাধিক ভোটকেন্দ্র ও স্কুলসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে দিয়েছিল। তারা এজলাসে বসা বিচারককে বোমা মেরে হত্যা ও আইনজীবীকে হত্যা করেছিল। রেললাইন উপড়ে ফেলেছিল, হাজার হাজার গাছ কেটে ও রাস্তা কেটে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির মাধ্যমে মধ্যযুগীয় কায়দায় নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘কোনো রাজনৈতিক দল নিজ দেশের মানুষের ওপর এমন প্রতিহিংসামূলক আচরণ করতে পারে! বিএনপির কর্মকাণ্ডে তা বিশ্ববাসী অবাক বিস্ময়ে প্রত্যক্ষ করেছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তাদের নেতা দুর্নীতির বরপুত্র সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি তারেক রহমান লন্ডনে বসে রমরমা মনোনয়ন বাণিজ্যে মেতে উঠেছিল; ৩০০ আসনে প্রায় ৭৫০টি মনোনয়ন দিয়েছিল। আজ তারা যখন বলে নির্বাচন হতে দেবে না তখন দেশের মানুষ স্পষ্টতই বুঝতে পারে যে, দেশের জনগণ, গণতন্ত্র, সংবিধান ও আইন কোনো কিছুর প্রতি বিএনপির দায়বদ্ধতা নেই।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি একটি অবৈধ রাজনৈতিক দল। অসাংবিধানিক ও অবৈধভাবে বন্দুকের নলের মুখে ক্ষমতাদখলকারী স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া বিএনপির রাজনৈতিক ইতিহাস গণতন্ত্রবিরোধী, অসাংবিধানিক ও বেআইনি কর্মকাণ্ডে ভরপুর। ক্ষমতাকে কেন্দ্রবিন্দু করেই পরিচালিত হয়ে আসছে বিএনপির রাজনীতি। হ্যাঁ/না ভোটের প্রহসন, জাতিকে কারফিউ মার্কা গণতন্ত্র উপহার, ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচন, সাদেক-রউফ-আজিজ মার্কা নির্বাচন কমিশন প্রস্তুত, এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার সৃষ্টি এবং একুশে আগস্টের মতো গণহত্যার মধ্য দিয়ে বিরোধীদলকে নিশ্চিহ্ন করে ক্ষমতাকে নিষ্কণ্টক করার অপচেষ্টাসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই যা বিএনপি করেনি।’
কাদের বলেন, “আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পবিত্র সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়েই অনুষ্ঠিত হবে। কোনো অপশক্তিই এই নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। অসাংবিধানিক ও বেআইনিভাবে নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় দেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধ। সফল রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়ন-অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির অভিযাত্রাকে সুমন্নত রেখে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে আমরা বদ্ধপরিকর।”
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সরকার হত্যা করতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এ অনির্বাচিত ও অবৈধ সরকার খালেদা জিয়াকে হত্যা করতে চায়। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে এ মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবি এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কৃষক সমাবেশের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী কৃষক দল।
খালেদা জিয়াকে কোনো সুযোগ দেয়া হচ্ছে না উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘প্রতারণা করে, জনগণকে ভুল বুঝিয়ে, আইনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে তাকে (খালেদা জিয়া) বিনা চিকিৎসায় সরকার হত্যা করতে চায়। তারা জানে খালেদা জিয়া যদি সুস্থ হয়ে যান, আবার জনগণের মধ্যে ফিরে আসেন, তার ডাকে কোটি মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে। তখন তারা ধ্বংস হয়ে যাবে।’
খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধের সময় ৯ মাস কারাগারে বন্দি ছিলেন উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি সবসময় বলি বাংলাদেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা হচ্ছেন খালেদা জিয়া। এ কথা বললে তাদের (আওয়ামী লীগ নেতাদের) গায়ের মধ্যে আগুন জ্বলে। কারণ তারা তো মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়িত ছিল না। তারা তো সেদিন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ভাতা খেয়েছিল। বাস্তব কথা বলছি। অনেকের কষ্ট হতে পারে, কিন্তু কথাটা সত্য।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ডেঙ্গুতে হাজার মানুষ মারা গেছে, তার মধ্যে শিশুই বেশি। সেই ডেঙ্গু এই সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। সম্পূর্ণ দেশকে আপনারা জাহান্নামের মধ্যে ফেলেছেন। কৃষকদের অনেক সমস্যা, তাদের দিকে তাকানোর কেউ নেই। আজকের সরকার কৃষকের কোমরে দড়ি লাগায় ২৫ হাজার টাকা ঋণ শোধ করতে না পারার কারণে। আর ২৫ হাজার কোটি টাকা যারা চুরি করে, লুট করে, তাদের টাকা ফেরত দেয়ার সময় বেধে দেয় ব্যাংক।’
আওয়ামী লীগ ২০১৪ ও ২০১৮-এর মতো করে নির্বাচন করেত চায় মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘২০১৪ সালে ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করে তারা মহা আনন্দে আছেন। আর ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা দখল করেছে। এবার আবার একতরফা নির্বাচন করে বিএনপিকে দূরে রেখে তারা নির্বাচন করবে।’
সরকারের পদত্যাগের দাবিতে সব রাজনৈতিক দল এক হয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সবাই একজোটে বলছে, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের কথা। এসব কথা খুব গায়ে লাগছে সরকারের। এখনো সময় আছে। সামনে একটাই পথ। মানে মানে পদত্যাগ করে একটা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে সংসদ বিলুপ্ত করুন।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘এরপর নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। সংকট দূর করতে চাইলে, দেশের কল্যাণ চাইলে এই পথে আসুন।’ বিএনপি মহাসচিবের অভিযোগ, ‘আওয়ামী লীগ এমন ব্যবস্থা তৈরি করেছে যেখানে শুধু আওয়ামী লীগের মানুষই সুবিধা পাবে আর কেউ নয়। কৃষক, শ্রমিক ন্যায্যমূল্য পান না। মেধাবী শিক্ষার্থীরা চাকরি পান না, যারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত তারাই চাকরি পান।’
কৃষকদলের সভাপতি হাসান জারিফ তুহিনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, বরকত উল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ অন্যরা।
“আজকে মানবাধিকার নিয়ে যারা কথা বলে, ১৯৭৭, ৭৮ ও ৭৯ সালে জিয়াউর রহমানের হত্যার শিকার নিরাপরাধ সেনা সদস্যদের স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের কান্না’র আর্তনাদ, ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে অগ্নিসন্ত্রাসে নিহতদের স্বজনদের কান্না তাদের কানে কেন পৌঁছে না”— এই প্রশ্ন রেখেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘মায়ের কান্না’ সংগঠন আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ প্রশ্ন রাখেন। ‘মায়ের কান্না’ সংগঠনের আহ্বায়ক কামরুজ্জামান লেলিনের সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, সাবেক প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এবং স্বজনহারা ব্যক্তিরা এ সময় বক্তব্য রাখেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, “গত কয়েক বছর ধরে দেশ জুড়ে ‘মায়ের কান্না’ কেঁদে চলছে। আমি প্রশ্ন রাখি যারা মানবাধিকারের কথা বলেন, মানবাধিকার নিয়ে ব্যবসা করেন, তাদের কর্ণকুহরে এই কান্না কেন পৌঁছে না। আপনাদের কাছে দেখা করার দরখাস্ত দেয়া হয়েছিল, আপনারা এখনও পর্যন্ত দেখা করেন নাই। অর্থাৎ মানবাধিকার এখন কিছু কিছু রাষ্ট্রের একটি অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে সমস্ত দেশ উন্নয়ন-অগ্রগতি করে কিন্তু তাদের ঠিক মতো ব্যবসা দেয় না, তাদের দমিয়ে রাখার জন্য মানবাধিকার এখন একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।’
‘মানবাধিকার নিয়ে ব্যবসা করা, অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা দেশে-বিদেশে বন্ধ হওয়া প্রয়োজন’ বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশ আজকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই অগ্রযাত্রা অনেকের পছন্দ নয়। সে জন্য নানা ছলছুতায় প্রথমে আনে মানবাধিকার তারপর বলে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন। আমাদের দেশে অবশ্যই অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং জনগণের অংশগ্রহণে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন হবে। সরকার সর্বোতভাবে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করবে।’
বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর উদ্দেশ্যে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দয়া করে আমাদের গণতন্ত্র শিক্ষা দেবেন না। আমাদের পার্লামেন্ট ভবনে হামলা চালিয়ে, ঘেরাও করে কেউ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় নাই। আমাদের দেশে পরাজিত প্রার্থীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পরাজয় মেনে নেয়। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনো পরাজয় মেনে নেন নাই। যারা গণতন্ত্র শিক্ষা দিতে চান তাদের অনেকের দেশেই গণতন্ত্র নাই। সুতরাং আমাদের গণতন্ত্র শিক্ষা দেবেন না।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জীবনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে এ দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করে এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। সুতরাং যারা মানবাধিকার আর গণতন্ত্রের কথা বলে দেশে দেশে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে তারা দয়া করে আমাদের গণতন্ত্র শিক্ষা দেবেন না।
‘খালেদা জিয়াকে রাজনীতির গিনিপিগ বানিয়েছে বিএনপি’
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এ দিন বলেন, ‘বিএনপি কয়েকদিন ধরে বলছে যে, খালেদা জিয়ার অধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। খালেদা জিয়া যতবার অসুস্থ হয়েছেন, বিএনপি বলেছে উনাকে বিদেশ না নিলে উনি মারা যাবেন। আর ততোবারই উনি হাসপাতাল থেকে ভালো হয়ে বাড়িতে ফেরত গেছেন।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আসলে খালেদা জিয়াকে যেভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, তাতে করে খালেদা জিয়াকে বিএনপি গিনিপিগ বানিয়েছে, রাজনীতির দাবার গুটি বানিয়েছে। আসলে খালেদা জিয়া সুস্থ হোক সেটা তারা চায় না। তারা চায় তিনি আরও অসুস্থ থাকুক, যাতে তারা রাজনীতিটা করতে পারে। তিনি এ দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, তার সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য সরকার সর্বোতভাবে কাজ করছে। বিদেশ নেয়াটা আদালতের এখতিয়ার। আদালতের আদেশ ছাড়া তিনি তো বিদেশ যেতে পারেন না। সুতরাং এ নিয়ে দয়া করে রাজনীতি করবেন না।’
সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে আবার সন্ত্রাস করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। বিএনপি আবার অগ্নিসন্ত্রাস, সন্ত্রাসের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এভাবে উঠে, বসে, দৌড়ে, কিম্বা হামাগুড়ি দিয়ে, কদিন হাঁটা কর্মসূচি, কদিন বসা কর্মসূচি, কদিন দাঁড়ানো কর্মসূচি দিয়ে মানুষকে যে সম্পৃক্ত করা যায় নাই সেটি তারা বুঝতে পেরেছে। তাই এখন দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার জন্য এবং বিশ্ববেনিয়ারা যাতে ফায়দা লুটতে পারে সে জন্য তারা সন্ত্রাসের পরিকল্পনা করছে। তবে আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলে দিতে চাই, আওয়ামী লীগ রাজপথে আছে, রাজপথে থাকবে, কাউকে আর ২০১৩-১৪-১৫ সালের মতো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে দেয়া হবে না। জনগণকে সাথে নিয়ে তাদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, ‘এই দিন দিন নয় আরও দিন আছে। এটা যদি প্রধানমন্ত্রী মনে রাখেন, তাহলে তার জন্য ভালো, আমাদের জন্য ভালো, দেশের জন্য ভালো, তার দলের জন্যও ভালো।’
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সোমবার সকালে জিয়াউর রহমান সমাজকল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে এক মানববন্ধনে এ কথা বলেন তিনি।
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘খালেদা জিয়া জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এটা প্রধানমন্ত্রী জানেন। খালেদা জিয়া জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী তিন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, যিনি তার জীবনের কোনো নির্বাচনে হারেননি। পরিবার থেকে তার সুচিকিৎসার জন্য আবেদন করা হয়েছে। এটাই প্রথম আবেদন না, এর আগেও করা হয়েছিল। আমরা মনে করেছিলাম সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর কোনো ব্যবস্থা করবে সরকার। কিন্তু আইনমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কথা বলার আগে যুক্তরাষ্ট্রে ভয়েস অব আমেরিকার সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী সরাসরি নাকোচ করেছেন।’
বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তার দপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করতে পারতেন। তিনি যেভাবে না করেছেন তাতে মনে হচ্ছে তিনি কোথায় যেন আতঙ্কিত, তিনি যেন হতাশ। তিনি বুঝতে পেরেছেন আর বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। সেই বিবেচনায় তিনি একটি আপসমুখী পদক্ষেপ নিতে পারতেন। কারণ আগামী দিনের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এটা একজন অন্ধ যেমন জানে তেমনি বিবেকহীন মানুষও জানে। আগামী দিনে যে সরকার ক্ষমতায় আসবে সেই সরকারের প্রধানমন্ত্রী হবে খালেদা জিয়া।’
শামসুজ্জামান দুদু আরও বলেন, ‘এই সময়ের ব্যর্থ সরকার হচ্ছে আওয়ামী লীগ। তারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। বেকারদের চাকরি দিতে পারছে না। কোনো জায়গায় আশার আলো নাই। চতুর্দিকেই অন্ধকার।’
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘এই সরকারকে বিদায় করা ছাড়া বাংলাদেশকে রক্ষা করা যাবে না। গণতন্ত্র মুক্ত হবে না। বাংলাদেশে ভোটের অধিকার ফিরে আসবে না। এই সরকার দানব সরকার। তারা পুলিশ প্রশাসনের কাঁধে ভর করে ক্ষমতায় টিকে আছে।’
শামুজ্জামান দুদু বলেন, ‘এটা অক্টোবর মাস। আমি আগেও বলেছি এখনও বলছি অক্টোবরের মধ্যেই এই সরকারের বিদায় হবে। দেশে গণতন্ত্র, ভোটার অধিকার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।’
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মিয়া মোহাম্মদ আনোয়ার, দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি কে এম রফিকুল ইসলাম রিপন প্রমুখ।
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দুই মেরুতে অবস্থান ক্ষমতাসীন দল ও রাজপথের বিরোধীদের। নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি থাকলেও রাজপথের বিরোধীদের দাবির প্রতি সায় নেই সংসদের বিরোধী দলের। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দাবি, সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। অন্যদিকে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। বৃহৎ দুই রাজনৈতিক দলের এই পাল্টাপাল্টি অবস্থানে না থেকেও নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে অনেক দলেই।
সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনে অংশ নেয়া দলগুলোকে উৎসাহিত করতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা হবে বলে জানান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান। দৈনিক বাংলাকে তিনি বলেন, অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে উৎসাহিত করার জন্য আমরা একটা লেভেল প্লেয়িং গ্রাউন্ড তৈরি করছি। অর্থাৎ তারা যদি নির্বাচনে আসে, তারা যদি ভালো প্রার্থী দেয়, তারা যদি নির্বাচনী ইশতেহার দিয়ে জনগণকে আকৃষ্ট করে, সেটাতে উৎসাহ দিচ্ছি। অন্য কোনোভাবে উৎসাহিত করার উপায় গণতন্ত্রে নেই বলে আমি মনে করি।
নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়া দলগুলোর নেতাদের দাবি, সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনেই অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া সম্ভব। তারা বলছেন, নির্বাচন কমিশন যদি সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে এবং সরকার যদি ওই ক্ষমতা প্রয়োগে সহযোগিতা করে তবেই একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন সম্ভব। এ ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন প্রস্তাব রয়েছে ওই রাজনৈতিক দলগুলোর। আবার অনেকেই নির্বাচন সামনে রেখে জোট গঠন করছেন বিভিন্ন দাবি সামনে এনে।
২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ১২টি। যদিও ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য হওয়ার নজিরও সৃষ্টি হয় ওই নির্বাচনে। ওই নির্বাচনে ৪০ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট পড়ে।
এরপর ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই অংশ নেয়। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রণ্ট গঠিত হয়। ওই জোট নির্বাচনের পরে অভিযোগ করে, নির্বাচনে ভোটাররা ভোট দিতে পারেনি। এমনকি ভোটের আগের রাতেই ভোট হয়ে যাওয়ার অভিযোগ করে তারা।
২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্পধারা বাংলাদেশের নেতৃত্বে গঠিত হয় জাতীয় যুক্তফ্রণ্ট। প্রথমে ওই জোটে ড. কামাল হোসেন থাকলেও বিএনপিকে জোটে অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে ভেঙে যায় জোটটি। বিকল্পধারা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে ওই নির্বাচনে অংশ নিয়ে দুটি আসনে জয়লাভ করে। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিকল্পধারা বাংলাদেশ। এর আগে ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ৬৩টি আসনে প্রার্থী দিয়ে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৮২৭ ভোট পেয়ে একটি আসনেও জয় পায়নি দলটি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান দৈনিক বাংলাকে বলেন, আমরা তো সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে। সরকার সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা মনে করি সবাই মিলে সরকারকে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহযোগিতা করা উচিত। আমরা আশা করি, বর্তমান সরকারের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইনশাল্লাহ আমরা সেই নির্বাচনে অংশ নেব।
চলতি বছর রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পায় তৃণমূল বিএনপি। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ৪ দলীয় জোট সরকারের সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা দলটির চেয়ারম্যান ছিলেন। নিবন্ধন পাওয়ার ৩ দিন পর মারা যান তিনি। গত ২০ সেপ্টেম্বর তৃণমূল বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে দলটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পান বিএনপির সাবেক নেতা শমসের মবিন চৌধুরী। তিনি ২০১৪ সালের পর স্বেচ্ছায় বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে বিকল্পধারা বাংলাদেশে যোগ দিয়েছিলেন। তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পান বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পদ থেকে বহিষ্কৃত তৈমূর আলম খন্দকার।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন শমসের মবিন চৌধুরী দৈনিক বাংলাকে বলেন, আমরা নির্বাচনমুখী একটি দল। আমরা নির্বাচন করতে চাই। অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে বলে আমরা আশা করছি। প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হবে বলেও আমরা আশা করছি। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু করতে হলে আমরা আশা করব প্রশাসন, জনপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে। নির্বাচন কমিশন যেন সাংবিধানিকভাবে যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তা প্রয়োগ করতে পারে। আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
২০০৭ সালে শেখ শওকত হোসেন নীলু বাংলাদেশ ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) গঠন করেন এবং এর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। দলটি ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পায়। ওই বছরের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৩০ আসনে প্রার্থী দিয়ে ১০ হাজার ৩৪৮ ভোট পায় দলটি। ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে যোগ দেয় এনপিপি। কিন্তু ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ায় জোটের সঙ্গে মতবিরোধ দেখা দেয় শেখ শওকত হোসেন নিলুর। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে বিএনপি জোট থেকে বেরিয়ে ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এনডিএফ) গঠন করেন তিনি। ২০১৭ সালের ৬ মে মারা যান নীলু। পরে দলের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন তার ভাই শেখ ছালাউদ্দিন ছালু।
চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি এনপিপির নেতৃত্বে গঠিত হয় গণতন্ত্র বিকাশ মঞ্চ। এই জোটের শরিক দলগুলো হলো ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টি (এনপিপি), জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- ন্যাপ ভাসানী, ডেমোক্রেটিক পার্টি বাংলাদেশ (ডিপিবি), বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্য ফ্রন্ট, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আন্দোলন (বিজিএ), বাংলাদেশ মানবাধিকার আন্দোলন, বাংলাদেশ নাগরিক কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ কনজারভেটিভ পার্টি (বিসিপি), গণমুক্তি পার্টি, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন পার্টি, বাংলাদেশ ন্যায়বিচার পার্টি, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় লীগ, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ আইডিয়াল পার্টি ও বাংলাদেশ জনকল্যাণ পার্টি।
ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) ও গণতন্ত্র বিকাশ মঞ্চের চেয়ারম্যান শেখ ছালাউদ্দিন ছালু দৈনিক বাংলাকে বলেন, আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে চাই। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখা ও গণতন্ত্রকে সুসংহত করার কাজে আমরা বিশ্বাস করি। আমরা চাই হানাহানি বাদ দিয়ে সংলাপের মাধ্যমে হোক বা সমঝোতার মাধ্যমে হোক, একটা সুষ্ঠু ধারা দেশে ফিরিয়ে আনতে। দেশে উন্নয়নের ধারা অব্যহত রাখতে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের চেতনা বিএনপি ধ্বংস করে দিয়েছিল দাবি করে তিনি বলেন, আমরা চাই সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকার। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা সর্বনিম্ন ৫০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল, তাদের প্রতিনিধি নিয়ে একটা নির্বাচনকালীন সরকার করা। যার মাধ্যমে একটা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা যায়।
নির্বাচিত নন এমন ব্যক্তিদের কেন সরকারে নেয়া হবে- জানতে চাইলে ছালাউদ্দিন বলেন, ৭ থেকে ৮টা দলের প্রতিনিধি আসবে। সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকার হবে। সেখানে সমঝোতা হতে পারে বা প্রধানমন্ত্রী ডাকলে কেউ না করবে না।
গত ২০ সেপ্টেম্বর ৪ দফা দাবিতে আত্মপ্রকাশ করে ১০ দলীয় গণমুক্তি জোট। জোটটিতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (মুক্তিজোট)। ২০১৩ সালে নিবন্ধন পায় মুক্তিজোট দলটি। ওই জোটের দাবিগুলো হচ্ছে তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সংসদ ভেঙে দিতে হবে, মন্ত্রিসভা ছোট করতে হবে এবং মন্ত্রিসভায় বিরোধী দলগুলোর প্রতিনিধি যুক্ত করতে হবে। তাদের অপর দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে সরাসরি নির্বাচন কমিশনের অধীনে আনতে হবে, নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ও শক্তিশালী করতে আইন সংশোধন করতে হবে, যাতে সরকার নির্বাচন কমিশনের আদেশ ও নির্দেশ মেনে চলতে বাধ্য থাকে।
১০ দলীয় জোট বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (মুক্তিজোট) সংগঠন প্রধান আবু লায়েস মুন্না দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘গণমুক্তি জোট থেকে ৩০০ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্বাচন কমিশনের কাছে ন্যস্ত করতে হবে আইন করে। রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকেই দিতে হবে। ভোটকেন্দ্রে কোনো এজেন্ট দেয়া যাবে না। অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু একটা নির্বাচন আমরা চাই। এইগুলো যদি হয় তাহলে নির্বাচনে যাব।’
২০১৩ সালে নিবন্ধন পায় বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২২ আসনে প্রার্থী দিয়ে ১টি আসনে জয়লাভ করে। দলটি ১ লাখ ৭ হাজার ৯৯০ ভোট পায়, যা শূন্য দশমিক ৬৩ শতাংশ। অংশ নিয়ে ঢাকা-১৭ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন দলটির প্রেসিডেন্ট এস এম আবুল কালাম আজাদ। দলটি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে বলে সূত্রে জানা যায়।
অনিবন্ধিত ৫টি দল নিয়ে জাতীয় জোট গঠন করেছে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত বাংলাদেশ কংগ্রেস। ২০১৯ সালে নিবন্ধন পাওয়া দলটির চেয়ারম্যান কাজী রেজাউল হোসেন দৈনিক বাংলাকে বলেন, নতুন দল হিসেবে আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাই।
২০০৮ সালে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পায় গণফ্রন্ট। ওই বছর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪টি আসনে প্রার্থী দিয়ে ৪ হাজার ৯ ভোট পায় দলটি। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১টি আসনে প্রার্থী দিয়ে ২ হাজার ৭১৭ ভোট পেয়েছিল, যা শূন্য দশমিক শূন্য ২ শতাংশ।
গণফ্রন্ট চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন দৈনিক বাংলাকে বলেন, আমরা কোনো জোটে যাইনি। যদি দেশে নির্বাচন হয় এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণের পরিবেশ থাকে তাহলে আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব।
এ ছাড়াও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক দল হিসেবে নির্বাচনী প্রস্তুতিতে নিবন্ধিত দলের মধ্যে রয়েছে জাতীয় পার্টি জেপি, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এম এল), গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সভাপতি আইভী আহমেদ দৈনিক বাংলাকে বলেন, সব দল যার যার দলের কথা বলছেন। আমরা জনতার সঙ্গে আছি। আমরা জনতার কথা বলছি। জনতা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। বর্তমান সরকার অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত প্রতিশ্রুতির বিষয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। আমরা নির্বাচনে অংশ নেব। আমরা তো ১৪ দলে আছি।
রাজনীতির মাঠে বিএনপিকে মোকাবিলায় নেতা-কর্মীদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, যারা আওয়ামী লীগের পতন দেখছে তাদের নিজেদের পতন হয় কি না সেটাই এখন দেখার বিষয়।
রোববার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা ও বিভিন্ন অঞ্চলের নেতাদের সঙ্গে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের যৌথসভা শেষে কাদের এ কথা বলেন। খবর বাসসের।
আওয়ামী লীগ শূন্যে ভেসে হাওয়ায় উড়ে কিংবা বন্দুকের নল উঁচিয়ে ক্ষমতায় বসেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গত ১৫ বছরে অনেকবার বিএনপির হাঁকডাক শোনা গেছে। বিএনপি বিভিন্ন সময় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আসন নিয়ে তিরস্কার করে সমালোচনা করেছিল, যা ছিল বিএনপির অহংকার-দম্ভ। যারা আওয়ামী লীগের পতন দেখছে তাদের নিজেদের পতন হয় কি না সেটাই এখন দেখার বিষয়।’
রাজনীতিবিদদের বেফাঁস কথা বলা থেকে দূরে থাকা উচিত উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বক্তৃতা-বিবৃতিতে বেফাঁস কথা না বলার পরামর্শও দেন। এ সময় তিনি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিলবোর্ড কিংবা পোস্টার-ফেস্টুন করে প্রচারণা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘এক-এগারোর মতো অস্বাভাবিক সরকার তৈরি করার সুগভীর ষড়যন্ত্র করছে বিএনপি, তাদের একমাত্র টার্গেট হচ্ছে (প্রধানমন্ত্রী) শেখ হাসিনাকে হটানো।’
বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে প্রচলিত আইনে সরকারের কিছু করার নেই উল্লেখ করে কাদের বলেন, ‘আইন অনুযায়ী আদালতের দ্বারস্থ হয়ে নির্দেশনা মেনে তাকে বিদেশে চিকিৎসা করাতে হবে।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা খালেদা জিয়ার বিষয়ে সংবেদনশীল। খালেদা জিয়ার বিষয়ে সর্বোচ্চ উদারতা দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।’
ভয়েস অব আমেরিকায় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া সাক্ষাৎকারে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী যে কথা বলেছেন তাতে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে।’
আওয়ামী লীগের সরকার অবৈধ হলে কেন খালেদা জিয়ার মুক্তির কিংবা বিদেশে পাঠানোর জন্য অনুমতি চাওয়া হয়? প্রশ্ন রেখে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির উচিত কথার সীমারেখা মানা।’
তিনি বলেন, ‘আ স ম আব্দুর রবও একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন। খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গে আ স ম আব্দুর রব উদাহরণ হতে পারেন না। (সংসদ সদস্য) হাজী মো. সেলিমও কিন্তু আইনের বাইরে যাওয়ার সুযোগ পাননি।’
আগামী ৪ অক্টোবর দুপুরে প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরবেন জানিয়ে কাদের বলেন, ‘তিনি আমাদের জন্য অনেকগুলো আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও সম্মাননা নিয়ে এসেছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলে সংবর্ধনা দেওয়ার আওয়ামী লীগের প্রস্তাব তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন।’
ওবায়দুল কাদের এ সময় দ্বাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ৩ অক্টোবর সাভারের আমিন বাজারে মহাসমাবেশ। এছাড়া ৭ অক্টোবর বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন, ১০ অক্টোবর পদ্মাসেতুর রেলসেতুর উদ্বোধন, মেট্রোরেলের মতিঝিল অংশ উদ্বোধন এবং ২৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের সুধী সমাবেশ।
নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, ৩ অক্টোবর সাভারের আমিন বাজারে মহাসমাবেশ। এছাড়া ৭ অক্টোবর বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন, ১০ অক্টোবর পদ্মা সেতুর রেল সেতুর উদ্বোধন, ২৩ অক্টোবর মেট্রোরেলের মতিঝিল অংশ উদ্বোধন এবং ২৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ সুধী সমাবেশ করবে।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রোববার ঢাকা মহানগরের সব সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত যৌথ সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে যেসব সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়েছে তা মানবিকতার দৃষ্টান্তে পৃথিবীতে বিরল। যারা জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার হত্যার পরিকল্পনাকারী তাদের প্রতি আওয়ামী লীগের উচিত ছিল তেমন ব্যবহার দেওয়া।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে হলে দেশের প্রচলিত আইন মেনে আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যেতে হবে। খালেদা জিয়ার বিষয়ে সব সিদ্ধান্ত আইনসম্মতভাবেই হবে।
আওয়ামী লীগ অবৈধ দল হলে তাহলে কেন খালেদা জিয়ার মুক্তির কিংবা বিদেশে পাঠানোর জন্য অনুমতি চাওয়া হয়? প্রশ্ন রেখে ওবায়দুল কাদের বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিকে কথার সীমারেখা মানা উচিত।
তিনি বলেন, আ স ম আব্দুর রবও একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন। খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গে আ স ম আব্দুর রব উদাহরণ হতে পারে না। হাজী সেলিমও কিন্তু আইনের বাইরে যাওয়ার সুযোগ পাননি।
আওয়ামী লীগ শূন্যে ভেসে হাওয়ায় উড়ে কিংবা বন্দুকের নল উঁচিয়ে ক্ষমতায় বসেনি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আল্টিমেটামেও বিএনপি ব্যর্থ মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, গত ১৫ বছরে অনেকবার বিএনপির হাঁকডাক শোনা হয়েছে। বিএনপির বিভিন্ন সময় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আসন নিয়ে তিরস্কার করে সমালোচনা করেছিল, যা ছিল বিএনপির অহংকার, দম্ভ। যারা আওয়ামী লীগের পতন দেখছে তাদের নিজেদের পতন হয় কি না সেটাই এখন দেখার বিষয়।
রাজনীতিবিদদের বেফাঁস কথা বলা থেকে দূরে থাকা উচিত, বক্তৃতা বিবৃতিতে বেফাঁস কথা না বলার পরামর্শও দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এসময় তিনি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিলবোর্ড কিংবা পোস্টার ফেস্টুন করে প্রচারণা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান তিনি।
দলের আহ্বানে যেকোনো নেতা-কর্মীদের ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে সরকারকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে বিএনপি, তাদের সহিংসতার বিরুদ্ধে আমাদের নেতা-কর্মীদের রুখে দাঁড়াতে হবে।
তিনি বলেন, এক এগারোর মতো অস্বাভাবিক সরকার তৈরি করার সুগভীর ষড়যন্ত্র করছে বিএনপি, তাদের একমাত্র টার্গেট হচ্ছে শেখ হাসিনাকে হটানো।
যে কেউ রাজনৈতিকভাবে আন্দোলন করতে পারে, তবে সেক্ষেত্রে ‘সরকারকে টেনে নামিয়ে ফেলব’ বলা সমীচীন নয় বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
রোববার বিকেলে সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রীর দপ্তরে তার সঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
বিএনপির আন্দোলন নিয়ে প্রশ্নে হাছান মাহমুদ বলেন, “দেশে কেউ সহিংসতা করুক সেটি কখনো বরদাশত করবো না। যে কেউ রাজনৈতিকভাবে আন্দোলন করতে পারে, সরকারের পদত্যাগও চাইতে পারে। কিন্তু সেটি বলে দিনক্ষণ ঠিক করে ‘সরকারকে টেনে নামিয়ে ফেলব’ সেটি বলা সমীচীন নয়, সেটি রাজনীতির ভাষা নয়।”
তিনি বলেন, ‘যে ভাষায় বিএনপি কথা বলছে, সেই ভাষা ইঙ্গিত দেয় তারা দেশে একটি সহিংসতা, নাশকতা করতে চায়। সেটি করতে দেওয়া হবে না কাউকে। আমি আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে বলছি, আওয়ামী লীগ রাজপথের দল, রাজপথে কীভাবে কাকে মোকাবিলা করতে হয় সেটি আমরা জানি।’
জাপানের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে মন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, ‘গত ৫২ বছরে বাংলাদেশের পথচলায় জাপান অর্থনৈতিকভাবে, অবকাঠামোগতভাবে আমাদের যেভাবে সহায়তা করেছে সে নিয়ে জাপানের রাষ্ট্রদূতকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। দেশের উন্নয়নে ভবিষ্যতে যেন আমরা আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে পারি সেজন্য তার সঙ্গে আলোচনা করেছি।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তিনি আগামী নির্বাচন নিয়ে প্রসঙ্গ টেনেছেন, অবশ্যই আমি তাকে জানিয়েছি আগামী নির্বাচন ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ট্রান্সপারেন্ট (অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ) হবে এবং ইলেকশন অনুষ্ঠান করা সেটি নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব।’
‘ক্রমাগতভাবে নির্বাচন বর্জন করা যে কখনো কারও জন্য সমীচীন নয়, সেটি আমি তাকে বলেছি। একইসঙ্গে দেশে যাতে কোনো রাজনৈতিক সহিংসতা না হয় যেটি ২০১৩-১৪-১৫ সালে হয়েছে এবং সময়ে সময়ে বিএনপি করে এবং এখনো করার চেষ্টা করছে, উসকানি দিচ্ছে, এ বিষয়গুলো আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি আগামী নির্বাচন জনগণ এবং অনেক রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু, অবাধ, সুন্দর সর্বমহলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে, সেটি আমি তার সঙ্গে আলোচনায় বলেছি’, যোগ করেন মন্ত্রী।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত মানবতাবিরোধী বলে মন্তব্য করেছেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, ‘এটি পূর্বপরিকল্পিত এবং একটি গভীর মাস্টারপ্ল্যানেরই অংশ।’
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রোববার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রিজভী। এ সময় তিনি বলেন, ‘আজ দেশনেত্রীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত আসলে প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্রে দেয়া বক্তব্যেরই বাস্তবায়ন। ফ্যাসিবাদী শাসনে আইনমন্ত্রী যে শেখ হাসিনার বিশ্ব দোসর হবেন এটাই স্বাভাবিক।’
সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘দেশে এখন চলছে জয় বাংলার আইন। এই আইনে সুশাসন ও ন্যায়বিচার কঙ্কালে পরিণত হয়েছে। অপপ্রচার চালানোর পরেও খালেদা জিয়ার ব্যাপক জনপ্রিয়তা এবং তার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মর্যাদায় চিড় ধরাতে না পেরে শেখ হাসিনা আক্রোশের নানামুখী প্রতিহিংসা চরিতার্থ করছেন। আর এজন্য তিনি খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে আটকে রেখেছেন এবং এখন তার (খালেদা জিয়া) উন্নত চিকিৎসায় বাধা দিয়ে দুনিয়া থেকে সরানোর নীলনকশা বাস্তবায়ন করছেন।’
বিএনপির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে নেতা-কর্মীদের নামে মামলা দেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘গত ২৮ ও ২৯ জুলাই থেকে আজ সোমবার পর্যন্ত বিএনপির ঘোষিত কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সারা দেশে ৩৩৮টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন দুই হাজার ১০০ জন, মোট আসামি ১৩ হাজার ৩৬০ জন। কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে হামলায় আহত হন এক হাজার ৬৫০ জন।’
খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেয়া প্রসঙ্গে ভয়েস অব আমেরিকাকে বলেছেন, ‘সরকার ইচ্ছা করলে প্রশাসনিক আদেশেই খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার ব্যবস্থা করতে পারেন বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।’ তিনি বলেন, ‘সরকার যে আদেশে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করেছে সেখানে দুটি শর্ত জুড়ে দেয়া আছে। তার একটি শর্ত হলো বিদেশে যাওয়া যাবে না। এই শর্তটি তুলে দিলেই খালেদা জিয়া বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করে আবার দেশে আসতে পারবেন।’
শনিবার বিকেলে বার্তা সংস্থা ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগকে এসব কথা বলেন তিনি।
এর আগে একইদিনে দেশের বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বার্তা সংস্থাটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি সাক্ষাৎকার প্রচার করে। যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে প্রধানমন্ত্রী বার্তা সংস্থাটিকে ওই সাক্ষাৎকার দেন। খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠাতে অনেকদিন ধরে আন্দোলন করছে তার দল। সাক্ষাৎকারে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রসঙ্গেও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে হলে তাকে আগে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জেলে যেতে হবে।
এর বাইরে আইনগত কোনো সুযোগ আছে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বার্তা সংস্থাটিকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর এই কথাটি সঠিক নয়। কারণ যে আদেশে সরকার খালেদা জিয়ার সাজা মাপ না করে স্থগিত করেছে। সেখানে দুটি শর্ত জুড়ে দিয়েছে। তার একটি শর্ত হলো বিদেশে যাওয়া যাবে না। এই শর্তটি তুলে দিলেই খালেদা জিয়া বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করে আবার দেশে আসতে পারবেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার মূলত একটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে একটা মামলা তৈরি করেছেন। তৈরি করা এই মামলায় সাজাটাও দিয়েছেন ফরমায়েশি সাজা। পাঁচ বছরের সাজাকে ১০ বছর করা হয়েছে। তারপর থেকে তাকে কারাগারে নেয়া হয়েছে। এখন তো তিনি অসুস্থ, এত অসুস্থ যে পরিবার থেকে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার জন্য বারবার বলা হচ্ছে; কিন্তু সরকার যদি তাকে চিকিৎসা নেয়ার জন্য বিদেশ যাওয়ার আগে তাকে আবার কারাগারে নেয়ার কথা বলে তাহলে এটা পরিষ্কার হয়ে যাবে যে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে এই পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। এটা তাদের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে। সরকার ইচ্ছা করলে প্রশাসনিক আদেশেই খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার ব্যবস্থা করতে পারে।’
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ৭৮তম অধিবেশনে যোগদান ও যুক্তরাজ্য সফর শেষে আগামী ৪ অক্টোবর দেশে ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত রাস্তায় থাকবে আওয়ামী লীগ। দলটির নেতা-কর্মীরা রাস্তার দুইপাশে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনাকে অভিবাদন জানাবেন। তবে আনুষ্ঠানিক কোনো সমাবেশ হবে না।
সরকারের অর্জন এবং জাতিসংঘসহ বৈশ্বিক ফোরামে বাংলাদেশের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ ভূমিকাকে স্বাগত জানাতে এ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এমনটিই জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা। তারা বলছেন, বিষয়টি চূড়ান্ত হবে রোববার। এদিন দলের যৌথসভা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানানোর পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের এক সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, ‘এটা ঠিক গণসংবর্ধনা হবে না। নেতা-কর্মীরা রাস্তার দুইপাশে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানাবেন। সেখানে কোনো সমাবেশ হবে না। এটা কালকের (রোববার) মিটিংয়ে চূড়ান্ত হবে।’
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে যোগ দিতে ১৭ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘের অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি, অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও স্বাস্থ্যখাতে সাফল্যের পাশাপাশি বিশ্বশান্তি, নিরাপত্তা, নিরাপদ অভিবাসন, রোহিঙ্গা সংকট, জলবায়ু ও ন্যায়বিচারের মতো বিষয়গুলো তুলে ধরেন। যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে যুক্তরাজ্যে গেছেন শেখ হাসিনা। আগামী ৪ অক্টোবর দুপুর ১২টার দিকে তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
জানা গেছে, সেদিন আওয়ামী লীগ সভাপতিকে অভিনন্দন জানানোর কর্মসূচিতে বড় জমায়েত করতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনসহ ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলোর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
এ বিষয়ে দলটির দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রোববার বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, পাশ্ববর্তী ঢাকা, নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর এবং গাজীপুর জেলা ও মহানগর এবং সহযোগী সংগঠনসমূহের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকগণের যৌথসভা অনুষ্ঠিত হবে। যাতে সভাপতিত্ব করবেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর একজন সদস্য বলেন, আগামী ৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। এছাড়া অক্টোবরে মাসব্যাপী দলীয় কর্মসূচি নির্ধারণ করতে রোববার আমরা বৈঠকে বসবো।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বিমানবন্দর থেকে গণভবনে যাওয়ার রুট এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তিনি বিমানবন্দর থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে গণভবনে যাবেন, নাকি নিচের সড়ক দিয়ে যাবেন, সেটা দেখে আমাদের নেতা-কর্মীদের অবস্থানের স্থান নির্ধারণ করা হবে। রোববারের যৌথসভায় বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।