আন্দোলনের নামে কেউ নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে চাইলে জনগণ এবং সরকার কঠোর হস্তে দমন করবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি।
তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে কি, আসবে না বা নির্বাচনে তারা অংশ নিবে কি-না এটা তাদের ব্যাপার। আমরা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিতে চাই, এ দেশের জনগণ শান্তি চায়, উন্নয়ন-অগ্রগতি চায়। এ দেশের জনগণ সাংবিধানের ধারাবাহিকতা দেখতে চায়। এই দেশে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা নষ্ট করার জন্য যেকোনো অশুভ তৎপরতা অতীতে যেমন জনগণ নস্যাৎ করে দিয়েছে, ভবিষ্যতেও নস্যাৎ করে দেবে।
মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডি রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের যৌথসভা শেষে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, আমরা চাই নির্বাচনের সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন। আমরা আশা করি, বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিক। যদি কেউ নির্বাচনের অংশ না নেয়, তাহলে নির্বাচনে অংশ না নেয়ার অধিকার তাদের আছে। কিন্তু আন্দোলনের নাম করে যদি কেউ নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে চায় সেটা জনগণ এবং সরকার কঠোর হস্তে দমন করবে।
চলতি মাসে ঢাকায় বিএনপির ৮টি সমাবেশ কর্মসূচি রয়েছে। আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে হানিফ বলেন, আমরা আগেও বলেছি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আমাদের ধারাবাহিক কর্মসূচি থাকবে। আমাদের প্রতিটি কর্মসূচি জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্রীক। এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক বৃদ্ধি করা, জনগণের আস্থা বৃদ্ধি করা আমাদের লক্ষ্য।
দেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি সরকারের ব্যর্থতা কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেকবার বলেছেন- ২০২০ সাল থেকে সারা বিশ্বে করোনা মহামারীর দুর্যোগ গেছে। এর পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দুই বছর সবমিলিয়ে টানা চারটা বছর সারা পৃথিবী দুর্যোগের সময়কাল পার করছে। সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে মন্দা। বিশ্বের অনেক দেশে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, বাংলাদেশও কিছুটা দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। দাম বাড়ায় মানুষ হয়তো কষ্ট পাচ্ছে। আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন সাধারণ মানুষের দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসার জন্য এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে আন্তরিকভাবে কাজ করা হচ্ছে।
রাজধানীতে তৃণমূল বিএনপির প্রথম সম্মেলন ঘিরে আওয়ামী লীগের মনোভাব জানতে চাইলে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক দল, জনগণের দল। এই দেশের প্রত্যেকটা জনগণের রাজনীতি করার অধিকার আছে। গণতান্ত্রিক আছে পরিবেশ আছে বলেই জনগণ, যেকোনো রাজনৈতিক দল তার কর্মসূচি পালন করতে পারছে। আওয়ামী লীগের কিছু করার বা বলার নেই।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সদস্য আদম তমিজি হকের বহিষ্কার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি বিশাল দল। এই দলে লক্ষ কোটি নেতা-কর্মী আছে এবং এই দলের ভেতরে কারো বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ উঠলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হয়। ইতোমধ্যে তার ব্যাপারে মহানগর আওয়ামী লীগ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক ও মির্জা আজম প্রমুখ।
এ সরকারের বিদায়ের জন্য দেশের মানুষ আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা করতে রাজি নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, রাস্তায় চলাফেরার সময় লোকজন জিজ্ঞেস করে, এ সরকার আর কয়দিন? বাংলাদেশের মানুষ বাঁচতে চায়।
শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় আমীর খসরু এসব কথা বলেন। নব্বইয়ের ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য এবং ছাত্রদলের সাবেক নেতারা এ সভার আয়োজন করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘সব দেশের প্রধানমন্ত্রী (জাতিসংঘ অধিবেশনে) বক্তব্য দিয়ে আমেরিকা থেকে দেশে ফিরে গেছেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বসে আছেন। কী মজা না? উনি কেন বসে আছেন? আবার বলেন, আমেরিকা না গেলে কী হবে? বাংলাদেশের গার্মেন্টসের সবচেয়ে বড় ব্যবসা হয় আমেরিকায়। তারপর ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সেই ব্যবসা চলে যাবে, এই শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে।’
আমীর খসরু বলেন, ‘আমাদের জেলে যাওয়ার কারণ একটাই, যে কারণে (বিএনপি প্রধান) খালেদা জিয়া জেলে আছেন, হাজারো নেতা-কর্মী জেলে আছেন, যে কারণে হাজার হাজার মামলা। অনেকের শাস্তি হয়েছে, অনেকের শাস্তি হওয়ার পথে। এর একমাত্র কারণ ভোট চুরি করতে হবে, জনগণকে নির্বাচনের বাইরে রেখে ভোট চুরি করে ক্ষমতায় যেতে হবে।’
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তাকে বাইরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। তাকে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এখনো নেত্রীর মুক্তি নেই, চিকিৎসা নেই। তার স্বাস্থ্যের ক্রমাবনতির মাধ্যমে মৃত্যুর দিলে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। আজ দেখলাম শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের নেত্রীকে আবারও জেলে যেতে হবে। তারপর কোর্টের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হবে ৷ তার মানে প্রত্যাখ্যান করেছেন।’
‘এর মানে এই দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাঁধে নিয়েছেন। চিকিৎসাবঞ্চিত করার এই দায়িত্বভার শেখ হাসিনাকেই নিতে হবে। আজ শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা তাকে তার পরিণতির দিকে নিয়ে যাবে। দেশের মানুষ আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা করতে রাজি নয়। আমরা যখন রাস্তায় চলাফেরা করি তখন আমাদের জিজ্ঞাসা করে আর কয়দিন? কয়েক মাস না। বাংলাদেশের মানুষ বাঁচতে চায়।’
আমীর খসরু বলেন, ‘বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোরও ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে গেছে। ভিসানীতি ঘোষণা হয়েছে, চালুও হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি এসে বাংলাদেশের বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে মিটিং করে ব্রাসেলসে ফিরে গিয়ে বলেছেন, তারা বাংলাদেশে পর্যবেক্ষক পাঠাবেন না, কারণ এদেশে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। দেশের মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছ। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছে দেশের গণতন্ত্রকে বাঁচানোর জন্য।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘মার্কিন ভিসানীতিতে বিচার বিভাগকে নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বিশ্বের কোনো দেশে দেখেছেন বিচারকদের ভিসানীতির আওতায় এনেছে? সরকার ধংসের পথে যাচ্ছে।’
অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার সুযোগ দিতে পরিবারের আবেদনটি সরকারকে মানবিকভাবে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন দলের আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।
শনিবার সুপ্রিম কোর্টে নিজ চেম্বারে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রায় দুই মাস ধরে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া। মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা একাধিকবার সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন। পরিপাকতন্ত্রে রক্তক্ষরণের পাশাপাশি তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত।
কায়সার কামাল বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির যে আইন অনুসারে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সরকার শর্তসাপেক্ষে নির্বাহী আদেশে মুক্তি দিয়েছে, ঠিকই একই আইন অনুসারে তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেওয়ার অনুমতি দিতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী খালেদা জিয়া জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন। ২২ সেপ্টেম্বর আইনমন্ত্রী একটা পাবলিক স্টেটমেন্ট (বক্তব্য) দিয়েছেন, যেখানে তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে চাইলে তাকে একটা আবেদন করতে হবে। মন্ত্রীর সেই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবার থেকে খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার সাহেব ২৫ সেপ্টেম্বর একটা আবেদন করেন। সেই আবেদনটি এখন পর্যন্ত পেন্ডিং (অপেক্ষমান) আছে। অফিসিয়ালি তারা কোনো কিছু বলেননি। আমরা আশা করবো, আইন অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে ফৌজদারি কার্যবিধির যে ৪০১ ধারার ১ উপধারা অনুযায়ী নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, সেই আইনে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, কাউকে মুক্তি দিলে তা শর্তযুক্ত বা শর্তহীনভাবে দিতে পারে; এখন সেই আইনেই সম্ভব তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য অনুমতি দেওয়া। যদি সরকারের সদিচ্ছা থাকে। আমরা প্রত্যাশা করছি, আইনমন্ত্রী যে পাবলিক স্টেটমেন্ট দিয়েছিলেন, আবেদন করলে সদয়ভাবে বিবেচনা করা হবে, আমাদের আবেদনটি এখনো পেন্ডিং আছে।’
বিএনপির এ আইনজীবী বলেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি নতুন যে আবেদন করা হয়েছে, সেটা মানবিকভাবে দেখবেন, এটা আইনগতভাবেই সম্ভব।’
খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিয়ে চিকিৎসার জন্য গত ২৪ সেপ্টেম্বর সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ওই আল্টিমেটাম শেষ হয়েছে আরও তিন দিন আগে। কিন্তু তাদের আল্টিমেটামে কোনো সাড়া দেয়নি সরকার।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘মাঝে মাঝে বড় কষ্ট লাগে, দেশের রাজনীতি থেকে কেন যেন মনে হয় ভালো মানুষের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। রাজনীতিতে ভালো মানুষ এবং সঠিক দেশ প্রেমিকের সংখ্যা দিনদিন কমে যাচ্ছে।’
শনিবার জাতীয় সংসদ ভবন সংলগ্ন ন্যাম ভবন প্রাঙ্গণে লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শাহজাহান কামাল এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার প্রথম নামাজে জানাযা শেষে এ সব কথা বলেন তিনি।
এর আগে জানাজা শেষে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দুই সংসদ সদস্যদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল।
এছাড়া স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর পক্ষ থেকে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ নানা সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
পরে সাংবাদিকদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মাঝে মাঝে বড় কষ্ট লাগে, দেশের রাজনীতি থেকে কেন যেন মনে হয় ভালো মানুষের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। শাহজাহান কামালের মতো একজন ভালো মানুষ রাজনীতিতে বিরল। তাকে হারানো মানে আমরা একজন ভালো মানুষকে হারালাম। রাজনীতিবিদ হিসেবে তার আদর্শ গুণাবলি আমরা মনে রাখব এবং অনুসরণ করব। এ দুই নেতার মৃত্যুতে আমরা ভালো মানুষ হারালাম।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে নামাজে জানাজার শামিল হয়েছি। আমাদের পার্টির পক্ষ থেকে আমরা ফুল দিয়েছি। আমাদের পার্টির প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাইরে আছেন, তিনি শোকবার্তা পাঠিয়েছেন।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে শাহজাহান কামাল আমার খুবই ক্লোজলি রিলেটেড ছিলেন। তিনি ছাত্রনেতা থেকে জননেতা হয়েছেন। পরে মন্ত্রী। একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। একজন সাচ্চা আদর্শবান মানুষ ছিলেন। আব্দুল সাত্তারও একজন ভালো মানুষ হিসেবে তার এলাকায় যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিল। তিনি জনগণের ভোটে বারবার নির্বাচিত হয়েছেন।’
জানাযায় মন্ত্রীপরিষদের সদস্যবৃন্দ ও সংসদ সদস্যগণ সহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ নেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও আওয়ামী লীগের আওয়ামী লীগের নেতারা।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা শুধু একজন রাজনীতিবিদের নাম নয়, এক সংগ্রামী উপাখ্যানের নাম। লড়াই-সংগ্রাম, উন্নয়ন-অগ্রগতি ও গণতন্ত্রের নাম শেখ হাসিনা। তিনি এ দেশে গণতন্ত্রের প্রতীক, আবহমান বাংলার সংস্কৃতির প্রতীক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতীক।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন উপলক্ষে শুক্রবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কৃষক লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের পর বাতাসের বিপরীতে উজান ঠেলে যে নেত্রী মা-বাবা-ভাই, আত্মীয়-পরিজন সবাইকে হারিয়ে এ দেশের মানুষকে আপন করে দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন, তিনি হচ্ছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা।’
শেখ হাসিনাকে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী’ হিসেবে উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বারবার মৃত্যু উপত্যকা থেকে ফিরে এসে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বিচলিত হন নাই, দ্বিধান্বিত হন নাই। বরং দৃপ্ত পদভারে জীবনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে দেশের সংগ্রামের কাফেলাকে, মানুষের ভোট এবং ভাতের অধিকার আদায়ের কাফেলাকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর মতোই জননেত্রী শেখ হাসিনাও ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করেন নাই। সেটি করলে ১৯৮২ সালেই তিনি ক্ষমতায় যেতে পারতেন। কিন্তু তিনি মানুষের অধিকার আর দেশের অগ্রগতির জন্য রাজনীতি করেছেন।’
ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামে পাখি শিকারের মতো মানুষ শিকার করে শেখ হাসিনাকে হত্যার অপচেষ্টা হয়েছে, আমাদের ৩২ জন নেতা-কর্মী সেদিন শহীদ হয়েছিল। আওয়ামী লীগের এই কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট প্রকাশ্য দিবালোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রীকে বৃষ্টির মতো গ্রেনেড ছুড়ে হত্যার অপচেষ্টা করা হয়েছে। কোটালীপাড়ায় ৭৬ কেজি বোমা পুঁতে তাকে হত্যার অপচেষ্টা হয়েছে। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে বিএনপি ও ফ্রিডম পার্টির সন্ত্রাসীরা শেখ হাসিনাকে হত্যার অপচেষ্টা চালিয়েছে, সারা দেশের পথে পথে তার ওপর বারবার হামলা করেছে। কিন্তু শেখ হাসিনা মৃত্যুঞ্জয়ী।’
কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন এবং আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি। পরে মন্ত্রী হাছান মাহমুদ সবাইকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন উপলক্ষে কেক কাটেন ও প্রধানমন্ত্রী এবং দেশ ও দশের মঙ্গল কামনায় দোয়ায় অংশ নেন।
সরকার পতনের জন্য কখন দাবানল তৈরি হবে তা কেউ বলতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান।
শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবিতে জাতীয়তাবাদী প্রজন্ম দলের গণঅবস্থান কর্মসূচিতে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আহমেদ আজম খান বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। কখন দাবানল তৈরি হবে তা কেউ বলতে পারবে না, সাবধান হয়ে যান। গায়েবি মামলা, মিথ্যা মামলা, রাজনৈতিক মামলার মাধ্যমে হাজার হাজার নেতা-কর্মীর নামে সাজা দেওয়ার চেষ্টা করছেন, সাবধান হয়ে যান। বাংলাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে গেছে। যে কোনো দিন যে কোনো সময় দাবানল তৈরি হয়ে যাবে। সেই দাবানলে সরকার পুড়ে ভস্ম হবে।’
বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন উল্লেখ করে দলের ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা কয়েক বছর যাবত খালেদা জিয়ার চিকিৎসার দাবি করে আসছি। কিন্তু ফ্যাসিবাদী সরকার জনগণের ভাষা বোঝে না। দেশের সব মানুষ খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য অভিমত ব্যক্ত করেছে। কিন্তু জনগণের সেই অভিমত সরকারের কানে পৌঁছায় না। শুধু রাজনৈতিক ভীতির জন্য খালেদা জিয়াকে জেলে রাখা হয়েছে। সরকারকে বলি, খালেদা জিয়ার জীবন নিয়ে রাজনীতি করবেন না।’
তিনি বলেন, ‘দুই বছর যাবত খালেদা জিয়ার পাসপোর্ট আটকে রাখা হয়েছে। এটাই হলো ফ্যাসিবাদ। যত দ্রুত সম্ভব পাসপোর্ট দিয়ে দেন। আজকের মধ্যে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন।’
সরকারের লুটপাটের কারণে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে গেছে উল্লেখ করে আহমেদ আজম খান বলেন, ‘সরকারের সিন্ডিকেটের কারণে কোটি কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে বিদেশে। বাণিজ্যমন্ত্রীসহ সব মন্ত্রী সিন্ডিকেটের সঙ্গ জড়িত। তাই আজকে ফ্যাসিবাদের পতনের ডাক এসেছে। আর এই ডাক দিয়েছেন তারেক রহমান। সরকারের পতন ঘটিয়ে দেশের মানুষের ভোটের অধিকার গণতান্ত্রিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০১৮ সালে দেখেছি দিনের ভোট রাতেই চুরি করে নিয়েছে। এজন্যই দেশের মানুষের দাবি আগামী নির্বাচন অবাধ এবং নিরপেক্ষ হতে হবে। তারেক রহমানের চিন্তা-চেতনার নেতৃত্বের সঙ্গে পিটার হাস একাত্ম হয়ে গেছেন।’
জাতীয়তাবাদী প্রজন্ম দলের সভাপতি জনি সরকারের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক সেলিম ভূঁইয়া, ছাত্রদল সাবেক সহ-সভাপতি এজমল হোসেন, তাঁতী দলের সহ-সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির প্রমুখ।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কেবিন থেকে আবারও করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছে। তিনি লিভার জটিলতাসহ বেশ কয়েকটি রোগে ভুগছেন।
শারীরিক অবস্থার অবনতির কারণে শুক্রবার বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে তাকে সপ্তম তলার কেবিন থেকে চতুর্থ তলার সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। এই নিয়ে তৃতীয়বারের মতো তাকে সিসিইউতে নেওয়া হলো।
এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর ও ২২ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়াকে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। পরে আবার তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানিয়েছেন, মেডিকেল বোর্ডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন ম্যাডাম।’
এক মাসের বেশি সময় ধরে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া। গত ৯ আগস্ট তাকে এখানে ভর্তি করা হয়।
এর আগেও বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে তাকে। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার অ্যানজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়।
মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা একাধিকবার সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন। পরিপাকতন্ত্রে রক্তক্ষরণের পাশাপাশি তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত।
দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালে খালেদা জিয়া কারাগারে গিয়েছিলেন। দেশে করোনা মহামারি শুরুর পর পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে তাকে মুক্তি দেয়। এরপর কয়েক দফায় তার দণ্ডাদেশ স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। সাজা স্থগিতের শর্ত হিসেবে তিনি বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
বিএনপিসহ বিরোধীদের উদ্দেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বাংলাদেশকে আবারও ষড়যন্ত্র করে অন্ধকারে নিয়ে যাবেন আমরা হতে দেব না।
বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন উপলক্ষে শুক্রবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
কাদের বলেন, ‘বাংলাদেশে শেখ হাসিনা ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না। এমন কোনো নেতা নেই যাকে মানুষ বিশ্বাস করে। সেই নেতা শেখ হাসিনা। ষড়যন্ত্র করে ওই নেতাকে বাদ দেবেন। শেখ হাসিনা ছাড়া নির্বাচন মানি না। বাংলাদেশকে আবারও ষড়যন্ত্র করে অন্ধকারে নিয়ে যাবেন আমরা হতে দেব না। আমরা সেটা হতে দেব না।’
শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের রূপান্তরের রূপকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সংকটকে সম্ভাবনায় রূপ দিয়েছেন যিনি তিনি আমাদের সাহস, স্বপ্নের বর্ণিল ঠিকানা। আমাদের পূর্ব পৃথিবীর সূর্য শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে নতুন নতুন উচ্চতা দিয়েছেন। বাংলাদেশকে নব নব মুকুটে সজ্জিত করেছেন। শি হ্যাজ মেড আস লুক ব্রাইটার। শি হ্যাজ প্রাউড আস ফিল প্রাউড, স্ট্যান্ড টলার। শি হ্যাজ শো দ্য ওয়ে আউট অব প্রভার্টি।’
কাদের আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ৪৮ বছর চলে গেছে। যারা ষড়যন্ত্র করে তাদের কাছে জানতে চাই, পঁচাত্তরের পর শেখ হাসিনার মতো জনপ্রিয় নেতা এসেছে এ দেশে? গত ৪৮ বছরে সবচেয়ে সাহসী নেতা, সবচেয়ে দক্ষ প্রশাসক, সফল কূটনীতিক। কে তিনি? শেখ হাসিনা। এখনো বাংলাদেশের নাম্বার ওয়ান পপুলার পলিটিশিয়ান শেখ হাসিনা।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমাদের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। নিষেধাজ্ঞা, ভিসানীতির ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। মজার ব্যাপার হচ্ছে নিষেধাজ্ঞা দেয় ওয়াশিংটন আর ভয় দেখান (বিএনপির মহাসচিব) মির্জা ফখরুল। কী অদ্ভুত কাণ্ড।’
মির্জা ফখরুলকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘৪৮ ঘণ্টা শেষ। আল্টিমেটাম শেষ। ফলাফল কী? ক্যাপ্টেন (শেখ হাসিনা) আমেরিকায়, ক্যাপ্টেন এলে জোরদার খেলা হবে। আমাদের গণতন্ত্র আমাদের সংবিধান ঠিক করবে। আমাদের নির্বাচন আমাদের সংবিধান ঠিক করবো। তত্ত্বাধায়ক এখন মরা লাশ। ওই মরা লাশ আমাদের কাছে এনে লাভ নেই।’
সংসদ উপনেতা ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কর্নেল (অব.) ফারুক খান, ড. আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুবউল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি প্রমুখ।
বর্তমান সরকার আবারও ক্ষমতায় এলে দেশের স্বাধীনতা থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এজন্য ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় করে জনগণের রাষ্ট্র কায়েম করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার এবং সরকার পতনের ‘এক দফা’ দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়ে ফখরুল বলেন, ‘যে মানুষটি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন তাকে আজ গৃহবন্দী করে রেখেছে। তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আমরা আশা করি খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তার পরিবার বিদেশে পাঠানোর যে আবেদন করেছে, সরকার তা বাস্তবায়ন করবে।’
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে, কারণ উনি মুক্ত থাকলে ওনাদের (সরকার) ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে। উনি মুক্ত থাকলে দেশের গণতন্ত্র মুক্ত থাকবে। উনি মুক্ত থাকলে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সমগ্র দেশের মানুষ যখন এই ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে তখন এই মহিলা সমাবেশ আমাদের আরও সাহস যুগিয়েছে। আজকে এই সরকারের অত্যাচার থেকে মা-বোনরা রক্ষা পাননি। সাইবার সিকিউরিটি আইনের নামে আটক করা হচ্ছে মা-বোনদের। আজকে সত্য লেখার অপরাধে মা-বোনদের পিটিয়ে মারা হচ্ছে। এ সরকারের আমলে আজ কেউ নিরাপদ নয়।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিটি দ্রব্যমূল্য আজ আকাশচুম্বী। সরকারের বেঁধে দেওয়া দর কেউ মানছে। সব জায়গায় আওয়ামী লীগের সিন্ডিকেট। সংসার চালাতে মানুষ হিমশিম খাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এরা জনগণের নির্বাচিত নয়। খালেদা জিয়া মেয়েদের দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে পড়ার ব্যবস্থা করেছেন, চাকরির ক্ষেত্রে মেয়েদের কোটা প্রথা চালু করেছেন। আজকে এ সরকার গায়ের জোরে সবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে। গণতন্ত্র ও দেশ ধ্বংস করে ফেলছে। তারা মানুষের কথা চিন্তা করছে না। মানুষের দাবি তত্ত্বাবধায়ক সরকার এরা চায় না। এ সরকার যদি আবার ক্ষমতায় আসে তাহলে দেশের স্বাধীনতা থাকবে না। তাই আসুন সব নারী-পুরুষ ঐক্যবদ্ধ হই। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে এই একদলীয় বাকশালী সরকারকে বিদায় করে জনগণের রাষ্ট্র কায়েম করি।’
মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আফরোজা আক্তার রিতা, প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, মহিলা দল নেত্রী হেলেন জেরেন খান প্রমুখ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে আফরোজা আব্বাস বলেন, ‘সরকার স্যাংশন নাকি মানেন না। মানবেন কেন? দেশের মানুষ না খেয়ে থাকলে, মারা গেলে আপনাদের কী? আপনারা তো জনগণের ভোটে নির্বাচিত নন। তারেক রহমান ও খালেদা জিয়াকে নিয়ে ওবায়দুল কাদের ও হাছান মাহমুদ যেভাবে অশ্লীল ভাষায় কথা বলেন আপনাদের ঘরে কি মা-বোন নেই? আপনারা শুধু রাষ্ট্র, সমাজ নয়, পরিবার থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছেন।’
বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলেছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের দেশে রাষ্ট্রদূত হিসেবে যারা আছেন তার মধ্যে অন্যতম মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। তিনি গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলেছেন, অধিকারের পক্ষে কথা বলেছেন। তিনি তো মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলেছেন। অথচ তার আজকে নিরাপত্তা নেই।’
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক অবস্থান কর্মসূচিতে এসব কথা বলেন শামসুজ্জামান দুদু।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের পরিস্থিতি বুঝতে পেরেছেন পিটার হাস। তাকে আমরা এ কথাটুকু বলতে পারি, যারা গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলবে, স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলবে, বাংলার জনতা তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াবে। জনতা তাদের রক্ষা করবে। এটা আমাদের পবিত্র দায়িত্ব। কে কী বললো, এতে আমাদের কিছু যায় আসে না।’
এ সময় ‘ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে’ বলে অভিযোগ করে দুদু বলেন, ‘জনগণ এখন আর ভোট দিতে পারে না। ভোটকেন্দ্রে এসে তারা দেখে, তাদের ভোট আগে দেয়া হয়ে গেছে।’
‘শেখ হাসিনার পক্ষে নির্বাচন করার এখন কেউ নেই’ বলে দাবি করে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন যেসব চিঠি ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে দিচ্ছে, এগুলো করে কোনো লাভ হবে না। ভালো নির্বাচনের জন্য এ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে হবে। নির্বাচন কমিশন পুনরায় গঠন করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।’
এ সময় শামসুজ্জামান দুদু আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন এবং তারেক রহমানকে দেশে আসার সুযোগ দিন। হয়তো এমন সময় আসতে পারে, একদিনের ভেতর যে জনস্রোত আসবে, সে স্রোতে আপনারা পিষে যাবেন। পশ্চিমা বিশ্ব এখন গণতন্ত্রের পক্ষে। সারা বিশ্ব এখন গণতন্ত্রের পক্ষ নিয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত কিছুদিন আগেও আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনার পক্ষে ছিল। তারাও এখন একটি ভালো নির্বাচনের কথা বলছে।’
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘কোনো ষড়যন্ত্র করে নির্বাচন বানচাল করা যাবে না, যথাসময়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পবিত্র ঈদে মিলাদুননবী উপলক্ষে আনজুমানে রহমানিয়া মইনীয়া মাইজভান্ডারিয়া ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি আয়োজিত আন্তর্জাতিক শান্তি মহাসমাবেশে বক্তৃতাকালে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি এ কথা বলেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, “আগামী নির্বাচন নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এ দেশে নির্বাচন ভন্ডুল করে ‘হামিদ কারজাই মার্কা সরকার’ গঠনের অপচেষ্টা কখনো বাস্তবায়িত হবে না। ২০১৪ সালে নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র হয়েছিল, বলা হয়েছিল সরকার টিকবে না। আমাদের সরকার পূর্ণ পাঁচ বছর দেশ পরিচালনা করেছে। ২০১৮ সালেও ষড়যন্ত্র হয়েছিল, এবারও আমরা দুমাসের মাথায় পাঁচ বছর পূর্ণ করতে যাচ্ছি।”
তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত যতই দেশটাকে বিশ্ববেনিয়াদের হাতে তুলে দেয়ার ষড়যন্ত্র করুক, নির্বাচন যথাসময়েই হবে। বিএনপি আসুক বা না আসুক, আজকের অনুষ্ঠানের আয়োজক সুপ্রিম পার্টিসহ বহু রাজনৈতিক দল ও জনগণের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
দেশরক্ষা করা এবং ফেতনাসৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ঈমানী দায়িত্ব
এ সময় ‘দেশরক্ষা, ওলী-আউলিয়াদের সম্মান রক্ষা এবং ফেতনাসৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো মুসলমানদের ঈমানী দায়িত্ব’ বলে মন্তব্য করেন তথ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে ইসলাম ও আলেম-ওলামাদের কল্যাণে যখন অভাবনীয় কাজ করা হয়েছে এবং হচ্ছে তখন দেশে ইসলামের নামে হানাহানির অপচেষ্টা চলছে।’
তিনি মনে করিয়ে দেন, ‘এ দেশে ইসলাম কোনো যুদ্ধ বিগ্রহের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়নি, ওলী-আউলিয়ারা মানুষের মন জয় করে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় এনেছেন। কিন্তু আজ জামায়াতে ইসলামী এবং আরও কিছু গোষ্ঠি ওলী-আউলিয়াদের অসম্মান করে। তাদের বিরুদ্ধে ফতোয়া দেয়, বক্তৃতা করে। এরা ইসলামের কল্যাণ করছে না, বরং ফেতনা সৃষ্টি করছে। এদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে এবং এই ফেতনাসৃষ্টিকারীদের যারা প্রশ্রয় দেয়, জামায়াত যাদের জোটভুক্ত সেই বিএনপির বিরুদ্ধেও সতর্ক ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এ দেশে ইসলামের কথা বলে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। বিএনপির সময় একযোগে পাঁচ শ জায়গায় বোমা ফোটানো হয়েছে। বিএনপি জঙ্গি ভাড়া করে শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা চালিয়েছে। যারা এভাবে ইসলামের গায়ে কালিমা লেপন করছে তাদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে, ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
দেশে দেশে মানুষ হত্যার বিরুদ্ধে স্যাংশন বা ভিসানীতি নেই
সমসাময়িক বিশ্ব প্রসঙ্গে সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ফিলিস্তিনে শিশুদের ঢিল ছোঁড়ার জবাবে যখন ইসরাইলী বাহিনী পাখির মতো গুলি করে মানুষ হত্যা করে, তাদের বিরুদ্ধে স্যাংশন দেয়া হয় না। মায়ানমারে যখন মুসলমানদের জবাই করে হত্যা করা হয়, তাদের বিরুদ্ধে ভিসানীতি হয় না। নির্যাতিত হয়ে দেশ থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদেরকে আমাদের আশ্রয়ে ভালো রাখার উপায় দেয়া হয় কিন্তু তাদের নিজ দেশে ফেরত নেয়ায় জোর দেয়া হয় না। মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য জাতিসংঘে সব দেশের নিন্দা প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ইসরাইলকে সমর্থন দেয়া হয়।’
ইসলামের খেদমতে আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগ যুগান্তকারী ও অদ্বিতীয়
মহানবী হযরত মুহাম্মদের (সা.) জন্ম ও ওফাত দিবস পবিত্র ঈদে মিলাদুননবী উপলক্ষে এ দিনের বক্তৃতায় তথ্যমন্ত্রী হাছান ইসলামের খেদমতে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগকে যুগান্তকারী ও অদ্বিতীয় হিসেবে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু তৎকালীন এই রেসকোর্স উদ্যানে ঘোড়দৌড় বন্ধ করেছিলেন। কারণ ইসলাম বাজি সমর্থন করে না। উদ্যানের পাশে তাবলীগ জামাতের মসজিদ এবং টঙ্গীতে মুসলিমদের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত বিশাল বিশ্ব ইজতেমার জন্য জমিও বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন। তিনি মদ, জুয়া, হাউজি নিষিদ্ধ করেছিলেন, যেগুলো পরে বিএনপি জিয়াউর রহমান আবার চালু করেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠাসহ ইসলামের খেদমতে বহু কাজ বঙ্গবন্ধু করেছেন।’
‘আর বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে একসাথে ৫৬০টি মসজিদ, ১ লাখ ২০ হাজার মসজিদভিত্তিক মক্তব প্রতিষ্ঠা ও প্রতি মক্তবশিক্ষকের ৫২০০ টাকা মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করেছেন। খালেদা জিয়া, এরশাদ সরকার মূলা ঝুলিয়ে রেখেছিল আর শেখ হাসিনাই দেশে কওমী মাদ্রাসার স্বীকৃতি দিয়েছেন, পাশ করা শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকুরিও পেয়েছেন, ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন।’
হাছান মাহমুদ আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে প্রায় প্রতিটি আলিয়া মাদ্রাসার নতুন ভবন এবং ৬১০০ মসজিদে পাঠাগার হয়েছে। ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট হয়েছে। ২০২৪ সালে জাহাজে করে হজ্জ্বযাত্রী পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। কারণ জাহাজে খরচ বিমানের প্রায় অর্ধেক। মক্কা-মদীনার ইমামবৃন্দ শেখ হাসিনার আমলেই এ দেশে আমন্ত্রণে এসেছেন। সৌদি আরবসহ মুসলিম বিশ্বের সাথে আমাদের সম্পর্ক অনেক উচ্চতায় আসীন হয়েছে।’
আঞ্জুমানে রহমানিয়া মইনীয়া মাইজভান্ডারিয়ার কেন্দ্রীয় সভাপতি ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শাজাহান খান প্রমুখ এ সময় বক্তব্য রাখেন।
‘সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের’ দাবিতে এক দফা আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় শ্রমিক-কর্মচারী কনভেনশন করবে বিএনপি। ঢাকার গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চের বহিরাঙ্গণ মাঠে এ কনভেনশন আয়োজনের কথা ছিল। তবে একই দিনে কাছাকাছি স্থানে অন্য একটি সংগঠনের সমাবেশ থাকায় শ্রমিক কনভেনশনের স্থান পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।
দলের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মহানগর নাট্যমঞ্চের পরিবর্তে ওই দিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মতিঝিল আইডিয়াল হাইস্কুলের সামনে থেকে টিএনটি কলেজ পর্যন্ত (উত্তর পাশে) রাস্তায় এই শ্রমিক কনভেনশন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।
বিষয়টি জানিয়ে পরিবর্তিত স্থানে শ্রমিক-কর্মচারী কনভেনশন করার অনুমতি চেয়ে বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার বরাবর চিঠি দিয়েছে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, ১৫টি শ্রমিক সংগঠন এবং জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল যৌথভাবে এ কনভেনশনের আয়োজন করছে।
শ্রমিক দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু প্রেরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর জাতীয় শ্রমিক কর্মচারী কনভেনশন-২০২৩ ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চের বহিরাঙ্গন মাঠে অনুষ্ঠানের যাবতীয় আয়োজন সম্পন্ন করা হয়। এরপরও কাছাকাছি স্থানে অপর একটি সংগঠনের সমাবেশ থাকায় নিরাপত্তাজনিত কারণে আমাদের অন্যত্র আয়োজনের জন্য আপনাদের পক্ষ থেকে পরামর্শ প্রদান করেছেন। সেই প্রেক্ষিতে মহানগর নাট্যমঞ্চের বহিরাঙ্গন মাঠের পরিবর্তে মতিঝিল আইডিয়াল হাইস্কুলের সামনে থেকে টিএনটি কলেজ পর্যন্ত (উত্তর পাশে) রাস্তায় সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বাংলাদেশের দ্রব্যমূল্য, মজুরি কমিশন, জাতীয় বেতন স্কেল ও ন্যূনতম মজুরিসহ শ্রম পরিস্থিতি নিয়ে শ্রমিক কর্মচারী কনভেনশনটি অনুষ্ঠিত হবে। বিষয়টি আপনার সদয় অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অবহিত করা হলো।’
সময়ের সঙ্গে বাস্তবতার আলোকে আগামী নির্বাচনী ইশতেহার প্রস্তুত করা হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘ইশতেহার পড়ে কজন? সেটা খেয়াল রেখে করতে হবে। বুলেট পয়েন্ট দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আনতে হবে। ঢাউস কিতাব বা বিশাল বই পড়ার সময় কারও নেই। সময়ের সঙ্গে বাস্তবতার চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে হবে।’
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির প্রথম সভায় এ সব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে চলতে হবে। সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। ঢাউস বা মোটা ইশতেহারের দরকার নেই। মোটা পুস্তক প্রণয়নের দরকার নেই। কারণ বেশি কথা পড়ার সময় কম। অল্প কথার মধ্যে নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদেরও অ্যাকশনে যেতে হবে। এমন ইশতেহার করতে হবে, যাতে নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা নিষেধাজ্ঞার বিষয় ভাবতে হবে। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব ভাবতে হবে। ২০২৬ সাল, উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ। সর্বোপরি ২০৪০ সাল আমাদের মাথায় রাখতে হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়ে গেছে, এখন স্মার্ট বাংলাদেশ করতে হবে।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপি নাকি আমাদের তাড়িয়ে দেবে কয়েকদিনের মধ্যে। আমরা অক্টোবরে আছি, আগামী অক্টোবরেও থাকবো। কী কারণে ক্ষমতা ছেড়ে দেবো? কী কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আবার পুনর্জীবিত করব? কেন শেখ হাসিনাকে সরে যেতে হবে? জনগণ তাকে চায়, বিকল্প ভাবে না। সংকটে দেশকে নেতৃত্ব দেয়ার মতো তার সমকক্ষ কেউ নেই। বিশ্ব বিবেকের কাছে প্রশ্ন- তার চেয়ে যোগ্য বিকল্প প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে কেউ আছে?’
নির্বাচনকালীন মন্ত্রীসভার আকার নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সেটা ঠিক করবেন প্রধানমন্ত্রী। এটা প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। নির্বাচনকালীন সরকার শুধু রুটিন ওয়ার্ক হবে। মেজর পলিসি গ্রহণ করবে না। এটা নতুন কিছু নয়, পৃথিবীর অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মত রুটিন দায়িত্ব পালন করবে। মেজর পলিসি থাকবে না।’
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের নিয়মে চলবো। আমাদের হুমকি দিয়ে লাভ নেই। সামনের নির্বাচন আমরা ফ্রি ফেয়ার করব। এর বাইরে আমাদের কোনো চিন্তা নেই। যা করব সংবিধান অনুযায়ী। কে নির্বাচনে এলো কে এলো না, এটা আমাদের বিষয় নয়। কে কারে নিষেধাজ্ঞা দিল এটা আমাদের বিষয় নয়।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বিভিন্ন অস্থিরতার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, গত ১৩/১৪ বছরে যত অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, সেগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে করা হয়েছে।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের তথ্য কমিশন ভবনে আয়োজিত ‘তথ্যের অবাধ প্রবাহে ইন্টারনেটের গুরুত্ব’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমাদের দেশে গত ১৩/১৪ বছরে যত অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে করা হয়েছে। মানুষ হত্যার শিকার হয়েছে। রাষ্ট্রব্যবস্থাকে দুর্বল করা হয়েছে৷ মন্ত্রী বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বাংলাদেশে ব্যবহার করে আট কোটির বেশি মানুষ। এ সময় তিনি ছেলেধরা গুজবে সাধারণ মানুষকে পিটিয়ে হত্যা ও পদ্মা সেতু নিয়ে গুজবের বিষয়টি তুলে ধরেন।
মন্ত্রী জানান, ভুল ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানো, সমাজকে অস্থির করার মাধ্যম হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। নানা সুবিধা ব্যবহার করে রাষ্ট্র এবং সমাজে নানা অসুবিধা ও অস্থিরতা তৈরি করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন ড. হাছান মাহমুদ।
তথ্যপ্রাপ্তির কৌশলের বিষয় তুলে ধরে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, যারা তথ্য পাওয়ার জন্য নানা উপায় অবলম্বন করেন, সচিবালয়ে দেখা যায়, ক্লার্কের (পিওন) সঙ্গে সখ্য তৈরি করা হয়। যে ফাইল এদিক থেকে ওদিকে নিয়ে যাওয়া হয়, তার সঙ্গে সখ্য তৈরি করা হয়। সখ্য তৈরি করে ফটো তোলে, মোবাইলে ফটো তোলে, ফটো তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এভাবে তথ্য নেয়া অপরাধ। তথ্য অধিকার আইন আছে, যে কেউ তথ্য চাইতে পারে।
হাছান মাহমুদ বলেন, তথ্য অধিকার আইনে অনেকের শাস্তিও হয়েছে। অনেক সরকারি কর্মকর্তার ক্ষেত্রেও তথ্য অধিকার আইন প্রয়োগ করা হয়েছে৷
মন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালে আমাদের ইশতেহারে দুটি বিষয় উল্লেখ করেছিলাম, তথ্য অধিকার আইন ও জনগণের সামনে ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণা। আমরা এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করেছি। ইশতেহার প্রণয়নের সময় দল ও দলের বাইরে অনেকেই এই দুই বিষয় নিয়ে সন্দিহান ছিলেন বলেও জানান মন্ত্রী।
তিনি জানান, ১৭ কোটি মানুষের দেশ ১৮ কোটি মোবাইল সিম ব্যবহারকারী। ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তথ্য অধিকারে এক লাখ ৪৭ হাজার ৯১৮টি দরখাস্ত জমা পড়েছে৷ যার মধ্যে ৯৬ শতাংশ দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
প্রধান তথ্য কমিশনার ড. আবদুল মালেকের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার মোহাম্মদ জমির এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার।