যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ৭৮তম অধিবেশনে যোগদান ও যুক্তরাজ্য সফর শেষে আগামী ৪ অক্টোবর দেশে ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত রাস্তায় থাকবে আওয়ামী লীগ। দলটির নেতা-কর্মীরা রাস্তার দুইপাশে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনাকে অভিবাদন জানাবেন। তবে আনুষ্ঠানিক কোনো সমাবেশ হবে না।
সরকারের অর্জন এবং জাতিসংঘসহ বৈশ্বিক ফোরামে বাংলাদেশের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ ভূমিকাকে স্বাগত জানাতে এ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এমনটিই জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা। তারা বলছেন, বিষয়টি চূড়ান্ত হবে রোববার। এদিন দলের যৌথসভা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানানোর পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের এক সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, ‘এটা ঠিক গণসংবর্ধনা হবে না। নেতা-কর্মীরা রাস্তার দুইপাশে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানাবেন। সেখানে কোনো সমাবেশ হবে না। এটা কালকের (রোববার) মিটিংয়ে চূড়ান্ত হবে।’
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে যোগ দিতে ১৭ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘের অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি, অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও স্বাস্থ্যখাতে সাফল্যের পাশাপাশি বিশ্বশান্তি, নিরাপত্তা, নিরাপদ অভিবাসন, রোহিঙ্গা সংকট, জলবায়ু ও ন্যায়বিচারের মতো বিষয়গুলো তুলে ধরেন। যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে যুক্তরাজ্যে গেছেন শেখ হাসিনা। আগামী ৪ অক্টোবর দুপুর ১২টার দিকে তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
জানা গেছে, সেদিন আওয়ামী লীগ সভাপতিকে অভিনন্দন জানানোর কর্মসূচিতে বড় জমায়েত করতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনসহ ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলোর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
এ বিষয়ে দলটির দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রোববার বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, পাশ্ববর্তী ঢাকা, নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর এবং গাজীপুর জেলা ও মহানগর এবং সহযোগী সংগঠনসমূহের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকগণের যৌথসভা অনুষ্ঠিত হবে। যাতে সভাপতিত্ব করবেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর একজন সদস্য বলেন, আগামী ৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। এছাড়া অক্টোবরে মাসব্যাপী দলীয় কর্মসূচি নির্ধারণ করতে রোববার আমরা বৈঠকে বসবো।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বিমানবন্দর থেকে গণভবনে যাওয়ার রুট এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তিনি বিমানবন্দর থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে গণভবনে যাবেন, নাকি নিচের সড়ক দিয়ে যাবেন, সেটা দেখে আমাদের নেতা-কর্মীদের অবস্থানের স্থান নির্ধারণ করা হবে। রোববারের যৌথসভায় বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।
পিরোজপুরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির চেয়ারপার্সন, তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) আছর নামাজ বাদ দি গোপালকৃষ্ণ টাউন ক্লাব টেনিস গ্রাউন্ডে পিরোজপুর জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারন সম্পাদক,জেলা যুবদলের সাবেক ১ নং যুগ্ম আহবায়ক বদিউজ্জামান শেখ রুবেল এর আয়োজনে এ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত হয়ে খালেদা জিয়ার দ্রুত আরোগ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে দোয়া করেন।
দোয়া মাহফিলে সদর উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ন আহবায়ক আমিরুল ইসলাম এর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন পৌর বিএনপি'র সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ তৌহিদুল ইসলাম,জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য এম এ জলিল,জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি মোঃ আলাউদ্দিন হাওলাদার,জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ও শহীদ জিয়া পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি শহিদুল ইসলাম রানা,জেলা ওলামাদলের সিঃযুগ্ম-আহবায়ক মাওঃমিরাজ মোল্লা প্রমুখ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা ছাত্রদলের সাবেক দপ্তর সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা,পৌর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নাফিস আহমেদ সিয়াম সহ ছাত্রদল,যুবদল সহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে প্রতীক। গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বেগম জিয়া আজও অটল। দেশবাসীর দোয়া ও ভালবাসায় তিনি খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা। তাঁকে সুস্থ দেখতে পুরো দেশবাসী অপেক্ষা করছে। একই সঙ্গে তাঁরা দেশবাসীর কাছে দোয়া ও শুভকামনা কামনা করেন।
শেষে বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত সুস্থতা ও কল্যাণ কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় কড়া মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ১৯৭১ সালে যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, সেই শক্তিগুলোই এখন রূপ বদলে এমন ভাব দেখাচ্ছে যেন তারাই নতুন বাংলাদেশ গড়তে পারবে। বিএনপি মহাসচিব দৃঢ়ভাবে বলেন যে, যারা দেশের জন্ম এবং স্বাধীনতাকে অস্বীকার করেছে, তাদের বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই।
রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই সভায় তিনি আসন্ন নির্বাচনকে দুটি শক্তির লড়াই হিসেবে অভিহিত করেন—একটি বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি পশ্চাৎপদ শক্তি, যারা অতীতে স্বাধীনতা ও অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে চেয়েছিল। তিনি প্রশ্ন তোলেন, বাংলাদেশের মানুষ কি স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র বেছে নেবে, নাকি সেই পশ্চাৎপদ শক্তিকে বেছে নেবে?
মির্জা ফখরুল স্মরণ করেন যে, ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের, অর্থাৎ বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছিল, যা ছিল মূলত দেশের ভবিষ্যৎ হত্যা করার শামিল। তিনি সতর্কতা উচ্চারণ করে বলেন যে, ছাত্রদের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্টদের বিতাড়িত করার অর্থ এই নয় যে নতুন কোনো ফ্যাসিস্ট শক্তিকে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হবে, যারা দেশকে পেছনে নিয়ে যেতে চায়।
তিনি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকার কথা উল্লেখ করেন এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ২৫ ডিসেম্বর দেশে প্রত্যাবর্তনকে 'আশার আলো' হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি সকল নেতাকর্মীকে ২৫ তারিখে এমন এক সংবর্ধনা জানানোর আহ্বান জানান, যা বাংলাদেশে অতীতে কখনো দেখা যায়নি।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বেড়ে যাওয়ার গভীর আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই মন্তব্য করেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশ যখন নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার নতুন অধ্যায়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে বাংলাদেশের শত্রুরা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। গত কয়েকদিনের হত্যাকাণ্ডের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি সতর্ক করেন যে, নির্বাচন সামনে রেখে এ ধরনের সহিংসতা ও ষড়যন্ত্রমূলক ঘটনা আরও ঘটতে পারে।
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বরের নির্মমতার কথা স্মরণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, বিজয়ের ঠিক আগমুহূর্তে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা জাতিকে মেধাশূন্য করতেই পরিকল্পিতভাবে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করেছিল। একইভাবে ২০২৪ সালেও ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সন্তানদের হত্যা করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় তার সঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান ও মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকসহ দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসন জীবন শেষে আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার আগমনকে কেন্দ্র করে রাজধানীর গুলশানে তার বাসভবন ও রাজনৈতিক কার্যালয়ে চলছে শেষ মুহূর্তের ব্যাপক প্রস্তুতি ও সংস্কারকাজ। বাবার সঙ্গে তার একমাত্র কন্যা ব্যারিস্টার জাইমা রহমানেরও দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, তারেক রহমান দেশে ফিরে যে বাড়িতে উঠবেন, সেই গুলশান এভিনিউয়ের ১৯৬ নম্বর বাসভবনটি নতুন করে সাজানো হচ্ছে। দেয়ালে শুভ্র রঙ, চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া এবং কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। বাড়ির প্রবেশদ্বারে ছোট গেট বদলে বড় গেট লাগানো হয়েছে এবং পুলিশ বক্স বসানোর কাজও প্রায় শেষ। বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমন জানান, ১৯৬ নম্বর বাড়িটি কোনো কারণে পুরোপুরি প্রস্তুত না হলে পাশেই তার মায়ের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’য় উঠবেন তিনি। এছাড়া, দেশে ফিরে তারেক রহমান গুলশানের ৮৬ নম্বর রোডে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অফিস করবেন। সেখানেও নিরাপত্তা বৃদ্ধিসহ সংস্কার কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
সূত্রমতে, লন্ডন সময় ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন তারেক রহমান। বাংলাদেশ সময় ২৫ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৯টায় তার ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান ইতোমধ্যে ঢাকায় অবস্থান করছেন। বিএনপির এই শীর্ষ নেতার প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে বিপুল জনসমাগমের প্রত্যাশা করছেন দলীয় নেতারা।
এদিকে তারেক রহমানের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সচিবালয়ে জানিয়েছেন, তার নিরাপত্তা নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই এবং সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন তারেক রহমান, এরপর দীর্ঘ সময় তাকে দেশের বাইরেই অবস্থান করতে হয়েছে।
আসন্ন নির্বাচন মোটেও সহজ হবে না এবং ষড়যন্ত্র এখনো থেমে নেই বলে নেতাকর্মীদের সতর্ক করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, সব বাধা উপেক্ষা করে যেকোনো মূল্যে দেশে নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে এবং সেই লক্ষ্যে অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করার দায়িত্ব নেতাকর্মীদের নিতে হবে। শনিবার বিকেলে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক সপ্তাহব্যাপী কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
সারা দেশ থেকে আসা ছাত্রদল ও মাঠ পর্যায়ের নেতাদের উদ্দেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় তারেক রহমান সাম্প্রতিক সহিংসতার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, গত কয়েক দিনের ঘটনা এবং চট্টগ্রামে দলীয় প্রার্থীর ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনা প্রমাণ করে যে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, ষড়যন্ত্রকারীরা পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করার চেষ্টা করতে পারে। তবে আতঙ্কিত না হয়ে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সাহসের সঙ্গে এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, দলের মধ্যকার মতপার্থক্য ভুলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, কারণ একমাত্র বিএনপিরই ষড়যন্ত্রকারীদের পিছু হটানোর শক্তি ও সামর্থ্য রয়েছে।
নেতাকর্মীদের মানসিকতা পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এখন ‘আমি কী পেলাম’ তা ভাবার সময় নয়, বরং দেশ ও জাতিকে কী দিতে পারলাম—সেটিই মুখ্য হওয়া উচিত। তিনি উল্লেখ করেন, অতীতেও যখনই দেশ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে গিয়েছে, তখনই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি দেশকে রক্ষা করেছে। এবারও জনগণকে প্রধান সহযোগী হিসেবে সঙ্গে নিয়ে এই ‘যুদ্ধে’ জয়ী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
তরুণ নেতাদের উদ্দেশে তারেক রহমান বিএনপির উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো, বিশেষ করে ফ্যামিলি কার্ড, কৃষক কার্ড, হেলথ কার্ড, শিক্ষা ও বেকার সমস্যা সমাধানসহ ৮টি বিষয় সাধারণ মানুষের কাছে সহজ ভাষায় তুলে ধরার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, এখন আর ঘরে বসে থাকার সময় নেই; ভোটের মাঠে ও সংগ্রামের ময়দানে জনগণের সমর্থন আদায়ে সবাইকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক কর্মসূচির বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের সঞ্চালনায় এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সারা দেশ থেকে আসা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতারা অংশ নেন।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলাকারীদের শেকড় যতই শক্তিশালী হোক না কেন, তা উপড়ে ফেলা হবে বলে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। শনিবার বিকেলে ঝিনাইদহের শৈলকুপায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল শরিফ ওসমান হাদিকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মহানায়ক’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, পতিত স্বৈরাচারের দোসররা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বকে ধ্বংস করতে এবং আগামী নির্বাচন বানচাল করতে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। হাদির ওপর হামলা সেই ষড়যন্ত্রেরই অংশ। তবে তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, সন্ত্রাসীদের এই উদ্দেশ্য সফল হবে না এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে। বর্তমানে চিকিৎসাধীন হাদির দ্রুত সুস্থতার জন্য তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা করেন।
আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে রাষ্ট্রের প্রধান এই আইন কর্মকর্তা বলেন, একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দিতে বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশন বদ্ধপরিকর। আগামী নির্বাচনে জনগণ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে এবং ফলাফলে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার সঠিক প্রতিফলন ঘটবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এর আগে, শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার মালিথিয়া গ্রামে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আয়োজনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় একটি বিশেষ প্রার্থনা সভায় অংশ নেন অ্যাটর্নি জেনারেল। সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন এবং বেগম খালেদা জিয়ার জন্যও সবার দোয়া প্রার্থনা করেন।
আগামী ১৪ ডিসেম্বর ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ এবং ১৬ ডিসেম্বর ‘মহান বিজয় দিবস’ যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশে পালনের জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। শনিবার এক বিবৃতির মাধ্যমে তিনি এই আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমাদের জাতীয় জীবনে ১৪ ও ১৬ ডিসেম্বরের গুরুত্ব অপরিসীম। এই দিনগুলো আত্মত্যাগ, সংগ্রাম ও গৌরবের চিরন্তন স্মারক। তিনি ১৯৭১ সালে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠায় আত্মোৎসর্গকারী শহীদ বুদ্ধিজীবী ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন এবং মহান আল্লাহর দরবারে তাদের রূহের মাগফিরাত কামনা করেন। একইসঙ্গে তিনি জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে জামায়াত আমির বলেন, ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে দেশ দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী অপশাসন, গুম-খুন ও জুলুমের কবল থেকে মুক্ত হয়েছে। দেশ যখন ভঙ্গুর অর্থনীতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, তখনো ফ্যাসিবাদের দেশি-বিদেশি দোসররা ষড়যন্ত্র থামায়নি। গত ১২ ডিসেম্বর শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনাকে তিনি দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রের প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেন। এ সময় তিনি দেশবিরোধী সকল চক্রান্ত ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে তিনি জামায়াতে ইসলামীর সকল শাখা ও দেশবাসীকে আলোচনা সভা, র্যালি ও দোয়ার মাধ্যমে দিবস দুটি পালনের নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে তিনি দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান এবং দেশের সার্বিক সুখ, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করেন।
পুরো দেশের মানুষ এখন নির্বাচনমুখী এবং নির্বাচন নিয়ে জনগণ ঐক্যবদ্ধ বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ও মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন। বিএনপিকে রাষ্ট্র পরিচালনায় একটি অভিজ্ঞ ও পরীক্ষিত রাজনৈতিক দল হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অতীতে যারা ভুল পথে রাজনীতি করেছে, তারা কখনোই জনগণের প্রকৃত কল্যাণ নিশ্চিত করতে পারেনি। তাই সচেতনভাবে ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে দেশ পরিচালনায় সক্ষম নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার জন্য তিনি নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) নগরীর পশ্চিম বাকলিয়া ডিসি রোড মিয়ার বাপের মসজিদের সামনে বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় চকবাজার থানা যুবদলের উদ্যোগে আয়োজিত দোয়া মাহফিল ও শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র এসব কথা বলেন।
নিজের দায়িত্ব পালনের অগ্রগতি তুলে ধরে মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন জানান, তিনি নগরবাসীর দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধানে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে বাকলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে এবং সামনে তা আরও কমবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি জানান, নগরীর উন্নয়ন কাজের প্রায় ৫০ শতাংশ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এবং বাকি কাজের মধ্যে খাল ও নালা সংস্কারসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
সামাজিক নিরাপত্তা ও জনকল্যাণমূলক কর্মসূচির বিষয়ে মেয়র বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় চট্টগ্রাম নগরে চার লাখ পরিবারকে ‘ফ্যামিলি কার্ড’ দেওয়া হয়েছে। এই কার্ডের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কম দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারছেন। এছাড়া বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ও পুনর্বাসন ভাতার সুবিধাও নিশ্চিত করা হচ্ছে।
চকবাজার থানা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক মো. সেলিমের সভাপতিত্বে এবং সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সোহেল ও সাদ্দামুল হকের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম-৯ আসনের ধানের শীষের মনোনীত প্রার্থী আবু সুফিয়ান।
বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ও নরসিংদী জেলা বিএনপির সভাপতি খায়রুল কবির খোকন দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেছেন, যেকোনো পরিস্থিতিতে ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সন্ত্রাসীদের এই নির্বাচন বন্ধ করার কোনো ক্ষমতা নেই। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নরসিংদী জেলা বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত এক প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয়। মিছিলটি নরসিংদী জেলা বিএনপির কার্যালয় থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রেসক্লাবের সামনে এসে শেষ হয়। মিছিলে জেলা বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলসহ সহযোগী অঙ্গসংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন।
সমাবেশে খায়রুল কবির খোকন অভিযোগ করে বলেন, স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে। তবে জনগণ ইতিমধ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তিনি এসব সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
প্রশাসনের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, সন্ত্রাসীদের কারণে যদি নির্বাচন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, তবে তার সব দায়-দায়িত্ব প্রশাসনকে নিতে হবে। সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অপরাধী যে দলেরই হোক না কেন, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। এ সময় তিনি ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হাদির ওপর হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করেন এবং বলেন, এ ঘটনায় পুলিশ প্রশাসন কী ভূমিকা পালন করে, সেদিকে জনগণ তাকিয়ে আছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ‘হাদির ওপর বর্বরোচিত হামলা গণতন্ত্রের ওপর আঘাত।’
ওসমান হাদির ওপর বর্বরোচিত হামলার নিন্দা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘হাদি আমার সন্তান সমতুল্য। হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার সংবাদ পেয়ে আমি মানসিকভাবে আহত হয়েছি। এ আঘাত গণতন্ত্রের ওপর আঘাত। যারা এই আঘাত করেছে, তাদের কালো হাত ভেঙে দিতে হবে।’
শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত ইনকিলাব মঞ্চের ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে এবং সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভপূর্ব এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘দুপুর ২টায় হাদি গুলিবিদ্ধ হন, আর এর আধাঘণ্টা পরই একটি দল উত্তেজনা সৃষ্টির জন্য ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া শুরু করে। আমি হাসপাতালে গিয়ে দেখতে পেলাম সবই পরিকল্পিত। আমি ঢাকার ছেলে। দীর্ঘ ৫০ বছর ঢাকায় রাজনীতি করি। ওই সময় আমি শান্ত ছিলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতালে যারা এগুলো করেছে, তারা হাদির সমর্থক নয়। তারা অন্য একটি দলের সদস্য। তখন আমরা শান্ত না থাকলে, হাদির চিকিৎসা ব্যাহত হতো। ওই সময় তারা চেয়েছিল, হাদির চিকিৎসা যাতে ব্যাহত হয় এবং সে যেন মারা যায়।’
এ সময় কোনো দলের নাম উল্লেখ না করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘একটি দলের ষড়যন্ত্র আমরা ৭১ সালে দেখেছি। এদের মূল শক্তিই হলো ষড়যন্ত্র। এরা স্থিতিশীল রাষ্ট্র সহ্য করতে পারে না। তাই রাষ্ট্রকে সব সময়ই অস্থিতিশীল রাখতে চায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটি মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়েছে, সে যেই হোক তার মৃত্যু কামনা করি না। হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর এক-দেড়শ লোক ফেসবুকে দেশে মব সৃষ্টির জন্য উসকানি দিয়ে পোস্ট দিয়েছেন, তারা সকলেই একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের।’
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘৭৭ সাল থেকে নির্বাচন করে আসছি। কারও সঙ্গে মারামারি হয়নি। একসাথে প্রার্থীরা কোলাকুলি করেছি, খেয়েছি। মারামারি করে আওয়ামী লীগ, আর নির্বাচনসহ রাষ্ট্রকে অস্থির করে তোলে সেই বিতর্কিত রাজনৈতিক দল।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ১৯৭১ সালের এই দিনে হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির সব বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করেছিল। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো ওই বাণীতে তিনি জাতির মুক্তির জন্য জীবনদানকারী এসব সূর্যসন্তানদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, হানাদার বাহিনী ভেবেছিল দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করলেই এ দেশ আর নিজ পায়ে দাঁড়াতে পারবে না। কিন্তু তাদের সেই অমানবিক পরিকল্পনা সফল হয়নি। শহীদ বুদ্ধিজীবীরা জাতির মানসিক ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যবোধের যে স্ফুরণ ঘটিয়েছিলেন, তা আজও জাতিকে আত্মপরিচয়ের সন্ধান দেয় এবং যেকোনো অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করার প্রেরণা যোগায়।
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীরা একটি গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু একদলীয় দুঃশাসন কায়েম করে বারবার সেই স্বপ্নকে ব্যর্থ করা হয়েছে এবং জনগণের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে দমন করা হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর থেকে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েমে নানামুখী ঝড়ঝাপ্টা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তাই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ সার্থক করতে হলে গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুজ্জীবনে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা ছিল দেশকে মেধাশূন্য করার এক গভীর চক্রান্ত। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) দেওয়া এই বাণীতে তিনি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে নিহত শিক্ষক, চিকিৎসক, সাংবাদিক ও শিল্পীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।
তারেক রহমান উল্লেখ করেন, বিজয়ের ঠিক আগমুহূর্তে দেশের এই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করার মূল উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতার বিজয়কে বাধাগ্রস্ত করা। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে এই বুদ্ধিজীবীরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিলেন এবং স্বাধীনতার পক্ষে কলম ধরেছিলেন। তাদের জ্ঞান, মুক্ত চিন্তা ও সম্প্রীতির চেতনা আজও জাতিকে অনুপ্রাণিত করে এবং একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ার প্রত্যয় জাগায়।
বর্তমান প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে গেলেও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্বপ্ন এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। বারবার গণতন্ত্রকে হত্যা করে একদলীয় দুঃশাসন চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংকটের মুখে পড়েছে। তবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদের পতনের পর আইনের শাসন, স্বাধীন বিচার বিভাগ এবং বহু মতের রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমেই শহীদদের আদর্শ বাস্তবায়ন করা সম্ভব। বাণীতে তিনি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রত্যাশার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ‘গণতন্ত্রের টর্চ বেয়ারার’ হিসেবে অভিহিত করে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী জানিয়েছেন, আগামী ২৫ ডিসেম্বর তিনি দেশে ফিরে আসছেন। শনিবার রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক কর্মশালায় তিনি এই আনন্দের সংবাদ দেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক অঙ্গনে এক নতুন জোয়ার সৃষ্টি হবে এবং নেতাকর্মীদের সেই দিন ও আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।
আমির খসরু বলেন, বিগত ১৭ বছরের নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে তারেক রহমানের নেতৃত্বে জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। ৫ আগস্টের পর দেশের মানুষের মনোজগতে যে পরিবর্তন এসেছে, তা ধারণ করে বিএনপি একটি শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল বাংলাদেশ গড়তে চায়। তবে বর্তমান সময়ে ইনকিলাব মঞ্চের নেতা হাদি ও চট্টগ্রাম মহানগরীর সভাপতির ওপর হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, যখন স্থিতিশীলতা প্রয়োজন, তখন একটি মহল ‘মবক্রেসি’ বা গায়ের জোরে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে। এ ধরনের অপরাজনীতির বিষয়ে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের চোখ-কান খোলা রাখার পরামর্শ দেন।
বিএনপির দেশ পরিচালনার ভবিষ্যৎ রূপরেখা তুলে ধরে আমির খসরু বলেন, আসন্ন নির্বাচন শুধু বিএনপির জয় নয়, এটি হবে গণতন্ত্রের জয়। ক্ষমতায় যাওয়ার প্রথম দিন থেকেই জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণে কাজ শুরু হবে। তিনি স্পষ্ট করেন যে, উন্নয়নের নামে লোক দেখানো মেগা প্রকল্প নয়, বরং শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগই হবে বিএনপির অগ্রাধিকার। রাজনৈতিক গণতন্ত্রের পাশাপাশি অর্থনীতিতেও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে এর সুফল প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক কর্মসূচির বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের সঞ্চালনায় এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে সারা দেশ থেকে আসা বিএনপি নেতারা অংশ নেন।