ভোটে পিছিয়ে থাকলেও জোটের রাজনীতিতে এগিয়েছে অনেক রাজনৈতিক দল। বড় দুই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোট করে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে কোনো কোনো দল। আবার কোনো দল থেকে সরকার পরিচালনায় মন্ত্রীও হয়েছে। আবার অনেক দল ভোটে নেই। নেই কোনো জোটে। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সমীকরণে শক্ত অবস্থানে আসতে চায় অনেক দলই।
সংবিধান অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনড় অবস্থানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ অবস্থানে সমর্থন রয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় ১৪ দলের শরিক দলগুলোর।
তবে বর্তমান সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা-এরশাদ) কোন অবস্থানে আছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। দলটির চেয়ারম্যান পদ নিয়ে এরশাদের ভাই জি এম কাদের ও স্ত্রী রওশন এরশাদের মধ্যে বরাবরই দ্বন্দ্ব চলে আসছে। জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর দলের চেয়ারম্যান পদে জি এম কাদের দায়িত্ব নিয়ে রওশন এরশাদকে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ও দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ঘোষণা দেন। তবে অন্তর্দ্বন্দ্বে জেরবার জাতীয় পার্টিতে গেল আগস্টেও দলের একাংশের সমর্থন নিয়ে নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন রওশন এরশাদ। আর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এ ঘোষণাকে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এ ঘোষণার ভিত্তি নেই। দলের শীর্ষ নেতাদের অনেকে নাম প্রকাশ না করে জানান, রওশন এরশাদ বরাবরের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৃপাধন্য হয়ে সরকারের সঙ্গে থাকতে চান, তবে সরকারবিরোধী অংশের দিকে চোখ রেখেছে জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন দলের মূল অংশ। তার সাম্প্রতিক বক্তব্যগুলোতে এর ইঙ্গিত মেলে। যদিও নির্বাচনী রাজনীতিতে বিএনপির বিরোধিতার সুফল হিসেবে এতদিন কখনো জোটে, কখনো শাসক দল আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় থেকে মাঠের চেয়ে সংসদে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে জাপা। ফলে ভোটের রাজনীতিতে দলটি কোনো পক্ষে যাবে, নাকি একক অবস্থানে থাকবে, তা হয়তো নির্ভর করবে তারা কোনো প্রস্তাব পাচ্ছে কি না তার ওপর।
অন্যদিকে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি বিএনপির। এই দাবিতে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে যোগ দিয়েছে তার পুরোনো জোট শরিক ও নতুন কিছু দল। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনরত দলের সংখ্যা প্রায় ৪৩টি।
এদিকে, বৃহৎ দুই রাজনৈতিক বলয়ের বাইরে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত অনেক রাজনৈতিক দল রয়েছে। যারা ক্ষমতাসীন পক্ষ বা আন্দোলনরত বিরোধীদের কোনো পক্ষেই অবস্থান স্পষ্ট করেনি। ভোটের মাঠে এদের শক্ত অবস্থান তেমন একটা না থাকলেও রাজনীতির মাঠে মধ্যপন্থা অবলম্বন করে বৃহৎ বলয়ের সঙ্গে দরকষাকষির কৌশলে রয়েছে দলগুলো। এ দলগুলোর অনেক নেতাই বলছেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চান তারা। তবে তারা কোনো জোটে নেই।
২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ওই ফ্রন্টের প্রধান শরিক দল ছিল বিএনপি। নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে গণফোরাম ভেঙে যায়। দলটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু ও সুব্রত চৌধুরী পাল্টা গণফোরাম তৈরি করেন। অন্যদিকে ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে গণফোরামের মূল অংশের সাধারণ সম্পাদক হন মিজানুর রহমান।
গত ২৯ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতির জন্য গণতন্ত্রহীনতা বড় সংকট আখ্যা দিয়ে এই সংকট থেকে উত্তরণে ৬ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেন ড. কামাল হোসেন। সেই সঙ্গে দ্বাদশ নির্বাচনের আগে সংলাপের আয়োজন করতে সরকারকে আহ্বান জানান তিনি।
গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান দৈনিক বাংলাকে বলেন, আমরা কর্মসূচির মধ্যে আছি। এর আগে মানববন্ধন করেছি। বিক্ষোভ মিছিল করেছি। আমাদের দলের সংসদ সদস্য সংসদে কথা বলেছেন দলের পক্ষে। ভবিষ্যতে আরও নতুন নতুন কর্মসূচি আসবে।
২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল ছিল বাংলাদেশ ন্যাপ। জোটের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে দলটির চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানী ওই নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। নির্বাচনের পর জোট ভেঙে বেরিয়ে গেলেও নতুন করে কোনো জোটে অংশ নেয়নি তার দল। দলটির মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া দৈনিক বাংলাকে বলেন, আমরা সবার অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে উভয় দলের মধ্যে সংলাপ হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। যদি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ওই নির্বাচনে অংশ নেয়, তাহলে আমরাও সেই নির্বাচনে অংশ নেব।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে থাকলেও দীর্ঘদিন থেকেই জোটের সঙ্গে নেই বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাসদ। বিএনপির নেতৃত্বে চলমান যুগপৎ ধারার আন্দোলনের দাবির মতো দাবি থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনে নেই দল দুটি। নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করছে সিপিবি-বাসদ। এসব কর্মসূচিতে যুক্ত হয়েছে সিপিবি-বাসদের নেতৃত্বাধীন বাম গণতান্ত্রিক জোট।
জোটটির অন্যতম নেতা ও সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ব্যবস্থার পরিবর্তন। বর্তমান সরকারের দুঃশাসনের বদলে বিএনপি বা অন্যদের বসানো লক্ষ্য নয়। ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা, ঐক্য ন্যাপ ও বাংলাদেশ জাসদের সঙ্গে যুগপৎ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। ফলে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই।
আদর্শগত মিল না থাকায় বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গে বাম জোট নেই বলে জানান সিপিবির সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, আদর্শিক অবস্থান থেকে বাম জোট আওয়ামী লীগ-বিএনপির দ্বিদলীয় ধারার বাইরে একটি স্বতন্ত্র ধারা সৃষ্টি করতে চাইছে।
২০১৮ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট ছাড়ার ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ জাসদ। চলতি বছরেই নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পায় দলটি। ফেডারেল পদ্ধতির শাসন চালু করে বাংলাদেশের বিভাগগুলোকে প্রদেশে পরিণত করা, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট জাতীয় সংসদ ও সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা চালু, জাতীয় সংসদ সদস্যদের স্বাধীন মত প্রকাশের সুযোগ সৃষ্টির জন্য ৭০ ধারার সংশোধন, স্বশাসিত, শক্তিশালী ও সংসদীয় পদ্ধতির স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় মার্কা বাতিল, স্থানীয় সরকার কমিশন গঠনসহ ৮ দফা দাবি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জাসদ।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তনশীল বলে মনে করছেন বাংলাদেশ জাসদ সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া। দৈনিক বাংলাকে তিনি বলেন, আমরা সবার অংশগ্রহণে আগামী সংসদ নির্বাচন চাই। বর্তমান সরকার যেভাবে নির্বাচন করতে চাচ্ছে, সেই নির্বাচনে অংশ নেয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এখন আমরা কোনো জোটে নেই। ভবিষ্যতের রাজনীতি ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক ভূমিকা কী ছিল, কোন সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন তা জাতি জানতে চায়। আপনারা কোন সেক্টর কোন কমান্ডারের অধীনে যুদ্ধ করেছেন?’
সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় বৃহস্পতিবার দুপুরে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর পক্ষ থেকে যুব এশিয়া কাপ বিজয়ী ক্রিকেটার ইকবাল হোসেন ইমনের পরিবারকে শুভেচ্ছা উপহার প্রদানকালে তিনি এ বক্তব্য দেন। সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের বক্তব্য ‘দেশে পরীক্ষিত দেশপ্রেমিক শক্তি দুটি, একটি সেনাবাহিনী, আরেকটি জামায়াত’-এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘একটি রাজনৈতিক দল বলেছে দেশপ্রেমিক তারা এবং সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনী দেশপ্রেমিক নিঃসন্দেহে। কারণ তাদের পূর্বসূরিরা এই বাংলাদেশ নির্মাণে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন, তার অন্যতম মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানেও সেনাবাহিনী উজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি ইসলামপন্থি সেই রাজনৈতিক দলকে বলতে চাই, ৭১-এ আপনাদের রাজনৈতিক ভূমিকা কী ছিল? কোন সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন, কোন সেক্টর কমান্ডারের আন্ডারে যুদ্ধ করেছেন? বাংলাদেশে কেউ দেশপ্রেমিক নেই, শুধু একটি রাজনৈতিক দল দেশপ্রেমিক– এ ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি করলে মানুষ হাসবে, মানুষ হাসি ছাড়া আর কিছু দেবে না।’
রিজভী বলেন, ‘এই জাতির ঘাড়ে একটি জগদ্দল পাথর চেপে বসেছিল। এই পাথর এত ভারী যে গোটা জাতিকে রুদ্ধশ্বাস অবস্থায় রেখেছিল। মানুষ নিশ্বাস নিতে পারতো না। মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারতো না। রাজনৈতিক দল ও তার কণ্ঠের স্বাধীনতা ছিল না। মিছিল করতে পারতো না, মিটিং করতে পারতো না। পুলিশ অনুমতি দেওয়ার পর যুবলীগ-ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দেওয়া হতো।’
তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুলিশ, র্যাব বিনা কারণে বিনা ওয়ারেন্টে রাতে বাসায় গিয়ে পরিবারের নারীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করত। যাকে খুঁজতে গিয়েছে তাকে না পেলে পরিবারের মেয়েদের পর্যন্ত গ্রেপ্তার করে নিয়ে এসেছে।’ ‘শেখ হাসিনা নিজের ক্ষমতাকে নিরাপদ করার জন্য, কণ্টকমুক্ত থাকার জন্য- যে বাংলাদেশে ৩০ লাখ মানুষ অকাতরে জীবন দিয়েছে, দুই লাখ নারী নির্যাতিত হয়েছে, এই যে স্বাধীনতা, এই স্বাধীনতা কলঙ্কিত করেছে শেখ হাসিনা। সিলেটের কৃতী সন্তান ইলিয়াস আলী আজ নেই কেন? শেখ হাসিনার জন্য। কারণ ইলিয়াস আলী দেশের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন, তিনি টিপাইমুখ বাঁধ অভিমুখে লংমার্চ করেছিলেন। মানুষ বলে এজন্য তাকে নিরুদ্দেশ করে দেওয়া হয়েছে। কত যুবদল, ছাত্রদলের ছেলে ক্রসফায়ারের শিকার হয়েছেন, গুমের শিকার হয়েছেন, তার ইয়ত্তা নেই। এই ভয়ংকর মানবতাহীন কাজ করেছেন সাড়ে ১৫ বছর শেখ হাসিনা।’
তিনি বলেন, ‘এখন আমরা খবরের কাগজে দেখতে পারছি জুলাই-আগস্ট হত্যার বিচার এক বছরের মধ্যে সম্পন্ন হবে। ড. ইউনূসের প্রতি আমাদের সবার শ্রদ্ধা আছে, এই সরকার তো সর্বজনীন, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের পক্ষের সরকার।’ রিজভী বলেন, ‘শুধু জুলাই আগস্টে যারা নিহত হয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন, শুধু সেসব অপরাধের বিচার হবে, ইলিয়াস আলীর বিচার হবে না? চৌধুরী আলমের বিচার হবে না? সাড়ে ১৫ বছর যারা ক্রসফায়ারের শিকার হয়েছেন, তাদের বিচার করবেন না? যারা ক্রসফায়ার দিয়েছেন, শীতলক্ষ্যা নদীতে সাতটি লাশ ভাসিয়ে দিয়েছেন, সেসব দুর্বৃত্ত র্যাবের অফিসারদের বিচার হবে না? যে অপরাধ করেছে শেখ হাসিনা, যে কসাইয়ের ভূমিকা পালন করেছে, তার বিচার হবে না?’ জুলাই-আগস্টে আত্মদানকারী ছাত্র-জনতার অবদানকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের যেমন বিচার হবে, তেমনি গণতন্ত্রকে উদ্ধারের জন্য যারা অকাতরে জীবন দিয়েছেন, নিরুদ্দেশ হয়ে গেছেন, তাদের কেন বিচার হবে না? হওয়া উচিত। এভাবে বিভাজন রেখা টানলে তা দুঃখজনক।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, ‘স্কুলে পাঠ্যবই সম্পূর্ণ সরবরাহ করা যায়নি, সেটি ভিন্ন ব্যাপার। কিন্তু সেখানে ইতিহাসের বইয়ে তারা কিছু কাজ করেছেন, প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। এখানে এই জাতির বিবেকবানদের জন্য যে অধ্যায় করা হয়েছে, তাতে আমরা দ্বিমত করছি না। সেখানে শেরেবাংলা একে ফজলুল হক, মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার ঘোষণা থেকে মুক্তিযুদ্ধের অধ্যায় রাখা হলো না কেন?’
রিজভী আরও বলেন, ‘জিয়াউর রহমান তো শুধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে শেষ হয়ে যাননি, যুদ্ধ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের অধ্যায় থাকবে না কেন? যারা প্রবাসী সরকার হয়েছিল, সেটা থাকবে, সেটার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের একটা অধ্যায় থাকতে হবে। যতটুকু হয়েছে তার জন্য ধন্যবাদ জানাই; কিন্তু অসম্পূর্ণ থাকবে কেন?’
তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ একটি বড় ধরনের ঘটনা, শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধিকারের আন্দোলন করেছেন, সেটিতে স্বাধীনতার জন্য একটি মাঠ প্রস্তুত হয়েছে, কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা যুদ্ধে কোনো বিশেষ ঘোষণা বা প্রস্তুতির কথা বলেননি। সেই আহ্বান তার নেই। প্রকৃত সত্য হচ্ছে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন জিয়াউর রহমান এবং যুদ্ধ হয়েছে ৯ মাস। সেই অধ্যায়টি রাখা হয়নি। আমি সরকারকে অনুরোধ করব, স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস হওয়া উচিত।’
আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছ, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ।
জনগণ সঙ্গে না থাকলে কী হয়, তা ৫ আগস্ট দেখিয়ে দিয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, সামনের জাতীয় নির্বাচন এত সহজ নয়। আমরা যদি ভুল করি তাহলে জনগণ আবার কোনো একটা কিছু দেখিয়ে দেবে। তখন কিন্তু পস্তাতে হবে। রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। সভায় ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এসব কথা বলেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের কাছে স্পষ্ট উদাহরণ রয়েছে, জনগণ যখন ক্ষিপ্ত হয়, তখন কীভাবে স্বৈরাচারকে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, জনগণের সমর্থন যদি পেতেই হয় তাহলে কেন আমরা ভালোভাবে নেওয়ার চেষ্টা করবো না। সহকর্মীবৃন্দ দিন শেষে জনগণের কাছে আপনাকে যেতে হবে। জনগণ যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে আপনার আমার কোনো স্থান নেই। নিজেকে যত বড় কিছুই মনে করি না কেন।
তারেক রহমান বলেন, এখনো সময় আছে, আসুন আমরা জনগণের পাশে থাকি। যারা এমন করছে বা করবে যা আপনাকে আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে; আমরা তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলব। তারেক রহমান বলেন, জনগণ যেন বুঝে তারা যেভাবে চায় আমরা সেভাবেই আছি। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী আমরা তাদের পাশে রয়েছি। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকীতে এই হোক আমাদের শপথ। দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান আরও বলেন, অন্য কেউ যদি সরকার গঠন করে তাহলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে হোক বা আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটের শত্রু হোক সেটা কি জাতির জন্য ভালো হবে? আপনাদের মাথায় এতটুকু সেন্স থাকতে হবে।
এখনো সময় আছে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর, মানুষ যেভাবে চায় সেভাবে চলার। দিনশেষে রাজনৈতিক দল হিসেবে, রাজনৈতিককর্মী হিসেবে মানুষের কাছে, ভোটারের কাছে আপনাকে যেতে হবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, কিছু রাজনৈতিক দল তারা বিভিন্নভাবে আমাদের বিপক্ষে ওই মোটরসাইকেল ওয়ালাদের কিছু কাজের কারণে তাদের সাথে আমাদের নেতা-কর্মীদের যুক্ত করে কিছু কিছু কথা বলার চেষ্টা করছে। আমাদের সতর্ক সচেতন হতে হবে। কয়েক মাস ধরে বলছি, সামনের নির্বাচন এত সহজ নয়, যত সহজ আপনারা ভাবছেন। ভাবতে পারেন বিএনপির তো গ্রাম পর্যন্ত শাখা প্রশাখা রয়েছে; এত বড়াইয়ের কিছু নেই।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন দলের প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, ভাইস চেয়ারম্যান আহমদ আজম খান, কবি সাংবাদিক আব্দুল হাই শিকদার, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি প্রমুখ।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশে আবার চক্রান্তের খেলা শুরু হয়েছে। কারও নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, “কী করে যারা সত্যিকারে বাংলাদেশে বিশ্বাসী, যারা জোর গলায় বলতে পারে ‘সবার আগে বাংলাদেশ’- সেই দলকে, সেই নেতাকে তারা দূরে সরিয়ে রাখতে চাচ্ছে। এই চক্রান্ত বহুবার হয়েছে, আজকে আবার শুরু হয়েছে।”
রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বুধবার সন্ধ্যায় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম ওই মন্তব্য করে এ কথাগুলো বলেন।
এই সময়কার রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সংকটের কথা উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এই সংকটের একমাত্র সমাধান হতে পারে সবার কাছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। এটা ইতিহাসে প্রমাণিত। আমরা সে কথাই বারবার বলে আসছি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশে আবার সেই চক্রান্তের খেলা শুরু হয়েছে। যেটা অতীতেও হয়েছে বহুবার। বাংলাদেশ নিয়ে আবার দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। যার ফলে আমরা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হারিয়েছি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ছয় বছর কারাগারে থাকতে হয়েছে, যার ফলে তারেক রহমানকে এখনো পর্যন্ত বিদেশে থাকতে হচ্ছে। এই চক্রান্ত আবার শুরু হয়েছে।’
এই ষড়যন্ত্র সফল হবে না বলে জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা খুব পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, বাংলাদেশের মানুষ কোনো দিনই তাদের চক্রান্ত সফল হতে দেবে না। বিএনপিকে ভেঙে ফেলার চেষ্টা বহুবার হয়েছে। কখনোই ভেঙে ফেলা সম্ভব হয়নি। বিগত তথাকথিত নির্বাচনের সময়ও চেষ্টা হয়েছে, একটা ছাড়া দুইটা লোককে তারা সরিয়ে নিতে পারেনি। কারণ, বিএনপির যে রাজনীতি- এটা এ দেশের মানুষের রাজনীতি। সে রাজনীতি কী, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং গণতন্ত্র—এই তিনটি জিনিসের ওপর বিএনপির রাজনীতি, মূল ভিত্তি।’
মির্জা ফখরুল আবারও দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘সংস্কারের নাম করে আমরা এমন কিছু হতে দিতে পারি না, যাতে গণতন্ত্রকে বিঘ্নিত করবে। সরকারের প্রতি আহ্বান জানাতে চাই আর বিলম্ব না করে অনুগ্রহ করে অতি দ্রুত একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করে বাংলাদেশের মানুষকে সংকট থেকে মুক্ত করতে হবে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ফ্যাসিবাদকে তাড়িয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমরাই তৈরি করেছি। আমরা আশা করছি যে অন্তর্বর্তী সরকার ন্যূনতম যে সংস্কারগুলো প্রয়োজন, অর্থাৎ আমাদের নির্বাচন-সংক্রান্ত যে সংস্কার, একটা লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা, প্রশাসনযন্ত্রকে ঠিক করা, বিচারব্যবস্থাকে সংস্কার করা এবং ন্যূনতম অর্থনৈতিক সংস্কারগুলো করা। তার মধ্য দিয়ে একটা নির্বাচন অনুষ্ঠান করা, যেটা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।’
বক্তব্যের শুরুতে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে দেশ থেকে পালাতে বাধ্য করায় দেশের সব গণতন্ত্রকামী মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা জানান বিএনপির মহাসচিব। ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ছাত্রদল হচ্ছে আমাদের ভ্যানগার্ড। তাদের এখন জ্ঞানভিত্তিক রাজনীতি করতে হবে। সবচেয়ে যেটা প্রয়োজন, আমাদের সাইবার যুদ্ধ করতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের অবস্থান বেশি করে রাখতে হবে। এটি যদি করতে না পারি, তাহলে আমরা এই যুদ্ধে হেরে যাব। মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় তোমাদের অ্যাকটিভিটি বাড়াও। দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে মেধা-বুদ্ধি দিয়ে রুখে দাঁড়ানো।’
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন। এ ছাড়া সংগঠনের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে শামসুজ্জমান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন, আমানউল্লাহ আমান, খায়রুল কবির, নাজিমউদ্দিন আলম, শহীদউদ্দীন চৌধুরী, আজিজুল বারী হেলাল, সুলতান সালাউদ্দিন, আবদুল কাদের ভূঁইয়া, হাবীবুর রশীদ, বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম বকুল প্রমুখ।
নির্বাচন হলে দেশের সব সংকট কেটে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আমরা অন্তর্বর্তী সরকারেই সমর্থন করছি। তবে দেশের অর্থনীতির অবস্থা ভালো না, রাজনৈতিক অবস্থাও ভঙ্গুর। আমরা সংস্কার চাই না, এটা ভুল। আমরা সংস্কারও চাই, দ্রুত নির্বাচনও চাই। কারণ, নির্বাচন হলে সব সংকট কেটে যাবে।
শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এবি পার্টির জাতীয় কাউন্সিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ফখরুল বলেন, সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অবস্থানের ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের দেশেরই কিছু মানুষ এই ঐক্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করছেন। আমি জানি, সে চেষ্টা সফল হবে না। তিনি বলেন, ‘আমরা অবশ্যই সম্মিলিতভাবে আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হব বলে আমি বিশ্বাস করি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বৈষম্য দূর করতে তরুণদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একটা নতুন বাংলাদেশ দেখতে চাই। এখানে আমাদের কোনও বিভেদ নেই। তবে আমাদের ঐক্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করা হয়েছে। সেটা পারবে না। আমরা এগিয়ে যাব। আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। হঠকারী সিদ্ধান্ত না নিই।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশকে নতুন করে নির্মাণ করার যে স্বপ্ন আমরা দেখছি, সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের একটু ধৈর্য ধারণ করতে হবে। হঠকারিতা করে, ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে, ভুল পদক্ষেপ নিয়ে- সেই সম্ভাবনাকে বিনষ্ট না করি, সেটা আমাদের সবসময় লক্ষ্য রাখতে হবে।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এখন যেটা প্রয়োজন, সব উসকানির পরেও আমরা যেন সিদ্ধান্তে অটল থাকি। একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যেতে চাই, বৈষম্য দূর করতে চাই, বাংলাদেশের তরুণদের হাতে হাত মিলিয়ে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একটা নতুন বাংলাদেশ দেখতে চাই। এখানে আমাদের কোনও বিভেদ নেই।’ মির্জা ফখরুল বলেন, ভয়াবহ দানবের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছি। নতুন দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছি। এটা যাতে নষ্ট না হয়ে যায়, সেই চেষ্টা করতে হবে। ১৬ বছর ধরে আমরা গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করেছি। এই ১৬ বছরে বিএনপির ৬০ লাখ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা হয়েছে। ৭০০ জন গুম হয়েছে। নিহত হয়েছে ২০ হাজারের মতো।
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব ভালো নয়। রাজনৈতিক দিক দিয়ে ভঙ্গুর অবস্থায় আছে। আমরা সেটাকে একসঙ্গে লড়তে (মোকাবিলা করতে) চাই। সবাই মিলে এই সমস্যাগুলোকে সমাধান করতে চাই।’ নির্বাচনের পরে একটা ঐক্যবদ্ধ জাতীয় সরকার গঠন করতে চায় বিএনপি জানিয়ে ফখরুল বলেন, ‘সবাই মিলে রাজনৈতিক সমস্যাগুলোর সমাধান করতে চাই। যারা অন্যান্য দলে আছে তারা অবশ্যই এটা ভাববেন ও চিন্তা করবেন। তারা তাদের যে মতামত সেটা দেবেন।’
বিএনপি সংস্কারের কথা আগেই বলেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা সংস্কারের কথা আগেই বলেছি, আবারও বলছি আমরা সংস্কার চাই। কিছু কিছু মানুষ আছেন, তারা একটু বুঝানোর চেষ্টা করেন যে, আমরা সংস্কারের আগেই নির্বাচন চাই বা নির্বাচনের জন্য অস্থির হয়ে গেছি। বিষয়টা তেমন না। আমরা যেটা বলছি, নির্বাচন কেন দ্রুত চাই? এই কারণে দ্রুত চাই যে, নির্বাচনটা হলেই আমাদের শক্তি আরও বাড়বে। সরকার থাকবে, সংসদ থাকবে। যে সংকটগুলো সৃষ্টি হয়েছে সেগুলো দূর হয়ে যাবে।’ বর্তমান সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাবেন জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘তাদেরকে আমরা সমর্থন দিয়েছি। সমর্থন দিয়ে যাচ্ছি। তাদের পক্ষে সম্ভব… আমরা একটা পথ খুঁজে পাবো, যে পথে আমরা সবাই এগিয়ে যেতে পারব।’ তিনি বলেন, ‘৫ মাস পরে অনেকেই জিজ্ঞেস করছেন আমাদের অর্জন কী? অর্জন হচ্ছে আজকে আমরা এখানে দাঁড়িয়ে নিঃসংকোচে, নির্ভয়ে কথা বলতে পারছি। এটাই আমাদের একটা বড় বিজয় বলে মনে করি। এখানে এবি পার্টিরও একটা বড় ভূমিকা আছে।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশকে রক্ষা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ঐক্য অপরিহার্য হলেও একটি মহল জাতিকে বিভক্ত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, 'আমি সবাইকে বিভাজনের রাজনীতি পরিহার করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'দেশকে বাঁচাতে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ঐক্য।’
আজ বৃহস্পতিবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে 'রাজবন্দীর জবানবন্দী' বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এই আহ্বান জানান।
বইটিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার 'মিথ্যা' মামলায় আদালতে দেওয়া জবানবন্দী সম্পর্কে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
ফখরুল বলেন, সংস্কার অবশ্যই প্রয়োজন, কিন্তু এসব সংস্কারের পেছনে চালিকাশক্তি হিসেবে নির্বাচিত সংসদ ও সরকার থাকতে হবে। ‘এটি ছাড়া আমরা কখনোই সংস্কারকে বৈধতা দিতে পারব না। আমি এখন এ নিয়ে বিতর্কে জড়াতে চাই না।’
তিনি বলেন, 'আমি দেশের সকল গণতন্ত্রকামী ও স্বাধীনতাকামী মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। বিভক্ত হবেন না। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়, কিছু মানুষ দেশ ও দেশের মানুষকে বিভক্ত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
তিনি আরও বলেন, জাতিকে বিভক্ত করার উদ্দেশে কিছু লোক উসকানিমূলক বক্তব্যও দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে এবং দেশে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা থেকে বিরত থাকতে রাজনীতিবিদদের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি নেতা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। আমরা কোনো চক্রান্তের কাছে মাথানত করব না।’ শনিবার ঠাকুরগাঁও পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে জেলা ছাত্রদলের আয়োজনে এক সমাবেশে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে তিনি একথা বলে।
ছাত্রদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আপনারা জানেন গত ১৫ বছর আমরা আন্দোলন করেছি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ সরকার শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। রাজনীতিকে ধ্বংস করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছিল। অসংখ্য ছাত্রকে হত্যা করেছিল। কিছুদিন আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তারা (আওয়ামী লীগ) কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রীকে হত্যা করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে, তারা গায়ের জোরে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। দেশের সবকিছু ধ্বংস করে দেয়। আজকে তোমাদের আন্দোলন একই সঙ্গে জনগণের আন্দোলন সব মিলিয়ে হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে গেছে। ফ্যাসিবাদকে যখন বিতাড়িত করতে সক্ষম হয়েছি, তখন আমাদের সামনে একটি সম্ভাবনার দ্বার এসে উপস্থিত হয়েছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের যেটা প্রয়োজন তা হচ্ছে ঐক্য। বিশেষ করে জনগণের ঐক্যের সঙ্গে ছাত্রের ঐক্য। ছাত্রদের উদ্দেশে একটি কথা বলতে চাই, সবার আগে পড়াশোনা করতে হবে। পড়াশোনা করে ভালো ফলাফল করতে হবে এবং নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে।’ বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এ দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে চাইব, আমরা গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে চাইব। মানুষের অধিকারকে রক্ষা করতে চাইব। সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে অক্ষুণ্ণ রাখব। এ বিষয়গুলো সামনে রেখে আমাদের এগুতে হবে।’ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যারা যুদ্ধ করেছিল শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ঘোষণার মধ্যদিয়ে, তারা সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক দেশ চেয়েছিলেন। তারা বৈষম্যবিহীন রাষ্ট্র চেয়েছিলেন। আজকে সবখানে বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। দুর্নীতি হয়েছে। আমাদের বৈষম্য ও দুর্নীতিকে দূর করে জনগণের একটা সরকার যেন প্রতিষ্ঠা করতে পারি। পার্লামেন্ট করতে পারি। জনগণ যেন ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করতে পারি সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে।’
গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিএনপিতে নেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাব চত্বরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাব চত্বরে গতকাল শীতার্ত ব্যক্তিদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পরে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক সাংবাদিক বলেন, সারা দেশে বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগের নেতারা বিএনপিতে যোগদান করছেন। এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিবের কাছে জানতে চান। তখন মির্জা ফখরুল বলেন, ‘(বিষয়টি) আমার জানা নাই। আমরা অন্তত এটুকু বলতে পারি যে আমাদের এখানে নির্দেশ দেওয়া আছে- এই মুহূর্তে যারা সন্ত্রাসী, যারা গণহত্যার সঙ্গে জড়িত হয়েছিল, যারা দুর্নীতি করেছে, তাদের কাউকে বিএনপিতে নেওয়া হবে না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ঠাকুরগাঁওয়ে শীত বেশি হওয়ায় এখানকার মানুষ খুব কষ্ট পায়। আমরা আশা করেছিলাম সরকারের তরফ থেকে দুস্থ মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই ধরনের কোনো উদ্যোগ দেখতে পাইনি। তাই আমরা নিজেরাই দলের পক্ষ থেকে সামান্য শীতবস্ত্র সংগ্রহ করেছি। আমি আশা করব, সরকার এ ব্যাপারে এগিয়ে এসে শীতে দুস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে কম্বল বিতরণ করবে।’
ফ্যাসিবাদ থেকে উত্তরণের উপায় সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দুর্নীতি ও ফ্যাসিবাদ থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হচ্ছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করা। জনগণের যে শাসন, সেই শাসনকে স্থাপিত করতে হবে। অর্থাৎ জনগণের নির্বাচিত যে পার্লামেন্ট, সেই পার্লামেন্ট দিয়েই দেশ পরিচালনা করতে হবে। এ ছাড়া অন্য কোনো উপায় আছে বলে আমার জানা নেই। গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠানগুলো যদি নির্মাণ করা যায়, তাহলে সেটাই হবে সবচেয়ে বড় রক্ষাকবচ।’
এ সময় ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, পৌর বিএনপির সভাপতি শরিফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক তারিক আদনান, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মো. কায়েস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সত্যি সত্যি পরিবর্তন চাইলে, সংস্কার চাইলে আবারও ৫ আগস্টের মতো ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাস্তায় নামতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সোমবার বিকেলে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা বিএনপি আয়োজিত শিবগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ মাঠে এক জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে এ মন্তব্য করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল তার ভাষণে ১৯৭১ সাল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাসের সারমর্ম নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরেন। এ বক্তৃতায় তিনি বলেন, এখানে অনেকেই ৭১ সালের যুদ্ধের কথা বলতে পারবে না। আমরা ১৯৭১ সালে যারা যুদ্ধ করেছি তাদের লক্ষ্য ছিল আমাদের একটা স্বাধীন দেশ পাব। পাকিস্তানিরা আমাদের ওপর আর অত্যাচার করতে পারবে না। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাত থেকে আমরা রক্ষা পেয়েছিলাম যুদ্ধ করে। লক্ষ লক্ষ মানুষ সেখানে শহীদ হয়েছিল। আমরা হিন্দু-মুসলমান ভাইয়েরা ঘরবাড়ি ছেড়ে ভারতে চলে গিয়েছিলাম। আমরা সেগুলো ভুলি নাই। আমাদের বাড়িঘর পাক হানাদার বাহিনী লুট করে নিয়ে গিয়েছিল। এরপর স্বাধীন হলাম যুদ্ধ করে। একটা দেশ পেলাম, স্বাধীন বাংলাদেশ। আমাদের আশা ছিল, ভরসা ছিল শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের বড় নেতা। তিনি পাকিস্তান থেকে এসে আমাদের একটা সুন্দর শান্তির দেশ দেবেন। যেখানে পরস্পর ভাই ভাই হয়ে বাঁচব। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের! আমরা সেটা পাই নাই। সে স্বাধীনতার পর থেকে শুরু হয়ে গেছে এ দেশে হানাহানি-কাটাকাটি, খুন, জখম, হিংসা।
ইতিহাস তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যপার যে নেতাকে (শেখ মুজিব) এত মানুষ ভালোবাসল, যে দলটাকে (আওয়ামী লীগ) এত মানুষ ভালোবাসল- সে দলটাই এ দেশের মানুষের ওপরে চড়াও হয়ে গেল।
তিনি বলেন, দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে আমরা লড়াই-সংগ্রাম করছি। পরিবর্তন এমনি এমনি হয়ে যায় নাই। এ দেশটা আমাদের সবার।
সংস্কার বিষয়ে মির্জা ফখরুল জনসভায় বলেন, তিনি বুঝতে চান সংস্কার কী? তিনি বলেন, সংস্কার কি আপনারা জানেন, আমাকে জানাতে হবে। আমি বুঝি না সংস্কার কী?
মির্জা ফখরুল বলেন, আমি সংস্কার বলতে এটুকু বুঝি আমার একটা পরিবর্তন লাগবে। পরিবর্তনটা কী? যেন আমার ভোটটা আমি নিজে দিতে পারি। এটা নিশ্চিত করতে হবে। আর পার্লামেন্টে যেন আমাদের কথাটা আলোচনা হয়। কৃষক ন্যায্য দাম পায়, শ্রমিক যেন ন্যায্য মজুরি পায়। আমরা দিনের শেষে একটু শান্তিতে ঘুমাতে পারি।
জনগণের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা কি সত্যি সত্যি পরিবর্তন চান, নাকি আবারও ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের নৌকায় ফিরে যেতে চান? যদি না চান তাহলে কিন্তু যেমন ৫ আগস্ট ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন, আবারও ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাস্তায় নামতে হবে। রাস্তায় নামতে হবে, ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য, ভাতের অধিকার এবং ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য, সামাজিক মর্যাদা পাওয়ার জন্য।
এ সময় বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা নাই উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, কেউ যদি এ দেশে সাম্প্রদায়িক হানাহানি হচ্ছে এমন কথা বলেন, তাহলে এ কথা আমরা মানতে রাজি না। কারণ, আমরা সবাই একে অপরের সঙ্গে মিলেমিশে থাকি।
এ সময় বিএনপির জেলা-উপজেলার নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন স্তরের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘পালিয়ে গিয়ে হাসিনা ভারত থেকে ষড়যন্ত্র করছে। মিথ্যা প্রচারণা করছে। আমাদের হিন্দু ভাইয়েরা বসে আছেন। এই দেশে নাকি আপনাদের ওপর অত্যাচার হচ্ছে। নির্যাতন হচ্ছে, কারো কাছে চাঁদা চাওয়া হচ্ছে। আপনারা বলেন তো এরকম কোথাও কি হয়েছে, হয়নি।’
সাম্য সম্প্রতি মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে রোববার বিকেলে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার সাকোয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
ফখরুল বলেন, ‘আমরা এ অঞ্চলের মানুষ শান্তি প্রিয়। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাই এক সঙ্গে বাস করি।’
তিনি বলেন, সেনাবাহিনী শেখ হাসিনাকে দুটো চয়েজ দিয়েছিল। দুটোর মধ্যে একটাকে বেছে নেবেন। একটা হচ্ছে প্রচুর দিক থেকে জনগণ আসছে। উত্তাল সমুদ্রের মতো, তাদের দিয়ে কি পৃষ্ট হবেন, নাকি জান বাঁচানোর জন্য পালিয়ে যাবেন। সেই মহিলা জীবন বাঁচানোর জন্য নেতা-কর্মীসহ সবাইকে বিপদে ফেলে পালিয়ে গেছে। এই হচ্ছে ফ্যাসিবাদের পরিণতি।’
মহাসচিব বলেন, ‘গত ১৫ বছর কেউ ভোট দিতে পেরেছেন, পারেন নাই। আমরা সকল জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে চাই। দেশকে গড়ে তুলতে চাই। শেখ হাসিনা নির্বাচনের নাম করে ক্ষমতায় যায়। পরে গুম করে খুন, করে হাসিনা জোর করে ক্ষমতায় ছিল। এটাই হচ্ছে ফ্যাসিবাদী সরকার। ফ্যাসীবাদিদের ষড়যন্ত্র চলছে তারা দেশকে বিভক্ত করতে চায়। তাদের সকল অপচেষ্টা প্রতিহত করতে দেশের মানুষকে এক হয়ে লড়তে হবে।’
জনসভা উপলক্ষে সকাল থেকেই হাজার হাজার নেতা-কর্মীর ঢল নামে। দুপুরের মধ্যেই লাখো মানুষে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে জনসভা স্থল। সনাতন ধর্মালম্বি, উপজাতীরা সহ সর্বস্তরের মানুষ জনসভায় যোগ দেয়। বোদা-দেবীগঞ্জ উপজেলা ও পঞ্চগড় পৌর শাখা বিএনপি এ সমাবেশের আয়োজন করে।
সমাবেশে বিএনপির নির্বাহী কমিটির পল্লি উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ফরহাদ হোসেন আজাদের সভাপতিত্বে, বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন, সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, কেন্দ্রীয় বিএনপির আন্তজার্তিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার মোহাম্মদ নওশাদ জমির, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাহিরুল ইসলাম কাচ্চুসহ বিভিন্ন জেলার বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমাদের গণতান্ত্রিক যুদ্ধ শেষ হয়েছে। কিন্তু ঐক্যের সঙ্গে দেশ নির্মাণ করার যে পথরেখা দেখাবে, এই জায়গায় আমাদের এখনো ব্যর্থতা আছে।’
শুক্রবার সকালে দিনাজপুর সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সুবর্ণজয়ন্তী ও গুণীজন সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান জাহেদা পারভীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে দিনাজপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম আল আবদুল্লাহ, ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আ ন ম গোলাম রব্বানী, দিনাজপুর সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আবদুল জব্বার, পীরগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আবদুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যারা রাজনীতি করছি, আমাদের ব্যর্থতা ৫৩ বছরেও বাংলাদেশকে একটা সুখী, শান্তিময়, প্রেমময় দেশ গড়তে পারলাম না। আমরা রাজনীতি নিয়ে সংকীর্ণতায় ভুগি এবং নৈতিকতার সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে গেছি। আমরা যে গর্বিত জাতি, কিছুদিন আগেও সেটা বলতে পারিনি। এখন আবার সেই আশা জেগে উঠেছে, আমরা একটা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি। সত্যিকার অর্থে স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সুখী, সুন্দর, প্রেমময়, গণতান্ত্রিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণ করার, আমরা সেই চেষ্টা করছি। আমাদের গণতান্ত্রিক যুদ্ধ শেষ হয়েছে। কিন্তু ঐক্যের সঙ্গে দেশটাকে নির্মাণ করার যে পথরেখা দেখাবে, এই জায়গায় আমাদের এখনো ব্যর্থতা আছে।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রের কথা বলি, কিন্তু গণতন্ত্রের চর্চা করি না। ১৫ বছর ভোট দিতে পারিনি। এ কেমন গণতন্ত্র, যেখানে মানুষ তার অধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ হারিয়ে ফেলে। বাংলাদেশে পরপর গণতন্ত্রকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। ফলে এখানে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো তৈরি হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে বিরোধে লিপ্ত হয়েছে। যদি সহনশীলতার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র চর্চা করে এগিয়ে যেতে পারি, তাহলে সত্যিকার গণতন্ত্র লাভ হবে। আমরা অধিকার অর্জন করতে পারব।’
দেশে নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের ছেলেরা, রাজনৈতিক কর্মীরা জীবন দিয়েছেন। দীর্ঘদিন অস্বাভাবিক-অমানবিক নির্যাতন সহ্য করেছেন। আমাদের ৮০০ নেতা-কর্মীকে গুম করা হয়েছে। ৬০ লাখের অধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। কী ভয়ংকর অবস্থা আমরা পার হয়েছি। আজ নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কিন্তু কেন জানি না, আমরা সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠতে পারছি না। সংশ্লিষ্ট সবার কাছে আবেদন জানাব- আসুন, আমরা উঠে দাঁড়াই। সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে দাঁড়িয়ে সুস্পষ্ট সত্য সুন্দর একটা পথ নির্ধারণ করি। যে স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম, সেই স্বপ্নকে আমরা বাস্তবায়ন করি।’
তরুণদের প্রশংসা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের তরুণরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে নতুন বাংলাদেশ নির্মাণে মতামত নিচ্ছে দেখে মনে হলো অমিত সম্ভাবনাময় আমাদের ছেলেমেয়েরা। তারা দেশপ্রেমের কথা, পরিবর্তনের কথা বলছেন। সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশ নির্মাণ করার একটা পথও তারা দেখাতে পারেন। সুতরাং নেতিবাচক চিন্তা করলে হবে না। আমাদের পরস্পরকে সহনশীলতার মধ্য দিয়ে আনতে হবে, সম্মান করতে হবে। আমি যে রাজনৈতিক চিন্তাই করি না কেন, যদি দেশপ্রেম থাকে, দেশের প্রতি ভালোবাসা থাকে, তাহলে নিশ্চয়ই আজকে যে সুযোগ এসেছে, সেই সুযোগের যেন সদ্ব্যবহার আমরা করতে পারি।’
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, ‘আমাদের দেশের সব সম্পদকে লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। প্রতিবছর ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। সেই হিসাবে গত ১৫ বছরে ২৮০ বিলিয়নের ওপরে পাচার হয়েছে। এরা তো এ দেশেরই মানুষ। রাজনীতির কথা বলেই তারা এসেছিলেন। কিন্তু ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছেন। সমস্ত ক্ষমতা ও রাষ্ট্রকে দখলে নিয়ে রাষ্ট্রে একটা ভয়ভীতি তৈরি করেছিলেন। আমরা সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে এসেছি। আমরা নতুন করে বাংলাদেশকে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করব।’
শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন খুব সংকট ও বিপর্যয়ের সামনে। ফ্যাসিবাদী সরকার ১৫ বছরে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এ দেশের অর্থনীতিকে সচল করার জন্য যে নীতি নির্ধারণ করার দরকার, তোমাদের মধ্য থেকেই অনেকে বেরিয়ে আসবে। পলিসি মেকার তৈরি হবে, অর্থনীতিবিদ তৈরি হবে, যারা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সঠিক জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করতে সক্ষম হবে। এটা আমার প্রত্যাশা।’
পাশের দেশ ভারত সাম্প্রদায়িকতার ধুয়া তুলে কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের উসকে দিয়ে উপমহাদেশে তাদের আধিপত্য কায়েম করতে চাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর গুলশানে ভারতীয় পণ্য বর্জনের দাবিতে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ করেন।
ভারতের উদ্দেশে রিজভী বলেন, ‘সাম্প্রদায়িকতার ধুয়া তুলে আপনারা ভারতকে যেমন বিভাজন করছেন, ভারতের স্বাধীনতার পর থেকে গণতন্ত্রের যে একটি ঐতিহ্য ছিল- এটাকেও ভূলুণ্ঠিত করছেন। আর সেই সাম্প্রদায়িকতার ধুয়া তুলে কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের উসকে দিয়ে আপনারা চাচ্ছেন উপমহাদেশে আধিপত্য কায়েম করতে। আপনাদের এই বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাবের কারণে, এই হিংসাশ্রয়ী মনোভাবের কারণে, এ ধরনের অপরকে ঘৃণা করার মনোভাবের কারণে আজকে নেপাল আপনাদের সঙ্গে নেই, ভুটান নেই, শ্রীলঙ্কা নেই, মালদ্বীপ নেই, পাকিস্তান তো নেই, বাংলাদেশও আপনাদের সঙ্গে নেই। শুধু আপনাদের অহংকার এবং একের পর এক শোষণের যে মনোভাব, সে কারণে আপনাদের এ অবস্থা।’
তিনি বলেন, ‘আমরা একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ জাতি। এই জাতি স্বাধীনতা অর্জন করেছে ৩০ লাখ মানুষের আত্মদানের মধ্য দিয়ে, ২ লাখ নারীর সম্ভ্রমহানির মধ্য দিয়ে। ১৮ কোটি, ১৯ কোটি মানুষের এই দেশ; এই দেশকে আপনারা চোখ রাঙিয়ে, ভয় দেখিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে দাবিয়ে রাখতে পারবেন না। হঠাৎ করে আপনাদের কী হলো যে, পাশের দেশের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছেন, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছেন। ৫ আগস্টের আগে এ দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল ঘৃণিত একটি সরকার। এরা ক্ষমতায় থাকার জন্য নিজ দেশের সন্তানদের হত্যা করতে দ্বিধা করত না, এরা নিজ দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষদের চিরদিনের জন্য নিরুদ্দেশ করতে দ্বিধা করতে না। এরা ক্রসফায়ার দিয়ে নদীর ধারে, খালের ধারে মানুষদের নির্দ্বিধায় হত্যা করত। সে হাসিনা সরকার আপনাদের এত প্রিয় ছিল কেন? কারণ, আপনাদের সাহসে, আপনাদের উসকানিতে শেখ হাসিনা যা ইচ্ছা তাই করে গেছে এ দেশে। উনার ভোটের দরকার হতো না; শেখ হাসিনার অধীনে যে ভোটগুলো হয়েছে সেগুলো হয়েছে ভোটারবিহীন। যে ভোটের এক একটা নাম আছে ‘ভোটারশূন্য ভোট’, ‘মিডনাইট ভোট’ আরও অনেক কিছু।’
ভারতের উদ্দেশে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘আপনারা মনে করছেন পেঁয়াজ বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশের মানুষ তরকারিতে পেঁয়াজ ব্যবহার করতে পারবে না। আপনারা রসুন, আদা, সয়াবিন তেল বন্ধ করে দিলে আমরা এগুলো আর রান্নায় ব্যবহার করতে পারব না। এটা তো আপনারা দুঃস্বপ্ন দেখছেন। আপনারা গরু রপ্তানি পাঁচ-ছয় বছর ধরে বন্ধ করে দিয়েছেন। বাংলাদেশের মানুষ গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে গরুর খামার, ছাগলের খামার গড়ে তুলেছে। এক কোরবানি ঈদেই এক কোটি ২০ লাখ গবাদিপশু জবাই হয়।’
প্রতিবেশী রাষ্ট্রের উদ্দেশে রিজভী আরও বলেন, ‘আপনারা ভুলে যাবেন না বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত শ্রমপ্রিয়। পেঁয়াজ, রসুন, আদা তারা নিজেরাই উৎপাদন করতে জানে। আপনারা কী মনে করেন, শুধু একটি দেশ আছে পৃথিবীতে। আর কি দেশ নেই পৃথিবীতে- যাদের কাছ থেকে আমরা পেঁয়াজ আমদানি করতে পারব, যাদের কাছ থেকে আমরা রসুন-তেল আমদানি করতে পারব। সে সব দেশ কি নেই? আপনারা মনে করেছেন এগুলো বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশের মানুষের অবস্থা কাহিল হবে। অবস্থা কাহিল হয়েছে আপনাদের। আপনাদের নিউমার্কেটের কোনো দোকান চলে না, আপনাদের মার্কেটগুলো বন্ধ হওয়ার উপক্রম। বাংলাদেশের মানুষ ওই কলকাতায় গিয়ে ডলার খরচ করে তারা সেখানে কেনাকাটা করে চিকিৎসা করতে যায় হাসপাতালে। হাসপাতাল আর চলবে না। আপনারা বন্ধ করে দিয়ে মনে করেছেন বাংলাদেশের মানুষ অস্থির হয়ে গেছে, বাংলাদেশের মানুষ আনন্দিত। প্রয়োজন হলে থাইল্যান্ড যাবে, মালয়েশিয়া যাবে, ইন্দোনেশিয়া যাবে কিংবা অন্য দেশে যাবে। আপনাদের মতো হিংসাশ্রয়ী যারা আমাদের ঘৃণা পোষণ করেন, সে দেশে মানুষ যেতে চায় না। কারণ রক্তমূল্যে স্বাধীনতা কেনা এই জাতি। এই জাতিকে আপনি ভয় দেখিয়ে, আপনাদের নতজানু করবেন- সে জাতি বাংলাদেশ নয়।’
তিনি বলেন, ‘রিপাবলিক বাংলা বলেছে, চট্টগ্রামকে ভারতের অংশ হিসেবে দাবি করা হয়েছে, আরও কত মিথ্যা অপপ্রচার চলছে। আমরা বলছি, একটি স্বাধীন-সার্বজনীন দেশে আপনারা দাবি করলে আমরাও আমাদের নবাবের এলাকা ওই বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা দাবি করব, যেটা আমি আগেও বলেছি। এটা তো আমাদের ন্যায্য পাওনা। এ কথাগুলো আমরা বলতে চাই না। অনেক সংগ্রাম, অনেক আন্দোলন, ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রাম- এই উপমহাদেশে আমরা একসঙ্গে করেছি।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি ডা. জাহেদুল কবির জাহিদ, ছাত্রদলের সহসভাপতি ডা. তৌহিদুর আউয়াল, ছাত্রদল নেতা রাজু আহমেদ প্রমুখ।
অন্তবর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, দেশে সংস্কারের প্রয়োজন আছে। তবে সংস্কারের গতি বাড়িয়ে জাতিকে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেন।’ শুক্রবার সকালে কুমিল্লা টাউন হলে কর্মী সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
জামায়াতের আমির বলেন, ‘স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে, বিজিবিকে সীমান্তের চৌকিদার বানিয়েছে। আমাদের বহু নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে। আমরা প্রতিশোধ নেব না, তবে প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত শেষে বিচার করতে হবে।’
ভারতকে উদ্দেশ্য করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা আমাদের দেশের এক ইঞ্চি কেন আধা ইঞ্চি জায়গাও ছেড়ে দেব না। এ দেশে কোনো সাম্প্রদায়িক বিভাজন নেই। স্বৈরাচার সরকার, মঈনুদ্দিন ও ফখরুল মিলে সাড়ে ১৭ বছর শ্বাসরুদ্ধকর সময় পার করেছে। এ দেশের মানুষ আর সেই দিনগুলোতে ফিরে যেতে চায় না। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশ আফগানিস্তান ও পাকিস্তান হবে না, ভালো একটা বাংলাদেশ হবে। নারীদের ঘরে বন্দি রাখার অধিকার আমাদের নেই। তাদের কাজ আছে, বাইরে যেতে হবে। ইসলাম নারীকে সম্মান দিয়েছে, তা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রক্ষা করবে। জনগণের ওপর আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে।’
কুমিল্লা বিভাগের দাবি ও কুমিল্লা বিমানবন্দর নিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, কুমিল্লা বিভাগ কুমিল্লাবাসীর ন্যায্য দাবি। এ দাবি না মানাও জুলুম ছিল। কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়নে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান তিনি। পাশাপাশি কুমিল্লা বিমানবন্দরও চালুর দাবি জানান।
প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন জামায়াতের নায়েবে আমির সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ফেনী জেলা জামায়াতের আমির মুফতী আবদুল হান্নান, লক্ষ্মীপুর জেলা আমির রুহুল আমিন, নোয়াখালী জেলা সাবেক আমির মাওলানা আলাউদ্দিন, কুমিল্লা উত্তর জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুফতি আমিনুল ইসলাম, নাগাইশ দরবারের পীর মোস্তাক ফয়েজী, ইবনে তাইমিয়া কলেজের অধ্যক্ষ শফিকুল আলম হেলাল ও তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ড. হিফজুর রহমান প্রমুখ।
মো. তাহের বলেন, ‘ডা. শফিকুর রহমান জাতির মুক্তি আন্দোলনের সেনাপতি। কুমিল্লার এই মাঠে মুহতারাম আমিরে জামায়াত প্রধান অতিথি, প্রধান বক্তা ও বিশেষ অতিথি। তিনি আসনে বসলে আমরা সবাই তার কর্মী।’ তিনি বলেন, ‘ভারত হামলা করলে দেশের জনগণ লাঠি, ইটপাটকেলসহ যার যা আছে তা নিয়ে আপনারা প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন। প্রয়োজনে সীমান্তে আমরা প্রাচীর তৈরি করব যাতে ভারত ঢুকতে না পারে।’
মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী ভারতের প্রয়োজন, বাংলাদেশের প্রয়োজন নেই। কারণ ভারতে ধর্মীয় দাঙ্গা সংঘটিত হয়ে থাকে। সাবধানে কথা বলবেন, না হলে পশ্চিমবঙ্গের ২৫% মুসলমান আপনাকে প্রত্যাখ্যান করবে।’
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘রাষ্ট্রে জনগণই একমাত্র সার্বভৌম। তো যারা আজকে বলছে আমরা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে একটি রিপাবলিক ঘোষণা করতে চাই, সংবিধানকে বিনষ্ট করতে চাই- তারা কি সার্বভৌম? এখানে অন্য কেউ নয়, সংসদই সংবিধানকে পরিবর্তন বা ছুড়ে ফেলার একমাত্র ফোরাম।’
গতকাল সোমবার লন্ডনে স্থানীয় সময় রাত ৯টায় যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি অনির্বাচিত সরকার থাকার কারণেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষণাপত্র প্রকাশকে ইঙ্গিত করে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতিদিন নতুন নতুন ইস্যু ও কৌশলের সৃষ্টি হচ্ছে। আজকেও (সোমবার) সে রকম দু-একটি নাটক হয়ে গেছে, যা আগামীকালকে (মঙ্গলবার) মঞ্চস্থ হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সবাই সংস্কার চায়। কিন্তু কেউ বলছে না নির্বাচন ছাড়া সংস্কার সম্ভব নয়। বর্তমানে যেহেতু সংবিধান বেঁচে আছে তার অনুপাতে নির্বাচনের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের।’
বিএনপির জাতীয় স্থানীয় কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘যারা এখন নতুন কিংস পার্টি করল, আমরা তাদের স্বাগত জানাই। কিন্তু সেই রাজনৈতিক দল হতে হবে সরকারের সহযোগিতা ছাড়া। এখন সরকারের মধ্য থেকে রাজনীতিও করবেন, সরকারের উপদেষ্টাও থাকবেন, আবার দল গঠন করে সেই দলের জন্য সময়ক্ষেপণ করবেন। নির্বাচনের জন্য যত দিন আপনারা তৈরি না হবেন, তত দিন কোনো না কোনো বাহানা সৃষ্টি করবেন। জনগণ সেটা বোঝে। জনগণ এখন সার্বভৌম।’
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও সংবিধানের রক্ষাকবজ হিসেবে বিএনপি পাহারাদার হিসেবে জনগণের সামনে প্রমাণিত হয়েছে। সুতরাং জনগণ যদি বিএনপিকে সেই আস্থায় নিতে চায়, আর কোনো গোষ্ঠী যদি জনগণকে সেই আস্থা থেকে প্রতিপক্ষ মনে করে তাহলে আমরা ধরে নেব তারা গণতন্ত্রকে প্রতিপক্ষ মনে করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজকে একটা জিনিস বারবার বলা হচ্ছে ‘জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা’। শহীদের রক্তের চাহিদার আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী আইনের শাসনের সাম্যভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ করতে হবে। এই প্রশ্নে কোনো দ্বিমত নেই। তবে বারবার কেন উচ্চারিত হচ্ছে এটা বিপ্লব বলে। বিপ্লবের অর্থ হচ্ছে সমাজের সকল রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকসহ সবকিছুর পরিবর্তন। বাংলাদেশে কি সেই অর্থে বিপ্লব হয়েছে? বাংলাদেশে যেটা হয়েছে সেটা হচ্ছে, গণতান্ত্রিক গণ-অভ্যুত্থান।’ অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক, সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমেদ প্রমুখ।