ময়মনসিংহে বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে গণপরিবহন। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে যাত্রীরা।
আজ শনিবার দুপুরের ওই সমাবেশ ঘিরে শুক্রবার রাত থেকে জেলা ভেতর ও বাইরে থেকে পরিবহন যাওয়া-আসা বন্ধ আছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ।
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি, জ্বালানি তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ এবং পুলিশ ও দুর্বৃত্তদের গুলিতে বিএনপি কর্মীদের মৃত্যু, হামলা ও মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে শনিবার দুপুর ২ টায় ময়মনসিংহে বিভাগীয় সমাবেশের ডাক দিয়েছে বিএনপি।
ময়মনসিংহ জেলা মোটর মালিক সমিতির মহাসচিব মো. মাহবুবুর রহমান দৈনিক বাংলাকে বলেন, বিএনপির গণসমাবেশে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে। ফলে নিরাপত্তার শঙ্কায় গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ইচ্ছে করে গণপরিবহন বন্ধ রাখিনি। বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা গণপরিবহনে আসবে। গণপরিবহনের মালিকরা ভয় পাচ্ছে। তারা আশংকা করছে, হঠাৎ পরিস্থিতি খারাপ হলে গাড়ি ভাঙচুরসহ অপ্রীতিকর ঘটনার সৃষ্টি হতে পারে। তাই গণপরিবহন বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিএনপির সমাবেশ যতক্ষণ চলবে, ঠিক ততক্ষণই গণপরিবহন বন্ধ থাকবে।’
এই সমাবেশ উপলক্ষে নগরীর সার্কিট হাউস মাঠে গত ৬ অক্টোবর প্রশাসনের অনুমতি চেয়ে না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘সমাবেশ করার অধিকার আমাদের রয়েছে। আর মাত্র একদিন বাকি থাকলেও প্রশাসন অনুমতি দেয়নি।’
পরে নির্ধারিত স্থানে অনুমতি না পেয়ে ময়মনসিংহ পলিটেকনিকাল ইন্সটিটিউট মাঠে গণসমাবেশের ঘোষণা দেয় বিএনপি।
সকালে শহরের পাটগুদাম বাসটার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, বাস কাউন্টারগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। যাত্রীরা কাউন্টারে এসে ছোট যানবাহনে চড়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন। কিন্তু এ সুযোগে এই সব যানবাহনের চালকরা দ্বিগুন বাড়া আদায় করছেন।
বাসের জন্য অপেক্ষায় থাকা সেলিম মিয়া দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করি। আজকের মধ্যে ঢাকা পৌঁছাতেই হবে। কিন্তু ঘোষণা ছাড়াই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে গণপরিবহন। তাই না জেনে কাউন্টারে এসে বিপদে পড়েছি। আগে জানলে একদিন আগেই ঢাকা চলে যেতাম’।
সিএনজিতে বসে ছিলেন আনোয়ার হোসেন নামের আরেকজন। তিনি বলেন, ‘ময়মনসিংহ থেকে ভালুকা যাব। অন্য দিন ১০০ টাকা ভাড়া নিলেও এখন ১৫০ থেকে ২০০ টাকা ভাড়া নিচ্ছে চালকরা। আমরাও এ টাকা দিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছি।’
জেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির হোসেন বাবলু দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘গণপরিবহন বন্ধ করেও নেতাকর্মীদের ফিরিয়ে রাখা যাবে না। রাত থেকেই অনেক দূর থেকে পায়ে হেঁটে সমাবেশের মাঠে উপস্থিত হয়েছে হাজার হাজার নেতাকর্মী।’
ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) খন্দকার ফজলে রাব্বি দৈনিক বাংলাকে বলেন, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। যেকোনো অপ্রতিকর ঘটনা এড়াতে তারা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এহতেশামুল আলম বলেন, ‘বিএনপি সমাবেশ করতেই পারে। এটি তাদের অধিকার। কিন্তু নৈরাজ্য হলে দাঁতভাঙা জবাব দেয়া হবে। এ জন্য শনিবার মোড়ে মোড়ে থাকবে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।’
সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। পায়ে হেঁটে মিছিল নিয়ে সমাবেশে যাচ্ছেন নেতাকর্মীরা। মাঝেমধ্যে অনেকে প্রাইভেট কারে করে আসলেও পাটগুদাম মোড় থেকে গাড়ি ফেরত পাঠাচ্ছে পুলিশ।
ময়মনসিংহ পুলিশের মিডিয়া সেলের ইন্সপেক্টর মো. ফরিদ দৈনিক বাংলাকে বলেন, সমাবেশের সড়কে যাচ্ছে এমন প্রাইভেট কার দেখলেই আমরা ফেরত পাঠাচ্ছি। এসব প্রাইভেটকারে অস্ত্র কিংবা লাঠি থাকতে পারে। এমন সন্দেহ থেকে গাড়িতে করে যেতে দেয়া হচ্ছে না।
জেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির হোসেন বাবলু দৈনিক বাংলাকে বলেন, আমাদের নেতাকর্মীরা অস্ত্র নিয়ে আসার প্রশ্নই ওঠে না। আমরা সুশৃঙ্খলভাবে সমাবেশ সফল করতে চাই। আওয়ামী লীগ শহরজুড়ে মহড়া দিয়ে উসকানি দিলেও পুলিশ নিরপেক্ষ থাকবে এমনটাই প্রত্যাশা করি।
৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা তাসলিমা আক্তার। তার স্বামীর বাড়ির পার্শ্ববর্তী বেগমগঞ্জ উপজেলার নাজিরপুর গ্রামে। আর পিতার বাড়ি সোনাইমুড়ী উপজেলার মটুবি গ্রামে। সে অনলাইনে আবেদন করে গত ২৮ অক্টোবর সকাল ৯টায় পিতার বাড়ির ঠিকানায় ভোটার হতে আসে উপজেলা নির্বাচন অফিসে।
নির্বাচন কর্মকতা আবু তালেবের রুমে প্রবেশ করার পর ভোটার হতে টাকা দাবি করে। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় তাকে ও তার বৃদ্ধ মা আলেয়া বেগমকে বের করে দেয়। পুনরায় আবার তার রুমে প্রবেশ করলে ওই কর্মকর্তা রাগান্বিত হয়ে অকথ্য ভাষায় গালগাল শুরু করে। পরে মা-মেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ জানান।
সোনাইমুড়ীর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের ড্রাইভার মনির হোসেন। এখন তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের গাড়ি চালান। তার এক আত্মীয় ভোটার হতে উপজেলা নির্বাচন অফিসে আবেদন করে। তার জন্ম নিবন্ধনে বয়সের ত্রুটি দেখিয়ে হয়রানি করতে থাকে। পরে সে উপজেলা কর্মচারী পরিচয় দিয়ে নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে গেলে তিনি মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন বলে গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছেন। পরে ওই কর্মচারী তার সাথে দুর্ব্যবহার করেন।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল অফিসের পিয়ন সালাউদ্দিন জানান, তার চাচাতো ভাই মাইনুল ইসলাম ভোটার হতে নির্বাচন অফিসে যান। একইভাবে জন্ম নিবন্ধনে বয়সের ত্রুটি দেখিয়ে আবেদনের ফাইল ফেরত দেন ওই নির্বাচন কর্মকর্তা। পরে ওই অফিসের জনৈক্য এক ব্যক্তির মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা চুক্তি করে ভোটার হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন।
উপজেলার বারগাঁও ইউনিয়নের পলাশ জানান, তার ফুফাতো ভাইয়ের নামের আগে মো. নাই। তিনি মো. যুক্ত করতে অনলাইনে আবেদন করে উপজেলা নির্বাচন অফিসে গেলে নানা অজুহাদ দেখিয়ে ওই আবেদনটি বাতিল করে দেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সেবাগ্রহীতাদের অভিযোগ, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে আবু তালেব যোগদান করার পরেই হয়রানি ও ঘুষ লেনদেন বেড়েছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, দিনের পর দিন ঘুরলেও কাজ না করে দিয়ে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে অহেতুক হয়রানি করেন। তার রুমের প্রধান দরজা বন্ধ থাকে, জানালায় থাকে পর্দা দেখা করতেও লাগে অনুমতি। চাহিদামতো প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র জমা দিয়েও পাওয়া যায় না সমস্যার সমাধান জাতীয় পরিচয়পত্রের এসব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে দেরি হওয়ায় অনেকেই পাসপোর্ট ও চাকরিসহ বিভিন্ন জরুরি কাজ করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন অনেকইে। এই অফিসে নতুন ভোটার হওয়া, জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল সংশোধন ও ভোটার স্থানান্তরসহ সব কাজেই গুণতে হয় টাকা। ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা নির্বাচন অফিস থেকে উপজেলায় যোগদান করেন নির্বাচন কর্মকর্তা আবু তালেব। এখানে যোগদান করার পরেই তিনি বিভিন্ন ঘুষ ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। প্রবাসীরা তাদের ভোটার আইডিকার্ড সংশোধন করতে এলে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে তিনি ঘোরাতে থাকেন। পরে জরুরি ভিত্তিতে করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন ওই কর্মকর্তা। তিনি যোগদান করার পর ঘুষের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা পরিষদের এক কর্মচারী জানান, মায়ের সাথে সন্তানের বয়সের অমিল থাকলে নির্বাচন কর্মকর্তা ওই আবেদনগুলো বাতিল না করে তার ড্রয়ারে রেখে দেন। পরে আবেদনকারীরা নিরুপাই হয়ে টাকার মাধ্যমে ভোটার হয়েছেন বলে অনেকের অভিযোগ। এছাড়া ঠিকানা স্থানান্তর তদন্ত করতে সময়কাল ক্ষেপণ করেন বলেও অনেকে অভিযোগ তুলেছে। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা নেন। সেবাগ্রহীতারা তার কার্যালয়ে হয়রানি শিকার হয়ে ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন আক্তারের কাছে কয়েকটি অভিযোগ দিয়েছেন।
সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবু তালেব দৈনিক বাংলাকে জানান, তিনি এ উপজেলায় যোগদান করার পরই বিভিন্ন সমস্যার মোকাবিলা করতে হয়েছে। তবে তিনি ওই অনিয়মের সত্যতা স্বীকার করেননি।
সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসিম আক্তার বলেন, নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে সেবাগ্রহীতারা হয়রানি হচ্ছে এটা সত্য। অভিযোগ পেয়ে কয়েকবার তাকে সতর্ক করা হয়েছে।
নোয়াখালী জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মো. সাদেকুল ইসলাম দৈনিক বাংলাকে বলেন, ভোটার হতে সেবাপ্রার্থী থেকে টাকা নিয়েছে, এমন প্রমাণ থাকলে দেন। ব্যবস্থা নেব।
জনগণের সম্মতি ছাড়া কোনো উদ্যোগই বেশি দূর এগোতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও ব্র্যাকের চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, গণতন্ত্র চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়, জনগণকে সেটা মেনে নিতে হবে। কারণ, জনগণই সমাজের সর্বশেষ অভিভাবক।
গতকাল বুধবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে তরুণদের নিয়ে আয়োজিত ‘ইউথ পারসপেকটিভস অন স্যোশাল প্রোগ্রেস: গ্রাসরুটস, নেটওয়ার্কস অ্যান্ড লিডারশিপ ভয়েসেস’ শীর্ষক জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী আয়োজনের সমাপনী বক্তব্যে হোসেন জিল্লুর রহমান এ কথা বলেন। সম্মেলনের আয়োজক পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি)। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে হলে নাগরিকদের সক্রিয় হতে হবে বলে মন্তব্য করেন হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, নাগরিকদের সক্রিয়তা ছাড়া, চর্চা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। হতাশা আসতে পারে, কিন্তু সমস্যা থাকা সত্ত্বেও পরিবর্তন করা সম্ভব- এই আত্মবিশ্বাস বজায় রাখা, সেই পরিবর্তনের জন্য সক্ষমতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি।
এর আগে সম্মেলনে সূচনা বক্তব্যে হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, তরুণদের কথা শোনা ও তাদের আকাঙ্ক্ষাগুলোকে বোঝার চেষ্টা করতে হবে। তরুণরা কীভাবে সমাজে সম্পৃক্ত হচ্ছেন, সমাজের পরিবর্তনগুলোর কোন কোন দিকে তাঁরা গুরুত্ব দিচ্ছেন, সেই প্রক্রিয়ায় তারা কীভাবে নিজেরা অংশগ্রহণ করবেন- সেই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে হবে।
হোসেন জিল্লুর রহমান আরও বলেন, ২৪-এর আন্দোলনের পরে যে পরিবর্তন হয়েছে, সেখানে ‘ইনক্লুসিভিটি অ্যান্ড জাস্টিস’ ও ‘কালেক্টিভ অ্যাকশন’ হচ্ছে মূল কথা।
সমাজে একটি শুভ পরিবর্তন আনতে এবং বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করতে হলে কেবল তরুণ নয়, সব প্রজন্মের ভূমিকা জরুরি বলে মন্তব্য করেন হোসেন জিল্লুর রহমান।
ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব এবং সুপারিশ একপেশে ও জবরদস্তিমূলক জাতির ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব এবং সুপারিশে প্রতীয়মান হয় দীর্ঘ এক বছরব্যাপী সংস্কার কমিশন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে রাজনৈতিক দলসমূহের দীর্ঘ ধারাবাহিক আলোচনা ছিল অর্থহীন, অর্থ ও সময়ের অপচয় প্রহশনমূলক এবং জাতির সঙ্গে প্রতারণা। গণতন্ত্রের রাজনৈতিক দলগুলো ভিন্ন মত থাকবে এটাই স্বাভাবিক।
সংবাদ সম্মেলনে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, সালাহউদ্দিন আহমদ উপস্থিত ছিলেন।
বুধবার রাতে দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপি।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) জাতীয় স্থায়ী কমিটি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার এ তথ্য জানিয়েছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নীতিনির্ধারকরা দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উঠে আসা সিদ্ধান্ত এবং বর্তমান জাতীয় প্রেক্ষাপট নিয়ে গণমাধ্যমের সামনে কথা বলবেন।
বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘আমাদের পেছনে তাকানোর সময় নেই, সামনের দিকে এগোতে হবে। নতুন বাংলাদেশে লাগবে শিক্ষা, বড় বড় ব্রিজ-দালান নয়। সুশিক্ষিত জাতি থাকলে দাঁড়াতে পারবে দেশ।’
বুধবার চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহরে রাবেয়া বসরি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় এলে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ হবে শিক্ষা খাতে। আগামীর নতুন বাংলাদেশ হবে শিক্ষানির্ভর, শিক্ষিত না হলে জাতি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে না। আগামীর বাংলাদেশের যে স্বপ্ন আমরা দেখছি, তার জন্য বেশি জোর দিতে হবে শিক্ষায়।’
নারী ক্ষমতায়ন ছাড়া দেশ এগিয়ে যেতে পারে না উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, ‘নারীদের সঙ্গে নিয়ে দেশ গড়তে হবে।
মেয়েদের শিক্ষা বেশি প্রয়োজন। মেয়ে দর শিক্ষার ব্যাপারে বেশি জোর দিতে হবে, যাতে স্বামীর মুখাপেক্ষী হতে না হয়।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বে প্রযুক্তিতে যে পরিবর্তন আসছে সেই প্রযুক্তির সঙ্গে আমাদের মেয়েরা যদি সংযুক্তি হতে না পারে, তাহলে তারা পিছিয়ে পড়বে, পড়ালেখা করেও কোনো লাভ হবে না। মেয়েদের কম্পিউটার শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে।
সর্বক্ষেত্রে আমরা মেয়েদের দেখতে চাই। চাকরিতে দেখতে চাই, ক্রীড়াঙ্গনে দেখতে চাই, রাজনীতিতে দেখতে চাই।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া নারীশিক্ষার জন্য অনেক অবদান রেখেছেন। আগামীতেও নারীশিক্ষার অগ্রগতি নিয়ে তারেক রহমান নানা পদক্ষেপ নেবেন।’
আমীর খসরু আরো বলেন, ‘খেলাধুলা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, এগুলোও শিক্ষার অংশ।
এগুলো একসঙ্গে চালাতে হবে। বিগত দিনে আমরা অনেক স্কুলে দালান করে দিয়েছি, ভবিষ্যতে আমরা এ ব্যাপারে আরো বেশি খেয়াল রাখব, ইনশাআল্লাহ।’
বিদ্যালয় কমিটির সভাপতি মো. শফিউল্লাহ সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব নাজিবুর রহমান, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুর রহমান স্বপন, মঞ্জুর আলম, সদস্য ও সাবেক কাউন্সিলর আবুল হাসেম, সাবেক কাউন্সিলর জেসমিন খানম, প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
পরে শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্রেস্ট ও পুরস্কার তুলে দেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
নেত্রকোনায় গণভোট, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নেত্রকোনা জেলা শাখা। গত রোববার বিকাল ৩ টায় নেত্রকোনা কালেক্টরেট মাঠ প্রাঙ্গনে এ সমাবেশের আয়োজন করে জেলা জামায়াত। জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা বদরুল আমিনের সঞ্চালণায় ও জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক মাওলানা ছাদেক আহমাদ হারিছের সভাপতিত্বে এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ অঞ্চল টিম সদস্য, জেলা জামায়াতের সাবেক আমীর ও নেত্রকোনা -২ আসনের জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক মাওলানা এনামুল হক। এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন, জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর অধ্যাপক মাওলানা মাহবুবুর রহমান, জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি ও পূর্বধলা আসনের জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক মাছুম মোস্তফা, ময়মনসিংহ মহানগরীর সাংগঠনিক সম্পাদক ও নেত্রকোনার -৪ আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক আল হেলাল তালুকদার,জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মো. জহিরুল ইসলাম, জেলা জামায়াতের শুরা ও কর্মপরিষদ সদস্য ও নেত্রকোনা-৩ আসনের জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক খায়রুল কবির নিয়োগী, জেলা শুরা ও কর্মপরিষদ সদস্য, নেত্রকোনা-১ আসনের জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী মাওলানা আবুল হাসিম, নেত্রকোনা পৌর জামায়াতের আমীর মো. রফিকুল ইসলাম, ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেত্রকোনা জেলা সভাপতি ইয়াসিন মাহমুদ রাসেল, আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা ও উপজেলা জামায়াতের বিভিন্ন নেতারা। বক্তারা বলেন, নভেম্বরের মধ্যেই গণভোট দিতে হবে। জুলাই সনদের আইনে ভিত্তি দিয়ে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, কোনো কোনো জায়গায় একটি দল আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর আক্রমণ করছে। আমরা বলতে চাই, এটি বন্ধ করুন। আওয়ামী লীগের মত ফ্যাসিস্ট হইয়েন না। তাহলে জনগণ আপনাদের সাথেও আওয়ামী লীগের মতোই আচরণ করবে। জেলা জামায়াতের আমীর সভাপতির বক্তব্যে বলেন, দেশের মানুষ যেনতেন কোনো নির্বাচন মেনে নিবে না। প্রশাসনকে বলবো নিরপেক্ষ আচরণ করুন। কোন দলের প্রতি আনুগত্য দেখাবেন না। এরপর মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে নেত্রকোনা কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে এসে শেষ হয়। মিছিলে জামায়াতের ২ হাজারেরও বেশি নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন।
নীলফামারীতে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে। সোমবার সকাল ১০টায় জেলা শহরের পৌর সুপার মার্কেটস্থ কার্যালয়ের সামনে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের কর্মসূচি। এরপর বেলা ১১টায় পৌর সুপার মার্কেট চত্বরে জেলা যুবদলের আয়োজনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে প্রধান অতিথি থেকে বক্তব্য রাখেন ইঞ্জিনিয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এ্যাব) আহ্বায়ক ও নীলফামারী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য প্রকৌশলী শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিন। জেলা যুবদলের সভাপতি এ.এইচ.এম সাইফুল্লাহ রুবেলের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মীর সেলিম ফারুক, যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেল পারভেজ, মোস্তফা হক প্রধান বাচ্চু ও রিয়াজুল ইসলাম কালু বক্তৃতা দেন। সভা পরিচালনা করেন জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন চৌধুরী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিন বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শে বিশ্বাসী তরুণ সমাজই আগামী দিনের নেতৃত্ব দেবে, আর তাই আসন্ন নির্বাচনে যুবদলের নেতা-কর্মীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রতিটি নেতা-কর্মীকে দায়িত্বশীল, শৃঙ্খলাবদ্ধ ও সক্রিয় থাকার আহ্বান জানান তিনি।’
আলোচনা সভা শেষে জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে। কর্মসূচিতে জেলা বিএনপিসহ যুবদলের সকল ইউনিটের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী অংশগ্রহণ করেন।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে বৃহৎ জোট গঠন করতে চায় বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) যুবদলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য অটুট রাখতে চায় বিএনপি। আর ঐক্য বজায় রাখতে কেউ যেন বিভেদের পথে না যায় সেই বার্তাও দিতে চায় দলটি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সারাদেশের প্রার্থীদের সঙ্গে দলের হাইকমান্ডের বৈঠক হচ্ছে। দল ও নিজেদের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখার বার্তা দিতেই হাইকমান্ডের এই বৈঠক করছে বিএনপি।
এ সময়, আগামীর বাংলাদেশ হবে তারুণ্যনির্ভর মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, তরুণ-যুবকদের রাজনৈতিক ভাবনাকে ধারণ করে সামনের দিনে জাতি বিনির্মাণে কর্মসূচি প্রণয়ন করবে বিএনপি।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) যুবদলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জিয়াউর রহমানের সমাধিতে বিএনপি নেতা-কর্মীদের শ্রদ্ধা নিবেদন।
চট্টগ্রামের রাউজানে সন্ত্রাসীদের গুলিতে আলমগীর আলম (৫৫) নামে এক বিএনপি নেতা নিহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার বিকেল ৫টার দিকে পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কায়কোবাদ আহম্মদ জামে মসজিদের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় রিয়াজ ও আকিব নামে দুইজন যুবদল নেতাও গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া।
স্থানীয়রা জানান, নিহত আলমগীর আলম বিএনপি নেতা। তিনি রাউজান পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের পূর্ব রাউজানের সিদ্দিক চৌধুরী বাড়ির আবদুস সত্তারের ছেলে।
আলমগীরের ছেলে আসফায়েত হোসেন বলেন, শনিবার দুপুরে পরিবারের সবাই মিলে পূর্ব রাউজান রশিদ পাড়ায় ফুফুর বাড়িতে দাওয়াত খেতে গিয়েছিলাম। বিকেলে বাড়ি ফেরার পথে কায়কোবাদ আহম্মদ জামে মসজিদের সামনে সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি গুলি করে আমার বাবাকে হত্যা করে।
রাউজান থানার ওসি মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, আলমগীর নামে এক ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ মরদেহ সড়কের পাশ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে কে বা কারা গুলি করে পালিয়ে গেছে। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নেওয়া হয়েছে। সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হবে।
এদিকে বিএনপি নেতা আলমগীর হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার। তিনি বলেন, আলমগীর আওয়ামী শাসনামলে দীর্ঘ ১২ বছর কারাভোগের পর সম্প্রতি কারামুক্ত হয়েছিল। তাকে প্রকাশ্যে গুলি করে যারা হত্যা করেছে- তাদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
গত ৭ অক্টোবর উপজেলার বিএনপি কর্মী মুহাম্মদ আবদুল হাকিমকে (৫২) রাউজানের খামার বাড়ি থেকে ফেরার পথে হাটহাজারীর মদুনাঘাটে চলন্ত গাড়িতে গুলি করে হত্যা করে অস্ত্রধারীরা। এ ঘটনার রেশ না কাটতেই উপজেলায় আরও একটি হত্যার ঘটনা ঘটল।
উল্লেখ্য, রাউজানে গত ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক সহিংসতায় মোট ১৭টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১২টি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বলে জানা যায়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন বলেছেন, ‘আদর্শ ও মতের পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও গণতন্ত্রের স্বার্থে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সবাইকে এক হতে হবে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের প্রত্যাবর্তনের সব দরজা বন্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
গতকাল শনিবার রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের বিভেদের কারণে ফ্যাসিবাদের প্রত্যাবর্তন ঘটলে জাতি ক্ষমা করবে না।’
তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে রাজনৈতিক দলে মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও দেশ ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে সবাই ঐক্যবদ্ধ থেকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের প্রত্যাবর্তন ঠেকাবো।’
আবেগাপ্লুত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘দুই-চার কলাম লেখার জন্য আমাকে প্রায় সাড়ে নয় বছর নির্বাসনে থাকতে হয়েছে, আয়নাঘরে থাকতে হয়েছে, নির্যাতনে কারাগারে থাকতে হয়েছে। কিন্তু কখনো সংগ্রামের পথ থেকে পিছিয়ে যাইনি।’
সালাহউদ্দিন আরও বলেন, ‘এক সময় আমি ও আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান পিজি হাসপাতালের প্রিজন সেলে ছিলাম। করোনারি কেয়ার ইউনিটের একটি সেলে আমাদের রাখা হয়। তিনি অনশন শুরু করলে তাকে বলেছিলাম, আপনি মারা গেলে শেখ হাসিনা খুশি হবে, দয়া করে অনশন ভঙ্গ করুন। ছয়-সাত দিন পর মুরুব্বিরা দেখা করে তার অনশন ভাঙ্গান।’
ছাত্রদের অভ্যুত্থানের গৌরবময় ইতিহাস বুকে ধারণ করে নতুন বাংলাদেশ নির্মাণে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে বলেও উল্লেখ করেন বিএনপির এই সিনিয়র নেতা।
তিনি বলেন, ‘ছাত্র আন্দোলনের রক্তঝরা দিনগুলো স্মৃতিতে ধরে রেখে, তার ভিত্তিতেই আমাদের আগামীর বাংলাদেশ গড়তে হবে। সন্তানদের জন্য একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক সমাজ, রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থা গড়ে তোলাই হবে আমাদের দায়িত্ব।’
আমাদের সন্তানদের রক্তের অঙ্গীকার পূরণ করতে হবে বলে সকলের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।
ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারের প্রেতাত্মারা এখনো নির্বাচনকে ব্যাহত করার একটি হীন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও জাতীয় সংসদের সাবেক বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক।
রবিবার জাতীয়তাবাদী সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের নবনির্বাচিত কমিটির পক্ষ থেকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন, জিয়ারত ও ফাতেহ পাঠ শেষে তিনি এই মন্তব্য করেন।
জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, প্রকাশনা সংস্থাটিকে স্বৈরাচারী সরকার সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে। কোনো বই ছাপাতে হলে কলকাতা পাঠিয়ে দিতো তার বন্ধুর দেশে। সত্যিকার ঘটনাগুলো প্রকাশের সাহস এই প্রকাশনা পরিষদের ছিল না। পাঠ্যপুস্তককেও তারা (আ. লীগ) স্বৈরাচারী কায়দায় দলীকরণের যে হীন প্রচেষ্টা করেছিল তার প্রকাশ গত ১৬ বছরে আপনারা (জনগণ) দেখেছেন।
জাতীয়তাবাদী সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের নবনির্বাচিত কমিটির প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অতীতের মতো সৃজনশীল প্রকাশনা পরিষদ যেনো নিজেরাই নিজেদের প্রকাশনা না করে দেশের স্বার্থে, মানুষের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে কথা বলেন এবং লিখেন। তাহলে আপনারা অতীতে ১৬ বছর স্বৈরাচারী কায়দায় আপনাদের প্রকাশনা পরিষদকে যেভাবে দমিয়ে রাখা হয়েছে, সামনে সেটা হবে না। আপনাদের মধ্যেও গণতন্ত্র থাকতে হবে, গণতান্ত্রিক চর্চা করতে হবে, আপনাদেরই বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সত্যিকার কথাগুলো লিখতে হবে।
সাবেক এই চিফ হুইপ বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ফ্রেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষণা করেছে। আমরা আশা করবো, আপনাদের (জাতীয়তাবাদী সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ) নবনির্বাচিত কমিটি লেখার মাধ্যমে সকল পর্যায়ের জনগণের কাছে জানিয়ে দিবেন, স্বৈরাচার পালিয়েছে, কিন্তু স্বৈরাচারের প্রেতাত্মারা এখনো নির্বাচনকে ব্যাহত করার একটি হীন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে সুসংহত করার জন্য আগামীতে ঘোষিত যে নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচন যেনো শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু হয় এবং আমার ভোট আমি দিবো- এই পর্যায়ে পৌঁছে দিতে পারি, সেজন্য সকল প্রকাশককে সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে।
সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের নবনির্বাচিত কমিটির সদস্যদের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে ফারুক বলেন, সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের নবনির্বাচিত কমিটির সদস্যরা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে দোয়া ও পুষ্পমাল্য অর্পন করার জন্য এখানে এসেছেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে নবনির্বাচিত কমিটির সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
সংগঠনের সভাপতি জাহাঙ্গীর শিকদার বলেন, গত ১৬ বছরে বাংলাদেশের মুক্তচিন্তাকে গলা টিপে হত্যা করেছে ফ্যাসিবাদী সরকার, পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে স্বাধীনতার ইতিহাস কে বিকৃত করা হয়েছে, বাংলাদেশের বই কলকাতা থেকে চেপে এনে এই শিল্পকে ধ্বংস করে দিয়েছে, এ ধ্বংস হয়ে যাওয়া প্রকাশনা সেক্টরকে পূর্ণ জাগরণ ঘটাতে হবে এ দায়িত্ব জাতীয়তাবাদী সৃজনশীল প্রকাশকদের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে যারা যে অবদান রেখেছে সেগুলো লেখনীর মাধ্যমে তুলে ধরাই হবে এই সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের কাজ আমি এই সৃজনশীল পরিষদের সফলতা কামনা করছি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং এবং ফ্যাসিবাদ বিরোধী এই লড়াইকে লেখনীর মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে এই দায়িত্ব জাতীয়তাবাদী সৃজনশীল প্রকাশকদের ও লেখকদের।
এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন একুশে পদপ্রাপ্ত ছড়াকার আবু সালেহ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মোশাররফ আহমেদ ঠাকুর, সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজী জহুরুল ইসলাম বুলবুল, পারফেক্ট পাবলিকেশন্স, সহ-সভাপতি মো. মনিরুল হক, অনন্যা, সহ-সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন, হাসি প্রকাশনী, সাধারণ সম্পাদক মো. জহির দীপ্তি, ইতি প্রকাশন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামুন রশিদ, বর্ণমালা প্রকাশনী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হা. ন.ম শরীফুল হক শাহ্জী, শাহ্জী প্রকাশনী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো.আমিনুর রহমান, প্রান্ত প্রকাশনা, সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর হোসেন, কালিকলম প্রকাশনা, সহ সাধারণ সম্পাদক মোঃ উমর ফারুক, ভাষাতরী প্রকাশনা, সাংগঠনিক সম্পাদক মোরশেদ আলম হৃদয়, বাবুই প্রকাশনী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন কলি, কলি প্রকাশনী, দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, তৃণলতা প্রকাশ, সহ-দপ্তর সম্পাদক মো. মহসিন রুবেল, মেরিট ফেয়ার প্রকাশনা, অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ শিহাব উদ্দিন, বাড কম্প্রিন্ট এন্ড পাবলিকেশন্স, সেমিনার সম্পাদক সাজেদা আলী হেলেন, নব আলো পাবলিকেশন্স, সহ-সেমিনার সম্পাদক এনাম রেজা, চমন প্রকাশ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সাইফুল্লাহ বিন কাসেম, নূর-কাসেম পাবলিশার্স, সহ- প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুশোভন ইফতেখার শাওন, ধ্রুপদ সাহিত্যাঙ্গন, পাঠাগার সম্পাদক জামাল উদ্দিন আহমেদ, দি রয়েল পাবলিশার্স, সাংস্কৃতি সম্পাদক মো. ফিরোজ মিয়া, নলেজ মিডিয়া, নির্বাহী সদস্য হলেন, ইকবাল হোসেন শানু, লাবনী, মোঃ তাজুল ইসলাম, বর্ণসাজ, ফজলুল হক মন্ডল, সূচয়নী পাবলিশার্স, মোহাম্মদ কাওসার আলম, নিউ নোভেল পাবলিকেশন্স, আবদুর রউফ বকুল, কথামেলা প্রকাশন, মোঃ জিয়া উদ্দিন জিয়া, জুঁই জেমি প্রকাশনী।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং মানিকগঞ্জ-১ আসনে এমপি প্রার্থী এস.এ জিন্নাহ কবির বলেছেন, স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত ইসলাম ধর্মকে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়ে ভোট নেওয়ার পাঁয়তারা করছে। সাধারণ ভোটাদের ইসলাম ধর্ম নিয়ে মিথ্যা অপব্যাখ্যা দিয়ে বলে বেড়াচ্ছে দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিলে জান্নাতে যাওয়া যাবে, নাওজুবিল্লাহ দেখেন কত বড় মিথ্যাবাদী।
তিনি বলেছেন, কোরআন শরীফের নিয়ম মেনে ও আল্লাহর সকল কিছু মেনে আল্লাহর খাঁটি বান্দা হলে একমাত্র জান্নাত পাওয়া যেতে পারে। ধর্ম ব্যবসায়ী জামায়াতের মিথ্যা কথায় আপনারা বিভ্রান্ত হবেন না। স্বাধীনতাবিরোধী মিথ্যাবাদী, প্রতারণাকারী জামায়াতকে প্রতিহত করতে হবে।
গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে ঘিওর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে লিফলেট বিতরণ ও প্রচারণা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথ বলেন।
ঘিওর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর মানিকুজ্জামান মানিকের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জানে আলমের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক কাজী মোস্তাক হেসেন দিপু, দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, জেলা বিএনপি সাবেক কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপি আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি মো. লোকমান হোসেন, জেলা কৃষক দলের সিনিয়র সহসভাপতি মাসুদুর রহমান মাসুদ, দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আবদুল মতিন মাস্টার, সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান আনিস ও জেলা যুবদলের সদস্য মোসলেম উদ্দিন প্রমুখ।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) একটি প্রতিনিধি দল। শনিবার সকাল ১০টার দিকে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় ঐকমত্য কমিশনের কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এনসিপির প্রতিনিধি দলে থাকবেন—দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, জাবেদ রাসিন, খালেদ সাইফুল্লাহ ও যুগ্ম সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম মুসা।
বৈঠকে এনসিপির প্রতিনিধি দল জুলাই সনদের বাস্তবায়ন আদেশ, আইনি ভিত্তিসহ সনদের নানা বিষয়ে আলোচনা করবেন বলে জানা গেছে।