আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বৈঠক প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা আলাদাভাবে অংশগ্রহণ করবে।’
তিনি বলেন, ‘বৈঠকে আসন বন্টনের প্রসঙ্গ আসেনি, নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে নির্বাচনমুখী দলগুলোর সমন্বয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে নাশকতা, গুপ্ত হামলার মতো নির্বাচন বিরোধী অপকর্ম প্রতিহত করা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রাজনৈতিক আলোচনাই ছিল মুখ্য।’
ওবায়দুল কাদের আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এ বৈঠকের মূল বিষয়টি ছিল, নির্বাচনটাকে অবাধ শান্তিপূর্ণ এবং সুষ্ঠু করার জন্য যা করা দরকার তাই করা হবে। যারা নির্বাচনমুখী দল, তাদের নিয়ে সমন্বিতভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে গুপ্তহত্যা, নাশকতা ও গুপ্তহামলা প্রতিরোধ করা হবে। নির্বাচন বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে মোকাবিলা করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সম্পর্ক আরও জোরদার করা হচ্ছে। এজন্য ১৪ দল ও জাতীয় পার্টির সাথে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু করা নিয়ে মূল আলোচনা হয়েছে। জাতীয় পার্টির সাথে আলোচনা নিয়ে এ নিয়ে ঢাকঢোল পেটানোর কিছু নাই।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচনমুখী যত রাজনৈতিক দল আছে, যাদের সঙ্গে আমাদের জোট ছিল, মানে মহাজোটে ছিল তাদের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেছি। তাদের সঙ্গে আমাদের সহযোগিতা, আমরা আমাদের সম্পর্কটা আরও জোরদার করার তাগিদ অনুভব করছি। যে কারণে ১৪ দলের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, বিএনপি ততই নির্বাচন বানচালে মরিয়া হয়ে উঠছে। তাদের নাশাকতার মাত্রা আরও বিস্তৃত হতে পারে। মুরগির বাচ্চাও তাদের টার্গেট। নাশকতা, গুপ্ত হামলার ভয়াবহ যে চিত্র তা রেকর্ড স্থাপন করছে। গতকাল পর্যন্ত ছয়শ গাড়ি ভাংচুর করেছে, ১০টি রেলে আগুন দিয়েছে।’
পোশাকখাতে মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের নতুন শর্ত প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র চাইলেও একতরফা কিছু করতে পারবে না। যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপ এবং এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার বন্ধু দেশগুলো বাংলাদেশের বিষয়ে চরম কোনো সিদ্ধান্ত নিতে এখন আর পক্ষপাতি নয়।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা বিদেশে বন্ধুহীন নেই। তারা জানে বাংলাদেশে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় শেখ হাসিনা কিভাবে নির্বাচন করছেন। দেশে যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় সেজন্য নির্বাচন করছেন। জনগণের ভোটের মাধ্যমেই সরকারি ও বিরোধী দল আসবে।’
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ও আফম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংলাপে জাতীয় পার্টিকে না ডাকার পেছনে আওয়ামী লীগের তিনটি নির্বাচনকে বৈধতা দেওয়ার অজুহাত সঠিক নয়। আমার কাছে এটি খুবই অদ্ভুত মনে হয়েছে। দেশের উন্নয়নের সাথে আমাদের দলের ইতিহাস আছে, দীর্ঘদিন রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমরা বলে এসেছি তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে জাতীয় পার্টি। কিন্তু হঠাৎ করে সংলাপে ডাকা হলো না শাস্তি স্বরুপ এবং সেটিকে ব্যাপকভাবে প্রচারণ করা হচ্ছে। যা আমাদের জন্য বিব্রতকর।’
ঢাকা থেকে বিমানযোগে রংপুরে এসে আজ শনিবার বিকেলে নগরীর দর্শনাস্থ পল্লী নিবাস বাসভবনে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কবর জিয়ারত শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
জি এম কাদের বলেন, ‘জাতীয় পার্টি একমাত্র দল যারা সন্ত্রাসবাদ, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, হাট দখল, জমি দখল, অবৈধ ব্যবসা, লুটপাটের সাথে কখনো জড়িত ছিল না। বিএনপির আমলে আমরা হামলা-মামলার শিকার হয়েছি, আর আওয়ামী লীগের আমলে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি। ষড়যন্ত্র মানে দল ভাগ করে দেওয়া, ক্ষমতা অন্যত্র চলে যাওয়া। আওয়ামী লীগ বড় ধরনের দ্বন্দ্ব লাগিয়ে দলকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছিল।’
দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি একেবারেই স্বাভাবিক হচ্ছে না। জিনিসপত্রের দাম আকাশচুম্বি। মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছে, বেকারত্ব বাড়ছে। মানুষ মিল-কারখানা চালাতে পারছে না, উপার্জন কমে যাচ্ছে। সরকারের সামনে তিনটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো, মানুষের নিরাপত্তা দেওয়া, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা ও বেকারত্ব দূর করা। এর সাথে রাজনৈতিক অস্থিরতা তো কিছুটা আছেই।
জিএম কাদের বলেন, ‘জাতীয় পার্টি সব সময় কর্তৃত্বময় সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলে এসেছে। আমরা বিশ্বাস করি আমাদের ওপর যে জুলুম করা হচ্ছে, আমরা মজলুম হলে দেশের জনগণ অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে এবং আমাদের পক্ষে থাকবে। আমরা সঠিক পথে রয়েছি। আমরা এগুলোকে পাত্তা দিচ্ছি না।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে তিনি বলেন, সরকার এখন পর্যন্ত মানুষের নিরাপত্তা দিতে পারেনি। তবে তাদের দোষারোপ করা যাবে না। সরকার ভগ্ন স্তূপের মাঝে দায়িত্ব নিয়েছে। প্রশাসন নড়বড়ে, অর্থনীতি নাজুক, আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। এর ওপর মানুষের পাহাড় সমান প্রত্যাশা নিয়ে এগিয়ে যেতে হচ্ছে।
এ সময় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এইচএম ইয়াসির আহমেদ, ভাইস চেয়ারম্যান আজমল হোসেন লেবু, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, মহানগর জাতীয় পার্টির সিনিয়র সহ-সভাপতি লোকমান হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘শতাব্দীর প্রাচীন এই উৎসব যুগ যুগ ধরে হয়ে আসছে। এই উৎসবের দরজা কখনো বন্ধ থাকে নাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে পূজামণ্ডপ পরিদর্শনকালে আজ শনিবার তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘আমরা এই উৎসবের বেদিতে দাঁড়িয়ে এখানে এক-একজন ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের হতে পারি, কিন্তু আমরা তো একই ভূখণ্ডে দাঁড়িয়ে আছি। একই আলো-বাতাস-জলের মধ্যে অবগাহন করি। এই অবগাহনের মধ্য দিয়ে আমাদের ঐশিক চিন্তা জাগ্রত হয়েছে। জাগ্রত চেতনাকে বিভাজনের রেখা দিয়ে আর বিভক্ত করা যাবে না। শুধু নিজের স্বার্থের জন্য ওরা জঙ্গি, ওরা সাম্প্রদায়িক যে বিভেদ রেখা তৈরি করা হয়েছিল, সেটা আর করতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘যারা বিবাদের বাণী শুনিয়েছে তারা রাজনৈতিক উদ্দেশে ব্যক্তিস্বার্থে শুনিয়েছে। আমাদের এই জমাট অটুট বন্ধনকে নষ্ট করার জন্য বলেছে। হাজার বছর ধরে আমরা একসঙ্গে এ দেশে বাস করছি। বৌদ্ধদের আমল, হিন্দুদের আমল, মুসলমানদের আমল। বিভিন্ন আমল থাকতে পারে কিন্তু এই উৎসবের কোনো আমল ছিল না। ছিল মহামিলনের একটি জায়গা, একটি প্রাঙ্গণ। সেই প্রাঙ্গণ যাতে কেউ বিনষ্ট না করতে পারে আমাদের সবাইকে সেদিকে সজাগ থাকতে হবে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আজ সবাই একসঙ্গে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান এই দুর্গাপূজার উৎসবকে আরও বেশি উন্মুক্ত, আরও বেশি উদ্বেলিত করার জন্য প্রত্যেকটি সম্প্রদায়ের মানুষ মিলে পাহারা দিচ্ছে যাতে কোনো কুচক্রীমহল তাদের উদ্দেশ্য সাধন করতে না পারে।’
তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার এই উৎসবকে আরও আনন্দদায়ক করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নিশ্চয়ই সৃষ্টিকর্তা আমাদের সহায় হয়েছেন এবং হবেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা, বিএনপির সহপ্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, যুবদলের মেহেবুব মাসুম শান্ত, ছাত্রদলের নেতা মাসুদুর রহমান ও রাজু আহমেদ প্রমুখ।
মসজিদ কিংবা মন্দিরে রাজনীতির চর্চা কল্যাণ বয়ে আনে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
শুক্রবার বিকেলে পুরান ঢাকার ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ মন্তব্য করেন তিনি।
মন্দির প্রাঙ্গণে বসে রাজনৈতিক চর্চা না করার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘মনে রাখতে হবে আমরা বাংলাদেশি। আমাদের সমস্যা আমাদেরই সমাধান করতে হবে, বাইরে থেকে কেউ এসে সেটা করবে না।’
গয়েশ্বর বলেন, ‘মানুষ মানুষকে ভালোবাসতে হবে। কোনো ভিনদেশি আমার আপনার অধিকার আদায় করে দেবে না। নিজের অধিকার নিজেদেরই প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ভারত আমাদের জন্য কিছু করবে না, করেও না।’
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, এখনও মিডিয়া সত্য কথা বলতে পারে না। যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার আন্দোলন হয়েছে, তেমনটা এখনও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘বিগত ১৬/১৭ বছর ফ্যাসিবাদী অপশাসন-নিপীড়নের চাপে জর্জরিত নেতাকর্মীরা যখন অসহায় এবং ধ্বংসের মুখোমুখি, ঠিক সেই সময়ে নিজেদের আত্মসুখ বৃদ্ধির জন্য দেশ ও দল ছেড়ে অনেকেই বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন। এই দুঃসময়ে অনেকেরই কোনো খবর ছিল না। এখন প্রবাস থেকে ফিরে জনপ্রশাসন, পুলিশ ও মিডিয়া হাউসকে টার্গেট করে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে কেউ কেউ ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে।’
নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজ শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
রিজভী বলেন, দলের দুঃসময়ে নেতাকর্মীদের ওপর যখন উত্তরোত্তর ক্রমবর্ধমানভাবে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পৈশাচিক নির্যাতন বৃদ্ধি পাচ্ছিল, তখন নিজেদের নিরাপদ রাখতে এরা বিদেশে শান্তি ও স্বস্তিতে দিনযাপন করেছে। রাজনৈতিক দুর্যোগের ঘনঘটায় এদের জীবন কেটেছে নিরাপদে। অথচ আওয়ামী ভয়াবহ ফ্যাসিবাদের পতনের পরেও তাদের সৃষ্ট ক্ষতচিহ্নগুলো এখনো নিরাময় হয়নি। ৫ আগস্ট পর্যন্ত হাসিনার পেটোয়া বাহিনীগুলোর ছোড়া বুলেট ও ধারালো অস্ত্রে দীর্ঘ দুই মাসের বেশি জীবন-মৃত্যুর লড়াইয়ে পরাজিত হয়ে এখনো প্রতিদিনই কেউ না কেউ মৃত্যুবরণ করছে।
তিনি বলেন, এমতাবস্থায় দীর্ঘ দুঃসময়ে প্রবাসে অবস্থান করে নিজেদের খেয়াল খুশিমতো জীবনযাপন করে এখন দেশে ফিরে এসে প্রভাব খাটিয়ে আরও বেশি স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টায় লিপ্ত। তাদের পক্ষ থেকে বেশ তৎপর থেকে প্রশাসন, ব্যবসায়ী মহল এবং মিডিয়া হাউসসহ নানা প্রতিষ্ঠানে খবরদারি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এহেন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত খবরদারি সম্পর্কে সচেতন থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসহ সবাইকে সচেতন থাকবেন। এ সমস্ত ব্যক্তিরা কেউ বিএনপির প্রতিনিধিত্ব করে না।
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ৫ আগস্টের বিপ্লবে গুরুত্ববহ ঘটনার পর ১৬ বছর ধরে নিপীড়িত দেশবাসীকে সোনালি ভবিষ্যতের চিন্তায় যখন উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে, তখন দলের কয়েকজন স্বার্থান্বেষী ব্যক্তির সুবিধাবাদী ভূমিকা সম্পর্কে সবাইকে ওয়াকিবহাল থাকা প্রয়োজন।
ছাত্রলীগকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ আখ্যা দিয়ে আগামী রোববারের মধ্যে নিষিদ্ধ করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন ‘আমার দেশ’ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান। অন্যথায় আগামী ১৩ অক্টোবর (সোমবার) থেকে দুর্বার আন্দোলনের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এক মতবিনিময় সভায় এ আহ্বান জানান ড. মাহমুদুর রহমান। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের (টিএসসিসি) করিডোরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
মাহমুদুর রহমান বলেন, গত ১৬ বছরে বাংলাদেশের যত সন্ত্রাসী কার্যক্রম বা ঘটনা ঘটেছে, তার জন্য দায়ী ছাত্রলীগ। আগামী রোববারের মধ্যে যদি ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা না হয় তাহলে সোমবার থেকে আমার দাবির সমর্থনে আপনারা এখানে আন্দোলন শুরু করবেন। নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। আমি ঢাকায় মাঠে থাকব। আপনারা এখানে মাঠে থাকবেন। আওয়ামী লীগ থেকে মুক্তি পেতে হলে আগে ছাত্রলীগ নামক সন্ত্রাসীদের থেকে মুক্তি পেতে হবে।
তিনি বলেন, ‘দুটো লক্ষ্যে ছাত্র-জনতার আন্দোলন হয়েছিল। প্রথম লক্ষ্য ছিল ফ্যাসিবাদ সরকারের পতন ঘটানো। দ্বিতীয়ত ভারতীয় আধিপত্যবাদকে নির্মূল করা। আমাদের প্রথম লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয়টা আমরা এখনো অর্জন করতে পারিনি। এখন সুযোগ এসেছে, ভারতীয় আধিপত্যবাদকে চিরতরে উৎখাত করার। এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে টিকিয়ে রাখতে সব চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। কারণ এই সরকার না টিকলে ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদ আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। সরকারকে টিকিয়ে রাখতে সীসাঢালা ঐক্য লাগবে। ১৮ কোটি জনগণ যদি এক থাকে তাহলেই ভারতীয় আধিপত্যবাদের উৎখাত সম্ভব।’
মতবিনিময় সভায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আমার দেশ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও আমার দেশ পত্রিকার নগর সম্পাদক এম আব্দুল্লাহ, এবি পার্টির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মেজর আব্দুল ওয়াহাব মিনার, ইবির প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান, ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইবির সমন্বয়ক এস এম সুইটসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে গুম ও হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ থাকার পরেও কীভাবে তিনি গ্রেপ্তারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জামিন পেলেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
রাজধানীর খিলগাঁওয়ে আয়োজিত এক সমাবেশে আজ বৃহস্পতিবার তিনি এ প্রশ্ন তোলেন। সাবেরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে গুম ও হত্যাকাণ্ডের শিকার পরিবারগুলো আজ সমাবেশটির আয়োজন করে।
সভার বক্তব্যে রিজভী বলেন, ‘আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল আমার খুব কাছের। তিনি আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় সাবের হোসেন চৌধুরীর মতো একজন খুনি কীভাবে জামিন পেতে পারেন? সাবেরের নির্বাচনি এলাকার মানুষ চরম নির্যাতনের শিকার হয়েছে, অনেকে পঙ্গু হয়েছেন।’
‘ছাত্রদলের খিলগাঁও শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান জনিকে তার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ১৬ বার গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। সাবের হোসেন চৌধুরী কি এর জন্য দায়ী নন? তার নির্দেশে ওই এলাকার ১১ জনকে গুম ও হত্যা করা হয়েছে। তিনি এই দায় এড়াতে পারেন না।’
রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনা গণহত্যা করেছে এবং সাবের হোসেন চৌধুরী তার সহযোগী ছিল। তিনি শেখ হাসিনার আদর্শে লালিত হয়েছেন। ক্ষমতায় থাকাকালে কেউ গণতন্ত্র, বিএনপি, বেগম খালেদা জিয়া বা তারেক রহমানের পক্ষে কথা বলার সাহস পায়নি। এ কারণেই তিনি (সাবের) সফলভাবে গুম ও হত্যার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছেন।’
বিএনপির এ নেতা আক্ষেপ করে বলেন, ‘ছেলে হারানো বাবাদের চোখের পানি এখনো শুকায়নি, তারপরও গ্রেপ্তারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যা মামলায়ও জামিনে মুক্তি পেয়েছেন সাবের হোসেন। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হত্যা, দখলসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত থাকলেও হাসিনার শাসনামলে তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি।’
ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের সমর্থনে গঠিত একটি সরকার। তারা যদি শেখ হাসিনার পদাঙ্ক অনুসরণ করে, তাহলে এর অর্থ কী? আসিফ নজরুলের মতো একজন ব্যক্তিকে অন্তর্বর্তীকালীন এই সরকারে থাকতে গ্রেপ্তারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাবের হোসেন চৌধুরীর জামিনে মুক্তি পাওয়া কীভাবে সম্ভব? তাহলে এই সরকার কাকে রক্ষা করছে?-বলেন তিনি।
রিজভী জানান, সাবের হোসেন চৌধুরী বছরের পর বছর জনগণের ভোট ছাড়াই সংসদ সদস্য ছিলেন। তার নির্দেশে অনেক হত্যাকাণ্ড ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। যদি তাকে জামিন দেওয়া হয়, তাহলে আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত এবং ক্রসফায়ারে জড়িত পুলিশ; যারা মানুষকে গুম করেছে, নির্যাতন করেছে এবং মাথায় গুলি করেছে; সম্ভবত কয়েক দিনের মধ্যেই তারাও মুক্তি পাবে। এর জবাব অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কীভাবে দেবে?
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া অনেক রাজনীতিবিদ ও মন্ত্রিসভার সাবেক সদস্যদের মধ্যে সাবের চৌধুরীই প্রথম আওয়ামী লীগ নেতা। ৬ অক্টোবর রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
সুষ্ঠু ধারায় গণতান্ত্রিক রাজনীতি ফিরিয়ে আনতে অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
মিরপুরের পল্লবীতে বুধবার ডেঙ্গু প্রতিরোধে গণসচেতনতামূলক একটি অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।
রিজভী বলেন, কোথায় যেন ঢিলেঢালা ভাব, এভাবে চলবে না। আপনাদের ভেতর থেকে যদি কেউ অন্য উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করতে চায়, তাহলে আমি বলে রাখতে চাই- আমরা আন্দোলন থেকে চূড়ান্ত ইস্তফা দেইনি। আমরা আন্দোলনী ঝড়ের আর্তনাদ আপনাদেরও শোনাব।
তিনি বলেন, যদি নিজেরা শুধরে না যান; যদি সংস্কার ও নির্বাচনের মধ্যে রহস্য থাকে তাহলে আপনাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) প্রতিরোধের ঝড়ের নিনাদ শুনতে হবে। তাই আপনারা অবিলম্বে সুষ্ঠভাবে সুষ্ঠু ধারায় গণতান্ত্রিক রাজনীতি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।
জনগণ ভোট দিতে উন্মুখ হয়ে আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার সফল হোক আমরা চাই কিন্তু সফলতার নামে, সংস্কারের নামে যদি নির্বাচন দীর্ঘায়িত করা কয় তাহলে মানুষ তাদেরকে সন্দেহ করবে।
বিএনপির এ জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দল এবং দেশের সর্বস্তরের জনগণের সমর্থনের সরকার। এই সরকার যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে গণতন্ত্র ও জনগণ ব্যর্থ হবে। শেখ হাসিনার মতো কুলাঙ্গারের যেন প্রত্যাবর্তন না হয়। এটাই জনগণ চেয়েছে।
যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, বিএনপি একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক দল। গত ১৬-১৭ বছর নিরন্তর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এ দলটি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চাঙ্গা রেখেছে। এ কারণে পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার রোষানলে পড়ে গুম খুনের শিকার হতে হয়েছে অসংখ্য নেতাকর্মীকে। অনেককে হাত পা ভেঙ্গে পঙ্গুত্ব বরণে বাধ্য করেছে এবং চোখ অন্ধ করে দিয়েছে শেখ হাসিনার পুলিশ! সেই দল বিএনপি।
তিনি বলেন, কিন্তু কেন যেন মনে হয়, কতিপয় উপদেষ্টা এই দলটিকে একচোখে দেখার চেষ্টা করছেন।
বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় নেতা নাজিম উদ্দীন আলমসহ ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আমিনুল হক, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, যুবদল নেতা এস এম জাহাঙ্গীর, মেহবুব মাসুম শান্ত প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুবুল হকের আদালত মামলাটি খারিজ করে আজ বুধবার তাদের খালাসের রায় দেন।
আজ এ মামলার ধার্য তারিখ ছিল। তবে এ নিয়ে মামলার বাদী এবি সিদ্দিক ২০ বার আদালতে অনুপস্থিত রয়েছেন। পরে আদালত মামলাটি গড় হাজির দেখিয়ে খারিজ করে দেন এবং আসামিদের বেকসুর খালাস প্রদান করেন।
২০১৮ সালের ৬ আগস্ট দাঙ্গা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে এবি সিদ্দিকী বাদী হয়ে মামলা করেন। ২০২২ সালের ৯ জুন আদালত মামলাটি আমলে নেন।
পতিত স্বৈরাচারের কীটপতঙ্গ প্রশাসনের মধ্যে থাকলে তারা দেশকে বিপজ্জনক পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির উদ্যোগে ডেঙ্গু প্রতিরোধে গণসচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণের সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে রিজভী বলেন, ‘মানবতা অবশ্যই রাখবেন, কিন্তু যারা নিজেরা মানবতা দেখায়নি, যারা শেখ হাসিনাকে উদ্বুদ্ধ করেছে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে গুলি করতে, সেই স্বৈরাচারের কীটপতঙ্গ যদি প্রশাসনের মধ্যে থাকে, আপনাদের প্রতি পদে পদে বাধা দেবে। তাদের অতি দ্রুত চিহ্নিত করে গণতন্ত্রকামী মানুষের পক্ষে যারা ছিল অথবা যারা নিরপেক্ষ ছিল তারা যে দলেরই সমর্থক হোক না কেন এসব মেধাবী লোকদের প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় বসান।’
রিজভী বলেন, শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন, পুনরুত্থান মানে দেশ হবে এক ভয়ংকর বধ্যভূমি। এই বধ্যভূমি যাতে তৈরি না হয় তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে যেতে হবে।
তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে যে রাজনৈতিক দলই রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসবে তাদেরও অন্তরে সততার আলো নিয়ে খুব দ্রুতগতিতে কাজ করতে হবে। সেই পথ, সেই মত তৈরি করতে হবে ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে। অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যে মাঠ দরকার, সেটি তাদের তৈরি করতে হবে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী তাবাসসুম উর্মি প্রসঙ্গে বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, ‘তিনি আবু সাঈদের মতো একজন মহিমান্বিত আত্মদানকারী, নিজের জীবন দিয়েছে বুক চিতিয়ে হাসিনার পুলিশের গুলি বরণ করেছে তাকে বলছে সন্ত্রাসী। তাকে বলছে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী। এদের মতো লোকজন প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় আছে।’
‘নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তো প্রশাসনের একটি অংশ, তাহলে আজকে সচিবালয় থেকে শুরু করে বিচারালয় থেকে শুরু করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কীভাবে এই স্বৈরাচারের দোসররা একটি বিপ্লবের সরকারকে ব্যর্থ করতে চাইবে, সেটা তো আমরা প্রত্যেকেই জানি।’
প্রশাসনে যাদের নতুন প্রমোশন হচ্ছে তাদের উদ্দেশে রিজভী বলেন, ‘প্রশাসনে যাদের নতুন প্রমোশন হচ্ছে, তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই আওয়ামী প্রশাসন জনগণের টাকা লুট করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। আপনারা বঞ্চিত ছিলেন আপনাদের চিহ্নিত করা হয়েছিল বিরোধী দলের লোক হিসেবে। এখন আপনারা যদি মনে করেন এতদিন বঞ্চিত ছিলাম এখন ভাগ-বাঁটোয়ারা করে সেটি পূরণ করব। তাহলে কিন্তু এই জাতি চিরদিনের জন্য অন্ধকারে চলে যাবে।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দীন আলম, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা ডা. জাহিদুল কবির প্রমুখ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে কঠোর প্রতিরোধের মুখে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার চলে গেছে কিন্তু তাদের দোসররা এখনো ষড়যন্ত্র করছে বলে মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি।
রংপুর জেলা শিল্পকলা অ্যাকাডেমি মিলনায়তনে গতকাল সোমবার জুলাই-আগস্ট ২০২৪ ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের শহিদদের স্মরণে আয়োজিত স্মরণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সাকি বলেন, পতিত স্বৈরাচার পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখনো বলছেন যে, তিনি শীঘ্রই দেশে ঢুকে পড়বেন এবং ক্ষমতায় আসার পর তিনি সবাইকে দেখে নেবেন। অভ্যুত্থানের সময় ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল এবং সব ভয়ভীতি উপেক্ষা করে সাহসিকতার সাথে বুলেটের সামনে দাঁড়িয়েছিল। এ অবস্থা দেখে ফ্যাসিস্টের এক সঙ্গী বললো- স্যার, একটা গুলি লাগলে একজন মারা যায়। কিন্তু অন্যরা যায় না, তাদের সংখ্যা বাড়ে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একটি রাজনৈতিক দল ছিল। কিন্তু তিনি (শেখ হাসিনা) দলটিকে কোথায় নামালেন? এত হত্যা করার পরও তাদের কোনো অনুশোচনা নেই। তারা এখনো প্রতিশোধের কথা বলে আর সে উদ্দেশ্যে দেশে নানা ঘটনা ঘটছে। এ লক্ষ্যে পুরানো ফ্যাসিবাদী শক্তিগুলো দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছে। তাদের অসৎ উদ্দেশ্যকে চরিতার্থ করতে পাহাড়, মন্দির ও মাজারগুলোতে হামলা চালানে হচ্ছে। যারাই এটা করছে তারা ফ্যাসিস্ট বা তাদের পরামর্শদাতা।
তিনি আরও বলেন, আমাদের বাংলাদেশি হিসেবে চিহ্নিত করা উচিত। এই মর্যাদা রক্ষায় যুবসমাজকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সেই ঐক্য রক্ষা করে সকল প্রকার বিভেদ দূর করতে হবে এবং ফ্যাসিবাদকে চিরতরে দূর করতে ঐক্যবদ্ধভাবে গণতান্ত্রিক শক্তি গড়ে তুলতে হবে। যে রাষ্ট্রের জন্য আবু সাঈদ, মুগ্ধ ও মিলনের মত শহিদরা রক্ত বিসর্জন দিয়েছেন, সেই রাষ্ট্রকে রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনে আমরা সর্বদা মাঠে রয়েছি ও থাকব।
গণসংহতি আন্দোলন রংপুর জেলা আহ্বায়ক তৌহিদুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন নগর বিএনপির আহ্বায়ক শামসুজ্জামান সামু, শিক্ষক সিরাজুম মুনিরা, প্রকৌশলী লতিফুর রহমান মিলন ও শিক্ষার্থী শাহরিয়ার সোহাগ।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে করা মামলা ও রায় সবই রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং মিথ্যা ও বানোয়াট বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। তিনি বলেন, তারেক রহমান দেশের আইন-আদালত ও সংবিধানের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাশীল। যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই মামলাগুলো মোকাবেলা করা হবে।
আজ রোববার সুপ্রিমকোর্টর আইনজীবী সমিতি ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নামে করা মামলাগুলো বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের একটি টোটাল প্রজেক্টই ছিল বিএনপি চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে। তাদের বিরুদ্ধে আদালতকে ব্যবহার করা হয়েছে। শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট শাসনের সময় আদালতকে কীভাবে ব্যবহার করা হয়েছে তা তখনকার গণমাধ্যমকর্মীরা উপলব্ধি করলেও তা প্রকাশ ও প্রচারের পরিবেশ এবং সাহস ছিল না। তখন দেশের গণমাধ্যমকেও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। তবে বেশকিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনে কীভাবে বাংলাদেশে আদালতকে ব্যবহার করা হয়েছে, বিচারের নামে কীভাবে অবিচার হয়েছে সে প্রতিবেদন এসেছে।
তিনি বলেন, এ অবিচারের জন্য যারা দায়ী তাদেরকে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় বিচারের আওতায় আনতে হবে। তিনি বলেন, দেশের বিচারাঙ্গনকে কলুষিত করার প্রথম এবং প্রধান কুশীলব হচ্ছেন বিচারপতি এ.বি.এম খায়রুল হক। প্রধান বিচারপতি থাকাবস্থায় দেশে গণতন্ত্র হত্যার ক্ষেত্র প্রস্তুতে খায়রুল হক এককভাবে দায়ী। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলে বিতর্কিত রায় তার দেওয়া। গত ১৫ বছর বিচারের নামে যারা অবিচার করেছে, বিচার বিভাগকে কলুষিত করেছে, বিচার বিভাগের প্রতি আস্থাহীনতা সৃষ্টি করেছে সে সব বিচারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে পদক্ষেপ নিতে হবে। বিষয়টি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সাথে বিএনপির সংলাপে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
কায়সার কামাল আরও বলেন, বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় পরিকল্পিতভাবে তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করে প্রহসনের বিচার করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি প্রার্থী ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা আবদুল কাহহার আকন্দকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় পুনঃতদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি পুনঃতদন্তের নামে বিতর্কিত উপায়ে সম্পূরক চার্জশিটে তারেক রহমানের নাম জড়িত করেন। বিচারের নামে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অবিচার হয়েছে।
‘ওয়ান ইলেভেনের’ মতো বিএনপি আবার ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ দেখতে চায় না বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘আমরা কোনো বিরাজনীতিকরণের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। আবার মাইনাস টু দেখতে চাই না। আমরা আবার মৌলবাদ বা জঙ্গিবাদকে দেখতে চাই না। আমরা আবার সন্ত্রাসকে দেখতে চাই না। আমরা সত্যিকার অর্থে দেশে একটা সুস্থ উদার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দেখতে চাই।’
শনিবার রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে এক শিক্ষক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ উপলক্ষে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের উদ্যোগে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বর্তমান প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যে সরকার এসেছে, এটা তো আন্দোলন যারা করছে… আমরা সবাই মিলে দায়িত্ব দিয়েছি দেশকে সঠিক দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমরা তাদের অবশ্যই সময় দিচ্ছি, সময় দেব।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বারবার প্রশ্ন আসে যে, কত দিন সময় দেবেন? আমরা সেই পর্যন্ত সময় দেব যে পর্যন্ত একটা যৌক্তিক সময়ে তারা (অন্তবর্তীকালীন সরকার) একটা নির্বাচনের ব্যবস্থা তৈরি করতে পারেন। আমরা বিশ্বাস করি, রাজনীতি করি, আন্দোলন করেছি, জান দিয়েছি-প্রাণ দিয়েছি; একটাই লক্ষ্যে- আমরা জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই, আমরা গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে চাই।’
প্রশাসনে ‘স্বৈরাচারের ভূত’ বসে আছে অভিযোগ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে বলতে চাই- এই যে ভূতগুলোকে নিয়ে যারা এত দিন জনগণের ওপর অত্যাচার-নিপীড়ন চালিয়েছে, যারা দুর্নীতি করেছে, লুটপাট করেছে সেই ভূতেরা কিন্তু এখনো প্রশাসনের মধ্যে আছে। এই ভূতগুলোকে দূর করতে হবে। তা না হলে কোনোকিছুই করতে আপনারা সক্ষম হবেন না।’
শিক্ষক জাতীয়করণ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘জাতীয়করণ হলেই আপনাদের সব সমস্যার সমাধান আসবে না। শিক্ষার মান বাড়াতে হবে, যোগ্য মানুষকে নিয়ে আসতে হবে।’
শিক্ষক দিবসের প্রসঙ্গে টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শিক্ষকদের দলকানা হলে চলবে না। শিক্ষকদের দলীয় রাজনীতি থেকে একটু দূরে থাকতে হবে। তা না হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকবে না।’
পরিবর্তনে দেশে নতুন সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এখন পরিবর্তন আনতে হবে। এর জন্য কাজ করতে হবে। দরকার হলে আবার রাজপথে নামতে হবে, দরকার হলে আবার বুকে রক্ত দিতে হবে। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে এ দেশের সত্যিকার অর্থে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা করব, ম্যাডামের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করব, তারেক রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করব।’
শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে সমাবেশে গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক নুরুল হক নুরসহ শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চৌধুরী মুগিস উদ্দিন মাহমুদ, জাকির হোসেনসহ নেতারা বক্তব্য রাখেন।
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতন হলেও তার বিদেশি মুরুব্বি যারা আছে, তারা এ দেশের গার্মেন্টস শিল্প নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন বলে জানিয়েছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তারা দেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করতে চায় বলেও এ সময় তিনি উল্লেখ করেন।
আজ শুক্রবার গাজীপুর শহরের জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে গণসংহতি আন্দোলন আয়োজিত ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হোন’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘ষড়যন্ত্রকারীরা আন্দোলনের নামে শ্রমিকদের উসকে দিয়ে শিল্পক্ষেত্রে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। তবে আমাদের শ্রমিক ভাইদের ন্যায্য দাবি-দাওয়া মালিকদের মানতে হবে। তাদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গার্মেন্টস যেন বন্ধ হয়ে না যায়, সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ কারখানা বন্ধ হলে শ্রমিকরাই তাদের চাকরি হারাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যারা শহীদ ও আহত হয়েছেন, তাদের প্রত্যেকের পরিবারকে সম্মানজনক স্থানে রাখতে হবে। তারা আমাদের অহংকার, মর্যাদার এবং সম্মানের পাত্র। তাদের পরিবারের দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। তাদের প্রতিটি পরিবার থেকে অন্তত একজনকে সরকারি চাকরি দিতে হবে, যাতে কারও কাছে তাদের মাথা নত হয়ে থাকতে না হয়।’
জেলা গণসংহতি আন্দোলনের আহ্বায়ক আমজাদ হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য মনির উদ্দীন পাপ্পু, কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দীপক রায় প্রমুখ। সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের মধ্যে ১২ জন শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহতদের বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।