আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগুন সন্ত্রাসী ও মানুষ হত্যাকারীদের প্রতিহত করার জন্য দেশবাসীর প্রতি তাঁর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, সন্ত্রাস ও হত্যাকান্ড দিয়ে মানুষের মন জয় করা যায় না।
তিনি বলেন,''অগ্নিসন্ত্রাস-খুন করে জনগণের হৃদয় জয় করা যায় না। এটা তাদের (বিএনপি-জামায়াত) জানা উচিত এবং তাদের সে অনুযায়ী কাজ করা উচিত।''
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আজ বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে একথা বলেন।
তিনি বলেন, জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার আন্দোলন সংগ্রাম করে আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি। আজকে নির্বাচনী সংস্কার আমরা করেছি। আজকের জনগণের ভোটের অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছি। জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে কাকে তারা নির্বাচিত করবে। কে সরকারে আসবে। অগ্নিসন্ত্রাস-খুন করে জনগণের হৃদয় জয় করা যায় না। এটা তাদের জানা উচিত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা আন্দোলনের নামে মানুষ পোড়ায়, আন্দোলনের নামে রেল গাড়িতে যাতে দূর্ঘটনা হয় সেজন্য মৃত্যুর ফাঁদ তৈরি করে রাখে। মানুষ হত্যা করে, মানুষকে পুড়িয়ে মারে। জিয়াউর রহমান যেমন মানুষ হত্যা করেছে, খালেদা জিয়া এসেও একই কান্ড করেছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, কোটালিপাড়া বোমা রেখে দেয়ার মত বহু ঘটনা তারা ঘটিয়েছে। ঠিক একই ভাবে আজকে লন্ডনে বসে হুকুম দেয়া হচ্ছে। ওখান থেকে হুকুম দেয়া হয় আর এখন থেকে তাদের দল আগুন দেয়। এই যে আগুন নিয়ে খেলা এই খেলা ভালো নয়। বাংলাদেশের মানুষ এটা কখনো মেনে নেবে না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানোবো যারা অগ্নি সন্ত্রাসী তাদের বিরুদ্ধে সকলকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। ওরা হরতাল দিয়ে লুকিয়ে থাকে। ঘরে বসে থাকে। তার সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছে সে সুযোগ নিয়ে গুপ্তস্থান থেকে তারা হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি দেয় আর মানুষ হত্যার নির্দেশ দেয়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, লন্ডনে বসে সে এসবের হুকুমদাতা।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ জানে তাদের কিসে ভালো কিসে মন্দ। আর কোন দল ক্ষমতায় থাকলে তাদের কল্যাণ হয়।
''আজকে বাংলাদেশের সকল মানুষকে আমি এটাই আহ্বান করবো এই দুর্বৃত্ত অগ্নিসন্ত্রাসী, খুনী, যারা মানুষ খুন করার জন্য রেল লাইনের পাত ফেলে দেয়, রেল লাইন কেটে রাখে আর আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ায় এদের বিরুদ্ধে সমগ্র দেশের মানুষকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আর রেল লাইন থেকে শুরু করে সব জায়গায় পাহারা দিতে হবে। যারা রেললাইন কাটতে যাবে, আগুন লাগাতে যাবে তাদের ধরিয়ে দিন, উপযুক্ত শিক্ষা দিন। এদের ধ্বংসত্মক কাজ এদেশে চলতে পারে না,'' যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, করোনা মহামারী থেকে যখন আমরা কেবল উঠে আসছি তখন আসলো ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, স্যাংশন-কাউন্টার স্যাংশন-সেটাকেও মোকাবেলা করে আমরা যখন সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছি এই সময় তাদের অগ্নিসন্ত্রাস, হরতাল-অবরোধ। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আবার ছিনিমিনি খেলার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ এটা মেনে নিবে না। এই বার্তাটা সকলকে পৌঁছে দিতে হবে। যে এরা মানুষের কল্যাণ চায় না, লুটপাটের রাজত্ব চায়। এরা ভোটে যেতে সাহস পায় না। কারণ, তারা জানে ঐ অগ্নি সন্ত্রাসী, খুনী, এদেরকে বাংলাদেশের মানুষ ভোট দেবে না। সেই জন্যই তারা ঐ নির্বাচন বানচাল করতে চায়। সরকার উৎখাত করতে চায়।
তিনি আরও বলেন,''আওয়ামী লীগ কোন অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীর পকেট থেকে উঠে আসেনি। আওয়ামী লীগ এদেশের মাটি মানুষের সংগঠন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে এই সংগঠন গড়ে উঠেছে। কাজেই এই সংগঠনের শিকড় অনেক গভীরে প্রোথিত। আওয়ামী লীগকে এভাবে তারা কোনদিনই উৎখাতও করতে পারবে না, দাবাতেও পারবে না।''
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
কুয়েতের আমিরের মৃত্যুতে আগামীকাল বাংলাদেশ একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করায় আগামীকাল অনুষ্ঠেয় আওয়ামী লীগের বিজয় র্যালিটি পরের দিন ১৯ ডিসেম্বর অপরাহ্নে অনুষ্ঠিত হবে। বেলা আড়াইটায় বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন থেকে শুরু হয়ে ধানমন্ডি ৩২ এর বঙ্গবন্ধু ভবনে গিয়ে শেষ হবে বলে ওবায়দুল কাদের অনুষ্ঠানে ঘোষণা দেন।
সভায় বক্তৃতা করেন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এবং কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক ও সুজীত রায় নন্দী, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিরুল আলম মিলন এমপি, কেন্দ্রীয় নেত্রী মেরিনা জাহান কবিতা, এমপি, কেন্দ্রীয় সদস্য আনোয়ার হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শেখ বজলুর রহমান ও হুমায়ুন কবির প্রমুখ।
আলোচনা সভাটি সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এমপি এবং সহপ্রচার সম্পাদক সৈয়দ আব্দুল আউয়াল শামীম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি’র চরিত্র বদলায়নি। ২০০৮ এর নির্বাচনে জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছিল। সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৩৩টি সিটে বিজয়ী হয়। আর বিএনপি বিজয়ী হয় মাত্র ৩০ টি সিটে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ২০১৩ সাল থেকে তারা নির্বাচন ঠেকানোর নামে জ্বালাও পোড়াও শুরু করে। মানুষকে পুড়িয়ে মারা, জীবন্ত মানুষের গায়ে পেট্রোল বোমা মেরে তাদেরকে হত্যা করা- এটাই তাদের আন্দোলন। বাসে, গাড়িতে, লঞ্চে ও ট্রেনে সব জায়গায় তারা অগ্নি সংযোগ করে। গাছ কেটে ফেলা, রাস্তা কেটে ফেলা, আর আগুন দেওয়া। তাদের সেই অগ্নি সন্ত্রাসের শিকার হয়ে এখনো পোড়া শরীর নিয়ে কত মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে, কত মানুষ তাদের আপনজন হারিয়েছে। তারা নির্বাচন ঠেকাতে চেয়েছিল কিন্তু পারেনি জনগণ পাশে থাকলে পারা যায় না।
তিনি বলেন, ২০১৪ নির্বাচনে জনগণের সমর্থন নিয়ে আমরা ক্ষমতায় আসি এরপর ২০১৮ এর নির্বাচন-সে সময় তিনি টেলিফোন করে সংলাপের আহবান জানানোর সময় খালেদা জিয়ার দুর্ব্যবহার করার কথাও উল্লেখ করেন।
এ সময় তিনি জাতির পিতার মধ্যস্থতায় জিয়াউর রহমানের খালেদা জিয়াকে ঘরে তুলে নেওয়ার স্মৃতিচারণ করেন। তিনি বলেন, যে সময় তিনি (খালেদা জিয়া) দিনের পর দিন তাদের ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসায় এসে দেন দরবার করেছেন। জাতির পিতা জিয়াউর রহমানের জন্য ও সামরিক বাহিনীর উপ-প্রধানের একটি পদ সৃষ্টি করে তাকে সেই পদ দেন। যাতে খালেদা জিয়াকে সে নিজের ঘরে তুলে নেয়। মানুষ এগুলো কিভাবে ভুলে যায়? সে প্রশ্নও তোলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, এরা কখনো জনগণের কথা চিন্তা করে না। এরা শুধু নিজেদেরটাই ভালো বোঝে। এরা যখনই ক্ষমতায় এসেছে জনগণের ভোট চুরি করা, অর্থ সম্পদ বানানো, বিদেশে পাচার করা, মানি লন্ডারিং করা এবং এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করা- এগুলোই তারা করেছে। আর তাদের কাছ থেকে বড় বড় কথা এবং গণতন্ত্রের কথা আজকে শুনতে হয়, এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য।
২০১৮ সালে বিএনপি নির্বাচনে এলেও তাদের মনোনয়ন বাণিজ্যের কারণে ভরাডুবি, সে কথার উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। কারণ, সকালে-বিকালে তারা মনোনয়ন বদল করেছে। গুলশান, পল্টন ও লন্ডন থেকে নমিনেশন দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, দেখা যায় যখন লন্ডন থেকে নমিনেশন দেওয়া হয়, তখন পল্টন থেকে আবার আরেক জনকে দেওয়া হয়। সেই আসনেই আবার গুলশান থেকে একজনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। লন্ডনেরটা আসলে পল্টনেরটা বাদ পল্টনেরটা আসলে আবার গুলশান থেকে মনোনয়ন বাদ, এভাবেই চলেছে। শেষকালে লন্ডনও গেল, পল্টনও গেল আর গুলশানও গেল, এই ছিল তাদের নির্বাচন। এরপরও তারা যে কয়টি আসন পেয়ে সংসদে গিয়েছিল এবং সংখ্যায় কম হলেও তাদের কথা বলার জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়েছিল। যদিও সংসদে বিরোধী দলে থাকার সময় বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবেও তিনি মাইক পেতেন না এমন নজিরও রয়েছে। এমনকি ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর জাতীয় সংসদে একবারের জন্য এ নিয়ে কথা বলতে দেয়া হয়নি। গণতন্ত্রের চর্চা হিসেবে সম্পূর্ণ সুযোগ সুবিধা দেওয়ার পরেও একসময় একদশ সংসদ থেকে বিএনপি’র এমপিরা পদত্যাগ করলেন, যার কারণটা তার অজানা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে ফিলিস্তিনে ইসরাইলের আগ্রাসনে বিরুদ্ধে সংসদে রেজুলেশন গ্রহণ করা হলেও এ নিয়ে কথা বলে না বিএনপি।
তিনি একটি ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় হেবরনে ৬০ জন মুসল্লীকে একটি মসজিদে ইসরাইলিরা হত্যা করে। আওয়ামী লীগ সেটার প্রতিবাদ করেছিল এবং সংসদে একটি রেজুলেশন আনার জন্য চেষ্টা করেছিল এবং সরকারি দলকে আহ্বান জানিয়েছিল আপনারা এটার প্রতিবাদ করেন। তারা সে প্রতিবাদ করেনি এমনকি আওয়ামী লীগ যে প্রতিবাদ করবে সেটাও করতে দিবে না। সেদিন তারা সংসদ থেকে বের হয়ে যান এবং পদত্যাগ করেন।
আওয়ামী লীগ একটা নীতি নিয়ে চলে এবং সব সময় ফিলিস্তিনের জনগণের পক্ষে, নির্যাতিত মানুষের পক্ষে থাকে। আর ওদের চরিত্র হচ্ছে সাধারণ মানুষকে নির্যাতন করা। সেটাই প্রমাণ করে যাচ্ছে তারা।
বিএনপি’র নেতৃত্ব শূন্যতার উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এখন যখন নির্বাচন এসেছে তারা আবার নির্বাচন করবে না বলে ফ্যাকরা ধরেছে। আসলে তারা নির্বাচনটা করবে কিভাবে? তাদের নেতা কে? একটা মুন্ডবিহীন দল, যার শুধু ধর আছে। তিনি বলেন, তার সরকার যে ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছে তার সুযোগ নিয়ে অন্ধকার জায়গা থেকে হরতাল অবরোধ এগুলোর নির্দেশ দেয় তারা। রেল লাইনের বগি ফেলে দিয়ে, রেলের ফিসপ্লেট উপড়ে ফেলে রেলকে লাইনচ্যুত করাকে সরাসরি মানুষ হত্যার সঙ্গে তুলনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় ভোট কারচুপির অভিযোগে বিএনপি ও খালেদা জিয়ার দু’ দুবার জনগণ দ্বারা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার উল্লেখ করেন তিনি। ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন ও ভোট কারচুপির কারচুপি নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সে সময় জনগণের আন্দোলনের কারণে খালেদা জিয়া মাত্র দেড় মাসের মাথায় পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এটাও সবাইকে মনে রাখতে হবে। ভোট চুরির অপরাধ মাথায় নিয়ে খালেদা জিয়া বিদায় নেয়। তাই, আজকে খুব অবাক লাগে যখন বিএনপি গণতন্ত্রের কথা বলে আর জনগণের ভোটাধিকারের কথা বলে। আসলে ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া, ভোট কারচুপি করা, সিল মেরে বাক্স ভরা, হ্যাঁ না ভোটের নামে ‘না’ ভোটের বাক্স খুঁজে না পাওয়া- এগুলো কে করেছে?
তিনি বলেন, এগুলো জিয়াউর রহমানই অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে শুরু করেছিল। ক কজেই ওদের জন্মটাই অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর হাতে। ওদেরকে বাংলাদেশের জনগণ বিশ্বাস করবে কিভাবে?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে সময় প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্ত্রেও ঝনঝনানি ছিল। সন্ত্রাস আর দুনীতির আখড়া হয়েছিল বাংলাদেশ। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে তারা কিছুই করেনি শুধু নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে।
তাঁর সরকার গত ১৫ বছরে দেশকে যখন একটি সম্মানজনক অবস্থানে তুলে এনেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আগামীর বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ। এই সময় কেন যানবাহনে আগুন দেয়া হবে? কেন মানুষ স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারবে না? কেন বারবার তাদেরকে আগুনে পুড়িয়ে মারা হবে, সে প্রশ্ন উত্থাপন করে তিনি এবারের বিজয় দিবস স্বতস্ফূর্তভাবে সারাদেশে পালনের জন্য দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানান।
বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রামে সহযোগিতার জন্য বন্ধু রাষ্ট্রগুলো বিশেষ করে ভারত সরকার এবং এর জনগণসহ সকল রাজনৈতিক দল এবং সে সময়কার প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং তাঁর সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন প্রধানমন্ত্রী।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দ্রুত প্রত্যাহার হবে এমন কোন সম্ভাবনা নেই।
বরিশাল নগরীর শংকর মঠ পূজা মণ্ডপ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আজ এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, যখন একটা দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়, স্থায়ী কি অস্থায়ী এ ধরনের প্রশ্ন থাকে। আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের উপর দেয়া নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়া হবে এরকম কোনো সম্ভাবনা আমি দেখছি না।
বিদেশি গণমাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা বলেন, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অশান্ত পাহাড় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পাহাড়কে যারা অশান্ত করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সরকার।
তিনি আজ দুপুরে বরিশাল সার্কিট হাউজে পৌঁছে নগরীর নতুন বাজার সংলগ্ন শংকর মঠ পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের সাঙ্গে সাক্ষাৎ ও কুশল বিনিময় করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- বরিশাল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, পুলিশ সুপার মো. শরীফ উদ্দীন, শংকর মঠ পূজা মণ্ডপ কমিটির সভাপতি কানু লাল সাহা ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক তম্ময় তপু প্রমুখ।
জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ ৫ দফা দাবিতে দ্বিতীয় দফায় ১২ দিনের যুগপৎ আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীর মগবাজারের আল ফালাহ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, নতুন কর্মসূচি হিসেবে ৫ দফা গণদাবির পক্ষে জনমত গঠনের লক্ষ্যে ১ অক্টোবর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত সারাদেশে গণসংযোগ পালন করা হবে। এ উপলক্ষে মতবিনিময় সভা, গোলটেবিল বৈঠক, সেমিনার ইত্যাদি আয়োজন করা হবে। ১০ অক্টোবর রাজধানীসহ সকল বিভাগীয় শহরে গণমিছিল অনুষ্ঠিত হবে এবং ১২ অক্টোবর সারাদেশে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি পেশ করা হবে।
জামায়াতের ৫ দফা দাবি হলো:
১. জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে।
২. নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতে হতে হবে।
৩. সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।
৪. গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান হতে হবে।
৫. বিশেষ ট্রাইব্যুনালে ভারতীয় তাবেদার ও ফ্যাসিবাদের দোসর জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলের বিচার করতে হবে এবং বিচার চলাকালীন তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান অ্যাড. এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এএইচএম হামিদুর রহমান আজাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোমাইন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগর উত্তরের নায়েবে আমির আবদুর রহমান মূসা প্রমুখ।
বাংলাদেশের গণতন্ত্রে উত্তরণের পথে দেশি-বিদেশি শক্তি বাধা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তাঁর মতে, সেই ষড়যন্ত্র যে হচ্ছে, সেটি দৃশ্যমান।
আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণের এই যে প্রক্রিয়া, তাতে বাধা সৃষ্টি করার জন্য কেউ কেউ ষড়যন্ত্র করছে, সেটা দৃশ্যমান। এখানে আন্তর্জাতিক মহল থাকতে পারে, দেশি-বিদেশি শক্তি থাকতে পারে, সেটা আমরা অনুমান করতে পারি। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ এখন ঐক্যবদ্ধ। গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জনগণ সংকল্পবদ্ধ। এখানে গণতন্ত্র উত্তরণের পথে যারাই বাধা সৃষ্টি করবে এবং কোনোরকম ষড়যন্ত্র করবে, সে দেশেই হোক, বিদেশেই হোক—তাদের তারা প্রতিহত করবে।’
এ সময় পিআর পদ্ধতির দাবি প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা পিআর মনে করি জনসংযোগ। এখন সবাই জনসংযোগে আছে। আমরা সেই পিআর-এ বিশ্বাস করি!’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা জনসংযোগে আছেন। এই অবস্থায় কোনো দল যদি বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে, নির্বাচনের পথে বাধা সৃষ্টি করে—তাহলে জনগণ তাদের চিহ্নিত করবে এবং রাজনৈতিকভাবে প্রত্যাখ্যান করার সম্ভাবনা আছে।’
ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিনের সাথে বৈঠক করেন। ছবি: ফেসবুক
বাংলাদেশে আগামী বছর একটি অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য যুক্তরাজ্যের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক।
আজ সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সাথে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
সারাহ কুক বলেন, ‘যুক্তরাজ্য কয়েক মাস আগে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণাকে স্বাগত জানায়। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাথে বৈঠকে খুব ভালো আলোচনা হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে আগামী বছর বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য যুক্তরাজ্যের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছি।'
তিনি বলেন, 'নির্বাচন কমিশন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং আমাদের আন্তর্জাতিক অংশীদারদের প্রচেষ্টার প্রশংসা করি। যুক্তরাজ্য বিশেষ করে জাতীয় নাগরিক শিক্ষা কর্মসূচির মাধ্যমে, বিশেষ করে দেশের দুর্বল গোষ্ঠীগুলির জন্য এবং ভোটগ্রহণ কর্মীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করছে। তাই আমাদের এজেন্ডা ছিল নির্বাচন কমিশনের সাথে যুক্তরাজ্যের সমর্থন নিয়ে আলোচনা করা। যেমনটি আমি বলেছি, জাতীয় নাগরিক শিক্ষা এবং ভোটগ্রহণ কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্যও আমরা কাজ করছি। এই বিষয়গুলো নিয়ে আজ নির্বাচন কমিশনের সাথে আলোচনা করেছি।'
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি বলেছি যে যুক্তরাজ্য আগামী বছর বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে সমর্থন করছে।’
হেফাজতে ইসলামের অসুস্থ এক নেতার খোঁজখবর নিয়েছে বিএনপির নেতারা।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহ-সভাপতি এবং জামিয়া কাসিমিয়া আশরাফুল উলুম ঢাকার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল খতিবে বাংলার আল্লামা জুনায়েদ আল হাবীবের শারীরিক খোঁজখবর নিতে রোববার হাসপাতালে যান বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য (দপ্তরে সংযুক্ত) মো. আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী।
বিএনপির মিডিয়া সেলের ফেসবুক পেইজে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জিয়া মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম ও জিয়া মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্লাহ ইকবালের নির্দেশক্রমে ফরিদপুর মহানগর জিয়া মঞ্চের নতুন কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ফরিদপুরের জিয়ার সৈনিক, ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগ সরকারের হামলা-মামলা ও নির্যাতনের শিকার মোহাম্মদ কাইয়ুম মিয়াকে আহ্বায়ক ও এনামুল করিমকে সদস্য সচিব করে ২২ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। রোববার জিয়া মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দপ্তর সম্পাদকের চলতি দায়িত্বে থাকা ইঞ্জিনিয়ার মো. জামাল হোসেনের স্বাক্ষরীত এক পত্রে ফরিদপুর মহানগর জিয়া মঞ্চের ২২ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়।
কমিটির অন্যান্য কর্মকর্তারা হলেন সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মজিবর রহমান দিলীপ, যুগ্ম আহ্বায়ক নাইম আক্তার মুকুল, মাহবুবুর রহমান আজাদ, মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন, ফরিদ হোসেন, কিবরিয়া জামান, সম্রাট আলম, আসাদুজ্জামান, ডা. মোফাজ্জুল হোসেন চৌধুরী, সদস্য মোহাম্মদ নাসির মিয়া, উজ্জল মিয়া, শেখ আব্দুল আলীম মুক্তি, মাসুদ খান, নয়ন শেখ, তুষার আহমেদ, আব্দুর রহিম, মোস্তাফিজুর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার আসাদুজ্জামান আরিফ, ইউসুফ শেখ ও শহীদ আলম চৌধুরী ফরহাদ।
এদিকে জিয়া মঞ্চ ফরিদপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন মহানগর জিয়া মঞ্চের নতুন কমিটিকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, তারুণ্যদীপ্ত নতুন এই কমিটি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আর্দশকে বুকে ধারণ করে আগামীর রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমানের হাতকে শক্তিশালী করে তোলবে। এবং নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, আওয়ামী লীগের ইতিহাস লুটপাট আর সন্ত্রাসের ইতিহাস। আওয়ামী লীগের ইতিহাস চুরি আর অর্থ পাচারের ইতিহাস। তাদের ইতিহাস গণতন্ত্র হত্যার ইতিহাস।
গতকাল শনিবার বিকেলে কুমিল্লার টাউন হল মাঠে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, চব্বিশের আন্দোলনে ১৪০০ মানুষকে আওয়ামী লীগ হত্যা করেছে। ২০ হাজারের বেশি মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। এত রক্ত এত ত্যাগের মধ্য দিয়ে হাসিনার পতনের পর আজ আমরা এখানে আসতে পেরেছি। আমরা যেন আমাদের রক্তাক্ত ইতিহাস ভুলে না যাই।
তিনি আরও বলেন, বিএনপির ইতিহাস সংস্থারের ইতিহাস। বিএনপির ইতিহাস রাজনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষকে ধারণ করার ইতিহাস। বিএনপির ইতিহাস এ দেশে সংস্কারের মধ্য দিয়ে যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়ার ইতিহাস।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ধর্ম নিয়ে রাজনৈতিক ব্যবসা চলবে না। ইসলাম রাজনৈতিক বাক্স নয়। ইসলামের নামে যারা রাজনৈতিক বিভাজন সৃষ্টি করতে চায় তাদের রাজনৈতিকভাবে ভোটের মাধ্যমে মোকাবিলা করতে হবে। একাত্তরের চেতনার ব্যবসা করতে করতে হাসিনা দিল্লিতে আশ্রয় নিয়েছে। চেতনা ব্যবসা করতে করতে হাসিনার মৃত্যু হয়েছে ঢাকায় আর দাফন হয়েছে দিল্লিতে। সুতরাং একাত্তরের চেতনা ব্যবসা যেমন চলবে না, এই দেশে ধর্ম নিয়ে ব্যবসাও চলবে না। তেমনিভাবে জুলাই বিক্রি করেও ব্যবসা চলবে না। জনগণ এখন সচেতন। কোনো চেতনা ব্যবসায়ীকে প্রশ্রয় দেবে না।
তিনি আরও বলেন, কারা যেন জান্নাতের টিকিট বিক্রি করতে চায়। কেউ কি জান্নাতের টিকিট বিক্রি করতে পারে? যারা বিক্রি করতে চায় তারা ধর্ম ব্যবসায়ী।
সংস্কার প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, তারা যে সংস্কারের কথা বলে, তারা জানে না বর্তমানে সংস্কারের জনক তারেক রহমান। তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফাই এ দেশের প্রকৃত সংস্কার। আমরা ৩১ দফা সিলগালা করে দেই নাই। কেউ যদি আরও যৌক্তিক কোনো সংস্থার আনে তাও যুক্ত করা হবে। সংস্কার শেষ হয় না, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। কেউ বলছে বিচার, সংস্কার না হলে নির্বাচন হবে না। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচনের জন্য মুখিয়ে আছে। একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে গণতান্ত্রিক সরকার আসবে আমার বিশ্বাস।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকটিভ থাকতে হবে। সকল অপপ্রচারের জবাব আপনাদের দিতে হবে। প্রতিনিয়ত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে একটি গোষ্ঠী আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এ অপপ্রচারের জবাব দিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকটিভ থাকতে হবে ও এর বিরুদ্ধে সত্যটুকু তুলে ধরতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা বিচার চাই, যারা গণহত্যা করেছে গুম খুন করেছে তাদের বিচার অবশ্যই হতে হোক। বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল বৃদ্ধি করতে হবে। সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন একসঙ্গেই চলতে পারে।
এসময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন, কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া, বিএনপির কেন্দ্রীয় শিল্প বিষয়ক সম্পাদক মো. আবুল কালাম, কুমিল্লা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মোস্তাক মিয়া, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাকারিয়া তাহের সুমন ও সদস্যসচিব আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিমসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ না হই এবং গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো যদি ঐক্যবদ্ধ না থাকি, তাহলে ২০০৮ সালের তথাকথিত নির্বাচনের মাধ্যমে, ওয়ান ইলেভেনে যেভাবে স্বৈরাচার জেঁকে বসেছিল- সেভাবেই ঐক্যবদ্ধ না থাকলে আগামী দিনে গুপ্ত স্বৈরাচারের আবির্ভাব হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘জনগণ যেভাবে চায়, আমাদের সেভাবে চলতে হবে। একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে তা হলো- সবার আগে বাংলাদেশ। এটিই আমাদের শুরু, এটাই আমাদের শেষ।’
শনিবার বিকেলে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে কুমিল্লা দক্ষিণ বিএনপির সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভার্চুয়্যালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
এদিন ১৬ বছর পর কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমদ। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু। বিশেষ অতিথি বিএনপির চেয়ারপাসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী ও আমিন উর রশিদ ইয়াছিন, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, শিল্প বিষয়ক সম্পাদক মো. আবুল কালাম, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. মোস্তাক মিয়া। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক জাকারিয়া তাহের সুমন। সঞ্চালনা করেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিম।
তারেক রহমান বলেন, ‘বক্তব্য অনেক হয়েছে। এখন আমাদের কাজ করতে হবে। আজকে সম্মেলনের শ্লোগান হোক, ঐক্য, জনগণ এবং পুনর্গঠন। আমাদের নেতাকর্মীরা হাজার হাজার জনগণকে নিয়ে আন্দোলন করেছে। জেলে গিয়েছে, গুম হয়েছে। স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যেতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এখনই সময়, সকলে মিলে কাজ করে সুন্দর ঘর গঠন করার। এই বাংলাদেশকে গঠন করতে হবে। জনগণের কাছে যেতে হবে। মিটিং করে জনগণের কাছে যাওয়া যাবে না। প্রতিটি ঘরে ঘরে যেতে হবে। কীভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে, তা সকল জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘গুপ্ত স্বৈরাচার থেকে দেশ ও দেশের মানুষকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। আজকে আমাদের একটাই লক্ষ্য থাকবে, সেটি হচ্ছে, বিএনপির প্রত্যেক নেতা-কর্মীকে সব ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমাদের জনগণের পাশে দাঁড়াতে হবে। দেশ গঠন করতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই।’
বিএনপির শীর্ষ নেতা বলেন, ‘দেশ স্বাধীনের পর এক স্বৈরাচার দেশের মানুষের কাঁধে চেপে বসেছিল। পরবর্তী সময়ে সেই স্বৈরাচারকে বিতাড়িত করা হয়েছিল। একদলীয় শাসনকে বিতাড়িত করে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে আবার স্বৈরাচার এসেছে। জনগণ আন্দোলন করে, যুদ্ধ করে সেই স্বৈরাচারকে বিতাড়িত করেছে। বিগত ১৫ বছর আরেক স্বৈরাচার চেপে বসেছিল, সেই স্বৈরাচারকেও বিতাড়িত করেছে জনগণ। কাজেই জনগণের চাওয়া অনুযায়ী আমাদের চলতে হবে।’
দেশকে সবার ঘর উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘একটি ঘর তৈরির জন্য সবাইকে মিলেমিশে কাজ করতে হয়। সবাই মিলে, শ্রমিকেরা মিলে যখন কাজ করে, তখন একটি সুন্দর ঘর হয়। কিন্তু একটি ঘরকে যদি ধ্বংস করে দিতে হয়, তখন কিন্তু বেশি লোকের প্রয়োজন লাগে না। এই দেশটি হচ্ছে আপনার, আমার—সবার ঘর। এই ঘরে ডাকাত পড়েছিল ১৫-১৬ বছর ধরে। সেই ডাকাতকে বাংলাদেশের জনগণ বিতাড়িত করেছে। এখন বাংলাদেশকে গঠন করতে হবে। দেশ গঠনের শক্তি হচ্ছে জনগণ। তাই রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমাদের জনগণের কাছে যেতে হবে।’
তারেক রহমান আরও বলেন, ‘বিগত ১৫-১৬ বছর আমরা দেশের মানুষকে নিয়ে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। স্বৈরাচারের পতন হয়েছে, স্বৈরাচার দেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছে। তাহলে সামনে কী? এখন সামনে হচ্ছে দেশগঠন। সামনে মূল কাজ হচ্ছে দেশকে পুনর্গঠন করা। দেশকে যদি পুনর্গঠন করতে হয়, দেশকে যদি জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী গড়ে তুলতে হয়, তাহলে অবশ্যই আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
সম্মেলনে বর্তমান আহ্বায়ক জাকারিয়া তাহের সুমনকে সভাপতি ও সদস্য সচিব আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিমকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়।
আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতির নির্বাচনব্যবস্থা প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, কোনো রাজনৈতিক দলের অবৈধ ও অসাংবিধানিক আবদার মেনে জাতিকে সংকটে ফেলা যাবে না। সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোনো দাবি মেনে নিলে তা দেশের স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট বার মিলনায়তনে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ব্রিটিশ ল স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্সের ১৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
পিআর পদ্ধতি কার্যকর হলে বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ব্যাহত হবে বলে মন্তব্য করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, পিআর মানে হচ্ছে, ‘পারমানেন্ট রেস্টলেসনেস’ (স্থায়ী অস্থিরতা)।
উদাহরণ টেনে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পিআর চালুর পর দেখা গেছে, সরকার গঠন করতে দীর্ঘ সময় লেগেছে। কোথাও এক বছর বা দেড় বছর পর সরকার গঠিত হয়েছে। আবার সরকার গঠনের পর তা টেকসই হয়নি। কয়েক মাস বা এক বছরের মধ্যেই সরকার ভেঙে গেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, বাংলাদেশে পিআর পদ্ধতি চালুর মূল উদ্দেশ্য স্রেফ সংসদীয় আসনের সংখ্যা বাড়ানো নয়, বরং ঘন ঘন রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করা। এতে লাভবান হবে সেই শক্তি, যারা চায়, দেশ সব সময় অনিশ্চয়তায় থাকুক।
পিআর নিয়ে যেসব জরিপ প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, এক জরিপে দেখা গেছে, ৫৬ শতাংশ মানুষ পিআর বোঝে না। আবার অন্য জরিপে দাবি করা হয়েছে, ৭০ শতাংশ মানুষ পিআর চায়। এটা জাতিকে বিভ্রান্ত করার শামিল।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জনগণ যদি আগে থেকে জানতে না পারে, তাদের ভোটে কোন প্রার্থী নির্বাচিত হবেন, তাহলে জনগণের সরাসরি গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ কোথায় রইল? এতে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের জবাবদিহি দুর্বল হয়ে পড়বে।
সংবিধান ও আইনের শাসনের বাইরে গিয়ে কোনো সংস্কার দেশের জন্য শুভ হবে না বলে মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, ‘আমরা সাংবিধানিক ধারাবাহিকতায় থাকতে চাই। কোনো রাজনৈতিক দলের অবৈধ, অসাংবিধানিক আবদার মেনে জাতিকে সংকটে ফেলা যাবে না।’
ভবিষ্যতে রাজনৈতিক সংস্কার প্রসঙ্গে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন, স্বাধীন বিচারব্যবস্থা, নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার কথা বলেন সালাহউদ্দিন আহমদ।
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম, আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল ও রাগিব রউফ চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহ্বায়ক ওয়াসি পারভেজ তাহসিন।
নিউইয়র্কে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে কেউ লাঞ্ছিত করেননি বলে দাবি করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, নিউইয়র্কে মির্জা ফখরুলকে কেউ লাঞ্ছিত করেননি। তাকে নিয়ে নানা অপপ্রচার শুরু হয়েছে। সবকিছু মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকালে নবনির্বাচিত পিরোজপুর জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দদের সঙ্গে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এ কথা বলেন রিজভী।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, নিউইয়র্কে অন্তর্বর্তী সরকার দক্ষতা দেখাতে পারলে ফ্যাসিবাদের দোসররা এমন কর্মকাণ্ড ঘটানোর সাহস পেত না। সরকার কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় দোসরদের প্রেতাত্মারা দেশে নামতে পারছে, বিদেশের মাটিতে কার্যক্রম চালাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের দোসরদের সঙ্গে বিএনপির কোনো আতাঁত নেই।
ভয়ংকর ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের প্রতীক শেখ হাসিনা। বহু ধরনের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের মাস্টারপ্ল্যান চলছে। জুলাই শহীদদের রক্ত যেন বৃথা না যায়।
বিএনপির এই নেতা বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এখনো অর্থ লুটপাটকারীদের টাকা দেশে ফেরত আনতে পারেনি, বিচারও করতে পারেনি।
বিএনপির পক্ষ থেকে আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য কোনো আসনে বা কোনো প্রার্থীকে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
সম্প্রতি ‘প্রার্থীদের সবুজ সংকেত দিচ্ছে বিএনপি’ সংবাদ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন গণমাধ্যম। রিজভী জানিয়েছেন, সবুজ সংকেত সংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলোকে মনগড়া।
মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান রুহুল কবির রিজভী।
নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তিনি বলেন, ‘বিএনপির মনোনয়নের নামে নাম প্রকাশ করে মিথ্যা তথ্য দিয়ে অপপ্রচার চালিয়ে বিভ্রান্ত তৈরির চেষ্টা করছে একটি মহল।’
তিনি বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। উপযুক্ত সময়েই দলের নির্ধারিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই যাচাই-বাছাই করে যোগ্য ও সর্বোপরি জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য জনপ্রিয় প্রার্থীকেই বেছে নিয়ে তাদের নাম প্রকাশ করা হবে।’
প্রার্থী নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে রিজভী বলেন, ‘যেকোনো নির্বাচনে দলের প্রার্থী মনোনয়নের দায়িত্ব পার্লামেন্টারি বোর্ড পালন করে এবং এ ব্যাপারে বোর্ডের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গণ্য হয়।
তাই তফসিল ঘোষণার পরেই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তথা বিএনপির কেন্দ্র থেকে ঘোষণা ব্যতিত পত্রিকায় প্রকাশিত কোন মনগড়া সংবাদে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সারা দেশের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও গণঅধিকার পরিষদ একীভূত হওয়ার ইতিবাচক আলোচনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন।
এক্ষেত্রে ঐক্য বাধাগ্রস্ত হয় এমন কোনো মন্তব্য যেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে না করা হয়, সেজন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করেছেন তিনি। রোববার রাতে নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এমন অনুরোধ জানান।
রাশেদ খাঁন লিখেছেন, তরুণরা ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আলোচনা ইতিবাচকভাবে অগ্রসর হচ্ছে। যদি কিন্তু ছাড়াই ঐক্যবদ্ধভাবে পথচলার নবযাত্রা শুরু হলে এই দেশের রাজনীতিতে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। যেহেতু গণঅধিকার পরিষদ ও এনসিপির নেতাকর্মীদের অনেকের ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন, ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচন, ২০২১ সালের মোদির আগমন বিরোধী আন্দোলনসহ রাজপথে একসাথে পথচলার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে, রয়েছে একসাথে রাজনীতি করারও ইতিহাস।
২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্লাটফর্মে এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদের একসঙ্গে আন্দোলন করার কারণে একটা সখ্যতা আছে উল্লেখ করে রাশেদ লিখেছেন, এই দেশের জনগণেরও একটা প্রত্যাশা আছে, তরুণরা ঐকবদ্ধ হয়ে কাজ করুক। সেই জায়গা থেকে আমরা আলোচনা ইতিবাচকভাবে চালিয়ে যাচ্ছি।
একীভূত হওয়ার ব্যাপারে এখনো পর্যন্ত উভয় দলের নেতৃস্থানীয়দের মধ্যে পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গি বিরাজ করছে জানিয়ে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন অনুরোধ করেছেন, ঐক্য বাধাগ্রস্ত হয় এমন কোনো মন্তব্য যেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে না করা হয়।
এদিকে বিদ্যমান রাজনৈতিক দৃশ্যপটে ‘তিনটি ব্লক’ হচ্ছে মন্তব্য করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, স্বতন্ত্রভাবে এনসিপির নেতৃত্বে একটি ব্লক আসছে; তরুণদের নিয়ে এটা হবে সবচেয়ে বড় জোট।
গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে এনসিপির একীভূত হওয়ার গুঞ্জনও নিশ্চিত করেছেন তিনি।
গতকাল সোমবার নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে এনসিপি প্রতিনিধি দলের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন এ এনসিপি নেতা।
নিবন্ধন প্রত্যাশী এনসিপি আগামীতে শাপলা প্রতীকে ভোট করে দেড়শ আসন পাবে বলে দাবি করেন নাসীরুদ্দীন।
মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, ‘যেহেতু রাজনৈতিক দৃশ্যপটে তিনটি ব্লক হতে যাচ্ছে— একটি ইসলামিক ব্লক এরই মধ্যে হয়ে গেছে; বিএনপির নেতৃত্বে একটি ব্লক হচ্ছে; আর আমাদের নেতৃত্বে একটি ব্লক হচ্ছে।’
বিএনপি-জামায়াতের ব্লকে এনসিপি যাচ্ছে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা যেহেতু বিএনপি না, এজন্য বিএনপির ব্লকেও যাচ্ছি না। আমরা যেহেতু জামায়াত না, এজন্য জামায়াতের ব্লকেও যাচ্ছি না। আমরা স্বতন্ত্র।’
নিজেদের অগ্রযাত্রায় এনসিপির ব্যানারে তরুণদের নিয়ে একত্রে কাজ করা হবে এবং গণমাধ্যমে তুলে ধরা হবে বলে জানান তিনি।
গণঅধিকার পরিষদ এনসিপির সঙ্গে একীভূত হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে ‘হ্যাঁ’ বলেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।
তিনি বলেন, ‘কথাবার্তা চলছে; আমরা সম্মত হয়েছি। কী প্রক্রিয়ায় আসবে, এটা পলিসিগত জায়গা। আদর্শগত বিষয় স্পষ্ট করেছি। কয়েকটা আসন বা দেনাপাওনার বিষয় না; আদর্শিক লড়াই রয়েছে।’
নাসিরুদ্দীন বলেন, ‘আমরা এই গণঅভ্যুত্থানের সময় ইশতেহার দিয়েছিলাম। আমরা বলেছিলাম, যেহেতু ‘ফ্যাসিবাদী’ ব্যবস্থার বিলোপ হয়নি, আমাদের সামনে দীর্ঘ লড়াই রয়েছে। ফলত ওই জায়গা থেকে গত ১৫ বছরে যে তরুণরা আন্দোলন করেছিল, অনেকেই দল সৃষ্টি করেছিল, তারা অনেকেই সম্মত হয়েছেন এনসিপির ব্যানারে যোগ দেওয়ার জন্য।’
‘আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছি। এটা আমাদের সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, আমরা একসঙ্গে কাজ করব। কিন্তু কী প্রক্রিয়ায় এটা হবে, সে বিষয়ে এখনো কথাবার্তা চলছে, ফাইনালি জানাব।’
গেল ১৫ বছরে যত ব্যানার হয়েছে, সবগুলোকে একীভূত করা হচ্ছে বলে জানান এনসিপি মুখ্য সমন্বয়ক।
‘বৃহত্তর তরুণদের এলায়েন্স আসছে। ইনশাহআল্লাহ, এনসিপির হাতে ১৫০ টা আসন থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘এটাও আমরা বিবেচনায় রেখেছি, যেখানে জামায়াত থেকে তরুণরা দাঁড়াবে, যারা গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেছিল, বিএনপি থেকেও যে তরুণ সমাজ অংশগ্রহণ করেছে, আমরা তাদেরকে বিভিন্ন জায়গায়, যারা ভালো মানুষ, তাদের প্রতি মৌন সমর্থন দেব।’
এনসিপির এ নেতা বলেন, ‘এটা দেশবাসীর সামনে স্পষ্ট করতে চাই, আগামীতে সংসদটা হবে, সেখানে আওয়ামী লীগ থাকবে না, জাতীয় পার্টি থাকবে না। এটা দীর্ঘদিন ধরে আমরা বলে আসছি। এবার ব্যালট রেভ্যুলেশন হবে। ভোটিং প্রসেস থেকে, সব জায়গা থেকে, বাংলাদেশ থেকে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি হারিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।’
গণঅধিকার পরিষদ যদি এনসিপির সঙ্গে একত্রিত হয়, তাহলে কোন প্রতীক থাকছে- এমন প্রশ্নের জবাবে এনসিপির এ নেতা বলেন, ‘দলের নাম এনসিপি থাকবে, এনসিপির প্রতীকেই থাকবে। অন্য দলের নাম মার্কা ডিজলভ হবে এবং এনসিপির অধীনে আরও অনেক দল আসছে। এটা আমরা বড় ধরনের একটা পার্টি করতে যাচ্ছি। ফলে অনেকগুলা দল অনেকগুলা মত অনেকগুলা ব্যানার ইনশাল্লাহ এনসিপির ব্যানারে চলে আসবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, শুধু বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা নন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও যারা ভবিষ্যতে বিনিয়োগ করতে চাইছেন, তারা সবাই নির্বাচনের অপেক্ষায় আছেন।
আমীর খসরু বলেন, ‘একেবারে পরিষ্কার ভাষায় বলছি, তাদের (বিদেশি বিনিয়োগকারী) সমস্ত সিদ্ধান্ত স্থগিত রেখেছে নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত এবং নির্বাচনের পরবর্তী সময়ে তাদের যে বিনিয়োগের বিষয়টা বাংলাদেশের ব্যবসায়ী এবং বিদেশিরা সবাই অপেক্ষা করছেন, একটা নির্বাচনের পর বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে অনেকের উৎসাহ আছে। সবাই অপেক্ষা করছেন নির্বাচনের জন্য।’
গতকাল রোববার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির নেতাদের সঙ্গে ব্যবসায়ী নেতাদের প্রতিনিধিদের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথাগুলো বলেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বিকেল পাঁচটায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক প্রসঙ্গে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এখানে দুটি কারণ আছে। একটা হচ্ছে, আমাদের এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন (স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণ)। আরেকটা হচ্ছে, আমাদের লেবার (শ্রম) ইস্যু।’
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের সুবিধা-অসুবিধাগুলো শুনেছি এবং এখান থেকে যেটা প্রতীয়মান হয় যে এই মুহূর্তে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনে যাওয়া বাংলাদেশের বর্তমান এবং আগামী দিনের ব্যবসা-বাণিজ্য বিনিয়োগের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে না।’
বিগত দিনে এলডিসি উত্তরণ নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে বলেও বক্তব্য তুলে ধরেন আমীর খসরু। তিনি বলেন, বাংলাদেশ অর্থনীতি, বিনিয়োগ, ব্যবসা, বাণিজ্যে এগিয়ে যেতে চাইলে এই মুহূর্তে এলডিসি থেকে উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এলডিসি নিয়ে বাংলাদেশের প্রস্তুতির বিষয় নিয়ে জাতিসংঘকে একটি চিঠি দেওয়া দরকার বলেও জানান আমীর খসরু।
এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য ব্যবসায়ীরা প্রস্তুত নন
তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের সবচেয়ে বড় কনসার্ন হচ্ছে, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের ডিফামেন্ট নিয়ে কথাবার্তা বলা। আরেকটা হচ্ছে লেবার ল অ্যামেন্ডমেন্ট (ন্যূনতম ২০ জন শ্রমিকের সায় থাকলেই ট্রেড ইউনিয়ন করা যাবে, এমন বিধান)।’ এসব বিষয়ে বিএনপি মহাসচিবের মাধ্যমে বিষয়গুলো প্রধান উপদেষ্টার নজরে আনতে আজ বিএনপির সঙ্গে বৈঠকটি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, ‘বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে নিউইয়র্ক যাচ্ছেন। তাই তিনি (মির্জা ফখরুল) তাঁর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাবেন। তাঁর মাধ্যমে আমরা এই বার্তাটা প্রধান উপদেষ্টার কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি। এলডিসি থেকে উত্তরণ আমরা স্থগিত করতে চাই না, মাত্র তিন বছরের জন্য পিছিয়ে দিতে চাই। আর এটি লাগবে কারণ, আমরা এখনো এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য প্রস্তুত না।’
বৈঠকে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী, এপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান টি রহমান, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকিন আহমেদ, নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি ফজলে শামীম এহসান এবং নেক্সাস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রশিদ আহমেদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।