দ্রব্যমূল্য নিয়ে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে মজুতদার ও সিন্ডিকেটদের বিএনপি পৃষ্ঠপোষকতা ও মদদ দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি সিন্ডিকেট লালন পালন করছে, মজুদদারদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে - একথা বললে কি ভুল হবে? যারা করছে তারা বিএনপির পুরনো সিন্ডিকেট।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি সরকার ছিল ব্যবসায়ী সরকার। আওয়ামী লীগ ব্যবসা করতে আসেনি। এখানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার হাল ছেড়ে দিয়েছে -এ কথা মনে করার কোন কারণ নেই। যে অশুভ চক্র দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে জন অসন্তোষের কারণ সৃষ্টি করছে, তাদের কোন অবস্থাতেই ছাড় দেয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রী নিজেই জোরালোভাবে সেটি বলেছেন।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিদ্যুতে যথেষ্ট ভর্তুকি দিতে হচ্ছে সরকারকে। এই ভর্তুকি ধীরে ধীরে কমাতে চাই। সে কারণে সমন্বয় করাটা জরুরী হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ সুবিধা যদি বজায় রাখতে চাই তাহলে সমন্বয়টা আমাদের করতে হবে।’
ক্ষমতায় থাকাকালে বিএনপি দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছিল জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে দিনে ১৮ ঘন্টা লোডশেডি হয়েছে এবং সেখানে বিদ্যুতের দাম পাঁচ বছরে তারা ৯ বার বাড়িয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকার শতভাগ বিদ্যুৎ দিয়েছে। শেখ হাসিনার সরকারের আমলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৯ হাজার সাতশ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে।’
‘বিএনপি গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবে এবং এই আন্দোলনে সরকারের পতন অবশ্যই হবে’ বিএনপি নেতাদের এমন মন্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এখন প্রশ্ন হচ্ছে দেশে একটা নির্বাচন হয়ে গেল। তারা নির্বাচনে অংশ নেয়নি। আন্দোলনের নামে সন্ত্রাসের মহড়া দিয়েছে। আগুন সন্ত্রাস করেছে। আন্দোলনের নামে বিএনপি কত ভয়ংকর ভূমিকায় যেতে পারে সেটা তারা করে দেখিয়েছে বারে বারে। তারা জনগণের সম্পৃক্ত ছিল না বলে অতীতে তারা ব্যর্থ হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ভুল ও নেতিবাচক রাজনীতি করে যাচ্ছে বিএনপি। তারা একসময় নিশ্চয়ই স্বীকার করবে আন্দোলনে তাদের ভুল আছে। নির্বাচনে না আসাটা বিএনপির সবচেয়ে বড় ভুল। এখন তারা উপলব্ধি করবে।’
উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি দলগতভাবে অংশ না নিলেও তৃণমূলে নেতারা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় নির্বাচন করবে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়ে দলটির মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব চলছে। আমরা দলীয় প্রতীক দিয়ে নির্বাচন করছি না। এমন অবস্থায় স্বতন্ত্র পরিচয়ে বিএনপির অনেকে নির্বাচন করবে। দলীয়ভাবে যাই করুক যারা তৃণমূলে আছেন তাদের অস্তিত্বের বিষয় আছে। তৃণমূলে অস্তিত্ব নিয়ে টিকে থাকার প্রশ্ন আছে। আমার ধারণা বিএনপির অনেকেই অংশ নিবে। দলগতভাবে তারা যাই বলুক না কেন।’
বর্তমানে অর্থনীতির সংকট আছে জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘এজন্য আমরা দায়ী নই। বিশ্বে যুদ্ধ বিগ্রহ যেভাবে প্রসারিত হচ্ছে তাতে অর্থনীতির উপর প্রতিক্রিয়া স্বাভাবিকভাবে হচ্ছে। জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। কিন্তু দ্রব্যমূল্য যাতে মানুষের ক্রয়-ক্ষমতার মধ্যে থাকে সে ব্যাপারে সরকার যথেষ্ট তৎপরতায় কাজ করে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রণালয়গুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন, তার আলোকে সবাই কাজ করে যাচ্ছে।’
বিদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক এক মন্ত্রীর বিপুল অর্থ সম্পদ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী বলেন, ‘দুর্নীতি করে কেউ ছাড় পাবে না। তিনি মন্ত্রী হন আর যেই হোন।’
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক ও মির্জা আজম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। বর্তমানে তিনি চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারছেন। তাঁর শারীরিক অবস্থার বিষয় নিয়ে গুজব না ছড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা ও চিকিৎসা-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন এ আহ্বান জানান।
ব্রিফিংয়ে ডা. জাহিদ বলেন, ২৭ তারিখ থেকে সিসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন বেগম খালেদা জিয়া। বর্তমানে তিনি চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারছেন। বিভিন্ন গুজব, বিভিন্ন বক্তব্য দেখার পর থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন। যোগাযোগ করছেন দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সঙ্গে।
বিএনপির এ নেতা আরও জানান, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার প্রতিটি ধাপ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে তার জন্য বিদেশে উন্নত চিকিৎসার প্রস্তুতি এরই মধ্যে সম্পন্ন রয়েছে।
ডা. জাহিদ বলেন, ডাক্তাররা যে চিকিৎসা দিচ্ছেন, সেটি উনি গ্রহণ করতে পারছেন। তবুও বিদেশে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি আছে কি না মেডিকেল বোর্ডের সদস্যদের পরামর্শ নেয়া হচ্ছে। মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ ছাড়া বিদেশে নেয়ার সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, চিকিৎসায় সরকার সার্বক্ষণিকভাবে সহযোগিতা করছে। সংকটময় মুহূর্তে দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই। দোয়ার কারণেই হয়ত বেগম জিয়া সুস্থ হয়ে উঠবেন বলে আমরা আশা করি।
তিনি আরও জানান, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে কেবল তার এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর বক্তব্য ছাড়া অন্য কারও বক্তব্য প্রচার না করতে সাংবাদিকদের অনুরোধ করা হয়েছে।
এসময় ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন, বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতার খবরে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও শুভকামনার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেছেন, ‘দেশবাসীর সম্মিলিত সমর্থনই আমাদের পরিবারের শক্তি ও প্রেরণার উৎস।’
আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার আগে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তারেক রহমান এ কথা বলেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মমতাময়ী দেশনেত্রীর দ্রুত আরোগ্যের জন্য আমরা সবাই নিরন্তর দোয়া করছি। এই কঠিন সময়ে ঐক্য, সহমর্মিতা ও সংহতির জন্য প্রতিটি মানুষের প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতা রইলো।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য যেভাবে সহযোগিতা ও শুভকামনা জানানো হচ্ছে, সেজন্য জিয়া পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা সবার প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ, কূটনীতিকবৃন্দ ও বন্ধুগণের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা, পাশাপাশি বাংলাদেশের মানুষের অপরিসীম ভালোবাসা ও দোয়া, সবকিছু আমাদের আবেগ ও অনুভূতিকে গভীরভাবে স্পর্শ করছে।’
গত ২৩ নভেম্বর থেকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে শয্যাশায়ী খালেদা জিয়া। বর্তমানে তিনি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। লিভারজনিত সংকট, কিডনির কর্মক্ষমতা হ্রাস, শ্বাসকষ্ট, ডায়াবেটিসসহ একাধিক শারীরিক জটিলতা একসঙ্গে দেখা দেওয়ায় তাঁর চিকিৎসা আরও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত কয়েক দিনে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে আইসিইউ সমমানের হাইডিপেনডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) রাখা হয়েছিল। হঠাৎ তাঁর শারীরিক অবস্থা আরও অবনতি হওয়ায় গত রোববার মধ্যরাতের পর তাঁকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয় বলে জানা গেছে। সেখানে তার চিকিৎসকেরা খালেদা জিয়াকে ভেন্টিলেশনে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছেন।
বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনায় আজ মঙ্গলবার দেশব্যাপী মিলাদ ও দোয়া মাহফিল পালনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
গতকাল সোমবার সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কর্মসূচির কথা জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ মঙ্গলবার বাদ আসর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের উদ্যোগে বিশেষ মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
পাশাপাশি এদিন দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়, জেলা ও মহানগরেও বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় অনুরূপ মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হবে।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির আজ এক বিবৃতিতে এই কর্মসূচি যথাযথভাবে পালনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল ইউনিটের প্রতি আহ্বান জানান।
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সিসিইউতে পূর্বের মতোই চলছে বলে জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
দলের কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুব ইসলামের মোহাম্মদপুরস্থ বাসভবনে গতকাল সোমবার দুপুরে বেগম খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় শেষ দোয়া অনুষ্ঠানে রিজভী এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া শুধু বিএনপির নেত্রী নন, তিনি শুধু বিএনপির অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের নেত্রীও নন। আজ সারা বাংলাদেশের সকল মানুষ-পেশাজীবী, সুশীল সমাজ, ছাত্র, যুবক, শ্রমিক ও কৃষক সবাই তার জন্য দোয়া করছেন। তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ঘিরে গোটা জাতি আজ এক বেদনাবিধুর অবস্থার মধ্যে রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘দেশনেত্রী বন্দি থাকা অবস্থায় নিজের সন্তান হারিয়েছেন। তিনি অনেক নিপীড়ন ও নির্যাতন সহ্য করেছেন, তবুও তাঁকে নিজের দেশ থেকে সরাতে পারেনি।
তাঁর বিরুদ্ধে অনেক চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র হয়েছে, অনেক নির্যাতন হয়েছে। একটি ভগ্নস্তূপের মতো জেলখানায় তাকে বছরের পর বছর রাখা হয়েছে। তারপরও তাকে এই দেশ ও মাটি থেকে সরানো সম্ভব হয়নি। আজ সারা জাতি তার জন্য দোয়া করছেন।’
বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বলেন, বেগম জিয়া অত্যন্ত গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় বর্তমানে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আমরা সবাই আল্লাহর কাছে দোয়া করি, আল্লাহ তাকে খুব দ্রুত আরোগ্য দান করুন, সুস্থ করে তুলুন এবং আবারও এ দেশের মানুষের কাছে, জনগণের কাছে তাকে ফিরিয়ে দিন।
বেগম খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে রিজভী বলেন, ‘তিনি বর্তমানে সিসিইউতে আছেন। পূর্বে যে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল, গতকাল ও গত পরশু যেমন ছিল, আজও তেমনভাবে সেই চিকিৎসা চলছে। এর বাইরে আর কোনো নতুন আপডেট নেই। অন্য যে যা-ই বলুক, এতে কেউ যেন বিভ্রান্ত না হয়।’
রিজভী আরও বলেন, ‘বেগম জিয়া এখনও সংকটজনক অবস্থায় আছেন। তিনি গুরুতর অসুস্থ, ত গতকাল বা গত পরশু যে অবস্থায় ছিলেন, আজও তিনি সেই একই অবস্থায় আছেন। নানা ধরনের গুজব ও বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে, এতে কেউ যেন কান না দেয়।’
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কোনো নির্দিষ্ট দলের নন, তিনি সমগ্র দেশের মানুষের নেত্রী।
সোমবার রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে হৃদরোগের চিকিৎসা শেষে বাসায় ফেরার সময় তিনি এ মন্তব্য করেন।
ডা. তাহের বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আগামী রাজনীতি ও নির্বাচন সামনে রেখে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা, বোঝাপড়া ও নীতিগত ঐক্য আরও বাড়ানো প্রয়োজন। তিনি সব রাজনৈতিক দল ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান, যেন সবাই ধৈর্য ও প্রজ্ঞার সঙ্গে দেশকে অগ্রাধিকার দিয়ে দায়িত্ব ঠিক করে।
নিজের চিকিৎসা প্রসঙ্গে তিনি জানান, হৃদযন্ত্রে ব্লক অনুভব করায় তিনি ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসক মনিরুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা হয়। ব্লকটি শক্ত থাকায় চিকিৎসকদের মধ্যে মতভেদ ছিল। কেউ সিঙ্গাপুরে নেওয়ার পরামর্শ দিলেও তিনি ঢাকাতেই চিকিৎসা নিয়ে সফল হন।
বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ডা. তাহের বলেন, তিনি একজন দেশনেত্রী ও গণতান্ত্রিক নেত্রী। তার আপসহীন নেতৃত্বের কারণেই দেশ গত সাড়ে ১৫ বছরে অন্য দেশের আধিপত্যে পড়েনি। তিনি কোনো দলের নয়, পুরো দেশের মানুষের নেত্রী। জামায়াতের পক্ষ থেকে তার দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন তিনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, একটি রাজনৈতিক দল বিএনপি তথা দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্তে নেমেছে। তারা দেশি-বিদেশি মদতপুষ্ট হয়ে এদেশের মানুষকে একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করছে। ধর্মীয়ভাবে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। আমাদের মা-বোনদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।
গতকাল রোববার রাজধানীর নয়াপল্টনে একটি কমিউনিটি সেন্টারে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আরোগ্য কামনায় দোয়া মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, আমাদের নেতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যদি বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তন না করতেন, আর দেশনেত্রী খালেদা জিয়া যদি সেই গণতন্ত্রকে লালন না করতেন, তাহলে আজকের মতো নির্বাচনের সম্ভাবনা কখনোই হতো না।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা এদেশের মানুষকে এক মিনিটের জন্যও শান্তিতে থাকতে দেননি। গত ১৭ বছরে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে, আমাদের নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা যে আন্দোলন করেছি—সেই আন্দোলনের সুফল দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছি।
‘আমরা ভোটের অধিকার আদায় করেছি। এখন ভোট প্রয়োগের সময় এসেছে। আগামী যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে, সেই নির্বাচনে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন—সবার প্রতি এই আহ্বান থাকবে। কারণ, খালেদা জিয়ার হাতেই বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিরাপদ ছিল, বিএনপির হাতেই বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্ব নিরাপদ ছিল।’
মির্জা আব্বাস বলেন, আমার নেত্রী যে গণতন্ত্রের স্বাধীনতা দিয়েছিলেন, সেই গণতন্ত্রকে অপব্যবহার করে আওয়ামী লীগ গত ১৭ বছর দুঃশাসন চালিয়েছে। এখন যখন আবারও আমরা গণতন্ত্রের স্বাদ পেতে শুরু করেছি—ঠিক সেই সময় আরেকটি রাজনৈতিক দল বিএনপির বিরুদ্ধে তথা দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে।
‘তারা দেশি-বিদেশি মদতপুষ্ট হয়ে এদেশের মানুষকে একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করছে। তারা ধর্মীয়ভাবে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। তারা আমাদের মা-বোনদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে’— যোগ করেন তিনি।
মির্জা আব্বাস বলেন, খালেদা জিয়া জেলখানায় অপচিকিৎসার শিকার হয়ে আজ অসুস্থ। অথচ তাকে আজ জাতির সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সাম্প্রদায়িক শক্তি যদি মাথাচাড়া দেয় তাহলে ফ্যাসিবাদের চেয়ে তারা ভয়ঙ্কর হবে। এরা ধর্মে ধর্মে বিভেদ তৈরি করে। এদেশের মানুষ ধর্মমনা হলেও ধর্মান্ধ নয়।
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি ও ওই আদেশের উপর গণভোট আয়োজনসহ ৫ দফা দাবিতে ৮ দলের উদ্যোগে ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে রোববার রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সমাবেশে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, আগামীর সংসদ হবে চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসমুক্ত সংসদ। চাঁদাবাজদের প্রতিহত করব ইনশাআল্লাহ। অতীতে যারা চাঁদাবাজি করেছে, তাদের আর খাওয়া নাই। আগামীর সংসদ হবে কোরানের সংসদ। আগামীতে সচিবালয় চলবে সংসদ চলবে বিচারালয় চলবে কোরান দিয়ে। সবকিছু চলবে কোরান দিয়ে।
সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ৮ দলের জোট নতুন জাগরণ তৈরি হয়েছে। অবশ্যই জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট দিতে হবে। সরকার একইদিনে গণভোটের সিদ্ধান্ত কারও কুপরামর্শে করেছে।
এ সময় সমাবেশের সভাপতি সহকারী সেক্রেটারি রফিকুল ইসলাম খান বলেন, জুলাই বিপ্লব কোনো একক দলের নেতৃত্বে হয়নি। কিন্তু এই সরকার একটি দলের পকেটে ঢুকে যাচ্ছে। আমরা বলব, নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করুন। গণভোট আগে হতে হবে। ষড়যন্ত্র চলছে। যথাসময়ে নির্বাচন হতে হবে। গণভোট আগে দিতে হবে। গণহত্যার বিচার করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হবে।
রাজশাহী মহানগরী জামায়াতের সেক্রেটারি ও সমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ইমাজ উদ্দিন মণ্ডল ও মুফতি ইমরানের যৌথ সঞ্চালনায় সমাবেশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি শেখ মো. নুরুন্নবী, বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিসের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি মুফতি সুলতান মহিউদ্দিন, খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি শেখ মো. সালাউদ্দিন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব অধ্যক্ষ রোকনুজ্জামান রোকন, জামায়াতে ইসলামীর রাজশাহী মহানগরীর আমির ড. মাওলানা কেরামত আলী, নায়েবে আমির ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, রাকসুর ভিপি ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদসহ স্থানীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।
খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কারণে পূর্বঘোষিত বিজয় দিবসের কর্মসূচি স্থগিত করেছে বিএনপি।
রোববার (৩০ নভেম্বর) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকায় বিজয় দিবসের গৃহীত কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।
জনগণের কাছে দোয়া কামনা করেছেন তিনি।
তিনি আরও জানান, বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত। বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারে তার মেডিকেল বোর্ড এখনও কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।
এর আগে শনিবার (২৯ নভেম্বর) মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মাসব্যাপী নানা কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি।
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার আজকের অসুস্থতা স্বাভাবিক অসুস্থতা নয় বলে মন্তব্য করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতির শিকার হয়ে তিনি এমন অসুস্থ হয়েছেন।
গতকাল শনিবার বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত রূপসী বাংলা আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান-২০২৫ এ তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, আমি সবসময় কারা কর্মকর্তাদের থেকে সতর্ক থেকেছি। কারণ, কারাগারে স্লো পয়জন দেওয়া হয়। ভারতীয় একজন সাংবাদিক ঢাকায় এসেছিল। যখন আমার সঙ্গে দেখা হয় উনি বললেন, আমরা কী নিয়ে লাফালাফি করতেছি, উনি তো বাঁচবেন না দুই বছর। আমি বললাম কেন? তিনি বললেন, ওভাবেই ডিজাইন করা আছে। অর্থাৎ এমন করে ডিজাইন করা হয়েছে, উনি ধীরে ধীরে মৃত্যুবরণ করবেন। আল্লাহর রহমত, এখন পর্যন্ত তিনি বেঁচে আছেন। আমরা আল্লাহর কাছে তার সুস্থতা কামনা করব।
তিনি বলেন, বুধবার রাত একটার সময় নেত্রীকে দেখতে গিয়েছিলাম। সেখানে এক ঘণ্টার মতো ছিলাম। আজকে যে খবরটা জানলাম, উনি আগের চেয়ে ভালো আছেন। আল্লাহ তাকে সুস্থ করে তুলবেন, এ কামনা করি।
নির্বাচন নিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, আজকে যারা দেশের বাইরে থেকে চক্রান্ত করছে, তারা দেশটাকে বছরের পর বছর দখল করে রেখেছিল। তারা দেশটাকে একেবারে শেষ করে দিয়ে গেছে। তারা এখন বিদেশে বসে বক্তব্য দিচ্ছে, আওয়ামী লীগকে ছাড়া নির্বাচন হবে না। আপনারা বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচন করেন নাই? সুতরাং নির্বাচন বাংলাদেশে হবেই। এই ফেব্রুয়ারিতেই হবে, এতে কোনো ভুল নাই।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে এম মহসীন, সাবেক সভাপতি এ বি এম রফিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক বাবুল তালুকদার, রূপসী বাংলা-২০২৫ আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও প্রতিযোগিতার আহ্বায়ক নাসিম শিকদার, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খুরশিদ আলম প্রমুখ।
রূপসী বাংলা-২০২৫ আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেছেন এম হায়দার আলী (চট্টগ্রাম), দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন শামসুল হক রিপন (ঢাকা) এবং তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন এম রাশেদ (চট্টগ্রাম)।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের দপ্তর সম্পাদক ও জুলাই আন্দোলনের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড সিবগাতুল্লাহ সিবগা বলেছেন, দেশে মানুষের চাওয়া–পাওয়া খুবই অল্প, কিন্তু বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের এক শ্রেণির নেতা-কর্মী চাঁদাবাজিকে একটি সিস্টেম হিসেবে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। কৃষকের পণ্য, মিল-ফ্যাক্টরি—সবখানেই তাদের আধিপত্য। এই চাঁদাবাজির কারণে দেশের জীবনে বরকত নষ্ট হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। শুক্রবার সকালে গাজীপুরের কালীগঞ্জ আর আর এন পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কালীগঞ্জ উপজেলা শাখার আয়োজনে অনুষ্ঠিত ‘যুব সমাবেশ ২০২৫’-এ প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
সিবগাতুল্লাহ সিবগা বলেন, ‘অন্যের সম্পদ ও অধিকার ভক্ষণ করা আগুন ভক্ষণ করার চেয়েও ভয়ঙ্কর। স্বাধীনতার পর বারবার ভোট দিয়েছি—চিন্তা করেছি, হয়তো পরিবর্তন আসবে। কিন্তু যারা নিজেদের দলের দুর্নীতি রুখতে পারে না, তারা জনগণের পক্ষে অবস্থান নিতে পারে না। সময় বদলেছে, এখন আমরা হজরত ওমরের মতো যোগ্য নেতাকে ভোট দিবো, ইনশাআল্লাহ।’
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কালীগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমীর মো. আফতাব উদ্দিন এবং সঞ্চালনায় ছিলেন উপজেলা সেক্রেটারি মো. তাজুল ইসলাম।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি ও নির্বাহী পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ। অনুষ্ঠানে গাজীপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও গাজীপুর মহানগরের নায়েবে আমীর মো. খায়রুল হাসান কালীগঞ্জের উন্নয়ন নিয়ে একটি বিস্তারিত রূপকল্প উপস্থাপন করেন। তিনি রাজনৈতিক বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠে ‘সেক্টর ভিত্তিক উন্নয়ন কমিটি’ গঠনের ঘোষণা দেন, যেখানে সৎ ও দক্ষ ব্যক্তিদের সমন্বয় করে স্থানীয় উন্নয়নকে দ্রুততর করার পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন গাজীপুর মহানগর আমীর অধ্যাপক মুহাম্মদ জামাল উদ্দীন, গাজীপুর জেলা আমীর ও গাজীপুর-৩ আসনের প্রার্থী ড. মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, গবেষক আলী আহমাদ মাবরুর (শহীদ আলী আহসান মুজাহিদের পুত্র), গাজীপুর-৪ আসনের প্রার্থী মো. সালাহ উদ্দিন আইউবী, গাজীপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শামসুল হক ভূঁইয়া প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে একটি বিশাল মিছিল কালীগঞ্জ উপজেলার প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে থানা গেটের সামনে এসে শেষ হয়।
চট্টগ্রাম–৪ (সীতাকুণ্ড, আকবর শাহ, পাহাড়তলী ও খুলশী আংশিক) আসনের বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন টানা গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রতিদিনই কখনো বাঁশবাড়িয়া, কখনো কুমিরা কখনো সোনাইছড়ি, কখনো সৈয়দপুর, কখনো মুরাদপুর কখনো সীতাকুণ্ড পৌরসদর, কখনো পাড়া–মহল্লা, কখনো বাজারপাড়া-যেখানেই মানুষ আছে, সেখানেই তিনি উপস্থিত।
শুক্রবার তিনি বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ডজুড়ে গণসংযোগ করেন। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষের খোঁজখবর নেন, তাদের সমস্যা শোনেন, আর বদলের প্রত্যাশা নিয়ে আলোচনা করেন।
বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল এবং অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের নেতারা তার সঙ্গে সারাদিন মাঠে ছিলেন। এলাকাজুড়ে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি আর সাধারণ মানুষের আগ্রহ পুরো পরিবেশকে সরব করে তুলেছে।
গণসংযোগ চলাকালে মানুষের মুখে উঠে আসে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক দাম, কর্মসংস্থানের অভাব, নিরাপত্তাহীনতা, কৃষক–জেলে–শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের দুর্দশা।
কাজী সালাউদ্দিন তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং বলেন, এই এলাকার উন্নয়ন, ন্যায্য অধিকার আর ভরসার রাজনীতি প্রতিষ্ঠার জন্যই আমি মাঠে আছি। গণসংযোগে ইউনিয়ন বিএনপি, যুবদল, শ্রমিক দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলের শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন। এলাকাজুড়ে ব্যানার, লিফলেট আর হ্যান্ড মাইকে প্রচারণা মানুষের আগ্রহ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। কাজী সালাউদ্দিন জানান, এই এলাকার রাস্তা, ড্রেনেজ, স্বাস্থ্যসেবা, জীবনমান-সবকিছুতেই নতুনভাবে কাজ প্রয়োজন। তাই মানুষ পরিবর্তন চায়।
সংবিধান ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাঠে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করে চলেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
দলটি মনে করে, দেশের জনগণ গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে রাষ্ট্র গড়ে তুলেছিল, সেই রাষ্ট্রের মালিকানা তাদের হাতে নেই। কর্তৃত্ববাদী সরকার রাষ্ট্রকাঠামোকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। এই রাষ্ট্র মেরামত ও পুনর্গঠন করতে হবে। দেশের জনগণের হাতেই দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজন একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। সেই নির্বাচনে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে ১৮ মাসের মধ্যে এক কোটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং শিক্ষিত বেকারদের জন্য এক বছরের ভাতা চালুর অঙ্গীকার রয়েছে দলটির।
বিএনপি সূত্র জানায়, এবার তরুণ ভোটারদের অগ্রাধিকার দিয়ে প্রচারণা চালাবে দলটি। সেই লক্ষ্যে ‘তারুণ্যের প্রথম ভোট ধানের শীষের পক্ষে হোক’ স্লোগান বেছে নেওয়া হয়েছে।
দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, দেশের সব জনগোষ্ঠীকে কেন্দ্র করে বিএনপি তাদের প্রচারণায় খাদ্য সহায়তার জন্য ফ্যামিলি কার্ড, বীজ–সার ও অন্য সহায়তার জন্য কৃষক কার্ড এবং চিকিৎসা কার্ড চালুর পরিকল্পনার কথা তুলে ধরবে।
নারী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা, সমান সুযোগ ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করার অঙ্গীকারও বিএনপির প্রচারণার অন্যতম প্রধান কেন্দ্রবিন্দু হবে বলে তারা যোগ করেন।
গত সোমবার রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব আলোচনা হয়। শীর্ষ নেতারা দলের সম্ভাব্য প্রচারণা কৌশল নিয়ে এই বৈঠকে পর্যালোচনা করেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি বৈঠকে যোগ দেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ভোটারদের আচরণ বিশ্লেষণ ও তৃণমূল নেতা-কর্মীদের দিকনির্দেশনা দিতে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করা হয়েছে।
দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, সাতটি প্রধান ইস্যুকে কেন্দ্র করে ঘরে ঘরে গিয়ে সরাসরি ভোটারদের কাছে প্রতিশ্রুতি তুলে ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি।
দলীয় নেতারা জানান, খাতগুলো হলো- জলবায়ু ও পরিবেশ সুরক্ষা, শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, কৃষি, নারী ক্ষমতায়ন, ক্রীড়া ও ধর্মীয় বিষয়। নির্বাচনী প্রচারণার এই অঙ্গীকার তালিকা দলের ৩১ দফা সংস্কার পরিকল্পনার ভিত্তিতে করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কয়েকটি দল শিগগিরই মাঠপর্যায়ে কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ক্ষমতায় গেলে বাস্তবায়নযোগ্য বেশ কয়েকটি প্রতিশ্রুতি বিএনপির লিফলেটে তুলে ধরা হবে। এর মধ্যে রয়েছে পরিবেশ সুরক্ষা, ৫০ লাখ ফ্যামিলি কার্ড চালু, পাঁচ বছরে পাঁচ কোটি গাছ রোপণ এবং গুরুত্বপূর্ণ খাতে চাঁদাবাজি–দুর্নীতি দমনে বিশেষ উদ্যোগ।
যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস) মডেল অনুসরণ করে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা গড়ার পরিকল্পনাও প্রচারণায় তুলে ধরবে দলটি।
জলবায়ু ও পানি নিরাপত্তা ইস্যুতে ২০ হাজার কিলোমিটার নদী–খাল পুনরুদ্ধার, কমিউনিটিভিত্তিক সেচ ব্যবস্থা পুনরায় চালু এবং আধুনিক তিস্তা ও গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি থাকবে।
আর্থিক সংকটে থাকা ইমাম-মুয়াজ্জিনদের মাসিক ভাতা প্রদান এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উদ্বেগ নিরসনে বাড়তি উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে।
ক্ষমতায় গেলে শিক্ষা খাতে বড় ধরনের সংস্কার আনা হবে। স্কুলপর্যায়ের পাঠ্যক্রমে ক্রীড়া, শিল্প–সংস্কৃতি ও প্রযুক্তিগত শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং শিক্ষার্থীদের ক্ষুদ্রশিল্প স্থাপনে সরকারি সহায়তা দেওয়া হবে।
দলীয় সূত্র জানায়, শীর্ষ নেতারা এখন নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় বেশি সময় দিচ্ছেন, দুর্বলতা চিহ্নিত করছেন এবং ভোটের আগে সেগুলো সমাধানে কাজ করছেন। পোলিং এজেন্ট প্রশিক্ষণ, ব্যাকআপ এজেন্ট প্রস্তুত এবং ৩১ দফা প্রতিশ্রুতি ও রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা তুলে ধরে ব্যানার–ফেস্টুন–বিলবোর্ড টাঙাচ্ছেন।
দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর তত্ত্বাবধানে মূলধারার গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও তৃণমূলে প্রচারণা জোরদারে সমন্বিত কৌশল গ্রহণ করেছে বিএনপি। সাত সদস্যবিশিষ্ট সাতটি দল গঠন করা হবে, প্রতিটির জন্য আলাদা নেতা থাকবেন।
‘আমাকে যারা চিনেনি তারা এখনও মাটির নিচে বসবাস করে’ এমন বক্তব্য দিয়ে আবারো আলোচনায় জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহাজাহান চৌধুরী। তার এ বক্তব্য ছড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সেখানে তাকে বলতে দেখা যায়, আল্লাহর ওয়াস্তে বাড়াবাড়ি করিয়েন না। আমার নাম শাহজাহান চৌধুরী। আমি শুনতেছি, অনেক জনে নাকি উল্টাপাল্টা বলতেছে; খবরদার, খবরদার, খবরদার। আমার নাম শাহজাহান চৌধুরী। আমাকে যারা চিনেনি তারা এখনও মাটির নিচে বসবাস করে। আমি চোখ তুলে দেখতেছি, আমার জন্য আল্লাহ আছে। আল্লাহ মেহেরবানি, আমার জন্য সূর্য দাঁড়িয়ে থাকবে। আল্লাহ তায়ালা আমাকে এরকম মর্যাদা দিয়েছেন।’
চট্টগ্রাম জামায়াতের একাধিক নেতা নিশ্চিত করেছেন, গত ১৩ নভেম্বর সাতকানিয়া উপজেলার চরতি ইউনিয়নের তুলাতলী এলাকায় গণসংযোগকালে শাহজাহান চৌধুরী এই বক্তব্য দিয়েছিলেন। তবে সম্প্রতি বক্তব্যের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে চট্টগ্রামে আবারও সমালোচনা শুরু হয়।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে শাহজাহান চৌধুরী আরও বলেন, সেজন্য বলে যাচ্ছি, চুদুর বুদুর (উল্টাপাল্টা) করিও না। লুলা (অবশ) হয়ে যাবে। আমি যদি চোখের পানি ফেলি, লুলা হয়ে যাবে। আমি অনেক কষ্ট পয়েছি। ১৮ বছরের মধ্যে ৯ বছর জেল খেটেছি। আমি টাকা-পয়সা চাই নাই, ধনদৌলত, কাপড়চোপড়, পরিবারকে চাইনি। আমি আপনাদের দুয়ারে আজকে এসেছি।
তিনি আরও বলেন, আপনারা দোয়া করবেন। মেহেরবানি করে দোয়া করবেন। আমার চোখের পানি বৃথা যায়নি। এই চরতী আমার শায়েখ, ওস্তাদ মাওলানা মমিনুল হক চৌধুরীর জন্মস্থান। আমি এলাকাকে সম্মান করি, এই এলাকার মাটিকে সম্মান করি। এখানে কোন রাজনীতি নাই। এখানো আর কোনো মার্কা নাই, সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার মার্কা একটা, সেটা হলো দাঁড়িপাল্লা।
উল্লেখ্য, শাহজাহান চৌধুরী আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী থেকে চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের মনোনীত প্রার্থী।