জনবিচ্ছিন্ন হয়ে বিএনপি এখন সস্তা ইস্যু তৈরি করতে ভারতীয় পণ্য এবং ভারতের বিরোধিতা করছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা একটি কঠিন লড়াইয়ে রয়েছি। আমাদের এখন খুব সহজ সময় যাচ্ছে না। আবার এ বিএনপি মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে।’ শনিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে ছাত্রলীগের এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. মঈন খানরা যখন জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বেকায়দায় পড়েছেন, তখনই সস্তা ইস্যু তৈরি করে ভারতবিরোধিতা করে ভারতীয় পণ্য বর্জনের কথা বলেছেন। এই ভারতীয় পণ্য বর্জন, ভারতবিরোধিতা হলো ওদের রাজনৈতিক হালে পানি পাওয়ার জন্য অপচেষ্টা মাত্র; কিন্তু তারা জানে না জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়া ভারত ইস্যুকে ঘিরে যে ‘ভারত জুজুর রাজনীতি’ করেছিলেন সেই বাংলাদেশ আজকে আর নেই।’
তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে খুনিদের অবাধ বিচরণ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। যাদের আমরা মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত করেছিলাম, সেই ঘাতকদের অবাধ চারণভূমিতে পরিণত করেছিলেন জিয়াউর রহমান ও জেনারেল এরশাদ। আজকের দিনে বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।’
আবার ষড়যন্ত্র হচ্ছে মন্তব্য করে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘জামায়াত-শিবির কিন্তু বসে নেই, ছাত্রলীগকে মনে রাখতে হবে ওরা নিঃশেষ হয়ে যায়নি। যখন আমি জিয়াউর রহমান, এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এবং সারা দেশে বলেছি- একটি জাতিসাপ আমাদের পাশে পাশে চলছে। এই সাপটি যখন সুযোগ পাবে তখনই ছোবল দেবে। এই জাতিসাপ জামায়াতকে শুধু পিটুনি দিলে চলবে না, মাথায় আঘাত করে এই দেশ থেকে নিঃশেষ করতে হবে।’
ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন, সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত প্রমুখ।
কোনো মহল যাতে অযাচিত রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে না পারে, সে জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ‘সর্বোচ্চ মাত্রার’ নিরপেক্ষতা চেয়েছে বিএনপি।
দলটি বলেছে, ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য রক্ষার কোনো বিকল্প নেই।
রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে শনিবার সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।
ফখরুল বলেন, নির্বাচনে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা করা স্বাভাবিক, যেমনটি তারা অতীতে করেছে।
তিনি বলেন, ‘বিদ্যমান ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যই দেশ ও জনগণের মূল চালিকাশক্তি। এই ঐক্য অটুট রেখেই এই জাতিকে এগিয়ে নিতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।’
বিএনপির বর্ষীয়ান এ রাজনীতিক বলেন, এই ঐক্যের চর্চাকে অবশ্যই দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিণত করতে হবে। ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য ও গণঐক্যকে ধ্বংস বা ফাটল ধরায়, এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, ‘তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সর্বোচ্চ মাত্রার নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে। রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য কোনো মহলের এজেন্ডা যাতে সরকারের কর্মপরিকল্পনার অংশ না হয়ে যায়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।’
ফখরুল আরও বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের মূল অগ্রাধিকার হলো ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য সমুন্নত রেখে প্রায় ১৬ বছর ধরে চলা ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের আশা-আকাঙ্ক্ষার আলোকে বৈষম্যহীন রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।’
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের সকল সংস্কার প্রচেষ্টা বৃহত্তর জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠার ওপর কেন্দ্রীভূত, এটাই জাতির প্রত্যাশা।’
আওয়ামী লীগের বিচার এবং নিষিদ্ধের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন জুলাই অভ্যুত্থানে আহতরা। এ সময়ের মধ্যে নিষিদ্ধ না হলে সারা দেশ থেকে ঢাকামুখী হয়ে আরেকটি গণঅভ্যুত্থানের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
শনিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে ‘ওয়ারিয়রস অব জুলাই’ প্লাটফর্ম থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। এর আগে তারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হন।
বিক্ষোভ সমাবেশে কর্মসূচি ঘোষণা করে আহতরা বলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কার্যালয় থেকে ঘোষণা অথবা সিদ্ধান্ত আসতে হবে। এই সময়ের মধ্যে কোনো প্রতিশ্রুতি না এলে ৪৮ ঘণ্টা পর সারা দেশ থেকে আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। যত দিন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা না হবে শহীদ মিনারে তাদের সেই অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
সমাবেশে আন্দোলনে হাত হারানো আতিকুল গাজী বলেন, আওয়ামী লীগকে কোনোভাবে পুনর্বাসন করা যাবে না। যদি করতে হয় আমার হাত ফিরিয়ে দিতে হবে। দুই হাজার শহীদ এবং ত্রিশ হাজার আহতদের সুস্থ করে দিতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন কোনোভাবেই করতে দেব না। অন্তর্বর্তী সরকারকে বলব, যেভাবেই হোক হাসিনাকে দেশে এনে ফাঁসিতে ঝুলান, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেন।’
আহত হাসানুর রহমান বলেন, ‘এই বাংলার মাটিতে যত দিন পর্যন্ত বেঁচে আছি তত দিন আওয়ামী লীগ খুনি হাসিনার বাংলার মাটিতে জায়গা হবে না।’
আহত মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়- ২৪ অভ্যুত্থানের পরে যোদ্ধাদের আবার নামতে হয়। অথচ সেই হাসিনার বিচার এখনো হলো না। অনতিবিলম্বে আপনারা সাবধান হন, নইলে জুলাই যোদ্ধারা আবার আপনাদের নামে রাজপথে নেমে আসবে।’
আহত আরমান হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মা রাষ্ট্রপতি চুপ্পুসহ প্রধান উপদেষ্টা যে বক্তব্য দিয়েছে সেটি প্রত্যাখ্যান করে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যদি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা না হয় তাহলে আমরা ৬৪ জেলা থেকে জুলাই যোদ্ধা শহীদ পরিবার ঢাকামুখী হব। আবার একটি গণঅভ্যুত্থান হবে। এ অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ তো নিষিদ্ধ হবেই, আওয়ামী লীগকে যারা সমর্থন করছে, তাদেরও বিচারের মুখোমুখী করা হবে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। যারা তাদের সমর্থন করেছে তাদের অনতিবিলম্বে ক্ষমা চাইতে হবে।’
আহতদের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টাসহ সব উপদেষ্টার অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। কেউ যদি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করে তাহলে তাদের গদি থাকবে না। কোনো রাজনৈতিক দল যদি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করে তাদেরও আওয়ামী লীগের মতো পরিণতি ভোগ করতে হবে।
ওয়ারিয়রস অব জুলাই-এর আহ্বায়ক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘একটি অভ্যুত্থান হয়েছে কিন্তু বাংলাদেশের প্রত্যেকটা সেক্টরে খুনি হাসিনার দোসররা নানা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। দুই হাজার লাশ এবং হাজারো আহতের অঙ্গহানির ওপর রাষ্ট্র দাঁড়িয়ে আছে। অবিলম্বে খুনি হাসিনার বিচার নিশ্চিত করতে হবে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে বিচারের মুখোমুখী করতে হবে।’
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই নানা কারণে আলোচনা-সমালোচনায় আছে দলটি। আগস্টের শুরুতে শেখ হাসিনার ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে ‘পালিয়ে যাওয়া’র পর থেকেই জুলাই আন্দোলনে হাজারের বেশি হত্যাকাণ্ডের দায়ে অভিযুক্ত দলটির শীর্ষ নেতারা। অনেকে গ্রেপ্তার হয়ে বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন, অনেকে গোপনে দেশ ছেড়ে বিদেশে অবস্থান করছেন। রাজনীতির ময়দান থেকে তো বটেই অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকেও সব সময় কড়া বার্তা উচ্চারিত হচ্ছে দলটির অভিযুক্ত নেতাদের প্রতি। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান ও তদন্তে বের হচ্ছে নেতাদের বিপুল ‘অবৈধ সম্পদের’ খোঁজ। অনেকেই আটকাচ্ছেন দুদকের মামলার জালে। এর আগেই জুলাই হত্যার ঘটনায় দেশজুড়ে শত শত মামলা দায়েরের পর গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের মুখোমুখিও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও তার পরিবার এবং দলটির কেন্দ্রীয় অনেক নেতা। হুলিয়া মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ অনেকে। সরকারের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে চিঠিও দেওয়া হয়েছে ভারত সরকারের কাছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের সরকার পতনের ৬ মাস পূর্তির দিনে শেখ হাসিনা দলটির প্রবাসী নেতাদের সঙ্গে কথা বলার কারণে রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর ভবন, জাদুঘর, শেখ হাসিনার বাসভবনসহ একাধিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে ছাত্র-জনতা। এর ভেতরেই রাজনীতিতে যখন সংস্কার আর নির্বাচন ইস্যু নিয়ে বড় দলগুলোর সঙ্গে ছাত্রদের দলের মত-পার্থক্য দেখা দিয়েছে, তখন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফিরে আসার আলোচনা আবারও উত্তাপ ছড়াচ্ছে রাজনীতির মাঠে।
এ আলোচনা প্রকাশ্যে আসে গত বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিনিধি দলের আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূসের করা একটি মন্তব্যকে ঘিরে। তিনি সেখানে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন ‘অন্তর্বর্তী সরকারের আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই।’ আর এরপর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাসহ বেশ কিছু ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের এর প্রতিবাদে মিছিল হয়েছে। তারা প্রধান উপদেষ্টার এ মন্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছেন।
তবে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সরকারের স্থানীয় সরকার, সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে দাবি করেন ভারতের পরিকল্পনায় ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নামে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসিত করার ষড়যন্ত্র চলছে। এ বিষয়টি মেনে নেওয়ার জন্য তাদের চাপ প্রয়োগের বিষয়েও বিস্তারিত লেখেন হাসনাত।
এদিকে, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘নির্বাচন পিছিয়ে যাবে, অনিশ্চয়তা তৈরি হবে- এসব শঙ্কার কথা বলে কেউ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে জনতার ঐক্যে ফাটল ধরাতে আসবেন না।’
যদিও গতকাল শুক্রবার রাজধানীর উত্তরার দক্ষিণখানে ফায়দাবাদ মধ্যপাড়া হাজী শুকুর আলী মাদ্রাসা সংলগ্ন মাঠে বিএনপি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, হত্যা-লুটপাটে জড়িত নয়, এমন কারও নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বাধা নেই। এ সময় তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ে কথা হচ্ছে; কিন্তু বিচার নিয়ে কথা হচ্ছে না। দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। বিচারের পর আওয়ামী লীগকে জনগণের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। আর জনগণ ক্ষমা করলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
এরপর গতকাল রাতে সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আওয়ামী লীগের বিচার চলাকালীন আওয়ামী লীগ এবং ফ্যাসিবাদের সব সহযোগী ব্যক্তি ও সংগঠনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। নাহিদ ইসলাম বলেন, সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক কমিশনের প্রতিবেদনে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, জুলাই মাসে বাংলাদেশে সংঘটিত অপরাধ আন্তর্জাতিক অপরাধের শামিল। আওয়ামী লীগের মানবতাবিরোধী অপরাধের ব্যাপারে এত সুস্পষ্ট আন্তর্জাতিক বক্তব্য থাকার পরও বিচারিক প্রক্রিয়ায় ধীরগতি অত্যন্ত নিন্দনীয়। জাতীয় নাগরিক পার্টি অবিলম্বে জুলাই গণহত্যাসহ বিগত ফ্যাসিবাদী রেজিমের সংঘটিত গুম ও বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচারে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে চায়।
এ সময় অন্তর্বর্তী সরকার থেকে সম্প্রতি পদত্যাগ করা এই উপদেষ্টা বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মন্তব্য করেছেন ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই।’ আমরা তার এ বক্তব্যের নিন্দা জানাই। আওয়ামী লীগ কর্তৃক সংঘটিত পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা হত্যাকাণ্ড, আগ্রাসন, বিগত আন্দোলনের হত্যাকাণ্ড, গুম, ক্রসফায়ার, ভোট ডাকাতিসহ জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রশ্নে কার্যকর অগ্রগতি দৃশ্যমান হওয়ার আগে রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল পথ থেকে এ ধরনের বক্তব্য অনাকাঙ্ক্ষিত।’
ফলে আলোচনায় আবার এসেছে আওয়ামী লীগ কি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বদল করে অভিযোগ নেই এমন নেতাদের দিয়ে দলকে নতুন করে পুনর্গঠন করে রাজনীতিতে আসতে চাইছে? হাসনাতের দেওয়া স্ট্যাটাসে পরিষ্কার, ‘সাবের হোসেন চৌধুরী, শিরিন শারমিন, তাপসকে সামনে রেখে এই পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে।’ হাসনাত আব্দুল্লাহ আরও বলেছেন, ‘একটি বিরোধী দল থাকার চেয়ে একটি দুর্বল আওয়ামী লীগসহ একাধিক বিরোধী দল থাকা’র প্রস্তাব পেয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে এনসিপির এই নেতাসহ তার দল আপত্তি জানালেও দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি ‘জুলাই বিপ্লবের’ পর থেকেই বলে আসছে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের বিষয়ে তাদের কোন পরিকল্পনা নেই, দাবিও নেই। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে আদালত ও দেশের জনগণ। আর রিজভী বলেছেন, যদি নির্দোষ নেতারা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসেন তাহলে তাদের রাজনীতিতে বাধা নেই।
লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকার এর আগে গত ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করলেও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোন সিদ্ধানন্তের কথা জানায়নি। বরং ড. ইউনূস একাধিক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, চলমান বিচারগুলো শেষ হওয়ার পর তাদের রাজনীতিতে আসতে বাধা নেই।
এদিকে, এরমধ্যেই যদি আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব পদত্যাগ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী দলটির নেতৃত্ব অপেক্ষাকৃত নবীন এবং কোন মামলার আসামি নন এমন কারো হাতে তুলে দেন তাহলে তাদের আইনিভাবে রাজনীতির অধিকার কেড়ে নেওয়া সম্ভব হবে কিনা সরকার বা কোন পক্ষের তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা এখন হতেই থাকবে। তবে নতুন নেতৃত্ব দিয়ে আওয়ামী লীগের ফেরা না ফেরার আলোচনার মধ্যেই একটা বিষয় পরিষ্কার, আগামীকাল রোববার ঐকমত্য কমিশনের কাছে প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির সংস্কারের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা জমা পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই নির্বাচনের সময়ের ব্যাপারটি সুস্পষ্ট হতে থাকবে। কারণ, প্রধান উপদেষ্টার পাশাপাশি ছাত্র উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুইয়ও বলেছেন ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হবে, নির্বাচন পেছাবে না।
নির্বাচন ইস্যুতে কোনো কোনো উপদেষ্টা এবং দুই-একটি রাজনৈতিক দল ভিন্ন সুরে কথা বলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেন, বন্দোবস্তের নামে ভিন্ন সুরে কথা বললে জনগণের মনে প্রশ্ন দেখা দেবে, সুযোগ নেবে পরাজিত শক্তি। চরমপন্থা ও উগ্র ধর্মীয় মতবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে গণতন্ত্রের কবর রচনা হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বুধবার রাজধানীর ইস্কাটনে লেডিস ক্লাবে বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সংস্কার আর নির্বাচনকে ঘিরে দেশের রাজনীতিতে যখন নানা মেরুকরণ, এমনই এক সময়ে এক ছাদের নিচে এলো দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল।
রাজনীতিবিদদের সম্মানে বিএনপির এই ইফতার মাহফিলে জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া প্রায় সব দল মিলে এক মিলনমেলার সৃষ্টি হয় রাজধানীর ইস্কাটনের লেডিস ক্লাবে।
অনুষ্ঠানের মধ্যমণি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বলেন, ফ্যাসিবাদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই। তাই ঐক্য অটুট রাখতে হবে। সংস্কার ও নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর দরকার নেই উল্লেখ করে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, দেশের সংকট যেন দীর্ঘায়িত না হয়, সেটি সর্বোচ্চ বিবেচনায় নিতে হবে।
সংস্কারের জন্য ৩১ দফাই চূড়ান্ত নয় জানিয়ে তারেক বলেন, এখানে সংযোজন-বিয়োজন হতে পারে। সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্র কাজে আসবে না। এ সময় নির্বাচন না দেওয়ার কারণেই ফ্যাসিস্টদের চরমভাবে বিদায় হয়েছে বলেও স্মরণ করিয়ে দেন বিএনপির এই শীর্ষ নেতা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে দলের পক্ষ থেকে সবাইকে শুভেচ্ছা জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, বিভিন্ন খাতের সংস্কার প্রস্তাবগুলো ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পৌঁছে গেছে। আমি অনুরোধ করব, এগুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে মতামত দেওয়ার, যাতে সবাইকে নিয়ে সামনের পথ এগোতে পারি।
ঐক্যের প্রতি জোর দিয়ে ফখরুল বলেন, এই মুহূর্তে ঐক্য অত্যন্ত প্রয়োজন। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাগুলো নিরসন করা।
গণতন্ত্রের পথে যাওয়ার বিকল্প নেই জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দ্রুত নির্বাচনের কথা পরিষ্কারভাবে বলছি। কারণ জনগণের নির্বাচিত সরকার প্রয়োজনীয় সংস্কার করবে।
বিএনপির ইফতার মাহফিলে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে নায়েবে আমির ডা. আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নূরুল হক নূরসহ বিভিন্ন দলের নেতারা বক্তব্য রাখেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিভিন্ন খাতের সংস্কার প্রস্তাবগুলো ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পৌঁছে গেছে। আমি অনুরোধ করব, এগুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে মতামত দেওয়ার- যাতে সবাইকে নিয়ে সামনের পথ এগোতে পারি।
বুধবার রাজধানীর ইস্কাটনে লেডিস ক্লাবে বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্মানে এই ইফতারের আয়োজন করে বিএনপি।
শুরুতে দলের পক্ষ থেকে সবাইকে শুভেচ্ছা জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা অত্যন্ত কঠিন সময় অতিক্রম করছি। ফ্যাসিবাদমুক্ত পরিবেশ পেলেও এখনো গণতন্ত্রের দিশা খুঁজে পাচ্ছি না। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশই বাংলাদেশের মূল আকাঙ্ক্ষা।’
ঐক্যের প্রতি জোর দিয়ে ফখরুল বলেন, ‘এ মুহূর্তে ঐক্য অত্যন্ত প্রয়োজন। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাগুলো নিরসন করা।’ বিএনপি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে দলের ৩১ দফা বাস্তবায়ন করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
গণতন্ত্রের পথে যাওয়ার বিকল্প নেই জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দ্রুত নির্বাচনের কথা পরিষ্কারভাবে বলছি। কারণ জনগণের নির্বাচিত সরকার প্রয়োজনীয় সংস্কার করবে।’
বিএনপির ইফতার মাহফিলে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে নায়েবে আমির ডা. আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরসহ বিভিন্ন দলের নেতারা বক্তব্য রাখেন।
আবারও এক এগারোর মতো বিএনপিকে মিডিয়া ট্রায়ালের মুখোমুখি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, যদি একটি স্বচ্ছ নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়, দেশের অধিকাংশ মানুষের ভোটের সমর্থন বিএনপির পাওয়া যত বেশি উজ্জ্বল হয়েছে, তত বেশি দেখেছেন বিএনপিকে মিডিয়া ট্রায়ালের সম্মুখীন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সোমবার সকালেও দেশের কয়েকটি পত্রিকায় কিছু ঘটনা দেখলাম। দেখার পর কেন্দ্রীয় অফিসে যখন খবর দিলাম, তারা যাচাই করে আমাকে জানাল ঘটনা ঘটেছে এক রকম, পত্রিকার পাতায় উপস্থাপন করা হয়েছে আরেক রকমভাবে। একটি মহল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী শক্তির বিরুদ্ধে, একই সঙ্গে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তারা তাদের অবস্থান থেকে যেসব মিডিয়া হাউসের সঙ্গে সম্পর্ক আছে তাদের মাধ্যমে ঠিক ওয়ান ইলেভেনের সময় যেভাবে বিএনপিকে মিডিয়া ট্রায়ালের সম্মুখীন করা হয়েছিল, ঠিক একইভাবে কোনো একটি প্রেক্ষাপট তৈরির চেষ্টা করছেন।
সোমবার সন্ধ্যায় একটি ইফতার মাহফিলে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে তারেক রহমান এ অভিযোগ করেন। রাজধানীর বনানীতে হোটেল লেকশোরে জিয়া সাইবার ফোর্সের ১০ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের জন্য এ ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। সেখানে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের সঙ্গে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে মতবিনিময় করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, জনগণের জন্য একটি জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মতপার্থক্য ভুলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে আগামী দিনের সব প্রতিকূলতা মোকাবিলা করার আহ্বান জানান তিনি।
জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ বিলোপের পাশাপাশি নতুন সংবিধান প্রণয়নে আগামী নির্বাচনে একই সঙ্গে আইনসভা ও গণপরিষদ নির্বাচন আয়োজন সম্ভব বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
ফ্যাসিবাদ-বিরোধী রাজনীতিবিদ, ছাত্র-শ্রমিক, পেশাজীবী, অ্যাক্টিভিস্ট, ওলামায়ে কেরাম ও বিশিষ্ট নাগরিকদের সম্মানে মঙ্গলবার (১১ মার্চ) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ইফতার পার্টিতে তিনি এসব কথা বলেন।
নাহিদ বলেন, ‘আমাদের মধ্যে নানা বিষয়ে মতপার্থক্য হতে পারে, তর্কবিতর্ক হতে পারে, নীতিগত বিরোধ হতে পারে, কিন্তু গণতান্ত্রিক সম্পর্ক, সংলাপ ও পারস্পারিক মিথস্ক্রিয়ায় এসব কারণে যেন কোনো ছেদ না পড়ে।’
বাংলাদেশবিরোধী শক্তিরা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে এবং দেশের বিপদ এখনও কাটেনি উল্লেখ করে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘নীতিগত বিরোধ থাকলেও ষড়যন্ত্রকারীদের মোকাবিলায় ঐক্য ধরে রাখতে হবে। এনসিপি বাংলাদেশের শাসন-কাঠামোর গুণগত ও মৌলিক পরিবর্তন চায়। তাই আমরা একটি নতুন সংবিধানের মাধ্যমে একটি নতুন রিপাবলিকের কথা বলছি।’
বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের প্রসঙ্গ টেনে নাহিদ বলেন, ‘সামনের নির্বাচনে একই সঙ্গে আইনসভা ও গণপরিষদ নির্বাচন সম্ভব। এতে করে একদিকে নতুন সংবিধান কায়েম হবে, অন্যদিকে গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় নতুন পথের উত্তরণ ঘটবে।’
সরকার সংস্কার ও নির্বাচনের জন্য যে সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে, সেই সময়ের মধ্যেই এসব কার্যক্রম সম্পন্ন করা সম্ভব বলে জানান তিনি। বলেন, ‘সংবিধান সংস্কারের পাশাপাশি জনপ্রশাসন ও পুলিশ সংস্কারের প্রস্তাবগুলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধ্যাদেশ জারি করে সম্পন্ন করা উচিত।’
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনের আগে অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হতে হবে। সরকারের একার পক্ষে আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে সবার সম্মিলিত প্রয়াস প্রয়োজন।’
এছাড়া নির্বাচনের সময়ে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও গণমাধ্যমের নিরপেক্ষ আচরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
পুরনো রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে প্রত্যাখ্যান করে রাজনীতিতে আমূল পরিবর্তন আনার ওপর জোর দেন এনসিপির আহ্বায়ক। বলেন, ‘জুলাই গণহত্যার বিচার দ্রুত করতে হবে এবং বিচারের মাধ্যমেই আওয়ামী লীগের ব্যাপারে রাজনৈতিক ফয়সালার পথে হাঁটতে হবে।’
যেকোনো নির্বাচনে যাওয়ার আগে দৃশ্যমান বিচার ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন দেখতে চান বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেছেন, ‘শুধু নির্বাচনই নাগরিক পার্টির এই মুহূর্তে একমাত্র দাবি নয়, তার আগে আমরা দৃশ্যমান বিচার কার্যক্রম দেখতে চাই।’
আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর বাংলামোটরের রূপায়ণ টাওয়ারে দলটির অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য নাগরিক পার্টির প্রস্তুতি রয়েছে। আমরা বলেছি, সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি গণপরিষদ নির্বাচন দেখতে চাই। শুধু নির্বাচনই নাগরিক পার্টির এই মুহূর্তে একমাত্র দাবি নয়, তার আগে আমরা দৃশ্যমান বিচার কার্যক্রম দেখতে চাই।’
‘ঐকমত্যের ভিত্তিতে যে জুলাই সনদ সই হওয়ার কথা, জনগণ দেখতে পাবে কোন রাজনৈতিক দল সংস্কারের পক্ষে আছে, কোন দল বিপক্ষে আছে—এই জুলাই সনদ আমরা নির্বাচনের আগে কার্যকর দেখতে চাই। ছাত্রদের পক্ষ থেকে জুলাই ঘোষণাপত্রের যে দাবি উঠেছিল, দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমরা সেটার বাস্তবায়ন দেখতে চাই।’
সারা দেশে নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি, জনপরিসরে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকার যেন কঠোর অবস্থান নেয়। নারী নিপীড়নকারীদের যেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচারের আওতায় আনা হয়।’
এ সময় আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থায় রয়টার্সে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারটি ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। বলেন, ‘আমি রয়টার্সকে বলেছি, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে নির্বাচন কঠিন হবে। তাদের বলি নাই নির্বাচন হবে না।’
‘আমি বলেছিলাম, এখন যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, পুলিশ যে রকম নাজুক অবস্থায় আছে, এরকম নাজুক অবস্থায় নির্বাচন করাটা অনেক কঠিন হবে। এই পুলিশ প্রশাসনের সুষ্ঠু নির্বাচন করার অভিজ্ঞতা দীর্ঘদিনের নেই। তাদের সক্ষমতা পরীক্ষা হয়নি দীর্ঘদিন ধরে। সে জায়গায় আমরা বলেছি, আমাদের অবশ্যই নির্বাচনের আগে যে পুলিশিং ব্যবস্থা আছে, আইনশৃঙ্খলার যে পরিস্থিতি আছে, সেটা অবশ্যই উন্নত করতে হবে। এজন্য সরকারের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোকে, সামাজিক শক্তিকে এগিয়ে আসতে হবে, সহযোগিতা করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘রয়টার্সের ইন্টারভিউতে কিছু মিসকোট হয়েছে। আমি বলেছিলাম যে, আমাদের আর্থিক বিষয়ে সমাজের যে সচ্ছল মানুষ বা শুভাকাঙ্ক্ষী রয়েছেন, তারা মূলত আমাদের সহযোগিতা করে। আমরা একটা ক্রাউড ফান্ডিংয়ের দিকে যাচ্ছি। অনলাইন ও অফলাইন-কেন্দ্রিক। ক্রাউড ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে কার্যালয় স্থাপনসহ ইলেকশন ফান্ডিং রিচ করব। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এটা নিয়ে ভুল তথ্য এসেছে। এটা সংশোধনের জন্য অনুরোধ থাকবে।’
এনসিপির কার্যক্রম বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ বলেন, আমরা এখন রাজনৈতিক নিবন্ধনের শর্তাবলী নিয়ে মনযোগী হচ্ছি। তৃণমূলে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করেছি। রোজার পর পুরোদমে শুরু করবো। আমরা নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করছি। জোট গঠনের বা নির্বাচনের প্রার্থীর বিষয়ে আমাদের অবস্থান ব্যক্ত করতে আরও সময় লাগবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা নির্বাচনের সময়ের চেয়ে প্রেক্ষাপটকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা আমাদের জায়গা থেকে দাবি জানাচ্ছি। জুলাই সনদ আর জুলাই ঘোষণাপত্র আলাদা জিনিস। ঘোষণাপত্রের দাবি আরও আগে উঠেছিল ছাত্রদের পক্ষ থেকে। আর জুলাই সনদ প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা করছিলেন যে, সংস্কারের ঐকমত্যের ওপর একটা চার্টার তৈরি হবে যেখানে বাংলাদেশের রূপরেখা ও সংস্কারের কী কী এখন করব, কী কী ভবিষ্যতে করব— এসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে জনগণের কাছে কমিটমেন্ট দিতে হবে। সেটাকে আমরা বলছি জুলাই সনদ।’
‘পরিবর্তন ও ন্যায়বিচারের আকাঙ্ক্ষা থেকে মানুষ গণঅভ্যুত্থানে এসেছিল। এই দুইটা পূরণ করতে হবে। সেটা আমি বলেছি যে, আমরা যেন ভুলে না যাই বিচার; সংস্কারের মধ্য দিয়ে যেন আমরা নির্বাচনের দিকে যাই।’
এর আগে, এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন জানান, আগামী ১০ মার্চ রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে শহিদ পরিবারের সদস্য ও আহতদের নিয়ে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করবে দলটি।
তারপর ১১ মার্চ রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে ইফতার মাহফিলের পরিকল্পনার কথাও জানান আখতার।
এ সময় এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের প্রধান সংগঠক সারজিস আলম, প্রধান সমন্বয়ক নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সংখ্যা ২১৭।
আজ রোববার ভোররাতে জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্যসচিব আখতার হোসেনের পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।
বার্তায় বলা হয়, মুক্তির আকাঙ্ক্ষা থেকে এই জনপদের মানুষ ১৯৭১ সালে একটি রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৯৭২ সালে প্রণীত মুজিববাদী সংবিধানের মধ্য দিয়ে নির্মিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামো অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী শাসন প্রতিষ্ঠার পথ খুলে দিয়েছে। যার ফলে এ দেশের নাগরিকরা ইতিহাসের বিভিন্ন পরিক্রমায় বাকশাল, স্বৈরতন্ত্র এবং সর্বশেষ ফ্যাসিবাদের শিকার হয়েছে। ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটি ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে বাংলাদেশের নাগরিকরা মুক্ত হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামো থেকে ফ্যাসিবাদের সব উপাদান ও কাঠামোকে বিলোপ করতে এবং এই জনপদের মানুষের মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপদানে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বাস্তবায়নে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ও জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠিত হয়েছে।
এতে আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ও আরিফুল ইসলাম আদীব, যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম, মনিরা শারমিন, মাহবুব আলম, সারোয়ার তুষার, অ্যাডভোকেট মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন, তাজনূভা জাবীন, সুলতান মুহাম্মদ জাকারিয়া, ড. আতিক মুজাহিদ, আশরাফ উদ্দীন মাহাদী, অর্পিতা শ্যামা দেব, তানজিল মাহমুদ, অনিক রায়, খালেদ সাইফুল্লাহ, জাবেদ রাসিন, এহতেশাম হক ও হাসান আলী।
সদস্যসচিব- আখতার হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব- ডা. তাসনিম জারা ও নাহিদা সারওয়ার নিভা, যুগ্ম সদস্যসচিব- আব্দুল্লাহ আল আমিন, আরিফ সোহেল, মো. রশিদুল ইসলাম (রিফাত রশিদ), মো. মাহিন সরকার, মো. নিজাম উদ্দিন, আকরাম হুসেইন, এস এম সাইফ মোস্তাফিজ, সালেহ উদ্দিন সিফাত (দপ্তর), আলাউদ্দীন মোহাম্মদ, ফরিদুল হক, মো: ফারহাদ আলম ভূঁইয়া, মোহাম্মদ মিরাজ মিয়া, লুৎফর রহমান, মো. মঈনুল ইসলাম (তুহিন), মুশফিক উস সালেহীন, ডা. জাহেদুল ইসলাম, জহিরুল ইসলাম মুসা, অ্যাডভোকেট হুমায়রা নূর, মোশফিকুর রহমান জোহান, মোল্লা মোহাম্মদ ফারুক এহসান, সাগুফতা বুশরা মিশমা, আফসানা ছপা, আহনাফ সাইদ খান, আবু সাঈদ মোহাম্মদ সুজা উদ্দিন, মীর আরশাদুল হক, ফয়সাল মাহমুদ শান্ত, তারেকুল ইসলাম (তারেক রেজা), মশিউর রহমান, জয়নাল আবেদীন শিশির, গাজী সালাউদ্দীন তানভীর, তামিম আহমেদ, তাহসীন রিয়াজ ও প্রীতম দাশ।
মুখ্য সংগঠক- সারজিস আলম (উত্তরাঞ্চল), যুগ্ম মুখ্য সংগঠক- সাইফুল্লাহ হায়দার, আলী নাছের খান, সাকিব মাহদী, মেজর (অব.) আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, সাদিয়া ফারজানা দিনা, অলিক মৃ, আসাদুল্লাহ আল গালিব, হানিফ খান সজীব, আবু সাঈদ লিয়ন।
সংগঠক- রাসেল আহমেদ, ইমরান ইমন, ফরহাদ সোহেল, রফিকুল ইসলাম আইনী, মোস্তাক আহমেদ শিশির, আজাদ খান ভাসানী, প্রীতম সোহাগ, দ্যুতি অরণ্য চৌধুরী, এম এম শোয়াইব, নাহিদ উদ্দিন তারেক, আব্দুল্লাহ আল মনসুর, মিয়াজ মেহরাব তালুকদার, অ্যাডভোকেট শিরীন আক্তার শেলী, আবুল বাশার, আব্দুল্লাহ আল মুহিম, নাজমুল হাসান সোহাগ, খায়রুল কবির ও সাঈদ উজ্জ্বল।
মুখ্য সংগঠক- হাসনাত আবদুল্লাহ (দক্ষিণাঞ্চল), যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মোহাম্মদ আতাউল্লাহ, ডা. মাহমুদা আলম মিতু, মোল্যা রহমাতুল্লাহ্, এস এম শাহরিয়ার, মেজবাহ কামাল মুন্না, জোবাইরুল হাসান আরিফ ও ইমন সৈয়দ।
সংগঠক- আকরাম হোসাইন রাজ, হামযা ইবনে মাহবুব, ওয়াহিদুজ্জামান, আসাদ বিন রনি, মোহাম্মাদ রাকিব, আরমান হোসাইন, মো. রাসেল আহমেদ, অ্যাডভোকেট মনজিলা ঝুমা, শওকত আলী, ডা. আশরাফুল ইসলাম সুমন, মুনতাসির মাহমুদ, ডা. মিনহাজুল আবেদীন, সাকিব শাহরিয়ার, আজিজুর রহমান রিজভী, আব্দুর রহমান, ফয়সাল আহমেদ, নয়ন আহমেদ, কাউছার হাবিব, আব্দুল্লাহ আল মামুন ফয়সাল, আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জিহান, মাও. সানাউল্লাহ খান, আরিফুল ইসলাম, নফিউল ইসলাম ও মো. রাকিব হোসেন।
মুখ্য সমন্বয়ক- নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক- আব্দুল হান্নান মাসউদ, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক- অ্যাডভোকেট মো. তারিকুল ইসলাম (যুব), ডা. মো. আব্দুল আহাদ (চিকিৎসা), মাজহারুল ইসলাম ফকির (শ্রমিক), দিলশানা পারুল, আবু হানিফ, আব্দুজ জাহের, কৃষিবিদ গোলাম মোর্তজা সেলিম, মেহেরাব সিফাত, অ্যাডভোকেট সাকিল আহমাদ, আশেকীন আলম, ডা. জাহিদুল বারী, কৈলাশ চন্দ্র রবিদাস, ভীম্পাল্লী ডেভিড রাজু, শেখ মোহাম্মদ শাহ মঈনুদ্দিন, খান মুহাম্মদ মুরসালীন, সাদ্দাম হোসেন, আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল, নাভিদ নওরোজ শাহ, তুহিন মাহমুদ, মো. আরিফুর রহমান (তুহিন), সাগর বড়ুয়া, রাফিদ এম ভূঁইয়া ও মাহবুব আলম।
সদস্য- সানজিদা খান দীপ্তি (শহীদ আনাসের মা), খোকন চন্দ্র বর্মন (আহত), মো. ফাহিম রহমান খান পাঠান, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের (সন্দ্বীপ), ঋআজ মোরশেদ, ইমরান নাঈম, মশিউর আমিন শুভ, আল আমিন শুভ, প্লাবন তারিক, ওমর ফারুক, আসাদুল ইসলাম মুকুল, ফিহাদুর রহমান দিবস, মো. তৌহিদ আহমেদ আশিক, মো. আব্দুল মুনঈম, রকিব মাসুদ ইনজামুল হক রামিম, সৈয়দা নীলিমা দোলা, এস আই শাহীন, আসাদুজ্জামান হৃদয়, তানহা শান্তা, ডা. মশিউর রহমান, ইমরান শাহরিয়ার, এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, আব্দুল্লাহিল মামুন নিলয়, আজাদ আহমেদ পাটওয়ারী, জাহিদুল ইসলাম সৈকত, আরজু নায়েম, ডা. মনিরুজ্জামান, তাওহিদ তানজিম, মোহাম্মদ উসামা, মাহবুব-ই-খোদা, তারিক আদনান মুন, নাহিদা বুশরা, তৌহিদ হোসেন মজুমদার, মারজুক আহমেদ, নীলা আফরোজ, নূরতাজ আরা ঐশী, সাইয়েদ জামিল, শেখ খায়রুল কবির আহমেদ, রফিকুল ইসলাম কনক, মীর হাবীব আল মানজুর, মো. ইমরান হোসেন, মো. আরিফুল দাড়িয়া, মো. ইনজামুল হক, আবু সাঈদ মুসা, ডা. আতাউর রহমান রাজিব, সালমান জাভেদ, ইমামুর রশিদ, সাইফুল ইসলাম, ডা. সাবরিনা মনসুর, অ্যাডভোকেট মো. মনিরুজ্জামান, অ্যাডভোকেট ছেফায়েত উল্লাহ, আহমেদুর রহমান তনু, দিদার শাহ, রাদিথ বিন জামান, ফারিবা হায়দার, সাইফুল ইসলাম, ইয়াহিয়া জিসান, সোহেল রানা, রিদওয়ান হাসান, হাসিব আর রহমান, ব্যারিস্টার নুরুল হুদা জুনেদ, জাওয়াদুল করিম, আল আমিন টুটুল, ইসমাইল হোসেন সিরাজি, ইফতেখারুল ইসলাম, হাফসা জাহান, জায়েদ বিন নাসের, মামুন তুষার, ওমর ফারুক, সালাহউদ্দিন জামিল সৌরভ, মো. হিফজুর রহমান বকুল, আসিফ মোস্তফা জামাল, জোবায়ের আলম, মেজর (অব.) মো. সালাউদ্দিন ও খালেদ সাইফুল্লাহ জুয়েল।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারী) রাজধানী ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’(এনসিপি) নামে নতুন একটি রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ হয়। যাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা মূল নেতৃত্বে এসেছেন।
১২ দলীয় জোট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বেরিয়ে গেল জোটের প্রধান শরিক জাতীয় পার্টি (জাফর)। একই সঙ্গে ১২ দলীয় জোট বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। শনিবার জাতীয় পার্টি (জাফর) চেয়ারম্যানের রাজধানীর খিলগাঁও কার্যালয়ে জাতীয় পার্টির (জাফর) নির্বাহী কমিটির জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে জোট থেকে বের হয়ে গেলেও বিএনপির নেতৃত্বে আগামী দিনে সব আন্দোলন-সংগ্রামে জাতীয় পার্টি (জাফর) অংশীজন হিসেবে সর্বশক্তি দিয়ে রাজপথে লড়াই-সংগ্রাম জোরদার করার ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করা হয়েছে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার। সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব সাবেক এমপি আহসান হাবীব লিংকন, পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক এমপি নোয়াব আলী আব্বাস খান, সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট হোসনে আরা আহসান, সেলিম মাস্টার, ব্যারিস্টার মোস্তফা হায়দার জুবায়ের, অ্যাড. মাওলানা রুহুল আমিন, অ্যাড. শফিউদ্দিন ভূঁইয়া, ভাইস চেয়ারম্যান শরীফ মিয়া, যুগ্ম মহাসচিব এ এস এম শামীম, কাজী মো. নজরুল, সাংগঠনিক সম্পাদক মহসিন মিয়া, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, প্রচার সম্পাদক লোকমান পাটোয়ারী, দপ্তর সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, ছাত্রসমাজের সভাপতি কাজী ফয়েজ আহমেদ, যুব সংহতির আহ্বায়ক রইস উদ্দিন, সদস্য সচিব নিজাম উদ্দিন সরকার প্রমুখ।
এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টির (জাফর) সাবেক এমপি আহসান হাবিব লিংকন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ১২ দলীয় জোটের কতিপয় নাম সর্বোচ্চ নেতার কার্যকলাপ নিয়ে জাতীয় পার্টি (জাফর) নেতাদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। যে পরিপেক্ষিতে গতকাল নির্বাহী কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সিদ্ধান্ত হয় গতকাল থেকে মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বাধীন ১২ দলীয় জোট থেকে জাতীয় পার্টি (জাফর) বেরিয়ে এককভাবে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করবে। একই সঙ্গে বিএনপির নেতৃত্বে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইকে বেগবান করার জন্য মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি (জাফর) রাজপথে লড়াই অব্যাহত রাখবে। গতকাল থেকে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে ১২ দলীয় জোটের সব কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি নিলাম।
খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, শনিবার অনুষ্ঠিত দলের জরুরি সভায় জাতীয় পার্টির (জাফর) নেতারা ১২ দলীয় জোটের দীর্ঘদিনের কার্যকলাপ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেন। বিশেষ করে জোটের কয়েকজন নাম সর্বোচ্চ নেতার কর্মকাণ্ড নিয়ে জাতীয় পার্টি (জাফর) নেতারা চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এ সময় নেতারা দলের চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারকে ১২ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য প্রচণ্ড ছাপ সৃষ্টি করেন। তারপর সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে ১২ দলীয় জোট বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নেন জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার।
জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন আমাদের অন্যতম প্রাথমিক লক্ষ্য।
তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশকে এবং বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থকে সামনে রেখে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজনীতি এবং রাষ্ট্র বিনির্মাণ করব।
শুক্রবার মানিক মিয়া এভিনিউয়ে দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে নাহিদ ইসলাম এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, একটি গণতান্ত্রিক নতুন সংবিধান প্রণয়নের মাধ্যমে আমাদেরকে সাংবিধানিক স্বৈরতন্ত্র পুনপ্রতিষ্ঠার সকল সম্ভাবনার অবসান ঘটাতে হবে।
নতুন দলের সদ্য দায়িত্ব গ্রহণকারী নাহিদ বলেন, ‘আমরা মনে করি, ২৪’র জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিক (দ্বিতীয় বারের মতো প্রজাতন্ত্র) প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের সূচনা করেছে।
নবগঠিত দলের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের জাতীয় নাগরিক পার্টি-জেএনপি হবে একটি গণতান্ত্রিক, সমতাভিত্তিক ও জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী একটি রাজনৈতিক দল।
নাহিদ বলেন, ২০২৪‘র জুলাই ছাত্র-জনতার বিপুল আত্মত্যাগের মাধ্যমে এক অভূতপূর্ব গণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ দেড় দশক ধরে জেঁকে বসা ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটিয়েছে। কিন্তু, আমাদেরকে স্মরণ রাখতে হবে— হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের মধ্যে দিয়ে অর্জিত এই নতুন স্বাধীনতা কেবল একটি সরকার পতন করে আরেকটি সরকার বসানোর জন্যই ঘটেনি।
তিনি বলেন, জনগণ বরং রাষ্ট্রের আস্টেপিস্টে জেঁকে বসা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপের মাধ্যমে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের আকাঙ্খা থেকে এই অভ্যুত্থানে সাড়া দিয়েছিল— যেন জনগণের অধিকারভিত্তিক এবং মর্যাদাভিত্তিক একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়। সে লক্ষ্য নিয়ে আমরা জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিচ্ছি।
নাহিদ বলেন, আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিক-এ জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষায় শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। ভেঙে পড়া রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় গড়ে তোলা ও তাদের গণতান্ত্রিক চরিত্র রক্ষা করা হবে আমাদের রাজনৈতিক অগ্রাধিকার। এর মধ্যে দিয়ে কেবল আমরা একটি পরিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে আবির্ভুত হতে পারব।
তিনি বলেন, আমরা এমন একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশ চাই, যেখানে সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বস্তরে বিভেদের বদলে ঐক্য, প্রতিশোধের বদলে ন্যায়বিচার এবং পরিবারতন্ত্রের বদলে মেধা ও যোগ্যতার মানদণ্ড প্রতিষ্ঠা হবে। আমাদের রাজনীতিতে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কোনো স্থান হবে না।
নাহিদ বলেন, আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিক-এ সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বরকে মূলধারায় তুলে আনা হবে। রাষ্ট্রে প্রতিটি নাগরিককে সমান গুরুত্ব প্রদান ও সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। আমরা একটি ন্যায্যতা ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় আমাদের সংকল্প আবারও পুনর্ব্যক্ত করতে চাই।
তিনি বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি ২৪’র জুলাই গণঅভ্যুত্থান কেবল একটি ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধেই বিজয় নয়, এটি আমাদের ভবিষ্যৎ নির্মাণেরও শপথ। চলুন আমরা একসঙ্গে হাত হাত রেখে আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলি— যেখানে প্রতিটি নাগরিকের কণ্ঠস্বর প্রতিধ্বনি হবে, সেখানে ন্যায় প্রতিষ্ঠা মানুষের অধিকারের সংগ্রামই রাজনীতির অন্যতম লক্ষ্য, সেখানে সাম্য ও মানবিক মর্যাদা হবে রাষ্ট্রের ভিত্তি। এখনই হবে নতুন স্বপ্ন দেখার নতুন পথ চলার এবং একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার।
নাহিদ বলেন, আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিক অধরা কোনো স্বপ্ন নয়, এটিই আমাদের আজকের দিনের সামনের বাংলাদেশের প্রতিজ্ঞা।
এর আগে আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে জাতীয় নাগরিক কমিটি(জেএনসি) ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের(এডিএসএম) নেতারা একত্রিত হয়ে নাহিদ ইসলামকে আহ্বায়ক ও আখতার হোসেনকে সদস্য সচিব করে দল গঠন করেন।
অনুষ্ঠানে দলের একটি আংশিক কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়, যা সারা দেশ থেকে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটায়।
সম্মেলনে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ও আরিফুল ইসলাম আদিবকে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এবং তাসনিম জারা ও নাহিদা সারোয়ারকে সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব করা হয়।
এছাড়া হাসনাত আবদুল্লাহকে দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান সংগঠক এবং সারজিস আলমকে উত্তরাঞ্চলের প্রধান সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পেয়েছেন নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী এবং জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সমন্বয়কের দায়িত্ব পেয়েছেন আবদুল হান্নান মাসুদ।
আজ বিকল ৪টা ২০ মিনিটে পবিত্র কোরআন, গীতা, ত্রিপিটক ও বাইবেল তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়।
এরপর জাতীয় সংগীত পরিবেশন এবং জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের সম্মানে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় শাহাদাত বরণকারী শহীদ ইসমাইল হোসেন রাব্বীর বোন মীম আক্তার আনুষ্ঠানিকভাবে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের নাম ঘোষণা করেন।
পরে সদস্য সচিব আখতার হোসেন আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদের নেতৃত্বের নাম ঘোষণা করেন। কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্যান্য শূন্য পদের নেতাদের নাম শিগগিরই ঘোষণা করা হবে বলে জানান আখতার হোসেন।
এর আগে সামান্তা শারমিন, সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, নুসরাত তাবাসসুম, আবদুল হান্নান মাসউদসহ বেশ কয়েকজন ছাত্রনেতা বক্তব্য দেন।
রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে জুলাই আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নতুন রাজনৈতিক দলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মিছিল নিয়ে দলে দলে যোগ দিচ্ছেন মানুষ।
জাতীয় নাগরিক পার্টি-জেএনসি (ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি) নামে নতুন রাজনৈতিক দলের নাম ঘোষণায় আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় অনুষ্ঠানটি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বিকেল পৌনে ৩টা পর্যন্ত শহর ও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কয়েক হাজার মানুষ মানিক মিয়া এভিনিউয়ে জড়ো হয়েছেন।
জাতীয় নাগরিক কমিটি (জেএনসি) ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের (এডিএসএম) নেতারা নতুন এই রাজনৈতিক দল গঠন করছেন।
নতুন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ দশ পদের জন্য নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে।
নতুন দলের আহ্বায়ক হিসেবে সাবেক তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং সদস্য সচিব হিসেবে আখতার হোসেনের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।
জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক পদে সামান্তা শারমিন ও আরিফুল ইসলাম আদিব এবং জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব পদে তাসনিম জারা ও নাহিদা সারোয়ার (নোভা) শীর্ষ পদে চূড়ান্ত করা হয়েছে।
প্রধান সমন্বয়ক পদে নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী ও যুগ্ম সমন্বয়কারী পদে আবদুল হান্নান মাসুদকে চূড়ান্ত করা হয়েছে।
এছাড়া উত্তরাঞ্চলের প্রধান সংগঠক সারজিস আলম এবং দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহকে চূড়ান্ত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার এক ফেসবুক পোস্টে নতুন দলের নাম নিশ্চিত করেন সারজিস আলম। ‘সারা দেশে এই নামেই ব্যানার হোক। এই নামের সাথেই বাংলাদেশ প্রতিধ্বনিত হোক।’
তিনি বলেন, নতুন দল তার রাজনৈতিক ধারায় জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে সমুন্নত রাখবে।
দল গঠনের আগে জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীরা বুধবার 'গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ' নামে একটি নতুন ছাত্র সংগঠন আত্মপ্রকাশ করেন। তবে এই আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানের সময় আন্দোলনে অংশ নেওয়া কর্মীদের একটি অংশের প্রতিবাদ করে শ্লোগান দিয়েছিল।
সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি জয়লাভ করবে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া এখন প্রধান কাজ।
তিনি বলেন, ‘এখন প্রয়োজন সর্বত্র গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। একই সঙ্গে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা, যাতে জনগণ ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে।’
সোমবার খুলনা মহানগর বিএনপির সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘জনগণের সুখ ও দুঃখে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। নেতা-কর্মীদের দায়িত্বশীল ও গ্রহণযোগ্য হতে হবে। আওয়ামী লীগ দেশকে ধ্বংসসহ খাদের কিনারায় ফেলে গেছে। এখন সবাই মিলে দেশকে টেনে তুলতে হবে। খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, যোগাযোগ, চিকিৎসাসহ সব উন্নয়নের জন্য হাতে হাত ধরে কাজ করতে হবে।’
তারেক রহমান আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ গত ১৬ বছরে দেশের গণতান্ত্রিক সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ছিল না, একই সঙ্গে সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার হরণ করা হয়েছিল।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য বিএনপির কয়েক লাখ মানুষের নামে গায়েবি মামলা হয়েছে। বিএনপির হাজারও নেতা-কর্মীকে খুন ও গুম করা হয়েছে। ’২৪ জুলাই-আগস্টে প্রায় ২ হাজার ছাত্র-জনতা শহীদ হয়েছেন। কয়েক হাজার আহত হয়েছেন। এদের রক্তকে মূল্য দিতে হবে। তিনি বলেন, আমরা যারা দীর্ঘদিন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি, তারা যেন অহেতুক ছোট ছোট বিষয় নিয়ে তর্ক না করি। যাতে করে আমাদের মধ্যে ঐক্যের ফাটল ধরে. আর ফ্যাসিবাদ আবারও ফিরে আসে।
খুলনা মহানগরী বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনার সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য আমানউল্লাহ আমান, বেবি নাজনীন, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। এছাড়া আরও বক্তব্য দেন ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, তথ্য সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, খুলনা মহানগরীর বিএনপির সদস্য শফিকুল আলম।