আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘ভারতীয় পণ্য বর্জনের নামে বিএনপি এখন দেশের অর্জনকে ধ্বংস করতে চায়।’
আজ রোববার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয় সভাকক্ষ থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যানবাহন চলাচলের জন্য ৭টি ফ্লাইওভার উন্মুক্তকরণ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। বাস রাপিড ট্রানজিট (বিআরটি, এয়ারপোর্ট-গাজীপুর) প্রকল্পের সওজ অংশের আওতায় এই ফ্লাইওভারগুলো নির্মিত হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘পণ্য বর্জন এটা কি সম্ভব? বাংলাদেশ ও ভারতের যে অবস্থা, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের যে লেনদেন, যে আদান-প্রদান হয়ে থাকে, তার মধ্যে এমন বর্জনের প্রস্তাব বাস্তব সম্মত কিনা! আসলে তারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের নামে দেশের অর্জনকে ধ্বংস করতে চায়।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপি নেতারা ব্যর্থতার জন্য তারা নিজেরাই ক্লান্ত, তাদের কর্মীরা হতাশ। নেতাদের কারো সাথে কারো কথার মিল আমরা দেখি না। মঈন খান ভারতের সহযোগিতা চান, রিজভী আবার ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দেন।’
দেশের তরুণ প্রজন্মকে সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম-এর বক্তব্যের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি আন্দোলন করার লোক পায় না, সামরিক প্রশিক্ষণ কাকে দেবে। এটি প্রতারণাপূর্ণএকটি কৌশল। আসলে দলটির নেতারা একেকজনে একেক কথা বলেন। এখন আমরা শুনতে চাই দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কী বলেন। তিনিই দলের মহাসচিব।’
মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে বিএনপির দাবি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘মধ্যবর্তী নির্বাচনের চিন্তা সরকার কেন করবে? এর কোনো যুক্তিও নেই, বাস্তবতাও নেই। নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে হবে। আমাদের সংবিধানে মধ্যবর্তী নির্বাচনের কোনো কথা বলা নেই।’
ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সবাইকে যার যার কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। সবাই যার যার কাজ নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবেন প্রত্যাশা করছি। এবার ঈদযাত্রা পুরোপুরি স্বস্তিদায়ক হবে বলে আশা করছি।’
ফ্লাইওভার যান চলাচলে উন্মুক্তকরণ অনুষ্ঠানে ঢাকা প্রান্তে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিনুল্লাহ নূরী, সেতু বিভাগের সচিব মনজুর হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পাশের দেশ ভারত সাম্প্রদায়িকতার ধুয়া তুলে কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের উসকে দিয়ে উপমহাদেশে তাদের আধিপত্য কায়েম করতে চাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর গুলশানে ভারতীয় পণ্য বর্জনের দাবিতে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ করেন।
ভারতের উদ্দেশে রিজভী বলেন, ‘সাম্প্রদায়িকতার ধুয়া তুলে আপনারা ভারতকে যেমন বিভাজন করছেন, ভারতের স্বাধীনতার পর থেকে গণতন্ত্রের যে একটি ঐতিহ্য ছিল- এটাকেও ভূলুণ্ঠিত করছেন। আর সেই সাম্প্রদায়িকতার ধুয়া তুলে কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের উসকে দিয়ে আপনারা চাচ্ছেন উপমহাদেশে আধিপত্য কায়েম করতে। আপনাদের এই বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাবের কারণে, এই হিংসাশ্রয়ী মনোভাবের কারণে, এ ধরনের অপরকে ঘৃণা করার মনোভাবের কারণে আজকে নেপাল আপনাদের সঙ্গে নেই, ভুটান নেই, শ্রীলঙ্কা নেই, মালদ্বীপ নেই, পাকিস্তান তো নেই, বাংলাদেশও আপনাদের সঙ্গে নেই। শুধু আপনাদের অহংকার এবং একের পর এক শোষণের যে মনোভাব, সে কারণে আপনাদের এ অবস্থা।’
তিনি বলেন, ‘আমরা একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ জাতি। এই জাতি স্বাধীনতা অর্জন করেছে ৩০ লাখ মানুষের আত্মদানের মধ্য দিয়ে, ২ লাখ নারীর সম্ভ্রমহানির মধ্য দিয়ে। ১৮ কোটি, ১৯ কোটি মানুষের এই দেশ; এই দেশকে আপনারা চোখ রাঙিয়ে, ভয় দেখিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে দাবিয়ে রাখতে পারবেন না। হঠাৎ করে আপনাদের কী হলো যে, পাশের দেশের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছেন, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছেন। ৫ আগস্টের আগে এ দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল ঘৃণিত একটি সরকার। এরা ক্ষমতায় থাকার জন্য নিজ দেশের সন্তানদের হত্যা করতে দ্বিধা করত না, এরা নিজ দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষদের চিরদিনের জন্য নিরুদ্দেশ করতে দ্বিধা করতে না। এরা ক্রসফায়ার দিয়ে নদীর ধারে, খালের ধারে মানুষদের নির্দ্বিধায় হত্যা করত। সে হাসিনা সরকার আপনাদের এত প্রিয় ছিল কেন? কারণ, আপনাদের সাহসে, আপনাদের উসকানিতে শেখ হাসিনা যা ইচ্ছা তাই করে গেছে এ দেশে। উনার ভোটের দরকার হতো না; শেখ হাসিনার অধীনে যে ভোটগুলো হয়েছে সেগুলো হয়েছে ভোটারবিহীন। যে ভোটের এক একটা নাম আছে ‘ভোটারশূন্য ভোট’, ‘মিডনাইট ভোট’ আরও অনেক কিছু।’
ভারতের উদ্দেশে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘আপনারা মনে করছেন পেঁয়াজ বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশের মানুষ তরকারিতে পেঁয়াজ ব্যবহার করতে পারবে না। আপনারা রসুন, আদা, সয়াবিন তেল বন্ধ করে দিলে আমরা এগুলো আর রান্নায় ব্যবহার করতে পারব না। এটা তো আপনারা দুঃস্বপ্ন দেখছেন। আপনারা গরু রপ্তানি পাঁচ-ছয় বছর ধরে বন্ধ করে দিয়েছেন। বাংলাদেশের মানুষ গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে গরুর খামার, ছাগলের খামার গড়ে তুলেছে। এক কোরবানি ঈদেই এক কোটি ২০ লাখ গবাদিপশু জবাই হয়।’
প্রতিবেশী রাষ্ট্রের উদ্দেশে রিজভী আরও বলেন, ‘আপনারা ভুলে যাবেন না বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত শ্রমপ্রিয়। পেঁয়াজ, রসুন, আদা তারা নিজেরাই উৎপাদন করতে জানে। আপনারা কী মনে করেন, শুধু একটি দেশ আছে পৃথিবীতে। আর কি দেশ নেই পৃথিবীতে- যাদের কাছ থেকে আমরা পেঁয়াজ আমদানি করতে পারব, যাদের কাছ থেকে আমরা রসুন-তেল আমদানি করতে পারব। সে সব দেশ কি নেই? আপনারা মনে করেছেন এগুলো বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশের মানুষের অবস্থা কাহিল হবে। অবস্থা কাহিল হয়েছে আপনাদের। আপনাদের নিউমার্কেটের কোনো দোকান চলে না, আপনাদের মার্কেটগুলো বন্ধ হওয়ার উপক্রম। বাংলাদেশের মানুষ ওই কলকাতায় গিয়ে ডলার খরচ করে তারা সেখানে কেনাকাটা করে চিকিৎসা করতে যায় হাসপাতালে। হাসপাতাল আর চলবে না। আপনারা বন্ধ করে দিয়ে মনে করেছেন বাংলাদেশের মানুষ অস্থির হয়ে গেছে, বাংলাদেশের মানুষ আনন্দিত। প্রয়োজন হলে থাইল্যান্ড যাবে, মালয়েশিয়া যাবে, ইন্দোনেশিয়া যাবে কিংবা অন্য দেশে যাবে। আপনাদের মতো হিংসাশ্রয়ী যারা আমাদের ঘৃণা পোষণ করেন, সে দেশে মানুষ যেতে চায় না। কারণ রক্তমূল্যে স্বাধীনতা কেনা এই জাতি। এই জাতিকে আপনি ভয় দেখিয়ে, আপনাদের নতজানু করবেন- সে জাতি বাংলাদেশ নয়।’
তিনি বলেন, ‘রিপাবলিক বাংলা বলেছে, চট্টগ্রামকে ভারতের অংশ হিসেবে দাবি করা হয়েছে, আরও কত মিথ্যা অপপ্রচার চলছে। আমরা বলছি, একটি স্বাধীন-সার্বজনীন দেশে আপনারা দাবি করলে আমরাও আমাদের নবাবের এলাকা ওই বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা দাবি করব, যেটা আমি আগেও বলেছি। এটা তো আমাদের ন্যায্য পাওনা। এ কথাগুলো আমরা বলতে চাই না। অনেক সংগ্রাম, অনেক আন্দোলন, ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রাম- এই উপমহাদেশে আমরা একসঙ্গে করেছি।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি ডা. জাহেদুল কবির জাহিদ, ছাত্রদলের সহসভাপতি ডা. তৌহিদুর আউয়াল, ছাত্রদল নেতা রাজু আহমেদ প্রমুখ।
অন্তবর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, দেশে সংস্কারের প্রয়োজন আছে। তবে সংস্কারের গতি বাড়িয়ে জাতিকে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেন।’ শুক্রবার সকালে কুমিল্লা টাউন হলে কর্মী সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
জামায়াতের আমির বলেন, ‘স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে, বিজিবিকে সীমান্তের চৌকিদার বানিয়েছে। আমাদের বহু নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে। আমরা প্রতিশোধ নেব না, তবে প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত শেষে বিচার করতে হবে।’
ভারতকে উদ্দেশ্য করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা আমাদের দেশের এক ইঞ্চি কেন আধা ইঞ্চি জায়গাও ছেড়ে দেব না। এ দেশে কোনো সাম্প্রদায়িক বিভাজন নেই। স্বৈরাচার সরকার, মঈনুদ্দিন ও ফখরুল মিলে সাড়ে ১৭ বছর শ্বাসরুদ্ধকর সময় পার করেছে। এ দেশের মানুষ আর সেই দিনগুলোতে ফিরে যেতে চায় না। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশ আফগানিস্তান ও পাকিস্তান হবে না, ভালো একটা বাংলাদেশ হবে। নারীদের ঘরে বন্দি রাখার অধিকার আমাদের নেই। তাদের কাজ আছে, বাইরে যেতে হবে। ইসলাম নারীকে সম্মান দিয়েছে, তা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রক্ষা করবে। জনগণের ওপর আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে।’
কুমিল্লা বিভাগের দাবি ও কুমিল্লা বিমানবন্দর নিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, কুমিল্লা বিভাগ কুমিল্লাবাসীর ন্যায্য দাবি। এ দাবি না মানাও জুলুম ছিল। কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়নে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান তিনি। পাশাপাশি কুমিল্লা বিমানবন্দরও চালুর দাবি জানান।
প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন জামায়াতের নায়েবে আমির সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ফেনী জেলা জামায়াতের আমির মুফতী আবদুল হান্নান, লক্ষ্মীপুর জেলা আমির রুহুল আমিন, নোয়াখালী জেলা সাবেক আমির মাওলানা আলাউদ্দিন, কুমিল্লা উত্তর জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুফতি আমিনুল ইসলাম, নাগাইশ দরবারের পীর মোস্তাক ফয়েজী, ইবনে তাইমিয়া কলেজের অধ্যক্ষ শফিকুল আলম হেলাল ও তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ড. হিফজুর রহমান প্রমুখ।
মো. তাহের বলেন, ‘ডা. শফিকুর রহমান জাতির মুক্তি আন্দোলনের সেনাপতি। কুমিল্লার এই মাঠে মুহতারাম আমিরে জামায়াত প্রধান অতিথি, প্রধান বক্তা ও বিশেষ অতিথি। তিনি আসনে বসলে আমরা সবাই তার কর্মী।’ তিনি বলেন, ‘ভারত হামলা করলে দেশের জনগণ লাঠি, ইটপাটকেলসহ যার যা আছে তা নিয়ে আপনারা প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন। প্রয়োজনে সীমান্তে আমরা প্রাচীর তৈরি করব যাতে ভারত ঢুকতে না পারে।’
মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী ভারতের প্রয়োজন, বাংলাদেশের প্রয়োজন নেই। কারণ ভারতে ধর্মীয় দাঙ্গা সংঘটিত হয়ে থাকে। সাবধানে কথা বলবেন, না হলে পশ্চিমবঙ্গের ২৫% মুসলমান আপনাকে প্রত্যাখ্যান করবে।’
বিএনপি আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে যৌথ সভা ডেকেছে। বিকেল ৪টায় রাজধানীর নয়াপল্টনস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সভা ডাকা হয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এতে সভাপতিত্ব করবেন।
বৃহস্পতিবার বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক মো. তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যৌথ সভায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি/আহ্বায়ক/সাধারণ সম্পাদক/সদস্যসচিবরা উপস্থিত থাকবেন।
যৌথ সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সংস্কার শেষ করে নির্বাচন উপহার দিতে খুব বেশি হলে ৩ থেকে ৪ মাসের বেশি সময় লাগবে বলে মনে করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সঠিক ভোটার তালিকা প্রণয়নে ‘বাড়ি বাড়ি যাওয়া নয়, আপগ্রেড’ চায় দলটি। সোমবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা।
দলের নির্বাচন সংস্কার বিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, ‘আসলে সত্যিকার অর্থে অনেস্টলি সঠিক ভোটার তালিকা আমরা করতে চাই… তাহলে কিন্তু আমরা বাড়ি বাড়ি যাওয়া নয়, আমরা কম্পিউটার এআই… আজকে কিন্তু আমরা কম্পিউটারকে বলে দিলে সে নিজেই করে দিতে পারে… সেটা এ্যাবসুলেটলি একুয়রেট হবে।’
‘আমি কে, কোনোদিন ১৮ মাস হয়ে যাবো সেটাও কিন্তু কম্পিউটার করে দিতে পারে। সেটার জন্য বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের বাড়ি বাড়ি যাওয়ার প্রয়োজন নেই। বাড়ি বাড়ি যাওয়া এটা অত্যন্ত সময় সাপেক্ষ এবং অপ্রয়োজনীয় এবং এটাতে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। যিনি মারা গেছেন তার নামটা অটোমেটিক্যালি বাদ চলে যাবে…। এই বিষয় (ভোটার তালিকা) আমরা সংস্কার প্রস্তাবে স্পষ্ট করেছে এটা আপগ্রেড হবে।’
মঈন খান বিগত সরকার গণপ্রতিনিধিত্ব আইনের (আরপিও) সংশোধনে যে সম্পূরক আদেশ এনেছিলো তা বাতিল, নির্বাচনী পরিচালনায় কিছু বিধিমালা সংশোধন, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের জন্য আচরণবিধিমালা ও রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের নীতিমালা সংশোধন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা আপগ্রেড করা, নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধি, গণমাধ্যমের নির্বাচনী আচরণ বিধিমালাসহ ১০ দফা সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরেন। এই সংস্কার প্রস্তাবগুলো তারা সরকারের গঠিত নির্বাচন সংস্কার কমিশনের কাছে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি জন্য— যাতে সত্যিকারভাবে মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পারে। জনগণ প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারে, ডামি প্রতিনিধি না, ভুয়া প্রতিনিধি না— সেজন্য আমাদের এই সংস্কার প্রস্তাব।’
‘প্রশাসনের মাধ্যমে নির্বাচনকে কুক্ষিগত করতে বিগত সরকার অনেক কিছু করেছে। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী যাতে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে সেজন্য আমরা ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রণীত বিধিমালার সংশোধন চেয়েছি।’
‘সংস্কার করে নির্বাচনের জন্য ৩ থেকে ৪ মাসই যথেষ্ট’
স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা যেসব প্রস্তাব করেছি— নির্বাচন প্রক্রিয়ায় দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। এখানে এমন কোনও প্রস্তাব করা হয় নাই— যেটা নতুন করে কোনও কিছু করতে হবে। আমরা নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করার কথা বলেছি, নির্বাচনের সচিবালয় করা এবং তাদের কিছু ক্ষমতা দেওয়া ইত্যাদি, আমরা প্রচলিত আইনগুলোর সংশোধন, সংস্কার… এগুলোর জন্য অধিক সময়ের প্রয়োজন হয় না।’
‘একটা নির্বাচনের বেসিক কাজ ভোটার তালিকা প্রণয়ন… সেই ভোটার তালিকা প্রণয়নে বাড়ি বাড়ি যাওয়া… আমরা এটা বুঝি নাই কি এক্সসারসাইজ হবে। ব্যাপারটা হচ্ছে যে, তালিকা ঘোষণার সময়ে এটাও ঘোষণা করা হয়— কারো নাম যুক্ত না হলে তারা স্থানীয় নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে গিয়ে নাম অন্তর্ভুক্ত করবেন। কারো অভিযোগ থাকে— বেঁচে নেই, বিভিন্ন কারণে ভোটার হওয়া যায় না এরকম কারো নাম তালিকায় থাকলে তা কার্যালয়ে গিয়ে জানালেই তো ভোটার তালিকা হয়ে গেলো… এরপর নির্বাচনী প্রস্তুতি… শিডিউল ঘোষণা করা, রুল অনুযায়ী প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র দাখিল করবে। এসব কিছু করতে এত বেশি সময় লাগার কথা না। আমরা যেসব প্রস্তাব দিয়েছি সেগুলো মেনে নির্বাচন অনুষ্ঠানে খুব বেশি বিলম্ব হওয়ার প্রয়োজন হয় না।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেসব সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি দলের পক্ষ থেকে সুচিন্তিতভাবে, এক্সপার্ট কমিটির সঙ্গে বসেছি… অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি…। আমরা যেসব সংস্কারের কথা বলেছি— সেগুলো অধিকাংশ আইনি সংস্কারের বিষয়, কাগজের বিষয়… প্রাকটিক্যালি যে কাজগুলোর জন্য নির্বাচন কমিশন সময় নেয়, যেমন ভোটার তালিকা প্রণয়ন… নতুন ভোটার সংযোজন… কী কী ভুল-ভ্রান্তি আছে, ভুয়া ভোটার বাদ দেওয়া, ডিলিমিটেশন ইত্যাদি সব কাজ গোছাতে প্রাকটিক্যালি ২/৩ মাসের বেশি সময় লাগার কথা না।’
‘সরকারের আরও সংস্কার প্রশাসনিক সংস্কার, জুডিশিয়াল সংস্কার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সংস্কার আছে— এগুলো সব সম্পন্ন করে নির্বাচন উপহার দিতে আমাদের মনে হয় না খুব বেশি হলে ৩ থেকে ৪ মাসের বেশি সময় লাগবে। সব রিকমন্ডেশন ফাইনাল হওয়ার পরে আপনারা ধারণা পাবেন— প্রাকটিক্যালি আমাদের কয়দিন সময় লাগবে একটা ইনক্লুসিভ ইলেকশন অনুষ্ঠানের জন্য।’
এক প্রশ্নের জবাবে সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কেয়ারটেকার সরকার ইনপ্রেইস আছে বা হবে… এটাই ছিলো সবচাইতে বড় বাধা— একটা ফ্রি ফেয়ার ইলেকশন না হওয়ার।’
‘ডিলিমিটেশন, অপকর্মে জড়িতদের নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে বাদ রাখা এসব হচ্ছে উপসর্গ। আসল রোগ হচ্ছে, কেয়ারটেকার সরকার না থাকাটা। কেয়ারটেকার সরকার পুনর্বহাল হলে এই সমস্ত উপসর্গ আর থাকবে না। কেয়ারটেকার সরকার হলে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে বাধ্য।’
এ সময় নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা প্রস্তাব করেছি— যাদের নেতৃত্বে অপকর্ম হয়েছে তাদের ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। যাতে তারা আগামীতে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় না থাকে।’
‘কাজেই আমরা বিশ্বাস করি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্বাচনী কোনও স্ট্যাক নাই, নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে। আর যারা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকবে— অপকর্মে যুক্ত থাকবে এমন লোকদের অন্তর্ভুক্ত করতে বলেছি।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ছিল বিদেশি শক্তি দ্বারা একটি পরিকল্পিত হামলা। এই হামলায় কখনোই বিএনপি যুক্ত ছিল না। একটা বিদেশি শক্তি এই অপকর্ম করে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ফাঁসাতে চেয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘এমনকি একটি ভুল, মিথ্যা, সাজানো মামলা তৈরি করে সাজানো গল্পের ওপর ভিত্তি করে সাজা দিয়েছিল। বিজয়ের প্রথম দিনে আপনাদের একটি সুখবর দিতে চাই। সেই মামলার রায় আজ প্রকাশ পেয়েছে এবং তারেক রহমানকে খালাস দেওয়া হয়েছে।’
মির্জা আব্বাস বলেন, বিগত দিনগুলোতে আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে অনেক অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। তিনি আমাদের মাঝে শুভেচ্ছান্তে ফিরে আসবেন খুব তাড়াতাড়ি। এ জন্যই আল্লাহতায়ালা তাকে সুস্থ করেছেন এবং খালাস দিয়েছেন।
রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম হলে স্বাধীনতা ফোরাম আয়োজিত ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। স্বাধীনতা ফোরামের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, আমরা ইউনূস সরকারকে ঠিক পথ দেখানোর চেষ্টা করছি। কিছু লোক দেশে এবং দেশের বাইরে থেকে বিএনপিকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ট্যাগ করার চেষ্টা করছে।
তিনি আরও বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। এ কথা আমরা বারবার বলব, বলতে হবে। কারণ বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সঠিক ইতিহাস ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছে। কিন্তু আমরা সঠিক কথাগুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরব।
বিএনপি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য ১৫ বছর যুদ্ধ করেছে। আমরা স্বাধীন সংবাদমাধ্যম চাই, কিন্তু অপসাংবাদিকতা চাই না। গণতন্ত্র এবং বিএনপি একসঙ্গে যায়। আমরা গণতন্ত্রের পক্ষে।
আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, তারা ব্যাংক থেকে টাকা লুট করেছে, মানুষ গুম, খুন করেছে। পানি এবং তেল কখনো মেলে না, তেমনি আওয়ামী লীগ আর গণতন্ত্র একসঙ্গে যায় না।
সীমান্তের ওপারে বসে স্বৈরাচার নতুন নতুন ষড়যন্ত্র করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুক্রবার রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে ঢাকার ঠাকুরগাঁও ছাত্র পরিষদের ছাত্র কনভেনশন-২০২৪ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
পতিত স্বৈরাচারদের ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যেটা অর্জন করেছি সেটা যেন বৃথা না যায়। কারণ সীমান্তের ওপারে স্বৈরাচার বসে আছে। সেখানে বসে নতুন নতুন ষড়যন্ত্র করছে। প্রতিমুহূর্তে একেকটা ঘটনা ঘটিয়ে সেটাকে সারাবিশ্বে দেখাতে চায় বাংলাদেশ মৌলবাদীদের দেশ হয়ে গেছে। বাংলাদেশে নাকি সংখ্যালঘু ভাইদের নির্যাতন করা হচ্ছে। ভারতের পত্রপত্রিকা ও সোশ্যাল মিডিয়ায় এমনভাবে লেখা হচ্ছে যেন বাংলাদেশে এসব নিকৃষ্ট ঘটনা ঘটছে। ঘটনা তো তা না। তাহলে কারা করছে? কেন করছে?’
তিনি বলেন, ‘আমি কথাগুলো এ জন্য বলছি, আমাদের আনন্দে থাকার অবকাশ নেই। আমাদের মাথার ওপর এখনো বিপদ আছে। স্বৈরাচার নতুন করে দেশকে আবারও অন্ধকারে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। সেজন্য সজাগ থাকতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে। কোনোরকম হঠকারিতা, কোনো বিশৃঙ্খলা যেন কেউ করতে না পারে সেটাকে রুখে দিতে হবে।’ বিএনপির মহাসচিব দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি খুব কষ্ট পাই যখন দেখি ছেলেরা কলেজে কলেজে মারামারি করছে। যখন এত বড় বিজয়, ইতিহাস করলে তখন আমাদের দেখতে হবে সোহরাওয়ার্দী-মোল্লা কলেজ মারামারি করে রক্তাক্ত হচ্ছে এটা তো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। এটা একটা ষড়যন্ত্র।’ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে যে অসাধারণ কাজ করেছো, দানবের থেকে দেশকে রক্ষা করেছো এটা ছোট কথা নয়। আমরা এখনো কিন্তু সে ক্রান্তি পার হয়নি, এখন একটা ধাপ গেছি। ছাত্ররা যখন বুক পেতে দিয়েছি, রক্ত ঝরিয়েছি তখনই মুক্তি এসেছে। আমি বার বারই বলি আমাদের মুক্তির ভ্যানগার্ড হচ্ছে ছাত্ররা।’ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ আন্দোলনে সবার আগে ছাত্রদের নাম। তবে কতজন রিকশাচালক, শ্রমিক প্রাণ দিয়েছে তাদের খবর রাখি না। আমি পঙ্গু হাসপাতালে গিয়েছিলাম ছাত্রদের দেখতে। সেখানে গিয়ে দেখলাম প্রায় ৪০ শতাংশই শ্রমিক। তাদের খবর রাখাটাও আমাদের জন্য জরুরি। আমরা একেবাইরে জীবনের শেষ প্রান্তে, একটায় আশা ছিল যেন জীবদ্দশায় দেখে যেতে পারি দানবের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছি। আমি আশঙ্কায় ছিলাম বেগম খালেদা জিয়া কি দেখে যেতে পারবেন দেশমুক্ত হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ তিনি দেখে যেতে পেরেছেন।’
ছাত্র নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বিশৃঙ্খলামূলক কর্মকাণ্ড ও অনৈক্যের কারণে ফ্যাসিবাদ ফিরে আসার আশঙ্কা রয়েছে বলে সতর্ক করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্র পুনর্গঠনে লেখক-শিল্পীদের ভূমিকা শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে জাতীয় কবিতা পরিষদ।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ পরাজিত হয়েছে, কিন্তু যেকোনো সময় তারা ফিরে আসতে পারে। সেই পথ সুগম করে দেওয়া আমাদের উচিত নয়। দুঃখজনকভাবে আমরা এমন কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছি, যার ফলে তাদের ফিরে আসার যথেষ্ট সুযোগ তৈরি হয়েছে।’
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ফ্যাসিবাদী শক্তি সুপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। ‘কিন্তু আমরা যারা যুদ্ধ করেছিলাম তারা কেন এখন অনৈক্য সৃষ্টি করছি? বিভিন্ন জায়গা থেকে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য শুনলে আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমে দেশকে ভিন্ন দিকে ঠেলে দেওয়ার প্রচেষ্টা চলছে।’
ফখরুল বলেন, জাতিকে এখন একটি মাত্র লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। প্রয়োজনীয় সংস্কার করে সংসদ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমি বলতে চাই, আমাদের বিভেদ সৃষ্টি করা উচিত নয়। ঐক্য অটুট রেখে (গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে) এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এটাও আমাদের দুর্ভাগ্য যে, স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও আমরা ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তর নিশ্চিত করতে পারিনি।’
কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে জাতিকে অনুপ্রাণিত করতে লেখক, শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
ফখরুল বলেন, রাষ্ট্র পুনর্গঠনে লেখক-শিল্পীদের ভূমিকা দীর্ঘদিনের। কিন্তু হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনবিরোধী আন্দোলনে তা স্পষ্ট হয়নি।
তিনি আরও বলেন, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ ও প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি লালন করা একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। ‘সমাজের সর্বস্তরের মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমাদের এটি অর্জন করতে হবে।’
নির্বাচন যত দেরি হবে, ষড়যন্ত্র তত বাড়বে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেছেন, সাবেক স্বৈরাচার দেশি-বিদেশি প্রভুদের সঙ্গে মিলে ষড়যন্ত্র করেই চলেছে।
বিএনপির চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সম্মেলন-২০২৪-এর উদ্বোধনী অধিবেশনে এ কথা বলেন তারেক রহমান।
শনিবার সকালে চুয়াডাঙ্গার স্থানীয় টাউন ফুটবল ময়দানে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
শুধু নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমেই সংস্কারের বাস্তবায়ন সম্ভব বলে এ সময় মন্তব্য করেন তারেক রহমান।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার যে সংস্কারের কথা বলছে, সেই সংস্কার বিএনপিও চায়। তবে বেশি সংস্কার করতে গিয়ে নির্বাচন করতে দেরি হলে ষড়যন্ত্রকারীরা সুযোগ নিতে পারে।
একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে বিদ্যমান সমস্যা সমাধান সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
বিএনপির কাউন্সিলে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ কখনোই গণতান্ত্রিক দল ছিল না। তারা ফ্যাসিবাদী দল। ১৯৭২-১৯৭৫ সালে ফ্যাসিবাদের জন্ম দেন শেখ মুজিব। এ দেশে ফ্যাসিবাদের জনক শেখ মুজিবুর রহমান।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, গত ১৬ বছরে কোথাও কুপিয়ে-গুলি করে হত্যা করে বিএনপি নেতা-কর্মীদের গুম করেছে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা। পুলিশকে ব্যবহার করেও তারা হত্যা করেছে। গায়েবি মামলা দেওয়া হয়েছে। পুলিশকে যেভাবে ব্যবহার করা হয়েছে সেটি কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সম্ভব নয়।
ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জনরোষে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ পালিয়ে গেছে। তাই এখন এসব থেকে আল্লাহর রহমতে বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশ।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান খানের সভাপতিত্বে ও জেলা বিএনপির সদস্যসচিব শরীফুজ্জামান শরীফের সঞ্চালনায় সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায় চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আজিজুল বারী হেলাল, জেলা বিএনপির সদস্যসচিব শরীফুজ্জামান শরীফ, মেহেরপুর জেলা বিএনপির সভাপতি মাসুদ অরুণ ও সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন, কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মেহেদী আহমেদ প্রমুখ।
চুয়াডাঙ্গায় জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক কাউন্সিলের আয়োজন করে স্থানীয় বিএনপি। সেখানে ভোটের মাধ্যমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হয়। রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখার ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি বিষয়ক বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালারও আয়োজন করা হয়।
দীর্ঘ ২৫ বছর পর চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
অন্তর্বর্তী সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, জনগণের দুর্ভোগ আগের মতোই রয়ে গেছে। দিনমজুর-শ্রমিকদের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়ছে।
শুক্রবার বিকেলে জাতীয়তাবাদী রিকশা-ভ্যান-অটোচালক দলের বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
জনগণের দুর্ভোগ আগের মতোই আছে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম আগের মতোই আছে। অন্তর্বর্তী সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় দিনমজুর-শ্রমিকদের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়ছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষকে কষ্টে রেখে উপদেষ্টাদের যাচ্ছেতাই কর্মকাণ্ড মেনে নেওয়া হবে না।’ বললেন, ‘উপদেষ্টারা চাকরিজীবীর মতো কাজ করছেন। তাদের কাজে বিপ্লবের গতিশীলতা নেই।’
এ সময় অন্তর্বর্তী সরকারকে জুলাই বিপ্লবে হতাহতদের পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব।
রিজভী অভিযোগ করে বলেন, ‘ছাত্রলীগ ও যুবলীগকে হত্যার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। আর শেখ হাসিনা হত্যাকাণ্ড চালিয়ে মায়াকান্নার অভিনয় করতেন।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘কারাগারে সালমান এফ রহমান বহাল তবিয়তে আছে শুনি। সেখানে সে খুব তৎপরতা চালাচ্ছে। তিনি লুটপাট করে দেশকে সর্বস্বান্ত করে দিয়েছেন। এই টাকাগুলো কই?’
বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী পাঠানো নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকিস্বরূপ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি অবিলম্বে এ ধরনের বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।
লন্ডন থেকে মুঠোফোনে গণমাধ্যমের কাছে দলের পক্ষ থেকে বিএনপি মহাসচিব এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ভারতের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের মুখমন্ত্রী যে উক্তি করেছেন বাংলাদেশ সম্পর্কে, সে বিষয়ে আমি বক্তব্য না রেখে পারছি না। তিনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) যে উক্তি করেছেন, তা সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি একটা হুমকিস্বরূপ এবং আমরা মনে করি, এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ভারতের নেতাদের যে দৃষ্টিভঙ্গি তা কিছুটা হলেও প্রকাশিত হয়েছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ ধরনের কোনো চিন্তা ভারতের নেতাদের মধ্যে থাকা উচিত হবে না। কারণ, বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছে এবং সম্প্রতি একটা বিপ্লবের মধ্য দিয়ে তারা গণতন্ত্রকে ফিরে পেয়েছে। এ দেশের মানুষ যেকোনো মূল্যে এ ধরনের চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।
প্রসঙ্গত, সোমবার বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে যোগ দিয়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপও চেয়েছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ক্ষুণ্ন হওয়া বা বিপন্ন হওয়ার যে অলীক কাহিনী ভারতীয় মিডিয়াগুলোতে প্রচারিত ও প্রকাশিত হচ্ছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা বারবার বলেছি, এখানে ভারতের সাংবাদিকরা এসেছিলেন, তারাও দেখেছেন, বাংলাদেশে এ ধরনের কোনো পরিস্থিতি নেই। অথচ ভারতবর্ষের মিডিয়া ও তাদের নেতারা যেভাবে সম্পূর্ণ একটা মিথ্যাকে তারা প্রচার করছেন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি দিচ্ছেন, তা কোনোমতেই বাংলাদেশের মানুষ গ্রহণ করবে না।’
সম্প্রতি ইসকনকে (আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ) নিয়ে যে এখানে (বাংলাদেশে) নতুন করে চক্রান্ত শুরু হয়েছে, তা বাংলাদেশের মানুষ কখনোই গ্রহণ করবে না বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘এটা খুব পরিষ্কার যে ইসকনের সাম্প্রতিক ভূমিকা অত্যন্ত সন্দেহজনক, রহস্যজনক এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি, বাংলাদেশের স্থিতিশীলতার প্রতি হুমকিস্বরূপ।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল। তারা রাজনীতি বা নির্বাচন করবে কি না, তা ঠিক করবে জনগণ। একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে তা আমরা নির্ধারণ করতে পারি না।
আজ বুধবার দুপুর ফেনীর ফুলগাজীর শ্রীপুরে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পৈতৃক বাড়িতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ ও ঢেউটিন বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘একটি ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। উপদেষ্টাকে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করার সুযোগ নাকি আমরা দিয়েছি। এ কথাটি সঠিক নয়। আমরা আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছি।’
‘আমরা বলেছি, আওয়ামী লীগ একটি রাজনৈতিক দল। এখানে ভুল বোঝাবুঝির কোনো অবকাশ নাই। আমরা কখনও কোনো দলকে নির্বাচনে আনতে মানা (নিষেধ) করিনি। কিন্তু হাসিনাসহ যারা মানুষ খুন করেছে, বিদেশে টাকা পাচার ও দেশের সম্পদ নষ্ট করেছে, তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে। আর জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে- কাকে রাজনীতি করতে দেবে, আর কাকে দেবে না; এখানে আমরা কেউ নই, এ দায়িত্ব আমাদের নয়’- বললেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। রাতারাতি সবকিছু হয়ে যাবে না। ১৫ বছরের যে জঞ্জাল, সেটি সাফ করতে সময় লাগে। তারা অনেক কাজ করবে। শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে তো। এখন কি আর আওয়ামী লীগের লোকজন অত্যাচার করতে পারে? উনাদের একটু সময় দিতে হবে। তারা কাজ শেষ করলে নিশ্চয়ই নির্বাচন হবে এবং জনগণের সরকার আসবে। আমরা বলেছি, এটি একটু তাড়াতাড়ি করলে ভালো হয়।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠিয়েছেন। তাকে যে কষ্টে রাখা হয়েছিল তা চিন্তাও করতে পারবেন না। তারপরও কখনও তিনি মাথা নত করেনি; তিনি মাথা উঁচু করে এখনও দাঁড়িয়ে আছেন। বেগম খালেদা জিয়া খুব অসুস্থ। আমরা তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর চেষ্টা করছি।’
বন্যায় বিএনপি নেতাকর্মীরা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে দলটির মহাসচিব বলেন, ‘বন্যায় এখানকার মানুষ অনেক কষ্ট করেছেন। আমাদের দলের নেতাকর্মীরা মাঠে কাজ করেছেন। শত নির্যাতনের পরও আমরা বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। আর দেশের ওপর যারা এত অত্যাচার করেছে, তারা পালিয়ে গেছে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন, সাবেক সংসদ সদস্য রেহানা আক্তার রানু, চট্টগ্রাম বিভাগের সংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মশিউর রহমান বিপ্লব।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক ও ফেনী-১ আসনের সাংগঠনিক সমন্বয়ক রফিকুল ইসলাম মজনুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১০০ দিন পূরণ হওয়া উপলক্ষে গতকাল রোববার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সে ভাষণে নির্বাচনের রূপরেখা না দেওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল এ আশাহত হওয়ার কথা জানান। মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের প্রধান উপদেষ্টা কালকে (রোববার) ১০০ দিনের পূর্তিতে একটা ভাষণ দিয়েছেন। ভালো হয়েছে। অনেকে আশান্বিত হয়েছেন, আমি একটু আশাহত হয়েছি। আমি আশা করেছিলাম, প্রধান উপদেষ্টা তার সব প্রজ্ঞা দিয়ে সমস্যাটা চিহ্নিত করে নির্বাচনের জন্য একটা রূপরেখা দেবেন।’ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি কেন নির্বাচনের কথা বারবার বলছি। কারণ নির্বাচন দিলে আমাদের অর্ধেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। বিএনপি ক্ষমতায় যাক না যাক, সেটা বিষয় নয়।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজকে যারা বাংলাদেশের ক্ষতি করতে চাচ্ছে, স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে চাচ্ছে, বাংলাদেশকে সংঘাতের দিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছে, নির্বাচনের একটা রূপরেখা দিলে তারা পিছিয়ে যেতে বাধ্য হবে। কারণ ওই সরকারের পেছনে জনগণের সমর্থন থাকবে। এ বিষয় আমাদের চিন্তা করতে হবে।’ সংস্কার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘সংস্কার আমরা শুধু চা-ই না, আমরা এটা শুরু করেছি। আপনাদের কাছে অনুরোধ, যেভাবে এগোলে সুন্দর হয়, গ্রহণযোগ্য হয়, সেভাবে আপনারা এগিয়ে যান। আমরা এখন পর্যন্ত কোনো বাধার সৃষ্টি করিনি, বরং প্রতিটি ক্ষেত্রে আপনাদের সমর্থন দিচ্ছি। যদিও সচিবালয়ে স্বৈরাচারের ও ফ্যাসিবাদের দোসররা বসে আছেন। আপনি তাদের নিয়ে কীভাবে কাজ করবেন।’
প্রশাসনের কথা উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আপনি সংস্কার করবেন, আমলারা যারা বসে আছেন, তারা বেশির ভাগই স্বৈরাচারের দোসর। তারা কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন, দুর্নীতি করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে সেভাবে ব্যবস্থা নিতে দেখি না। এগুলো একটু দৃশ্যমান করুন। গভর্ন্যান্সের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রশাসন চালানো, দেশ শাসন করা- এগুলোতে যেন মানুষ শান্তি পায়। সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।’
বাজার পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে ফখরুল বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বেড়েছে, শান্তি পাওয়ার কোনো কারণ নেই। তাও তো মানুষ মেনে নিচ্ছে। কারণ, আপনারা একটা সুন্দর নির্বাচন দেবেন। কাজেই ওটাকে দৃশ্যমান করুন, ব্যবস্থা নিন। বাজারের সিন্ডিকেট ভাঙতে পারেন বা না পারেন, চেষ্টা করুন। ব্যবস্থা নিতে হবে। সচিবালয়ে যদি ঘুষ দিতে হয়, সচিবালয়ে গিয়ে যদি মানুষ দেখে সেই দালালেরাই ঘোরাঘুরি করছে, মানুষ তা কখনো ভালো চোখে দেখবে না।’ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, এ সরকার পারবে, বাংলাদেশের মানুষ পারবে এবং তরুণেরা পারবে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে।’ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির নেতা নিতাই রায় চৌধুরী, খায়রুল কবির খোকন, আবদুস সালাম আজাদ, হেলেন জেরিন খান, আসাদুল করিম, নাজমুল হক প্রমুখ।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘রাজনীতিতে যদি ভুল হয়, তার খেসারত দিতে হয়। যে পাকিস্তানের জন্য এ দেশের মানুষ ১৯৪৬ সালে লড়াই করেছে, যে মুসলিম লীগ ছিল এ দেশের এক অবিসংবাদিত দল, তাদের ভরাডুবি হলো ভুল রাজনীতির কারণে। এসব বিষয় আমাদের রাজনীতিদেরা অনেক সময় খেয়াল করেন না; যেমন এখন।’ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একটা পরিবর্তন এসেছে। সেই পরিবর্তনকে বুঝতে হবে, বুঝতে হবে ছেলেরা কী বলছে। আমাদের মধ্যে অনেকে, বিশেষ করে বিএনপির মধ্যে অনেকে বলেন, ছেলেরা কি সব একাই করেছে? জোরেশোরে বলেন মিটিংয়ে। সত্য কথা, আমরা ১৫ বছর ধরে লড়াই করেছি, জান দিয়েছি, প্রাণ দিয়েছি, জেলে গেছি। তারপরও শেষ লাথিটা গোলে কে মেরেছে? ছাত্ররা।’ ছাত্র-তরুণ-যুবকরাই পরিবর্তনের ভ্যানগার্ড বলে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ছাত্ররা যদি না আসে, তাহলে বুক পেতে দেবে কে? ছাত্র–তরুণ যার পিছুটান নেই, সে ভ্যানগার্ড। আমরা যারা বয়স্ক, তারা পেছনে ফিরে তাকাই, পরিবার আছে- এসব কথা চিন্তা করি। কিন্তু ছাত্র–তরুণ-যুবকেরা সেটা করে না, তারা বুক পেতে দেয়।’ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় রংপুরের আবু সাঈদের কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সাঈদ রংপুরে যেভাবে দাঁড়াল, সেটা ছিল আন্দোলনের টার্নিং পয়েন্ট। এসব বিষয় আপনাদের চিন্তা করতে হবে। সুতরাং ছাত্রদের সঙ্গে আমাদের কখনো কোনো দূরত্ব সৃষ্টি করা যাবে না। মনে রাখতে হবে, তারা তরুণ, তাদের অনেক উদ্দীপনা।’ মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘ছাত্ররা অনেক কথা বলছে, বলবে। কারণ তাদের বলার অধিকার আছে।’ দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যত দ্রুত নির্বাচন হবে, তা দেশের জন্য, জাতির জন্য মঙ্গল। এটা বলছি আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে। এ ধরনের সরকার যত বেশি দিন ক্ষমতায় থাকে, তত সমস্যা তৈরি হয়। কারণ, এদের তো ম্যান্ডেট নেই, এরা তো নির্বাচিত সরকার নয়। এই সরকারকে চিন্তা করতে হবে, তারা যত দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কার করে নির্বাচন দিয়ে জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারে, ততই মঙ্গল।’
কোনো রাজনৈতিক দলকে সরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা জামায়াতে ইসলামীর নেই বলে জানিয়েছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটি জানান তিনি। সাক্ষাৎকারে জামায়াতের আমিরের কাছে জানতে চাওয়া হয়, একটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে যে, অন্তর্বর্তী সরকার এবং জামায়াত একত্রে আওয়ামী লীগকে সরানোর পর এবার বিএনপিকেও সরিয়ে দিতে চায়। দুই বড় রাজনৈতিক দলকে বাইরে রেখে নতুন শক্তির উত্থান ঘটানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কতটা সত্য?
জবাবে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘এই তত্ত্বের কোনো ভিত্তি নেই। আওয়ামী লীগের প্রতি জনতার সম্মিলিত ঘৃণা তৈরি হয়েছিল দুর্নীতি এবং ফ্যাসিবাদী নীতির কারণে। তারা নিজেরাই নিজেদের পতন ডেকে এনেছে। কোনো সংগঠন বা দলকে সরানোর জন্য আমাদের কোনো ভূমিকা পালনের প্রয়োজন নেই।’ ভারতবিরোধিতা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়, জামায়াতে ইসলামীর ভারতবিরোধিতা সর্বজন পরিচিত। এ বিষয়ে কী বলবেন? জবাবে জামায়াতের আমির বলেন, ‘এ ধারণা ভিত্তিহীন। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাদের নিশানা করে এই মতবাদ ছড়ানো হয়েছে যাতে জামায়াতের রাজনীতির মিথ্যা ব্যাখ্যা ও বিভ্রান্তি তৈরি হয়। সমান মর্যাদা এবং সম্মানের ভিত্তিতে আমরা ভারতসহ সব প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাই। আমাদের আন্তর্জাতিক নীতি, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়।’ সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের অসামান্য সম্পর্ক এবং বোঝাপড়া রয়েছে। প্রতিটি নাগরিককে সমদৃষ্টিতে দেখা হয় এবং রাষ্ট্রের সব নাগরিককে সমান অধিকার এবং মর্যাদার ভিত্তিতে সম্মান করা হয়। জামায়াত সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরুর তত্ত্বে বিশ্বাসী নয়। আমরা মনে করি, ধর্মের ভিত্তিতে দেশবাসীর বিভাজন অপরাধ। হিন্দু বা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হিংসার ইতিহাস জামায়াতে ইসলামীর নেই। বরং বিভিন্ন সময়ে জামায়াতে ইসলামী নানা বিষয় নিয়ে হিন্দু নেতাদের সঙ্গে আলোচনাও করেছে।’