দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যবস্থা নিলেও বিএনপিতে এমন নজির নেই বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক।
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে সংবাদচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘ইতিহাসের গতিধারায় বঙ্গবন্ধু থেকে শেখ হাসিনা’ শীর্ষক সংবাদচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন ও আলোচনা সভায় জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘যেই দুর্নীতি করুক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন সময় দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার নেওয়ার নজির সৃষ্টি করতে পারেননি।’
‘আওয়ামী লীগ এখন ভোটাধিকার ও অবাধ নির্বাচনের প্রধান বাধা’ বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বলেন, হাওয়া ভবনের তারেক রহমান হাজার হাজার কোটি টাকা অর্থ পাচার করেছেন। লন্ডনে বসে রাজপ্রাসাদ থেকে দেশের টাকা লুটপাট করে উপভোগ করছেন। আর বিএনপি নেতাকর্মীদের ভুল-ভ্রান্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।
নানক বলেন, ফখরুল সাহেবের ভেতরের কথা বের হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের সরকার বিএনপির প্রধান শত্রু। কারণ এই সরকার জনগণের সরকার, এই সরকার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের সরকার, এ সরকার দেশের উন্নয়নের সরকার। কারণ এই সরকার আপনাদের (বিএনপি) বন্ধু একাত্তরের মানবতাবিরোধী ওই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছে, বিচারের রায় কার্যকর করেছে।
ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজির আহমেদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণের সঞ্চালনায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শওকত শাহিন, সাংগঠনিক সম্পাদক হালিমা আক্তার লাবণ্য ও হাবিবুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনেই গণভোট হতে হবে। এ বিষয়ে আমরা একমত। সংসদ নির্বাচনের আগে কোনো গণভোট হতে দেওয়া হবে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দিচ্ছিলেন তিনি।
বৃহস্পতিবার বিকালে যশোর টাউন হল মাঠে স্মরণসভায় বিএনপির মহাসচিব বলেন, কয়েকটি রাজনৈতিক দল বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করছে। নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে। নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এটা জনগণ মেনে নেবে না। অনেক রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন হয়েছি ফ্যাসিস্টের হাত থেকে। একটা সুযোগ পেয়েছি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার। কোনো মহলের চক্রান্তে আমরা এই সুযোগ বিনষ্ট হতে দিতে পারি না।
এসময় উপদেষ্টা পরিষদ পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে কাজ করছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। বলেন, প্রধান উপদেষ্টা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যেগুলোতে ঐকমত্য হবে সেটা থাকবে, আর যেটা হবে না, সেটা আগামী পার্লামেন্টে চলে যাবে, সেখানে নির্ধারিত হবে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের কথা, হঠাৎ করে দেখা গেল যে, এই উপদেষ্টা কমিটি একটা উপদেষ্টা মণ্ডলী সভা করলেন, সভা করার পরে আসিফ নজরুল সাহেব জাতিকে জানালেন, যে বিষয়গুলো এখনো সমাধান হয়নি, সেগুলো সমাধান করার জন্য আমরা রাজনৈতিক দলগুলোকে সাত দিনের সময় দিচ্ছি।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, আমরা তো প্রত্যেকটা সভায় গেছি। প্রত্যেকটা সভায় আমাদের মতামত দিয়েছি। আজকে কেন আবার এই প্রসঙ্গ উঠছে যে, রাজনৈতিক দলগুলোকে বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে! তাহলে আপনারা কী করলেন এত দিন ধরে?
ফখরুল বলেন, আমি আজ পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, যে দাবি-দাওয়াগুলো নিয়ে কয়েকটি রাজনৈতিক দল ঘেরাও করছে, অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে, আবার একটা চক্রান্ত করছে নির্বাচন বানচাল করার জন্য, নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়ার জন্য—এটা এই দেশের জনগণ মেনে নেবে না। আমরা অনেক দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিচ্ছি। আমরা এখন পর্যন্ত কোনো বিষয়ে রাস্তায় নামিনি কিন্তু মনে রাখবেন, বিএনপি কোনো ভেসে আসা দল নয়! বিএনপি এই দেশের জনগণের গড়া একটি দল। শহীদ জিয়াউর রহমানের দল, স্বাধীনতার ঘোষকের দল। এই দল দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার, গণতন্ত্রের জন্য আপসহীন সংগ্রাম করা নেত্রীর দল। আমাদের ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, ২০ হাজার মানুষকে হত্যা, এক হাজার ৭০০ মানুষকে গুম করে দেওয়া—সেই অবস্থা থেকে উঠে আসা একটি দল। সুতরাং আমাদেরকে খাটো করে দেখবেন না, অবজ্ঞা করে দেখবেন না। আমরা যদি রাস্তায় নামি, তাহলে কিন্তু রাজনৈতিক বিষয়গুলো ভিন্নভাবেই আসবে।
রাজনৈতিক দলগুলো প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দয়া করে পানি ঘোলা করার চেষ্টা করবেন না। দয়া করে দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যাবেন না। দয়া করে দেশের মানুষকে অশান্তিতে ফেলার কোনো ব্যবস্থা করবেন না। আমরা বহু সংগ্রাম-লড়াই করেছি। আপনারা আজকে নতুন করে শুরু করতে যাচ্ছেন আপনাদের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করার জন্য, সেটা এই দেশের মানুষ কিন্তু কোনো মতেই মেনে নেবে না।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকনের সঞ্চালনায় স্মরণসভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক দপ্তর সম্পাদক, যশোর-১ (শার্শা) আসনে বিএনপির প্রার্থী মফিকুল হাসান তৃপ্তি, কেন্দ্রীয় কৃষক দলের যুগ্ম সম্পাদক, যশোর-৪ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য, যশোর-২ আসনে দলীয় প্রার্থী সাবিরা সুলতানা মুন্নী, কেন্দ্রীয় সদস্য আবুল হোসেন আজাদ, কেন্দ্রীয় সদস্য, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি যশোর-৬ আসনে দলীয় প্রার্থী কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, জেলা কমিটির সাবেক নেতা অ্যাডভোকেট মুহম্মদ ইসহক, অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলামসহ স্থানীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।
মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন- তরিকুল ইসলামের সহধর্মিণী, কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক নার্গিস বেগম, তরিকুলের ছেলে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনকি সম্পাদক ও যশোর-৩ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী অনিন্দ্য ইসলাম অমিতসহ জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
শেরপুর জেলা বিএনপি ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দিয়েছে। বুধবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আলহাজ্ব সিরাজুল ইসলাম ও সদস্য সচিব অধ্যক্ষ এবিএম মামুনুর রশিদ পলাশ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ দুটি কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয় বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
অনুমোদনপ্রাপ্ত কমিটিগুলোর মধ্যে ঝিনাইগাতী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক করা হয়েছে আলহাজ্ব মো. শাহজাহান আকন্দকে এবং সদস্য সচিব করা হয়েছে মো. লুৎফর রহমানকে। ১০১ সদস্য বিশিষ্ট এই আহ্বায়ক কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দেয় শেরপুর জেলা বিএনপি।
অন্যদিকে, শ্রীবরদী উপজেলা বিএনপির ১০১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটিতে আহ্বায়ক হয়েছেন মো. আব্দুর রহিম দুলাল এবং সদস্য সচিব হয়েছেন আবদুল্লাহ আল মামুন দুলাল।
কমিটি অনুমোদনের পর ঝিনাইগাতী উপজেলা বিএনপির নবনিযুক্ত সদস্য সচিব মো. লুৎফর রহমান এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “আমি সর্বপ্রথম কৃতজ্ঞতা জানাই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও দেশনায়ক তারেক রহমানের প্রতি। ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাই শেরপুর-৩ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী, সাবেক তিনবারের এমপি ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জননেতা মাহমুদুল হক রুবেল ভাইকে। পাশাপাশি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম ও সদস্য সচিব অধ্যক্ষ মামুনুর রশিদ পলাশসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকেও ধন্যবাদ জানাই আমাদের প্রতি আস্থা রাখার জন্য। আমরা মাঠে থেকে মানুষের পাশে থেকে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করবো ইনশাআল্লাহ।”
অন্যদিকে আহ্বায়ক আলহাজ্ব মো. শাহজাহান আকন্দ বলেন,
“দল আমাদের ওপর যে আস্থা রেখেছে, তার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে বিজয়ী করতে কাজ করবো। এখন সময় মানুষের মনে জায়গা করে নেওয়ার। আমরা চাই, আগামীর প্রতিটি পদক্ষেপ হোক দলের, দেশের ও জনগণের কল্যাণে।”
স্থানীয় রাজনীতিতে এই দুই উপজেলা কমিটি অনুমোদনকে আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিক রেজা কিবরিয়া। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জ-১ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তার। গতকাল বুধবার (৫ নভেম্বর) গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তিনি।
রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘আমি ইতিমধ্যেই বিএনপিতে যোগদান করেছি এবং প্রাথমিক সদস্য ফরম পূরণ করেছি।
কয়েক দিনের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান করব।’
হবিগঞ্জ-১ আসনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনের আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি।’
রেজা কিবরিয়ার এর আগে গণফোরামে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন, ঐক্যফ্রন্ট ব্যানারে ধানের শীষে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং গণ অধিকার পরিষদে আহ্বায়কের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ পাঁচ দফা দাবিতে আজ রাজধানীতে পদযাত্রা করবে আট ইসলামি দল। এর মধ্যে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি)।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) বেলা ১১টায় পল্টনে সমবেত হয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে স্মারকলিপি প্রদানের লক্ষ্যে এ পদযাত্রা শুরু হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
এর আগে গত সোমবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন আট দলের নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, “দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে জুলাই সনদের পূর্ণ বাস্তবায়ন জরুরি।”
এ সময় ইসলামি দলগুলোর নেতারা সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন, রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি, এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা নিশ্চিত করার দাবিও জানান।
সংবাদ সম্মেলনের আগে পুরানা পল্টনে দলগুলোর শীর্ষ নেতারা বৈঠক করেন। সেখানে জামায়াতে ইসলামী নেতারা অন্তর্বর্তী সরকারের আলোচনার তাগিদকে স্বাগত জানান। তবে একই সঙ্গে ‘আলোচনায় রেফারি নিয়োগের’ দাবি তোলেন দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
জামায়াতসহ অংশগ্রহণকারী দলগুলোর নেতারা জানিয়েছেন, তাদের এই কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করা হবে এবং স্মারকলিপিতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে রাজনৈতিক সংস্কার, ন্যায্য নির্বাচন ব্যবস্থা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবি জানানো হবে।
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ফেব্রুয়ারিতেই আগামী নির্বাচন হতে হবে। তা না হলে নানা বিশৃঙ্খলার সুযোগ তৈরি হবে।’ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বুধবার সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গণমাধ্যমকর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
তৃতীয় মেয়াদে জামায়াতের আমির নির্বাচিত হওয়ার পর দুদিনের সফরে সিলেটে এসে পৌঁছান ডা. শফিকুর রহমান। বিমানবন্দরে স্বাগত জানাতে ভিড় করেন হাজার হাজার নেতাকর্মী। বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগ তো নিজেরাই নির্বাচন চায় না। আপনারা কি জোর করে তাদের ওপর নির্বাচন চাপিয়ে দিতে চান? তারা যদি নির্বাচন চাইতো তাহলে গত তিনটি নির্বাচনের সুযোগ পেয়েছে, হাতছাড়া করলো কেন? তারা যে নির্বাচনে বিশ্বাসী সেটা তারা প্রমাণ করতে পারেনি। যে জিনিস তারা পছন্দ করে না সেটা উপহার দিতে গেলে তাদের ওপর জুলুম করা হবে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কোনো জোটে যাচ্ছে না জানিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা জোট করছি না, বরং জনগণকেই সঙ্গে নিয়ে ভোটের ময়দানে নামবো। ইসলামী দলগুলোর পাশাপাশি দেশপ্রেমিক, প্রতিশ্রুতিশীল ও সৎ মানুষরাও আমাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। আমরা সবাইকে নিয়েই দেশ গড়তে চাই।
দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট প্রসঙ্গে জামায়াত আমির বলেন, গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। মানুষ ভোট দিতে চায়, পরিবর্তন চায়। সুশাসনের পরিবর্তে দেশে দুঃশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দুর্নীতি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। এই দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনগণ রাস্তায় নেমেছে। আমরা জাতিকে আহ্বান জানাচ্ছি—দুর্নীতিকে ‘না’ বলুন। কেউ নিজে দুর্নীতি করবেন না, অন্যকেও করতে দেবেন না। তাহলেই আমাদের দেশটা সুন্দর হবে।
প্রশাসনের নিরপেক্ষতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশন ও সরকারের কাছে ইতোমধ্যে প্রস্তাব দিয়েছি- অতীতে যারা নির্বাচনে পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছে, তাদের সরিয়ে দিতে হবে। কারণ জনগণ যখন জেগে ওঠে, তখন কোনো প্রশাসনিক প্রভাব টিকতে পারে না। জনগণের ইচ্ছারই প্রতিফলন ঘটে।
নির্বাচনের সময়সূচি প্রসঙ্গে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা ফেব্রুয়ারির নির্বাচন আদায় করে ছাড়ব। বেশি দেরি হলে বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খলা ও অস্থিতিশীলতা দেখা দিতে পারে। তাই সময়মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়াই শ্রেয়।
তিনি আরও বলেন, জামায়াত ইতোমধ্যে বিভিন্ন আসনের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে। তবে এটা চূড়ান্ত নয়। আমরা সবাইকে নিয়ে চলছি, তাই প্রয়োজন হলে প্রার্থী তালিকায় পরিবর্তন আসবে।
এ সময় সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির ফখরুল ইসলাম, জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা হাবিবুর রহমানসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, এ মাসের ১৫ তারিখ আমরা প্রাথমিকভাবে প্রার্থী ঘোষণা করব। আমরা এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি এবং ৩০০ আসনে আমাদের প্রার্থী দেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে।
বুধবার নারায়ণগঞ্জে সিদ্ধিরগঞ্জে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত হয়ে মৃত্যুবরণকারী শহীদ গাজী সালাউদ্দিনের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘কোন দলের সাথে জোট অবশ্যই রাজনীতিক বা আদর্শিক জায়গা থেকে হতে পারে। জুলাই সনদে আমাদের সংস্কারের দাবিগুলোর সঙ্গে যদি কোন দল সংহতি প্রকাশ করে সেক্ষেত্রে জোটের বিষয় বিবেচনা করবো। কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
বিএনপির কয়েকটি আসন ছেড়ে দেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘৩০০ আসনে আমাদের প্রার্থী দেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে। তবে যারা ফ্যাসিবাদ বিরোধী ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন, সেখানে খালেদা জিয়ার (বিএনপির সাবেক প্রধানমন্ত্রী) কথা আমাদের নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী বলেছেন। তার সম্মানে সেই সব আসনে আমরা প্রার্থী দেব না। এছাড়া সর্বাধিক আসনে আমরা ‘শাপলা কলি’ প্রতিকের জন্য প্রার্থী দেব।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে নির্বাচনের যে সংস্কৃতি যাদের টাকা আছে, যারা গডফাদারগিরি করে তারা নির্বাচনে দাঁড়ায়। আমরা সেই সংস্কৃতিকে এবার চ্যালেঞ্জ করতে চাই। এলাকার গ্রহণযোগ্য, সাধারণ ও খেটে খাওয়া মানুষকে আমরা জনপ্রতিনিধি হিসেবে সংসদে দেখতে চাই। আমরা সেই উদ্দেশ্যে কাজ করছি।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের হাজারো যোদ্ধারা সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী আহতদের চিকিৎসার দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের ছিল। তারা তা সম্পূর্ণরুপে পালন করতে পারেনি বিধায় এখনো লাশের সারি বাড়তেছে। আমাদের শহীদদের সংখ্যা বাড়তেছে। আমরা সরকারের প্রতি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, আহত যোদ্ধাদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা ব্যবস্থা অব্যাহত না থাকলে এরকম মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে থাকবে। এমনকি পরবর্তীতে নির্বাচিত সরকার যে আসুক না কেন, চিকিৎসার বিষয়ে সবার কমিটমেন্ট থাকা প্রয়োজন।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির নারায়ণগঞ্জ জেলা সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল আমিন, যুগ্ম আহ্বায়ক আহমেদ তনু, সদস্য সালেহ আহমেদসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের ছোড়া গুলিতে এক চোখের দৃষ্টি হারানো ও গলায় স্প্লিন্টার নিয়েই টানা ১৫ মাস বেঁচে থাকার পর গত ২৬ অক্টোবর রাতে মৃত্যুবরণ করেন নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার গোদনাইল এলাকার গাজী সালাউদ্দিন। তার মৃত্যুতে শোকাহত পরিবারকে শান্তনা ও সমবেদনা জানাতে তার গোদনাইলের বাড়িতে যান এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। এ সময় নিহতের স্ত্রী রানী বেগমসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তিনি কথা বলেন।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মনোনয়ন পাবার পর ফরিদপুর-৩ সদর আসনের ধানের শীষের প্রার্থী চৌধুরী নায়াব ইউসুফ তার নিজ মহল্লা শহরের কমলাপুর ২২ নং ওয়ার্ড তেতুলতলা থেকেই দলীয় নেতা কর্মী নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন। যদিও তিনি গত এক বছরেরও বেশি সময় ফরিদপুর সদর আসনের শহর থেকে প্রতান্ত গ্রামাঞ্চল-এ ভোটের মাঠ চষে বেড়িয়েছেন। বুধবার সকাল দশটায় ফরিদপুর শহরের কমলাপুর সমগ্র এলাকায় সাধারণ মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে এবং পথচারী, রিকশাচালক, দোকানদারদের কাছে গিয়ে ধানের শীষের জন্য ভোট ও দোয়া চেয়েছেন তিনি ।
এ সময় চৌধুরী নায়াব ইউসুফ বলেন, আমার পিতা চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ তার প্রতিটা নির্বাচনের সময় তার নিজ এলাকা কমলাপুরের মানুষদের কাছ থেকে দোয়া ও ভালোবাসা নিয়ে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরু করতেন। আমিও সেই ধারা অব্যাহত রেখে আমার এলাকার প্রতিবেশী ও মহল্লার মানুষের কাছে থেকে দোয়া নিয়ে আমার নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরু করলাম। আমি আনন্দিত যে আমার মহল্লার প্রতিটা নেতাকর্মী মুরুব্বী নারী-পুরুষ সাধারণ জনগণ সহ সকলে আমার সঙ্গে আছেন। তারা নিজেরাও আমার জন্য কাজ করছেন। আগামীতে উন্নত বাংলাদেশ গড়তে ও তারেক রহমানের হাতকে শক্তিশালী করতে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে ধানের শীষকে বিজয় করতে হবে।
চৌধুরী নায়াব ইউসুফ বলেন, আমি আমার নির্বাচনী এলাকা ফরিদপুর সদর ৩ আসনকে একটি মডেল ফরিদপুর হিসেবে গড়ে তুলবো ইনশাল্লাহ।
এ সময় ফরিদপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এফ এম কাইয়ুম জঙ্গি, সদস্য সচিব গোলাম মোস্তফা মিরাজ, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এ বি সিদ্দিকী মিতুল, যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান অপু, এমদাদুল হক ইমদাদ, নাসির উদ্দিন আহমেদ মিলার, ফরিদপুর সদর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বেনজির আহমেদ তাবরিজ, মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আলী রেজওয়ান বিশ্বাস তরুণ, জেলা মহিলা দলের সভাপতি চৌধুরী নাজরিন রহমান, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সৈকত হাসান, মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি মুনিব হাসান সোহাগ, বিএনপি নেতা আসিফ ইমতিয়াজ বুলুসহ বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৩৭টি আসনে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে বিএনপি। তালিকা ঘোষণা অনুযায়ী ঠাকুরগাঁও-১ আসন থেকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
দলীয় প্রার্থী মনোনীত হওয়ার পরে এবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার দুপুর ১টায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে বিএনপি মহাসচিব লিখেন, এই নির্বাচন হয়তো আমার শেষ নির্বাচন।
পোস্টে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও লিখেছেন, মহান আল্লাহর রহমতে বিএনপি আমাকে ঠাকুরগাঁও ১ আসনে মনোনীত করেছে! আমি বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ সকল নেতা ও নেত্রীকে আমার কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ জানাই। দলের সকল কর্মীকে জানাই আমার আন্তরিক ধন্যবাদ আজীবন আমার সঙ্গে থাকার জন্য!
তিনি লিখেন, আমরা যারা সারাজীবন রাজনীতি করেছি, জেলে গেছি, আমাদের নিজেদের একটা গল্প থাকে! অনেকেই তা জানে না! আমি যখন ১৯৮৭ তে সিদ্ধান্ত নেই, আবার রাজনীতিতে ফিরব, আমার মেয়ে দুটি একদমই ছোট ছিল! ঢাকায় পড়ত। আমার স্ত্রীর বয়স অনেক কম ছিল! সে প্রথমে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল! বুঝতে পারছিল কী ভয়াবহ অনিশ্চিত জীবনে পা দিতে যাচ্ছে!
পোস্টে মির্জা ফখরুল আরো লিখেন, আমার মেয়ে দুটির হাত ধরে সেই নিয়ে গেছে স্কুলে, ডাক্তারের কাছে! মনে পড়ে আমার বড় মেয়ের একটা অপারেশন হবে, আমি সারারাত গাড়িতে ছিলাম, ঢাকার পথে! যাতে মেয়ের পাশে থাকতে পারি! গল্পগুলো অন্য কোনও দিন বলব যদি আল্লাহ চান! এ রকম গল্প আমাদের হাজার-হাজার নেতাকর্মীর আছে!
পরিশেষে তিনি লিখেন, আপনারা সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন, আমাদের দলের প্রতিটি নেতাকর্মীর জন্য দোয়া করবেন! আমরা সবাই মিলে আপনাদের পাশে থাকব এবং কাজ করব ইনশাআল্লাহ! বিএনপির সেই যোগ্যতা আছে দেশকে মর্যাদার সঙ্গে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার! ইনশাআল্লাহ! আপনারা পাশে থাকেন।
দেশের আলোচিত কন্টেন্ট নির্মাতা আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম আবারও জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছেন। আগেই ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি এবার ঢাকা-১৭ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তবে এখানেই থেমে নেই তিনি—বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসন থেকেও প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
হিরো আলম বলেন, ‘এর আগেও দুই আসন থেকে আমি নির্বাচন করেছি। এই আসনগুলোর মানুষের সঙ্গে আমার আলাদা সম্পর্ক আছে। কাল যখন ঢাকায় নির্বাচনের ঘোষণা দিলাম সেটা দেখে অনেকেই আমাকে কল দিয়েছেন। তারা আমাকে উৎসাহ দিচ্ছেন। তখন চিন্তা করলাম, জনগণ তো চায় আমি নির্বাচন করি। তাহলে আমি কেন দুই জায়গা থেকে করব না? তাই রাতে সিদ্ধান্ত নিয়েছি-আমি দুই আসন থেকেই নির্বাচন করবো।’
ঢাকা-১৭ আসনে হিরো আলমের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বেশ কিছু শক্ত প্রার্থীর সঙ্গে। এ আসনের অন্যতম আলোচিত প্রার্থী আন্দালিব রহমান পার্থ, যিনি বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এছাড়া জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ, এনসিপিসহ আরও কয়েকটি দলের প্রার্থীরাও এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
অন্যদিকে, বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে বিএনপি থেকে মোশারফ হোসেনকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এখানেও একাধিক দলের প্রার্থী থাকার কথা জানা গেছে। হিরো আলম সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানিয়েছেন।
হিরো আলম বলেন, ‘নির্বাচনে অংশ নেওয়া আমার কাছে শুধু জয়ের বিষয় নয়, এটা একটি প্রতিবাদের মাধ্যমও। দেশে এখন একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হোক, এটাই সবার প্রত্যাশা। আমি ১০০ ভোট পেলেও কোনো সমস্যা নেই। মানুষ আসুক, ভোট দিন, উৎসব করুন।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক দলের প্রধানের সঙ্গে কথা হচ্ছে। আমি কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিইনি। দলগুলো যেসব প্রস্তাব দিচ্ছে সেগুলো আমি মানতে পারব কি না সেটা ভেবে দেখছি। ব্যাটে-বলে মিললে কোনো দলে যাব। নইলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হব।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মির্জা আব্বাস বলেছেন, বিশাল নির্বাচনী যাত্রাপথে নেমেছি। সবাই মিলে কাজ করে ঐক্যবদ্ধ থেকে দলকে জয়ী করতে হবে।
মঙ্গলবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা ও দোয়া মাহফিলে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, স্বচ্ছ নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিতে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
মনোনয়ন নিয়ে বিএনপির এ নেতা বলেন, সুন্দর মনোনয়ন হয়েছে, অনেকে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন, কষ্ট পেয়েছেন, তারেক রহমান ভেবেচিন্তে করেছেন। বিশাল নির্বাচনী যাত্রাপথে নেমেছি। সবাই মিলে কাজ করে ঐক্যবদ্ধ থেকে দলকে জয়ী করতে হবে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একজন সর্বোচ্চ তিনটি আসন থেকে নির্বাচন করতে পারবেন। এমন বিধান যুক্ত করে নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিও (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।
গতকাল সোমবার নির্বাচন কমিশন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ছিল একাধিক আসনে কোনো ব্যক্তির প্রার্থী হওয়ার বিধান বাতিল করা। কমিশন জানায়, মূলত দুটি কারণে এই সুপারিশ করা হয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে উপনির্বাচনের ব্যয় কমানো। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে প্রভাবশালী কোনো প্রার্থীকে একাধিক আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না দিয়ে সংশ্লিষ্ট আসনের প্রকৃত প্রার্থীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করা।
নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলি বলেন, ১৯৮৬ সালে প্রথমবারের মতো পাঁচটি আসনে একজনের প্রার্থী হওয়ার বিধান যুক্ত করা হয়। আরপিওতে আগে একজন কয়টি আসনে ভোট করবেন, তা উল্লেখ ছিল না; নতুন দফা যুক্ত করে ১৯৮৬ সালে পাঁচটি আসন সীমাবদ্ধ করা হয়। ২০০৮-২০০৯ এ এসে তা তিনটি আসনে সীমাবদ্ধ করা হয়।
১৯৮৬ সালে সর্বোচ্চ পাঁচটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ রাখা হয়
২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ড. এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন সংসদ নির্বাচনে এক ব্যক্তির দুই বা ততোধিক আসনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি নিরুৎসাহী করার চেষ্টা করে। ওই সময় নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী আইন সংস্কারে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে লিখিতভাবে জানায়, বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, সংসদ নির্বাচনে কোনো ব্যক্তি দুই বা ততোধিক আসনে প্রার্থী হতে পারেন। তবে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন করে ১৯৮৬ সালে সর্বোচ্চ পাঁচটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ রাখা হয়।
ইসি থেকে জানা গেছে, অনেক প্রার্থী একের অধিক, এমনকি সর্বোচ্চ পাঁচটি আসনে প্রার্থী হয়েছেন। কোনো প্রার্থী একাধিক আসনে নির্বাচিত হলে পরে সংবিধানের ৭১ অনুচ্ছেদের (২) (ক) দফার বিধান অনুযায়ী তাকে একটিমাত্র আসন রেখে বাকি সব আসন ছেড়ে দিতে হয়। তিনি ছেড়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শূন্য ঘোষিত আসনগুলোতে পুনর্নির্বাচন করতে হয়।
এসব পুনর্নির্বাচনে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হয় এবং প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়। এই প্রেক্ষাপটে সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সর্বোচ্চ তিনটি আসনে প্রার্থিতার সুযোগ রাখাই যুক্তিযুক্ত এবং পুনর্নির্বাচনের সম্ভাব্য ব্যয়ের একটি অংশ এরূপ প্রার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা সমীচীন।
সেসময় নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে প্রস্তাব রাখে, ‘কোনো ব্যক্তি একই সময়ে তিনটির অধিক নির্বাচনী এলাকার জন্য প্রার্থী হতে পারবেন না। একাধিক আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করলে অতিরিক্ত প্রতিটি আসনের জন্য পাঁচ লাখ টাকা জমা দিতে হবে এবং জয়লাভ করে এরূপ আসন ছেড়ে দিলে এই জামানত বাজেয়াপ্ত করা হবে।’
নির্বাচন কমিশনের সর্বোচ্চ তিনটি আসনের প্রস্তাব সেসময় আইনে পরিণত হয়। তবে অতিরিক্ত প্রতিটি আসনের জন্য পাঁচ লাখ টাকা জামানত এবং নির্বাচনে জয়ের পর সেই আসন ছেড়ে দিলে ওই জামানত বাজেয়াপ্ত করার প্রস্তাবটি গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। এদিকে সংসদ নির্বাচনের আইন বা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে এক ব্যক্তির একাধিক আসনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি নির্দিষ্ট করে দেওয়া হলেও সংবিধানে এ বিষয়ে কোনো সংশোধনী আনা হয়নি।
সংবিধানের ৭১ অনুচ্ছেদের (১) দফায় বলা আছে, ‘কোনো ব্যক্তি একই সময়ে দুই বা ততোধিক নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য হইবেন না।’ (২) দফায় বলা আছে, ‘কোনো ব্যক্তির একই সময়ে দুই বা ততোধিক নির্বাচনী এলাকা হইতে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় এই অনুচ্ছেদের (১) দফায় বর্ণিত কোনো কিছুই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করিবে না, তবে তিনি যদি একাধিক নির্বাচনী এলাকা হইতে নির্বাচিত হন তাহা হইলে (ক) তাহার সর্বশেষ নির্বাচনের ৩০ দিনের মধ্যে তিনি কোন নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধিত্ব করিতে ইচ্ছুক, তাহা জ্ঞাপন করিয়া নির্বাচন কমিশনকে একটি স্বাক্ষরযুক্ত ঘোষণা প্রদান করিবেন এবং তিনি অন্য যেসব নির্বাচনী এলাকা হইতে নির্বাচিত হইয়াছিলেন, অতঃপর সেই সব এলাকার আসনসমূহ শূন্য হইবে।’
২০১৮ সালের জাতীয় সংসদে এ বিষয়ে সংশোধনী প্রস্তাব দেওয়া হয়। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী এই সংশোধনীর প্রস্তাবে উল্লেখ করেন, ‘সংবিধানে বলা আছে, একই সময়ে এক ব্যক্তি দুই বা ততোধিক নির্বাচনী এলাকা থেকে প্রার্থী হতে পারবেন। অর্থাৎ একই ব্যক্তি একই সময়ে ১০০ বা ২০০ যে কয়টি আসন থেকে ইচ্ছা নির্বাচন করতে পারবেন।’
আবার গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) বলা আছে, ‘একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ তিনটি নির্বাচনী এলাকা থেকে প্রার্থী হতে পারবেন। এতে সংবিধান ও আরপিওর বিধানে সাংঘর্ষিক অবস্থা তৈরি হয়েছে। এজন্য সংবিধানের ৭১ অনুচ্ছেদটি সংশোধন প্রয়োজন।’ সেসময় এই প্রস্তাব পরীক্ষা করে বিবেচনার জন্য আইন মন্ত্রণালয়কে বলা হলেও পরে আর অগ্রগতি হয়নি।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবাসী বাংলাদেশি, নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত ও নিজ ভোটার এলাকার বাইরে অবস্থানরত সরকারি চাকরিজীবী এবং আইনি হেফাজতে থাকা ভোটাররা আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিতে পারবেন।
গতকাল সোমবার নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের পরিচালক (জনসংযোগ) মো. রুহুল আমিন মল্লিক স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে প্রচারের জন্য জনস্বার্থমূলক বার্তায় এ কথা বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, আগামী সংসদ নির্বাচনে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি ভোটার, নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত ও নিজ ভোটার এলাকার বাইরে অবস্থানরত সরকারি চাকরিজীবী এবং আইনি হেফাজতে থাকা ভোটাররা আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেবেন।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে www.ecs.gov.bd ওয়েবসাইট ভিজিট করতে এবং নির্বাচন কমিশনের ইউটিউব চ্যানেল @BangladeshECS এ চোখ রাখতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানান, এবার প্রথমবারের মত প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য পোস্টাল ভোটিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যেসব প্রবাসী ভোটার ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপে নিবন্ধিত থাকবেন, তারা ডাকযোগে ভোট দিতে পারবেন।
তিনি আরও জানান, আগামী ১৬ নভেম্বর প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন অ্যাপের উদ্বোধন করা হবে। এই অ্যাপের মাধ্যমে কত তারিখ পর্যন্ত নিবন্ধন করা যাবে তা সেদিন জানানো হবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনার জন্য প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের। তবে সরকার উদ্যোগী না হলে রেফারির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে- এমন আশঙ্কাও জানিয়েছেন তিনি।
গতকাল সোমবার আট দলের সাথে বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। এসময় দলগুলোর নেতারা আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন৷ সমাবেশ ও গণমিছিলের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তারা৷
দাবি আদায়ে পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকায় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কার্যালয়ে জরুরি সভা করেন আন্দোলনরত দলগুলোর প্রতিনিধিরা৷ সভা শেষে করা হয় যৌথ সংবাদ সম্মেলন৷
যৌথ সংবাদ সম্মেলন সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, ‘উচ্চকক্ষে পিআরের ব্যাপারে আট দলের সবাই, জনগণ ও সরকার একমত। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হলে এ চাওয়া পূরণ হবে না। প্রধান উপদেষ্টার আহ্বানে অন্যরা সাড়া দিলে আমরাও আলোচনা বসতে রাজি৷’
তাহের আরও বলেন, ‘যদি উপদেষ্টা পরিষদ কিছু না করে আমাদের ওপরই ছেড়ে দেয়, তবে রেফারির দায়িত্ব পালন করবে কে?’
তাহের বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা করে একমত হওয়ার বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। কিন্তু এ বিষয়ে সরকারকে রেফারির ভূমিকা পালন করতে হবে। সমমনা আটদল সব রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করতে চায়।’
বিএনপির এক এক নেতা এক এক বক্তব্য দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন-এ কথা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, জাতীয় নির্বাচনের দিনে গণভোট হলে সেই ভোটের কোনো মূল্যায়ন থাকবে না৷
বিএনপির একেকজন সংস্কার নিয়ে একেক রকম বক্তব্য দিচ্ছেন-সনদের জন্য গণভোট অপরিহার্য বলেও জানান তিনি। একই অনুষ্ঠানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীম বলেন, ‘জুলাই সনদ আইনি ভিত্তি না পেলে পরবর্তী নির্বাচন বৈধতা পাবে না৷ একই দিনে গণভোট ও নির্বাচন হলে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন হুমকির মুখে পড়বে। একই দিনে গণভোট ও নির্বাচনের ইতিহাস নেই।’