আজ ২৩ জুন উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক সংগঠন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বা প্লাটিনাম জয়ন্তী। জন্মলগ্ন থেকেই দলটি এদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও উন্নয়নের স্বপ্নযাত্রার সারথি। নানা সংকট, সংগ্রাম আর চরম জুলুম-নির্যাতন, নিপীড়ন অতিক্রম করে অদম্য গতিতে এগিয়ে চলছে প্রগতি আর উন্নয়নের অগ্রযাত্রায়। যখন পশ্চিম পাকিস্তানের নির্যাতন ও একচেটিয়া সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণে কোণঠাসা ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সব রাজনৈতিক কার্যক্রম, তখন সাধারণ মানুষের ম্যান্ডেট নিয়ে একমাত্র দল হিসেবে এগিয়ে আসে সেটি হচ্ছে আওয়ামী লীগ। ফল হিসেবে তুমুল জনপ্রিয়তা নিয়ে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন দলটি।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলীর কে এম দাস লেনের ‘রোজ গার্ডেন’ প্যালেসে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’। ১৭৫৭ সালের এই ২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে বাংলার স্বাধীনতার লাল সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতারা দলের আত্মপ্রকাশের দিন হিসেবে এ তারিখটি বেছে নিয়েছিলেন দেশের মানুষের মুক্তির পথে যাত্রার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে।
প্রতিষ্ঠাকালীন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি হন মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক হন শামসুল হক। প্রতিষ্ঠার সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কারাগারে বন্দি ছিলেন। সেই অবস্থায় তাঁকে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়। অন্যদিকে পুরো পাকিস্তানের ক্ষেত্রে সংগঠনটির নাম রাখা হয় নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। এর সভাপতি হন গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।
পাকিস্তানি কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরেই বঙ্গবন্ধু নিজেকে দেশ সেবায় আত্মনিয়োগ করেন এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের এক বিরাট চ্যালেঞ্জে ঝাঁপিয়ে পড়েন। দেশের ভেতর স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির নানা ষড়যন্ত্র ও অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মধ্যেও বঙ্গবন্ধু সফলভাবে বাংলাদেশের পুনর্গঠনের কাজটি করেছিলেন তাঁর সততা ও অসাধারণ দেশপ্রেমের কারণে।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও তাকে হত্যার অন্যতম কারণ হিসেবে মনে করা হয় তার নেতৃত্বে যুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশের উন্নয়নকে। কেননা, পাকিস্তান যখন ১৬ ডিসেম্বরের আগেই দেশের রিজার্ভ শূন্য করে চলে যায়, বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে এবং দেশের অধিকাংশ সড়ক, রেল ও নৌপথ বিধ্বস্ত করে যায়, তখন পাকিস্তানের বিভিন্ন গণমাধ্যম ও নেতা-কর্মীদের কথায় বেশ স্পষ্ট ছিল যে, বঙ্গবন্ধুরে নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি ব্যর্থরাষ্ট্র হতে যাচ্ছে। কিন্তু মাত্র ৩ বছরে বাংলাদেশের উন্নয়নে তাদের এমন বক্তব্য থমকে যায়। এমনকি তৎকালীন সময় বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে অংশ নেওয়া হেনরি কিসিঞ্জারও বাংলাদেশের এই উন্নয়নকে ভালোভাবে নেননি। আর বাংলাদেশকে ব্যর্থরাষ্ট্রে পরিণত করার অংশ হিসেবেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেষ রাতে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্য এবং আত্মীয়স্বজনদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আর এর মাধ্যমে থমকে যায় একটি সদ্য স্বাধীন দেশের উন্নয়নের পথের অগ্রযাত্রা, যা আবারও গতি পায় ১৯৯৬ সালে দেশের ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর।
জন্ম থেকেই স্বৈরচারী শাসকদের বিরুদ্ধে জনগণের কণ্ঠস্বর হয়ে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে আওয়ামী লীগ। ১৯৭৫ সালে থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত টানা স্বৈরশাসকরা অগণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা যখন করে রাখে। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করা জিয়াউর রহমানের পর ক্ষমতায় আসেন আরেক স্বৈরশাসক হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদ। তবে এদের বিরুদ্ধে জনগণকে নিয়ে রাজপথে লড়াই করেছে আওয়ামী লীগ।
১৯৮১ সালের ১৭ মে জীবনের মায়া উপেক্ষা করে দেশে ফিরে সভাপতি হিসেবে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন শেখ হাসিনা। ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। গত ৪ দশকেরও বেশি সময় ধরে নিরলসভাবে দলটির নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন দমনে চলে খুন, হত্যা, জেল, জুলুম, নির্যাতন। রক্তের সিঁড়ি বেয়ে স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনের ঢেউয়ে উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাকার রাজপথ। এরশাদের পতন ত্বরান্বিত ও গণতন্ত্র মুক্তি আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি হয় ১৯৯০ সালের ১৯ নভেম্বর। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জনতার সম্মিলিত আন্দোলনে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পদত্যাগ করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। অস্থায়ী সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। অবসান হয় স্বৈরশাসনের, আর মুক্তি পায় গণতন্ত্র। এর পরও নানা ষড়যন্ত্রের কারণে গণতন্ত্রের পথচলা বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে তখনকার বিরোধী দল আওয়ামী লীগ।
সংঘাতময় এক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে সেনাবাহিনী। জারি করা হয় জরুরি অবস্থা। তবে যখন অসাংবিধানিকভাবে দীর্ঘ সময় ধরে এই সামরিক সরকার ক্ষমতা দখল করে রাখে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তায় রাজপথে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলার মাধ্যমে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে দ্রুততম সময়ে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন প্রদানে বাধ্য করতে সক্ষম হয় আওয়ামী লীগ। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও বিপুল ভোটে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ। আবারও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সাংবিধানিক ভিত্তিতে পরিচালিত হতে থাকে দেশ যা এখনো চলমান রয়েছে।
অর্জনে পরিপূর্ণ আওয়ামী লীগের ৭৫ বছর
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দেশের সর্ববৃহৎ ও প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল। প্লাটিনাম জন্মজয়ন্তী উদ্যাপন করলেও সরাসরি সরকার গঠন করে দলটি ভূমিকা রাখতে পেরেছে এখন পর্যন্ত সাতবার। এর মধ্যে যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রিসভায় পাকিস্তান শাসক গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রের কারণে নিজ মেয়াদ পূরণ করতে পারেনি দলটি। অন্যদিকে একাত্তরে পাকিস্তানের হত্যাযজ্ঞের পর দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ শেষে দেশ স্বাধীন হলে আবারও ৩ বছরের কিছু বেশি সময়ের জন্য সরকার গঠন করে দলটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে। পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার পর সামরিক শাসনের জাঁতাকালে কোণঠাসা হয়ে পড়ে দলটি। বিদেশে থাকায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগ পূর্ণ মেয়াদে তার মন্ত্রিসভার কার্যকাল পূরণ করে। এরপর ২০০৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত টানা চারটি নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ২০০৯ থেকে ২০২৪ দীর্ঘ এ সময়ে বাংলাদেশে অর্জনের তালিকাটা অনেক লম্বা।
এদিকে আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার বাণীতে শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট’ অর্জন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ এবং ২১০০ সালের মধ্যে ‘ডেল্টা পরিকল্পনা’ বিনির্মাণে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। এ উপলক্ষে তিনি দলের সব নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী এবং দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি
৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী (প্লাটিনাম জয়ন্তী) উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে ১০ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে এবং ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, আজ সূর্য উদয় ক্ষণে কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দেশব্যাপী আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন।
সকাল ৭টায় ধানমন্ডি বত্রিশ নম্বরস্থ ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন।
এ ছাড়া সকাল সাড়ে ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের একটি প্রতিনিধিদল শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।
এদিকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত পরিবেশন, বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে কর্মসূচির উদ্বোধন করা হবে। এরপর দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান যুক্তরাজ্যের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) সকালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের পথে যাত্রা করেন তিনি।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের জানান, যুক্তরাজ্য সরকারের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠক ও কর্মসূচিতে অংশ নিতেই তার এই লন্ডন সফর।
জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে বৈঠকের নির্ধারিত কর্মসূচি থাকায় বুধবার সকালে লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন জামায়াত আমির।
লন্ডনে নির্ধারিত কর্মসূচি শেষে ডা. শফিকুর রহমান সৌদি আরবে গিয়ে পবিত্র ওমরাহ পালন করবেন বলেও জানান জামায়াতের এই শীর্ষ নেতা।
সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২১ ডিসেম্বর ডা. শফিকুর রহমান দেশে ফিরবেন বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।
লন্ডনে অবস্থানকালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে জামায়াত আমিরের কোনো সাক্ষাৎ হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, “এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।”
আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলেও নির্বাচন আদৌ অনুষ্ঠিত হবে কি না, তা নিয়ে জনমনে এখনো সংশয় রয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম। তিনি বলেন, একটি স্বাধীন দেশের জন্য জনগণের এই অবিশ্বাস মোটেই শুভ লক্ষণ নয়। বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ গণতন্ত্র পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন। তার মতে, নির্বাচন নিয়ে আগে থেকে স্পষ্ট বার্তা না থাকা এবং উপদেষ্টা পরিষদের বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের কারণেই জনগণের মধ্যে এই উদ্বেগ ও অবিশ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে।
আব্দুস সালাম বলেন, গত ১৭ বছর ধরে দেশে গণতন্ত্র ও জনগণের মৌলিক অধিকার ছিল না এবং জনগণের মতামতের তোয়াক্কা না করে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ইশারায় ক্ষমতা নির্ধারিত হতো। এই সংকট থেকে উত্তরণ, দেশের স্বার্থ রক্ষা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য বিএনপিকে রাষ্ট্রক্ষমতায় আনা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই বলে তিনি দাবি করেন। তিনি উল্লেখ করেন, জাতীয় যেকোনো সংকটে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া এবং বর্তমানে তারেক রহমান নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আসছেন। বিএনপি একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ দাবি করেছিল যাতে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া যায়।
সম্প্রতি শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি অভিযোগ করেন, ফ্যাসিবাদের দোসররা নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে বিএনপি সব ধরনের উসকানি উপেক্ষা করে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখছে। এছাড়া দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক দুরবস্থা, বিনিয়োগ খরা এবং বেকারত্ব বৃদ্ধির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এই সংকট কাটাতে আগে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি। মুক্তার অখন্দের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুসহ দলের অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দেশে ফেরার সময় যুক্তরাজ্যের বিমানবন্দরে ভিড় না করতে এবং বিদায় জানানোর জন্য উপস্থিত না হতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) লন্ডনে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত মহান বিজয় দিবসের এক আলোচনা সভায় তিনি এই আহ্বান জানান।
বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, দীর্ঘ প্রায় ১৭-১৮ বছর তিনি যুক্তরাজ্যের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ছিলেন, কিন্তু আগামী ২৫ তারিখে তিনি দেশে ফিরে যাচ্ছেন। তিনি নেতাকর্মীদের অনুরোধ করে বলেন, দেশে ফেরার দিন বিমানবন্দরে গিয়ে যেন কেউ হট্টগোল বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করেন। তার মতে, বিমানবন্দরে ভিড় করলে বিদেশিদের সামনে দেশের ও দলের সুনাম ক্ষুণ্ন হতে পারে। তিনি কঠোর বার্তা দিয়ে বলেন, যারা তার অনুরোধ মেনে বিমানবন্দরে যাবেন না, তারাই প্রকৃত অর্থে দল ও দেশের সম্মানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আর নিষেধ অমান্য করে যারা যাবেন, তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্যই সেখানে গিয়েছেন বলে তিনি ধরে নেবেন।
বিজয় দিবসের এই আলোচনা সভায় দেশবাসীকে সতর্ক করে তিনি বলেন, একাত্তর, পঁচাত্তর বা ছিয়ানব্বইয়ের মতো ষড়যন্ত্রকারীরা এখনো থেমে নেই এবং তারা তাদের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান তিনি। আগামী দুই মাস পর দেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপি কেবল স্বপ্ন দেখানোয় নয়, বরং স্বপ্ন বাস্তবায়নের পরিকল্পনায় বিশ্বাসী। সামনের দিনগুলো সহজ হবে না উল্লেখ করে তিনি নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান, যাতে কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব হয়।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের এক-এগারোর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গ্রেপ্তার হন তারেক রহমান। পরে ২০০৮ সালে জামিনে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য সপরিবারে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান এবং এরপর থেকে সেখানেই অবস্থান করছিলেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে দোয়া মাহফিল ও মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফোরাম ইউএসএ ইনক-এর উদ্যোগে গত সোমবার জ্যাকসন হাইটসের নবান্ন রেস্টুরেন্টে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। ফোরামের সভাপতি মাহবুবুর রহমান মুকুলের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল মান্নান হোসাইনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত ও বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করা হয়।
মোনাজাতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, আরাফাত রহমান কোকো, শরিফ ওসমান হাদি এবং একাত্তর ও চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনাসহ বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত সুস্থতার জন্য মহান আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করা হয়। আলোচনা সভায় বক্তারা বিজয়ের চেতনাকে সমুন্নত রাখতে আগামী নির্বাচনে শহীদ জিয়ার আদর্শের দল বিএনপিকে ধানের শীষে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান। তারা নোংরা রাজনীতি পরিহার করে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও জিয়ার আদর্শ ধারণ করে দলকে সুসংগঠিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এছাড়া ভারত ও আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করে একটি স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয় অনুষ্ঠানে।
জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের কাছে ক্ষমা চেয়ে দলে ফিরেছেন সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি রংপুর-১ আসন থেকে দলের প্রার্থী হিসেবে অংশ নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) তিনি দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জিএম কাদের ও মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারীর সঙ্গে দেখা করে ক্ষমা চান এবং দলে ফেরার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এ বিষয়ে রাঙ্গা জানান, দল তাকে ক্ষমা করেছে এবং তিনি ফিরে এসেছেন। আসন্ন নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন, তবে মনোনয়ন না পেলেও দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাবেন না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এদিকে রংপুর-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ মন্ডলও জাতীয় পার্টিতে ফিরেছেন বলে জানা গেছে। রবিবার রাতে রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে স্থানীয় নেতাদের হাতে ফুল দিয়ে তিনি দলে যোগদান করেন। যদিও পরে এক ফেসবুক লাইভে তিনি যোগদানের বিষয়টি অস্বীকার করে একে সৌজন্য সাক্ষাৎ বলে দাবি করেন, তবে জাপার স্থানীয় নেতারা তাকে সাদরে গ্রহণ করার কথা জানিয়েছেন। দলীয় সূত্রমতে, রংপুরে জাতীয় পার্টির হারানো দুর্গ পুনরুদ্ধারে রাঙ্গা ও মন্ডলসহ সবাই একযোগে কাজ করবেন।
উল্লেখ্য, রওশন এরশাদ ইস্যুতে পক্ষ নেওয়ায় মসিউর রহমান রাঙ্গাকে এর আগে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। গত দ্বাদশ নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। অন্যদিকে, নূর মোহাম্মদ মন্ডল বিভিন্ন সময়ে দল পরিবর্তনের জন্য স্থানীয় রাজনীতিতে বেশ আলোচিত। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলা চলছে এবং তার বিপুল পরিমাণ সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ রয়েছে।
দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে অবশেষে দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আগামী ২৫ ডিসেম্বর তিনি বাংলাদেশে পা রাখবেন। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) লন্ডনে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি নিজেই দেশে ফেরার এই চূড়ান্ত তারিখ ঘোষণা করেন।
লন্ডনে অবস্থানরত দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, আজকের দিনটি দুটি কারণে বিশেষ। প্রথমত, আজ ১৬ ডিসেম্বর আমাদের মহান বিজয় দিবস। দ্বিতীয়ত, দীর্ঘ প্রায় ১৭ থেকে ১৮ বছর আমি আপনাদের সঙ্গে যুক্তরাজ্যে ছিলাম; কিন্তু মহান আল্লাহর ইচ্ছায় আগামী ২৫ তারিখে আমি দেশে ফিরে যাচ্ছি। তার এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিনের জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটল এবং দলের নেতাকর্মীদের অপেক্ষার প্রহর শেষ হতে যাচ্ছে।
দেশে ফেরার প্রাক্কালে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার বিষয়ে সতর্ক করেন। তিনি বলেন, সামনের দিনগুলো খুব একটা সহজ হবে না। তবে দলের সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারেন, তাহলেই যাবতীয় পরিকল্পনা সফল করা সম্ভব হবে। ঐক্যের মাধ্যমেই কাঙ্ক্ষিত ও প্রত্যাশিত একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। উল্লেখ্য, ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যাওয়ার পর থেকে তিনি সেখানেই অবস্থান করছিলেন।
দীর্ঘ ১৮ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে আগামী ২৫ ডিসেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে ‘আমার ভাবনায় বাংলাদেশ: জাতীয় রিল মেকিং প্রতিযোগিতা’ নামে অভিনব এক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে দলের নতুন কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচির বিস্তারিত তুলে ধরেন তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন।
১৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই প্রতিযোগিতা চলবে তারেক রহমানের দেশে ফেরার দিন অর্থাৎ ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আগ্রহীদের ১১টি নির্ধারিত থিমের যেকোনো একটি বিষয়ে সর্বোচ্চ ১ মিনিট দৈর্ঘ্যের রিল বা ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করতে হবে। নির্ধারিত বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে— ফ্যামিলি কার্ড, কৃষক কার্ড, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, পরিবেশ, আমি যেমন দেশ চাই, ক্রীড়া, ইমাম ও মুয়াজ্জিনের সম্মান, প্রবাসী এবং দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ। ভিডিওর ধরন একক বক্তব্য, স্যাটায়ার, গান, সংলাপ কিংবা অভিনয় হতে পারে।
অংশগ্রহণকারীদের ভিডিওটি ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম বা টিকটকের নিজ নিজ অ্যাকাউন্টে #BangladeshFirst হ্যাশট্যাগ দিয়ে পোস্ট করতে হবে এবং সেটির লিংক বিএনপির অফিশিয়াল ফেসবুক পেজের ইভেন্টে জমা দিতে হবে। প্রতিযোগিতার বিচারকার্যে ৩০ শতাংশ নম্বর জনমতের ভিত্তিতে এবং বাকি ৭০ শতাংশ জুরি বোর্ডের রায়ের ওপর নির্ভর করবে। বিজয়ী সেরা ১০ জন অংশগ্রহণকারী একটি অনুষ্ঠানে তারেক রহমানের সঙ্গে একান্ত আলাপের সুযোগ পাবেন। সংবাদ সম্মেলনে মাহাদী আমিন আরও জানান, গুলশানের এই নতুন কার্যালয়টি মূলত দলের নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হবে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের প্রার্থী শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি মন্তব্য করেছেন যে, স্বাধীনতাবিরোধীরা সাধারণ ক্ষমার মর্যাদা রাখতে পারেনি। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) লক্ষ্মীপুর জেলা শহরের ঝুমুর এলাকার বিজয় স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে তিনি এই মন্তব্য করেন। এ্যানি বলেন, যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল এবং দেশের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত ছিল, স্বাধীনতার পর সাধারণ ক্ষমার আওতায় তারা রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা পেয়েছিল। কিন্তু তারা সেই ক্ষমার সম্মান না দিয়ে বরং তা অবমূল্যায়ন করেছে এবং সুবিধামতো কখনো ‘আওয়ামী ফ্যাসিস্ট’দের সঙ্গে আবার কখনো তাদের বিরোধীদের সঙ্গে জোট বেধেছে।
সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অবদানের কথা স্মরণ করে এ্যানি বলেন, কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে জিয়াউর রহমানের ঐতিহাসিক ঘোষণা, মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্বদান এবং রণাঙ্গনে সরাসরি অংশগ্রহণ ছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা হয়তো প্রশ্নবিদ্ধই থেকে যেত। তিনি জিয়াউর রহমানকে দেশে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপদাতা হিসেবে উল্লেখ করেন। পাশাপাশি, খালেদা জিয়ার আপোষহীন ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, জিয়ার মৃত্যুর পর তিনি দলের হাল ধরেছেন এবং পরপর তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে জনপ্রিয়তার প্রমাণ দিয়েছেন। শ্রদ্ধা নিবেদনকালে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাহাবুদ্দিন সাবু, বাফুফের সহ-সভাপতি ওয়াহিদ উদ্দিন চৌধুরী হ্যাপীসহ স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে রাজধানীর গুলশানে নতুন একটি কার্যালয় উদ্বোধন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টায় আনুষ্ঠানিকভাবে এই কার্যালয়টির উদ্বোধন করা হবে।
বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গুলশান-২ এর ১০/সি রোডের ৯০ নম্বর বাড়িটি এখন থেকে দলটির নির্বাচনি কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হবে। উদ্বোধন উপলক্ষে আজ বিকেলে সেখানে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। তবে এই সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্টভাবে কারা উপস্থিত থাকবেন, তা এখনো নিশ্চিত করা হয়নি।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, আজ যে অফিসটিতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে, সেটি মূলত আসন্ন নির্বাচনের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনার কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে একাত্তরের বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে দলের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা জেলার নেতাকর্মীরা জাতীয় স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করেন।
দিনের শুরুতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ ত্যাগ করার পর এটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এরপরই বিএনপির নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে বেদিতে গিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান ও সালাহউদ্দিন আহমেদ। এছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম এবং নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরীসহ দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান মন্তব্য করেছেন যে, একটি নির্দিষ্ট দল মুক্তিযুদ্ধকে নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি মনে করত এবং দেশের বাকি জনগণকে দাসে পরিণত করার অপচেষ্টা করেছিল। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুব ম্যারাথনের উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর বৈষম্যমূলক নীতির কারণেই এ দেশের মানুষ তাদের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছিল। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে এবং তখন দেশের আপামর জনতা স্বাধীনতার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তবে স্বাধীনতার পর তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী জনগণের সঙ্গে করা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়। তিনি অভিযোগ করেন, বহুদলীয় গণতন্ত্র ধ্বংস করে মানুষের মৌলিক মানবাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল এবং রক্ষী বাহিনীর নামে একটি দমনমূলক বাহিনী গড়ে তোলা হয়েছিল।
১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, বিদেশ থেকে আসা ত্রাণ আগেই বিক্রি করে দেওয়ার ফলে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়। সে সময় ঢাকায় বিপুল সংখ্যক মানুষের লাশ দাফন করতে হয়েছিল। মূলত সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখিয়ে দেশটিকে শ্মশানে পরিণত করা হয়েছিল।
আওয়ামী লীগের বিগত শাসনামলের কঠোর সমালোচনা করে জামায়াত আমির বলেন, দলটি তিন দফায় ক্ষমতায় এসে জাতিকে কেবল রক্তপাত ও সহিংসতার রাজনীতি উপহার দিয়েছে। ১৯৯৬ সালে ক্ষমা চাওয়ার পর জনগণ তাদের সুযোগ দিলেও ক্ষমতায় গিয়ে তারা পুরনো চরিত্রে ফিরে যায়। ২০০৯ সালের পর থেকে খুন, গুম, ধর্ষণ ও দমন-পীড়নের রাজনীতির কারণেই সংশ্লিষ্টদের আজ দেশ ছাড়তে হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলার ঘটনাগুলোকেও তিনি সেই একই অপরাজনীতির ধারাবাহিকতা বলে অভিহিত করেন।
একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও স্বাধীনতার শত্রুরা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেছেন, বাংলাদেশের মুক্তিকামী ও গণতন্ত্রকামী জনতা সব ধরনের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অটুট রাখবে এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়েছিল আজকের এই দিনে। তাই এই দিনটি বিএনপির কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর তারা শপথ নিয়েছেন যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তাদের সংগ্রাম সর্বদা অব্যাহত থাকবে। একইসঙ্গে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াই চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় অঙ্গীকারও ব্যক্ত করেন তিনি।
মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনা করেন। তিনি বেগম জিয়াকে দেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা এবং গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে অভিহিত করেন।
এ সময় মির্জা ফখরুল দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি জানান, নির্বাসিত জীবন শেষে আগামী ২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমান দেশে ফিরবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তার এই প্রত্যাবর্তন দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াই ও সংগ্রামকে আরও বেগবান করবে বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনাটি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বিঘ্ন সৃষ্টির গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে গতকাল সোমবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ভার্চুয়ালি বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ করেন। তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, স্বাধীনতাপ্রিয় ও গণতন্ত্রকামী মানুষকে ভয় দেখিয়ে যারা নির্বাচন বানচাল করতে চায়, তারা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হবে এবং নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তারেক রহমান বলেন, দীর্ঘ দেড় যুগ পর নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের কাঙ্ক্ষিত তারিখ ঘোষণা করলেও একটি স্বার্থান্বেষী মহল অজুহাত ও শর্ত দিয়ে বাধা সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে। হাদির ওপর হামলার ঘটনাকে তিনি সেই ষড়যন্ত্রেরই বহিঃপ্রকাশ হিসেবে উল্লেখ করেন। প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করতে তিনি প্রশ্ন তোলেন—বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করলে বা নির্বাচন ছাড়া তাদের ক্ষমতায় রাখলে কারা লাভবান হবে? তিনি মনে করেন, এসব প্রশ্নের উত্তরের মধ্যেই ঘাতক ও গণতন্ত্রের শত্রুরা লুকিয়ে আছে। তবে তিনি আশ্বস্ত করেন যে, একাত্তর, পঁচাত্তর, নব্বই এবং চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান প্রমাণ করেছে জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকলে বিজয় সুনিশ্চিত।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ছাড়া স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র টেকসই হতে পারে না। তাই বিএনপির মূল লক্ষ্য হলো একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ সরকার প্রতিষ্ঠা করা। তিনি প্রতিহিংসার রাজনীতি পরিহার করে প্রতিটি ঘরে বিজয়ের সুফল পৌঁছে দিয়ে একটি সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানান। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং দলের সিনিয়র নেতারা বক্তব্য রাখেন।
এদিকে, দীর্ঘ ১৭ বছর প্রবাস জীবন শেষে আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন তারেক রহমান। দেশে ফেরার আগে আজ মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) লন্ডনের সিটি প্যাভিলিয়নে বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন, যা সম্ভবত প্রবাসে তার শেষ জনসভা হতে যাচ্ছে।