বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান বলেছেন, ছাত্র-জনতা সফল আন্দোলনের মাধ্যমে দেশে যে পরিবর্তন নিয়ে এসেছে এ পরিবর্তনের সুফল যাতে দেশ ও জনগণ পায় সেজন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আজ সোমবার বেলা ১১টায় ভোলা সার্কিট হাউজে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সঙ্গে বিশেষ সভায় এ কথা বলেন তিনি।
নৌপ্রধান আরও বলেন, সশস্ত্র বাহিনী সব সময় জনগণের পাশে ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। আমরা বেসামরিক প্রশাসনকে যথাযথ সহায়তা দিয়ে থাকি। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে বর্তমানে যৌথ বাহিনীর কার্যক্রম চলছে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারসহ অন্যান্য কার্যক্রমে সহায়তা করে যাচ্ছি এবং যতদূর পর্যন্ত এটার প্রয়োজন হবে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক আমরা সেই সহায়তা করে যাব।
৫ আগস্টের পর দেশের বিভিন্ন সহিংসতার বিষয়ে নৌবাহিনী প্রধান আরও বলেন, সারা দেশে বেশ কিছু অরাজকতা ও নাশকতা হয়েছে যা দুঃখজনক। কে বা কারা জড়িত ছিল, অনেক চিহ্নিত সন্ত্রাসী, অনেকে প্রতিহিংসা বা আক্রোশের চরিতার্থ করেছে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ অবস্থার উন্নতি হয়েছে। বর্তমানে এ ধরনের সহিংসতা অনেকটাই কমে এসেছে।
নাজমুল হাসান বলেন, আমার বিশ্বাস আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সবাই মিলে কার্যক্রম জোরদার করলে অস্থিরতা অনেকটাই কমে আসবে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান করব সামরিক প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করবেন।
সভায় বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. শওকত আলী, জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহিদুজ্জামানসহ বিভিন্ন দপ্তর প্রধানরা ছিলেন।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া নতুন রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’ বা এনসিপিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়েছেন।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি নিজেই এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, “আমরা যে লক্ষ্য নিয়ে রাজপথে লড়াই করেছি, সেই বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতির সংস্কার প্রয়োজন। এনসিপি সেই পরিবর্তনের লক্ষ্যেই কাজ করবে।”
এ সময় তিনি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সংস্কার কার্যক্রম এবং ভবিষ্যতে তার দলের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন।
এদিকে আসিফ মাহমুদ গতকাল পর্যন্তও সিদ্ধান্তহীন ছিলেন। এরই মধ্যে তিনি ঢাকা-১০ আসনে (ধানমন্ডি-নিউমার্কেট-কলাবাগান-হাজারীবাগ) মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। আজ বিকেল ৫টায় ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময়।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। গত বছরের ৫ আগস্ট তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে তিনি উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। এ বছরের ১০ ডিসেম্বর তিনি পদত্যাগ করেন এবং ১১ ডিসেম্বর তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে পদত্যাগ কার্যকর হয়।
দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে মাতৃভূমিতে ফেরার পর আজ প্রথমবারের মতো রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেলে তিনি সেখানে পৌঁছালে নেতাকর্মীদের মাঝে এক অভাবনীয় আবেগ ও উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। দীর্ঘ দেড় যুগ পর প্রিয় নেতার এই সশরীরে আগমন উপলক্ষে সকাল থেকেই নয়াপল্টন এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল।
নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে পৌঁছালে তারেক রহমানকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এবং কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত। এ সময় তাঁর সাথে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম, যুগ্ম-মহাসচিব হাবিবুননবী খান সোহেলসহ দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দেওয়া এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তারেক রহমান সাধারণ মানুষের সুবিধা ও শৃঙ্খলার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, “আজ এখানে কোনো আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি নেই। রাস্তা বন্ধ রাখলে সাধারণ মানুষের চলাফেরায় অনেক অসুবিধা হবে। তাই আমাদের উচিত হবে রাস্তাটি যত দ্রুত সম্ভব খুলে দেওয়া, যাতে মানুষ নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারে।” তাঁর এই সময়োপযোগী নির্দেশনার পর নেতাকর্মীরা রাস্তা ছেড়ে দিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে অবস্থান নেন।
দেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তারেক রহমান বলেন, “সবাই দোয়া করবেন। আমাদের যার যতটুকু অবস্থান আছে, সেখান থেকে আসুন আমরা দেশটাকে নতুন করে গড়ে তোলার চেষ্টা করি।” তিনি আরও জানান, ভবিষ্যতে যখন আনুষ্ঠানিক রাজনৈতিক কর্মসূচি দেওয়া হবে, তখন তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে বিস্তারিত বক্তব্য রাখবেন। প্রিয় নেতার এমন সাবলীল ও দায়িত্বশীল আচরণ নেতাকর্মীদের মাঝে নতুন প্রাণের সঞ্চার করেছে।
উল্লেখ্য, গত ২৫ ডিসেম্বর লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পর তারেক রহমান নিয়মিতভাবে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন। গতকাল তিনি গুলশান কার্যালয়ে দাপ্তরিক কাজ শুরু করেছিলেন এবং আজ নয়াপল্টনে দলের প্রধান সাংগঠনিক কেন্দ্রে উপস্থিত হওয়ার মাধ্যমে দলীয় কর্মকাণ্ডে পূর্ণাঙ্গভাবে সক্রিয় হলেন। তাঁর এই প্রত্যাবর্তনের ফলে বিএনপির তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সব পর্যায়ে নতুন রাজনৈতিক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। মূলত একটি সমৃদ্ধ ও নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়েই দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর নয়াপল্টনের এই ঐতিহাসিক কার্যালয়ে সশরীরে ফিরলেন তারেক রহমান।
চট্টগ্রামের প্রভাবশালী ও আলোচিত হেফাজত নেতা মাওলানা নাছির উদ্দীন মুনির জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ছেড়ে মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসে (প্রতীক: রিকশা) যোগ দিয়েছেন। আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে তিনি নিজেই বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। নাছির উদ্দীন মুনির আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী ও বায়েজিদ আংশিক) আসন থেকে সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আজ দুপুরে তিনি চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তাঁর মনোনয়নপত্র জমা দেন।
মাওলানা নাছির উদ্দীন মুনির হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব এবং ইতিপূর্বে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশেরও কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়াও তিনি হাটহাজারী উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। চট্টগ্রামের হাটহাজারীকে কেন্দ্র করে তাঁর ব্যাপক রাজনৈতিক ও ধর্মীয় প্রভাব রয়েছে। নির্বাচনে তিনি নবগঠিত ১০ দলীয় নির্বাচনী জোটের প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করবেন বলে জানা গেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপির সাথে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নির্বাচনি সমঝোতা এই দলবদলের প্রধান কারণ। সমঝোতা অনুযায়ী, সারাদেশে মাত্র চারটি আসনে জমিয়ত ‘খেজুর গাছ’ প্রতীকে প্রার্থী দিয়েছে এবং অন্য কোনো আসনে তাদের প্রার্থী না রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম-৫ আসনটি ওই চারটি আসনের অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় নাছির উদ্দীন মুনির জমিয়তের হয়ে নির্বাচনে লড়ার সুযোগ হারিয়েছিলেন। ফলে নিজের প্রার্থিতা নিশ্চিত করতে এবং বৃহত্তর পরিসরে কাজ করার লক্ষ্যে তিনি দল পরিবর্তনের এই সিদ্ধান্ত নেন।
এর আগে গত রবিবার এক ফেসবুক পোস্টে মাওলানা নাছির উদ্দীন মুনির জমিয়ত ছাড়ার আবেগঘন বার্তা দেন। তিনি লেখেন, দীর্ঘ সময় জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের হয়ে কাজ করা তাঁর জীবনের এক অমূল্য অর্জন। তবে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দেশ ও জাতির কল্যাণে আরও বৃহত্তর পরিসরে কাজ করার ইচ্ছায় তিনি শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক (রহ.) প্রতিষ্ঠিত এবং মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সাথে পথচলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি তাঁর এই নতুন যাত্রায় সহযোদ্ধা ও শুভানুধ্যায়ীদের দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেন।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম-৫ আসনে নাছির উদ্দীন মুনিরের বিপরীতে গত রবিবারই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন। একই আসনে এই দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর উপস্থিতি হাটহাজারী এলাকার নির্বাচনী লড়াইকে অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ও জমজমাট করে তুলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বর্তমানে প্রার্থীরা তাঁদের প্রচারণা এবং মাঠ পর্যায়ের কৌশল সাজাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)-র সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বীর বিক্রম জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন জোটে যোগদান করায় তাঁর তীব্র সমালোচনা করেছেন দলটির সদ্য সাবেক মহাসচিব ও বর্তমান বিএনপি নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. রেদোয়ান আহমেদ। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার এতবারপুরে নির্বাচনী গণসংযোগকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ক্ষমতার মোহে পড়ে খেতাবপ্রাপ্ত এই বীর মুক্তিযোদ্ধা তাঁর আজীবনের বীরত্ব ও রাজনৈতিক আদর্শ জলাঞ্জলি দিয়েছেন। ড. রেদওয়ানের মতে, সারা জীবন যিনি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী শক্তির তীব্র সমালোচনা করে এসেছেন, আজ সেই শক্তির সঙ্গেই নির্বাচনী জোট গঠন করা তাঁর সমস্ত রাজনৈতিক জীবনের নীতি ও আদর্শের পরিপন্থী।
সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, কর্নেল অলি জামায়াতের সাথে জোটবদ্ধ হতে পারেন—এমন খবর পেয়ে তিনি শুরু থেকেই এর কড়া বিরোধিতা করে আসছিলেন। তিনি অলি আহমেদকে এককভাবে নির্বাচনে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন, কিন্তু কর্নেল অলি তাঁর সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় তিনি দলের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেন। পরবর্তীতে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সম্মতিতে গত ২৪ ডিসেম্বর তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগদান করেন। ড. রেদোয়ান আক্ষেপ করে বলেন, দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করা এবং রাষ্ট্রীয় খেতাব পাওয়া একজন মানুষের পক্ষে দেশবিরোধী শক্তির সাথে জোট করা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং এটি তাঁর জাতীয়তাবাদী বিশ্বাসের সাথে এক ধরনের প্রতারণা।
গণসংযোগকালে ড. রেদোয়ানের সাথে জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী কাজী শাখাওয়াত হোসেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক নেতা মোফাজ্জল হোসেন বশিরসহ চান্দিনা উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা সবাই কর্নেল অলির এই রাজনৈতিক পরিবর্তনের নিন্দা জানান এবং আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। উল্লেখ্য, গত ২৮ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কর্নেল অলির নেতৃত্বাধীন এলডিপি জামায়াত-নেতৃত্বাধীন ১০ দলীয় জোটে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দেয়, যা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে দেশে ফেরার পর আজ প্রথমবারের মতো নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যাচ্ছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরের পর তিনি সেখানে পৌঁছাবেন বলে দলীয় সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাঁর এই আগমনকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টন এলাকা ও দলীয় কার্যালয়ে এক উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানিয়েছেন, আজ বিকেলের দিকে তারেক রহমানের নয়াপল্টন কার্যালয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। তাঁর আগমণ উপলক্ষে কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় একটি বিশেষ চেম্বার বা অফিস কক্ষ সুসজ্জিত করে প্রস্তুত করা হয়েছে, যেখান থেকে তিনি নিয়মিত দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। এর আগে গতকাল রবিবার তিনি গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সশরীরে উপস্থিত হয়ে দাপ্তরিক কাজ শুরু করেছিলেন এবং ঢাকা-১৭ ও বগুড়া-৬ আসনের মনোনয়নপত্রে স্বাক্ষর করেছিলেন। আজ নয়াপল্টনে যাওয়ার মাধ্যমে তিনি দীর্ঘ দেড় যুগ পর দলের মূল সাংগঠনিক কেন্দ্রে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিরছেন।
এদিকে, প্রিয় নেতাকে বরণ করে নিতে সকাল থেকেই নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক সমবেত হতে শুরু করেছেন। ব্যানার, ফেস্টুন আর মুহুর্মুহু স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা। তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ওই এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে কড়া নজরদারি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর নয়াপল্টনের কার্যালয়ে তারেক রহমানের এই সশরীরে উপস্থিতি বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের রাজনীতিতে এক নতুন উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছে। মূলত দলীয় কর্মকাণ্ডকে আরও গতিশীল করতেই তিনি আজ কেন্দ্রীয় কার্যালয় পরিদর্শনে যাচ্ছেন।
দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে গত ২৫ ডিসেম্বর পরিবারের সঙ্গে দেশে ফিরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তবে এই প্রত্যাবর্তনে রাজনীতির পাশাপাশি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে তাঁদের পরিবারের আদরের সাইবেরিয়ান বিড়াল ‘জেবু’। লন্ডন থেকে ঢাকায় পা রাখার পর থেকেই এই লোমশ বিড়ালটিকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক কৌতূহল তৈরি হয়েছে। সেই কৌতূহলের প্রেক্ষিতে আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে জেবুকে নিয়ে একটি বিস্তারিত ও আবেগঘন পোস্ট দিয়েছেন তারেক রহমানের কন্যা ব্যারিস্টার জাইমা রহমান।
জাইমা তাঁর পোস্টে উল্লেখ করেছেন যে, জেবুকে নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে এত আগ্রহ দেখে তিনি একইসাথে অবাক ও আনন্দিত। তিনি মনে করেন, যে কোনো প্রাণীকে লালন-পালন করা একটি বড় দায়িত্বের বিষয়, কারণ প্রাণীও মহান আল্লাহর সৃষ্টি। জেবুকে যখন ছোট ছানা হিসেবে তাঁদের লন্ডনের বাসায় আনা হয়েছিল, তখন তাঁরা কল্পনাও করতে পারেননি যে সে পরিবারের এত অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠবে। জাইমা কৌতুক করে জানান, অনেক সময় এমনও হয়েছে যে তাঁর বাবা-মা বাড়ি ফিরে আগে জেবুর খোঁজ নিয়েছেন, তারপর মেয়ের খবর নিয়েছেন। তাঁর মা ডা. জুবাইদা রহমান যখন বাগানে কাজ করতেন বা হাঁটতে বের হতেন, জেবু সারাক্ষণ তাঁর আশেপাশে ঘুরঘুর করত। এমনকি তারেক রহমানের দীর্ঘ অনলাইন মিটিংগুলোর সময়ও জেবু শান্ত হয়ে তাঁর কোলে বসে থাকত এবং আদর উপভোগ করত।
জাইমা রহমান তাঁর লেখায় একটি প্রাণীর জীবন পরিবর্তনের কষ্টের দিকটিও তুলে ধরেছেন। তিনি জানান, পোষা প্রাণী নিয়ে মহাদেশ পাড়ি দিয়ে নতুন পরিবেশে আসা অনেক কঠিন একটি কাজ। জেবুর মতো ছোট্ট একটি প্রাণের জন্য এই পরিবর্তনটি বেশ বড় এবং মানিয়ে নেওয়াটাও কষ্টকর, যা মানুষ সব সময় অনুভব করতে পারে না। তবে এই বিড়ালটির মাধ্যমেই তাঁদের পরিবারের সদস্যরা ধৈর্য এবং বড়-ছোট সব প্রাণীর প্রতি মমতা শিখতে পেরেছেন। জাইমার মতে, ভাষা এক না হলেও ভালোবাসা যে কোনো প্রজাতির সীমানা মানে না, জেবু তাঁদের সেটিই শিখিয়েছে।
পোস্টের শেষ অংশে জেবু সম্পর্কে বেশ কিছু মজার তথ্য দিয়েছেন জাইমা। তিনি জানান, জেবু আর দশটা সাধারণ বিড়ালের মতো কখনোই ‘মিউ মিউ’ করে ডাকে না। এমনকি ভুল করে আলমারিতে আটকে গেলেও সে শব্দ করে না। বরং জেবু যখন খুব খুশি হয় বা অবাক হয়, তখন সে পাখির মতো এক ধরনের নরম শব্দ করে ডাক দেয়। আবার যদি তার অনিচ্ছায় কেউ তাকে কোলে তুলে নেয়, তবে সে হালকা শব্দ করে বিরক্তি প্রকাশ করে। এ ছাড়াও যেসব বিড়ালকে সে পছন্দ করে না, তাদের দেখলে আবার বেশ জোরেই চিৎকার করে ওঠে। জাইমা রহমানের এই সহজ ও সাবলীল পোস্টটি মুহূর্তেই নেটিজেনদের নজর কেড়েছে এবং প্রিয় নেতার পরিবারের মানবিক এই দিকটি প্রশংসিত হচ্ছে। মূলত জেবুর মাধ্যমেই তারেক রহমানের পরিবারের ঘরোয়া ও সংবেদনশীল এক প্রতিচ্ছবি দেশবাসীর সামনে ফুটে উঠল।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সিলেট থেকেই তাঁর নির্বাচনী কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক শুভসূচনা করতে যাচ্ছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এই লক্ষে আগামী বৃহস্পতিবার তিনি তিন দিনের এক সাংগঠনিক সফরে সিলেট ও বগুড়া যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশে ফিরে ঢাকার বাইরে এটিই হবে তাঁর প্রথম রাজনৈতিক সফর।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সফরের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার তারেক রহমান সিলেটে পৌঁছাবেন। সেখানে তিনি আধ্যাত্মিক রাজধানী হিসেবে খ্যাত সিলেটের দুই পুণ্যভূমি হজরত শাহজালাল (রহ.) ও হজরত শাহপরাণ (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করবেন। সিলেটের সাথে তাঁর পারিবারিক সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়; কারণ এটি তাঁর শ্বশুরবাড়ির এলাকা। মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে বরকত নিয়ে তিনি মূলত তাঁর নির্বাচনী প্রচারণার প্রাথমিক ধাপ শুরু করবেন।
সফরের পরবর্তী অংশে তারেক রহমান তাঁর পৈতৃক নিবাস ও নিজের নির্বাচনী এলাকা বগুড়ায় যাবেন। এবার তিনি বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, ফলে সেখানে তাঁকে ঘিরে সাধারণ মানুষ ও নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। তিন দিনের এই ঝটিকা সফরে তিনি স্থানীয় নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় করবেন এবং নির্বাচনী কৌশল নিয়ে দিকনির্দেশনা দেবেন বলে জানা গেছে।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, তারেক রহমানের এই সরাসরি নির্বাচনী তৎপরতা সারা দেশের দলীয় কর্মীদের মাঝে নতুন প্রাণের সঞ্চার করবে। ইতোমধ্যে তাঁর এই সফরকে কেন্দ্র করে সিলেট ও বগুড়ায় সাজ সাজ রব পড়ে গেছে। নেতার আগমণকে স্মরণীয় করে রাখতে স্থানীয়ভাবে ব্যাপক প্রস্তুতির খবর পাওয়া যাচ্ছে। মূলত এই সফরের মাধ্যমেই ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের ডামাডোল পুরোদমে শুরু হতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অভ্যন্তরে চলমান পদত্যাগের মিছিলে যুক্ত হলেন মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নাতি এবং দলটির কৃষক উইংয়ের প্রধান সমন্বয়কারী আজাদ খান ভাসানী। জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন ১০ দলীয় জোটে এনসিপির অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গত রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক বার্তার মাধ্যমে তিনি দল থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
আজাদ খান ভাসানী তাঁর ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেন যে, অনেক আশা ও স্বপ্ন নিয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিট এবং নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষা থেকে তিনি এনসিপিতে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন মওলানা ভাসানীর দেখানো গণমানুষনির্ভর ও আধিপত্যবাদবিরোধী রাজনীতির চর্চা করতে। তবে বাস্তব অভিজ্ঞতায় তিনি দলটির মধ্যে নতুন বাংলাদেশ গড়ার ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতা এবং ত্যাগের গভীরতার স্পষ্ট ঘাটতি অনুভব করেছেন। তাঁর মতে, দলটি একটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক পরিচয় গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত সাফল্য দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে।
পদত্যাগের কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি আরও বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক মর্যাদা এবং মওলানা ভাসানীর রাজনৈতিক আদর্শ রক্ষা করাই তাঁর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই আদর্শের প্রতি অবিচল থাকতেই তিনি এনসিপির সঙ্গে সকল আনুষ্ঠানিক সম্পর্কচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি দলটির ভবিষ্যৎ পথচলার জন্য শুভকামনা জানিয়ে বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরেই দলের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত আদর্শিক জায়গা থেকেই এই প্রস্থান।
উল্লেখ্য, গত ৬ সেপ্টেম্বর আজাদ খান ভাসানীকে এনসিপির কৃষক উইংয়ের প্রস্তুতি কমিটির প্রধান সমন্বয়কারীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। জামায়াতের সঙ্গে জোট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকে এনসিপিতে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তাতে ডা. তাসনিম জারা, ডা. তাজনূভা জাবীন, নুসরাত তাবাসসুম এবং মীর আরশাদুল হকের মতো শীর্ষস্থানীয় নেতাদের পর আজাদ খান ভাসানীর পদত্যাগ দলটির জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। নির্বাচনের ঠিক আগমুহূর্তে এমন ধারাবাহিক পদত্যাগ দলটির ভেতরের আদর্শিক সংকটকে আরও প্রকট করে তুলল। মূলত জুলাইয়ের স্পিরিট নিয়ে কাজ করা একঝাঁক নেতা এখন দলটির নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছেন।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক মনজিলা ঝুমা। খাগড়াছড়ি-২৯৮ আসনে দলটির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ‘শাপলা কলি’ প্রতীকে তাঁর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ছিল। গত রবিবার দিবাগত রাত ২টা ১৭ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে এক বার্তার মাধ্যমে তিনি এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। ঝুমা উল্লেখ করেন যে, তিনি ইতিমধ্যে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে তাঁর এই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা বিস্তারিত অবহিত করেছেন।
ফেসবুক পোস্টে মনজিলা ঝুমা জানান, গত ২৪ ডিসেম্বর তাঁর পক্ষে খাগড়াছড়ি জেলার আহ্বায়ক সংশ্লিষ্ট মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন এবং আজ সোমবার ছিল তা জমা দেওয়ার শেষ দিন। তবে সব দিক বিবেচনা করে তিনি শেষ মুহূর্তে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নির্বাচনে না লড়লেও তরুণ প্রজন্মের ওপর আস্থা প্রকাশ করে তিনি লিখেছেন যে, দেশের তরুণরা আজ না হয় কাল অবশ্যই সংসদে গিয়ে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করবে।
উল্লেখ্য, জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন ১০ দলীয় জোটে এনসিপির অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে দলটির অভ্যন্তরে বর্তমানে চরম অস্থিরতা ও আদর্শিক বিভক্তি দেখা দিয়েছে। এই জোট গঠনের প্রতিবাদে গত কয়েক দিনে এনসিপি থেকে পদত্যাগের এক নজিরবিহীন হিড়িক পড়েছে। ইতিমধ্যে দলটির প্রভাবশালী নেতা ডা. তাসনিম জারা, ডা. তাজনূভা জাবীন, খালেদ সাইফুল্লাহ এবং ফেনী-৩ আসনের মনোনীত প্রার্থী আবুল কাশেম দল ছেড়েছেন। সর্বশেষ এনসিপির কৃষক উইংয়ের প্রধান সমন্বয়কারী ও মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নাতি আজাদ খান ভাসানীও ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে দলত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। মনজিলা ঝুমার এই সরে দাঁড়ানোর ফলে এনসিপির নির্বাচনী প্রস্তুতি ও সাংগঠনিক কাঠামো আরও বড় ধরনের সংকটের মুখে পড়ল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। মূলত নতুন রাজনৈতিক ধারার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাত্রা শুরু করা দলটিতে এখন শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অভ্যন্তরে চলমান অস্থিরতা ও অসন্তোষের মিছিলে যুক্ত হলেন দলটির অন্যতম প্রভাবশালী নেত্রী ও যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম। জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন ১০ দলীয় জোটে এনসিপির অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে তিনি নির্বাচনকালীন সময়ে দলের সকল কার্যক্রম থেকে নিজেকে ‘নিষ্ক্রিয়’ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। গত রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) রাত ১১টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এক দীর্ঘ বার্তার মাধ্যমে তিনি তাঁর এই কঠিন সিদ্ধান্তের কথা জানান।
নুসরাত তাবাসসুম তাঁর পোস্টে এনসিপির জন্মলগ্নের প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, দলটি শুরুতে গণতন্ত্রের সুষম চর্চা, নয়া বন্দোবস্ত, মধ্যপন্থা এবং ‘বাংলাদেশপন্থা’র মতো যে স্বপ্নের কথা বলেছিল, তা তিনি মনে-প্রাণে ধারণ করেন। এনসিপির ঘোষণাপত্র ও লিটারেচার তাঁকে এক নতুন রাজনীতির স্বপ্ন দেখিয়েছিল। কিন্তু প্রতিষ্ঠার মাত্র ১০ মাসের মাথায় জামায়াতে ইসলামীসহ ১০ দলীয় জোটে যোগ দিয়ে এনসিপির শীর্ষ নেতৃত্ব ও নীতিনির্ধারকেরা দলের মূল আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়েছেন বলে তিনি মনে করেন।
তিনি অভিযোগ করেন, এনসিপির আহ্বায়কসহ শীর্ষ দায়িত্বশীলরা বিভিন্ন সময়ে এককভাবে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে জোটের সিদ্ধান্তে গিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মী এবং যারা বুকভরা আশা নিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন, তাঁদের সাথে ‘প্রবঞ্চনা’ করা হয়েছে। এ ধরনের নীতিহীন সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয় বলেই তিনি প্রাথমিকভাবে নির্বাচনকালীন সময়ে পার্টির সকল দায়িত্ব থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। নুসরাত আরও জানান, বর্তমান পরিস্থিতি পুনর্বিবেচনা করে খুব শীঘ্রই তিনি তাঁর চূড়ান্ত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবেন।
উল্লেখ্য, নুসরাত তাবাসসুম আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার লক্ষে গত ১৩ নভেম্বর দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। তবে গত ১০ ডিসেম্বর এনসিপির পক্ষ থেকে যে ১২৫ জন প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করা হয়, তাতে তাঁর নাম ছিল না। মনোনয়নপত্র না পাওয়া এবং পরবর্তীতে জামায়াতের সাথে জোট গঠনের প্রক্রিয়া—সব মিলিয়ে দলটির নেতৃত্বের প্রতি গভীর অনাস্থা প্রকাশ করলেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এই সম্মুখসারির নেত্রী। এর আগে ডা. তাসনিম জারা, ডা. তাজনূভা জাবীন এবং মীর আরশাদুল হকের মতো শীর্ষ নেতাদের পদত্যাগের পর নুসরাতের এই ‘নিষ্ক্রিয়তা’ ঘোষণা এনসিপিকে এক বড় ধরনের সাংগঠনিক সংকটের মুখে ঠেলে দিল। মূলত নতুন ধারার রাজনীতির প্রতিশ্রুতি দেওয়া দলটিতে এখন আদর্শিক মেরুকরণ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
দেশের রাজনীতির গতিপথ দীর্ঘদিন ধরেই হাঁটছিল গভীর সংকট ও স্থবিরতার পথে; গণতন্ত্র, নির্বাচন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক সহনশীলতা নিয়ে বাড়ছিল প্রশ্ন,ছিল অনিশ্চয়তাও। এই অবস্থার মধ্যেই তারেক রহমান ফিরলেন রাজার বেশে, স্বদেশে; খালি পায়ে হাঁটলেন, হাতে তুলে স্পর্শ করলেন প্রিয় মাতৃভুমির মাটি। তার এই রাজসিক প্রত্যাবর্তনে রাজনীতির অলস বাঁক বদলে সূচিত হলো হলো এক নতুন ধারা; সঞ্চার হলো নতুন আশার। গণতান্ত্রিক রাজনীতির সূচনালগ্নে দাঁড়াল বাংলাদেশ।
গত বৃহস্পতিবার তার ফিরে আসার দিনটিতে রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড থেকে শুরু করে ৩০০ ফিট পর্যন্ত পুরো এলাকা ছিল উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু। ছয় হাজার তিনশ’১৪ দিন পর। বছরের হিসেবে ১৭ বছর ৩ মাস পর রক্তেভেজা জমিনে ফিরলেন তারেক রহমান। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা তার এই প্রত্যাবর্তনকে শুধু একজন নেতার দেশে ফেরা নয়;বরং রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হিসেবে দেখছেন। কারণ, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে শেখ মুজিবুর রহমান এবং গণঅভ্যুত্থানে ভারতে পালিয়ে যাওয়া মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে জনসমাগমের নজির ছিল। কিন্তু ২৫ ডিসেম্বর সেই রেকর্ড ভেঙে স্বাধীনতার পর নয়া ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ৪০-৫০ লাখ মানুষ ঢাকায় এসেছে। শুধু দলীয় নেতাকর্মী নয়, বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ এই মজলুম নেতাকে দেখার জন্য রাজপথে নেমে আসেন। দিয়েছেন সর্বকালের রাজসিক অবিস্মরণীয় সংবর্ধনা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আরো বলছেন, ১৭ বছরের বেশি সময় দেশের বাইরে থাকলেও তারেক রহমান সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশের মনোজগৎ বুঝতে পেরেছেন। তিনি গণসংববর্ধনার জবাবে রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য দিয়েছেন। তার বক্তব্য নিয়ে কোনো সমালোচনা না হওয়ায় দেশবাসীও নতুন করে উজ্জ্বীবিত হয়েছে।
দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন ছিল রাজকীয় ও অভূতপূর্ব। দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে খুব কম নেতার পক্ষেই এমন স্বতঃস্ফূর্ত জনসমর্থন ও গণঅভ্যর্থনা পাওয়া সম্ভব হয়েছে। তরুণ ও সম্ভাবনাময় নেতৃত্ব হিসেবে তারেক রহমানকে আজ দেশের মানুষ শুধু নয়, বিশ্ব গণমাধ্যমও বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখছে।
রাজনৈতিক আকাশে সুবাতাস বইতে শুরু করেছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরা শুধু একটি ব্যক্তিগত প্রত্যাবর্তন নয়; এটি দেশের রাজনীতিতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা। এর মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও জনগণের প্রত্যাশা বাস্তবায়নের পথ আরও সুগম হবে।
উজ্জীবত তৃণমূলের নেতারা: দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির প্রধান নেতৃত্বের বাংলাদেশে সরাসরি অনুপস্থিতিজনিত যে শূন্যতা তৃণমূলে অনুভূত হচ্ছিল, তারেক রহমানের দেশে ফেরার মধ্য দিয়ে সেটি কেটে গেছে। তারা নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেছেন।
জাতীয় নির্বাচনে দৃষ্টি নেতাকর্মীদের: তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন বিএনপির ভেতরে নতুন করে গতি এনেছে। মাঠপর্যায়ে নেতা-কর্মীদের সক্রিয়তা বেড়েছে অনেক গুন। ভোটের প্রচারেও যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। দলটির এখন নজর শুধু জাতীয় নির্বাচনের দিকে।
আসন চূড়ান্ত করে মাঠে নামবে বিএনপি: এদিকে, মনোনয়নপত্র দাখিল করাসহ কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেই নির্বাচনের পূর্ণ প্রস্তুতিতে মনোযোগ দেবেন তারেক রহমান। এরপর দলীয় এবং সমমনা প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারে তার যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
তারেক রহমানের নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার ডাক: দেশে ফেরার পর রাজধানীর পূর্বাচলে গণসংবর্ধনায় দেওয়া বক্তব্যে তারেক রহমান বলেছেন, আমরা নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। যে বাংলাদেশে একজন নারী, পুরুষ, শিশু যেই হোক না কেন নিরাপদে ঘর থেকে বের হলে, যেন নিরাপদে ফিরতে পারে। আমাদের সময় এসেছে সকলে মিলে দেশ গড়ার।
দেশের জন্য তারেক রহমানের পরিকল্পনা: গণসংবর্ধনায় ‘আই হ্যাভ অ্যা প্ল্যান ফর দ্য পিপল, ফর দ্য কান্ট্রি’ বলে বিশেষ উক্তি করেন তারেক রহমান, যা ইতোমধ্যে সারাদেশে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। দেশের মানুষের জন্য, দেশের জন্য তার সেই প্ল্যান (পরিকল্পনা) বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতাও চেয়েছেন তিনি। এই পরিকল্পনায় সরাসরি সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নের বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। যেমন সবার জন্য স্বাস্থ্য কার্ড চালু করে স্বল্প ও বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা, কৃষকদের জন্য কৃষি কার্ড প্রবর্তনের মাধ্যমে সার-বীজ-সহায়তা সহজ করা এবং ন্যায্যমূল্যে ফসল বিক্রির নিশ্চয়তা। পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সম্প্রসারণের প্রতিশ্রুতিও রয়েছে।
বিএনপির নেতারা বলছেন, এই পরিকল্পনার লক্ষ্য হলো- রাষ্ট্র পরিচালনায় কাঠামোগত সংস্কার, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং জনজীবনের মৌলিক সংকট মোকাবিলা। নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় একাধিক অনুষ্ঠানে ইতোমধ্যে তারেক রহমান জনকল্যাণকেন্দ্রিক আট দফা পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন। এসব দফা শুধু নির্বাচনী অঙ্গীকার নয়, বরং ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র পরিচালনার রূপরেখা। নির্বাচনী মাঠে তারেক রহমানের এই পরিকল্পনা তারা ভোটারদের কাছে তুলে ধরবেন।
সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম ছাত্র প্রতিনিধি মাহফুজ আলম জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপি) যোগ না দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। আজ রোববার (২৮ ডিসেম্বর) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে এক দীর্ঘ পোস্টের মাধ্যমে তিনি এই তথ্য নিশ্চিত করেন। মাহফুজ আলম জানান, জামায়াত-এনসিপি জোটের পক্ষ থেকে তাঁকে ঢাকার একটি আসনে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তিনি সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেননি। তাঁর মতে, কোনো সুনির্দিষ্ট আসনে জোটের প্রার্থী হওয়ার চেয়ে নিজের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অবস্থান ও নীতিতে অটল থাকাই এই মুহূর্তে অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
মাহফুজ আলম তাঁর পোস্টে উল্লেখ করেন যে, জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং এনসিপি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারির নেতৃত্বে সংগঠিত হয়েছিল। এই সংগঠন দুটির নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে গত দেড় বছর তিনি নিয়মিত পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করেছেন। তিনি সবসময়ই এনসিপি-কে জুলাইয়ের একটি বড় ছাতা বা ‘বিগ জুলাই আমব্রেলা’ হিসেবে স্বতন্ত্রভাবে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছেন, যাতে এটি কোনো বিশেষ দলের অনুগামী না হয়ে একটি স্বাধীন শক্তি হিসেবে বিকশিত হতে পারে। তবে তাঁর সেই প্রচেষ্টা অনেক কারণেই সফল হয়নি বলে তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করেন।
নিজের রাজনৈতিক আদর্শের কথা পুনর্ব্যক্ত করে মাহফুজ আলম বলেন, তিনি একটি নতুন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বন্দোবস্ত, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক লড়াই এবং একটি মানবিক ও দায়-দরদের সমাজ গঠনে বিশ্বাসী। তিনি মনে করেন, জুলাইয়ের সহযোদ্ধারা তাঁর এই নীতিগুলো নিয়ে জনসমক্ষে কথা বললেও বাস্তবে তাঁরা সেগুলো কতটা লালন বা ধারণ করেন, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বর্তমান সময়কে বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি ‘শীতল যুদ্ধ’ হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, এই সংকটময় সময়ে কোনো বিশেষ পক্ষের অংশ না হয়ে নিজেদের মৌলিক নীতিতে অটল থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ।
বিকল্প তরুণ শক্তির সম্ভাবনা এখনো শেষ হয়ে যায়নি উল্লেখ করে মাহফুজ আলম ভবিষ্যতে একটি মধ্যপন্থী ও শক্তিশালী ‘জুলাই শক্তি’র উত্থান অত্যাসন্ন বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেন। তিনি তাঁর নীতি ও আদর্শে বিশ্বাসী সাধারণ মানুষকে তাঁর এই দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লড়াইয়ে শামিল হওয়ার আহ্বান জানান। মূলত জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে এনসিপির জোটবদ্ধ হওয়া এবং দলটির ভেতরকার সাম্প্রতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে মাহফুজ আলমের এই অবস্থান জুলাইয়ের স্পিরিট নিয়ে কাজ করা তরুণদের মাঝে নতুন এক মেরুকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তাঁর এই ঘোষণা এনসিপির বর্তমান নেতৃত্বের জন্য এক বড় ধাক্কা হিসেবেই দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষ নেতৃত্বে পদত্যাগের ধারা আরও দীর্ঘ হলো। দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারার পথ ধরে এবার এনসিপি থেকে পদত্যাগ করেছেন তাঁর স্বামী ও দলের অন্যতম যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ। আজ রোববার (২৮ ডিসেম্বর) তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দল ছাড়ার ঘোষণা দেন। এর ফলে নির্বাচনের ঠিক আগমুহূর্তে এনসিপির অভ্যন্তরীণ সংকট আরও প্রকট হয়ে উঠল।
খালেদ সাইফুল্লাহর পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানানো হয়েছে যে, তিনি মূলত ‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখিয়ে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তাঁর স্ত্রী ডা. তাসনিম জারার দল ত্যাগের সিদ্ধান্তের রেশ ধরেই তিনি এই পদক্ষেপ নিয়েছেন। এর আগে গতকাল শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) ডা. তাসনিম জারা এক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে এনসিপি থেকে পদত্যাগ করার পাশাপাশি ঢাকা-৯ (সবুজবাগ, খিলগাঁও, মুগদা ও মান্ডা) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
তাসনিম জারা তাঁর বিবৃতিতে জানিয়েছিলেন, একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম থেকে জনগণের সেবা করার ইচ্ছা থাকলেও বর্তমানের ‘বাস্তবিক প্রেক্ষাপট’ ও নীতিগত অবস্থানের কারণে তিনি কোনো নির্দিষ্ট দল বা জোটের হয়ে লড়তে চাচ্ছেন না। নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ার প্রতিশ্রুতি রক্ষায় তিনি এখন সাধারণ মানুষের সমর্থন নিয়ে স্বতন্ত্রভাবেই নির্বাচনে অংশ নেবেন। স্ত্রীর এই ঘোষণার মাত্র এক দিন পর খালেদ সাইফুল্লাহর পদত্যাগ দলটির ভেতরে থাকা অস্থিরতা ও নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থার বিষয়টিকেই আরও জোরালোভাবে সামনে নিয়ে এল।
উল্লেখ্য যে, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আসন সমঝোতা ও জোট গঠন নিয়ে এনসিপির অভ্যন্তরে গত কয়েক দিন ধরেই তীব্র মতবিরোধ চলছিল। এই জোটের প্রতিবাদে মীর আরশাদুল হক, তাজনূভা জাবীন এবং আবুল কাশেমের মতো শীর্ষ নেতারা ইতিমধ্যে পদত্যাগ করেছেন। সেই তালিকায় এবার তাসনিম জারা ও খালেদ সাইফুল্লাহর নাম যুক্ত হওয়ায় এনসিপির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এক বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময়ের ঠিক আগমুহূর্তে এমন ধারাবাহিক পদত্যাগ দলটির নির্বাচনী সমীকরণকে আমূল বদলে দিতে পারে।