জুলাই-আগস্ট গণহত্যায় ১৩ আগস্ট পর্যন্ত সমগ্র দেশে শহীদ হয়েছেন ৮৭৫ জন মানুষ। যার মধ্যে কমপক্ষে ৪২২ জন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ রোববার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন। ‘গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের পথযাত্রায় বিএনপির ভূমিকা, অবদান ও প্রত্যাশা’ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
ফখরুল বলেন, আজ আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের জনগণকে বারবার ত্যাগ শিকার করতে হয়েছে, রক্ত দিতে হয়েছে। এ দেশের স্বাধীনতাকে যখনই গ্রাস করেছে স্বৈরতন্ত্র, প্রতিবার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। বাকশালের পর বহুদলীয় গণতন্ত্র ও স্বৈরশাসনের পর সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে, দেশের মানুষের অধিকার ও মর্যাদা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী খালেদা জিয়া। সেই ধারাবাহিকতায়, ১৬ বছরের স্বৈরাচারী দুঃশাসনকে চূর্ণ করে গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের জনগণ আবারও মুক্তির স্বাদ পায়, গণতন্ত্রের পথ সুগম করে। অসংখ্য ব্যক্তি ও পরিবার রয়েছে, যাদের বছরের পর বছর ধরে ত্যাগের মহিমায় আমরা ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ পেয়েছি।
তিনি বলেন, বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুলাই গণহত্যায় ১৩ আগস্ট পর্যন্ত সমগ্র বাংলাদেশে শহীদ হন ৮৭৫ জন মানুষ, যার মধ্যে কমপক্ষে ৪২২ জন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। দেশজুড়ে শহীদ সব শ্রেণি-পেশা-রাজনীতির মানুষগুলোর এ বিশাল অংশ যে বিএনপিরই নেতা-কর্মী, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; বরং আমাদের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের অনিবার্য ফল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, পোশাক শ্রমিক কিংবা রিকশাচালক, পাবলিক কিংবা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র; বাম কিংবা ডান আদর্শের অনুসারী; সব মত ও পথের রাজনৈতিক কিংবা অরাজনৈতিক ব্যক্তি হতাহতের পরিচয় যাই হোক না কেন, প্রতিটি প্রাণের মূল্য ও রক্তের মর্যাদা সমান। আর তাই সমান গুরুত্বের সঙ্গেই প্রণয়ন করতে হবে প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের তালিকা। নিশ্চিত করতে হবে সুবিচার। শেখ হাসিনার পদত্যাগের জন্য যে জাতীয় ঐক্য আমরা দেখতে পাই, তা কিন্তু হঠাৎ করে গড়ে ওঠেনি। এটি মূলত অবৈধ সরকারের অত্যাচার-অবিচার, দুর্নীতি-দুঃশাসন, বঞ্চনা-অবজ্ঞা এবং শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।
তিনি বলেন, দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে গণঅভ্যুত্থানে সর্বশক্তি দিয়ে রাজপথে নেমে আসে বিএনপি এবং এর সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। যাতে গণআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে। আন্দোলনের কৃতিত্ব নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল নয়, বিএনপির উদ্দেশ্য ছিল সর্বস্তরের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের অংশগ্রহণে গণঅভ্যুত্থানে সাংগঠনিকভাবে সর্বোচ্চ ভূমিকা রেখে ফ্যাসিবাদের পতনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা। আর তাই বিএনপির যে ৬০ লাখ সদস্যের নামে ফ্যাসিবাদের সময় মিথ্যা মামলা হয়েছে, তার সুবিশাল অংশ সাধারণ মানুষের পাশে থেকে, রাষ্ট্রযন্ত্রের যড়যন্ত্র ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে ঢাল হয়ে রুখে দাঁড়ায়। ফলে যার-যার অবস্থান থেকে জনগণের কাতারে নেমে আসে বিএনপি ও সমমনা সব রাজনৈতিক দল, তথা গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তিসমূহ।
মির্জা ফখরুল বলেন, ১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে নির্মমভাবে হত্যা করে পুলিশ। একই দিন চট্টগ্রামে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক ওয়াসিম আকরামকেও হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডগুলোতে সমগ্র বাংলাদেশ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে, বেগবান হয় আন্দোলন। বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে ১৬ বছর ধরে আওযামী লীগের বিচারবহির্ভূত হত্যা, গায়েবি মামলা ও নৃশংস নিপীড়ন দেশের অভ্যন্তরে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এর ফলস্বরূপ জাতিসংঘসহ স্বীকৃত মানবাধিকার সংস্থা ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হতে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা ও ভিসা নীতির মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে চাপ বাড়ায়। তৃণমূলের স্পন্দন ও গণমানুষের নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে, অবিরাম জুলুম-অবিচারের মাঝেও বিএনপির নেতা-কর্মীরা মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য অবিচল সংগ্রাম চালিয়ে যেতে থাকে। সেই অভীষ্ট লক্ষ্যে, রাজনৈতিক নেতৃত্বের অবদানে গড়ে ওঠা দীর্ঘদিনের ঐক্যকে ধারণ করে গণতন্ত্রের পক্ষের সব শক্তির বলিষ্ঠ ভূমিকায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটে। বাংলাদেশের জনগণের এ বিজয় শুধুই দেশের মালিকানা ফিরে পাওয়ার বিষয় নয়। বরং এটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার প্রতিশ্রুতি, যা অসীম ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত।
তিনি বলেন, বিজয়ের পেছনে রয়েছে অসংখ্য নির্যাতিত মানুষের বেদনার অপ্রকাশিত ইতিহাস, গুম হওয়া ছেলের ফেরার প্রতীক্ষায় ব্যথাতুর মায়ের ডাক, স্বামী হারানো বেদনাবিধূর স্ত্রীর অনন্ত আর্তনাদ, পঙ্গু বাবার জন্য সন্তানের হৃদয়বিদারক হাহাকার, আর কারাগারে বন্দী ভাইয়ের জন্য বোনের নীরব প্রার্থনা। তাদের সবার ১৬ বছরের রক্ত, শ্রম ও অশ্রু দিয়ে প্রতিটি পরিবারের ক্ষোভ, ক্রোধ ও অব্যক্ত বিস্ফোরণ বুকে ধারণ করে চলমান ছিল শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই। বস্তুত ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানে শহীদ ৪২২ জন, ২০২৩ সাল পর্যন্ত শহীদ এক হাজার ৫৫১ জন, গুম ৪২৩ জন (সব রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষ মিলিয়ে প্রায় ৭০০ জন), আসামি ৬০ লাখ, এবং মামলা দেড় লাখ—এসব কেবল বিএনপির ত্যাগের পরিসংখ্যানই নয়, বরং বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জনের পথে দলটির অবিচল সংগ্রাম ও অবদানের প্রতিফলন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, যারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে যুক্ত ছিল, গণতান্ত্রিক প্রতিটি ব্যক্তি, দল, সংগঠন ও গোষ্ঠী- তাদের সবার আত্মত্যাগের যথাযথ স্বীকৃতি না দিলে তা হবে ইতিহাসের প্রতি অবিচার। সব শ্রেণি-পেশা-মতের মানুষের অংশগ্রহণকে সম্মান জানিয়ে জনগণের লুণ্ঠিত ভোটাধিকার ফিরিয়ে এনে একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাই আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। সেই পথযাত্রায় ও রাষ্ট্র সংস্কারে বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়ন করে গড়ে তুলতে হবে একটি নিরাপদ ও মেধাভিত্তিক বাংলাদেশ, যেখানে প্রতিফলন ঘটবে জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশার।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ।
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতন হলেও তার বিদেশি মুরুব্বি যারা আছে, তারা এ দেশের গার্মেন্টস শিল্প নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন বলে জানিয়েছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তারা দেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করতে চায় বলেও এ সময় তিনি উল্লেখ করেন।
আজ শুক্রবার গাজীপুর শহরের জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে গণসংহতি আন্দোলন আয়োজিত ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হোন’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘ষড়যন্ত্রকারীরা আন্দোলনের নামে শ্রমিকদের উসকে দিয়ে শিল্পক্ষেত্রে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। তবে আমাদের শ্রমিক ভাইদের ন্যায্য দাবি-দাওয়া মালিকদের মানতে হবে। তাদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গার্মেন্টস যেন বন্ধ হয়ে না যায়, সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ কারখানা বন্ধ হলে শ্রমিকরাই তাদের চাকরি হারাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যারা শহীদ ও আহত হয়েছেন, তাদের প্রত্যেকের পরিবারকে সম্মানজনক স্থানে রাখতে হবে। তারা আমাদের অহংকার, মর্যাদার এবং সম্মানের পাত্র। তাদের পরিবারের দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। তাদের প্রতিটি পরিবার থেকে অন্তত একজনকে সরকারি চাকরি দিতে হবে, যাতে কারও কাছে তাদের মাথা নত হয়ে থাকতে না হয়।’
জেলা গণসংহতি আন্দোলনের আহ্বায়ক আমজাদ হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য মনির উদ্দীন পাপ্পু, কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দীপক রায় প্রমুখ। সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের মধ্যে ১২ জন শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহতদের বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত আগস্টের প্রথম সপ্তাহে পতন হয়েছে শেখ হাসিনার সরকারের। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে গেছেন শেখ হাসিনা। এখন সেদেশেই আশ্রয়ে আছেন। তার সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের রাজনীতি, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটসহ বিভিন্ন ইস্যুতে গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময় কথা বলেছেন শেখ হাসিনার ছেলে ও সাবেক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
এবার তিনি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন প্রভাবশালী মার্কিন সাময়িকী টাইমকে। যেখানে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা হতাশ। এমনকি তিনি সামনে সংসদ নির্বাচন হলে সেখানে অংশ নিতে ফিরবেন কি না, সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়নি।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এ সরকার নির্বাচন ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা জয় বলেন, তার মা (শেখ হাসিনা) দেশের পরিস্থিতিতে খুবই হতাশ। কারণ, তার গত ১৫ বছরের সব পরিশ্রম প্রায় বিফলে যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের নেতাদের বিরুদ্ধে আছে ‘গণহত্যা’ ও ‘মানবতাবিরোধী অপরাধে’র অভিযোগ। এসব অভিযোগ প্রমাণিত হলে দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছেন অনেকে।
এমন দাবি জয়ের কাছে ‘উপহাস’ মনে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরোনো ও সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলকে আপনি কীভাবে নিষিদ্ধ করবেন? এটি আইনিভাবে সম্ভব নয়।’
রাষ্ট্রীয় অর্থ লুটপাটের দায়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অসন্তোষ বাড়ছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বিশ্লেষণ অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির তথ্য বলছে, হাসিনার গত ১৫ বছরের শাসনামলে প্রভাবশালী ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীরা প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করেছেন।
গত সোমবার বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট জয়ের স্থানীয় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্থগিত করে। তবে তিনি সব দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘কোথায় টাকা, আমাদের দেখান। অভিযোগ তোলা সহজ।’
শেখ হাসিনা পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নিতে (দেশে) ফিরবেন কি না, এ প্রসঙ্গে জয় বলছেন, সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
জয় বলেন, যদি পরিস্থিতির ‘দৃশ্যমান উন্নতি না দেখা যায়’ তবে লোকজন ধৈর্য হারাবে। তিনি সেই অপেক্ষায় রয়েছেন। চলমান পরিস্থিতিকে ‘অস্থিতিশীল’ উল্লেখ করে হাসিনাপুত্র বলেন, তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) যদি এক বছর বা ১৮ মাস দেশ চালায়, তাহলে ঠিক আছে।
নিজের রাজনীতিতে আসার প্রশ্নে জয় বলেন, ‘আমার কখনো রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল না। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায়, কে জানে? আমি এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি।’
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, জাতির সঙ্গে গাদ্দারি করলে, তাদের সেবক হয়ে মালিক বনে গেলে কী পরিণতি হয় তা থেকে আমি-আমরা এবং জাতিকে শিক্ষাগ্রহণ করতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি আর কোনো স্বৈরাচার সরকার আসবেনা যারা ক্ষমতায় থাকাবস্থায় জনগণকে তাদের কেনা টাকায় বুলেট ছোড়ার দুঃসাহস করবে। এমন কোনো নতুন সন্ত্রাসী সরকারকে আর দেখতে চাইনা।
আজ শুক্রবার সকালে গাজীপুরে ছাত্র আন্দোলনে নিহত শহিদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে জামায়াত আমির শহিদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন এবং তাদের খোঁজ খবর নেন।
‘যত বিভাজন, তা আমরা পায়ের নিচে ফেলে দিয়েছি’ উল্লেখ করে জামায়াতের আমির বলেন, দল ও ধর্মের ভিত্তিতে আর কোনো বিভাজন জামায়াতে ইসলামী মানবে না। রাজনীতিতে কোনো ব্রাহ্মণ নীতি চলবেনা। দেশের স্বার্থে আমাদের কোনো বিভাজন নেই। আর কাউকে জাতিকে ভাগ করার সুযোগ দেব না। জাতিকে তারাই ভাগ করে যারা দেশের দুশমন। দলের ভিত্তিতে, ধর্মের ভিত্তিতে আর ভাগ করার সুযোগ দেওয়া হবে না। এক্ষেত্রে আমরা আপোষহীন।
শফিকুর রহমান বলেন, কোনো দুর্বৃত্তকে আদালতের চেয়ারে আর দেখতে চাই না। যারা বিচারের আমানত রক্ষা করতে পারবে তাদের বিচারক হিসেবে চাই। যারা মুখের দিকে তাকিয়ে কোনো বিচার করবে না। নীতি-নৈতিকতা ও সাক্ষীর ওপর ভিত্তি করে রায় দেবেন। বিচার বিভাগ স্বাধীন থাকতে হবে। সাক্ষী প্রমাণের ভিত্তিতে বিচার হতে হবে সঠিক।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের স্বীকৃতি দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা দলীয় ভিত্তিতে শহিদদের বিভক্তি চাইনা। তারা আমাদের মর্যাদার পাত্র। পাঠ্যপুস্তক কারিকুলামে আগামী দিনের নাগরিকরা যেন জানে তাদের মুগ্ধ, সাঈদ, রিয়ারা ছিল।’ এসময় তিনি প্রত্যেক শহিদ পরিবারের একজন সদস্যকে সরকারি চাকরি দেওয়ার দাবি জানান।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন মহানগর জামায়াতের আমির অধ্যাপক মুহা. জামাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ ইজ্জত উল্লাহ, মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমীর খায়রুল হাসান, সহকারী সেক্রেটারি হোসেন আলী, মজলিসের শূরা সদস্য আফজাল হোসেন, প্রচার সম্পাদক সালাউদ্দিন আইয়ুবী প্রমুখ।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেও তার ষড়যন্ত্র রয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি।
আজ শুক্রবার লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বাংগাখাঁ ইউনিয়নের আমান উল্যাহপুর আয়েশা দাখিল মাদ্রাসায় বন্যার্ত মানুষের ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এ্যানি বলেন, পালিয়ে গেলেও তার (শেখ হাসিনা) ষড়যন্ত্র রয়ে গেছে। ভারতে বসে সে দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। ষড়যন্ত্রের পেছনে রয়েছে দেশ থেকে পাচার করা কোটি কোটি টাকা। ওইসব টাকা দিয়ে ষড়যন্ত্র করছে স্বৈরাচার হাসিনা ও তার দোসররা। সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। কোনো ষড়যন্ত্রেই কাজে আসবেনা। এদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ রয়েছে।
এ্যানি আরও বলেন, স্বৈরাচারদের বিচার না হলে এদেশের গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়বে। গত ১৭ বছর ধরে গণতন্ত্র ও দেশের মানুষের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করছে বিএনপি। এসময় বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী হামলা-মামলা, গুম ও খুনের শিকার হয়েছেন। যারা এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত, তাদের গ্রেপ্তার ও বিচার করতে হবে। স্বৈরাচারদের বিচার না হলে এই দেশে গণতন্ত্র থাকবেনা। গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়বে। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি, দেশের মানুষের পক্ষে যেমন কাজ করতে হবে, তেমনি হায়েনা ও খুনি স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আরও বলেন, বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। ত্রাণ থেকে শুরু করে এখন ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা ও ঔষধ বিতরণ করা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে, যাতে দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। যে লড়াইয়ে আমরা অবতীর্ণ হয়েছিলাম সেই গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার আদায়ের লড়াই এখনো শেষ হয়নি।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাহাবুদ্দিন সাবু, বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট হাসিবুর রহমান, অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমান, মাইন উদ্দিন চৌধুরী রিয়াজ, আনোয়ার হোসেন বাচ্চু ও ড্যাবের স্থানীয় চিকিৎসকরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
লেবাননে দখলদার ইসরায়েলের হামলার ঘটনায় নিন্দা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘লেবাননের রাজধানী বৈরুতে বিমান হামলা চালিয়ে বহু মানুষকে হতাহত করেছে ইসরায়েল। এসব হামলায় অসংখ্য শিশু, নারী ও পুরুষ হতাহত হয়েছে। ধ্বংস হয়েছে বহু স্থাপনা। অথচ বিশ্ব নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
ফখরুল আরও বলেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা কাউন্সিল আলোচনার পর আলোচনা করেই চলেছে। অথচ এখনও পর্যন্ত এই ভয়ংকর ও প্রাণঘাতী যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটাতে পারছে না। জাতিসংঘের কার্যকারিতা নিয়ে জনগণের মধ্যে প্রশ্নের উদ্রেক হচ্ছে। এ প্রাণঘাতী, বিবেকহীন ও অর্থহীন যুদ্ধ এখনই বন্ধ করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা মনে করি- এই যুদ্ধ বন্ধ করতে না পারলে বিশ্ব আরও বেশি সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে।
বিবৃতিতে কালবিলম্ব না করে এ বিষয়ে জাতিসংঘের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
এদিকে, গত ২৭ সেপ্টেম্বর ইসরায়েলের বিমনা হামলায় লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহর মৃত্যু হয়। এরপরেই লেবাননে স্থল অভিযান শুরুর ঘোষণা দেয় ইসরায়েল।
আগামী শনিবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসতে চলেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এদিন দুপুর আড়াইটায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানের সঙ্গে আলোচনায় বসবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।
আজ বৃহস্পতিবার বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘শনিবার দুপুর আড়াইটায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল বৈঠক করবে।’
এর আগে গতকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, শনিবার থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয় দফায় সংলাপ শুরু করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন দলের সঙ্গে সংলাপ হবে। এতে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। সংলাপে উপদেষ্টামণ্ডলী গঠিত ছয়টি কমিশনের কার্যক্রমের অগ্রগতি এবং দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কথা হবে। এসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ও পরামর্শ নেওয়া হবে।
গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর দুই দফায় উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের সভা হয়েছে। তারই চলমান প্রক্রিয়ায় শনিবার থেকে আবারও নতুন দফায় আলোচনা শুরু হবে। দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এই আলোচনা হবে। এ আলোচনার মুখ্য বিষয় হবে ছয় সংস্কার কমিশনের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে দলগুলোকে অবহিত করা। এ ছাড়া দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও কথা হবে এবং তাদের পরামর্শ নেওয়া হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত জরুরি সংস্কার কাজ শেষ করে নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
আজ বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) সকালে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর উদ্যোগে কোটা সংস্কার আন্দোলনের শহীদ তাহমিদ ও মাসুদ রানার পরিবারের খোঁজ-খবর নিতে এসে এ মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা। এ সময় নিহত দুই পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে রিজভী বলেন, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে দ্রুত সংস্কার কাজ শেষ করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে গণতন্ত্র। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে বলে জানান তিনি।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে স্বজনহারা পরিবারের কাছে নেতারা অঙ্গীকার করেন, যারা গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনে প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের আত্মত্যাগ সবসময় মনে রাখবে বিএনপি।
অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করতে সিস্টেমের ভেতর বিগত সরকারের লোকেরা ঘাপটি মেরে বসে আছেন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক।
আজ বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর প্রেসক্লাবের সামনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিয়োগপ্রাপ্ত বিতর্কিত আমলাদের অপসারণের দাবিতে অয়োজিত এক অবস্থান কর্মসূচিতে তিনি এ মন্তব্য করেন। এ সময় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে শেখ হাসিনার দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত বিতর্কিত আমলাদের অপসারণের দাবি তোলা হয়।
ফারুক বলেন, এক-এগারো সরকারের ওপর ভর করে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে গুম-খুন চালিয়েছে। অবৈধ এমপিদের এখনও কেন আইনের আওতায় আনা হয়নি। কালক্ষেপণ করলেই সরকারের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা ফ্যাসিবাদের দোসররা আবারও ষড়যন্ত্র করবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অভিযোগ করেন, এরই মধ্যে গার্মেন্টস শিল্প ধ্বংসের পাঁয়তারা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনকে (বিজিএমইএ) ব্যবহার করে শেখ হাসিনা কোটি কোটি টাকা পাচার করেছে। এর জন্য তাকে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান তিনি।
রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চেয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করা হয়েছে। আজ বুধবার জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ এ অভিযোগ করেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯ জুলাই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় কারফিউ জারি করার। এমনকি আন্দোলনকারীদের দেখামাত্র গুলি করার সিদ্ধান্ত হয় ১৪ দলের বৈঠকে। তাদের বৈঠকের সিদ্ধান্তের পরই গুলি চালিয়ে গণহত্যা চালানো হয়। এ সিদ্ধান্ত নিয়ে দল হিসেবে আওয়ামী লীগ, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদসহ ১৪ দল মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে।
অভিযোগে গণহত্যার সরাসরি হুকুমদাতা হিসেবে আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দলের শরিক রাজনৈতিক দল- সাম্যবাদী দল, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, জাসদ (ইনু), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (মেনন), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল, তরিকত ফেডারেশন, গণতন্ত্রী পার্টি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), গণ-আজাদী লীগ, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, বাসদ এবং জাতীয় পার্টি-জেপির বিরুদ্ধে দল হিসেবে গণহত্যার অভিযোগ গঠন করে তদন্তপূর্বক আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের নিমিত্তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার আবেদন জানানো হয়েছে।
অভিযোগ দায়ের করার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ। তিনি বলেন, আশা করছি, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আমরা ন্যায় বিচার পাব।
এ সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম, এনডিএম নেতা সাহেদুল আজম, প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম, বি এম সুলতান মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশে শহীদ জিয়ার জ্যেষ্ঠ সন্তান তারেক রহমানই বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে অটুট রাখতে পারবেন বলে জানিয়েছেন বিএনপি চেয়াপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন ফারুক। এ সময় তিনি তারেক রহমানের সাংগঠনিক নির্দেশনা, রাষ্ট্র নায়কত্বমূলক বক্তব্যের নানা বিষয় নিয়েও কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ চায় তারেক রহমান দেশে আসুক, কথা বলুক। যে কথাগুলো তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিদেশ থেকে বলে আসছেন।
আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এ সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে জানিয়ে জয়নুল আবেদীন ফারুক বলেন, ‘শেখ হাসিনা বলেছেন আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতা ছাড়ে তাহলে বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের এক কোটি নেতাকর্মীকে হত্যা করবে। আমরা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি একটা আওয়ামী লীগের কর্মীর গায়ে আমরা হাত তুলিনি।’
শেখ হাসিনার উচিত দেশের মানুষের কাছে ক্ষমা চাওয়া এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা আজ ক্ষমতায় নেই, ক্ষমতায় আছে এমন এক ব্যক্তি; যে ব্যক্তিকে আপনি (শেখ হাসিনা) ১৪ তলা পর্যন্ত হেঁটে হেঁটে উঠিয়ে হাজিরা দিতে বাধ্য করেছেন। সেই ড. ইউনূস এখন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা। অহংকার আল্লাহ কোনোদিনও ক্ষমা করেন না। ক্ষমা আপনাকে করবে কি না জানি না। তবে আপনার উচিত বাংলাদেশের মানুষের কাছে ক্ষমা চাওয়া।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা একসময় কথা বলতে পারেননি। কিন্তু এখন আপনাদের কথা বলার স্বাধীনতা হয়েছে। আপনাদের মানুষ ভালোবাসে। যারা এখনো প্রেতাত্মা তাদের বিরুদ্ধে লিখুন।’
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমানের কারাদণ্ড এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। আজ বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, আদালতে আত্মসমর্পণ করে আপিল দায়েরের শর্তে জোবাইদা রহমানের সাজা এক বছরের জন্য রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্থগিত করা হলো।
সাজা স্থগিত চেয়ে ডা. জোবাইদা রহমানের আবেদন এবং আইন মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।
২০০৭ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা একটি মামলায় গত বছরের আগস্টে ঢাকার একটি আদালত জোবাইদা রহমানকে তিন বছরের কারাদণ্ড এবং তারেক রহমানকে নয় বছরের কারাদণ্ড দেয়। তাদের অনুপস্থিতিতে এই সাজা হয়।
অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপন করা অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কাফরুল থানায় করা এ মামলায় জোবাইদার মাকেও আসামি করা হয়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ময়লার গাড়ি পোড়ানো ও ভাঙচুরের মামলা থেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ আরও আটজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
আজ বুধবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমান আসামিদের খালাস প্রদান করেন।
খালাস পাওয়া অন্য আসামিরা হলেন- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম মাসুদ, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, বিএনপির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, বিএনপি সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন বাবু, কাজী রেজাউল হক বাবু ও খন্দকার এনামুল হক এনাম।
মির্জা ফখরুলের আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ বাসসকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল। মামলায় দীর্ঘদিন ধরে সাক্ষী না আসায় বিচারক আসামিদের খালাস প্রদান করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর রাজধানীর পল্টন মডেল থানাধীন মিন্টু রোডে মির্জা ফখরুল ইসলাম ও রিজভীর নেতৃত্বে ২০০ থেকে ২৫০ নেতা-কর্মী লাঠিসোটা নিয়ে রাস্তা অবরোধ করেন। এ সময় তারা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ি ভাঙচুর করেন ও বিস্ফোরণ ঘটান। এ ঘটনায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গাড়িচালক মো. আয়নাল বাদী হয়ে মামলা করেন।
২০১৭ সালের ২৩ অক্টোবর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক আনোয়ার হোসেন খান আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানায় করা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) জেলা ও দায়রা জজ এবং বিশেষ আদালতের বিচারক আহসান এ রায় ঘোষণা করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তারেক রহমানের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এবিএম জাকারিয়া।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১৫ ও ১৭ ডিসেম্বর তারেক রহমান লন্ডনে বসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে ‘রাজাকার’ পাকবন্ধু বলে মন্তব্য করেন। পরে যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়। এ ঘটনায় তাকে আসামি করে ২০১৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বেগমগঞ্জ থানায় মামলা করেন নোয়াখালী জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক একরামুল হক বিপ্লব। এরপর এ মামলায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।
অ্যাডভোকেট এবিএম জাকারিয়া বলেন, মামলার বাদী যুবলীগ নেতা মিথ্যা মামলা করেছে। এ ঘটনায় মিথ্যা মামলা দায়ের ও হয়রানির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।