জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে ঐকমত্যের ভিত্তিতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে তাদের কেউ সমালোচনার ঊর্ধ্বে নন। তাদের যৌক্তিক সময় দেওয়া হবে। এরপর গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিয়ে তাদের সম্মানের সঙ্গে বিদায় নিতে হবে। সেই যৌক্তিক সময়টা কখন জানতে চাইলে তিনি গতকাল চুয়াডাঙ্গায় বলেছেন, ‘যৌক্তিক সময়ে আমরা হাটে হাঁড়ি ভেঙে দেব।’
আজ শনিবার সকালে চুয়াডাঙ্গা শহরের হোটেল সাহিদ প্যালেসের কনফারেন্স রুমে চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াত আয়োজিত দায়িত্বশীল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ড. শফিকুর রহমান।
বক্তৃতায় অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমের বিষয়ে তিনি মন্তব্য করেন, ‘মানুষ কেউ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। এখন যারা দায়িত্বে আছেন, তারা এ দেশেরই মানুষ। আর আমরা দেশবাসী মিলে ঐকমত্যের ভিত্তিতে তাদের ওপর দায়িত্ব দিয়েছি। সুতরাং তারা যদি ভালো কিছু করেন, তাহলে দেশবাসী উপকৃত হবে, আমি উপকৃত হব, আপনিও উপকৃত হবেন। কিন্তু তার আগে যদি কোনো ভুল করেন, আমরা তা ধরিয়ে দেব, সংশোধন করে দেব।’
তিনি বলেন, ‘তবে কিছু বিষয় আমাদের দৃষ্টিতে এসেছে। আমরা তাদের পরামর্শ দিয়েছি, এতে আমরা ইতিবাচক ফল পেয়েছি। মানুষ হিসেবে তাদের জন্য আমাদের দোয়া করা উচিত। তারা যেন জাতির প্রত্যাশা ও আবেগের বাইরে কোনো কাজ না করেন। জাতির চেতনাকে তারা যেন ধারণ করে ২৪ বিপ্লবের চেতনাকে সম্মান করেন। আমরা তাদের কাছে এইটুকুই আশা করি। তবে আবেগবশত মাঝেমধ্যে দুই একটা জিনিস হয়ে যাচ্ছে, এটা হওয়া উচিত না। কী হয়ে যাচ্ছে এটা আপনারা (সংবাদকর্মী) সব বোঝেন, আমি সব কিছু ভেঙে বলতে চাচ্ছি না। ’
এর আগে তিনি কোরআনের আলোকে জীবনযাপন এবং মহানবীর আদর্শ প্রতিপালনে দায়িত্বশীলদের প্রতি আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে সবার কাছে ঐক্যের বার্তা পৌঁছে দিতে নির্দেশনা দেন।
ড. শফিকুর রহমান বলেন, ‘দেশবাসীর উদ্দেশে আমাদের একটাই বক্তব্য, আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ সমাজ গড়ে তোলার চেষ্টা করি। কোনো বিভক্তি নয়, ঐক্যই হোক এ জাতির সৌন্দর্য ও শান্তির প্রতীক।’
ভারত প্রসঙ্গে জামায়াত আমির বলেন, ‘আলাদা করে ভারতের ব্যাপারে আমরা কিছু বলব না। ভারত যেমন একটি দেশ, আমরাও একটি দেশ। ভারত ছাড়া আমাদের আরও প্রতিবেশী আছে এবং বিশ্বসভায় আরও অনেক দেশ আছে। সবার প্রতি আমাদের একই কথা, বিশ্বের সবাই আমরা মিলেমিশে পারস্পরিক মর্যাদা ও সমতার ভিত্তিতে আমাদের সম্পর্ক সামনে এগিয়ে নেব।’
রাষ্ট্র সংস্কারে বর্তমান (অন্তর্বর্তী) সরকারকে কত দিন সময় দিতে চান সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অবিলম্বে আপনারা দেখতে পাবেন, কতটুকু সময় তারা পাবে বা আমরা কী চিন্তা করছি, ইনশাল্লাহ জানতে পারবেন।’
এর আগের দিন খুলনাতে আয়োজিত রুকন সম্মেলনে ‘যৌক্তিক সময়ের মধ্যে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিয়ে সম্মানের সঙ্গে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিদায় নিতে হবে’ এই বক্তব্যের প্রসঙ্গে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ড. শফিকুর রহমান বলেন, ‘এটা আমরা আগে থেকেই বলছি, যৌক্তিক সময়ে আমরা হাটে হাঁড়ি ভেঙে দেব। দেরি করব না ইনশাল্লাহ।’
চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট রুহুল আমীনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চল পরিচালক মোবারক হোসাইন। এতে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট রুহুল আমীন। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মেহেরপুর জেলা আমির মাওলানা তাজউদ্দীন খান।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া জেলা জামায়াতের আমির আবুল হাশেম, চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা আজিজুর রহমান, মেহেরপুর জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা মাহবুবুর রহমান, চুয়াডাঙ্গা জেলার সেক্রেটারি আসাদুজ্জামান, মেহেরপুর জেলার সেক্রেটারি ইকবাল হোসাইন, চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতের সাবেক আমির আনোয়ারুল হক মালিক, চুয়াডাঙ্গা জেলার সহ-সেক্রেটারি আব্দুল কাদের, মাসুদ পারভেজ রাসেল, ইসলামী ছাত্র শিবিরের চুয়াডাঙ্গা জেলার সভাপতি হাফেজ মোহসিনসহ অন্যান্য নেতারা।
সমাবেশে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলার ৪২০ জন রুকন উপস্থিত ছিলেন। এরপর পাবনায় এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে জামায়াতে ইসলামীর পৃথক সম্মেলনে যোগ দেন তিনি। পাবনা জেলার ষান্মাসিক রুকন সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি মন্তব্য করেন জামায়াতের সদস্যরা আগে পাল্টাবে তারপর তারা দেশ পাল্টাবে।
পাবনা প্রতিনিধি জানান, জামায়াতে ইসলামীর আমির ড. শফিকুর রহমান ওই সম্মেলনে মন্তব্য করেন, জামায়াতে ইসলামীর প্রতিটা সদস্য (রুকন) আগে পাল্টাবে তারপর তারা দেশটাকে পাল্টাবে। তিনি বলেন, আল্লাহর সৃষ্টি যা আছে সবগুলোকে সম্মান করতে হবে। মানুষকে মানুষ হিসাবে মনে করব এবং আল্লাহর পথে ডাকব।
জামায়াত আমির বলেন, ‘আমাদের বিরোধিতা যারা করেন আমি তাদের অভিনন্দন জানাই। তারা বিরোধিতা করেন বলেই এই সংগঠনের (জামায়াত) চর্চা হয়। আমরা যেটা পৌঁছাতে পারতাম না তারা সেটা পৌঁছে দেয়।’
তিনি বলেন, ‘বৈষম্য এখনো দূর হয়নি। সাময়িক একটা স্বস্তি এসেছে। আমরা ছোটখাটো সমস্ত বৈষম্য দূর করব ইনশাআল্লাহ। আগস্ট বিপ্লব হুদাইবিয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে এই বাংলাদেশ পাল্টাবে কেউ কল্পনাও করতে পারিনি। যারা বুক পেতে লড়াই করেছে তাদের যেন দ্বীনের জন্য আল্লাহ কবুল করেন।
জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আবু তালেব মণ্ডলের সভাপতিত্বে এবং জেলা সেক্রেটারি অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইকবাল হুসাইনের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কুষ্টিয়া জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক মাওলানা আবুল হাসেম, সিরাজগঞ্জ জেলা আমির অধ্যক্ষ শাহিনুর আলম, নাটোর জেলা আমির ড. মীর নুরুল ইসলাম ও পাবনা জেলার সাবেক আমির আব্দুর রহিম প্রমুখ।
রুকন সম্মেলনের পর দুপুরে তিনি পাবনা দারুল আমান ট্রাস্টে পাবনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সঙ্গে দেখা ও মতবিনিময় করেন। পরে বিকেলে সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।
জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে ‘ঘোলা পানিতে মাছ শিকার’ করার চেষ্টা করার অভিযোগ তুলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘যে দল স্বৈরাচারী সরকারের অধীনে ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল, তারা এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।’
আজ শনিবার ধানমন্ডি স্পোর্টস ক্লাব মাঠে এক ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন। দলের ঘোষিত মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিএনপির ঢাকা উত্তর সিটি ইউনিট এই টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছে। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
রিজভী বলেন, বিশ্ব ইতিহাসের নানা পর্বে জনগণ আন্দোলন ও সংগ্রামের মাধ্যমেই নিজেদের অধিকার আদায় করেছে। একটি নির্বাচিত সংসদ ও জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক প্রতিনিধি থাকা রাজনৈতিক অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য।
‘কিন্তু আপনি এমন নির্বাচনকে সমর্থন না দিয়ে রাজনৈতিক বুলি আউড়ে নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করছেন। আপনি নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, কিন্তু আমরা আপনার অতীত জানি। এক সময় আপনি স্বৈরাচারের অধীনে কোনো দ্বিধা ছাড়াই নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, শেখ হাসিনার পথ অনুসরণ করে,’ বলেন বিএনপির এই নেতা।
এর আগে শুক্রবার জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান রংপুরে এক সমাবেশে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান বাস্তবতায় একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন অসম্ভব। বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য আগে একটি সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে হবে, আর সে জন্য প্রয়োজন মৌলিক সংস্কার।’
রিজভী বলেন, জামায়াত আমির এমনভাবে কথা বলেছেন যেন তিনি পরিবেশকর্মী, যিনি নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। ‘হঠাৎ করে আপনি পরিবেশবাদী হয়ে গেলেন! যদি আপনি পরিবেশ নিয়ে এতই উদ্বিগ্ন হন, তবে বৈশ্বিক পরিবেশ সংকটের বিপর্যয়ের দিকেই মনোযোগ দিন।’
তিনি বলেন, দেশের মানুষের রাজনৈতিক, গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকার ফিরিয়ে আনতে এখন একটি নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন।
‘এই কারণেই অন্তর্বর্তী সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি—উপযুক্ত সংস্কার সম্পন্ন করে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করুন এবং সেটা যেন একটি যথাযথ সময়ের মধ্যেই সম্পন্ন হয়,’ বলেন রিজভী।
সূত্র: ইউএনবি
বিএনপি অনৈতিক ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি বজায় রেখেছে বলে জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি সতর্ক করে বলেন, বিএনপির কোনো সদস্যও যদি অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত থাকে— তবে তাকেও ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, ‘যে কেউ যেকোনো ধরণের অবৈধ, অনৈতিক বা সহিংস কার্যকলাপে জড়িত থাকে—তবে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। যেকোনো ঘটনা ঘটার পর আমরা তাৎক্ষণিকভাবে তদন্ত করতে এবং সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে দ্বিধা করি না। কাল ক্ষেপণ না করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
শুক্রবার (৪ জুলাই) বিএনপির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও সতর্ক করে বলেন, দলের ভেতরে, প্রতিবেশীদের সঙ্গে বা অন্য কোনো ব্যক্তির সঙ্গে যাতে আর কেউ সহিংস আচরণ করার সাহস না করে। ‘২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে আমরা যখনই অভিযোগ পেয়েছি, তখনই আমরা এই ধরণের সমস্ত ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিয়েছি। তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।’
তিনি বলেন, দলের নামে কী ঘটছে এবং কী করা হচ্ছে, তা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিয়মিতই পর্যবেক্ষণ করছেন।
রিজভী বলেন, ‘দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং অন্যায় কাজে লিপ্ত থাকার জন্য আমরা বিএনপি এবং সহযোগী সংগঠনের চার থেকে পাঁচ হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি।’
তিনি বলেন, দল এবং এর সহযোগী সংগঠনের কোনো নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উঠলেই তারা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছেন। ‘এক্ষেত্রে, বিএনপি এবং এর নেতৃত্ব আপসহীন। তারেক রহমান জিরো টলারেন্স নীতিতে এটি করছেন।’
রিজভী বলেন, যে কেউ অপরাধ করলে—সে দলের নেতা হোক বা সদস্য—তাকে শাস্তি ভোগ করতে হবে। ‘দলের মধ্যে কেউ যাতে কোনো সন্ত্রাসী বা বেআইনি কার্যকলাপে জড়িত না হয়—তা নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’
গণতান্ত্রিক নীতির প্রতি দলের স্থায়ী অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে রিজভী বলেন, বিএনপি গত ১৬ বছর ধরে গণতন্ত্রের জন্য ক্রমাগত সংগ্রাম করে আসছে। ‘গণতন্ত্রকে কবর দেওয়া শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে বিএনপি তার আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। তীব্র দমন-পীড়ন সত্ত্বেও আমাদের দল কখনও তা থেকে পিছু হটেনি।’
অবিলম্বে, অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচনের জন্য দলের দাবি পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘কেবলমাত্র একটি সত্যিকারের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনই বিএনপির জনপ্রিয়তা প্রকাশ করবে।’
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কার কোনো কারণ নেই।
তিনি বলেন, ভোটার ও রাজনৈতিক দলগুলো চায় নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ একটা স্থিতিশীল অবস্থায় থাকুক, যার ক্রেডিট সবাই নিতে চায়।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনার সুসান রাইলের সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধি দলের সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলে।
এ সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ উপস্থিত ছিলেন। পরে বৈঠকের বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
নির্বাচনে রোডম্যাপ ও নির্বাচন নিয়ে শংকার কোনো জায়গা আছে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, শঙ্কার কোন জায়গা নেই। বাংলাদেশে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে যখনই নির্বাচন হয়েছে, নির্বাচনের পরিবেশ ভালো ছিল। বিগত দিনগুলোতে তাই দেখা গেছে। এটা কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে চায়।
তিনি বলেন, পুলিশ আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাইরে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ক্ষেত্রটা এমন যে ভোটাররা এবং রাজনৈতিক দলগুলো চায় একটা স্থিতিশীল অবস্থা থাকুক। সংস্কারের বিষয়ে আমীর খসরু বলেন, 'সংস্কারের উদ্যোক্তা হচ্ছে বিএনপি। এখন থেকে নয়, অনেক আগে থেকেই। বাংলাদেশের সব সংস্কারের উদ্যোক্তা হচ্ছে বিএনপি। এবারও তাই হয়েছে। আমাদের ভিশন ৩১ দফা জনগণের কাছে নিয়ে যাওয়া, বাস্তবায়নের জন্য একটা জাতীয় সরকার গঠন করা।
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা-সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'হ্যাঁ, আলোচনা হবে এটাই স্বাভাবিক। এটা উঠে এসেছে যে, বাংলাদেশের মানুষ বিগত তিন-চারটা নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে ভোট দেয়ার জন্য। বিশেষ করে নতুন জেনারেশন, যাদের বয়স ৩০ বা ৩০ এর আশেপাশে, তারা তো ভোটাধিকার মোটেই প্রয়োগ করতে পারেনি। তাই আমরা সবাই মনে করছি, আগামী নির্বাচনে ভোটার 'টার্ন আউট' খুবই ভালো হবে। জনগণ অত্যন্ত উৎসাহের সাথে, আগ্রহের সাথে, ভোট কেন্দ্রে যাবে। পুরুষ-মহিলা, সব বয়সের ভোটাররা যাবে এবং একটি ভালো নির্বাচন হবে। নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে একটি সরকার নির্বাচিত হবে যা গণতন্ত্রে উত্তরণের পথে আমাদেরকে এগিয়ে নেবে।
অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশের নির্বাচনে সহযোগিতা করবে জানিয়ে সাবেক এই বাণিজ্য মন্ত্রী বলেন, 'স্বাভাবিকভাবে নির্বাচন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ওটা উঠে আসছে আলোচনায়। নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া ইলেকশন কমিশনকে বড় ধরনের সহায়তা করে।
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভোটারদের ব্যালটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকার প্রয়োগ থেকে বিরত রাখার যেকোনো ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেন, ‘আমরা সবাইকে এই বার্তা দিতে চাই যে, বাংলাদেশে প্রায় ১২ কোটি ৫০ লাখ ভোটার যাতে ব্যালটের মাধ্যমে তাদের মত প্রকাশের সুযোগ পান—তা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে—যাতে কেউ এটি নিয়ে ষড়যন্ত্র করতে না পারে।’
আজ বুধবার লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি পটুয়াখালী জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক কাউন্সিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, আমরা প্রায়শই নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার প্রচেষ্টা সম্পর্কে গুজব এবং কানাঘুষা শুনতে পাই। ‘জিয়াউর রহমান এবং খালেদা জিয়ার অনুসারী হিসেবে, বাংলাদেশ জুড়ে আমাদের সকল নেতাকর্মীকে এই বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।’
বিএনপি নেতা বলেন, গত ১৭ বছর ধরে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের অনেক নেতা-কর্মী নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন, পঙ্গু হয়েছেন, নিহত হয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন এবং জুলুমের শিকার হয়েছেন। ‘সুতরাং, আমাদের নিশ্চিত করতে হবে—যাতে কেউ এই অধিকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে না পারে। আমাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।’
তিনি শিগগিরই বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেশের মাটিতে দেখার আশাবাদ ব্যক্ত করেন এবং দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়—এমন কোনো কাজ না করার আহ্বান জানান।
দলীয় ভাবমূর্তি রক্ষা এবং জনসমর্থন ধরে রাখতে নেতাকর্মীদের প্রতি সতর্ক বার্তা দিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘আপনার কোনো কাজ বা আচরণ যদি জনগণের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে, তার প্রভাব শুধু আপনার ওপর নয়—পুরো দলের ওপর পড়বে। তাই দেশের ৬৪ জেলার প্রতিটি নেতাকর্মীকে বলছি—এমন কিছু করবেন না, যা দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে।’
তিনি দলের সকল স্তরের নেতাকর্মীদের তাদের ভালো কাজ এবং ইতিবাচক আচরণের মাধ্যমে জনসাধারণের আস্থা অর্জনের নির্দেশ দেন।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমাদের কোনো সহকর্মী কেন এমন কিছু করবেন, যা দলের ক্ষতি করতে পারে? আপনি যদি দেখেন, কোনো সহকর্মীর আচরণ দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে বা জনসাধারণের আস্থা নষ্ট করতে পারে—তাহলে তা রোধ করা আপনার দায়িত্ব।’
তিনি বলেন, দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের সদস্য বা নেতা হিসেবে প্রত্যেকেরই দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করা উচিত এবং জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করা উচিত।
তারেক বলেন, বিএনপির প্রতিটি সদস্যের দায়িত্ব কেবল গণতন্ত্রের ভিত্তি মজবুত করাই নয়, বরং দলের সুনাম নষ্ট করে এমন কোনো কিছু যাতে তারা বা তাদের কোনো সহকর্মী না করেন—তা নিশ্চিত করা।
তিনি বলেন, ‘সকলকে এটা মনে রাখতে হবে। আজ, আমি দলের প্রতিটি নেতা-কর্মীকে এই পবিত্র দায়িত্ব দিচ্ছি। যেকোনো মূল্যে দলের সুনাম রক্ষা করা সকলের কর্তব্য। যারা দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করে, তাদের কোনো প্রকার প্রশ্রয় বা সুরক্ষা দেওয়া যাবে না।’
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৪ (কাউনিয়া-পীরগাছা) আসনে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’র প্রার্থী হিসেবে দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেনের নাম ঘোষণা করেছেন দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
মঙ্গলবার রাত ১১টায় কাউনিয়া বাসস্ট্যান্ডে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে আয়োজিত এক পথসভায় তিনি এ ঘোষণা দেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, আখতার হোসেনের নেতৃত্বে কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলা উন্নয়ন ও অগ্রগতির মূলধারায় প্রবেশ করবে।
এ সময় এনসিপি’র দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রধান সংগঠক মো. হাসনাত আবদুল্লাহ, আখতার হোসেনকে কাউনিয়ার সন্তান হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন এনসিপি’র কেন্দ্রীয় নেতারা।
তাদের মধ্যে ছিলেন- দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্থা শারমিন ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা।
সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন দলের উত্তরাঞ্চলীয় প্রধান সংগঠক সারজিস আলম।
অনুষ্ঠানে এনসিপি’র মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, এনসিপি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবানপুর গ্রামে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে জুলাই পদযাত্রা শুরু করে।
পদযাত্রা শুরু হয় সেই স্থান থেকে, যেখানে শহীদ আবু সাঈদকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে গুলি করে পুলিশ।
সেখান থেকে রংপুর শহরের ডিসি মোড় পর্যন্ত হেঁটে যান নেতা-কর্মীরা।
পরে, পদযাত্রাটি কাউনিয়া উপজেলা শহরে পৌঁছায় এবং মধ্যরাতে পথসভার মাধ্যমে এর সমাপ্তি ঘটে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আমরা যখন আগে নৌকায় করে অনেক দূরে যেতাম, মাঝি বলত চুপ থাকুন ওই গ্রাম ডাকাতদের গ্রাম। হাসিনার আমলে এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ডাকাতদের গ্রাম। অনেক আতঙ্ক নিয়ে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পার হতাম।
মঙ্গলবার (০১ জুলাই) প্রথম প্রহরে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্রদল আয়োজিত ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের স্মৃতি স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বলন ও সম্মিলিত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, মোমবাতি প্রজ্বলন আগামী দিনে গণতন্ত্রের পদযাত্রায় এগিয়ে যাওয়া। এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতন্ত্রের মিনার, অধিকার প্রতিষ্ঠার মিনার। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আমি সেই বায়ান্ন, ঊনসত্তরের বিশ্ববিদ্যালয় দেখছি, যেখানে বইছে শান্তির সুবাতাস।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা বলেছিলেন, বাঁধা দিলে সব বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা সবকিছু দিয়ে ছাত্রদের স্তব্ধ করে দেব। এত কিছু থাকার পরেও গণতন্ত্রের জন্য ছাত্রদের যে সংগ্রাম তাকে শেখ হাসিনা ঠেকাতে পারেনি। আলোক প্রজ্বলনের মধ্য দিয়ে আমাদের ৩৬ দিনের কর্মসূচির শুভ উদ্বোধন হলো।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আরও বলেন, শেখ হাসিনার পেটুয়া বাহিনীর কাছে ছাত্রদলের কত নেতাকর্মী গুম, খুন হয়েছেন। তারা নব্বই, আশির দশকে যে ভূমিকা পালন করেছে সেভাবে তারা চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানেও ভূমিকা রেখেছে। এই সংগ্রাম বাস্তবায়ন করতে হলে আরও বাধা আসবে। সেই বাধা অতিক্রম করতে আমরা গণতন্ত্রের মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করব।
কর্মসূচিতে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক উপদেষ্টা আমানুল্লাহ আমান বলেন, জুলাই মাসের শুরুতে ছাত্রদল যে আয়োজন করেছে সেজন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। জুলাই আন্দোলন একদিনে হয় নাই। হাজার হাজার মানুষ এখানে জীবন দিয়েছে। ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান আসাদের রক্তের মাধ্যমে হয়েছে। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন সেদিন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সফল হয়েছিল। আজকে আমরা খুনি হাসিনামুক্ত বাংলাদেশ পেয়েছি। শহীদ ওয়াসিম, সাঈদের রক্ত কখনো বৃথা যাবে না।
তিনি বলেন, বিএনপি আল্লাহর রহমতে ক্ষমতায় আসবে এবং তারেক রহমান দেশ পরিচালনা করবে। ইনশাআল্লাহ তারেক রহমান কিছুদিনের মধ্যে বাংলাদেশে আসবে।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, জুলাই আন্দোলন শুরু করেছিল সাধারণ শিক্ষার্থীরা। কিন্তু আন্দোলন শুরু হওয়ার পরে আন্দোলনের সম্মুখে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে ছাত্রদল। রাজপথে একক ছাত্রসংগঠন হিসেবে ছাত্রদল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ছাত্রদলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সবচেয়ে বেশি হামলা ও মামলার শিকার হয়েছে। একক ছাত্রসংগঠন হিসেবে ছাত্রদলের শতাধিক নেতাকর্মী জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছে। আমরা তাদের আত্মত্যাগ কখনো ভুলে যাবো না।
কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির বলেন, পনেরো বছর ধরে বাংলাদেশে যে ফ্যাসিবাদ তৈরি হয়েছিল তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলসহ জাতীয়তাবাদী বিভিন্ন দল অংশ নিয়েছিল। ফ্যাসিবাদের আমলে তরুণদের মতামত দেওয়ার অধিকার রাখা হয়নি অথচ এই তরুণরাই চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়েছে।
কর্মসূচিতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকার চার মহানগরের বিভিন্ন থানা ও ইউনিটের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে দেশ গঠনে জুলাই পদযাত্রার কার্যক্রম শুরু করলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি)’র নেতারা।
মোনাজাত শেষে আবু সাঈদের বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন তারা।
আজ (১ জুলাই) দুপুরে কেন্দ্রীয় নেতারা আবু সাঈদের বাড়িতে যান।
পরে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শুধু স্বৈরাচারী সরকার পতনের আন্দোলন ছিল না, নতুন বন্দোবস্তের জন্য ছাত্র আন্দোলন ছিল। এই আন্দোলনে যারা সংহতি প্রকাশ করেছেন, তাদের চেতনাকে ধারণ করে নতুন বাংলাদেশ গড়তে বিচার ব্যবস্থা, নতুন সংবিধান, জুলাই সনদসহ তিন দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এনসিপি মাঠে থাকবে।
যৌক্তিক সংস্কারে প্রয়োজনে আবারো সংগঠিত হয়ে ছাত্র-জনতাকে নিয়ে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন নাহিদ ইসলাম। এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, জুলাই সনদ নিয়ে কোনো টালবাহানা সহ্য করা হবে না। দরকার হলে আবারো রাজপথে নামবো। প্রয়োজনীয় সংস্কারের পরেই নির্বাচন দিতে হবে, অন্যথায় সেই নির্বাচন মেনে নেওয়া হবে না।
দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ন্যায়সঙ্গগত সংস্কার ও মানুষের অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত এক পা পিছিয়ে আসবে না এনসিপি।
নেতারা জানান, গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে এই কর্মসূচি চালু হয়েছে। তারা বলেন, জনগণের সঙ্গে সরাসরি সংলাপে যেতে চায় এনসিপি, কারণ গণ-অভ্যুত্থানের স্বপ্ন এখনো অপূর্ণ। এই পদযাত্রার মাধ্যমে তারা সাধারণ মানুষের মতামত ও প্রত্যাশা সরাসরি জানার সুযোগ তৈরি করতে চায়।
বিকালে শহীদ আবু সাঈদ হত্যার ঘটনাস্থলসহ রংপুর নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করবেন তারা।
শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে কর্মসূচির আনুষ্ঠানিকতা ও পদযাত্রার সূচনা করেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নেতারা। ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ শীর্ষক কর্মসূচি চলবে ১ জুলাই থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত।
কবর জিয়ারতে অংশ নেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, দক্ষিণ অঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তর অঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারাসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ শুরু হবে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর শহীদ মিনার থেকে। পরে রংপুরে পার্কের মোড় থেকে বিকেল ৩টায় পদযাত্রা শুরু হয়ে লালবাগ-শাপলা-জাহাজ কোম্পানির মোড় হয়ে টাউন হল মাঠে পথসভা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ডিসির মোড় হয়ে ধাপ হয়ে মেডিকেল মোড় হয়ে চেকপোস্টে সমাপনী হবে।
জুলাই আন্দোলন চলাকালে গত বছর ১৬ জুলাই দুপুর আড়াইটা থেকে তিনটার দিকে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে। ছাত্রদের সবাই সরে গেলেও আবু সাঈদ হাতে একটি লাঠি নিয়ে দু’হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে যান।
এই অবস্থায় পুলিশ আনুমানিক ৫০-৬০ ফুট দূর থেকে তার ওপর ছররা গুলি ছোড়ে। পুলিশের অবস্থানে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে। তারপরও অবস্থান থেকে একচুল সরেননি আবু সাঈদ, সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। একপর্যায়ে গুলিতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে শিক্ষার্থীরা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা আবু সাঈদকে মৃত ঘোষণা করেন।
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের শোক ও বিজয়ের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে, বিএনপির বিশেষ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
আজ বিকালে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এই আলোচনা সভা শুরু হবে। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের শোক ও বিজয়ের প্রথম বর্ষপূর্তি পালন কমিটির আহ্বায়ক রুহুল কবির রিজভী এই তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের মা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গুলশানের বাসা থেকে ভার্চুয়ালি এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিখি হিসেবে থাকবেন বলে আশা করছি।’
লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিকাল তিনটায় এই অনুষ্ঠান উদ্বোধন করা হবে। সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে।’
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের শোক ও বিজয়ের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে ৩৬ দিনের কর্মসূচির প্রথম ধাপ এটি। এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও পেশাজীবীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
আলোচনা সভার ব্যানারে লেখা আছে, ‘গণঅভ্যুত্থান-২০২৪ : জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও শহীদ পরিবারের সম্মানে বিশেষ অনুষ্ঠান।
এই আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সভাপতিত্ব করবেন জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের শোক ও বিজয়ের প্রথম বর্ষপূর্তি পালন কমিটির আহ্বায়ক রুহুল কবির রিজভী।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান ও বিভিন্ন সময় সরকারবিরোধী আন্দোলনে নিহত ও নিখোঁজ হওয়া বিএনপির নেতাকর্মীদের পরিবার-পরিজন অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন এবং স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্য দেবেন। এছাড়া বিএনপির জাতীয় পর্যায়ের নেতারাও এতে বক্তব্য রাখবেন।
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে ইতোমধ্যে বিএনপি ৩৬ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। কর্মসূচির মধ্যে আছে, বিজয় মিছিল, মৌন মিছিল, ছাত্র সমাবেশ, আলোচনা সভা, সেমিনার, রক্তদান, গ্রাফিতি অঙ্কন, পথনাটক, ফুটবল টুর্নামেন্ট, শিশু অধিকার বিষয়ক অনুষ্ঠান, ডেঙ্গু ও করোনা প্রতিরোধে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমসহ অন্তত ২২টি ভিন্নধর্মী আয়োজন।
মঙ্গলবার রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ‘আলোর আলোয় স্মৃতি সমুজ্জ্বল’ শীর্ষক মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচি পালিত হয়। এ কর্মসূচির মাধ্যমে জুলাই-আগস্টে বিএনপির কর্মযজ্ঞের সূচনা হয়েছে।
দীর্ঘ ২৩ বছর পর ২ জুলাই বুধবার সকাল ১০ টায় পটুয়াখালী ব্যায়ামাগার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি পটুয়াখালী জেলা শাখার ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। এ সম্মেলন সফল করতে জোরে সোরে চলছে সকল ধরনের প্রচার- প্রচারণা ও প্রস্তুতি।
উক্ত সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অবঃ) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, সহ- সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুল হক নান্নু, সহ-দপ্তর সম্পাদক মুহাম্মদ মুনির হোসেন, সহ- প্রচার সম্পাদক মোঃ আসাদুল কবির শাহীন, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হাসান মামুন, সদস্য মাওলানা শাহ নেছারুল হক, সদস্য ইঞ্জিঃ একেএম ফারুক আহমেদ তালুকদার, সদস্য মোঃ দুলাল হোসেন। সভাপতিত্ব করবেন পটুয়াখালী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলহাজ্ব আব্দুর রশিদ চুন্নু মিয়া ও সঞ্চালনা করবেন সদস্য সচিব স্নেহাংশু সরকার কুট্টি।
এ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নসহ তৃণমূল বিএনপির নেতা- কর্মীদের মাঝে এক ধরনের চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হচ্ছে। এ সম্মেলনে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির ৩০ জনসহ ৮টি উপজেলা ও ৫টি পৌরসভার প্রায় ১৪০০ জন কাউন্সিলর উপস্থিত থাকার কথা বলেছেন জেলা বিএনপির সদস্য মোঃ সিদ্দিকুর রহমান। সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশন (কমিটি নির্বাচন) বিকেলে পটুয়াখালী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে আয়োজন করা হয়েছে বলে জেলা বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক এ তিনটি শীর্ষ পদে এক ডজন প্রার্থীর নাম নেতা-কর্মীদের মুখে চাউর হচ্ছে। এ তিনটি পদের মধ্যে সভাপতি পদে যাদের নাম উঠেছে, তারা হলেন বর্তমান জেলা বিএনপি কমিটির আহবায়ক আলহাজ্ব আব্দুর রশিদ চুন্নু মিয়া, সদস্য সচিব স্নেহাংশু সরকার কুট্টি ও অন্যতম সদস্য মাকসুদ আহমেদ বায়জীদ পান্না মিয়া।
সাধারণ সম্পাদক পদে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য পিপি এ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান টোটন, সদস্য মোঃ দেলোয়ার হোসেন খান নান্নু, জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এ্যাডঃ মোহসীন উদ্দীন, জেলা বিএনপির সদস্য জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি বশির আহমেদ মৃধা, জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মোঃ মনিরুল ইসলাম লিটন ও সাধারণ সম্পাদক এ্যাডঃ তৌফিক আলী খান কবির।
সাংগঠনিক সম্পাদক পদে জেলা বিএনপির সদস্য জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার ইমাম হোসেন নাসির, সাবেক জিএস আলমগীর হোসেন বাচ্চু, জেলা মৎস্য দলের সভাপতি ভিপি শাহীন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মশিউর রহমান মিলন ও জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডঃ মাকসুদুর রহমান মাকসুদ।
উল্লেখ্য, ২০০২ সালে জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। এ সম্মেলনে এয়ার ভাইস মার্শাল (অবঃ) আলতাফ হোসেন চৌধুরী সভাপতি ও স্নেহাংশু সরকার কুট্টি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে মেয়াদউত্তীর্ন হওয়ায় কমিটি বিলুপ্ত করে ২০২০ সালের ২ নভেম্বর আলহাজ্ব আব্দুর রশিদ চুন্নু মিয়াকে আহ্বায়ক এবং স্নেহাংশু সরকার কুট্টিকে সদস্য সচিব করে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়
এবার ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। আগামী ১ জুলাই থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে এই পদযাত্রা পালওন করা হবে।
রবিবার (২৯ জুন) সকালে রাজধানীর বাংলামোটরে দলটির অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
এতে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “আগামী ১ জুলাই থেকে আমরা ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’-এর বর্ষপূর্তি উদযাপন করবো। দেখতে দেখতে একটি বছর পার হয়ে গেছে। আমাদের অনেক প্রাপ্তি যেমন আছে, তেমনি অপ্রাপ্তিও রয়েছে। জুলাই-আগস্টের ঐতিহাসিক ৩৬ দিন স্মরণ করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।”
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, এনসিপির কর্মসূচি ও বাস্তবায়ন সেলের সম্পাদক অনিক রায়, যুগ্ম সদস্য সচিব লুৎফর রহমানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এন নাসির উদ্দীনের বৈঠকের পর বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের নির্দিষ্ট সময়সূচি ঘোষণার প্রত্যাশা করছে বলে জানিয়েছেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেছেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, নির্বাচনের দিন নির্ধারণ ও সময়সূচি ঘোষণায় জনগণের প্রত্যাশা ও আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হবে।’
শনিবার (২৮ জুন) চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন রিজভী।
প্রধান উপদেষ্টা ও সিইসির বৈঠকের পর বিএনপি কি নির্দিষ্ট নির্বাচনের তারিখ প্রত্যাশা করে—এমন প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেন, ‘আমরা নিশ্চয়ই তা আশা করি।’
এর আগে বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন সিইসি নাসির উদ্দীন। বৈঠকটি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত হয়।
রিজভী বলেন, নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে জনগণের প্রত্যাশা ও আলোচনার বিষয়টি বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, দেশের জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলো বিশ্বাস করে, অধ্যাপক ইউনূস ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের কল্যাণ ও গণতন্ত্রের স্বার্থেই কাজ করবেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, তারাও বিশ্বাস করেন যে, প্রধান উপদেষ্টা একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন, যাতে জনগণ তাদের জবাবদিহিমূলক প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে।
বর্তমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতি ও সামাজিক সংকট রয়েছে। মব কালচার আছে। এসব থেকে মুক্ত হতে হবে। গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে হবে। গত বছরেও আমাদের প্রবৃদ্ধি ছিল ৪.২। এবার সেটি হয়েছে ৩.৯। আমরা সরকারকে সেটি দেখার জন্য বলব। আমরা তো সমালোচনা করবই। অবশ্যই যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। আমরা প্রত্যাশা করি— নির্বাচন কমিশন দ্রুত একটি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিগত অগণতান্ত্রিক সরকার দেশের অর্থ লোপাট করেছে। দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছে— যার অন্যতম নির্বাচন কমিশন ও মিডিয়া। তারা কখনও প্রকৃত গণতন্ত্র চায়নি। জনগণ মনে করে, ড. ইউনূস দেশবাসীর মনের প্রত্যাশা মোতাবেক ব্যবস্থা নেবেন।’
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতির বার্তা প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে (সিইসি) জানিয়েছেন কিনা- তা জাতিকে নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘আমরা গণমাধ্যমে দেখেছি যে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেছেন। লন্ডনের বৈঠকের পর, আমরা আশা করেছিলাম প্রধান উপদেষ্টা ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে এবং রমজান শুরুর আগে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করবেন।’
আজ শুক্রবার গুলশানের বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সিইসির বৈঠক হয়। বৈঠকটি নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন বলেন, আমরা আশা করছি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় অথবা নির্বাচন কমিশন আলোচনার বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানাবে।
তিনি বলেন, ‘সবাই এখন ধরে নিচ্ছে যে, প্রধান উপদেষ্টা ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে, রমজান শুরুর আগের সপ্তাহে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি সম্পর্কে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে তার বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন। আমাদের ধারণা এটাই।’
বিএনপি নেতা অবশ্য বলেন, প্রধান উপদেষ্টা আসলেই এই বার্তা দিয়েছেন কিনা বা নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো পরামর্শ বা নির্দেশনা দিয়েছেন কিনা তা তারা জানেন না। ‘উভয় পক্ষই যদি জাতির সামনে বিষয়টি স্পষ্ট করে বলেন—তাহলে আমরা আশ্বস্ত হব।’
এর আগে বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এন নাসির উদ্দিন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
সালাহউদ্দিন বলেন, নির্বাচন কমিশন অতীতে বেশ কয়েকবার বলেছে যে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ক্রয় প্রক্রিয়াসহ সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হবে।
তিনি বলেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ক্রয় প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়েছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘শুধুমাত্র সীমানা নির্ধারণ প্রক্রিয়া বাকি আছে। তা তিন মাসের মধ্যে শেষ করা যেতে পারে। তফসিল ঘোষণার পর, পোলিং অফিসার এবং প্রিসাইডিং অফিসার নিয়োগ, ভোটকেন্দ্র স্থাপন এবং প্রশিক্ষণ পরিচালনাসহ অনেক কার্যক্রম থাকবে। এগুলো চলমান প্রক্রিয়া। এর জন্য কোনো বিশেষ প্রস্তুতির প্রয়োজন নেই।’
সংসদ নির্বাচনের আগে জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) স্থানীয় নির্বাচনের দাবি সম্পর্কে জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন এই ধারণাটি প্রত্যাখ্যান করে বলেন যে এটি কার্যকর নয়।
তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন দাবি করতে পারে। তবে বেশিরভাগ দল প্রধান উপদেষ্টার উল্লেখিত সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে একমত। এই বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের পক্ষে এই সময়ের মধ্যে স্থানীয় সরকার নির্বাচন পরিচালনা করা প্রায় অসম্ভব হবে। এই নির্বাচনগুলো- ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা বা সিটি করপোরেশন যাই হোক না কেন- আয়োজন করতে কমপক্ষে ছয় মাস সময় লাগে। যদি তারা এখন স্থানীয় নির্বাচন করতে যায়- তাহলে তারা সময়মতো জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে সক্ষম নাও হতে পারে।’
সালাহউদ্দিন বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য নয়, আমাদের ভোটাধিকারের জন্য লড়াই করেছি। নির্বাচন কমিশনের এখন প্রধান দায়িত্ব হলো জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া।’
আয়কর অফিসসহ সরকারি বিভিন্ন অফিসে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য বিএনপির নামে আন্দোলন চালিয়ে একটি ‘কুচক্রী মহল’র বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টার সমালোচনা করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, ‘যারা আয়কর অফিসে বা অন্যান্য বিভাগে বিএনপির নামে আন্দোলন করছেন—তারা বিএনপির অংশ নয়। তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্যই এটা করছে।’
শুক্রবার (২৭ জুন) রথযাত্রা উৎসব উপলক্ষে রাজধানীর নয়াপল্টনের ভাসানী ভবনে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন ফ্রন্ট আয়োজিত এক আলোচনা সভায় রিজভী এই মন্তব্য করেন।
তিনি সতর্ক করে বলেন, কিছু ব্যক্তি বিভিন্ন ক্ষেত্র এবং সরকারি অফিসে তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপির নামে নতুন নতুন কার্যকলাপ শুরু করার চেষ্টা করছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যারা জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী তাদের সকলেরই তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত। তারেক রহমান তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছেন। কিন্তু তারপরও অনেকে বিএনপির নাম ব্যবহার করে বিএনপির ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন।’
রিজভী বলেন, তিনি এমন একজনের কথা শুনেছেন যিনি বিএনপির নাম ব্যবহার করে আয়কর অফিসে আন্দোলন করছেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘তিনি (সেই ব্যক্তি) এখন (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে অপসারণের চেষ্টা করছেন এবং ভবিষ্যতে অন্য কাউকে অপসারণের চেষ্টা করবেন। কে তাকে এই দায়িত্ব দিয়েছে? আমি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব—আমি এ বিষয়ে জানি না। আপনি নিজেই বিএনপির নাম ব্যবহার করে একটি অফিসে আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সেখানে আরও অনেক বিএনপি নেতা আছেন, কেউ এ সম্পর্কে জানেন না।’
বিএনপির নামে যারা অপকর্ম করছে তাদের সম্পর্কে সতর্ক থাকার জন্য বিএনপি নেতা-কর্মীদের আহ্বান জানান রিজভী। বলেন, ‘রক্তপাত এবং সংগ্রামের মাধ্যমে সৃষ্ট সুযোগ আগামী দিনে একটি উন্নত রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে।’
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ত্রুটি-বিচ্যুতির সমালোচনা করলেও সরকারের ভালো কাজের প্রতি সমর্থন জানায় বিএনপি।
লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে আলোচনা অনুসারে, সরকার যুক্তিসঙ্গত সময়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে বলে আশা প্রকাশ করেন রিজভী।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তার সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়াল স্বীকার করেছেন যে, ২০২৪ সালের নির্বাচন ছিল একটি ভুয়া নির্বাচন। ‘তার এই মন্তব্য স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে (শেখ) হাসিনার আমলে সমস্ত নির্বাচন অবৈধভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।’
বিএনপি নেতা দাবি করেন, প্রশাসনের ভেতরে লুকিয়ে থাকা কিছু লোক—যারা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী। তারা বিভিন্ন বিভাগে বিভিন্নভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের তাদের সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।’