দুর্নীতির অভিযোগে বগুড়া-২ আসনের জাতীয় পার্টির (জাপা) সাবেক সংসদ সদস্য শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ারের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন আদালত।
এ বিষয়ে তদন্তকারী দলের প্রধান হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দুই তদন্ত কর্মকর্তা পৃথক দুটি আবেদন জমা দিলে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আশ-শামস জগলুল হোসেন আজ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন।
আবেদনে দুদকের সহকারী পরিচালক নুরুল ইসলাম বলেন, জিন্নাহর বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তদন্ত চলছে।
জিন্নাহর বিরুদ্ধে ৬৯ লাখ টাকার মিথ্যা সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়ার অভিযোগ এবং এক কোটি ৬০ লাখ টাকার আয়ের উৎস জমা দিতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে ২০২১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি এই মামলা করেছিল দুদক।
জিন্নাহ যেকোনো সময় দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারেন, তাই তার দেশত্যাগে বাধা দিতে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়।
তদন্ত দলের প্রধান ও দুদকের উপ-পরিচালক মো. জাকারিয়াও একই ধরনের আবেদন করেন। তিনি আবেদনে উল্লেখ করেন যে, কবির যেকোনো সময় দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারেন, তাই তার দেশত্যাগে বাধা দিতে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন
পরবর্তী ব্যবস্থার জন্য আদেশের অনুলিপি পুলিশের বিশেষ শাখার বিশেষ পুলিশ সুপারের (ইমিগ্রেশন) কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন আদালত।
মাগুরায় জেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) বেলা ১২টায় ঐতিহাসিক নোমানী ময়দান থেকে বিশাল এক বর্ণাঢ্য নির্বাচনী প্রচারণা মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মিছিলে অংশ নেওয়া বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী একই পোশাকে শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে অংশ নেন, যা পুরো কর্মসূচিতে আলাদা বৈশিষ্ট্য তৈরি করে।
শুরুতে নোমানী ময়দানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মাগুরা জেলা জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির সহকারী অধ্যাপক মাওলানা সাঈদ আহমেদ বাচ্চু। জেলা জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী মাওলানা মারুফ কারখীর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন মাগুরা-১ আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ও সাবেক জেলা আমির আলহাজ্ব আব্দুল মতিন, মাগুরা–২ আসনের মনোনীত প্রার্থী সহকারী অধ্যাপক মাওলানা এমবি বাকের, জেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা মাহবুবুর রহমান, ইসলামী ছাত্র শিবিরে জেলা সভাপতি মোঃ আমিনউদ্দীন আশিকসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশ শেষে একটি বিশাল নির্বাচনী মিছিল বের হয়। মিছিলটি ভায়না মোড় হয়ে ঢাকা রোড প্রদক্ষিণ করে চৌরঙ্গী মোড়ে এসে জেলা জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর সহকারী অধ্যাপক মাওলানা সাইদ আহমেদ বাচ্চু আনুষ্ঠানিক ভাবে শেষ করেন। হাজার হাজার নেতা–কর্মীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে শহরব্যাপী উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়।
নেতারা বলেন, জনগণের অধিকার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই তাদের এই কর্মসূচি। তারা শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাগেরহাটের মোংলায় আনজিরা বেগম নামের ৬৫ বছর বয়সী এক অসহায় বৃদ্ধাকে নতুন ঘর উপহার দেওয়া হয়েছে। জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক লায়ন ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম তার নিজস্ব উদ্যোগে উপজেলার সোনাইলতলা ইউনিয়নে এই ঘরটি নির্মাণ করে দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে আনজিরা বেগমকে সঙ্গে নিয়ে ফিতা কেটে আনুষ্ঠানিকভাবে এই নতুন ঘরের উদ্বোধন করেন ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম। এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন মোংলা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু হোসেন পনি, সাংগঠনিক সম্পাদক শাকির হোসেন এবং সোনাইলতলা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মারুফ বিল্লাহসহ স্থানীয় দলীয় নেতাকর্মীরা।
জানা গেছে, স্বামী ও সন্তানহীন আনজিরা বেগম দীর্ঘদিন ধরে অন্যের জমিতে পলিথিন মোড়ানো জরাজীর্ণ ঝুপড়ি ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছিলেন। বিষয়টি বিএনপি নেতা ফরিদুল ইসলামের নজরে আসার পর তিনি দ্রুততম সময়ের মধ্যে ওই বৃদ্ধার জন্য এই নতুন ঘরটি নির্মাণের উদ্যোগ নেন। জীবনের শেষ সময়ে এসে একটি মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন আনজিরা বেগম।
উল্লেখ্য, জনকল্যাণমূলক কাজের অংশ হিসেবে এর আগে গত ৬ ডিসেম্বর বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার ভাগা এলাকার আরেক অসহায় ও বাকপ্রতিবন্ধী ভিক্ষুক দীপালি রানী শীলকেও তারেক রহমানের পক্ষ থেকে একটি নতুন ঘর উপহার দিয়েছিলেন শেখ ফরিদুল ইসলাম।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, আগামী নির্বাচনের মাধ্যমেই দেশের জনগণ একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র গঠনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
আমীর খসরু বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। দেশের মানুষের মালিকানা তাদের হাতেই ফিরিয়ে দিতে হবে। আগামী দিনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি জনগণের আকাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গড়ে তুলবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এ সময় তিনি আরও উল্লেখ করেন, জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমেই ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষের জন্য একটি বৈষম্যহীন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে। রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাই এখন মূল লক্ষ্য।
জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ঠিক আগ মুহূর্তে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের শিগগিরই দেশে ফেরার বার্তা দিলেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক কর্মশালার উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বক্তব্যের শুরুতেই মির্জা ফখরুল উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমান শিগগিরই আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন। তিনি যেদিন বাংলাদেশে পা দেবেন, সেদিন যেন তার আগমনে সমগ্র বাংলাদেশ কেঁপে ওঠে, তা নিশ্চিত করতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। ফখরুল প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, নেতা ফেরার সেই দিনটিতেই তারা গোটা বাংলাদেশের চেহারা বদলে দিতে চান। বিএনপি মহাসচিব আরও উল্লেখ করেন, দলের নেতার চিন্তাভাবনা বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে এবং প্রগতির পথে এগিয়ে নিতে তারা বদ্ধপরিকর।
গত ৭ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া বিএনপির এই কর্মশালায় দলের অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতারা অংশ নিচ্ছেন। উল্লেখ্য, আজ সন্ধ্যায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন। রাজনীতির এমন গুরুত্বপূর্ণ মোড়েই দলের শীর্ষ নেতার দেশে ফেরার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিলেন বিএনপি মহাসচিব।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য বিএনপি শতভাগ প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন দলটির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টক শোতে অংশ নিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে তিনি এ কথা জানান। রুমিন ফারহানা বলেন, দীর্ঘ অপেক্ষার পর বাংলাদেশ একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে। দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি এই মুহূর্তটির জন্যই দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করেছে এবং নানান চড়াই-উতরাই ও ঝড়-ঝাপটা সহ্য করেছে।
তিনি বলেন, বিএনপি চাইলে ২০১৪ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিরোধী দলে থাকতে পারত। কিন্তু দলটি চেয়েছিল একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, যেখানে জনগণের ম্যান্ডেট প্রতিফলিত হবে। সেই কাঙ্ক্ষিত পরিবেশ তৈরি হওয়ায় এবং ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে যাওয়ায় বিএনপি এখন পুরোপুরি প্রস্তুত। আগামীর রাজনীতি প্রসঙ্গে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশ এখন নির্মূলের রাজনীতি থেকে বের হয়ে সুস্থ প্রতিযোগিতার যুগে প্রবেশ করবে। এ সময় তিনি বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের উদাহরণ টেনে বলেন, একটা সময় কাউকে ভিন্নমতের বা শিবিরের তকমা দিয়ে নির্যাতনের সংস্কৃতি চালু ছিল, যা থেকে বের হয়ে আসার এখন সুবর্ণ সুযোগ তৈরি হয়েছে।
নির্বাচনী মাঠে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বাদানুবাদ ও পাল্টাপাল্টি বক্তব্য প্রসঙ্গে রুমিন ফারহানা বলেন, ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর একে অপরের দুর্বলতা নিয়ে কথা বলা বা সমালোচনা করা বিশ্বব্যাপীই স্বাভাবিক ঘটনা। জামায়াত যখন স্লোগান দেয় ‘নৌকা-ধানের শীষ দুই সাপের এক বিষ’, তখন বিএনপি বিষয়টিকে সিরিয়াসলি নেয় না। কারণ, জনগণ জানে অতীতে কার কী ভূমিকা ছিল।
টক শোতে জামায়াত আমিরের জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব এবং এনসিপি নেতাদের ৩০০ আসনে জয়ের আশাবাদ নিয়েও কথা বলেন রুমিন। তিনি বলেন, আগে ভোট হতে হবে, তারপর আসনের হিসাব। এনসিপির ৩০০ আসন পাওয়ার দাবির বিষয়ে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেন। পাশাপাশি জাতীয় সরকারের ধারণাটি নতুন কিছু নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপির ৩১ দফাতেই সব দল ও মতের মানুষকে নিয়ে সরকার গঠনের কথা পরিষ্কারভাবে বলা আছে। এমনকি ২০১৬ সালে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তাঁর ‘ভিশন ২০৩০’-এ জাতীয় সরকারের রূপরেখা আগেই তুলে ধরেছিলেন।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তাদের প্রথম ধাপের ১২৫ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় রাজধানীর বাংলামোটরে দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই তালিকা প্রকাশ করা হয়। তবে ঘোষিত তালিকায় জায়গা পাননি গত জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের স্যালুট দিয়ে দেশজুড়ে আলোচনায় আসা রিকশাচালক সুজন।
গত ২০ নভেম্বর সন্ধ্যায় এনসিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে ঢাকা-৮ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার লক্ষ্যে দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন সুজন। কিন্তু আজ ঘোষিত প্রথম তালিকায় তাঁর নাম দেখা যায়নি। এমনকি ঢাকা-৮ আসনে দলটির পক্ষ থেকে অন্য কোনো প্রার্থীর নামও ঘোষণা করা হয়নি। উল্লেখ্য, জুলাই অভ্যুত্থানের সময় রাজপথে শিক্ষার্থীদের প্রতি সুজনের স্যালুটের দৃশ্যটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল এবং তিনি আন্দোলনের অন্যতম প্রতীকী চরিত্রে পরিণত হয়েছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। তিনি জানান, মনোনয়নপত্র বিতরণের কাজ শেষ হওয়ার পর যাচাই-বাছাই শেষে এই প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তবে এটিই চূড়ান্ত নয় বলে ইঙ্গিত দেন তিনি। আখতার হোসেন বলেন, আজ যাদের নাম প্রকাশ করা হয়েছে, তাদের কারও বিরুদ্ধে যদি কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যায়, তবে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের প্রার্থিতা বাতিল করা হবে।
বিগত ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশ যেন একটি ‘কালো মেঘের নিচে চাপা’ পড়ে ছিল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি উল্লেখ করেন, এই দীর্ঘ সময়ে ভিন্নমতের রাজনৈতিক কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ—সবাইকেই রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছে।
তারেক রহমান বলেন, পতিত সরকারের শাসনামলে রাতের আঁধারে দরজায় কড়া নাড়া, মিথ্যা মামলা, গুম ও নির্যাতনকে একটি সংস্কৃতিতে পরিণত করা হয়েছিল। অসংখ্য পরিবার তাদের প্রিয়জনদের অপেক্ষায় দিন কাটিয়েছে, যারা আর কখনো ফিরে আসেনি। তিনি দাবি করেন, এই নিপীড়নের সবচেয়ে বড় বোঝা বিএনপিকেই বহন করতে হয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম ও হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় দলের নেতাকর্মীরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এমনকি ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানেও বিএনপির নেতাকর্মীদের রক্তই সবচেয়ে বেশি ঝরেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি আরও বলেন, শুধু রাজনৈতিক দল নয়; ছাত্র, সাংবাদিক, লেখক ও সাধারণ মানুষও এই ভয়ের সংস্কৃতির শিকার হয়েছেন। কেড়ে নেওয়া হয়েছিল মানুষের মর্যাদা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা। নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তারেক রহমান জানান, ২০১৫ সাল থেকে তাঁর কণ্ঠরোধ করা হয়েছিল। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তিনি গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকারের পক্ষে লড়াই চালিয়ে গেছেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ত্যাগের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, এই অন্ধকার সময়ে দেশনেত্রী ছিলেন ধৈর্য ও প্রতিরোধের প্রতীক। মিথ্যা মামলা ও কারাবাসের মাধ্যমে তাঁকে রাজনৈতিকভাবে নিঃশেষ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি গণতান্ত্রিক আদর্শ থেকে সরে আসেননি। তারেক রহমান নিজের পরিবারের ওপর হওয়া নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে বলেন, তাঁর মা নিজ চোখে সন্তানকে জেলে নেওয়া ও নির্যাতনের যন্ত্রণা সহ্য করেছেন এবং তাঁরা আরেক ভাইকে চিরতরে হারিয়েছেন।
ভবিষ্যৎ রাজনীতির রূপরেখা নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান স্পষ্ট করে বলেন, বিএনপি প্রতিশোধের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না, বরং সমাধানের পথে হাঁটতে চায়। কষ্ট মানুষকে মহান করে তোলে—মায়ের এই শিক্ষা ধারণ করে তিনি এমন একটি রাষ্ট্র গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন, যেখানে সরকারের সমর্থক বা বিরোধী কাউকেই আর রাষ্ট্রের ভয়ে ভীত হতে হবে না। তিনি বলেন, আজ রাজনীতির চেয়েও বড় প্রয়োজন একটি ঐক্যবদ্ধ দেশ, যেখানে মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতা সুরক্ষিত থাকবে এবং ভিন্ন মতের কারণে কাউকে গুম বা খুনের শিকার হতে হবে না।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের প্রেক্ষাপটে আবরার ফাহাদ, ইলিয়াস আলী, সাগর-রুনিসহ অসংখ্য শহীদের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, বিএনপি মারাত্মক ক্ষতি সহ্য করেও ভেঙে পড়েনি। সত্য, ন্যায়বিচার ও আইনের শাসনের ওপর বিশ্বাস রেখে দলটি আরও শক্তিশালী হয়েছে। ভবিষ্যতে যেন এমন নিপীড়ন ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি আর ফিরে না আসে এবং মানবাধিকারই যেন হয় ভবিষ্যতের ভিত্তি—সেই লক্ষ্যেই বিএনপি কাজ করে যাবে।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রথম ধাপে ১২৫টি আসনে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। আজ বুধবার (১০ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় রাজধানীর বাংলামোটরে দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তালিকা প্রকাশ করা হয়। দলের সদস্যসচিব ও রংপুর-৪ আসনের প্রার্থী আখতার হোসেন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন।
ঘোষিত তালিকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সামনের সারির নেতাদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পঞ্চগড়-১ আসনে লড়বেন মো. সারজিস আলম এবং ঢাকা-১১ আসনে প্রার্থী হয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। এছাড়া কুমিল্লা-৪ আসনে হাসনাত আবদুল্লাহ, ঢাকা-১৮ আসনে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এবং ঢাকা-৯ আসনে ডা. তাসনিম জারাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের আসনগুলোর মধ্যে ঠাকুরগাঁও-২ এ মো. রবিউল ইসলাম, ঠাকুরগাঁও-৩ এ মো. গোলাম মর্তুজা সেলিম, দিনাজপুর-৩ এ আ হ ম শামসুল মুকতাদির, দিনাজপুর-৫ এ ডা. মো. আব্দুল আহাদ, নীলফামারী-২ এ ডা. মো. কামরুল ইসলাম দর্পন ও নীলফামারী-৩ এ মো. আবু সায়েদ লিয়ন, লালমনিরহাট-২ এ রাসেল আহমেদ ও লালমনিরহাট-৩ এ মো. রকিবুল হাসান, রংপুর-১ এ মো. আল মামুন, কুড়িগ্রাম-১ এ মো. মাহফুজুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম-২ এ ড. আতিক মুজাহিদ ও কুড়িগ্রাম-৩ এ ইঞ্জিনিয়ার মো. আবু সাঈদ জনি, গাইবান্ধা-৩ এ মো. নাজমুল হাসান সোহাগ ও গাইবান্ধা-৫ এ ডা. আ. খ. ম. আসাদুজ্জামান মনোনয়ন পেয়েছেন। এছাড়া জয়পুরহাট-১ ও ২ আসনে যথাক্রমে গোলাম কিবরিয়া ও আবদুল ওয়াহাব দেওয়ান কাজল, বগুড়া-৬ এ আব্দুল্লাহ-আল-ওয়াকি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ এ মু. নাজমুল হুদা খান, নওগাঁর পাঁচটি আসনে কৈলাশ চন্দ্র রবিদাস, মো. মাহফুজার রহমান চৌধুরী, পরিমল চন্দ্র, মো. আব্দুল হামিদ ও মনিরা শারমিন, নাটোরে আব্দুল মান্নাফ ও অধ্যাপক এস. এম. জার্জিস কাদির, সিরাজগঞ্জের চারটি আসনে দিলশানা পারুল, দ্যুতি অরণ্য চৌধুরী, মনজুর কাদের ও এস এম সাইফ মোস্তাফিজ এবং পাবনা-৪ আসনে অধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুল মজিদ লড়বেন।
খুলনা ও বরিশাল বিভাগের প্রার্থীদের মধ্যে মেহেরপুরের দুই আসনে মো. সোহেল রানা ও অ্যাডভোকেট সাকিল আহমাদ, চুয়াডাঙ্গা-১ এ মোল্লা মোহাম্মদ ফারুক এহসান, ঝিনাইদহ-১ এ এডভোকেট লাবাবুল বাসার, যশোর-৪ এ মো. শাহজাহান কবীর, মাগুড়া-২ এ মোহাম্মাদ তরিকুল ইসলাম, বাগেরহাট-২ এ মোল্যা রহমাতুল্লাহ, খুলনার দুই আসনে মো. ওয়াহিদ উজ জামান ও ফরিদুল হক, পটুয়াখালীর দুই আসনে এডভোকেট জহিরুল ইসলাম মুসা ও মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন, ভোলা-১ এ এডভোকেট মো. জিয়াউর রহমান, বরিশালের দুই আসনে আবু সাঈদ মুসা ও মো. নুরুল হুদা চৌধুরী, ঝালোকাঠি-১ এ ডা. মাহমুদা আলম মিতু এবং পিরোজপুর-৩ আসনে ড. মো. শামীম হামিদীকে মনোনয়ন দিয়েছে এনসিপি।
ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের আসনগুলোতে টাংগাইল থেকে সাইদুল ইসলাম, সাইফুল্লাহ হায়দার, মাসুদুর রহমান রাসেল ও খন্দকার মাসুদ পারভেজ; জামালপুর-৪ এ ডা. মো. মোশাররফ হোসেন; শেরপুরের দুই আসনে ইঞ্জিনিয়ার মো. লিখন মিয়া ও খোকন চন্দ্র বর্মণ; ময়মনসিংহের বিভিন্ন আসনে মো. আবু রেহান, কবি সেলিম বালা, মিয়াজ মেহরাব তালুকদার, জাবেদ রাসিন, এডভোকেট এ.টি. এম. মাহবুব-উল আলম, আশিকিন আলম ও তানহা শান্তা; নেত্রকোণায় ফাহিম রহমান খান পাঠান ও প্রকৌশলী ইফতেখার হোসেন সিদ্দিকী এবং কিশোরগঞ্জে আবু সাঈদ ও শেখ খায়রুল কবির আহমেদ লড়বেন। মুন্সিগঞ্জের দুই আসনে আলী নেওয়াজ ও মাজেদুল ইসলাম এবং ঢাকার বিভিন্ন আসনে মো. রাসেল আহমেদ, ডা. জাহিদুল ইসলাম, এস এম শাহরিয়ার, তারেক আহম্মেদ আদেল, নাহিদা সারওয়ার নিভা, আকরাম হুসাইন, মেজর (অব) মুহাম্মদ আলমগীর ফেরদৌস, আরিফুল ইসলাম আদীব, ডা. তাজনূভা জাবীন, ফয়সাল মাহমুদ শান্ত ও ইঞ্জিনিয়ার নাবিলা তাসনিদ মনোনয়ন পেয়েছেন। এছাড়া গাজীপুর-৬ এ ইঞ্জিনিয়ার ফরহাদ সোহেল, নরসিংদীতে মো. আবদুল্লাহ আল ফয়সাল, সারোয়ার তুষার, ডা. মো. মামুনুর রহমান জাহাঙ্গীর ও মো. নাজমুল হক সিকদার, নারায়ণগঞ্জে এডভোকেট আব্দুল্লাহ আল আমিন ও আহমেদুর রহমান তনু, রাজবাড়ী-২ এ সাইয়েদ জামিল, ফরিদপুর-৩ এ সৈয়দা নীলিমা দোলা, গোপালগঞ্জের দুই আসনে প্রলয় কুমার পাল ও মো. আরিফুল দাড়িয়া এবং শরীয়তপুর-১ এ মো. আব্দুর রহমান লড়বেন।
সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের প্রার্থীদের মধ্যে সিলেটে এহতেশাম হক, ব্যারিস্টার নুরুল হুদা জুনেদ ও মো. রাশেল উল আলম, মৌলভীবাজার-৪ এ প্রীতম দাশ, হবিগঞ্জ-৪ এ নাহিদ উদ্দিন তারেক, ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় মাওলানা আশরাফ উদ্দিন মাহদি ও মো. আতাউল্লাহ, কুমিল্লা-৬ এ নাভিদ নওরোজ শাহ, চাঁদপুরে আরিফুল ইসলাম, ইসরাত জাহান বিন্দু ও মো. মাহাবুব আলম, ফেনী-৩ এ মোহাম্মাদ আবুল কাশেম, নোয়াখালীর তিন আসনে ব্যারিস্টার মো. ওমর ফারুক, এডভোকেট হুমায়রা নূর ও আব্দুল হান্নান মাসউদ, চট্টগ্রামের বিভিন্ন আসনে মহিউদ্দিন জিলানী, মো. জোবাইরুল হাসান আরিফ, মো. রিয়াজুল আনোয়ার চৌধুরী সিন্টু, সাগুফতা বুশরা মিশমা, মোহাম্মদ আজাদ দোভাষ, জুবাইরুল আলম মানিক, মুহাম্মদ হাসান আলী, আবদুল মাবুদ সৈয়দ ও মীর আরশাদুল হক, কক্সবাজারে মো. মাইমুল আহসাম খান, আবু সাঈদ মোহাম্মদ সুজা উদ্দিন ও মুহাম্মদ হোসাইন, খাগড়াছড়িতে এডভোকেট মনজিলা সুলতানা, রাঙ্গামাটিতে প্রিয় চাকমা এবং বান্দরবানে মংসা প্রু চৌধুরীকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এটি তাদের প্রার্থী তালিকার প্রথম অংশ। দ্বিতীয় ধাপে রাষ্ট্র সংস্কারে আগ্রহী বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীদেরও বিবেচনায় রাখা হবে।
চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের অর্জিত বিজয় ও শহীদদের আত্মত্যাগ যাতে কোনোভাবেই বৃথা না যায়, সেজন্য দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে জাতীয় ঐক্য ধরে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, নিজেদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকতেই পারে, কিন্তু তা যেন গণঅভ্যুত্থানের অর্জনকে ম্লান না করে দেয়।
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্যাহ ও তার সহধর্মিণী সালমা আলো প্রণীত গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বিএনপি মহাসচিব জুলাই গণঅভ্যুত্থানের তাৎপর্য তুলে ধরে বলেন, এই অভ্যুত্থানের বিজয়কে সুসংহত করা এখন সকলের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। শহীদদের রক্ত ও আত্মাহুতির মর্যাদা রক্ষায় সবাইকে সজাগ থাকার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, রাজনৈতিক বা আদর্শিক মতভিন্নতা থাকা স্বাভাবিক, কিন্তু জাতীয় স্বার্থে এবং শহীদদের ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সেই বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
অনুষ্ঠানে ড. মাহবুব উল্যাহর অবদানের কথা স্মরণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, বৈষম্যহীন অর্থনীতি এবং আধিপত্যবাদবিরোধী রাষ্ট্র ও সমাজ গঠনে ড. মাহবুব উল্যাহর লেখনী ও চিন্তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র দেশের জনগণ সফল হতে দেবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি জনমত জরিপের প্রসঙ্গ টেনে নজরুল ইসলাম খান বলেন, আগামী নির্বাচনে কোন দল বেশি আসন পাবে—এমন প্রশ্নের জবাবে শতকরা ৬৬ ভাগ উত্তরদাতা বিএনপির পক্ষে মত দিয়েছেন। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে মত দিয়েছেন ২৬ ভাগ মানুষ, যেখানে দুই দলের ব্যবধান প্রায় ৪৪ শতাংশ। এছাড়া অন্যান্য উল্লেখযোগ্য দলগুলোর জনসমর্থন ১ শতাংশেরও নিচে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, বিএনপির এমন বিপুল জনসমর্থন দেখে হতাশ হয়ে কেউ কেউ ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিতে পারে। তবে জনগণ যেহেতু তাদের মনস্থির করে ফেলেছে, তাই তারা কোনো ষড়যন্ত্রই বাস্তবে রূপ নিতে দেবে না।
ফ্যাসিবাদের পতন এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠাই ছিল এক দফার মূল লক্ষ্য—এমন মন্তব্য করে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, এক দফার প্রথম অংশ অর্থাৎ ফ্যাসিবাদের পতন ঘটানো সম্ভব হয়েছে। এখন বাকি অংশটুকু, অর্থাৎ সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান দায়িত্ব। তিনি বলেন, দেশের জনগণ মাত্র কিছুদিন আগেই সিন্দাবাদের দৈত্যের মতো ঘাড়ে চেপে বসা একটি খুনি ও নিপীড়নকারী ফ্যাসিবাদী সরকারকে উৎখাত করেছে।
নজরুল ইসলাম খান দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, বিজয়ী এই জনগণ কোনো ষড়যন্ত্রকেই প্রশ্রয় দেবে না। অতীতেও কোনো ষড়যন্ত্র এই জনগণকে পরাজিত করতে পারেনি এবং ভবিষ্যতেও পারবে না। উল্লেখ্য, বিএনপি আয়োজিত কয়েক দিনব্যাপী ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনার কর্মসূচি’র অংশ হিসেবে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (বিএলডিপি) চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম নিজের দলকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। ঘরে ফিরেই তিনি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনের ধানের শীষের টিকিট নিশ্চিত করেছেন। একইসঙ্গে লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি ও কমলনগর) আসনে এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান ধানের শীষ প্রতীকে লড়বেন বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
সোমবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর হাতে ফুল দিয়ে বিএনপিতে যুক্ত হন শাহাদাত হোসেন সেলিম। এ সময় আমীর খসরু জানান, বিগত দিনের আন্দোলন-সংগ্রামে অবদানের কথা বিবেচনায় রেখে এবং এই মনোনয়ন সেলিম নিজেই অর্জন করেছেন উল্লেখ করে তাকে লক্ষ্মীপুর-১ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি জোটের প্রার্থী হিসেবে এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
অনুষ্ঠানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি লক্ষ্মীপুরের চারটি আসনের দলীয় প্রার্থীর বিষয়গুলো পরিষ্কার করেন। তিনি জানান, শাহাদাত হোসেন সেলিম লক্ষ্মীপুর-১ আসন থেকে নির্বাচন করবেন। এছাড়া লক্ষ্মীপুর-২ আসনে সাবেক এমপি আবুল খায়ের ভূঁইয়া, লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি নিজে এবং লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান ধানের শীষের নেতৃত্ব দেবেন।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের মাধ্যমে রাজনীতি শুরু করা শাহাদাত হোসেন সেলিম দীর্ঘ ২৫ বছর পর বিএনপিতে ফিরতে পেরে নিজের অনুভূতির কথা জানান। বিএলডিপি বিলুপ্ত ঘোষণা করে তিনি বলেন, ‘কোনো কারণে আমাকে বিএনপি ছাড়তে হয়েছিল, কিন্তু হৃদয়ে সবসময় বিএনপিকে ধারণ করেছি এবং বিগত সময়ে বিএনপির সঙ্গেই আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। ২৫ বছর পর ঘরের ছেলে ঘরে ফিরতে পেরে আমি গর্বিত।’ এ সময় তিনি দলে নতুন যোগ দেওয়া সবাইকে যথার্থ মূল্যায়নের আহ্বান জানান এবং আগামী দিনে বিএনপির হাতকে আরও শক্তিশালী করার ওয়াদা করেন।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর ব্যক্তিগত পরিচয়ের চেয়ে দলীয় প্রতীক ‘ধানের শীষ’ এবং দেশকেই প্রাধান্য দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি এই দিকনির্দেশনা দেন।
তারেক রহমান নেতাকর্মীদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, নির্বাচনের মাঠে ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, দল থেকে ঘোষিত প্রার্থী হয়তো সবার ব্যক্তিগত পছন্দের নাও হতে পারে কিংবা প্রার্থীর সঙ্গে সম্পর্কের ঘাটতিও থাকতে পারে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, আপনারা কোনো ব্যক্তির জন্য নয় বরং ধানের শীষের বিজয়ের জন্য কাজ করছেন। এখানে ব্যক্তি প্রার্থী গৌণ; মুখ্য হলো বিএনপি, ধানের শীষ এবং দেশ।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, এখন আর বসে থাকার সময় নেই। আগামী দুই মাস একমাত্র কাজ হলো দেশের মানুষের কাছে যাওয়া এবং বিএনপির দেশ গড়ার পরিকল্পনাগুলো তুলে ধরা। তিনি বলেন, জনগণ যদি ধানের শীষের পক্ষে রায় দেয়, তবে খাল খনন, পরিবেশ উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের সংস্কার, বেকারত্ব দূরীকরণসহ ফ্যামিলি কার্ড, ফার্মার্স কার্ড ও হেলথ কার্ডের মতো জনকল্যাণমূলক পরিকল্পনাগুলো যে কোনো মূল্যে বাস্তবায়ন করা হবে।
তিনি নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন, এই পরিকল্পনাগুলো কেবল কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ না রেখে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে এবং তাদের সমর্থন আদায় করতে হবে। ছাত্রদলের সারা দেশের ৭৫টি ইউনিটের সহস্রাধিক নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে তারেক রহমান দেশ গড়ার কাজে জনগণকে সম্পৃক্ত করার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।
জামায়াতে ইসলামী ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে বিভাজন সৃষ্টি করছে। ঘৃণা ও সহিংসতার রাজনীতি উসকে দিচ্ছে বলে অভিযোগ এনেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) দলের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ৭ ডিসেম্বর এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেনকে উদ্দেশ করে দেওয়া জামায়াতের বক্তব্যকে ‘অসত্য, মনগড়া ও বিভ্রান্তিকর’ আখ্যা দেওয়া হয়।
এতে বলা হয়, এনসিপি তা প্রত্যাখ্যান করছে এবং এর বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও কঠোর প্রতিবাদ জানাচ্ছে। এনসিপি মনে করে, জামায়াতের এই বিবৃতি বাস্তবতাবিবর্জিত, রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত এবং জনমত বিভ্রান্ত করার স্পষ্ট অপচেষ্টা।
এনসিপি মনে করে, ৫ আগস্ট পরবর্তী নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তে তারা পুরোনো সহিংস ও আধিপত্যবাদী রাজনীতির পথে ‘নতুন খেলোয়াড়’ হিসেবে আবির্ভূত হতে চাচ্ছে। যা দেশের জন্য অশুভ সংকেত।
এনসিপির দাবি, গত ৬ ডিসেম্বর রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে ন্যাশনাল প্রফেশনালস অ্যালায়েন্স (এনপিএ)-এর আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেন সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনার প্রমাণনির্ভর যে মন্তব্য করেন, তা সম্পূর্ণ তথ্যসম্মত ও দায়িত্বশীল। কারণ ২৭ নভেম্বর পাবনার ঈশ্বরদীতে নির্বাচনি প্রচারণাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে গুলি চালানো তুষার মণ্ডল যে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী, তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেছে এবং অস্ত্র-গুলিসহ তাকে গ্রেফতার করেছে। এমন স্পষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও বাস্তবতা অস্বীকার করা সত্য গোপন ও দায় এড়ানোর নিন্দনীয় অপচেষ্টা ছাড়া অন্য কিছু নয়।
এনসিপি আরও জানায়, সহিংসতা, অস্ত্রনির্ভরতা ও ধর্মের অপব্যবহার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিপন্থি। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে সব রাজনৈতিক দলের দায়িত্বশীল আচরণ অপরিহার্য। জামায়াতকে সত্য, শান্তি ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পক্ষে সুস্পষ্ট অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে এনসিপি।