বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, জাতির সঙ্গে গাদ্দারি করলে, তাদের সেবক হয়ে মালিক বনে গেলে কী পরিণতি হয় তা থেকে আমি-আমরা এবং জাতিকে শিক্ষাগ্রহণ করতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি আর কোনো স্বৈরাচার সরকার আসবেনা যারা ক্ষমতায় থাকাবস্থায় জনগণকে তাদের কেনা টাকায় বুলেট ছোড়ার দুঃসাহস করবে। এমন কোনো নতুন সন্ত্রাসী সরকারকে আর দেখতে চাইনা।
আজ শুক্রবার সকালে গাজীপুরে ছাত্র আন্দোলনে নিহত শহিদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে জামায়াত আমির শহিদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন এবং তাদের খোঁজ খবর নেন।
‘যত বিভাজন, তা আমরা পায়ের নিচে ফেলে দিয়েছি’ উল্লেখ করে জামায়াতের আমির বলেন, দল ও ধর্মের ভিত্তিতে আর কোনো বিভাজন জামায়াতে ইসলামী মানবে না। রাজনীতিতে কোনো ব্রাহ্মণ নীতি চলবেনা। দেশের স্বার্থে আমাদের কোনো বিভাজন নেই। আর কাউকে জাতিকে ভাগ করার সুযোগ দেব না। জাতিকে তারাই ভাগ করে যারা দেশের দুশমন। দলের ভিত্তিতে, ধর্মের ভিত্তিতে আর ভাগ করার সুযোগ দেওয়া হবে না। এক্ষেত্রে আমরা আপোষহীন।
শফিকুর রহমান বলেন, কোনো দুর্বৃত্তকে আদালতের চেয়ারে আর দেখতে চাই না। যারা বিচারের আমানত রক্ষা করতে পারবে তাদের বিচারক হিসেবে চাই। যারা মুখের দিকে তাকিয়ে কোনো বিচার করবে না। নীতি-নৈতিকতা ও সাক্ষীর ওপর ভিত্তি করে রায় দেবেন। বিচার বিভাগ স্বাধীন থাকতে হবে। সাক্ষী প্রমাণের ভিত্তিতে বিচার হতে হবে সঠিক।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের স্বীকৃতি দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা দলীয় ভিত্তিতে শহিদদের বিভক্তি চাইনা। তারা আমাদের মর্যাদার পাত্র। পাঠ্যপুস্তক কারিকুলামে আগামী দিনের নাগরিকরা যেন জানে তাদের মুগ্ধ, সাঈদ, রিয়ারা ছিল।’ এসময় তিনি প্রত্যেক শহিদ পরিবারের একজন সদস্যকে সরকারি চাকরি দেওয়ার দাবি জানান।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন মহানগর জামায়াতের আমির অধ্যাপক মুহা. জামাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ ইজ্জত উল্লাহ, মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমীর খায়রুল হাসান, সহকারী সেক্রেটারি হোসেন আলী, মজলিসের শূরা সদস্য আফজাল হোসেন, প্রচার সম্পাদক সালাউদ্দিন আইয়ুবী প্রমুখ।
দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র চলছে উল্লেখ করে সংস্কার প্রক্রিয়া বিলম্ব না করে দ্রুত সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক।
তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে, যা সংস্কার প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করছে। আমি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এ বিষয়ে সজাগ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’
অবস্থান কর্মসূচিতে তিনি আরও বলেন, নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করতে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে জরুরি ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশনের সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ঢাকার সেনবাগ ফোরাম এ মানববন্ধনের আয়োজন করে। এসময় ভারতে পালিয়ে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবিলম্বে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানান ফারুক।
ফারুক দাবি করেন, বাংলাদেশে ইলিয়াস আলী ও চৌধুরী আলমের গুম এবং বহু বিরোধী নেতাকর্মীকে হত্যার সঙ্গে জড়িত শেখ হাসিনাকে বিশেষ নিরাপত্তার মধ্যে দিল্লির একটি পার্কে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে।
বিএনপি নেতা বলেন, একসময় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের কাছে গর্ব করা দেশটির রাজধানী দিল্লির একটি পার্কে হেঁটে বেড়াচ্ছেন শেখ হাসিনার মতো একজন স্বৈরশাসক। অথচ ভারত গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বিশ্বের কাছে গর্ব করে।
তিনি বলেন, 'আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে দাবি জানাচ্ছি, সেই শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনুন, যার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। তাকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে।’
ফারুক বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়া সিন্ডিকেটের সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেত্মারা জড়িত।
তিনি বলেন, ‘আলু সিন্ডিকেট, পেঁয়াজ সিন্ডিকেট ও চিনি সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িতরা আবারও সতর্ক হয়ে ষড়যন্ত্র করছে।’
আওয়ামী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে বলেও জানান বিএনপি নেতা। ‘আমরা যত বেশি অপেক্ষা করব, তত বেশি তারা নিজেদের জাহির করবে... তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে এবং তাদের থাবা ভাঙতে হবে।’
২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেনের সময় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা চাঁদাবাজির চারটি মামলার কার্যক্রম বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার এ আদেশ দেন। আদালতে তারেক রহমানের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার সানজিদ সিদ্দিকী।
ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন জানান, ২০০৩ ও ২০০৪ সালে চাঁদাবাজি করেছেন- এমন অভিযোগ এনে দুই জন ব্যবসায়ী ২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেনের সময় কাফরুল থানায় চারটি চাঁদাবাজির মামলা করেন। এসব মামলা জরুরি ক্ষমতা বিধিমালার আওতায় আনার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করা হয়। ২০০৮ সালেই মামলাগুলোর কার্যকারিতা স্থগিত করে এসব মামলার কার্যক্রম কেন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। এই রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি করে হাইকোর্ট মামলাগুলো বাতিল করেছেন।
মাহবুব উদ্দিন খোকন আরও বলেন, এ মামলায় খায়রুল কবির খোকনও আসামি ছিলেন। এখন মামলাগুলো আর কারও বিরুদ্ধে চলবে না।
জানা গেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৭ মার্চ তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করে যৌথ বাহিনী। এরপর তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, আয়কর ফাঁকি, অবৈধ সম্পদ অর্জন, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৫টি মামলা করা হয়। পরে ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্ত হয়েই উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যান তিনি। বর্তমানে সেখানেই অবস্থান করছেন তিনি।
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসররা তাদের কালো টাকা ও বেআইনি অস্ত্র নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান ও মহড়া দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
গতকাল সোমবার ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী শহীদ শাইখ আসহাবুল ইয়ামিনের কবর জিয়ারত শেষে তিনি এসব কথা বলেন। পরে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, মানুষ দু-মুঠো যাতে খেতে পারে এজন্য বাজার সিন্ডিকেট, মার্কেট সিন্ডিকেট যারা এতদিন ধরে করে রেখেছে, তাদের গ্রেপ্তার করুন। আমরা অল্প কিছু ড্রাইভ দেখতে পাচ্ছি, ব্যাপক ড্রাইভ আমরা দেখতে পাচ্ছি না। গণতন্ত্র তো হলো শান্তির পথে মানুষ যাতে বসবাস করতে পারে এবং খোলা গলায় যাতে মানুষ সমালোচনা করতে পারে, কথা বলতে পারে এটাই তো গণতন্ত্র। আইনের শাসন থাকবে, কে কোন দল করে সেটা বড় কথা নয়। যে অন্যায় করবে তাকেই পুলিশ ধরবে- এটাই গণতন্ত্র।
তিনি বলেন, গণতন্ত্র মানে শুধু নির্বাচন না, নির্বাচন গণতন্ত্রের একটি উপাদান। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন একটি উপাদান। সেখানেও একটি জটিলতা দেখছি। আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে আসছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশ তৈরি করুন। যাতে মানুষ ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তার পছন্দমতো ব্যক্তিকে ভোট দিতে পারে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, গতকাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগের লোকজন গোলাগুলি করেছে। আওয়ামী লীগের লোকজন জন-অরণ্যের মধ্যে লুকিয়ে থেকে প্রয়োজন মতো বের হয়ে তারা দেশকে অস্থিতিশীল করবে। যে কারণে অন্তর্বর্তী সরকারকে বিএনপি বারবার চাপ দিয়ে আসছে। যদি ফ্যাসিবাদের পুনর্জীবন ঘটে, তাহলে এর দায় তাদের নিতে হবে।
তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের এত দিন পার হলেও বেআইনি কোনো অস্ত্র উদ্ধার করতে পারছেন না।
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলটির ডাকা আজ শনিবারের সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ কথা জানায় দলটি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স ২৯ ধারার ক্ষমতাবলে (সভাস্থল) পাইওনিয়ার রোডের ৬৬ নম্বর ভবন, কাকরাইলসহ আশপাশের এলাকায় যেকোনো সভা, সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ প্রদর্শন নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।
জাতীয় পার্টি আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি সাময়িক স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরবর্তী কর্মসূচি জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেওয়া হবে।
এর আগে শনিবার দুপুর ২টায় রাজধানীর কাকরাইলে মিছিল ও সমাবেশের ঘোষণা দেয় দলটি। চেয়ারম্যান ও মহাসচিবসহ দলের নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ছাড়াও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের দাবিতে এ সমাবেশ ডেকেছিল জাতীয় পার্টি। একইদিন জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে গণপ্রতিরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতা। এ অবস্থায় অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে রাজধানীর কাকরাইল ও আশপাশের এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।
ডিএমপি কমিশনার মাইনুল হাসান স্বাক্ষরিত গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সর্বসাধারণের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে সম্প্রতি উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় জনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স (অর্ডিন্যান্স নম্বর ১১১-৭৬)–এর ২৯ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে আগামীকাল শনিবার পাইওনিয়ার রোডের ৬৬ নম্বর ভবন, পাইওনিয়ার রোড, কাকরাইলসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় যেকোনো ধরনের সভা, সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা, বিক্ষোভ প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হলো।
জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘আমাদের দেশের আকাশে সাড়ে ১৫ বছর কালো মেঘের ছায়া ছিল। মেঘ কেটে যায়নি। আমরা সবাই সচেতন নাগরিক হিসেবে এটা টের পাচ্ছি। এই সময়ে জাতীয় ঐক্যের বড়ই প্রয়োজন। এই সময়টা বিভক্তির নয়। এই সময়টা ব্যক্তি স্বার্থ দেখার নয়। এই সময়টা দলীয় স্বার্থও দেখার নয়। এই কথাটা আমরা যেন বুঝি, আমরা যেন মেনে চলি।’
শুক্রবার রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নবনির্বাচিত আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় তিনি গণ-আন্দোলনে আওয়ামী লীগ বিদায় নিলেও ‘জুলুম’ শেষ হয়নি বলেও মনে করেন। তাই এমন সময়ে জাতীয় স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াত আমির।
জামায়াত আমির বলেন, ‘আমাদের জাতি বড়ই মজলুম। সাড়ে ১৫ বছরের জুলুমের সবকিছু শেষ হয়ে যায়নি। এখনো তার অনেক রেশ রয়ে গেছে। আবার নতুন-নতুন অনেক সমস্যাও দেখা দিচ্ছে।’
ঐক্যের প্রসঙ্গে নিজেদের দৃঢ় প্রত্যয়ের ঘোষণা দিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে কথা দিচ্ছি, এই আওয়াজে আমরা সবার আগে দৌড়ে যাব ইনশা আল্লাহ। দুনিয়ার বিভিন্ন জায়গায় জাতিসত্তার অনেক উত্থান-পতন হয়েছে। আমাদের এই জাতি স্বাধীনতার ৫৩ বছরে অনেক উত্থান-পতন দেখেছে।’
জুলাই বিপ্লবের’ অর্জন জামায়াতের নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা অকপটে স্বীকার করি, এটি আমাদের অর্জন নয়। আমাদের চেষ্টার ফসল নয়। বরং এটি আল্লাহতায়ালার একান্ত মেহেরবানি।’
অন্যান্য ইস্যু থেকে সরে এসে যত দ্রুত সম্ভব অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের দিকে নজর দিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
'জাতি হিসেবে টিকে থাকতে হলে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই' এ কথা উল্লেখ করে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আমাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করা। কারণ, আমরা সবাই রাজনৈতিক কর্মী। আমরা রাজনীতি করি দেশ ও দেশের মানুষের জন্য। তাই, অল্প সময়ের মধ্যে আপনারা (অন্তর্বর্তী সরকার) একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন-এটা আমাদের প্রত্যাশা।’
বুধবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে সার্চ কমিটির ঘোষণার প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন,‘আমাদের প্রত্যাশা ছিল সার্চ কমিটি ঘোষণার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ব্যবস্থা করে দলগুলোর পরামর্শ নেওয়া হবে। কিন্তু তা করা হয়নি। তবে এটাকে বড় ধরনের সমস্যা মনে করছি না। আমরা মনে করি- দ্রুত ইলেকশন কমিশন হোক এবং ইলেকশন কমিশন অতি দ্রুততার সঙ্গে তাদের কাজটা করবে।'
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, অন্তর্বর্তী সরকারের ভিন্ন কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা নেই। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে দেশের মানুষ ভালবাসে। এজন্য তাঁর অবশ্যই খেয়াল রাখা উচিত, যাতে মানুষের কাছে তাঁর এ অবস্থান নষ্ট না হয়। আমরা প্রত্যাশা করবো, সংস্কার কমিটির সদস্যরা দ্রুতই সকল রিপোর্ট জনগণের সামনে উন্মুক্ত করবেন। তবে, এমন কিছু করা যাবে না, যা দেশ ও সংস্কৃতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়।’
রাষ্ট্র মেরামত কিংবা পরিবর্তন অথবা সংস্কার - যেটাই বলা হোক না কেন তা অবশ্যই করতে হবে যুগোপযোগী- এ কথা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা কঠিন এক সময় পার করছি। এই সময়ে আবেগের বশবর্তী হয়ে কোনো কাজ করলে রাষ্ট্র বিপদে পড়ে যেতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারে পলিটিক্যাল কোনো লোক নেই। আর রাজনীতিবিদ ছাড়া কোনো সংস্কারই সফল হতে পারে না। তাছাড়া, বাংলাদেশের রাজনীতিও সহজ নয়। তবে, আমরা ধৈর্য্যের সঙ্গে কাজ করছি।
বিগত আওয়ামী লীগের বিগত ১৫ বছরে ১ লাখ ২৫ হাজার মামলায় সারা দেশের ৬০ লাখ মানুষকে আসামি করার কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখানে এমন লোক খুব আছে, যারা কারাগারে যায়নি, এমন লোক কম আছে, যারা মামলা খায়নি। ফাঁসি থেকে শুরু করে হত্যা, গুম, খুন—সবকিছু এই দেশে আওয়ামী লীগ করেছে। সেখানে রাতারাতি আমরা সব পরিবর্তন করে ফেলতে পারব না...একটা সময় দিতে হবে, ধৈর্য ধরতে হবে,...টলারেন্স। আমরা আশা করব, অতি দ্রুত এবং তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) অবশ্যই চেষ্টা করছে।’
এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক পার্টি- ‘জাগপা’র চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার লুৎফর রহমান প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ‘আমরা বলতাম হাসিনাবিহীন বাংলাদেশ চাই- আজকে হাসিনাবিহীন বাংলাদেশ পেয়েছি, এখন আওয়ামীবিহীন বাংলাদেশ করতে হবে।
সোমবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত এক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আওয়ামী লীগ, ভদ্রলোক আর আওয়ামী লীগের গণতন্ত্র পাশাপাশি চলতে পারে না।’
তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগ চলে গেছে, আমরা ভেবে ভেবে খুশি হই। কিন্তু খুশি হওয়ার কোনো কারণ নেই। এদের চর-অনুচর এখনো বাংলাদেশের রাজনীতি, সংস্কৃতি, সচিবালয়, পুলিশ, মিলিটারি- যেখানে বলেন, এদের চর রয়ে গেছে। এদের রেখে কোনো পরিস্থিতিতেই আপনি পরিপূর্ণ গণতন্ত্র বাংলাদেশে কায়েম করতে পারবেন না।’
আব্বাস বলেন, 'জামায়াতে ইসলামী, বিএনপি ও অন্যান্য দল বিভিন্ন কথা না বলে, যদি একটি কথায় আসতে পারি, যদি ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে পারি, তাহলে দেশটা পুনর্গঠিত হবে। না হলে এই দেশটা নিয়ে সারা জীবন আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত কিন্তু খেলতেই থাকবে। এটা কখনোই হতে দেওয়া যাবে না।'
জামায়াত নেতাকর্মীদের বিএনপি চেয়ারপাসন বেগম খালেদা জিয়ার সালাম ও শুভেচ্ছা জানান মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, গত রাতে তিনি দলের চেয়ারপারসনকে জামায়াতের আলোচনা সভায় অংশ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, 'বিগত দিনে কোনো এক সময় হয়তো আমরা একসঙ্গে হতে পারিনি। কোনো এক সময় হয়তো একসঙ্গে হয়ে আওয়ামী লীগকে তাড়িয়েছিলাম। আমরা আগামী দিনে সব সময়ের জন্য, দেখি চেষ্টা করে পারি কি না, একসঙ্গে হয়ে এই দেশটাকে আবারও সুন্দর করে পুনর্গঠিত করতে পারি কি না।'
সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, নানা ধরনের সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টির জন্য চেষ্টা চলছে, পাঁয়তারা চলছে।
বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে রোববার এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের উদ্যোগে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু করে ৫ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত রাজধানীতে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে শাহাদাতবরণকারী শহিদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এ মতবিনিময় সভা, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সংবিধানের সংকট যদি হয়, রাষ্ট্রীয় সংকট যদি হয়, রাজনৈতিক সংকট যদি হয়, সেই সংকটের পিছে কী শক্তি আছে সেইটা আমাদের আগেই অ্যানালাইসিস করতে হবে। বিপ্লবের পরে বিপ্লবের ফসল ছিনতাই হয়ে যায় নাকি সেটা চিন্তা করতে হবে। সুতরাং রাষ্ট্রীয় সংকট যাতে সৃষ্টি না হয়, সাংবিধানিক সংকট যাতে সৃষ্টি না হয়, সেই সংকট সামনে রেখে পতিত ফ্যাসিবাদ যাতে সুযোগ নিতে না পারে সেই বিষয়ে আমাদের সজাগ থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে। আমাদের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নেই। ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ জনতার দাবি। সিদ্ধান্ত সারা দেশে প্রশংসিত হয়েছে, সবাই গ্রহণ করেছে।’ আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ করা জনতার দাবি উল্লেখ করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, ‘গুলি করে ছাত্র মারার পর আওয়ামী লীগ আবার এই দেশে রাজনীতি করার সুযোগ পাবে কিনা তা জনতার আদালতে সিদ্ধান্ত হবে। ট্রাইবুনালে একটা সংশোধনী আনার কথা শুনছি। সংগঠন হিসেবে, রাজনৈতিক দল হিসাবে যদি গণহত্যার সঙ্গে জড়িত হয় তাহলে রাজনৈতিক দলের প্রধান হিসাবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও দলের বিচার হবে। সেই সংশোধনী যদি আইনে আনে এবং ট্রাইবুনালে যদি বিচার হয় সেই বিচারের ফলাফল কী হয় তখন দেখা যাবে। আমরা এখন কোনো ফয়সালা দিতে চাই না। গণহত্যাকারী কোন দল বাংলাদেশের রাজনীতি করতে পারবে কি না তা আদালত ও দেশের জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে।’
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘প্রশাসনিক আদেশে বা আমি-আপনি চাইলে কেউ নিষিদ্ধ হোক সেই দায়িত্ব আমরা নিতে চাই না। দেশের জনগণ যদি চায় তাহলে জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দল হিসেবে সিদ্ধান্ত নেবে।’ এদিকে গতকাল সকালে সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ এলডিপির প্রতিনিধি সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, ‘এখন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ঘোলাটে করার জন্য একটা প্রগতিশীল চক্র চেষ্টা করে যাচ্ছে। তার ইঙ্গিত বহন করে বঙ্গভবনের সামনে হওয়া মিছিল। নতুন করে আরেকটা রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করার চক্রান্ত আমরা দেখতে পাচ্ছি। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অস্থিতিশীল করার জন্য ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ১২ দলীয় জোটসহ সবাইকে প্রস্তুতি নিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকার আমাদের ওপর অনেক নির্যাতন ও নিপীড়ন করেছে। চৌধুরী আলম-ইলিয়াস আলীসহ হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে গুম-খুন করেছে। নির্যাতনের জন্য আয়নাঘর তৈরি করেছে। হারুন- বিপ্লবদের মতো লোক তৈরি করে বহু মায়ের বুক খালি করেছে।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বলেন, রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করেছে শেখ হাসিনা। ষড়যন্ত্র করে সংবিধান পরিবর্তন যদি না হতো, তাহলে সংসদীয় রাজনীতির মাধ্যমে এই দেশ পরিচালিত হতো। কিন্তু সেই সংসদীয় রাজনীতিকে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আড়াই মাস অতিক্রান্ত হয়েছে। এখনো বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের রাজনৈতিক মামলা প্রতাহ্যার হলো না। মন্ত্রণালয়ের যারা দায়িত্বে আছেন তারা এখনো শ্বেতপত্র প্রকাশ করেনি। কোন মন্ত্রণালয় কত হাজার কোটি টাকা লুট করেছে, তাও প্রকাশ করা হচ্ছে না।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘আপনার প্রতি আমাদের বিশ্বাস আছে, এটা টিকিয়ে রাখতে হলে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশে নির্বাচনের তারিখ অবিলম্বে আপনি ঘোষণা করেন। তাহলে আমরা বুঝতে পারব, দেশ কোনো দিকে যাচ্ছে। যারা রাজনীতি করে তারাই দেশ পরিচালনা করবে। আমরা আশা করব, অবিলম্বে শেখ হাসিনার জঞ্জাল মুক্ত করবেন।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। সময় এসেছে জনগণের ভোটের মধ্য দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার। বিএনপি আগেই ৩১ দফা দিয়েছে। এখান থেকে সংযোজন বিয়োজন করে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই নির্বাচনী সংস্কার সম্ভব।
শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির ষষ্ঠ কাউন্সিল অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
যে জাতীয় ঐক্যের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার পতন হয়েছে তা ধরে রাখতে সব রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার পরে বাংলাদেশের মানুষের মনোজগতের পরিবর্তন এসেছে। মানুষের আকাঙ্ক্ষা জেগেছে। মানুষের নতুন ভাবনা জেগেছে। আগামীর বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হলে আমাদের এই জাতীয় ঐক্য অটুট রাখতে হবে। এই জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে আমাদের গন্তব্য সুন্দর করতে হবে। সেই গন্তব্যস্থলটা কোথায়? সেই গন্তব্যস্থল হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের মালিকানা তাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া।
আমীর খসরু বলেন, গত ১৫-১৬ বছর ধরে দেশে জনগণের কোনো ক্ষমতা ছিল না। আওয়ামী সরকার মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে তাদের বঞ্চিত করেছে। এখন সময় এসেছে জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনের নজরদারিতে থাকতাম। জেলে যাওয়ার আশঙ্কা সব সময় থাকত। এখন একটু রাতে ঘুমাতে পারছি।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক আব্দুল হালিম, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘দেশ পরিচালনার দায়িত্ব কখনো জামায়াতে ইসলামী পেলে মালিক হিসেবে নয়, সেবক হিসেবে কাজ করবে। বাংলাদেশকে একটি মানবিক বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলা হবে।’ নওগাঁর নওজোয়ান মাঠে আজ শনিবার দলটির নওগাঁ জেলার সদস্য (রুকন) সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াতের আমির বলেন, জনগণের সহযোগিতা ও সমর্থনের জন্য তাদের দুয়ারে দুয়ারে যাব এবং কৃতজ্ঞতা আদায় করার সুযোগ নেব। যারা অতীতে মালিক হয়েছেন তাদের পরিণতি চোখের সামনে আমরা দেখতে পেয়েছি। দূর অতীতেও দেখেছি, নিকট অতীতেও দেখেছি। এর থেকে সকল রাজনৈতিক দলের শিক্ষা নেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, ‘মানুষের সঙ্গে গাদ্দারি করলে কী হয়, ধোঁকা দিলে কী হয়, মালিক বনলে কী হয়, জুলুম করলে কী হয়, লুট করলে কী হয়, অপরাধ করলে কী হয়, ব্যাংকিং সেক্টর থেকে অর্থ লুট করলে কী হয়- এর থেকে আমাদের সকলের শিক্ষা নেওয়া উচিত।’
‘আমরা আশা করব, আমরা সবাই শিক্ষা নেবে। তাহলে আগামীতে আমাদের সন্তানেরা যেজন্য জীবন দিয়েছে ও পুঙ্গত বরণ করেছে, তাদের আশা পূরণ হব। এই যাত্রায় আমরা আমাদের সাংবাদিক বন্ধুদের বিশেষ সহযোগিতা চাই। তারা যেন আমাদের সোজা-সাপটা কথাগুলো তুলে ধরে।’
ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে শফিকুর রহমান বলেন, ‘একটা কথা স্পষ্ট করতে চাই। যারা একটা জাতিকে বিভিন্ন ধোয়া তুলে টুকরা টুকরা করে তারা কোনো দিন জাতির মঙ্গল চায় না। এই বিভক্তি আর চলতে দেওয়া যায় না। দেশ ও জাতিকে সামানের দিকে এগিয়ে নিতে হবে, দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার পক্ষে জামায়াতে ইসলামী। আমরা মানুষকে মানুষের মর্যাদা দিতে চাই। আমরা দল ও ধর্মের ব্যবধান না করে মানুষকে দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’
জামায়াতে ইসলামীকে বাংলাদেশের সবচাইতে মজলুম দল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে খুন, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অপরাধের একটা স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছিল আওয়ামী লীগ। আমাদের কলিজার টুকরা নেতৃত্বকে বিচারের নামে প্রহসন করে তারা হত্যা করেছে। আমরা শত শত কর্মীকে হত্যা করেছে। অসংখ্য নেতাকর্মীকে গুম করেছে। ঘরবাড়ি ধ্বংস করেছে।’
‘বাংলাদেশের সবগুলো জামায়াতের ইসলামীর কার্যালয় সিলগালা করেছে। আমাদের দলের নিবন্ধন অন্যায়ভাবে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। দিশেহারা এ বছরের পহেলা আগস্ট আমাদের দলকে তারা নিষিদ্ধ করেছে। এই বিবেচনায় বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সবচেয়ে মজলুম দল। এর চেয়ে মজলুম দল আর বাংলাদেশে নাই।’
শফিকুর রহমান বলেন, ‘সাড়ে ১৫ বছর আগে এই আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। সর্বশেষ জুলাই আন্দোলনে আমাদের সন্তানেরা বুকের তাজা রক্ত রাজপথে ঢেলে দিয়েছে। রাজপথে আমরা আমাদের সন্তানদের নামাজ আদায় করতে দেখেছি। এই আন্দোলন কোনো নির্দিষ্ট আদর্শের ছিল না। এই আন্দোলন মানুষের মুক্তির সংগ্রামের আন্দোলন ছিল।’
‘এই আন্দোলনের মূল কৃতিত্ব আল্লাহর। এই আন্দোলনকে বাস্তবায়ন করেছে আমাদের সন্তানেরা। দেশের ১৮ কোটি মানুষ এই আন্দোলনের সাথে ছিল। নির্দিষ্ট কোনো দলের ভিত্তিতে এই আন্দোলনকে বিভক্ত করতে চাই না। এখন আমাদের অ্যাসিড টেস্ট শুরু করেছে। দেশের প্রত্যাশা পূরণ করতে তরুণেরা যেই দেশপ্রেম বুকে নিয়ে শহীদ হয়েছে, পুঙ্গত বরণ করেছে তা পূরণ করার দায়িত্ব নিয়েছে বর্তমান সরকার। আমরা যারা রাজনীতিবিদ রয়েছি তাদেরও দায়িত্ব রয়েছে।’
নওগাঁ রুকন সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জামায়াতে ইসলাম নওগাঁ জেলা শাখার আমির ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য খ ম আব্দুল রাকিব। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও রাজশাহী অঞ্চল পরিচালক অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দীন, রাজশাহী অঞ্চল সহকারী পরিচালক রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
এখনো বিগত স্বৈরশাসকের জুলুমের বোঝার ভার জাতিকে বহন করতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘মুষ্টিমেয় কিছু দুর্বৃত্ত ছাড়া এই জাতির ১৮ কোটি মানুষ বড় মজলুম। এখনো সেই জুলুমের বোঝার ভার এই জাতিকে বহন করতে হচ্ছে। এখনো বাজারে গেলে মানুষের চোখ অন্ধকার হয়ে আসে সিন্ডিকেটের কারণে। তাদের আমলে গড়া সিন্ডিকেট এখনো সরকার ভাঙতে পারেনি। শুধু বাজারেই সিন্ডিকেট নয়, অফিস-আদালত-বাহিনী, সব জায়গায় সিন্ডিকেট আছে।’
রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আজ শুক্রবার সকালে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের সদস্য সম্মেলনে শফিকুর রহমান এ কথাগুলো বলেন।
শফিকুর রহমান বলেন, ‘এই জাতি যে পরিবর্তন আশা করেছিল, সেই পরিবর্তন-সংস্কার এখনো হয়ে ওঠেনি। তার বেশির ভাগ অপূরণ রয়ে গেছে। যারা দেশের দায়িত্বে আছে, দেশের জনগণ ঐকমত্যের ভিত্তিতে তাদের এ দায়িত্ব দিয়েছে। আমরা তাদের বলব, ১৮ কোটি মানুষকে সম্মান করতে হবে। (৫ আগস্ট) বিপ্লবের চেতনা ধারণ করে সব জঞ্জাল পরিষ্কার করার জন্য সাহসিকতার সঙ্গে আপনাদের এগিয়ে যেতে হবে। তার কোনো বেশ-কম জনগণ দেখতে চায় না।’
সম্মেলনে জামায়াতের আমির একটি মানবিক বাংলাদেশ গড়তে দলমত-নির্বিশেষে সবার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘অনেক চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে। আমরা যেন সবাই মিলে একটা মানবিক বাংলাদেশ গঠন করতে পারি। একা জামায়াতে ইসলামী এটা পারবে না। এটা জামায়াতের একার কাজও না। এই জন্য সবাইকে বলি আসুন, সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। এটা জাতির জন্য হই, আমাদের জন্য হই, দুনিয়ার জন্য হই, আখিরাতের জন্য হই।’
জামায়াতের আমিরের বক্তব্যের আগে সম্মেলনে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টনে লগি-বইঠার নৃশংস হামলা, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে দলের শীর্ষ নেতার বিচার, সাড়ে ১৫ বছরের নির্যাতন, খুন, সর্বশেষ গত জুলাই গণহত্যার ওপর ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।
জামায়াত আমির বলেন, ‘ডকুমেন্টারিতে আমরা দেখেছি, কী নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে। কেমন করে একটি দেশের শাসক তার দেশে গোটা যুবসমাজের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেল, ১৮ কোটি মানুষের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেল। হুকুম করল গুলি চালাও, খতম কর, আমার গদি রক্ষা করো।’
তিনি বলেন, গদি এভাবে রক্ষা হয় না। তারা মনে করেছে তারাই সব। তারা ধরাকে সরা জ্ঞান মনে করেছিল। তাই গুলি করতে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী লেলিয়ে দেওয়া হয়নি, হেলমেট-মুগুর বাহিনীকেও অস্ত্র দিয়ে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
এ প্রসঙ্গে শফিকুর রহমান ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি দেওয়ার ঘটনাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, নেতাদের বিরুদ্ধে (আগামী দিনে) ষড়যন্ত্র করে মিথ্যা মামলা দেওয়া হবে, ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলানো হবে, শতাব্দীর জঘন্যতম মিথ্যাচারের মাধ্যমে জাতির সূর্যসন্তানদের হত্যা করা হবে- এই জাতি তা আর বরদাশত করবে না।
বাংলাদেশকে নারী-শিশুসহ সব ধর্ম-বর্ণ ও গোষ্ঠীর জন্য একটি নিরাপদ এবং যুবকের জন্য কর্মমুখর দেশের স্বপ্নের কথা জানান শফিকুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘শিক্ষিত বেকার, এই শব্দটি আর চাই না। শিক্ষিত হলে বেকার হবে কেন, শিক্ষাই তো হাতে কাজ তুলে দেবে। এ জন্য আমরা যুবকদের হাতকে কর্মীর হাতে পরিণত করতে চাই। আমরা যুবকদের লুটেরার হাতে, চাঁদাবাজের হাতে পরিণত করতে চাই না। ওদের হাতে অবৈধ অস্ত্র তুলে দিতে চাই না। আমরা চাই, হাতগুলো হোক কর্মীর হাত। তাদের যুবকেরা তাদের স্বপ্নের মতো কর এই জাতিকে গড়ে তুলে পারে।’
শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা এমন একটা দেশ চাই, যেই দেশে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, জাফলং থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত- আমাদের একজন মা, একজন সহোদর বোন, একজন ঔরসজাতক মেয়ে একাকী রাস্তা অতিক্রম করবেন, কিন্তু কোনো জালিম চোখ তুলে তাকানোর সাহস পাবে না। ওই জায়গা আমরা তৈরি করতে চাই। আমরা মায়ের জাতিকে ওই মর্যাদায় নিতে চাই। আমরা একটি বৈষম্যহীন সমাজ চাই। নাগরিকের যার যার পূর্ণ মর্যাদা রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে।’
পতিত আওয়ামী লীগ সরকার থেকে সবাইকে শিক্ষা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে জামায়াতের আমির বলেন, ‘স্বৈরাচারের পরিণতি দেখে আমি এবং আমরা সবাই যেন শিক্ষা নিই। যেই এ পথে হাঁটবে, তাদের জন্য ধ্বংস ও অপমান অনিবার্য।’
তিনি বলেন, তারা আলেম-ওলামাকে বেইজ্জত করেছে, রাজনৈতিক দলকে করেছে, ছাত্রদের করেছে, ছাত্রীদের বেইজ্জতি করেছে। তারা ধরাকে সরা জ্ঞান করেছিল। এত অহংকারী ছিল যে তারা কাউকে পরোয়া করত না। মানুষকে উপহাস করে তারা আনন্দ পেত। আল্লাহ তায়ালা তাদের পাওনা কিছুটা পাইয়ে দিয়েছেন। বাকি আরও কিছু পাওনা এ দেশের মানুষ দেখতে চায়। তবে মূল পাওনা হবে আদালতে-আখেরাতে। আমরাও যদি কোনোরূপ এ রকম অন্যায়-অপরাধ করি আমাদেরও প্রস্তুত থাকতে হবে ওই পাওনার জন্য।’
সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের জামায়াতের সাবেক নেতাদের বিচারের নামে হত্যার অভিযোগ করে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের সেই বিচারক এবং এর নেপথ্য নায়ক শেখ হাসিনার বিচারের দাবি জানান।
গণঅভ্যুত্থানের পর নানা ষড়যন্ত্র ও চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, ‘অনেকে ষড়যন্ত্রের কথা বলেন। ষড়যন্ত্র হচ্ছে, হবে। চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, হবে। হত্যা হয়েছে, হবে। এটা হজরত আদম (আ.) থেকে শুরু হয়েছে, মুসলমানরা থেমে যায় না। সামনে যে চ্যালেঞ্জ, আমরাও থেমে যাব না। সেভাবেই প্রস্তুতি নিতে হবে। দুর্ভাগ্য হলো, আমাদের বারবার স্বাধীন হতে হয়। ১৯৪৭ সালে স্বাধীন হয়েছিল, ১৯৭১ সালে হয়েছিল, ২০২৪ সালে হয়েছি। এবার আমরা একটি রাজনৈতিক স্বাধীনতা পেয়েছি। কিন্তু দুর্নীতি, নেগেটিভ দিকগুলো থেকে স্বাধীন হয়নি। পরিপূর্ণ স্বাধীনতার জন্য আমাদের আরেকটি স্বাধীনতার যুদ্ধ করতে হবে।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ, মো. সেলিম উদ্দিন। এ সময় দলের নায়েবে আমির মুজিবুর রহমানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনে প্রথম অধিবেশনের পর সদস্যরা আমির পদে গোপন ভোটাভুটিতে অংশ নেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘ছাত্র-জনতার জনবিস্ফোরণের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পর থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া মানে খুনিকে আশ্রয় দেওয়া ও অপরাধকে আশ্রয় দেওয়া।’
জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের রজত জয়ন্তী উপলক্ষে আজ শুক্রবার সকালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে পুস্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
পতিত স্বৈরাচার বসে নেই উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে কূটনৈতিক আলাপ আলোচনার মাধ্যমে প্রত্যর্পণ বিষয়টি সমাধান করে তাকে ফিরিয়ে আনতে হবে। আর তা না হলে বাংলাদেশে যত শীর্ষ সন্ত্রাসী আছে তারা সেখানে আশ্রয় পাওয়ার সুযোগ নেবে। বিভিন্ন দেশে এভাবে আশ্রয় পাওয়ার সুযোগ পাবে।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা শীর্ষ সন্ত্রাসী ও খুনি। যে শিশুর রক্ত পান করতে পারে, তার মতো শীর্ষ সন্ত্রাসী আর কে হতে পারে। তাকে আশ্রয় দেওয়া মানে অপরাধকে আশ্রয় দেওয়া। অন্যায়কে আশ্রয় দেওয়া, খুনিকে আশ্রয় দেওয়া। গতকাল তাদের বক্তব্য দেখে মনে হচ্ছে তারা বিগ ব্রাদারের মতো আচরণ করেছে। সেখান থেকে তাদের বেরিয়ে আসতে হবে।’
বিএনপির মুখপাত্র বলেন, ‘এখনও স্বৈরাচারের হিংস্র থাবা থেকে আমরা মুক্ত হতে পারছি না। গতকাল হঠাৎ করে কয়েক জেলায় শাট ডাউন করা হয়েছে। কিন্তু এরা কারা? আমরা কিন্তু প্রায় দিনই বলেছি স্বৈরাচারের দোসররা এখনো ভিতরে আছে, এরা কিন্তু নাশকতা করবে।’
‘আরইবি ও পল্লিবিদ্যুৎ সংস্থাটি গঠন করেছিলেন মহান স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান। গ্রাম-গঞ্জে আলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য, কৃষি উৎপাদনের জন্য এক মহৎ উদ্যোগ নিয়ে গোটা জাতিকে আলোকিত করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। যেহেতু এটি জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠা করেছেন এটি ধ্বংস করার জন্য স্বৈরাচার শেখ হাসিনা নানা ষড়যন্ত্র করেছিলো।’
তিনি বলেন, ‘তারা এ নামটি রাখতে চায় না। গতকাল যে ঘটনা ঘটিয়েছে সেটি একটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। এ ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমরা কিন্তু কয়েকবার বলেছি। তাদের দাবি-দাওয়া থাকলে সরকারের কাছে আবেদন নিবেদন করতে পারতো। কিন্তু তারা তা না করে গতকাল শাটডাউন করলো কেন? কারণ, এটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ, এটি নাশকতা।’
‘তারা শেখ হাসিনার আমলে এ কর্মসূচি নেয়নি কেন? কারণ, এরা শেখ হাসিনার অনুচর। এ কর্মসূচির সাথে যারা জড়িত তারা সরাসরি শেখ হাসিনার লোক। কথিত স্বৈরাচারের প্রেতাত্মারা ভৌতিক অস্তিত্ব নিয়ে ভেতরে ভেতরে ঢুকে আছে। এ প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করতে তারা ষড়যন্ত্র করছে।’
রিজভী বলেন, ‘আমরা সরকারকে আবারও বলছি আরও বেশি সতর্ক হোন, না হলে রক্তের বিনিময়ে যে অর্জন, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আত্মদানে যে অর্জন, আমরা গণতন্ত্রের পথে যে যাত্রা করছি তারা তা রোধ করে ফেলবে। আপনারা সংস্কারের কথা বলে যে বিলম্ব করছেন তাতে মানুষের মনে সন্দেহ তৈরি হবে। যদি আপনাদের আন্তরিকতা থাকে তাহলে দ্রুত সংস্কার করে জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিন।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আহ্বান জানিয়ে বলেন, হঠাৎ আনুপাতিক ভোটের নির্বাচনের বিষয়টি সামনে এনে জটিলতা তৈরি করবেন না। আনুপাতিক হারে নির্বাচনের নামে জটিলতা তৈরি মানে, স্বাধীনতা বিরোধীদের মদদ দেওয়া। পৃথিবীর অনেক দেশ এ পদ্ধতি চালু করে ফিরে এসেছে।
নেপাল চালু করেছিল, এলোমেলো হয়ে গেছে- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘একটা নতুন পদ্ধতি তৈরি করতে হলে সমাজ এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষার মিল থাকতে হয়। সুশীল সমাজ এটার ওপর বক্তব্য রাখছেন। আর এটার ওপর ভিত্তি করে যদি মনে করা হয় এটা সঠিক, তাহলে নির্বাচন ব্যবস্থা আরও ভেঙে যাবে। এখন এই আনুপাতিক পদ্ধতিটা বুঝতেই চলে যাবে ৫-১০ বছর।’
তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে প্রত্যেকটা দল সমর্থন করেছে। এটা গণতন্ত্রকামী মানুষের সমর্থিত সরকার, আপনাদেরকে জনগণের অন্তরের ভাষা আগে বুঝতে হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, নির্বাচনের রোডম্যাপ যত তাড়াতাড়ি ঘোষণা করবেন, নাগরিক প্রত্যাশা তত দ্রুত পূরণ হবে। আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরম খাঁ হলে জিয়া প্রজন্ম দল আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘এখন গুরুত্বপূর্ণ হলো, একটি ভালো নির্বাচন। দেশের জনগণ অপেক্ষায় আছে। নির্বাচন কোন দিন হবে। তাই এ সরকারের উচিত, যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের দিন-তারিখ ঠিক করা।’
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা কী কী করবেন, তা দ্রুত সম্পন্ন করেন। একটি নির্বাচনের দিন-তারিখ ঠিক করেন, রোডম্যাপ করেন। ভালো নির্বাচন কী করে করতে হয়, তা এ দেশের জনগণ ভালো করেই জানে। পুলিশ ঠিক করতে হবে, প্রশাসন ঠিক করতে হবে। এসব তাল-বাহানা দেশের জনগণ দেখতে চায় না।’
সরকারের উদ্দেশে কৃষক দলের সাবেক এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা আপনাদের পরশপাথর মনে করি। আপনারা নিজেদের পরশপাথর মনে করেন কিনা? যদি মনে করেন তাহলে নির্বাচনের তারিখ, রোডম্যাপ ঘোষণা করেন। একটি নির্বাচনের রোডম্যাপ যত তাড়াতাড়ি ঘোষণা করবেন, নাগরিক প্রত্যাশা তত তাড়াতাড়ি পূরণ হবে। এই কাজটা করতে পারলে জাতি আপনাদের স্মরণে রাখবে। ইতিহাসে আপনাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।’
সেনাপ্রধানের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা যে ৬০০ জনকে আশ্রয় দিয়েছিলেন, তারা কারা? তারা কোথায় গেল? তাদের তালিকা প্রকাশ করুন।’
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, বিএনপি স্বেচ্ছাসেবক-বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি কে এম রফিকুল ইসলাম রিপনসহ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।