বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গণতন্ত্র, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আধিপত্যবাদী শক্তিকে প্রতিহত করার জন্য দলের নেতাকর্মীরা নতুন করে শপথ নিয়েছেন।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধির কাছে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ফখরুল এ কথা বলেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সুষ্ঠু ও যৌক্তিক সময়সীমার মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে সক্ষম হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ফখরুল বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পর ৭ নভেম্বর আমরা প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা ফ্যাসিবাদকে প্রতিহত করব। গণতন্ত্র রক্ষা এবং দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রয়োজনে আমরা কঠোর আন্দোলন করব।’
ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিপ্লবের চেতনাকে সুদৃঢ় করতে বাংলাদেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধ হবে বলেও তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
এর আগে 'জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস' উপলক্ষে হাজার হাজার নেতাকর্মী নিয়ে জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেয়া পাঠ করেন মির্জা ফখরুল। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের 'সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থানের' স্মরণে এই দিনটি পালন করা হয়।
১৯৭৫ সালের এই দিনে রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় সৈনিক ও বেসামরিক নাগরিকরা যৌথভাবে তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে ঢাকা সেনানিবাসের ভিতরে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে ক্ষমতা গ্রহণের পথ সুগম করে।
ফখরুল বলেন, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য বারবার ষড়যন্ত্র ও দমন-পীড়ন চালিয়েছে।
তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসন ও ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় ৬০ লাখ মানুষকে মিথ্যাভাবে জড়িয়েছে, প্রায় ৭০০ জনকে গুম করেছে এবং কয়েক হাজার মানুষকে হত্যা করেছে।
ফখরুল বলেন, ‘কিন্তু আল্লাহর রহমতে ২০২৪ সালে ছাত্রনেতৃত্বাধীন গণআন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদী শক্তি তৃতীয়বারের মতো পরাজিত হয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, গত তিন মাসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিঃসন্দেহে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘তারা অনেক কিছু করেছে এবং এখনও করছে। আমরা সবাই সহযোগিতা করলে তারা জাতির সামনে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে উপযুক্ত ও যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারবে।’
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির ভাইস ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম পিন্টু বলেনছেন- নির্বাচনটা বানচাল করার জন্য অনেকেই চেষ্টা করতেছেন। নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করতেছে, কিন্তু আপনাদের মনে রাখতে হবে একটি নির্বাচিত সরকার দেশকে সুশৃঙ্খল অবস্থায় নিয়ে আসতে পারে। নির্বাচন ছাড়া এ দেশের অবস্থা খারাপের দিকে যাবে।
বুধবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারী ও এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সংবর্ধনা এবং ক্রেস্ট প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির তিনি এসব কথা বলেন।
সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু বলেন, নির্বাচন নিয়ে যারা চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করুন না কেন এই বাংলাদেশের মানুষ অন্তত সচেতন। আমরা জনগণকে নিয়ে সেই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে যাতে সঠিক সময়ে নির্বাচন হয় এবং সরকারও নির্বাচনটা সঠিক সময়ে দিতে বদ্ধপরিকর। সে ব্যাপারে আমরা সচেতন থাকব এবং সক্রিয় থাকব।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাদের সাথে জোটের ব্যাপারে এখন কিছু বলা যাচ্ছে না।
এ সময় ভূঞাপুর বালিকা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকে গোলাম মোস্তফার সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন- বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান তরফদার। এতে অতিথি ছিলেন- উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সেলিমুজ্জামান তালুকদার সেলু, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. মনিরুজ্জামান প্রমুখ।
আগামী রমজানের আগেই দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, এতে ষোলো বছর পর দেশের ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন।
বুধবার (২৭ আগস্ট) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির পক্ষ থেকে তার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও ফাতিহা পাঠ শেষে এ মন্তব্য করেন তিনি।
দেশের মানুষ এখনো নানাভাবে অধিকারবঞ্চিত উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তকারীদের দিক থেকে আমরা এক ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্রের মধ্যে বাস করছি। আমাদের আন্দোলনের চূড়ান্ত লক্ষ্য গণতন্ত্র এখনো প্রতিষ্ঠা পায়নি। তবে আমাদের বিশ্বাস খুবই দ্রুত রমজানের আগেই একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, তাতে এ দেশের ভোটাররা ষোলো বছর ধরে যে ভোট দিতে পারেননি, এবার তারা সেই ভোট দিতে পারবেন।’
‘পাশাপাশি গণতন্ত্রের আরও বিভিন্ন শর্ত, যেমন: এ দেশের মানুষের মনে নিরাপত্তাবোধ তৈরি, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা— পূরণ করা সম্ভব হবে।’
তিনি বলেন, ‘আদালত হতে হবে অসহায় মানুষের শেষ ভরসার স্থল। সেই ধরনের একটি সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আর এই লক্ষ্য পূরণে মানুষের অনুপ্রেরণা হচ্ছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি ছিলেন মানবতা, প্রেম ও দ্রোহের কবি। ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রাম, স্বাধীনতার লড়াই, নব্বইয়ের গণআন্দোলন এবং বছরখানেক আগে যে দুনিয়া কাঁপানো গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, প্রতিটি জাতীয় অর্জন ও অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে যার গান ও কবিতা মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছে, দেশের জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছে, তার গান গাইতে গাইতে ও তার কবিতা আবৃত্তি করতে করতে আমরা রাজপথে নেমে আসতাম।’
রিজভী বলেন, ‘স্বৈরশাসনের তপ্ত বুলেটের সামনে নিঃশঙ্কচিত্তে দাঁড়াতেও দ্বিধা করিনি, কারণ আমাদের কণ্ঠে ছিল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের গান ও কবিতা। যখনই এ দেশের মানুষ অধিকারহারা হয়, তখনই তাদের সংঘবদ্ধ ও ঐক্যবদ্ধ করে অত্যাচারীর শৃঙ্খল ভাঙার প্রত্যয় জেগে ওঠে যার কবিতা ও গানে, তিনি কাজী নজরুল ইসলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে তিনি (নজরুল) তার শানিত কলম চালাতে দ্বিধা করেননি। তার লেখা কবিতা, গান ও সৃষ্টির মধ্য দিয়ে যে চেতনা তিনি গোটা জাতিকে দিয়েছেন, তা ধারণ করেই আমরা দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে সংগ্রাম করেছি, জুলাই আন্দোলনে যার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ হয়েছে।’
বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠোমোতে দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্য চলে আসছে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সেখানে রাতারাতি এগুলোর সমাধান সম্ভব হবে না। কিন্তু আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, এই রাষ্ট্রকাঠামো বদলাতে হবে।
তিনি বলেছেন, ‘রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কারর চূড়ান্ত পর্যায়ে আমরা এখনো আসতে পরিনি। এমনকি নির্বাচন নিয়েও একই বিষয় আছে, যদিও জাতি এখন সেই দিকেই মনোনিবেশ করেছে। যে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন সংগ্রাম ও লড়াই করেছি, এটা মুহূর্তের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে— এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই।’
শনিবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর প্রেসক্লাবে একটি সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘সামাজিক সুরক্ষা কতটুকু সু-রক্ষিত’ শিরোনামের এই সেমিনারের আয়োজন করে অর্পণ আলোক সংঘ নামের একটি সংগঠন।
এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য রেহানা আক্তার রানু ও পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. এম মাসরুর রিয়াজ। সেমিনারটির সঞ্চালনা করেন অর্পণ আলোক সংঘের চেয়ারম্যান বীথিকা বিনতে হোসাইন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা এখন রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারের কথা বলছি, একইসঙ্গে অর্থনৈতিক কাঠামোর কথাও বলছি। কিন্তু দীর্ঘদিনের সব অনাচার, অবিচার, নৈরাজ্য, দুর্নীতি ও স্বৈরাচার— সবকিছু কাটিয়ে একদিনে সুন্দর করে একটি রাষ্ট্র আমরা তৈরি করব, এটা মনে করার কোনো কারণ আছে বলে আমি মনে করি না।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে। যে ৫২ বছরে একটা নিয়মিত ও শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিধান আমরা তৈরি করতে পারিনি, সেখানে আজ হঠাৎ করে মুহূর্তের মধ্যে আমরা সবকিছু ঠিক করতে পারব না। আমরা যারা রাজনীতি করছি, তারা চেষ্টা করছি। তবে বিচ্ছিন্নভাবে কিংবা জোড়াতালি দিয়ে কোনোকিছু করা যায় না। এর জন্য সুনির্দিষ্ট চিন্তাভাবনা ও লক্ষ্য প্রয়োজন। পাশাপাশি, রাজনৈতিক নেতাকর্মীদেরও আন্তরিকতা থাকতে হবে।’
এ সময়ে রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারের ওপর জোর দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এটা আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। এই কাঠামো বদলাতে হবে। কারণ, বেগুন গাছ লাগিয়ে আমরা কমলালেবু আশা করতে পারি না। কাজেই আমাদের সামনে একটা সুযোগ এসেছে, সেটা যদি কাজে লাগাতে পারি, বৈষম্যহীন একটা সমাজব্যবস্থার কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারি, তাহলে হয়তো-বা অভ্যুত্থানের কিছুটা মূল্য আমরা পাব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সবকিছু নির্ধারণ করে আমলারা। সেখান থেকে সবকিছু নেমে আসে। একজন স্কুলশিক্ষককেও নিজের সমস্যা সমাধান করতে ঢাকায় আসতে হয়, যেটার কোনো প্রয়োজন নেই। এর জন্য তো জেলা পরিষদই যথেষ্ট হওয়ার কথা।’
‘কিন্তু ওই যে সিস্টেম। কারণ, তারা যদি ঢাকায় না আসেন, তাহলে ঘুষ আসবে কোথা থেকে? এখন স্কুলশিক্ষক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক— সব নিয়োগ হয় ঘুষের বিনিময়ে। যেই রাষ্ট্রকাঠামোতে এমন বৈষম্য চলতে থাকে, সেখানে রাতারাতি কিছু করে ফেলতে পারব না।’
অনুষ্ঠানে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘মেহনিত মানুষের আন্দোলনের দাবি-দাওয়ার মঞ্চ হিসেবে আমরা নিজেদের গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। ২০১৫ সালে গণসংহতি আন্দোলনকে একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে ঘোষণা করি। এ সময়ে বাংলাদেশের মানুষের লড়াই-সংগ্রামে যুক্ত থাকার চেষ্টা করেছি।’
‘রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে জনগোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ রাখা; আমাদের লক্ষ্যও তাই।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে শ্রেণিগত পার্থক্য রয়েছে। সবচেয়ে বড় পার্থক্য ধনসম্পদে। গত ৫৪ বছরে যে দলগুলো ক্ষমতায় ছিল, তারা যে নীতি তৈরি করেছে, তাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ খেটে খাওয়া মানুষ, নিপীড়িত জনগোষ্ঠী কিংবা লিঙ্গীয় পরিচয়ের মানুষ, তাদের জন্য সাম্য তো দূরের কথা, ন্যূনতম ভারসাম্যও তৈরি করতে পারেনি।’
‘এতে লুটপাট-নির্ভর একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখানে ধরে নেওয়া হয়, ক্ষমতা দিয়ে টাকা-পয়সা বানাবে।’
ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘শেখ হাসিনার আমলে ব্যাংক লুট হয়ে সাফা হয়ে গেছে। কিন্তু গত পরশুদিন দেখলাম, ৯টি নন-ব্যাংকি ফিন্যানশিয়াল ইনস্টিটিউশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এটা বিশাল ব্যাপার। কিন্তু হাসিনা চলে যাওয়ার পরও লুটপাট বন্ধ হয়ে যায়নি। গেল ১২ মাসে প্রায় একইভাবে ব্যাংকিং খাতে লুটপাট হয়েছে। এটি আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক অবক্ষয়, যেগুলো হাসিনার আমলে বেশি হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এজন্য কোনো জবাবদিহিতা নেই।
তিনি আরও বলেন, ‘কোনো ব্যাংক থেকে একটি টাকা লুট হলেও বাংলাদেশের ব্যাংকের নজরদারি থাকে। লুট হবে, বাংলাদেশ ব্যাংক জানবে না— এটা হয় না। হাসিনার আমলে যে লুট হয়েছে, তা বাংলাদেশ ব্যাংক জানত। কিন্তু সেখানে যে কর্মকর্তাদের এই নজরদারি করার কথা ছিল, তাদের নামে কোনো নিউজ হয়নি, মামলা হয়নি। অর্থাৎ এই প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসা হয়নি।’
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগের পলায়নের পর বিএনপিকেও রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে সরিয়ে দিয়ে বাংলাদেশকে রাজনীতি শূন্য করতে দেশি-বিদেশি মহলের প্ররোচনায় আবারও একটি নতুন ‘মাইনাস-টু ফর্মুলা’ সক্রিয় হয়েছে।
এক সাক্ষাৎকারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে আব্বাস বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, খাগড়াছড়ির সাজেক ও নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনালকে কেন্দ্র করে ‘অশুভ উদ্দেশ্য’ সাধনে সচেষ্ট মহলগুলো দেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে একটি গুরুতর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, কিছু রাজনৈতিক দল বিভিন্ন অজুহাতে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার মাধ্যমে এমন চক্রান্তকারীদের ফাঁদে পা দিচ্ছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস ঘোষিত ফেব্রুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন না হলে দেশকে বড় ধরনের খেসারত দিতে হবে বলেও সতর্ক করেন বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা।
আব্বাস বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন নতুন এক মাইনাস-টু ফর্মুলা চালু হয়েছে, যা ১/১১ সময়কার মাইনাস-টু ফর্মুলার মতোই। আগেরবার সেটি এসেছিল সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে। আর এবার দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা ভিন্ন আকারে একই চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।’
তিনি বলেন, এসব অপচেষ্টার অংশ হিসেবে একটি গোষ্ঠী সমন্বিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা ও রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে বিএনপিকে ‘খারাপ’ বা ‘অবিশ্বস্ত’ রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছে।
তিনি অভিযোগ করেন, এখনো প্রশাসনের ভেতরের আওয়ামীপন্থি ব্যক্তি এবং রাজনৈতিক ও আদর্শিক গোষ্ঠীর একাংশ বিএনপিকে দুর্বল করতে সক্রিয় রয়েছে। ‘তারা মনে করছে, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা দেশের বাইরে থাকা অবস্থায় বিএনপিকে সরিয়ে দিতে পারলেই দেশের শাসন ক্ষমতা তাদের হাতে চলে যাবে।’
আব্বাস বলেন, ‘যারা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল রাখতে চায়, তারাই নিজেদের স্বার্থে নতুন করে মাইনাস-টু ফর্মুলা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। ১/১১–তে এটি এক রূপে এসেছিল, তখন একটি সেনাসমর্থিত সরকার ছিল। এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতার বাইরে থাকায় ভিন্ন ধরনের ‘মাইনাস-বিএনপি ফর্মুলা’ চালানো হচ্ছে।
কারা এর পেছনে রয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে আব্বাস বলেন, ‘শয়তান নানা ছদ্মবেশে আসে। একই দেশি-বিদেশি মাস্টারমাইন্ডরা নতুনভাবে মাইনাস-টু ফর্মুলা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে।’
তার মতে, এই প্রচেষ্ঠার উদ্দেশ্য একমাত্র বিএনপিকে দুর্বল বা সরিয়ে দিয়ে দেশের রাজনীতি নিজেদের স্বার্থে নিয়ন্ত্রণ করা। এই পরিকল্পনায় পিছনে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা সক্রিয়।
আব্বাস দাবি করেন, অনেক আওয়ামী লীগ সমর্থক আমলা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে, কারণ তারা মনে করছে বিএনপিকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিলে তাদের ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল হবে। ‘প্রতিশোধপরায়ণ মনোভাব থেকে তারা বিএনপিকে বাদ দিতে চায়।’
তিনি বলেন, এমনকি কিছু রাজনৈতিক দলও এই সুরে সুর মিলিয়ে বলছে, বিএনপি এখন সেই একই পথে এগোচ্ছে, যা একসময় আওয়ামী লীগ অনুসরণ করেছিল।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ইসলামী দলসহ কয়েকটি রাজনৈতিক শক্তি নানা ইস্যু উত্থাপন করছে, যাতে ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পথ রুদ্ধ হয়।
‘একটি দল তো বলছে, তাদের দাবি না মানা পর্যন্ত নির্বাচন হতে দেবে না। তারা ফ্যাসিবাদীদের মতো আচরণ করছে’ যোগ করেন আব্বাস।
এই পরিস্থিতিতে আব্বাস দেশের জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ‘আমরা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছি, নিজ দেশের মাটি অন্যদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য নয়।’ তার মতে, নতুন মাইনাস-টু ফর্মুলা বাস্তবায়নের চেষ্টা এবং সেন্ট মার্টিন, সাজেক ও নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনাল নিয়ে বিদেশিদের সঙ্গে আলোচনাও আসলে একই সূত্রে গাঁথা, ভিন্ন কোনো বিষয় নয়।
বিএনপির এই নেতা মনে করেন, আগামী নির্বাচন অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং হবে। বিএনপির বিপুল জনপ্রিয়তা থাকায় কিছু মহল প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছে। ‘কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, জনগণ বিএনপিকে ভালোবাসে, মিথ্যা প্রচারণায় কেউ দলের জনপ্রিয়তা ক্ষুণ্ন করতে পারবে না,’ বলেন তিনি।
মির্জা আব্বাস বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রশাসন থেকে আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠদের সরাতে হবে। ‘অন্যথায়, সুষ্ঠু নির্বাচন করা কঠিন হবে।’ বিএনপি সাংগঠনিকভাবে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত এবং ফেব্রুয়ারিতে ভোটের প্রত্যাশায় রয়েছে বলে জানান তিনি।
সম্ভাব্য জোট নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে আব্বাসের ধারণা, কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে, যা সফল হলে দেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের ফেব্রুয়ারিতে ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার ঘোষণার প্রতি আস্থা প্রকাশ করে আব্বাস বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করতে চাই, নির্বাচন সঠিক সময়েই হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না—এ বিষয়ে আব্বাস বলেন, এটি তার ইচ্ছা ও শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করছে। এখনো এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ‘খালেদা জিয়া নিজেও এ বিষয়ে কিছু বলেননি।’
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে খালেদা জিয়ার কোনো ভূমিকা থাকবে কি না—এমন প্রশ্নে আব্বাস বলেন, সময়ই এই প্রশ্নের উত্তর দেবে।
ইসলামী দলগুলোর জোট গঠনের চেষ্টা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বিএনপি এতে চিন্তিত নয়। ‘বাংলাদেশের জনগণ উদারপন্থি মুসলিম, তারা সাম্প্রদায়িকতাকে নয়, গণতান্ত্রিক ও মধ্যপন্থি দলকেই পছন্দ করে।’
জুলাই সনদের খসড়া পর্যালোচনা করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে নিজেদের মতামত জমা দিয়েছে বিএনপি। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় দলটির পক্ষ থেকে এই মতামত জমা দেওয়া হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের বরাত দিয়ে দলের মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছিল দলটি ২১ আগস্ট তাদের মতামত জমা দেবে।
এদিকে জুলাই সনদের মতামত জমাদানের সময় আগামী ২২ আগস্ট বিকেল ৩টা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। গতকাল বুধবার এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে গত শনিবার মতামত চেয়ে জুলাই সনদের খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সনদের পটভূমিতে পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ড এবং ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
জুলাই সনদের চূড়ান্ত খসড়ায় প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এই সনদের কোনো বিধান, প্রস্তাব ও সুপারিশ সাংবিধানিক ও আইনগতভাবে বলবৎ হিসেবে গণ্য হবে বিধায় এর বৈধতা, প্রয়োজনীয়তা কিংবা জারির কর্তৃত্ব সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না।
জুলাই সনদের যেসব সুপারিশ অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য বলে বিবেচিত, সেগুলো কোনো প্রকার কালক্ষেপণ না করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করবে, তা বলা হয়েছে।
ঐকমত্য কমিশন বলছে, সনদে এমন অনেক বিষয় রয়েছে যেগুলো কোনো কোনো দল একমত হননি। সেসব বিষয়ে দলগুলো নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছেন।
ওই সব বিষয়ও ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বা ভিন্নমতের বিষয়গুলোও উল্লেখ করা হয়েছে জুলাই সনদের খসড়ায়।
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনে জনগণের অধিকার পরিপূর্ণ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। থাইল্যান্ড থেকে চিকিৎসা শেষে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের পক্ষ নয় বিএনপি এমনটা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, পিআর পদ্ধতিতে এদেশের মানুষ অভ্যস্ত নয়, এতে জনগণের অধিকার পরিপূর্ণ হবে না। দেশে যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট আছে তা থেকে উদ্ধারের একমাত্র পথ হচ্ছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।
তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ নির্বাচন চায়, সংকট নিরসনের একমাত্র পথ দ্রুত নির্বাচন। যারা সংস্কার চাচ্ছে না, সেটা তাদের দলের ব্যাপার।
ডাকসু নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, ‘সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হোক, এটাই প্রত্যাশা।’
এর আগে গত বুধবার সকালে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে স্ত্রীসহ চিকিৎসার জন্য ঢাকা ত্যাগ করেন তিনি। দেশে ফিরে সুস্থ আছেন বলেও জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
প্রতিরোধ, প্রতিহিংসা ও কথামালার রাজনীতির পরিবর্তে বাস্তবধর্মী পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রচলিত রাজনীতির ধারার গুণগত পরিবর্তন ঘটাতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনাসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, ‘প্রত্যেক মা-বাবা তার সন্তানের জন্য একটি নিরাপদ ভবিষ্যৎ রেখে যেতে চান। প্রত্যেক মা-বাবার চাওয়া-পাওয়া কিংবা প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্য নিয়েই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল আগামী দিনের রাজনৈতিক পরিকল্পনা এবং কর্মসূচি গ্রহণ করছে।
কারণ বিএনপি মনে করে বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে একটি নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে চাইলে অবশ্যই আমাদের প্রচলিত ধারার রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিরোধ, প্রতিহিংসা ও কথামালার রাজনীতির পরিবর্তে বাস্তবধর্মী পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রচলিত রাজনীতির ধারার গুণগত পরিবর্তন ঘটাতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমানে সমগ্র বিশ্ব আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (এআই) যুগে প্রবেশ করছে। এই সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কিন্তু আমাদের পিছিয়ে থাকার কোনো রকম সুযোগ নেই।
এই সময়ের চাহিদার দিকে লক্ষ্য রেখে বিএনপি ইতোমধ্যেই বিভিন্ন সেক্টরকে চিহ্নিত করে সুনির্দিষ্ট এবং সুচিন্তিত পরিকল্পনা নির্ধারণ করছে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করার পর অথবা কোনো কারণে ড্রপআউট (পড়াশোনা শেষ করতে না পারলে) হলে তাকে যাতে বেকার জীবন কাটাতে না হয় সেই পরিকল্পনাকে সামনে রেখেই শিক্ষা কারিকুলামে স্কুল পর্যায় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় পর্যন্ত অন্তত একাডেমিক স্টাডির পাশাপাশি ব্যাবহারিক এবং কারিগরি শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।’
তারেক রহমান বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করেছে। এ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের জনগণ দেড় দশকের বেশি সময় পর নিজেদের এজেন্ডা-ম্যানিফেস্টো বাস্তবায়নের সুযোগ পাবে।
তবে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী দলগুলোর কিছু সদস্যের বক্তব্যে গণতন্ত্রকামী জনগণের মনে নানা প্রশ্ন জন্ম দিয়েছে।’
দেশের সব রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘দূরত্ব তৈরি হলে রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে পতিত, পরাজিত ফ্যাসিস্ট চক্রের পুনর্বাসনের পথ সহজ হয়ে উঠবে, তাদের সুযোগ তৈরি হবে। তাই সতর্ক ও সজাগ থাকতে গণতন্ত্রকামী জনগণের প্রতি বিনীত আহ্বান জানাই।’
চোখের চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে যাচ্ছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ বুধবার সকাল ১১টা ১৫ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে তিনি ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগমও তার সঙ্গে রয়েছেন।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, চিকিৎসকদের পরামর্শে ফলোআপ চিকিৎসার জন্য ফখরুল আবারও ব্যাংককের রুটনিন আই হাসপাতালে যাচ্ছেন। এর আগে গত ১৪ মে একই হাসপাতালে তার চোখের রেটিনায় অস্ত্রোপচার করা হয়।
ব্যাংকক যাওয়ার আগে গতকাল (মঙ্গলবার) রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বাসভবন ফিরোজায় তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ফখরুল। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনও উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি তখন তারা খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজখবরও নেন।
নওগাঁ জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়েছে। সোমবার ১১ আগষ্ট দুপুর ১ টায় নওগাঁ কনভেনশন সেন্টারে এই সম্মেলনের অধিবেশনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন বিএনপির রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম
উদ্বোধনের শুরুতেই জাতীয় সংগীত ও দলীয় গান পরিবেশন করে সন্মান প্রদর্শন করা হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধে সকল শহীদ ও জুলাই আন্দোলনে সকল শহীদদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এই সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি নতুনভাবে দল পরিচালনার পাশাপাশি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন।
প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম ও এ এইচ এম ওবায়দুর রহমান চন্দন।
এদিন বিকেল ৩টা থেকে শুরু হবে ভোট গ্রহণ। চলবে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত। কাউন্সিলে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং দুটি সাংগঠনিক সম্পাদক পদে জেলার ১৪টি ইউনিটের ১ হাজার ৪১৪ ভোটার গোপন ব্যালটে জেলা বিএনপির নেতৃত্ব নির্ধারণ করবেন।
কাজেই সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের গুরুত্বপূর্ণ পদ কারা পাচ্ছেন, কারা হাসবে জয়ের হাসি, কাদের নেতৃত্বে চলবে জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের সাংগঠনিক কার্যক্রম তা নিয়ে চলছে গুঞ্জন।
দীর্ঘ ১৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জেলা বিএনপির সম্মেলন ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। এতদিন নানা সীমাবদ্ধতায় সম্মেলন করতে না পারলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বেশ ঘটা করে সম্মেলনের আয়োজন করেছে দলটি। তাই সম্মেলন ঘিরে পুরো শহর সেজেছে নতুন কমিটির নেতৃত্বে আসা নেতাদের ছবি, ব্যানার, ফেস্টুন আর বিলবোর্ডে। এই সম্মেলন ঘিরে ১৭ বছর হামলা, মামলা, নির্যাতন ও কারাবরনে জর্জরিত নেতাকর্মীরা ফিরে পেয়েছেন প্রাণচাঞ্চল্য। কর্মীরাও মুখে আছেন নতুন নেতৃত্ব বাছাইয়ে।
এই সম্মেলনে নেতৃত্বে কারা আসছেন এ নিয়ে তৃনমূল থেকে শুরু করে শহরের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। অনেক নেতাকর্মী ভাবছেন নতুন নেতৃত্ব আসবে, আবার কেউ কেউ ভাবছেন ধারাবাহিক নেতার মধ্যে দুই একজন জয়ী হতে পারেন।
তবে নেতাকর্মীরা বলছেন, যারা বিএনপির রাজনীতিতে রাজপথে ছিলেন, রাজপথ থেকে উঠে এসেছেন, রাজনীতিতে যাদের দলীয় পরিচয় বেশি, যারা কর্মী বান্ধব তারাই আসুক নেতৃত্বে। দলের দুর্দিনে যারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন, নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন তারা যেন সঠিক মূল্যায়ন পান। এছাড়াও সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নতুন করে দলকে পুনরুজ্জীবিত ও সুসংগঠিত করে আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে বিজয়ী করতে ভূমিকা রাখবে এমন নেতৃত্ব চান নেতাকর্মীরা।
দলীয় সুত্রে জানা যায়, সর্বশেষ ২০১০ সালে জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচিত হন সামসুজ্জোহা খান, সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম এবং সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন মামুনুর রহমান রিপন। ২০১৫ সালে ওই কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার পর সম্মেলনের মাধ্যমে আর কোনো কমিটি গঠন হয়নি।
এরপর ২০২২ সালে আবু বক্কর সিদ্দিক নান্নুকে আহ্বায়ক ও বায়েজিদ হোসেন পলাশকে সদস্য সচিব করে গঠিত আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছিল।
পট পরিবর্তনের পর বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুসারে, ঘোষিত সম্মেলন উপলক্ষে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। গত রোববার (৩ আগষ্ট) তফসিল ঘোষণা করেন সম্মেলন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী ও বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা। পরের দিন সোমবার জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক এই দুইটি পদপ্রত্যাশী প্রার্থীদের মধ্যে মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হয়। একই দিনে মনোনয়নপত্র জমা, যাচাই-বাছাই ও চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হয়।
উল্লেখ, সভাপতি পদপ্রত্যাশীরা হলেন- জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজমুল হক সনি, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ধলু, জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক নান্নু, জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক মাষ্টার হাফিজুর রহমান, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদ হাসান তুহিন, পৌর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবদুস শুকুর, জেলা বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ এস এম মামুনুর রহমান ও জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য এ বি এম আমিনুর রহমান।
সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়ার জন্য লড়ছেন চারজন। তারা হলেন- জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব বায়েজিদ হোসেন পলাশ, জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুর রহমান রিপন, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম ও আমিনুল হক বেলাল। এবং সাংগঠনিক সম্পাদকের দুটি পদের জন্য আটজন মনোনয়ন তুলেছেন। তারা হলেন শফিউল আজম (ভিপি) রানা, নূর-ই আলম, ফরিদুজ্জামান, খায়রুল আলম, শবনম মোস্তারী, সুলতান মামুনুর রশিদ, কামরুজ্জামান কামাল ও জহুরুল হক।
এদিকে এই সম্মেলনের আগের দিন রোববার (১০ আগস্ট) দুপুর ২টায় নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে সম্মেলনের কাউন্সিলর বা ভোটার তালিকাকে ‘বিতর্কিত’ উল্লেখ করে সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম বেলাল।
বাংলাদেশে দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পর নিজেকে ‘বলির পাঁঠা’ বলে দাবি করেছেন ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য ও প্রাক্তন ট্রেজারি মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ জানিয়েছেন, মামলাটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছেন তিনি। ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন টিউলিপ।
৪২ বছর বয়সি এই লেবার পার্টির নেত্রী জানান, তিনি গত সপ্তাহে এক সাংবাদিকের মাধ্যমে জানতে পারেন, ঢাকার পূর্বাচলে জমি বরাদ্দে প্রভাব খাটানোর অভিযোগে তাকে ও আরও ২০ জনকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। মামলার শুনানি ১১ আগস্ট ধার্য করা হয়েছে।
তবে টিউলিপ জানিয়েছেন, তিনি এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক সমন পাননি এবং অভিযোগপত্রও দেখেননি। তার ভাষ্যে, ‘আমি যেন এক অদ্ভুত দুঃস্বপ্নের মাঝে আটকে আছি, যেখানে বিচার শুরু হতে যাচ্ছে কিন্তু আমি জানি না আমার বিরুদ্ধে আসল অভিযোগ কী।’
বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তি না থাকায় প্রয়োজনে তার অনুপস্থিতিতেই বিচার হতে পারে।
টিউলিপ সিদ্দিক বলেন, গত বছরের জুলাইয়ে লেবার পার্টির নির্বাচনী জয় লাভের পর তিনি অর্থনৈতিক সচিব ও সিটি মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছিলেন এবং তার কাজ উপভোগ করছিলেন। কিন্তু একই সময়ে বাংলাদেশে ছাত্র নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভে শেখ হাসিনার সরকার পতন হয়। ক্ষমতা পরিবর্তনের পর অর্থনীতিবিদ ও হাসিনার দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষমতায় আসার পর তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ শুরু হয়।
প্রথমে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে, যা টিউলিপ ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। পরে ২০০৪ সালে লন্ডনের কিংস ক্রসে একটি ফ্ল্যাট উপহার পাওয়ার অভিযোগও আসে, যা তিনি ব্যাখ্যা করেছেন।
নিরাপত্তাজনিত কারণে অন্য কারো মালিকানাধীন বাড়িতে থাকার প্রসঙ্গ নিয়েও সমালোচনার মুখে পড়েছেন টিউলিপ। তবে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীদের নীতিগত আচরণবিধি পর্যালোচনার স্বাধীন উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাস তার আর্থিক বিষয়াদি খতিয়ে দেখে অভিযোগ থেকে তাকে মুক্তি দেন।
টিউলিপ অভিযোগ করেন, বাংলাদেশের ক্ষমতা পরিবর্তনের পর ‘নোংরা রাজনীতি’ তার ওপর চালানো হচ্ছে। তার কথায়, ‘এটি মুহাম্মদ ইউনূস ও আমার খালা শেখ হাসিনার মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের ফলাফল, আর আমি এর বলি হয়েছি। বাংলাদেশে যারা অপরাধ করেছে, তাদের শাস্তি হওয়া উচিত, কিন্তু আমি তাদের মধ্যে নই।’
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, গণতন্ত্রের জন্য প্রাণ উৎসর্গকারী সবাই জাতীয় বীর।
তিনি বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানে যারা প্রাণ দিয়েছেন, শুধু তারাই জাতীয় বীর নন। ১৬ বছরে গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য যারা প্রাণ দিয়েছেন তারাও জাতীয় বীর বলে গণ্য হবেন।’
আজ রোববার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত, ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী ও অসহায় অসুস্থ ব্যক্তিদের চিকিৎসা সহায়তা প্রদান উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়।
মানসিক ও দৃষ্টিভঙ্গির সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাষ্ট্র কাঠামো পরিবর্তন করলেই হবে না, যারা রাষ্ট্র চালাবেন এবং যারা নাগরিক উভয়ের মানসিক পরিবর্তন জরুরি। শুধু সরকারের কাছ থেকে সব আশা না করে জনগণকেও দেশের জন্য কি করা যায় তা ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, ‘সংস্কারের মধ্য দিয়ে আমরা একটা গণতান্ত্রিক সংবিধান পেলাম। সেই গণতান্ত্রিক সংবিধানের মাধ্যমে যে সরকার ব্যবস্থা গঠিত হবে তাদেরকে সেই ব্যবস্থা যারা পরিচালনা করবে তাদেরকে মানসিক সংস্কার এবং দৃষ্টিভঙ্গি না পাল্টায় এবং অপরপক্ষে যারা রাষ্ট্রের জনগণ যারা বেনিফিশিয়ারি য্রাা সরকার যাদের কাছে দায়বদ্ধ, সমাজের কাছে দায়বদ্ধ তাদেরও যদি দৃষ্টি ভঙ্গি না-পাল্টায় তাহলে মানবিক রাষ্ট্র হবে কীভাবে?’
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের দৃষ্টি ভঙ্গি এমন হবে সরকার আমাদের জন্য কী করে তা নয়। জনগণ দেশের জন্য কী করবে সেটাও ভাবতে হবে? এটাই হচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। তাহলেই আমরা জনগণ এবং দায়বদ্ধ সরকার জনগণের কাছে এই উভয়ে মিলে একটা আমাদের কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্র ব্যবস্থা, সরকার ব্যবস্থা, সমাজ ব্যবস্থা গতিশীল করতে পারবে।’
তিনি বলেন, যেই স্বপ্ন ছিল স্বাধীনতার শহীদদের, মুক্তিযোদ্ধাদের, যেই স্বপ্ন ছিল ২০২৪ সালের আমাদের ছাত্র গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের যারা রক্তদান করেছেন, যারা জীবন দিয়েছেন, যারা পঙ্গুত্ববরণ করেছেন তাদের। আমরা যাতে সেই সমাজ নির্মাণ করতে পারি যারা আজকে পঙ্গুত্ববরণ করেছে, তাদের সন্তানরা যেন তাদের কাঙ্ক্ষিত সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা দেখে যেতে পারে। আমরা সবসময় বলি শত সহস্র শহীদদের রক্তের আকাঙ্ক্ষা আমাদের পূর্ণ করতে হবে।’
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা দেখি, সেই ফ্যাসিস্টের মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই, বেদনা নেই, কোনো পরাজয়ের স্বীকারোক্তি নেই বরং দেখি দাম্ভিকতা।
আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমনের সভাপতিত্বে ও সদস্য জাহিদুল ইসলাম রনির সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সহ-সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন বকুল উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশন সে লক্ষ্য সামনে রেখে কাজ করছে।
আজ শনিবার বিকেলে রংপুর বিভাগীয় সদর দপ্তরে প্রশাসনের সাথে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে সিইসি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের কাজ এগিয়ে নেয়ার জন্যই বিভাগওয়ারি প্রশাসন ও ইলেকশন কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করা হচ্ছে। ভোটের সময় কোন একটি কেন্দ্রে গন্ডগোল হলেই ওই আসনের নির্বাচন বন্ধ করে দেয়া হবে। কোন প্রকার বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবে না। যে সব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে তাদেরকে নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করতে দেয়া হবে না। গত নির্বাচনে যে সকল প্রিজাইডিং অফিসার সমস্যা তৈরি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে নির্বাচন কমিশন।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন ব্যবস্থার উপর মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে, মানুষকে কেন্দ্র নিয়ে আসা একটা বড় চ্যালেঞ্জ।
এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘এখনই নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা নয়। তফশিল ঘোষণার দুই মাস আগে নির্বাচনের তারিখ জানানো হবে। তবে স্বল্প সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে কমিশন।’
এর আগে সকালে আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে নির্বাচন কর্মকর্তা রংপুর অঞ্চল ও রংপুর অঞ্চলের সকল আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা এবং জেলা-উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচন কমিশন, প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও প্রশাসন মিলে যে একটা ভালো নির্বাচন করা সম্ভব এবং নির্বাচন কমিশনের প্রতি মানুষের হারানো আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব-এই বিষয়ে আমরা কাজ করছি। তাই আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করাটাই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রধান চ্যালেঞ্জ।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো। আমরা চাই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও উন্নত হোক। যাতে করে শান্তিপূর্ণ ও নির্ভয়ে মানুষ তার পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিতে পারে। মানুষ ভোট কেন্দ্রে যাওয়া ভুলে গেছে। নির্বাচনের দিন অনেক মানুষ ভোট দিতে কেন্দ্রে যায় না, বাসায় আরাম আয়েস করে। অনেকেই মনে করে, ভোট দিতে গিয়ে কি হবে। কেউ না কেউ তো আমার ভোটটা দিয়ে দেবে। এই রকম মানসিকতা তৈরি হয়েছে। এই মানসিকতা দূর করাই নির্বাচন কমিশনের চ্যালেঞ্জ। আমরা সেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করছি। এজন্য সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে। আর এই সচেতনতা তৈরীতে সাংবাদিকদের ভুমিকা রয়েছে। আমরা সাংবাদিকদের কাছে সহযোগিতা চাই। পরামর্শ চাই।
এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, অস্ত্রের চেয়ে এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে এআই এর ব্যবহার। এআই হচ্ছে বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার। এটা আমাদের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা সাংবাদিকদের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছি না। সাংবাদিকরা আমাদের পক্ষ। যারা প্রফেশনাল সাংবাদিক তারা আমাদের হয়ে কাজ করবেন, স্বচ্ছ ইলেকশনের জন্য কাজ করবে এই প্রত্যাশা আমাদের আছে। কিন্তু যারা ফেসবুক দিয়ে সাংবাদিকতা করে, যাদের কোনো ট্রেনিং নাই, কোনো দক্ষতা নেই। কোনো এথিকস নাই। তাদের নিয়ে আমাদের সমস্যা। কেননা তারা প্রধান উপদেষ্টা ও আমাকে নিয়ে নানা ধরনের ভিডিও বানিয়ে একটা লিখে দিয়ে ছেড়ে দেয়। অনেক মানুষ এসব বোঝে না। রাতে শুয়ে শুয়ে এসব ভিডিও দেখে। এগুলো কেউ যাচাই বাছাই করে না। আর্টিফিসিয়াল ভিডিও দেখে আর আমাদের ভুল বোঝে। তাই সবার কাছে অনুরোধ এগুলো যাছাই বাছাই ছাড়া কেউ শেয়ার করবেন না। এই বিষয়ে সাংবাদিক ভাইদের সহযোগিতা দরকার। কেননা এটা আমাদের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব বন্ধে যা যা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার আমাদের পক্ষ থেকে আমরা নিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, অতীতে যে সব প্রিজাইডিং অফিসার এবং প্রশাসনের লোকজন নির্বাচনের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলো তাদেরকে আগামী নির্বাচনে না রাখার চেষ্টা চলছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচন কমিশন আগামী নির্বাচনে কারো পক্ষে ও বিপক্ষে কাজ করবে না। ১৮ কোটি মানুষের হয়ে কাজ করবে। এআইএ এর মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষকে বিভ্রান্ত ছড়ানো হচ্ছে; এটা মোকাবেলা করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। নাগরিকদের উদ্দেশ্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ভোট দেয়া যেমন নাগরিক দায়িত্ব; তেমন ঈমানী দায়িত্বও বটে।
যারা পিআর পদ্ধতি নিয়ে গোঁ ধরছেন তারা সাধারনত নির্বাচন দেখে ভয় পাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু।
আজ শনিবার সকালে চুয়াডাঙ্গার নিজ বাড়িতে নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন তিনি।
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, তাদের (যারা পিআর পদ্ধতি চায়) নির্বাচনে ভয় পাওয়ার বাস্তব কারণও আছে। অনেক ইসলামী দল আছে যাদের প্রার্থীরা কখনো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারেননি। এর মধ্যে অন্যতম ইসলামী আন্দোলন। আওয়ামী লীগের কাছে এই দলটি যেভাবে নাস্তানাবুদ হয়েছে, বিশেষ করে বরিশালের সবশেষ নির্বাচনে তাদের পীর রক্তাক্ত হওয়ার পর এখন তারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগের সময় যতগুলো নির্বাচন হয়েছে সবগুলোতেই তারা অংশগ্রহন করেছে, আওয়ামী লীগকে তারা পেয়ারের সংগঠন মানতো।
বিএনপি নেতা দুদু বলেন, যারা পিআর পদ্ধতি চায়, তারা যদি মনে করে এটি খুবই জনপ্রিয় বিষয় তাহলে বিষয়টি তাদের কর্মসূচিতে নিয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করে তারপর সিদ্ধান্ত নিক। কেননা এই পদ্ধতি চালুর জন্য সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাগবে। পৃথিবীর যেসব দেশে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়েছে সেসব দেশে তিন বছরের মধ্যে অন্তত ১০ বার সরকারের পতন হয়েছে। নেপালই যার বড় দৃষ্টান্ত। একটি যেকোন দেশের সমৃদ্ধি, উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা বাধাহীনভাবে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়, তাহলে সরকারের স্থিতিশীলতা খুব জরুরী। সেটির নিশ্চয়তা পিআর পদ্ধতিতে থাকে না।
ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে অন্যান্য দলের অংশগ্রহন প্রসঙ্গে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, এখন দেশে সরকারি দল নেই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ও যদি কোন রাজনৈতিক দল স্ব উদ্যোগে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে তাহলে এটি হবে তাদের জন্য ব্যর্থতা। হ্যাঁ, বিভিন্ন দলের বিভিন্ন দাবি থাকবে। দাবিগুলো নির্বাচনের কর্মসূচিতে উল্লেখ করে জণগণের কাছে পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমই নির্বাচন। যদি সেসব দাবি জনপ্রিয় হয় তাহলে তারা নির্বাচিত হবে। কিন্তু নিজেদের দাবি প্রতিষ্ঠিত করতে অন্যের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাওয়া ঠিক হবে না।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন চুযাডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাড. ওয়াহেদুজ্জামান বুলাসহ বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ।