মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪

সীমান্তের ওপারে বসে নতুন নতুন ষড়যন্ত্র করছে স্বৈরাচার: মির্জা ফখরুল

ছবি: সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত : ২৯ নভেম্বর, ২০২৪ ২০:৩৭

সীমান্তের ওপারে বসে স্বৈরাচার নতুন নতুন ষড়যন্ত্র করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুক্রবার রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে ঢাকার ঠাকুরগাঁও ছাত্র পরিষদের ছাত্র কনভেনশন-২০২৪ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

পতিত স্বৈরাচারদের ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যেটা অর্জন করেছি সেটা যেন বৃথা না যায়। কারণ সীমান্তের ওপারে স্বৈরাচার বসে আছে। সেখানে বসে নতুন নতুন ষড়যন্ত্র করছে। প্রতিমুহূর্তে একেকটা ঘটনা ঘটিয়ে সেটাকে সারাবিশ্বে দেখাতে চায় বাংলাদেশ মৌলবাদীদের দেশ হয়ে গেছে। বাংলাদেশে নাকি সংখ্যালঘু ভাইদের নির্যাতন করা হচ্ছে। ভারতের পত্রপত্রিকা ও সোশ্যাল মিডিয়ায় এমনভাবে লেখা হচ্ছে যেন বাংলাদেশে এসব নিকৃষ্ট ঘটনা ঘটছে। ঘটনা তো তা না। তাহলে কারা করছে? কেন করছে?’

তিনি বলেন, ‘আমি কথাগুলো এ জন্য বলছি, আমাদের আনন্দে থাকার অবকাশ নেই। আমাদের মাথার ওপর এখনো বিপদ আছে। স্বৈরাচার নতুন করে দেশকে আবারও অন্ধকারে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। সেজন্য সজাগ থাকতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে। কোনোরকম হঠকারিতা, কোনো বিশৃঙ্খলা যেন কেউ করতে না পারে সেটাকে রুখে দিতে হবে।’ বিএনপির মহাসচিব দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি খুব কষ্ট পাই যখন দেখি ছেলেরা কলেজে কলেজে মারামারি করছে। যখন এত বড় বিজয়, ইতিহাস করলে তখন আমাদের দেখতে হবে সোহরাওয়ার্দী-মোল্লা কলেজ মারামারি করে রক্তাক্ত হচ্ছে এটা তো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। এটা একটা ষড়যন্ত্র।’ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে যে অসাধারণ কাজ করেছো, দানবের থেকে দেশকে রক্ষা করেছো এটা ছোট কথা নয়। আমরা এখনো কিন্তু সে ক্রান্তি পার হয়নি, এখন একটা ধাপ গেছি। ছাত্ররা যখন বুক পেতে দিয়েছি, রক্ত ঝরিয়েছি তখনই মুক্তি এসেছে। আমি বার বারই বলি আমাদের মুক্তির ভ্যানগার্ড হচ্ছে ছাত্ররা।’ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ আন্দোলনে সবার আগে ছাত্রদের নাম। তবে কতজন রিকশাচালক, শ্রমিক প্রাণ দিয়েছে তাদের খবর রাখি না। আমি পঙ্গু হাসপাতালে গিয়েছিলাম ছাত্রদের দেখতে। সেখানে গিয়ে দেখলাম প্রায় ৪০ শতাংশই শ্রমিক। তাদের খবর রাখাটাও আমাদের জন্য জরুরি। আমরা একেবাইরে জীবনের শেষ প্রান্তে, একটায় আশা ছিল যেন জীবদ্দশায় দেখে যেতে পারি দানবের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছি। আমি আশঙ্কায় ছিলাম বেগম খালেদা জিয়া কি দেখে যেতে পারবেন দেশমুক্ত হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ তিনি দেখে যেতে পেরেছেন।’


আধিপত্য কায়েম করতে সাম্প্রদায়িকতার ধুয়া তুলছে ভারত: রিজভী

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

পাশের দেশ ভারত সাম্প্রদায়িকতার ধুয়া তুলে কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের উসকে দিয়ে উপমহাদেশে তাদের আধিপত্য কায়েম করতে চাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর গুলশানে ভারতীয় পণ্য বর্জনের দাবিতে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ করেন।

ভারতের উদ্দেশে রিজভী বলেন, ‘সাম্প্রদায়িকতার ধুয়া তুলে আপনারা ভারতকে যেমন বিভাজন করছেন, ভারতের স্বাধীনতার পর থেকে গণতন্ত্রের যে একটি ঐতিহ্য ছিল- এটাকেও ভূলুণ্ঠিত করছেন। আর সেই সাম্প্রদায়িকতার ধুয়া তুলে কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের উসকে দিয়ে আপনারা চাচ্ছেন উপমহাদেশে আধিপত্য কায়েম করতে। আপনাদের এই বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাবের কারণে, এই হিংসাশ্রয়ী মনোভাবের কারণে, এ ধরনের অপরকে ঘৃণা করার মনোভাবের কারণে আজকে নেপাল আপনাদের সঙ্গে নেই, ভুটান নেই, শ্রীলঙ্কা নেই, মালদ্বীপ নেই, পাকিস্তান তো নেই, বাংলাদেশও আপনাদের সঙ্গে নেই। শুধু আপনাদের অহংকার এবং একের পর এক শোষণের যে মনোভাব, সে কারণে আপনাদের এ অবস্থা।’

তিনি বলেন, ‘আমরা একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ জাতি। এই জাতি স্বাধীনতা অর্জন করেছে ৩০ লাখ মানুষের আত্মদানের মধ্য দিয়ে, ২ লাখ নারীর সম্ভ্রমহানির মধ্য দিয়ে। ১৮ কোটি, ১৯ কোটি মানুষের এই দেশ; এই দেশকে আপনারা চোখ রাঙিয়ে, ভয় দেখিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে দাবিয়ে রাখতে পারবেন না। হঠাৎ করে আপনাদের কী হলো যে, পাশের দেশের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছেন, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছেন। ৫ আগস্টের আগে এ দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল ঘৃণিত একটি সরকার। এরা ক্ষমতায় থাকার জন্য নিজ দেশের সন্তানদের হত্যা করতে দ্বিধা করত না, এরা নিজ দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষদের চিরদিনের জন্য নিরুদ্দেশ করতে দ্বিধা করতে না। এরা ক্রসফায়ার দিয়ে নদীর ধারে, খালের ধারে মানুষদের নির্দ্বিধায় হত্যা করত। সে হাসিনা সরকার আপনাদের এত প্রিয় ছিল কেন? কারণ, আপনাদের সাহসে, আপনাদের উসকানিতে শেখ হাসিনা যা ইচ্ছা তাই করে গেছে এ দেশে। উনার ভোটের দরকার হতো না; শেখ হাসিনার অধীনে যে ভোটগুলো হয়েছে সেগুলো হয়েছে ভোটারবিহীন। যে ভোটের এক একটা নাম আছে ‘ভোটারশূন্য ভোট’, ‘মিডনাইট ভোট’ আরও অনেক কিছু।’

ভারতের উদ্দেশে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘আপনারা মনে করছেন পেঁয়াজ বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশের মানুষ তরকারিতে পেঁয়াজ ব্যবহার করতে পারবে না। আপনারা রসুন, আদা, সয়াবিন তেল বন্ধ করে দিলে আমরা এগুলো আর রান্নায় ব্যবহার করতে পারব না। এটা তো আপনারা দুঃস্বপ্ন দেখছেন। আপনারা গরু রপ্তানি পাঁচ-ছয় বছর ধরে বন্ধ করে দিয়েছেন। বাংলাদেশের মানুষ গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে গরুর খামার, ছাগলের খামার গড়ে তুলেছে। এক কোরবানি ঈদেই এক কোটি ২০ লাখ গবাদিপশু জবাই হয়।’

প্রতিবেশী রাষ্ট্রের উদ্দেশে রিজভী আরও বলেন, ‘আপনারা ভুলে যাবেন না বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত শ্রমপ্রিয়। পেঁয়াজ, রসুন, আদা তারা নিজেরাই উৎপাদন করতে জানে। আপনারা কী মনে করেন, শুধু একটি দেশ আছে পৃথিবীতে। আর কি দেশ নেই পৃথিবীতে- যাদের কাছ থেকে আমরা পেঁয়াজ আমদানি করতে পারব, যাদের কাছ থেকে আমরা রসুন-তেল আমদানি করতে পারব। সে সব দেশ কি নেই? আপনারা মনে করেছেন এগুলো বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশের মানুষের অবস্থা কাহিল হবে। অবস্থা কাহিল হয়েছে আপনাদের। আপনাদের নিউমার্কেটের কোনো দোকান চলে না, আপনাদের মার্কেটগুলো বন্ধ হওয়ার উপক্রম। বাংলাদেশের মানুষ ওই কলকাতায় গিয়ে ডলার খরচ করে তারা সেখানে কেনাকাটা করে চিকিৎসা করতে যায় হাসপাতালে। হাসপাতাল আর চলবে না। আপনারা বন্ধ করে দিয়ে মনে করেছেন বাংলাদেশের মানুষ অস্থির হয়ে গেছে, বাংলাদেশের মানুষ আনন্দিত। প্রয়োজন হলে থাইল্যান্ড যাবে, মালয়েশিয়া যাবে, ইন্দোনেশিয়া যাবে কিংবা অন্য দেশে যাবে। আপনাদের মতো হিংসাশ্রয়ী যারা আমাদের ঘৃণা পোষণ করেন, সে দেশে মানুষ যেতে চায় না। কারণ রক্তমূল্যে স্বাধীনতা কেনা এই জাতি। এই জাতিকে আপনি ভয় দেখিয়ে, আপনাদের নতজানু করবেন- সে জাতি বাংলাদেশ নয়।’

তিনি বলেন, ‘রিপাবলিক বাংলা বলেছে, চট্টগ্রামকে ভারতের অংশ হিসেবে দাবি করা হয়েছে, আরও কত মিথ্যা অপপ্রচার চলছে। আমরা বলছি, একটি স্বাধীন-সার্বজনীন দেশে আপনারা দাবি করলে আমরাও আমাদের নবাবের এলাকা ওই বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা দাবি করব, যেটা আমি আগেও বলেছি। এটা তো আমাদের ন্যায্য পাওনা। এ কথাগুলো আমরা বলতে চাই না। অনেক সংগ্রাম, অনেক আন্দোলন, ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রাম- এই উপমহাদেশে আমরা একসঙ্গে করেছি।’

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি ডা. জাহেদুল কবির জাহিদ, ছাত্রদলের সহসভাপতি ডা. তৌহিদুর আউয়াল, ছাত্রদল নেতা রাজু আহমেদ প্রমুখ।


সংস্কারের গতি বাড়িয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেন: জামায়াতের আমির

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ২০:৫৪
কুমিল্লা প্রতিনিধি

অন্তবর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, দেশে সংস্কারের প্রয়োজন আছে। তবে সংস্কারের গতি বাড়িয়ে জাতিকে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেন।’ শুক্রবার সকালে কুমিল্লা টাউন হলে কর্মী সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

জামায়াতের আমির বলেন, ‘স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে, বিজিবিকে সীমান্তের চৌকিদার বানিয়েছে। আমাদের বহু নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে। আমরা প্রতিশোধ নেব না, তবে প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত শেষে বিচার করতে হবে।’

ভারতকে উদ্দেশ্য করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা আমাদের দেশের এক ইঞ্চি কেন আধা ইঞ্চি জায়গাও ছেড়ে দেব না। এ দেশে কোনো সাম্প্রদায়িক বিভাজন নেই। স্বৈরাচার সরকার, মঈনুদ্দিন ও ফখরুল মিলে সাড়ে ১৭ বছর শ্বাসরুদ্ধকর সময় পার করেছে। এ দেশের মানুষ আর সেই দিনগুলোতে ফিরে যেতে চায় না। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশ আফগানিস্তান ও পাকিস্তান হবে না, ভালো একটা বাংলাদেশ হবে। নারীদের ঘরে বন্দি রাখার অধিকার আমাদের নেই। তাদের কাজ আছে, বাইরে যেতে হবে। ইসলাম নারীকে সম্মান দিয়েছে, তা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রক্ষা করবে। জনগণের ওপর আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে।’

কুমিল্লা বিভাগের দাবি ও কুমিল্লা বিমানবন্দর নিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, কুমিল্লা বিভাগ কুমিল্লাবাসীর ন্যায্য দাবি। এ দাবি না মানাও জুলুম ছিল। কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়নে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান তিনি। পাশাপাশি কুমিল্লা বিমানবন্দরও চালুর দাবি জানান।

প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন জামায়াতের নায়েবে আমির সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ফেনী জেলা জামায়াতের আমির মুফতী আবদুল হান্নান, লক্ষ্মীপুর জেলা আমির রুহুল আমিন, নোয়াখালী জেলা সাবেক আমির মাওলানা আলাউদ্দিন, কুমিল্লা উত্তর জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুফতি আমিনুল ইসলাম, নাগাইশ দরবারের পীর মোস্তাক ফয়েজী, ইবনে তাইমিয়া কলেজের অধ্যক্ষ শফিকুল আলম হেলাল ও তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ড. হিফজুর রহমান প্রমুখ।

মো. তাহের বলেন, ‘ডা. শফিকুর রহমান জাতির মুক্তি আন্দোলনের সেনাপতি। কুমিল্লার এই মাঠে মুহতারাম আমিরে জামায়াত প্রধান অতিথি, প্রধান বক্তা ও বিশেষ অতিথি। তিনি আসনে বসলে আমরা সবাই তার কর্মী।’ তিনি বলেন, ‘ভারত হামলা করলে দেশের জনগণ লাঠি, ইটপাটকেলসহ যার যা আছে তা নিয়ে আপনারা প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন। প্রয়োজনে সীমান্তে আমরা প্রাচীর তৈরি করব যাতে ভারত ঢুকতে না পারে।’

মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী ভারতের প্রয়োজন, বাংলাদেশের প্রয়োজন নেই। কারণ ভারতে ধর্মীয় দাঙ্গা সংঘটিত হয়ে থাকে। সাবধানে কথা বলবেন, না হলে পশ্চিমবঙ্গের ২৫% মুসলমান আপনাকে প্রত্যাখ্যান করবে।’


শিগগির তারেক রহমান দেশে আসছেন: মির্জা আব্বাস

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ছিল বিদেশি শক্তি দ্বারা একটি পরিকল্পিত হামলা। এই হামলায় কখনোই বিএনপি যুক্ত ছিল না। একটা বিদেশি শক্তি এই অপকর্ম করে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ফাঁসাতে চেয়েছিল।

তিনি বলেন, ‘এমনকি একটি ভুল, মিথ্যা, সাজানো মামলা তৈরি করে সাজানো গল্পের ওপর ভিত্তি করে সাজা দিয়েছিল। বিজয়ের প্রথম দিনে আপনাদের একটি সুখবর দিতে চাই। সেই মামলার রায় আজ প্রকাশ পেয়েছে এবং তারেক রহমানকে খালাস দেওয়া হয়েছে।’

মির্জা আব্বাস বলেন, বিগত দিনগুলোতে আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে অনেক অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। তিনি আমাদের মাঝে শুভেচ্ছান্তে ফিরে আসবেন খুব তাড়াতাড়ি। এ জন্যই আল্লাহতায়ালা তাকে সুস্থ করেছেন এবং খালাস দিয়েছেন।

রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম হলে স্বাধীনতা ফোরাম আয়োজিত ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। স্বাধীনতা ফোরামের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন।

মির্জা আব্বাস বলেন, আমরা ইউনূস সরকারকে ঠিক পথ দেখানোর চেষ্টা করছি। কিছু লোক দেশে এবং দেশের বাইরে থেকে বিএনপিকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ট্যাগ করার চেষ্টা করছে।

তিনি আরও বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। এ কথা আমরা বারবার বলব, বলতে হবে। কারণ বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সঠিক ইতিহাস ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছে। কিন্তু আমরা সঠিক কথাগুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরব।

বিএনপি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য ১৫ বছর যুদ্ধ করেছে। আমরা স্বাধীন সংবাদমাধ্যম চাই, কিন্তু অপসাংবাদিকতা চাই না। গণতন্ত্র এবং বিএনপি একসঙ্গে যায়। আমরা গণতন্ত্রের পক্ষে।

আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, তারা ব্যাংক থেকে টাকা লুট করেছে, মানুষ গুম, খুন করেছে। পানি এবং তেল কখনো মেলে না, তেমনি আওয়ামী লীগ আর গণতন্ত্র একসঙ্গে যায় না।


ফ্যাসিবাদী প্রত্যাবর্তনের পথ সুগম করবেন না: মির্জা ফখরুল

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১৭:৩০
ইউএনবি

ছাত্র নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বিশৃঙ্খলামূলক কর্মকাণ্ড ও অনৈক্যের কারণে ফ্যাসিবাদ ফিরে আসার আশঙ্কা রয়েছে বলে সতর্ক করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্র পুনর্গঠনে লেখক-শিল্পীদের ভূমিকা শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে জাতীয় কবিতা পরিষদ।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ পরাজিত হয়েছে, কিন্তু যেকোনো সময় তারা ফিরে আসতে পারে। সেই পথ সুগম করে দেওয়া আমাদের উচিত নয়। দুঃখজনকভাবে আমরা এমন কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছি, যার ফলে তাদের ফিরে আসার যথেষ্ট সুযোগ তৈরি হয়েছে।’

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ফ্যাসিবাদী শক্তি সুপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। ‘কিন্তু আমরা যারা যুদ্ধ করেছিলাম তারা কেন এখন অনৈক্য সৃষ্টি করছি? বিভিন্ন জায়গা থেকে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য শুনলে আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমে দেশকে ভিন্ন দিকে ঠেলে দেওয়ার প্রচেষ্টা চলছে।’

ফখরুল বলেন, জাতিকে এখন একটি মাত্র লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। প্রয়োজনীয় সংস্কার করে সংসদ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘আমি বলতে চাই, আমাদের বিভেদ সৃষ্টি করা উচিত নয়। ঐক্য অটুট রেখে (গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে) এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এটাও আমাদের দুর্ভাগ্য যে, স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও আমরা ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তর নিশ্চিত করতে পারিনি।’

কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে জাতিকে অনুপ্রাণিত করতে লেখক, শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।

ফখরুল বলেন, রাষ্ট্র পুনর্গঠনে লেখক-শিল্পীদের ভূমিকা দীর্ঘদিনের। কিন্তু হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনবিরোধী আন্দোলনে তা স্পষ্ট হয়নি।

তিনি আরও বলেন, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ ও প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি লালন করা একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। ‘সমাজের সর্বস্তরের মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমাদের এটি অর্জন করতে হবে।’


নির্বাচন যত দেরি হবে, ষড়যন্ত্র তত বাড়বে: তারেক রহমান

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি

নির্বাচন যত দেরি হবে, ষড়যন্ত্র তত বাড়বে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

তিনি বলেছেন, সাবেক স্বৈরাচার দেশি-বিদেশি প্রভুদের সঙ্গে মিলে ষড়যন্ত্র করেই চলেছে।

বিএনপির চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সম্মেলন-২০২৪-এর উদ্বোধনী অধিবেশনে এ কথা বলেন তারেক রহমান।

শনিবার সকালে চুয়াডাঙ্গার স্থানীয় টাউন ফুটবল ময়দানে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

শুধু নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমেই সংস্কারের বাস্তবায়ন সম্ভব বলে এ সময় মন্তব্য করেন তারেক রহমান।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার যে সংস্কারের কথা বলছে, সেই সংস্কার বিএনপিও চায়। তবে বেশি সংস্কার করতে গিয়ে নির্বাচন করতে দেরি হলে ষড়যন্ত্রকারীরা সুযোগ নিতে পারে।

একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে বিদ্যমান সমস্যা সমাধান সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

বিএনপির কাউন্সিলে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ কখনোই গণতান্ত্রিক দল ছিল না। তারা ফ্যাসিবাদী দল। ১৯৭২-১৯৭৫ সালে ফ্যাসিবাদের জন্ম দেন শেখ মুজিব। এ দেশে ফ্যাসিবাদের জনক শেখ মুজিবুর রহমান।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, গত ১৬ বছরে কোথাও কুপিয়ে-গুলি করে হত্যা করে বিএনপি নেতা-কর্মীদের গুম করেছে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা। পুলিশকে ব্যবহার করেও তারা হত্যা করেছে। গায়েবি মামলা দেওয়া হয়েছে। পুলিশকে যেভাবে ব্যবহার করা হয়েছে সেটি কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সম্ভব নয়।

ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জনরোষে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ পালিয়ে গেছে। তাই এখন এসব থেকে আল্লাহর রহমতে বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশ।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান খানের সভাপতিত্বে ও জেলা বিএনপির সদস্যসচিব শরীফুজ্জামান শরীফের সঞ্চালনায় সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায় চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আজিজুল বারী হেলাল, জেলা বিএনপির সদস্যসচিব শরীফুজ্জামান শরীফ, মেহেরপুর জেলা বিএনপির সভাপতি মাসুদ অরুণ ও সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন, কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মেহেদী আহমেদ প্রমুখ।

চুয়াডাঙ্গায় জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক কাউন্সিলের আয়োজন করে স্থানীয় বিএনপি। সেখানে ভোটের মাধ্যমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হয়। রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখার ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি বিষয়ক বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালারও আয়োজন করা হয়।

দীর্ঘ ২৫ বছর পর চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।


জনগণের দুর্ভোগ আগের মতোই: রিজভী

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

অন্তর্বর্তী সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, জনগণের দুর্ভোগ আগের মতোই রয়ে গেছে। দিনমজুর-শ্রমিকদের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়ছে।

শুক্রবার বিকেলে জাতীয়তাবাদী রিকশা-ভ্যান-অটোচালক দলের বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

জনগণের দুর্ভোগ আগের মতোই আছে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম আগের মতোই আছে। অন্তর্বর্তী সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় দিনমজুর-শ্রমিকদের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়ছে।’

তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষকে কষ্টে রেখে উপদেষ্টাদের যাচ্ছেতাই কর্মকাণ্ড মেনে নেওয়া হবে না।’ বললেন, ‘উপদেষ্টারা চাকরিজীবীর মতো কাজ করছেন। তাদের কাজে বিপ্লবের গতিশীলতা নেই।’

এ সময় অন্তর্বর্তী সরকারকে জুলাই বিপ্লবে হতাহতদের পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব।

রিজভী অভিযোগ করে বলেন, ‘ছাত্রলীগ ও যুবলীগকে হত্যার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। আর শেখ হাসিনা হত্যাকাণ্ড চালিয়ে মায়াকান্নার অভিনয় করতেন।’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘কারাগারে সালমান এফ রহমান বহাল তবিয়তে আছে শুনি। সেখানে সে খুব তৎপরতা চালাচ্ছে। তিনি লুটপাট করে দেশকে সর্বস্বান্ত করে দিয়েছেন। এই টাকাগুলো কই?’


মমতার বক্তব্য বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকিস্বরূপ: মির্জা ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী পাঠানো নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকিস্বরূপ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি অবিলম্বে এ ধরনের বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।

লন্ডন থেকে মুঠোফোনে গণমাধ্যমের কাছে দলের পক্ষ থেকে বিএনপি মহাসচিব এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ভারতের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের মুখমন্ত্রী যে উক্তি করেছেন বাংলাদেশ সম্পর্কে, সে বিষয়ে আমি বক্তব্য না রেখে পারছি না। তিনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) যে উক্তি করেছেন, তা সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি একটা হুমকিস্বরূপ এবং আমরা মনে করি, এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ভারতের নেতাদের যে দৃষ্টিভঙ্গি তা কিছুটা হলেও প্রকাশিত হয়েছে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ ধরনের কোনো চিন্তা ভারতের নেতাদের মধ্যে থাকা উচিত হবে না। কারণ, বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছে এবং সম্প্রতি একটা বিপ্লবের মধ্য দিয়ে তারা গণতন্ত্রকে ফিরে পেয়েছে। এ দেশের মানুষ যেকোনো মূল্যে এ ধরনের চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।

প্রসঙ্গত, সোমবার বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে যোগ দিয়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপও চেয়েছেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ক্ষুণ্ন হওয়া বা বিপন্ন হওয়ার যে অলীক কাহিনী ভারতীয় মিডিয়াগুলোতে প্রচারিত ও প্রকাশিত হচ্ছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা বারবার বলেছি, এখানে ভারতের সাংবাদিকরা এসেছিলেন, তারাও দেখেছেন, বাংলাদেশে এ ধরনের কোনো পরিস্থিতি নেই। অথচ ভারতবর্ষের মিডিয়া ও তাদের নেতারা যেভাবে সম্পূর্ণ একটা মিথ্যাকে তারা প্রচার করছেন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি দিচ্ছেন, তা কোনোমতেই বাংলাদেশের মানুষ গ্রহণ করবে না।’

সম্প্রতি ইসকনকে (আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ) নিয়ে যে এখানে (বাংলাদেশে) নতুন করে চক্রান্ত শুরু হয়েছে, তা বাংলাদেশের মানুষ কখনোই গ্রহণ করবে না বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘এটা খুব পরিষ্কার যে ইসকনের সাম্প্রতিক ভূমিকা অত্যন্ত সন্দেহজনক, রহস্যজনক এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি, বাংলাদেশের স্থিতিশীলতার প্রতি হুমকিস্বরূপ।’


আওয়ামী লীগ নির্বাচন করবে কি না, তা ঠিক করবে জনগণ: ফখরুল

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল। তারা রাজনীতি বা নির্বাচন করবে কি না, তা ঠিক করবে জনগণ। একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে তা আমরা নির্ধারণ করতে পারি না।

আজ বুধবার দুপুর ফেনীর ফুলগাজীর শ্রীপুরে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পৈতৃক বাড়িতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ ও ঢেউটিন বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘একটি ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। উপদেষ্টাকে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করার সুযোগ নাকি আমরা দিয়েছি। এ কথাটি সঠিক নয়। আমরা আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছি।’

‘আমরা বলেছি, আওয়ামী লীগ একটি রাজনৈতিক দল। এখানে ভুল বোঝাবুঝির কোনো অবকাশ নাই। আমরা কখনও কোনো দলকে নির্বাচনে আনতে মানা (নিষেধ) করিনি। কিন্তু হাসিনাসহ যারা মানুষ খুন করেছে, বিদেশে টাকা পাচার ও দেশের সম্পদ নষ্ট করেছে, তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে। আর জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে- কাকে রাজনীতি করতে দেবে, আর কাকে দেবে না; এখানে আমরা কেউ নই, এ দায়িত্ব আমাদের নয়’- বললেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। রাতারাতি সবকিছু হয়ে যাবে না। ১৫ বছরের যে জঞ্জাল, সেটি সাফ করতে সময় লাগে। তারা অনেক কাজ করবে। শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে তো। এখন কি আর আওয়ামী লীগের লোকজন অত্যাচার করতে পারে? উনাদের একটু সময় দিতে হবে। তারা কাজ শেষ করলে নিশ্চয়ই নির্বাচন হবে এবং জনগণের সরকার আসবে। আমরা বলেছি, এটি একটু তাড়াতাড়ি করলে ভালো হয়।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠিয়েছেন। তাকে যে কষ্টে রাখা হয়েছিল তা চিন্তাও করতে পারবেন না। তারপরও কখনও তিনি মাথা নত করেনি; তিনি মাথা উঁচু করে এখনও দাঁড়িয়ে আছেন। বেগম খালেদা জিয়া খুব অসুস্থ। আমরা তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর চেষ্টা করছি।’

বন্যায় বিএনপি নেতাকর্মীরা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে দলটির মহাসচিব বলেন, ‘বন্যায় এখানকার মানুষ অনেক কষ্ট করেছেন। আমাদের দলের নেতাকর্মীরা মাঠে কাজ করেছেন। শত নির্যাতনের পরও আমরা বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। আর দেশের ওপর যারা এত অত্যাচার করেছে, তারা পালিয়ে গেছে।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন, সাবেক সংসদ সদস্য রেহানা আক্তার রানু, চট্টগ্রাম বিভাগের সংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মশিউর রহমান বিপ্লব।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক ও ফেনী-১ আসনের সাংগঠনিক সমন্বয়ক রফিকুল ইসলাম মজনুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।


প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে নির্বাচনের রূপরেখা না থাকায় আশাহত বিএনপি

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১০০ দিন পূরণ হওয়া উপলক্ষে গতকাল রোববার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সে ভাষণে নির্বাচনের রূপরেখা না দেওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল এ আশাহত হওয়ার কথা জানান। মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের প্রধান উপদেষ্টা কালকে (রোববার) ১০০ দিনের পূর্তিতে একটা ভাষণ দিয়েছেন। ভালো হয়েছে। অনেকে আশান্বিত হয়েছেন, আমি একটু আশাহত হয়েছি। আমি আশা করেছিলাম, প্রধান উপদেষ্টা তার সব প্রজ্ঞা দিয়ে সমস্যাটা চিহ্নিত করে নির্বাচনের জন্য একটা রূপরেখা দেবেন।’ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি কেন নির্বাচনের কথা বারবার বলছি। কারণ নির্বাচন দিলে আমাদের অর্ধেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। বিএনপি ক্ষমতায় যাক না যাক, সেটা বিষয় নয়।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজকে যারা বাংলাদেশের ক্ষতি করতে চাচ্ছে, স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে চাচ্ছে, বাংলাদেশকে সংঘাতের দিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছে, নির্বাচনের একটা রূপরেখা দিলে তারা পিছিয়ে যেতে বাধ্য হবে। কারণ ওই সরকারের পেছনে জনগণের সমর্থন থাকবে। এ বিষয় আমাদের চিন্তা করতে হবে।’ সংস্কার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘সংস্কার আমরা শুধু চা-ই না, আমরা এটা শুরু করেছি। আপনাদের কাছে অনুরোধ, যেভাবে এগোলে সুন্দর হয়, গ্রহণযোগ্য হয়, সেভাবে আপনারা এগিয়ে যান। আমরা এখন পর্যন্ত কোনো বাধার সৃষ্টি করিনি, বরং প্রতিটি ক্ষেত্রে আপনাদের সমর্থন দিচ্ছি। যদিও সচিবালয়ে স্বৈরাচারের ও ফ্যাসিবাদের দোসররা বসে আছেন। আপনি তাদের নিয়ে কীভাবে কাজ করবেন।’

প্রশাসনের কথা উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আপনি সংস্কার করবেন, আমলারা যারা বসে আছেন, তারা বেশির ভাগই স্বৈরাচারের দোসর। তারা কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন, দুর্নীতি করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে সেভাবে ব্যবস্থা নিতে দেখি না। এগুলো একটু দৃশ্যমান করুন। গভর্ন্যান্সের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রশাসন চালানো, দেশ শাসন করা- এগুলোতে যেন মানুষ শান্তি পায়। সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।’

বাজার পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে ফখরুল বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বেড়েছে, শান্তি পাওয়ার কোনো কারণ নেই। তাও তো মানুষ মেনে নিচ্ছে। কারণ, আপনারা একটা সুন্দর নির্বাচন দেবেন। কাজেই ওটাকে দৃশ্যমান করুন, ব্যবস্থা নিন। বাজারের সিন্ডিকেট ভাঙতে পারেন বা না পারেন, চেষ্টা করুন। ব্যবস্থা নিতে হবে। সচিবালয়ে যদি ঘুষ দিতে হয়, সচিবালয়ে গিয়ে যদি মানুষ দেখে সেই দালালেরাই ঘোরাঘুরি করছে, মানুষ তা কখনো ভালো চোখে দেখবে না।’ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, এ সরকার পারবে, বাংলাদেশের মানুষ পারবে এবং তরুণেরা পারবে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে।’ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির নেতা নিতাই রায় চৌধুরী, খায়রুল কবির খোকন, আবদুস সালাম আজাদ, হেলেন জেরিন খান, আসাদুল করিম, নাজমুল হক প্রমুখ।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘রাজনীতিতে যদি ভুল হয়, তার খেসারত দিতে হয়। যে পাকিস্তানের জন্য এ দেশের মানুষ ১৯৪৬ সালে লড়াই করেছে, যে মুসলিম লীগ ছিল এ দেশের এক অবিসংবাদিত দল, তাদের ভরাডুবি হলো ভুল রাজনীতির কারণে। এসব বিষয় আমাদের রাজনীতিদেরা অনেক সময় খেয়াল করেন না; যেমন এখন।’ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একটা পরিবর্তন এসেছে। সেই পরিবর্তনকে বুঝতে হবে, বুঝতে হবে ছেলেরা কী বলছে। আমাদের মধ্যে অনেকে, বিশেষ করে বিএনপির মধ্যে অনেকে বলেন, ছেলেরা কি সব একাই করেছে? জোরেশোরে বলেন মিটিংয়ে। সত্য কথা, আমরা ১৫ বছর ধরে লড়াই করেছি, জান দিয়েছি, প্রাণ দিয়েছি, জেলে গেছি। তারপরও শেষ লাথিটা গোলে কে মেরেছে? ছাত্ররা।’ ছাত্র-তরুণ-যুবকরাই পরিবর্তনের ভ্যানগার্ড বলে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ছাত্ররা যদি না আসে, তাহলে বুক পেতে দেবে কে? ছাত্র–তরুণ যার পিছুটান নেই, সে ভ্যানগার্ড। আমরা যারা বয়স্ক, তারা পেছনে ফিরে তাকাই, পরিবার আছে- এসব কথা চিন্তা করি। কিন্তু ছাত্র–তরুণ-যুবকেরা সেটা করে না, তারা বুক পেতে দেয়।’ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় রংপুরের আবু সাঈদের কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সাঈদ রংপুরে যেভাবে দাঁড়াল, সেটা ছিল আন্দোলনের টার্নিং পয়েন্ট। এসব বিষয় আপনাদের চিন্তা করতে হবে। সুতরাং ছাত্রদের সঙ্গে আমাদের কখনো কোনো দূরত্ব সৃষ্টি করা যাবে না। মনে রাখতে হবে, তারা তরুণ, তাদের অনেক উদ্দীপনা।’ মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘ছাত্ররা অনেক কথা বলছে, বলবে। কারণ তাদের বলার অধিকার আছে।’ দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যত দ্রুত নির্বাচন হবে, তা দেশের জন্য, জাতির জন্য মঙ্গল। এটা বলছি আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে। এ ধরনের সরকার যত বেশি দিন ক্ষমতায় থাকে, তত সমস্যা তৈরি হয়। কারণ, এদের তো ম্যান্ডেট নেই, এরা তো নির্বাচিত সরকার নয়। এই সরকারকে চিন্তা করতে হবে, তারা যত দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কার করে নির্বাচন দিয়ে জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারে, ততই মঙ্গল।’


কোনো রাজনৈতিক দলকে সরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা নেই

ডা. শফিকুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

কোনো রাজনৈতিক দলকে সরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা জামায়াতে ইসলামীর নেই বলে জানিয়েছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটি জানান তিনি। সাক্ষাৎকারে জামায়াতের আমিরের কাছে জানতে চাওয়া হয়, একটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে যে, অন্তর্বর্তী সরকার এবং জামায়াত একত্রে আওয়ামী লীগকে সরানোর পর এবার বিএনপিকেও সরিয়ে দিতে চায়। দুই বড় রাজনৈতিক দলকে বাইরে রেখে নতুন শক্তির উত্থান ঘটানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কতটা সত্য?

জবাবে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘এই তত্ত্বের কোনো ভিত্তি নেই। আওয়ামী লীগের প্রতি জনতার সম্মিলিত ঘৃণা তৈরি হয়েছিল দুর্নীতি এবং ফ্যাসিবাদী নীতির কারণে। তারা নিজেরাই নিজেদের পতন ডেকে এনেছে। কোনো সংগঠন বা দলকে সরানোর জন্য আমাদের কোনো ভূমিকা পালনের প্রয়োজন নেই।’ ভারতবিরোধিতা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়, জামায়াতে ইসলামীর ভারতবিরোধিতা সর্বজন পরিচিত। এ বিষয়ে কী বলবেন? জবাবে জামায়াতের আমির বলেন, ‘এ ধারণা ভিত্তিহীন। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাদের নিশানা করে এই মতবাদ ছড়ানো হয়েছে যাতে জামায়াতের রাজনীতির মিথ্যা ব্যাখ্যা ও বিভ্রান্তি তৈরি হয়। সমান মর্যাদা এবং সম্মানের ভিত্তিতে আমরা ভারতসহ সব প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাই। আমাদের আন্তর্জাতিক নীতি, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়।’ সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের অসামান্য সম্পর্ক এবং বোঝাপড়া রয়েছে। প্রতিটি নাগরিককে সমদৃষ্টিতে দেখা হয় এবং রাষ্ট্রের সব নাগরিককে সমান অধিকার এবং মর্যাদার ভিত্তিতে সম্মান করা হয়। জামায়াত সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরুর তত্ত্বে বিশ্বাসী নয়। আমরা মনে করি, ধর্মের ভিত্তিতে দেশবাসীর বিভাজন অপরাধ। হিন্দু বা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হিংসার ইতিহাস জামায়াতে ইসলামীর নেই। বরং বিভিন্ন সময়ে জামায়াতে ইসলামী নানা বিষয় নিয়ে হিন্দু নেতাদের সঙ্গে আলোচনাও করেছে।’


আগামীর বাংলাদেশে কেউ স্বেচ্ছাচারী হতে পারবে না: তারেক রহমান

টানা দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী নয়
ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘বিএনপি এমন বাংলাদেশ গড়তে চায় যেখানে কোনো ব্যক্তি, এমনকি প্রধানমন্ত্রীও স্বেচ্ছাচারী হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারবে না।’

তারেক রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশে স্বৈরাচারী ব্যবস্থার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সেটি নিশ্চিত করতে বিএনপি সংবিধানে এমন ব্যবস্থা রাখতে চায়, যাতে কেউ পর পর দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে না পারে। আমরা আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য রাখতে চাই। রাষ্ট্র পরিচালনায় সমাজের জ্ঞানী-গুণীদের প্রতিনিধিত্ব এবং অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদীয় ব্যবস্থার প্রবর্তন করতে চাই।’

বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘৩১-দফা রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আওয়ামী লীগের মতো পরিবারতন্ত্র করবে না বিএনপি জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘গতানুগতিক ধারার রাষ্ট্র পরিচালনায় আবদ্ধ থাকলে চলবে না। আমাদের উৎসাহ দিতে হবে আধুনিকতাকে, বরণ করে নিতে হবে অভিনবত্বকে। সামনের দিকে দৃষ্টিপাত করে আলিঙ্গন করে নিতে হবে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের চিন্তাধারাকে, যা পরবর্তীকালে পরিবর্তন করে রাজনৈতিক সংস্কৃতিকেও।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি সংস্কারের উদ্দেশ্য বলতে সেটিই বুঝি, যে সংস্কারের মাধ্যমে সংবিধানের কয়েকটি বাক্য নয় বরং মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। অর্থাৎ একজন মানুষের রোজগারের ব্যবস্থা হবে, তার ও পরিবারের আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা এবং সঞ্চয় নিশ্চিত হবে। আমি সংস্কার বলতে সেটিই বুঝি, যা কর্মসংস্থানের মাধ্যমে প্রতিটি নারী ও পুরুষের বেকারত্ব সমস্যার সমাধান করবে। যে সংস্কার নারীদের সম্মান, স্বাধীনতা ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করবে। যে সংস্কার সব মানুষের জীবনের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে, যে সংস্কার দেশের সন্তানদের আধুনিক শিক্ষা ও নৈতিক মূল্যবোধ গঠন করবে, যে সংস্কার মানুষকে কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা দেবে, যে সংস্কার বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম স্থিতিশীল রাখবে। আমি সংস্কার বলতে সেটিই বুঝি, যা কৃষক, শ্রমিক এবং সব কর্মজীবী মানুষের ন্যায্য ও প্রাপ্য মজুরি নিশ্চিত করবে।’

তিনি বলেন, ‘পরিবেশ, পরিস্থিতি, দেশের প্রয়োজন এবং মানুষের চাহিদার সঙ্গে মানিয়ে নিতে ৩১ দফাকে সংযোজন, বিয়োজন, পুনর্বিন্যাস বা পরিবর্তনও করা যেতে পারে। তবে তা হবে স্টেকহোল্ডার কনসালটেশন তথা অংশীজনদের পরামর্শ ও জনমত ঐক্যের মাধ্যমে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সময়ের সঙ্গে এই ৩১ দফাই এক দিন আমাদের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য তথা সুখী ও স্বনির্ভর বাংলাদেশ অর্জনের দ্বার উন্মোচন করবে- যা বিশ্ব মানচিত্রে পরিচিত হবে কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ, শিল্পায়নে সাফল্যমণ্ডিত, অর্থনীতিতে গতিশীল, মানবসম্পদে সমৃদ্ধ এবং সামাজিকভাবে ঐক্যবদ্ধ একটি প্রগতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে।’

তারেক রহমান বলেন, ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা ও বিচার, পরোয়ানা ছাড়াই গণগ্রেপ্তার এবং চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে যে ভয়ের সংস্কৃতি গত ১৬ বছরে গড়ে উঠেছিল– জনগণের ভোটে নির্বাচিত বিএনপি সরকারের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে সেটি নির্মূল করার জন্য। জাতিসংঘ প্রণীত মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র অনুসারে আমরা নিশ্চিতের চেষ্টা করব প্রতিটি নাগরিকের মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা।’

তিনি বলেন, ‘গত ১৬ বছর ধরে এবং জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন- গণতন্ত্রের পক্ষের প্রতিটি ব্যক্তি, দল, সংগঠন ও গোষ্ঠী, তাদের সবার আত্মত্যাগের যথাযথ স্বীকৃতি দিয়ে, প্রতিটি শ্রেণি-পেশা-মতের মানুষের অংশগ্রহণকে সম্মান জানিয়ে লুণ্ঠিত ভোটাধিকার ফিরিয়ে এনে এবং জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে একটি সত্যিকার গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের সমন্বিত অগ্রাধিকার।’


নতুন প্রস্তাবের সঙ্গে ৩১ দফা মিলে যাবে: ফখরুল 

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের মত নিয়েই রাষ্ট্র সংস্কারে ৩১ দফা দেওয়া হয়েছিল উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ওই ৩১ দফার সঙ্গে নতুন প্রস্তাব মিলে যাবে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানীতে লেকশোর হোটেলে বিএনপির ‘৩১ দফা রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবনা ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই অর্থাৎ প্রায় ২ বছর আগে বিএনপি যে রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছিল তা আবার সবার সামনে তুলে ধরতেই এ আয়োজন। তিনি আরও বলেন, ৩১ দফা শুধু বিএনপির নয়, যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের মত নিয়েই এই রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাব দেওয়া হয়। নতুন যে প্রস্তাব দেওয়া হবে, এর সঙ্গে ৩১ দফা মিলে যাবে, মিলতে হবেই। কেননা এটা জাতিকে এগিয়ে নেওয়ার ভাবনা থেকেই করা হয়েছে।

মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সের সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল গতকাল ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স মেগান বোলদিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান। তিনি জানান, গতকাল সকাল ১০টায় গুলশানে বোলদিনের বাসায় ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠক শুরু হয়। তিনি বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদকে নিয়ে তার আমন্ত্রণে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসায় চা খেতে যান মির্জা ফখরুল। শায়রুল বলেন, বৈঠকে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। তবে বিস্তারিত জানাননি তিনি। পরে দলের পক্ষ থেকে অন্য কোন নেতাও এর বিস্তারিত প্রকাশ করেননি।

গণঅভ্যুত্থানে আহতদের বিদেশে চিকিৎসার দাবি বিএনপির

এদিকে জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে গুরুতর আহত রোগীদের যথাযথ চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি জানিয়েছে দলটি। গতকাল জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) পরিদর্শন করে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল। এ সময় তারা এ দাবি জানান। আন্দোলনে ভুক্তভোগী প্রত্যেক নাগরিককে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে প্রতিশ্রুত আর্থিক সহায়তা দ্রুত দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান দলের নেতারা। প্রতিনিধিদলের প্রধান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘যাদের অবস্থা সংকটাপন্ন এবং এ দেশে চিকিৎসা করা সম্ভব নয়, তাদের দ্রুত শনাক্ত করতে সরকারের প্রতি আমারা আহ্বান জানাচ্ছি। বিশেষ করে যারা দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন বা আঘাত পেয়েছেন এবং তাদের চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়, তাদের যথাযথ চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে হবে।’ এর আগে সালাহ উদ্দিন, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম হাসপাতাল পরিদর্শন করেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন।

বুধবার স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম জুলাই মাসের আন্দোলনে আহতদের দেখতে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) পরিদর্শনে গেলে আহত রোগীদের ক্ষোভের মুখে পড়েন ও সেখান থেকে চলে যেতে বাধ্য হন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক। এরপর আহতরা সড়কে নেমে আন্দোলন শুরু করলে গত বুধবার গভীর রাতে চার উপদেষ্টা গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন। পরিদর্শন শেষে সালাহউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা শুনেছি স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও ব্রিটিশ হাইকমিশনার এই হাসপাতালে এসেছিলেন কিন্তু সব রোগীর সঙ্গে দেখা করতে পারেননি, এতে তাদের মধ্যে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে।’ তিনি বলেন, রোগীরা তাদের জানিয়েছেন, চিকিৎসা ছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে আর কোনো সহযোগিতা তারা পাননি। এ বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারছি, চিকিৎসার বাইরেও তাদের সহায়তা প্রয়োজন। অনেকে জানিয়েছেন, প্রতিশ্রুত এক লাখ টাকা তারা এখনো পাননি। আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, যত দ্রুত সম্ভব তাদের এই সহায়তা দিতে।’ তিনি বলেন, বুধবার রাতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান পাঁচ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হাসপাতালে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ওই টাকা তারা বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলামকে আহতদের মধ্যে বিতরণের জন্য দিয়েছেন।


banner close