দেশের ৬৪টি জেলায় পর্যায়ক্রমে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, ফ্যাসিবাদের বিভিন্ন ষড়যন্ত্র মোকাবিলা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ও নির্বাচনি রোডম্যাপের দাবিতে এই বিক্ষোভ করবে দলটি।
আজ শনিবার রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এমন তথ্য দিয়েছেন।
রিজভী বলেন, আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশের সব জেলায় সমাবেশ করবে বিএনপি, যা শেষ হবে রমজানের আগে। পরবর্তীতে সব মহানগর ও বিভাগীয় সদরে সমাবেশ করা হবে।
দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও কেন্দ্রীয় নেতারা এসব বিক্ষোভে অতিথি হিসেবে অংশ নেবেন। কোন জেলার বিক্ষোভে কোন নেতা অংশ নেবে—তা পরবর্তীতে জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এ সময় দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, কেন্দ্রীয় নেতা আসাদুল করীম শাহিন, তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, জাতীয় প্রেসক্লাবে একটি বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে রিজভী বলেন, “শেখ হাসিনাকে ‘ফ্রি হ্যান্ড’ কথা বলার সুযোগ দিয়ে ভারত বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে। ভারত তাকে (শেখ হাসিনা) আশ্রয় দিয়েছে, সেটা দিতেই পারে। কিন্তু তাকে ‘ফ্রি হ্যান্ড’ দেওয়া যে, সে বলবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে…পার্শ্ববর্তী দেশে থেকে সে উসকানি দিচ্ছে, একটা অরাজকতা তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে এবং তাকে সমর্থন করছেন ভারতের নীতিনির্ধারকেরা। এটা অদ্ভুত ব্যাপার।”
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা আরও বলেন, ‘এটা তো বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ, ভয়ংকর রকমের হস্তক্ষেপ! একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ওপর আরেকটি রাষ্ট্রের এরকম অবস্থান—এটা তো চরমভাবে আন্তর্জাতিক রীতিনীতির লঙ্ঘন!’
দেশের বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে একটি সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয় মগবাজারে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের এক জরুরি বৈঠক জামায়াত আমীর এ আহ্বান জানান।
বৈঠকে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন। এসময় দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়।
জ্ঞাতআয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় তিন বছরের কারাদণ্ড থেকে খালাস চেয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানের হাইকোর্টে করা আপিলের পরবর্তী শুনানি আগামী সোমবার।
বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আপিলের প্রথম দিনের শুনানি শেষে আজ বৃহস্পতিবার পরবর্তী শুনানির এই দিন ধার্য করে আদেশ দেয়।
আদালতে জুবাইদা রহমানের আপিলের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী এস এম শাহজাহান, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ও অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন ভূইয়া। আর দুদকের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী আসিফ হাসান।
এই মামলার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে গত ১৪ মে বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ডা. জুবাইদা রহমানকে জামিন দেন। সেই সঙ্গে নিম্ন আদালতে থাকা এই মামলার নথি তলবের পাশাপাশি জুবাইদা রহমানের অর্থদণ্ড স্থগিত করেন।
সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তারেক রহমান, জুবাইদা রহমানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলাটি করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পরের বছর তাঁদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। ২০২৩ সালের ২ আগস্ট এই মামলায় রায় দেন ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. আছাদুজ্জামান। রায়ে তারেক রহমানকে ৯ বছর কারাদণ্ড এবং তাঁর স্ত্রী জুবাইদা রহমানের ৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে এই মামলায় জুবাইদা রহমানের কারাদণ্ড ১ বছরের জন্য স্থগিত করে গত ২২ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ৪৮ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণের আল্টিমেটাম দিয়ে আন্দোলন আপাতত স্থগিত করেছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে কাকরাইল মোড়ে আন্দোলনস্থলে এসে তিনি এ ঘোষণা দেন।
ইশরাক হোসেন বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল একটি গণতান্ত্রিক, নিয়মতান্ত্রিক দল; যারা আইনের শাসনে বিশ্বাস করে। হাইকোর্টের আদেশ শোনার পর দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে আপাতত আমার আন্দোলন স্থগিত রাখব। সরকারকে আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণ করা হবে, তারা কী করে, তাদের কর্মকাণ্ডের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী কার্যক্রমের নির্দেশনা আসবে।
তিনি বলেন, আমি আসার সময় আমাদের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলে এসেছি। হাইকোর্টে একটি ভুয়া রিট, বলা যায় সেই রিট দিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আমাকে মেয়র পথে শপথ করানো থেকে বাধাগ্রস্ত করানোর একটা অপচেষ্টা করা হয়েছিল। সব শেষে আইনের শাসনের বিজয় হয়েছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা যেহেতু আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, আমরা আশা রাখব বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার আর একদিনও কালক্ষেপণ না করে, অবিলম্বে আদালতের রায় বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে তাদের আগামী দিনের এজেন্ডা জনগণের কাছে ফুটিয়ে তুলে ধরবে। আজকে যেহেতু আমরা রায়টি পেয়েছি, যদি সরকার আবারও তালবাহানা করে, তাহলে কালকে সকালে আমরা আবার এখানে এসে ঘেরাও দেব।
তিনি বলেন, এই কর্মসূচির ফলে চরম জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। জনগণ দুর্ভোগে পড়ে। রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা তারা ট্রাফিক জ্যামে আটকে থাকে। নাগরিক বিভিন্ন সভা থেকে তারা বঞ্চিত হয়। সেটার জন্য আমাদের নেতা এবং আমি সাধারণ জনগণের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি। শুরুতে কিন্তু আমাদের আন্দোলনের পরিকল্পনা ছিল না। বর্তমান সরকার অধিকার বঞ্চিত করতে গিয়ে এমন পর্যায়ে নিয়ে যায়, তখন আমরা বাধ্য হয়ে এ ধরনের কর্মসূচিতে আসার জন্য সিদ্ধান্ত নেই।
ইশরাক হোসেন বলেন, গতকাল আমি বলেছিলাম, বর্তমান সরকারের ভেতরে যে দুজন ছাত্র প্রতিনিধি রয়েছে, যারা একটি নতুন রাজনৈতিক দলের সমর্থক এবং সরাসরি সংগঠক হিসেবে কাজ করছে। তাদের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন শেষ হবে না, এই ঘোষণা দিয়েছিলাম। আমি আমার ঘোষণাকে পুনর্ব্যক্ত করতে চাই। তাদের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে।
ইশরাক হোসেন আরও বলেন, রায় এবং শপথ আলাদা বিষয়, এটা হয়ে যাওয়া মানে প্রথম যে দাবিটি করেছিলাম, ছাত্র প্রতিনিধিসহ অন্যান্য প্রতিনিধিদের পদত্যাগ করতে হবে, সেটা কিন্তু পরিবর্তন হবে না। সেই দাবি সেই দাবির জায়গায় থাকবে, হয়তোবা সরকারের সঙ্গে আমাদের উচ্চপর্যায়ের নেতৃবৃন্দ আলাপ-আলোচনা করে এটি সমাধানের চেষ্টা করবেন। তখন যদি না হয় আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা একটা একটা ধাপ পার হয়ে আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। এই কাজ করতে গিয়ে যদি সম্পূর্ণ কৃতিত্ব দিতে হয়, তাহলে তৃণমূলের বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে এই কৃতিত্ব দিতে হয়। তারা কষ্ট করে আন্দোলনকে সংগঠিত করেছে। যে আন্দোলনে ঢাকাবাসী অংশগ্রহণ করে সরকারকে বাধ্য করেছে তাদের জায়গা থেকে সরে আসতে। আমরা সরকারকে পর্যবেক্ষণে রাখব। তারা ধানের শীষের প্রার্থীর সঙ্গে এখন কী ধরনের আচরণ করে সেটি দেখার বিষয়।
তিনি বলেন, একটি রাজনৈতিক দল এটা নিয়ে নানা ধরনের বিভ্রান্তকর লেখা লেখছে। পোস্ট দিচ্ছে। ভুল আইনি ব্যাখ্যা দিচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস, উনি সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। উনাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা বলতে চাই, উনার আশপাশে যে কুলাঙ্গার রয়েছে তাদের চিহ্নিত করতে হবে। তাদের আপনি অপসারণ করে একটি নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেন।
এর আগে বুধবার সকাল থেকে ইশরাককে মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে কাকরাইলে অবস্থান নেন তার সমর্থকরা। তারা সারারাত সেখানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, বিএনপি নেতাকর্মীরা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবি করে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন। একই সঙ্গে দুই উপদেষ্টার পদত্যাগও দাবি করছেন তারা।
যমুনারে যমুনা আমরা কিন্তু যাব না, এই মাত্র খবর এলো ইশরাক ভাই মেয়র হলো, এই মুহূর্তে দরকার নির্বাচিত সরকার, দফা এক দাবি এক নির্বাচিত সরকার, যমুনারে যমুনা শপথ ছাড়া যাব না— বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন তারা।
আদালতের রায়ে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের মেয়র হিসেবে শপথ নেওয়ার বাধা দূর হলেও বৃষ্টির মধ্যে রাজধানীর মৎস্যভবন মোড়ে অবস্থান নিয়ে আছেন তার সমর্থকরা। এদিকে আরও জোরালো আন্দোলন করতে সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) হাইকোর্টের রায়ের পর সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে ইশরাক বলেন, ‘আন্দোলনকারী ভাইদের বলবো— এইসব মূলা দিয়ে গাধা বস করা যায়; আমাদের না। দুই ছাত্র প্রতিনিধি উপদেষ্টার পদত্যাগের খবর না আসা পর্যন্ত চলেছে, লড়াই চলবে। রাস্তা তো ছাড়বেন না—আরও বিস্তৃত করতে হবে।’
ইশরাকের পক্ষে হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পরও কাকরাইল মসজিদ এলাকায় অবস্থান করে প্রতিবাদ সমাবেশ করছেন বিক্ষোভকারীরা। রায়ের খবর পেয়ে কাকরাইল মসজিদ মোড়ে অবস্থান কর্মসূচিতে থাকা বিএনপির নেতাকর্মীরা ব্যাপক আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
এ সময় স্লোগান দিয়ে নেতাকর্মীরা বলতে থাকেন, ‘এই মুহূর্তে খবর এলো, ইশরাক মেয়র হলো’, ‘এই মাত্র খবর এলো, জনগণের বিজয় হলো’।
তারা বলছেন, হাইকোর্টের রায় তাদের প্রাথমিক বিজয়। কিন্তু, তাদের নতুন আরেকটি দাবি আছে। সেটি হলো—সরকারের দুজন উপদেষ্টা স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজকে পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। তারা পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
ইশরাককে শপথ পড়ানোর পাশাপাশি দুই উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে সড়কে অবস্থান করছেন তারা। যতক্ষণ না ওই দুই উপদেষ্টা পদত্যাগ করেন, তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।
এর আগে, গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কাকরাইল মোড়ে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন অবস্থান কর্মসূচিতে এসে ঘোষণা দেন, মেয়র পদে তাকে দায়িত্ব বুঝে না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
পাশাপাশি তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলমের পদত্যাগ দাবি করেন। পরে সমর্থকদের সঙ্গে আন্দোলনস্থলে অবস্থান নেন তিনি।
এদিকে ইশরাকের মেয়র হিসেবে শপথ নেওয়ার বাধা কাটায় ‘জনগণের বিজয়’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘বিচার বিভাগের উচ্চ আদালত তারা আইনের প্রতি সম্মান দেখিয়ে যেটা হওয়া উচিত, সেই ধরনের রায় তারা দিয়েছেন। এই রায়ে জনগণের বিজয় হয়েছে।’
‘এটাতে নিঃসন্দেহে গণতন্ত্রের আরেকটা বিজয় হয়েছে। আমরা জানি যে যখন মেয়র নির্বাচন হয়, তখন সেটা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার জবরদস্তি জোর করে এই ফলাফল কেড়ে নিয়ে গিয়েছিল। জনতার মেয়র হিসেবে ঢাকাবাসীসহ দেশের জনগণ ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করেছিল,’ বলেন ফখরুল।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটির সবশেষ নির্বাচন হয়। তাতে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনকে পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস।
ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর গেল ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে।
এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু তাকে যেন শপথ পড়ানো না হয় সেজন্য গত ১৪ মে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মামুনুর রশিদ।
অন্যদিকে ইশরাককে শপথ পড়ানোর দাবিতে ওইদিনই আন্দোলন শুরু করেন তার সমর্থকরা। তাদের আন্দোলনে কার্যত অচল হয়ে পড়ে নগর ভবন। কিন্তু আইনি জটিলতার কথা বলে ইশরাকের শপথের আয়োজন থেকে বিরত থাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ঢাকা শহরে ওয়ার্ড ভিত্তিক খেলার মাঠ তৈরি করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। যেখানে বাচ্চারা খেলবে এবং মুরুব্বিরা হাঁটবে। মানুষ সেখানে বুক ভরে শ্বাস নিতে পারবে।
তারেক রহমান গতকাল দেয়া এক বক্তৃতায় এ কথা বলেন। তারেক রহমান তার ভেরিফাইড ফেসবুকে এটি তুলে ধরেছেন।
সেন্ট্রাল লন্ডনের মিলেনিয়াম গ্লসেস্টার হোটেলে আয়োজিত বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক ছোটভাই মরহুম আরাফাত রহমান কোকো মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ক্রিকেট টুর্নামেন্ট এর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন তারেক রহমান।
তারেক রহমান বলেন, ‘ঢাকা শহরে ওয়ার্ড ভিত্তিক খেলার মাঠ তৈরি করার পরিকল্পনা আছে। অন্তত দুটি ওয়ার্ডের মাঝে তিন থেকে চার বিঘা জমি নিয়ে মাঠ করে তোলা হবে, যেখানে বাচ্চারা খেলবে এবং মুরুব্বিরা হাঁটবে। মানুষ সেখানে বুক ভরে শ্বাস নিতে পারবে। এমন একটি চিন্তা আমাদের আছে।’
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলমত নির্বিশেষে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘আমরা আজ একটি জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছি। আমাদের সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশটাকে গড়তে হবে।’
তারেক রহমান বলেন, ‘আমাদের মাঝে বিভিন্ন বিষয়ে মতপার্থক্য থাকতেই পারে। গণতন্ত্রে সেটাই স্বাভাবিক। এটিই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। কিন্তু দেশকে আন্তর্জাতিকভাবে এগিয়ে নেওয়া, দেশের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং কর্মসংস্থান তৈরি করতে আমাদের আজ একটি জায়গায় দাঁড়িয়ে সকলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশটাকে গড়তে হবে।’
পশ্চিম লন্ডনের একটি পাঁচ তারকা হোটেলে স্থানীয় সময় রোববার সন্ধ্যায় আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ২০২৫ এর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তারেক রহমান একথা বলেন।
খেলাধুলার মানোন্নয়নে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে যারা দেশকে রিপ্রেজেন্ট করতে পারে, তাদের সম্পূর্ণ দায়িত্ব রাষ্ট্র বহন করবে। খেলোয়াড় তৈরির জন্য ভবিষ্যতে দেশে বিকেএসপির সংখ্যা আরো বাড়ানো হবে। আল্লাহ যদি বিএনপিকে রাষ্ট্র সেবার দায়িত্ব দেন তাহলে দেশের সকল বিভাগে একটি করে ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা বিকেএসপি প্রতিষ্ঠা করা হবে। প্রয়োজনে খেলোয়াড় তৈরি করতে সিলেবাসে পরিবর্তন আনা হবে।
তারেক রহমান বলেন, বর্তমানে দেশের ৪টি বিভাগে বিকেএসপি রয়েছে। আমরা সরকার গঠন করলে প্রথমে সকল বিভাগে একটি করে বিকেএসপি করব। যাতে ভালোমানের খেলোয়াড় তৈরি হয়। আর যারা খেলাধুলার মাধ্যমে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশকে রি-প্রেজেন্ট করবে তাদের দায়-দায়িত্ব রাষ্ট্র নেবে।
তিনি বলেন, আমরা ঢাকা শহরে ওয়ার্ডভিত্তিক খেলার মাঠ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারি। অন্তত দুটি ওয়ার্ডের মাঝখানে যদি তিন থেকে চার বিঘা জমি বের করা যায় সেখানে মাঠ করা হবে। বাচ্চারা খেলবে, মুরব্বিরা হাঁটবে। অর্থাৎ মানুষ সেখানে বুক ভরে শ্বাস নিতে পারবে। ঠিক এমন একটি চিন্তা আমাদের আছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা স্কুলের সিলেবাস ঢেলে সাজাতে চাই। সেখানে খেলাধুলা ও দ্বিতীয় বা তৃতীয় ভাষা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এর জন্য পরীক্ষায় আলাদাভাবে নম্বর থাকবে। তার মানে খেলাধুলা তাকে করতেই হবে। আমরা এটা অন্তর্ভুক্ত করে দেব।
তারেক রহমান বলেন, আমরা সরকারের কাছে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চেয়েছি। এই নির্বাচনের জন্য আমাদের বহু নেতাকর্মী জীবন দিয়েছে। গুম হয়েছে, নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এটি মানুষের রাজনৈতিক অধিকার। আমরা এর মাধ্যমে এমন একটি রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই, যেই সরকার মানুষের রাজনৈতিক কল্যাণে কাজ করবে।
ছোট্ট ভাই আরাফাত রহমান কোকোকে স্মরণ করতে গিয়ে তারেক রহমান বলেন, বড় ভাই হিসেবে ছোট ভাইকে নিয়ে গর্ব করার জন্য যা যা থাকা দরকার কোকোর মধ্যে তার সবই উপস্থিত ছিল।
আরাফাত রহমান কোকো মেমোরিয়াল ট্রাস্টের শরফরাজ আহেমদ শরফুর পরিচালনায় ও আবু নাসের শেখ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক, সাবেক ভূমি উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবীর, বগুড়া জেলা বিএনপির সহসভাপতি মীর শাহে আলম, বগুড়ার বিএনপির সাবেক এমপি মোশারফ হোসেন, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সহসম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, ড্যাবের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি অধ্যাপক ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম প্রমুখ।
এ অনুষ্ঠানের আয়োজকরা হলেন ফজলে রহমান (পিনাক), শেখ সাদেক, ডালিয়া বিনতে লাকুরিয়া, আরিফুল ইসলাম উজ্জ্বল, শাকিল চৌধুরী, আব্দুস সামাদ রাজ, ফাহিদুল আলম (ফরহাদ), অঞ্জনা আলম, মনোয়ার হোসেন, আলম শিমু, শফিউল আলম মুরাদ, কামরুজ্জামান চৌধুরী পাউন্ড, তুহিন মোল্লা প্রমুখ।
চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর গেলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
আজ রোববার তিনি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। সহধর্মিণী আফরোজা আব্বাস এবং ব্যক্তিগত সহকারী মিজানুর রহমান সোহেল মির্জা আব্বাসের সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন।
তিনি সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসা নিবেন। সেখানে তিনি ডায়াবেটিস, অর্থোপেডিক, নিউরোলজির বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন এবং শারীরিক পরীক্ষা করাবেন।
আগামী ২৫ মে মির্জা আব্বাসের দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
কোনো রাজনৈতিক দলকে পুনর্গঠনের সুযোগ দিতে জনগণের ভোটদানের মৌলিক অধিকারের সঙ্গে আপসের মাধ্যমে নির্বাচন বিলম্বিত করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা নজরুল ইসলাম খান।
তিনি বলেন, ‘কোনো কোনো দলকে সংগঠিত করার জন্য সময় লাগতে পারে, আবার কারোর মিত্র ও বন্ধুদের একত্রিত করার জন্যও সময় লাগতে পারে। এ কারণেই জনগণের ভোটদানের মৌলিক মানবাধিকার বিলম্বিত হবে—এটি হতে পারে না।’
শুক্রবার (১৬ মে) এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি নেতা বলেন, তারা বিশ্বাস করেন যে, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাদের দাবি সম্পূর্ণ যৌক্তিক এবং এর বিরুদ্ধে কেউ কোনো যুক্তিসঙ্গত প্রস্তাব বা যুক্তি উপস্থাপন করতে পারেনি।
তিনি বলেন, ‘এজন্যই আমি আবারও বলছি—দেশের সামনে থাকা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও সমস্যা সমাধানের জন্য রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের কোনো বিকল্প নেই—নির্বাচিত সরকারের কোনো বিকল্প নেই। আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যত তাড়াতাড়ি এটি বুঝতে পারবে, ততই মঙ্গল।’
বাংলাদেশ লেবার পার্টি বাংলাদেশ লেবার পার্টির প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আব্দুল মতিনের ২৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘শোষণমুক্ত সমাজ গঠনে মাওলানা আব্দুল মতিনের ভূমিকা’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করার পেছনের যুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। অন্তর্বর্তী সরকারকে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধাগুলো ব্যাখ্যা করতে বলেন তিনি।
তিনি উল্লেখ করেন, জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী রীয়াজ সম্প্রতি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার পর তারা মে মাসের মধ্যে এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছাতে সক্ষম হবেন। এর মাধ্যমে স্পষ্ট হবে যে, কোন সংস্কার প্রস্তাবে সকল রাজনৈতিক দল একমত এবং কোন প্রস্তাবে ভিন্ন মতামত রয়েছে।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘যদি আমরা মে মাসের মধ্যে এটি বুঝতে পারি, তাহলে কি জুন মাসের মধ্যে সম্ভব নয়... আমরা যে প্রস্তাবগুলোতে আমরা সকলে একমত, সেই প্রস্তাবগুলো একত্রিত করি এবং একটি সনদ প্রস্তুত করি। আমরা সকলেই তাতে সই করি ও একমত হই যে, সংস্কারগুলো অবিলম্বে বাস্তবায়ন করা উচিত।’
নজরুল বলেন, আইন বা অধ্যাদেশের মাধ্যমে যেসব সংস্কার বাস্তবায়ন করা যেতে পারে—সেগুলো অবিলম্বে বাস্তবায়ন করা উচিত। আর যেসব সংস্কারের জন্য সাংবিধান সংস্কার প্রয়োজন, সেগুলো পরবর্তী নির্বাচিত সংসদ সেটি করতে পারবে।
তিনি বলেন, ‘যদি সকল রাজনৈতিক দল ঐকমত্যে পৌঁছায় ও একটি যৌথ ঘোষণাপত্রে সেই করে—তাহলে সেই ঐকত্যের ভিত্তিতে কাজ এগিয়ে যাবে। যদি জুনের মধ্যে—এমনকি জুলাইয়ের মধ্যেও এই ধরনের অগ্রগতি সম্ভব হয়—তাহলে তিনি প্রশ্ন তোলেন যে, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে ক্ষেত্রে কী প্রতিবন্ধকতা থাকতে পারে।’
বিএনপি নেতা ডিসেম্বরের পরে জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করার পেছনের যুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বলেন, নির্বাচন কমিশন বা রাজনৈতিক বাস্তবতা এই ধরনের বিলম্বকে সমর্থন করে না।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, নির্বাচন কমিশন নিজেই বলেছে—তারা জুনের মধ্যে সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারবে।
নজরুল বলেন, বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে ব্যাপক সংস্কার প্রস্তাব করে আসছে। এর মধ্যে জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা কর্মসূচি থেকে শুরু করে তারেক রহমানের ২৭ দফা এবং ২০২৩ সালে ঘোষিত ৩১ দফা রাষ্ট্র সংস্কার পরিকল্পনার প্রস্তাব রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি সংস্কারের বিপক্ষে নয়—সম্পূর্ণরূপে এর পক্ষে। তিনি আরও বলেন, সংস্কার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, একবারে সম্পন্ন করার মতো কিছু নয়।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সকল অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন কর্তৃক যে কোনো ধরনের প্রকাশনা, গণমাধ্যম, অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে কোনো ধরনের প্রচারণা, মিছিল, সভা-সমাবেশ ও সম্মেলন আয়োজনসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সকল অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে জারি করা প্রজ্ঞাপনে একথা জানানো হয়।
আজ সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি স্বাক্ষরিত এই প্রজ্ঞাপনে বলো হয়, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সকল অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সকল অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন কর্তৃক যে কোনো ধরনের প্রকাশনা, গণমাধ্যম, অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে কোনো ধরনের প্রচারণা, মিছিল, সভা-সমাবেশ ও সম্মেলন আয়োজনসহ যাবতীয় কর্মকান্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো।’
বাংলাদেশের সীমান্তপথে ভারতীয় নাগরিকদের পুশ-ইন চলছে, অথচ সরকার এ বিষয়ে একটি কথাও বলছে না বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এ বিষয়ে সরকারের নীরবতার তীব্র সমালোচনা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শেখ হাসিনার নীতিকেই অনুসরণ করছে বলে দাবি করেছেন তিনি।
বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে রবিবার (১১ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধ ফোরামের আয়োজিত এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘সাতক্ষীরা, কুড়িগ্রাম, খাগড়াছড়ি, মৌলভীবাজার—এসব সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে লোক ঢোকানো হচ্ছে, সরকার কিছু বলছে না। কোথায় সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়?’
তিনি বলেন, ‘শুনেছি একজন খুব শক্তিশালী উপদেষ্টা রয়েছেন—খোদা বখস। তিনি নাকি স্বরাষ্ট্র বিষয়ক সব কিছু দেখেন এবং খুবই ক্ষমতাবান। আবার শোনা যায়, তিনি বিএনপিকে পছন্দ করেন না। নিজের মতো করে সব গুছিয়ে রাখেন। তাহলে এত ক্ষমতাবান উপদেষ্টা থাকার পরও আজ সীমান্তে ভারতীয় নাগরিকদের পুশ-ইনের মতো ঘটনা ঘটছে কেন?’
অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘এই সরকারকে সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল সমর্থন করেছে। তারপরও পার্শ্ববর্তী দেশ কী সাহসে সীমান্ত দিয়ে জোর করে লোক ঢোকাচ্ছে? সরকার কেন এ নিয়ে নিশ্চুপ? শেখ হাসিনা যেমন সীমান্তে হত্যার সময় প্রতিবাদ করতেন না, বর্তমান সরকারও আজ নিরুত্তর।’
সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘এটি একটি রাষ্ট্রীয় অপরাধ। বাংলাদেশের জনগণকে কি এত দুর্বল জাতি ভাবছেন? মুক্তিযুদ্ধের দেশ, যে জাতি ৩০ লাখ শহিদ আর দেড় হাজার শিশু-কিশোরের রক্ত দিয়েছে, সে জাতিকে উপেক্ষা করে সীমান্ত দিয়ে লোক ঢোকানো হবে আর সরকার কিছুই বলবে না?’
রিজভীর অভিযোগ, ‘শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলেও জনগণের প্রত্যাশা পূরণে তারা ব্যর্থ।’
‘সরকার সংস্কারের কথা বলেছিল, জনগণ তা মেনে নিয়েছিল। বলা হয়েছিল, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, কিন্তু এখনও সে বিষয়ে সরকার নীরব। কেন এই নিশ্চুপতা?’
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব আব্দুস সালাম, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য রমেশ দত্ত এবং বৌদ্ধ ফোরামের নেতা সুশীল বড়ুয়া, প্রার্থ প্রতিম বড়ুয়া অপু প্রমুখ।
মা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ বিশ্বের সকল মা’কে শ্রদ্ধা, শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
আজ মা দিবস উপলক্ষে তারেক রহমান তার ভেরিফাইড ফেসবুকে এক বাণীতে বলেন, ‘আজকের এই দিনে আমি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল মা’কে। আমি কামনা করি তাদের অব্যাহত সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক বিকাশ এবং অগ্রসর সমাজ বিনির্মাণে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জীবন কেটেছে নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম, ত্যাগ, নিরলস পরিশ্রম, জনগণের প্রতি মমতা ও অকৃত্রিম ভালবাসায়। তাঁর নেতৃত্বে বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় নারী শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটেছিল। বিএনপি’র শাসনামলে স্কুল থেকে ছাত্রীরা যাতে ঝরে না পড়ে তার জন্য দেশনেত্রী নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। আজকের এই দিনে নারী শিক্ষার আলোকবর্তিকা ‘গণন্ত্রের মা’ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জানাই গভীর শ্রদ্ধা।’
মা দিবস একটি সম্মান প্রদর্শনজনক আন্তর্জাতিক দিবস উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘এই দিবস সমাজ ও পরিবারে মায়ের গুরুত্ব ও অবদানের জন্য উদযাপন করা হয়। এই দিবসে বিশ্বের সর্বত্র মায়ের এবং মাতৃত্বের অনুষ্ঠান করতে দেখা যায়। মায়ের জন্য প্রতিদিনই সন্তানের ভালবাসা থাকে, তবু স্বতন্ত্রভাবে ভালবাসা জানাতেই আজকের এই দিন।’
তারেক রহমান বলেন, ‘পরিবারে মা হচ্ছেন এক বিস্ময়কর প্রতিষ্ঠান। মহিয়সী মায়ের শিক্ষাতেই শিশুর ভবিষ্যৎ নির্মিত হয়। মা দিনের সব অবসাদ, ক্লান্তি ঘুচিয়ে সব সংগ্রামের মাঝেও সন্তানকে আগলে রাখেন। সুমাতার সাহচার্যে সন্তানের উৎকর্ষ ও প্রকৃত মানব-সত্ত্বার জাগরণ ঘটে, সন্তানের আত্মাকে করে নির্মল, স্বচ্ছ ও পবিত্র। বহু দেশ ও সংস্কৃতি মা দিবসের কর্মসূচি গ্রহণ করে এক অসাধারণ মাত্রা দিয়েছে। মাতৃত্বের প্রতি উৎসর্গিত এক অনন্য দিবস-মা দিবস। পৃথিবীর মধুরতম ডাক ‘মা’। ছোট এই শব্দের অতলে লুকানো থাকে গভীর স্নেহ, মমতা, আর পৃথিবীর সবচেয়ে অকৃত্রিম ভালবাসা।’
তারেক রহমান বলেন, ‘শৈশব থেকে আনন্দ-বেদনা-ভয় কিংবা উদ্দীপনার প্রতিটি মানবিক অনুভূতিতে জড়িয়ে থাকে মায়ের নাম। আজকের দিনে আমার প্রত্যাশা-সকল মা যেন তার সন্তানদের যোগ্য ও সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তুলতে সক্ষম হন। সন্তানকে নির্ভুল ও সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারেন কেবলমাত্র সুমাতা, যাতে জাতির আগামী ভবিষ্যত উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়।’
উল্লেখ্য পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র ও মধুর শব্দের নাম ‘মা’। প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার সারা বিশ্বে দিনটি ‘বিশ্ব মা দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। সেই হিসাবে আজ ‘বিশ্ব মা দিবস’। দিবসটি এমন একটি বিশেষ দিন, যে দিন সব মায়েদের এবং যারা মায়েদের মতো, তাদেরকে পরিবার থেকে রাষ্ট্র পর্যন্ত সকল স্তরে সম্মান জানানো হয়।
দিবসটি উপলক্ষে আমাদের দেশের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
‘বিশ্ব মা দিবসের’ ইতিহাস অনেক বছরের পুরনো। মধ্যযুগে এক চর্চা চালু হয়েছিল যে, যারা কাজের জন্য যেখানে বড় হয়েছেন, সেখান থেকে চলে গিয়েছেন, তারা আবার তাদের বাড়িতে বা মায়ের কাছে ও ছোটবেলার চার্চে ফেরত আসবেন। সেটা হবে খ্রিস্টান ধর্মের উৎসব লেন্টের চতুর্থ রোববারে।
আধুনিক যুগে, মা দিবসের উৎপত্তি যুক্তরাষ্ট্র থেকে। সেখানে প্রতি বছরের মে মাসের ২য় রোববার পালিত হয় এ দিবসটি। যুক্তরাষ্ট্রের আনা জারভিস নামের এক নারী মায়েদের অনুপ্রাণিত করার মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্য সচেতন করে তুলতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। ১৯০৫ সালে আনা জারভিস মারা গেলে, তার মেয়ে আনা মারিয়া রিভস জারভিস মায়ের কাজকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য সচেষ্ট হন। ওই বছরই তিনি তার সান ডে স্কুলে প্রথম এ দিনটিকে ‘মা দিবস’ হিসেবে পালন করেন।
১৯০৭ সালের এক রোববার আনা মারিয়া স্কুলের বক্তব্যে মায়ের জন্য একটি দিবসের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন। ১৯১৪ সালের ৮ মে মার্কিন কংগ্রেস মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে মা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এভাবেই শুরু হয় মা দিবসের যাত্রা।
এই ধারাবাহিকতায় আমেরিকার পাশাপাশি মা দিবস এখন বাংলাদেশসহ অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, রাশিয়া ও জার্মানসহ শতাধিক দেশে মর্যাদার সঙ্গে পালিত হচ্ছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে নিষিদ্ধ ঘোষিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের নিবন্ধন দ্রুত সময়ের মধ্যে বাতিল করতে হবে।’
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে বিচারকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গতকাল রাতে উপদেষ্টা পরিষদের এক বিশেষ সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এরপর নাহিদ ইসলাম তার ভেরিফাইড ফেসবুকে এক পোস্টে বলেন, ‘বিপ্লবী ছাত্র-জনতাকে অভিনন্দন। সরকারকেও সাধুবাদ। দ্রুত সময়ের মধ্যে সকল সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন চাই। তবে জুলাই ঘোষণাপত্র ও বিচার প্রশ্নে আমাদের সংগ্রাম জারি রাখতে হবে। সারাদেশের ফ্যাসিস্ট গণহত্যাকারীদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
ফেসবুক পোস্টে নাহিদ ইসলাম আরো বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে নিষিদ্ধ ঘোষিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের নিবন্ধন দ্রুত সময়ের মধ্যে বাতিল করতে হবে।’
গতকাল রাতে উপদেষ্টা পরিষদের এক বিশেষ সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই সভায় সভাপতিত্ব করেন। প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় রাত আটটার দিকে এ সভা শুরু হয়। সভা শেষে যমুনার সামনে রাত ১১টার দিকে ব্রিফিং করেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। তিনি আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত সম্পর্কিত উপদেষ্টা পরিষদের লিখিত বিবৃতি পড়ে শোনান।
উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘উপদেষ্টা পরিষদের এক বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আইনের সংশোধনী অনুমোদিত হয়েছে। সংশোধনী অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল কোনও রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারবে।’
‘উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাস বিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেস-সহ আওয়ামী লীগ এর যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিপত্র পরবর্তী কর্মদিবসে জারি করা হবে।’
এর পাশাপাশি, ‘আজকের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে জুলাই ঘোষণাপত্র আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত করে প্রকাশ করার সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়েছে।’
বাংলাদেশের জনগণ রাজনীতিতে কোনোভাবেই গুম-খুন-অপহরণ-দুর্নীতি-লুটপাট-টাকা পাচার-বর্বর আয়নাঘরের প্রতিষ্ঠাতা পতিত পলাতক পরাজিত অপশক্তির পুনর্বাসন চায় না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেন, ‘বিএনপিসহ বাংলাদেশের পক্ষের প্রতিটি রাজনৈতিক দল জনগনের এই দাবির সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট যারা সংবিধান বারবার লঙ্ঘন করেছেন, দেশে অবৈধ সংসদ এবং সরকার গঠন করেছে, যারা সংবিধান লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
গতকাল শনিবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বৌদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিএনপি।
বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারকে সফল দেখতে চায় উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, বিএনপি তাদের মতামত সরকারকে সুস্পষ্ট ভাবে ও আইনের ব্যাপারে সরকারকে জানিয়েছে। সরকারের কার্যক্রম সম্পর্কে জনগনের সামনে যাতে স্বচ্ছ ধারণা থাকে, এই কারণে বিএনপি প্রথম থেকে এই সরকারের কাছে তাদের একটি কর্মপরিকল্পনা-পথনকশা ঘোষণার আহ্বান বার বার জানিয়ে আসছে। সরকারের কার্যক্রম সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা যদি জনমনে থাকে তাহলে কোনো রকমের সংশয়-সন্দেহ কিংবা বিভ্রান্তি সৃষ্টির সুযোগ থাকে না।
কেউ যেন ভোটের অধিকার কুক্ষিত করার ষড়যন্ত্র করতে না পারে সেজন্য জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নাগরিকদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে বিএনপি দেশে এমন একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে চায় যে সরকার জনগনের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে। আমাদের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার, জনগনের দায়বদ্ধ একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে যার অবস্থান থেকে সর্তক এবং সজাগ থাকতে হবে।
ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের দুঃশাসন ও দুষ্কর্মসমূহের চিত্র এবং জুলাই-আগস্টের ঘটনাবলী বেশি করে প্রকাশের জন্য বাংলাদেশের গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘দেশের ফ্যাসিবাদ পতনের পর এখন গত ১৫ বছরের দুর্নীতি, কুকর্ম কিন্তু আলোচনায় রাখা দরকার। ফ্যাসিবাদের অপকর্ম যদি নিয়মিত প্রচার করতে পারি তাহলে মানুষ সচেতন হবে এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী দলগুলোর মাঝে কেউ বিভেদ উস্কে দিতে পারবে না। ফ্যাসিবাদী শাসনের দীর্ঘ দেড় দশকে বিভিন্ন সময় জঙ্গী নাটক ও ধর্মীয় ব্যক্তিদের ওপর হামলা চালিয়ে ফ্যাসিস্টরা তাদের শোষণ-লুটপাটের ঘটনা আড়াল করতে চেয়েছিল।’
ফ্যাসিবাদী দেড় দশকে কক্সবাজারের রামু, ব্রাক্ষণবাড়ীয়ার নাসিরনগর, রংপুর, গাইবান্ধা, সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু ধর্মীয় জনগোষ্ঠির বাড়ি-ঘর-উপাসনালয় ঘটনাবলী নিয়েও গণমাধ্যমের কাছে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের অনুরোধ করে তিনি বলেন, ‘কারা এসব ঘটনার নেপথ্যে ছিল? তাদের উদ্দেশ কি ছিল? এসব নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে আমি বিশ্বাস করি, আগামী দিনে আর কেউ দেশের ধর্মী জনগোষ্ঠিকে নিয়ে দলীয় রাজনীতিতে ব্যবহারের সাহস করবে না। আগামী দিনে বিএনপি জনগনের রায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে ফ্যাসিবাদী দেড় দশকে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সঙ্গে যে অপ্রীতিকর, অনাহত ঘটনা ঘটেছে তার নেপথ্য কারণ খুঁজে বের করতে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ের একটি সর্বদলীয়, সর্বধর্মীয় ‘নাগরিক তদন্ত কমিশন’ গঠন করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।’
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা যদি ’৭১ সাল, ৭৫ সালের ৭ নভেম্বর, ’৯০ সাল এবং সর্বশেষ ’২৪ সালে বীর জনতার রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের যে ধারাবাহিকতা দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ বর্তমান দুইটা বিষয়ে সম্পূর্ণ ভাবে একমত। এক, বাংলাদেশকে যাতে আর কেউ ভবিষ্যতে তাবদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে না পারে। এবং দুই- গণতন্ত্র বিরোধী পলাতক অপশক্তি যাতে আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। এই দুইটা বিষয়ে জনগন আর কোনো আপস করতে রাজি নয়।’
বৌদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে বক্তব্যর শুরুতে সব বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের প্রতি শুভেচ্ছা জানান তারেক রহমান। তিনি বলেন, সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরু এটি কোনো পরিচয় হতে পারে না। দলমত ধর্ম নির্বিশেষে প্রত্যেক নাগরিকের পরিচয় হচ্ছে আমরা বাংলাদেশি। প্রতিটি নাগরিক রাষ্ট্রের প্রতিটি অধিকার সমানভাবে ভোগ করবে এটিই বিএনপি মনে করে।
তিনি বলেন, সব ধর্ম ও মতের মানুষ সবাই মিলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠার আমাদের গণতান্ত্রিক রীতি, পদ্ধতির চর্চা ও বাস্তবায়ন প্রয়োজন। একটি নিরাপদ রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বে এখন পর্যন্ত গণতন্ত্রই একমাত্র উত্তম বিকল্প। মানুষের গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নিয়ে বাংলাদেশে বিগত দেড় দশক ধরে যারা অথবা যে দলটি ফ্যাসিবাদী শাসন-শোষণ চালিয়েছিল, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগনের কাছে এরই মধ্যে তাদেরকে অপশক্তি হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা আপনাদের সবাইকে আহ্বান জানাবো আসুন সবাই মিলে দেশের উন্নয়ন ও শান্তি-সমৃদ্ধিতে শামিল হই। বিএনপিও আপনাদের জন্য কাজ করছে।
ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, গৌতম বুদ্ধের জীবনী থেকে বেশকিছু শেখার আছে। আসুন আমরা সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সবাই মিলে একটি সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলি। যাতে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়। কেননা, আমরা একটি ক্রান্তিকালে তথা রুপান্তরের সময়ে উপণীত হয়েছি। ফ্যাসিজম থেকে গণতন্ত্রের পথে রূপান্তর।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা সাংবিধানিকভাবে সবাই নাগরিক। আমরা সবাই বাংলাদেশি। আমাদের নেতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তনের মাধ্যমে এই স্বীকৃতি পেয়েছি। আমরা সবাই মিলে একটি সুখী সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ে তুলি এই কামনা করছি।
বিএনপির ধর্ম বিষয়ক সহ-সম্পাদক দীপেন দেওয়ানের সভাপতিত্বে ও সুভাষ চন্দ্রা চাকমার সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, বিজন কান্তি সরকার, লন্ডন বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক, কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য্ অধ্যাপক দিলীপ কুমার বড়ুয়া এবং বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে মৈত্রী দেওয়ান, সমীর দেওয়ান, সাথী উদয় কুসম বড়ুয়া, প্রবীণ চাকমা, অনিমেষ চাকমা, নিকোলা চাকমা, প্রার্থ প্রীতম বড়ুয়া, চন্দ্রা চাকমা, মানস থু চাকমা, লু থু মু মারমা প্রমুখ। ত্রিপিটক পাঠ করে অনুষ্ঠান শুরু হয়। ত্রিপিটক পাঠ করেন, এম শ্রী ইন্দ্র বংশ ভিক্ষু, ভদন্ত সুধর্ম ভিক্ষু, ভদন্ত সমৈত্রী রতন ভিক্ষু ও আনন্দ প্রিয় শ্রমন।