বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, জাতীয় ঐক্য ও নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্টের ষড়যন্ত্র চলছে।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে ২০১৬ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির দ্বিতীয় বর্ধিত সভায় তিনি এ কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, জাতীয় ঐক্য ও নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্টের চক্রান্তের বিরুদ্ধে আমি দেশের কৃষক, শ্রমিক, জনতা, আলেম, ওলামা পীর মাশায়েখ তথা সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। যারা বাংলাদেশকে তাবেদার রাষ্ট্র বানিয়ে রাখতে চেয়েছিলো তাদের ষড়যন্ত্র কিন্তু এখনো থেমে নেই। ‘সংস্কার’ কিংবা ‘স্থানীয় নির্বাচন’ এসব ইস্যু নিয়ে জনগণের সামনে এক ধরনের ধুম্রজাল সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তারেক রহমান।
বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক বিএনপির বর্ধিত সভা আজ দীর্ঘ ৭ বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর আগে বিএনপির সর্বশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি। সেই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মাদার অব ডেমোক্রেসি বেগম খালেদা জিয়া। ফ্যাসিবাদী শাসনকালে এরপর আর বিএনপির বর্ধিত সভা কিংবা কাউন্সিল অনুষ্ঠান সম্ভব হয়নি।
তারেক রহমান বলেন, চিকিৎসাধীন থাকায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ সভায় উপস্থিত থাকতে পারেননি। তবে তিনি এই সভার সাফল্য কামনা করেছেন। তিনি আপনাদের কাছে দোয়া চেয়েছেন। দেশনেত্রীর শারীরিক সুস্থতার জন্য আমরা আল্লাহর দরবারে দোয়া কামনা করছি। মাদার অফ ডেমোক্রেসি বেগম খালেদা জিয়ার সম্মোহনী ব্যক্তিত্ব আর সুদক্ষ নেতৃত্ব বিএনপিকে পৌঁছে দিয়েছিলো সারাদেশের প্রতিটি গ্রামে, প্রতিটি ঘরে।
তারেক রহমান আরো বলেন, ‘আজকের এই বর্ধিত সভার শুরুতেই আমি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে স্মরণ করতে চাই। তিনি একদলীয় অভিশপ্ত বাকশালের অন্ধকারাচ্ছন্ন বাংলাদেশে গণতন্ত্রের আলো জ্বালিয়েছিলেন। মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের নিষিদ্ধ করা সকল রাজনৈতিক দলকে বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। জনগণের ভালোবাসায় ধন্য বিএনপির হাতে গণতন্ত্রের ঝাণ্ডা তুলে দিয়েছিলেন।’
বিএনপির জন্ম থেকে আজ পর্যন্ত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং স্বৈরাচার বিরোধী ধারাবাহিক আন্দোলনে, যারা শহীদ হয়েছেন আহত হয়েছেন, সন্তান-স্বজন হারিয়ে যেসব পরিবার নিদারুণ দুঃখ কষ্টের মুখোমুখি হয়েছেন, যাদের শ্রম ঘাম মেধায় বিএনপি আজ আপামর জনগণের কাছে দেশের সবচেয়ে বিশ্বস্ত রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে, আজকের বর্ধিত সভার শুরুতে তাদের প্রত্যেকের অবদানকেও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন তারেক রহমান।
তারেক রহমান বলেন, ৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের লাখো শহীদ, দেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ধারাবাহিক সংগ্রামে যারা শহীদ হয়েছেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে তাবেদার অপশক্তির বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধের সাহসী বীর আবু সাঈদ, মুগ্ধ, ওয়াসিম, রিয়া গোপ, আব্দুল আহাদ এবং বিএনপির পাঁচ শতাধিকসহ হাজারো শহীদ এবং আহত যোদ্ধাদের গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি।
তিনি বলেন, হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতাপ্রিয় বীর জনতার রক্তক্ষয়ী গণঅভুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর দেশে গণতন্ত্রকামী মানুষের সামনে বাংলাদেশ পুনর্গঠনের এক অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে। এই সুযোগ এবং সম্ভাবনা নস্যাৎ করার জন্য এরইমধ্যে নানারকম ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সুকৌশলে রক্তপিচ্ছিল রাজপথে গড়ে ওঠা ‘জাতীয় ঐক্য’ এবং জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্টের অপচেষ্টা চলছে।
তিনি আরো বলেন, রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে সংস্কার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। বিএনপির কাছে সংস্কারের ধারণা নতুন কিছু নয়। সরকারে কিংবা বিরোধী দলে বিএনপি যখন যে অবস্থানেই দায়িত্ব পালন করেছে জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে, সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে সব সময়েই রাষ্ট্র, সরকার ও রাজনীতিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করেছে এবং করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের পর দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, সংবিধানে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন, ১৯৯১ সালে দেশে সংসদীয় সরকার প্রতিষ্ঠা এসবই ছিল রাষ্ট্র, রাজনীতির ময়দানে যুগান্তকারী সংস্কার। এছাড়াও বিভিন্ন মেয়াদে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকাকালে বিএনপি সরকার স্কুল কলেজে বিনা বেতনে মেয়েদের শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি, রাষ্ট্র ও সমাজে মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা, বিশ্বের তথ্য প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশকে প্রস্তুত রাখতে বিজ্ঞান এবং তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা, প্রবাসী বাংলাদেশিদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা এগুলোও ছিল রাষ্ট্র ও সরকারের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার। এ ধরনের আরো অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে।
তারেক রহমান বলেন, ষড়যন্ত্রের পথ ধরে পলাতক স্বৈরাচারের রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের পর সংস্কারের সকল পথ বন্ধ করে দেয়া হয়। বাংলাদেশকে চিরতরে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করে রাখতে গত দেড় দশকে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছিল। দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে নাজুক করে তুলেছিল। টাকা পাচার আর লুটপাট চালিয়ে দেশের অর্থনীতি ভঙ্গুর করে দিয়েছিল। অকার্যকর করে দেয়া হয়েছিল দেশের সকল সাংবিধানিক এবং বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান। জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করে জনগণকে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাহীন করে দিয়ে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করে তুলেছিল।
‘এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র, সরকার এবং রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনের লক্ষ্যে মাদার অব ডেমোক্রেসি বেগম খালেদা জিয়া ২০১৭ সালে ভিশন ২০৩০ দিয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালে বিএনপি ২৭ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে। পরবর্তীকালে গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়ের পর ঘোষণা করা হয় ৩১ দফা কর্মসূচি। এই ৩১ দফা নিয়ে বর্তমানে বিএনপির উদ্যোগে সারাদেশে জনগণের সঙ্গে সংলাপ চলছে।’
তারেক জিয়া বলেন, রাষ্ট্র-সরকার-রাজনীতি এবং রাজনৈতিক দল মেরামতের জন্য দফা ৩১টি হলেও এর চূড়ান্ত লক্ষ্য একটি। সেটি হলো একটি নিরাপদ, গণতান্ত্রিক, মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ। ঠিক তেমনি উদ্দেশ্যও একটি। সেটি হলো রাষ্ট্র ও সমাজে জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা। এটি নিশ্চিত করা না গেলে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব-গণতন্ত্র-নিরাপত্তা-সমৃদ্ধি কোনটিই টেকসই হবে না।
‘রাষ্ট্রের স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তার জন্য জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের কোনোই বিকল্প নেই। রাষ্ট্র এবং সমাজে জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার পূর্ব শর্ত হলো প্রতিটি নাগরিকের ভোট প্রয়োগের অধিকার বাস্তবায়ন। এবং এ লক্ষ্যেই একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি বারবার জনগণের ভোটে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ সরকার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যেই জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানায়।’
তিনি বলেন, আগামী দিনের রাজনীতিতে বিএনপির এই ৩১ দফা হচ্ছে, একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক, মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সনদ। তবে এই ৩১ দফাই শেষ কথা নয়। সময়ের প্রয়োজনে রাষ্ট্র-সরকার-রাজনীতি ও রাজনৈতিক দলের সংস্কারের জন্য এই ৩১ দফাতেও সংযোজন-বিযোজনের সুযোগ রয়েছে। এমনকি বিএনপির ৩১ দফার সঙ্গে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার প্রস্তাবনার খুব বেশি ইস্যুতে মৌলিক বিরোধ নেই।
তারেক রহমান বলেন, বিভিন্ন সময়ে ‘জাতীয় নির্বাচন’ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য জনমনে ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করলেও ‘জাতীয় নির্বাচন’ নিয়ে কোনো কোনো উপদেষ্টার বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য, মন্তব্য স্বাধীনতাপ্রিয় গণতন্ত্রকামী জনগণের জন্য হতাশার কারণ হয়ে উঠছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের সকল রাজনৈতিক দলের নিঃশর্ত সমর্থন থাকলেও সরকার এখনো তাদের কর্মপরিকল্পনায় অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে পারছে না।
তিনি বলেন, সারাদেশে খুন, হত্যা, ধর্ষণ চুরি, ছিনতাই, রাহাজানি বেড়েই চলেছে। বাজার সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণহীন। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনো দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি।
তিনি আরও বলেন, সরকার যেখানে দেশের বাজার পরিস্থিতি কিংবা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জন করতে পারছে না সেখানে জাতীয় নির্বাচনের আগে ‘স্থানীয় নির্বাচন’ অনুষ্ঠানের নামে কেন দেশের পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে করতে চাইছে এটি জনগণের কাছে বোধগম্য নয়।
তারেক রহমান বলেন, গণতন্ত্রকামী জনগণ মনে করে, স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সেটি হবে সারাদেশে পলাতক স্বৈরাচারের দোসরদের পুনর্বাসনের একটি প্রক্রিয়া যা সরাসরি গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার বিরোধী। গণহত্যাকারী, টাকা পাচারকারী, দুর্নীতিবাজ মাফিয়া চক্রকে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার এই ফাঁদে বিএনপি পা দেবে না।
তিনি বলেন, বিএনপি জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি জনরায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে গণহত্যাকারী-মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহবান, সারাদেশে গণহত্যাকারীদের দোসর, মাফিয়া চক্রকে পুনর্বাসনের ‘স্থানীয় নির্বাচন’ অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা থেকে সরে আসুন। অবিলম্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আগামী দিনের সুনির্দিষ্ট ‘কর্ম পরিকল্পনার রোডম্যাপ’ ঘোষণা করুন।
তিনি বলেন, মাফিয়া প্রধান হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর এ পর্যন্ত ১৬/১৭টি নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী বিএনপি সকল নতুন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনকে স্বাগত জানায়। তবে নির্বাচনের মাধ্যমে গ্রহণ কিংবা বর্জনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে জনগণ। প্রতিটি দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু ‘জাতীয় নির্বাচন’ অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সবার আগে নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তুত রাখতে হবে।
তিনি বলেন, দেশে একটি অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নিরপেক্ষতাই হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সবচেয়ে বড় পুঁজি। কিন্তু সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে ইতোমধ্যেই জনমনে সন্দেহ ও সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে । নিজেদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আরো সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানাই।
দলীয় নেতৃত্বের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমি আপনাদের কাছ থেকে শারীরিকভাবে দূরে থাকলেও যোগাযোগ এবং কর্ম পরিকল্পনার মাধ্যমে আমি কখনোই আপনাদের কাছ থেকে দূরত্ব অনুভব করিনি। আমি বিশ্বাস করি যে দলে আপনাদের মতো ত্যাগী এবং সাহসী নেতাকর্মী রয়েছে সেই দলকে কোনো স্বৈরাচার-ই দমিয়ে রাখতে পারে না।'
তিনি বলেন, এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই যে দেশে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান তথা দলমত ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই সমান অধিকার ভোগ করবেন। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই বাংলাদেশ ভূখণ্ডে বসবাসকারী আমাদের সকলের একটিই পরিচয় ‘আমরা বাংলাদেশি’।
পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রেও বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গি সুস্পষ্ট। বিএনপি মনে করে বর্তমান বিশ্বে স্থায়ী শত্রু-মিত্র বলে কিছু নেই, উল্লেখ করেন তারেক রহমান।
তিনি বলেন, একটি দেশের সঙ্গে অপর দেশের সম্পর্ক হবে ‘পারস্পরিক স্বার্থ রক্ষা, প্রয়োজন ও ন্যায্যতা’র ভিত্তিতে। অন্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের নীতি ‘সবার আগে বাংলাদেশ’। অর্থাৎ নিজ দেশ এবং জনগণের স্বার্থ রক্ষাই হতে হবে প্রথম এবং প্রধান অগ্রাধিকার।
তিনি বলেন, এ মুহূর্তে বিএনপিই দেশের সবচেয়ে বড় এবং জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। বিএনপির কাছে জনগণের যেমন আশা ভরসা প্রত্যাশা রয়েছে, একইসঙ্গে বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীরাও থেমে নেই। চক্রান্তকারীদের মোকাবেলা করে কিভাবে দলকে আরো শক্তিশালী এবং সুসংহত করা যায় সেই সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা থাকবে।
তিনি বলেন, বিএনপি একটি বৃহৎ পরিবার। এই পরিবারের নানা বিষয়ে আমাদের মতের অমিল থাকতেই পারে। আমরা সবাই আমাদের ঐক্যের শক্তির সক্ষমতা সম্পর্কে অবহিত। ঐক্যই আমাদেরকে বারবার বিজয় আর সফলতা এনে দিয়েছে। গত দেড় দশকে সারাদেশে বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের ভিন্ন দল এবং মতের নেতাকর্মীদেরকে অবর্ণনীয় নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করতে হয়েছে। কেবল বিএনপিরই প্রায় ৬০ লাখের বেশি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দেড়লাখ রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা দেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমের মতো অনেক নেতাকর্মীর আজ পর্যন্ত খোঁজ মেলেনি। শুধুমাত্র বিএনপি করার অপরাধে হাজার হাজার নেতা কর্মী সমর্থককে গুম, খুন, অপহরণ করা হয়েছে। তবুও বিএনপির নেতাকর্মীরা কেউ দল ছেড়ে যাননি। স্বৈরাচারের সঙ্গে করেননি আপোষ। এই সৎসাহস এবং সততার কারণে বিএনপি আজ শুধু একটি সাধারণ রাজনৈতিক দলই নয়। দেশের গণতন্ত্রকামী স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণ বিএনপিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের ভ্যানগার্ড হিসেবে বিশ্বাস করে। এটি একজন রাজনৈতিক কর্মীর জন্য নিঃসন্দেহে একটি বড় প্রাপ্তি।
তারেক রহমান বলেন, দলের সর্বস্তরের প্রতিটি নেতাকর্মীকে আরো বেশি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। আচরণে হতে হবে আরো সতর্ক ও সংযত। তবে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কোটি কোটি নেতাকর্মী সমর্থকের এই বৃহৎ রাজনৈতিক দলের কোনো কোনো নেতা কর্মী হয়তো নিজের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। তাই আমি আপনাদের আবারো বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের একটি বার্তা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। ব্যক্তির চেয়ে দল বড় দলের চেয়ে দেশ বড়।
দলের প্রতিটি নেতাকর্মীর দীর্ঘদিনের সীমাহীন ত্যাগ তিতিক্ষা আমি গভীরভাবে উপলব্ধি করি উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, যারা দলের শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণ হবেন ব্যক্তির চেয়ে দলের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে বাধ্য হয়েই তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও নিতে হবে। দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ কিংবা দলের ইমেজ ক্ষুণ্ন হয় এমন কোনো কাজকে বিএনপি বিন্দুমাত্র প্রশ্রয় দেবে না। জনগণই বিএনপির সকল রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস।
জাতীয় নির্বাচনের সময়ও ঘনিয়ে আসছে। মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে দলীয় নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তারেক রহমান।
তারেক রহমান বলেন, ‘গণতন্ত্রকামী দেশবাসীর উদ্দেশ্যে একটি বার্তা দিতে চাই, বিএনপি শুধুমাত্র আপনাদের ভোটের পুনরুদ্ধারই নয়, আপনার ভোট প্রয়োগের অধিকার নিশ্চিত করতে চায়। আপনাদের সমর্থন পেলে বিএনপি এমন একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যে সরকার আপনার কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে। আমি জনগণের সমর্থন চাই, সকলের সহযোগিতা চাই।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলায় যে রায় হয়েছে, তাতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এই বিচার অপরাধের তুলনায় যথেষ্ট নয়, কিন্তু এটি সামনের দিনের জন্য একটি উদাহরণ এবং ভবিষ্যতে কেউ যাতে এই রাষ্ট্রে ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা কায়েম করতে না পারে, কেউ নিজে ফ্যাসিবাদ হয়ে উঠতে না পারে, একনায়কতন্ত্র যাতে কায়েম না হয়। এটা ভবিষ্যতের জন্য একটি শিক্ষা। শুধু অতীতের জন্য বিচার নয়, এটা আমাদের মনে রাখতে হবে।’
সোমবার রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আজকের এই আদালতের রায়ের মধ্য দিয়ে কয়েকটি জিনিস প্রমাণিত- ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার যত শক্তিশালী হোক, যত দীর্ঘদিন এই রাষ্ট্রক্ষমতা অবৈধভাবে পরিচালনা করুক, ক্ষমতা ভোগ করুক, তাদের একদিন না একদিন আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশে গুম, খুন, অপশাসন এবং বৈষম্যের যে রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম করে শেখ হাসিনা একদলীয় রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার যে বাসনা চরিতার্থ করতে চেয়েছিল তা সম্ভব হয়নি। কিন্তু দীর্ঘদিনের অপশাসন এবং ফ্যাসিবাদী শাসনের যাতাকলে এদেশের মানুষ পিষ্ট হয়েছে আমরা ভুক্তভোগী হয়েছি।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এই দেশ, এদেশের উন্নতি, অগ্রগতি বহু বছর পিছিয়ে গেছে। আমরা আর পেছনের দিকে তাকাতে চাই না। দেশে সর্বক্ষেত্রে ন্যায়বিচার, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে এবং এর মধ্য দিয়ে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ হবে। এটাই হবে আগামী দিনের বাংলাদেশ। আমরা অবশ্যই এই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ, প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং আমরা সংস্কারের মধ্য দিয়ে যাব।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করব, একটি ভারসাম্যমূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও শাসন ব্যবস্থা কায়েম করব। এদেশের মানুষ ভবিষ্যতে যাতে ন্যায়বিচার পায় সে রকম রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করব। এজন্য আমরা অবিরাম সংগ্রাম চালিয়ে যাব। আজকে এর একটি মাইল ফলক প্রতিষ্ঠিত হলো।’
‘দেশের মানুষ ভোটের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, গত ১৫/১৬ বছর বিএনপি একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করেছে। দেশের মানুষ এখন ভোটের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে।
সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী ভবনে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী ঢাবি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল আয়োজিত ‘বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ শিক্ষার রূপান্তর: একটি কৌশলগত রোডম্যাপ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এই নির্বাচনের মাধ্যমে এমন একটি জাতি ও দেশ তৈরি করতে হবে যাতে কোনো ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচারের উত্থান না ঘটে। স্বাধীন বিচার বিভাগ, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। তবে স্বৈরাচারের দোসরদের বহাল রেখে স্বাধীন বিচার বিভাগ সম্ভব নয়।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে দেশের এক শ্রেণির বুদ্ধিজীবী, লেখক ও মিডিয়াকর্মী ভারতের আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছেন বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার ও ভিনদেশি রাষ্ট্রের প্রতি অন্ধ আনুগত্য থেকে বিগত দেড় দশকে বাংলাদেশে ‘বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্বৃত্তায়ন’ ঘটেছে।
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ্য নেতা বলেন, 'অতীতে রাষ্ট্রীয় অন্যায়, নাগরিক নিপীড়ন বা মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে যেসব বুদ্ধিজীবীর কথা বলা উচিত ছিল, তারাই ভারতপন্থি রাজনৈতিক বয়ানের সুবিধাভোগী হয়ে নীরব থেকেছেন।’
দেশের বর্তমান শিক্ষা ও বুদ্ধিজীবী পরিস্থিতির সঙ্গে ব্রিটিশ আমলের তুলনা করে সালাহউদ্দিন বলেন, ব্রিটিশরা তাদের শাসন দীর্ঘায়িত করতে যেমন শিক্ষিত সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করত, তেমনি বিগত সময়েও কিছু বুদ্ধিজীবী ও মিডিয়া রাষ্ট্রের হেজিমনি (আধিপত্য) বজায় রাখতে বুদ্ধিভিত্তিক চর্চা সীমিত করেছিল। ফলে গণতান্ত্রিক ও সৃজনশীল চেতনার বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে।
ভবিষ্যৎ শিক্ষাব্যবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য আধুনিক যুগের চাহিদার সঙ্গে মিল রেখে নতুন প্রজন্মকে গড়ে তোলা। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রোবোটিকস, ডেটা সায়েন্স ও বায়োটেকনোলজির মতো ক্ষেত্রে মানবসম্পদ তৈরি করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্র হবে।’
তিনি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ভোকেশনাল শিক্ষা এবং পরবর্তী ধাপে জ্ঞানভিত্তিক ও গবেষণামূলক শিক্ষা নিশ্চিতের ওপরও জোর দেন।
জুলাই সনদ ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যমত্যের নামে অনৈক্য তৈরির চেষ্টা হয়েছে। তবে আমরা নির্বাচন প্রক্রিয়ার বিষয়টিকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। জাতীয় সার্বভৌমত্বকে কখনো কোনো আদেশ দিয়ে তো বাধ্য করা যায় না।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের মাধ্যমে দেশের মাটিতে সব ধরনের স্বৈরশাসনের কবর রচনা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার রায় ঘোষণার পর নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, আজকের রায় শুধু শেখ হাসিনার অপরাধের বিচার নয়, বরং এই দেশের মাটিতে সব ধরনের স্বৈরশাসনের কবর রচনা।’
তিনটি অপরাধের পৃথক অভিযোগে হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি আরও দুটি অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করেন।
এ ছাড়া সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড এবং মামলার রাজসাক্ষী সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, ফ্যাসিস্ট ও গণহত্যাকারী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রায় ঐতিহাসিক এবং ফ্যসিবাদের বিরুদ্ধে মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে। ফ্যাসিবাদী শাসক গোষ্ঠীর জন্য এই রায় উচিত শিক্ষা। শেখ হাসিনা ছিলেন ইতিহাসের নিকৃষ্ট স্বৈরাচার। সোমবার ধোবাউড়া উপজেলার গোয়াতলা বাজারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা প্রচারণা পূর্ব এক পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় তিনি আরও বলেন, গণতন্ত্র হত্যা করে জনগণের মালিকানা কেড়ে নিয়ে জীবন-জীবিকা বিপন্ন ও নির্মম নিষ্ঠুর দমন নীপিড়ন করে, গুম হত্যা চালিয়ে শেখ হাসিনা ও তার আওয়ামী লীগ গণশত্রুতে পরিণত হয়েছিল। গণহত্যাকারী গণশত্রুদের কোনো ক্ষমা নেই। শেখ হাসিনা নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের পথ বন্ধ করে দিয়েছিল, তবে গণঅভ্যুত্থানে তার পতনের পর সেই বন্ধ পথ খুলে গেছে।
নির্বাচনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রিন্স আরও বলেন, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বার্তা জনগণের কাছে পৌঁছে দিন। ধানের শীষের পক্ষে ভোট প্রার্থনা করুন। গণঅভ্যুত্থানের আকাঙক্ষা ধারণ করে ইতিবাচক রাজনীতির লক্ষ্যে নিজেদের মন মানসিকতার পরিবর্তনে প্রস্তুত হতে হবে। নির্বাচনে বিজয়ী হলেই হবে না, বিজয়ের পর রাষ্ট্রের ও জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নিজেদেরকে প্রস্তুত হতে হবে। আওয়ামী লীগের মতো লোভ লালসা নয়, ত্যাগ ও সেবার মানসিকতা নিয়ে কাজ করতে হবে।
পথসভায় উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম, সদস্য সচিব আনিসুর রহমান মনিক, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোয়াজ্জেম হোসেন খান লিটন, ইউপি চেয়ারম্যান জাকিরুল ইডলাম টোটন, সদস্য সচিব আনসার আলী তুলা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে এদিন দুপুরে ময়মনসিংহ-১ (ধোবাউড়া-হালুয়াঘাট) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে আসন্ন নির্বাচনে তার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড। এ সময় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রিন্স বলেন, স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দল বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা ও আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে অঙ্গীকারাবদ্ধ। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধকে অম্লান রাখতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করবে।
বিএনপির নেত্রকোনা পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড এর মসজিদ কোয়ার্টার ব্লকের কমিটি গঠন উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা হয়েছে পুরাতন কালেক্টর মাঠে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন, নেত্রকোনা সদর -বারহাট্টা আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক।
সভায় বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক আন্দোলন, গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধারের লড়াই এবং জনগণের প্রতি অগাধ আস্থার জায়গা থেকেই বিএনপি আবারও রাষ্ট্রক্ষমতায় আসবে বলে মন্তব্য করেছেন কৃষকদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহসাধারণ সম্পাদক ও সুনামগঞ্জ-১ (ধর্মপাশা, মধ্যনগর, তাহিরপুর ও জামালগঞ্জ) আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আনিসুল হক। তিনি বলেছেন, বিএনপি জনগণের দল। জনগণই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। এই শক্তির ওপর ভর করেই বিএনপি ইনশাআল্লাহ আবার রাষ্ট্রক্ষমতায় যাবে।
সোমবার মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুন্ডা বাজারে বিএনপি আয়োজিত পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন তিনি।
আনিসুল হক বলেন, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে দু-একটি দল নানাভাবে ষড়যন্ত্র করছে। তারা জানে- সৎভাবে ভোটের ময়দানে বিএনপির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করতে তারা অপচেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু জনগণের শক্তি ও সচেতনতার কাছে কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হবে না।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা কোনো রাজনৈতিক শ্লোগান নয়, বরং সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নের একটি বাস্তব সম্মত রোডম্যাপ। এই রোডম্যাপে জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা, মানসম্মত শিক্ষা, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান, নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন এবং হাওরাঞ্চলের টেকসই উন্নয়নের সুস্পষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এই ৩১ দফা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে হাওরবাসীর দীর্ঘ দিনের দুর্দশার অবসান ঘটানো হবে।’
পথসভায় সভাপতিত্ব করেন বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো.শাহেবুর আলম। বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. ইনামুল গণি তালুকদার রুবেলের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন, মধ্যনগর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. আবে হায়াৎ, যুগ্ম আহ্বায়ক মো.আব্দুল কাইয়ুম মজনু, মো. আবুল বাশার ও মোশাহিদ তালুকদার।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্টকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা প্রচারণায় জনসম্পৃক্ততার লক্ষ্যে সোমবার বিকালে উপজেলার বারদী মাঠে সম্প্রীতি সমাবেশ হয়েছে।
বারদী ইউনিয়ন বিএনপির আয়োজনে এ সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাহী সদস্য, সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী আজহারুল ইসলাম মান্নান।
সমাবেশে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আজহারুল ইসলাম মান্নান বলেন, বিএনপির দুর্দিনে নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম। ফলে আমাকে দল মূল্যায়ন করেছে। আগামী দিনে আপনাদের পাশে থেকে সোনারগাঁয়ের সব সমস্যার সমাধান করা হবে।
সমাবেশে বারদী ইউনিয়ন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর হোসেনের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মোশারফ হোসেন, সিনিয়র সহসভাপতি কাজী নজরুল ইসলাম টিটু, সহ সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম, তাজুল ইসলাম সরকার, সোনারগাঁ পৌরসভা বিএনপির সভাপতি মো. শাহজাহান মিয়া, সাধারণ সম্পাদক মোতালেব হোসেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক খাইরুল ইসলাম সজিব, জেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান, সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপি নেতা আলী আজগর, মো. মনিরুজ্জামান, সেলিম হোসেন দিপু, ডা. মিজানুর রহমান, বারদী ইউনিয়ন বিএনপির নেতা আব্দুল হালিম, আব্দুর করিম প্রমুখ।
বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক ও সংসদ সদস্য এবং যশোর-১ শার্শা আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মফিকুল হাসান তৃপ্তি বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে শিক্ষিত যুবকদের চাকরির ব্যবস্থা করা হবে এবং বেকারদের ভাতা দেওয়া হবে। মা বোনদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া হবে। শিক্ষিত মেয়েদের উদ্যোক্তা হিসাবে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। মাদক বিক্রেতা, সন্ত্রাসী চাঁদাবাজদের ঠাঁই শার্শার মাটিতে হবে না।
সোমবার শার্শার বাগআঁচড়া হাইস্কুলে এক সমাবেশে বক্তব্য দেন তিনি। এ সময় তিনি ধানের শীষে ভোট ভোট দিয়ে শার্শার উন্নয়নের সহযোগিতা করার জন্য সবাইকে উদাত্ত আহ্বান জানান।
বাগআঁচড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আসাদুজ্জামান মিঠুর সভাপতিত্বে বৈঠকে তৃপ্তি আরও বলেন, দেশে এখন গোলাম আজম, নিজামীর জায়ামাত রাজনীতির মাঠে নেই। জামায়াত নেতারা আজ প্রতিবেশী একটি দেশের প্রেসক্রিপশনে অরাজকতা সৃষ্টির পায়তারা করছে। তারা কথিত গণভোটের নামে নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। জামায়াত ইসলামী রাজনীতি নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে বিএনপি কর্মীরা বসে থাকবে না।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা, উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি মহসিন কবির, বেনাপোল পৌর বিএনপির সভাপতি নাজিমউদ্দীন, সহ সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ, সহ সভাপতি নাসিমুল গনি বল্টু, সহসভাপতি আব্দার রহমান। উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস বিশ্বাস, তাজউদ্দীন আহমেদ, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম বাবু, জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইমদাদুল হক ইমদা, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আল মামুন বাবলু, পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস আহাদ, নাসিরুদ্দিন, আতাউর রহমান আতা, মফিজুর রহমান প্রমুখ।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ড.খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, শিক্ষা মানুষকে আলোকিত করে। সমৃদ্ধ করে মানুষকে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছাতে সহায়তা করে। তবে শুধু মাত্র পরীক্ষায় পাস করার জন্য পড়াশোনা করা উচিত নয়। তোমাদের আগামী দিনে দেশ পরিচালনায় অংশগ্রহণ করতে হবে। তাই লেখাপড়া করার মূল লক্ষ্য হতে প্রকৃত অর্থে জ্ঞানর্জন। সোমবার সকালে দাউদকান্দি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রাঙ্গণে ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় কৃতি শিক্ষার্থীদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এমএ ছাত্তারের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জসিম উদ্দিন।
এতে বিশেষ অতিথি বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. মারুফ হোসেন তার পিতা ড. মোশাররফ হোসেনের শিক্ষাসহ তার বর্ণাঢ্য জীবন শিক্ষার্থীদের মাঝে তুলে ধরেন।
সম্মাননা অনুষ্ঠানে অন্য বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, একই বিদ্যালয়ের সাবেক কৃতি শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক নূরুল আমিন এবং সাবেক এলজিআরডি সচিব নিজাম উদ্দিন।
বিদ্যালয় জীবনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত ড. মোশাররফ হোসেন আরও বলেন, আমার ডিবেট করার চর্চা শুরু হয়েছে এই বিদ্যালয় থেকে। পরে আমি একজন ভালো বক্তা হতে পেরেছিলাম। ঢাকা বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার করার সময় আমার বক্তব্য শুনে শহীদ প্রসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আমাকে বিএনপির রাজনীতিতে আমন্ত্রণ জানায়।
তিনি মুঠোফোনের কুফল তুলে ধরে বলেন, প্রযুক্তির অপব্যবহার শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন ধ্বংস করে দেয়। তিনি এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল হাশেম সরকার, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এমএ লতিফ ভূইয়া, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক নূর মোহাম্মদ সেলিম উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জসিম উদ্দিনসহ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অভিবাবক ও সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ আয়োজন করে আসছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
সংলাপের অংশ হিসেবে ১৯ নভেম্বর (বুধবার) সকালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং বিকালে বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসবে কমিশন।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, ১৯ নভেম্বর সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ মাইনোরিটি জনতা পার্টি (বিএমজেপি), ইনসানিয়াত বিল্পব, এনসিপি, গণসংহতি আন্দোলন, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) সঙ্গে সংলাপে বসবে ইসি।
এদিন দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), গণঅধিকার পরিষদ, নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের সঙ্গে (বাসদ মার্কসবাদী) সংলাপে বসবে ইসি।
গাজীপুর-৫ আসনে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি মনোনীত এমপিপ্রার্থী, ছাত্ররাজনীতির মেধাবী নেতৃত্ব ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব একেএম ফজলুল হক মিলন এবারও মাঠে নেমেছেন শান্তি, উন্নয়ন ও আধুনিক কালীগঞ্জ–পুবাইল গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে।
‘তরুণ প্রজন্মের প্রথম ভোট ধানের শীষের পক্ষে হোক’- এই শ্লোগানকে সামনে রেখে তার নির্বাচনী প্রচারণায় নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে বিশেষ করে প্রথমবার ভোট দিতে যাওয়া তরুণদের মাঝে।
সাবেক সংসদ সদস্য থাকাকালীন কালীগঞ্জের অবকাঠামো উন্নয়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা ও সামাজিক ক্ষেত্রে তার যুগান্তকারী ভূমিকা ইতোমধ্যেই স্থানীয় মানুষের কাছে তাকে একজন নিবেদিতপ্রাণ জননেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, শান্তির রাজনীতি ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার অঙ্গীকার তাকে আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে তুলে এনেছে।
বর্তমানে বিভিন্ন ইউনিয়ন, বাজার, গ্রাম ও পাড়া-মহল্লায় তিনি গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচনী পথসভা, উঠান বৈঠক ও সরাসরি মতবিনিময় অনুষ্ঠানে মিলনের মোলায়েম কণ্ঠের আন্তরিক ও স্নেহমাখা বক্তব্যে মুগ্ধ স্থানীয় ভোটাররা। বিশেষ করে তরুণ ভোটাররা তার বক্তব্যে আশার বার্তা খুঁজে পাচ্ছেন আগামী দিনের নিরাপদ, আধুনিক ও শান্তিপূর্ণ কালীগঞ্জ–পুবাইলের স্বপ্নে। নির্বাচনী মাঠে নেমেই তিনি জনগণের সামনে তার অঙ্গীকার তুলে ধরছেন- সুশাসন ও শান্তিপূর্ণ জনজীবন আধুনিক রাস্তাঘাট ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা শিক্ষা খাতের উন্নয়ন কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি একটি নিরাপদ ও উন্নত কালীগঞ্জ গড়ে তোলা স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এলাকায় তার জনপ্রিয়তা, অতীত কর্মধারা এবং তরুণ ভোটারদের নতুন উৎসাহ- সব মিলিয়ে গাজীপুর-৫ আসনে তার অবস্থান আরও সুদৃঢ় হচ্ছে।
তরুণদের লক্ষ্য করে মিলনের বার্তা—‘দেশ গড়ার প্রথম ধাপ হলো সঠিক নেতৃত্ব নির্বাচন। আপনার প্রথম ভোট পরিবর্তনের শক্তি আনতে পারে।’
নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ধানের শীষের পক্ষে স্লোগান ও মিলনের শান্তির রাজনীতিকে ঘিরে গাজীপুর-৫ আসনে উত্তাপ বাড়ছে দিনকে দিন।
গত ১৭ বছর দেশনেত্রী খালেদা জিয়া নির্যাতিত হয়েছেন। তারেক জিয়া মিথ্যা মামলায় বিদেশ থাকতে বাধ্য হয়েছেন। বিএনপির প্রবীন নেতাদের মিথ্যা মামলায় জেল খাটতে হয়েছে। গত ১৭ বছর জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপি রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। পিআর পদ্ধতি নির্বাচনে সাধারণ ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবে না। তারা জানবে না তাদের ভোট কে পেয়েছে। বর্তমান সরকার নির্বাচনের সময় ঘোষণার পর একটি দল পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের কথা বলে নির্বাচন বানচালে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ড.খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
রোববার বিকেলে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা সদরে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রথম গণমিছিল ও সমাবেশে পৌর আহ্বায়ক নূর মোহাম্মদ সেলিমের সভাপতিত্বে গণমিছিল পূর্ব এক সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি। সমাবেশে প্রদান বক্তা ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড.খন্দকার মারুফ হোসেন। উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব ভিপি জাহাঙ্গীর ও পৌর বিএনপির সদস্য সচিব কাউছার আলম সরকারের সঞ্চালনায় গণমিছিল ও সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন, কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল হাশেম সরকার, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এমএ লতিফ ভূইয়া, যুম্ম আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন পৌর সিনিয়র যুম্ম আহ্বায়ক শওগাত চৌধুরী পিটার।
প্রধান অতিথি আরও বলেন, আগামী নির্বাচন বানচালের চেষ্টা প্রতিহত করতে এবং আগামী দলকে সুসংগঠিত করতে আপনারা কাজ করুন। তিনি সবাইকে ধানের শীষে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করার জন্য আহ্বান জানান।
এ সময় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের দলীয় শীর্ষ নেতারা ছাড়াও ১৫ ইউনিয়ন এবং পৌরসভার ৯ ওয়ার্ড থেকে হাজার হাজার কর্মী-সমর্থকরা গণমিছিল ও সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন।
নারী ও শিশুর অধিকার প্রতিষ্ঠাকে রাজনৈতিক অঙ্গীকারের কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে মাগুরার মহম্মদপুর ও শালিখায় নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের উদ্যোগে পৃথক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার সকালে মহম্মদপুর শহীদ আহাদ–সুমন মিনি স্টেডিয়ামে এবং বিকেলে শালিখা উপজেলার আড়পাড়া হাইস্কুল মাঠে এই সভার আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক ও বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান। সঞ্চালনায় ছিলেন ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরী।
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন, মাগুরা-২ আসনের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী অ্যাড. নিতাই রায় চৌধুরী, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাড. মিথুন রায় চৌধুরী, অ্যাড. রোকনুজ্জামান চৌধুরী, জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ মতিয়ার রহমান, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মনিরুজ্জামান চকলেট, সামসুর রহমান, মোতালেব শিকদার, মহম্মদপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক নইমুর আলী মৃধাসহ স্থানীয় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
এছাড়া মহম্মদপুর উপজেলার সাবেক ও বর্তমান নির্বাচিত নারী জনপ্রতিনিধিরাও আলোচনায় অংশ নেন।
‘সমাজের নারী ও শিশুর অধিকার প্রতিষ্ঠা বিএনপির নির্বাচনী অগ্রাধিকার’-এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আয়োজিত নারী সমাবেশকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই মাগুরা-২ আসনের বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে মহিলা দলের নেতা-কর্মীরা ব্র্যান্ড পার্টির বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে মাঠে এসে জড়ো হন। আনুষ্ঠানিকতা শুরুর আগেই স্টেডিয়াম ও স্কুল মাঠ হাজারও নারীর উপস্থিতিতে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে।
বক্তারা বলেন, নারী ও শিশুর অধিকার সুরক্ষা ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে এবং স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃত্বেও নারীর সমান ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে।
ভারত ১৭ বছরে আমাদের কিছু দেয়নি, বরং নিয়ে গেছে বলে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সীমান্ত হত্যা বন্ধ, ন্যায্য পানির হিস্যা ও আমাদের ওপর পার্শ্ববর্তী দেশের দাদাগিরি বন্ধে গুরুত্ব দেওয়া হবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশকে সহায়তা করেছিল ভারত। এ হিসেবে এ দেশকে তাদের ভালো কিছু দেওয়ার কথা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য গত ১৭ বছরে তারা কিছু দেয়নি, বরং নিয়ে গেছে।
গতকাল শনিবার দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে মহানন্দা নদীর ওপর নির্মিত রাবার ড্যাম পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা চাই, প্রতিবেশী দেশ ইচ্ছে করলেই আমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে পারে এবং আমি মনে করি, যেহেতু ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তারা আমাদের সহায়তা করেছেন, তাই আরও বেশি করে আপনাদের বাংলাদেশকে সহায়তা করা দরকার। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা গত সরকার ও মোদি সরকারের সময় দেখেছি, উল্টো তারা বাংলাদেশির চাপে ফেলেছেন, সব নিয়ে গেছেন, কিন্তু বিনিময়ে আমাদের কিছু দেননি। এটা ছিল আওয়ামী লীগ ও হাসিনা সরকারের ব্যর্থতা- যে তারা কিছু নিতে পারেনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা শতভাগ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এটা আমাদের রাজনীতি। আমরা বাংলাদেশ নামে যে ভূ-অঞ্চলে বাস করি, এখানকার পুরো পানির হিস্যা, আমাদের সীমান্তে হত্যা, আমাদের ব্যালেন্স অব ট্রেডের সব কিছু ঠিক করা, এই জিনিসগুলোকে আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে চাই।
এ সময় বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক শাহজাহান মিঞা, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির শিল্প-বাণিজ্যবিষয়ক সহ-সম্পাদক ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. আমিনুল ইসলামসহ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এদিকে, বিকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে এক গণসমাবেশে জামায়াতের উদ্দশে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা খুব পরিষ্কার করে বলছি- আপনারা ভালো হয়ে যান। এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতিতো অনেক আগে থেকে শুরু হয়েছে। কেন মানুষকে বোকা বানাচ্ছেন। আপনাদের যত বিলবোর্ড দেখলাম, অন্য কোনো দলের তো এত দেখলাম না। যত পোস্টার দেখলাম, অন্য কোনো দলের এতো দেখলাম না। তাহলে কেন মানুষকে বোকা বানাচ্ছেন। আপনারাতো নির্বাচন করবেন। নির্বাচন না করলে আপনাদের অস্তিত্ব থাকবে না। নির্বাচন করলে আপনারা পরাজিত হবেন, তাই নির্বাচন পেছাতে চান।
মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধান উপদেষ্টা যে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে, এই নির্বাচন হতে হবে। এই নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। এই নির্বাচন দিতে যত দেরি হচ্ছে বাংলাদেশ তত দুর্বল হচ্ছে। জনগণের সমর্থন ছাড়া কোনো সরকার সফলতার সঙ্গে দেশ চালাতে পারে না।