বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, জাতীয় ঐক্য ও নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্টের ষড়যন্ত্র চলছে।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে ২০১৬ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির দ্বিতীয় বর্ধিত সভায় তিনি এ কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, জাতীয় ঐক্য ও নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্টের চক্রান্তের বিরুদ্ধে আমি দেশের কৃষক, শ্রমিক, জনতা, আলেম, ওলামা পীর মাশায়েখ তথা সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। যারা বাংলাদেশকে তাবেদার রাষ্ট্র বানিয়ে রাখতে চেয়েছিলো তাদের ষড়যন্ত্র কিন্তু এখনো থেমে নেই। ‘সংস্কার’ কিংবা ‘স্থানীয় নির্বাচন’ এসব ইস্যু নিয়ে জনগণের সামনে এক ধরনের ধুম্রজাল সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তারেক রহমান।
বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক বিএনপির বর্ধিত সভা আজ দীর্ঘ ৭ বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর আগে বিএনপির সর্বশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি। সেই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মাদার অব ডেমোক্রেসি বেগম খালেদা জিয়া। ফ্যাসিবাদী শাসনকালে এরপর আর বিএনপির বর্ধিত সভা কিংবা কাউন্সিল অনুষ্ঠান সম্ভব হয়নি।
তারেক রহমান বলেন, চিকিৎসাধীন থাকায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ সভায় উপস্থিত থাকতে পারেননি। তবে তিনি এই সভার সাফল্য কামনা করেছেন। তিনি আপনাদের কাছে দোয়া চেয়েছেন। দেশনেত্রীর শারীরিক সুস্থতার জন্য আমরা আল্লাহর দরবারে দোয়া কামনা করছি। মাদার অফ ডেমোক্রেসি বেগম খালেদা জিয়ার সম্মোহনী ব্যক্তিত্ব আর সুদক্ষ নেতৃত্ব বিএনপিকে পৌঁছে দিয়েছিলো সারাদেশের প্রতিটি গ্রামে, প্রতিটি ঘরে।
তারেক রহমান আরো বলেন, ‘আজকের এই বর্ধিত সভার শুরুতেই আমি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে স্মরণ করতে চাই। তিনি একদলীয় অভিশপ্ত বাকশালের অন্ধকারাচ্ছন্ন বাংলাদেশে গণতন্ত্রের আলো জ্বালিয়েছিলেন। মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের নিষিদ্ধ করা সকল রাজনৈতিক দলকে বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। জনগণের ভালোবাসায় ধন্য বিএনপির হাতে গণতন্ত্রের ঝাণ্ডা তুলে দিয়েছিলেন।’
বিএনপির জন্ম থেকে আজ পর্যন্ত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং স্বৈরাচার বিরোধী ধারাবাহিক আন্দোলনে, যারা শহীদ হয়েছেন আহত হয়েছেন, সন্তান-স্বজন হারিয়ে যেসব পরিবার নিদারুণ দুঃখ কষ্টের মুখোমুখি হয়েছেন, যাদের শ্রম ঘাম মেধায় বিএনপি আজ আপামর জনগণের কাছে দেশের সবচেয়ে বিশ্বস্ত রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে, আজকের বর্ধিত সভার শুরুতে তাদের প্রত্যেকের অবদানকেও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন তারেক রহমান।
তারেক রহমান বলেন, ৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের লাখো শহীদ, দেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ধারাবাহিক সংগ্রামে যারা শহীদ হয়েছেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে তাবেদার অপশক্তির বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধের সাহসী বীর আবু সাঈদ, মুগ্ধ, ওয়াসিম, রিয়া গোপ, আব্দুল আহাদ এবং বিএনপির পাঁচ শতাধিকসহ হাজারো শহীদ এবং আহত যোদ্ধাদের গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি।
তিনি বলেন, হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতাপ্রিয় বীর জনতার রক্তক্ষয়ী গণঅভুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর দেশে গণতন্ত্রকামী মানুষের সামনে বাংলাদেশ পুনর্গঠনের এক অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে। এই সুযোগ এবং সম্ভাবনা নস্যাৎ করার জন্য এরইমধ্যে নানারকম ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সুকৌশলে রক্তপিচ্ছিল রাজপথে গড়ে ওঠা ‘জাতীয় ঐক্য’ এবং জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্টের অপচেষ্টা চলছে।
তিনি আরো বলেন, রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে সংস্কার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। বিএনপির কাছে সংস্কারের ধারণা নতুন কিছু নয়। সরকারে কিংবা বিরোধী দলে বিএনপি যখন যে অবস্থানেই দায়িত্ব পালন করেছে জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে, সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে সব সময়েই রাষ্ট্র, সরকার ও রাজনীতিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করেছে এবং করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের পর দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, সংবিধানে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন, ১৯৯১ সালে দেশে সংসদীয় সরকার প্রতিষ্ঠা এসবই ছিল রাষ্ট্র, রাজনীতির ময়দানে যুগান্তকারী সংস্কার। এছাড়াও বিভিন্ন মেয়াদে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকাকালে বিএনপি সরকার স্কুল কলেজে বিনা বেতনে মেয়েদের শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি, রাষ্ট্র ও সমাজে মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা, বিশ্বের তথ্য প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশকে প্রস্তুত রাখতে বিজ্ঞান এবং তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা, প্রবাসী বাংলাদেশিদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা এগুলোও ছিল রাষ্ট্র ও সরকারের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার। এ ধরনের আরো অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে।
তারেক রহমান বলেন, ষড়যন্ত্রের পথ ধরে পলাতক স্বৈরাচারের রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের পর সংস্কারের সকল পথ বন্ধ করে দেয়া হয়। বাংলাদেশকে চিরতরে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করে রাখতে গত দেড় দশকে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছিল। দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে নাজুক করে তুলেছিল। টাকা পাচার আর লুটপাট চালিয়ে দেশের অর্থনীতি ভঙ্গুর করে দিয়েছিল। অকার্যকর করে দেয়া হয়েছিল দেশের সকল সাংবিধানিক এবং বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান। জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করে জনগণকে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাহীন করে দিয়ে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করে তুলেছিল।
‘এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র, সরকার এবং রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনের লক্ষ্যে মাদার অব ডেমোক্রেসি বেগম খালেদা জিয়া ২০১৭ সালে ভিশন ২০৩০ দিয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালে বিএনপি ২৭ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে। পরবর্তীকালে গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়ের পর ঘোষণা করা হয় ৩১ দফা কর্মসূচি। এই ৩১ দফা নিয়ে বর্তমানে বিএনপির উদ্যোগে সারাদেশে জনগণের সঙ্গে সংলাপ চলছে।’
তারেক জিয়া বলেন, রাষ্ট্র-সরকার-রাজনীতি এবং রাজনৈতিক দল মেরামতের জন্য দফা ৩১টি হলেও এর চূড়ান্ত লক্ষ্য একটি। সেটি হলো একটি নিরাপদ, গণতান্ত্রিক, মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ। ঠিক তেমনি উদ্দেশ্যও একটি। সেটি হলো রাষ্ট্র ও সমাজে জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা। এটি নিশ্চিত করা না গেলে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব-গণতন্ত্র-নিরাপত্তা-সমৃদ্ধি কোনটিই টেকসই হবে না।
‘রাষ্ট্রের স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তার জন্য জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের কোনোই বিকল্প নেই। রাষ্ট্র এবং সমাজে জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার পূর্ব শর্ত হলো প্রতিটি নাগরিকের ভোট প্রয়োগের অধিকার বাস্তবায়ন। এবং এ লক্ষ্যেই একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি বারবার জনগণের ভোটে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ সরকার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যেই জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানায়।’
তিনি বলেন, আগামী দিনের রাজনীতিতে বিএনপির এই ৩১ দফা হচ্ছে, একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক, মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সনদ। তবে এই ৩১ দফাই শেষ কথা নয়। সময়ের প্রয়োজনে রাষ্ট্র-সরকার-রাজনীতি ও রাজনৈতিক দলের সংস্কারের জন্য এই ৩১ দফাতেও সংযোজন-বিযোজনের সুযোগ রয়েছে। এমনকি বিএনপির ৩১ দফার সঙ্গে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার প্রস্তাবনার খুব বেশি ইস্যুতে মৌলিক বিরোধ নেই।
তারেক রহমান বলেন, বিভিন্ন সময়ে ‘জাতীয় নির্বাচন’ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য জনমনে ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করলেও ‘জাতীয় নির্বাচন’ নিয়ে কোনো কোনো উপদেষ্টার বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য, মন্তব্য স্বাধীনতাপ্রিয় গণতন্ত্রকামী জনগণের জন্য হতাশার কারণ হয়ে উঠছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের সকল রাজনৈতিক দলের নিঃশর্ত সমর্থন থাকলেও সরকার এখনো তাদের কর্মপরিকল্পনায় অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে পারছে না।
তিনি বলেন, সারাদেশে খুন, হত্যা, ধর্ষণ চুরি, ছিনতাই, রাহাজানি বেড়েই চলেছে। বাজার সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণহীন। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনো দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি।
তিনি আরও বলেন, সরকার যেখানে দেশের বাজার পরিস্থিতি কিংবা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জন করতে পারছে না সেখানে জাতীয় নির্বাচনের আগে ‘স্থানীয় নির্বাচন’ অনুষ্ঠানের নামে কেন দেশের পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে করতে চাইছে এটি জনগণের কাছে বোধগম্য নয়।
তারেক রহমান বলেন, গণতন্ত্রকামী জনগণ মনে করে, স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সেটি হবে সারাদেশে পলাতক স্বৈরাচারের দোসরদের পুনর্বাসনের একটি প্রক্রিয়া যা সরাসরি গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার বিরোধী। গণহত্যাকারী, টাকা পাচারকারী, দুর্নীতিবাজ মাফিয়া চক্রকে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার এই ফাঁদে বিএনপি পা দেবে না।
তিনি বলেন, বিএনপি জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি জনরায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে গণহত্যাকারী-মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহবান, সারাদেশে গণহত্যাকারীদের দোসর, মাফিয়া চক্রকে পুনর্বাসনের ‘স্থানীয় নির্বাচন’ অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা থেকে সরে আসুন। অবিলম্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আগামী দিনের সুনির্দিষ্ট ‘কর্ম পরিকল্পনার রোডম্যাপ’ ঘোষণা করুন।
তিনি বলেন, মাফিয়া প্রধান হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর এ পর্যন্ত ১৬/১৭টি নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী বিএনপি সকল নতুন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনকে স্বাগত জানায়। তবে নির্বাচনের মাধ্যমে গ্রহণ কিংবা বর্জনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে জনগণ। প্রতিটি দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু ‘জাতীয় নির্বাচন’ অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সবার আগে নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তুত রাখতে হবে।
তিনি বলেন, দেশে একটি অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নিরপেক্ষতাই হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সবচেয়ে বড় পুঁজি। কিন্তু সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে ইতোমধ্যেই জনমনে সন্দেহ ও সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে । নিজেদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আরো সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানাই।
দলীয় নেতৃত্বের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমি আপনাদের কাছ থেকে শারীরিকভাবে দূরে থাকলেও যোগাযোগ এবং কর্ম পরিকল্পনার মাধ্যমে আমি কখনোই আপনাদের কাছ থেকে দূরত্ব অনুভব করিনি। আমি বিশ্বাস করি যে দলে আপনাদের মতো ত্যাগী এবং সাহসী নেতাকর্মী রয়েছে সেই দলকে কোনো স্বৈরাচার-ই দমিয়ে রাখতে পারে না।'
তিনি বলেন, এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই যে দেশে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান তথা দলমত ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই সমান অধিকার ভোগ করবেন। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই বাংলাদেশ ভূখণ্ডে বসবাসকারী আমাদের সকলের একটিই পরিচয় ‘আমরা বাংলাদেশি’।
পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রেও বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গি সুস্পষ্ট। বিএনপি মনে করে বর্তমান বিশ্বে স্থায়ী শত্রু-মিত্র বলে কিছু নেই, উল্লেখ করেন তারেক রহমান।
তিনি বলেন, একটি দেশের সঙ্গে অপর দেশের সম্পর্ক হবে ‘পারস্পরিক স্বার্থ রক্ষা, প্রয়োজন ও ন্যায্যতা’র ভিত্তিতে। অন্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের নীতি ‘সবার আগে বাংলাদেশ’। অর্থাৎ নিজ দেশ এবং জনগণের স্বার্থ রক্ষাই হতে হবে প্রথম এবং প্রধান অগ্রাধিকার।
তিনি বলেন, এ মুহূর্তে বিএনপিই দেশের সবচেয়ে বড় এবং জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। বিএনপির কাছে জনগণের যেমন আশা ভরসা প্রত্যাশা রয়েছে, একইসঙ্গে বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীরাও থেমে নেই। চক্রান্তকারীদের মোকাবেলা করে কিভাবে দলকে আরো শক্তিশালী এবং সুসংহত করা যায় সেই সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা থাকবে।
তিনি বলেন, বিএনপি একটি বৃহৎ পরিবার। এই পরিবারের নানা বিষয়ে আমাদের মতের অমিল থাকতেই পারে। আমরা সবাই আমাদের ঐক্যের শক্তির সক্ষমতা সম্পর্কে অবহিত। ঐক্যই আমাদেরকে বারবার বিজয় আর সফলতা এনে দিয়েছে। গত দেড় দশকে সারাদেশে বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের ভিন্ন দল এবং মতের নেতাকর্মীদেরকে অবর্ণনীয় নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করতে হয়েছে। কেবল বিএনপিরই প্রায় ৬০ লাখের বেশি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দেড়লাখ রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা দেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমের মতো অনেক নেতাকর্মীর আজ পর্যন্ত খোঁজ মেলেনি। শুধুমাত্র বিএনপি করার অপরাধে হাজার হাজার নেতা কর্মী সমর্থককে গুম, খুন, অপহরণ করা হয়েছে। তবুও বিএনপির নেতাকর্মীরা কেউ দল ছেড়ে যাননি। স্বৈরাচারের সঙ্গে করেননি আপোষ। এই সৎসাহস এবং সততার কারণে বিএনপি আজ শুধু একটি সাধারণ রাজনৈতিক দলই নয়। দেশের গণতন্ত্রকামী স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণ বিএনপিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের ভ্যানগার্ড হিসেবে বিশ্বাস করে। এটি একজন রাজনৈতিক কর্মীর জন্য নিঃসন্দেহে একটি বড় প্রাপ্তি।
তারেক রহমান বলেন, দলের সর্বস্তরের প্রতিটি নেতাকর্মীকে আরো বেশি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। আচরণে হতে হবে আরো সতর্ক ও সংযত। তবে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কোটি কোটি নেতাকর্মী সমর্থকের এই বৃহৎ রাজনৈতিক দলের কোনো কোনো নেতা কর্মী হয়তো নিজের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। তাই আমি আপনাদের আবারো বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের একটি বার্তা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। ব্যক্তির চেয়ে দল বড় দলের চেয়ে দেশ বড়।
দলের প্রতিটি নেতাকর্মীর দীর্ঘদিনের সীমাহীন ত্যাগ তিতিক্ষা আমি গভীরভাবে উপলব্ধি করি উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, যারা দলের শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণ হবেন ব্যক্তির চেয়ে দলের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে বাধ্য হয়েই তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও নিতে হবে। দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ কিংবা দলের ইমেজ ক্ষুণ্ন হয় এমন কোনো কাজকে বিএনপি বিন্দুমাত্র প্রশ্রয় দেবে না। জনগণই বিএনপির সকল রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস।
জাতীয় নির্বাচনের সময়ও ঘনিয়ে আসছে। মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে দলীয় নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তারেক রহমান।
তারেক রহমান বলেন, ‘গণতন্ত্রকামী দেশবাসীর উদ্দেশ্যে একটি বার্তা দিতে চাই, বিএনপি শুধুমাত্র আপনাদের ভোটের পুনরুদ্ধারই নয়, আপনার ভোট প্রয়োগের অধিকার নিশ্চিত করতে চায়। আপনাদের সমর্থন পেলে বিএনপি এমন একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যে সরকার আপনার কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে। আমি জনগণের সমর্থন চাই, সকলের সহযোগিতা চাই।’
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ হয়ে লন্ডন থেকে দেশে ফিরেছেন।
যুক্তরাজ্যের লন্ডনে চিকিৎসা পরবর্তী সময়ে তাঁর (খালেদা জিয়া) শারীরিক অবস্থা অনেকটাই সুস্থ এবং মানসিকভাবেও তিনি স্ট্যাবল (স্থিতিশীল)। তাঁর প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করায় তিনি দলীয় নেতাকর্মী ও দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও চেয়ারপার্সনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে দলীয় চেয়ারপার্সনের বাসভবন ‘ফিরোজা’র সামনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহর গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় প্রবেশের পর দুপুর আড়াইটার দিকে তিনি এই ব্রিফিংয়ে বক্তব্য রাখেন।
ডা. জাহিদ বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখন অনেকটাই সুস্থ। মানসিকভাবেও উনি স্ট্যাবল (স্থিতিশীল) আছেন। শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ হয়ে লন্ডন থেকে তিনি দেশে ফিরে এসেছেন।
তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সুস্থ ও মানসিকভাবে দৃঢ় রয়েছেন। তার প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করায় তিনি নেতাকর্মী ও দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, গত ৭ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত লন্ডনে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে সার্বিক সহযোগিতা করায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গণমাধ্যমকর্মীদেরও ধন্যবাদ জানিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া।
তবে ১৪ ঘণ্টার জার্নি এবং দীর্ঘ সময়ের এ জার্নির কারণে উনি শারীরিকভাবে একটু অবসন্ন। তারপরও মানসিক ভাবে উনার অবস্থা অত্যন্ত স্থিতিশীল আছে বলেও ডা. জাহিদ উল্লেখ করেন।
বেগম খালেদা জিয়ার এই সুস্থতা যাতে অব্যাহত থাকে সেজন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন ডা. জাহিদ।
ডা. জাহিদ বলেন, বিএনপি’র চেয়ারপার্সনের জন্য কাতারের ‘রাজকীয় বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স’ ‘বিনাভাড়ায়’ দেয়ার জন্য কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি এবং কাতার কর্তৃপক্ষের প্রতি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কতৃজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
আগামী ৯ মে (শুক্রবার) আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ। যার সংক্ষিপ্ত রূপ ইউপিবি বা আপ বাংলাদেশ। তবে এটি রাজনৈতিক দল নয়, রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম বলে জানিয়েছেন প্ল্যাটফরমের উদ্যোক্তা আলী আহসান জুনায়েদ।
গতকাল সোমবার বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এসব তথ্য জানান তিনি।
তবে এর আগে জানা গিয়েছিল, রাজনৈতিক দল হিসেবে ঘোষণা হচ্ছে আপ বাংলাদেশ।
ওই পোস্টে জুনায়েদ বলেন, আগামী ৯ মে (শুক্রবার) বিকেল ৪টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (ইউপিবি/আপ বাংলাদেশ)। এটি মূলত একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম, দল নয়।
জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন করাই হবে এই প্ল্যাটফরমের প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা বলে জানিয়েছেন তিনি।
জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের মধ্যে আলী আহসান জুনায়েদ অন্যতম। গত ফেব্রুয়ারিতে ঘোষণা হওয়া নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির শীর্ষ পদগুলোর মধ্যে একটি পদ পাওয়ার গুঞ্জন ছিল। পরে এক পোস্টে তিনি ওই দলে যাচ্ছেন না বলে জানান।
আজকের পোস্টে জুনায়েদ আরও বলেন, ‘দীর্ঘ মেয়াদে আমরা বাংলাদেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন করে যোগ্য ও নৈতিক নেতৃত্বের বিকাশ, সুবিচার ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করতে চাই। ধর্মীয় বিশ্বাস ও মূল্যবোধের আলোকে সামাজিক চুক্তির পুনর্বহাল করে সাম্প্রদায়িক বন্ধন ও পারষ্পরিক শ্রদ্ধাপূর্ণ সমাজ গড়ায় কাজ করতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ, আধিপত্যবাদ, ধর্মবিদ্বেষ ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে এই প্ল্যাটফরম কাজ করবে ইনশাআল্লাহ। আপনাদের সবার পরামর্শ, দোয়া ও সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। ৯ মে শহীদ মিনারে আপনাদের আমন্ত্রণ রইল।’
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ফিরে আসা গণতন্ত্র উত্তরণের পথ সহজ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে প্রবেশের আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া দীর্ঘকাল ফ্যাসিবাদের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ফ্যাসিবাদ বিদায় নেওয়ার পর কারাবন্দিত্ব থেকে মুক্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশে গিয়েছিলেন। সেখানে প্রায় ৪ মাস চিকিৎসা শেষে আজকে দেশে ফিরে আসছেন। এটা আমাদের জন্য, জাতির জন্য একটা আনন্দের দিন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, গণতন্ত্র উত্তরণের এই সময়ে খালেদা জিয়ার উপস্থিতি একটি উল্লেখযোগ্য দিক। তার ফিরে আসা আমাদের গণতন্ত্র উত্তরণের পথ সহজ করবে। দেশকে সঠিক ও বৈষম্যহীন পথে নিয়ে যেতে সহযোগিতা করবে।
গত ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের লন্ডনে যান বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। সেখানে লন্ডন ক্লিনিকে টানা ১৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ২৫ জানুয়ারি থেকে তার ছেলে তারেক রহমানের বাসায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
বিএনপি বরাবরই সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি, বিএনপি ক্ষমতায় থাকুক বা না থাকুক, সব সময় গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করবে। কখনোই অন্যায়ভাবে অন্যের মতকে চাপিয়ে দেওয়াকে সমর্থন করবে না। আরেকজনের মতের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে।’
গতকাল রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস ২০২৫ উপলক্ষে সম্পাদক পরিষদ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন। গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের প্রতি অতীতে যে নির্যাতন ও নিপীড়ন হয়েছে, আপনাদের আইন কানুনে পুরোপুরি ফ্যাসিবাদী চরিত্র দেওয়া হয়েছে, এগুলোর বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করেছি। আমরা লড়াই করে চলেছি। এখনো করছি। খুব স্পষ্ট ভাষায় দৃঢ়ভাবে আবারও বলতে চাই, আমরা কখনোই অন্যায়ভাবে অন্যের মতকে চাপিয়ে দেওয়াকে সমর্থন করব না।’
বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়টি নতুন নয় উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করেছি, সেই ষাটের দশক থেকে এই বিষয়টি সব সময় সামনে এসেছে। পাকিস্তান শাসকদের বিরুদ্ধে সেই সময়েও আমরা কথা বলেছি, আন্দোলন করেছি, কাজ করেছি। তখন সংবাদমাধ্যমের একটি নিজস্ব স্বকীয়তা ছিল। যেখানে তাদের কোনও গোষ্ঠীভুক্ত করা অতটা সহজ হতো না। তাদের দেশপ্রেম, আন্তরিকতা ও দায়িত্ববোধ ছিল অনেক উঁচু দরের।
বর্তমানে গণমাধ্যমের সামনে কথা বলতে গিয়ে কিছুটা আতঙ্কিত থাকেন উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে কিছুটা আতঙ্কিত থাকি সম্প্রতি প্রেসের সামনে কথা বলতে গিয়ে। মনে হচ্ছে, কোন প্রেস আমার কথাগুলো কীভাবে নেবে। তারপর তারা কীভাবে ছাপবে। অথবা সোশ্যাল মিডিয়া কীভাবে এটা উপস্থাপন করবে। এটা আমাদের জন্য, যারা আমরা রাজনীতি করি। এটা আমাদের জন্য সত্যি একটা চিন্তার বিষয়। কারণ, সম্প্রতি চরিত্র হরণ করার যে প্রবণতা বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়াতে দেখা দিয়েছে, এটাতে চিন্তিত না হয়ে উপায় নেই।’
মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিঃসন্দেহে আগের চেয়ে বেড়েছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে প্রায় ১৬ ভাগ বেড়েছে। সমস্যা দেখা দেয় তখনই, যখন দেখি কোনও কোনও সংবাদমাধ্যম গোষ্ঠী আরেকটি গোষ্ঠীকে আক্রমণ করে। কোনও কোনও রাজনৈতিক গোষ্ঠীও সেটার সঙ্গে যুক্ত হয় এবং বিভিন্ন রকম রাজনৈতিক কর্মসূচিও দেন। একটি গণতান্ত্রিক মুক্ত সমাজে এটা কতটুকু গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে এটি আমার বোধগম্য নয়।
সংস্কারের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের বিপক্ষে প্রচার চালানো হয় যে আমরা সংস্কারের বিপক্ষে। প্রায়ই বলা হয়, সংস্কার নয় আমরা নির্বাচন চাই। অথচ সংস্কারের বিষয়টি শুরু করেছে বিএনপি। দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় শাসন ব্যবস্থা এনেছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। অনেক আপত্তি সত্ত্বেও বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সংবিধানে যুক্ত করেছে। এগুলো বাস্তবতা। ওই বাস্তবতা থেকে অযথা নানা ইস্যুতে বিএনপিকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা একটি ট্রানজেকশন পিরিয়ডে আছি। অনেক রকমের ঘটনা, টানা- হেঁচড়া চলছে। গণতন্ত্রই নেই বলে সংকট হচ্ছে। গত ১৫ বছর ধরে লড়াই করলাম গণতন্ত্র উত্তরণের জন্য। চব্বিশের জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটি ফ্যাসিস্ট রেজিমকে সরিয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা শুরু করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এসময়ে জনগণের ওপর আস্থা রাখতে হবে।’
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, আমাদের কাছে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ একটি বিশাল ব্যাপার। এটাকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয় আমাদের চিন্তা। এজন্য, আমরা সেটার জন্য লড়াই করেছি, যুদ্ধ করেছি, প্রাণ দিয়েছি। দীর্ঘ ৯ মাস অবিশ্বাস্য রকমের কষ্টের মধ্য দিয়ে পার করেছি। সেই জায়গায় আমরা কোনও আপস করতে চাই না। এটাকে অনেকে পছন্দ করতে পারেন, নাও করতে পারেন। তাতে ব্যক্তিগতভাবে আমি কিছু মনে করি না। কারণ ‘দ্যাট ইজ মাই বেসিস’, ওটাই আমার মূল ভিত্তি।
সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দৈনিক বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহফুজ আনাম। আলোচনা সভায় রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
সম্পাদকদের মধ্যে বক্তব্য দেন দ্য নিউ এজের সম্পাদক নূরুল কবির, মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজ। আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, সমকালের সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলী, দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দিন প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে দেশে বর্তমানে ২৬৬ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যা অথবা সহিংসতা–সংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগে মামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহ্ফুজ আনাম। তিনি বলেছেন, গণহারে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের আক্রমণ (মামলা) স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থি এবং এটি ভয়ের ব্যাপার।
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার শাসনামল এত জনধিকৃত হয়েছিল, তার অন্যতম কারণ ছিল গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ছিল না। আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং আরও অনেক আইনের শিকার হয়েছিলাম। তবে বর্তমানে ২৬৬ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যা অথবা সহিংসতা–সংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগে মামলা চলছে। এটা কীভাবে সম্ভব? ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেও ২০০ বা কিছু বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। ২৬৬ জন সাংবাদিক আজকে খুনের মামলা অথবা সহিংসতা সংক্রান্ত অপরাধের মামলার আসামি। এটা আমাদের জন্য অসম্মানের।’
সরকারের উদ্দেশে মাহ্ফুজ আনাম বলেন, ‘এটার অর্থ এই নয় যে কেউ দোষ করেননি। দোষ করে থাকলে সঠিকভাবে মামলা করে শাস্তি দেন এবং আমরা কোনোভাবেই তার পাশে দাঁড়াব না, যদি তিনি সত্যিকার অর্থে সমাজের বিরুদ্ধে বা জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের বিরুদ্ধে তার অবস্থান সে রকম থাকে। কিন্তু আজকে ছয় থেকে সাত মাস হয়েছে, তারা এসব মামলায় পড়েছেন। একটি কদমও এগোয়নি তদন্তের ব্যাপারে।’
যাদের নামে মামলা হয়েছে, সেসব সাংবাদিক একটা ভয়ের মধ্যে থাকেন উল্লেখ করে মাহ্ফুজ আনাম বলেন, তাঁরা ‘মব আক্রমণের’ (দলবদ্ধভাবে আক্রমণ) ভয়ে থাকেন। এ রকম দু-একটা ঘটনা ঘটেছে।
১৩ জন সাংবাদিক গ্রেপ্তার আছেন উল্লেখ করে মাহ্ফুজ আনাম বলেন, ‘তারা যদি অপরাধ করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই তাদের বিচার হওয়া উচিত। কিন্তু আজকে সাত মাস, আট মাস ধরে কারাগারে, তারা জামিন পাচ্ছেন না। তাঁদের আইনি কোনো প্রক্রিয়া চলছে না। বিচার হচ্ছে না। তাহলে এটা কি চলতে থাকবে?’
মামলার প্রবণতার কথা বলতে গিয়ে মাহ্ফুজ আনাম বলেন, এখন মামলার যে প্রবণতা, তাতে ১০০ জন, ৫০ জন, ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা, তার মধ্যে একজন সাংবাদিকের নাম ঢুকিয়ে দেওয়া হলো।
সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে করণীয় সম্পর্কে নিজের মতামত তুলে ধরে মাহ্ফুজ আনাম বলেন, ‘আমার সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব হচ্ছে, সরকারের হয়তো অনেক ব্যস্ততার জন্য এই ২৬৬ জন সাংবাদিকের মামলা দেখতে পাচ্ছে না। কিন্তু তারা দৈবচয়ন ভিত্তিতে ১০-১৫টি মামলা দেখুক না, যেখানে ২০-২৫ জন অভিযুক্তের মধ্যে একজন-দুজন সাংবাদিক আছেন। তারা যদি একটা, দুইটা, ৫টা দৃষ্টান্ত পায় যে সাংবাদিকদের নামে হওয়া মামলা মিথ্যা মামলা, তাহলে কেন পদক্ষেপ নেবে না? বারবার বলা আমাদের কিছু করণীয় নাই, আমি মনে করি যারা এই মামলা দিয়ে সাংবাদিকদের হেনস্তা করছেন, এতে তাদের আরও বলিষ্ঠ করা হয়। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমি দাবি করছি, সরকার সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়াক।’
ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম বলেন, ‘যে সাংবাদিক দোষী, যে সাংবাদিকের শাস্তি হওয়া উচিত, আমরা সরকারের পক্ষে থাকব। কিন্তু খামোখা একেবারে গণআকারে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এই আক্রমণ আমি মনে করি এটা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য বিরাট একটা পরিপন্থি ব্যাপার ও এটা ভয়ের ব্যাপার।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই সরকার পরিবর্তনের সরকার, এই সরকার সংস্কারের সরকার। আশা করি, এই সরকার গণতন্ত্রকে বলিষ্ঠ করার সরকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে দৃঢ় করার সরকার। কিন্তু এই মুহূর্তে মামলার মাধ্যমে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যে নির্যাতন হচ্ছে এবং এটাও শুনেছি হত্যা মামলা দেওয়া হয় কেন, হত্যা মামলায় জামিন পেতে অসুবিধা হয়। সুতরাং যিনি মামলা দিচ্ছেন পরিকল্পিতভাবে, যাতে জামিন না পান। এগুলো তো প্রতীয়মান। সরকারের কাছে কি প্রতীয়মান হবে না?’
সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে মাহ্ফুজ আনাম বলেন, ‘আইন, স্বরাষ্ট্র ও অন্যান্য যারা আছেন, তারা উদ্যোগী হয়ে যেন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। এটা শুধু আমাদের মনঃক্ষুণ্ন করছে না, বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।’
আলোচনা সভায় মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘যে দেশে প্রশ্ন করার জন্য সাংবাদিকের চাকরি যায়, সে দেশে মুক্ত গণমাধ্যম দিবস পালন করছি আমরা। অবাক লাগে, আমি বিস্মিত হই, জানি না, আমি কাকে দায়ী করব? আমি কি সরকারকে দায়ী করব, না, আমি কি মালিককে দায়ী করব, না করব না, সাংবাদিক ইউনিয়ন কী করছে বা আমাদের সম্পাদক পরিষদ, যেটিতে আমি প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এখন পর্যন্ত আছি, আমি মনে করি আমরাও ব্যর্থ হয়েছি।’
মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘যা-ই হোক আত্মসমালোচনা আমাদের দরকার, আমরা আসলে কতটুকু করতে পেরেছি। তবে এটা স্বীকার করতেই হবে, পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে অনেকখানি। এক বছর আগে যে অবস্থা ছিল, সেই অবস্থা এখন আর নেই। অনেকখানি বদলেছে।’
গণমাধ্যমে অনৈক্য ও বিভাজন সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে উল্লেখ করে মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘আমি আশা করব, পত্রিকায় পত্রিকায়, ইদানীং আবার টেলিভিশনে টেলিভিশনের মধ্যে যে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে, এটি অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত।’
নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর বলেন, ‘বাংলাদেশে আজকের দিনে যখন মুক্ত গণমাধ্যম দিবস পালন করছেন, ঠিক তার এক বছর আগেও সম্পাদক পরিষদের পক্ষ থেকে এই দিবসটি পালন করেছিলেন। কিন্তু এই দুদিবসের মধ্যে অনেক অনেক পার্থক্য সূচিত হয়েছে। কিংবা পার্থক্য সূচিত হওয়ার লক্ষণগুলো দেখা দিয়েছে।’
নূরুল কবীর বলেন, ‘সেটা আমরা কতটা ইতিবাচক পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারি, এটা কেবল গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর নির্ভর করে না, সেটা নির্ভর করে প্রধানত রাষ্ট্র যারা পরিচালনা করেন, যারা আইন প্রণয়ন ও পরিবর্তন করেন, তাদের ওপরও অনেকাংশে নির্ভর করে।’
আলোচনায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজ বলেন, দীর্ঘ ফ্যাসিবাদের কবলে পড়ে অনেক গণমাধ্যম বন্ধ হয়েছে, তারাও অনেক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন, সেগুলো আর ভবিষ্যতে চাইবেন না। জনগণের সমর্থন নিয়ে যারা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবে, তারা মুক্ত গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সভায় বিভিন্ন সংবাদপত্রের সম্পাদক ছাড়াও রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন। রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ। আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন, দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, সমকালের সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলী, দৈনিক সংবাদের নির্বাহী সম্পাদক শাহরিয়ার করিম প্রমুখ।
নারীর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় আগামী তিন মাসের মধ্যে বিভাগীয় সম্মেলন এবং নারী সংস্কার কমিশন বাতিলসহ চার দফা দাবিতে আগামী ২৩ মে দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
শনিবার (৩ মে) দুপুরে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসমাবেশে নতুন এই দুই কর্মসূচি ঘোষণা করেন সংগঠনটির মহাসচিব সাজিদুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘নারীর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় আগামী তিন মাসের মধ্যে বিভাগীয় সম্মেলন করা হবে। আগামী ২৩ মে বাদ জুমা চার দফা দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে।’
এর আগে, হেফাজত ইসলামের নায়েবে আমির মাওলানা মাহফুজুল হক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠিত নারী কমিশনের সুপারিশ বাতিলসহ ১২ দফা ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।
মহাসমাবেশে বক্তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে কুরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো নীতি বাস্তবায়ন করা যাবে না। এক্ষেত্রে আমরা কোনো ছাড় দেবো না। এই বিতর্কিত কমিশন ও কোরআনবিরোধী প্রতিবেদন অবিলম্বে বাতিল করে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম অংশীদার আলেম-ওলামার পরামর্শ নিয়ে নতুন কমিশন গঠন করুন।
পাশাপাশি শাপলা চত্বরে সংঘটিত গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করারও আহ্বান জানান তারা। বলেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জীবন দিতে প্রস্তুত। কিন্তু কুরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড বরদাশত করা হবে না।
বক্তারা বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য কমিশন হয়েছে, জুলাই আন্দোলনের গণহত্যার জন্য কমিশন হয়েছে, কিন্তু মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে সংঘটিত গণহত্যার বিচারের জন্য কেন তদন্ত কমিশন গঠন হবে না?
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার করা হলেও হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে করা মামলা প্রত্যাহার করা হয়নি। এসব মামলা অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানান তারা।
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন সম্পর্কে সমালোচনা করে হেফাজতে ইসলামের নেতারা বলেন, নারীবিষয়ক যে সংস্কার কমিশন, তাতে যেসব প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তা কুরআন-সুন্নাহবিরোধী। তাদের সংস্কার প্রতিবেদন যদি পাস করা হয় তাহলে জীবন দিয়ে তা রুখে দেওয়া হবে। মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবে হেফাজতে ইসলাম।
মহাসমাবেশ থেকে ফিলিস্তিন ও ভারতে ‘মুসলিম গণহত্যা ও নিপীড়ন বন্ধে’ সরকারকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডা. জোবাইদা রহমানের চার ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ মহাপরিদর্শকের কাছে চিঠি দিয়েছে দলটি। গত সোমবার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তারের স্বাক্ষরে এই চিঠি দেওয়া হয়।
আবদুস সাত্তার চিঠি দেওয়ার কথা নিশ্চিত করে বলেন, ডা. জোবাইদা রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এই চিঠি দেওয়া হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বিদেশে চিকিৎসা শেষে আগামী সোমবার দেশে ফিরবেন। ডা. জোবাইদা রহমান তার সফরসঙ্গী হিসেবে দেশে আসবেন এবং ধানমন্ডির তার বাবার বাসায় অবস্থান করবেন। জিয়া পরিবারের সদস্য এবং তারেক রহমানের সহধর্মিণী হিসেবে তার জীবনের নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে। সে কারণে তার ঢাকার বাসায় অবস্থানকালীন এবং যাতায়াতের সময় একজন স্বশস্ত্র গানম্যান, গাড়িসহ পুলিশ প্রটেক্টশন, বাসায় পুলিশ পাহারা এবং বাসায় আর্চওয়ে স্থাপনের মধ্যদিয়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া লন্ডনে উন্নত চিকিৎসা শেষে আগামী ৫ মে সকালে দেশে ফিরবেন বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে। তার সঙ্গে দুই পুত্রবধূ (তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান) থাকবেন।
সাবেক নৌবাহিনী প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খানের মেয়ে জোবাইদা রহমান ২০০৭ সালে স্বামী তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার লন্ডনে নিয়ে যান। এরপর তিনি আর দেশে ফেরেননি।
তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করেছিল।
আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করে অতিদ্রুত তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এবি পার্টির ৫ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ৫ আগস্ট বাংলাদেশের জনগণ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একটি রায় দিয়েছে, তারা এ দেশে আর কখনো রাজনীতি করতে পারবে না। আমরা যখন বলি জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে আওয়ামী লীগের ব্যাপারে তখন উপায় হচ্ছে একটি ভোটের মাধ্যমে, অন্যটি রাজপথে তাদের অবস্থান জানান দিয়ে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে, যা ৫ আগস্টে হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশে একটি গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। সেখানে এ দেশের জনগণ মুজিববাদ ও আওয়ামী লীগকে অস্বীকার করেছে। জনরোষে পড়ে আওয়ামী লীগের নেতারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। এরপরে আওয়ামী লীগ এ দেশে রাজনীতি করতে পারবে কি পারবে না এ আলোচনা আসতে পারে না। তারা রাজনীতির নৈতিক ভিত্তি হারিয়েছে। এখন তার আইনি বন্দোবস্ত কি হবে, সেটাই বিষয়। এ বিষয়ে একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যেতে পারি সে পথ আমাদের বের করতে হবে উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করে অতি দ্রুত তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে এবং বিচারের মাধ্যমে আমরা তাদের বিষয়ে একটি চূড়ান্ত ফয়সালা পাবো।
নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা ও নির্বাচনের মাধ্যমে জনগনের অধিকার জনগনের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
আজ বৃহস্পতিবার বরিশালে অশ্বীনী কুমার হল চত্বরে জেলা ও মহানগর শ্রমিক দল আয়োজিত মহান মে দিবসের র্যালিপূর্ব সমাবেশে এই দাবি জানান তিনি।
রিজভী বলেন, পালিয়ে গিয়েও দেশে হত্যার রাজনীতি অব্যাহত রেখেছেন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা। ২৬২ জনকে হত্যার হুমকি দিয়ে তার দেওয়া বক্তব্য ফরেনসিক রিপোর্টে প্রমাণিত হয়েছে। গোয়েন্দারা প্রমাণ পেয়েছে যে ওই বক্তব্যের কন্ঠ তারই ছিল।
তিনি বলেন, একটি কথা মনে রাখতে হবে, এদেশে আবারো ফ্যাসিস্ট ফিরে এলে আপনার আমার কারো রেহাই নেই। অতএব দ্রুত নির্বাচন দিয়ে জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে। কেবল তাহলেই সম্ভব হবে পতিত ফ্যাসিস্টকে চিরতরে নির্মূল করা। জনগণই পারবে ফ্যাসিস্ট ঠেকাতে।
সমাবেশ শেষে মহান মে দিবস উপলক্ষে রিজভীর নেতৃত্বে শ্রমিক দলের র্যালিটি নগরীর প্রধান প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণের পর পূনরায় সদর রোডে জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়।
জেলা শ্রমিক দলের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ফয়েজ আহম্মেদের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. মোহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান ও আবু নাসের রহমতউল্লাহসহ স্থানীয় নেতারা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন আগামী ৩১ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে।
গতকাল বুধবার রাত ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের কাউন্সিল কক্ষে জাকসু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান।
উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদের (জাকসু) গঠনতন্ত্রের ৮ (খ) ধারা অনুযায়ী আগামী ৩১ জুলাই ২০২৫ তারিখ সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) এবং হল সংসদ নির্বাচন একই সঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে, সেটা যে সরকারই হোক।
রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে জোটেরর মিত্র শরিক দল ন্যাপ-ভাসানী, আমজনতার দল ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির সাথে আলাদা আলাদা বৈঠকের পর সংবাদ ব্রিফিং-এ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন।
তিনি বলেন, ‘গত ১৬ বছরের যুদ্ধটা ছিল বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক অবস্থার অর্ডারটা ফিরিয়ে আনার জন্য, জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য, জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে আনার জন্য। সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে, জবাবদিহিতা থাকবে সেটা যে সরকারই হোক।'
‘বাংলাদেশের জনগণ এখনো অন্তর্বর্তী সরকারকেই ভালো সমাধান মনে করছে’.. আল-জাজিরায় দেয়া সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস যে জনগণের কথা বলেছেন ‘সেই জনগণ কারা’ তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, কোনো মহামানব দেশের গণতন্ত্রের সমাধান দেবে তার জন্য বাংলাদেশের মানুষকে অপেক্ষা করতে হবে, সেটা বিশ্বাস করার কোনো কারণ নাই।'
নির্বাচন প্রসঙ্গে আমীর খসরু বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যারা ফ্যাসিবাদ অবসানে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রাস্তায় লড়াই করেছে, আমাদের সাথে যারা রাস্তায় ছিল ইতিমধ্যে ৫০টি দল পরিস্কারভাবে ব্যক্ত করেছে ডিসেম্বরে আগে নির্বাচন দিতে হবে এবং সাথে সাথে সংস্কারের যে কথা বলা হয়, যে সংস্কারগুলোতে ঐকমত্য হবে সেই সংস্কারগুলো ইমিডিয়েটলি করে নির্বাচন কমিশনকে বলা হোক নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক করে রোডম্যাপ দিয়ে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাওয়াটা।'
গুলশানে সোমবার তিনটি রাজনৈতিক দলের সাথে আলাদা আলাদাভাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বৈঠকে বসেন।
ন্যাপ-ভাসানীর নেতৃত্বে দেন দলটির চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম।
আমজনতার দলের নেতৃত্ব ছিলেন দলটির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল মশিউজ্জামান এবং বাংলাদেশ পিপলস পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নাজমা আখতার।
নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের অগ্রদূত ও খ্যাতিমান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন একটি রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। দলটির নাম রাখা হয়েছে ‘জনতার পার্টি বাংলাদেশ’। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টায় রাজধানীর শাহবাগে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের রূপসী বাংলা গ্র্যান্ড বলরুমে (নিচতলা) এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দলটির আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দেওয়া হয়।
দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘গড়ব মোরা ইনসাফের দেশ’- এ স্লোগানকে সামনে রেখে রাজনীতির মাঠে যাত্রা শুরু করেছে ‘জনতার পার্টি বাংলাদেশ’। দলটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন ইলিয়াস কাঞ্চন এবং মহাসচিবের দায়িত্বে আছেন বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ।
অনুষ্ঠানে দলের নাম ও ইশতেহার পাঠ করেন শওকত মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, প্রতিটি গণঅভ্যুত্থান, বিপ্লব ও আন্দোলনের পর সংগ্রামী চেতনায় নতুন রাজনৈতিক দলের জন্ম হয়েছে। তিনি মনে করেন, রাষ্ট্রকে একাত্তরের ও ২০২৪ সালের গণজাগরণের চেতনায় পুনর্গঠন করতে হলে নতুন রাজনৈতিক দলের আবির্ভাব সময়ের দাবি। এ প্রেক্ষাপটে সব ধরনের বৈষম্য, ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে, জনকল্যাণ, ইনসাফ ও সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে এবং গর্বিত জাতীয়তাবোধ দৃঢ় করতে তারা এ নতুন দল গঠনের ঘোষণা দিচ্ছেন।’
অনুষ্ঠানে দলের ২৭ সদস্যের অ্যাডহক কমিটি ঘোষণা করেন ইলিয়াস কাঞ্চন, যিনি ‘নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)’ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান। ঘোষিত কমিটির তথ্য অনুযায়ী, ইলিয়াস কাঞ্চন চেয়ারম্যান এবং গোলাম সারোয়ার মিলন নির্বাহী চেয়ারম্যান ও মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন রফিকুল হক হাফিজ, ওয়ালিউর রহমান খান, রেহানা সালাম, মো. আবদুল্লাহ, এম এ ইউসুফ এবং নির্মল চক্রবর্তী। মহাসচিব শওকত মাহমুদ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এম আসাদুজ্জামান। যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন এ বি এম রফিকুল হক তালুকদার রাজা, আল আমিন রাজু ও নাজমুল আহসান।
সমন্বয়কারীর দায়িত্বে রয়েছেন নুরুল কাদের সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক মুরাদ আহমেদ, প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক গুলজার হোসেন এবং প্রচার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন হাসিবুর রেজা কল্লোল।
দলটির সম্মানিত সদস্য হিসেবে রয়েছেন মেজর (অব.) ইমরান এবং কর্নেল (অব.) সাব্বির। উপদেষ্টা পরিষদে রয়েছেন শাহ মো. আবু জাফর, মেজর (অব.) মুজিব, ইকবাল হোসেন মাহমুদ, ডা. ফরহাদ হোসেন মাহবুব, জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, আউয়াল ঠাকুর, তৌহিদা ফারুকী ও মামুনুর রশীদ।
নতুন দল গঠনের ঘোষণার আগেই ইলিয়াস কাঞ্চনের কাছে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন ‘জনতার বাংলাদেশ পার্টি’র চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম সবুজ খান। গতকাল বৃহস্পতিবার পাঠানো ওই নোটিশে উল্লেখ করা হয়, ১৩ মার্চ জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ‘জনতার বাংলাদেশ পার্টি’র আত্মপ্রকাশ করা হয়। এরপর ২০ এপ্রিল দলের নিবন্ধনের জন্য জাতীয় নির্বাচন কমিশনে কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। তবে মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারা যায়, ‘জনতার পার্টি বাংলাদেশ’ নামে একটি নতুন দল গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ইলিয়াস কাঞ্চন। এতে ‘জনতার বাংলাদেশ পার্টি’ ও ‘জনতার পার্টি বাংলাদেশ’ নাম দুটি প্রায় একই হওয়ায় সারা দেশে দলটির নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। তারা হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। এতে দলটির জন্য ক্ষতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে এবং গণতান্ত্রিক চর্চার সৌন্দর্য বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
নোটিশে আরও উল্লেখ করা হয়, ইতোমধ্যে ‘জনতা’ শব্দ ব্যবহার করে যেসব রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করেছে, তার মধ্যে রয়েছে ‘জনতার বাংলাদেশ পার্টি’, ‘জাতীয় জনতা পার্টি’ ইত্যাদি। নামের এই সাদৃশ্য সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে জনসচেতনতা তৈরিতে সক্রিয় ভূমিকা রেখে আসছেন ইলিয়াস কাঞ্চন। ১৯৯৩ সালে এক সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চন নিহত হওয়ার পর থেকেই তিনি ‘নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)’ আন্দোলনের মাধ্যমে এ ইস্যুতে দেশজুড়ে জনমত গঠনে কাজ করে আসছেন। বিভিন্ন সময় তাকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হলেও এবারই তিনি প্রথমবারের মতো সরাসরি রাজনীতির মাঠে নামলেন।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন দল গঠনের প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাড়ে ছয় মাসে অন্তত ১৬টি নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করেছে। সে ধারাবাহিকতায় এবার নতুন দল গঠনের মাধ্যমে যুক্ত হলেন চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন।
দেশের রাজনৈতিক দলগুলো সময়ের বিবেচনায় আগে সংস্কার নাকি আগে নির্বাচন এই প্রতিযোগিতায় নেমেছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম।
তিনি বলেন, আপনারা একটি কথা মাথায় ঢুকিয়ে রাখুন। সংস্কার নাকি নির্বাচন এই খেলা বাদ দিয়ে সবার আগে হতে হবে হত্যাকাণ্ডের বিচার। পিলখানা, শাপলা ও জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের অন্য কোন কিছুর নাম নেওয়া প্রাসঙ্গিক হতে পারে না।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে অনুষ্ঠিত শহীদি সমাবেশে বক্তব্যে এই কথা বলেন তিনি।
ইনকিলাব মঞ্চ এই সমাবেশের আয়োজন করেন।
সারজিস আলম বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে বলবো, এই জেনারেশনকে ভয় করুন। যদি এই জেনারেশনের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে যদি তাদের ইমোশন নিয়ে খেলেন তাহলে তারা কাউকে টেনে নামাতে পারে। কুয়েটের ভিসিই তার প্রমাণ।
সারজিস বলেন, আগে বাংলাদেশের মানুষ তাকিয়ে থাকতো কখন যুক্তরাষ্ট্র স্যাংশন দিবে, কখন হাসিনা মারা যাবে বা কখন নতুন নির্বাচন হবে। এরপর তারা মাঠে নামার প্রস্তুতি নিতো। আর যখন ছাত্র জনতা হাসিনাকে বিদায় করেছে সেই হাসিনার খুনের বিচার হওয়ার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ অন্য কোন কিছুর নাম নেওয়া এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মুখে মানায় না।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করার জন্য বিভিন্ন মহল নানা কারণ দেখাচ্ছে ও পায়তারা করছে বলেও অভিযোগ করেন সারজিস।
বলেন, এই মহল আমাদেরকে শোনায় বহির্বিশ্বে তাদের ইমেজ ক্ষুন্ন হতে পারে। এই স্টেক হোল্ডার ও বিভিন্ন মহলকে আমরা বলতে চাই, বিগত ১৬ বছরে যখন পিলখানা, শাপলা হত্যাকাণ্ড আর সর্বশেষ জুলাই হত্যাকাণ্ড হয়েছে তখন এই বহির্বিশ্বে কোথায় ছিল? তারা আমাদেরকে পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গি দেখায়। সেই পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কোথায় ছিল, যখন হেলিকপ্টার থেকে ছোট ভাইদের হত্যা করা হয়েছে।
সারজিস বলেন, এই ভারত বাংলাদেশে অনেকগুলো খুনের হুকুমদাতা। এই ভারত আশ্রয় দিয়েছে খুনি শেখ হাসিনাকে। শেখ হাসিনাকে ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে পারে না। খাতা-কলমের সম্পর্ক জনগণের সম্পর্ক এক নয়।
ভারতকে উদ্দেশ্য করে সারজিস বলেন, ভারত যদি বাংলাদেশের সাথে প্রতিবেশীর সম্পর্ক দেখতে চায় তাহলে যেসব খুনিকে তারা আশ্রয় দিয়েছে তাদেরকে বাংলাদেশে পাঠাতে হবে।
বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশে সংস্কার করে আসছে বলে মন্তব্য করেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল বৃহস্পতিবার দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলায় বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক কমিটির উদ্যোগে ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তারেক রহমান বলেন, জনগণের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালনে বিএনপি বদ্ধপরিকর। শুধু ঢাকায় নয়, দলের ঘোষিত ৩১ দফা নিয়ে প্রান্তিক পর্যায়ে কাজ করছে বিএনপি।
বিএনপি মানুষের আস্থা ধরে রাখতে দীর্ঘ ত্যাগ স্বীকার করেছে উল্লেখ করে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, নিজেদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকবে, কিন্তু ঐক্যবদ্ধভাবে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। কোনোভাবে যেন এ দেশের মানুষের ভোটের ও গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জনগণের ভোটের আর রাজনৈতিক অধিকার বাধাগ্রস্ত হলে সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে।
তারেক রহমান বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বিরোধী দলগুলোর ত্যাগকে বৃথা যেতে দেওয়া হবে না। আমাদের সফলতা অর্জন করতে হলে এখনো অনেক পরিশ্রম করতে হবে। যেকোনো মূল্যে এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
দলের ৩১ দফা প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে দিতে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, এই ৩১ দফা জনগণের কাছে পৌঁছতে পারলেই দলের প্রতিশ্রুতি পূরণ করা যাবে।
রাজনীতিকে টিকিয়ে রাখতে হলে জনগণ ছাড়া কোনো উপায় নেই বলেও মন্তব্য করেন তারেক রহমান। তিনি আরও বলেন, আমরা জুলুম করব না, প্রতিশোধ নেব না। আমরা প্রতিশোধ নিতে চাই ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে। আমরা দেশের জনগণের কাছে রাষ্ট্রের আগামী কাঠামো তুলে ধরব। জনগণ যাতে আগামী দিনে বিএনপির ওপর আস্থা রাখতে পারে। তাই জনগণের আস্থা ধরে রাখতে প্রতিটি বিএনপি নেতা-কর্মীকে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষিত বেকারদের জন্য ভাতা প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ছাড়া কৃষিকে আধুনিকায়ন, কৃষকদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হবে।
তারেক রহমান আরও বলেন, ভোট যদি আপনার পক্ষে আনতে হয় তাহলে আপনাকে জনগণের কাছে যেতে হবে, আপনার সংস্কার যদি চলমান রাখতে হয়, সেটিকে বাস্তবায়ন করতে হয়, তাহলে আপনাকে জনগণের কাছে যেতে হবে। জনগণ ছাড়া আপনাদের কোনো বিকল্প নেই। বিএনপি আজ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, বাংলাদেশে যেকোনো মূলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে হবে, যেকোনো মূল্যে মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
বিগত সরকারের বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিগত ফ্যাসিস্টের আমলে দেশের বিচার ব্যবস্থা, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থা সব ধ্বংস হয়েছে। বিষয়টি অনেকটাই ডায়াবেটিসের মতো।