আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের’ ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে’ এমন বক্তব্যে হতাশা প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘তার (প্রধান উপদেষ্টার) বক্তব্যে আমরা একেবারেই সন্তুষ্ট নই।’
আজ বুধবার মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে বিএনপির সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গিয়ে অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে বের হওয়ার পর তিনি এ হতাশা ব্যক্ত করেন। বিএনপির মিডিয়া উইং থেকে জানানো হয়, বৈঠকে দলটির পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টাকে একটি চিঠিও দেয়া হয়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা সুনির্দিষ্ট করে নির্বাচনের ডেটলাইন দেননি। তিনি বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে তিনি নির্বাচন শেষ করতে চান। উনি ডিসেম্বর থেকে জুন বলেছেন, উনি বলেননি এটা ডিসেম্বরে হবে। আমরা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি যে, আমাদের কাটঅফ টাইম ইজ ডিসেম্বর। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন যদি না হয়, তাহলে দেশে যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং সামাজিক পরিস্থিতি, সেটা আরও খারাপের দিকে যাবে। সেটা তখন নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে।এ সময় ডিসেম্বরে নির্বাচন না হলে বিএনপি কী করবে-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে দলটির মহাসচিব বলেন, দলের মধ্যে এবং মিত্র দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের আলোচনার প্রধান বিষয় ছিলো নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ নিয়ে। সে বিষয়ে কথা বলেছি। আর বলেছি যে, যে পরিস্থিতি আছে এবং দেশের যে অবস্থা, তাতে করে আমরা বিশ্বাস করি এখানে দ্রুত একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে।
তিনি উল্লেখ করেন, যে সংস্কার কমিশনগুলো করা হয়েছে, সেগুলোতে আমরা সম্পূর্ণ সহযোগিতা করছি। কয়েকদিন আগে সংস্কার কমিশনের কাছে আমাদের মতামতগুলো দিয়েছি। আগামীকালও আমাদের সঙ্গে বৈঠক আছে। সবগুলো দল যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হবে, সেগুলো নিয়ে আমরা একটা চার্টার করতে রাজি আছি। তারপরে আমরা নির্বাচনের দিকে চলে যেতে পারি। বাকি যেসব সংস্কারে আমরা একমত হব, সেটা আমরা অবশ্যই আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচিত হয়ে আসবেন, তারা সেগুলো বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নেবেন। এটাই ছিল আমাদের (বিএনপির) মূল কথা।
এ বৈঠকের জন্য বেলা সোয় ১২টায় ‘যমুনা’য় পৌঁছায় বিএনপি মহাসচিবসহ দলের স্থায়ী কমিটির ৭ সদস্য। পৌনে দুই ঘণ্টার বৈঠকে নির্বাচনী রোডম্যাপ, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার, শেখ হাসিনার বিচার প্রক্রিয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকে বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহ উদ্দিন আহমেদ ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
সরকারের পক্ষে অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ছিলেন উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে।
চিঠিতে যা বলা হয়েছে
চিঠিতে বিএনপি উল্লেখ করে, মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে গণতন্ত্র ও মানবিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রতিটি লড়াইয়ের নেতৃত্বদানকারী কিংবা গর্বিত সক্রিয় অংশীদার হিসেবে বিএনপি তার অবস্থান থেকে প্রতিটি লড়াইয়ের সুফল জনগণের জন্য কার্যকর করার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে এবং করছে। সেই লক্ষ্যেই এবারও জুলাই-আগস্টের ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানের সুফল জনগণের কল্যাণে এবং তাদের আকাঙ্ক্ষা পূরণে নিবেদিত করার টেকসই ক্ষেত্র প্রস্তুতের লক্ষ্যে দেশের সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপরিচালনার ভার আপনার নেতৃত্বে অন্তর্র্বতী সরকার প্রতিষ্ঠায় আমরা সমর্থন জানিয়েছি এবং দায়িত্ব পালনে আপনাকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি এবং সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি। আপনার ও আপনার নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্র্বতী সরকারের কাছে প্রায় দেড় যুগ ধরে গণতান্ত্রিক অধিকারহীন জনগণের স্বাভাবিক প্রত্যাশা ছিল। যত দ্রুত সম্ভব ফ্যাসিবাদী দল, তাদের দলীয় সরকার ও তার দোসরদের আইনের আওতায় এনে তাদের গণবিরোধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার, দুর্নীতি-অনাচারের মাধ্যমে দেশের সম্পদ লুণ্ঠনকারীদের বিচার ও পাচার করা অর্থ পুনরুদ্ধারের, ফ্যাসিস্ট সরকারের হাতে নিহত ও আহতদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ, সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসন এবং দ্রব্যমূল্য ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পতিত সরকারের সব অপচক্র ও সিন্ডিকেট ধ্বংস করার পাশাপাশি যত দ্রুত সম্ভব দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া, যাতে তারা সম্মিলিতভাবে দেশে সুষ্ঠু রাজনীতি, উন্নত অর্থনীতি এবং জনগণের মানবিক অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে পারে।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘বিএনপি মনে করে যে জনগণের স্বার্থরক্ষা ও স্থায়ী কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য গণতান্ত্রিক শাসনের বিকল্প নেই। আর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সংস্কার একটি সদা চলমান অনিবার্য প্রক্রিয়া। বিগত ফ্যাসিবাদী পতিত সরকারের মতো “আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র” যেমন জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের অপকৌশল ছিল, এখনো কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর “আগে সংস্কার পরে গণতন্ত্র” তেমনই ভ্রান্ত কূটতর্ক। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী ও কার্যকর করার মাধ্যমেই সবার জন্য উন্নয়ন সম্ভব এবং এ উদ্দেশ্য পূরণের জন্য রাষ্ট্রব্যবস্থা, আইন, নীতি, বিধানের সংস্কার অপরিহার্য। এর সবগুলো পরস্পরের পরিপূরক, কোনোটাই কোনোটার বিকল্প নয়; পরস্পর সাংঘর্ষিকও নয়।’
এতে আরও বলা হয়, আজ যারা সংস্কারের কথা বেশি বেশি বলে এবং বিএনপিকে সংস্কারের বিপক্ষের শক্তি বলে চিহ্নিত করার অপচেষ্টা করছে, তাদের ভিশন-২০৩০ এবং রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা কর্মসূচিতে যেসব সংস্কারের প্রস্তাব করা হয়েছে ও যেসব পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করা হয়েছে, তার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়, গোষ্ঠীস্বার্থে এবং রাজনীতি কিংবা রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে হেয় ও অপ্রাসঙ্গিক করার অপচেষ্টায় অযথা সময়ক্ষেপণ করে জনগণকে তাদের ভোটাধিকার তথা রাষ্ট্রের মালিকানা প্রতিষ্ঠার অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখার কৌশলকে বিএনপি সমর্থন করে না। দেশ ও জনগণের স্বার্থে জনগণের সম্মতি নিয়ে ৩১ দফায় বর্ণিত এবং ঐকমত্যে গৃহীত সব সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বিএনপি সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করে। চিঠিতে আরও বলা হয়, রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী ও তার সরকারের বক্তব্য ও মতামতে সমন্বয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি এর কিছু ব্যতিক্রম আমাদের উদ্বিগ্ন করেছে। আপনার সরকারের কিছু ব্যক্তি এবং আপনাকে সমর্থনকারী বলে দাবিদার কিছু ব্যক্তি ও সংগঠনের প্রকাশ্য বক্তব্য ও অবস্থান জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। আশা করি আপনি এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।’
বিএনপি বলে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য যেসব আইন, বিধি, বিধান সংস্কারে এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে যেসব পরিবর্তন জরুরি, তা সম্পন্ন করার মাধ্যমে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্ভব বলে আমরা মনে করি। সে লক্ষ্যে অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আমরা আপনার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা এনআইডি প্রকল্প নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখার এবং নির্বাচনি এলাকা পুনর্র্নিধারণের বিষয়ে আইনি জটিলতা দ্রুত নিরসনেরও প্রস্তাব করছি। একই সঙ্গে পতিত ফ্যাসিবাদী দল ও সেই দলীয় সরকারের সঙ্গে যারাই যুক্ত ছিল, তাদের বিচার দ্রুত করে রাজনীতির ময়দানকে জঞ্জালমুক্ত করার; জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের ক্ষতিপূরণ ও সুচিকিৎসা দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার এবং দ্রব্যমূল্য ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রমে গতিশীলতা আনার অধিকতর উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি। একইসঙ্গে ১/১১-এর অবৈধ সরকার এবং পতিত ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে করা সব মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা অনতিবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি পুনর্ব্যক্ত করছি।
দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তাঁর বিস্তারিত কর্মসূচি তুলে ধরেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর তারেক রহমানকে স্বাগত জানাবেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। বিমানবন্দর থেকে তিনি সরাসরি পূর্বাচলের ৩০০ ফিট এলাকায় আয়োজিত বিশাল গণসংবর্ধনায় যোগ দেবেন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষ করে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে যাবেন তাঁর চিকিৎসাধীন মা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে। সেখান থেকে তিনি গুলশানে মায়ের বাসভবনেই অবস্থান করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, সফরের দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ২৬ ডিসেম্বর (শুক্রবার) বাদ জুম্মা তারেক রহমান শেরেবাংলা নগরে তাঁর পিতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত করবেন। এরপর তিনি সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের অমর শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। পরের দিন ২৭ ডিসেম্বর (শনিবার) সকালে তিনি ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য নিবন্ধন সম্পন্ন করবেন। ওই দিনই তাঁর রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে গিয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত যোদ্ধাদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেওয়ার এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম শহীদ শরীফ ওসমান বিন হাদির কবর জিয়ারত করার কর্মসূচি রয়েছে।
সালাহউদ্দিন আহমদ তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন যে, তারেক রহমানের এই ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে বিপুল জনসমাগমের কারণে রাজধানীতে সাধারণ মানুষের কিছুটা চলাচলে বিঘ্ন বা জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হতে পারে। এই অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যার জন্য তিনি দলের পক্ষ থেকে অগ্রিম দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা চেয়েছেন। দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগ পর প্রিয় নেতার ফেরার এই মুহূর্তটিকে স্মরণীয় করে রাখতে এবং প্রতিটি কর্মসূচি সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন করতে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনগুলো বর্তমানে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তারেক রহমানের এই আগমণ ও পরবর্তী কর্মসূচিগুলো দেশের আগামীর রাজনীতিতে এক সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন অভিযোগ করেছেন যে, দেশের শীর্ষ গণমাধ্যমগুলোতে হামলা চালিয়ে নির্বাচন বানচালের এক গভীর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার সৈকত সরকারি কলেজ মাঠে আয়োজিত ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ জিয়া স্মৃতি ক্রিকেট প্রীতি ম্যাচ’-এর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
নাসির উদ্দিন বলেন, জুলাই যোদ্ধা শহীদ শরীফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের পর একটি বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারের মতো জাতীয় সংবাদমাধ্যমে হামলা চালিয়েছে। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করা এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা। তবে তিনি সাফ জানিয়ে দেন যে, গণমাধ্যমে হামলা চালিয়ে বা ভয় দেখিয়ে সত্যের কণ্ঠরোধ করা কখনো সম্ভব নয়। তিনি আরও মনে করিয়ে দেন যে, ওসমান হাদি নিজেই বলেছিলেন গণমাধ্যমে হামলা কোনো সমস্যার সমাধান হতে পারে না।
অনুষ্ঠানে তিনি সরকারের প্রশাসনের সমালোচনা করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি জানান। পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীকেও তাঁর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান নাসির উদ্দিন। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রশাসনের আরও কঠোর ও নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের প্রয়োজনীয়তার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
আগামী ২৫ ডিসেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, এটি বাংলাদেশের রাজনীতির এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এই দিনটিকে সফল করতে এবং প্রিয় নেতাকে বরণ করে নিতে তিনি ছাত্রদলের সব স্তরের নেতাকর্মীকে বড় জমায়েত নিয়ে ঢাকায় উপস্থিত থাকার উদাত্ত আহ্বান জানান।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে জেলা বিএনপি নেতা এনায়েত উল্যাহ বাবুলসহ ছাত্রদলের স্থানীয় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে অনুষ্ঠিত প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচে সদর উপজেলা দলকে পরাজিত করে সুবর্ণচর উপজেলা দল জয়লাভ করে। মূলত খেলাধুলার মাধ্যমে শহীদ জিয়ার স্মৃতিকে অম্লান রাখা এবং তরুণ প্রজন্মের মধ্যে দেশপ্রেম ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যেই এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
দীর্ঘ নির্বাসন শেষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরা উপলক্ষে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গ্রহণ করা হয়েছে অভূতপূর্ব ও নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এবং বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মিলে পুরো বিমানবন্দর এলাকাকে একটি নিশ্ছিদ্র দুর্গে পরিণত করার পরিকল্পনা নিয়েছে। নিরাপত্তার কোনো ফাঁকফোকর না রাখতে বিমানবন্দর ও এর আশপাশের এলাকায় কয়েক স্তরের কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হচ্ছে।
বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এস এম রাগিব সামাদ জানিয়েছেন, এই বিশেষ নিরাপত্তা অভিযানে কয়েক হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবেন। এর মধ্যে বিমানবাহিনী, সেনাবাহিনী, এভসেক, এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, র্যাব, আনসার এবং ডিএমপির সদস্যরা সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। পোশাকধারী সদস্যদের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারিও কয়েক গুণ বাড়ানো হয়েছে। বুধবার বিকেল থেকেই এই বিশেষ মোতায়েন কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। বিমানবন্দরের গোলচত্বর থেকে শুরু করে প্রতিটি প্রবেশ ও বাহির পথে কুইক রেসপন্স টিম ও ডগ স্কোয়াড সার্বক্ষণিক টহল দেবে।
নিরাপত্তা ও অপারেশনাল শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিমানবন্দরে যাত্রী ছাড়া অন্য যেকোনো ভিজিটর বা সহযাত্রীর প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নির্ধারিত ফ্লাইটের যাত্রীদেরও অন্তত পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা বলয় পেরিয়ে তবেই ভেতরে ঢুকতে হবে। শুধু তাই নয়, বিমানবন্দরে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের চলাফেরা এবং বৈধ কার্ড প্রদর্শনের ক্ষেত্রেও কঠোর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে কাউকেই অকারণে চলাফেরা না করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিমানবন্দর ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় ড্রোন উড্ডয়নও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গত ১৯ ডিসেম্বর শহীদ শরিফ ওসমান হাদির মরদেহ গ্রহণের সময় কিছু অননুমোদিত ড্রোন উড্ডয়নের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তা এবং নিরাপদ বিমান চলাচলে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কায় ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ সাধারণ মানুষের জন্য এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। সব মিলিয়ে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে এবং বিমানবন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম সচল রাখতে প্রশাসন এখন সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
গণতন্ত্র উত্তরণ প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে একটি মহল ভয়ঙ্করভাবে চক্রান্ত করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ এখন একটা ট্রাজিশন পিরিয়ডে আছে। একটা ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট শাসন যে শাসন আমাদের মূল্যবোধগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছিল, আমাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছিল, আমাদের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। সেই ফ্যাসিস্ট শাসন থেকে বেরিয়ে এসে আমরা এখন একটা নির্বাচনের দিকে যাচ্ছি এবং নির্বাচনের পরে একটা নির্বাচিত সরকার, নির্বাচিত পার্লামেন্ট আমাদের দেশকে আমাদের জাতিকে সঠিক পথ এগিয়ে নিয়ে যাবে এ প্রত্যাশা আমরা সবাই করছি। কিন্তু এর মধ্যেই দেখা যাচ্ছে যে কিছুসংখ্যক ব্যক্তি, মহল এই ট্রাজিশনালকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য ভয়ঙ্করভাবে চক্রান্ত করছে। মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি আজকে আবারো এই চক্রান্তের ফলে নিহত শহীদ হয়ে যাওয়া ওসমান বিন হাদির আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং পরম করুণাময় আল্লাহ তালার কাছে এই দোয়া চাইছি যে, আল্লাহতালা তাকে যেন বেহেশতে সর্বশ্রেষ্ঠ স্থানে নিয়ে যান।
মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা দেখেছেন যে, এই ট্রাডিশনাল পিরিয়ডে সরকারের ব্যর্থতার কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যথেষ্ট অবনতি হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা ছিল যে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের যে সরকার, সেই সরকার অন্তত এই কয়েকটা মাস তারা তাদের যোগ্যতার পরিচয় দেবেন এবং দক্ষতার সঙ্গে দেশকে পরিচালনা করবেন।
তিনি বলেন, আমি ধন্যবাদ জানাই যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে, তারা তাদের কথা রেখেছেন যে, ২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা দিয়েছেন এবং নির্বাচন কমিশন সেটাই করছেন। নির্বাচনের যে পরিবেশ তৈরি করা এই পরিবেশ তৈরি করার জন্য তাদেরকে আরও সচেতন এবং ইতিবাচক ভূমিকা পালন করা দরকার, আরও কার্যকরী ভূমিকা পালন করা দরকার এবং এই বিষয়গুলোতে তাদের ফোকাস আরও বেশি দেবেন এবং তারা আরও ভালোভাবে নির্বাচন যেন অত্যন্ত সুষ্ঠু পরিবেশে হয় সেই বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রাখবেন এটা আমরা আশা করি।
ফখরুল বলেন, শরিকদের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা শেষ হয়ে গেছে। শরিকদের সঙ্গে আমাদের ভালোবাসা আরও গভীর হয়েছে। এ বিষয়ে আপনারা যথাসময় জানতে পারবেন, যথাসময় তা ঘোষণা করা হবে।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ জমিয়ত জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের ইসলামী দলগুলোর মধ্যে অন্যতম শীর্ষ স্থানীয় দল, তাদের সঙ্গে আমাদের একটি নির্বাচনী সমঝোতা হয়েছে। আমাদের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতার ভিত্তিতে যে সমস্ত আসন তাদের সাথে আমাদের সমঝোতা হয়েছে ওই আসনে বিএনপির কোনো প্রার্থী থাকবে না। সারা বাংলাদেশে অন্যান্য আসনে ওনাদের কোন প্রার্থী থাকবে না। আমরা সেই সমযোতার মধ্যে উপনীত হয়েছি।
তিনি জানান, আগামী দিনের গণতান্ত্রিক উত্তরণে সম্মিলিতভাবে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য আরও যাদের সঙ্গে আসন সমঝোতা হয়েছে বিএনপির তা পরবর্তীতে জানানো হবে।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা সংবিধানের প্রস্তাবনায় মহান আল্লাহর ওপর আস্থা এবং বিশ্বাস স্থাপন করব, যেটা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান পঞ্চম সংশোধনের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। কোরআন সুন্নাহ বিরোধী কোনো আইন আমরা করবো না, সেটা আমরা অনেক আগেই ঘোষণা দিয়েছি। কওমি লাইনের মাদ্রাসা থেকে যারা পাস করবেন, তাদের সর্বোচ্চ ডিগ্রি আছে সেই লাইনে এবং সেই হিসেবে আমরা কিছুদিন আগে আমাদের কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করেছি, সামনের নির্বাচনী ইশতেহারে থাকবে যে, ইমাম-খতিব-মুয়াজ্জিন তাদের জন্য আমরা রাষ্ট্রীয় ভাতার ব্যবস্থা করব, উৎসব ভাতার ব্যবস্থা করব এবং যেটা একটা ট্রাস্ট আছে সেই ট্রাস্টকে আরও শক্তিশালী করার জন্য আমরা ব্যবস্থা নেব এবং বিভিন্ন স্কুল কলেজ মাদ্রাসা ধর্মশিক্ষক হিসেবে বিধি মোতাবেক নিয়োগের ক্ষেত্রে তাদের অগ্রাধিকার থাকবে অথবা বিবেচনা করা হবে।
দীর্ঘ ১৮ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশের মাটিতে পা রাখছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাঁর এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের খবরে সারাদেশের মতো পৈতৃক ভূমি বগুড়াতেও বইছে আনন্দের ফল্গুধারা। বিশেষ করে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মভূমি হওয়ায় বগুড়ার মানুষের কাছে এই অনুভূতির গভীরতা অনেক বেশি। গত ১৭ বছরের রাজনৈতিক বঞ্চনা, থমকে থাকা উন্নয়ন আর দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে ‘ঘরের ছেলে’ ঘরে ফিরছে—এমন আবেগে ভাসছেন জেলার সর্বস্তরের মানুষ।
তারেক রহমানের আগমনকে কেন্দ্র করে তাঁর পূর্বপুরুষদের ভিটা গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ি গ্রামসহ পুরো জেলায় উৎসবের প্রস্তুতি চলছে। এই বাগবাড়ি গ্রাম থেকেই ৪৩ বছর আগে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এলাকার নবীন-প্রবীণ সবার প্রত্যাশা, দেশে ফেরার পর তারেক রহমান অবশ্যই তাঁর পৈতৃক ভিটায় আত্মীয়-স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সান্নিধ্যে আসবেন। গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা আছির উদ্দিনের মতে, তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন সাধারণ মানুষের জন্য মঙ্গলের বার্তা নিয়ে আসবে। অন্যদিকে তরুণ প্রজন্ম মনে করছে, তিনি দেশে ফিরে হাল ধরলে এলাকার মুখ উজ্জ্বল হবে।
স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বগুড়ার মানুষের ওপর নানামুখী চাপ থাকলেও ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর তারা এখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন। তারেক রহমানকে বরণ করে নিতে বগুড়া থেকে প্রায় ১ হাজার গাড়ির একটি বিশাল বহর নিয়ে নেতাকর্মীরা ঢাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। গাবতলী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক নতুন জানান, তরুণ থেকে বৃদ্ধ, কৃষক থেকে শ্রমজীবী—সব শ্রেণি-পেশার মানুষ তাদের প্রিয় নেতাকে একনজর দেখতে মুখিয়ে আছেন। ঢাকার আনুষ্ঠানিকতা শেষে জানুয়ারি মাসের শুরুতেই তারেক রহমানের বগুড়া সফরের কথা রয়েছে, যেখানে তিনি তাঁর মায়ের আসন বগুড়া-৭ ও নিজের নির্বাচনি আসন বগুড়া-৬-এ জনসভা করতে পারেন।
বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশাহর মতে, পৈতৃক ভিটায় ফেরার মাধ্যমে তারেক রহমান তাঁর শৈশব ও কৈশোরের স্মৃতিবিজড়িত দিনগুলোর আনন্দ সবার সঙ্গে ভাগ করে নেবেন। উল্লেখ্য, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৬ (সদর) আসন থেকে প্রথমবারের মতো সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তারেক রহমান। তাঁর দেশে ফেরার রুট অনুযায়ী, তিনি প্রথমে সিলেটে অবতরণ করবেন এবং পরে ঢাকায় এসে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তাঁর মা বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে যাবেন। এরপর পূর্বাচলের সংবর্ধনা সভায় যোগ দেওয়ার মাধ্যমে তিনি তাঁর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের আনুষ্ঠানিক সূচনা করবেন, যার সাক্ষী হতে বগুড়ার হাজার হাজার নেতাকর্মী এখন ক্ষণগণনা করছেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দীর্ঘ ১৭ বছর পর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে আজ মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) রাজধানীতে একটি বড় ধরনের স্বাগত মিছিল করেছে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে এই মিছিলে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজের সাবেক ও বর্তমান ছাত্রদল নেতাসহ বিপুল সংখ্যক চিকিৎসক ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। মিছিলটি রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (পিজি হাসপাতাল) এলাকা থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ মোড় প্রদক্ষিণ করে মৎস্যভবনে গিয়ে শেষ হয়। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহসভাপতি ডা. তৌহিদুর রহমান আউয়ালের সভাপতিত্বে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে তারেক রহমানের আগমনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে।
মিছিল পরবর্তী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী বলেন, দীর্ঘ নির্বাসন শেষে তারেক রহমানের দেশে ফেরার খবরে সারা দেশে বর্তমানে আনন্দের বন্যা বইছে এবং লাখ লাখ মানুষ তাঁদের প্রিয় নেতাকে এক নজর দেখার জন্য ঢাকায় আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তারেক রহমানের ওপর চালানো অমানবিক নির্যাতনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, তৎকালীন মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকার এবং পরবর্তীতে শেখ হাসিনার শাসনামলে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে তাঁকে দেশ থেকে দূরে রাখা হয়েছিল। এমনকি চরম নিষ্ঠুরতার পরিচয় দিয়ে তাঁকে ছোট ভাইয়ের জানাজায় অংশ নিতে কিংবা অসুস্থ মায়ের পাশে দাঁড়াতেও দেওয়া হয়নি। জিয়া পরিবারকে ধ্বংস করার সব চক্রান্ত ব্যর্থ করে তারেক রহমান বীরের বেশে দেশে ফিরছেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তারেক রহমানের আগমনের দিনের কর্মসূচি সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে রিজভী বলেন, আগামী ২৫ ডিসেম্বর তিনি লন্ডন থেকে দেশে নামার পর বিমানবন্দর থেকে সরাসরি এভারকেয়ার হাসপাতালে যাবেন। পথিমধ্যে ৩০০ ফিট এলাকায় তিনি সমবেত জনতার উদ্দেশে একটি সংক্ষিপ্ত শুভেচ্ছা বক্তব্য দেবেন এবং এরপর তাঁর মাকে দেখে গুলশানের বাসভবনে ফিরবেন। এই ঐতিহাসিক মুহূর্তটিকে সুশৃঙ্খল রাখতে তিনি নেতাকর্মীদের প্রতি কঠোর নির্দেশনা দিয়ে বলেন, জনসমাগম যত বড়ই হোক না কেন, সবাইকে রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে প্রিয় নেতাকে শুভেচ্ছা জানাতে হবে। কোনোভাবেই যেন অরাজকতা বা যানজটের সৃষ্টি না হয়, সেদিকে বিশেষ নজর রাখতে তিনি নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
নিরাপত্তার বিষয়ে রিজভী আরও উল্লেখ করেন যে, তারেক রহমানের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের কাছে ইতিমধ্যে দাবি জানানো হয়েছে এবং প্রশাসন থেকে তাঁদের আশ্বস্ত করা হয়েছে। এর পাশাপাশি দলীয়ভাবেও নেতাকর্মীরা তাঁদের নেতার নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ সতর্ক ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবেন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর প্রিয় নেতার ফেরার এই দিনটিকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক স্মরণীয় অধ্যায় হিসেবে গড়ে তুলতে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো এখন চূড়ান্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে। মূলত শান্তি ও শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে এই বিশাল সংবর্ধনা সফল করাই এখন দলটির প্রধান লক্ষ্য।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক মিত্র জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশকে চারটি আসন ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই তথ্য নিশ্চিত করেন। আসন ভাগাভাগির এই সিদ্ধান্তের ফলে সিলেট-৫, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২, নীলফামারী-১ এবং নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির কোনো প্রার্থী থাকবে না।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সিলেট-৫ আসনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সভাপতি মাওলানা মোহাম্মদ উবায়দুল্লাহ ফারুক এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে দলটির সহসভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এ ছাড়া নীলফামারী-১ আসনে দলটির মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী এবং নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে কেন্দ্রীয় নেতা মুফতি মনির হোসেন কাসেমী জোটের পক্ষ থেকে লড়াই করবেন। সমঝোতা অনুযায়ী, এই চারটি আসন বাদে দেশের অন্য কোনো আসনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম তাদের প্রার্থী রাখবে না এবং এই চারজন প্রার্থী তাঁদের নিজস্ব দলীয় প্রতীক ‘খেজুরগাছ’ মার্কায় নির্বাচনে অংশ নেবেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচনী ঐক্য সুসংহত করার লক্ষ্যেই এই ছাড় দেওয়া হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ ছাড়াও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই আসন ভাগাভাগি আসন্ন নির্বাচনে দুই দলের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে। মূলত যেসব আসনে জমিয়তের শক্তিশালী জনভিত্তি রয়েছে, সেখানে তাঁদের সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমেই এই নির্বাচনী নীল নকশা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
বিএনপির ঢাকা-১১ আসনের মনোনীত প্রার্থী ড. এম এ কাইয়ুম বলেছেন, তারা এমন একটি সমাজ বিনির্মাণ করতে চান যেখানে ধর্ম, বর্ণ, গোত্র কিংবা ধনী-দরিদ্রের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। গত সোমবার (২২ ডিসেম্বর) নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি বা জেনজিদের (Gen-Z) সঙ্গে এক মিলনমেলায় অংশ নিয়ে তিনি এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি মনে করেন, একটি উন্নত রাষ্ট্রে নারী-পুরুষের সমান অধিকার থাকবে এবং প্রতিটি নাগরিক স্বাধীনভাবে বিচরণ করার সুযোগ পাবে। আইনের শাসন, মানবাধিকার এবং ভোটের অধিকার নিশ্চিত করাই হবে তাঁদের মূল লক্ষ্য।
মিলনমেলায় ড. কাইয়ুম বিএনপির ঐতিহাসিক ৩১ দফার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, একটি আধুনিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার রূপরেখা এখানে সুস্পষ্টভাবে দেওয়া হয়েছে। তিনি বিএনপির পূর্ববর্তী শাসনামলের সাফল্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, অতীতে মেয়েদের উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষার সুযোগ এবং ‘খাদ্যের বিনিময়ে শিক্ষা’ কর্মসূচি চালু করা হয়েছিল, যাতে অভাবের কারণে কোনো দরিদ্র শিশুর পড়াশোনা বন্ধ না হয়। দেশের প্রতিটি স্তরে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়াই ছিল তাঁদের প্রধান লক্ষ্য।
শিক্ষাব্যবস্থার আধুনিকায়ন প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে কেবল ধর্মীয় গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ না রেখে সেগুলোকে কারিগরি শিক্ষার আওতায় আনা হয়েছিল। এর ফলে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা দেশে ও বিদেশে সমানভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছিল। তিনি বিশ্বাস করেন, আগামীর বাংলাদেশেও মাদ্রাসা ও সাধারণ শিক্ষার সমন্বয় ঘটিয়ে একটি দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা হবে। তরুণ প্রজন্মের উৎসাহ ও দেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষাকে সম্মান জানিয়ে তিনি একটি মানবিক ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেন।
দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাঁর এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তন যেন নির্বিঘ্নে ও সফলভাবে সম্পন্ন হয়, সেই কামনায় নারায়ণগঞ্জে বিশেষ প্রার্থনা সভা করেছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা। গত সোমবার (২২ ডিসেম্বর) নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী মো. মাসুদুজ্জামান মাসুদের উদ্যোগে নগরীর নিতাইগঞ্জের বলদেব আখড়ায় এই প্রার্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে মহানগর পূজা উদযাপন ফ্রন্টের আহ্বায়ক অভয় কুমার রায় ও সদস্য সচিব কার্তিক ঘোষসহ জাগো হিন্দু পরিষদের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থেকে তারেক রহমানের দীর্ঘায়ু ও নিরাপদ পথচলার জন্য প্রার্থনা করেন।
একই দিনে তারেক রহমানের শুভ প্রত্যাবর্তন কামনায় মো. মাসুদুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন মসজিদ ও মাদ্রাসায় বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এই কর্মসূচিতে মসজিদের মুসল্লি, মাদ্রাসার এতিম শিশু, আলেম-ওলামা এবং সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ অংশ নিয়ে তারেক রহমানের সুস্থতা ও দেশের কল্যাণে মোনাজাত করেন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর নেতার প্রত্যাবর্তনের এই মুহূর্তকে ঘিরে নারায়ণগঞ্জজুড়ে বিএনপি নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মাঝে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। মূলত সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষের সম্মিলিত এই প্রার্থনা আসন্ন ২৫ ডিসেম্বরের ঐতিহাসিক আগমনকে কেন্দ্র করে এক বিশেষ রাজনৈতিক ও সামাজিক সম্প্রীতির বার্তা দিচ্ছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এখন শুধু সচেতন হলে চলবে না, সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।’
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে সম্পাদক পরিষদ আয়োজিত ‘মব ভায়োলেন্স’ বা সংঘবদ্ধ সহিংসতাবিরোধী এক প্রতিবাদ সভায় তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সংবাদপত্রের ওপর হামলা গণতন্ত্র ও জুলাই বিপ্লবের ওপর আঘাত। এখন শুধু সচেতন হলে চলবে না, সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। আমি জানি না আমরা এই মুহূর্তে কোন বাংলাদেশে আছি। সারাজীবন সংগ্রাম করেছি একটা স্বাধীন-সার্বভৌম গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য। আজ যে বাংলাদেশ দেখছি, এই বাংলাদেশের স্বপ্ন আমি কোনো দিন দেখিনি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজ ডেইলি স্টার বা প্রথম আলো নয়, আজ গণতন্ত্রের ওপর আঘাত এসেছে। আমার স্বাধীনভাবে চিন্তা করার যে অধিকার, আমার কথা বলার যে অধিকার, তার ওপরে আবার আঘাত এসেছে। জুলাই যুদ্ধের ওপরে আঘাত এসেছে। জুলাই যুদ্ধ ছিল এ দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার যুদ্ধ। আজ সেই জায়গায় আঘাত এসেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠন নয়, সব গণতান্ত্রিককামী মানুষের এখন এক হওয়ার সময় এসে গেছে। আমরা যারা অন্ধকার থেকে আলোতে আসতে চাই, বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থেই একটা স্বাধীন-সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চাই, তাদের এখন শুধু সচেতন হলে চলবে না, রুখে দাঁড়াতে হবে। এখন রুখে দাঁড়ানোর সময় এসে গেছে।’
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বিএনপি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসার সুযোগ পেলে রাজনৈতিক গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পাশাপাশি অর্থনৈতিক গণতন্ত্রায়ণ ও নিয়ন্ত্রণমুক্ত করণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, আমরা এতদিন রাজনৈতিক গণতন্ত্রের কথা বলেছি। এবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি অর্থনীতির সব স্তরে গণতন্ত্রায়ণ নিশ্চিত করব। এর মূল লক্ষ্য হলো জনগণের সব শ্রেণি-পেশাকে মূলধারার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত করা এবং মানুষের অর্থনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করা।
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম নগরীর একটি হোটেলে বিভাগীয় ব্যবসায়ী ফোরামের উদ্যোগে আয়োজিত ‘বাণিজ্য সংলাপ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (সাবেক) সভাপতি প্রকৌশলী আলী আহমেদ। বাণিজ্য সংলাপে চট্টগ্রাম বিভাগভুক্ত বিভিন্ন জেলার বিনিয়োগকারী, শীর্ষস্থানীয় উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতরা এবং বিপুল সংখ্যক নারী উদ্যোক্তা অংশগ্রহণ করেন।
সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বক্তব্য ও পরবর্তী প্রশ্নোত্তর পর্বে অতীত ও বর্তমান সরকারের সময়কালের অর্থনৈতিক চিত্র তুলে ধরেন এবং টেকসই প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনীতিকে গতিশীল করতে বিএনপির ভবিষ্যৎ নীতিকৌশল ব্যাখ্যা করেন।
তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতির প্রতিটি খাত অতিমাত্রায় নিয়ন্ত্রিত। বিএনপি ক্ষমতায় এলে ব্যবসা পরিচালনার সহজতা বাড়াতে ব্যাপক সংস্কার কর্মসূচির আওতায় অর্থনীতিতে নিয়ন্ত্রণমুক্ত করণ ও উদারীকরণ বাস্তবায়ন করা হবে। অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রিত ও রক্ষণশীল অর্থনৈতিক সংস্কৃতি সরকারি-বেসরকারি খাতের কিছু অসাধু চক্রকে লাভবান করছে, যার ফলে ব্যবসার ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। আমাদের আন্তরিক উদ্দেশ্য হলো- দুর্নীতিবাজ গোষ্ঠীর ক্ষমতা ভেঙে দিয়ে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের হাতে অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ তুলে দেওয়া। রপ্তানি ও জিডিপির অনুপাতের বিদ্যমান ভারসাম্যহীনতা দূর করে অর্থনীতির প্রকৃত সক্ষমতা কাজে লাগাতে বিএনপি একটি সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়ন করেছে।
অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণমুক্ত করণের জন্য আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থেকে মুক্তি এবং রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় যৌক্তিক স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের সক্ষমতা ও পেশাদারিত্ব বাড়ানো ছাড়া উদার অর্থনীতির সুফল পাওয়া সম্ভব নয়। আমলাতন্ত্র ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ কমাতে স্বয়ংক্রিয় (অটোমেশন) ব্যবস্থা চালু করা হবে, যা বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নে সহায়ক হবে।
গণসংহতি আন্দোলন-জিএসএর প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার পথে এগোবে। এই অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন অপরিহার্য জাতীয় লক্ষ্য। যারা এই ৩ লক্ষ্য বানচালের চেষ্টা করবে, জনগণ জুলাইয়ের আদর্শে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের প্রতিহত করবে।
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জুলাই বিপ্লবের অগ্রনায়ক শহীদ শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ড, গণমাধ্যম ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা, নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরের ওপর হামলা, ময়মনসিংহে শ্রমিক দীপুচন্দ্র দাসকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা ও লক্ষ্মীপুরে বিএনপি নেতা বেলাল হোসেনের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে শিশু আয়েশা আক্তারকে পুড়িয়ে হত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে গণসংহতি আন্দোলন-জিএসএর উদ্যোগে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
জোনায়েদ সাকি বলেন, ওসমান হাদিকে যারা হত্যা করেছে তাদের অবশ্যই গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। জুলাই গণঅভ্যুত্থান চলাকালে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে নির্বাচন বানচালের যে তৎপরতা চলছে, সরকারকে তার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রথম আলো, ডেইলি স্টারসহ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ব্যক্তি বিশেষের ওপর করা হামলার ঘটনাগুলোও বিচারের আওতায় আনতে হবে।
তিনি অভিযোগ করেন, অভ্যুত্থানের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা সরকারকে অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব ও অংশগ্রহণকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তি পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়ে পালিয়ে যেতে পারছে, অথচ রাষ্ট্রযন্ত্র ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনো হত্যাকারীদের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য দিতে পারছে না।
সমাবেশে জিএসএর নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল বলেন, খুলনায় এনসিপির শ্রমিক সংগঠন জাতীয় শ্রমিক শক্তির সংগঠক মোতালেব শিকদারকে গুলি করার ঘটনায় জড়িতদের আজকের (সোমবার (২২ ডিসেম্বর) মধ্যেই গ্রেপ্তার করতে হবে। জুলাই আন্দোলনের মধ্য দিয়েই এই অন্তর্বর্তী সরকার সমর্থন পেয়েছিল। কাজেই সরকারের ব্যর্থতার দায় জনগণ নেবে না, এর জবাব সরকারকেই দিতে হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনা সভা সফল করার লক্ষ্যে প্রস্তুতি সভা হয়েছে। সোমবার (২২ ডিসেম্বর) পূর্বাচলের ১৩ নম্বর সেক্টরের স্বাধীনতা চত্বরে গাজীপুর জেলা বিএনপির আয়োজনে এই প্রস্তুতি সভা হয়।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন, গাজীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক, সাবেক সংসদ সদস্য এবং গাজীপুর-৫ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য প্রার্থী এ কে এম ফজলুল হক মিলন। তিনি বলেন, ‘তারেক রহমানের নেতৃত্বে দেশ আজ নতুন আশার পথে এগিয়ে যাবে। তার প্রত্যাবর্তন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে নতুন গতি সঞ্চার করবে।’
সভা পরিচালনা করেন গাজীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব ব্যারিস্টার ইশতিয়াক আহমেদ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন, কালিয়াকৈর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুজিবুর রহমান।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব খালেকুজ্জামান বাবলু, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক পরিদ আহমেদ মৃধা, কালীগঞ্জ পৌর বিএনপির সদস্য মনির উদ্দিন পাঠান মিঠু, নাগরী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রহিম সরকার, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর প্রধানসহ বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।
প্রস্তুতি সভায় বক্তারা তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে অনুষ্ঠিতব্য সংবর্ধনা সভা শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে সফল করার আহ্বান জানান। এ সময় স্থানীয় ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার গণমাধ্যমকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন।