আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের’ ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে’ এমন বক্তব্যে হতাশা প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘তার (প্রধান উপদেষ্টার) বক্তব্যে আমরা একেবারেই সন্তুষ্ট নই।’
আজ বুধবার মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে বিএনপির সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গিয়ে অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে বের হওয়ার পর তিনি এ হতাশা ব্যক্ত করেন। বিএনপির মিডিয়া উইং থেকে জানানো হয়, বৈঠকে দলটির পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টাকে একটি চিঠিও দেয়া হয়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা সুনির্দিষ্ট করে নির্বাচনের ডেটলাইন দেননি। তিনি বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে তিনি নির্বাচন শেষ করতে চান। উনি ডিসেম্বর থেকে জুন বলেছেন, উনি বলেননি এটা ডিসেম্বরে হবে। আমরা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি যে, আমাদের কাটঅফ টাইম ইজ ডিসেম্বর। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন যদি না হয়, তাহলে দেশে যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং সামাজিক পরিস্থিতি, সেটা আরও খারাপের দিকে যাবে। সেটা তখন নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে।এ সময় ডিসেম্বরে নির্বাচন না হলে বিএনপি কী করবে-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে দলটির মহাসচিব বলেন, দলের মধ্যে এবং মিত্র দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের আলোচনার প্রধান বিষয় ছিলো নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ নিয়ে। সে বিষয়ে কথা বলেছি। আর বলেছি যে, যে পরিস্থিতি আছে এবং দেশের যে অবস্থা, তাতে করে আমরা বিশ্বাস করি এখানে দ্রুত একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে।
তিনি উল্লেখ করেন, যে সংস্কার কমিশনগুলো করা হয়েছে, সেগুলোতে আমরা সম্পূর্ণ সহযোগিতা করছি। কয়েকদিন আগে সংস্কার কমিশনের কাছে আমাদের মতামতগুলো দিয়েছি। আগামীকালও আমাদের সঙ্গে বৈঠক আছে। সবগুলো দল যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হবে, সেগুলো নিয়ে আমরা একটা চার্টার করতে রাজি আছি। তারপরে আমরা নির্বাচনের দিকে চলে যেতে পারি। বাকি যেসব সংস্কারে আমরা একমত হব, সেটা আমরা অবশ্যই আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচিত হয়ে আসবেন, তারা সেগুলো বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নেবেন। এটাই ছিল আমাদের (বিএনপির) মূল কথা।
এ বৈঠকের জন্য বেলা সোয় ১২টায় ‘যমুনা’য় পৌঁছায় বিএনপি মহাসচিবসহ দলের স্থায়ী কমিটির ৭ সদস্য। পৌনে দুই ঘণ্টার বৈঠকে নির্বাচনী রোডম্যাপ, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার, শেখ হাসিনার বিচার প্রক্রিয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকে বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহ উদ্দিন আহমেদ ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
সরকারের পক্ষে অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ছিলেন উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে।
চিঠিতে যা বলা হয়েছে
চিঠিতে বিএনপি উল্লেখ করে, মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে গণতন্ত্র ও মানবিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রতিটি লড়াইয়ের নেতৃত্বদানকারী কিংবা গর্বিত সক্রিয় অংশীদার হিসেবে বিএনপি তার অবস্থান থেকে প্রতিটি লড়াইয়ের সুফল জনগণের জন্য কার্যকর করার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে এবং করছে। সেই লক্ষ্যেই এবারও জুলাই-আগস্টের ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানের সুফল জনগণের কল্যাণে এবং তাদের আকাঙ্ক্ষা পূরণে নিবেদিত করার টেকসই ক্ষেত্র প্রস্তুতের লক্ষ্যে দেশের সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপরিচালনার ভার আপনার নেতৃত্বে অন্তর্র্বতী সরকার প্রতিষ্ঠায় আমরা সমর্থন জানিয়েছি এবং দায়িত্ব পালনে আপনাকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি এবং সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি। আপনার ও আপনার নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্র্বতী সরকারের কাছে প্রায় দেড় যুগ ধরে গণতান্ত্রিক অধিকারহীন জনগণের স্বাভাবিক প্রত্যাশা ছিল। যত দ্রুত সম্ভব ফ্যাসিবাদী দল, তাদের দলীয় সরকার ও তার দোসরদের আইনের আওতায় এনে তাদের গণবিরোধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার, দুর্নীতি-অনাচারের মাধ্যমে দেশের সম্পদ লুণ্ঠনকারীদের বিচার ও পাচার করা অর্থ পুনরুদ্ধারের, ফ্যাসিস্ট সরকারের হাতে নিহত ও আহতদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ, সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসন এবং দ্রব্যমূল্য ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পতিত সরকারের সব অপচক্র ও সিন্ডিকেট ধ্বংস করার পাশাপাশি যত দ্রুত সম্ভব দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া, যাতে তারা সম্মিলিতভাবে দেশে সুষ্ঠু রাজনীতি, উন্নত অর্থনীতি এবং জনগণের মানবিক অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে পারে।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘বিএনপি মনে করে যে জনগণের স্বার্থরক্ষা ও স্থায়ী কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য গণতান্ত্রিক শাসনের বিকল্প নেই। আর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সংস্কার একটি সদা চলমান অনিবার্য প্রক্রিয়া। বিগত ফ্যাসিবাদী পতিত সরকারের মতো “আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র” যেমন জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের অপকৌশল ছিল, এখনো কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর “আগে সংস্কার পরে গণতন্ত্র” তেমনই ভ্রান্ত কূটতর্ক। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী ও কার্যকর করার মাধ্যমেই সবার জন্য উন্নয়ন সম্ভব এবং এ উদ্দেশ্য পূরণের জন্য রাষ্ট্রব্যবস্থা, আইন, নীতি, বিধানের সংস্কার অপরিহার্য। এর সবগুলো পরস্পরের পরিপূরক, কোনোটাই কোনোটার বিকল্প নয়; পরস্পর সাংঘর্ষিকও নয়।’
এতে আরও বলা হয়, আজ যারা সংস্কারের কথা বেশি বেশি বলে এবং বিএনপিকে সংস্কারের বিপক্ষের শক্তি বলে চিহ্নিত করার অপচেষ্টা করছে, তাদের ভিশন-২০৩০ এবং রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা কর্মসূচিতে যেসব সংস্কারের প্রস্তাব করা হয়েছে ও যেসব পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করা হয়েছে, তার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়, গোষ্ঠীস্বার্থে এবং রাজনীতি কিংবা রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে হেয় ও অপ্রাসঙ্গিক করার অপচেষ্টায় অযথা সময়ক্ষেপণ করে জনগণকে তাদের ভোটাধিকার তথা রাষ্ট্রের মালিকানা প্রতিষ্ঠার অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখার কৌশলকে বিএনপি সমর্থন করে না। দেশ ও জনগণের স্বার্থে জনগণের সম্মতি নিয়ে ৩১ দফায় বর্ণিত এবং ঐকমত্যে গৃহীত সব সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বিএনপি সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করে। চিঠিতে আরও বলা হয়, রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী ও তার সরকারের বক্তব্য ও মতামতে সমন্বয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি এর কিছু ব্যতিক্রম আমাদের উদ্বিগ্ন করেছে। আপনার সরকারের কিছু ব্যক্তি এবং আপনাকে সমর্থনকারী বলে দাবিদার কিছু ব্যক্তি ও সংগঠনের প্রকাশ্য বক্তব্য ও অবস্থান জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। আশা করি আপনি এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।’
বিএনপি বলে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য যেসব আইন, বিধি, বিধান সংস্কারে এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে যেসব পরিবর্তন জরুরি, তা সম্পন্ন করার মাধ্যমে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্ভব বলে আমরা মনে করি। সে লক্ষ্যে অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আমরা আপনার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা এনআইডি প্রকল্প নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখার এবং নির্বাচনি এলাকা পুনর্র্নিধারণের বিষয়ে আইনি জটিলতা দ্রুত নিরসনেরও প্রস্তাব করছি। একই সঙ্গে পতিত ফ্যাসিবাদী দল ও সেই দলীয় সরকারের সঙ্গে যারাই যুক্ত ছিল, তাদের বিচার দ্রুত করে রাজনীতির ময়দানকে জঞ্জালমুক্ত করার; জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের ক্ষতিপূরণ ও সুচিকিৎসা দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার এবং দ্রব্যমূল্য ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রমে গতিশীলতা আনার অধিকতর উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি। একইসঙ্গে ১/১১-এর অবৈধ সরকার এবং পতিত ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে করা সব মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা অনতিবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি পুনর্ব্যক্ত করছি।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর ব্যক্তিগত পরিচয়ের চেয়ে দলীয় প্রতীক ‘ধানের শীষ’ এবং দেশকেই প্রাধান্য দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি এই দিকনির্দেশনা দেন।
তারেক রহমান নেতাকর্মীদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, নির্বাচনের মাঠে ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, দল থেকে ঘোষিত প্রার্থী হয়তো সবার ব্যক্তিগত পছন্দের নাও হতে পারে কিংবা প্রার্থীর সঙ্গে সম্পর্কের ঘাটতিও থাকতে পারে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, আপনারা কোনো ব্যক্তির জন্য নয় বরং ধানের শীষের বিজয়ের জন্য কাজ করছেন। এখানে ব্যক্তি প্রার্থী গৌণ; মুখ্য হলো বিএনপি, ধানের শীষ এবং দেশ।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, এখন আর বসে থাকার সময় নেই। আগামী দুই মাস একমাত্র কাজ হলো দেশের মানুষের কাছে যাওয়া এবং বিএনপির দেশ গড়ার পরিকল্পনাগুলো তুলে ধরা। তিনি বলেন, জনগণ যদি ধানের শীষের পক্ষে রায় দেয়, তবে খাল খনন, পরিবেশ উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের সংস্কার, বেকারত্ব দূরীকরণসহ ফ্যামিলি কার্ড, ফার্মার্স কার্ড ও হেলথ কার্ডের মতো জনকল্যাণমূলক পরিকল্পনাগুলো যে কোনো মূল্যে বাস্তবায়ন করা হবে।
তিনি নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন, এই পরিকল্পনাগুলো কেবল কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ না রেখে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে এবং তাদের সমর্থন আদায় করতে হবে। ছাত্রদলের সারা দেশের ৭৫টি ইউনিটের সহস্রাধিক নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে তারেক রহমান দেশ গড়ার কাজে জনগণকে সম্পৃক্ত করার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।
জামায়াতে ইসলামী ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে বিভাজন সৃষ্টি করছে। ঘৃণা ও সহিংসতার রাজনীতি উসকে দিচ্ছে বলে অভিযোগ এনেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) দলের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ৭ ডিসেম্বর এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেনকে উদ্দেশ করে দেওয়া জামায়াতের বক্তব্যকে ‘অসত্য, মনগড়া ও বিভ্রান্তিকর’ আখ্যা দেওয়া হয়।
এতে বলা হয়, এনসিপি তা প্রত্যাখ্যান করছে এবং এর বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও কঠোর প্রতিবাদ জানাচ্ছে। এনসিপি মনে করে, জামায়াতের এই বিবৃতি বাস্তবতাবিবর্জিত, রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত এবং জনমত বিভ্রান্ত করার স্পষ্ট অপচেষ্টা।
এনসিপি মনে করে, ৫ আগস্ট পরবর্তী নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তে তারা পুরোনো সহিংস ও আধিপত্যবাদী রাজনীতির পথে ‘নতুন খেলোয়াড়’ হিসেবে আবির্ভূত হতে চাচ্ছে। যা দেশের জন্য অশুভ সংকেত।
এনসিপির দাবি, গত ৬ ডিসেম্বর রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে ন্যাশনাল প্রফেশনালস অ্যালায়েন্স (এনপিএ)-এর আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেন সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনার প্রমাণনির্ভর যে মন্তব্য করেন, তা সম্পূর্ণ তথ্যসম্মত ও দায়িত্বশীল। কারণ ২৭ নভেম্বর পাবনার ঈশ্বরদীতে নির্বাচনি প্রচারণাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে গুলি চালানো তুষার মণ্ডল যে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী, তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেছে এবং অস্ত্র-গুলিসহ তাকে গ্রেফতার করেছে। এমন স্পষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও বাস্তবতা অস্বীকার করা সত্য গোপন ও দায় এড়ানোর নিন্দনীয় অপচেষ্টা ছাড়া অন্য কিছু নয়।
এনসিপি আরও জানায়, সহিংসতা, অস্ত্রনির্ভরতা ও ধর্মের অপব্যবহার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিপন্থি। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে সব রাজনৈতিক দলের দায়িত্বশীল আচরণ অপরিহার্য। জামায়াতকে সত্য, শান্তি ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পক্ষে সুস্পষ্ট অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে এনসিপি।
যশোরের আলোচিত সেই মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী নাসিমা সুলতানা মহুয়াকে আটক করেছে ডিবি পুলিশ।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) বিকেলে শহরের পালবাড়ি গাজিরঘাট রোডে তার নিজ বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে ডিবির একটি দল।
মহুয়া পালবাড়ি গাজিরঘাট এলাকার মৃত সোহরাব আলী খানের মেয়ে।
ডিবি সূত্র জানায়, বিএনপি পার্টি অফিসসংক্রান্ত মামলার তদন্তে মহুয়ার সম্পৃক্ততার প্রমাণ মেলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরে সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার পর আদালতে সোপর্দ করলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিবি অফিসার ইনচার্জ মনজুরুল হক ভূঁইয়া।
উল্লেখ্য, নাসিমা সুলতানা মহুয়া যশোর জেলা পরিষদ সদস্য প্রার্থী ছিলেন এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-৩ আসনের সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন।
এর আগে, এক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি ব্যাপক আলোচনায় আসেন, যা নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা সৃষ্টি হয়।
নিজ দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি―বিএলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) বিকেলে তিনি গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে তিনি যোগদান করেন।
শাহাদাত হোসেন সেলিম নিজেই বিষয়টি নিশ্চিত করে সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আমাদের দল বিলুপ্ত করে আমি বিএনপিতে যোগদান করেছি।
এর আগে গত ২৭ নভেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসন থেকে শাহাদাত হোসেন সেলিম ধানের শীষ প্রতীকে লড়বেন বলে জানায় বিএনপি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বরাত দিয়ে বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানায়।
তিনি বলেন, শাহাদাত হোসেন সেলিম ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র হিসেবে বিগত দিনে বিএনপির প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে রাজপথে সক্রিয় ছিলেন।
সেই বিবেচনায় আগেই বিএনপি থেকে তাকে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে দেশে বিভাজন, ঘৃণা ও সহিংসতার রাজনীতি উসকে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির মতে, গত ৫ আগস্টের পর দেশে যে নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির সূচনা হওয়ার কথা ছিল, তা গ্রহণ না করে জামায়াত বরং পুরোনো সহিংস ও আধিপত্যবাদী রাজনীতির ‘নতুন খেলোয়াড়’ হিসেবে আবির্ভূত হতে চাইছে, যা দেশের ভবিষ্যতের জন্য এক অশুভ সংকেত।
সোমবার এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব ও মিডিয়া সেল সম্পাদক মুশফিক উস সালেহীন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়েছে। বিবৃতিতে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেনকে লক্ষ্য করে গত ৭ ডিসেম্বর জামায়াতে ইসলামীর দেওয়া বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। এনসিপি জামায়াতের ওই বিবৃতিকে অসত্য, মনগড়া, রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত এবং জনমত বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা হিসেবে আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, গত ৬ ডিসেম্বর এনসিপি সদস্যসচিব আখতার হোসেন সাম্প্রতিক সহিংসতা নিয়ে যে মন্তব্য করেছিলেন, তা ছিল সম্পূর্ণ তথ্যভিত্তিক ও দায়িত্বশীল। পাবনার ঈশ্বরদীতে নির্বাচনী প্রচারণাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া তুষার মণ্ডল যে জামায়াতেরই কর্মী, তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেছে এবং তাকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। এনসিপির অভিযোগ, এমন সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকার পরও জামায়াত বাস্তবতা অস্বীকার করে সত্য গোপন এবং দায় এড়ানোর নিন্দনীয় চেষ্টা করছে।
এনসিপি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছে, রাজনীতিতে সহিংসতা, অস্ত্রের ব্যবহার এবং ধর্মের অপব্যবহার গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির সম্পূর্ণ পরিপন্থী। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সব রাজনৈতিক দলের দায়িত্বশীল আচরণ একান্ত অপরিহার্য। তাই সত্য, শান্তি ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পক্ষে সুস্পষ্ট অবস্থান নিতে জামায়াতে ইসলামীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দলটি।
পুলিশের সামনেই লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগ তুলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ। তার অভিযোগ, তাকে ও তার নেতাকর্মীদের যখন হেনস্তা করা হচ্ছিল, তখন পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে এবং কেবল দু-তিনবার বাঁশি বাজিয়েই দায়িত্ব সেরেছে। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
গত শনিবার বাবুগঞ্জের মীরগঞ্জে সেতু উদ্বোধনের সময় ঘটা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, পুলিশের উপস্থিতিতেই তাকে ও তার দলের নেতাকর্মীদের লাঞ্ছিত করা হয়েছে, যা স্পষ্টতই ফৌজদারি অপরাধ। অথচ পুলিশ কোনো আইনি পদক্ষেপ না নিয়ে নিষ্ক্রিয় ছিল। তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, নির্বাচনের আগেই যদি পুলিশের এমন ভূমিকা হয়, তবে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। তার মতে, প্রশাসন যখন যে দল বা গোষ্ঠী প্রভাবশালী থাকে, তাদেরই দালালি করে, যা সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায়।
বিএনপির রাজনীতির সমালোচনা করে ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, দলটির ভেতরে থাকা ছোট একটি অংশ বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের কায়দায় রাজনীতি করছে। কিছুদিন আগে মুলাদীতে এলজিআরডি সচিব ও ডিসিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একটি অনুষ্ঠানও এই অংশটি পণ্ড করে দিয়েছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, বিএনপি যদি এখনই এদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা না নেয়, তবে আগামী নির্বাচনে তারা বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে এবং দিন দিন ভোট হারাবে। তিনি প্রত্যাশা করেন, যারা ভবিষ্যতে সরকার গঠনের স্বপ্ন দেখছে, তাদের উচিত ছোট দলগুলোর সঙ্গে সহযোগিতামূলক আচরণ করা এবং দলের ভেতরের বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।
নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে নির্বাচনের জন্য কোনো ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নেই। বর্তমান প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে আদৌ সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব কি না, তা নিয়ে জনমনে সংশয় রয়েছে। এছাড়া মীরগঞ্জ সেতু নির্মাণে দায়িত্বপ্রাপ্ত চীনা কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগের ধরণ নিয়ে অসন্তোষের কথাও তুলে ধরেন তিনি। গত দুই মাস ধরে তার নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা ও নেতাকর্মীদের মারধর করা হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। একইসঙ্গে অনেক নাগরিক এখনো ভোটার হতে পারেননি উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনের কাছে সময় বাড়ানোর আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, গত শনিবার বাবুগঞ্জে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে বক্তব্য শেষে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ব্যারিস্টার ফুয়াদকে ঘিরে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেন এবং তাকে লাঞ্ছিত করে এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। অভিযোগ রয়েছে, বক্তৃতায় চাঁদাবাজির প্রসঙ্গ তোলায় ক্ষিপ্ত হয়ে তারা এ ঘটনা ঘটায়।
বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় ভেড়ামারা উপজেলা বিএনপি'র আয়োজনে রবিবার (৭ ডিসেম্বর) বিকালে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।।
ভেড়ামারা পৌর বিএনপির সভাপতি আবু দাউদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভেড়ামারা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক এ্যাডঃ তৌহিদুল ইসলাম আলম।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক জানবার হোসেন, যুগ্ম আহবায়ক অধ্যক্ষ আসলাম উদ্দীন, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আবু মোহাম্মদ নূরউদ্দিন নুরু, যুগ্ম আহবায়ক শফিকুল ইসলাম বিশু,যুগ্ম আহবায়ক গোলাম মোস্তফা ইসাহক, যুগ্ম আহবায়ক জাহিদুর রহমান রঞ্জু, পৌর বিএনপি'র সাধদারণ সম্পাদক শফিকুল ইসএাম ডাবলু, সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম রেজা শামীম, বিএনপি নেতা সাইফুল ইসলাম রোকন, জুনিয়াদহ ইউপি বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস, সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, মোকারিমপুর ইউপি বিএনপির সম্পাদক আব্দুর রব,বাহাদুরপুর ইউপি বিএনপির সভাপতি বকুল হোসেন,সম্পাদক আসলাম উদ্দিন মোল্লা, ধরমপুর ইউপব বিএনপির সভাপতি রবিউল ইসলাম সরকার,সম্পাদক আসাদুজ্জামান মিঠু, চাঁদগ্রাম ইউপি বিএনপির সভাপতি গোলাম কিবরিয়া, সম্পাদক খায়রুল ইসলাম মোল্লা, বাহিরচর ইউপি বিএনপির সভাপতি জাহিদুর রহমান লাভলু, সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক,সোহেল রানা ভুঁইবাবু সহ বিএনপিরঅঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় পার্টির সাবেক দুই হেভিওয়েট নেতা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ করল নতুন রাজনৈতিক জোট ‘জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট’ (এনডিএফ)। মোট ২০টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত এই নতুন মোর্চা সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের যাত্রা শুরু করেছে।
রাজধানীর গুলশানের জানা পার্টি সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই জোট গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে জোটের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন এবং দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরেন। জাতীয় পার্টির (জাপা) সাবেক নেতা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং জাতীয় পার্টির (জেপি) নেতা আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এই জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
নতুন এই জোটে আনিসুল ও মঞ্জুর দলের পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে আরও ১৮টি সমমনা দল। জোটের শরিক অন্য দলগুলো হলো— জনতা পার্টি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, জাতীয় ইসলামিক মহাজোট, জাতীয় সংস্কার জোট এবং বাংলাদেশ লেবার পার্টি।
এছাড়াও স্বাধীন পার্টি, জাতীয় স্বাধীনতা পার্টি, বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টি, বাংলাদেশ সর্বজনীন দল, বাংলাদেশ জনকল্যাণ পার্টি, অ্যাপ্লায়েড ডেমোক্রেটিক পার্টি, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আন্দোলন, ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং বাংলাদেশ জাতীয় লীগ এই জোটের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আগামী দিনের রাজনীতি ও নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০ দলীয় এই জোটের আত্মপ্রকাশ রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বসেছে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বৈঠকটি শুরু হয়।
বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন ছাড়াও অন্য নির্বাচন কমিশনাররা উপস্থিত রয়েছেন।
এদিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নিয়েছে এই বৈঠকে।
দীর্ঘ ১৪ বছর পর নিজ নির্বাচনী এলাকা কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে ফিরে অভাবনীয় সাড়া পেলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। গত ৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া তার পাঁচ দিনব্যাপী গণসংযোগ ও নির্বাচনী প্রচারণা কার্যত জনসমুদ্রে পরিণত হয়। প্রিয় নেতাকে কাছে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন স্থানীয়রা, প্রতিটি পথসভা রূপ নেয় বিশাল জনসমাবেশে।
টানা পাঁচ দিনে তিনি চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নে বিরামহীন গণসংযোগ চালিয়েছেন। খুটাখালী, ডুলাহাজারা, ফাঁশিয়াখালী, মগনামা, বদরখালী, হারবাং-সহ বিস্তীর্ণ জনপদের ঘরে ঘরে গিয়ে তিনি সাধারণ মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এই সময়ে তিনি ৩০টি পথসভা এবং নারী ও সনাতনী সম্প্রদায়ের সঙ্গে বিশেষ মতবিনিময় সভায় অংশ নেন।
প্রচারণাকালে সালাহউদ্দিন আহমদ এলাকাবাসীকে একগুচ্ছ উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি জানান, গভীর সমুদ্রবন্দরকে কেন্দ্র করে চকরিয়া-পেকুয়া ও উপকূলীয় অঞ্চলকে একটি নতুন ‘বিজনেস হাব’-এ রূপান্তর করা হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা আধুনিকায়নে আনোয়ারা-পেকুয়া-বদরখালী সড়ককে ৪ লেনে এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ককে ৬ লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি। পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, আইসিটি সুবিধা বৃদ্ধি এবং নদী ভাঙন রোধে টেকসই বাঁধ নির্মাণের আশ্বাস দেন এই বিএনপি নেতা।
এবারের প্রচারণায় নারীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। স্থানীয় বাসিন্দা ইউসুফ বদরি জানান, অনেক সমাবেশে পুরুষদের চেয়ে নারীদের উপস্থিতিই ছিল বেশি। গণসংযোগ চলাকালে এক হৃদয়স্পর্শী ঘটনাও ঘটে। একজন শতবর্ষী বৃদ্ধা তাকে দেখার অপেক্ষায় আছেন শুনে সালাহউদ্দিন আহমদ গাড়ি থামিয়ে ছুটে যান এবং ওই বৃদ্ধার গলায় ফুলের মালা পরিয়ে দোয়া নেন।
স্থানীয় শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্টজনরাও সালাহউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। চকরিয়া মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ জুবাইদুল হক বলেন, সালাহউদ্দিন আহমদ তার রাজনৈতিক শিষ্টাচার ও পরিপক্বতা দিয়ে প্রমাণ করেছেন তিনি শুধু কক্সবাজারের নন, জাতীয় পর্যায়ের নেতা। অন্যদিকে বদরখালী কলেজের অধ্যক্ষ মুজিবুর রহমান উল্লেখ করেন, অতীতে এমপি ও প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে তিনি এই অঞ্চলকে উন্নয়নের মাধ্যমে ৫০ বছর এগিয়ে নিয়েছিলেন। দলমত নির্বিশেষে ব্যক্তি সালাহউদ্দিনই এখানকার মানুষের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং তার কোনো বিকল্প নেই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, গণতন্ত্রের সর্বনাশ ঘটিয়েছে শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকার। তবে গণতন্ত্রপ্রিয় জনগণের দীর্ঘ সংগ্রামে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছে। তিনি বলেন, এমন নির্বাচন প্রয়োজন যেখানে মানুষ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নেবে এবং বিএনপির নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী, সাম্যভিত্তিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে উঠবে।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে কক্সবাজারের চকরিয়ার হারবাং বাজার এলাকায় অনুষ্ঠিত এক পথসভা তিনি এসব কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বিএনপি সরকার গঠন করলে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীত করাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
তিনি জানান, কক্সবাজারে দেশের একমাত্র গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ বিএনপির আমলেই শুরু হয়েছিল এবং আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যেই বন্দরটি সম্পূর্ণভাবে চালু হবে। তখন ছয় লেন মহাসড়ক নির্মাণ অপরিহার্য হয়ে উঠবে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, নির্বাচন কমিশন শিগগিরই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে এবং তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বিএনপির প্রার্থীরা প্রচারনায় নামবেন। তার মতে, দীর্ঘ দেড় যুগ পর ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেতে যাচ্ছে মানুষ, আর এই নির্বাচন হবে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ-ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরশাসন থেকে মুক্ত হয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের নির্বাচন।
বেগম খালেদা জিয়ার সুস্বাস্থ্য কামনা করে তিনি বলেন, তিনি গণতন্ত্রের জন্য আপসহীন নেতৃত্ব দিয়েছেন। সালাহউদ্দিন আহমদ প্রতিশ্রুতি দেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে।
সালাহউদ্দিন আহমদ রোববার (৭ ডিসেম্বর) সকালে তার নির্বাচনী এলাকা চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের নুনাছড়ি, নয়া পাড়া, রাখাইন পাড়া, হারবাং বাজার, কালা সিকদার পাড়া,গুদার পাড়া, সওদাগর পাড়া পাহাড়তলী এলাকায় গণসংযোগ করেন।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন এই তিনটি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট।
রবিবার (৭ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে জোটটি আত্মপ্রকাশ করে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নতুন এই জোটের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা একটা ঐক্যপ্রক্রিয়ার মধ্যে ছিলাম। তিনদল মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি, এই প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। পরিবর্তনের পক্ষে থাকা অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে এই ঐক্যপ্রক্রিয়া যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানাই।’
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য ঐক্যবদ্ধ চান সবাই।
পুরনো বন্দোবস্তে অতিষ্ঠ তারা। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে সবার সহযোগিতা পাই না। আমাদের ভুল-ত্রুটি আছে। তবে আমরা আজ একটা নতুন যাত্রা শুরু করেছি।
আমরা ঘোষণা করছি, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে স্পিরিড নিয়ে তিনটি দলের ঐকবদ্ধভাবে চলব।’
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতিহাসনাত কাইয়ূম বলেন, ‘তিন দল নিয়ে এ জেটের যাত্রা শুরু হলেও আগামী তা আরও বর্ধিত হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমসহ তিন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
বরিশালের রহমতপুর―বাবুগঞ্জ মুলাদী হিজলা আঞ্চলিক সড়কের আড়িয়াল খাঁ নদীর ওপর নির্মাণাধীন মীরগঞ্জ সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে গিয়ে জনতার তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়েছেন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) দুপুর ২ টার দিকে ঘটে এই ঘটনা।
স্থানীয় সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ব্যারিস্টার ফুয়াদ অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছানোর পর বক্তব্য দিতে গিয়ে দাবি করেন স্থানীয়দের চাঁদা দাবির কারণে সেতুর কাজ স্থগিত ছিল। তার এমন মন্তব্যের পরপরই উপস্থিত জনতার মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তেই তাকে ঘিরে ভুয়া ভুয়াস্লোগান দিতে শুরু করেন স্থানীয়রা। এতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি এড়াতে ব্যারিস্টার ফুয়াদ দ্রুত গাড়িতে উঠে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন।
স্থানীয়দের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে সেতুর নির্মাণকাজ বিলম্বিত হলেও এ বিষয়ে কাউকে দোষারোপ না করে স্বচ্ছ তদন্ত প্রয়োজন। তারা মনে করেন, চাঁদা দাবি অভিযোগ দিয়ে প্রকৃত সমস্যাকে আড়াল করা হচ্ছে। এ কারণে ব্যারিস্টার ফুয়াদের বক্তব্যের বিরোধিতা করেই প্রতিবাদে ফেটে পড়ে জনতা।
উল্লেখ্য, বরিশাল অঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুটি নির্মাণ হলে বাবুগঞ্জ, মুলাদী ও হিজলার সড়ক যোগাযোগে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
তবে কাজের ধীরগতির কারনে প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে।