বাংলাদেশের সফলতম অধিনায়ক তিনি, বাংলাদেশের ক্রিকেটের রূপ বদলে যাওয়াও তার নেতৃত্বে। দুই বছর আগে সর্বশেষ জাতীয় দলে খেললেও মাশরাফি বিন মুর্তজা এখনো দেশের ক্রিকেটের অদ্বিতীয় চরিত্র। দৈনিক বাংলার নতুন করে শুরুর দিনে দেশের ক্রিকেট নিয়ে সাবেক অধিনায়কের ভাবনা জানতে চেয়েছেন তরিকুল ইসলাম সজল।
প্রশ্ন: টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ দল ভালো না করার কারণ কী হতে পারে?
মাশরাফি: এ ফরম্যাটে আমার খুব বেশি প্রত্যাশা নেই। আমার মনে হয় সবারই প্রত্যাশা কম থাকা উচিত। না হলে টিমের ওপর বাড়তি চাপ হয়। যদি দল ভালো করে, তাহলে খুব ভালো। কিন্তু এই ফরম্যাটে আমরা এখনো পর্যন্ত তেমন গুরুত্ব দিইনি।
প্রশ্ন : এবারের এশিয়া কাপও ভালো যায়নি। কিন্তু ২০১৮ সালে ফাইনালে হারের পর আপনি বলেছিলেন, এশিয়া কাপ একসময় মামুলি ব্যাপার হবে বাংলাদেশের জন্য। সেই সময়টা কবে আসবে বলে মনে করেন?
মাশরাফি: ফরম্যাটের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। ভারত-পাকিস্তান এ মুহূর্তে এই ফরম্যাটে সেরা ৩ দলের ২টি। তারা কিন্তু এমনিতে এই জায়গায় আসেনি, বিশ্বব্যাপী ভালো খেলে এসেছে। যেখানে খেলা হচ্ছে, সেটা বলতে গেলে পাকিস্তানের হোম গ্রাউন্ড। ভারত বিশ্বের যেকোনো প্রান্তেই কঠিন দল। আফগানিস্তান ওখানে অনেকদিন ধরে খেলছে। ওখানে খেলা সহজ নয়।
প্রশ্ন : তাহলে কি ওয়ানডে হলে মামুলি হতো?
মাশরাফি : মামুলি না হলেও সাহসটা আরও তিন গুণ থাকত। আত্মবিশ্বাস অন্যরকম হতো। পৃথিবীতে এখন কজন ক্রিকেটার আছে যে তিন ফরম্যাটেই খেলে? আমাদের কয়েকজন ক্রিকেটার সব ফরম্যাটে খেললেও এখনো এত বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠেনি। ভালো খেলোয়াড় মানেই যে সব ফরম্যাটে ভালো হবে- এমন নয়।
প্রশ্ন : এশিয়া কাপে যাওয়ার আগে হেড কোচকে সরিয়ে দেয়া হলো। টুর্নামেন্টের আগে এমন পরিবর্তন দলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করেন?
মাশরাফি : যিনি (রাসেল ডমিঙ্গো) ছিলেন তিনিও তেমন কিছু করেননি। আমার মনে হয়েছে বোর্ড এবার একটা ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বোর্ডকে সাধুবাদ জানাব, কারণ সাকিবকে আবার ফেরাতে পেরেছে। সাকিবকে ফেরানো সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত এবং কঠিন সিদ্ধান্ত। কঠিন বলতে ওকে রাজি করানোটা কঠিন। কারণ ও অধিনায়কত্ব করতে চায় কি না...।
কোচের ব্যাপারেও বলি, এটা ভালো সিদ্ধান্ত। কারণ নির্দিষ্ট একটা ফরম্যাট যেকোনো একজনের কাছে থাকা ভালো। যে ছিল তার তো কোনো উন্নতি নেই। শুনেছি দাবি করেছেন, অধিকাংশ ম্যাচ জিতেছেন। সেটা মানি। তবে কোন দলের বিপক্ষে, কোন মাঠে- এগুলোও দেখা প্রয়োজন। এই মুহূর্তে টি-ঠে -টোয়েন্টির জন্য নির্দিষ্ট কিছু খেলোয়াড় খুঁজে বের করা দরকার। সেটার জন্য যদি আলাদা একজন কোচ থাকে, যে এই খেলোয়াড়গুলো খুঁজবে, শুধু টি-টোয়েন্টি নিয়ে ভাববে বা দেশের আনাচ-কানাচে যে ক্রিকেটাররা আছে, তাদের এনে ট্রেনিং করাবে বা তৈরি করবে।
প্রশ্ন : সাকিব কিছুদিন আগে বলেছেন, এখন তার প্রায়োরিটি লিস্টে ক্রিকেট নেই। এমন একজনকে অধিনায়ক বানানো বোর্ডের সঠিক সিদ্ধান্ত মনে করেন?
মাশরাফি : তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে আমি কথা বলব না। মাঠের কথা বললে, সাকিবের বিকল্প কি তৈরি হয়েছে? আপনি যদি বিশ্বে দেখেন, সে শীর্ষস্থান দখল করে আছে। সেখানে সাকিবকে অগ্রাধিকার না দেয়ার কোনো কারণ দেখি না। যদি তার মতো তিন-চারজন থাকত, তাহলে একটা কথা ছিল। তামিম টি-টোয়েন্টি খেলছে না, মুশফিক আসবে না। রিয়াদকে সরানো হয়েছে। অন্য কোনো বিকল্প নেই। সাকিব বিসিবির জন্য যেমন সেরা পছন্দ, আমি মনে করি আমজনতার জন্যও সেরা পছন্দ।
প্রশ্ন : এ ক্ষেত্রে সাকিবের ওপর অধিনায়কত্ব চাপিয়ে দেয়া হয়েছে বলে মনে করেন?
মাশরাফি : বোর্ড এপ্রোচ করেছে, সে নিয়েছে। সে নিতে চায়নি এটা বলার সুযোগ নেই। বোর্ড চেয়েছে এবং সেও নিয়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছে যে কৌশলে আগাচ্ছে সেটা ঠিক আছে। আমি আগেও বলেছি অধিনায়ককে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত। সে যেই হোক। হ্যাঁ, সাকিবকে হয়তো সুযোগ বেশি দেয়া হচ্ছে, অন্যদের হলে এতটা দেয়া হতো না। তামিমকেও একই সুবিধা দেয়া উচিত যেমনটা সাকিবকে দেয়া হচ্ছে।
প্রশ্ন : তবুও তো প্রশ্ন থেকে যায়। বেটউইনার কাণ্ডের পরও বিসিবি তাকে নেতৃত্বে ফেরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা কী মন্দের ভালো?
মাশরাফি : আমার মনে হয় এখানে কিছুটা ফাঁক থেকে যাচ্ছে। সাকিবকে কিন্তু নতুন করে দায়িত্বে আনা হয়নি। আইসিসির নিষেধাজ্ঞায় পড়ার আগেই আনা হয়েছিল। সাকিব থাকলে সে-ই এতদিন টেনে নিয়ে আসত।
প্রশ্ন : এর আগে-পরে বেশ কয়েকবার নেতিবাচক আলোচনার জন্ম দিয়েছেন সাকিব। সে তুলনায় স্মিথ-ওয়ার্নারদের তো লঘু পাপ ছিল। সাকিবের ক্ষেত্রে একটু বেশিই নমনীয় বোর্ড?
মাশরাফি : স্মিথ-ওয়ার্নার ছাড়া ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া যেভাবে খেলেছে আমরা কি সেভাবে খেলতে পারব? সাকিব না থাকা অবস্থায় আমরা হয়তো ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে জিতেছি। কারণ উইকেট পক্ষে ছিল। এবার জিম্বাবুয়েতে দেখেন। সাকিবকে ছাড়া টিম কম্বিনেশন তৈরি করা কঠিন হয়ে গেছে। যখন একটু চাপ এসেছে তখনই আমরা অনুভব করেছি সাকিবের প্রয়োজনীয়তা।
সাকিব নিজেকে এমন জায়গায় নিয়ে গেছে যে, তার বিকল্প নিয়ে ভাবার সুযোগ আসলে নেই। পরে কেউ এলে ভিন্ন হিসাব। আমাকে দিয়েই উদাহরণ দিই। ২০১৯ পর্যন্ত কোনো বিকল্প ছিল না, এ জন্যই আমি টিকে ছিলাম। এখন অপশন এসেছে বলেই আমি নেই। এটা খুবই সাধারণ ব্যাপার।
প্রশ্ন: এখন টানা খেলার মধ্যে থাকতে হয়। আগামী চার বছরে বিশ্রামের খুব বেশি সুযোগ নেই। খেলোয়াড়দের ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টের ব্যাপারে কথা বলা হলেও কার্যত অগ্রগতি নেই। কিন্তু তিন ফরম্যাটে খেলা ক্রিকেটাররা তো ধকল সামলাতে পারছেন না...
মাশরাফি : এখানে শুধু বিসিবি বা খেলোয়াড়েদের ওপর দোষ চাপিয়ে দিলে হবে না। এখানে ফিজিও, ট্রেনার কতটা যোগ্যতাসম্পন্ন দেখতে হবে।
ক্রিকেটারদের সঙ্গে বসতে হবে। বিসিবিকে ঠিক করতে হবে কোন ফরম্যাটে কোন বোলারকে চায় তারা। বোলার যদি খেলতে না চায়, তখন ব্যবস্থা নিতে হবে সেই বোলারের বিপক্ষে। যদি কেউ সেটা চায়, তাহলে তাকে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই বিসিবির। কোনো বোলার যদি বলে আমি টেস্ট খেলব না, ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি খেলব- সেক্ষেত্রে তো বিসিবি ছেড়ে কথা বলবে না।
আবার বোলারের সক্ষমতাও দেখতে হবে। টেস্ট ক্রিকেটে তার দক্ষতা কতটুকু, ও কতটা কার্যকরী হবে। এই ব্যাপারগুলো আলোচনা করে বুঝিয়ে দিতে হবে। আগে থেকে বুঝিয়ে দিতে হবে, আমি তোমার কাছে টেস্ট আর টি-টোয়েন্টি চাই। ওয়ানডে নিয়ে ভাবছি না।
এই কথাগুলো যদি ক্রিকেটাররা ব্যক্তিগতভাবে নেয়, তাহলে হবে না। ২০১৭ সালে কোচ আমাকে বলল, টি-টোয়েন্টিতে তোমাকে দিয়ে হচ্ছে না। আমি বুঝেছি, সরে গেছি। ক্রিকেটারদের বুঝতে হবে। এখানে অভিমান বা অভিযোগের কোনো সুযোগ নেই।
প্রশ্ন : ডমিঙ্গো অভিযোগ করেছেন, ২০১৯ সালে যখন আসেন, তখন ড্রেসিংরুমে তরুণদের দমিয়ে রাখার সংস্কৃতি ছিল। সে সময় তো দলের সঙ্গে আপনিও ছিলেন। এমন অভিযোগ কীভাবে দেখেন?
মাশরাফি : আমি আসলে তার সঙ্গে কাজ করিনি। আমি যাওয়ার পরই তো নতুন অধিনায়ক এসেছে। যখন অধিনায়কত্ব পরিবর্তন হয় তখন নতুন কারও এসে গুছিয়ে নিতে সময় লাগে। আমার সময়ে জুনিয়ররা সর্বোচ্চ গুরুত্ব নিয়ে খেলেছে। আমি যে তিন ম্যাচ তার (ডমিঙ্গো) অধীনে খেলেছি, এমন না যে, অনুশীলনেও গিয়েছি। খেলে চলে এসেছি। আমার সঙ্গে যেহেতু কাজের অভিজ্ঞতা নেই, সেহেতু বলতে পারব না।
প্রশ্ন: ডমিঙ্গোর গুরুতর অভিযোগ, বোর্ডের হস্তক্ষেপে খেলোয়াড়রা স্বাধীন নয়। বিসিবি মনে করে কড়া হেডমাস্টার দরকার, অনেকটা চন্ডিকা হাথুরুসিংহের মতো। জাতীয় দলের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে আপনার কী মনে হয়?
মাশরাফি : এখানে কড়া হেডমাস্টারের কোনো ব্যাপার না। বিষয়টা হচ্ছে আপনি সঠিক পথে আছেন, না কি নেই। হাথুরুর সঙ্গে ডমিঙ্গোর পার্থক্য বোঝাতে গেলে আমাকে দুজনের সঙ্গে কাজ করতে হতো। কিন্তু আমার সঙ্গে ডমিঙ্গোর অভিজ্ঞতা শূন্য। হাথুরুসিংহেকে দেখেছি, যেখানে কথা বলা দরকার সেখানে বলেছেন। আমাদের ইয়ার্কিগুলো বা একটু স্পেস চাইলে সেগুলো মেনে নেননি, তা তো না। তার যেটা মনে হয়েছে অন্যায়, সে সাকিবকেও বলেছেন, আমাকেও বলেছেন।
হাথুরুসিংহে অস্ট্রেলিয়ায় কাজ করেছেন, প্রফেশনালি ওভাবেই কাজ করে অভ্যস্ত। আমরা এ ধরনের পেশাদারি মনোভাব নিয়ে বড় হইনি। ফলে একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়, ওনারা মনে করেছেন, রাগারাগি করলেই জিনিসটা ভালো হয়ে যাবে, আসলে তা না।
এটাই তো বোঝাপড়া, কোচ যা বলছে সেটা মেনে নেওয়া, যতই খারাপ লাগুক না কেন! খারাপ হয়তো লেগেছে, কারণ আমি এর সঙ্গে অভ্যস্ত না। কিন্তু আমার সেটা করতে হচ্ছে। একটা ভালো অভ্যাস তৈরি হচ্ছে। আমরা সবকিছুতে নেগেটিভ-পজিটিভ খুঁজি!
প্রশ্ন : সামনে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। অধিনায়ক তামিমের জন্য আপনার পরামর্শ কী থাকবে?
মাশরাফি : পরামর্শ দেয়ার কিছু নেই। তামিম ভালো এগোচ্ছে এটাই সত্য কথা। নিউজিল্যান্ডে আমরা সিরিজ জয়ের মতো অবস্থায় ছিলাম। দুইটা ম্যাচ খুব ক্লোজ হেরে গেছি ক্যাচ পড়ার কারণে। ওয়েস্ট ইন্ডিজে আমরা ভালো করেছি। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সিরিজ জিতেছি। আফগানিস্তানের সঙ্গে জিতেছি। দক্ষিণ আফ্রিকায় সিরিজ জয়।
আপনি যদি উন্নতি দেখেন, আমরা হেরেছি শুধু নিউজিল্যান্ড আর জিম্বাবুয়ের কাছে। নিউজিল্যান্ডে সাকিব না থাকা সত্ত্বেও দারুণ ক্রিকেট খেলেছে । যদি গ্রাফ দেখেন, ভালোভাবেই এগোচ্ছে। আর এই ফরম্যাটে দীর্ঘ ৭-৮ বছর ধরে পারফরম্যান্স রেট ৬০ শতাংশের নিচে কখনো আসেনি। তামিম খুব ভালো করছে।
প্রশ্ন : ওয়ানডেতে আমরা বেশ ভালো দল হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত। ২০২৩ বিশ্বকাপ ভারতে। কন্ডিশন অনেকটা একইরকম চেনাজানা থাকবে। কেমন ফল আশা করছেন?
মাশরাফি : আমি ২০১৯ বিশ্বকাপের পরই এক কনফারেন্সে বলছিলাম, আমার বিশ্বাস ২০২৩ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ভালো কিছু করবে। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি। কে যাবে কে যাবে না এটা কোনো ব্যাপার না। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি ভালো কিছু হবে।
প্রশ্ন : মাশরাফি বিন মুর্তজাকে আবার জাতীয় দলে দেখা যাবে?
মাশরাফি : জাতীয় দলে আর ফেরা হবে না। একেবারে মাইনাস একশ।
প্রশ্ন : জাতীয় দলে ফিরবেন না, তাহলে ঘরোয়া ক্রিকেট কতদিন চালিয়ে যাবেন?
মাশরাফি: ক্লাব ক্রিকেটে তো আর বয়সের ব্যাপার নেই। আর বয়স ক্লাব ক্রিকেট খেলার মতো নেই, সেটাও তো না। চল্লিশ এখনো হয়নি।
প্রশ্ন : বাংলাদেশে তো আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর নেয়ার চল নেই। আপনি কি ঘোষণা দিয়ে ক্রিকেট ছাড়বেন?
মাশরাফি : এটার একটা সুযোগ আছে। ক্লাব থেকে বলে অফিশিয়ালি যাওয়ার ইচ্ছা আছে। (জাতীয় দলে) আমি ফিরতে চাইলেও তো আমাকে আর ফেরানো হবে না।
প্রশ্ন : হঠাৎ করে রাজনীতিতে। একটা স্বপ্ন নিয়ে এসেছেন নিশ্চয়ই। নিজেকে কিভাবে মূল্যায়ন করছেন?
মাশরাফি : আবার রাজনীতিতে চলে গেলেন! তিন বছরের দুই বছরই তো করোনায় চলে গেল। কাজ করতে পারলাম কোথায়! মানুষকে খুশি করা পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ। দিনের পর দিন আপনি শ্রম দিয়ে যাবেন কিন্তু দেখবেন কিছু মানুষ আপনার ওপরে খুশিই না। কিন্তু যখন আপনি চলে যাবেন, তখন দেখা যাবে, আগে যারা খুশি ছিল, তারাই বলবে- ও গেছে, বেঁচে গেছি। আবার যারা অখুশি ছিল, তারা বলবে- ও থাকলেই ভালো ছিল। মানুষের জীবন তো এ রকমই।
প্রশ্ন : ক্রিকেটের মতো রাজনীতিতেও উত্থান-পতন আছে। আপনার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার দৈর্ঘ্য নয়। তবুও সম্প্রতি বেশ কঠিন পরিস্থিতি (সাম্প্রদায়িক হামলা) পার করলেন। অভিজ্ঞতা থেকে কোনটাকে বেশি শক্ত মনে হয়, ক্রিকেট না-কি রাজনীতি?
মাশরাফি : ক্রিটিক্যাল! দুইটা দুইরকম। যারা ঘটাইছে, তারা তো আর বলে ঘটায় না। আর ধরেন, এটা ঘটে গেছে। তাৎক্ষণিকভাবে তাদেরকে সাপোর্ট দেয়া। তখন যে বিষয় ছিল পুনর্বাসনটা গুরুত্বপূর্ণ না, মানসিক যে পুনর্বাসন দরকার সেটা তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া। ওই এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের মনে হয়তো একটা দাগ কেটে আছে। আমরা খুব কঠিনভাবে চাচ্ছি, এর বিচার সঠিকভাবে হোক। আমি খুব শক্ত অবস্থানে আছি আমার জায়গা থেকে।
তারা প্রত্যেকেই শাস্তি পাক। হামলা হয়েছে, হামলার পেছনে কারণটা কী! সবকিছু ঠিকঠাকভাবে বের হয়ে আসুক। যে স্ট্যাটাস এসেছে, সেই স্ট্যাটাসের সূত্রপাত কোথায়; আইন কোন আওতায় এনে কীভাবে বিচার করবে। সঠিক বিচার হবে। এটাই দাবি।
ওইখানে যে কাজগুলো ছিল আমরা যথাসাধ্যভাবে চেষ্টা করছি, ওইখানে যারা পলিটিক্যালি আছেন, ননপলিটিক্যালি; গ্রামে তো অনেক মাতব্বর থাকেন। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে জিনিসটাকে আমরা একটা জায়গায় আনতে পেরেছি। সময় লেগেছে, কিন্তু আনতে পেরেছি।
আসলে এগুলো তো আনসারটেন। আমি তো নড়াইল শহরে বড় হয়েছি, কোনোদিন এসব নিয়ে কোনো বিবাদ দেখিনি। সাম্প্রদায়িকতা ছিল না! আমার মাথায় একেবারেই এ নিয়ে চিন্তা ছিল না। ভেবেছি, আর যাই হোক নড়াইলে সাম্প্রদায়িক হামলা হবে না।
ওই মানসিকতার জায়গা থেকে আমি বের হয়ে আসছি। আমি বরং প্রস্তুত, এর চেয়ে খারাপ কিছু হতে পারে। কারণ মানুষের দ্বারা সবই সম্ভব। এখন আমার যে জিনিসটা মাথায় আছে, খারাপ যেকোনো কিছু হতে পারে। সেভাবে প্রস্তুত থাকা।
ক্রিকেটের সঙ্গে একে আপনি কখনোই মেলাতে পারবেন না। এখানে হচ্ছে সবকিছু সরাসরি, যা দেখছেন সরাসরি। অনুশীলন করছেন, লাইভ দেখছেন। এখানে লুকানোর কোনো সুযোগ নেই। এখানে আপনি কেমন পারফর্মার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সবাই জেনে যাবে। আর রাজনৈতিকভাবে আপনি কেমন পারফর্মার সেটা বের করতে বছরের পর বছর চলে যাবে।
নেপালে ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের সিদ্ধান্ত এবং সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ভয়াবহ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। দেশটির হাজার হাজার ছাত্র-জনতার এই বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে ১৪ জনে পৌঁছেছে। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও শত শত বিক্ষোভকারী। এ পরিস্থিতিতে নেপালে থাকা বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল অনুশীলন বাতিল করেছে।
দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলতে বর্তমানে নেপালে রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। আজ মঙ্গলবার কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-নেপালের মধ্যকার দ্বিতীয় ম্যাচ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু নেপালজুড়ে তীব্র অস্থিরতা শুরু হওয়ায় ম্যাচ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ম্যাচের আগেরদিন উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আর অনুশীলন করতে পারেনি জামাল ভূঁইয়ার দল।
নেপালের কাঠমান্ডু থেকে বাংলাদেশ ফুটবল দলের মিডিয়া ম্যানেজার সাদমান সাকিব বলেন, নেপালের সময় বিকাল সোয়া ৩টায় আমাদের অনুশীলন ছিল। দুপুর আড়াইটার দিকে জানানো হয় যে, বাইরের পরিস্থিতি উত্তপ্ত। ফলে এই সময়ে অনুশীলনের জন্য রওনা হওয়া যাবে না। বাংলাদেশ দল এখন নিরাপদে হোটেলেই অবস্থান করছে। গত রোববার অনুশীলন সেরেছিল নেপাল দল। তবে বিশ্রামে ছিল বাংলাদেশ। সোমবার বিকেলে অনুশীলন হওয়ার কথা থাকলেও এই পরিস্থিতিতে না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আজ মঙ্গলবার ম্যাচ হলে দুই দিন অনুশীলন ছাড়াই খেলতে হবে বাংলাদেশকে। আজকের ম্যাচ উপলক্ষে সকালে দুই দলের কোচ-অধিনায়ক আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনও করেছে।
এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বের জন্য ম্যাচ অফিসিয়ালদের নাম ঘোষণা করেছে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি)। আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর দুবাইয়ে হতে যাওয়া বহুল আলোচিত ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে মাঠের আম্পায়ারের দায়িত্বে থাকবেন বাংলাদেশের মাসুদুর রহমান। তার সঙ্গে মাঠের আম্পায়ার হিসেবে থাকবেন শ্রীলঙ্কার রুচিরা পালিয়াগুরুগে।
এবারের এশিয়া কাপে মাসুদুর রহমানের পাশাপাশি বাংলাদেশ আরেক আম্পায়ার গাজী সোহেলও ম্যাচ পরিচালনা করবেন। তাকে দেওয়া হয়েছে ১০ সেপ্টেম্বরের ভারত-সংযুক্ত আরব আমিরাত ম্যাচের দায়িত্বে। আফগানিস্তান-হংকং ম্যাচ দিয়ে উদ্বোধন হতে চলা এশিয়া কাপে অংশ নিচ্ছে মোট ৮টি দল। দুই ভাগ হয়ে দলগুলো গ্রুপ পর্বে খেলবে মোট ১২ ম্যাচ। এই ম্যাচগুলোর জন্য মোট আটজন রেফারি নিযুক্ত করেছে এসিসি। বাংলাদেশের মাসুদুর ও সোহেল ছাড়া অন্যরা হচ্ছেন আফগানিস্তানের আহমাদ পাকতিন ও ইজাতউল্লাহ শফি, পাকিস্তানের আসিফ ইয়াকুব ও ফয়সাল আফ্রিদি, শ্রীলঙ্কার রবীন্দ্র ভিলমালসিরি ও রুচিরা পালিয়াগুরুগে এবং ভারতের রোহান পন্ডিত ও বীরেন্দর শর্মা।
এই আটজনের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের দায়িত্ব পড়েছে মাসুদুর ও পালিয়াগুরুগের কাঁধে। এই ম্যাচে টিভি আম্পায়ার দুই আফগান পাকতিন ও শফি। ম্যাচ রেফারির দায়িত্বে অ্যান্ডি পাইক্রফট। বাংলাদেশের মাসুদুর আগেও ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচ পরিচালনা করেছেন। ২০২২ এশিয়া কাপে গ্রুপ পর্ব এবং সুপার ফোর দুটিতেই ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচে দেখা গিয়েছিল তাকে। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৬৪টি ম্যাচে মাঠের আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করেছেন ৫০ বছর বয়সি মাসুদুর। সাধারণত, যেকোনো টুর্নামেন্টে প্রথম পর্বের ম্যাচের আম্পায়ার তালিকাই আগে চূড়ান্ত করা হয়। পরের ধাপের আম্পায়ার নিয়োগ করা হয় ম্যাচের প্রতিপক্ষ ও আম্পায়ারের পারফরম্যান্স দেখে। এবারও সুপার ফোর পর্বের আম্পায়ার চূড়ান্ত করা হবে পরে।
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের তৃতীয় এশিয়া কাপ মাঠে গড়াচ্ছে কিছু দিন পরই। এই এশিয়া কাপ খেলতে বাংলাদেশ দল দুই ভাগে ভাগ হয়ে যাচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। তার প্রথম ভাগ রোববার সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে দেশ ছেড়েছে।
অধিনায়ক লিটন দাস আছেন এই বহরে। এই ফ্লাইটে তার সঙ্গী জাকের আলি অনিক, সাইফ হাসান, পারভেজ হোসেন ইমন, তানজিদ হাসান তামিম, শামীম হোসেন, তাওহিদ হৃদয়, শেখ মেহেদি হাসান, রিশাদ হোসেনরা। এছাড়া এই বহরে আছেন ফিল্ডিং কোচ জেমস প্যামেন্ট, স্ট্রেংথ এন্ড কন্ডিশনিং কোচ নাথান কেলি এবং বিসিবির মিডিয়া ম্যানেজার রাবিদ ইমামও।
পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় আরেক বহরে যাবেন বাকিরা। এই তালিকায় আছে নাসুম আহমেদ, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, তানজিম হাসান সাকিব, মোস্তাফিজুর রহমান, নুরুল হাসান সোহান ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের নাম। তাদের সঙ্গে সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, স্পিন কোচ মুশতাক আহমেদ, পেস কোচ শন টেইট, ম্যানেজার নাফিস ইকবাল, ট্রেনার বায়েজিদুল ইসলাম খান ও চিকিৎসক দেবশীষ চৌধুরীও যাবেন।
তবে এই দুই বহরে যাবেন না ফিল সিমন্স। তিনি রাত ১২.৩০ মিনিটের একটি ফ্লাইটে যাবেন আমিরাতে।
যাওয়ার আগে বিমানবন্দরে জাকের আলি বলেছেন, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নিয়েই দেশ ছাড়ছে দল। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে যদি বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য চ্যাম্পিয়ন হওয়া। আমরা ধাপে ধাপে ভালো খেলে ভালো একটা টুর্নামেন্ট খেলার জন্য যাচ্ছি।’
দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ফুটবলে আধিপত্য বিস্তার করে আসছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও লিওনেল মেসি। দুজনেই একে অপরকে ছাড়িয়ে নতুন নতুন মাইলফলক গড়েছেন। এবার আবারও এগিয়ে গেলেন রোনালদো। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে গোলের তালিকায় মেসিকে পেছনে ফেললেন তিনি।
আর্মেনিয়ার বিপক্ষে গ্রুপ ‘এফ’-এর প্রথম ম্যাচে জোড়া গোল করেন রোনালদো। তার দুই গোলে ভর কয়ে পর্তুগাল সহজেই ৫-০ ব্যবধানে জিতে যায়। এর ফলে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে তার ব্যক্তিগত গোলের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৮-এ। মেসির গোলসংখ্যা থেমে গেছে ৩৬-এ, তিনি তার শেষ বিশ্বকাপ বাছাই ম্যাচটা খেলে ফেলেছেন, তাই এই সংখ্যা আর বাড়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই।
রোনালদোর সামনে এখন আরেকটি ইতিহাস গড়ার সুযোগ। গুয়াতেমালার কার্লোস রুইজের দখলে আছে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ডটা। তিনি আছেন সবার উপরে ৩৯ গোল নিয়ে। রোনালদো যদি আরও একটি গোল করেন, তবে রেকর্ডে ভাগ বসাবেন। আর দুই গোল করলে একাই হয়ে যাবেন বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের সর্বোচ্চ গোলদাতা।
আগামীকাল ৯ সেপ্টেম্বর হাঙ্গেরির বিপক্ষে নামবে পর্তুগাল। সেই ম্যাচেই রেকর্ড গড়ার সুযোগ পেতে পারেন রোনালদো। আর যদি না হয়, তাহলেও ক্ষতি নেই। তার সামনে আরও অন্তত চারটি ম্যাচ রয়েছে তার সামনে।
শনিবার আর্মেনিয়ার বিপক্ষে জোড়া গোল করার মাধ্যমে রোনালদোর ক্যারিয়ার গোল দাঁড়িয়েছে ৯৪২-এ। জাতীয় দল ও ক্লাব মিলিয়ে এই সংখ্যা। ৪০ বছর বয়সেও তিনি বিশ্বের সর্বোচ্চ গোলদাতা। এখন তার লক্ষ্য ১ হাজার গোলের মাইলফলক ছোঁয়া।
আগামীকাল ৯ সেপ্টেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতে পর্দা উঠবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের এশিয়া কাপের। সে আসর শুরুর আগে এশিয়ার সর্বকালের সেরা টি-টোয়েন্টি একাদশ বেছে নিয়েছে ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট ইএসপিএন ক্রিকইনফো। তালিকায় বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি সাকিব আল হাসান।
বিশেষজ্ঞদের তৈরি করা ওই দলে ভারত থেকে সর্বোচ্চ চারজন, শ্রীলংকা থেকে তিনজন, পাকিস্তান থেকে দুইজন এবং আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে একজন করে ক্রিকেটারকে রাখা হয়েছে।
ক্রিকইনফোর ওই একাদশে ইনিংস শুরু করবেন শ্রীলংকার সনৎ জয়সুরিয়া ও মাহেলা জয়াবর্ধনে। তিন নম্বরে ভারতের বিরাট কোহলি, চার নম্বরে সুর্যকুমার যাদব এবং পাঁচ নম্বরে অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক মহেন্দ্র সিং ধোনি।
ছয় নম্বরে জায়গা পেয়েছেন বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান। এরপর আছেন শহীদ আফ্রিদি।
এশিয়ার সর্বকালের সেরা টি-টোয়েন্টি একাদশে আট নম্বরে আছেন আফগান অলরাউন্ডার রশিদ খান। দলের পেস আক্রমণে থাকছেন পাকিস্তানের উমর গুল, ভারতের জাসপ্রীত বুমরাহ ও শ্রীলংকার লাসিথ মালিঙ্গা। দ্বাদশ ব্যক্তি হিসেবে রাখা হয়েছে পাকিস্তানের স্পিনার সাঈদ আজমলকে।
এশিয়ার সর্বকালের সেরা টি-টোয়েন্টি একাদশ
সনৎ জয়সুরিয়া, মাহেলা জয়াবর্ধনে, বিরাট কোহলি, সুর্যকুমার যাদব, মহেন্দ্র সিং ধোনি (অধিনায়ক ও উইকেটকিপার), সাকিব আল হাসান, শহীদ আফ্রিদি, রশিদ খান, উমর গুল, জাসপ্রীত বুমরাহ ও লাসিথ মালিঙ্গা। দ্বাদশ ব্যক্তি- সাঈদ আজমল।
আবারও ইউএস ওপেন জিতে সেরেনার কীর্তি ছুঁলেন ‘হার্ডকোর্টের রানি’ সাবালেঙ্কা
আরিনা সাবালেঙ্কা আবারও প্রমাণ করলেন কেন তাকে আধুনিক হার্ডকোর্টের রানি বলা হয়। শনিবার ইউএস ওপেনের নারী এককে ফাইনালে তিনি ৬-৩, ৭-৬ (৩) গেমে হারালেন যুক্তরাষ্ট্রের অষ্টম বাছাই আমান্ডা আনিসিমোভাকে। এর মাধ্যমে টানা দ্বিতীয়বার ইউএস ওপেন জিতলেন বেলারুশিয়ান এই তারকা।
২৭ বছর বয়সী সাবালেঙ্কার এটি ক্যারিয়ারের চতুর্থ গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা। তিনি ২০২২ সালের পর থেকে কোনো হার্ডকোর্ট গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনাল মিস করেননি। সেরেনা উইলিয়ামসের পর প্রথম নারী খেলোয়াড় হিসেবে টানা দুটি ইউএস ওপেন জিতলেন তিনি। সেরেনা ২০১২ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত টানা তিনবার শিরোপা জিতেছিলেন।
খেলার পর সাবালেঙ্কা বলেন, ‘আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, যারা এসেছেন, যারা উড়ে এসে আমার বক্সে বসেছেন। আমি আরও অনেক ফাইনালে খেলব, আর পৃথিবীর যেখানেই থাকেন না কেন, আমি চাই আপনাদের আমার বক্সে দেখতে।’
অন্যদিকে দ্বিতীয়বার গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনাল খেলা ২৪ বছর বয়সী আনিসিমোভার জন্য দিনটি ছিল হতাশার। দর্শকরা ছিলেন তার পক্ষেই, কিন্তু তিনি ম্যাচে ছন্দ ধরে রাখতে পারেননি। ম্যাচ শেষে আবেগঘন কণ্ঠে আনিসিমোভা বলেন, ‘এটা দারুণ একটা গ্রীষ্ম ছিল। টানা দুই ফাইনাল খেলা ভালো, কিন্তু এটা একইসঙ্গে খুব কঠিনও। আমি আজ আমার স্বপ্নের জন্য যথেষ্ট লড়াই করতে পারিনি।’
ফাইনালে সাবালেঙ্কা ছিলেন প্রায় নিখুঁত, মাত্র ১৫টা আনফোর্সড ইরোর ছিল পুরো খেলায়। অন্যদিকে আনিসিমোভার ভুলের সংখ্যা ছিল ২৯টি। এই জায়গাতেই সাবালেঙ্কা এগিয়ে যান দারুণভাবে। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে দাপট দেখিয়ে শিরোপা ধরে রাখেন তিনি।
এশিয়া কাপ হকিতে বাংলাদেশ আগের মতো এবারও ষষ্ঠ স্থানেই অবস্থান করছে। রাকিবুল হাসান ও আশরাফুল ইসলামের নেতৃত্বে বাংলাদেশ দল ভারতের রাজগিরের বিহার স্পোর্টস ইউনিভার্সিটি হকি স্টেডিয়ামে পঞ্চম–ষষ্ঠ স্থান নির্ধারণী ম্যাচে জাপানের কাছে ৬-১ গোলে হেরে ফিরেছে। বাংলাদেশের একমাত্র গোলটি করেন আমিরুল ইসলাম।
ম্যাচের শুরুতে বাংলাদেশ প্রথম আট মিনিটে তিনটি পেনাল্টি কর্নার পেয়েও গোল করতে পারেনি। নবম মিনিটে জাপান প্রথম গোল করে এবং প্রথম কোয়ার্টারের শেষ মুহূর্তে ব্যবধান দ্বিগুণ করে। দ্বিতীয় কোয়ার্টারে বাংলাদেশ জাপানের গোল রোধ করলেও তৃতীয় ও চতুর্থ কোয়ার্টারে আরও চারটি গোল হজম করে।
ষষ্ঠ হওয়ায় সরাসরি বিশ্বকাপ বাছাই খেলার সুযোগ মিস করেছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক হকি ফেডারেশন (এফআইএইচ) বিশেষ নিয়ম অনুসারে, টুর্নামেন্টের শীর্ষ পাঁচে থাকা দলই সরাসরি বিশ্বকাপ বাছাই খেলতে পারবে। ষষ্ঠ দলকে পাকিস্তানের সঙ্গে তিন ম্যাচের প্লে-অফ খেলতে হবে।
বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক লে. কর্নেল রিয়াজুল হাসান (অব.) জানিয়েছেন, ‘আমরা চেষ্টা করব এই সিরিজ ঢাকায় আয়োজন করতে। তবে আমাদের টার্ফ পুরনো, এশিয়ান হকির পর্যবেক্ষক সন্তুষ্ট হলে সমস্যা নেই।’
১৯৮২ সাল থেকে এশিয়া কাপ হকিতে ১২ বার অংশ নেওয়া বাংলাদেশ দলের সর্বোচ্চ সাফল্য পঞ্চম স্থান। এবার ষষ্ঠ হওয়ায় বিশ্বকাপ বাছাইয়ে খেলার জন্য পাকিস্তানের সঙ্গে সিরিজ জেতার প্রয়োজন হবে।
লিগস কাপ ফাইনালে সিয়াটল সাউন্ডার্সের কাছে হেরেছিল লিওনেল মেসি, লুইস সুয়ারেজের দল ইন্টার মায়ামি। সে ম্যাচের পর মেজাজ হারিয়ে এক কর্মীর দিকে থুতু দেওয়ার মতো কাণ্ড করে বসেছিলেন তিনি। সে ঘটনায় এবার ক্ষমা চেয়েছেন সুয়ারেজ। গত বৃহস্পতিবার ইনস্টাগ্রামে তিনি এক বিবৃতিতে দুঃখ প্রকাশ করেন।
৩৮ বছর বয়সি উরুগুইয়ান তারকা লিখেছেন, ‘এটা ছিল অনেক দুশ্চিন্তা আর হতাশার মুহূর্ত। ম্যাচের পর কিছু ঘটনা ঘটে যা ঘটানো উচিত ছিল না। কিন্তু এ জন্য আমার প্রতিক্রিয়াকে বৈধতা দেওয়া যায় না। আমি ভুল করেছি এবং আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত।’
লুমেন ফিল্ডে ফাইনালে সাউন্ডার্স ৩-০ গোলে হারায় লিওনেল মেসির দলকে। শেষ বাঁশির পর সুয়ারেজ সাউন্ডার্সের তরুণ মিডফিল্ডার ওবেড ভার্গাসকে হেডলকে ধরে ফেলেন। এতে মাঠে দুই দলের খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ক্যামেরায় ধরা পড়ে, মাঠ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সুয়ারেজ সিয়াটলের এক নিরাপত্তা কর্মীর দিকে থুতু ছুড়ে দেন।
সুয়ারেজ বলেন, ‘যা ঘটেছে তার জন্য আমি খুব খারাপ অনুভব করছি। আমি চাইনি সুযোগ হাতছাড়া হোক, তাই সবাইকে জানাতে চাই এবং ক্ষমা চাই যারা আমার কারণে কষ্ট পেয়েছেন।’
তবে সেসব পেছনে ফেলে তিনি এখন সামনের দিকে তাকাচ্ছেন। তার কথা, ‘আমরা জানি মৌসুমের এখনো অনেকটা পথ বাকি। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করব এই ক্লাব এবং এর সমর্থকদের প্রাপ্য সাফল্য এনে দিতে।’
ইন্টার মিয়ামি গত বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানায়, ‘এ ধরনের আচরণ আমাদের খেলাধুলার মূল্যবোধকে প্রতিফলিত করে না। মাঠে ও মাঠের বাইরে আমরা সর্বোচ্চ ক্রীড়াসুলভ মান বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
ঘটনার পর কী শাস্তি হতে পারে তা নিয়ে জল্পনা চলছে। বিতর্কিত ঘটনার জন্য আগে একাধিকবার শাস্তি পেয়েছেন সুয়ারেজ। ২০১৪ বিশ্বকাপে তিনি ইতালির জর্জিও কিয়েলিনিকে কামড় দেওয়ার ঘটনায় ৪ মাসের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন। এছাড়া ক্লাব ফুটবলেও কামড়ের জন্য শাস্তি ভোগ করেছেন তিনি। ২০১১ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের খেলোয়াড় প্যাট্রিস এভরাকে বর্ণবাদী গালি দেওয়ার অভিযোগে ইংল্যান্ডে তাকে আট ম্যাচ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপেও বিতর্কে জড়ান সুয়ারেজ। ঘানার বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে গোললাইন থেকে ইচ্ছাকৃত হাতে বল ঠেকিয়ে দেন তিনি, যা আফ্রিকান দলটির নিশ্চিত জয় কেড়ে নিয়েছিল।
আর্জেন্টিনার জার্সিতে ঘরের মাঠে নিজের শেষ প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলে ফেলেছেন লিওনেল মেসি। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে এই ম্যাচে আবেগে ভাসতে দেখা গেছে তাকে। ওয়ার্মআপের সময় তার চোখের কোণে উঁকি দিচ্ছিল জল। পরে অবশ্য ম্যাচে শুধুই হেসেছেন মেসি। জোড়া গোল করেছেন, গড়েছেন বিশ্ব রেকর্ড।
এদিন মাঠে নামার সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্ব রেকর্ডে নাম ওঠে যায় আর্জেন্টিনার অধিনায়কের। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার রেকর্ড ছিল এতদিন এককভাবে ইকুয়েডরের ইভান হুর্তাদোর দখলে ছিল।
আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টসের তথ্যমতে, তিনি ৭১টি বাছাইয়ের ম্যাচ খেলেছেন। ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে ৭২তম ম্যাচ খেললেন মেসি। এর মধ্যে ৪৫ বার তিনি ঘরের মাঠে নেমেছিলেন। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ৭২ ম্যাচের মধ্যে মেসির দল জিতেছে ৪০টিতে। এছাড়া ২০ ম্যাচ ড্র এবং ১২টিতে হেরেছে।
যদিও লাতিন আমেরিকার কনমেবল বলছে হুতার্দো ও মেসি সমান ৭২ ম্যাচ খেলেছেন বাছাইপর্বে।
এদিকে ভেনেজুয়েলা ম্যাচের পর ফের ২০২৬ বিশ্বকাপে নিজের খেলার সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে মেসিকে। তিনি বলেছেন, ‘আগেও বলেছি, হয়তো আর কোনো বিশ্বকাপ খেলব না। বয়সের কারণে সেটা স্বাভাবিক। তবে আমরা প্রায় পৌঁছে গেছি, তাই খেলতে পারার সম্ভাবনা আছে।’
‘আমি সবকিছু দিন ধরে দেখি, শরীর কেমন যাচ্ছে সেটা বোঝে সিদ্ধান্ত নেই। আমি যখন ভালো থাকি, উপভোগ করি। কিন্তু ভালো না লাগলে খেলাটা আমার জন্য কষ্টের হয়ে যায়। তখন মাঠে না থাকাই ভালো। তাই দেখা যাক সামনে কী হয়’-যোগ করেন মেসি।
ফুটবল বিশ্বে ব্রাজিলের পরিচিতি ‘পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন’ হিসেবে। তবে ফুটসালে তাদের দাপট আরও প্রবল। সে মঞ্চেই এবার ঘটে গেল এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। একটি অপেশাদার ফুটসাল টুর্নামেন্টে প্রাণ হারালেন ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক এডসন।
ঘটনাটি ঘটে ব্রাজিলের প্যারা প্রদেশে, একটি স্থানীয় ফুটসাল টুর্নামেন্টে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, প্রতিপক্ষের একটি শক্তিশালী পেনাল্টি শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান ৩৮ বছর বয়সি এডসন। বলটি সরাসরি তার বুকের মাঝ বরাবর আঘাত হানে।
শট ঠেকানোর আনন্দে কয়েক কদম এগিয়ে সতীর্থদের দিকে যেতে গিয়েই হঠাৎ মুখ থুবড়ে পড়ে যান তিনি। উপস্থিত মেডিকেল টিম দ্রুত এগিয়ে এসে প্রাথমিক চিকিৎসা দিলেও তাতে অবস্থার উন্নতি হয়নি। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকদের সব প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয়। শেষ পর্যন্ত জীবনযুদ্ধে হেরে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান গোলরক্ষক এডসন।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, মৃত্যুর সঠিক কারণ এখনো নির্ধারিত হয়নি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে মাঠে থাকা একজন অ্যাথলেটের এমন মৃত্যুর ঘটনায় গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে ব্রাজিল ক্রীড়াঙ্গনে।
সম্ভাব্য শেষবারের মতো জাতীয় দলের জার্সিতে দেশের মাটিতে খেললেন লিওনেল মেসি। ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে তার জোড়া গোলেই আর্জেন্টিনা জিতেছে ৩-০ ব্যবধানে। মেসিকে ঘিরে বুয়েনস আয়ার্সের মনুমেন্তাল স্টেডিয়ামে ৮০ হাজারের বেশি দর্শকের সামনে তৈরি হয় এক আবেগঘন দৃশ্যের। ম্যাচ শেষে সোশ্যাল মিডিয়ায় স্বামীকে নিয়ে আবেগঘন বার্তা দিয়েছেন আন্তোনেল্লা রোকুজ্জো।
স্লোভাকিয়ার কাছে হেরে শিষ্যদের কঠোর হুঁশিয়ারি জার্মানি কোচেরস্লোভাকিয়ার কাছে হেরে শিষ্যদের কঠোর হুঁশিয়ারি জার্মানি কোচের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচটি ছিল ৩৮ বছর বয়সি মেসির ক্যারিয়ারের ১৯৪তম আন্তর্জাতিক ম্যাচ। আর্জেন্টিনার জার্সিতে তার গোলসংখ্যা ১১৪টি। এদিন সন্তানদের হাত ধরে মাঠে নামেন মেসি। গ্যালারির গর্জনে ভেসে যাচ্ছিল আকাশ, সমর্থকদের চোখেমুখে বিদায়ের আবেগ। জাতীয় সংগীতের সময় চোখের জল আটকাতে পারেননি ৩৮ বছর বয়সি আর্জেন্টাইন সুপারস্টার। কাঁদছিলেন অসংখ্য দর্শক-সমর্থকরাও।
বিসিবি সভাপতিকে নজিরবিহীন হুমকি; সশস্ত্র নিরাপত্তার আবেদনবিসিবি সভাপতিকে নজিরবিহীন হুমকি; সশস্ত্র নিরাপত্তার আবেদন ম্যাচ শেষে সোশ্যাল মিডিয়ায় রোকুজ্জো লিখেছেন, ‘তোমার জন্য গর্বিত। প্রতিটি পদক্ষেপে, প্রতিটি অর্জনে, যা তুমি ভালোবাসা ও কঠোর পরিশ্রম দিয়ে গড়ে তুলেছ, আমরা তার সাক্ষী। আমরা কতটা সৌভাগ্যবান, তোমার এই পথচলায় তোমার সঙ্গে থাকতে পেরে! আমরা তোমাকে ভালোবাসি মেসি।’
খেলা শেষে আবেগঘন কণ্ঠে মেসি বলেছিলেন, ‘এটা খুব আবেগময় মুহূর্ত। এই মাঠে আমি অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। আর্জেন্টিনায় আমাদের জনগণের সঙ্গে খেলা সবসময়ই আনন্দের। আমরা বহু বছর ধরে একের পর এক ম্যাচ উপভোগ করে আসছি। আমি খুব খুশি। এখানে এভাবে শেষ করতে পারাটাই আমার স্বপ্ন ছিল। বার্সেলোনায় আমি বহু বছর ধরে ভালোবাসা পেয়েছি, স্বপ্ন ছিল আমার দেশের জনগণের থেকেও এটা পাব।’
এশিয়া কাপ হকিতে কাজাখস্তানকে ৫-১ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে হকি বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। আগামী বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বরে ভারতে বসবে হকি বিশ্বকাপের আসর। ওই আসরে জায়গা পেতে বাছাইপর্বের জন্য উন্নীত হয়েছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
গত বুধবার ভারতের রাজগীর স্পোর্টস কমপ্লেক্সের বিহার ইউনিভার্সিটি হকি স্টেডিয়ামে প্রথম কোয়ার্টারে ১-০ গোলের লিড নেয় বাংলাদেশ। প্রথম গোলটি করেন আশরাফুল ইসলাম। ১৫ মিনিট করে চলা দ্বিতীয় কোয়ার্টারে দুই গোল করে বাংলাদেশ। লিড দাঁড়ায় ৩-০।
দ্বিতীয় কোয়ার্টারের প্রথম গোলটি পেনাল্টি থেকে পায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় গোলটি করেন রোমান সরকার। পরে তিনি নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন। যে গোলটি আসে তৃতীয় কোয়ার্টারে ৩২ মিনিটে। পরেই তায়েব আলী পঞ্চম গোল করে কাজাখস্তানের ম্যাচে ফেরার সুযোগ শেষ করে দেয়।
বাংলাদেশ বড় লিড নেওয়ার পর একটি গোল শোধ করে কাজাখস্তান। ম্যাচের ৩৭ মিনিটে গোল করে তারা। চতুর্থ কোয়ার্টারে হয়নি কোনো গোল। এই জয়ে এশিয়া কাপের টেবিলে পাঁচে থাকায় বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে খেলার সুযোগ পেল বাংলাদেশ।
অথচ এবারের হকির এশিয়া কাপে খেলারই কথা ছিল না বাংলাদেশের। নিরাপত্তা উদ্বেগ ও আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে পাকিস্তান টুর্নামেন্ট থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেয়। সেখানে জায়গা পায় বাংলাদেশ। আর্থিক সংকটের কারণে ওমানও খেলতে আসেনি। তাদের জায়গায় সুযোগ পেয়েছিল কাজাখস্তান।
বুয়েনস আয়ার্সের এএফএ সদর দপ্তরে তার সঙ্গে দেখা করতে আসেন গঞ্জালো গার্সিয়া। তিনি রেসিং ক্লাবের ষষ্ঠ বিভাগের বর্তমান কোচ। সঙ্গে এনেছিলেন একটি বিশেষ জার্সি, যা উপহার দেন মেসিকে।
এ জার্সিটি ছিল ‘লা ক্রেমা’ নামের এক অপেশাদার ক্লাবের। ক্লাবটি ২০২৪ সালের কোপা পোত্রেরো জয়ী দল, যেটি আয়োজন করেছিলেন মেসির ঘনিষ্ঠ বন্ধু সার্জিও আগুয়েরো।
আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি লিওনেল মেসির সম্ভাব্য শেষ বিশ্বকাপ বাছাই ম্যাচকে ঘিরে আবেগাপ্লুত পুরো দেশ। আগামীকাল বুয়েনস আয়ার্সে ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে নামবে আর্জেন্টিনা। ম্যাচের আগের সংবাদ সম্মেলনে চোখের পানি আটকাতে সেখানে হাজির হওয়া এক সাংবাদিক, চোখের পানি ফেলেছেন আর্জেন্টাইন কোচ লিওনেল স্কালোনিও।
সংবাদ সম্মেলনে স্কালোনি মেসির বিদায় নিয়ে কথা বলছিলেন, ঠিক তখনই ঘটল ঘটনাটা। এক সাংবাদিক মেসিকে নিয়ে আবেগে ভেসে যান, কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
তখন স্কালোনি হালকা গলায় বলতে চান, ‘আপনি কাঁদছেন? এটা আমার উদ্দেশ্য ছিল না।’ সাংবাদিক তখন জবাব দেন, ‘আপনি আমাকে জীবনের সবচেয়ে বড় আনন্দটা দিয়েছেন।’
সেই কথার পর স্কালোনির চোখ ভিজে ওঠে, কণ্ঠও কাঁপছিল। স্কালোনি বলেন, ‘আমি ওর সঙ্গে খেলেছি, শুধু বলটা পাস করাটাই ছিল বিশেষ কিছু। ওর সঙ্গে বিশ্বকাপে থাকা, আর তাকে ট্রফি উঁচিয়ে ধরতে দেখা- এটা সত্যিই আবেগের বিষয়। সময়ের সঙ্গে সবাই আরও ভালোভাবে বোঝতে পারবে এটার মানে কী।’
‘কালকের দিনটা সুন্দর আর আবেগঘন হবে। আমি মনে করি এটা তার শেষ ম্যাচ নয় আর্জেন্টিনায়। আমরা নিশ্চিত করব সে আবার খেলুক, যদি সে চায়। কারণ এটা তার পাওনা।’
মেসির প্রতি নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করে স্কালোনি আরও বলেন, ‘যদি আপনি এই অবস্থানে না থাকেন তাহলে এটা বোঝা কঠিন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, সে আজ আমাদের সঙ্গে আছে, আর আমরা তাকে উপভোগ করি। আমি প্রতিদিন তাকে কোচ করার আনন্দ উপভোগ করি।’
মেসি এখন পর্যন্ত আর্জেন্টিনার হয়ে ১৯৩ ম্যাচে খেলেছেন। গোল করেছেন ১১২টি। জাতীয় দলের হয়ে তিনি জিতেছেন চারটি শিরোপা- বিশ্বকাপ, দুটি কোপা আমেরিকা ও একটি ফিনালিসিমা।
স্কালোনি নিশ্চিত করেছেন ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে মাঠে নামছেন মেসি। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই সে খেলবে, না খেলার কোনো প্রশ্নই আসে না।’ তবে ইকুয়েডরের বিপক্ষে পরের ম্যাচে খেলবেন কি না, তা নির্ভর করছে ভেনেজুয়েলা ম্যাচ শেষে তার শারীরিক অবস্থার ওপর।
মেসির পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা থাকবেন এই ম্যাচে। তাই বুয়েনস আয়ার্সের মাঠে মেসির সম্ভাব্য বিদায়ী ম্যাচ হতে যাচ্ছে ইতিহাসের অংশ।
গত জানুয়ারিতে অনলাইন দাবায় পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ম্যাগনাস কার্লসেনকে হারিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছিল ১০ বছর বয়সি বাংলাদেশের দাবাড়ু রায়ান রশিদ। রাজধানীর সাউথ পয়েন্ট স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির এই ছাত্রের বিশ্ব দাবায় খেলা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। প্রতিভাবান এই খুদে দাবাড়ুর ওয়ার্ল্ড ক্যাডেট চেস চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেওয়া অনিশ্চিত। আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর কাজাখস্তানে শুরু হবে এই প্রতিযোগিতা। অনূর্ধ্ব-১০ বছর বিভাগে টানা তিনবারের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন রায়ান এরই মধ্যে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য নাম নিবন্ধন করেছে। স্পন্সর না পাওয়ায় কাজাখস্তানে যাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ২ বছর আগে কিরগিজস্তানে ওয়েস্টার্ন এশিয়ান ইয়ুথ চেস চ্যাম্পিয়নশিপের অনূর্ধ্ব-১০ বিভাগে ব্রোঞ্জজয়ী রায়ান বর্তমানে স্ট্যান্ডার্ড রেটিংয়ে অনূর্ধ্ব-১০ বছর বয়সিদের মধ্যে ১৭তম, এশিয়ায় সপ্তম। র্যাপিডে দ্বিতীয়। তার বর্তমান স্ট্যান্ডার্ড রেটিং ২০৭০, র্যাপিড রেটিং ২১৭৫।
রায়ানের চাচা মাকসুদুর রশীদ বলেন, ‘রায়ানের মেধা বিকাশের জন্য নিয়মিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া জরুরি। পারিবারিক উদ্যোগে তাকে এর আগে বিদেশে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সব খরচ পরিবার থেকে বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। এ জন্য আমরা পৃষ্ঠপোষকতা খুঁজছি। যদি কোনো করপোরেট প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসত তাহলে সে হয়তো বিশ্ব দাবায় দেশের নাম উজ্জ্বল করতে পারত।’
ওয়ার্ল্ড ক্যাডেট চেস চ্যাম্পিয়নশিপে অনূর্ধ্ব-৮, অনূর্ধ্ব-১০ এবং অনূর্ধ্ব-১২ ক্যাটাগরির স্ট্যান্ডার্ড, র্যাপিড এবং ব্লিৎজ- এই তিন বিভাগে খেলা হয়। এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য কোচ নাঈম হকের অধীনে প্রায় ৩ মাস প্রস্তুতি নিচ্ছে রায়ান। বয়স কম হওয়ায় অভিভাবক হিসেবে কাজাখস্তানে তার সঙ্গে কোচকে পাঠাতে আগ্রহী পরিবার। কিন্তু দুজনের কারোর জন্যই স্পন্সর জোগাড় করা যায়নি।
রায়ানের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে যাওয়ার ব্যাপারে দাবা ফেডারেশনের সভাপতি সৈয়দ সুজাউদ্দিন বলেন, ‘আমি আসলে এসব বিষয় দেখি না। এগুলো দেখেন সাধারণ সম্পাদক তৈয়বুর রহমান ও আন্তর্জাতিক আরবিটর হারুন উর রশিদ। রায়ানের খেলার ব্যাপারে আমি অনুমোদন দিয়েছি। এর বেশি কিছু জানি না।’ তার চাচা মাকসুদুর রশীদের দাবি, ফেডারেশনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতার ব্যাপারে কোনো সাড়া মিলেনি।