বিপিএলটা তার একেবারে খারাপ কাটেনি। বিশেষ করে শেষদিকে এসে তো দারুণ ছন্দেই ফিরেছিলেন, তার দলও শিরোপা জিতেছিল। কিন্তু ইংল্যান্ডের পেস বোলিংয়ের সামনে পড়তেই যেন খেই হারিয়ে ফেললেন লিটন দাস।
সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে তার ব্যাটে রান তো ছিলই না, আউট হওয়ার ধরনও অবাক করেছে। প্রথম ম্যাচে পুরোটা সময়ই তাকে দেখে মনে হয়েছে, অস্বস্তিতে আছেন। ব্যাটে বলেই ঠিকমতো হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত ১৫ বলে ৭ রান করে ওকসের বলে এলবিডাব্লিউ হয়েছিলেন। পরের ম্যাচে অস্বস্তিতে ছিলেন কি না, তা বলার মতো সময়ই পাওয়া যায়নি। প্রথম বলেই আউট!
তবে মিরপুরে দ্বিতীয় ম্যাচে যেভাবে স্যাম কারেনের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে বাতাসে আলস্যে ব্যাট চালিয়ে উইকেট বিলিয়ে দিয়েছিলেন, আজ চট্টগ্রামে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচেও ঠিক একইভাবে আউট লিটন! এবারও রান ০, ‘উন্নতি’ বলতে এবার ইনিংসের স্থায়ীত্ব দ্বিতীয় ম্যাচের চেয়ে দুই বল বেশি!
ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের শেষ দুই ম্যাচেও সেভাবে রান না পাওয়া লিটনের তাই সর্বশেষ পাঁচটি আন্তর্জাতিক ওয়ানডে মিলিয়ে রান ৪৩ – এর মধ্যে ভারতের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে করেছেন ২৯।
প্রথম দুই ম্যাচেই হেরে সিরিজ খোয়ানো বাংলাদেশ আজ চট্টগ্রামে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে টস জিতে আগে ব্যাট নেয়ার পর ইনিংসের প্রথম ওভারেই লিটনকে হারিয়েছে। পঞ্চম বলে দলকে ১ রানে রেখে আউট লিটন। ১৩ বল পর ফিরে গেছেন তামিমও, দলের রান তখন মাত্র ১৭। ফ্লিক করতে গিয়েছিলেন, কিন্তু ব্যাটের ওপরের দিকের কানায় লেগে বল গেছে পয়েন্টে।
লিটনের মতো তামিমও আউট স্যাম কারেনের বলে। দ্বিতীয় ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও বাংলাদেশকে শুরুতেই নাড়িয়ে দিয়েছে কারেনের সুইং আর বাউন্স। তবে বল কিছুটা নিচু হয়ে আসা একটু ধীর পিচে এরপর বাংলাদেশের ইনিংস পুনর্গঠনের দায়িত্ব দারুণভাবে পালন করছিছেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিম। দৃষ্টিকটু রানআউটে শান্ত আউট হওয়ার আগে তৃতীয় উইকেটে দুজনের জুটিতে এসেছে ৯৮ রান।
শান্তর পর মুশফিকও তুলে নিয়েছেন ফিফটি। দুজনের ইনিংসের ধরন একই – শুরুতে একেবারে দেখেশুনে ক্রিজে কিছুটা সময় পার করা, তারপর সিঙ্গেল-ডাবলসের ফাঁকে ফাঁকে বাউন্ডারি। মজার ব্যাপার, দুজন ফিফটিও ছুঁয়েছেন ঠিক ৬৯ বলে।
দুজনের জন্য এই ইনিংস দুই রকম মাহাত্ম্য নিয়েও আসছে। শান্ত বিপিএলের ফর্মটাই এই সিরিজে টেনে এনেছেন। প্রথম ম্যাচের পর আজ তৃতীয় ম্যাচেও পেয়েছেন ফিফটি। ৭১ বলে ৫ চারে ৫৩ রান করেছেন। ব্যাটিং অর্ডারের তিনে জায়গা অনেকটা পোক্ত করার স্বস্তি তার।
আর মুশফিক রান পেলেন অনেকদিন পর। গত আগস্টে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অপরাজিত ৫২ রানের পর আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে ৭ ম্যাচে একবারই মাত্র বিশের ঘরে যেতে পেরেছেন মুশফিক। তার ফর্ম নিয়ে তাই প্রশ্ন উঠছিল। চট্টগ্রামে আজ সেদিক থেকে কিছুটা স্বস্তি পাবেন মুশফিক।
দুজনের ইনিংসে ধৈর্যের প্রশংসাও করতে হয়। তামিম আউট হওয়ার আগে স্যাম কারেনের বলকে একবার সীমানার বাইরে পাঠানো শান্ত তামিম আউট হওয়ার পর প্রায় ৮ ওভারে কোনো বাউন্ডারি মারেননি। তামিম আউট হওয়ার সময় তার রান ছিল ৯ বলে ৫, আর ১২তম ওভারের পঞ্চম বলে আর্চারকে নিজের দ্বিতীয় বাউন্ডারি মারার আগে তার রান ছিল ৩১ বলে ১০।
মুশফিকও শুরু করেছেন ধীরে। সপ্তম ওভারের পঞ্চম বলে স্যাম কারেনকে প্রথম চার মারার আগে তার ইনিংসে প্রথম ১৪ বলে রান ছিল ৪। তবে এরপর মুশফিক মূলত ‘টার্গেট’ করেছেন ইংল্যান্ডের পেসার আর অভিষিক্ত লেগ স্পিনার রেহান আহমেদকে, আর শান্তর টার্গেট ছিলেন মূলত আরেক ইংলিশ স্পিনার মঈন আলী।
তার প্রমাণ দেবে স্কোরকার্ড। কারেন আর আর্চারকে প্রথম দুই চার মারার পর শান্ত’র ইনিংসে পাঁচ চারের বাকি তিনটি মঈনের বলে। আর মুশফিক এ পর্যন্ত ইনিংসে ছয়টি চার মেরেছেন, তার চারটি আর্চার (৩) আর কারেনের বলে, বাকি দুটি রেহানের বলে। স্পিনের ক্ষেত্রে দুজনেরই সুইপ আর রিভার্স সুইপের ব্যবহার বেশি চোখে পড়েছে।
ফিফটির পর মুশফিকের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে শান্ত রানআউট হয়ে গেলেও এই প্রতিবেদন লেখার সময় মুশফিক ব্যাটিং করছেন ৮৪ বলে ৬৭ রানে। ক্রিজে তার সঙ্গী সাকিবের রান ১৬ বলে ১১। বাংলাদেশের রান ৩০ ওভারে ৩ উইকেটে ১৪৪।
রানরেট পাঁচের কাছাকাছি, উইকেট হাতে আছে ৭টি। ১৭ রানে ২ উইকেট হারানো দলের জন্য মন্দ নয়।
গত ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে ব্যাটে রানের ফোয়ারা ছুটিয়েছিলেন জস বাটলার। ১৭ ম্যাচে করেছিলেন ৮৬৩ রান। সেই বাটলার চলতি আইপিএলের মুদ্রার উল্টো পিঠটাও দেখে ফেললেন। পারলে ভুলে যেতে চাইবেন এমনই এক রেকর্ড গড়ে ফেললেন ইংলিশ এই ব্যাটসম্যান। আর সে রেকর্ডটি হলো-আইপিএলের এক আসরেই পাঁচ বার শূন্য রানে আউট হওয়া।
পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে শুক্রবার কাগিসো রাবাদার বলে রানের খাতা খোলার আগেই এলবিডব্লুউর শিকার হয়ে যান বাটলার। আর তাতেই বিব্রতকর এক রেকর্ড, আইপিএলের এক আসরেই পঞ্চম ‘ডাক’ -এর মালিক হয়ে যান বাটলার।
আইপিএলের ইতিহাসে এই প্রথম এক আসরে কোনো ব্যাটসম্যানের পাঁচ বার শূন্য রানে আউট হওয়া। এর আগে ছয়জন ব্যাটসম্যানের চার বার করে ডাক মারার রেকর্ড আছে। তারা হলেন- হার্শেল গিবস (হায়দরাবাদ, ২০০৯), মিথুন মানহাস (পুনে, ২০১১), মনীষ পান্ডে (পুনে,২০১২), শিখর ধাওয়ান (দিল্লি, ২০২০), এউইন মরগান (কলকাতা, ২০২১) ও নিকোলাস পুরান (পাঞ্জাব, ২০২১)। তবে বাটলার আরও একবার বেশি শূন্য রানে আউট হয়ে সবার লজ্জ্বা আড়াল করে গড়েছেন পাঁচ ‘ডাক’-এর রেকর্ড|
তিনি গিয়েছিলেন ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড টুর্নামেন্টের ফাইনালে প্রধান অতিথি হয়ে। কিন্তু অক্টোবরে বিশ্বকাপ আর সে দলে দু-একটি জায়গা নিয়ে যখন সংশয় আছে, বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন তখন কোথাও যাওয়া মানেই তো সংবাদমাধ্যমের দিক থেকে প্রশ্ন ছুটে যাওয়া। মিরপুরে গতকালও এর ব্যতিক্রম হলো না।
তবে পাপনের উত্তরে আজ বোঝা গেল, বিশ্বকাপের দল সাত নম্বরে কে থাকবেন- এ নিয়ে গত কয়েক দিনে ক্রিকেটপাড়া গরম করে প্রশ্নটারই উত্তর খুঁজছে বিসিবি।
বিশ্বকাপের দল কেমন হতে পারে, সে নিয়ে প্রশ্নে বিসিবি সভাপতির শুরুটা হলো মৃদু রসিকতায়। সাংবাদিকদের উদ্দেশ করে বললেন, ‘এখানে ক্রিকেট সম্পর্কে প্রত্যেকেই আমার চেয়ে বেশি জানেন। আমি চিন্তা করছি আপনাদের কাছে নাম চাইব যে- সেরা একাদশ তৈরি করে দিন। এটা হলে ভালো হয় না? জানতে তো পারলাম।’
এরপর অবশ্য নিজের ধারণা জানিয়ে দিয়েছেন বিসিবি সভাপতি। ‘আমাকে যদি জিজ্ঞেস করেন-তামিম, লিটন, শান্ত, হৃদয়, মুশফিক, সাকিব- এই ছয়জনের মধ্যে কাউকে বাদ দেয়া যাবে বলে মনে হয় না। ওপেনিংয়ে নাঈম শেখ ও বিজয়, তারাও ভালো পারফর্ম করছে। তারাও আসতে পারে। কে আসবে আমি জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ বলছি’- জানালেন নাজমুল হাসান।
ওপেনিংয়ে চোটের ব্যাকআপ হিসেবে একজনকে বাড়তি নেয়া হতে পারে- এ ধারণা জানিয়ে বোলিং বিভাগে তিন পেসার নিয়ে খেলা নিশ্চিত বলেও জানিয়েছেন নাজমুল হাসান। এরপর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, আফিফ হোসেনদের সম্ভাবনা নিয়ে বললেন, ‘কোনো কারণে পাঁচ বোলার নিয়ে খেললে একটা সুযোগ আসে একজন বাড়তি ব্যাটার খেলানোর। ওখানে এখন স্কোয়াডে আছে রাব্বি (ইয়াসির আলী)। স্কোয়াডে নেই কিন্তু যেকোনো সময় ঢুকতে পারে আফিফ, মাহমুদউল্লাহ, মোসাদ্দেক।’
আইপিএল নিলামে চতুর্থ সর্বোচ্চ ১৬ কোটি ২৫ লাখ ভারতীয় রুপিতে বেন স্টোকসকে কিনে নিয়েছিল চেন্নাই সুপার কিংস। স্টোকস যে মানের অলরাউন্ডার, তাতে এই দামটা আহামরি কিছু নয়। কিন্তু যে আশায় এত অর্থ খরচ করে তাকে নেয়া, সেটা পূরণ হয়েছে কি! এক কথায় হয়নি। দুই ম্যাচ খেলেই যে ইংলিশ এই অলরাউন্ডারের আইপিএল শেষ হওয়ার পথে!
পায়ের আঙুলের চোটে ২ ম্যাচ খেলেই বেঞ্চে জায়গা নিয়েছেন স্টোকস। ওই দুই ম্যাচেও নিজেকে মেলে ধরতে ব্যর্থ। করেছেন ১৫ রান, এক ওভার বোলিং করে ১৮ রান দিয়ে থেকেছেন উইকেটশূন্য। সেই চোট থেকে সেরে উঠতে না উঠতেই আরেক চোটে পড়েন স্টোকস। দলের পক্ষ থেকে যদিও পরের চোটটির কোনো ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি, কিন্তু বোলিংয়ের জন্য ফিট নন বলেই ম্যাচের পর ম্যাচে বেঞ্চে বসিয়ে রাখা হচ্ছে সোয়া ১৬ কোটি রুপির এই অলরাউন্ডারকে।
তাকে নিয়ে চিন্তায় শুধু কী চেন্নাই, ইংল্যান্ডও। ১৬ জুন শুরু হতে যাওয়া অ্যাশেজের প্রস্তুতি হিসেবে ১ জুন থেকে আইরিশদের বিপক্ষে একটি টেস্ট খেলবে ইংল্যান্ড। সেই টেস্টে খেলার কথা স্টোকসের। কিন্তু বর্তমানে তার যে অবস্থা তাতে, সেই টেস্ট এবং অ্যাশেজে স্টোকসের বোলিং করা নিয়ে একটা শঙ্কা তো থাকছেই।
এ অবস্থায় আইপিএলের মাঝ পথেই দেশে ফিরে যেতে পারেন বেন স্টোকস। ইএসপিএন ক্রিকইনফোর তেমনই খবর দিয়েছে। ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইটটির তথ্যানুযায়ী, আইপিএলের প্রাথমিক পর্ব শেষেই দেশে ফিরে যাবেন স্টোকস। প্লে অফে আর দলের সঙ্গে থাকবেন। স্টোকস আগেই জানিয়ে রেখেছিলেন, ইংল্যান্ডের টেস্ট মৌসুম শুরুর আগে প্রস্তুতির জন্য নিজেকে পর্যাপ্ত সময় দেবেন।
তাহলে দাঁড়ালটা কী- দুই ম্যাচ খেলেই আইপিএল শেষ ১৬ কোটি ২৫ লাখ রুপির স্টোকসের!
খবরটা হঠাৎই এসেছে এবং খবরটা হৃদয় ভেঙে দেয়ার মতো। জিম্বাবুয়ের কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক বোলিং কোচ হিথ স্ট্রিক ক্যানসারে আক্রান্ত। ক্যানসার অনেকদূর ছড়িয়েও গেছে– চতুর্থ ধাপ চলছে এখন। এমনই অবস্থা যে, দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়তে থাকা স্ট্রিকের সঙ্গে দেখা করতে তড়িঘড়ি করে লন্ডনে থাকা তার পরিবারের লোকজনকে ডেকে নেয়া হয়েছে।
৪৯ বছর বয়সী হিথ স্ট্রিকের শারীরিক অবস্থা জানিয়ে জিম্বাবুয়ের ক্রীড়ামন্ত্রী ক্রিস্টি কভেন্ট্রি টুইটে লিখেছেন, ‘হিথ স্ট্রিক তার শেষ দিনগুলো গুনছেন। যুক্তরাজ্য থেকে তার পরিবার দক্ষিণ আফ্রিকায় যাচ্ছে। শুধু একটা মিরাকলই পারে তাকে বাঁচাতে। সবাই প্রার্থনা করুন তার জন্য।’
জিম্বাবুয়ের বর্তমান দলের অলরাউন্ডার শন উইলিয়ামস সব সময় স্ট্রিককে নিজের মেন্টর মেনেছেন, স্ট্রিকের সঙ্গে তার সম্পর্কটাও বন্ধুর মতো। তার কাছ থেকে আরেকটু বিস্তারিত জানা গেছে নব্বই দশক আর এই শতকের শুরুতে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট রাঙানো স্ট্রিকের ক্যানসারের ব্যাপারে, ‘হিথের কোলন ও লিভার ক্যানসার (চতুর্থ ধাপ)। এ মুহূর্তে এতটুকুই জানি যে হিথের পরিবারের কাছের লোকদের দক্ষিণ আফ্রিকায় ওর কাছে ডাকা হয়েছে, এর বেশি কিছু এই মুহূর্তে জানি না।’
স্ট্রিকের ক্যানসার খুব দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ছে বলেও অনুমান উইলিয়ামসের, ‘আমি তাকে মেসেজ করেছিলাম, উনি সেটার উত্তরও দিয়েছেন। তবে এই মুহূর্তে তার পরিবার সবকিছু জনসম্মুখে আনতে চাইবে না, এটাই স্বাভাবিক। শুনে মনে হচ্ছে ক্যানসার খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে, কারণ গত সপ্তাহেই তিনি মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। আমরা সবাই শুধু প্রার্থনা করছি যেন তিনি ঠিক হয়ে যান!’
জিম্বাবুয়ের জার্সিতে ৬৫ টেস্ট ও ১৮৯ ওয়ানডে খেলা স্ট্রিক দেশটির ইতিহাসে এখনো ১০০-র বেশি টেস্ট উইকেট ও ২০০-র বেশি ওয়ানডে উইকেট পাওয়া একমাত্র বোলার। ২০০৪ সালে বোর্ডের সঙ্গে ঝামেলায় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেয়া স্ট্রিক পরের বছর মাত্র ৩১ বছর বয়সেই অবসরে চলে যান। খেলা ছাড়ার পর বাংলাদেশ জাতীয় দলের বোলিং কোচ ছাড়াও জিম্বাবুয়ের জাতীয় দলে অনেক ভূমিকায়ই দায়িত্ব পালন করেছেন। কোচিং করিয়েছেন কলকাতা নাইট রাইডার্স ও সমারসেটেও।
অবশ্য বছর দুয়েক আগে নেতিবাচক কারণে খবরের শিরোনাম হয়েছিলেন স্ট্রিক। আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী নীতিমালার পাঁচটি ধারা ভেঙে আট বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন।
সেসব ভুলে এখন শুধু হিথ স্ট্রিকের জন্য প্রার্থনায় হাত ওঠানোর সময়।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের দলে থাকা মাহমুদউল্লাহ সুযোগ পাননি আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। ঘরের মাঠের পর প্রতিপক্ষের মাঠের সিরিজেও একই গল্প। চেমসফোর্ডে চলমান ওয়ানডে সিরিজের দলেও নেই টি-টোয়েন্টির সাবেক অধিনায়ক।
বাংলাদেশ দলের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, আগামী সেপ্টেম্বরে এশিয়া কাপে যে দল খেলবে তারাই যাবে বিশ্বকাপে। গত পরশু বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেছেন, ‘এশিয়া কাপে যে দলটা হবে, সেটাই আমাদের বিশ্বকাপ খেলবে।’ এই মুহূর্তে তাই দলের বাইরে থাকা যে কারও জন্য চিন্তার বিষয়। তবে মাহমুদউল্লাহ চাইলে স্বস্তি পেতে পারেন বিশ্বকাপ দলে তাকেও দেখেন বোর্ড সভাপতি।
মাহমুদউল্লাহর অনুপস্থিতিতে দলে বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। মিডল অর্ডারে নাজমুল হোসেন শান্ত ও তৌহিদ হৃদয় নিজেদের থিতু করে নিচ্ছেন। তাতে মুশফিকুর রহিমকে আরেকটু নিচে নেমে খেলতে হচ্ছে মাহমুদউল্লাহর জায়গায়। ইংল্যান্ড সিরিজে যে ভূমিকায় মাহমুদউল্লাহ অনেক ধীরগতিতে রান তুলে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছেন, সেখানে মুশফিক প্রায় প্রতি ম্যাচেই ঝড় তুলছেন। পরিস্থিতি তাই আগামী অক্টোবরে বিশ্বকাপ দলে মাহমুদউল্লাহর না থাকার পক্ষেই ইঙ্গিত দেয়।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ উপলক্ষে ইংল্যান্ডে আছেন বিসিবি সভাপতিও। সেখানেই গত পরশু সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমার ধারণা মাহমুদউল্লাহ বিশ্বকাপে থাকবে।’ বিশ্বকাপ চিন্তায় থাকা একজনকে কেন টানা দুটি সিরিজে দলে রাখা হয়নি, এমন প্রশ্নের উত্তরে দলের পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথাই বলেছেন পাপন, ‘কোচ নতুন এসেছেন, না দেখে তো কাউকে নেবেন না। তাসকিনকে দেখেছেন, মোস্তাফিজকে দেখেছেন, শরীফুলকে দেখা হয়নি। হাসান মাহমুদকে দেখেছেন, ইবাদতকে চেনেন, এখন শরীফুলকে একটু চিনে নিচ্ছেন।’
এ প্রসঙ্গে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচে বসে থাকা পেসার মোস্তাফিজকে উদাহরণ মেনেছেন সভাপতি, ‘মোস্তাফিজকে তো দেখার কিছু নেই। সে তো আছেই, থাকবে। এটা নিয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই। হয়তো সামনের ম্যাচেই খেলতে পারে।’ আগামী মাসে আফগানিস্তানের বিপক্ষে দলের সমন্বয় নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে বলে জানিয়েছেন পাপন।
ওদিকে চেমসফোর্ডে বৃষ্টি বাংলাদেশের ছেলেদের ম্যাচ শুরু হতে দিচ্ছে না। এদিকে কলম্বোতে বাংলাদেশের মেয়েরাও কোনো সুখবর দিতে পারলেন না। আগের দুই ম্যাচে দুই দল জেতায় আজ তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিটা হয়ে দাঁড়ায় সিরিজ নির্ধারণী, তাতে ৪৪ রানে হেরে গেছে বাংলাদেশ।
শ্রীলঙ্কার মেয়েদের ১৫৮ রানের জবাবে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টিকে রীতিমতো ওয়ানডে বানিয়ে ফেলে। ২০ ওভার খেলেও বাংলাদেশ ৭ উইকেট হারিয়ে করতে পেরেছে মাত্র ১১৪ রান। তিন ওয়ানডের সিরিজ ১-০ ব্যবধানে হারা বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি সিরিজও হেরেই (২-১) শেষ করল শ্রীলঙ্কা সফর।
বাংলাদেশের ব্যাটারদের যেখানে গড়ে ১৩৫-এর মতো স্ট্রাইক রেট রাখতে হতো, সেখানে ক্রিজে নামা ৯ ব্যাটারের মাত্র চারজনেরই স্ট্রাইক রেট ১০০-র ঘরে গেছে। ১৩০ পেরিয়েছে মাত্র এক ব্যাটারের স্ট্রাইক রেট, কিন্তু আটে নামা সেই ব্যাটার ফাহিমা আক্তার রান করেছেন মাত্র ৬ বলে ৯!
স্ট্রাইক রেট ১০০ বা তার বেশি রাখা বাকি তিন ব্যাটারের মধ্যে দুই অঙ্কেই গেছে মাত্র দুই ব্যাটারের রান - ছয়ে নামা রিতু মনি ১১ রান করেছেন ৯ বলে, আর তিন নম্বর ব্যাটার সোবহানা মুস্তারিই যা একটু 'টি-টোয়েন্টি' ব্যাটিং করেছেন - ২৫ বলে ২ চার ২ ছক্কায় করেছেন ৩০ রান।
আচ্ছা, স্ট্রাইক রেট নিয়ে এত কথা হচ্ছে, কিন্তু সে হিসাব তো পরে আসবে। আগে তো রানের কথা বলতে হবে! ১৫৮ রান করার জন্য অন্তত দু-চারজন ব্যাটারের তো স্কোর ভালো হতে হবে, বাংলাদেশের ইনিংসে তা আর হলো কই! দুই অঙ্কে গেছে চার ব্যাটারের রান, এর মধ্যে ওপেনার ফারজানা হক ২০ বলে করেছেন ১০ রান, সাতে নামা রিতু মনির ১১ রানের কথা তো আগেই বলা হলো।
দুই অঙ্কে যাওয়া বাকি দুজনের মধ্যে সত্যিকারের 'টি-টোয়েন্টি' ব্যাটিং দেখানো মুস্তারির ৩০ রানের বাইরে চারে নামা অধিনায়ক নিগার সুলতানা ৩১ রান করেছেন ৩৩ বলে। ইনিংসের দশম বলে ৩ রানে প্রথম উইকেট হারানো বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটি? চতুর্থ উইকেটে অধিনায়ক নিগারের সঙ্গে মুর্শিদা খাতুনের - ৩৪ বলে ৩৩।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা শ্রীলঙ্কার ব্যাটিংয়ের চিত্র পুরো উল্টো। ক্রিজে নামা পাঁচ ব্যাটারের সবাই ভালো করেছেন - এমন নয়। কিন্তু যে তিন ব্যাটার ভালো করেছেন, তারা টি-টোয়েন্টিতে কীভাবে ব্যাটিংটা করতে হয়, তা দেখিয়ে দিয়েছেন।
অধিনায়ক ও ওপেনার চামারি আতাপাত্তু ২৩ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৩২ রানে শুরুটা করে দিয়ে গেছেন। কিন্তু তিনি পাওয়ার প্লে-র পরের ওভারেই দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে আউট হয়ে যান দলকে ৪৩ রানে রেখে। চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে শ্রীলঙ্কার উদ্বোধনী জুটি ১৬ রানে ভেঙে দেয়া বাংলাদেশ দশম ওভারের প্রথম বলে তৃতীয় উইকেটও তুলে নেয় ৫৬ রানে। কিন্তু তখন কে ভেবেছিল, শ্রীলঙ্কা এমন নিম্নচাপকে 'মোখা'য় রূপ দেবে!
তিনে নামা হার্শিতা সামারাবিক্রমা ৪২ বলে ৬ চারে ৫১ রানে অপরাজিত ছিলেন, কিন্তু তার সঙ্গে ইনিংসের শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকা আরেক ব্যাটার নিলাক্ষী ডি সিলভা ছিলেন আরও ভয়ংকর। ফিফটি তিনিও করেছেন, তবে তার ৬৩ রান এসেছে মাত্র ৩৯ বলে, বাংলাদেশ বোলারদের চোখে অন্ধকার দেখানো ৪ ছক্কা ও ৪ চারে। এর মধ্যে তিন ছক্কা ও এক চার ডি সিলভা মেরেছেন জাহানারা আলমের করা শেষ ওভারে!
৬৫ বলে ১০২ রানের অবিচ্ছিন্ন চতুর্থ উইকেট জুটির পথে প্রথমে সময় নিয়ে গুছিয়ে নিয়েছেন দুজন। এরপর সামারাবিক্রমা একদিকে 'অ্যাঙ্কর' করেছেন, আর অন্যদিকে ডি সিলভা তুলেছেন ঝড়। ১৭ ওভার শেষেও শ্রীলঙ্কার রান ছিল ৩ উইকেটে ১০৫, তার কিছুক্ষণ আগেই এক চার মেরে ডি সিলভার রান ১৭ ওভার শেষে দাঁড়িয়েছিল ২৫ বলে ২২!
শেষ তিন ওভারে তাহলে কেমন ঝড় উঠেছে, হিসাব করতে নিশ্চয়ই কষ্ট হচ্ছে না! ডি সিলভা শেষ ওভারে জাহানারাকে টানা দ্বিতীয় ছক্কা মেরে ফিফটি পূর্ণ করেন ৩৫ বলে। শেষ ৩ ওভারে শ্রীলঙ্কা নিয়েছে ৫৩ রান!
বাংলাদেশে কোনো চ্যানেল খেলা দেখাচ্ছে না। তাহলে আয়ারল্যান্ড আর বাংলাদেশের সিরিজের ম্যাচগুলো দেখার ব্যবস্থা কী? এরই মধ্যে টস জিতে বোলিং নিয়েছে আয়ারল্যান্ড, দুই দল মাঠেও নেমে গেছে।
আইসিসি টিভি বিনামূল্যে খেলা দেখার সুযোগ করে দিচ্ছে। নিচে লিঙ্ক দিয়ে দেয়া হলো। সেখানে গিয়ে শুধু ফ্যান আইডি দিয়ে ঢুকলেই দেখা যাবে বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড প্রথম ম্যাচ। ফ্যান আইডি না থাকলে তৈরি করতে সময় লাগবে অল্পই। শুধু ইমেইল অ্যাড্রেস, পাসওয়ার্ড, নাম আর জন্মতারিখ দিয়ে 'ক্রিয়েট অ্যাকাউন্ট'-এ ক্লিক করলেই হলো!
নিচের লিঙ্কে গেলেই ফ্যান আইডি দিয়ে ঢোকার অনুরোধ আসবে। আগে থেকেই আইসিসির ওয়েবসাইটে ফ্যান আইডি তৈরি করা থাকলে তো হলোই, সাইন ইন করে নেবেন। না হলে ওপরে বর্ণিত তথ্যগুলো দিয়ে 'সাইন আপ' করে নিলেই হবে।
খেলা দেখুন এই লিঙ্কে -
https://app.icc.tv/live/240372/ireland-v-bangladesh-odi-1
চেমসফোর্ডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ড। এরই মধ্যে টস হয়ে গেছে। টস জিতে ফিল্ডিং নিয়েছে 'স্বাগতিক' আয়ারল্যান্ড।
বাংলাদেশ দলে চমক বলতে একটিই - মোস্তাফিজ একাদশে নেই। তাকে ছাড়াই তিন পেসার, এক স্পিনার, দুই স্পিনার-অলরাউন্ডার ও পাঁচ ব্যাটসম্যান নিয়ে নেমেছে বাংলাদেশ।
তিন ওয়ানডের সিরিজের প্রথম ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় ৩টা ৪৫ মিনিটে। খেলা দেখা যাবে আইসিসি টিভিতে, তবে সে জন্য আইসিসি ফ্যান একাউন্ট তৈরি করতে হবে।
প্রথম ওয়ানডের বাংলাদেশ দল:
তামিম ইকবাল (অধিনায়ক), লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, তৌহিদ হৃদয়, মেহেদী হাসান মিরাজ, শরিফুল ইসলাম, হাসান মাহমুদ, ইবাদত হোসেন, তাইজুল ইসলাম।
আয়ারল্যান্ড একাদশ:
পল স্টার্লিং, স্টিফেন ডোহেনি, অ্যান্ড্রু বলবার্নি (অধিনায়ক), হ্যারি টেক্টর, লরকান টাকার, কার্টিস ক্যাম্ফার, জর্জ ডকরেল, অ্যান্ড্রু ম্যাকব্রাইন, মার্ক অ্যাডেয়ার, গ্রাহাম হিউম, জশ লিটল।
টিভিতে কিংবা মোবাইলে কখন কোথায় কোন খেলা দেখবেন আজ? সূচিটা দেখে নিন...
ক্রিকেট
বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড
প্রথম ওয়ানডে । বেলা ৩টা । আইসিসি টিভি (https://app.icc.tv/home - আইসিসি ফ্যান একাউন্ট দিয়ে ঢুকতে হবে)
আইপিএল
মুম্বাই ইন্ডিয়ানস-রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু । রাত ৮টা । গাজী টিভি, টি স্পোর্টস
ফুটবল
ফেডারেশন কাপ: সেমিফাইনাল
বসুন্ধরা কিংস-মোহামেডান । বেলা ৩টা । টি স্পোর্টস
চ্যাম্পিয়নস লিগ
রেয়াল মাদ্রিদ-ম্যানচেস্টার সিটি । রাত ১টা । সনি টেন স্পোর্টস ২
ভারত পাকিস্তানে যাবে না। পাকিস্তান যাবে না ভারতে। রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে এশিয়া কাপ আর সফলভাবে বিশ্বকাপ আয়োজন নিয়ে শঙ্কা জেগেছে। পাকিস্তান থেকে এশিয়া কাপ সরানোর চেষ্টায় বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডের সমর্থন পেয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ জানিয়েছে এ খবর। সূত্র জানিয়েছে, পাকিস্তান থেকে এশিয়া কাপ সরানো হলে তা নিজ নিজ দেশে আয়োজনের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা।
বিসিসিআই পাকিস্তানে দল পাঠানোর ব্যাপারে বহু আগ থেকেই আপত্তি জানিয়ে রেখেছে। নিরপেক্ষ ভেন্যুতে এশিয়া কাপ খেলতে চাইছে ভারত। আর এতে যদি পাকিস্তান এশিয়া কাপে খেলতে অস্বীকৃতি জানায়, সেক্ষেত্রে পাকিস্তানের বদলি হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে এশিয়া কাপে খেলার আমন্ত্রণ জানানো হবে।
ভবিষ্যত সফরসূচি অনুযায়ী আগামী সেপ্টেম্বরের শুরুতে হবে এশিয়া কাপ। আপাতত পাঁচটি টেস্ট খেলুড়ে দেশ ছাড়া নেপালের অংশ নেয়ার কথা এই টুর্নামেন্টে। কিন্তু ভেন্যু পাকিস্তানেই থাকবে নাকি অন্য কোথাও হবে- এই সিদ্ধান্তই তো নেয়া হচ্ছে না।
এরই মধ্যে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) সভাপতি জয় শাহ সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন , পাকিস্তানের অনুপস্থিতিতে আর্থিক ক্ষতি হলে ভারতের আরেকটি সিরিজের দায়িত্ব দিয়ে সে ক্ষতি পুষিয়ে দেবে বিসিসিআই। জিও নিউজকে সূত্র জানিয়েছে, নরেন্দ্র মোদির ভারত সরকার আগামী এসিসি-র মিটিংয়ে বিসিসিআইকে কঠোর অবস্থান নিতে বলে দিয়েছে।
এদিকে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) শুধু ভারতের খেলাগুলো কোনো নিরপেক্ষ ভেন্যুতে আয়োজন করে টুর্নামেন্টটি পাকিস্তানেই রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু বিসিসিআই এমন ফরম্যাটে খেলতে রাজি নয়।
পিসিবির ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান নাজাম শেঠি সতর্ক করে দিয়েছেন, এমন কিছু বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে নাও দেখা যেতে পারে, ‘এশিয়া কাপে অংশ নিতে ভারত যদি অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে বিশ্বকাপে অংশ নিতে দল নাও পাঠাতে পারে পাকিস্তান সরকার। সেক্ষেত্রে ক্ষতিটা ক্রিকেটেরই হবে।’
ওয়ানডেতে দারুণ ফর্মে আছে পাকিস্তান। ২০২২ সালের পর থেকে ওয়ানডেতে মাত্র একটি সিরিজ হেরেছে তারা। ১৭ ম্যাচে জিতেছে ১৩টিতে। এমন ফর্মেই মাত্র ২ দিনের জন্য হলেও ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে উঠেছিল পাকিস্তান।
দল ফর্মে আছে, ফর্মে আছেন অধিনায়ক বাবর আজমও। সে আত্মবিশ্বাসে নিউজিল্যান্ড সিরিজে দলের একাদশ নিয়ে বেশ কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষাও করেছেন। পরীক্ষা নিরীক্ষার ফল ইতিবাচক। ক্ষীণশক্তির নিউজিল্যান্ডকে ওয়ানডেতে ৪-১ ব্যবধানে হারিয়েছে।
আগামী অক্টোবরে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। তার আগেই সব দল গুছিয়ে নিতে চাইছে তাদের স্কোয়াড। ২৪ জনের একটি পুল সৃষ্টি করে সেখান থেকেই ১৫ জনের স্কোয়াড বেছে নেবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের নির্বাচক কমিটির প্রধান।
পাকিস্তানকে পুলও সৃষ্টি করতে হচ্ছে না। তারা এখনই জানে কোন ১৫ জন ভারতে বিশ্বকাপ খেলতে যাবে। মূলত টি-তোয়েন্টি ফরম্যাটি দেখা যায় ইফতিখার আহমেদকে। গত ৮ বছরে মাত্র ১০ ওয়ানডে খেলা সেই ইফতিখারকে সিরিজের শেষ ২ ম্যাচে খেলিয়েছে পাকিস্তান। গতকাল ক্যারিয়ার সেরা ৯৪* রানের ইনিংস খেলে আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন পাকিস্তানি অলরাউন্ডার।
হঠাৎ ইফতিখারকে কেন ওয়ানডে দলে ডাকা হয়েছে সে প্রসঙ্গে বাবর বলেছেন, ‘আমরা তাকে ওয়ানডে সুযোগ দিয়েছি কারণ গত পাঁচ-ছয় মাসে দারুণ ক্রিকেট খেলছে সে। এবং ওই পজিশনগুলো আমাদের সমস্যা হচ্ছিল। এখন ইফতিখার ও সালমান আগা খান ওখানে বেশ সাহায্য করছে আমাদের।’
পরীক্ষা নিরীক্ষা করলেও বিশ্বকাপে কারা যাবে, সেটা নাকি ঠিক করে ফেলেছেন বাবর। নিউজিল্যান্ড সিরিজের এই পরীক্ষা নিরীক্ষা শুধুই বিকল্প খেলোয়াড়দের অবস্থা দেখার জন্য, ‘এ সিরিজে আমরা বেঞ্চের শক্তি দেখতে চেয়েছি। আমাদের সে ছন্দটা আছে (পরখ করার ঝুঁকি নেয়ার)। মনে মনে আমি জানি কোন ১৫ ক্রিকেটার বিশ্বকাপে যাবে।’
পাকিস্তান ক্রিকেটে ‘চাচা’ নতুন কিছু নয়। গত শতাব্দির শেষে এবং এই শতাব্দির শুরুতে পাকিস্তানের ম্যাচ মানেই পতাকা নিয়ে গ্যালারিতে এক চাচার উল্লাস। শুধু উপমহাদেশে শুধু সমর্থক হয়েও বিখ্যাত হয়ে ওঠার প্রথম উদাহরণ তিনি।
তবে গ্যালারির পর এখন পাকিস্তান দলেও চাচা আছেন একজন। অলরাউন্ডার ইফতিখার আহমেদকে ড্রেসিংরুমে চাচা ডাকেন পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা। নামটা এতটাই ছড়িয়েছে যে, বাংলাদেশে বিপিএলে খেলতে এসেও এই ডাক শুনতে হয়েছে তাকে।
গতকাল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ শেষ হয়েছে পাকিস্তানের। সিরিজ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে বাবর আজম জানালেন, ইফতিখারকে ‘চাচা’ নামটা তারই দেয়া, ‘মাঝে মাঝে, আমার একটু লজ্জা লাগে। কারণ আমার কারণেই ইফতিখারকে “চাচা” নামে ডাকে সবাই। তবে ভালোই লাগে যখন দেখি মানুষ এটা উপভোগ করে।’
বয়সে চার বছরের পার্থক্য হলেও ২০১৫ সালেই ওয়ানডে অভিষেক দুজনের। কিন্তু গতকাল যেখানে ১০০তম ওয়ানডে খেললেন বাবর, ইফতিখারের এটি ছিল ১২তম ম্যাচ! ওয়ানডেতে ১৮টি সেঞ্চুরি হয়ে গেছে বাবরের, ওদিকে গতকালই ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস খেলেছেন ইফতিখার। তবে তার ৭২ বলে ৯৪ রানের অপরাজিত ইনিংসও দলকে জেতাতে পারেনি।
না পারলেও দলের বিপদে প্রায় একাই লড়ে জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন ইফতিখার। অধিনায়ক বাবর তাই প্রশংসায় মেতেছেন, ‘টি-টোয়েন্টিতে অসাধারণ কিছু পারফরম্যান্স দেখিয়েছে সে। আজ সে একাই ম্যাচটা অনেক দূর টেনেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে অন্য প্রান্তে কোনো সহযোগিতা পায়নি।’
গত ৫ মে পাঁচ ম্যাচ সিরিজের চতুর্থ ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডকে ১০২ রানে হারিয়েছিল পাকিস্তান। ম্যাচের প্রথমার্ধে বাবর আজম সর্বনিম্ন ইনিংসে ৫ হাজার রানের মাইলফলক ছোঁয়ার রেকর্ড ভেঙেছেন। আর ম্যাচ শেষে প্রথমবারের মতো আইসিসির ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে উঠেছিল পাকিস্তান।
ঐতিহাসিক র্যাঙ্কিং হিসেবে নিলে এর আগেও দুবার ওয়ানডের শীর্ষ দল হয়েছিল পাকিস্তান। কিন্তু সেটা ২০০২ সালের অক্টোবরে আইসিসি আনুষ্ঠানিকভাবে ওয়ানডে র্যাঙ্কিং প্রকাশ করার পর কখনো শীর্ষে ওঠেনি পাকিস্তান। শুক্রবার তাই ইতিহাস গড়েছিল বাবর আজমের দল।
গতকাল সিরিজের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে ৪৭ রানে হেরে গেছে পাকিস্তান। সে হারে একটি রেকর্ডও হয়েছে। ওয়ানডে ইতিহাসে পাকিস্তানের চেয়ে কম সময়ের জন্য শীর্ষে থাকেনি আর কোনো দল।
র্যাঙ্কিংয়ে উত্থান-পতন স্বাভাবিক ব্যাপার। সর্বজয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজ (৬৫ মাস) বা অস্ট্রেলিয়ার (৫২ মাস) মতো দীর্ঘ সময় ধরে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থাকাটাই বরং অস্বাভাবিক। উল্টো দিকও আছে। ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারত মাত্র ৪ দিনের জন্য শীর্ষে উঠেছিল।
তবে সে রেকর্ডও ভেঙে গেছে এই বছরের শুরুতে। ২০২৩-এর জানুয়ারিতে নিউজিল্যান্ডের কাছ থেকে শীর্ষস্থান কেড়ে নিয়েছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু ৩ দিন পরই সেটা কেড়ে নিয়েছিল ভারত। গতকাল ইংল্যান্ডের সে রেকর্ড দখল করে নিয়েছে পাকিস্তান (২ দিন)।
এর কারণ, শীর্ষে উঠলেও রেটিং পয়েন্টে খুব বেশি এগিয়েছিল না পাকিস্তান। গত শুক্রবার নিউজিল্যান্ডকে হারানোর পর পাকিস্তানের রেটিং পয়েন্ট ছিল ১১৩.৪৮। ওদিকে দুইয়ে থাকা অস্ট্রেলিয়ার পয়েন্ট ১১৩.২৯। তিনে থাকা ভারতের রেটিং ছিল ১১২.৬৪।
অস্ট্রেলিয়া ও ভারত– দুই দলই বর্তমানে আইপিএলের কারণে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলছে না। তাই নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে হলে পাকিস্তানকেই যা করার করতে হতো। গতকাল নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ম্যাচটি বৃষ্টি বা অন্য কোনো কারণে বাতিল হলেই শীর্ষে থাকত পাকিস্তান, জিতলে তো কথাই নেই।
কিন্তু নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে বসেছে পাকিস্তান। এবং সে হারে পাকিস্তানের রেটিং নেমে এসেছে ১১১.৬-এ। ফলে আবার র্যাঙ্কিংয়ের তিনে নেমে এসেছে পাকিস্তান।